অমরত্বের সাধ

একশ সাতাশ বছরে এসে হঠাৎ একদিন পরেশবাবুর মনে হলো তিনি নিঃসঙ্গ, ভয়াবহ একা। তাঁর স্বজন-পরিজন নেই, বন্ধুবান্ধব নেই, সেবক-সেবিকা নেই। অথচ তাঁর সবই আছে। পুত্র, পুত্রবধূ, কন্যা, জামাতা, নাতি, নাতনি, পুতি, পুতনি – কে নেই? তবু তিনি নিঃসঙ্গ। এই শহরে কেউ নেই তাঁর মতো একা। কেউ তাঁকে গুরুত্ব দেয় না, আগের মতো ভক্তি-888sport apk download apk latest version করে না, খোঁজখবর নেয় না। সবাই ব্যস্ত যার যার কাজে। ছেলেরা ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে, ছেলেবউরা ব্যস্ত ঘরসংসার নিয়ে, নাতি-নাতনি-পুতি-পুতনিরা ব্যস্ত পড়ালেখা নিয়ে। তিনি একবেলা না খেলেও কেউ জিজ্ঞেস করে না, কেন খেলেন না। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে ফিরতে কখনো রাত করে ফেললে কেউ একটিবার ফোন করে জিজ্ঞেস করে না তিনি কোথায়, কেন ফিরছেন না, বা কখন ফিরবেন। কোনো কোনো দিন বেলা এগারোটা বেজে গেলেও কেউ তাঁর ঘরে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না কেন তিনি ঘুম থেকে উঠতে এত দেরি করছেন। বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন। যেন তিনি অস্তিত্বহীন, অপাঙ্ক্তেয়।

কেবল ঘরে নয়, বাইরেও তাঁর একই হাল। যেদিকেই তাকান কেবলই শূন্যতা। শহরের চিরচেনা লোকজন তাঁকে আগের মতো গুরুত্ব দেয় না, ভক্তি-888sport apk download apk latest version করে না, সহজে কেউ মিশতে চায় না, কথা বলতে চায় না, ছেলেমেয়েরা দেখলে আদাব-নমস্কার দেয় না, উল্টো বরং তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করে। হাসাহাসির কারণটা কী, তাঁর মাথায় ধরে না। তিনি চোর নন, ডাকাত নন, ধর্ষক নন, খুনি নন, জটিল নন, পরশ্রীকাতর নন, ভাঁড়ও নন। জীবনে কখনো দুর্নীতি করেননি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করেননি, কাউকে অসম্মান করেননি, অহেতুক কারো মনে কষ্ট দেননি, স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়েও করেননি। তবু তাঁকে নিয়ে আড়ালে-আবডালে ছোটরা, এমনকি কখনো কখনো বড়রাও, কেন হাসাহাসি করে, কোনোভাবেই তার বুঝ-এ আসে না।

মন্দির কমিটির নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ই কি তাঁর এই গুরুত্বহীনতার কারণ? বহু বছর তিনি শহরের সর্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গা মাতৃমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ভেবেছিলেন আরো বহু বছর থাকবেন। কেন থাকবেন না? এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁর ঠাকুরদা। সাত কাঠা জায়গা দিয়েছেন, সুদূর আসাম থেকে মায়ের প্রতিমা এনে মন্দিরে স্থাপন করেছেন। আমৃত্যু মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন তাঁর বাবা। তাঁর অবদানও কি কম? মন্দির সংস্কারে তিনি কত অর্থ ব্যয় করেছেন তার কি হিসাব আছে? অথচ গত বছর কমিটির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তাঁর শোচনীয় পরাজয় ঘটল। একজন সদস্যও তাঁকে সমর্থন দিলো না। তারপর থেকেই তিনি মন্দিরে উপেক্ষিত। কখনো গেলে সেবাইতও মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কমিটির সভাপতি-সেক্রেটারিও তাঁকে পাত্তা দেয় না, কোনো প্রয়োজনে ফোন দিলে ফোন ধরে না, ধরলেও ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে রেখে দেয়।

অবশ্য এর চেয়েও বড় পরাজয় ছিল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। পরপর দুই দফায় তিনি পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। সেবারের নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন লোকজন তাঁকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। প্রার্থী হতে তাঁর ছেলেরা বারণ করেছিল। বয়স হয়েছে, এখন তাঁর বিশ্রামের সময়, চেয়ারম্যানের মতো এমন ব্যস্ততম পদে তাঁর না যাওয়াই ভালো। ছেলেদের তিনি ধমক দিয়ে বলেছেন, বয়স হয়েছে তাতে কী? তিনি কি অক্ষম? তিনি কি পরিষদ চালাতে পারবেন না? বারণ করেছিল বন্ধুবান্ধবরাও। এখন তাঁর অন্তিমকাল, নীরবে-নিভৃতে ভগবানকে ডাকার বয়স, এখন এসব ঝামেলায় না জড়ানোটাই উত্তম। তিনি কারো কথা শোনেনি। পরিণাম হয়েছিল লজ্জাজনক। বাজেয়াপ্ত হয়েছিল জামানত। এখন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, এমনকি অফিসের পিয়ন-দারোয়ানও তাঁকে পাত্তা দেয় না। তিনি কখনো পরিষদে গেলে সবাই তাঁকে দেখেও না দেখার ভান করে, কেউ আদাব-নমস্কার দেয় না, বসতে বলে না, এমনকি কথাও বলতে চায় না।

ইদানীং তিনি গভীরভাবে খেয়াল করছেন, ফেসবুকেও তাঁর রিচ কমে গেছে। কখনো কোনো লেখা, কোনো ছবি বা কোনো ভিডিও শেয়ার করলে সহজে কেউ লাইক দেয় না, কমেন্ট করে না, শেয়ার তো করেই না। কাউকে মেসেঞ্জারে নক করলে সিন করে না। করলেও রিপ্লাই দেয় না।

অথচ দু-বছর আগেও, যখন তিনি ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন, মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন, ফেসবুকে কোনো পোস্ট দিলে সবাই লাইক দিত, কমেন্ট করত, শেয়ার করত। এক দুর্গোৎসবে মায়ের প্রতিমার একটা ছবি পোস্ট করেছিলেন। হাজার হাজার লাইক, কমেন্ট এবং শত শত শেয়ার হয়েছিল। এলাকার লোকজন নানা প্রয়োজনে তাকে মেসেঞ্জারে নক করত। একবার তো এক তরুণী বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেছিল। মেসেঞ্জারে কল দিয়ে বলেছিল, তিনি একা কীভাবে থাকেন? এই বয়সে তো তাঁর একজন সঙ্গীর প্রয়োজন। তিনি রাজি থাকলে তাঁর জীবনসঙ্গী হতে তরুণীর আপত্তি নেই। তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এখন তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করছেন সত্যি তাঁর একজন সঙ্গিনীর প্রয়োজন। একা আর ভালো লাগছে না, কোনোভাবেই সময় কাটছে না। কেউ একজন থাকলে তাঁর সঙ্গে সুখে-শান্তিতে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। কদিন আগে ফেসবুকে মধ্যবয়সী এক সুন্দরীর ছবি দেখে খুব মনে ধরেছিল। মেসেঞ্জারে নক করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই, আপনি সেই বুড়া খাটাশটা না? এই বয়সে মেয়েদের ইনবক্সে কী কাজ? এখনো শখ মেটেনি?

এমন ব্যবহারে তিনি একেবারে তব্দা মেরে গিয়েছিলেন। কখনো ভাবতেই পারেননি কেউ তাঁকে এভাবে অপমান করতে পারে, এই ভাষায় কথা বলতে পারে। তিনি ছিলেন এই শহরের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। পৌর মেয়র, পরিষদের চেয়ারম্যান, এমনকি ডিসি-এসপিও তাঁকে জমাখরচ দিয়ে চলত। ছেলেরা এখন ব্যবসার হাল ধরেছে, তিনি সম্পূর্ণ অবসরে। এ-শহরে তো নয়ই, গোটা দেশেও তার বয়সী কেউ আছে কি না সন্দেহ। দেশের মানুষের গড় আয়ুু বাহাত্তর বছর, অথচ তার বয়স একশ সাতাশ। নজিরবিহীন আয়ু। তিনি তিন শতাব্দীর মানুষ। উনিশ শতক দেখেছেন, বিশ শতক দেখেছেন, 888sport cricket BPL rate শতকও দেখছেন। বঙ্গভঙ্গ দেখেছেন, প্রথম বিশ^যুদ্ধ দেখেছেন, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখেছেন, ভারতভাগ দেখেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধও দেখেছেন। গান্ধীকে দেখেছেন, জিন্নাহকে দেখেছেন, নেহরুকে দেখেছেন, মুজিবকে তো দেখেছেনই। প্রথম বিশ^যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল 888sport cricket BPL rate। তখনো বিয়ে করেননি। করতেন, যদি না ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈনিক হিসেবে যোগ দিতেন। যুদ্ধের ভয়ংকর বিভীষিকা দেখেছেন। মৃত্যুকে দেখেছেন কাছ থেকে। বোমারু বিমান থেকে নিক্ষিপ্ত বোমার আঘাত থেকে অল্পের জন্য যেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন, সেদিনই জীবনে প্রথমবারের মতো তাঁর মনে ঢোকে মৃত্যুচিন্তা। মৃত্যু কী? মানুষ কেন মরে? মানুষ কি মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে পারে না? দীর্ঘজীবন কি লাভ করতে পারে না? অবশ্যই পারে। শাস্ত্রে সেই প্রমাণ আছে। ক্ষণজীবী মার্কেণ্ডেয় তো বাবা ভোলানাথের বরে চিরজীবী হয়েছিলেন। দেবব্রত ভীষ্ম তো পিতা শান্তনুর কাছ থেকে ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন। পুরাকালে চিরজীবী বা দীর্ঘজীবী হওয়ার বর লাভ সম্ভব হলে এই কালে কেন হবে না?

চিরজীবী হওয়ার বাসনায় সেদিনই তিনি ব্যারাক ত্যাগ করলেন গোপনে। ব্রহ্মচারীর মতো ঘুরতে লাগলেন ভারতবর্ষের পথে পথে। কৈশোরে তিনি শুনেছিলেন, এই ভূভারতে এমন সব মুনি-ঋষি আছেন, যোগবলে যাঁরা মৃত্যুকে এড়িয়ে যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছেন। রোগব্যাধি তাঁদের ধারেকাছে আসে না। তাঁকেও করতে হবে সেই যোগসাধনা, লাভ করতে হবে অমরত্ব।

কত জনপদ, কত অরণ্য, কত শহর-বন্দর ঘুরলেন। কত খাল, কত বিল, কত নদী আর কত পাহাড়-পর্বত পাড়ি দিলেন, অথচ কোথাও পেলেন না তেমন মুনি-ঋষির দেখা। ঘুরতে ঘুরতে একদিন কাশীধামে গিয়ে পেয়ে গেলেন এক ঋষির দেখা। গভীর অরণ্যে, এক স্রোতস্বিনী নদীর তীরে তাঁর আশ্রম। দুর্বাশা মুনির মতো তাঁর রাগ। রুষ্ট হলে যে-কোনো সময় যে কাউকে অভিশাপ দিয়ে ভস্ম করে দিতে পারেন। আবার তুষ্ট হলে যে কাউকে দিতে পারেন অমরত্ব বা ইচ্ছামৃত্যুর বর। কিন্তু তাঁকে তুষ্ট করা বড় কঠিন। কৈলাসজয়ের চেয়েও কঠিন। যত কঠিনই হোক, ঋর্ষিকে তিনি তুষ্ট করবেনই – এই তাঁর পণ। লেগে গেলেন ঋষির পদসেবায়। বহু দিন সেবাযত্নের পর ঋষির মন গলল। প্রীতচিত্তে বললেন, বলো বাছা, তুমি কী বর চাও?

পরেশ বললেন, গুরুবর, আমি অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাই। আমাকে অমরত্বের বর দিন।

ঋষি হাসলেন, এ হয় না বাছা। মৃত্যু সৃষ্টিচক্রের নিয়ম। এই নিয়ম উল্লঙ্ঘনের সাধ্য আমার নেই। তুমি অন্য কোনো বর চাও। আমি তোমাকে অন্য যে-কোনো বর দিতে রাজি।

আমি আর কোনো বর চাই না গুরুবর।

বড় চিন্তায় পড়ে গেলেন ঋষি। এত দিন তিনি শিষ্যের এত সেবাযত্ন নিয়েছেন, খালি হাতে তো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না, বর তো একটা কিছু দিতেই হবে। ভেবেচিন্তে বললেন, এই ক্ষমতা আছে কেবল মহাদেবের। ও নমঃ শিবায়ঃ! তুমি যদি কঠোর তপ করে তাঁকে তুষ্ট করতে পারো, তবে তোমাকে তিনি দর্শন দেবেন। তখন তুমি যে বর চাও তিনি তোমাকে তা-ই দেবেন।

ঋষির পরামর্শে পরেশ রওনা হলেন বাগমতী নদীর তীরে পশুপতি মন্দিরের উদ্দেশে। ঋর্ষি বলেছেন, এই মন্দিরের আশপাশে কোনো নিভৃত স্থানে এক পায়ে দাঁড়িয়ে কায়মনোবাক্যে অহর্নিশ মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপলে প্রকট হবেন মহাদেব। যে-কোনো রূপে তিনি প্রকট হতে পারেন। স্ববেশে কিংবা সন্ন্যাসীর বেশে। পরেশ যেন তাঁকে চিনতে ভুল না করে। মন্দিরের অদূরে বিশাল এক পর্বতচূড়ায় উঠে পরেশ শুরু করলেন মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের জপ : ‘ওঁ ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্/ উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মুক্ষীয় মাহমৃতাৎ।’ টানা একশ ছিয়াশি দিন মন্ত্র জপলেন, অথচ প্রকট হলেন না মহাদেব। তাই বলে পরেশ নিরাশ হলেন না। বাবা ভোলানাথ অবশ্যই প্রকট হবেন। যুগে যুগে প্রকট হয়েছেন। শাস্ত্রে প্রমাণ আছে। শাস্ত্রের কথা মিথ্যা হতে পারে না। ঠিকমতো তপ করলে তিনি সদয় না হয়ে পারবেন না। অতএব নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে তপ।

চালিয়ে যেতে লাগলেন পরেশ। তখন ঘোর বর্ষাকাল। চারদিক জলে থইথই। এক বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যায় জীর্ণ কুটিরে বসে তিনি চোখ বুজে মন্ত্র জপছিলেন। সহসা শুনতে পেলেন অচেনা কণ্ঠস্বর, জয় বাবা ভোলানাথ! বম বম ভোলানাথ! পরেশ ভাবলেন, এই বুঝি মহাদেব প্রকট হলেন! তিনি চোখ খুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। মহাদেবের দিব্য জ্যোতির ঝলকে যদি তার চোখ ঝলসে যায়! ভয়ে ভয়ে এক চোখ খুলে দেখলেন জীর্ণ বসনের এক সন্ন্যাসী দাঁড়িয়ে কুটিরের দুয়ারে। সন্ন্যাসীকে প্রণিপাত করে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বললেন, মহাদেব! আপনি অবশেষে প্রকট হলেন। হে ভোলানাথ, আপনার ভক্তবাৎসল্যের কথা আমি গুরুমুখে অনেক শুনেছি। আজ সচক্ষে দেখলাম। আমি জানতাম আপনি এই অধম ভক্তের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারবেন না।

সন্ন্যাসী বললেন, থাম মূর্খ কোথাকার! আমি মহাদেব নই, আমি তাঁর নগণ্য ভক্ত মাত্র। আমিও তোর মতো বহু বছর তপ করেছি, মন্ত্র জপতে জপতে জিহ্বায় ঘা করে ফেলেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি, মহাদেব দর্শন দেননি। জানিস না এখন কলিকাল? মহাদেব সত্য যুগে প্রকট হতেন। ত্রেতা আর দ্বাপর যুগেও প্রকট হয়েছেন। কলিকালে তিনি প্রকট হবেন না। মন্ত্র জপতে জপতে জীবনপাত করলেও কোনো লাভ হবে না, দর্শন দেবেন না মহেশ^র। তুই বাড়ি ফিরে যা বাছা। জন্মিলে মরিতে হইবে, এটাই নিয়তি। এই নিয়তিচক্র খণ্ডানো যায় না।

সন্ন্যাসীর কথা তাঁর বিশ^াস হলো না। নিশ্চয়ই প্রকট হবেন মহাদেব। ভক্তের ডাকে ভগবান সাড়া না দিয়ে পারেন না। শাস্ত্র প্রমাণ। হয়তো তাঁর তপে কোনো ত্রুটি আছে, কোনো খামতি আছে। সন্ন্যাসীকে খাইয়ে-দাইয়ে বিদায় করে তিনি আবার শুরু করলেন মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের জপ। মাসাধিক কাল অহর্নিশ মন্ত্র জপের পর আবার দেখা দিলেন সেই সন্ন্যাসী। বসন আগের চেয়েও জীর্ণ, শরীর আগের চেয়েও শীর্ণ। বললেন, বাছা, তোকে আমি আগেই বলেছি কোনো লাভ হবে না, কলিকালে মহাদেব প্রকট হবেন না। নিজেকে অহেতুক কষ্ট দিচ্ছিস কেন? বরং আমাকে বল কী তোর মনের বাসনা। কী বর চাস তুই?

পরেশের মনে ধন্ধ জাগে। এই সন্ন্যাসী ছদ্মবেশী ভোলানাথ নন তো? অসম্ভব নয়। কালে কালে তিনি তো ছদ্মবেশে দেখা দিয়েছেন। শাস্ত্র প্রমাণ। হয়তো ছদ্মবেশে এসে তাঁকে পরীক্ষা করছেন। নইলে বর চাইতে বলছেন কেন? মনের ভাবনা প্রকাশ না করে পরেশ বললেন, ঋষিবর, আমি অমরত্বের বর চাই।

অসম্ভব! সন্ন্যাসী বললেন, এই বর দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। তবে তোকে আমি দীর্ঘজীবনের বর দিতে পারি, ইচ্ছামৃত্যুর বর দিতে পারি। তুই দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে পারবি, আবার যখন ইচ্ছা মরেও যেতে পারবি।

পরেশ খানিক সময় নিয়ে বললেন, তবে তাই দিন ঋষিবর।

কিন্তু শর্ত আছে।

বলুন কী শর্ত। আমি যে-কোনো শর্ত মানতে রাজি।

বারো বছর আমার পদসেবা করতে হবে।

সন্ন্যাসীকে পরেশ আবার প্রণিপাত করে বললেন, বারো বছর কেন, প্রয়োজনে চল্লিশ বছর সেবা করব। তবু আমি দীর্ঘজীবী হতে চাই, ঋষিবর।

দেখা যাক। বললেন সন্ন্যাসী।

পরেশ শুরু করলেন সন্ন্যাসীর সেবা। টানা সাতশো চুরাশি দিন সেবা করার পর একদিন মৃত্যুশয্যায় শায়িত হলেন সন্ন্যাসী। মৃত্যুর আগে পরেশকে দিলেন দীর্ঘজীবী হওয়ার বর। দীর্ঘজীবী হতে হলে কী করা যাবে, কী করা যাবে না, কী খাওয়া যাবে, কী খাওয়া যাবে না – একে একে সব বললেন। তাঁর উপদেশ যথাযথভাবে মান্য করলে বর ফলদায়ক হবে। আর বলে গেলেন একটি ফলের নাম। কাছের জঙ্গলেই আছে সেই দুর্লভ বুনোফল। নিয়মনীতি মেনে পরেশ যদি তিনশো তেষট্টি দিন এই ফল খেয়ে যেতে পারেন, তবেই লাভ করবেন দীর্ঘজীবন। রোগবালাই তাঁকে সহজে ছুঁতে পারবে না।

নিয়মনীতি মেনে পরেশ খেয়ে গেলেন সেই দুর্লভ ফল। সন্ন্যাসীর উপদেশগুলোও যথাযথভাবে মান্য করতে লাগলেন। তাঁর একান্ত বিশ^াস ছিল, বর ফলদায়ক হবে, তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করবেন। অন্তত দুইশো বছর বেঁচে থাকবেন। মৃত্যুর আগে কোনো রোগ-ব্যাধি ছোঁবে না তাকে। দীর্ঘজীবন লাভের জন্য সন্ন্যাসী যেসব উপদেশ দিয়েছিলেন তাঁর মধ্যে ছিল কোনো পশুর মাংস না খাওয়া, যতটা সম্ভব নিরামিষ খাওয়া এবং কোনো সংঘাতে না জড়ানো। সেই কারণে বাকি জীবনে তিনি কোনো পশুর মাংস খাননি। মাছ তাঁর প্রিয়। মাছ ছাড়া এক বেলাও চলে না। নইলে মাছ খাওয়াও ছেড়ে দিতেন। কেবল ভাত-রুটি আর শাকসবজি খেয়ে বেঁচে থাকতেন। আর চিরকাল এড়িয়ে চলেছেন সংঘাত। তাঁর বয়স যখন চুয়াল্লিশ, তখন বেজে ওঠে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের দামামা। তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান খাগড়াছড়ির গহিন অরণ্যে। টানা আট বছর সেখানকার পাহাড়িদের সঙ্গে কাটান। দেশভাগের পর আবার ফেরেন বাড়িতে, মন দেন ব্যবসা-বাণিজ্যে। ভেবেছিলেন যুদ্ধ চিরতরে শেষ হয়েছে, আর কখনো যুদ্ধ লাগবে না দেশে। ক্রমে ব্যবসার পসার হচ্ছিল। কানি কানি জমি কিনছিলেন। কিন্তু বিধি বাম, হঠাৎ একদিন খানসেনারা হানা দিলো দেশে। আবার বেজে উঠল যুদ্ধের সাইরেন। মুহূর্তও দেরি না করে সপরিবারে ইন্ডিয়ায় পাড়ি দিলেন পরেশ। ভেবেছিলেন যুদ্ধের ফাঁকতালে তাঁর সব জায়গাজমি বেদখল হয়ে যাবে, দেশে ফিরে আর কিছুই পাবেন না। ভাগ্য সহায়, কেবল ঘরটি পুড়িয়ে দিয়েছিল খানসেনারা। বাকি সব অক্ষত পেলেন। পরিতৃপ্তির সঙ্গে আগের মতো আবার তিনি ব্যবসায় মন দিলেন।

পরেশবাবুর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল সেই দুর্লভ ফলের গুণে, সন্ন্যাসীর আদেশ যথাযথভাবে মান্য করার ফলে তাঁর শরীরে রোগ-ব্যাধি বাসা বাঁধবে না সহজে। নব্বই বছর পর্যন্ত বাসা বাঁধল না বটে। কিন্তু হঠাৎ একদিন তাঁর বুকে দেখা দিলো প্রচণ্ড ব্যথা। তিনি ঘাবড়ে গেলেন। দ্রুত ডাক্তার ডাকলেন বাড়িতে। কখনো তিনি হাসপাতালে যান না। হাসপাতালে কেবলই মৃত্যুর বিভীষিকা। মনে পড়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার 888sport sign up bonus। তাই অসুখ-বিসুখ হলে বাড়িতে ডাক্তার ডেকে চিকিৎসা নেন। ডাক্তার এসে দেখেটেখে বলল, এ কোনো ছোটখাটো রোগ নয়, এ বড় রোগ। এই রোগের চিকিৎসা তাঁর দ্বারা হবে না। হাসপাতালে নিতে হবে।

কী আর করেন পরেশবাবু, অনিচ্ছ্বা সত্ত্বেও যেতে হলো হাসপাতালে। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার বললেন, হার্টের রোগ। দেশে এই রোগের উন্নত চিকিৎসা নেই, বিদেশে যেতে হবে। সিঙ্গাপুরে এর ভালো চিকিৎসা আছে।

ছেলেরা তাঁকে নিয়ে গেল সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটালে। অভিজ্ঞ ডাক্তার চেকআপ করে বললেন, হার্টে ব্লক। ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে হবে।

ছেলেরা কি আর দেরি করে? বাবার অর্থ-সম্পদের তো কমতি নেই। এই সার্জারি করালে যদি তিনি বেঁচে যান, তবে একবার কেন, প্রয়োজনে দশবার সার্জারি করাবে।

সার্জারি হলো। সত্যি তিনি বেঁচে গেলেন। আগের মতো একেবারে সুস্থ-সবল। ডাক্তার বললেন, তাঁর হার্ট এখনো একেবারে নতুন। একটি শিশুর হার্ট এবং তাঁর হার্টের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

স্বস্তি ফিরল পরেশবাবুর মনে। ভেবেছিলেন এই যাত্রায় যেহেতু বেঁচে গেছেন, সন্ন্যাসীর বরে কুড়ি-পঁচিশ বছরের মধ্যে আর কোনো রোগ-ব্যাধি আসবে না তাঁর ধারেকাছে। অথচ না,  সাতানব্বইয়ে এসে হঠাৎ একদিন ভাঙতে শুরু করল শরীর। শুকিয়ে কঙ্কালের মতো হয়ে যেতে লাগলেন। প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেননি। ভেবেছিলেন বয়সের কারণে এমনটা হচ্ছে। বুড়ো বয়সে শরীর তো যৌবনের মতো থাকে না। কিন্তু হঠাৎ একদিন খেয়াল করলেন, তাঁর প্রস্রাবে খুব জ¦ালাপোড়া এবং প্রস্রাবের রাস্তায় হালকা ব্যথা। এবার তিনি সতর্ক হলেন। এ নিশ্চয়ই কোনো অশনিসংকেত। আবার ছুটে গেলেন সিঙ্গাপুরে। ডাক্তার টেস্ট রিপোর্ট দেখে বললেন, ইউরিন ইনফেকশন হয়েছে। ডায়াবেটিসও আছে।

ডায়াবেটিস কী রোগ, জানতেন না পরেশবাবু। এই রোগ সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না। তাঁর পূর্বপুরুষদের কারো এই রোগ ছিল না। ভেবেছিলেন ডাক্তারের ওষুধে রোগটা সেরে যাবে। কিন্তু ডাক্তার বললেন, অত্যন্ত জটিল রোগ। শরীরে অন্য রোগ ডেকে আনে ডায়াবেটিস। নিয়ম মেনে না চললে নানা জটিলতা দেখা দেবে শরীরে। সেসব জটিলতা একসময় মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে।

মৃত্যু! আঁতকে উঠলেন পরেশবাবু। অসম্ভব ডাক্তার, আমি মরতে পারব না। আমি বেঁচে থাকতে চাই।

একদিন সবাইকে মরতে হবে বাবু।

জানি। আমাকেও মরতে হবে। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি নয়। আমি দীর্ঘজীবনের বর পেয়েছি। নিশ্চিতভাবেই আমি আরো অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকব। প্রাণ ভরে এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ উপভোগ করব, যাতে মৃত্যুকালে কোনো আফসোস না থাকে।

ডাক্তার অভয় দিলেন, ভয়ের কিছু নেই। আজকাল এই রোগের খুব প্রকোপ। নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে, হাঁটাহাঁটি করতে হবে, ভাত-রুটি কম খেতে হবে এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। এসব নিয়ম মানলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে থাকবে।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলে অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে উঠলেন পরেশবাবু। শরীর আগের মতোই ঠিকঠাক, কোথাও কোনো সমস্যা নেই, ডায়াবেটিসও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। তারপর থেকে আর কোনো রোগ-ব্যাধি হানা দেয়নি শরীরে। আগামী
কুড়ি-পঁচিশ বছরে আর হানা দেবে বলে মনে হয় না তার। শরীর নিয়ে তার দুশ্চিন্তা নেই, দুশ্চিন্তা মন নিয়ে। মনে তিনি আগের মতো জোর পান না। নিঃসঙ্গতা এভাবে কুরে কুরে খেলে জোর পাবেন কেমন করে? তিনি বুঝে উঠতে পারেন না সবাই কেন তাঁকে অবহেলা করছে, কেন অযত্ন করছে, কেন অপাঙ্ক্তেয় ভাবছে, কেন আড়ালে-আবডালে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে।

অবশেষে একদিন আবিষ্কার করতে পারলেন সেই কারণ। বাড়ির কাছেই পৌরপার্ক। অর্ধেক জায়গা তাঁরই দেওয়া। সকাল-বিকাল তিনি হাঁটেন সেখানে। শুক্রবার ছিল সেদিন। অপরাহ্ণে পার্কে হাঁটছিলেন তিনি। প্রেমিক-প্রেমিকারা বেঞ্চিতে, গাছগাছালি আর ঝোপের আড়ালে বসে অভিসার করছিল। হাঁটতে হাঁটতে তাঁর চোখ গেল এক যুগলের দিকে। ছেলেটির একটা হাত মেয়েটির কাঁধে। মেয়েটি বাদামের খোসা ছড়াচ্ছে আর একটা একটা বাদাম তুলে দিচ্ছে ছেলেটির মুখে। তিনি চোখ সরাতে পারছিলেন না। মনে পড়ে গিয়েছিল যৌবনের কথা। আহা, একদিন এভাবেই অমলাকে নিয়ে বাড়ির ধারে নদীর পাড়ে বসে তিনি সূর্যাস্ত দেখতেন, হাঁটতেন, সুখ-দুঃখের গল্প করতেন। বড় লক্ষ্মী 888sport promo code ছিল অমলা। অমলার কারণেই এত উন্নতি হয়েছে তাঁর। টাকাপয়সা, ঘর-গেরস্তি সব সামলে রাখত। কখনো একটা পয়সা অপচয় করত না। আজ অমলা নেই। বিয়াল্লিশ বছর আগে তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে যমের হাত ধরে। অমলা বেঁচে থাকলে তাঁকে এতটা নিঃসঙ্গ হতে হতো না, এতটা অযত্ন-অবহেলা সইতে হতো না। মনে হচ্ছিল ছেলেটি তিনি, আর মেয়েটি অমলা।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি যখন যুগলকে অতিক্রম করে খানিক সামনে গেলেন, তখন ছেলেটি বলে উঠল, বুড়াটা এত বছর বেঁচে আছে কেন? বেঁচে থাকতে তার লজ্জা করে না? খাটাশ কোথাকার!

তিনি থমকে দাঁড়ালেন। ভেবেছিলেন একবার পেছনে ফিরে তাকাবেন। ছেলে ও মেয়েটিকে আরেক নজর দেখবেন। না, তাকালেন না। দ্রুতপায়ে হাঁটতে লাগলেন। অন্য পথ ধরে ফিরে গেলেন বাড়িতে। বাড়ির ঘাটায় গিয়ে দেখলেন কাঁঠালতলায় ঝরে পড়ে আছে বিস্তর পাতা। ওপরে তাকিয়ে দেখলেন ডালে ডালে গজাচ্ছে কচি কচি নতুন পাতা। পুকুরপাড়ের বড় আমগাছটা শুকিয়ে গেছে। তারই নিচে বেড়ে উঠছে আরেকটা আমগাছ।

ঘরে গিয়ে তিনি শুয়ে পড়লেন। ক্ষুধা লেগেছিল খুব; কিন্তু এক গ্লাস জল ছাড়া তিনি কিছুই খেলেন না। খেতে কেউ তাঁকে ডাকলও না। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। দুঃস্বপ্নের তাড়নায় ঘুম ভেঙে গেল মধ্যরাতে। রুমের দরজাটা বন্ধ করে নিঃশব্দে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। হাঁটতে লাগলেন অজানার উদ্দেশে। হাঁটতে হাঁটতে শহর পেরিয়ে গ্রামের রাস্তায় উঠলেন। অন্ধকারে বুঝতে পারছিলেন না কোন পথ কোন দিকে গেছে। একটা সময় টের পেলেন পায়ের নিচে পাথর। বুঝতে পারলেন তিনি বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরের রেলরাস্তায় এসে পড়েছেন। তিনি লাইনের ওপর বসলেন। পা দুটি ছড়িয়ে দিলেন। তারপর চোখ বন্ধ করে দু-হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে প্রসন্নচিত্তে বললেন, হে মৃত্যু, আসবেই যদি, তবে এখুনি এসো। আমি তোমাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত।

খুব ক্লান্ত লাগছিল তার। কখনো হাঁটাহাঁটি বেশি হয়ে গেলে এমন ক্লান্ত লাগে। হাত বাড়িয়ে তিনি বালিশ খুঁজছিলেন। সহসা মনে পড়ে গেল তিনি তো এখন ঘরে নেই, বালিশ পাবেন কোথায়? লাইনে মাথা রেখে তিনি শুয়ে পড়লেন। জোনাকিরা উড়ছে চারদিকে। হাজার হাজার জোনাকি। চোখ বন্ধ করলেন তিনি। বাতাসের শিঁ-শিঁ শব্দ তার কানে বাঁশরির মতো বাজছিল। তিনি 888sport app download for android করছিলেন অমলার মুখ। মনে হচ্ছিল অমলা তার আশপাশে কোথাও দাঁড়িয়ে। একটু পর দেখা হবে তার সঙ্গে। হঠাৎ জোনাকির ঝাঁকে দেখতে পেলেন অমলার মুখ। সেই মুখে প্রসন্নের হাসি। সেই মুখ থেকে তার চোখ সরে না।

আর তখন ভেসে এলো ট্রেনের হুইসেলের দূরাগত শব্দ। মৃত্যুর দেবতা মৃত্যুরজ্জুকে ট্রেনরূপে পাঠিয়ে দিয়েছেন বুঝি। রজ্জুর দিব্য আলোয় হারিয়ে গেল জোনাকির দল। পরেশবাবু হাসলেন প্রসন্নের হাসি। অন্ধকারের বুক চিরে দ্রুতগামী ট্রেন ঝকাঝক শব্দে ছুটে গেল গন্তব্যের দিকে।