আমি বাল্যে ও কৈশোরে পড়েছি আমাদের গ্রামের সরকারি পাঠশালা ও হাইস্কুলে। ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসনের অবসানের পর নতুন একটি হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে শীতসকালের একচিলতে রোদের মতো হেসে উঠছে গ্রামটি। নতুন ডাকঘর বসেছে গ্রামে। ডাকযোগে খবরের কাগজ আসছে। হঠাৎ করেই বিশ্ব এসে গেল দোরগোড়ায়। নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ার সুবাদে এবং ১৯৪৮-৫২ ভাষা-আন্দোলন ও ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের প্রভাবে পূর্ব বাংলায় যে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তার উদ্ভব ঘটে তার এক ঝলক আলো পড়েছিল আমাদের ওপর। এর আলোকবর্তিকা ছিলেন আমাদের স্কুলে ওই সময়ে যোগ দেওয়া কজন নতুন প্রগতিশীল শিক্ষক। সদ্য যোগ দেওয়া প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিম, খলিলুর রহমান, জিলস্নুর রহমান, আনোয়ার ইসলাম এবং উর্দু শিক্ষক মৌলবি আবুল হাসনাত মুহম্মদ ওমর প্রমুখ সৃষ্টি করলেন শিক্ষা ও শিক্ষণের এক নতুন ধারা। এঁরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে আমাদের নিয়ে গড়ে তুললেন পাঠচক্র। একদিন পরে ডাকে আসা দৈনিক আজাদ, পাকিস্তান অবজারভার পাঠসহ 888sport live football, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত হলো পাঠচক্রে। ফলে আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় নব রাজনৈতিক চেতনা ও দেশ-দুনিয়া সম্পর্কে নতুন কৌতূহল, আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসা। জীবন ও জগৎকে নতুন চোখে দেখার এই উদ্দীপ্ত সময়েই আমার ভেতরে গ্রন্থপাঠ ও 888sport live footballরুচি নবরূপ লাভ করে। আগে লাইব্রেরি থেকে আনা মোহন সিরিজের ডিটেকটিভ বই ছিল গোগ্রাসে গেলার বিষয়। এখন নিজে কিনে বাংলা 888sport live footballের বিশ শতকের ত্রিশের দশকের বিখ্যাত লেখকদের গল্প, 888sport alternative link, 888sport app download apk এবং রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ও বিশ্ব888sport live footballের কিছু রচনাও হয়ে পড়ল নিত্যসঙ্গী। এর আরেকটা দিকের অভিমুখে থাকল পূর্ব বাংলার লেখকদের লেখালেখিতে চোখ রাখা এবং ধীরে ধীরে তাতে মনোসংযোগ। আলাউদ্দিন আল আজাদের ছোটগল্প আর শামসুর রাহমানের 888sport app download apkয় মুগ্ধতা ছাড়াও আহসান হাবীব, আবদুল কাদির, সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, হাসান হাফিজুর রহমান, সিকান্দার আবু জাফর এঁদের রচনাও হলো যত্ন ও অভিনিবেশ সহকারে পাঠের বিষয়। ভাষা-আন্দোলনের পরে অবদমিত সংস্কৃতি অঙ্গনে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর অমর সৃষ্টি, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।’ গান এবং কারাবন্দি মুনীর চৌধুরীর জেলখানায় বসে লেখা অমর নাটক কবরও আমাদের ভিন্নতর সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার
প্রগতি-সড়কে পৌঁছে দেয়। এই সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গেই আমরা শুনি আবুল হাশিম, রণেশ দাশগুপ্ত, অধ্যাপক অজিত গুহ ও কমরেড অজয় রায়ের নাম। এঁরাই জেলখানায় তরুণ নাট্যকার মুনীর চৌধুরীকে দিয়ে নাটক লেখানো ও তাঁর অভিনয়ের ব্যবস্থা যে করেছিলেন শিক্ষকদের কাছে, সে-সংবাদ ছিল।
স্কুলে জসীমউদ্দীন, ইব্রাহিম খাঁ, মঈনুদ্দীন প্রমুখের লেখা পড়েছি ক্লাসের পাঠ্যবইয়ে। অজিত গুহ, রণেশ দাশগুপ্ত, মুনীর চৌধুরী, সরদার ফজলুল করিম এঁদের নাম শুনি আমাদের স্কুলের নতুন যোগ দেখা বামপন্থী শিক্ষক খলিলুর রহমান স্যারের কাছে। পরে শুনেছি স্যার কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। খলিল স্যার ও তাঁর স্ত্রী রোকাইয়া সুলতানা (পরবর্তীকালে ড. গোবিন্দচন্দ্র দেবের পালিত কন্যা) আমাকে সম্পাদক করে বের করেন হাতে লেখা পত্রিকা পূর্বাভাষ। উলেস্নখ্য, কবি সুকামেত্মর 888sport app download apkর বইয়ের নাম পূর্বাভাষ। হাতের লেখা সে-পত্রিকা থেকেই আমার লেখালেখির হাতেখড়ি। ওই সময়েই দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরের সদস্য হই। প্রতি সপ্তাহে আগ্রহের সঙ্গে আসরে লেখা পড়ি বিখ্যাত শিশু888sport live footballিক ও উদীয়মান কিশোর লেখকদের। আমি নিজেও তখন লেখক হওয়ার আশায় গল্প-888sport app download apk, 888sport live মকশো করতে শুরু করেছি। দৈনিক আজাদের মুকুলের মহফিল, দৈনিক মিলস্নাতের কিশোর দুনিয়া এবং ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে কিছু লেখা ছাপাও হয়েছে। এভাবেই আমার 888sport live football ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা তৈরি হয় প্রধানত নিয়মিত বাংলা 888sport live footballের গুরুত্বপূর্ণ রচনা পাঠ, শিক্ষকদের প্রণোদনা এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলার সমকালীন 888sport live football পাঠ এবং সে-সম্পর্কে আগ্রহ ও কৌতূহলের কারণে।
বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করায় আন্দোলনের সাফল্যের পরে ধর্মকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহারকারী সামন্তবাদী রাজনৈতিক ও সামরিক স্বৈরতন্ত্র-শাসিত পাকিস্তানি ঔপনিবেশিকপ্রতিম রাষ্ট্রের হিন্টারল্যান্ডধর্মী পূর্ব বাংলায় ১৯৪৮-৫২-র ভাষা-আন্দোলন এবং ’৫৪-র যুক্তফ্রন্টের প্রথম সাধারণ নির্বাচন, মওলানা ভাসানীর কাগমারী সম্মেলন এবং 888sport app, চট্টগ্রাম, কুমিলস্নার জাতীয়তাবাদী, বামপন্থী ও কমিউনিস্ট পার্টি-প্রভাবিত 888sport live football সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি সর্বোপরি এবং 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও আন্তর্জাতিক চেতনাঋদ্ধ শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের উদ্যোগে যে নতুন সাংস্কৃতিক নবজাগরণ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের আন্দোলন শুরু হয় কৈশোর-উত্তীর্ণ আমাদের তা প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। বাঙালির আত্মশক্তির উদ্বোধনের সেই কালে ঔপনিবেশিকতার অবশেষ বিরোধী রাজনীতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনের টগবগে সময়ে আমরা প্রবলভাবে আলোড়িত-বিলোড়িত হই – বক্তৃতারও অভ্যাস তৈরি হয়। সে-বক্তৃতায় রাজনীতি আর সংস্কৃতির মিশ্রণে থাকে রাগ আর আবেগের সংযত-অসংযত প্রকাশ; কিন্তু তার গভীর ভেতরে থাকে সুপ্ত পূর্ববাংলার বাঙালির আত্মপ্রতিষ্ঠা ও আত্মিক জাগরণের অভীপ্সা।
এক নবচেতনায় উদ্দীপ্ত তরুণ হিসেবে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৫৬ সালে ভর্তি হলাম 888sport appর জগন্নাথ কলেজে। জগন্নাথ কলেজে তখন অসাধারণ সব শিক্ষক শিক্ষকতা করতেন। কলেজের রেক্টর ছিলেন মনীষীপ্রতিম ব্যক্তিত্ব খানবাহাদুর আবদুর রহমান খাঁ, অধ্যক্ষ বিশিষ্ট প–ত শেখ শরফুদ্দীন, সহ-অধ্যক্ষ প্রথম ব্যক্তিশালী দার্শনিক রেবতীমোহন চক্রবর্তী, ইংরেজির তুখোড় অধ্যাপক শৈলেন ভদ্র, অধ্যাপক আবদুল মতিন, রসায়নের পরাৎপর প–ত হরিপ্রসন্ন রায়, ইতিহাসের নারায়ণ চন্দ্র সাহা, বাংলার অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ, অধ্যাপক আলাউদ্দিন আল আজাদ, অধ্যাপক হাসান হাফিজুর রহমান, ইসলামের ইতিহাসের অধ্যাপক বোরহানউদ্দীন প্রমুখ।
স্কুলজীবনেই 888sport live footballের নেশা মাথায় চাপায় ঠিক করেছিলাম বাংলা 888sport live football নিয়ে পড়াশোনা করে বাংলা ভাষা-888sport live footballের অধ্যাপনা করব। সে-লক্ষ্য পূরণে জগন্নাথ কলেজ ছিল তখন সেরা বিদ্যাপীঠ। কারণ অধ্যাপক অজিত গুহ, হাসান হাফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং ইংরেজির অধ্যাপক শৈলেন ভদ্র, আবদুল মতিন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো শিক্ষক পাওয়া 888sport live football যশোপ্রার্থীর জন্য যে কত বড়ো সৌভাগ্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দুই
এসব অলোকসামান্য শিক্ষকের মধ্যে সৌম্যকাত্তি সম্ভ্রম-জাগানো অজিতকুমার গুহ তাঁর কথা বলার আকর্ষণীয় ভঙ্গি, শ্রেণিকক্ষে 888sport live football-ব্যাখ্যায় ছাত্রদের মুগ্ধ করে রাখার অনন্য দক্ষতা এবং আদর্শিক ও বাস্তবিক অসাম্প্রদায়িক জীবনদৃষ্টিতে ছিলেন এক পরিপূর্ণ জ্যোতির্ময় পুরুষ। এত গুণের অধিকারী মনীষী হওয়া সত্ত্বেও মানবিক গুণাবলি এবং সহজ-সরল ব্যবহারে সকলকে আপন করে নেওয়ার এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর।
স্বর্গীয় অজিতকুমার গুহর (জন্ম ১৫ এপ্রিল ১৩২১-মৃত্যু ১২ নভেম্বর ১৯৬৯) পূর্বপুরুষেরা বিক্রমপুরের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের বিখ্যাত গুহ পরিবারের সদস্য ছিলেন। তাঁর পিতামহ মদনমোহন গুহ খ্যাতনামা আইনজীবী ছিলেন। ত্রিপুরা মহারাজের অন্যতম আইনজীবী নিযুক্ত হয়ে তিনি কুমিলস্নার সুপারিবাগান এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। সেই সুবাদে অজিত গুহ ছিলেন কুমিলস্নার সুপারি বাগানের বাসিন্দা। কুমিলস্না ছিল বিশ ও ত্রিশের দশকে সংস্কৃতির শহর – 888sport app download apk ও গানের এক আলোকিত ভুবন হিসেবে গোটা উপমহাদেশেই সুনাম ছিল জেলাটির। জায়মান সাংস্কৃতিক ধারার ঔজ্জ্বল্যের পাশাপাশি উপনিবেশবিরোধী রাজনৈতিক বিপস্নবী ধারার ঐতিহ্যও ছিল প্রবহমান। একদিকে বিচ্ছিন্ন নানা স্বদেশি বিপস্নবী দল-উপদলে, অন্যদিকে বরুড়ার বিখ্যাত কৃষকনেতা ইয়াকুব মিয়া ও তাঁর সাথিদের শক্তিশালী
কৃষক-আন্দোলনে। অজিত গুহ এই দুই ধারার সঙ্গেই আত্মিকভাবে যুক্ত ছিলেন। এই সময়েই 888sport app download apk এবং লোক ও বিপস্নবী গানের সঙ্গে যুক্ত তরুণ তুর্কিদের সৃজনী শক্তি প্রকাশের 888sport live footballিক মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলা হয় পূবর্বাশা গোষ্ঠী ও তার 888sport live footballিক মুখপত্র পূবর্বাশা 888sport live football সাময়িকী (১৯৩২)। অজিত গুহের 888sport live footballের হাতেখড়িও হয় ওই পূর্বাশাতেই।
অজিত গুহ স্কুলে পড়েছেন কুমিলস্নার সেকালের দেশবিখ্যাত ঈশ্বর পাঠশালায়। ওই স্কুল থেকেই তিনি ১৯৩০ সালে প্রবেশিকা পাশ করেন। ১৯২৯ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কুমিলস্নায় এলে ঈশ্বর পাঠশালায় তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সে-সভায় স্বাগত ভাষণ দেন কিশোর ছাত্র অজিতকুমার গুহ। তাঁর সে-ভাষণ বেশ প্রশংসিত হয়। শ্রীগুহের মানস গঠনকে বুঝতে গেলে উপর্যুক্ত নানা বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে।
১৯৩২ ও ১৯৩৪ সালে তিনি কুমিলস্না ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে যথাক্রমে আইএ ও বিএ পরীক্ষায় পাশ করে ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারতীয় ভাষাগোষ্ঠী (Modern Indian Vernaculars) বিভাগে ভর্তি হন। এ-বিভাগে শিক্ষক হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন ড. দীনেশচন্দ্র সেন, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, প–ত বিধুশেখর শাস্ত্রী প্রমুখ গুণী ব্যক্তিকে। এসব অহর্নীয় শিক্ষকদের কাছে পাঠ গ্রহণের ফলে সংস্কৃত 888sport live footballে যেমন তিনি ব্যুৎপত্তি লাভ করেন, তেমনি তাঁর 888sport live footballবোধ ক্লাসিক ও আধুনিকের সুষম ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বিশেষ বিষয় হিসেবে নিয়েছিলেন বাংলা ভাষা, 888sport live football। এতে তাঁকে পড়তে হতো প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা 888sport live football, লোক888sport live football এবং ভাষাতত্ত্ব ও রবীন্দ্রনাথ। ফলে 888sport live footballের সামগ্রিক রূপের সঙ্গেই তাঁর শক্তপোক্ত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এছাড়া এমএ পাশের সমকালে দুবছর শান্তিনিকেতনে অবস্থান তাঁর চরিত্রে এক মোহনীয় সাংস্কৃতিক ছাপ মুদ্রিত করে দেয়।
কবি-সমালোচক সৈয়দ আলী আহসান লিখেছেন : ‘তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারতীয় ভাষাগোষ্ঠী বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সেখানে উচ্চতর সংস্কৃতের পাঠ গ্রহণ করেন। আমি তাঁর সঙ্গে সংস্কৃত কাব্য নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আমার নিজের 888sport live footballকর্মের প্রয়োজনে তাঁর কাছ থেকে কালিদাসের পাঠ নিয়েছি। অত্যন্ত আধুনিক পদ্ধতিতে ও সহজ ভঙ্গিতে এবং ব্যাকরণের জটিলতার মধ্যে না গিয়ে তিনি সংস্কৃত কাব্য বুঝিয়ে দিতে পারতেন। বাংলাতেও তাঁর দক্ষতা ছিল অনবদ্য। বাংলা ভাষায় তিনি সুন্দর বক্তৃতা করতেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে অনর্গল স্বাদু বাচনভঙ্গিতে কথা বলে যেতে পারতেন। যাঁরা তাঁর বক্তৃতা শুনেছেন তাঁরা এখনও তাঁর বলার ভঙ্গির প্রশংসা করেন।’
(পূর্বোক্ত স্মারকগ্রন্থ, পৃ ৩)
তিন
চল্লিশের দশকে অজিতকুমার গুহ 888sport appয় চলে আসেন এবং ১৯৪২ সালে প্রিয়নাথ হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির তখনকার সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত 888sport apkী 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ888sport apk বিভাগের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু। প্রিয়নাথ স্কুলে শিক্ষকতার সময়েই তাঁর অভিমুখ চিহ্নিত হয় একজন আদর্শবাদী, সাহসী ও মুক্তবুদ্ধির অধিকারী প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী হিসেবে। রণেশ দাশগুপ্ত লিখছেন : ‘এই সময়ে তিনি প্রগতি লেখক ও 888sport live chatী সংঘের একজন উৎসাহী সদস্য হিসেবে কাজ করেন। ফ্যাসিবাদী গুণ্ডাদের হাতে নিহত প্রগতি লেখক ও 888sport live chatী সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং তরুণ গল্পলেখক সোমেন চন্দের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আহূত ১৯৪৩ সালের ৮ই মার্চের 888sport sign up bonusসভায় অজিত গুহ সভাপতিত্ব করেন। সেদিনের সংঘাতময় পরিবেশে এটা ছিল বিশেষ সাহসিকতার কাজ।’
(অজিত গুহ স্মারকগ্রন্থ, পৃ ১৫)
888sport app শহরে প্রগতি লেখক ও 888sport live chatী সংঘের নানা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করে তিনি সুবক্তা ও মুক্তবুদ্ধির চিমত্মাবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। শান্তিরঞ্জন ভৌমিক লিখছেন : ‘সেই সুখ্যাতির কারণে এবং তদানীন্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হবীবুলস্নাহ বাহারের অনুরোধে অধ্যক্ষ আবদুর রহমান খাঁ ১৯৪৮ সালে অজিতকুমার গুহকে জগন্নাথ কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দান করেন।
(পূর্বোক্ত স্মারকগ্রন্থ, পৃ ১৩৯)
888sport app শহরে নজরুল চর্চার ক্ষেত্রেও অধ্যাপক অজিতকুমার গুহর অবদান ছিল অগ্রচারীর। দেশ-বিভাগের কিছুকাল আগে 888sport app রেডিও স্টেশনে প্রতি রোববার সকালে 888sport live football বাসর নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচার হতো। এর একটি অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল নজরুলের বিদ্রোহী 888sport app download apk এবং ইকবালের সঙ্গে নজরুল ইসলামের তুলনামূলক আলোচনা। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন ড. কাজী মোতাহার হোসেন, ত্রিপুরাশংকর সেন শাস্ত্রী, কিরণশংকর সেনগুপ্ত এবং অজিত গুহ। ‘এই অনুষ্ঠানে অজিত গুহ নজরুলের বিদ্রোহী 888sport app download apkর একটি বিশেস্নষণধর্মী বয়ান উপস্থাপন করেন’ (পূর্বোক্ত স্মারকগ্রন্থ, সৈয়দ আলী আহসান, পৃ ২৬)। অন্য একটি তথ্যে জানতে পারছি ১৯৫০-৫১ সালের দিকে 888sport appয় প্রথম ব্যাপক আকারে নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হয়। মখদুমী অ্যান্ড আহ্ছানউলস্না লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী ও কথা888sport live footballিক আবুল কাসেম, প্রগতিশীল রাজনীতিক ইয়ার মোহাম্মদ খান এবং সৈয়দ আলী আহসান অনুষ্ঠানটির উদ্যাক্তা ছিলেন। অনুষ্ঠানের সমগ্র কর্মসূচি ঠিক করেছিলেন জগন্নাথ
কলেজের বাংলার অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ এবং 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক অমিয় চক্রবর্তী। দুদিনব্যাপী এ-অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে কার্জন হলে এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রাদেশিক গর্ভনর ফিরোজ খান নূন। দ্বিতীয় দিনের সংগীতানুষ্ঠান হয় 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন 888sport app হলের (বর্তমান শহীদুলস্নাহ্ হল) লিটন হলে। সৈয়দ আলী আহসান বলেছেন : ‘এ অনুষ্ঠানের সাফল্যের মূলে ছিলেন অজিত বাবু।’
(পূর্বোক্ত স্মারকগ্রন্থ)
চার
অধ্যাপক অজিত গুহের লেখালেখিতে শুধু আধুনিক বাংলা 888sport live footballের ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণ বা রবীন্দ্র-প্রসক্তি লক্ষ করি না, সংস্কৃতল-888sport live football, মধ্যযুগের মুসলিম বাংলা 888sport live football এবং লোক888sport live footballের ইতিহাসনিষ্ঠ রসজ্ঞ ব্যাখ্যাতা হিসেবেও তাঁকে দেখতে পাই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি সংস্কৃত 888sport live footballের শ্রেষ্ঠ কাব্য মেঘদূত নিয়ে যেমন অনুপুঙ্খ আলোচনা করেছেন, তেমনি বাংলা 888sport live footballের সঙ্গে তার তুলনামূলক আলোচনাও বিশদভাবে লিখেছেন। রূপপ্রতীকের ধারা শীর্ষক 888sport liveে সংস্কৃত কাব্য থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা 888sport live football, বাংলা লোক888sport live footballে এর ব্যবহার যেভাবে দেখিয়েছেন তাতে অলংকারশাস্ত্রে তাঁর দক্ষতা এবং পা–ত্যের পরিচয় আছে। তিনি মধ্যযুগের মুসলিম বাংলা 888sport live footballের রসুল বিজয়, প্রাক-আধুনিক যুগের লোক888sport live footballের ময়মনসিংহ গীতিকা এবং রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, কায়কোবাদসহ গোটা বাংলা 888sport live footballকেই আমাদের দৃষ্টিতে এনেছেন।
অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ ‘রসুল বিজয়ের একটি ভূমিকা’ শীর্ষক 888sport liveে বলেছেন : ‘888sport live footballের ইতিহাসে দেখি যুগে যুগে … অচলায়তন থেকে মুক্তি-সাধনা করে গেছেন দেশের শ্রেষ্ঠ কবি 888sport live footballিকেরা। রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার প্রতিকূলতা তাদের অন্তহীন প্রাণপ্রবাহবেগকে আরও উচ্ছলিত উদ্বেল করে তুলেছে। আমাদের দেশে এক সময়ে রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনী জানবার জন্যে সাধারণ মানুষ যখন ব্যাকুল তৃষ্ণার্ত হয়েছিল, তখন ব্রাহ্মণ প–তসমাজ বাংলায় এই মহাকাব্যগুলির 888sport app download apk latest version করার বিরুদ্ধে তীব্র শাণিত অস্ত্র ধারণ করেছিলেন – বাংলা ভাষায় রামায়ণ মহাভারতের কাহিনী যারা শুনবেন তাদের জন্য মৃত্যুর পরে রৌরব নামক নরকে স্থান নির্দেশ করেছিলেন। কেবল তাই নয়, –
কৃত্তিবেসে কাশীদাসে আর বামুন ঘেঁষে/ এই তিন সর্বনেশে – এমনি শেস্নাকও রচনা হল।’ অজিত গুহ বলছেন, ‘কিন্তু ঐসব সর্বনেশে প–তের দল’ অতীতের নিঃসীমতায় মিলিয়ে গেছে – কালপ্রবাহে তাদের বিলুপ্তির চিহ্ন পর্যন্ত নেই ‘… 888sport live footballের ইতিহাস ও সাধারণ মানুষ সেই বিদ্রোহী কবিদের অমর করে রেখেছে।’ সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সৈয়দ সুলতান ছিলেন এমনি একজন বিদ্রোহী কবি। যে অন্তর্গূঢ় বেদনা কবিকে রসুল বিজয় রচনায় অনুপ্রাণিত করেছিল, তার পরিচয় আমরা কবির রচনায় পাই। কবি বলেছেন,
গ্রহ সত রস জোগে অব্দ গোঙাইল
দেশীভাসে এই কথা কেহ না কহিল।
কবির এই দুঃখ আরো গভীর ছিল এজন্যই যে, কবি দেখতে পেলেন যে কবীন্দ্র-রচিত ভারতকথা তখন পরাগল যাঁর আদেশে বিরচিত হয়েছে এবং এদেশের ঘরে ঘরে সমাদর লাভ করেছে। তাই কবি বলছেন,
কবীন্দ্র ভারতকথা কহিল বিচারি \
খোদা রসুলের কথা কেহ না কহিল \
মুঞি মূর্খ আছে এক সৈয়দ সন্ততি \
কবি বাংলায় নবীবংশ প্রকাশের পর সমাজের এক অংশ তাঁকে মোনাফেক আখ্যা দেয়। দেশ ও মাতৃভাষা প্রেমিক কবি তাকে গ্রাহ্য না করে ইতিহাসবোধের প্রজ্ঞায় বলেন :
আলস্নায় বুলিছে মুই যে দেশে যে ভাস
সে দেশে সে ভাসে কৈলুম রসুল প্রকাশ \
… জারে জেই ভাসে প্রভু করিছে সৃজন।
সেই ভাস তাহার অমূল্য সেই ধন \
পাঁচ
অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ ছিলেন প্রগাঢ় দেশপ্রেমিক। বাংলা ভাষা 888sport live football ও বাঙালিত্বের প্রযত্নলালিত চর্চা এবং মানসকল্যাণ, শুভবুদ্ধি ও ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের সখ্য ও সম্প্রীতির বিকাশই ছিল তাঁর আজীবন সাধনার বিষয়। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা অনুসারী ছিলেন না। প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তাই বলে অরাজনৈতিক মানুষও ছিলেন না তিনি। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন এক অনন্যসাধারণ মানবপ্রেমিক সুন্দরের সাধক এবং উচ্চ নৈতিক আদর্শের প্রতীক সংস্কৃতিমনস্ক দৃঢ়চেতা বুদ্ধিজীবী। নষ্ট রাষ্ট্র পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক স্বৈরশাসকরা এ-ধরনের মানুষকে সহ্য করতে পারে না। অজিতবাবুকেও তাই তারা বারবার কারাগারে নিক্ষেপ করেছে ’৫২-র ভাষা-আন্দোলনে যুক্ত থাকার কারণে; এবং তথাকথিত রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার অজুহাতে। বিস্ময়কর ব্যাপার শোভন-সুন্দর, ছিমছাম এ-মানুষটি ভেতরে ভেতরে যে কতটা ইস্পাতদৃঢ় মানসিকতার অধিকারী ছিলেন তা বোঝা যায় জেলজীবনের নিগ্রহ ও দুঃখকষ্টকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে এবং হাসিমুখে গ্রহণ করায়। এর বহু উদাহরণ আছে। একটি উদাহরণ পেশ করি। তৎকালীন ছাত্রনেতা ও জগন্নাথ কলেজে তাঁর ছাত্র নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৬৪ সালে 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি উপলক্ষে রক্তকপোত নামে একটি একাঙ্কিকা লেখে। সিদ্দিকীর অনুরোধে
এ- বইয়ের ভূমিকা লেখেন অধ্যাপক অজিত গুহ। বইটি স্বৈরসামরিক সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং এর লেখক ও প্রকাশক
যথাক্রমে নূরে আলম সিদ্দিকী ও তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি সৈয়দ মজহারুল হক বাকীকে গ্রেফতার করে এবং ভূমিকা-লেখক অজিত গুহ ও বইটির রিভিউয়ার খ্যাতনামা সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের নামে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করে। লেখক ও প্রকাশক গ্রেফতার হয়ে জেলে যান এবং ভূমিকা-লেখক অধ্যাপক অজিত গুহ ও সমালোচনা-লেখক সিরাজুদ্দিন হোসেন মামলার দিন নিয়মিত কোর্টে হাজিরা দেবার শর্তে জামিন পান। একদিন কোর্টে হাজিরা দিতে আসা অজিতবাবুকে দেখে নূরে আলম সিদ্দিকী অনুতপ্ত হয়ে বলে : ‘স্যার, আমি আপনাকে বাড়তি ঝামেলায় ফেলার জন্য দুঃখিত।’ এর উত্তরে অজিতবাবু বলেছিলেন : ’৫২ সালে অনেক ঝামেলা সয়েছি, জেলও খেটেছি। এখন সেই ভাষার জন্য যদি তোমাদের সঙ্গে আর একবার কারাগারে যেতে হয়, যাব। তাতে তোমার মাফ চাওয়ার কী আছে? আমি রাজনীতি করি না, কিন্তু অরাজনৈতিক নই।’ তিনি কতটা ইস্পাতদৃঢ় মনোবল ও বিপস্নবী চেতনার অধিকারী ছিলেন উপর্যুক্ত উক্তি তার প্রমাণ।
অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন : ‘এদেশের সমকালীন সাংস্কৃতিক ইতিহাসে অজিতকুমার গুহ এক অবি888sport app download for androidীয় নাম। লেখক হিসেবে তিনি অতিপ্রজ ছিলেন না, আর সৃষ্টিশীল রচনা তাঁর প্রতিষ্ঠার ভিত্তিও নয়। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র-888sport live footballের বিশ্রম্নতকীর্তি অধ্যাপক এবং এদেশের সংস্কৃতি-চিমত্মা-নির্মাণে তাঁর অবদান ও সাফল্য ছিলো প্রশ্নাতীত। প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তবুদ্ধির ভাবুক হিসেবে সংস্কৃতিজগতে তাঁর মনস্বিতা ও ব্যক্তিত্বের প্রভাব ছিল বিস্ময়কর। যে-কোনো রাষ্ট্রীয়-সামাজিক বিপর্যয়ে
ভাষা-আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী অজিতকুমার গুহের সাহসী অবস্থান ছিল অবধারিত।
(পূর্বোক্ত স্মারকগ্রন্থ, পৃ ১৪২)
ছয়
অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ নানা সভাসমিতি-সংগঠনের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন। সেসব সংগঠনের আলোচনা সভায় তিনি যে-বক্তৃতা করতেন তার আকর্ষণে বহু শ্রোতা ও সংস্কৃতিকর্মী তাঁর ভক্ত হয়ে ওঠে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বাংলা একাডেমি, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়, বাফা ও নানা 888sport live football-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে তাঁর গভীর 888sport live footballবোধ, প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিনিষ্ঠ ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণমূলক বক্তৃতা তাঁকে তাঁর কালের এক 888sport app download for androidীয় 888sport live footballবেত্তা ও সংস্কৃতি তাত্ত্বিকে পরিণত করে। মানুষ হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ। মানবিক বোধে দীপ্ত; সৌন্দর্যচেতনা, সংসৃকতিমনস্কতা ও পরিশীলিত জীবনচর্চায় অনন্য।
১৯৬০ সালে আমি যখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ অনার্সের ছাত্র, যখন কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলার সংগঠক নির্বাচিত হই, এই সংগঠনের প্রধান ছিলেন রোকনুজ্জামান খান দাদা ভাই আর উপদেষ্টা ছিলেন বেগম সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক অজিত গুহ, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, ফয়েজ আহমদ, ড. আবদুলস্নাহ আল-মুতী প্রমুখ। এই সূত্রেই আমি অজিত গুহ স্যারের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসি। পরবর্তীকালে সে-সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়। ১৯৬৩ সালে এমএ পাশ করার পর আমি কচি-কাঁচার মেলার সার্বক্ষণিক সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের কচি-কাঁচার মেলার আমন্ত্রণে দাদাভাই ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে সফর করি। আমাদের গড়ে ওঠার সময় এ ছিল এক চমৎকার আনন্দময় কাল। তখন আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল সফর করে দেশ, দেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, দেশের মানুষ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে যে-ধারণা লাভ করি তা আমাদের জীবনাভিজ্ঞতাকে ঋদ্ধ করে।
১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসে এমএ পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই আমার চাকরি হয়ে যায় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে। তবে সেখানে আমার চাকরি করার সুযোগ হয় মাত্র চার মাস। নভেম্বর মাসে এক দুপুরবেলা ব্যাচেলর কোয়াটার্সে খেতে বসেছি, তখন পিয়ন এসে বলল : ‘স্যার, 888sport app থেকে প্রফেসর অজিত গুহ আপনাকে ফোন করেছেন। দ্রম্নতপায়ে যেয়ে ফোন ধরলাম। স্যার বললেন : ‘জামান তুমি কি আজই সন্ধ্যায় 888sport app এসে জগন্নাথ কলেজে যোগদান করতে পারবে? আমি বলি, ‘স্যার আপনি বললে অবশ্যই পারবো।’ তিনি বলেন, ‘তাহলে আজ সন্ধ্যার সিফটেই যোগদান করবে। হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ তখন আজিমুদ্দিন আহমদ। তাঁকে বললাম যে জগন্নাথ কলেজে আমার চাকুরি হয়েছে। আজই সন্ধ্যায় যোগদান করতে হবে। তিনি বললেন : ‘এক মাসের নোটিশ চাই।’ নোটিশ দিলাম। এবং বিকেলে ক্লাস শেষে লঞ্চে করে জগন্নাথ কলেজে পৌঁছালাম। তখন মুন্সীগঞ্জ থেকে লঞ্চে দেড় ঘণ্টায় 888sport app পৌঁছা যেত।
কলেজে অজিত গুহ স্যারকে তাঁর বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে পেলাম। তিনি বললেন, ‘হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে চা নাস্তা খেয়ে নাও।’ ডেমনেস্ট্রশন ক্লাসে যেতে হবে। তখন জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নিয়ম ছিল ডেমনেস্ট্রেশন লেকচার। ওই লেকচারের সময় অধ্যক্ষ, সহ-অধ্যক্ষ এবং বিভাগীয় প্রধান ছাত্রদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে বসে থেকে নিয়োগপ্রার্থীর লেকচার শোনেন। তাঁরা সন্তুষ্ট হলেই চাকরি হয়। আমার ক্লাসেও এসে বসলেন অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান, সহ-অধ্যক্ষ বজলুর রহমান এবং বিভাগীয় প্রধান অজিত গুহ। ক্লাসে ছাত্র888sport free bet ৩৩৩ জন। শিক্ষক ক্লাস সামলাতে পারেন কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য ছাত্রদের কিছু দুষ্টুমি করার জন্যও আশকারা দেওয়া হয়। ক্লাস নিলাম। যতদূর মনে হয় রবীন্দ্রনাথের পয়লা নম্বর গল্পটি পড়িয়েছিলাম। মিনিট ২০ পরে স্যাররা চলে গেলেন। অজিত স্যার বলে গেলেন : ‘ক্লাশ শেষ করে আমার কক্ষে আস। ক্লাশ শেষে স্যারের সঙ্গে দেখা করি। স্যার অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, ‘তোমাকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
জগন্নাথ কলেজের বাংলা বিভাগে এভাবেই চাকরি হয়ে গেল। ফলে রাতে জগন্নাথে ক্লাস নিয়ে সকালে লঞ্চে মুন্সীগঞ্জ যাই এবং দিনে সেখানে ক্লাস নিয়ে বিকেলে 888sport app এসে সন্ধ্যায় জগন্নাথ কলেজে ক্লাস নিই। একমাস এভাবেই চালাতে হয়। তাহোক, জগন্নাথ কলেজের মতো দেশের একটা প্রধান কলেজে শিক্ষক হতে পারার আনন্দে আমি তখন আপ্লুত। শুধু কি তাই, আমি যাঁদের ছাত্র ছিলাম আমার কিংবদন্তিপ্রতিম সেইসব শিক্ষক অজিত গুহ, হাসান হাফিজুর রহমান এঁদের সহকর্মী হতে পারার গৌরব কী সামান্য! সহকর্মী হিসেবে শওকত আলী, রাহাত খান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকেও পেয়েছিলাম। সে এক দারুণ ব্যাপার!
অজিত স্যার প্রায়ই আমাদের তাঁর বাসায় খেতে বলতেন। সস্ত্রীকও ডাকতেন। তাঁর পাচকের নাম ছিল অনিল। স্যার নিজেও খুব ভালো রাঁধতে পারতেন। স্যার একবার তাঁর দিনের রুটিন বলেছিলেন। তা এরকম : ‘ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠি। তারপর ঘণ্টা দেড়েক পড়াশোনা করি। পড়ানোর বিষয় বাড়িতে না পড়ে ক্লাসে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। পড়াশোনা শেষ করে স্নান করি। স্নান সেরে প্রাতঃরাশের পর বাজারে যাই। বাজার থেকে ফিরে কলেজে যাই।’ বিকেলে কোনো সভা-সমিতিতে যোগদান বা বক্তৃতার অনুষ্ঠান।
আমার জীবনে অজিত গুহ স্যারের প্রভাব অপরিসীম। কতভাবেই না তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, সহায়তা করেছেন। তাছাড়া নিজে ডেকে এনে চাকরি দিয়েছেন। আমার বিয়ের সময় বরযাত্রীর জন্য বেশ কখানা গাড়ি দরকার। ষাটের দশকে 888sport app শহরের বাঙালিদের খুব একটা গাড়ি ছিল না। তবু তিনি কীভাবে কীভাবে আট-দশখানা মাইক্রোবাস ও কার জোগাড় করলেন। এবং বউভাতের দিন বিরিয়ারি রান্নার কাজেও বাবুর্চিদের নির্দেশনা দেওয়া এবং দেখভালের কাজটা করলেন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। তিনি সঙ্গে রেখেছিলেন আমার অগ্রজপ্রতিম সহকর্মী অধ্যাপক আবুল কাশেম চৌধুরীকে।
অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ শুধু আমার শিক্ষা ও দীক্ষাগুরুই ছিলেন না, ছিলেন অভিভাবকও। তাঁর মতো প্রকৃত মানুষ সকল দেশকালেই বিরল। তাঁর 888sport sign up bonusতে গভীর 888sport apk download apk latest version।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.