অন্যতমা অন্যদিকে যায়

নাসরীন জাহান

আমি বিমূঢ়, সত্মব্ধ বিস্মিত, ধেয়ে আসছে নদীটি… যার স্রোতের নির্মল ঢেউয়ে প্রচ্ছন্ন ছায়া ফেলছিল অরেঞ্জ রং… ভাঁজে-ভাঁজে যেন আকাশের মেঘ… তুলো-তুলো কখনো, কখনো হরিণ… হাতি… কিন্তু আমি জলের মধ্যেও শুধু হাজারো ঢেউ ভেঙে একটা মুখকে স্থিত হতে দেখেছি।

যার চোখ কেবল আমাকে দেখলেই ভাষা বদলায় দেখি। সেই নদী… বন্যার উদ্দামতা নিয়ে… কোমল নখর-মিশ্রণ নিয়ে আমাকে যে আমূল তলিয়ে ডুবিয়ে যেন…

আহ্!

পাশের বেডের রোগীর কত রাত্রিতে চৈতন্যের ক্ষীণ জাগরণ… মৃত্যুশয্যাশায়ী… আমারই মতন অসার নিঃসঙ্গ… পার্থক্য, মৃত্যু তার সঙ্গী হয়েছে; বৃদ্ধ মহিলাটির যেন ডাক এসেছে, চলে যাচ্ছে অনমেত্ম। এতদিন সারাদিন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকত, কাঁদত, ভয় পেত, এসব আমার গ্রাহ্য নয় নিরন্তর, আজ কী বুঝে তার দিকে চোখ তাক করে দেখি, সাক্ষাৎ যমের সামনে প্রথমে তার চোখ বিস্ফারিত হলো… এরপর নিঃসাড় ঠোঁটে একটা বাক্য স্থিত হলো… আজকেও তুমি আইলা না? হেই যৌবনে…।

সত্মব্ধ সব।

চারুকলার তেপান্তর ছাদে পা ঝুলিয়ে ছেলেমেয়ে গলাগলি করে আড্ডা দিতাম। কোনো ছেলেবন্ধুর সঙ্গে দেহ লেপ্টে গেলেও আমার মতোন সুদেহী তার সভ্য-অসভ্য কোনো কাঁপন অনুভব করেনি… বাদাম খাচ্ছে আর অনর্গল বলছে, হ্যাঁ, আমি ন্যুড আঁকি, ফিগার আমার ফেভারিট। ক্রমশ অভিজ্ঞতায় বোধ-বৃদ্ধরা স্পর্শের ব্যাপারে মারাত্মক কামুক। যৌবন-শিহরণে ছিঁড়েখুঁড়ে দেহে ঢোকে সৌন্দর্য দেখতে-দেখতে… কিছু বোদ্ধা বৃদ্ধও কোনো কিশোরীকে পাশে বসে সবার সামনে নিরাপদ হাস্যরত থাকলেও তার অবদমিত আগ্রাসী কাম তাকে 888sport live chatচ্যুত করে… সে-কিশোরীর এ-জায়গা ও-জায়গা দু-আঙুলের ভাঁজে টিপ দিতে থাকে, কিশোরী বিশ্বাস-অবিশ্বাস অস্বসিত্মতে উসখুস করলেও যে টের পেতে পারে এক মহান চারম্ন888sport live chatী, আমি তার মুগ্ধ ছাত্রী – কাছে বসে একদিন হতভম্ব হয়ে দু-আঙুলের সত্মনের এক ভাঁজে, যা সোফাঘেঁষা ছিল… আঙুলের ডাঁটা ধরে ক্যানভাসে একের পর এক 888sport promo code… নদী-সমুদ্র বিমূর্ততা সৃষ্টি করেন, আর্তনাদ করতে গিয়েও নিশ্চুপ ছিলাম যে কীভাবে, আমি জানি না।

হতে পারে শৈশবে এক পুরম্নষ আমার ফেলে আসা গ্রামের নদীটি মফস্বলের কাছেই, আজানের আগের কাঁচাভোরে শহরের এক এক জায়গায় এসে রোজ দাঁড়ায় – এই বলে সত্মব্ধ আঁধার ভেঙে ভীত স্বপ্নিত, কম্পিত আমাকে সত্মব্ধ এক গাছের নিচে ফেলে দুম করে লুঙ্গি খোলে…।

লুঙ্গির নিচে এতবড় সাপ এক স্থানে থেকে লাফাচ্ছে… কী করে লুকিয়েছিল? বাইরে থেকে একবিন্দু বোঝা যায়নি তো? বিমূঢ় সত্মব্ধতায় ভাবছি… তখন আমার হাফপ্যান্ট খুলে… কী নারকীয় শাবল পাশবিকভাবে ঢুকে যেতে থাকল আমাকে রক্তাক্ত অচেতন করতে-করতে, এক হাতে মুখ চেপে এক কিশোরীকে অচেতন করতে পারে, দিকভ্রান্ত আমার কোনো এক দেহ আটকে থাকা ছোট অংশ কোনো অলৌকিক শক্তিতে সটান শক্ত লৌহ হয়ে শৈশব-কৈশোর এক হয়ে গেছে, এই রক্তাক্ত অলৌকিকতার সূত্র খুঁজতে-খুঁজতে। আমাকে ওই অবস্থায় আবিষ্কার করে আরেক বৃদ্ধ পরম মমতায় আমার সব মুছে ধুইয়ে সেবা করে করে তার নিঃসঙ্গ একাকী ঘরে অনেকদিন রেখেছিলেন। আমি তাকে আমূল জড়িয়ে তার সম্পূর্ণ কামহীন অনুভবে নিশ্চিমেত্ম ঘুমিয়েছিও। সে জানাতে, বাড়িতে জানায়ো না, এক্ষনি পায়ে শিকল পরাইব। ‘সব পুরম্নষ এক’ সে-কারণেই সেই কিশোরী কোনোদিন এই বোধে পৌঁছায়নি।

বৃদ্ধ, যুবক… ভিন্ন ভিন্ন, নানা ক্ষেত্রে, প্রেক্ষাপটে, ক্যানভাসে।

আজ কি কষ্ট কম হচ্ছে?

তরম্নণ ডাক্তার আমার পাল্স চেক করতে-করতে বললেন…

অ্যাসিডে দেহ কম মুখ পুড়েছে। পুরো মুখ তুলোয় ডোবানো, স্পষ্ট করে লক্ষ করম্নন চোখে স্পষ্ট দেখতে পান তো? দীর্ঘদিন রাত রক্তাক্ত পুড়ন দহনে… এমনও বোধ হতো, বিরামহীনভাবে আমি শ্মশানের জ্বলন্ত কাঠে মুখ পেতে রেখেছি। কখনো আর্তনাদ কম্পন গোঙানি করতে-করতে আজ প্রায় এক মাসের কাছাকাছি, গণপিটুনির চোর হয়ে গেছি… বাড়ি খেতে-খেতে আঘাত আর গা, আত্মা স্পর্শ করছে না।

একজোড়া চাহনি থেকে বিচ্যুত হয়েছিল… হু-হু কষ্টে জটাজল বোনা ঘূর্ণি ঢেউয়ে পাক খেয়েছি কত… কষ্টের সাধ্য আমাকে কষ্ট দেয়?

তবে তলানির ধেই-ধেই কান্না… ওই চোখ আমার মুখ দেখত, কী গভীর প্রগাঢ় তার মুহুর্মুহু বদলের রোম্যান্টিকতায় কাঁপতে-কাঁপতে আমি উপমা খুঁজে পেতাম না, পেইন্টিংয়ে কোন ভাষায় তাকে মূর্ত করা যায়…।

সেই মুখটা পুড়িয়ে দিলো?

কলাভবন পেরিয়ে কোন সে-ঘোরে পাক খেতে-খেতে অপরাজেয় বাংলার ভাস্কর্যের সামনে এসেই যখন ছলকে উঠত ঢেউ… জানেন, আমার বাবা সংসার-উদাসীন মানুষ, মা সংসারে হিমশিম, দাদার স্নেহ যা দিয়ে এই শৈশব কেটেছে। সেই দাদা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, গেরিলাযুদ্ধে যখন তিনি লড়ছেন, একদিন তার পরম আত্মার একমাত্র ছোটবোনকে রাজাকাররা টেনে নিয়ে গিয়ে…।

সমুদ্রের রং যে আক্ষরিক অর্থেই নীল, তা কখনো দেখেছ?

সত্মম্ভিত কিছু্ক্ষণ দাদা, যুদ্ধ তার বোন… ওসব ময়দান থেকে চ্যুত হয়ে একটু থেমে বললাম সমুদ্র তো নীলই…।

দূর থেকে যেমন আকাশ তিনি বলেন, আক্ষরিক অর্থে তাহলে তোমাকে সেন্টমার্টিনের সমুদ্রে নিয়ে যাব।

তীব্র শীতেও তার গায়ের কোট থেকে বেরিয়ে আসা ঘ্রাণে তার হাতের সঙ্গে হাত স্পর্শে বিদ্যুতারোমাঞ্চেও কাঁপতে-কাঁপতে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনি নিয়ে যাবেন? আপনার চারপাশের মানুষ সমাজ…

সে তো তোমার ভয়ই বেশি হওয়ার কথা। ভার্সিটির ফাইনাল ইয়ারে আমি পাঁচ বছর ধরে রাজা, কত ছেলেমেয়ের সঙ্গে মিশি, মিশতে হয়। সুযোগ পেয়েও ডাক্তারি না পড়ে কবি হতে 888sport app এসেছিলাম। কবিদের সঙ্গে কত হুজ্জত, বাংলামদের আড্ডায় গড়াগড়ি, মোহগ্রসত্ম দিন কাটছিল জানো, একটু থেমে লেকের তরঙ্গে পকেটে জমিয়ে রাখা ঢিল ছুড়তে-ছুড়তে বলেন, যত অপেক্ষা করতাম বইমেলার জন্য, মেলা শেষে তেতো পীড়ন নিয়ে ফিরতাম। যেন শকুন মৃত গরম্নর অপেক্ষা, কাকে খপ করে ডেকে বলা যায়, বইটা কেন, ক্রমশ বিমর্ষ হতে থাকল তার কণ্ঠ অবচেতনে, কখন যে পলিটিক্সের রাজ্যময় জগতে প্রবেশ করছি তখন…।

ক্রমশ জড়তা কাটিয়ে যখন এক বক্তৃতায় ভূম-ল কাঁপিয়ে দিলাম মনে হলো, 888sport app download apk লিখে সারা জীবন ফকিন্নিগিরি করতে হবে। না-না, আমার দ্বারা হবে না।

এই অপ্রিয় সত্যের উচ্চারণে আমি যখন হৃদয়ের সাঁকোর স্বপ্নভঙ্গের শব্দে নেতিয়ে পড়েছি… এই লোকটাকে? যে পাঁচ বছর একই ক্লাসে পড়ে পলিটিক্স করে দুহাতে টাকা উড়িয়ে নিজেকে রাজা ভাবে… আমি এর প্রেমে এত…?

তখনই আমার দিকে ফিরে তার সেই চাউনি, সেই কাঁপন, কেন, সেন্টমার্টিন যেতে এখন তোমার ভয় হচ্ছে? আমি মনে করিয়ে দেওয়ার পর? আমার নিঃসাড় দেহের ভেতর কেবল তরঙ্গ ফেলে আসা কংস নদীর ঢেউ, ব্রহ্মপুত্র, কাশফুল, প্রতি ঋতুর বদল, গ্রীষ্ম অরেঞ্জ বর্ষা ক্যানভাসে নর-888sport promo codeর নানা ভঙ্গির বিবর্তন, শরৎ সিলভার হেমন্ত আসন্ন শীতের মিহি কান্নার অনিন্দ্যকীর্তনের ঘ্রাণ… শীত কবজাও কামুক বসন্ত প্রায় ফুল পলস্নবহীন বাতাসে অনেক পাখির সুরেলা কণ্ঠ, অস্ফুটে বলি, আপনার স্ত্রী?

যেন ফণা তোলা জোঁকের মুখে নুন ফেলেছি।

তিনি চুপসে গেলেন।

রাতদিনময় কী দুঃসহ ঈর্ষার ছটফটানি। জ্যান্ত পুড়ে পরান খাক হয়। শয্যা নয়, অকূল দরিয়ায় ভাসি আর ডুবি – তার স্ত্রী, কোন সে 888sport promo code অন্সরা? সে কারো উদ্ধত মাথা মুহূর্তে নত করে দেয়, উজ্জ্বল মুখ করে দেয় অনুজ্জ্বল, ফ্যাকাশে? তাঁর চোখ কি ওই 888sport promo codeর দিকেও একই রকম? না না, দুঃসহ অস্বীকার সঙ্গে দাঁড়ায় অনেক অনিন্দ্যসুন্দরীর সামনে, তিনি মুগ্ধ হয়েছেন তা অকপটে স্বীকার করেছেন। সন্তর্পণে লক্ষ করেও তার চোখে তখন আমি ওই চাহনি দেখিনি। তার দেহমন শয্যায় তিনি সেই 888sport promo codeকে দেন, যা আমরা পরস্পরকে দেই, নিই, তার সঙ্গেই প্রথম শরীর প্রেম নয়, আমার জীবনে প্রেম একাধিকবার এসেছে। অন্তত এর আগে তিনবার মনে হয়েছে এটাই প্রথম প্রেম। এর মতো আগে কাউকে… এর বর্ণ ঘ্রাণ আলাদা। একমাত্র এতেই কাঁপন। ওদের

সঙ্গে জড়াজড়ি চুম্বন পর্যন্ত গেছি। যার সঙ্গে শরীরে গেছিলাম, প্রথম রক্তপাতের দুঃসহ কষ্ট সামলে তার সঙ্গে ভেসে গিয়েছিলাম। ওকে নিয়ে রঙে হাত ছুঁয়ে আমরা বলেছিলাম, এ জীবনে বিচ্ছিন্ন হারানো তার কথায় চাহনিতেও উদ্দাম, চলায় হাসি, সান্নিধ্যেই কঠিন মুগ্ধতা। একসময় যখন ক্রমশ সে আমার কাছেও ডাল-ভাত হয়ে গেল – নানা ছুতোয় তার এখুঁত-ওখুঁত, এদোষ-ওদোষ বের করে সম্পর্কটা সচেতনভাবে মোটামুটি তেতো করে কেটে পড়েছিলাম। পসিত্ময়েছি কি? অপরাধী নিজেকে হয়েছে মনে?

কে দাঁড়ায় সে-অবস্থার সামনে, যে-অবস্থায় নিজেকে দায়ী করে কষ্ট পাওয়ার গস্নানিতে ভোগার ঝুঁকিতে যেতে হয়?

অন্তত অত শুদ্ধ মন আমার নেই।

দাদা নামাজ পড়তেন পাঁচ ওয়াক্ত। কংস নদীর উদার হাওয়ার প্রভাবেই কি অনুদারতা আমাদের পরিবারকে ছোঁয়নি। সাত ভাইবোনের মাঝে ছেলে… ছেলে বলে মাথাব্যথা শুনিনি?

নর্মাল সালোয়ার ওড়নায়ই চলতাম, গ্রামে গেলেও দেখতাম বেশির ভাগ মেয়ে এই সবই পরে। শৈশবে ময়মনসিংহে এলেও বছর-বছর কংস নদীর গ্রামে, নিঃসঙ্গ দাদার কাছে না গিয়ে পারতাম না। দাদা বলতেন, সব ধর্মের সার কথা এক – কল্যাণ সম্পূর্ণ নামাজ করে যে-কোনো ধর্মের মানুষকে আঘাত করা… লোভ… ধর্মের উৎসবের নামে লোক-দেখানো খরচ ইত্যাকার বহু কিছুতেই দোযখ বেহেশত নিহিত।

একবার কোনো দুর্লভ অনির্বচনীয় আলোর বৃত্তে কৈশোর যৌবনে দলবেঁধে পূজা দেখার ধূপ গন্ধময় লেগে থাকা ঢাকের শব্দ সত্তায় নিয়ে কম্পিত যৌবনে আমার বর্তমানের কাঙিক্ষত দুর্লভ ঘোরগ্রসত্ম জলে হাত রেখে দেখি… উঠতি সূর্যের সিঁদুর রঙ এই তো আমার কংস… এই তো আমার প্রেম! চোখ পাগলের মতো খুঁজছিল ইজেলং…ক্যানভাস।

অস্ফুট কণ্ঠ ভেসে এলো অন্যতমা।

ভাবলাম নদী দেখে বলছে… তাকালাম, সেই চাহনি আমার দিকে তাক করা। না না, আগে কোনোদিন শুনিনি। এই শব্দ এই প্রথম, এই প্রথম… বহুবার আগে নাভা শব্দে প্রতিশব্দে শুনলেও এই বোধে বুঁুদ হয়েছি এইবার প্রথম শুনলাম। সত্য শুনলাম। নিজেকে এরপর থেকে উড়াল পরি, অনির্বচনীয়, সবচেয়ে উজ্জ্বলিত ভেবে কতকিছুকে যে তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন রাজকন্যার মতো নানা বাঁকে নিজেকে ঘুরিয়ে, উদ্দামে পথ চলেছি? নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি… আজো হাজার ক্ষতেও যা কিছুতেই বিলুপ্তি হয়নি। অন্যতম! যেন হাজার জলের নিক্বণ, যেন চৌরাসিয়ার সুর… বেহালা, সেতার যেন এই এক্ষণও রূপ মুছে বিষ হয়ে গেছি ভুলে সম্পূর্ণ ওই শব্দে ওর চোখ আমার চোখের দিকে… ভাবলেই। জ্বরতপ্ত হয়ে গড়ায়িত দিনের পরত পেরোতে-পেরোতে দেখি তার স্ত্রীকে একটা প্রদর্শনীতে নিয়ে এসে তিনি ছবি তাকে বোঝাচ্ছেন।

পথের আটকা পা নিয়ে ঈর্ষা আর বিস্ময়ে সত্মম্ভিত হয়ে দেখলাম, একটা ক্লিষ্ট মুখের জীর্ণ দেহের 888sport promo code তার পাশে বোকার মতো একটা বিমূর্ত পেইন্টিং দেখে বলছে, আমার ছেলে কাগজে রং লেপটালে যা হয়, এ তো তা-ই? কী আঁকছে এইটা? এইসব দেখতে আসো তুমি?

কী হলো জানি না… কোন দুঃসহ দুঃসময়ের গ্রাসে পড়ে আমি জ্ঞানশূন্য হয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় আর্তনাদের মতো বললাম, এই আপনার স্ত্রী? এর জন্য আপনি আমাকে আজকাল এড়িয়ে চলেন?

যেন ভূকম্পন হলো, বজ্রাহত তাঁর সামনে থেকে আমাকে সরিয়ে নিয়ে আমারই এক প্রণয়প্রার্থী চারম্নকলার জয়নুলের ভাস্কর্যের সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে বলল, তোমার সবসহ তোমাকে গ্রহণ করতে চাই।

বিয়ে করবে?

করব।

এরপরও আমার দুর্লভ প্রেমিককেই পাগলের মতো ফোন করেছি। ধরেন না। মোবাইল বদল করেন। সামনে পড়লে যেন মশা… এমন তাচ্ছিল্যে ফেলে দলের সঙ্গে হেঁটে যান। আমি মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকি।

দুই

ক্ষীণাঙ্গী মহিলাটি সেমাই এগিয়ে দিয়ে বলল, উনি কিছুক্ষণ পরেই আসবেন।

মুখের জ্বলুনি ঘাই দিয়ে ওঠে। পাশের বেডের এক রোগী দেখতে একাকী আমাকে নিঃস্ব অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে নানা কারণে পরিবার-বিচ্ছিন্ন আমাকে নিয়ে আসে নিজের বাড়িতে। আমি দুরবস্থায় একাকী ছটফট করতে গিয়ে কিনারা পাই না… আকুল দয়া কী করে এ-888sport promo codeর হয়, প্রদর্শনীর পর শুনেছি, সেদিন বাড়ি এসে আমার প্রেমিকরূপী তার স্বামীকে রোজ অশ্রাব্য গালিতে ক্ষত-বিক্ষত করত এই 888sport promo code, সে আমাকে তারই বাড়িতে এনে আমার সেবায় লিপ্ত হয়ে সেই লোকেরই অপেক্ষায় থাকে, যে তার…? কী করে? মানুষ বড় বিচিত্র।

ঘরে ঢুকেই চোখে পড়েছিল সুসজ্জিত দুজনের যুগল হাস্যরত ছবিটির দিকে। বেডরম্নমের জানালার ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করছে ঘুপচি আবছায়া আঁধার… 888sport promo codeর এই মনের এই সৌন্দর্যের কাছেই হয়তো মানুষটি বিপন্ন। এই বোধে পাক খেতে-খেতেই সত্মব্ধ ঘরে 888sport promo codeর কণ্ঠ ঝন-ঝন করে, তোমার স্বামীটা পশু, না হলে অমন সুন্দর মুখটাকে? কে পশুর মতো? পশুরা কি কাউকে ‘তোমার সবসহ তোমাকে গ্রহণ’ বলে নিরন্তর বিক্ষত করতে থাকে নিজের স্ত্রীকে? সব জেনেছে বলে দফায়-দফায় তারই নির্মম প্রকাশে কুলটা, বেশ্যা… ওকে এই শরীর দিয়েছিস? এই দেখ্ দেখ্ আবার আমি আবার তো এঁটো শরীর ঢুকছি – বলতে-বলতে কোনো শিশু নদীর প্রলোভনে তার সামনে? শাবল বানায় লিঙ্গকে – শিশুকে নদীর কাছে নিয়ে যাওয়া লোকটার মতো পশুর ক্ষোভে এই পর্যায়ে থাকে কখনো, ঠান্ডা মাথায় অ্যাসিড মেরে স্ত্রীর আর্তনাদ শুনে ঠা-ঠা হেসে বলে যা-যা এই মুখ তুই লম্পটটাকে দেখা, দেখিস কেমন চোখে তাকায়! তারা ক্ষুধায় অন্য প্রাণীকে খায়, যা পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ খায়। সঙ্গমে সঙ্গীকে জাগাতে তার পাশে পাক খায়। গণরেপ করে তারা? সেই মহান পশুদের সঙ্গে এইসব মানুষের তুলনা? হতচকিত হয়ে বসি। সত্যিই তো লোকটা এসে তুলোতে 888sport app একটা থেঁতলানো পুড়াগন্ধময় শরীরের ভেতরটা মুহূর্তে দেখে ভয়ে চোখ ঢেকে ফেলবে না?

এজন্যই কি তার চতুরা স্ত্রীর এত মমতাবোধের উত্থান? আমি কাঁপতে-কাঁপতে উঠে বসি। মহিলা বলে, ঈদের সেমাই খান।

আজ ঈদ? তাই তো ধেয়ে আসছে কোটি-কোটি খাবারের ঘ্রাণ। সেই ঈদ যা মেয়র মুচিকে এক করে আন্তরিক কোলাকুলিতে লিপ্ত করতে পারে… দাদার কথা মনে পড়ে, যুদ্ধে ঈদ আসছিল, কে যে আনছিল সেমাই, খিদায় কাঁপতে-কাঁপতে খাইতে যামু, রাজাকাররা পেশাব কইরা দিলো ওর ওপর।

এই মহিলা ভিন্ন ধাঁচের হলেও এও এক ধরনের রাজাকার। যেন ঝড়ের তা-বে পড়েছি… পালাতে চাই, ক্ষরণ পুড়ন সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে গ্রীবা উচ্চকিত করে বাঁদিকে তাকিয়েই নিথর হয়ে পড়ি। ফ্রেমে বাঁধা ছবিতে আমার নায়ক হুবহু সেই চোখে পোজ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

মুহূর্ত বিপ্রেমে তরঙ্গিত, কম্পিত হতে হতেই শুনি স্ত্রীর কণ্ঠ… আমার তোলা, সুন্দর না?

কার তোলা বিষয় না… শুধু আমাকে দেখে যার চোখ এমন তরঙ্গায়িত হয়, কোন সে অনির্বচনীয় ফটোগ্রাফি পেইন্টিংয়ে তা ফ্রেমের পোজ হয়?

মেসেদের ভিড়ে ক্রমশ হারাতে-হারাতে আমার সব মুছে যেতে থাকে সুন্দর, প্রেম, কষ্ট, পীড়ন – হৃদয়টা আছে কি নেই অনুভবের বাইরে চলে যেতে থাকি, যেন অনন্তকাল পর শান্ত হয়ে আমি; অনুভব করি, আজ আমি নির্ভার হয়ে গেছি। আজ তুলো খসিয়ে তার চোখের সামনে উদোম করে দেব মুখ।