আবু হেনা মোস্তফা এনাম
অবরুদ্ধ অশ্রুর দিন
পারিবারিক 888sport sign up bonusভাষ্য ১৯৭১
সম্পাদনা : ঝর্ণা বসু ও মফিদুল হক
888sport live football প্রকাশ
888sport app, ২০১২
২০০ টাকা
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ কোনো আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব ও সম্ভাবনার প্রশ্নে সমগ্র চৈতন্যের আবেগ, উত্তাল আলোড়ন, সংগুপ্ত সৃষ্টিশীলতার সার্বিক প্রেরণা ও দর্শনের সঙ্গে তা সংশ্লিষ্ট। চৈতন্যের ওই আলোড়ন ও উচ্ছ্বাস, আবেগ ও আত্মত্যাগ, মৃত্যু ও রক্তের আল্পনায় অাঁকা মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি চৈতন্যের দীর্ঘকালের মুক্তি-আকাঙ্ক্ষার ধারাবাহিক একটি পরিস্থিতির চূড়ান্ত রূপ। ওই পরিস্থিতির অন্তর্স্রোতে প্রবহমান যন্ত্রণা থেকে মুক্তির নিগূঢ় আকাঙ্ক্ষা বাঙালির সংবেদনশীল হৃদয়লোকে ঘটিয়ে চলেছিল অদৃশ্য রক্তপাত; জীবনের চলমান স্বাভাবিকতা, সমৃদ্ধি ও স্বপ্ন থেকে উৎকেন্দ্রিক হয়ে ওঠার যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতাপুঞ্জ বাঙালির চেতনাকে করে তুলেছিল অশ্রুময়। ফলে ওই মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ঔপনিবেশিক মস্তিষ্কশাসনের দুঃসহ নির্যাতন থেকে, দেশবিভাজনের নিষ্ঠুর রক্তপাত থেকে, মুদ্রাস্ফীতির শৌখিন বিবমিষা থেকে, স্বার্থসন্ধানী সামরিক শক্তির উত্থানজনিত ব্যক্তির নিরাশ্রয়তা থেকে। কেননা, মনে রাখা দরকার, একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই ধূলিলুণ্ঠিত হতে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত মূল্যবোধ। চার বছর পরই স্বাধীনতার স্থপতিকে হত্যার মাধ্যমে উত্থান ঘটে সামরিক শক্তির, পরিবর্তন ঘটানো হয় ১৯৭২ সালের ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ-প্রাণিত সংবিধানটির। বাঙালি জাতিসত্তা সাম্প্রদায়িক ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির মদদপুষ্ট সেনাবাহিনীর একটি লুটেরা গোষ্ঠীর চক্রান্তে হয়ে ওঠে বিপর্যস্ত, বিভ্রান্ত, নিরাশ্রয়, নিঃসঙ্গ ও উন্মূলিত। এমনকি স্বাধীনতার চার দশক পরও বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা, সাংস্কৃতিক অভিনিবেশ, শিক্ষা-কৃষ্টি-ঐতিহ্যের সুসমম্বয়, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল সূত্রগুলো এখনো অস্থির, বিশৃঙ্খল ও বিভ্রান্তিকর, এখনো সংকীর্ণ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি-চর্চার মধ্য দিয়ে একটি শক্তি সদম্ভে ক্ষমতার কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র। ফলে অসংখ্য 888sport promo code-পুরুষের আত্মত্যাগের গ্লানি এবং অশ্রুচিহ্ন মুছে যায়নি, মুছে যাওয়ার নয়।
ওই রক্তাক্ত ক্ষত ও অশ্রুপাতময় দিনপঞ্জি অবরুদ্ধ অশ্রুর দিন গ্রন্থে জীবন্ত হয়ে উঠেছে কয়েকজনের 888sport sign up bonusর তর্পণে। বাঙালি জাতিকে কেবল ১৯৭১ সালেই আকস্মিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করতে হয়নি, মুক্তির সংগ্রামে যে দীর্ঘ পথ পরি888sport slot game করতে হয়েছে, এ-গ্রন্থের ভোলানাথ বসুর জীবনসংগ্রামের টুকরো টুকরো ঘটনাপ্রবাহে আমরা পাই সে-বৃত্তান্তের অভিনিবেশ। একজন ব্যক্তি ভোলানাথকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে একটি রাষ্ট্রের জন্মপর্বের যন্ত্রণা, রক্তাক্ত সংগ্রাম, গ্লানি ও মহৎ আত্মত্যাগের অগ্নিদগ্ধ 888sport sign up bonusকে অনেকটাই প্রত্যক্ষ করে তোলা হয়েছে। এভাবে একটি পরিবারের আত্মত্যাগ ও অস্তিত্বের সংগ্রাম রাষ্ট্রের সামগ্রিক সংগ্রামের অগ্নিস্রোতে সংক্রমিত।
বাগেরহাটের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী, জ্ঞানানুরাগী, সজ্জন, হৃদয়বান, পরোপকারী ব্যক্তি ভোলানাথ বসু। পারমধুদিয়া গ্রামে নিতান্ত দরিদ্র বসু পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও পূর্বপুরুষ বড়জ্যাঠা শিক্ষক কালীবর বসুর অসাম্প্রদায়িক জীবনদৃষ্টি, কাব্যচর্চা এবং আরেক কাকা প্রসন্নকুমার বসু বিদ্যারত্ন, যিনি ১৯১১ সালে সম্রাট পঞ্চম জর্জ ভারতবর্ষে এলে মানপত্র রচনা করেন, সংস্কৃতের শিক্ষক – এই আভিজাত্য ও ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার রক্তে বহন করে বেড়ে উঠেছিলেন ভোলানাথ বসু। দারিদ্রে্যর নিষ্পেষণ থেকে মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত এ-মানুষটি প্রতিষ্ঠালাভ করেছেন, পুনরায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তার রোষানলে পড়েছেন; কিন্তু চরিত্রের অকুতোভয় দৃঢ়তা এবং রক্তের মধ্যে পূর্বপুরুষের যে-শিক্ষার আলো বয়ে বেড়াচ্ছিলেন তা বিস্মৃত হননি। তাই ভয়াবহ অর্থকষ্টে খেয়ে না খেয়ে, কচুপাতা সিদ্ধ করে খাদ্যের অভাব পূরণ করার কঠিন দিনগুলোতেও তিনি স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ত্যাগ করেননি, দূরে সরিয়ে রাখেননি গীতাঞ্জলি অথবা রবীন্দ্রনাথের গান এবং হৃদয়ের নিভৃতে সুপ্ত সংস্কৃতির রুচিবোধ। এভাবেই এ-মানুষটি সংগ্রামে, শিক্ষায়, সহিষ্ণুতায় কেবল পরিবারের সদস্যদের কাছেই নয়, উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন সকল বাঙালির জীবনে।
অবরুদ্ধ অশ্রুর দিন পারিবারিক 888sport sign up bonusভাষ্য হলেও এ-কাহিনির ব্যাপ্তি এত বিস্তৃত, গভীরতা এতটাই হৃদয়স্পর্শী যে, তা নিছক ভোলানাথ বসু নামের এক ব্যক্তির জীবনের মধ্যে অথবা এমনকি বাগেরহাট শহরে মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া কোনো একটি ঘটনার বিবরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। শহীদ ভোলানাথ বসুর স্ত্রী উমা বসুর ‘যে আলোয় চলেছি পথ’ 888sport sign up bonusভাষ্যটি ওই অভিজাত শিক্ষিত পরিবারের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশবিভাগ এবং তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক শাসন ও শোষণের নতুন নতুন কৌশল যে ব্যক্তিমানুষের জীবন ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক কাঠামো কতটা ভঙ্গুর, ক্ষয়িত, অগ্নিদগ্ধে অঙ্গার এবং পরিশেষে মৃত্যুময় ও অবিনাশী অশ্রুসিক্ত করে তুলেছিল তারই রুদ্ধশ্বাস বিবরণ।
গ্রন্থভুক্ত প্রায় প্রতিটি 888sport sign up bonusভাষ্যে একজন ব্যক্তিমানুষ অথবা একটি পরিবারের কাহিনি পল্লবিত হয়নি, বরং যুক্ত হয়েছে আরো অনেক পরিবারের টুকরো টুকরো বেদনার গভীর দীর্ঘশ্বাস, অসহায়ত্ব ও বোবাকান্নার ধ্বনি। যেমন :
‘১৯৬৩ সালে আমার বাবা-মা ঘরবাড়ি বিষয়-আশয় ফেলে বলতে গেলে এক কাপড়ে ভারতে চলে গেলেন। দেশভাগ থেকেই মূলঘর গ্রাম ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। দু’এক ঘর যারা ছিল, তারা নানারকম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল। ইদানীং কেউ হয়তো বাড়ি ফেলে দু’চার ঘণ্টার জন্য কোথাও গেছেন, ফিরে এসে দেখেছেন ওটুকু সময়ের মধ্যেই বিহারি মুসলমান কোনো পরিবার সেই বাড়ির তালা ভেঙে ঢুকে সংসার সাজিয়ে রান্না-খাওয়া শুরু করেছে। এরকম ঘটনা সুধা দিদির। মূলঘর গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা সুধাদি সকালবেলার ট্রেনে বাগেরহাট এসেছিলেন। দুপুরবেলা বাড়ি ফিরে দেখেন তালা ভেঙে উঠে বসেছে এক পরিবার। সেদিন থেকে আইন আদালতের দরজায় দরজায় অনেক ঘুরলেন তিনি। কিন্তু ঘরে ফেরা আর হল না তার। এক কাপড়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন। … বুকটা ফাঁকা হয়ে গেল। কত উৎসাহ, কত আনন্দ। ছবির মতো চোখের সামনে সারাদিন ভেসে ভেসে আসতো। দুর্গামন্দিরের সামনে বিশাল উঠোন। একপাশে বড় বেলগাছ, যার তলায় বোধন হতো। পূজার সময় আত্মীয়স্বজনে ভরে যেত ঘর। অথচ গ্রামে মানুষের অভাবে বাবা দেশ ছাড়লেন! ফেলে গেলেন আমাকে। প্রাণটা হু-হু করে। চোখটা বারবার অকারণে ঝাপসা হয়ে আসে।’ [পৃ ২২]
এখানেই থেমে থাকেনি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক শক্তির নিষ্ঠুরতা, তার তীক্ষ্ণ দন্ত ও নখরে বিদ্ধ ও ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে মানুষের সুদীর্ঘ সাধনার সম্পদ, বিত্ত-বৈভব। ভয় ও আতঙ্কের খড়গ উঁচিয়ে তাড়িয়ে বেড়ায় প্রতিনিয়তই : ‘১৯৬৫-র ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধ মানে হিংসা, রক্তক্ষয়। ১৯৬৪-র ব্যাপক দাঙ্গার পরে ১৯৬৫-তে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ ঘৃতাহুতি দিলো দেশের ভেতরে লাগামছাড়া হিন্দুবিদ্বেষ। কয়েকদিনের মধ্যেই অন্যায়ভাবে নাগেরবাজার মিলে তালা দিলো পাকিস্তানের সামরিক সরকার।’ [পৃ ২৩]
অতঃপর ভয়াল ১৯৭১। ১৭ মে ১৯৭১ মৃত্যুদূত এলো। পাকসেনারা নয়, বাসাবাটির করিম মওলানার পুত্র আলী, রাজমিস্ত্রি এনায়েত দলবল নিয়ে এলো বাড়িতে। সকালবেলা পুকুরপাড়ের বড়ো আমগাছটার মাথায় বসে তীক্ষ্ণ স্বরে পাপিয়া পাখি চিৎকার করছে তখন ‘বউ কথা কও’। পরপর তিনটি গুলির প্রথমটির শব্দেই সে স্বর থেমে গেল।… মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি একবারও পালাতে চাননি। উদ্যত রাইফেলের সামনে হাতজোড় করে উদাত্ত কণ্ঠে বলেছেন – ‘ভাই, আমার একটা কথা।’
কিন্তু কথা বলতে দেওয়া হয়নি, স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে ওই সংস্কৃতিবান, জ্ঞানানুরাগী মানুষটিকে। ওই একই জিঘাংসা, হিংস্র পাশবিক প্রবৃত্তি ও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির নিষ্ঠুর তরবারি একবিংশ শতাব্দীর সূচনাতেও প্রবল প্রতাপে স্তব্ধ করে দেয় অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের কণ্ঠস্বর।
সময় এবং পরিস্থিতি মানুষের জীবনকে কতটা অভিজ্ঞ, সাহসী এবং প্রত্যয়দীপ্ত করে তোলে, এসব 888sport sign up bonusভাষ্যে তার পরিচয় মেলে। ’৭১ বুঝি এমনই এক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় বাঙালির জীবনে পুঞ্জীভূত করেছে। তাই বারো বছরের তাপস বসুর জীবনের ওই দিনগুলো কতটা দগ্ধ, ভয়মিশ্রিত, আতঙ্কশিহরিত ও দুশ্চিন্তার তীক্ষ্ণ করাতে চিরে প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হয়েছে – সেই বিবরণ তৎকালীন সমগ্র 888sport appsের প্রতিচ্ছবির উজ্জ্বল ও নিষ্ঠুর করুণ প্রতিভাস। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ন্যাপ-নেতার জামাইয়ের কৌতুক-পরিহাস ও নিষ্ঠুর বক্রোক্তির আক্রমণ একজন অসহায় শিশুকে বয়সের তুলনায় কতটা চিন্তিত ও ভাবিত করেছিল তাপস বসুর 888sport sign up bonusভাষ্যে তারই এক হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা :
‘… রিকশাওয়ালা বললো – ‘এই মাকে গিয়ে বলিস তোর দিদিকে আমি বিয়ে করবো।’ কীভাবে যেন তাদের হাত ছাড়িয়ে বাড়ি ফিরলাম। আতঙ্কে হিম হয়ে গেল চেতনা। মাকে তো কিছু বলা যাবে না! কাউকে বলা যাবে না। ডা. অরুণ নাগের বাড়িতে রান্না করতো হরেন কাকা। তার মেয়েকে নিয়ে গেছে ওপাড়ার একজন তাকে আমি চিনি। রাধাবল্লভ গ্রাম আমাদের বাড়ির অনেক কাছে। ঐ গ্রামের ডাক্তার বলরাম অধিকারীর মেয়ে মঞ্জুরানী অধিকারীরকে দিনের বেলা শারীরিক নির্যাতন করার পরে খুন করে ফেলে দিয়েছে নদীতে। এসব ঘটনার কোনো আড়াল নেই, কিছু গোপনীয়তা নেই, আমিও জানি। রাতে শুয়ে ছটফট করি, কিছুতেই ঘুম আসে না।’ [পৃ ৯৯]
কিন্তু পরিবারপ্রধানকে হত্যার পর বিষপানে সপরিবারে আত্মহত্যা করতে পারেননি তারা, বিষ পাওয়া যায়নি বাজারে। মৃত্যুবরণ করতে পারেননি, কিন্তু ততোধিক যন্ত্রণা এবং আতঙ্কময় পরিস্থিতির মধ্যে অতিবাহিত করতে হয়েছে পরবর্তী মাসগুলো। ‘সময়ের প্রয়োজনে’ একজন বারো বছরের শিশু হয়ে উঠেছিল পরিবারের অভিভাবক :
‘পথ চলতে চলতে কতো কথা মনে আসে। কিছুদিনের মধ্যে আমাদের বাড়ি শূন্য হয়ে গেছে। প্রিয় আন্দা, ছোটভাই অপু, বাবা, ঠাম্মা চিরদিনের জন্য চলে গেছেন। তিন দাদা তিন দিদি তারা কেমন আছে, বেঁচে আছে তো! ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে। এসব প্রশ্ন মাকে করি না, কাউকে করি না। চলতে চলতে হঠাৎ চোখটা জ্বালা করে ওঠে। জামার হাতা দিয়ে চোখটা মুছে নিই। এখন আমিই দাদা। চায়না, বিশু, ছবি, বেবিকে আমি খাবার না দিতে পারলে তারা না খেয়ে থাকবে। তাই আমি ঠোঙা আর ঘুড়ির ডালাটা মাথায় নিয়ে জোরে জোরে পা চালাই, আমার থামলে চলবে না।’ [পৃ ১০৩]
স্বাধীনতার জন্য এই আত্মত্যাগ বাঙালিদের তখন বয়স আর সময়ের গন্ডি অতিক্রম করে উন্নীত করেছিল ভিন্ন এক উচ্চতায়। ব্যক্তির আত্মত্যাগ মিশেছিল সমষ্টির বোধে, ব্যক্তির যন্ত্রণা উচ্চকিত হয়েছিল সকল জনগোষ্ঠীর মনোজগতে ও জীবনে। শহীদ ভোলানাথ বসুর স্ত্রী উমা বসুর 888sport sign up bonusলিপিতে এই আত্মত্যাগের উচ্চতা মহিমাময় হয়ে উঠেছে : ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের তাড়িয়ে স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিলেন সুভাষ বসু। বলেছিলেন – তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। আমি আমার হৃদপিন্ড ছিঁড়ে দিয়েছি। চোখ বুজলেই দেখি রক্তের ধারা সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে উঠোনটা কাদা করে ফেলছে। সবই তো স্বাধীনতার জন্য! আমার স্বাধীনতা, দেশের স্বাধীনতা, কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের স্বাধীনতা!’ [পৃ ৩০] স্বাধীনতাকামী মানুষের আত্মজাগরিত চেতনার স্ফুরণ বোধহয় এমনই যে, তা দেশ-কাল ও ব্যক্তিচেতনার সীমানা ছাড়িয়ে সকল মানুষের সর্বজনীন বোধ ও চৈতন্যের সঙ্গে একীভূত হয়ে বিশ্বজনীন হয়ে ওঠে।
মানুষের মুক্তির সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার এ সর্বজনীন চেতনার ঐক্যসূত্রে ব্যক্তি ভোলানাথ বসু নিছক কয়েকজন সন্তানের পিতা, কারো স্বামী অথবা একটি এলাকার গুটিকয়েক মানুষের সুহৃদ পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। মানবমুক্তি-আকাঙ্ক্ষার সার্বজনীন প্রতীকে রূপান্তরিত হয়েছেন : ‘আজ আমার বাবা, কিন্তু আমার নন, তিনি কোনো স্বতন্ত্র ব্যক্তিও নন। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে অন্যায় ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে কোটি-কোটি নির্যাতিত-নিপীড়িত-অত্যাচারিত মানুষ – যারা বুকের রক্ত ঢেলে সীমহীন পৃথিবীতে জন্মাবার ঋণ পরিশোধ করে গেছেন, বাবা তাদেরই প্রতিনিধি। তাই বাবা ইতিহাস। বাবা একটা সময়। বাবা আমার দেশ-জন্মভূমি, ধুলায় মলিন স্বাধীনতা। বাবা আমার চেতনা, জাগ্রত বিবেক। একটা জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের শপথ।’ [পৃ ৪৫] প্রকৃতপক্ষে এ-কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, 888sport appsের মানুষ যারাই মুক্তিযুদ্ধের জন্য কোনো না কোনোভাবে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা হতে পারে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ অথবা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা, প্রত্যেকেই এই মহান ত্যাগের সম্মানে গৌরবান্বিত। আর মানবমুক্তির স্বপ্নে উদ্বেলিত প্রত্যেকে একেকজন স্পার্টাকাস, চে গুয়েভারা, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, বাঘা যতীন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাস্টারদা সূর্য সেন।
কুড়িটি 888sport sign up bonusভাষ্য সংকলিত হয়েছে বইটিতে। এসব লেখার মধ্যে হয়তো আবেগ আছে, কিন্তু ওই আবেগ-স্ফুরণে বাঙালির জাতিসত্তা সন্ধান ও সংগ্রামের জ্যোতির্ময় রেখাটি উজ্জ্বল। 888sport sign up bonusভাষ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আব্দুল হান্নান চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার। এই মহৎপ্রাণ ব্যক্তিটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষকে নিরাপদে সীমান্ত পার হতে সহযোগিতা করেছিলেন। সাক্ষাৎকারটি এ-গ্রন্থের সৌকর্য বাড়িয়েছে। এবং এক-একটি 888sport sign up bonusভাষ্যে জীবন্ত হয়ে উঠেছে স্থান-কাল ও ব্যক্তিমানুষ। ভয়াবহ ওই দিনগুলোতে মানুষের নিষ্ঠুরতার পাশাপাশি মানুষের মহত্ত্ব ও উদারতার পরিচয়টিও এখানে বড়ো হয়ে উঠেছে। আনন্দ সোয়াই, জালাল সর্দার, শান্তিদি, আরতিদি, আনোয়ার কাকা, অহিদ, আলেয়া, দাউদ, ইসহাক মোল্লা, নাম-পরিচয়হীন রিকশাওয়ালা – এরকম অসংখ্য মানুষ সেই বিপদের দিনগুলোতে সহানুভূতি, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন – মানুষের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে মানুষেরই মানবতার এ এক জয়গাথা।
মানবতার এ-জয়গাথা সম্পর্কে সম্পাদক মফিদুল হক যথার্থই বলেছেন : ‘দুঃখভারাক্রান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত এই গ্রন্থ মৃত্যুর বিরুদ্ধে জীবনের শক্তিময়তাই মেলে ধরে। ঘাতকের আঘাত মোকাবেলা করে আবারও আমাদের সামনে সজীব হয়ে ওঠেন শহীদ ভোলানাথ বসু, আমরা বুঝি কোনো আত্মদানই বৃথা যাওয়ার নয়, বিস্মৃত হওয়ার নয়।’
মানবতার এই বোধ এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসাই ছিল ভোলানাথ বসুর আজীবনের সাধনা। সন্তানদের তিনি শিখিয়েছিলেন – ‘মাটি মায়ের মতোই সহিষ্ণু। সর্বনাশা ক্রোধের পাপ থেকে মাটি সকলকে রক্ষা করে।’ ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী।’ মাকে যেমন ত্যাগ করা যায় না, তেমনি দেশমাতৃকাকেও তিনি ত্যাগ করেননি। চারদিকে যুদ্ধের ডামাডোল, অগ্নিকা, লুটতরাজ, খুন, চুরি-ডাকাতি, 888sport promo code নির্যাতন, দাঙ্গা এবং গণহত্যার মধ্যেও মা আর মাতৃভূমিকে অাঁকড়ে পড়েছিলেন তিনি। ওই মাটিই রঞ্জিত হয় তাঁর হৃদয়ের উষ্ণ রক্তধারায়। ওই মাটিই তাঁকে আশ্রয়দান করে গভীর মমতায়। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন ’৭১-এর গণহত্যার জ্যোতির্ময় প্রতীক।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.