অদৃশ্য কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মানুষটি

জাকির তালুকদার

ব্যারিস্টারের মুখের দিকে তাকালেই মনে হয় লোকটা কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগী। তার ওপর হতে পারে, গত রাতে বেচারা ইসপগুলের ভুসি খেতে ভুলে গেছে। তাই আজ সকাল থেকেই মেজাজটা বড় বেশি তেতো। মুখটায় সেরকমেরই ছায়া। একটা যুবতীর কাছে হিরো হওয়ার সুযোগ তার সামনে। তাই নিজেকে সে ব্যারিস্টারের চেয়ে বিচারকই ভেবে আসছে কয়েকদিন ধরে। পুরুষ মানুষের অদ্ভুত এক মনস্তত্ত্ব। আদালতের চত্বরে যাদের চলাফেরা, তারা সবাই এতদিনে জেনে গেছে যে, 888sport promo code-নির্যাতনবিরোধী আইনটারই অপব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। কলকাতার এক আইনজীবী ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বলেছিলেন, এ-ধরনের আইন পুরুষকে 888sport promo codeর এটিএম বুথে পরিণত করেছে। তবু অপছন্দের ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনটিকেই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগান নিজেকে সৎ এবং সমাজসচেতন হিসেবে দাবি করা আইনজীবীদের কেউ কেউ। এই ব্যারিস্টার কার্যত আদালতের বাইরেও অভিভাবক হয়ে দাঁড়িয়েছে যুবতীর। তাই তার কাছে অভিযুক্তকে শিক্ষা দেওয়া ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য নেই কয়েক সপ্তাহ ধরে। আইনের ধারা তো মুখস্থ করেই এসেছে, আবার সঙ্গে এনেছেন কয়েকজন 888sport promo codeবাদী অ্যাক্টিভিস্ট আর প্রগতিশীল সাংবাদিককেও। সব মিলিয়ে মোটামুটি একটা ‘লিঞ্চিং মব’।

কিন্তু কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটাকে যেন স্পর্শ করছিল না কোনোকিছুই। তার দিকে ঘৃণা ছুড়ে দিতে জমায়েত হওয়া মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল সে; কিন্তু দেখছিল না কিছুই। সে দেখছিল কেবল নিজের ভেতরের মানুষটিকে। একনাগাড়ে কথা বলছিল নিজের সঙ্গেই – আমি তো কখনো প্রেমিকাদের ছাড়া অন্য কোনো 888sport promo codeকে স্পর্শ করিনি! কোনো 888sport promo codeকে মিথ্যা প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে তার শরীর এবং অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করিনি। যখন কাউকে আর ভালোবাসতে পারছিলাম না, তখন তো ভালোবাসার অভিনয় চালিয়ে যাইনি।

তাকে অপদস্থকারীর দল চিৎকার করে গালি দিচ্ছিল – তুমি 888sport promo code-নির্যাতনকারী! তোমার বিচার হবে।

888sport promo code-নির্যাতনকারী!

এমন অভিযোগ তার নামে কীভাবে উত্থাপন করে লোকে?

সে কাউকে মানসিক নির্যাতনও করতে চায়নি কখনো। শারীরিক নির্যাতন তো দূরের কথা। কোনো মেয়ে যে-মুহূর্তে খুব দুর্বলভাবে হলেও ‘না’ শব্দটি উচ্চারণ করেছে, সঙ্গে সঙ্গে সে সেই শব্দটিকে মর্যাদা দিয়েছে। সে একবার সামনের লোকগুলোকে উদ্দেশ করে বলতে চায় – তোমরা কি কোনো 888sport promo codeর কাছে, কোনো যুবতীর কাছে আমার এই দাবির সপক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ করতে চাও? কোনো যুবতী যদি এমন ঘটনার পক্ষে আমার হয়ে সাক্ষ্য দিতে চায়, সেটা কি তোমরা বিশ্বাস করবে?

বলতে ইচ্ছা করলেও সে কিছুই বলে না। কারণ জানে যে, সামনের জমায়েতের কেউ কোনো যুবতীর মুখ থেকে অভিযুক্তের পক্ষে এমন বয়ান শুনলেও তা বিশ্বাস করবে না। কেননা, ওরা নিজেরা কোনোদিনও তার পরিস্থিতিতে মৃদু ‘না’ শব্দটিকে এতটা গুরুত্ব দিতে পারবে না। এতটা সংযমের সামর্থ্য অর্জন করতে পারে খুব কম পুরুষই।

তবে সে নিজে, এই পরিস্থিতিতেও, চার বছর আগেকার ঘটনাটি চোখের সামনে দেখতে পেতে থাকে। মেয়েটির নাম তো সে কখনো উচ্চারণ করবে না। নিজের কাছেও না। ঘটনাটিই শুধু মনে পড়ে। দুজনে আলোচনার মাধ্যমে সুবিধাজনক সময় আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। সময় হিসাব করেই সে অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছিল একটু আগেভাগে। মেয়েটাও ভার্সিটি থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। মেয়েটি বলেছিল, আজ আমি আমার দেবতাকে আমার পূজার নৈবেদ্য নিবেদন করব!

উত্তরে সে বলেছিল, আমি দেবতা নই। অথবা ভুল দেবতা। নৈবেদ্য উৎসর্গের পরে তোমার অনুশোচনা হতে পারে।

মেয়েটি বলেছিল, মানুষ চিনতে ভুল হতে পারে; কিন্তু দেবতা চিনতে ভুল হয় না। তুমি আমাকে গ্রহণ করো! আমাকে ধন্য করো! আমাকে পূর্ণ করো!

তারপর পাপড়ির মতো মেলে দিতে শুরু করেছিল নিজেকে। সেই সাদামাটা সাবলেট রুমটা তখন প্রতিমুহূর্তে পরিণত হয়ে উঠছিল প্রেমমন্দিরে। পূজারিণী একবার হচ্ছিল বনলতা সেন, একবার হচ্ছিল হেলেন। সে কাঙিক্ষত পুরুষের সামনে একের পর এক উন্মোচন করে চলেছিল বাৎসায়নের শৃঙ্গার অধ্যায়। মিলন অধ্যায়ে প্রবেশের আগে সে যুবতীকে জিজ্ঞেস করেছিল – মিথুনমুদ্রা কোনটি তোমার ভালো লাগবে?

তোমার যা যা ভালো লাগবে, আমারও তা-ই চাই। সব চাই! সবরকম চাই! তুমি তো অভিজ্ঞ দেবতা। আমাকে বাজাও!

তাদের পৌরুষ আর 888sport promo codeত্ব আবৃত করে তখন জলপাইয়ের পাতাও ছিল না। তাদের শরীরের ভেতরে এবং বাইরে তখন লাভাস্রোত। তারা অপেক্ষমাণ শয্যায় চলে গিয়েছিল। মেয়েটি শৃঙ্গারে সিক্ত হতে হতে বারবার বলছিল – আরো! আরো!

সে-ও তখন চূড়ান্ত যাত্রার জন্য প্রস্ত্তত। মেয়েটির হাতের মধ্যে তার উত্থিত পৌরুষ। নিচে আর ওপরে দুই শরীর এক হয়ে গেছে। ঠিক সেই সময়ে মেয়েটি বলে উঠল – না!

প্রথমে সে এই ‘না’ শব্দটির তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারেনি। তাই জিজ্ঞেস করেছিল – কী ‘না’? আর দেরি করা যাবে না? এখনই প্রবেশ করব?

মেয়েটি খুব মৃদুস্বরে বলেছিল – আমার খুব ভয় করছে। না করলে হয় না গো? আজ না করলে হয় না? এখন না করলে হয় না?

সে তৎক্ষণাৎ নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিল মেয়েটির ওপর থেকে। বলেছিল – অবশ্যই।

তারপর পরম যত্নে মেয়েটিকে শয্যা থেকে উঠে-বসতে সাহায্য করেছিল। মেঝেতে সত্মূপাকার বস্ত্রখ-গুলো এগিয়ে দিয়ে বলেছিল – তোমার কাপড় পরে নাও।

মেয়েটির তখন কাপড় পরতেও যেন দ্বিধা। কী করবে, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। কিন্তু তার তখন কোনো দ্বিধা ছিল না। কারণ ‘না’ শব্দটি সে পরিপূর্ণভাবে শুনতে পেয়েছিল।

মেয়েটি রিকশায় উঠে রওনা দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেলফোনে পাঠিয়েছিল আর্তধ্বনি – এতটা ভালো হতে তোমাকে কে বলেছিল!

ভালো! না তো! সে তো ভালো হওয়ার জন্য নিজেকে সংবরণ করেনি। কেন করেছে তা যুবতী বোধহয় বুঝতে পারবে না। অন্য কজনেই-বা বুঝবে!

 

তার বিচার করতে আসা এই জমায়েতেরও কেউ বুঝবে না। কারণ এদের আছে কেবল তার প্রতি জিঘাংসা। তাকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারলে এরা নিজেদের চোখে নিজেরাই ‘হিরো’ হয়ে উঠতে পারবে। সেটাই হবে এদের কুয়োজীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

 

জমায়েত তাকে উদ্দেশ করে বলল – তুমি 888sport promo code-নির্যাতনকারী! এ-কথা ও দোষ স্বীকার এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করলে আমরা তোমার শাসিত্মর মাত্রা কমিয়ে দেবো।

সে ওদের দিকে করুণার চোখে তাকায়। ওরা তো আর জানে না যে সে নিজেকে আত্মসমালোচনার জগতে সমর্পণ করে রেখেছে অনেক সময় আগে থেকে। জীবনের সবগুলো 888sport promo codeসঙ্গ 888sport sign up bonus আদ্যোপান্ত বিশেস্নষণ করে দেখছে, নিজের অজান্তেও কোনো 888sport promo codeকে কোনো ধরনের নির্যাতন করেছে কি না।

জমায়েত দাবি করছে যে, একজন যুবতী তার বিরুদ্ধে 888sport promo code-নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে। তিরিশ বছর যার বয়স, সে তো যুবতীই বটে।

যুবতীকে তুমি চেন? ব্যারিস্টারি ধরনের প্রশ্ন।

চিনব না কেন! খুব ভালো করে চিনি।

তার ওপর তুমি নির্যাতন চালাচ্ছ!

এ যে দেখছি একেবারে রায় দিয়ে দিচ্ছে! অবশ্য রায় দেওয়ার এখতিয়ার লোকটার আছে কি না সেটা নিয়েও ভাবে না সে। তার মন-মসিত্মষ্ক দখল করে আছে ‘888sport promo code নির্যাতন’ শব্দটি।

যে কি না কোনোদিন স্নেহ দেখানোর ছলেও কোনো মেয়েকে স্পর্শ করার সুযোগ নেয়নি, সে করেছে 888sport promo code-নির্যাতন! কোথাও কি একটা বড়সড় ভুল থেকে গেছে তার জীবনের কোনো বাঁকে?

শ্যালিকাদের সঙ্গে মানুষ ঠারে ঠোরে ইঙ্গিতময় ঠাট্টা-ইয়ার্কি করে। নাক টেপে, গাল টেপে, সুযোগমতো বেশি কিছুও। সমাজ এবং পরিবারে সেগুলোকে সহাস্য বৈধতা দেওয়া আছে। কিন্তু সে তো তেমন কিছুও কোনোদিন করেনি!

আবার সন্তও সে নয়। নিজেকে আসলে কোনোদিন ওইভাবে ভাবাই হয়নি।

তার বিচারের আয়োজন করা যুবতীর কথা ভাবে সে।

মেয়েটি তাকে বলেছিল – আমাদের পরিবার এই ছোট্ট শহরে খুব ঘৃণিত। আমাদের পুরুষরা সবাই মদ্যপ, লম্পট এবং অকর্মণ্য। তাই আমাদের বাড়ির মেয়েদের বাধ্য হয়ে নিজের জন্য এবং পরিবারের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। নিজের গতি নিজেরই করতে হয়। তাদের সবার জীবনই প্রশ্নবিদ্ধ, কণ্টকিত এবং মহল্লায় মুখরোচক আলোচনার খোরাক। আমি সেই পথে যেতে চাই না। আমাকে সাহায্য করুন।

সরাসরি এভাবে কথা বলাটা ভালো লেগেছিল তার। তবে কারো জন্য কিছু করার মতো ক্ষমতাশালী এবং ধনাঢ্যও সে নয়। তবু করতে পেরেছিল। সরকারি প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার পদে নিয়োগ পেতেও লাখ লাখ টাকা লাগে। তবু একে-তাকে ধরে সে বিনা পয়সায় সেটি করে দিতে পেরেছিল।

তারপর যুবতী এসেছিল ঋণ শোধ নয়, ঋণ স্বীকার করতে। তেমন লোভ-জাগানিয়া শরীর-সৌন্দর্য নয়। তবু শরীর ছাড়া মেয়েটির দেওয়ার যে আর কিছু নেই!

সে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল – আমি বেশ্যাগমন করি না। করিনি কখনো।

মেয়েটির চোখে পানি – আমাকে বেশ্যা বললেন!

না। তোমাকে বেশ্যা বলিনি। তবে আমি নিজেকে বেশ্যাগামী বলার কথা বলেছি। কোনোকিছুর বিনিময়ে 888sport promo codeর শরীর ভোগ করা মানেই তো আমার বেশ্যাগমন করা।

যুবতী প্রথমে বুঝতে পারেনি এ-কথার অর্থ। খুব কমজনই পারে। সে তখন খোলাসা করে বলেছিল – আমার কাছে টাকা উপহারের বিনিময়ে কোনো 888sport promo codeদেহ ভোগ করা মানে বেশ্যাগমন করা।

অধীনস্থ কোনো 888sport promo codeকে মুখে পদ-পদবি-প্রমোশন-অফিসে বাড়তি সুবিধার কথা না বলেও ভোগ করা মানে বেশ্যাগমন করা।

সামাজিক নিরাপত্তা বা অন্য কোনো সুরক্ষা দানের বিনিময়ে     কৃতজ্ঞতার শরীর গ্রহণ মানে বেশ্যাগমন করা।

পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেওয়ার কথা বলে কোনো ছাত্রীর সঙ্গে যৌনতা মানে বেশ্যাগমন করা।

কারো মুগ্ধতার সুযোগ নিয়ে তাকে ভোগ করা মানে বেশ্যাগমন করা।

সোজা কথা – প্রেম-ভালোবাসা ছাড়া যে-কোনো 888sport promo codeর সঙ্গে শোয়া মানে বেশ্যাগমন করা।

 

সে তো কোনোদিন এ-ধরনের কিছু করেনি। অথচ এরা তাকে

888sport promo code-নির্যাতক বলছে কেন?

সে তখন চরম বিভ্রান্ত। জমায়েত তার দিকে আঙুল তুলেছে যে-মেয়েটির করা অভিযোগে, সে তার চোখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে – আমি কি তোমার ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন চালিয়েছি?

মেয়েটি চোখ নামিয়ে নেয়।

সে কণ্ঠস্বর তীব্র ও তীক্ষ্ন করে মেয়েটিকে বলে – তুমি নিজে শুধু একবার বলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো। না হলে আমিই তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলব।

মেয়েটি কোনো কথা বলে না। বরং হঠাৎ করেই জমায়েত থেকে সরে যেতে থাকে। পেছন ফিরে হাঁটতে থাকে।

জমায়েত তখন ভগ্নোৎসাহ। তবু ব্যারিস্টার হাল ছাড়তে চায় না। বলে – আমি তোমাকে দেখে নেব!

সে নির্বিকার।

 

জমায়েত ভেঙে যায়।

তার এখন নির্ভার লাগার কথা। কিন্তু তা ঘটে না।

নিজেকে নির্দোষ জেনে আত্মপ্রসাদ লাভ করার কথা। কিন্তু কোনো স্বসিত্মর অনুভূতি আসে না।

সে বরং নিজের অতীত তন্নতন্ন করে খুঁজতে থাকে। কোথাও কি রয়ে গেছে তার দ্বারা 888sport promo code-নির্যাতনের কোনো ঘটনা? কিংবা গোপন কোনো ইচ্ছা?

বাইরের কোলাহল থেমে গেছে। তাকে ক্রুশবিদ্ধ করতে আসা লোকগুলো ফিরে গেছে বিফল মনোরথ হয়ে।

কিন্তু সে নিজের কাছে নিজের উত্তর খুঁজতেই থাকবে।

তার সামনে অপেক্ষা করছে অনেক প্রহরের আত্মনিগ্রহ। r