অন্ধকারের গন্ধ

অভিজিৎ সেনগুপ্ত

সকাল ছটায় হাত-মুখ ধুয়ে ফ্লাস্কে রাখা চা আর গোটা কয়েক বিস্কুট পেটে চালান করে দিয়েই লেখার টেবিলে এসে বসেছেন রাজা রায়। এখন দশটা বাজে। নিচ থেকে নীলা ক্রমাগত তাড়া দিচ্ছে জলখাবার খেয়ে তাকে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু কাউকে উদ্ধার করার মতো সময় রাজা রায়ের হাতে নেই এখন। তাঁকে কে উদ্ধার করে তারই ঠিক-ঠিকানা নেই।

মাস দেড়েক মোটে আর বাকি আছে এই মেলার। দুজন পাবলিশার তাঁকে ইতিমধ্যেই কড়কড়ে দশ হাজার টাকা অ্যাডভান্স গছিয়ে দিয়ে গেছে বইমেলার আগে দুটো 888sport alternative link লিখে দেওয়ার জন্য।

রাজা রায় নিজেই বুঝতে পারছিলেন না, তিনি খুশি, না বিব্রত হচ্ছেন। নোটের তাড়া পাঞ্জাবির পকেটে রাখতে রাখতে বলেছিলেন – 888sport alternative link তো হবে না রজনীবাবু, বড়জোর গল্পোন্যাস হতে পারে।

দাঁত বের করে কৃতার্থের হাসি হেসে বলেছিলেন রজনী সেন – সে আপনি যাই নাম দিন সার্ – আপনাদের ভাষা নিয়ে কারবার কিন্তু আমরা 888sport alternative link বলেই বিজ্ঞাপন দেব। গল্পোন্যাস নামটা পাবলিক খাবে না হেঁ-হেঁ –

রাত-দিন ঘাড়মুখ গুঁজে লিখে দেড়শোটা স্লিপ ইতিমধ্যে নামিয়ে ফেলেছেন রাজা রায় – কম্পোজ হতে চলে গেছে – বাকি পঞ্চাশটা স্লিপ দিনদশেকের মধ্যেই ধরিয়ে দিতে হবে পারিজাত পাবলিকেশনের মালিক রজনী সেনকে, আর তারপরই হাত দিতে হবে পরবর্তী গল্পোন্যাসটায়। সেটারও স্টোরি লাইন দুমাস আগে থেকেই মাথার ভেতরে ছকা হয়ে আছে। গল্পের থিম নিয়ে এখন অবশ্য খুব বেশি একটা ভাবতে হয় না রাজা রায়কে। কাগজ-কলম সামনে রেখে খানিকক্ষণ শুধু চুপ করে বসে থাকতে হয়। প্রথম লাইনটা যদি একবার বিদ্যুতের মতো ঝিলিক মেরে যায় মাথার মধ্যে, পরের লাইনগুলো তারপর যেন টেলিপ্রিন্টারের হরফের মতো আপনা থেকেই একে একে ফুটে উঠতে থাকে মাথার ভেতরে। তাই যদি না হবে পনেরো বছর ধরে হাজার হাজার লাইন কেন লিখলেন তিনি? হাজার হাজার কপি বই যে তার গরম কেকের মতো বিক্রি হয়ে যায় এক বছরেই তা কি এমনি এমনিই?

পরের গল্প তিনি যেটা ফেঁদেছেন সেটা একটু অন্য ধরনের। নায়ক একটা এমএনসির টপ এক্সিকিউটিভ। কর্মসূত্রে হিল্লিদিল্লি ঘুরে বেড়াতে হয় তাকে। কর্মসূত্রেই ভারতের পাঁচটি রাজ্যের পাঁচ মহিলার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ আলাপ। এদের প্রত্যেকের কথাবার্তা, হাবভাব, ভাষাভঙ্গি অপরের থেকে আলাদা। কিন্তু শেষ অবধি কার ঘাটে গিয়ে নৌকো ভেড়াবে নায়ক তাই নিয়ে রুদ্ধশ্বাস 888sport alternative link। মোটামুটি ষাট-পঁয়ষট্টি স্লিপের মধ্যেই 888sport alternative linkটা নামিয়ে দিতে পারবেন বলে আশা রাজা রায়ের। এর বেশি সময় তাঁর হাতে নেই আর; কিন্তু কথারূপ পাবলিকেশনের সূর্যমন্ডল বুকের কাছে জোড়া হাত কচলে বলে গেছে – দয়া করে আর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ স্লিপ একটু বেশি লিখে দিতে হবে সার্  –

লেখকের গাম্ভীর্য বজায় রেখে রাজা রায় বলেন, যেটুকু দরকার সেটুকু নিশ্চয়ই লিখব।

হাত কচলে হেঁ-হেঁ হেসে বলেছে সূর্যমন্ডল – সে তো বটেই সার্ – তবে সাত-আট ফর্মার কমে আজকাল পাবলিক 888sport alternative link ঠিক খাচ্ছে না। আর আপনার মাপের লেখকের কাছে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ স্লিপ যে নস্যি, তা কি আমরা জানি না সার্? একবার বসলে বাঁ-হাতে লেখা হয়ে যাবে আপনার।

সূর্যমন্ডলের ঠোঁটের কোণে বিনীত একটা হাসি ঝুলেই থাকে। বাইরে গাম্ভীর্য বজায় রাখলেও ভিতরে ভিতরে যে খুশি হন না রাজা রায়, এমন নয়। আজকাল পড়াশুনো খুব একটা বেশি করেন না তিনি। সময় পান না। দুবেলা টানা তিন-চার ঘণ্টা লেখার পর যেটুকু সময় হাতে পান সে-সময়টা কোনো হালকা মেয়েদের ম্যাগাজিন কিংবা ক্রিকেট ম্যাচ দেখে কাটিয়ে দেন তিনি। তখন আর গভীর কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে না তাঁর। কিন্তু আগে যখন লেখক হওয়ার দুরন্ত আকাঙ্ক্ষা ছিল তখন পড়াশুনো করতেন খুব। লোকের মুখে শুনেছিলেন – পড়াশুনো না করলে নাকি বড় লেখক হওয়া যায় না – বড় লেখকদের জানতে হয় বুঝতে হয় অনেক কিছু। ডস্টয়েভস্কির জীবনী তিনি তখনই পড়েছিলেন। ঋণের বোঝায় জর্জরিত ডস্টয়েভস্কিকে কারাদন্ড এড়াবার জন্য পাতার পর পাতা লিখে যেতে হতো। এত জনপ্রিয় ছিল তাঁর লেখা যে প্রকাশকরা পাতা গুনে-গুনে পয়সা দিত ডস্টয়েভস্কিকে। যত বেশি পাতা লিখবে – তত পয়সা। রাজা রায় ভাবেন – আজ যেন তিনি নিজেই সেই ডস্টয়েভস্কির জায়গায় পৌঁছে গেছেন। তাঁর কলমের ডগায় নিঃসৃত প্রতিটি শব্দই যেন মুদ্রামূল্যে কিনে নেওয়ার যোগ্য, যেহেতু তাঁর বাজার আছে এবং জনমোহিনী হওয়ার এই ঈর্ষণীয় কৌশল অনেক চেষ্টায় রপ্ত করতে হয়েছে তাঁকে।

যেভাবে মানুষ হাঁটে চলে কথা বলে, তেমনি সহজে ঝরঝরে সুখপাঠ্য গদ্য পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারেন তিনি আজকাল। তাঁর জন্য প্রায় কোনো চিন্তাভাবনাই করতে হয় না তাঁকে। ওটা যেন আজকাল একটা অনায়াস অভ্যাস হয়ে গেছে তাঁর। কিন্তু নিতান্ত শারীরিকভাবে কলম চালানোর যে গতিবেগ তারও তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে। সে-সময়টুকু পাওয়ার জন্যই তো খালি নাকমুখ গুঁজে লিখেই যেতে হচ্ছে তাঁকে। নীলার প্রতি পাকাপাকি নির্দেশ আছে রাজা রায়ের কেউ ফোনে তাঁকে চাইলে যেন বলে দেওয়া হয় তিনি বাড়ি নেই।

একটানা লেখার পরিশ্রমে আঙুলের গাঁটগুলি টনটন করে তাঁর। ঘাড়ে স্পন্ডিলাইটিসের চিনচিনে ব্যথাও অল্প অল্প টের পান; কিন্তু তবুও বড় এক সুস্বাদু সুখ অনুভব করেন তিনি। জীবনে সফল হতে পারার সুখ। লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারার সুখ। এর সঙ্গে কোনো সুখেরই কোনো তুলনা চলে না। পুজো কিংবা বইমেলার আগে তাঁর দরজায় এখন নামিদামি প্রকাশক আর পত্রিকা-সম্পাদকের ভিড়। নিঃশব্দ প্রতিযোগিতা চলে নিজেদের মধ্যে, রাজা রায়কে কে আগে বায়নাবন্দি করে ফেলতে পারবে। পুজো 888sport free betয় 888sport alternative link বেরুতে না বেরুতেই আবার টিভি সিরিয়াল, টেলিফিল্মের জন্য বায়না। এখন এ-লাইনে অল্পবয়সী ঝকঝকে সব স্মার্ট ছেলেমেয়েরা এসেছে। রাজা রায়ের 888sport alternative linkের নায়ক-নায়িকাদের তুখোড় স্মার্ট ডায়ালগ তাদের খুব পছন্দ। বাংলা অ্যাকাডেমি কিংবা নন্দন চত্বরে রাজা রায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে তরুণ চিত্র-পরিচালকেরা গদগদ গলায় বলে – এবারের পুজোয় আপনার 888sport alternative linkটা দারুণ রাজাদা, মনে হচ্ছে যেন একেবারে ফিল্মের জন্যই লেখা। স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে গেলে খাটতে হবে না বেশি।

ক্লান্ত আঙুলকে একটু বিশ্রাম দেওয়ার জন্য কলম থামিয়ে ভাবেন তিনি। এখানে এসে পৌঁছুবার জন্য লড়াই তো তাঁকে কম করতে হয়নি। পান্ডুলিপি বগলে নিয়ে হ্যাগার্ডের মতো পাবলিশারদের দরজায় দরজায় এককালে কম ঘোরেননি তিনি। বরফের মতো ঠান্ডা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে পাবলিশাররা বুঝিয়ে দিয়েছে – তাদের সময় খুব দামি। আজেবাজে কথায় সময় নষ্ট করার মতো সময় তাদের হাতে নেই। কোনোমতে শেষে কিছু টাকা সংগ্রহ করে মফস্সলের ট্রেদ্রল মেশিনের ছাপাখানা থেকে ভাঙা লেটার প্রেসে লাল নিউজপ্রিন্ট কাগজে ছাপা একটা পাতলা আটটি গল্পের বই ছেপেছিলেন তিনি। কলকাতার কোনো পাবলিশার ডিস্ট্রিবিউট করতেও রাজি হয়নি সেই বই। বন্ধুবান্ধব যাদের তিনি দিয়েছিলেন সে-বই তারা যে পুরনো খবরের কাগজের সঙ্গে সের দরে বিক্রি করে দিয়েছে তা তাঁর জানতে বাকি ছিল না। চিলেকোঠার তাকে রাখা বাকি বই উই আর ইঁদুরে কেটেছে। বছর দুয়েক এরকম লেখালেখির পর শুভার্থী কিন্তু স্পষ্টবাক্ এক পাঠক বলেছিল তাঁকে – কোন গ্রহের মানুষের জন্য এসব লিখেছেন বলুন তো রাজাবাবু, গল্প না 888sport app download apk, তাই তো বোঝা যায় না। পৃথিবী গ্রহের মানুষের জন্য কিছু লিখুন অন্তত। যারা মানুষের ভাষা বুঝবে। শুভার্থীদের পরামর্শমতো পৃথিবী গ্রহের মানুষের জন্য কোমর বেঁধে লিখতে গিয়ে হঠাৎ পেয়ে গিয়েছিলেন সেই চিচিং ফাঁকের মন্ত্র, যা দিয়ে পাঠকদের মনের বন্ধ গুহার দরজা খোলা যায়। কুসুমের বাসর প্রকাশ করেছিল কলেজ স্ট্রিটের এক নগণ্য প্রকাশক। ছাপার খরচটা অবশ্য দিয়েছিলেন রাজা রায় নিজেই, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশনের ভার নিয়েছিল সেই প্রকাশক। কিন্তু প্রকাশ হওয়া মাত্রই বইটা সুপারহিট। এরকম সুখপাঠ্য রসালো প্রেমের 888sport alternative link বাংলা ভাষায় নাকি এর আগে আর কখনো লেখা হয়নি। একবার পড়তে শুরু করলে নাকি শেষ না করা ছাড়া উপায় নেই। একেবারে সত্যি অর্থেই যাকে বলে unput downable. এরপর আর রাজা রায়কে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রকাশকের দরজায় দরজায় পান্ডুলিপি বগলে চাকরির উমেদারের মতো ঘুরে বেড়ানো মনে হয় যেন কোনো লুপ্ত অতীতের দুঃস্বপ্ন।

কতক্ষণ ধরে এসব ভাবছিলেন জানেন না রাজা রায়। চমক ভাঙল বাড়ির কাজের লোক শ্রীনাথের কণ্ঠস্বরে।

– বাবু, এক ভদ্রলোক বাইরের ঘরে বসে আছেন, আপনার সঙ্গে দেখা করবেন বলে। পাতলা প্লাস্টিকের একটা ভিজিটিং কার্ড শ্রীনাথ এগিয়ে ধরে সামনে।

রাজা রায় খানিকটা উদাসীন চোখে কার্ডটার ওপর চোখ বুলিয়েই চমকে ওঠেন।

সাদার ওপরে নীল অক্ষরে লেখা মহিম সান্ন্যাল। নবযুগ প্রকাশন। ১২/১ বেনিয়াটোলা লেন।

দু-এক মুহূর্ত যেন নিষ্পলক পাথরের চোখে তিনি তাকিয়ে থাকেন লেখাটার দিকে। বিস্মিত ভাবটা কেটে গিয়ে তাঁর চোখে ঝিলিক দিয়ে ওঠে সূক্ষ্ম রহস্যময় এক হাসি।

শ্রীনাথ বলে, কী বলব বাবু ওকে?

– কিচ্ছু বলতে হবে না, তুই যা।

শ্রীনাথ বুঝতে না পেরে বলে, বাবু তো বসে আছেন –

রাজা রায় ধমক দিয়ে ওঠেন, বললাম তো কিছু বলতে হবে না, তুই যা।

কিছু বুঝতে না পেরে শ্রীনাথ বিড়বিড় করতে করতে চলে যায়।

রাজা রায় কলম হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। লিখতে ভুলে গেছেন তিনি। দুটি নাম তিনি শুধু বিড়বিড় করছেন নিজের মনে – মহিম সান্ন্যাল! নবযুগ প্রকাশন!

প্রকাশকেরা একটি মাত্র কারণেই তো তাঁর কাছে আসে এ-সময়ে। মহিম সান্ন্যালের আসার কারণও নিশ্চয়ই তার থেকে আলাদা কিছু নয়। তাঁর ঠোঁটের কোণে আবার ফুটে উঠল সেই সূক্ষ্ম কঠিন হাসি। ভিক্ষাপ্রার্থীর মতো মহিমকে বাইরের ঘরে ততক্ষণ অপেক্ষা করতেই হবে যতক্ষণ না রাজা রায় নিচে এসে দেখা করছেন মহিম সান্ন্যালের সঙ্গে। আজ গরজটা ওরই। অপেক্ষা করুক কিছুক্ষণ মহিম সান্ন্যাল। রাজা রায়ের হাতে আজ অফুরন্ত সময় আছে।

যেন কিছুই হয়নি এরকম স্বাভাবিকভাবেই আবার কলম মুঠোয় ধরে লিখতে যান রাজা রায়; কিন্তু এক লাইনও আর এগোতে পারেন না। মনঃসংযোগ একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে তাঁর। পঁচিশ বছরের ওপার থেকে আবছা জলছবির মতো 888sport sign up bonusগুলি হঠাৎ যেন জীবন্ত হয়ে উঠে তাঁর চোখের ওপর দিয়ে নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে। হ্যাঁ, পঁচিশ বছর আগেকারই কথা সেসব।

তিন-চার জায়গায় প্রত্যাখ্যাত হয়ে অবশেষে নিজের সদ্য-লেখা কটি 888sport alternative linkের পান্ডুলিপি ঝোলায় ভরে রাজা রায় হাজির হয়েছিলেন বেনিয়াটোলা লেনের নবযুগ প্রকাশনার দপ্তরে। মহিম সান্ন্যাল তখনকার একজন ডাকসাইটে প্রকাশক। স্বভাবে যেমন রাশভারী, তেমনি ঠোঁটকাটা দুর্মুখ নামেই প্রকাশকমহলে তিনি খ্যাত। প্রায় বৃশ্চিকের মতোই নাকি তিনি দংশনপরায়ণ। সব জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জন্যই বোধহয় নবযুগের অফিসে ঢুকে পড়ার কথা শেষ অবধি মাথায় এসেছিল তাঁর। একমাত্র হতাশাই বোধহয় জন্ম দিতে পারে এরকম প্রচন্ড সাহসের। কিন্তু দরজা পর্যন্ত যেতে যেতেই সমস্ত সাহস উবে গিয়েছিল তাঁর – নিঃশব্দে আবার ফিরে যাবেন কিনা ভাবতে ভাবতেই খোলা দরজা দিয়ে মহিম সান্ন্যালের চোখে পড়ে যান তিনি।

দৃশ্যটা এত বছর পরও স্পষ্ট চোখে ভাসে তাঁর। মাঝারি সাইজের ঘর-দরজার একপাশে কয়েকটা চেয়ার আর বেঞ্চি পাতা। একদিকে ডাঁই হয়ে পড়ে আছে বাহারি মলাটের সব বই। বইয়ের পাহাড় যেন। চেয়ারের সামনে বসে কিছু মানুষ – মোটামুটি প্রৌঢ় কিংবা মধ্যবয়সী। লম্বা লম্বা চুল অনেকের – পাজামা-পাঞ্জাবি পরা, কাঁধে ঝোলা – কেমন আঁতেল আঁতেল চেহারা। রাজা রায় চেনেন না কাউকেই; কিন্তু এঁরাই সেসব ডাকসাইটে লেখক নিশ্চয়ই, যাঁদের বই নিয়মিত ছাপে নবযুগ। চেয়ারের পেছনে যে মধ্যমণি হয়ে বসে আছে সে-ই যে মহিম সান্ন্যাল তা না বোঝার মতো আনাড়ি নন রাজা রায়।

মধ্যবয়স্ক কাঁচা-পাকা চুলওয়ালা মানুষটির ঠোঁটের কোণে একটা ঠান্ডা ব্যঙ্গের হাসি যে আঠা দিয়ে সাঁটা আছে তা প্রথম নজরেই চোখে পড়ে যায় রাজা রায়ের। কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় মহিম সান্ন্যালের নামে যে-কাহিনি চালু আছে লেখক-প্রকাশক মহলে তা তাহলে মিথ্যা নয়। চশমার নিচ থেকে বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ দুটি চোখ তুলে মহিম সান্ন্যাল মেঘের ডাকের মতো গম্ভীর গলায় বলেন – কী চাই?

চৌকাঠে এক পা রেখে কোনোমতে তো তো করে বলেন রাজা রায় – আ-আ-জ্ঞে আমি একটা একেবারে নতুন ধরনের উ-প-ন্যা-স – মা-নে – উ-উ-পন্যাস? চোখ দিয়ে ওকে একবার আগাগোড়া জরিপ করে নিয়ে এমনভাবে বলেন মহিম সান্ন্যাল যেন 888sport alternative link শব্দটা এই প্রথম শুনলেন তিনি। দরজার পাশে রাখা বেঞ্চিটা দেখিয়ে বলেন, অপেক্ষা করুন ওখানে –

রাজা রায় হাত কচলে বলেছিলেন – আপনি কি ব্যস্ত আছেন, একটু পরে আসব?

স্থির অন্তর্ভেদী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন মহিম সান্ন্যাল – আপনি নাও আসতে পারেন। আমার কোনো অসুবিধে নেই।

মহিম সান্ন্যালের কথার ভঙ্গিতে চেয়ারে বসা মানুষগুলির মুখে কি একটু মৃদু হাসি ফুটে উঠল?

অপমানিত বোধ করছিলেন রাজা রায় কিন্তু অপমানের চেয়ে তীব্রতর একটা ভয়ের অনুভূতি যেন পায়ের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে দিয়েছিল তাঁর। এখান থেকেও কি প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরতে হবে তাঁকে? ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠেছিলেন রাজা রায় – না, না, অপেক্ষা করছি আমি।

কী করে বোঝাবেন তিনি এই 888sport alternative link ছাপার জন্য এক মনুষ্যজন্ম অপেক্ষা করতে রাজি তিনি।

বাধ্য ছেলের মতো বেঞ্চির এক কোণে চুপ করে গিয়ে বসেন রাজা রায়, তারপর অপেক্ষা করতে থাকেন। এ-অপেক্ষার যেন কোনো শেষ নেই। একদল মানুষ উঠে চলে যায়। ঘরে এখন মোটে দুজন মানুষ। এবার নিশ্চয়ই মহিম সান্ন্যাল ডাকবেন ওকে। এ ভালোই হলো। প্রত্যাখ্যাত হলেও বেশি মানুষের সামনে অন্তত অপমানিত হতে হবে না তাঁকে। কিন্তু মহিম সান্ন্যালের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। একটা সিগারেট ধরিয়ে নতুন উদ্যমে খোশগল্প শুরু করে দেন তিনি। কবে সুন্দরবন বেড়াতে গিয়ে কাদায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছিলেন সেসব গল্প। সে যে একটা মানুষ চুপচাপ এক ঘণ্টার ওপর বসে অপেক্ষা করছে সে-বিষয়ে যেন কোনো হুঁশই নেই তাঁর। যেন ছারপোকা আরশোলার মতো নগণ্য একটা প্রাণী সে, যাকে অনায়াসে উপেক্ষা করা চলে। কোনোকিছু করার না থাকায় চারপাশে শুধু তাকাচ্ছিলেন রাজা রায়। নিরীক্ষণ করছিলেন ঘরটাকে।

ডাঁই করে রাখা নতুন ছাপা বইয়ের কী সুন্দর গন্ধ! নন্দনকাননের পারিজাতের গন্ধও যেন এর কাছে হার মানে। রাজা রায় লুব্ধ চোখে তাকিয়ে দেখেন কত লেখকের কত বই প্রকাশিত হয়েছে এখান থেকে।

এমন দু-একজন লেখক আছেন এঁদের মধ্যে যাঁদের নাম রাজা রায়ের কানে এযাবৎ আসেনি। তাহলে নতুন লেখক ওঁর লেখাও নিতে অরাজি হবেন কেন মহিম সান্ন্যাল? নিশ্চয়ই গজপতি গোস্বামী বা তারিনী মন্ডলের চেয়ে খারাপ তিনি লিখবেন না। তাঁর এই 888sport alternative link যদি ছাপেন মহিম সান্ন্যাল তাহলে এভাবে অপেক্ষা করার সব অপমান তিনি মুখ বুজে হজম করতে রাজি।

ঝোলার ভেতরের পান্ডুলিপিটার গায়ে আস্তে একবার হাত বুলিয়ে নেন,  যেন নিজের হৃৎপিন্ডে হাত বুলোচ্ছেন তিনি। কত ভালোবাসায় নিজের বুকের রক্ত নিঙড়ে লেখা তাঁর এই ক্ষীণতনু 888sport alternative link। –  অন্ধকারের গন্ধ। চারপাশে হাজার মানুষের রণরোল, কোলাহলের ভিড়ে মিশে থেকে একটি নির্জন একাকী আত্মার ক্রন্দন তিনি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন এই 888sport alternative linkের প্রতিটি শব্দের মধ্য দিয়ে। মেয়েরা যেমন কার্পেটের নকশা বোনে, তেমনি তিল তিল যত্নে এক বছর ধরে তিনি লিখেছেন পঁয়ষট্টি পৃষ্ঠার এই 888sport alternative link।

কাছেই রাস্তার ধারে একটা পাবলিক ইউরিন্যাল থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে ঝাঁঝালো অ্যামোনিয়ার গন্ধ; কিন্তু রাজা রায়ের সেদিকে হুঁশ নেই, মহিম সান্ন্যালের মুখোমুখি বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ যেন নিজের জন্মগ্রামের ছবিটা ভেসে উঠল চোখের ওপর। সেই তাদের দক্ষিণ বাংলার ছোট্ট গ্রামের বাড়ি। অমাবস্যার তারাভরা অন্ধকার আকাশের নিচে অন্ধকারতর এক খাল। দুপাশে ঝুপসি কালো গাছপালা, সারি সারি নৌকোর রহস্যময় টিমটিমে আলো। কোনো অলীক দেশে পাড়ি দেবে বলে যেন তারা এই মাঝরাতে নোঙর তুলছে। চরাচরব্যাপী স্তব্ধতায় শুধু তাদের নোঙর তোলার শব্দ। আকাশের উজ্জ্বল নিরুজ্জ্বল নক্ষত্র গ্রহ যেন সংকেত দেখাচ্ছে নৌকোগুলোকে কোনো এক আশ্চর্য পৃথিবীর দিকে ভেসে যেতে। গঞ্জের আড়তদার, হাটুরে, ভিখিরি, মাতালের ঊর্ধ্বশ্বাস ভিড়ে সেই পৃথিবীটার সঙ্গে রোজ গোপনে কানাকানি চলে শুধু তরুণ লেখকযশপ্রার্থী রাজা রায়ের। কত মৃত্যুহীন মাধুর্য, কুহক ভালোবাসার গল্প সে শুনিয়েছে ওঁকে। সেই স্বপ্নের পৃথিবীকে বুকের কাছে পাওয়ার জন্য আকুল কান্নাই আছে এই 888sport alternative linkের ছত্রে ছত্রে। একবার যদি সে সুযোগ পেত এই গোপন কান্নার কথা ছাপার অক্ষরের মধ্য দিয়ে সবাইকে জানাতে। যা কেউ জানে না তা জানানোর দায়িত্ব তো একজন লেখকেরই।

– কই দেখি, কী আপনার –

চমক ভাঙে রাজা রায়ের। প্রায় এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। যাঁদের সঙ্গে গল্প করছিলেন মহিম সান্ন্যাল সবাই চলে গেছে। এখন ঘরে কেউ নেই বলেই কি ডাক পড়ল ওর?

উৎকণ্ঠায় রাজা রায়ের রক্ত স্পন্দন যেন স্তব্ধ হয়ে যাবে। ঝোলা থেকে পান্ডুলিপিটা আস্তে বের করে বলেন – একবার যদি দয়া করে একটু পড়ে দেখেন –

তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে পান্ডুলিপিটা একবার নেন মহিম সান্ন্যাল। তাচ্ছিল্যের সঙ্গেই তাস শাফ্ল্ করার মতো ফরফর করে পাতাগুলো উলটে যান। সামনের পাতায় চোখ পড়তে প্রায় আঁতকে ওঠার ভঙ্গিতে বলেন – কী নাম 888sport alternative linkের? অন্ধকারের গন্ধ? বলেন কী মশাই, গন্ধরাজের গন্ধ থাকে বলেই তো জানতাম। আজকাল অন্ধকারেরও গন্ধ হচ্ছে বুঝি? নাহ্, কুকুরের মতো আমার ঘ্রাণশক্তি অত প্রখর নয় মশাই। যে অন্ধকারের গন্ধ পাব। আপনি বরং অন্য কোথাও দেখুন।

রাজা রায় মরিয়া হয়ে বলেছিলেন – অনেকের কাছেই গেছি – তারা উলটেও দ্যাখেনি। আপনি যদি একবার শুধু পড়ে দ্যাখেন। শুধু অন্ধকার একটা নদী আর একজন মানুষকে নিয়ে লেখা এই 888sport alternative link। নদীই এর নায়ক। এমন 888sport alternative link বাংলায় আগে আর কখনো লেখা হয়নি।

– সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে বলে আমার কাছে নিয়ে এসেছেন? কেন? আমার পাবলিকেশনটা ডাস্টবিন নাকি? না, আপনার এই গন্ধ আপনি অন্য কোথাও গিয়ে শোকান।

নিষ্ঠুর উপেক্ষায় পান্ডুলিপিটা প্রায় একরকম সামনের টেবিলে ছুড়েই দিয়েছিলেন মহিম সান্ন্যাল। নিঃশব্দে সেটা কুড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন রাজা রায়। অপমানের আগুনে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছিল তাঁর।

পঁচিশ বছর আগেকার সেই দুঃসহ অপমানের কথা এতদিন পর আবার মনে পড়ে গেল তাঁর।

কিন্তু আজ এতদিন পর মহিম সান্ন্যাল কেন এসেছে বিখ্যাত 888sport live footballিক রাজা রায়ের কাছে তা বুঝতে কি আর বাকি থাকে তাঁর?

ঘড়ি দ্যাখেন রাজা রায়। আধঘণ্টা নিচে অপেক্ষা করছেন মহিম সান্ন্যাল। এখন নিচে নামাই যায়। ঘরে ঢুকতেই মহিম সান্ন্যাল শশব্যস্তে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নমস্কার করেন। স্পষ্টতই এ সম্মান প্রদর্শন গৃহস্বামীর প্রতি অতিথির নয়, বরং এ-সময়ের ব্যস্ত সফলতম এক লেখকের প্রতি অনুগ্রহপ্রার্থী এক প্রকাশকের।

পঁচিশ বছরে মহিম সান্ন্যাল অনেকটাই বুড়িয়ে গেছে। তরবারির মতো খাড়া সেই ঝকঝকে চেহারাটা, যা দেখে আগে সমীহ জাগত, তা অনেকটাই বয়সের ভারে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। রাজা রায় স্পষ্ট অনুমান করতে পারছিলেন – কাল ততটা নয়, যতটা জীবনের কোনো বিপর্যয় ও ক্ষতিই তাঁর চামড়ায় এনে দিয়েছে বার্ধক্যের এরকম কুঞ্চন। রংচটা বিবর্ণ পোশাক কেমন দিশাহারা চোখের দৃষ্টি বুঝিয়ে দিচ্ছিল – সময়টা খুব ভালো যাচ্ছে না তাঁর।

মহিম সান্ন্যাল নমস্কার করে বলেন – আমাকে হয়তো চিনবেন না – আমি –

– আমি চিনি আপনাকে – আপনি মহিম সান্ন্যাল – বিখ্যাত পাবলিকেশন নবযুগের মালিক – বাধা দিয়ে বলেন রাজা রায়।

– আপনি চিনলেন কী করে?

– চিনি –

প্রথমটায় একটু বিপর্যয়ের ভাব ফুটে ওঠে মহিম সান্ন্যালের চোখেমুখে, তারপরই সে-বিস্ময়ের ঘোরটা কেটে গিয়ে তার ঠোঁটের কোণে বিষণ্ণ আত্মতৃপ্তির একটু মৃদু হাসি ঝিলিক দিয়েই মিলিয়ে যায়। আজ তাঁর অবস্থা গ্রহের ফেরে খারাপ হতে পারে কিন্তু এককালে কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় তাঁকে আর তাঁর প্রকাশনা সংস্থাকে যে একডাকে সবাই চিনত হয়তো সে-কথা ভেবেই।

রাজা রায় বলেন, স্যরি, অনেকক্ষণ আপনাকে বসিয়ে রাখলাম। তবে আধঘণ্টা হয়নি এখনো। আধ ঘণ্টার বেশি বসিয়ে রাখা নিশ্চয়ই অন্যায়।

মহিম সান্ন্যাল কষ্টে মুখে কেঠো হাসি ফুটিয়ে বলেন – না, না, আপনারা লেখকেরা ব্যস্ত মানুষ –

রাজা রায় ঠান্ডা কঠিন গলায় বলেন – সবাই নয়, কোনো কোনো লেখক।

– হেঁ হেঁ, তাই তো, কৃতজ্ঞতায় হাত কচলান মহিম সান্ন্যাল।

রাজা রায় ঘড়ি দেখে বলেন, বলুন, আমাকে এবার উঠতে হবে।

মহিম সান্ন্যাল বিনীত ভঙ্গিতে বলেন, আপনি এ-সময়ের সবচেয়ে খ্যাতিমান লেখক। আপনার একটা 888sport alternative link আমার পাবলিকেশন থেকে যদি বের করার সুযোগ পাই তাহলে ধন্য মনে করব নিজেকে। আমি জানি সার্ লাখ টাকা দিলেও আপনার 888sport alternative linkের সঠিক মূল্য দেওয়া হয় না, কিন্তু আমি সামান্য পাবলিশার। আমার সামর্থ্যও সামান্য। আমার সামর্থ্য অনুযায়ীই সামান্য কিছু টাকা আমি অ্যাডভান্স হিসেবে নিয়ে এসেছি। বড় আশা নিয়ে এসেছি আমি যে, আপনি না করবেন না। এই বইমেলাতেই 888sport alternative linkটা বের করতে চাই আমি।

প্রায় কাতর ভিখিরির দৃষ্টিতে রাজা রায়ের দিকে তাকান মহিম সান্ন্যাল। রাজা রায়কে গম্ভীর আর চুপচাপ দেখে মরিয়া গলায় বলেন, একটা ছোট 888sport alternative link হলেও হবে স্যার – আপনার নামটা থাকলেই তো যথেষ্ট।

উ-প-ন্যা-স। টেনে টেনে শব্দটা উচ্চারণ করেন তিনি। যেন শব্দটা প্রথম শুনছেন তিনি। ঠোঁটের কোণে ক্ষমাহীন হাসি ফুটে ওঠে তাঁর। বলেন, বসুন, আমি আসছি।

ওপরে উঠে যান রাজা রায়। চিলেকোঠার ঘরের একটা কাঠের তাক। তার এক কোণে রাখা অনেকদিনের পুরনো বাতিল পান্ডুলিপির স্তূপ। তাঁর প্রথম বয়সের বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়া সেই সব লেখা, যা কোথাও ছাপাতে পারেননি তিনি, অথচ প্রাণে ধরে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলেও দিতে পারেননি। নোংরা ঝুল আর ধুলোয় 888sport app কাগজপত্তরের ডাঁই ঘেঁটে বের করে আনেন নীল লাইন টানা ফুলস্কেপ কাগজে লেখা পান্ডুলিপি অন্ধকারের গন্ধ। ড্যাম্প লেগে কোথাও কোথাও লেখা আবছা হয়ে গেছে তবে তার পাঠোদ্ধার এখনো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়নি। পান্ডুলিপিটা হাতে নিতেই সূক্ষ্ম প্রতিশোধের একচিলতে হাসি ফুটে উঠল রাজা রায়ের চাপা ঠোঁটের কোণে। সেদিনগুলির কথা তিনি আজো ভোলেননি। মহিম সান্ন্যালের কাছ থেকে অপমানিত হয়ে ফিরে আসার পর রাগে-দুঃখে ভেবেছিলেন, এই নিষ্ফল পান্ডুলিপি ছুড়ে উনুনে ফেলে দেবেন – জীবনে আর কলম হাতে নেবেন না তিনি; কিন্তু শেষাবধি নিজের এই প্রতিজ্ঞা তিনি রাখতে পারেননি। আজ সেই বাতিল পান্ডুলিপি এভাবে একদিন কাজে লেগে যাবে ভাবেননি রাজা রায়।

নিচে নেমে এসে মহিম সান্ন্যালের উদ্গ্রীব হাতে পান্ডুলিপিটা দিয়ে বলে – এই নিন। অনেকদিন আগেকার লেখা। প্রথম পাতায় গোটা গোটা করে লেখা 888sport alternative linkের নামটা বিড়বিড় করে পড়েন – অ-ন্ধ-কা-রে-র গ-ন্ধ –

রাজা রায় বলেন – হ্যাঁ, গন্ধরাজের গন্ধ নয় কিন্তু – অন্ধকারের –

হাই পাওয়ারের মোটা লেন্সের নিচে মহিম সান্ন্যালের ধূসর চোখে হঠাৎ কী একটা ঝিলিক খেলে গেল। রাজা রায় বুঝে ওঠার চেষ্টা করেন। ওই ঝিলিক কি বুঝিয়ে দিয়ে গেল যে মহিম সান্ন্যালের সবকিছু মনে পড়ে গেছে? কিন্তু স্পষ্টতই বাইরে তিনি সেটা বুঝতে দিতে চাইছেন না। রাজা রায় মহিম সান্ন্যালের চোখের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বলেন, কী? চলবে তো এই 888sport alternative link – অ-ন্ধ-কা-রে-র গ-ন্ধ – ?

মহিম সান্ন্যাল ইতিমধ্যে পাতা উলটিয়ে দেখে গেছেন পঁয়ষট্টি পৃষ্ঠার 888sport alternative linkটা।

হঠাৎ মনে হলো রাজা রায়ের প্রতিশোধের যে-হাসি তিনি নিঃশব্দে এতক্ষণে নিজের মনে হাসছিলেন তার চেয়ে ঢের কৌতুক আর রগড়ের হাসি যেন ফুটে উঠেছে মহিম সান্ন্যালের ঠোঁটের কোণে। মহিম সেটা বুঝতে দিতে না চাইলেও তিনি পড়ে নিতে ভুল করলেন না। রীতিমতো বিস্মিত হন রাজা রায়। খানিকটা ক্রুদ্ধও। এখনো এ-কৌতুক তার কিসের? আজ তো আর তিনি মহিমের কৌতুকের পাত্র নন। সময়ের ঘূর্ণিপাকে মহিম সান্ন্যাল আজ এক দুস্থ প্রকাশক মাত্র আর রাজা রায় সফলতম 888sport live footballিক। মহিম সান্ন্যালই বরং আজ তাঁর কৃপার পাত্র। মহিম সান্ন্যালের ঠোঁটের ফাঁকে এ গোপন কৌতুকের হাসি মানায় এখন?

মহিম কিন্তু বাইরে খুব কাঁচুমাঁচু মুখ করে বলেন, আপনার 888sport alternative link কখনো ছাপানোর সুযোগ পাব ভাবিনি। এ আমার পরম সৌভাগ্য। প্রথম যে কটি পৃষ্ঠা চোখে পড়ল সার্ – অপূর্ব। বাংলাভাষায় এরকম লেখা এর আগে অন্তত কেউ লেখেনি। কিন্তু 888sport alternative linkটা যদি দয়া করে একটু শেষ করে দেন। বইমেলার তো আর বেশি দেরি নেই। কিস্তিতে কিস্তিতে স্লিপ পাঠাতে হবে প্রেসে। বেশি দেরি হলে কোনো প্রেসই আর নিতে চাইবে না।

রাজা রায় অবাক হয়ে বলেন, মানে? গোটা 888sport alternative linkই তো আমি দিলাম আপনাকে।

– না সার্, বিনীত হাসি হাসেন মহিম সান্ন্যাল, – এই দেখুন –

মহিম পান্ডুলিপিটা দুহাতে পুরো মেলে ধরে ফরফর করে একবার উলটে যেতেই রাজা রায় দ্যাখেন একেবারে শেষের দিকের বেশ কয়েকটা পৃষ্ঠা সিলভার ফিশের আক্রমণে একেবারে ফর্দাফাই। ছেঁড়া মাছের জালের মতো দেখাচ্ছে পৃষ্ঠাগুলিকে। ভুক্তাবশিষ্ট অক্ষরগুলি যা পড়ে আছে তা হরপ্পার লিপির মতোই দুর্বোধ্য। অযত্নে রাখা একদিনের এতো যত্নে লেখা পান্ডুলিপিটা যে এভাবে পোকায় খেয়ে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও কখনো মাথায় আসেনি রাজা রায়ের।

রাজা রায় তাকিয়ে দ্যাখেন মহিম সান্ন্যালের ঠোঁটের কোণে সেই সূক্ষ্ম মজা পাওয়ার হাসিটা যেন লেগেই আছে। যার কারণ কিছুটা অনুমান করতে পেরে প্রতিশোধের হাসিটা যেন আরো কঠিন হয়ে ওঠে রাজা রায়ের। যত বিখ্যাত লেখকই হোন না কেন রাজা রায় – তাঁর লেখা একটা অর্ধসমাপ্ত 888sport alternative link নিশ্চয়ই ছাপতে বলবেন না মহিম সান্ন্যালকে। ফলে অন্ধকারের গন্ধ ছাপার হাত থেকে নিশ্চয়ই নিষ্কৃতি পেয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু পঁচিশ বছর পর যাঁকে তিনি হাতের মুঠোয় পেয়েছেন তাঁকে এতো সহজে ছেড়ে দেবেন কী করে? মনে মনে বলেন রাজা রায় – যতই তুমি হাসো মহিম সান্ন্যাল, এই অন্ধকারের গন্ধই আমি তোমাকে দিয়ে ছাপাব। কুকুরের মতোই তোমাকে শুঁকে বেড়াতে হবে অন্ধকারের গন্ধ।

রাজা রায় মুখে খুব সদয়ভাবে বলেন – ঠিক আছে মহিমবাবু নতুন করে আমি লিখে দিচ্ছি পোকাখাওয়া পৃষ্ঠাগুলি। বইমেলা শুরু হওয়ার দিন পনেরো আগেই পেয়ে যাবেন। কয়েকটা তো মোটে পৃষ্ঠা।

মহিম সান্ন্যালের মুখের হাসিটা কিন্তু বদলায় না। হাত কচলে বলেন – আমি তাহলে ওই হপ্তাদুয়েক পরেই আসব সার্, আপনার কাছে – মোটে তো গোটা পনেরো পৃষ্ঠা। ও আপনি বাঁ-হাতে লিখলেও দিন পাঁচ-ছয়ের মধ্যে নামিয়ে দিতে পারবেন সার্।

রাজা রায় চুপ করে থাকেন। একটু কাঁচুমাঁচু মুখে মহিম সান্ন্যাল আবার বলেন – শুধু একটা কথা সার্, অনেকদিন আগের লেখা তো – নতুন লেখাটা যেন তার সঙ্গে খাপ খায়।

পঁচিশ বছর ধরে লিখে রাজা রায় লেখক হিসেবে আজ এতো যশ আর স্বীকৃতি পেয়েছেন। লেখা নিয়ে কারো গায়ে-পড়া হিতোপদেশ তিনি সহ্য করতে পারেন না। গম্ভীরভাবে বলেন রাজা রায় – সে-ব্যাপারটা আমার ওপরে ছেড়ে দিলেই কি ভালো হয় না?

– হেঁ হেঁ, তা তো বটেই সার্। বাইরে কাঁচুমাঁচু ভাব দেখালেও রাজা রায় দ্যাখেন ঠোঁটের কোণে কৌতুকের হাসিটা লেগেই আছে মহিম সান্ন্যালের। এ-হাসির কী অর্থ ঠিক যেন ধরতে পারেন না রাজা রায়; কিন্তু মনে মনেই তিনি এক অভিনব উৎসর্গপত্র ঠিক করে ফেলেন বইটার জন্য। ‘যে-অপমান করেছিল তাকে।’ এ উৎসর্গপত্রের মানে বুঝবে না এতটা বেরসিক নিশ্চয়ই নন মহিম সান্ন্যাল; কিন্তু মুখের ভাবটা তখন তাঁর কীরকম হবে দেখার জন্য প্রাণটা যেন ছটফট করে ওঠে রাজা রায়ের। ওর ওই মুখের ভাব দেখার চেয়ে যোগ্য প্রতিশোধ আর কী আছে?

 

দুই

বইমেলার জন্য পাবলিশারদের যা অগ্রিম ফরমাশ ছিল দিনে সাত-আট ঘণ্টা নাকমুখ গুঁজে লিখে তা মোটের ওপর তুলে দিতে পেরেছেন রাজা রায়। যূথী, তোমার হৃদয় 888sport alternative linkের শেষ কয়েকটা স্লিপ লিখতে গিয়ে অবশ্য একটু দোটানায় পড়তে হয়েছিল রাজা রায়কে। অনেকদিনের অভ্যাসের ফলেই রেসের ঘোড়ার মতো কলমের ওপর একবার চেপে বসতে পারলে কলমই যেন তাঁকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়ে নিয়ে যায় নিজের রাস্তায়। কোনোকিছুই আর মাথা ঘামিয়ে বিশেষ ভাবতে হয় না রাজা রায়কে। 888sport live football রচনা বস্ত্তত তাঁর কাছে এখন গায়ে তেল মাখা বা ভাত খাওয়ার মতোই একটা সহজ প্রক্রিয়া, তা ভেবে নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হন রাজা রায়। মনে পড়ে লেখকজীবনের প্রথম দিকে যখন খুব পড়াশুনো করতেন তিনি একটি বিখ্যাত জার্মান 888sport alternative link পড়ে খুব মজা পেয়েছিলেন। 888sport alternative linkের নায়ক এক স্বঘোষিত লেখক একটা নিতান্ত হাস্যকর চিঠিও লিখতে গিয়ে বারবার কাটাকুটি করতে করতে শেষে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন – ‘জাত লেখক তাঁরাই লেখাটা যাঁদের খুব সহজে আসে না।’ না, কুসুমের বাসর লেখার পর থেকে অন্তত না-লিখতে-পারার সপক্ষে এরকম কৌতুককর যুক্তি কখনো হাজির করতে হয়নি রাজা রায়কে – কেননা, লেখাটা তাঁর এখন          অন্তত সহজেই আসে।

কিন্তু এ-888sport alternative linkটি শেষ করার ব্যাপারে একটু সমস্যায় পড়েছিলেন বটে রাজা রায়। 888sport alternative linkের গোড়াটা তিনি ধরেছিলেন ভালো। নায়িকাকে তিনি এঁকেছিলেন টপ, টাইট জিনসের প্যান্ট পরা এক দুরন্ত 888sport promo codeবাদী তরুণী হিসেবে। প্যান্টের পকেটে তার দামি সিগারেটের প্যাকেট। একটু টেনশন হলেই ফুরফুর করে সিগারেট টানে। কিন্তু 888sport alternative linkটা এভাবে শেষ করতে চাইছিলেন না রাজা রায়। তাঁর এ-888sport alternative link নিয়ে সিনেমা, টিভি সিরিয়াল হবেই। বয়স্ক মানুষেরাই মূল দর্শক এসবের। তাঁরা ব্যাপারটাকে অন্যরকমভাবে নিতে পারেন, সুতরাং নায়িকার পকেটে সিগারেটের প্যাকেট থাকা সত্ত্বেও তার সিঁথিতে সিঁদুর দিয়েই তিনি 888sport alternative linkটি শেষ করতে চাইছিলেন। কিন্তু সেটা করতে হবে খুব কৌশলে 888sport live chatসম্মতভাবে। তরুণ পাঠকদের আজকাল খুব আঁতেল আঁতেল ভাব। খুঁত না ধরতে পারলে আবার আঁতেল হওয়া যায় না। চার-পাঁচ পৃষ্ঠা লেখালেখি কাটাকাটি – যেটা বহুদিন তাঁকে করতে হয়নি – করার পর অবশেষে ব্যাপারটা তিনি পছন্দমতো দাঁড় করাতে পেরেছেন। এবার তিনি নিশ্চিত এ-বই বাজারে বেরুনো মাত্র হু-হু করে কাটতে শুরু করবে। পাঠকের মেজাজ-মর্জিই যদি না বুঝতে পারলেন তাহলে পঁচিশ বছর ধরে 888sport live footballচর্চা করলেন কেন তিনি?

এখন হাতে তাঁর আর কোনো কাজের চাপ নেই। এখন তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। পঁচিশ বছর আগেকার উইয়ে খাওয়া পান্ডুলিপিটা নিয়ে এবার বসতেই পারেন তিনি। পান্ডুলিপি মেরামত করার জন্য এখনো সাতদিন সময় হাতে আছে তাঁর।

খাওয়াদাওয়া সেরে একটু বেশি রাতেই বসেন তিনি পান্ডুলিপিটা নিয়ে। এটাই তাঁর লেখার সবচেয়ে প্রিয় সময়। তাঁর মনঃসংযোগ নষ্ট করার মতো কোথাও কোনো শব্দ নেই, কোলাহল নেই। মাঝে মাঝে দু-একটা গাড়ি শুধু হু-উ-শ করে চলে যাচ্ছে সামনের রাস্তা দিয়ে। পান্ডুলিপির শেষের দিকের অনেকগুলি অক্ষর উইয়ের পেটে চলে গেলেও সামনের দিকের পাতাগুলি অনেকটা অটুট অক্ষয় আছে। রাজা রায় পড়তে থাকেন তাঁর পঁচিশ বছর আগেকার লেখা – যখন 888sport live footballযশভিক্ষু সামান্য একজন যুবকমাত্র তিনি, যাঁকে অনায়াসেই অপমান করা চলে। বুঁদ হয়ে পড়তেই থাকেন রাজা রায় – আশ্চর্য! এ-লেখা কি এককালে তিনিই লিখেছিলেন? কোন পৃথিবীর কথা তিনি লিখেছেন এতে? পড়তে পড়তেই পঁচিশ বছর আগেকার একটা লুপ্ত অলীক জগৎ যেন কয়েকবার বিদ্যুৎগর্ভ মেঘের মতো ঝিলিক দিয়ে উঠেই নিভে যায় তাঁর চোখের সামনে। তারপর শৈশবের হারিয়ে-যাওয়া স্বপ্নের মতো একটা গহন কালো নির্জন নদীর ছবি যেন বারবার চোখের ওপর ভেসে উঠতে থাকে তাঁর। মাতৃগর্ভের মতো নদীর ওপরের অন্ধকার আকাশ যেন কোনো আশ্চর্য জীবনের জন্ম দেবে বলে তারার আলোয় কাঁপছে…। নদীর পারের গেঁয়ো গরানের পাতার মধ্য দিয়ে হাওয়া বয়ে যাচ্ছে যেন সেই আশ্চর্য জন্মের উলুধ্বনির মতো। শুকনো খড়কুটো আর নৌকোর খোলের আলকাতরার গন্ধ, নদীর দুপাশের গাছগাছালি আর নদীর জল থেকে উঠে আসা আঁশটে গন্ধ সব মিলেমিশে যেন তা সেই অন্ধকারের গন্ধ, যা একদিন এক রহস্যময় জীবনের কথাই বলতে চাইত শুধু।…

একদিন কত প্রত্যক্ষ ছিল ওই নদীটা তাঁর কাছে, আজ আর নেই। একদিন বুক ভরে নিশ্বাস নিলে সেই অন্ধকারের গন্ধটা সত্যই পেতেন রাজা রায়, কিন্তু আজ? সবটাই অলীক অবাস্তব মনে হচ্ছে তাঁর কাছে? যেন এক অলীক কবিত্ব?

কলম-হাতে নিঃশব্দ পাথরের মূর্তির মতো বসে থাকেন রাজা রায়। যেন অপেক্ষা করতে থাকেন সেই দৈব মুহূর্তের জন্য যখন হঠাৎ কোনো এক আশ্চর্য হাওয়ায় পঁচিশ বছর আগেকার গল্পটা হঠাৎ ফিরে আসবে আর তার অনুষঙ্গে চোখের সামনে দপ্ করে জ্বলে উঠবে লুপ্ত আটলান্টিকের মতো সেই পৃথিবীটা, একদিন তিনি যার অধিবাসী ছিলেন – আর সেই পৃথিবীটা নিয়ে তখন আবার তিনি লিখতে শুরু করবেন।

কিন্তু চুপচাপ বসেই থাকেন অসহায় রাজা রায়। আবার বসে থাকেন। সামনে খোলা পান্ডুলিপি। শব্দ হাতড়ে বেড়ান তিনি – যে-শব্দে ভর দিয়ে টাইম মেশিনের মতো একদিন তিনি ফিরে যেতে পারবেন তাঁর সেই লুপ্ত পৃথিবীটায়, যে-পৃথিবীর একদিন একমাত্র অধীশ্বর ছিলেন তিনিই।

কিন্তু বৃথাই বসে থাকা রাজা রায়ের। যতই বাণিজ্যসফল জনপ্রিয় লেখক হোন না কেন তিনি, আজ অন্ধকারের অলীক গন্ধ পাওয়ার শক্তি তিনি কবেই হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর হাতে আর কখনোই ফিরে আসবে না সেই সব শব্দ যা দিয়ে একদিন তিনি তৈরি করেছিলেন তাঁর নিজস্ব একটা জগৎকে। অর্জুনের মতো তাঁর হাত থেকে যেন কবেই গান্ডীব খসে গেছে – তিনি জানতেও পারেননি।

আলো নিভিয়ে দিয়ে একসময়ে বারান্দার আকাশের নিচে এসে দাঁড়ান অসহায় রাজা রায়, আর তখনই যেন মহিম সান্ন্যালের ঠোঁটের কোণে লটকে থাকা সূক্ষ্ম হাসির অর্থটা প্রাঞ্জল হয়ে যায় রাজা রায়ের কাছে।

এতই দূরদ্রষ্টা তাহলে মহিম সান্ন্যাল যে, তাঁর শেষ হাসিটা তিনি এতো আগেই হেসে নিতে পেরেছিলেন?

কিন্তু না, মহিম সান্ন্যালের কাছে আবারো হারতে পারেন না তিনি। যে-কোনো মূল্যে হোক জিততে তাঁকে হবেই। মনস্থির করে ফেলেন রাজা রায়। পনেরো দিন পর যখন আসবেন মহিম সান্ন্যাল পান্ডুলিপি নিতে রাজা রায় তাঁকে বলে দেবেন যে, অন্য আর একজন পাবলিশার অনেক বেশি মূল্য দিয়ে সেই পান্ডুলিপি কিনে নিয়ে গেছে তাঁর কাছ থেকে।

এটুকু মিথ্যা বলতে হবেই তাঁকে। কেননা যেখানে এসে আজ তিনি পৌঁছেছেন সেখানে জেতার জন্যও আজ আর হারা চলে না।