আহমেদ মাওলা
অকাল প্রয়াণ নয়, তবু মহাশ্বেতা দেবীর (১৯২৬-২০১৬) মৃত্যু 888sport live footballের বড় ক্ষতি ও শূন্যতা তৈরি করবে নিশ্চয়। আধুনিক 888sport live footballের
প্রথাগত ধারণার বাইরে, শ্যামল অরণ্য, আদিবাসী মুন্ডাদের জীবনসংগ্রামকে 888sport alternative linkের কাহিনি-চরিত্রে রূপায়িত করে তিনি 888sport live footballের ভূগোলই পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তাঁর সোনালি কলমে ফুটে উঠেছিল অরণ্যের চাপাপড়া কণ্ঠস্বর। অধিকারবঞ্চিত আদিবাসীদের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য-লাঞ্ছিত জীবনের দ্রোহ এবং প্রতিরোধ-সংগ্রামের ইতিবৃত্ত। তাঁর গল্প-888sport alternative linkের বিষয়-আশয়, চরিত্র ও ঘটনাবিন্যাস মাটিবর্তী দলিত, পতিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। এভাবেই মহাশ্বেতা দেবী হয়ে উঠেছেন অন্য ঘরানার লেখক।
তাঁর জীবনজিজ্ঞাসা, দৃষ্টিকোণ এবং পর্যবেক্ষণক্ষমতা তাঁকে সমকালীন অন্য লেখকদের থেকে আলাদা করেছে। তিনি শুধু যে মুন্ডা আদিবাসীদের নিয়ে লিখেছেন তাই নয়, তাদের সঙ্গে জীবনযাপন করার সৎসাহসই মহাশ্বেতা দেবীকে ‘অরণ্যজননী’তে পরিণত করেছে। রাঁচি, রামগড়, সিংভূম ও পালামো, এসব অপেক্ষাকৃত দুর্গম অঞ্চলে, বিশেষত মুন্ডা 888sport promo codeদের অন্নহীন, বস্ত্রহীন, মানবেতর জীবন তিনি অবলোকন করেছেন। সভ্যতার তলদেশে একঝাঁক কালো অন্ধকারের মতো কলঙ্ক-তিল হয়ে আছে আদিবাসী অরণ্য888sport promo codeদের অশ্রম্ন ও শ্রীহীন মুখ।
মহাশ্বেতা দেবী জন্মেছিলেন ১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি। ছোটবেলা কেটেছে 888sport appয়। দেশবিভাগের পর চলে যান কলকাতা। বিশ্বভারতী থেকে ইংরেজিতে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। বাবা ছিলেন বিখ্যাত কলেস্নালগোষ্ঠীর কবি ও লেখক মনীশ ঘটক, মা ধরিত্রী দেবী। কাকা বিখ্যাত live chat 888sportকার ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবী বিয়ে করেছিলেন গণনাট্য সংঘের নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যকে। তাঁদের একমাত্র পুত্র ছিলেন খ্যাতিমান কবি নবারুণ ভট্টাচার্য। ১৯৬৪ সালে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে, পরে সাংবাদিকতা, সমাজসেবা, উপজাতীয়দের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জড়িয়ে ঘুরেছেন বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে। দলিত লোধা ও শবর সম্প্রদায়ের সুখ-দুঃখ নিয়ে লিখেছেন গল্প-888sport alternative link। উপজাতি, আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। তাঁর উলেস্নখযোগ্য 888sport live footballকর্ম হচ্ছে – হাজার চুরাশীর মা, সংঘর্ষ, রুদালী, গাঙ্গর, অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর, তিতুমীর, আঁধার মানিক, ঝাঁসীর রাণী, গণেশ মহিমা, নীলছবি, বেনেবৌ, শালগিরার ডাকে, কবি বন্ধ্যঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু, আসামী, স্তন্যদায়িনীসহ শতাধিক গ্রন্থ। তাঁর লেখার মধ্যে পাওয়া যায় দেশজ আখ্যান অনুসন্ধান, ইতিহাস ও রাজনীতির ভূমি থেকে কাহিনি উদ্ভাবনা, প্রতিবাদী চরিত্রের রূপায়ণ। 888sport live footballে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন সম্মানজনক ‘ম্যাগসাসাই’ 888sport app download bd। ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মশ্রী’, ‘জ্ঞানপীঠ’, ‘888sport live football আকাদেমি’ 888sport app download bdসহ অজস্র পদক-888sport app download bdে ভূষিত হন তিনি।
হাজার চুরাশীর মা 888sport alternative link নকশাল আন্দোলনের পটভূমিতে রচিত। এ-আন্দোলনের কর্মীরা পথেঘাটে বীভৎসভাবে নিহত হচ্ছিল তখন। এ-ঘটনা নিয়ে লেখা হয় হাজার চুরাশীর মা। তিনি আদিবাসী ও অরণ্যজীবীদের নিয়ে নিরন্তর ভেবেছেন। ইন্ডিয়া গভর্নমেন্ট কাগজে-কলমে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার দিলেও তাদের ল্যান্ডের ওপর সত্যিকার রাইটস প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষিত মানুষরা অরণ্যবাসীদের চিরকাল অজ্ঞ, অশিক্ষিত বলে অবজ্ঞা করেছে। কিন্তু অরণ্যবাসীরাই জানে কোন গাছ রোপণ করলে কী হয়, শ্বাসকষ্টের ওষুধ কোন গাছ, এসব তারা জানে।
মুন্ডা বিদ্রোহের ইতিহাস সুরেশ সিং-রচিত বীরসা মুন্ডা অ্যান্ড হিজ মুভমেন্ট ১৮৭৪-১৯০১ থেকে মহাশ্বেতা দেবী অরণ্যের অধিকার (১৯৭৭) 888sport alternative linkটি রচনা করেন। বীরসাইত মুন্ডাদের অভ্যুত্থান নিয়ে কাহিনির কাঠামো গড়ে উঠলেও 888sport alternative linkে আরো অনেক প্রসঙ্গ এসে যায়। সুগানা মুন্ডার ঘরে, করমি মুন্ডানির গর্ভে ১৮৭৫ সালে বীরসা নামে এক শিশুর জন্ম হয়। ক্রমে সে শিশু বড় হয়, ছাবিবশটি বসন্ত অতিক্রম করেনি, সে-ই হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহের নায়ক। মুন্ডাদের কাছে সে বীরসা ভগবান, ব্রিটিশদের কাছে ছিল বিদ্রোহী, ভারতবাসীর কাছে একজন স্বাধীনতাকামী নেতা। ইতিহাসের এই বর্ণময় চরিত্রটিকেই মহাশ্বেতা দেবী আকর্ষণীয় করে তুললেন।
ব্রিটিশ সরকার মনে করত, মুন্ডাদের বিদ্রোহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। আসলে বিদ্রোহটা ছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে। সেই শোষক বিদেশি নয়, ভারতের ভিন্নভাষী, ভিন্ন বর্গের মানুষ – বাঙালি, বিহারি, রাজপুত, মাড়োয়ারি, পাঞ্জাবি ব্যবসায়ী ও জমির মালিকরা – আদিবাসীদের ভাষায় ‘দিকু’। ‘দিকু’রা আদিবাসীদের কষ্টে ফেলে, সুদের জালে আটকে তাদের ফসল নিয়ে গিয়ে তাদের নিঃস্ব ও ভূমিদাসে পরিণত করত। খাদ্য, বাসস্থান হারিয়ে, শোষণের পীড়নে মুন্ডারা তীর, টাঙি, বর্শা হাতে নিরুপায় হয়ে প্রশাসনের বন্দুকের গুলির সামনে এসে দাঁড়ায়। মহাশ্বেতা দেবী অরণ্যের অধিকার 888sport alternative linkে সেই দ্রোহের চিত্রটি জীবন্ত করে তুলেছেন। যেমন – ‘মুন্ডার জীবনে ভাত একটা স্বপ্ন হয়ে থাকে।… কোন না কোনভাবে ভাত বীরসার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। বেশিরভাগ সময়েই বীরসার যে উদ্ধত ঘোষণা মুন্ডা শুধা ‘ঘাটো’ খাবে কেন? কেন সে ‘দিকুদের’ মত ভাত খাবে না।’
এ-বাক্যের মধ্য দিয়ে অভাবী মুন্ডা সম্প্রদায়ের প্রতি শুধু মমত্বই প্রকাশ পায়নি, মুন্ডাজীবনের গভীর বেদনাও প্রকাশ পেয়েছে। পেটভরা ভাত, গায়ে মাখার তেল, পরনের জন্য কাপড় – এটাই তাদের জীবনের সর্বশেষ আকাঙক্ষা। ভাত-কাপড় না পেলে যে-কোনো মুন্ডাই ভীতু আর কমজোরি হয়ে যায়। মহাশ্বেতার লেখায় তা চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। মুন্ডাদের কাছে বীরসা ছিল ‘ভগবান’স্বরূপ। ভগবানের দীক্ষা নিয়ে তারা হয়েছিল ‘বীরসাইত’। তার অলৌকিক ক্ষমতায় আস্থা রেখেই তারা সাহস করেছিল বিদ্রোহী হতে। ‘দিকু’দের অবিচার আর সাহেবদের গুলির মুখে দাঁড়িয়েছিল সাহস করে। মুন্ডাদের আদি দেবতা সিং বোঙা এবং প্রাচীন পূজাপদ্ধতি থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ, অভাবের সময় নিরুপায় হয়ে তারা মিশনারিতে গিয়ে খ্রিষ্টান হয়, পায় খাবার, বস্ত্র; আবার ফসল উঠলে তারা স্বধর্মে ফিরে আসে। এটা তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়েরই অংশ। বীরসার মনে একটা প্রশ্ন এসেছিল, ‘দিকু’দের ভগবান ‘ভালো’, তাই তাদের অবস্থাও ‘ভালো’ হয়। তবে কি এই ‘ভালো’ হওয়ার মধ্যে ধর্মের কোনো রহস্য আছে? এই ধর্ম কি বদলে নেওয়া যায়? তরুণ বীরসা মনের অস্থিরতা দূর করার জন্য বর্ণহিন্দুর সেবাইতের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। পইতে, চন্দন, তুলসী পূজা করল। রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণ সব শুনল, কিছু-কিছু পড়ল। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে যায় একই রকম। নিজের সমাজে ফিরে এসে বীরসা সিং বোঙার পূজা আর করল না। নিজেকে ঘোষণা করল নতুন ধর্মের প্রবক্তা হিসেবে। নতুন ধর্মে সাদা পরিধেয় বস্ত্র। জলসিঞ্চন, চন্দন, হলুদ এবং উপবীতের স্থান হলো। বীরসা মুন্ডাসমাজে প্রচলিত উৎসবগুলোতেও পরিবর্তন আনে। হোলিতে, জাপি, নাচ, মাগে, পাইক, নাচ, মহুয়া পান, যৌনসম্পর্কের ক্ষেত্রেও সংযম চলে আসে। বিদ্রোহী নেতা ধর্মীয় গুরুতে পরিণত হয় এবং অলৌকিকত্বের অতিকথনে মিশে যেতে থাকে বীরসা। যেমন বীরসার বাণী – গ্রামে বসন্ত লাগলে নিমপাতা সিজে খা। যার গায়ে চেচক ধরেছে সাদা তুলসীর রস, আদার রস মিশিয়ে খা। কলেরায় জল ফুটিয়ে খা। মহাশ্বেতা বীরসার চিত্তে তীব্র অরণ্য-চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বীরসার মনে অরণ্যকে ‘জননী’রূপে দেখা। ‘দিকু’দের অত্যাচারে ‘অরণ্যজননী’ অশুচি হয়েছে। নিঃস্ব, শুষ্কস্তনা অরণ্যজননীর কান্না বীরসা শুনছে –
– হা আমি অশুচ রে!
– শুচ করে দিব মা গো!
– হা দেখ দিকুতে সাহেবে মিলে মোরে বারবার অশুচ করে!
– শুচ করে দিব তোকে!
বীরসার ভগবান হয়ে ওঠার পেছনে এই অরণ্য-চেতনাটিকে লেখক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এভাবে সে জিতেন্দ্রিয় পুরুষে পরিণত হয়। তার প্রতি আকর্ষণ অনেক মুন্ডা যুবতীর। কিন্তু সে নিজেকে উৎসর্গ করেছে ‘উলগুলানে’র কাজে। আকর্ষণ নিয়েও সে থাকে নিরাসক্ত। তাই বীরসাকে শুদ্ধ চরিত্র, জিতেন্দ্রিয়, আত্মত্যাগী, আদর্শ পুরুষে রূপ দিয়েছেন লেখক। কেননা অরণ্যের অধিকার 888sport alternative linkে বীরসার নেতৃত্বে পরিচালিত বিদ্রোহ বা ‘উলগুলান’ দেখানোই তার উদ্দেশ্য। আদিবাসী জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে অরণ্য। অরণ্য উচ্ছেদ করা মানে আদিবাসীদের জীবন বিপন্ন করা। অরণ্যবাসীদের আহার এবং আবাস – দুই জোগায় বনভূমি। সেই বনভূমি ‘দিকু’রা কেড়ে নিচ্ছে, বনভূমিতে তাদের অসিস্ত আর থাকছে না – বনভূমির কান্না, আদিবাসীদেরই কান্না। আদিবাসীরা ফিরে চায় অরণ্যের অধিকার। এজন্যই বীরসা মুন্ডাকে মহাশ্বেতা দেবী ভগবান মহিমা দান করে ঈশ্বরোপম করে চিত্রিত করেছেন। তার দ্রোহ ও নেতৃত্বে সঞ্জীবিত করে দিয়েছেন চিরকালের মহিমা।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.