অবগুণ্ঠনে 888sport app

ম. শহীদুল আমিন

প্রক্কথন : ইতিহাস নিয়ে শুরু হলেও ঠিক ইতিহাসের গল্প এটা নয়। বস্ত্তত 888sport appর ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। তার কতক প্রাচীন পুথিপত্রে ক্রমশ বি888sport sign up bonusর পথে, কতক উদ্ধারপ্রাপ্ত এবং নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত। সম্ভবত প্রাচীন 888sport appর যে-দিকটি আধো উন্মোচিত তা হলো এর স্থাপত্যলিপি, যার পাঠোদ্ধারের প্রচেষ্টা সামগ্রিকভাবে নেওয়া হয়নি।

এ-নিবন্ধে সেই মহতী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমন দাবি আমি কখনোই করি না। স্থাপত্য বিভাগের একটি প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত থাকাকালে দেখা কতক ভগ্নপ্রায় দালানকোঠার অবয়বে সে-দৃশ্যমান তনুরেখা, বিগতযৌবনের লাবণ্য, তাকে কখনো শেষ সূর্যের হালকা আলোতেও হিরণ্ময় মনে হয়েছে; কখনো তার অবগুণ্ঠন উন্মোচিত হওয়ার আগেই নেমে এসেছে সন্ধ্যা। অদৃশ্য সেই পটভূমির মতো  এ-লেখাও তাই অসমাপ্ত। এবং অবিন্যস্ত। তথাপি কেবল সূত্রপাত ঘটানোর উদ্দেশ্যেই এর উপস্থাপন, বিরাট কোনো প্রতিশ্রুতি নিয়ে নয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় : ‘আমার এ লেখা যদি টেক্স্টবুক কমিটির অনুমোদিত হইবার কোন আশঙ্কা থাকিত হবে সাবধান হইতাম।’

 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, যে লোকবল, দলবল এবং অযাচিত শানশওকত নিয়ে মোগল নৌবহর খুঁজে ফিরছিল জুতসই একটা এলাকা; ঠিক যুদ্ধক্ষেত্রের তাঁবু ফেলার জন্য নয়, একটা স্থায়ী establishment-এর ভিত্তি নির্মাণের জন্য। মূলত এ-শহরের ইতিহাসের গোড়াপত্তন হলো সেখান থেকেই। সপ্তদশ শতাব্দীর সূর্য তখন মাত্র উঠেছে। বলা বাহুল্য, ইতিহাসের এটাই সবটুকু নয়। রহস্য888sport app এই 888sport appর অবগুণ্ঠন আজো কি পুরোপুরি উন্মোচিত? খুব জোর দিয়ে একথা বলা যাবে না। বল্লাল সেনের ঢাক পেটানোর শব্দ কতদূর শোনা গিয়েছিল তা আজ আর জানার উপায় নেই যেমন, তেমনই ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘিরে সেই সময়ে কতটা পরিধি বিস্তৃত ছিল, তারও সুনির্দিষ্ট জ্যামিতি আমাদের অঙ্কনদক্ষতায় আজো অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

এসবের বাইরেও আরো কিছু আপাত অবিশ্বাস্য তথ্যও দিয়েছেন কেউ-কেউ। Far Eastern Economic Review প্রকাশনায় এশীয় দেশগুলোর ওপর প্রকাশিত একটি নির্দেশক পুস্তিকায় একদা উল্লেখ করা হয়েছিল, এখন যেখানে 888sport app সেখানেই সম্ভবত একাদশ শতাব্দীতে একটি ধ্রুপদ, মুখরিত জনপদের অস্তিত্ব ছিল এবং সে-সময় তা বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনবহুল নগরগুলোর অন্যতম ছিল (A thriving township existed in the same place and that around the late 11th century; Dhaka was the most populated city in the world) ২ এমনও তথ্য পাওয়া গেছে যেখানে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, ১৭০০ সাল নাগাদ (অথবা অষ্টাদশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে) 888sport appর জন888sport free bet উপনীত হয় আনুমানিক নয় লাখে। এই তথ্য পরবর্তীকালে ইউনাইটেড ন্যাশনসের (United Nations) উদ্যোগে 888sport appsের সাতটি শহরের ওপর প্রস্ত্ততকৃত একটি গবেষণা প্রকল্পের রিপোর্টে সমর্থিত হয়। ২

প্রায় এক মিলিয়ন জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত একটি শহর আকার-আয়তনে বিশাল ছিল সন্দেহ নেই। ধারণা করা হয়, সে-আয়তন নিদেনপক্ষে ৫০ বর্গমাইলের কাছাকাছি হয়ে থাকতে পারে। অনেক পরে আতিকুল্লাহ এবং করিমের গবেষণায় একই বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়।৩ এরপর 888sport appর গৌরবোজ্জ্বল নগর-শৌর্য ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে এবং একসময়ে এ-ঐতিহ্যের বাহক নগরীর জন888sport free bet মাত্র ৬০ হাজার ৬১৭ জনে এসে পৌঁছে বলে ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের 888sport app পুলিশ সুপার কর্তৃক প্রদত্ত হিসাবে দেখা যায়।৪ সমসাময়িক তথ্যে প্রকাশ, 888sport appর আয়তন তখন মাত্র আট বর্গমাইলব্যাপী বিস্তৃত ছিল। ১৯৬১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী 888sport appয় জন888sport free bet ছিল প্রায় ছয় লাখের মতো, আয়তন ছিল ২৫ বর্গমাইলের অধিক। এবং ১৭০০ সালের সেই অবলুপ্ত জন888sport free bet ফিরে এসেছিল বিংশ শতাব্দীতে প্রায় ষাটের দশকের শেষাশেষি।

আড়াই শতাব্দীর পথপরিক্রমায় অদৃশ্য যে-নগরচিত্র, তা আজক আঁকা যাবে না নিশ্চয়ই, তথাপি কয়েকটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এসে পড়ে। প্রায় নয় লাখ জনগোষ্ঠীকে ধরে রাখত যে-নগর, যার বিস্তৃতি ছিল সুবিশাল, তার অস্তিত্ব কোথায়, কেমন করে অবলুপ্ত হলো। কত স্বল্প সময়ের প্রেক্ষাপটে এর শত-শত দালানকোঠা, উপকরণ, তার সামগ্রিক স্থাপত্যিক অবয়ব এবং নির্মাণশৈলী সময়ের অতলে বিলীন হলো?

অনেক ঐতিহাসিকের মতে, পরপর বেশ কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় 888sport app নগরীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। রফিকুল ইসলামের লেখায় পাওয়া যায়, কোম্পানি আমলের তৃতীয় মন্বন্তরটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সেই মন্বন্তর এক বছরের বেশি স্থায়ী হয়। 888sport app শহর ডুবে যায়। শহরের আশেপাশের সব নিম্নাঞ্চল এত গভীর পানির নিচে চলে যায় যে, মানুষকে মাচা বেঁধে জীবনযাপন করতে হয়। চালের দাম বাড়ে শতকরা তিনশো থেকে চারশো ভাগ। শহরে দশ হাজার লোকের জন্য একটি লঙ্গরখানা চালু করা হয়, কিন্তু তা অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই নয়। 888sport appর রাস্তায় প্রতিদিন শত-শত অনাহারী বাঙালির লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। চরম দুর্ভিক্ষের মধ্যে আবার 888sport app শহরে এক প্রচন্ড অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়। তাতে হাজার হাজার ঘরবাড়ি আর খাদ্যভান্ডার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খাদ্যের গুদামগুলো থেকে খাদ্যশস্য বাঁচাতে গিয়েও শতাধিক লোক অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়।৫

এই প্রসঙ্গে দুটি উদাহরণের উল্লেখ করা যায়। ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট আকবর কর্তৃক আগ্রা থেকে ২৮ মাইল দূরে বিস্তীর্ণ অরণ্যের কোলঘেঁষে প্রতিষ্ঠিত ফতেহপুর সিক্রি মূলত মাত্র এক প্রজন্ম টিকে ছিল। আকবরের মৃত্যুর পর অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এই বিশাল শহরটি পরিত্যক্ত হয়। আজো এর অস্তিত্ব ইতিহাসের সহানুভূতি পেয়ে অবিচল রয়ে গেছে। ১৬৩০ সালের শেষের দিকে যখন তাজমহলের স্থাপত্যকীর্তি বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়, সম্ভবত তখনই ভারতের এক বৃহদাংশ বীভৎস দুর্ভিক্ষ কর্তৃক আক্রান্ত হয়। রাজসভার ঐতিহাসিক আবদুল হামিদ লাহোরীর বর্ণনায় জানা যায়, সামান্য রুটির জন্য মানুষ মানুষকে বিক্রি করতে দ্বিধা করেনি। নিজ সন্তানের মাংস ভক্ষণেও মানুষের দ্বিধা ছিল না। মৃতদেহের স্তূপে রাস্তাঘাটে চলাচল অসম্ভব হয়ে ওঠে। তৎকালীন ইংরেজ পর্যটক পিটার মান্ডি নিজে এই বীভৎস দৃশ্য দেখেছিলেন। হতভাগ্যদের মৃতদেহ এমনভাবে সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল যে, পিটার ক্ষুদ্র একটি তাঁবু টাঙানোর স্থানটুকুও পাননি।৬

অর্থাৎ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের করালগ্রাস, অথবা তার প্রতিক্রিয়া, সহস্র দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের মৃত্যু ইত্যাদি কোনো কিছুই তাজমহলের মর্মর জন্মগ্রহণকে বিলম্বিত করতে পারেনি। এর প্রধান কারণ সম্ভবত বিপুল সম্পদের অধিকারী মোগল সম্রাটের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক নিরাপত্তা। দারিদ্র্যপীড়িত হলেও পরিত্যক্ত সভ্যতা আবারো পুনরুজ্জীবিত হতে পারে, কিন্তু বন্যা ও মহামারির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্ভবত সবকিছুকেই লোপাট করে দেয় বলে কখনো-কখনো সভ্যতার ছিটেফোঁটা সাক্ষ্যপ্রমাণও অবশিষ্ট থাকে না।

888sport appর বুকে যখন নতুন করে আঞ্চলিক নগর স্থাপত্যের বিবর্তন প্রক্রিয়া প্রতিভাত হলো তখন হাওয়া অনেক বদলে গেছে। মোগলদের আভিজাত্য ও আভিজাত্যের ঐশ্বর্য আর অবশিষ্ট নেই। তার বদলে গড়ে উঠেছে এক নব্য ধনিক দল। পেশাগত দিক দিয়ে এরা অনেকেই মূলত বণিকশ্রেণি থেকে উদ্ভূত। এবং পরবর্তীকালে বিপুল সম্পদের অধিকারী। ফলে তাঁরা সামাজিক প্রতিপত্তি, আভিজাত্য প্রভৃতি অর্জন করার উন্মুখ বাসনায় জমিদারি ক্রয় করে জমিদারশ্রেণি হিসেবে স্বীয় আসন প্রতিষ্ঠিত করেন। (The new business class who become desperate to seek fame honour and prestige started investing in buying land and possessing zamindaries)।৭ সে-সময়ে 888sport app ওই নব্য ধনকুবেরদের সম্পদ এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এবং এই স্বভাবগত ক্ষেত্র থেকেই পুরনো 888sport appর স্থাপত্য প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটতে থাকে।

এর কারণ আছে। স্থাপত্য বহুক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন এবং প্রভাবশালীদের ক্ষমতা ও আভিজাত্য প্রকাশের প্রতীক হিসেবে কাজ করে। দ্বাদশ শতকের শেষের দিকে দিল্লি বিজয় সমাপ্ত করে (তৎকালীন কিলাইরায় পিথুরা) কুতুবউদ্দিন আইবাক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুয়াত-উল-ইসলাম মসজিদ। কিন্তু ঠিক পরিতৃপ্ত হতে পারেননি তিনি। তার বীরত্বগাথার প্রকাশ সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছিল না। তদুপরি ইসলামের বিজয়কে মনঃপূত করে ধরে রাখা যাচ্ছিল না। মূলত এসব সেন্টিমেন্ট থেকেই কুতুব মিনার নির্মিত হয়। ষোড়শ শতকের শেষে মোগল সম্রাট আকবর দাক্ষিণাত্য বিজয় সমাপ্ত করে ফতেহপুর সিক্রিতে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই বিজয়কে ধরে রাখার অভিপ্রায়ে নির্মিত হয় ‘বুলান্দ দারওয়াজা’। তাজমহলের কথা নতুন করে আর বলার নেই। তবে জনশ্রুতি আছে, সম্রাট যমুনার অপর পারে আরো একটি  কালো মহলের পরিকল্পনা প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন, এবং সম্ভবত নিজের অস্তিত্বকে সেই কালোর আড়ালে সমাহিত করে তাজকে সমুদয় আলোকে আলোকিত করতে চেয়েছিলেন। তমসার পাশে সেই শুভ্রতায় তাজ হীরকপ্রভায় হয়তোবা আরো মহিমান্বিত হতো।

তবে 888sport app download for android রাখা প্রয়োজন, সম্পদের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে রাজকীয় পর্যায়ের বিলাসবহুল স্থাপত্য নির্মাণ প্রবণতাও হ্রাস পেতে থাকে। আমরা 888sport appর নব্য ধনিকশ্রেণির প্রতিপত্তি প্রদর্শনের যে-সময়ের কথা বলছি সে-সময়কার বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি নিজেদের আবাসস্থল হিসেবে বেশকিছু প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণ শুরু করেন। নদীর তীর ঘেঁষে প্রাথমিকভাবে এসব অট্টালিকা নির্মিত হলেও ভবনগুলোর বিপরীত দিক দিয়ে আর একটি চলাচল সড়ক তৈরি করা হয়। ফরাশগঞ্জ এলাকাটি এই জাতীয় সাধারণ পরিকল্পনা চিন্তার ফসল। (ফরাসি বণিকরা অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এই এলাকায় একটি বাজার গড়ে তুলেছিল। সেই সুবাদে এই এলাকা ফরাশগঞ্জ নামে পরিচিতি লাভ করলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকর্ম সম্পন্ন হয়েছে এমন কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমান আহ্সান মঞ্জিলের একই স্থানে নির্মিত প্রাথমিক ভবনটিতে যে তাদের কুঠিবাড়ি ছিল তা সুবিদিত)।

সুনির্দিষ্ট কোনো স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে এ-এলাকার সব ইমারত নির্মিত হয়েছে তা বলা যাবে না। এ-সময়ের অনেক ভবনের পরিকল্পনা ও স্থাপত্য-বৈশিষ্ট্যে উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য ও সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়। আবার একই সঙ্গে বৈসাদৃশ্যও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট। এর কিছুটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। রূপলাল হাউস ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে নির্মিত হয় বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। (সম্ভবত ১৮৪০-এর দিকে রূপলাল এবং তাঁর সহোদর রঘুনাথ একসঙ্গে একই স্থানে অবস্থিত এক আর্মেনীয় ব্যবসায়ীর বাসভবন ক্রয় করেন এবং সেখানেই এই বিশাল ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন)। এই স্থানটি নির্বাচন করার পেছনে নদীতীরবর্তী পটভূমি জোরালোভাবে কাজ করেছিল সন্দেহ নেই। তখনো বাকল্যান্ড বাঁধ নির্মিত হয়নি অর্থাৎ বাকল্যান্ড বাঁধ নির্মিত হওয়ার পর এবড়োখেবড়ো ক্ষণভঙ্গুর নদীতীর যে সুশ্রী সরল রূপ ধারণ করেছিল সেদিক থেকে এলাকাটি ১৮৬০-এর পরবর্তীকালে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। যা হোক, বলা হয়ে থাকে, কলকাতা থেকে বিখ্যাত  মার্টিন কোম্পানির স্থপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এ-প্রাসাদের স্থাপত্য নির্ধারণের জন্য।

ঘটনাটি এ-কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে, এ-স্থপতিই সম্ভবত প্রথম এ-শহরে এমন এক স্থাপত্য উপস্থাপন করলেন, যা গাম্ভীর্যে এবং আভিজাত্যে রাজকীয় ও বিদেশি স্থাপত্যশৈলীতে জাঁকজমকপূর্ণ। এই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য রচিত হলো বিস্তৃত পরিসরের প্ল্যান ও লে-আউট। ব্যবহৃত হলো ত্রিকোণ আকৃতির Pediment-এর মুকুটশোভিত বিশাল আকৃতির portico। ছয়টি চমৎকার প্রপোরশনের প্রলম্বিত করিন্থিয়ান কলামের ওপর ওই Pediment শোভা পেল। উল্লেখ্য, তখনো আহ্সান মঞ্জিল আজকের আঙ্গিকে নির্মিত হয়নি। সম্ভবত ১৮৭২ সালে এই নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। কাজেই বলা যায়, যে-বিদেশি 888sport live chatরীতি ও বৈশিষ্ট্য রূপলাল হাউসে উপস্থাপিত হলো, তা এতদঞ্চলে প্রাসাদোপম অট্টালিকা নির্মাণের অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হলো।

সম্ভবত ওই স্থপতি এখানে খুব বেশিদিন বসবাস করেননি। তবে কিছু অভিজ্ঞতালব্ধ কারিগর ও আঞ্চলিক ডিজাইনারকে তিনি পরোক্ষভাবে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়ে যেতে সমর্থ হন।  এর ফলে ওই 888sport live chatীরীতির আংশিক অথবা সামগ্রিক পুনঃস্থাপন এর পরের ইমারতগুলোতে প্রতিভাত হয়। প্ল্যান ও লে-আউটের দিক দিয়ে রূপলাল হাউসের সমকক্ষ হওয়া সম্ভব ছিল না এমনসব অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আয়তনের ইমারত, বিশেষ বিশেষ কতকগুলো building component নির্বাচন করে নিজ নিজ অবয়বে সংযোজন করে। এই transplantation সম্ভবত সর্বনন্দিত হওয়ার মতো উৎকর্ষতা অর্জনে সমর্থ হয়নি। দু-একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।

অধুনালুপ্ত 888sport appর পুরনো রেলপথসংলগ্ন, বর্তমানে দয়াগঞ্জ ব্রিজের ওপর দিয়ে চলমান রাজপথের একেবারে গা ঘেঁষে অবস্থিত মথুরাবাবুর শক্তি ঔষধালয় ভবনটির পূর্বদিকের দৃশ্যপট (east elevation)। এখানেও পরপর ছয়টি করিন্থিয়ান কলাম, তবে অত্যন্ত ভারবাহী বা massive। প্রলম্বিত প্রপোরশন মোটেই বলা যাবে না।

শিরঃদেশে যথারীতি ত্রিকোণাকৃতি Pediment, কিন্তু সামগ্রিক বিল্ডিংয়ের দেহাবয়বের তুলনায় একপেশে। কলামগুলোর মাঝেকার দূরত্বও অসমান, সে-কারণেই বিভ্রান্তিকর ও দৃষ্টিকটু। এ-ধরনের বিন্যাস থাকবে একটা প্রাসাদের ঢোকার মুখে, সৃষ্টি করবে বিশালত্বের নাটকীয় ব্যঞ্জনা। কোথাও এরা দ্বিতল, উন্মুক্ত আয়তনের পরিসরে পৌঁছে দেবে, অর্থাৎ লে-আউটের উপস্থাপনা এমন হবে যে, মিলেমিশে এর স্থাপত্য গুণের বিষয়গুলো, খুঁটিনাটিসমেত একাকার হয়ে এর সামগ্রিক অবয়ব ধারণ করবে।

মিলেমিশে একাকার হয়ে ওঠার ব্যাপারটা এই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ যে, এর বাহ্যিক আড়ম্বরের সঙ্গে ভেতরের পরিসরের বিন্যাসের (spatial arrangement) ‘সামঞ্জস্য থাকা নিতান্তই অপরিহার্য। এটা কোনো বাতুলতা নয়। কিন্তু মথুরাবাবুর উল্লিখিত বাসভবনটিতে দক্ষিণের বারান্দা দিয়ে প্রবেশ সূচিত হওয়ার পর যে সুশৃঙ্খল পরিসরের বিন্যাস স্পষ্টতই দৃশ্যমান, তার সহাবস্থানে পূর্বদিকের উল্লিখিত স্তম্ভরাশির উপস্থিতি সামগ্রিক পরিকল্পনার সঙ্গে নিতান্তই অসংগতিপূর্ণ এবং কোনো কিছুর প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে কদাকারভাবে স্বীয় অস্তিত্ব নিয়ে দন্ডায়মান।

কিন্তু পরিকল্পনার সঙ্গে বাহ্যিক উপাদানের অসংগতি রেবুতী মোহন দাস বা যতীন্দ্র কুমারের ইমারতে প্রকাশ পায় না। রেবুতী মোহনের বাসভবনের প্রবেশপথে স্তম্ভের আধিক্য নেই। সবমিলিয়ে গোটা চারেকের বেশি নয়, তথাপি মনে হয় ডিজাইনার ওই চারটি স্তম্ভের বিন্যাসে যে-প্রপোরশনের খেলা দেখিয়েছেন তা চমকপ্রদ। ছোট পরিসর, নাটকীয়তার সুযোগ কম, তবু এর বিনয়ী প্রচেষ্টা আছে। যতীন্দ্র কুমারের ক্ষেত্রে এই নাটকীয়তার আবহ সৃষ্টি হয়েছে অন্যভাবে। প্রবেশপথে একটি পোর্টিকো-ধাঁচে তৈরি বারান্দা। আয়তাকার হতে পারত কিন্তু একটা বক্র সীমারেখা টেনে বারান্দাটির প্রলম্বিত চেহারা টানা হলো। এতে এর আবেদন বাড়ল।

সামগ্রিক পরিকল্পনার এসব অট্টালিকায় যে-কৌশলে এর ঘরগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়েছে, তাতে দক্ষ মুনশিয়ানার প্রকাশ মেলে। মথুরা নাথের বাসভবনের পূর্বদিকের বারান্দার অংশটুকু বাদ দিলে অবশিষ্ট অংশে চমৎকার ছিমছাম, সাধারণ প্ল্যানিং দেখা যায়। মাঝে খোলা উঠানটুকু বর্গাকার; একেবারেই সঠিক প্রপোরশনের এবং পুরো লে-আউটের অন্তর্গত সার্থক ও কার্যকর ফোকাস হিসেবে অবস্থিত। লে-আউটের কোথাও অসুন্দর, আপত্তিকর পরিসর নির্ণীত হয়নি।

একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা চলে যতীন্দ্র কুমারের বাসভবনের ক্ষেত্রেও।৮ এক্ষেত্রে লে-আউটটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে অধিকতর ব্যাপক আকার ধারণ করায়, স্থপতি একটা-দুটো-তিনটা পর্যন্ত উঠান প্রতিস্থাপন করেছেন। বিশাল গভীরতা হালকা হয়ে উঠেছে; উন্মুক্ত প্রান্তর দিয়ে প্রবেশ করেছে ঝলমলে আলো, খানিকটা রোদ। প্রতিফলিত হয়ে সেই আলো ঢুকে পড়েছে ভারী আবদ্ধ ঘরের  অভ্যন্তরে চারপাশের করিডোরে বাহক হয়ে।

এখানেই শেষ নয়। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে উন্মুক্ত টেরাস। ভবনের খানিকটা অংশ অপর অংশের তুলনায় ওপরের দিকে ধাবিত না হয়ে থেমে গিয়ে এই টেরাসের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু ত্রিমাত্রিক অবয়বে কোনো বৈসাদৃশ্য রচিত হয়নি। মথুরা নাথের দ্বিতল বাসভবনের উত্তর পাশের এমনি এক চত্বরে হঠাৎ এসে পড়লে মনে হয়, সে-সময়টা এখনো স্থির হয়ে এখানে অবিচল দাঁড়িয়ে আছে। মনে হয়, প্রাচীন বক্রাকার আরামকেদারা পেতে এখানে একটু বিশ্রাম নিই, শুভ্র মেঘদলের প্রবাহ নিয়ে ওই আকাশ কী মোহনীয় ভঙ্গিমায় এই ভবনটির উঠান পেরিয়ে ঘরে ঢুকেছে তা অবলোকন করি।
তথ্যসূত্র

১. ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, হংকং থেকে ১৯৮২ সালে প্রকাশিত নির্দেশক পুস্তিকা অল এশিয়া গাইড, পৃ ৩৩।

২. নগর গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত ‘Urban Housing and Shelter Process in Bangladesh – A study in seven cities – Dacca, Chittagong, Khulna, Sylhet, Chandpur, Patuakhali and Takurgaon’, দ্রষ্টব্য : Table 13 (Population Growth of Dhaka City)।

৩. Growth of Dacca City : Population and Area (1608-1981), আতিকুল্লাহ এবং করিম (১৯৬৫)।

৪. ‘সিপাহী বিদ্রোহের কালে 888sport app’, 888sport appর কথা, রফিকুল ইসলাম (১৯৮২)।

৫. ‘মহামন্বন্তরের কালে 888sport app’, ওই।

৬. ভারতের ইতিহাস কথা, ডক্টর কিরণচন্দ্র, উদ্ধৃতি – আবদুল হামিদ লাহোরীর বিবরণ, Oxford History of India, SMITH.।

৭.  ‘Early 20th Century Mansions of Dhaka City : Contextual Concept’, এম. আলী খান ও আমিন, Architectural Conservation Bangladesh, এএইচ ইমাম উদ্দিন-সম্পাদিত, পৃ ১৬৮, ১৯৯৩।

৮. এই নিবন্ধের কতক তথ্য এবং সূত্র, বিভাগীয় প্রকল্প : Study of Conservation of Dhaka City : It’s Historical Buildings and Areas থেকে সংকলিত।