অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ইতিহাস-চেতনা

এক
‘দেশ মানে দেশের মানুষ। মানুষ হইল গিয়া দেশের আসল শক্তি। দেশের মানুষগরে আপনারা ডেড ওয়েট কইরা থুইছেন। আমাগ দেশের মানুষের একটা বিশেষ যোগ্যতা যা দিয়ে ইন্টারন্যাশনালি যে কোন দেশের মানুষের লগে তারা কমপিট করবার পারে।’

  • অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক মূলত রাষ্ট্র888sport apkের মানুষ। কিন্তু রাষ্ট্র আর 888sport apkকে তিনি পাঠ করেছেন ইতিহাসের মানদ–। স্যারের আগ্রহের বিষয় ছিল বৈচিত্র্যময়, কিন্তু সেসবের মাঝে এক সাধারণ মিলও পাওয়া যায়। তাঁর সারাজীবনে অধীত ব্যাপক পাঠের যদি আমরা বিচার করতে বসি দেখবো, পাঠের একবারে প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে ‘মানুষ’, আর সেই মানুষ ইতিহাসের মানুষ। মূলত সারাজীবন মানুষই পাঠ করেছেন তিনি। ‘মানব সম্পর্কিত বিদ্যা’র সকল বিষয় তাঁকে সর্বদা মুখোমুখি করিয়েছে ইতিহাসের। আর কে না জানে মানবজাতির ইতিহাস মানেই পৃথিবীর ইতিহাস।
আহমদ ছফা লিখেছিলেন, ‘প্রফেসর রাজ্জাকের চরিত্রের প্রণিধানযোগ্য যে বৈশিষ্ট্যটি আমি সব সময় সশ্রদ্ধ বিস্ময়ে লক্ষ্য করে আসছি, সেটি হলো তার নিজের দেশ ও সমাজের প্রতি নিঃশর্ত অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার বোধই প্রফেসর রাজ্জাককে অন্য সকলের থেকে আলাদা করেছে।’
আমি মনে করি, যে-কোনো বিষয়ের বিশেস্নষণে এই অঙ্গীকারবোধ এক পরোক্ষ জ্বালানি জুগিয়েছে স্যারকে আজীবন।
শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিষয়ে অধ্যাপক রাজ্জাকের আলাদা কোনো খ্যাতি না থাকলেও ব্যক্তিপর্যায়ে তাঁর কথোপকথন আর আড্ডার বক্তব্যে যেমন থাকত প্রাজ্ঞতার জলছবি, তেমনি যে-কোনো বিষয়ের বুক চিরে বের হয়ে যেত ইতিহাসের কঙ্কাল। নানান আড্ডা, 888sport sign up bonusচারণা আর কথনে অধ্যাপক রাজ্জাক যত বিষয়ের অবতারণা করেছেন তা থেকে তাঁর ইতিহাস-চেতনা কেবল উদ্ভাসিত হয় না, ইতিহাসের জটিল-কুটিল বিষয়ের সহজ, স্বাভাবিক আর দার্শনিক ব্যাখ্যাও মেলে। বাংলার ইতিহাস থেকে ইউরোপের ইতিহাস, রুশ বিপস্নব থেকে সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে কলা বিভাগের এমন কোনো শাখা নেই যাকে অধ্যাপক রাজ্জাক ইতিহাসের পরশপাথরে যাচাই করেননি। তাই তাঁর শ্রোতারা ‘অ্যাকাডেমিক’ অক্ষরের মৃত বোধের বাইরে এসে উজ্জীবিত হতো। ইতিহাসের আলোকে যে-কোনো ঘটনার বিস্ময়কর সারল্যময় ব্যাখ্যা উঠে আসত, যা থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও কালের অবয়ব জীবন্ত হয়ে ধরা দেয় আমাদের সামনে – এ সবকিছুই স্যারের অসাধারণ পা–ত্যের সাক্ষ্য বহন করে।

দুই
বাঙালি মুসলমান সমাজকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার পেছনে অধ্যাপক রাজ্জাকের ভূমিকার সঙ্গে এই বঙ্গের আর কারো তুলনা হতে পারে না। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন হয়েছিল, যা মুসলিম সমাজে মুক্তচিন্তা চর্চার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছিল, সে-কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবং এই আন্দোলনের কুশীলবদের অনেকেই রাজ্জাক স্যারের চাইতে বয়সে বড় ছিলেন, এমনকি ছিলেন শিক্ষকস্থানীয়। কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন এই আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিদের একজন। আরো ছিলেন কাজী ইমদাদুল হক, আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, আবুল ফজল প্রমুখ। রাজ্জাক স্যার কাজী সাহেবের গুণমুগ্ধ এবং স্নেহভাজন ছিলেন। কিন্তু সেই বুদ্ধি মুক্তির আন্দোলনের মর্মাবেগ তাঁকে স্পর্শ করেছিল, এমন মনে হয় না। ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের লোকেরা পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে ধর্ম এবং সামাজিক সংগঠনের মধ্যে একধরনের সংস্কার-আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। এবং তাঁরা সর্বধর্মসমন্বয়ের নামে ‘ব্রাহ্ম সমাজ’ নামক পৃথক সামাজিক দর্শনের জন্ম দিয়েছিলেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক মুসলিম 888sport live football সমাজের সভ্যরা ব্রাহ্মসমাজের আদলে বাঙালি মুসলমান সমাজের চিন্তাভাবনা রূপায়িত করার চেষ্টা করতেন। অন্তত ব্রাহ্মসমাজের আদল তাঁদের অনেকেরই মনে ক্রিয়াশীল ছিল, সেই জিনিসটি রাজ্জাক স্যারকে টানেনি।
রাজ্জাক স্যার ঊনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু মধ্যবিত্তের জাগরণকে হিন্দু সমাজের ওপরতলার জনগোষ্ঠীর একটা অংশের রূপান্তর ভাবতেন। বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের বিকাশ ছাড়া এই রূপান্তরের কোনো কিছুই মুসলমান সমাজের জন্য ইতিবাচক এবং অনুকরণযোগ্য – এ-কথা মনে করতে পারেননি। হিন্দুসমাজ থেকে উদ্ভূত চিন্তাভাবনা
হিন্দু সমাজকে ঘিরে আবর্তিত হতো। সেই সংকীর্ণ সংকুচিত বলয় কখনো মুসলমান সমাজকে অপশন দেবে – সে-যুগের অনেক মুসলিম ব্যক্তির মতো রাজ্জাক স্যার বিশ্বাস করতে পারেননি।
এই পাক-ভারত উপমহাদেশের রাজনীতি আর রাজনীতিকরা ছিলেন অধ্যাপক রাজ্জাকের বিশেষ আগ্রহের বিষয়। এমনকি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে রাজ্জাক স্যারের গবেষণার বিষয় ছিল ‘ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দলসমূহ’। নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাস বা আস্থা বা ভালোলাগা প্রকাশে কখনো তিনি ছলনা করেননি।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক পাকিসত্মান আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। মুসলিম লীগ পাকিসত্মান প্রতিষ্ঠার দাবি উত্থাপন করেছিল। আর রাজ্জাক স্যার মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিসত্মান দাবির সমর্থক ছিলেন। তিনি কী কারণে পাকিসত্মান দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন তার একটা কৈফিয়ত দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। সেই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তিনি মনে করেছিলেন, পাকিসত্মানের প্রতিষ্ঠা হলে এই বাংলার মুসলমান সমাজের উপকার হবে। ভারতবর্ষকে খ–ত না করে মুসলিম-হিন্দু সমস্যা-সমাধানের হয়তো পন্থা ছিল; কিন্তু সেটাকে অনুসরণ করেনি কেউ। ‘যদি’ আর ‘কিন্তু’ দিয়ে ইতিহাস হয় না, যা ঘটে গেছে তাই ইতিহাস।
রাজ্জাক স্যার নানান আলোচনায় জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব ও পাকিসত্মান আন্দোলনের বিষয়ে তাঁর নিজস্ব যুক্তি দিয়ে গেছেন। সেসব কেউ নাও মানতে পারেন কিন্তু সেসবের ভেতরের মোদ্দা সত্যকে কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। যেমন এক জায়গায় তিনি বলছেন, ‘আপনি এখন ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কথা কইতাছেন। তখন সিচুয়েশন আছিল এক্কেরে অন্যরকম। একটি জিনিস মনে রাখবেন, 888sport alternative link অইলো গিয়া আধুনিক সোসিয়াল ডিস্কোর্স। বাঙ্গালী হিন্দু মুসলমান শত শত বছর ধইরা পাশাপাশি বাস কইরা আইতেছে। কিন্তু 888sport alternative link লেখার সময় ডেলিবারেটলি মুসলমান সমাজরে ইগনোর কইরা গেছে। দুই একজন ব্যতিক্রম থাকবার পারে। বড় বড় সব হিন্দু লেখকের কথা চিন্তা কইরা দেখেন। তারা বাংলার বায়ু-বাংলার জল এই সব কথা ভালো কইরাই কইয়া গ্যাছে কিন্তু মুসলমান সমাজের রিপ্রেজেন্টেশনের কথা যখন উঠছে, সকলে এক্কেরে চুপ। মুসলমান সমাজরে সংস্কৃতির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এই যে স্টাবর্ন আটিচিউড সেই সময়ে তার রেমেডির অন্য কোনো পন্থা আছিল না।’
আবার 888sport appsকে পাকিসত্মান থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ধারণাটিও রাজ্জাক সাহেবের মস্তক থেকেই এসেছিল বলে অনেকে মনে করেন। ভারত ভেঙে পাকিসত্মান হয়েছে এক জাতিতত্ত্বের মরণ ঘটিয়ে দ্বিজাতিতত্ত্বের বিজয়-সূচনায়। আবার পাকিসত্মান ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে দ্বিজাতিতত্ত্বের মৃত্যু ঘটল। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্যে রাজ্জাক স্যার যে-অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন তা সঠিক নাকি বেঠিক ছিল – ইতিহাসের সেই সাক্ষ্যের জন্য আরো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত মতের সপক্ষে তাঁর প্রকাশ সুস্পষ্ট।
দিল্লি থেকে প্রকাশিত ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়া সম্পাদনা করতেন প্রখ্যাত শিখ লেখক খুশবন্ত সিং। সেখানে ছয় দফার মূল প্রণেতা বলে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এবং তাঁর উল্লেখযোগ্য স্টুডেন্টের মধ্য থেকে প্রফেসর রওনক জাহান পাকিসত্মান ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন গ্রন্থটিতে পাকিসত্মানের দুই অংশের অর্থনীতির তুলনা করে দেখিয়েছিলেন পাকিসত্মানের অখ-তার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
প্রখ্যাত রাষ্ট্র888sport apkী স্যার হ্যারল্ড লাস্কি ছিলেন রাজ্জাক স্যারের পিএইচ.ডি সুপারভাইজার। তিনি ছিলেন জহরলাল নেহেরুর অনুরক্ত এবং রাজ্জাক স্যারকে জহরলাল নেহেরুর সঙ্গে তুলনা করতেন বারবার। একদিন আব্দুর রাজ্জাককে বললেন, ‘তুমি চেষ্টা করলে নেহেরুর মতো হইতে পারবা।’ দ্বিতীয়বার যখন এই একই কথা বললেন, রাজ্জাক স্যার চিন্তা করলেন আজকের এই মনোভাব আর বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না। হ্যারল্ড লাস্কির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি সরাসরি বলেছিলেন, ‘মিস্টার লাস্কি, আই ডু নট উইশ টু বি মেনশন্ড উইথ নেহেরু, আই এম এ মেম্বার অফ মুসলিম লীগ অ্যান্ড এ ফলোয়ার অফ মিস্টার জিন্নাহ!’
রাজ্জাক স্যার কেবল মুসলিম লীগ সমর্থক হিসেবেই মিস্টার জিন্নাহকে পছন্দ করতেন না, এর পেছনে কিছু রাজনৈতিক ও নৈতিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন নানান সময়ে। একবার বলেছিলেন, ‘দুইজন মানুষের মধ্যে কমপেয়ার কইরা দেখেন তো। বারীন ঘোষের মানিকতলা বোমা মামলার সময় চিত্তরঞ্জন দৈনিক দুই হাজার টাকা ফিস নিত। কোর্টে যাইবার আগে টাকাটা তারে দিতে অইত। জিন্নাহ সাহেব এক মাস ধইরা তিলকের একটা মামলা করছেন। ফিসের কথা যখন উঠল বলছিলেন, ‘আই ক্যান নট ক্লেইম ফিস ফ্রম এ পারসন হু ইজ নট ফাইটিং হিস ইন্ডিভিজুয়াল ইন্টারেস্ট’।’
লর্ড রিডিংয়ের সূত্র ধরে রাজ্জাক স্যার জানাচ্ছেন, ‘লর্ড রিডিংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র একটা বায়োগ্রাফি প্রকাশ করেন। তিনি যতদিন ইন্ডিয়াতে ছিলেন প্রতি সপ্তাহে তাঁর পুত্রের কাছে একটা কইরা চিঠি লিখতেন। ভারতের যে সকল ডিগনিটরির সাথে তাঁর দেখা অইত, তাগো সম্পর্কে লর্ড রিডিং তাঁর প্রাইমারি ধারণাটা প্রকাশ করতেন। মি. গান্ধীর লগে যখন রিডিংয়ের দেখা অইছে, লর্ড রিডিং তাঁর সম্পর্কে লিখছেন, ‘এই লোকের সাথে আমাগো ব্যবসা জমবে ভালা!’
এইভাবে যত ইন্ডিয়ান লিডারের সঙ্গে দেখা অইছে সকলকে একটা ক্যাটাগরিতে ফেলছেন, কিন্তু মি. জিন্নাহর সঙ্গে তাঁর দেখা হওনের পরের চিঠিতে এক্কেরে সুর পালটাইয়া গেল। পুত্রকে লিখলেন, ‘এই লোক এক্কেরে বেয়াড়া। ইউ উইল হ্যাভ ট্রাবল ইন হ্যান্ডলিং মি. জিন্নাহ’।’
১৯৪৭-এর দেশভাগের পরে ‘দ্বিজাতিতত্ত্বের’ তথাকথিত জনক হিসেবে যেমন জিন্নাহ সাহেবকে দেখানো হলো, তেমনি পাকিসত্মানকে পরিচয় করানো হলো সাম্প্রদায়িক আর ভারতকে সেক্যুলার রাষ্ট্র হিসেবে। এ বিষয়ে রাজ্জাক স্যার খুব মজার এক 888sport sign up bonusচারণা করেছিলেন।
১৯৪৭ সালে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত লাইফ ম্যাগাজিনের একটা কভারের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘একবার
(১৯৪৭-এ) লাইফ ম্যাগাজিনে ইন্ডিয়ার ইন্ডিপেন্ডেন্সের উপর কভার স্টোরি করছিল। অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠানে নেহেরু খালি গায়ে বইসা মন্ত্র পড়ছেন, তারে ঘিইরা আছেন মন্ত্রীমণ্ডলী বেদির চাইর পাশে। বেদি থেইক্যা দূরে খাড়াইয়া আছে দুইটা মানুষ, আম্বেদকর আর মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানটা হইতেছে বেদের নিয়ম অনুসারে, সেইখানে অহিন্দুর থাকনের পারমিশন নাই। লাইফ ম্যাগাজিন একটা মজার ক্যাপশন দিছিল, ‘বার্থ অফ এ সেক্যুলার স্টেট’।’

তিন
‘একটা কোটেশন আপনে লেইখ্যা রাখেন, সুযোগমতো ব্যবহার করবার পারবেন। দেয়ার আর পিরিয়ডস ইন দ্য হিস্টোরি হোয়েন ক্রলিং ইস দ্য বেস্ট মিন্স অফ কম্যুনিকেশন। এই হামাগুড়ি দেওনের পালস্নায় ইন্টেলেকচুয়ালরা সকলের আগে থাকে।’

  • অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের অভ্যাস ছিল যে-কোনো বিষয়কে তিনি পাঠ করতেন ইতিহাসের আয়নায় ফেলে। রাষ্ট্র888sport apk আর অর্থনীতি তো তাঁর নিজের বিষয়, এমনকি 888sport live footballের যে-কোনো বিষয়কে স্যার বিশেস্নষণ করতেন এমন এক প্রক্রিয়ায়, যার ভেতর থেকে একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব ঠিকই বেরিয়ে আসত। সেই দেখাটা এতই সরল যে তাঁর শ্রোতারা চমকে উঠে ভাবতেন, এমনভাবেও চিন্তা করা যায়? উদাহরণ হিসেবে শেক্সপিয়র সম্পর্কে তাঁর এক উক্তিকে আনা যায়।
এক আলোচনায় অধ্যাপক রাজ্জাক বলছেন, ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিসের শাইলকের সেই বিখ্যাত উক্তিটি আপনাদের মনে পড়ে কিনা। আদালতে যখন শাইলককে শাসিত্ম দেবার ভয় দেখাইতেছিল শাইলক জবাবে কইছিল, ‘এ জু’স বস্নাড ইস অলসো রেড।’ এখানে শেক্সপিয়ারের আসল প্রতিভা ফুইটা বাইর অইছে। শেক্সপিয়ার ষোড়শ শতাব্দীর মানুষ। সেই সময়ে ইউরোপে ইহুদিগো কী অবস্থা ভাইবা দেখেন। ইউরোপের দেশে দেশে ইহুদিদের উপর যেরকম জুলুম অইতাছিল হিটলারের চাইতে কিছুটা কম বলা যাইব না। এরকম একটা সময়ে শেক্সপিয়ার মাত্র কলমের এক টানে তামাম ইহুদিদের মনুষ্য সমাজের অংশ বইলা প্রমাণ করলেন। চিন্তা কইরা দেখেন কি অসম্ভব ব্যাপার। অঘটনঘটনপটীয়সী প্রতিভা বইলাই শেক্সপিয়ারের পক্ষে ওইটা সম্ভব হইছিল। বেবাক মধ্যযুগ তালাশ কইরা দেখলেও এই রকম বিদ্যুতের মতো ঝলক দেওয়া একটা লাইন আপনি খুঁইজা পাইবেন না।’
এই যে শেক্সপিয়রের মতো জগদ্বিখ্যাত লেখকের লেখার ভেতর থেকে বের করলেন ইতিহাসের এমন এক সুতো, যা দিয়ে আজ পর্যন্ত ইউরোপের রাজনীতির বিভিন্ন কোণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বাংলা ভাষা ও 888sport live football নিয়ে স্যারের এমন অনাস্বাদিতপূর্ব চিন্তা আমাদের বিস্ময় জাগায়, উদ্বুদ্ধ ও চালিত করে নতুন পঠনের দিকে।
বাংলার রেনেসাঁস ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রধান পুরুষদের নিয়ে অধ্যাপক রাজ্জাকের নিজস্ব ধারণা অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি তাঁর মতো করে যেমন অনেক বড় ঘটনা ও ইতিহাসের বড় মানুষদের সমালোচনা করেছেন, ভেঙে দিয়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠিত ভাবমূর্তি, তেমনি সকলের প্রাপ্য স্বীকৃতি দিয়েছেন অকুণ্ঠভাবে। ইতিহাস-পাঠের এক্ষেত্রে তিনি একেবারেই ‘সেক্যুলার’।
একদিন রাজ্জাক স্যার একজন খ্যাতনামা ইতিহাসের অধ্যাপকের সঙ্গে উনবিংশ শতাব্দীর ইতিহাস নিয়ে আলাপ করছেন। ভদ্রলোক বেঙ্গল রেনেসাঁস যে এই অঞ্চলের ইতিহাসে খুব একটা বড় ঘটনা প্রমাণ করার জন্য অনেক কথা বলছিলেন। জবাবে রাজ্জাক স্যার বললেন, ‘আপনারা নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরিকে গেস্নারিফাই করার জন্য যত কথাই বলেন না কেন, বেশি দূর নিয়ে যাওন কিন্তু আপনাগো সম্ভব হইব না। যখন সিপাহী বিদ্রোহ চলছিল আপনাগো তথাকথিত মহাপুরুষেরা তখন কোন ভূমিকা পালন করেছিলেন, মনে মনে কমপেয়ার কইরা দেখলে নিজেই জবাব পাইয়া যাইবেন।’
অধ্যাপক রাজ্জাকের মতে, ‘আধুনিক বাংলা গদ্যের বিকাশ হইল ঊনবিংশ শতাব্দীর সবচাইতে মূল্যবান অবদান। আপনারা রামমোহন রায়কে একেবারে আকাশে তুইল্যা ফেলাইছেন। তার লগে মীর সওদার তুলনা করলে ফারাকটা বুঝতে পারবেন। মীর সওদারে উর্দু গদ্যের জনক কওন যায়। মীর আর রামমোহন দুইজন কনটেম্পোরারি। একবার অযোধ্যার নবাব বাজার দেখবার গেছিলেন। বাজারে সমস্ত মানুষ নবাবের সামনে তাজিম দেখাইয়া বাঁচে না। সওদা তখন এক দোকানে বইয়া হুঁকা খাইতে আছিল। তারে যখন জানানো হইল নবাব সাব আইছে, আপনি তাজিম দেখাইতে আসেন, সওদা জবাব দিলো ‘ম্যায় ভি উর্দু জবান কা নওয়াব হ্যায়। মগর কঔন পুঁছে?’ দুজনের পার্সোনালিটি কমপেয়ার কইরা দেখেন। রামমোহনকে বিলেতে পাঠানোর সময় ‘রাজা’ টাইটেল দিলেন বাহাদুর শাহ্‌ জাফর। কিন্তু বাহাদুর শাহেরই রাজত্ব ছিল না। রামমোহন হেই টাইটেল গোটা জীবন আগলে রাখলেন।’
হিন্দু সমাজের সেক্যুলার চিন্তাভাবনা যে অনেক আগে শুরু হয়েছে এবং সেই আধুনিক সেক্যুলার ভাবনার পেছনে তথাকথিত বেঙ্গল রেনেসাঁস পুরুষদের অবদান আছে – সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরে রাজ্জাক স্যার জানাচ্ছেন, ‘কথাটা ঠিক, আবার ঠিক না। যে জিনিসটা কইবার লাগছেন, মানতে আমার আপত্তি আছে। আপনারা রামমোহনরে রেনেসাঁর মানুষ কইবেন, কিন্তু হ্যায় কী করছে? তার মতো এমন ধর্ম প্রচার আগেও ইন্ডিয়ার অনেক মানুষ কইরা গেছেন। আমি তো তার বাংলা ভাষার চর্চা ছাড়া উল্লেখ করবার মতো কোনো কাজ খুঁইজা পাই না।’
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক রামমোহন রায় সম্পর্কে এভাবে ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছেন যে, ‘রাজা রামমোহন রায় আসলে ‘ব্যবসায়ী মানুষ’, পারমিট হান্টার। বেসিক্যালি ইট ইজ দ্যাট। তিনি ৪০ টাকা মাইনের চাকরি করতেন এবং সেই চাকরি থেকেই ১০ হাজার টাকার জমিদারি করলেন। ৬/৭ বছর চাকরি করেছিলেন। সারাজীবন বাবার সঙ্গে মোকদ্দমা করেছেন আর বড় বড় কথা বলছেন।’
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কেও রাজ্জাক স্যারের বিশেস্নষণ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ‘যে সময় বঙ্কিমের 888sport alternative linkগুলো প্রকাশ পাইবার লাগছিল, সেই একই সময়ে বটতলার মুসলমানি পুঁথিগুলাও মুদ্রণযন্ত্রে ছাপা হইয়া বাইর অইতে আছিল। বঙ্কিমের 888sport alternative link দুই আড়াইশোর বেশি ছাপা অইত না। কারণ আধুনিক 888sport live football পড়ার পাঠক আছিল খুব সীমিত। কিন্তু দেখতে পাইবেন মুসলমানি পুঁথি ছাপা হইতেছিল হাজারে হাজারে। বঙ্কিমের বিষয়বস্ত্তর সঙ্গে পুঁথির বিষয়বস্ত্তর তুলনা করলে ডিফারেন্সটা সহজে বুঝতে পারবেন। পুঁথির বিষয়বস্ত্ত অতি সেক্যুলার কিন্তু চিন্তাপদ্ধতি মধ্যযুগীয়। আর বঙ্কিমের চিন্তা আধুনিক কিন্তু বিষয়বস্ত্ত ধর্মীয়।’
আব্দুর রাজ্জাক স্যারের কথায়, ‘আধুনিকতা জিনিসটা তো ভালো কইরা বুঝন লাগবো। আধুনিকতা জিনিসটি দুনিয়ায় একই সময়ে আইছে দশ বছর আগে কিংবা দশ বছর পরে। বঙ্কিমের তুলনায় তলস্তয় দীর্ঘজীবন পাইছিলেন, সেইদিক দিয়ে দেখতে গেলে তলস্তয় বঙ্কিমের কন্টেম্পোরারি। দুজনের লেখার কন্টেন্ট মিলাইয়া দেখেন, তলস্তয় কমন ম্যানকে কী চোখে দেখছেন আর বঙ্কিম কী চোখে দেখছেন। বঙ্কিমের একটা ইনফেরিয়রিটি কমপেস্নলক্স আছিল। পড়াশোনা অইছিল মুসলমানের টাকায়। মহসীন ফান্ডের টাকায় তিনি লেখাপড়া করছিলেন, মুসলমানের বিরুদ্ধে কলম ধরে সেই ঋণ শোধ করেছিলেন।’
রাজ্জাক স্যারের মতে, ‘নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরিতে সিংহপুরুষ একজন, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।’ এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তুলনা করতে তিনি রাজি নন। তিনি বলছেন, ‘বিদ্যাসাগরমশাই ছাড়া দেবেন ঠাকুর বলেন, বঙ্কিম বলেন, কেশব বলেন, সকলে তো নতুন কইরা রিভাইভিলিজমের বিকাশ ঘটাইছেন। আদার দেন লিটারেরি ট্যালেন্ট 888sport app বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের যদি বিদ্যাসাগরের মতো মানুষের সঙ্গে তুলনা করেন, ‘হি কামস নো হোয়ার নিয়ারার টু দেম’।’
তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি বড় মানুষ নন? রাজ্জাক স্যারের মতে, ‘রবীন্দ্রনাথ বড় লেখক, মানুষ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগর কিংবা তাঁর মতো মানুষদের ধারেকাছেও আসতে পারেন না। বড় লেখক বড় মানুষ এক না। বড় লেখকদের মধ্যে বড় মানুষের ছায়া থাকে, আর বড় মানুষটা আসলেই বড় মানুষ, লেখক কবি রাজা বলে সে রকম আচরণ না করলেও চলে।’
রবীন্দ্রনাথ কি ব্যতিক্রম নন? রবীন্দ্রনাথ কি বাঙালি জনগোষ্ঠীর ভাষাকে উৎকর্ষের একটা বিশেষ স্তরে নিয়ে যাননি?
রাজ্জাক স্যারের বক্তব্য এবার আরো পরিষ্কার, ‘রবীন্দ্রনাথ ব্যতিক্রম হইল ক্যামনে, তিনি তো ওই ক্যাটাগরির মধ্যেই পড়েন। বাংলা ভাষাটা বাঁচাইয়া রাখছে চাষাভুষা, মুটে, মজুর। এরা কথা কয় দেইখা তো কবি 888sport app download apk লিখতে পারে। সংস্কৃত কিংবা ল্যাটিন ভাষায় কেউ কথা কয় না, হের লাইগা এখন সংস্কৃত কিংবা ল্যাটিন ভাষায় 888sport live football লেখা হয় না।’
কিন্তু রাজ্জাক স্যার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন রবীন্দ্রনাথের 888sport liveসমূহের। তাঁর ভাষায়, ‘রবীন্দ্রনাথ তাঁর সামাজিক 888sport liveে যে-সকল এম্পিরিক্যাল কথাবার্তা কইছেন সেগুলো খুব কাজের জিনিস অইছে। এই নিয়ে বেশি মানুষরে কথাবার্তা কইতে দেখন যায় না। আমার ইচ্ছা আছিল যে সকল সামাজিক প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথের 888sport liveে স্থান পাইছে সেগুলার একটা তালিকা করা।’
শুধু বাংলার রেনেসাঁস নয়, ইউরোপের রেনেসাঁস, সেখানে খ্রিষ্টজগতের পালটে যাওয়া আর ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সেসবের পার্থক্য রাজ্জাক স্যার বিশেস্নষণ করেছেন নিতান্তই সরল করে। আমার ভাবতে অবাক লাগে, কত পরিমাণ জানা থাকলে, ইতিহাসের ক্রস চেকিংয়ের পরে এমন পরিষ্কার দৃষ্টি সম্ভব। স্যার মনেপ্রাণে একজন খাঁটি সেক্যুলার মানুষ ছিলেন। কিন্তু বাঙালি মুসলমান সমাজের সেক্যুলারিজমের বিকাশের প্রক্রিয়াটি সমাজের ভেতর থেকে, বাঙালি মুসলমানের সামাজিক অভিজ্ঞতার স্তর থেকে বিকশিত করে তুলতে হবে – এ-কথা তিনি মনে করতেন।
কিন্তু ইউরোপের রেনেসাঁসে কী রূপান্তর হলো খ্রিষ্টজগতের সে-সম্পর্কে তিনি জানাচ্ছেন, ‘ইউরোপের রেনেসাঁর আগে খ্রিষ্টজগৎ মনে করত মরণের পরে যে অনন্ত জীবন অপেক্ষা কইরা আছে হেইডা অইলো আসল জীবন। দুনিয়ার জীবন তার অ্যাপেন্ডেজ মাত্র। খ্রিষ্টানগো 888sport live chat-888sport live football সবখানেই পরকালের মহিমা কীর্তন করা হইত। যিশু খ্রিষ্ট তো এই নশ্বর দুনিয়াকে ‘ভেল অভ টিয়ার্স’ কইয়া গেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা একদিনে এক মাসে বা এক বছরে পালটায় নাই, অনেকদিন লাগছে। রেনেসাঁর সময় যখন ধীরে ধীরে জীবনের একটা ডেফিনেশন তৈরি হচ্ছিল তখন পুরা দৃষ্টিভঙ্গিটাই পালটাইয়া গেল। রেনেসাঁর আগে পরকালটাই আছিল সব, রেনেসাঁর পরে এই দুনিয়াটাই সব, পরকাল কিছুই না।’
আর উপমহাদেশে ইসলামের প্রসারের সঙ্গে নতুন এক ধর্ম কেবল নয়, বড় এক সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যে হয়েছে সে-সম্পর্কে রাজ্জাক স্যার বলছেন, ‘ইসলাম ধর্মের সঙ্গে 888sport app ধর্মের একটা বড় পার্থক্য এইখানে যে, ইসলাম ধর্মেও পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা অইছে কিন্তু ইহকালের গুরুত্ব অস্বীকার করা হয় নাই। ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাতের কথা ইসলামে যেভাবে বলা হয়েছে অন্য কোনো ধর্মে সেরকম নাই।’
তাঁর মতে, ‘ইন্ডিয়ার কথাই ধরেন না কেন, এইখানে যত স্থাপত্য এবং ভাস্কর্যকীর্তি তৈয়ার অইছে, তার লক্ষ্য আছিল দেবতার সমেত্মাষ সাধন। মানুষের ভোগ-উপভোগ আনন্দের কথা প্রসঙ্গক্রমে বলা অইলেও মূল গতিমুখ আছিল দেবতাকে সন্তুষ্ট করা। এই জিনিসটা বাংলা 888sport live footballেও দেখতে পাইবেন। ভারতচন্দ্র এইটিন্থ সেঞ্চুরিতে অন্নদামঙ্গল কাব্য দেবীর আদেশে দেবীর পূজা প্রচলন করার উদ্দেশ্যে লিখতে বইছেন। মুসলমানরা এই দেশে আইসা মসজিদ এবং 888sport app ধর্মস্থান সুন্দর কইরা বানাইছে, এই কথা যেমন সত্য, বাস করবার ঘরটারেও সুন্দর কইরা বানাইতে ভুল করেন নাই। এই জিনিস আপনে আন্সিয়েন্ট ইন্ডিয়াতে পাইবেন না। সেক্যুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম ইন ইন্ডিয়া ওয়াজ রিয়েলি ইনারমাস। এই কথা এখন অনেকে মাইনা নিবার চান না।’
হিন্দু সমাজের জন্মান্তরবাদের বিষয়ে রাজ্জাক স্যার দিচ্ছেন একেবারে ভিন্নধর্মী এক বয়ান, যা এখন অনেকের মানতেই কষ্ট হবে। স্যার বলছেন, ‘হিন্দুদের মধ্যে জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস অখন আপনারা দেখবার পান, এইডা প্রাচীন আর্যদের বিশ্বাস আছিল না। আর্যরা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করলে বেদে উল্লেখ থাকতো। বেদে এক্কেরে জন্মান্তরবাদের ছিটেফোঁটাও নাই। এইডা তারা পরে ড্রেভিডিয়ানদের কাছ থেইক্যা ইনহেরেন্ট করছে।’

চার
‘আইজকার ইন্ডিয়ার এডুকেটেড মানুষেরা যে ভাষায় পরস্পরের লগে কম্যুনিকেট করেন, হেইডা কোনো ইন্ডিয়ান লাঙ্গুয়েজ না। তাঁরা ইংরেজির মাধ্যমেই পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেন। ব্রিটিশের চইল্যা যাইবার পঞ্চাশ বছর পরেও যারা একটা লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা তৈয়ার করতে পারে নাই, তাঁরা এক লগে থাকবো কী কইরা আমি তো চিন্তা করবার পারি না।’

  • অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক

উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে রাজ্জাক স্যারের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এসব পর্যবেক্ষণে যেমন উঠে এসেছে তাঁদের ব্যক্তিত্ব, ব্যক্তিত্বের ধরন, তেমনি পাওয়া যায় ‘ইতিহাসের চরিত্রের’ ধরন, পাওয়া যায় জীবন্ত রক্তমাংসের ‘মানুষ’কে।
মওলানা আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে অধ্যাপক রাজ্জাকের মন্তব্য খুব কৌতূহলপ্রদ। বলেছিলেন, ‘মৌলানার সত্য কথা বলার অভ্যাস আছিল খুব কম। অ্যান্ড হি ওয়াজ আ কনজেনিটাল লায়ার। ‘তরজুমানুল কুরআন’ – যে বইটা মৌলানা লিখছেন ইন্ডিয়াতে, আর মৌলানার মস্ত কীর্তি এই বই দেখানো হয়, আরব ওয়ার্ল্ডের কোথাও এই বইটার কোনো মেনশন নাই, দাম নাই। আরবরা ইন্ডিয়াতে লেখা যে বইটার উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে এইটা হইল ‘ফতোয়ায়ে আলমগীরী’।’
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকারের বিষয়ে স্যার দিচ্ছেন এক বিশেষ প্রতিক্রিয়া। যদুনাথ সরকারের হিস্ট্রি অব আওরঙ্গজেব বিখ্যাত বই। স্যার জানাচ্ছেন, ‘স্কুলে থাকনের সময় আমি বইটা পড়ি। স্যার যদুনাথ ওয়াজ এ গ্রেট স্কলার। তিনি আওরঙ্গজেবের অনেক সদ্গুণের উল্লেখ করছেন। লম্বা ফিরিসিত্মর পর একটা বাট লাগাইয়া লিখলেন, ইসলাম ধর্মের উপর অত্যন্ত নিষ্ঠার জন্য এইরকম একজন সম্রাটের নানাবিধ গুণ কামে আইলো না। এই অংশটা পইড়্যা মুখটা তিতা হইয়া গেল।’
প্রখ্যাত চিকিৎসক ও কংগ্রেস নেতা বিধানচন্দ্র রায়ের এক ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন এক আলোচনায়। রাজনৈতিক নেতাদের মুখ ও মুখোশগুলো দেখা যায় এমন আলোচনাগুলোতে। অধ্যাপক রাজ্জাকের ভাষায়, ‘দীনেশ সেন ওয়াজ রিয়েলি গ্রেট ম্যান।
এদিক-সেদিক কিছু ব্যাপার আছে তারপরেও। তাঁর যখন অসুখ আছিল চিকিৎসার জন্য ডাক্তার বিধান রায়রে ডাকছিলেন। বিধান রায় ফিস দাবি করছিলেন দুই হাজার টাকা। তাঁর পরিবারের তরফ থেইক্যা বিধান রায়রে জানানো অইল, দুই হাজার টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসা করানোর সাধ্য তাগো নাই। তারপরে স্যার নীলরতনরে ডাইক্যা আনলেন। নীলরতন দেখলেন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া অইলো কত ফিস দিতে হইবো। স্যার নীলরতন কইলেন, ‘বাঙ্গালী জাতির দীনেশ সেনের কাছে কিছু ঋণ আছে, ফিসের কথা উঠবে কেন’।’
শেরে বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক সম্পর্কে রাজ্জাক স্যারের ধারণা ও বিশেস্নষণ যথেষ্ট বিতর্কিত। আহমদ ছফা একবার অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের জীবনী লেখার প্রসত্মাব করেন। তখন স্যার হাসতে হাসতে একটা ঘটনার উল্লেখ করলেন। ‘আমি একবার এ কে ফজলুল হক সাহেবরে কইলাম, আমি আপনার জীবনীটা লিখবার চাই, আপনি যদি দয়া কইরা পারমিশনটা দেন কাজ শুরু করবার পারি। হক সাহেব তখন ইস্ট পাকিসত্মানের গভর্নর। আমার কথা শুইনা খেকাইয়া উইঠা কইলেন, আমার জীবনী লিখতে চাও, নিশ্চয়ই তোমার কোনো মতলব আছে। আমি কইলাম, মতলব তো একটা অবশ্যই আছে।
হক সাহেব কইলেন, আগে হেইডা কও।
আমি কইলাম, আপনি যখন গাঁও-গেরামে যান মানুষের লগে এমন ব্যবহার করেন তারা মনে করে জনম ভইরা আপনি গাঁও-গেরামে কাটাইয়া তাগো সুখ-দুঃখের অংশ নিতে চান। তারপর গাঁও-গেরাম থেইকা 888sport app শহর আইসা আহসান মঞ্জিলের ছাদে উইঠা নবাব হাবিবুলস্নাহর লগে যখন গুড্ডি উড়ান, লোকজন দেইখা আপনারে নবাববাড়ির ফরজন্দ মনে করে। তারপরে আবার যখন কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদের লগে গলা মিলাইয়া শ্যামাপ্রসাদ ভাই বইলা ডাক দেন, কলকাতার মানুষ চিন্তা করে আপনি শ্যামাপ্রসাদের আর একটা ভাই। বাংলার বাইরে লখনৌ কিংবা এলাহাবাদ গিয়ে মুসলিম নাইট নবাব গো লগে যখন বয়েন, দেখতে মনে হইব আপনি তাগো একজন। এই এত ভূমিকায় আপনি এত সুন্দর সাকসেসফুল অভিনয় করতে পারেন এইটা তো একটা মস্ত ক্ষমতা। এই ক্ষমতা তো স্যার অলিভার লরেন্সেরও নাই। এই অভিনয়ক্ষমতার একটা এনকোয়ারি আমি করবার চাই, আর নইলে আপনার আসল গুণপনা কোথায় এটা তো আমাগো অজানা নাই।
হক সাহেব হুংকার ছাইড়া জিগাইতে লাগলেন, তুমি আমার সম্পর্কে কী জানো?
আমি কইলাম, সুন্দর সুন্দর বিশ্বাসযোগ্য মিছা কতা কইবার পারেন।
আমার জবাব শুইনা হক সাহেব ‘হাহ হাহ’ করে হাইস্যা উঠলেন।’
কিন্তু শেরে বাংলার বিষয়ে স্যার সমালোচনা করলেও প্রশংসা করেছেন নির্দ্বিধায়। বলেছিলেন, ‘মৌলভী ফজলুল হকের আর যে দোষ থাক অজ্ঞানতার দোষ ছিল না। উনি জ্ঞানপাপী ছিলেন। উনি যা করেছেন তার বিচার অন্য কনসিডারেশন দ্বারা করতে হবে। তিনি মনে করতেন যে, সেন্টার অব দ্য আর্থ ওয়াজ মৌলভী আবুল কাশেম ফজলুল হক এবং মৌলভী আবুল কাশেমের ভালো হলেই সমগ্র ভালো হবে। এই ওনার কথা। স্বজনপ্রীতি বলেন আর যাই বলেন এটা তাঁর একেবারেই ওয়েল রিজন্ড, একেবারেই যুক্তিসঙ্গত।’
মওলানা ভাসানী নিয়ে আছে এক মজার ঘটনা। প্রফেসর রাজ্জাকের ভাষায়, ‘একসময় মওলানা ভাসানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছিলেন। তাঁর আবার দুই রকমের অসুখ ছিল। এবার মনে হলো আসল অসুখ। আমি তারে দেখতে হাসপাতালে গেলাম। আমারে দেইখা মৌলানা সাহেব খুশি হইলেন। এই কথা সেই কথা নানান কথা কইবার লাগলেন। মৌলানা কথা কইবার শুরু করলে অন্য মানুষের শুনে যাওয়া ছাড়া উপায় আছিল না। মৌলানা একপর্যায়ে কইলেন, ‘আমি একটা কলেজ দিছি, একটা মাদ্রাসা দিছি।’ তারপর কইলেন ‘দুইটা হাইস্কুল দিচ্ছি, একটা ব্যাটা ছেলেদের, একটা মেয়েদের।’ আমি কইলাম, এই কামডা ভালো করছেন। মাওলানা সাহেব শুয়ে শুয়ে কথা কইতে আছিলেন। আমার কথা শুইনা উইঠা বইলেন। আমার চউখের উপর চউখ রাইখা কইলেন, ‘তুমি কি কইবার চাও?’ আমি জবাব দিলাম, স্কুল দুইটা কইরা ভালো করছেন। মওলানার বুদ্ধি ছিল খুবই কীন। আকারে ইঙ্গিতে কথা কইলে ঠিক বুঝে নিতে পারতেন।’
888sport appsের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজ্জাক স্যারের পরিচয় অনেক আগের। বঙ্গবন্ধু স্যারকে অত্যন্ত সমীহ ও 888sport apk download apk latest version করতেন। যে-কোনো উপলক্ষে নানান বিষয়ে স্যারের মূল্যবান মতামত চাইতেন। ১৯৭০-এর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকেই সরাসরি রাজ্জাক স্যারের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এক 888sport sign up bonusচারণায় তিনি জানাচ্ছেন, ‘১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে শেখ সাহেব যারেই স্পর্শ করছেন, তার মধ্যে আগুন জ্বালাইয়া দিছেন, এর পরের কথা আমি বলবার পারুম না। আমি গভরমেন্টের কারো লগে দেখা সাক্ষাৎ করি না।
’৭২-এ একবার ইউনিভার্সিটির কাজে তার লগে দেখা করতে গেছিলাম। শেখ সাহেব জীবনে অনেক মানুষের লগে মিশছেন, আদব লেহাজ আছিল খুব ভালা। অনেক খাতির করলেন। কথায় কথায় আমি জিগাইলাম, আপনার হাতে তো অহন দেশ চালাইবার ভার, আপনি অপজিশনের কী করবেন? তাদের ছাড়া দেশ চালাইবেন কেমনে? জহরলাল নেহেরু ক্ষমতায় বইসাই জয়প্রকাশ নারায়ণরে কইলেন, তোমরা অপজিশন পার্টি কইরা তোলো।
শেখ সাহেব বললেন, আগামী ইলেকশনে অপজিশন পার্টিগুলো ম্যাক্সিমাম পাঁচটার বেশি সিট পাইব না।
আমি একটু আহত হইলাম। কইলাম, আপনি অপজিশনরে একশত-এর বেশি সিট ছ্যাইড়া দেবেন না?
শেখ সাহেব হাসলেন। আমি মুখ ফিরাইয়া চইলা আইলাম।’
খ্যাতনামা বাম তাত্ত্বিক বদরুদ্দিন উমর সম্পর্কে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক মন্তব্য করেছিলেন, ‘উমর যদি পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি – কেবল এই একটা বই লিখতেন তাহলেই পোস্টারিটি তার নাম 888sport app download for android করার জন্য যথেষ্ট আছিল। সে তো আরো অনেক কাম করছে। উমরের একটা ঋজু খাড়া চরিত্র আছে, বিশ্বাস অনুসারে চলবার চেষ্টা করে। আমাদের সমাজে এরকম মানুষ কজন আছে?’
বদরুদ্দিন উমর সম্পর্কে আলোচনায় অধ্যাপক রাজ্জাক উমর সাহেবের পূর্বপুরুষ নওয়াব আব্দুল জববারের একটা ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন। নওয়াবের সঙ্গে লর্ড ক্যানিংয়ের ভালো সম্পর্ক ছিল। ক্যানিং সাহেব নওয়াবের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়ে বলছিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে একবারে কোনো কৃতজ্ঞতা বোধ নেই।’ নওয়াব উত্তরে বলেছিলেন, ‘আমরা অকৃতজ্ঞ বইলাই তো তোমরা আমাদের উপর রাজত্ব করতাছ।’
বদরুদ্দিন উমরের পিতামহ মৌলভী আবুল কাশেম সম্পর্কেও রাজ্জাক স্যারের অভাবিত উক্তি পাই আমরা। ‘মৌলভী আবুল কাশেম সুবিধার মানুষ আছিল না। তিনি সব সময় সত্য কথা কইতেন, এই কথা তাঁর অতি বড় শত্র‍ুও বলতে পারবে না। কিন্তু ইংরেজী বলতেন চমৎকার। তিনি সব সময় খুব মিহি ধুতি এবং পাঞ্জাবি পরতেন। আর মাথায় একটা কিসিত্ম টুপি। ডায়েসে খাড়াইয়া যখন কথা বলতেন, একেকটা ওয়ার্ড মুক্তার দানার মতো ঝইর‌্যা পড়ত।’

পাঁচ
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন জ্ঞানজগতের বরপুত্র। তাঁকে আকর্ষণ করত সারা দুনিয়ায় জ্ঞান বিতরণরত সকল মহান শিক্ষক। এবং তাঁর সমস্ত সাক্ষাৎকার জুড়ে আছে সেই সব শিক্ষকের 888sport sign up bonusচারণা। আমি সেসবের মাঝে কয়েকজনকে এখানে 888sport app download for android করছি।
‘লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে’ – রাজ্জাক স্যারের পিএইচ.ডি গাইড হ্যারল্ড লাস্কিকে আধুনিক রাষ্ট্র888sport apkের অন্যতম স্তম্ভ ধরা হয়। তিনি প্রফেসর লাস্কি ছাড়া যে-অধ্যাপকের পা–ত্যের প্রশংসা করেছেন, তিনি হার্ভার্ডের প্রফেসর ম্যাসন।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকের ইতিহাসের শিক্ষক এবং এই উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ইতিহাসবিদ ড. আহমদ হোসেন দানির কথা স্যার বলেছিলেন সশ্রদ্ধ ভঙ্গিমায়। ‘ড. আহমদ হোসেন দানি আমাগো এই অঞ্চলের ইতিহাস এত জানেন, আমি তিন জন্মেও অত জানবার পারুম না।’
অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক তাঁর বিভিন্ন আলোচনায় 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকের কিংবদমিত্ম শিক্ষকদের কথা বলেছেন। তিনি সরাসরি যাঁদের ছাত্র ছিলেন, এমনকি পরে চাকরিসূত্রে হয়েছিলেন সহকর্মী, এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রফেসর জ্ঞান ঘোষ, প্রফেসর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রফেসর নরেশ সেন, প্রফেসর সত্যেন বসু। বিশেষভাবে উল্লেখ করেছিলেন গণিতের অধ্যাপক রমজান আলীর কথা, যিনি পরবর্তীকালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলেন।
সত্যেন বসু সম্পর্কে রাজ্জাক স্যার বলছেন, ‘আমাগো সময়ে শিক্ষক আছিলেন সত্যেন বসু। তিনি ফিজিক্সের মানুষ ছিলেন। কিন্তু 888sport app বিষয়ে পা–ত্য আছিল অগাধ। যেকোনো বিষয়ে তাঁর ব্যাপক পড়াশোনা আছিল। এমন মানুষ আর দেখা যায় না। 888sport live footballের উপরও তাঁর দখল আছিল খুব।’
রাজ্জাক স্যার উল্লেখ করছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর কথা। বলছেন, ‘আমরা যখন ভর্তি হয়েছি তখন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রিট্যার করেছিলেন। আমরা মোহিতলাল মজুমদাররে পাইছি। মোহিতলাল বাবু বড়
স্কলার আছিলেন। কিন্তু জিবটা আছিল খুব। অকারণে মানুষরে
তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন।’
অধ্যাপক সুশীলকুমার দে (এস কে দে) সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘সুশীলকুমার আছিলেন অত্যন্ত উচ্চশ্রেণীর, মানুষ হিসেবে এবং স্কলার হিসেবে।’ রাজ্জাক স্যার বিশেষ প্রশংসা করেছিলেন তাঁর সরাসরি শিক্ষক অমিয় দাশগুপ্তের, যিনি পরে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর অমর্ত্য সেন প্রফেসর দাশগুপ্তের অন্যতম ছাত্র ছিলেন।
অধ্যাপক রাজ্জাক বিশেষভাবে অনুরক্ত ছিলেন দর্শনের অধ্যাপক হরিদাস ভট্টাচার্যের। একবার তিনি বলছিলেন, ‘হরিদাসবাবু ফিলোসফির মাস্টার আছিলেন। অগাধ পা–ত্য। তাঁরও
টাকা-পয়সার দিকে নজর আছিল না। মাঝে মাঝে হুমায়ুন কবির ভাইবা নিতে আইলে তাঁর বাড়িতে থাকতেন। হরিদাসবাবুরে জর্জ দ্য ফিফথ লেকচার দিবার জন্য ডাকা অইল। তাঁর আগে এই লেকচার দিছিলেন এলডাস হাক্সলি। হাক্সলির কথা সকলে কয়, হরিদাসবাবুরে মনে রাখছে কয়জন?’
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে রাজ্জাক স্যারের সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন মুনীর চৌধুরী। তাঁকে নিয়ে বলছেন, ‘মুনীরের মতো মানুষ আমি খুব কমই দেখছি। তাঁর মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের কোনো লেশ কোনো দিন দেখিনি। অত্যন্ত উচ্চ মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ আছিল মুনীর।’ তিনি অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও ডা. মোরতাজার মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হওয়া সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘দে ডাইড ফর প্রিন্সিপল। ইচ্ছে করলেই তাঁরা বাঁচতে পারতেন!’
অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের সঙ্গে ছিল রাজ্জাক স্যারের অত্যন্ত 888sport apk download apk latest versionমিশ্রিত ভালোবাসাময় সম্পর্ক। তিনি বলেছিলেন, ‘রিডার করার সময়ে তিনশো টাকার বেশি মাইনে পাইতেন না, কিন্তু টাকা পয়সা নিয়ে কেউ তাঁরে কোনোদিন কথা বলতে শোনে নাই। ইংরেজি বাংলা দুইটা ভাষাতেই তিনি সুন্দরভাবে পড়াইতে পারতেন।’
অধ্যাপক ক্ষিতিমোহন সেন সম্পর্কে রাজ্জাক স্যারের মন্তব্য ছিল, ‘আমি জীবনে যত অসাম্প্রদায়িক মানুষ দেখেছি ক্ষিতিমোহন বাবু ও তার জামাই এর মতো কাউকে দেখেনি।
ড. আহমদ শরীফ সম্পর্কে মূল্যায়ন করেছিলেন, ‘শরীফ ত্যাড়া ব্যাঁকা কথা কয় বটে, কিন্তু একসময় তো কাম করছে। হি ডিড মেনি থিংস।’ প্রফেসর আব্দুল হাই সম্পর্কে অধ্যাপক রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘হাই সাহেব আমার শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বিষয়ে আমার অনেক মধুর 888sport sign up bonus আছে। শিক্ষক হিসেবে তিনি অত্যন্ত মহৎ ছিলেন।’
প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসানের ব্যাপারে রাজ্জাক স্যারের ধারণা খুব একটা ইতিবাচক ছিল না। তিনি বলছেন, ‘আলী আহসান অনার্স ও এমএ দুইটাতেই সেকেন্ড ক্লাস। কিন্তু তাঁর কনসেপশন ক্লিয়ার আছিল। এস্থেটিক সেন্স খুব কীন। যে কোনো বিষয়ে কলম ধরলেই লেখা অইয়া যাইত। তবে আলী আহসানের ব্যাপারে একটা কথা হইল, সত্য কথা কদাচিৎ বলতে পারতেন। আমি আলী আহসানরে আত্মজীবনী লেখার পরামর্শ দিছি। কইছি এখন তো সব সত্য কথা আপনি কইবার পারবেন না, লেইখ্যা যান, আপনার মরণের পরে প্রকাশ পাইবো।’ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্পর্কে রাজ্জাক স্যার বলেছিলেন, ‘আনিসের মতো পরিচ্ছন্ন গবেষণার কাম খুব কম জনই করবার পারে।’
প্রফেসর রেহমান সোবহানের সঙ্গেও রাজ্জাক স্যারের ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাঁর ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন, ‘মানুষ হিসেবে রেহমান সোবহানরে কারও বিরোদ্ধে কোনো খারাপ মন্তব্য করতে শুনি নাই।’
আধুনিক কবিদের মধ্যে সমর সেন ছিলেন রাজ্জাক স্যারের বিশেষ প্রিয়। তরুণ বয়সে কবিখ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে 888sport app download apk লেখা বন্ধ করেছিলেন খুবই অল্প বয়সে। রাজ্জাক স্যার বলেছিলেন, ‘২৮/২৯ বছর বয়সের পর এই ভদ্রলোক আর বাংলা ভাষায় কিছু লেখেন নাই। যে বয়সে সমর সেন বাংলা লেখা ছাড়ছেন, এই বয়সের রবীন্দ্রনাথের লেখার সঙ্গে মিলিয়ে দেখবেন কোনো তুলনা চলে না। তিরিশ বছর বয়সের পর আর কোনো কিছু বাংলা ভাষায় লেখেন নাই। যা লিখছেন তাও ইংরেজিতে। এইডা বাংলা ভাষার জন্য একটা গ্রেট লস। এই একটা মানুষ যাঁর চিন্তাভাবনার রেঞ্জ আছিল অনেক বড়।’

ছয়
বাংলা ভাষা ও ভাষাকেন্দ্রিক রাজনীতি রাজ্জাক স্যারের চিন্তার এক বিশাল অংশ জুড়ে। তাঁর নানান সাক্ষাৎকারে সেসব উঠেও এসেছে সবিসত্মারে। 888sport app জেলার কেরানীগঞ্জ থানায় জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি সব সময় 888sport appইয়া ভাষায় কথা বলতেন এবং সেই ভাষাতেই মনের ভাব সবটুকু প্রকাশ করতে পারতেন, আর সে-প্রকাশ ছিল মৌলিক গুণসম্পন্ন। রাজ্জাক স্যার মনে করতেন, বর্তমানে প্রমিত বাংলার যে-রূপ দাঁড় করানো হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইংরেজদের সাম্প্রদায়িকতা বিসত্মারের এক হাতিয়ার। আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, ‘বাংলা ভাষার মধ্যে যে পরিমাণ এলিট মাস গ্যাপ এরকম দুনিয়ার অন্য কোনো ভাষার মধ্যে খুঁজে পাইবেন কিনা সন্দেহ। আধুনিক বাংলা ভাষাটা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প–তেরা সংস্কৃত অভিধান দেইখা দেইখা বানাইছে। আসল বাংলা ভাষা এই রকম আছিল না। আরবি-ফারসি ভাষার শব্দ বাংলা ভাষার লগে মিশ্যা ভাষার একটা স্ট্রাকচার খাড়া অইছিল। পলাশীর যুদ্ধের সময়ের কবি ভারতচন্দ্রের রচনায় তার অনেক নমুনা পাওয়া যাইবো। ব্রিটিশ শাসন চালু হইবার পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প–তেরা
আরবি-ফারসি শব্দ ঝাঁটাইয়া বিদায় কইরা এই জায়গায় সংস্কৃত শব্দ ভইরা থুইছে। বাংলা ভাষার চেহারা কেমন আছিল পুরানা দলিলপত্র খুঁইজা দেখলে কিছু প্রমাণ পাইবেন।’
আর এই পরিবর্তনটা কীভাবে হয়েছে সে-সম্পর্কে স্যার
জানাচ্ছেন, ‘ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা ভাষারীতির স্ট্রাকচারটা খাড়া করেছিলেন। তার লগে ভাগীরথী পাড়ের ভাষার মিশ্রণে আধুনিক বাংলা ভাষাটা জন্মাইছে। আধুনিক বাংলা বঙ্গসন্তানের ঠিক মুখের ভাষা না। এটা লেখাপড়া শিইখ্যা লায়েক অইলে তখনি তার মুখে আসে।’
তিনি আরো বলছেন, ‘বাংলা ভাষার সঙ্গে মুসলমানদের যে সম্বন্ধ ছিল তা ‘কাস্ট হিন্দুদের’ চেয়ে অনেক নিকটতর। পাদ্রিদের উপর আমার রাগ এজন্য যে এর জন্য পাদ্রিরা অনেকখানি দায়ী। বাঙালি মুসলমানকে বাংলা থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার জন্য এদের দায়িত্ব কম নয়। পাদ্রিরাই বুঝালো বাংলা ‘সংস্কৃতের দুহিতা’। সমাচার দর্পণ-এর সম্পাদকীয় ছিল, ‘আমরা কি জন্য বাংলা ভাষা সমর্থন করি? কারণ মুসলমানরা ইহা পছন্দ করে না। ইহারা কখনো বাংলা শিখিতে পারিবে না’।’
এই যে ভাষা নিয়ে পাদ্রিদের সমাজে বিভক্ত করার চল, সেটাই শেষ পর্যন্ত দেশভাগের করুণ কাহিনির ‘বস্নু প্রিন্ট’ হিসেবে কাজ করেছে। খ্রিষ্টান পাদ্রিদের জন্য হিন্দুদের কাছে টানা যত সহজ হয়েছিল, মুসলমানদের সঙ্গে ঘটেছে ঠিক এর বিপরীত ঘটনা। কিন্তু কেন এমন ঘটল সেটার ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা দিচ্ছেন অধ্যাপক রাজ্জাক।
‘এই যে কেরি, মার্শম্যান এরা ৩০০০ মাইল দূর থাইক্যা আইছে এদেশে, দেশবাসীর আত্মা উদ্ধার করতে। এর তরিকাটা কি? তাগোর কথা অইল এদেশের ধর্মের বেইজ হলো পলিথিসটিক। একথা হিন্দুদের সামনে যখন বলতো তখন হিন্দুরা বলতো, ‘হ্যাঁ ভালো কথাই বলছে।’ এ কথা মুসলমানদের কাছে বললে মুসলমানরা ঠাট্টা করত। তারা পাদ্রিদের ট্রিনিটি নিয়ে ঠাট্টা করতো। পাদ্রিরা এই ঠাট্টায় ক্ষেপে যেত।
মারেন রাগ করেন এটা সহ্য করা যায় কিন্তু ঠাট্টা করলে তো আর সহ্য হয় না। একেশ্বরবাদ নিয়ে বলতে গেলেই তারা ওই ট্রিনিটি নিয়ে ঠাট্টা করতো। এই জন্য মুসলমানদের সম্পর্কে পাদ্রিদের রাগটা একটু বেশি। সে-সময়ে ধর্মান্তরের মৌসুম যখন আইছিল, অনেক হিন্দু যুবক খ্রিষ্টান হইছিল। সে মরশুমে মুসলমানরা খ্রিষ্টান হয়েছিল খুব সামান্যই। দু-একজন ধর্মান্তর গ্রহণ করেছে, কিন্তু দলে দলে নয়। এরা যখন বলতো ‘পলিথিজম ইস অফুল’, হিন্দুরা এগ্রি করতো, হয়তো ওই ধরনের একটা কিছু হিন্দু ধর্মে আছে। কিন্তু মুসলমানদের কাছে বললে তারা কোনো রকম পাত্তাই পেত না।’
এই দেশীয় ভাষার বিকাশ ও রূপান্তর, সেটার মাঝেই রাজ্জাক স্যার দেখছেন ঊনবিংশ শতাব্দীর তথাকথিত রেনেসাঁসের আসল প্রাণ। তিনি বলছেন, ‘আপনারা আর যাই বলেন আমি মনে করি ঊনবিংশ শতকের গুরুত্ব বা বৈশিষ্ট্য বুঝতে হলে এটা বুঝতে হবে যে, নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি’স ইম্পর্টেন্স লে ইন দ্য রাইজ অফ দ্য ভার্নাকুলারস। দেশীয় সব ভাষার চর্চা হচ্ছে উনিশ শতকের বৈশিষ্ট্য। একেবারে অল দ্য ভার্নাকুলার্স ক্লেইম টু ম্যাচিউরিটি ডিউরিং দ্য নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি, সাউদার্ন ইন্ডিয়ার দু-একটা ছাড়া। এটা কেন হলো, দ্যাট ইস এ মোর ইনভলভড কোয়েশ্চেন। সে প্রশ্ন আলাদা। রামমোহন রায়কে বোঝার জন্যে সে জওয়াবের দরকার নেই। অল দ্যাট আই নিড ইজ, হি সোয়াম উইথ দ্য টাইড। এই যে রাইজিং টাইড হুইচ গিভস ক্যারেক্টার টু দ্য এন্টায়ার নাইন্টিন্থ সেঞ্চুরি, এখানে কার কি কনট্রিবিউশন এটাই বড় প্রশ্ন। আর এই কনট্রিবিউশনেই তার গুরুত্ব।
দেশী ভাষা যাঁরা চর্চা করেছেন তাঁরাই গুরুত্বপূর্ণ, ইম্পরট্যান্ট। 888sport free betয় তারা যাই হোন না কেন। সাম অব দেম অ্যাট দ্য ইনিশিয়াল পিরিয়ড হ্যাড নট আন্ডারস্টুড দি সিগনিফিকেন্স অব দেয়ার ওউন অয়ার্ক। বঙ্কিমচন্দ্র, মাইকেল মধুসূদন ইংরেজিতে লেখা শুরু করলেন। বাট জাস্ট ইন টাইম দে ব্যাক টু বেঙ্গলি অ্যান্ড দেয়ারফোর দে বিকেম বঙ্কিমচন্দ্র অ্যান্ড মাইকেল। যদি তাঁরা কেবল ইংরেজিতেই লিখতেন তাহলে তাঁদের অবস্থাটা কি হতো চিন্তা কইরাই দেখেন। এই যে তাঁদের চেঞ্জ, এটা তাঁরা খুব বুঝেশুনে করেছেন তা নয়। এই চিন্তা থেকে তাঁরা বাংলা লেখেন নি যে বাংলার ভবিষ্যৎটা তাঁদের হাতে, তাঁরা না লিখলে বাংলার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। তাঁরা বাংলায় এলেন বিকজ দে ফেইল্ড টু ফাইন্ড সেলফ এক্সপ্রেশন ইন ইংলিশ। আবার এদের সবার আগে রামমোহন রায় বাংলা লেখা শুরু করলেন। আমি তো মনে করি বাংলা ব্যাকরণই তাঁর ক্লেইম টু ফেইম।
রামমোহনের সঙ্গে স্যার সৈয়দ আহমেদের মিল এখানেই। সারা জীবন স্যার সৈয়দ আহমেদ খালি উর্দুতেই লিখেছেন। কী লিখেছেন সেটা আসল কথা নয়, কিসে লিখেছেন সেটাই কথা। উর্দুর এই চর্চাই তাঁর মনুমেন্ট, তাঁর কীর্তিস্তম্ভ, ইট উইল এভার রিমেইন। আমার তো এই বুঝ। আপনাদের কথা আলাদা। আপনারা মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করান তাঁরা কত মহৎ কত উদার ইত্যাদি ইত্যাদি।’
অনেক পণ্ডিত যেমন মনে করেন ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম আকর্ষণ ব্রাহ্মধর্ম প্রচার, রাজ্জাক স্যার বাংলার রেনেসাঁসের ক্ষেত্রে সেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবতেন। অধ্যাপক রাজ্জাক মনে করতেন যে, বিষয়টা তা নয়। তাঁরা ব্রাহ্মসমাজের কথা বলেছেন। অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতকের ধর্মসংস্কারের ব্যাপারে তো সব শিক্ষিতদের একটা ফ্যাশনই ছিল। তাতে আর রামমোহনের আলাদা বাহাদুরি কি? সকলেই তখন সর্বধর্মসমন্বয় নিয়ে কথা বলতো। রামমোহনের প্রথম লেখা ধর্ম নিয়েই, ফারসিতে। ইট ইস ওয়ান অব হিস লিস্টএবল। তাতে তাঁর বৈশিষ্ট্য বা ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। ধর্মসমন্বয় নিয়ে আরো অনেকে তখন লিখেছেন। রামমোহনের চেয়ে জোরালোভাবেই লিখেছেন। তাঁদের সে-রচনার কাছে রামমোহনের এ-রচনা অকিঞ্চিৎকর। এগুলো ওটার সঙ্গে না মিলিয়ে দেখলে কেমনে হবে? তাছাড়া রামমোহনকে তাঁর সমাজও তখন গ্রহণ করেননি। তিনি যে-সময় হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে যান সে-সময় হিন্দুদের একটা লম্বা রিপ্রেজেন্টেশন পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে।
‘রামমোহন রায়ের সাথে থাকলে এই স্কুলের ব্যাপারে আমরা থাকবো না’ – এটা ছিল হিন্দুদের দাবি। হিন্দুদের অভিযোগ রামমোহন ‘যবনী’ অর্থাৎ মুসলমান মহিলা নিয়ে ঘর করতেন। রামমোহন ধর্ম নিয়ে কী কইছেন তা নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে যাব না, আমি বলি তিনি সারা জীবনেই অধর্মচারী ছিলেন। এর মধ্যে কোনো অসত্য নেই। তখনকার দিনে সকলেই এ-কথা জানত। যে রিপ্রেজেন্টেশনের কথা বলছিলাম, বর্ধমানের মহারাজা, শোভাবাজারের মহারাজ এঁরা সব সংঘবদ্ধভাবে বললেন,
রামমোহন স্কুলের কমিটিতে থাকলে তাঁরা থাকবেন না। রামমোহন ওয়াজ ডিসক্রিট। হি উইথড্রিউ। তিনি নিজে থেকে সরে গেলেন। কাজেই এদিক দিয়ে বলা যায়, ‘হি ওয়াজ নট এ ফাউন্ডার অফ দ্য হিন্দু স্কুল’।’
অর্থাৎ রাজা রামমোহন রায় সচেতনভাবে ধর্ম প্রচার করলেও বুঝতে পারেননি এটা তাঁর বড় কাজ নয়। রাজ্জাক স্যারের মতে, রামমোহন রায় বা উনিশ শতকের রেনেসাঁসের কা-ারিদের দেশি ভাষায় চর্চাই তাঁদের বড় কাজ। স্যারের ভাষায়, ‘সাম টাইমস ইউ ডু সামথিং হুইচ ইজ নট দ্যাট ইম্পরট্যান্ট আজ ইউ থিংক। স্যার আইজ্যাক নিউটন নাকি মনে করছেন তাঁর ‘লাইফওয়ার্ক’ – জীবনের কাজ গ্রাভিটেশন তত্ত্ব নয়, তাঁর বড় কাজ হচ্ছে বাইবেলে পৃথিবীর বয়সের যে-কথা আছে তার সত্যতা নিরূপণের চেষ্টা। কিন্তু নিউটনের দুর্ভাগ্য যে আমরা তাঁর বড় কাজকে বড় বলিনে, তাঁর সাবসিডারি কাজকেই প্রাইমারি বলি। রাজা রামমোহনেরও ব্যাপার তাই। তাঁর নিজের কোনো কাজের কি গুরুত্ব তা তিনি কখনো বোঝেননি।’
দেশি ভাষা চর্চার গুরুত্ব বলতে গিয়ে রাজ্জাক স্যার রাজনৈতিক নেতাদেরও এনেছেন। মতিলাল উর্দু ফারসি খুব ভালো জানতেন। কিন্তু জহরলাল কোনো ইন্ডিয়ান ভাষা জানতেন না। হিন্দি তিনি কইতে পারতেন শুধু, পড়তে পারতেন না। রাজ্জাক স্যার বলেছেন, ‘নেহেরু বা গান্ধী এদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন কে, আমি বলব গান্ধী, নেহেরু নয়। অথচ নেহেরু গান্ধীর চেয়ে অধিক বৈজ্ঞানিক সমাজবাদ ইত্যাদিতে রচনা করেছেন। জহরলাল জিন্নাহ এঁরা ইতিহাসে বেঁচে থাকবেন না, যতটুকু থাকবেন কেবল মানুষের কিউরিসিটি হিসেবে, মানুষের কৌতূহলের উৎস হিসেবে।’
এই সূত্রে রাজ্জাক স্যার জানাচ্ছেন, মধ্যযুগে ইউরোপে শক্তিশালী চিন্তাবিদের অভাব ছিল না। তাঁরা জাতে ইংরেজ, জাতে ফ্রেঞ্চ, বা জাতে জার্মান; কিন্তু লিখতেন তাঁরা ল্যাটিন ভাষায়। কেউ তাঁদের নাম আজ বলতে পারবে না। কিন্তু যাঁরা ভার্নাকুলারে লেখা শুরু করল, যাঁর যাঁর দেশি ভাষায়, তাঁরা ঠিক বেঁচে আছেন। স্যারের মতে, ‘এটা ইনেস্ক্যাপাবল, অনিবার্য। বাঙালি মুসলমানদের সত্যিকারের ঘাটতি ছিল, সেটা হচ্ছে এই যে, বেঙ্গলি মুসলমান টুক দ্য মডার্ন বেঙ্গলি মাচ লেইটার। কেন এটা হলো সেটা পরে বিচার করবেন কিন্তু দিস ব্রড ফ্যাক্ট ইস ইনডিস্পুটেবল।’

সাত
সামাজিক ইতিহাস ও সমাজ-কাঠামো নিয়ে রাজ্জাক স্যারের আগ্রহ বরাবরই ছিল তুঙ্গে। সে-সূত্রে তাঁর আগ্রহ ছিল সমাজতন্ত্র। মূলত সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহের কারণেই তিনি বরাবর সমাজের গঠন নিয়ে ভেবেছেন। ভেতর থেকে দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন এই ভারত উপমহাদেশের সামাজিক বিন্যাসের রূপ আর সেটার অভ্যন্তরীণ কারণ। আহমদ ছফার সঙ্গে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের ইন্ডিয়া ইন ট্রান্জিশন বই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় রাজ্জাক স্যার বলেছিলেন, ‘ইন দ্য স্ট্রাইক্টেস্ট সেন্স অফ দ্য টার্ম ইন্ডিয়াতে কোনো ফিউডালিজম আছিল না। বেঙ্গলের কথা তো এক্কেরে আলাদা। বেঙ্গলের
কথায় পরে আইতাছি, তার আগে রেস্ট অফ ইন্ডিয়ার খবর লই। ফিউডালিজম অইল একটা ক্লোজ সিস্টেম। বংশপরম্পরায় একটা পরিবার স্থায়ী হইয়া একটা জায়গায় বাস করবে। তার ধোপা, নাপিত, কামার, কুমার সব আলাদা। এক জায়গার মানুষ অন্য জায়গায় যাইবার পারবো না। কাঁঠালের যেমন কোয়া, ফিউডাল সিস্টেমের সামন্তের জমির সঙ্গে সকলের তেমন সম্পর্ক। সামন্তরা হইল নিজের জমিদারিতে সকল দ-মু–র মালিক। ঠিকমতো হাজিরা দিতে পারলে আর যুদ্ধের সময় ঠিকমতো সৈন্য পাঠাইবার পারলে এক্কেরে সাত খুন মাফ।
ইন্ডিয়াতে মুঘল আমলের কথা ধরেন, জমিদারি এখানে বংশানুক্রমিক আছিল না। সম্রাট ইচ্ছা করলে জমিদারের পোলারে জমিদার নাও বানাইতে পারতেন। আর যদি বেঙ্গলের কথায় আইয়েন, তাইলে অন্য কথা বলতে হয়। পুরানা বাংলা পুঁথিতে
দেখা যায়, বাংলার বাণিজ্যবহর জাভা, সুমাত্রা এই অঞ্চলে যাওয়া-আসা করছে। যেখানে বাণিজ্য এরকম সচল থাকে, সেই সমাজটারে অন্য যা ইচ্ছা করবার চান কন কিন্তু ফিউডালিজম বলবার পারবেন না। ভিটফোগেলের হাইড্রোলিক থিউরি বেঙ্গলের বেলায় এক্কেরে খাটে না।’
জমিদারি প্রসঙ্গে অধ্যাপক রাজ্জাক আরো বলেছিলেন, ‘শুধু 888sport appয় নয়, 888sport app জেলাতেই খুব কম জমিদার ছিল। বেঙ্গলের যারা বড় বড় জমিদার তারা কেউ 888sport app জেলার নয়, কারণ মুঘল আমলের জমিদারি এরাইজ করত যেখানে মুঘল গভর্নর সুবেদার এরা সরাসরি শাসন করতে পারত না সেখানে। 888sport app তো রাজধানী ছিল, কাজেই 888sport appর কাছাকাছি জমিদার সৃষ্টি হওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং বাখরগঞ্জে জমিদার ছিল, কিন্তু 888sport appয় নয়।
এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক রাজ্জাক ইতিহাসে আরো পিছিয়ে বলেন, ‘জমিদার বলতে এই যেমন আমরা বুঝি জমির মালিক, এটা ইংরেজদের ব্যাপার। ১৭৯৩-এর আগে এরকম জমিদারি ব্যাপার ছিল না। মুঘলরা 888sport appsে ঢুকলো সপ্তদশ শতকে। এর আগে নয়। ১৫৯০ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর 888sport apps দখল করে। তার আগে 888sport apps মুঘল শাসনব্যবস্থার বাইরে ছিল। কাজেই ১৫৯০ অর্থাৎ ষোলো শতকের শেষে মুঘলদের বাংলা জয়। 888sport appsে মুঘলদের শাসন শখানেক বছরের ব্যাপার। এর বেশি নয়। এরপরেই মুঘল রাজ্যে মারাঠাদের অনুপ্রবেশ এবং উপদ্রব শুরু হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন জায়গায় মুঘল সুবেদারগণ নিজেদের স্বাধীন বলতে শুরু করেন। মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বত্রই এই প্রবণতা দেখা যায়। অযোধ্যায় সুজাউদ্দৌলা, দাক্ষিণাত্যে নিজামুল মুলক, 888sport appsে মুর্শিদকুলি খাঁ। দিস ওয়াজ এ পিরিয়ড অফ আনসেটেলমেন্ট, অস্থিরতার একটা সময়।’
অধ্যাপক রাজ্জাকের বিশেষ অনুরাগ ছিল সমাজতন্ত্রের প্রতি। পাকিসত্মান আমলে বাম ঘরানার শিক্ষকদের নানানভাবে মদদ দিচ্ছেন – এই অভিযোগে তাঁর ওপর নজরদারি ছিল অবিরাম, হয়েছেন নানান হয়রানি ও জেরার সম্মুখীন। পাকিসত্মান আমলে যখন কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল, তখন অধ্যাপক রাজ্জাককে কমিউনিস্ট বলেই কেবল সন্দেহের চোখে দেখা হতো না, বরং তাঁকে অন্য সব বাম ঘরানার শিক্ষকদের মদদদাতা বলেই মনে করত গোয়েন্দা সংস্থা। এরকম পরিবেশেও পাকিসত্মানের তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের জেরার মুখে খুব সাধারণ কথায় তিনি বুঝিয়েছিলেন কেন এখানে বাম আন্দোলন সম্ভব নয়, আর সেটার বাস্তবিক পটভূমি কী। রাজ্জাক স্যার ভাবতেন নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে
প্রথম দিকের মুসলিম শিক্ষকদের প্রায় সবাই এসেছেন গ্রাম থেকে, এসে নিজেরা হয়েছেন শ্রেণিচ্যুত, যেখানে মাসের মাইনের প্রায় সবটাই হিসাব করে খরচ করতে হয়, যেখানে তাঁর শিকড়ে সম্পর্ক রক্ষার আছে দায়, সেখানে কোনো বিপস্নবী চিন্তা দানা বাঁধতে পারে না।
সমাজতন্ত্রের কোন জিনিসটা আপনার ভালো লাগে? – এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘কেমনে কই কোন জিনিস ভালো লাগে, তবে আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা কইবার পারি। ভারত পাকিসত্মান যুদ্ধের পরে একজন রাশিয়ান আইছিল 888sport appয়। তখন তো এরকম সময় একজন রাশিয়ান ভদ্রলোকের লগে মাখামাখি করলে ইন্টেলিজেন্সের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। ওই ভয়ে ওর কাছে কেউ ভেড়তাছিল না। অখন নামটা মনে করবার পারতাছি না। ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার বেশ খাতির হইয়া গেল। একসময় তিনি আমাগো লগে থাকতে আইলেন। এই সময় আমি শামিত্মনগর থাকতাম। একদিন দুপুরবেলা ইউনিভার্সিটি থেকে যখন বাড়িতে ফিরছি সেই ভদ্রলোক আমার লগে আইছিল। তখন দুপুরবেলা খুব গরম, রিকশার বদলির সময়, সহজে রিকশা পাওয়া যায় না। যেই চড়বার লইছি, সেই ভদ্রলোক আমার হাত ধইরা টাইনা নিয়া কইল, এটাত চড়ন যাইতো না, দেখছেন না কেমন হাড় জিরজিরে মানুষ। আমি যত রিকশা ঠিক করি, একটা না একটা উসিলা বাইর কইরা বিদায় কইরা দেয়। মানুষের উপর এই যে জাগ্রত সহানুভূতি, আমার মনে হইছে, এইটা সমাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কন্ট্রিবিউশন।’
আট
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠায় 888sport appর নবাবদের অবদান ছিল কি না সে-প্রসঙ্গে রাজ্জাক স্যার কিছু দুর্লভ তথ্য আমাদের দেন। বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠায় পুরান 888sport appর নবাবদের প্রত্যক্ষ অবদান রাজ্জাক স্যার একেবারেই অস্বীকার করেন। তাঁর মতে, 888sport appর সাধারণ মুসলমানদের সঙ্গে পুরান 888sport appর নবাবদের কোনো সম্পর্কই ছিল না।
তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠার পেছনে এমন এক ব্যক্তির অবদানের কথা তুলে এনেছেন যা অনেকের অজানা।
এই ব্যক্তির নাম আবদুলস্নাহ সোহরাওয়ার্দী। আবদুলস্নাহ
সাহেবের পিতা মৌলভি ওবায়দুলস্নাহ সাহেব ছিলেন 888sport app আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ডেন্ট। আর্থিকভাবে দারুণ অসচ্ছল এই মৌলভি সাহেবের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারকে বিশেষ সাহায্য করেন নবাব সলিমুলস্নাহ।
আবদুলস্নাহ সাহেব আহসান মঞ্জিলের টাকায় লেখাপড়া শিখেছেন। তাঁরা সম্মানের সঙ্গে নবাব সলিমুলস্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠার প্রায় দশ বছর পরে এক মৃত্যুবার্ষিকীতে নবাব সলিমুলস্নাহর নামে একটা ছাত্রাবাস করার প্রসত্মাব করেন আবদুলস্নাহ সোহরাওয়ার্দী। রাজ্জাক স্যারের মতে, কোনো মুসলমান ধনীর কাছ থেকে 888sport app ইউনিভার্সিটি ডাইরেক্টলি কোনো সাহায্য পায়নি। কথা ছিল গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া 888sport app ইউনিভার্সিটি করবে। সেই জন্য ১৯১০ থেকে কিছু টাকা ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট আলাদা করে রাখত। ১৯২০-২১ সালে এ-টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০ লাখ। কিন্তু এই ৬০ লাখ টাকা বেঙ্গল গভর্নমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়নি। পুরো টাকা তারা নিয়ে নেয়। সেই নেওয়া টাকাতেই প্রতিষ্ঠার দশ বছর পরে হল নির্মাণ হয়।
রাজ্জাক স্যারের ভাষায়, ‘সলিমুলস্নাহ হল যে তৈরি হলো তা পুরাই সরকারের টাকায়। নওয়াব পরিবারের টাকায় নয়, এমনকি নওয়াব পরিবারের জায়গাতেও নয়। রমনার যে-জায়গায় আজ 888sport app ইউনিভার্সিটি – এর পুরাই সরকারি খাসমহল, সরকারের জমি। সেটেলমেন্ট রিপোর্টে তাই আছে। 888sport appর নওয়াবদের জমিজমা এসেছে প্রধানত একটি সূত্র থেকে। 888sport appর স্থানীয় মুসলমানরা মৃত্যুর সময় কোনো কোনো সম্পত্তি নওয়াব আবদুল গনি ও নওয়াব আহসানুলস্নাহকে ওয়াক্ফ করে দিয়ে যেত। 888sport appর নওয়াবদের জমির উৎস এই।’
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জানাচ্ছেন, ‘888sport app ইউনিভার্সিটির প্রথম ক-বছরের প্রগ্রেসে আর কোনো মুসলমানের কোনো অংশগ্রহণ বা ভূমিকা ছিল – এমন তো দেখা যায় না। মুসলমানদের সক্রিয় আন্দোলনরত কাজকর্ম শুরু হয় ফজলুর রহমান সাহেবরা যখন ইউনিভার্সিটিতে আসেন। দে বিগান টু টেক অ্যাকশন। ইনফ্যাক্ট হি ওয়াজ দ্য ফার্স্ট। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ১২-১৪ বছরের মধ্যে কোনো মুসলমান কোনো ইস্যু চেকআপ করে নাই। স্যার এফ রহমান তিন বছর ছিলেন কিন্তু তাঁর কার্যকলাপে, তাঁর পার্টিসিপেশনে মুসলমানদের সম্পর্কে বিশেষ কোনো ইন্টারেস্টের সাক্ষাৎ পাওয়া যায় না। তবে মুসলমানদের একজন হিসেবেই তিনি চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু দ্যাট দি মুসলিমস হ্যাড এ প্রবলেম ইন ম্যাটারস অফ এডুকেশন, দ্যাট 888sport app ইউনিভার্সিটি ওয়াজ ডিসাইনড টু ডু সামথিং অ্যাবাউট ইট, সে ব্যাপারে মুসলমানদের তরফ থেকে কোনো কন্সার্টেড অ্যাকশন পাওয়া যায় না। ফজলুর রহমানের পূর্বে এর কোনো দৃষ্টান্ত নেই। অবশ্য ফজলুল রহমান পাকিসত্মানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে পরবর্তীকালে খ্যাতি পেয়েছেন বাংলা ভাষার বিরোধিতাতে।’
সেই সময়ের পুরান 888sport appর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য সম্মানিত ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক রাজ্জাক। তিনি সব সময় হেকিম হাবিবুর রহমানের নাম উল্লেখ করতেন। হেকিম হাবিবুর রহমানের বাবা এসেছিলেন দিল্লি থেকে। তিনি অসাধারণ লোক ছিলেন, লেখাপড়া ছিল এবং খুব উঁচুদরের হেকিমও ছিলেন। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুরান 888sport appর পুরনো অবস্থান সম্পূর্ণ বদলে যায়। সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারগুলো কীভাবে ধ্বংস হয়ে যায় রাজ্জাক স্যার সে-সম্পর্কে বলেন, ‘পুরনো যারা ছিল দে ফেইল্ড টু অ্যাকমডেট দেমসেল্ভ উইথ দ্য নিউ চেঞ্জ। ফলে যার যা ছিল সব বিক্রি হয়ে যায়। এই যে আরমানিটোলা হাউস, এখন যেটা মেয়েদের স্কুল, এটা একটা মুসলমান জমিদারবাড়ি ছিল। আনন্দ রায় পরিবার সে-জমিদারের কাছ থেকে এটা কিনে নেয়। রায়রা উকিল ছিল। পুরনো পরিবারের উল্লেখ করতে গেলে জেলখানার রাসত্মায় ‘হাসিনা মনজিল’-এর পেছনে কিছু বাড়ি আছে যেগুলো এখনো দেখতে পাওয়া যায়। বাড়িগুলোর বিশ ফুট উঁচু ছাদ ছিল। ১৯৩০-এর দিকে আমরা দেখেছি এই পরিবারগুলো পুরনো ও সম্ভ্রান্ত পরিবার। এদের বিষয়-সম্পত্তি ছিল। ল্যান্ডেড প্রপার্টি ছিল। কিন্তু কেমন করে নিলাম হয়ে গেছে তারা টেরও পায়নি।’
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের এই অভিমত যে, ১৮৫৭ সালের পরে ইংরেজরা মুসলমানদের প্রতি সন্দেহপরায়ণ হয়ে তাদের সমস্ত ক্ষেত্র থেকে বাদ দিয়ে দিলো এবং সে-কারণে মুসলমানরা পিছিয়ে পড়ল – এই কথা ঠিক নয়। শিক্ষিত মুসলমানরা ব্রিটিশ সরকার ও শাসনের সঙ্গে non-cooperation করেছিল – এ-কথাও ঠিক নয়। তাঁর মতে, গত শতকের (ঊনবিংশ শতক) দিকে এমনকি শেষের দিকেও ইংরেজ কোম্পানি ও সরকারের দফতরে মুসলমান উচ্চপদস্থ কর্মচারীর 888sport free bet কম ছিল না। তিনি বলেন, ‘১৮১৪ সালে কলকাতার উকিলদের যে তালিকা আমরা দেখি, তাতে দেখা যায় ১৬ জন উকিলের মধ্যে ১৪ জন মুসলমান। ১৮৬৫ সালেও ৫০ পার্সেন্ট উকিল মুসলমান। কিন্তু তারপর থেকে একেবারে শেষ হয়ে যাওয়া শুরু হলো। এর প্রধান কারণ, ইংরেজি শিক্ষার দিকে এই শিক্ষিত মুসলমানরা একেবারেই ঝুঁকলো না।’ রাজ্জাক স্যার ইংরেজি কারিকুলামে পরিচালিত আধুনিক স্কুল সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘আরো মজার ব্যাপার এই যে, স্কুলগুলোর গভর্নিং বডির প্রায় সবাই ছিল মুসলমান।’
কেন এই শিক্ষিতদের বংশের ছেলেমেয়েরা ইংরেজি শিক্ষায় এলো না এর একটা কারণ হিসেবে রাজ্জাক স্যার শিক্ষাখরচের কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর মতে, এটাই একমাত্র কারণ হতে পারে না। তিনি জানাচ্ছেন, ১৮৩১ সালে যখন প্রথম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিল, যারা তখন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হলো তাদের অধিকাংশ মুসলমান। আমাদের মনে রাখতে হবে তখনো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি। তাই ইংরেজিশিক্ষিত ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এবং সরকারি দাফতরিক ভাষা ছিল ফারসি। নিচের দিকের ডেপুটি ছিল হিন্দুরা।
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জানাচ্ছেন, ইংরেজ সরকার ১৯১২ সালে আই. বি. ডিপার্টমেন্ট গঠন করে। এটা ছিল সেনসেটিভ ডিপার্টমেন্ট, কারণ এটাই ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনের অন্যতম মাধ্যম। এর প্রথম বাজেট হলো বারো লাখ টাকা, যার সাড়ে দশ লাখই হিন্দু পুলিশ কর্মচারীরা ভোগ করেছে। এই নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরো জানাচ্ছেন, ‘একবার গোখলে নাকি আসেম্বেলিতে ইংরেজদের লক্ষ করে বলেছিলেন, এডুকেটেড ইন্ডিয়া ইস এগেনেস্ট ইউ।’ ইংরেজ হোম মেম্বার হেসে জবাব দিয়েছিলেন, ‘যারা সবচেয়ে বেশি এডুকেটেড তারা তো আমার কাছেই চাকরির জন্য আসে। যাদের আমি নেই না তারাই মাত্র তোমার সাথে যায়।’ আসলে রোমান্টিসিজম দিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চলে না আর রোমান্টিক আইডিয়া ইতিহাস নয়।’
শেষাংশ
‘রাজ্জাক সাহেবকে বাঙালী মুসলমান সমাজের ঐতিহাসিক অহংবোধের প্রতীক বললে অধিক হবে না।’

  • আহমদ ছফা

শেক্সপিয়র লিখেছিলেন, ‘ফ্যামিলিয়ারিটি ব্রিডস কনটেমস’ – অতিসুন্দর সম্পর্ক মলিন হয়ে যায় প্রত্যহের স্পর্শে। আহমদ ছফা, যিনি দীর্ঘদিন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাহচর্যে কাটিয়েছিলেন, তিনি জানাচ্ছেন যে, রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে মিশলে শেক্সপিয়রের উক্তি ভুল মনে হতে বাধ্য। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক জ্ঞানের এমন এক তাজমহল যাতে কোনো জানালা-দরজা নেই, অন্তত ছিটকিনি নেই। একদিকের হাওয়া অন্যদিকে চলে যায় অনায়াসে। তাই সম্পর্কে ময়লা জমে না। আমার মনে হয় জীবন আর জগৎ দেখার যে সরল আর অনায়াস ভঙ্গি তাঁর ছিল, যা জীবনাচরণে তিনি
রপ্ত করেছিলেন, সেটাই এর কারণ। ঘরের মধ্যে রাজ্জাক স্যার সাধারণত গেঞ্জি ও গামছা নিয়ে থাকতেন। সেই গামছা গলার দুই
পাশে এমন করে ঝুলত যে, প্রথম দর্শনে তাঁকে আবহমান বাংলার
একজন কৃষক বলেই মনে হতো। এই হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ আর ঐতিহাসিক।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় দশকের দিকে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন ছাত্র এবং তৃতীয় দশকের শিক্ষক হিসেবে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত – তার একটি পাকিসত্মান আন্দোলন, একটি ভাষা-আন্দোলন এবং বাংলার মুক্তিসংগ্রাম। রাজ্জাক স্যারের জীবন তিনটি ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক এই তিনটি ঘটনা তিনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একটার সঙ্গে আরেকটার বহিরঙ্গের দিক দিয়ে পার্থক্য থাকলেও একটা মূলগত ঐক্যের কথা কিছুতেই অস্বীকার করার উপায় নেই। রাজ্জাক স্যারকে বাঙালি মুসলমান সমাজের ঐতিহাসিক বলা হয় না,
তথাপি ১৯৩০ সালের পর যে বুদ্ধিজীবী শ্রেণিটি বাংলার মুসলমানের আশা-আকাঙক্ষার ধারক-বাহক হয়ে উঠেছিল, রাজ্জাক সাহেব ছিলেন তাঁদের মধ্যে সবচাইতে অগ্রগামী।
আহমদ ছফা তাঁর যদ্যপি আমার গুরুতে লিখছেন, ‘পাকিসত্মান প্রতিষ্ঠার পর যে সমস্ত বুদ্ধিজীবী 888sport appsের জন্মপ্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাজ্জাক সাহেব তাতে একটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর চরিত্রের একরৈখিকতা, অনাপোসি মনোভঙ্গি এবং একান্ত মুসলিম সমাজভিত্তিক ধ্যানধারণার মধ্যেও একটা প্রবণতা অনায়াসে লক্ষ্য করা যাবে, সেগুলো যতটা নিরপেক্ষ ইতিহাস অনুধ্যানের ফল, ততটা হিন্দু সমাজের প্রতিক্রিয়াসঞ্জাত অভিব্যক্তি।’
অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বাঙালি মুসলমানের দৃষ্টি দিয়ে পৃথিবীকে দেখেছেন এবং বিচার করেছেন। আবার পৃথিবী দেখা চোখ দিয়ে বাঙালি মুসলমান সমাজকে বিচার-বিশেস্নষণ করেছেন নিজস্ব সামাজিক অবস্থানের ওপর দাঁড়িয়ে এবং নিজের সামাজিক পরিচিতির আদি বৈশিষ্ট্যসমূহ গৌরবের সঙ্গে ধারণ করে। এমন বিশ্বদৃষ্টির অধিকারী হওয়া পৃথিবীর যে-কোনো জাতির মধ্যেই বিরল।

দোহাই
১। যদ্যপি আমার গুরু, আহমদ ছফা।
২। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ, সরদার ফজলুল করিম।
৩। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক স্মারক গ্রন্থ।