888sport appsে নাট্যচর্চা পেশাদারি ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি বটে, কিন্তু এর সংগঠন, পরিচালন ও উপস্থাপনায় পেশাদারিত্বের ছাপ রয়েছে পুরোপুরিভাবে। মঞ্চনাট্য888sport live chatীদের জন্যে পেশাক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারেনি, কেননা নিয়মিত নাট্যনিবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মঞ্চ একেবারেই নেই। কোনো বিশেষ মঞ্চকে ঘিরে একটি নাট্যদল বিকশিত হবে, তারা প্রতি রজনীতে অভিনয় করবে, দলের 888sport live chatী-কর্মীরা হবে সার্বক্ষণিক, তেমন কোনো কিছু তো কল্পনাই করা যায় না। ফলে নাটকের পেশাদারি ভিত্তি দাঁড় করাতে আমাদের আরো অনেককাল অপেক্ষায় থাকতে হবে। আশার কথা হলো, পেশাদারি মঞ্চভিত্তির জন্য বসে না থেকে নাট্য888sport live chatীরা শত প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে নাটককে 888sport live chatমাধ্যম হিসেবে দাঁড় করিয়ে ফেলতে পেরেছেন এবং 888sport appsে নিয়মিত নাট্যচর্চা এক অভিনব কাঠামো অবল¤¦ন করে পরিচালিত হয়ে চলেছে Ñ অবয়বে যা শৌখিন, সারসত্তায় পেশাদারি।
এ-রকম নাট্যকাঠামোর দুর্বলতার দিকগুলো আমরা জানি, নাটক পেশাদারি না হয়ে উঠতে পারলে অনেক কিছু আমাদের অনায়াত্ত থেকে যাবে, এমন খেদ প্রবীণ নাট্য888sport live chatীদের তরফ থেকে মাঝেমধ্যেই উচ্চারিত হয়। তা সত্ত্বেও বলতে হয়, বর্তমান যে-অপেশাদারি বিন্যাস তার রয়েছে এক মস্ত ক্ষমতার দিক। আমাদের নজরে বিশেষ না থাকলেও এর স্বীকৃতি দিতেই হয়। লক্ষণীয় যে, পেশাদারি নাটক অনেক বেশি পরিশীলিত, সুগঠিত ও ঝকঝকে হলেও প্রথমেই যা হারাতে বসে, সেটি হলো নাটক-নির্বাচনে স্বাধীনতা। নাটক যখন পেশাদার হয়ে ওঠে তখন তাকে যে বাণিজ্যিক হতেই হবে তেমন কথা নেই, পেশাদার নাট্যগোষ্ঠী পরিচালনার জন্য সমাজ, সরকার ও সংস্থার পক্ষ থেকে নানা ধরনের সাহায্য-সহযোগিতাও থাকে বটে, বিশেষত উন্নত দেশে, কিন্তু সবকিছুর পরও পেশাদারি গোষ্ঠীর নাটক-নির্বাচনে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপিত না হয়ে পারে না।
888sport appsের নাট্যদলগুলো নাটক-নির্বাচনে কতটা স্বাধীন তার পরিচয় আমরা নানাভাবে পাই। সম্প্রতি এরই এক বড় উদাহরণ মেলে ধরল নাট্যধারার ত্রয়োদশ প্রযোজনা অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা। মধ্যযুগে বিক্রমপুরের রাজপরিবারের এক সদস্য বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে দেশে দেশে পরিব্রাজকের ভূমিকা পালন করেছেন এবং বৌদ্ধধর্মমতে তিব্বতিদের দীক্ষিত করে আজও সে-দেশে স¥র্তব্য হয়ে আছেন। এই ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিয়ে নাটক-রচনা করেছেন অলোক বসু এবং দলের হয়ে নাট্যনির্দেশনাও তাঁর দেওয়া। ঐতিহাসিক চরিত্র নিয়ে নাটক কোনো নতুন বিষয় নয়। কিন্তু অলোকের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো অতীশ-সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য খুব সামান্যই মেলে, আর নাট্যকার হিসেবে তাঁর উদ্দিষ্ট ছিল ইতিহাসের যথার্থতার যথাসম্ভব অনুসারী হওয়া, কল্পনার পাখাবিশেষ মেলে না দেওয়া। ঘটন-অঘটন-পরিপূর্ণ ঐতিহাসিক চরিত্রকে নিয়ে কালজয়ী নাটক তো নাটকের জন্মলগ্ন থেকেই আমরা দেখে আসছি। কিন্তু ইতিহাসের চাইতে কাহিনী, ঐতিহাসিক চরিত্রের চাইতে ব্যক্তিমানবের রূপায়ণ তাতে বেশি ঘটে। অলোক বসু সে-রাস্তা মাড়াতে চাননি। ফলে ইচ্ছে করেই তিনি নাটকের বিকাশের জন্য আঁটসাঁট একটি পথ বেছে নিয়েছেন এবং সে-পথে চলতে নির্ভর করেছেন কতক ঐতিহাসিক রচনা-নিদর্শনের ওপর। নাট্যকার হিসেবে এখানে যে-সাহসের পরিচয় আমরা পাই সেজন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাতে হয়। এই সাহস সাফল্যের শিখরে নাট্যকার-নির্দেশককে নিয়ে যেতে পেরেছে কিনা, দলীয় প্রযোজনায় সাহসের সঙ্গে দক্ষতার কতটা সমন্বয় ঘটেছে সেসব অবশ্য পরবর্তী বিবেচনা, তবে এ-রকম প্রয়াসে ব্যর্থতা যদি থাকে সেটিও শেষ পর্যন্ত উপলব্ধির ভাণ্ডারে অনেক রত্ন জমা করে, এবং বলা যায়, সাহসী কোনো নাট্যপ্রয়াসই বিফলে যায় না।
সূত্রধার-বর্ণিত সাতটি দৃশ্য-পরম্পরায় নাট্য-আখ্যান সজ্জিত। কাহিনীর চাইতে বর্ণনা এখানে প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। যে-বর্ণনাত্মক রীতিকে সামনে নিয়ে এসেছেন সেলিম আল দীন, তা দ্বারা তরুণ নাট্যকাররা বিশেষ প্রভাবিত হয়েছেন এবং এ-থেকে অলোকও বাদ পড়েননি। তবে বর্ণনাত্মক রীতির রয়েছে নিজস্ব এক নাট্যক্রিয়া, পাশ্চাত্যের নাট্যরীতির সঙ্গে তার পার্থক্য ব্যাপক, কিন্তু নাটককে শেষ পর্যন্ত নাট্যক্রিয়া হয়ে উঠতেই হয় Ñ কী প্রাচ্যে কী পাশ্চাত্যে। সেসব বিস্মৃত হয়ে বর্ণনাকে নাট্যক্রিয়ার বিকল্প হিসেবে দেখলে চলবে না। যে-কোনো বর্ণনাই যে বর্ণনাত্মক নয়, সেটি অনুধাবন করে বর্ণনাকে নাটকের শরীরে গেঁথে সংলাপ ও নাটকীয়তার সঙ্গে তার সমন্বয় ঘটানো সহজ কাজ নয়। কিন্তু সেলিমের তরুণতর অনুসারী-অনুগামীদের মধ্যে এক্ষেত্রে ঘাটতি বড় প্রবল, অলোকের নাটকেও এর ছাপ রয়ে গেছে। ফলে বর্ণনা অনেক ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে প্রায় যেন স্টেটমেন্ট, কাহিনীর সঙ্গে তার যেমন ওতপ্রোত যোগ নেই, বরং কাহিনীর ফাঁক-ফোকরগুলো ভরবার জন্য যেন নেওয়া হয় বর্ণনার আশ্রয়, যেমন এককালে ছিল মধ্যমানের প্রচলিত নাটকে পাত্র-পাত্রীর স্বগতোক্তির ভূমিকা।
জ্ঞানের অন্বেষণকে নাটকের মূলভাব হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন অলোক বসু, লিখেছেন : ‘ভবে তার সাধনই বড় সাধন/ যে করে আমরণ জ্ঞানের অন্বেষণ/ জ্ঞান দেয় শক্তি আর জ্ঞান দেয় মুক্তি/ জ্ঞানীর বড় অস্ত্র হলো অকাট্য সব যুক্তি। অতীশ দীপঙ্করের জীবনকে এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার মধ্যে মুনশিয়ানা রয়েছে, তবে সেই দেখানোকে জীবনকথার মধ্যে মূর্ত করে তোলার কাজে সমপরিমাণ মুনশিয়ানা আছে বলা যাবে না। বর্ণনাত্মক রীতিটিও এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেনি। কেননা বর্ণনার মধ্য দিয়ে বলা যায় অনেক কিছু, কিন্তু নাট্যমুহূর্ত তৈরি এর দ্বারা হয় না। তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল দৃশ্য ‘সুবর্ণ দ্বীপ যাত্রা’; বস্তুত নাটকের এই পর্যায়টিই সবচেয়ে উজ্জ্বল যখন স্বল্পতম উপাদান নিয়েও নৌযাত্রার আবহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন নির্দেশক এবং যথার্থ অর্থেই মঞ্চে তিনি স্পেকটেকল দাঁড় করান। নৌযাত্রাকালে নাবিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সূত্রে লৌকিক উদাহরণসহযোগে গূঢ়জ্ঞানের পরিচয় যেভাবে মেলে ধরেন অতীশ সেখানেও গভীর উপলব্ধির স্বাক্ষর রয়েছে। জাতকের আখ্যানে যেভাবে লৌকিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ধর্মোপলব্ধির প্রকাশ দেখা যায়, এখানেও তেমনি উদাহরণ-সূত্রে মেলে জ্ঞানের পরিচয়। বস্তুত লৌকিক জীবনের সঙ্গে এই যোগ থেকেই ধর্মগুরুদের সিদ্ধি অর্জিত হয়। লৌকিক এই পটভূমি বিস্মৃত হলে নাটক দাঁড় করানো কঠিন হয়ে পড়ে, যেমন হয়েছে তান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে অতীশের অবস্থান বোঝাতে ডাকিনী-যোগিনীদের ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানানোর দৃশ্যে। মধ্যযুগের বাংলায় তন্ত্রসাধনার তান্ত্রিকতায় রূপান্তর এক ধরনের সামাজিক অবক্ষয়ের পরিচয় বহন করে। কিন্তু তন্ত্রবাদী জীবন দৃষ্টিভঙ্গি-সৃষ্টি ও সত্তাকে অনুভবের ক্ষেত্রে এমন কিছু উপাদান যোগ করেছিল যার বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা ছিল। ফলে বৌদ্ধধর্মে তান্ত্রিকতা বড় জায়গা করে নিতে পেরেছিল। তান্ত্রিকতার আচারসর্বস্বতা কিংবা আচারপ্রাধান্যের বিরুদ্ধে অতীশের যে-অবস্থান তার একটি সমন্বয়বাদী দিকও ছিল, যা সমাজের অনেক জটিল গ্রন্থির দিকে ইঙ্গিত করে। এইসব জটিল সম্পর্কজাল উপেক্ষা করে ডাকিনী-যোগিনীর ভোজসভার মাধ্যমে তন্ত্রের যে-ধরনের সরল উপস্থাপন, তা নাট্যদৃশ্য হিসেবে গুণসম্পন্ন হলেও নাট্যভাবনা সংহত করতে সাহায্য করেনি।
অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা নাট্যকারের জন্য কঠিন বিষয়। কেননা ঐতিহাসিক চরিত্রকে মূর্ত করতে হয়েছে ইতিহাসের বিপুলা উপাদান-বঞ্চিতভাবে। তবে এ-রকম একটি কাজে গবেষণা ও নাট্যচিন্তার সমন্বয় কোন সাফল্য বয়ে আনতে পারে তার এক সেরা উদাহরণ রয়েছে আমাদের হাতের কাছে, সৈয়দ শামসুল হকের নূরলদীনের সারাজীবন। কেবল প্রধান চরিত্র কিংবা ঘটনা নয়, সামান্যের মধ্যেও বিপুল তথ্য ভরে দিয়ে কীভাবে চরিত্রকে সজীব করা যায় সেটি আমরা দেখি ইংরেজ-চরিত্রের সংলাপে, যখন ভারতে আসার দীর্ঘ জাহাজযাত্রা, উত্তমাশা অন্তরীপ অতিক্রমের পর মনে ও সমুদ্রে যুগপৎ ঝড়ের দোলা, মফস্বলের ডাকবাংলোয় রমণীয় 888sport promo codeবঞ্চিত জীবন ইত্যাদি বহু কিছু সামান্য বাক্যের ছটায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, বুঝতে পারা যায়, নাট্যকারকে জানতে হয় অনেক, বলতে হয় পরম বাকসংযমতা নিয়ে। এই কুশলতা ছাড়া ইতিহাসকে তার ঐতিহাসিকতা নিয়ে সজীব করে তোলা দুরূহ।
নির্দেশক হিসেবে অলোক বসু অনেক বেশি শরীরী অভিনয়ের ওপর নির্ভর করেছেন। শরীরভঙ্গিমাকে অবলম্বন করে সামান্য উপকরণে সৃষ্ট ইঙ্গিতময়তায় জমকালো নাট্যদৃশ্য তৈরি করতে তিনি সচেষ্ট হয়েছেন। এক্ষেত্রে রতন থিয়ামের নাট্যকলা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে বলে মনে হতে পারে। বিশেষভাবে 888sport appর মঞ্চে রতন থিয়ামের উত্তরপ্রিয়দর্শিনী প্রযোজনা তো সহজে ভুলবার নয়। কিন্তু ফিজিক্যাল অ্যাকটিং ও স্পেকটেকলের একটি সমস্যার দিক হলো এখানে হয় সর্বতোভাবে সফল হতে হবে, নতুবা বিফল; অর্জনের কোনো মাঝামাঝি অবস্থান নেই। এ-দুইয়ের ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতি ও শ্রম। বাঙালি স্বভাবগতভাবে দেহভাষী নয়, তাদের দিয়ে শরীরী অভিনয় করানো আরো দুরূহ। ফলে বাচনিক অভিনয়ে নাট্যধারার 888sport live chatীরা পারঙ্গমতার পরিচয় দিলেও শরীরী অভিনয়ে সেই সিদ্ধি লক্ষ করা যায় না।
যৎসামান্য উপকরণ দিয়ে নাটক সাজিয়ে তোলার উদাহরণ অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা প্রযোজনা। উপকরণের চাইতে ভাবনার সম্পদ এখানে বেশি, ওটি এই নাটকের বড় সম্পদের দিক। মঞ্চসজ্জায় নেই জমকালো কোনো উপস্থাপনা, পোশাক কিংবা আলোক-পরিকল্পনাতেও সেই কথা খাটে। সর্বোপরি ইতিহাসের সামান্য যেসব উপকরণ ছিল নাট্যকারের হাতে সেসব সূত্র অবলম্বন করে তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি দাঁড় করাতে সচেষ্ট হয়েছেন। যদিও বলা হয়েছে, জ্ঞান-অন্বেষার কথা, বাস্তবে বৌদ্ধধর্মের অহিংসার বাণীর ওপরই জোর পড়েছে বেশি এবং এভাবে অতীশ দীপঙ্করের জীবনসাধনার ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেদিক দিয়ে নাটকের বিষয় মোকাবিলার একটি সঠিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছিল নাট্যধারা। সামান্য তথ্য, সামান্য উপকরণ, সামান্য সজ্জা দিয়ে মঞ্চে বিপুলাকে মূর্ত করার যে-সাধনায় ব্রতী হয়েছেন তারা, সেটি কেবল নাটকেই সম্ভব। তবে অধরাকে ধরবার এই প্রয়াস নিরন্তর শ্রমশীল সাধনার ব্যাপার। অনেক বিনিদ্র রাত, অনেক স্বেদ ঝরাবার পরও সোনার হরিণ নাগালের বাইরে থেকে যেতে পারে। অতীশ দীপঙ্কর সপর্যা-র জীবনসাধনা রূপায়ণের প্রয়াস তেমনিভাবে হয়তো নাট্যধারার নাগালের বাইরে থেকে গেছে, কিন্তু চিত্তের সামান্য সঞ্চয় নিয়ে যারা সন্তুষ্ট নন, হাত বাড়ান কল্পবনের সোনার হরিণের দিকে তারাই তো নবতর সম্পদে আমাদের সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন। তেমন একটি প্রয়াস আমরা মূর্ত হয়ে উঠতে দেখি নাট্যধারার প্রযোজনায়। তাই সফলতা-ব্যর্থতার উপরে জেগে থাকে নবীনের আকাশস্পর্শী স্পর্ধা, এই স্পর্ধাকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারা যায় না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.