অন্যরকম ক্যারল

মানুষটি আপনমনে হেঁটে যেতে থাকেন। তাঁর ঝাঁকড়া সফেদ চুল হাওয়ায় ওড়ে। নিউজার্সির এই মধ্যরাত তাঁর কাছে অলৌকিক অথচ মায়াময় বলে মনে হতে থাকে। একটু দূরে ছড়ানো গমক্ষেত, অনুচ্চ পাঁচিলঘেরা কবরের জায়গাটিতে পাথরের পরি আর ক্রসচিহ্নগুলো চাঁদের আবছা আলোয় দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। মালির সযত্ন পরিচর্যায় চারাগাছের ফুলগুলো ডিসেম্বরের হিমেল হাওয়ায় মাথা নাড়ছে।

কী অপূর্ব সুন্দর রাতের এই পৃথিবী! জ্যোৎস্নাভেজা রাতে একলা মানুষটি ছুটে যেতে থাকেন মিউনিখের সেই বোর্ডিং স্কুলের দিনগুলোতে। ভীষণ একা ছিল কিশোরটি। একলা আইনস্টাইন – অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।

888sport sign up bonusমেদুর মন পেছনে ছুটে যেতে থাকে। ভায়োলিনটা তখন সদাসঙ্গী। মম ওর ছয় বছর বয়সে বেহালা তুলে দিয়েছিলেন হাতে। সেই ছোট বয়সে ছড় টানতে শিখেছে বেহালার তারে।

খুব কঠিন মনে হতো যন্ত্রটিকে, সুরে ভুল হয়ে যেত। প্রায়শই তিনি বলতেন, মম – ইট ইজ ভেরি টাফ। আদুরে গলায় জবাব দিতেন মা, কিছুই টাফ নয় মাই বয়। চেষ্টা করো, ট্রাই অ্যাগেইন অ্যান্ড অ্যাগেইন।

মায়ের দুশ্চিন্তা ছিল ভীষণ, ছোটবেলা থেকেই ছেলে সবকিছুতে ধীরগতি। ঈশ্বর তাকে স্বাভাবিক করে গড়ে তোলেননি। চার বছর বয়সে প্রথম কথা বলেছে। হ্যান্ড রাইটিং? মাই গড – ইট ওয়াজ টু লেট। নয় বছর বয়সে অ্যালবার্ট লিখতে শিখেছে।

পরবর্তীকালে জার্নালিস্টরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, আই ওয়ান্ডার – আপনি চার বছর বয়সে প্রথম কথা বলেছেন? ইজ ইট ট্রু? প্রত্যুত্তরে তিনি জবাব দিয়েছেন, ইট ইজ ট্রু, হানড্রেড পারসেন্ট সত্যি। প্রয়োজন পড়েনি তাই কথা বলিনি।

দুধেধোয়া জ্যোৎস্নায় ডোবা বরফঝরা রাস্তায় সাবধানে পা ফেলতে থাকেন আইনস্টাইন। উজ্জ্বল আকাশ, চাঁদভরা রাত আর অসীম শূন্যতার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কথা বলতে থাকেন।

আমি যখন কিশোর, অ্যাডোলেন্স পিরিয়ড চলছে – তখন দেখেছি ড্যাডের চিন্তাক্লিষ্ট মুখ। হি ওয়াজ ইন স্যুপ। হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়ছে, আমার বয়স তখন পনেরো। ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকেন ড্যাড। ওহ্ গড –

হেরমান পরিবার তখন ইতালির মিলান শহরে পাড়ি জমায়। শীতের এই মধ্যরাতে বিধুর অতীত তাঁকে কাতর করে তোলে। বেদনাবিধুর হয়ে যায় চারপাশ।

চিরকালই অ্যালবার্ট একা, নিঃসঙ্গ। অন্তর্মুখী স্বভাবের কিশোর তখন মিউনিখের বোর্ডিং হাউজে। হাউজটি কী সুনসান! বুকের ভেতর তার মুঠো মুঠো কান্না – ঠিক বেহালার করুণ সুরের মতো।

পড়ায় এতটুকু মন বসে না। মন ঠিক করে নেয় বালক আইনস্টাইন।

টিচার তো বলেই দিয়েছেন, ওকে দিয়ে মহৎ কিছু হবে না।

ওকে, আমাকে দিয়ে গ্রেট বা পাওয়ারফুল কিছু হবে না, মনস্থির করে ফেলেন কিশোর আইনস্টাইন। কাউকে জানান না দিয়ে ফিরে এসেছিলেন বাড়িতে। মম আর ড্যাডকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত শেলটার পেয়েছিলেন কিশোর আইনস্টাইন।

– হাই অ্যালবার্ট – ডু ইউ হিয়ার মি?

ডিসেম্বরের হিমেল রাতে কে তাঁকে ডাকে? সারাশরীর তাঁর রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। মিছিল করে আসছে কিছু ছায়াশরীর। কাছে এলে মুখের প্রোফাইলে চিনলেন ডিগার্ট, উইগনার ও আলেকজান্ডার স্যাকস। 888sport apkীর মুখে করুণ বিষণ্ণতা।

উইগনার বলেন, কেন আপনি এখনো অন্তর্দাহে ভুগছেন মহামান্য 888sport apkী? হ্যাঁ, অ্যাটম বম্ব তৈরি করতে হবে এমন প্রস্তাবনা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সত্যি, কিন্তু আপনি কি জানেন – এখনো মানুষ যত্রতত্র মৃত্যুবরণ করছে। সে তো আপনার অজানা থাকার কথা নয়। ডু ইউ নো – মশাবাহিত জিকা ভাইরাস এসেছে পৃথিবীতে।

আইনস্টাইন অপলক তাকিয়ে থাকেন ওর দিকে। মৃদুস্বরে বলেন, ইয়েস, এ-ভাইরাসটির নাম শুনেছি। ভাইরাসটির নাকি এমনই প্রভাব – এতে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক যথাযথভাবে গড়ে উঠতে পারে না।

– ইয়েস স্যার।

ডিগার্ট বলেন, ভাইরাসটির ভয়াবহ পরিণতির কথা শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে মি. আইনস্টাইন। ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুটি ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যদিও-বা জীবিত থাকে, এরপর তার জীবন হাতেগোনা কয়েকটা দিন বা কয়েক মাস কাটবে জড়ের মতো।

– ইজ ইট? মাই গড –

সফেদ ঝাঁকড়া চুলের মানুষটি গভীর ভাবনায় ডুবে যান। উইগনার বলেন, কয়েক মাস বেঁচে থাকলেও শিশুটির জীবন কাটবে জড়ের মতো।

আলেকজান্ডার বলেন, জিকা ভাইরাসের প্রভাবে ব্রাজিলে জন্ম নিচ্ছে বিকৃতাকার মস্তক শিশু, পৃথিবীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে এর জীবাণু, অলওভার দ্য ওয়ার্ল্ড।

প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের অর্থসচিব ও বেসরকারি উপদেষ্টা এখনো কত কিছুর খবর রাখেন।

– মিলিটারি জেনারেল ওয়াটসনও এসেছেন। ওহ্ আই সি।

ওয়াটসন বলেন, মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলো হয়ে চীনে এসে পৌঁছে গেছে এর জীবাণু।

– দ্যাট মিন্স এশিয়ান কান্ট্রিতে এর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

888sport apkী ভীষণ চিন্তিত। একরাশ বিষণ্ণতা মুখে-চোখে ছড়িয়ে পড়েছে।

অস্ফুট গলায় তিনি বলেন, রোগটি কিন্তু বাতাসে উড়ে আসতে পারে না, এর জন্য দুষ্টু মশার সাহায্য নিতে হয়। অ্যাম আই রাইট?

888sport apkী জিলার্ড বলেন, ইয়েস মি. আইনস্টাইন, ইউ আর রাইট। মিসেস মার্গারেট আক্রান্ত ছিলেন এই অসুখে। সুযোগ বুঝে ছুটে আসে চতুর এক মশা। মার্গারেটের হোয়াইট স্টোনের মতো শরীরে মশাটি কামড় বসায়, এর ফলে কী হলো জানেন?

পল টিরেটর বলেন, আই নো এভরিথিং। মশাটির বডিতে ভাইরাস ঢুকে যায়। এই অ্যাডিস ইজিপ্টাই নামের মশাটির গায়ের রং কালো, শরীরে তিলকের মতো সাদা স্পট রয়েছে।

এই পল টিরেটর তো বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করেছেন। পুওর গাই –

পলকে আইনস্টাইনের বুকের খাঁচায় ঝাপটা দিতে থাকে শীতরাতের হিমেল বাতাস, বরফের ঝড় বইতে থাকে বুকের গভীরে। আইনস্টাইনের মন 888sport sign up bonusমেদুর হয়ে ওঠে।

– আই রিয়েলাইজ এভরিথিং। কিন্তু আমরা-তোমরা কী করেছি মি. পল টিরেটর?

মুহূর্তে থেমে যায় ডিসেম্বরের ব্রাইট ফর্টনাইট, জ্যোৎস্না ছড়াতে সে ভুলে যায়। বরফের কুচি ঝরা থমকে যায়। মস্তিষ্কবিকৃত পলের মুখেও বিষণ্ণতার আভা।

পলকে সবার সামনে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট এসে দাঁড়ায়।

হিমেল রাতে সবাই শুনতে পায় একটি মেঘমন্দ্র স্বর। আকাশভরা জ্যোৎস্না। আর পায়ের নিচে মৃত্তিকা ভেদ করে উত্থিত হতে থাকে  একটি বাণী – ‘সেদিনই ঘটেছিল মানবসভ্যতার চূড়ান্ত এক কলঙ্ক।’

ডিগার্ট বলেন, এই মারণাস্ত্র প্রয়োগের ধ্বংসযজ্ঞে সর্বমোট কতজন মারা গেছে জানো?

আইনস্টাইনের বুক মন্থন করে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস মিশে যেতে থাকে হিমেল বাতাসে।

কে না জানে এই গাণিতিক হিসাব? এক লাখ একান্ন হাজার ছয়শো উনপঞ্চাশ জন মানুষের জীবন-স্পন্দন থেমে গিয়েছিল এক লহমায়।

888sport apkী স্বরচিত ভাবনায় নিজেকে প্রশ্ন করেন, অসুখ-সুনামি ওগুলো তো প্রাকৃতিক নিয়মে আসে। কিন্তু মানুষ যখন হত্যাকারী হয়ে যায় – সে তো ক্ষমারও অযোগ্য।

যুদ্ধের অন্যতম নায়ক টুরিং বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডিজাস্টারের পরও কি থেমে আছে মানুষ? পারমাণবিক মরণবোমা ব্লাস্ট করার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া, ক্যান ইউ ইমাজিন?

– অ্যাগেইন? হোয়াট আ শেম –

উইগনার বলেন, এ নিয়ে এত ভাবছেন কেন? নর্থ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের কী প্রাইড! দম্ভভরে বলেছেন, পরমাণু বোমার বোতামটি আমার হাতেই থাকে।

– ডোন্ট টক ননসেন্স মি. উইগনার, ড্যাম ইট। সেদিন আড়াই ঘণ্টার বিমান আক্রমণে এক লাখেরও বেশি মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ডু ইউ হিয়ার মি? শুনতে পাচ্ছো তোমরা?

– ওহ্ ইয়েস – জেনারেল ওয়াটসন বলেন, ওহ্ ভেরি স্যাড – মি. আইনস্টাইন। আই নো, দশ লাখ মানুষ আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্যান ইউ ইমাজিন?

অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে 888sport apkী বলতে থাকেন, অ্যাটম বম্ব রাস্তার মানুষদের পুড়িয়ে দিয়েছিল। এতই পুড়ছিল, ক্যান ইউ ইমাজিন – শরীরে হাত দিলে মাংসের বদলে ছাই উঠে এসেছে।

আইনস্টাইনের চোখের সামনে টোকিওর মিদোরি এলাকা, হিগাশি রিয়েগোকু মহল্লার রক্তাক্ত ছবি অবিরত দোল খেতে থাকে।

দিব্যচোখে তিনি দেখতে পান ওটা নদীর টলটলে জলের ধারা। এর পাশেই জাপানের 888sport live chatসমৃদ্ধ শহর, আনন্দময় জীবনযাপন। সতেজ-সবুজ গাছের পাতা, বর্ণালি ফুলে, স্নিগ্ধ অপরূপ দেশ।

জে রবার্ট ওপেনহাইমার – 888sport apkীদের নেতা, স্বগতোক্তি করেন, বোমার দহন থেকে প্রাণ বাঁচাতে বেশিরভাগ মানুষ দিগ্বিদিকশূন্য হয়ে খালের জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৬ আগস্ট লিটল বয় নামের বোমাটি লেলিহান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল মানুষের শরীর।

– মি. জে রবার্ট ওপেনহাইমার, তুমি তো ছিলে 888sport apkীদের নেতা – ভেবে দ্যাখো কত অন্যায় করেছ। ডু ইউ অ্যাগ্রি উইথ মি। ওপেনহাইমার চমকে ওঠেন। চাঁদের আলোয় দেখা যায় তাঁর বিব্রত মুখ। সত্যি জিকা ভাইরাস, সুনামি – পারমাণবিক বোমার কাছে কিছুই নয়। তাই তো ক্যান্সারের থাবায় বিপর্যস্ত হয়েছি আমি। ওপেনহাইমার আর গ্রোভস – দুজনেই ‘ম্যানহাটান প্রজেক্টে’ একসঙ্গে কাজ করেছেন।

গ্রোভস আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, হ্যাং ইয়োর সেন্টিমেন্ট মি. সায়েন্টিস্ট। 888sport apk কোনো সেন্টিমেন্টকে প্রশ্রয় দেয় না।

নিকোলাস বলে, তুমি সেন্টিমেন্ট আর ইমোশন শব্দটি উচ্চারণ করো না। আই থিংক – ইউ আর নট আ হিউম্যান বিইং।

কথাটি খুব এনজয় করেন আইনস্টাইন।

সবাই যেন ওপেনহাইমারের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে সমস্বরে বলছেন, ইউ আর আ গিলটি পারসন।

ওপেনহাইমার ধনী বস্ত্র ব্যবসায়ীর আদুরে সন্তান, পড়াশোনায় দারুণ মেধাবী। কেমিস্ট্রির ছাত্র হয়েও ফিজিক্স চর্চার জন্য ইউরোপের নানা পীঠস্থান – ক্যামব্রিজ, গটিংগেন, কোপেনহেগেনে পড়াশোনা করেছেন। আমেরিকায় ফিরে চমকে দেওয়ার মতো কোনো কিছু আবিষ্কার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, হায় ঈশ্বর! ব্ল্যাকশিপ হয়ে গেলাম আমি। তাঁর সঙ্গী গ্রোভসও বিষণ্ণমুখে বসে আছেন। সেনা পরিবারের সন্তান, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। সেনাবাহিনীতে জয়েন করে ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি।

হায় ডেসটিনি, ভিন্নপথের এই দুই পথিকের দেখা হয়ে গেল। ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়ে গেল দুটি নাম – আর্মি জেনারেল লেসলি রিচার্ডস গ্রোভস ও জে রবার্ট ওপেনহাইমার।

আর আইনস্টাইন? জিলার্ড আর উইগনারের অবিরত চাপের মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে অ্যাটম বোমা তৈরি করার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় চিঠির বয়ান বলে গেছেন, শর্টহ্যান্ডে টেলার সেটি লিপিবদ্ধ করেন।

জিলার্ড ভাবতে থাকেন, কেন আমি এ-অধ্যায়ে জড়িয়ে পড়লাম জানি না। হয়তো নিয়তিই আমাকে সেকেন্ড টাইম নিয়ে গিয়েছিল 888sport apkীর কাছে। সঙ্গে ছিল টেলার। ওর সেই শর্টহ্যান্ডলিপি থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ও একটি দীর্ঘ চিঠি তৈরি করা হয়েছিল। দীর্ঘ চিঠিটি অনুমোদন করে আইনস্টাইন সিগনেচার করে দেন। ঝকঝকে ছবির মতো দিনটি এখনো চোখের সামনে ভাসে।

তবে টেলারের জবানবন্দি হলো, চিঠি ওরা লিখেই নিয়ে গিয়েছিল, আইনস্টাইন তাতে শুধু সই করেছেন।

আলেকজান্ডার স্যাকস বলেন, আমি তখন প্রেসিডেন্টের অর্থসচিব ও বেসরকারি উপদেষ্টা। প্রেসিডেন্টের হাতে চিঠিটি যথাসময়ে পৌঁছে দিই।

আইনস্টাইনের জীবনীকার রোনাল্ড ক্লার্ক তাঁর সুচিন্তিত মতামত রাখলেন :

– ইট ইজ ভেরি মাচ ট্রু, তবে সাক্ষাতের দিন ঠিক হয়েছিল প্রায় আড়াই মাস পর। ইট ওয়াজ টু লেট।

আলেকজান্ডার বলেন, দিনটি ছিল ১১ অক্টোবর, আমিই হোয়াইট হাউজে চিঠিটি পড়ে শুনিয়েছি। উইগনার বলতে থাকেন, শোনার পর জেনারেল ওয়াটসনকে ডেকে ওকে চিঠি দিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট।

ওয়াটসন বলেন, ইট ইজ ট্রু, নাৎসি জার্মানি খুব তাড়াতাড়ি অ্যাটম বোমা তৈরি করে সামরিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবে – এ-আশঙ্কা ছিল। এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্যই আমেরিকায় সৃষ্টি হলো – ‘ম্যানহাটান প্রজেক্ট’।

উইগনার বললেন, সে তো তুমি করেছিলে মি. লেসলি রিচার্ডস গ্রোভস, মাইন্ড ইট।

চলে যাওয়া দিনগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে আইনস্টাইন বলেন, আই নো – অনেক 888sport apkী আর প্রযুক্তিবিদ জয়েন করলেন এ-কাজে, ওদের দিন-রাতের পরিশ্রমে জন্ম নিল অ্যাটম বম্ব, ওহ্ গড –

মর্মান্তিক আর্তিতে ভেঙে পড়েন আইনস্টাইন। উইগনার স্বগত উচ্চারণ করেন, শেষ পর্যন্ত কী হলো? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানি পরাজিত হলো।

জিলার্ড বলেন, আমার আশঙ্কা ছিল, আই ওয়াজ অ্যাফ্রেইড – জার্মানি পরাজিত হলেও জাপান তখনো বিশ্বযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমেরিকা জাপানের ওপর ‘অ্যাটম বোমা’ ফেলবে না তো? আলটিমেটলি তাই হলো।

বিষণ্ণ ও বিপর্যস্ত স্বরে আইনস্টাইন বলেন, ওহ্ ইয়েস ডেটটা মনে আছে ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ আগস্ট।

যুদ্ধের অন্যতম নায়ক টুরিং বলে ওঠেন, মি. আইনস্টাইন, লুক অ্যাট মি, হিয়ার মি – তুমি চিঠি না লিখলে হয়তো ‘ম্যানহাটান প্রজেক্ট’ হতো না। অ্যাটম বোমাও তৈরি হতো না। অ্যাম আই রাইট?

গর্জে ওঠেন আইনস্টাইন – স্টপ দিজ ননসেন্স, আই সে স্টপ দিজ। আমি চিঠি লিখিনি, সিগনেচার করেছি শুধু। টেলার নিউ এভরিথিং।

টুরিং বলেন, হোয়াট এভার ইয়ু সে। নিরাসক্ত গলায় বলেন, তুমি যদি দুটোর একটিও না করতে তাহলে জাপানের বুকে বোমা ফেলা দূরে থাকুক (অ্যাটম বোমা) হয়তো তৈরিই হতো না। ইয়ু নো, মাই হার্ট ওয়াজ অলওয়েজ বার্নিং, কষ্ট নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারিনি, আই কান্ট বি অ্যালাইভ।

বুকের ভেতর নতুন করে দহন জাগে, যুদ্ধের অন্যতম নায়ক টুরিং আত্মহনন করেছিলেন। চারপাশ নিঝুম, শুধু নিজেদের হৃদয় ব্যবচ্ছেদ করা কটি মানুষের করুণ নিশ্বাস পতনের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই।

জ্যোৎস্না-আলোকিত এই শেষরাতে আইনস্টাইনের ঝাঁকড়া চুলের ফাঁক দিয়ে মগজে খেলা করতে থাকে 888sport sign up bonusময়তার কোমল ছবিগুলো।

 

দুই

জন্মস্থানটিকে ভীষণভাবে মনে পড়তে থাকে আইনস্টাইনের। জার্মানির সেই উরটেমবার্গ শহরটি – কোথায়? কত দূরে? কোনোদিনও কি সেখানকার মাটি ছুঁয়ে দেখতে পারবেন? কখনোই নয়।

মধ্য ডিসেম্বর থেকে গোটা আমেরিকার আকাশে-বাতাসে আনন্দের ছোঁয়া। নিউ জার্সিও ভাসছে খুশির দোলায়।

খ্রিষ্টমাস আসছে, খ্রিষ্টমাস আসছে। খ্রিষ্টমাস ইভ, খ্রিষ্টমাস রোজ আর খ্রিষ্টমাস ট্রি তৈরি হবে – সেই আনন্দে মাতোয়ারা সবাই। তাই অলৌকিক আনন্দে ভরে আছে রাতের প্রহর। জ্যোৎস্নাধোয়া রাতে বরফে 888sport app পথঘাট। স্পটস পাইন, রয়েল ওক আর পাইন গাছগুলো ঢেকে আছে তুলোর মতো ঝরা বরফে। পপি ডেইজি লিলি জিরানিয়াম ব্ল্যাকরোজ আর ড্যাফোডিল ফুলগুলো আসন্ন উৎসবের মেজাজে হাসছে। ওয়াইনে ডোবানো ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে বানানো রকমারি কেক, টার্কি রোস্ট করার লোভনীয় গন্ধ বাতাসে ভাসবে, খ্রিষ্টমাস ট্রি সাজবে বর্ণালি আলোয়, গির্জার ঘুমন্ত চুড়োগুলো জেগে উঠবে আপন মহিমায়।

কখনো ওল্ড গ্রোভস রোডে দাঁড়িয়ে, কখনো নিউ জার্সির বাড়ির জানালা দিয়ে আইনস্টাইন দেখেছেন আনন্দোৎসব।

মাতৃভূমি তো তার নেই, ও মাই মাদারল্যান্ড! এডলফ হিটলার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৩৩ সালে একনায়কতন্ত্র পছন্দ না হওয়ার কারণে দেশত্যাগ করেছেন – চিরকালের মতো। আর ফিরে যাননি সেখানে। জন্মস্থান উরটেমবার্গ শহরটি তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।

ডিগার্ট, উইগনার, আলেকজান্ডার স্যাকস, পল টিরেটর, ওপেনহাইমার, জিলার্ড জেনারেল ওয়াটসন, টুরিং, কেনেথ নিকোলাস – সবার পাশে দাঁড়িয়ে নতুন করে মনে পড়ছে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার কথা।

পাড়ার চেনা সিনিয়র সিটিজেন মি. অ্যালেক্স উইনটারে রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে আড়াই ফুট উচ্চতার নরম বরফের স্তূপ ঠেলে ফেলে দিয়ে ঠাঠা করে হেসে বলতেন, ডিয়ার অ্যালবার্ট, নাউ ইয়ু আর আ স্নো-ম্যান।

ছোটবেলার দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেল? সেই হাইড অ্যান্ড সেক খেলা – সেসব কত আলোকবর্ষ আগের কথা?

মমের গলায় মৃদু ঘুমপাড়ানিয়া সুর। ওহ্ লাল্যাবাই – হাউ লাভলি।

আলু, গাজর, ব্রোকলি, বেবিকর্ন আর পটেটোর ধোঁয়া-ওড়া স্যুপ – মম বানিয়ে এনে ডাইনিং টেবিলে ঠক করে রাখতেন। মাঝখানে একদলা মাখনের ধীরে ধীরে গলে যাওয়া দেখতেন অ্যালবার্ট। মখমলের মতো হয়ে যাওয়া স্যুপের বাটি – প্রিয় সেই ছবিটি দেখতে ইচ্ছা করে ফের বালক হয়ে যাওয়া অ্যালবার্টের।

ছয় বছর বয়সে অ্যালবার্টের হাতে বেহালা তুলে দেওয়া, মিউনিখের বোর্ডিং হাউজ থেকে মম-ড্যাডের কাছে ছুটে চলে আসা, উইনটারের সুচ ফোটানো শীতে ফায়ার প্লেসের সামনে বসে থাকার নিবিড় আরামের দিনগুলো বারবার ছুঁয়ে যেতে থাকে তাঁকে। ওল্ড ইজ গোল্ড – তাই কি?

বড় হয়ে কর্মময় জীবনে প্রবেশ করলেন। সফলতা এলো নানা উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে। এ এক আনন্দময় জয়যাত্রা তাঁর। পদার্থ888sport apkী হিসেবে নোবেল 888sport app download bd বিজয়ী হলেন ১৯২১ সালে। আমেরিকার নাগরিকত্ব পেলেন ১৯৪০ সালে। বেশ চলছিল দিনগুলো। গভীর গবেষণায়, অধ্যাপনায় নিজেকে নিমজ্জিত রেখে আত্মতৃপ্তিতে ছিলেন তিনি।

কী ভাবছেন তিনি? এত চুপচাপ কেন?

– কী ভাবছেন মি. আইনস্টাইন?

– নো, কোনো কিছুই ভাবছি না আমি। রাতের প্রহরের সঙ্গে সঙ্গে মিছিলের মতো চলে আসে ছিয়াত্তর বছর বয়সের লাইফ স্প্যানের ভাবনা।

প্রায় অভিশাপের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টকে চিঠিতে বলেন, জার্মানি ভিন্নধরনের অসম্ভব শক্তিশালী বোমা বানাতে পারে – এই মর্মে সতর্কতা উচ্চারণ করে আমেরিকাতেও একই ধরনের গবেষণার তাগিদ দেন।

কেন করেছিলেন? নিয়তিই হয়তো তাঁকে এমন পথে চালিত করেছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো অপাপবিদ্ধ শৈশব-কৈশোর হারিয়ে যায়। কেন আমি এমন করেছি?

তিনি তো ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের সঙ্গে মিলে আণবিক বোমার বিপদের কথা তুলে ধরে রাসেল-আইনস্টাইন ইশতেহার রচনা করেছেন। বিখ্যাত পদার্থ888sport apkীদের ভোটের মাধ্যমে সবাই তাঁকে সর্বকালের সেরা পদার্থ888sport apkী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

এত সফলতার মধ্যেও বুকের গহিনে করুণ হাহাকার, অদ্ভুত এক অপরাধবোধ তাঁকে কুরে কুরে খায়।

চারপাশ নিঝুম, শুধু হৃদয় ব্যবচ্ছেদ করা কজন মানুষের করুণ নিশ্বাস পতনের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ নেই।

জ্যোৎস্না-আলোকিত রাতটি যেন বয়ে নিয়ে আসে চমৎকার স্বপ্নময় দিনগুলোর কথা। সোফিয়া মেরির সঙ্গে সেই প্রথম প্রেমের শিহরিত দিনগুলোর কথা। শিক্ষকতার জন্য মেরি ওলসবার্গে চলে যাওয়ার পর আবার আইনস্টাইনকে ঘিরে ধরে নিঃসীম একাকিত্ব। ঠিক যেমন বালক বয়সে বোর্ডিং স্কুলে হয়েছিল। দুঃসহ সেই দিনে একদিন জুরিখে দেখা হলো মিলেভা মেরিকের সঙ্গে। আনন্দের সেই দিনগুলো পোড়া বুকে এখনো আনন্দের ঢেউ তোলে।

মেয়ে লাইজেরালের জন্ম, এরপর আচমকা ওর চলে যাওয়ার কথা ভাবলে বুকের ভেতরটা এখনো টনটন করে ওঠে।

দুঃখ-শোকে-তাপেও মানুষ বেঁচে থাকে। জীবনের কলরোলই তাকে বাঁচিয়ে রাখে। অ্যালবার্ট আর এদুয়ার্দ – দুটি পুত্রসন্তানের জন্ম আবার তাঁর আর মেলিভার সংসারে আনন্দ-লহরি জাগিয়ে তুলেছিল।

– হোয়াট ডু ইয়ু থিংক মি. সায়েন্টিস্ট? উই আর ইন দ্য সেম বোট। আমরা একই নৌকার যাত্রী, উই আর অল গিলটি।

পল টিরেটরের কথায় চমকে ওঠে রাতজাগা কটি মানুষ। মস্তিষ্কবিকৃত এই লোকটি, ওর কোনো কথাই ধর্তব্যের মধ্যে নয় – এখন এ-কথা কারো মনে হলো না। একেবারেই সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতো সে-কথা বলেছে। সেই কবে পৃথিবী নামক গ্রহটির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ভেবে নিজেদের ওরা বিপুল শক্তিধর বলে মনে করেছিল। আজ এই নির্জন বরফঝরা রাতে সবাই চাঁদের আলোয় ধোয়া বিশাল আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে – কী অলীক ছিল এই ভাবনা।

উইগনার সবার দিকে তাকিয়ে বলেন, হোয়াই ইয়ু আর সো সাইলেন্ট।

আবার গুনগুন কথাবার্তা শুরু হয়। লেসলি রিচার্ডস গ্রোভস আর জে রবার্ট ওপেনহাইমার নীরবে বসে আছেন। আইনস্টাইন বিষণ্ণ মুখে কনফেস করে বলতে থাকেন, ডিগার্ট ও উইগনারের অবিরত অনুরোধ আর পাল্লায় পড়ে অ্যাটম বোমা তৈরি করার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম সত্যি –

– তুমি কি চিঠির বয়ানের সঙ্গে একমত ছিলে না মি. আইনস্টাইন?

সেই একই প্রশ্ন। আই অ্যাম কোয়াইট টায়ারড অব হিয়ারিং। নিজে নিজের সঙ্গে প্রশ্ন করে করে ক্লান্ত হয়ে গেছেন তিনি।

তিতিবিরক্ত কণ্ঠে বলেন, মাইন্ড ইয়োর ল্যাংগুয়েজ গ্রোভস। হোয়াট অ্যাবাউট ইয়ু? তোমার অধস্তন কর্মচারী কর্নেল কেনেথ নিকোলাস কী বলেছিল – মনে নেই বুঝি? বলেছিল, ইয়ু আর আ সোয়াইন। তবে হ্যাঁ, লিডার হিসেবে সে তোমাকে প্রেফার করে – এ-কথাও বলেছে।

টেলার বলল, মি. গ্রোভস, ইয়ু নো – মি. আইনস্টাইন অ্যাটম বোমা তৈরিতে সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, মাইন্ড ইট। ক্রন্দনবিকৃত স্বরে আইনস্টাইন উচ্চারণ করেন, I made great mistake in my life when I signed my letter to president Roosevelt recommending that atom bomb be made but there was some justification…, the danger that the Germans would make then –

টেলার বিষণ্ণ গলায় বলেন, হ্যাঁ, তোমার বায়োগ্রাফার রোনাল্ড ক্লার্ক আত্মজীবনীতে বয়ানটুকু দিয়েছেন। প্লিজ, ডোন্ট ক্রাই সায়েন্টিস্ট। তুমি নিজেও তো পরবর্তীকালে লিখেছ, I have always condemned the use of atomic bomb against Japan.

কোটরে ঢোকা পাণ্ডুর চোখ থেকে আইনস্টাইনের অশ্রুজল ঝরতে থাকে অবিরত। আপনমনে বলতে থাকেন – আমি আবিষ্কার করব, মানুষের মঙ্গলের জন্য, কল্যাণের জন্য কাজ করব – এ আমি কী করলাম? ইতিহাসের পাতায় চিরকালের জন্য অ্যাটম বোমার সঙ্গে আমার নাম যুক্ত হয়ে থাকবে।

অট্টনাথন বলেন, তোমার ব্লেসিংসের হাত কার মাথার ওপরে নেই? ইয়েস জার্মান সায়েন্টিস্ট, ইয়ু আর সো গ্রেট। তুমি বেঙ্গলি সায়েন্টিস্ট প্রফেসর বাসুকেও তো হেলপ করেছ।

মনে পড়ছে। এ তো আমার আনন্দের কাজ। ইটস মাই ডিউটি, মানুষকে সাহায্য করা। মে বি নাইনটিন টোয়েনটি ফোর, 888sport app ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বাসু। তিনি লিখেছেন -‘প্ল্যাংকস ল’ অ্যান্ড দ্য হাইপোথেসিস অফলাইট কোয়ান্টা।’

বিখ্যাত জার্নাল ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে এটি প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছিলেন মি. বাসু। সিলেকটেড না হওয়ায় 888sport liveটি ফেরত এসেছিল। এরপর মি. বাসু আইনস্টাইনের কাছে পেপারটি পাঠিয়েছিলেন। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে সঙ্গে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন।

আইনস্টাইন পেপারটি পড়ে শুধু মুগ্ধ হননি, বুঝতে পেরেছিলেন এর গুরুত্ব। বিখ্যাত জার্মান জার্নাল ৎজাইৎশ্রিফট ফুরফিজিকের এডিটরকে তিনি এ-ও বলেছিলেন, প্রফেসর বাসু ও তাঁর পেপার যেন একসঙ্গে ছাপা হয়।

মানুষ মানুষকে হেলপ করবে, ওয়েলফেয়ার কামনা করবে – একজন সত্যিকারের 888sport apkী তো কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারেন না।

এ আমি কী করলাম?

হিজ টিয়ারস ট্রিকলিং ডাউন দ্য চিকস।

– ইউ ওপেনহাইমার –

– ইয়েস স্যার।

– মনে আছে? ডু ইয়ু রিমেমবার – অ্যাটম বোমা সম্পর্কে তুমি বলেছিলে, টেকনোলজিক্যালি সুইট। শেম অন ইয়ু।

– আই অ্যাম অফুলি সরি স্যার।

নতমুখে বসে আছে সবাই। আইনস্টাইনের মগজে চকিতে একটি ভাবনা উঁকি দিয়ে যায়। টাইম মেশিন চড়ে কি সবাই এখানে এসেছে? নাকি অ্যাটম বোমার সঙ্গে যাদের এতটুকু যোগাযোগ রয়েছে, অপরাধবোধের গ্লানি নিয়ে বারবার ওরা কবরের শান্তি থেকে ফিরে আসে যন্ত্রণাময়-জটিল এই পৃথিবীতে। অতীত দিনের সৌগন্ধ নিতে যেমন ফিরে আসেন আইনস্টাইন। পায়চারি করেন 888sport sign up bonusগন্ধমাখা উরটেমবার্গের রাস্তায়, কখনো ওল্ড গ্রোভস রোড, কখনো-বা নিউ জার্সিতে খ্রিষ্টমাস ইভের আগে।

আইনস্টাইন তো কিছুতেই ভুলতে পারছেন না সেই দিনটিকে, ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই দিনটির কথা। এই তারিখেই প্রথম অ্যাটম বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সেই কাঁচাভোরটি ছিল ভীষণ পবিত্র আর স্নিগ্ধ। আলামোগারডো মরুভূমিতে আকাশছোঁয়া লেলিহান অগ্নি দেখে ওপেনহাইমার আনন্দে-বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছেন।

এ যেন ভক্ত অর্জুনের গুরু ও সখা শ্রীকৃষ্ণের বিশ্বরূপদর্শন।

জন্মান্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে সঞ্জয় যেমন শ্রীমদ্ভাবদ্গীতায় বিশ্বরূপের বর্ণনা দিয়েছেন –

দিবি সূর্যসহস্রস্য ভবেদ যুগপদুত্থিতা

যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ ভাসস্তস্য মহাত্মন।

– যদি আকাশে একসঙ্গে সহস্র সূর্যের কিরণ প্রকাশিত হয়, তবে তাহা (কথঞ্চিৎ) সেই মহাপুরুষের দীপ্তির সদৃশ হইতে পারে।

আনন্দে-রোমাঞ্চে ওপেনহাইমারের হৃদয় সেদিন বলে উঠেছিল – হে পৃথিবীর মানুষ, আমাকে কংগ্র্যাচুলেট করো, কংগ্র্যাটস মি।

আইনস্টাইনের মনে হয়, কী শূন্যগর্ভ এই দম্ভোক্তি ও অহংকার।

কোনো কোনো সময় কি মানুষের বিচারবুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়? তিনি এর উত্তর জানেন না।

 

শেষ হয়ে আসছে রাত। একটু একটু আলোর ফিনকিতে ভেঙে যাচ্ছে আঁধার।

উইলো গাছগুলো মাখামাখি হয়ে আছে বরফের কুচিতে। প্রস্ফুটিত রিয়েন্ডারের পাপড়িতে অমলিন হাসি।

অদ্ভুত এক প্রশান্তি ছড়িয়ে আছে প্রকৃতিতে। চাঁদের ফিকে আলোমাখা প্রভাতে সবাইকে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে তার।

অপূর্ব আনন্দে-আবেগে উদ্বাহু হয়ে কাঁদতে থাকেন 888sport apkী নিষ্পাপ শিশুর মতো।

বোমা নিক্ষেপকারী বিমানের পাইলট পল টিরেটর উদ্ভ্রান্তের মতো বলতে থাকেন,

– তুমি কাঁদছ কেন? হ্যালো সায়েন্টিস্ট, হোয়াই আর ইয়ু ক্রায়িং? বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে তো আমার হাতে।

এই ভূমণ্ডল এই ইউনিভার্সে যতদিন অমৃতের সন্তান মানুষ বেঁচে থাকবে ৩৩৪টিবি-২৯ বোমারু বিমানের কথা কেউ কি ভুলতে পারবে?

পবিত্র এই ঊষালগ্নে দূরাগত সুর ভেসে আসছে। সুরের ম্যাজিকে ভেসে যেতে থাকে মলিন-বিষণ্ণতা।

এ যে সং অব জয় অ্যান্ড প্রেইজেস। ক্যারল – আনন্দভজন-গীতে মুখর হয়ে ওঠে কুসুমের মতো ভোরের হিমেল বাতাস।

জিংগেল বেলস জিংগেল বেলস

জিংগেল অন দ্য ওয়ে –

ওহ্ হোয়াট ফান ইট ইজ টু রাইড

ইন আ ওয়ান হর্স ওপেন স্নেই, হেই –

পল টিরেটর, ডিগার্ট, উইগনার, আলেকজান্ডার স্যাকস, ওপেনহাইমার, জেনারেল ওয়াটসন, টুরিং, রোনাল্ড ক্লার্ক, অট্টনাথন – সবাই ক্যারলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গাইতে থাকেন। কাঁদছেন আইনস্টাইন, আপেক্ষবাদতত্ত্বের জনক। তাঁর ভাঙাচোরা গাল বেয়ে অশ্রুপাত হচ্ছে।

ফরগিভ মি।

কনফেস করতে থাকেন সবাই। সুরের লহরিতে হিরোশিমার খোদিত বাণীটি যেন ক্যারলসংগীতের দূরাগত ধ্বনি হয়ে ভেসে আসছে বারবার।

‘তোমরা শান্তিতে ঘুমাও, এই ভুলের আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।’

আকাশ-বাতাস মথিত হতে থাকে সুরের তরঙ্গে।

সবার বুকে অকথিত দহন, চোখে টলোমলো অশ্রু।

ফরগিভ মি, আমাদের ক্ষমা করে দাও। সহসা তুষারঝড় এলো, আকাশ ভেঙে নামল তুষার বৃষ্টি। হিমেল বাতাস, অঝোর তুষার আর বৃষ্টির ধারাপাত দুহাতে সরিয়ে প্রকাশিত হলেন দেবোত্তম। হাতে তাঁর কাঁসার মধুপর্কের বাটি, এতে টলটল করছে সোনালি সুধা – দুধ-দই-মধু-ঘি-চিনির মিশ্রণ। মাঙ্গলিক কাজে যে এর প্রয়োজন হয়।

মৃত্যুর গহিন আঁধার থেকে ওরা ফিরে এসেছে অপরাধের গ্লানি মুছতে। ওরা গাইছে জীবনের জয়গান। অন্যরকম ক্যারলসংগীত। ‘হে ঈশ্বর, হে প্রভু – পুণ্য মৃত্তিকা দাও, পবিত্র নীলাকাশ ভরিয়ে দাও সাদা মেঘের গুচ্ছে, নদীতে দাও স্বচ্ছ সলিলধারা, বাতাসকে শুচি-স্নিগ্ধ করে দাও।’

মানুষের কল্যাণ আর মঙ্গলের জয়ধ্বনিতে ভরে উঠছে চারপাশ।

জ্যোতির্ময় রাত ভেঙে উন্মোচিত হচ্ছে কাঁচা ভোর।