অর্ধেক জীবন : আত্মবিশেস্নষণ ও এক ব্যতিক্রমী পাঠ

৭ সেপ্টেম্বর, সালটা ১৯৩৪, পূর্ববঙ্গের সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোতে তখন চলছে আসন্ন দুর্গোৎসবের পরিকল্পনা। সেই শিউলিস্নাত প্রত্যুষে হঠাৎই প্রসববেদনা ওঠে মীরানাম্নী এক ষোড়শী তরুণীর। স্বল্পসময়ের মধ্যেই জন্ম নেয় এক শীর্ণকায় পুত্রসমত্মান। শিশুমৃত্যুর সেই প্রবল সম্ভাবনাকালেও আঁতুড়ঘরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পৃথিবীতে স্থান করে নিল জন্ম-জেদি সেই শিশুপুত্রটি। সমগ্র আমগাঁ (আমগ্রাম, পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার এক অখ্যাত গ্রাম) জুড়ে তখন উৎসবের মেজাজ … বেঁচে গেছে কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম সমত্মান। কিছুকাল পরে শোনা গেল শিশুটির নাম নাকি রাখা হয়েছে সুনীল …

সারাবিশ্ব তখন তোলপাড়, একদিকে বিশ্বরাজনীতিতে হিটলারের অভ্যুত্থান, অন্যদিকে ভারত জুড়ে গান্ধীজির হরিজন আন্দোলন। নিদ্রামগ্ন ভারতবাসী সবে শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। চট্টগ্রামে ব্রিটিশদের অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অপরাধে সদ্য ফাঁসি হয়ে গেছে সূর্য সেনের। এমনি এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাঁর জন্ম। তবু সেই প্রত্যন্ত আমগ্রামের গঙ্গোপাধ্যায়বাড়ির ওপর এসব কোনো ঘটনার আঁচই সেদিন পড়েনি। সুনীল নামের সেই শিশুটি ক্রমেই বেড়ে উঠতে থাকে পারিবারিক দারিদ্রে্যর পরিম-লে। তবে পিতার চাকরিসূত্রে তাঁর শৈশবে গ্রাম ও শহর উভয় জীবনের প্রভাব পড়ে। প্রাত্যহিক জিনিসপত্রের সহজলভ্যের কারণে কাশীতে গিয়ে থাকার সময় সেখানকার কথকদের মুখে মুখে রামায়ণের কাহিনি শুনে বালকটি একেক সময়ে বিভোর হয়ে যায়। আবার মায়ের জন্য লাইব্রেরি থেকে বই এনে, নিজেই প্রায় বুভুক্ষের মতো গিলে ফেলে সেসব গ্রন্থ। কে জানত, সেদিনের সেই ক্ষুধার্ত বালকটিই পরবর্তী কয়েক দশক ধরে নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলা কাব্যজগৎকে? ভেঙে দেবে বাংলা গদ্যের সনাতনী রীতিকে? হয়ে উঠবে এক প্রতিষ্ঠানের নামান্তর। হ্যাঁ, সেদিনের সেই বালকই পরবর্তীকালের কবি ও গদ্যকার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ইট-কাঠ-পাথরে নয়, বরং কয়েকটি অসি-আঁচড়েই যিনি গড়ে তুলতে পেরেছিলেন নিজস্ব এক সুদূরপ্রসারী 888sport live football-প্রতিষ্ঠান।

১৯৫৩ সালে কয়েকজন যুবক (শক্তি চট্টোপাধ্যায়, আনন্দ বাগচি, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, দীপক মজুমদার প্রমুখ) কৃত্তিবাস নামক এক পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে বাংলা 888sport app download apkর ‘বিশুদ্ধতা’র তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে তার প্রায়োগিক দিকের ওপর গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন। 888sport app download apkর ভাষা বা শব্দ নিয়ে কোনোরকম ছুঁতমার্গ তাঁদের ছিল না। আর এই গোষ্ঠীর প্রায় অঘোষিত নেতা ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সম্পাদনাতেই এই পত্রিকার আত্মপ্রকাশ। আজীবন তিনি একজন সাধকের মতো পালন করে গেছেন এই দায়িত্ব। একনিষ্ঠ প্রেমিকের মতো ভালোবেসে গেছেন এই পত্রিকাকে।

888sport app download apk তাঁর কাছে ‘অনেকটা স্বপ্নের মতন, জাগ্রত কল্পনার চেয়ে যা অনেক বেশি বিমূর্ত।’১ আসলে তাঁর এক অহংকারের দিকও ছিল আজীবন। 888sport app download apkর জন্য তাঁকে হাত পাকাতে হয়েছিল গদ্যরচনায়। কৃত্তিবাসের মতো একটি 888sport app download apk-পত্রিকা প্রকাশের জন্য যে-পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, বিশ শতকের মধ্যভাগে সেই বিপুল পরিমাণ অর্থ একদল স্বপ্নপ্রেমিক অথচ বেকার যুবকের কাছে ছিল না। আর ঠিক সে-কারণেই তাঁকে বেছে নিতে হয়েছিল রম্যরচনা কিংবা 888sport alternative linkের পথ। এ যেন প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতেই, প্রেমিকাকে ছেড়ে চাকরিসূত্রে বিদেশযাত্রা! এভাবেই তাঁর গদ্যরচনার সূত্রপাত। এরপর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কখনো। দেশ কিংবা আনন্দবাজার পত্রিকার পাতার পর পাতা ভরিয়ে তুলেছেন তাঁর চমকপ্রদ গদ্যের জাদুতে। পাঠকের দাবিতেই প্রকাশ পেয়েছে তাঁর একের পর এক 888sport alternative link।

এই মহীরুহসদৃশ মানুষটি তাঁর জীবনের টুকরো টুকরো 888sport sign up bonus নিয়ে রচনা করলেন অর্ধেক জীবন নামে এক অসাধারণ 888sport alternative link। ধারাবাহিকভাবে দেশ পত্রিকায় 888sport alternative linkটি প্রকাশিত হয়। এরপর ২০০২ সালের জানুয়ারিতে 888sport alternative linkটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় আনন্দ পাবলিশার্স থেকে। এটিকে আত্মজীবনী তকমা দিলে হয়তো তাঁর প্রতি কিছুটা অবিচার করা হবে। কারণ আত্মজীবনীর মতো রচনাটি শুধু লেখকের জীবনের ঘটনার বর্ণনা মাত্র নয়। আত্মজীবনের বিভিন্ন ঘটনা তিনি ব্যাখ্যা করেছেন বাসত্মব ও কল্পনার আলোছায়ায়, যা থেকে উঠে এসেছে তাঁর জীবনবোধ তথা জীবনসত্য। আর সেই জীবনসত্যই প্রভাব ফেলেছে বাংলার হাজার হাজার পাঠকচিত্তে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই 888sport alternative linkটির মুখবন্ধে লিখছেন, ‘… এটাকে ঠিক আত্মজীবনীও বলা যায় না। নিজের অন্তর্জীবনের কথা বলা যায় না কিছুতেই, অনেক সময় মনে হয় তা অকিঞ্চিতকর, অন্যকে জানাবার মতো নয়, আমার পারিবারিক কাহিনীও যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত, বরং সমসাময়িক 888sport sign up bonusকথাই প্রাধান্য পেয়েছে, কাছাকাছি ইতিহাসের পটভূমিকা এবং উলেস্নখযোগ্য ঘটনাবলী।’২

 

এক

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে এ-গ্রন্থের নাম নিয়ে। লেখকের জন্ম থেকে গ্রন্থটি প্রকাশের সময় পর্যন্ত জীবনের টুকরো ঘটনাই যদি বইটির প্রতিপাদ্য হবে তবে নামের ক্ষেত্রে কেন অর্ধেক জীবন? আসলে ‘অর্ধেক’ শব্দটিকে ঠিক চেনা ছকে ফেলে বিচার করলে চলবে না। নিজের সমগ্র জীবনের ঘটনা কি আদৌ লেখা যায়! জীবনগ্রন্থের সমসত্ম পাতা কি উন্মুক্ত করে দেওয়া যায় পাঠকের সামনে! বোধহয় নয়। লেখকের মতে, ‘পুরো জীবনের কথা কেউ কখনও লিখতে পেরেছেন কি না আমি জানি না …।’৩  গ্রন্থ-নামের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বইয়ের একেবারে শুরুতেই শেক্সপিয়রের হ্যামলেটের একটি উক্তি :

Queen : O Hamlet, thou hast cleft my heart in twain,

Hamlet : O, throw away the worser part of it,

And live the purer with the other half.

একজন মানুষ হিসেবে লেখকও চেয়েছেন জীবনের এই ‘purer’ অংশটুকুকেই পাঠকের সামনে আনতে। তাঁর জীবনের বাকি অংশকে ‘impure’ বলে দাবি করব – এমন ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে ‘pure’ অর্থে যদি আমরা বিশুদ্ধ ধরে নিই, তবে এই অংশে বিশুদ্ধতা-অবিশুদ্ধতার প্রশ্ন কি ঔপন্যাসিক নিজেই তুলে দেননি?

 

দুই

রচনাটির সারা শরীরে আছে সমকালীন নানা ঘটনা। তবে সেসব ঘটনাপুঞ্জের নীরস বর্ণনার পরিবর্তে ঘটনাগুলোকে 888sport live footballের মোড়কে মুড়ে পাঠকের সামনে নিয়ে এলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। 888sport alternative linkের চতুর্থ পরিচ্ছেদে তিনি লেনিন, স্ট্যালিন, রুজভেল্ট সম্পর্কে প্রচুর অজানা তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু সেসব তথ্যের ভেতর 888sport live footballরসও আছে যথেষ্ট।

আবার ১৯৪১ সালে, ২২ শ্রাবণ দিনটিতে রবিঠাকুরের মৃত্যুযাত্রার যে-বিবরণ তিনি দিচ্ছেন, তা এককথায় অনবদ্য। বিশ্বকবির মৃত্যুতে সেদিন দুপুরে যে-জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, বিবেকানন্দ রোডের একটি বাড়ির ছাদ থেকে তা প্রত্যক্ষ করেছিল সুনীল নামের সাত বছর বয়সী এক বালক। কেন এই জনজোয়ার, সেদিন উপলব্ধি করতে পারেনি সে। কারণ রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে তার আরো পাঁচ-ছ বছর সময় লেগেছিল। তবে 888sport alternative linkের এই স্থানে লেখকের সততা ও স্বীকারোক্তি পাঠককে বিমোহিত করে। তিনি লিখছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের মরদেহের শেষ যাত্রার বিস্মৃত বর্ণনা আমার লেখা উচিত নয়। সত্যিই কি সেই দিনটির কথা আমার মনে আছে? পরে ওই দিনের বর্ণনা কতবার পড়েছি, ছবি দেখেছি অবনীন্দ্রনাথের আঁকা, অরোরা ফিল্ম কোম্পানী মিছিলের একটি তথ্যচিত্র তুলেছিল, সেটাও দেখার সুযোগ ঘটেছে, সেইসব মিলিয়ে মিশিয়ে আমার লুপ্ত 888sport sign up bonusর মধ্যে কি ঢুকিয়ে দিয়েছি একটি চিত্র? … এই 888sport sign up bonus সিনথেটিক।’৪

কাহিনি-বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি মূলত ব্যবহার করেছেন আত্মকথনরীতি (first-person narrative); কিন্তু কখনো কখনো তিনি হয়ে উঠেছেন কাহিনিতলের বাইরের কোনো চরিত্র। তখন তিনিই সর্বজ্ঞকথক। ষাটোর্ধ্ব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যবেক্ষণ করছেন বাল্য, কৈশোর কিংবা যৌবনের সেই দামাল সুনীলকে। জীবনের এই পরিশীলিত পর্যায়ে পৌঁছে তিনি জীবনবোধের উন্মোচন ঘটাচ্ছেন এক ভিন্নতর মাপকাঠিতে। এ-দৃষ্টান্ত বাংলা 888sport alternative link জগতে বিরল।

১৯৩৪ সাল, অর্থাৎ লেখকের জন্মের বছরটি এক অদ্ভুত নিপুণতায় এঁকেছেন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগে বাঙালি ফুঁসে উঠেছে ইংরেজ রাজশক্তির বিরুদ্ধে। সুভাষচন্দ্র বসু চিকিৎসার কারণে ভিয়েনায়। নরমপন্থি-চরমপন্থি বিরোধ তখন তুঙ্গে। যারা সশস্ত্র বিপ্লবের পক্ষপাতী, গান্ধীজি তাদের ‘টেররিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন। একে একে ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে সূর্য সেনের মতো বিপ্লবীদের। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বাতাবরণেও কলকাতার সংবাদপত্রগুলোতে জমে উঠেছে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক সন্দেশের মৌতাত। আনন্দবাজারের চোদ্দ পাতার সংস্করণ ওলটালেই চোখে পড়ে ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলার সুদীর্ঘ আখ্যান। একজন সন্ন্যাসী এসে আচমকাই দাবি করেন, তিনিই নাকি বাংলার ভাওয়াল জমিদারির মৃত মেজকুমার। পরবর্তীকালে এই নিয়ে live chat 888sport নির্মিত হয়েছিল। বলা বাহুল্য, এটাই বাঙালির চিরকালীন প্রকৃতি। যে-সংবাদের ভেতর বিনামূল্যে বা সস্তায় কিছু রোমাঞ্চ ও যৌনগন্ধ মিশে থাকে সেদিকেই তার বরাবরের আগ্রহ। সেই সংবাদের সত্যতা নির্ণয় বাঙালির উদ্দেশ্য নয়। বরং তা থেকে মুখরোচক উপাদানটুকু আহরণ করতে পারলেই বাঙালির শখের গোয়েন্দাগিরির সাধ মেটে।

অন্যদিকে বিশ্বরাজনীতিতে তখন মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে সর্বগ্রাসী এক রাষ্ট্রনায়ক। অ্যাডলফ হিটলার। জার্মানিতে শুরু হয়ে গেছে ইহুদি-বিতাড়ন। দলে দলে তারা আসতে আরম্ভ করেছে আমেরিকায়। সেই ইহুদি-শরণার্থীদের পুনর্বাসনের অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আমেরিকায় কয়েকটি কনসার্টে বেহালা বাজাচ্ছেন আইনস্টাইন। এভাবেই ইতিহাসের সঙ্গে রোমান্টিকতার মেলবন্ধনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক অভিনব ভঙ্গিতে উপস্থাপন করলেন 888sport alternative linkটির আখ্যান।

 

তিন

ঔপন্যাসিক 888sport alternative linkটিতে মূলত আত্মবিশেস্নষণের দিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। এক তৃতীয় নয়ন মারফত দেখে নিতে চেয়েছেন নিজের বাল্য, কৈশোর ও যৌবনকে। জীবনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে নিজের ঠিক-ভুল বিচার নয়, বাসত্মবের প্রেক্ষাপটে জীবনসত্যের উন্মোচনই সেখানে প্রধান। তবে কোনো কোনো অংশে কিছু স্বীকারোক্তিও চোখে পড়ে।

নিখুঁতভাবে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়ির দুর্গাপুজোর বর্ণনা দিয়েছেন। জলধর নামক এক কুমোর তাঁদের বাড়ির দুর্গাপ্রতিমাটি নির্মাণ করছে সেবার। সেই জলধর যেন এক জাত888sport live chatী। লেখকের কথায়, ‘প্রতিমা নির্মাণের শেষপর্বে চক্ষুদানের সময় তার 888sport live chatীসত্তাটি বিশেষভাবে বোঝা যায়। … দুর্গাপ্রতিমার চোখ দুটি আঁকার আগে জলধর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, যেন ধ্যানমগ্ন, তারপর জাপানিরা যেমনভাবে হাইকু রচনা করে, সেভাবেই সে হঠাৎ তুলির একটানে নিখুঁত দুটি চক্ষু সৃষ্টি করে। হয়তো একেই বলে প্রেরণা।’৫ একমাত্র সুনীলই পারেন চক্ষুদান আর 888sport app download apk রচনাকে এভাবে মিলিয়ে-মিশিয়ে একাকার করে দিতে। আসলে দুই-ই তো একপ্রকার সাধনা। একজন 888sport live chatীই বোধহয় পারেন অপর এক 888sport live chatীমনকে এভাবে নিরীক্ষণ করতে।

দুর্গাপূজো সূত্রেই এসেছে বলিপ্রথার প্রসঙ্গ। দশমীর দিন একটি পাঁঠাকে ভালো করে স্নান করিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলির উদ্দেশ্যে। এমন সময় হঠাৎই বালক সুনীল উপলব্ধি করে এই পাঁঠাটিকেই সে বেশ একমাস ধরে লালন করেছে, পুকুরে-মাঠে-জঙ্গলে তাকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে, ঘাস খাইয়েছে। তার সেই ছাগলছানাটিকে এখন ঠেলে দেওয়া হবে মৃত্যুর দিকে! এই বোধ লেখককে প্রবলভাবে ব্যথিত করেছিল। এক গাছতলায় বসে বালকটি তার পোষ্য ছাগলছানাটির জন্য চোখের জল ফেলেছিল। লেখকের মতে, ‘সম্ভবত সেইদিন থেকেই আমার পিউবার্টির শুরু। যৌনচেতনা না জাগলে মানুষ যেমন অন্য কারও জন্য চুম্বকটান অনুভব করে না, তেমনই অন্য কারও জন্য চোখের জলও আসে না।’৬ জীবনকে দেখা ও তাকে এই মাত্রায় বিশেস্নষণ করার জন্য যে অন্তর্দর্শনের প্রয়োজন, তা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভেতর পূর্ণাঙ্গরূপেই ছিল। আর সেই অন্তর্দর্শনই তাঁকে একজন সার্থক 888sport live chatী করে তুলেছে।

১৯৪৩ সালে (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) বাংলার বুকে যে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল তার চিত্র লেখক তুলে ধরেছেন এই রচনায়। এই সময় বাংলার ঘরে ঘরে যে প্রায় অনাহার অর্থাৎ অর্ধাহার চলেছিল, তাদেরই এক প্রতিনিধিস্বরূপ লেখক তুলে ধরেন নিজেদের পরিবারের কথা। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের অনাহারে পড়তে হয়নি, কোনও এক বিস্ময়কর কারণে সে বছর আলু সস্তা ছিল। আলু খেয়েও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। … ভাতের হাঁড়িতে সেদ্ধ করা হত আলু। সকালে আলু, দুপুরে আলু, বিকেলে আলু, রাত্তিরে আলু।’৭ সেই সময়ে প্রায়ই গরম ভাতের স্বপ্ন দেখতেন লেখক। এরই মধ্যে একদিন স্কুলের হেডমাস্টারের ছেলেটি গল্প শোনায়, একথালা ভাতের মধ্যে একটি আরশোলা পড়ায় সেই সম্পূর্ণ ভাতের থালাটি নাকি সে ফেলে দিয়েছে। এই গল্প বলে সে পকেট থেকে একটি লাঠি-লজেন্স বের করে চুষতে থাকে। সম্ভবত এই ঘটনারই প্রভাব পড়েছিল তাঁর রচিত বন্দী জেগে আছো কাব্যগ্রন্থের ‘কেউ কথা রাখেনি’ 888sport app download apkয়।

একটাও রয়্যাল গুলি কিনতে পারিনি কখনও!

লাঠি লজেন্স দেখিয়ে দেখিয়ে চুষেছে লস্কর বাড়ির ছেলেরা।

এভাবেই নিজের ঘটনাবহুল জীবন থেকে টুকরো টুকরো উপাদান সংগ্রহ করে তিনি রচনা করেছেন তাঁর আজীবনের 888sport live footballসম্ভার।

 

চার

888sport promo codeশরীরের পাঠ নিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সময় লেগে গিয়েছিল বেশ কয়েক বছর। তাঁর সব বন্ধু যখন 888sport promo codeশরীর-সংক্রান্ত যে-কোনো আলোচনায় বেশ সাবলীল, তখনো তিনি স্পর্শ করেননি কোনো 888sport promo codeশরীর! মাঝেমধ্যে এক-আধটা ঝটিতি চুম্বন ও হাতের স্পর্শ ছাড়া যে-কোনো কিছুই বড্ড দূরগামী তখনো। অপর্ণানাম্নী কোনো এক তরুণীর সঙ্গে তখন তাঁর প্রেম। তবে বেশ কয়েক বছর আগে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে যায় তাঁর জীবনে। ক্লাস নাইনে পড়াকালীন একবার সকল বন্ধু মিলে সরস্বতী পূজো করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তারা। ওই প্রথম পূজোর কাজে বাড়ির বাইরে রাত কাটানোর অনুমতি পায় কিশোর লেখক। একটু বেশি রাতের দিকে সবাই যখন বাড়ি গেছে খাওয়া-দাওয়া করতে, ঠিক তখনই সে নিরীক্ষণ করতে থাকে সর্বাঙ্গীণসুন্দর সরস্বতী প্রতিমাটি। দেখতে দেখতে হঠাৎই সর্বাঙ্গে উষ্ণতা অনুভব করে সে। প্রতিমাটির দিকে ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে সে হাত রাখে দেবীর বুকে। তিনি লিখছেন, ‘জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচ যুগ শোভিত মুক্তাহারে … সেই কুচযুগে আমার আঙুল, আমার শরীর আরো রোমাঞ্চিত হল, কান দুটিতে আগুনের আঁচ। আমি প্রতিমার ওষ্ঠ চুম্বন করলাম।’৮ বিশুদ্ধ কৈশোর থেকে উদ্গম ঘটছে দ্বন্দ্বময় যৌবনের। লেখকের কলম যখন অণুবীক্ষণ যন্ত্র হয়ে ওঠে, একমাত্র তখনই তাঁর কলম চুইয়ে জন্ম নেয় এমন অনুভবভেদ্য রচনা। শিশুবয়স থেকেই মা-বাবার মধ্যে তিনি কখনো ঠাকুর-দেবতা নিয়ে ছুঁতমার্গ দেখেননি। সম্ভবত ধর্ম সম্পর্কে পারিবারিক উদারতার কারণেই তাঁর জীবনে এই রকম একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার ঠিক-ভুল বিচার আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে লেখক যে সহজ-সারল্যে এ-ঘটনার বর্ণনা করেছেন তা প্রশংসার যোগ্য। ধর্ম নিয়ে কোনোদিনই বিশেষ সচেতন ছিলেন না। তবে যৌবনে পৃথিবীর প্রধান প্রধান কয়েকটি ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে তাঁর মধ্যে একপ্রকার নাসিত্মকতার জন্ম নেয়। একবার একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস না করে কারও ক্ষতি করিনি, আর বঙ্কিম স্ত্রী শিক্ষার বিরোধিতা করে দেশের ক্ষতি করে গেছেন। তিনি মুসলমানদেরও বিরোধিতা করেছেন।’৯ অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস না করেও যে হৃদয়ের উত্তরণ সম্ভব, এ-কথা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। আর সরস্বতীকে চুম্বনের মধ্য দিয়েই এই বিশ্বাসের বীজ বপন করেছিলেন কিশোর সুনীল। সরস্বতীর দেবীত্বের মোড়ক খসিয়ে তাঁকে করে তুলতে চেয়েছিলেন এক পরিপূর্ণ 888sport promo codeর সমার্থক। তিনি লিখছেন, ‘না, আমার কোনো অলৌকিক অনুভূতি হয়নি, পিগম্যালিয়ানের মতন সেই মাটির মূর্তিকে জীবন্তও মনে হয়নি, মাটিরই প্রতিমা, একটি 888sport promo code, সম্পূর্ণ 888sport promo code।’১০

 

পাঁচ

বন্ধু শব্দটি যেন আজীবন সুনীলকে ঘিরে রেখেছিল এক মায়াময় আবর্তে। বন্ধুদের প্রতি টান বোঝাতে তিনি বারবার সমকামিতার প্রসঙ্গ এনেছেন। অর্থাৎ প্রেমিকার প্রতি যে অপ্রতিহত আকর্ষণ, তা কখনো কম পড়েনি বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে। বরং তাঁর ক্ষেত্রে সেই আকর্ষণ ছিল আরো প্রবল। সারাজীবনে বেশকিছু দুর্মূল্য বন্ধুর সাহচর্য পেয়েছিলেন সুনীল। তাঁর অজস্র গল্প, 888sport alternative link ও 888sport app download apkয় তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কৃত্তিবাস পত্রিকার মূল ভিত্তিই ছিল কয়েকজন যুবকের পরিমাপহীন বন্ধুতা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দ বাগচি, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, দীপক মজুমদার, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনন্দ গুহঠাকুরতা (বুডঢা), শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় – এই কয়েকজন যুবকের মিলিত স্বপ্নের ফলে জন্ম নিয়েছিল একটি 888sport app download apk-পত্রিকা, কৃত্তিবাস। বাংলা 888sport app download apkয় ভাষা প্রয়োগের ছুঁতমার্গকে সমূলে উৎপাটিত করতে এই যুবকরা সচেষ্ট হন। 888sport alternative linkটিতে সুনীল নিজেই বলছেন, ‘কৃত্তিবাস পত্রিকার সুনামের চেয়ে দুর্নামই ছিল বেশি, আমরা সেটাই খুব উপভোগ করতাম। আমাদের ঝোঁক ছিল ভাঙচুর করার দিকে, প্রথা ভাঙা, ছন্দ ভাঙা, নৈতিকতা ভাঙা, মূল্যবোধ ভাঙা। শব্দ নির্বাচনে বেপরোয়া …।’১১ 888sport app download apkর ক্ষেত্রে এই নবজাগরণ সেদিন যুগের দাবিতেই অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। আর এই নবজাগরণের পুরোধা ছিলেন সুনীল নামে এক সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ যুবক।

গোটা অর্ধেক জীবন 888sport alternative linkটি জুড়েই ইতিউতি ছড়িয়ে আছে তাঁর বন্ধুরা। শক্তি-সুনীলের কেমিস্ট্রিকে বাঙালি 888sport live footballপ্রেমীরা চিরকাল সমাদর করেছেন। 888sport alternative linkে শক্তি সম্পর্কে তিনি বলছেন, ‘শক্তিকে তো বেশ কয়েকবার চড়চাপড় মেরেও ধাতস্থ করতে হয়েছে, শক্তি একমাত্র আমাকেই কিছুটা ভয় পেত।’১২ এই উচ্চারণ থেকেই তাঁদের বন্ধুতার গভীরতা আঁচ করা যায়। পরে নানা কারণে বিশেষত হাংরি আন্দোলনের সময় তাঁরা একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে সরে যান। কিন্তু এই দূরত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

তখনকার বন্ধুত্বের যে-গভীরতা, তা এ-যুগে বসে অনুধাবন করা সহজ নয়। বন্ধুর জন্য প্রাণ দিয়ে দেওয়ার কথা আমাদের কাছে আজ ইউটোপিয়া হলেও সেদিন তা অনেক বন্ধুই পারত। আমরা যতই আধুনিকতার পথে পা বাড়াচ্ছি, যতই প্রগাঢ় হচ্ছে আমাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বোধ, ততই আমরা বন্ধুতাগুলো ফেলে ফেলে যাচ্ছি আমাদের অতীতে।

 

ছয়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজস্ব রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও মতাদর্শ প্রসঙ্গে অত্যন্ত খোলাখুলি আলোচনা করেছেন এই গ্রন্থে। সারাজীবনে কখনো তিনি কোনো একটি মতকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। তবে কলেজজীবনে তিনি কিছুদিনের জন্য হলেও কমিউনিস্টপন্থি স্টুডেন্ট ফেডারেশনে যোগ দিয়েছিলেন। সেই দলের হয়ে ভোটের সময় তাঁকে কিছু বেআইনি কাজও করতে হয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর উগ্রপন্থাকে তিনি কোনোদিনই সমর্থন করেননি। এছাড়া রাজনৈতিক দাদাদের ‘মুখে এক মনে এক’ প্রবৃত্তি সুনীলকে আরো রাজনীতিবিমুখ করে তুলেছিল। তাঁর মতো একজন একনিষ্ঠ 888sport live footballিকের পক্ষে কোনোদিনই কলম বিক্রি করা সম্ভব ছিল না। 888sport live footballে রাজনীতির চোখরাঙানিকে কোনোকালেই মেনে নেননি। 888sport alternative linkটির এক স্থানে তিনি লিখছেন, ‘দাদা শ্রেণীর নেতারা যখন 888sport app download apk লেখা বিষয়ে উপদেশ ও খবরদারি শুরু করলেন, তখনই বুঝে গেলাম, এঁদের সংস্রবে আমি বেশিদিন টিকতে পারব না!’১৩

রাজনৈতিক নেতাদের হঠকারিতা এবং এর ফলে একাধিক তরুণের নির্বিচারে প্রাণদান, এ-ঘটনা বাংলায় নতুন নয়। সত্তরের দশক জুড়ে সমগ্র বাংলায় যে-বামপন্থি আন্দোলনের ঝড় উঠেছিল, তাতে প্রচুর উজ্জ্বল ছেলেমেয়ে শুধুমাত্র আদর্শ পালনের উদ্দেশ্যে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিল। কিন্তু কতটা সংগত তাদের এই মৃত্যু। এক একটা জীবন, এক একটা সম্ভাবনা। আজ এই পঞ্চাশ বছর পর সেই মৃত্যুর অভিঘাত ঠিক কী এবং কতটা? আদৌ কি কেউ মনে রেখেছে তাদের! এই আন্দোলনে যতটা আবেগ মিশে ছিল, ঠিক ততটাই কি পরিকল্পনা ছিল আন্দোলনকারীদের মধ্যে? আর সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কোনো সার্থক বিপ্লব কি সম্ভব!

সুনীলও এই আন্দোলনকারীদের পুরোপুরি সমর্থন করতে পারেননি, তবে আদর্শবান তরুণ-তরুণীদের প্রতি তাঁর আশা ছিল প্রবল। 888sport alternative linkে তিনি নকশাল আন্দোলন প্রসঙ্গে লিখছেন, ‘একশো কিংবা এক হাজার বছর আগেকার কোনো ধর্মগুরুর বাণী কিংবা উপদেশ যেমন অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তাঁর অনুগামীরা, সেই রকম অন্য দেশের অন্য কালের কোনও রাজনৈতিক তাত্ত্বিকের আক্ষরিক অনুসরণ কি সঙ্গত? ইতিহাসে এ রকম ভুল দেখা গেছে বারবার। দেশ ও কালভেদে বিপ্লবের আঙ্গিকও পৃথক হতে বাধ্য।’১৪

এ-প্রসঙ্গে 888sport alternative linkের একটি ঘটনার উলেস্নখ করা সংগত মনে করছি। একদিন সন্ধের পর কলেজ স্ট্রিট চত্বরে আচমকা গোলাগুলি চলতে থাকে। আর একটু অসাবধান হলেই একটি গুলি সেদিন লেখককে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিতে পারত। কিন্তু গুলিটা তাঁর না লেগে, লেগেছিল পাশের একজন ছেলের কাঁধে। এই সময়কার উপলব্ধি থেকেই তিনি নিজেকে আজীবন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নামক সার্কাস থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছিলেন। তিনি লিখছেন, ‘… ছেলেটিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে মনে হল, যদি গুলিটা আমার বুকে লাগত, আমি প্রাণ দিতাম, সেই প্রাণদান কীসের জন্য? তা দেশের কোন উপকারে লাগত? এ তো নিতান্তই নির্বোধের মতো মৃত্যু। এই ছেলেটিও কি বাঁচবে? কিংবা এর ডান হাতটাই যদি অকেজো হয়ে যায়, তাতেই বা কোন আদর্শ জয়ী হবে? … না। এভাবে প্রাণ দিতে আমি রাজি নই। এই পথ আমার নয়।’১৫

 

সাত

দেশভাগ নিয়ে আজীবন এক চাপা যন্ত্রণা বহন করেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এই দেশকে আমৃত্যু তিনি সম্পূর্ণরূপে নিজের দেশ মনে করতে পারেননি। বারবার ফিরে যেতে চেয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে 888sport apps) সেই ছোট্ট গ্রামে। বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের সময় তিনি ভীষণভাবে যেতে চেয়েছিলেন সেখানে; কিন্তু পারেননি। কারণ তাঁর জন্মভূমি তখন বিদেশ! 888sport alternative linkটির একাধিক জায়গায় তিনি এ নিয়ে খেদ প্রকাশ করেছেন। এক স্থানে তিনি লিখছেন, ‘সে তো অন্য দেশ। মানুষের জন্মভূমি আর স্বদেশ সবসময় এক থাকে না। আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমার জন্মভূমি বিদেশ হয়ে গেছে।’১৬ অন্তরের বেদনা নিঃসৃত এই শব্দগুলো পাঠকহৃদয়কে তোলপাড় করে। গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে বাষ্প।

তাঁর 888sport live footballেও বিভিন্ন সময়ে দেশভাগের ছায়া পড়েছে। অর্জুন 888sport alternative linkে রিফিউজি পরিবারগুলোর জীবনসংগ্রামের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। দমদম অঞ্চলের যে-বাগানবাড়িতে তিনি ভাড়া ছিলেন দীর্ঘদিন, তার পাশেই ছিল উদ্বাস্ত্ত-কলোনি। সেখান থেকেই তিনি অর্জুন 888sport alternative linkের রিফিউজি কলোনির ধারণা পান। পরবর্তীকালে পূর্ব পশ্চিম 888sport alternative linkেও সেই প্রভাব লক্ষ করা যায়। তবে পূর্ব পশ্চিম 888sport alternative linkেই প্রতাপের মা সুহাসিনী দেবীর মৃত্যুবর্ণনায় যেন সুনীলের নিজের বাবার মৃত্যুসময়ের আভাস পাওয়া যায়। দুই বৃদ্ধই মৃত্যুকালে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন নিজের দেশে, নিজের মাটিতে। অবশ্য এতটা ক্ষুদ্র পরিসরে ভাবা হয়তো ঠিক নয়। যেসব দুর্ভাগা মানুষ বাধ্য হয়ে নিজের দেশ ছেড়ে এসে প্রবাসে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁদের সবার মৃত্যুকালীন ইচ্ছেই বোধহয় এক। প্রতাপের মা এই 888sport alternative linkে তাদের সবার যন্ত্রণার দোসর।

আট

সুনীলের ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম এসেছে বহুবার। 888sport promo codeরা বারবার তাঁর কাছে ধরা দিয়েছে নানাভাবে, নানারূপে। যৌবনে অপর্ণানাম্নী কোনো এক যুবতীর সঙ্গে তাঁর প্রেম থাকলেও নানা কারণে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। তবে প্রেমের পরিণতি পরিণয়, এ-কথা তিনি বিশ্বাস করতেন না। অর্ধেক জীবনে একাধিকবার নানাভাবে এ-কথা প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি লিখছেন, ‘888sport promo codeর কাছে লাবণ্য ও মাধুর্যের আমি প্রার্থী, ছিটেফোঁটা পাওয়াই তো যথেষ্ট। তাছাড়া বিয়ে মানেই তো নিজস্ব সংসার, সে দায়িত্ব নেবার কি আমি যোগ্য?’১৭

আর ঠিক এ-কারণেই বোধহয় আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (যুক্তরাষ্ট্র) থাকাকালীন মার্গারিটনাম্নী সেই বিদেশিনীর সঙ্গে তাঁর এক পবিত্র বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। তাঁর সঙ্গে মার্গারিটের সম্পর্কের সহজতা ও সারল্য পাঠককে মুগ্ধ করে।

এরপর লেখকের তেত্রিশ বছর বয়সে দেখা হয় স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়নাম্নী এক তরুণীর সঙ্গে। সেই অচেনা তরুণীটি কৃত্তিবাসের একটি 888sport free bet সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সরাসরি পৌঁছে যান লেখকের বাড়িতে। পরবর্তীকালে বোঝা যায় পত্রিকার সম্পাদক ও কবিকে স্বচক্ষে একবার অন্তত দেখার জন্য তাঁর এই প্রয়াস। বলা বাহুল্য, স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই পরবর্তীকালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের সফল দাম্পত্য জীবন সম্বন্ধে কমবেশি সকলেই জ্ঞাত। তাঁদের প্রেমের গল্পটি সার্থকভাবে বর্ণিত হয়েছে। স্বাতী সম্পর্কে তিনি 888sport alternative linkে বলছেন, ‘এ মেয়েটি অন্য কোনও পুরুষের ঘরণী হয়ে চলে যাবে, এ একেবারে অসম্ভব, পৃথিবী উল্টে গেলেও তা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।’১৮

এতকিছুর পরও তিনি এই অর্ধেক জীবন 888sport alternative linkে 888sport promo code-সম্পর্কিত অনেক কথাই যেন বললেন না! তাঁর সর্বাধিক আলোচিত ‘নীরা’ সিরিজের 888sport app download apkগুলো নিয়ে কিংবা ‘নীরা’কে নিয়ে একটি শব্দও তিনি উচ্চারণ করলেন না এ-গ্রন্থে। খানিকটা সচেতনভাবেই যেন তিনি এড়িয়ে গেলে পুরো বিষয়টি। নীরা কে? এই অকিঞ্চিৎকর প্রশ্ন আমার নেই। তবে নীরা কি শুধুই কল্পনা? নাকি বাসত্মবে কোনো 888sport promo codeর সান্নিধ্যই তাঁকে নীরা চরিত্র নির্মাণে প্রেরণা জুগিয়েছে? কোথায় পেলেন তিনি এমন এক পবিত্র 888sport promo codeর ধারণা? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি এই 888sport alternative linkে দেননি। তাই আমরাও না-হয় নীরাকে শুধুমাত্র 888sport app download apkর নীরা হিসেবেই দেখি। বাসত্মবে যদি আদৌ কোনো নীরা থেকে থাকে, তবে সে একান্তই সুনীলের ব্যক্তিগত ও আপন। সেই নীরাকে তিনি আর কারো সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাননি।

 

নয়

এতকিছুর পরও এই 888sport alternative linkের শেষে পাঠকহৃদয়ে যেন কিছুটা অতৃপ্তি থেকে যায়। 888sport alternative linkের শেষ পরিচ্ছেদটি ঠিক সমাপ্তির দাবি রাখে না। ঔপন্যাসিক কেন এমন মাঝপথে 888sport alternative link থামিয়ে দিলেন – এ-প্রশ্ন পাঠকমনে ঘোরাঘুরি করে। 888sport alternative linkটিতে যেমন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় অনেক কথা বললেন, তেমনি এড়িয়ে গেলেন অনেক বিষয়। 888sport alternative linkে যত অক্ষর তিনি তাঁর বন্ধুদের জন্য ব্যয় করেছেন, তাঁর একনিষ্ঠ ঘরণী সম্পর্কে তাঁর একভাগও খরচ করেননি। তাঁর বিবাহ-পরবর্তী যাপনের বর্ণনায় তিনি যেন অতিশয় কৃপণ। তাঁর এমন এক দুষ্প্রাপ্য বন্ধু মার্গারিটের সম্বন্ধে লিখতে গিয়েও তিনি যেন দু-একটি বাক্যে দায় সারলেন। যে-888sport promo codeকে নিয়ে তিনি আজীবন 888sport app download apk লিখেছেন, যে-888sport promo codeরা হয়ে উঠেছে তাঁর 888sport alternative link রচনার প্রেরণা, সেই 888sport promo code সম্পর্কে এই প্রকার উদাসীনতা তাঁর কাছ থেকে আশা করা যায় না। এমনকি নিজের মাকে নিয়েও তিনি খুব বেশিকিছু লেখেননি 888sport alternative linkে।

এ-888sport alternative link আসলে একজন 888sport live chatীর আত্মকথন। শুধু একজন সমালোচকের দৃষ্টিতে একজন লেখকের text-কে বিশেস্নষণ করলে, হয়তো তাঁর 888sport live chatের প্রতি কিছুটা অবিচার করা হয়। 888sport live chatমাত্রই ঐচ্ছিক। সেখানে 888sport live chatীর পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। তিনি যদি নিজের জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কোনো বিষয় সর্বসমক্ষে আনতে না চান, তবে 888sport live chatীর সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এটুকু স্থিতিস্থাপকতা 888sport live chatী আমাদের থেকে আশা করতেই পারেন।

অর্ধেক জীবন 888sport alternative linkের সত্মরে সত্মরে রয়েছে জীবনবোধের পাঠ। সুনীল তাঁর ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতায় জীবনের সারসত্যকে তুলে ধরেছেন। এমন অনুপম জীবনবোধ খুব কম 888sport live footballিকের ক্ষেত্রে মেলে। এ-গ্রন্থের পাতায় পাতায় রয়েছে তাঁর স্বীকারোক্তি। ‘হাংরি’ আন্দোলনের সময় মলয় রায়চৌধুরীকে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি আদালতে মিথ্যে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তবে তিনি বিশ্বাস করতেন, বন্ধুর ভাইকে (মলয় রায়চৌধুরীর দাদা সমীর রায়চৌধুরী ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু) বাঁচানোর জন্য এই মিথ্যেভাষণ অপরাধ নয়।

২৩ অক্টোবর, ২০১২ সাল, দুর্গাষ্টমীর পুণ্য তিথিতে, পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে তিনি যাত্রা করলেন ‘দিকশূন্যপুরের’ উদ্দেশে। বাংলা 888sport live footballে সমাপ্ত হলো একটি অধ্যায়ের। এক বিরাট ছন্দপতন ঘটল বাংলা 888sport app download apkজগতে। মহীরুহসদৃশ এই মানুষটি চিরকালের জন্য ছেড়ে গেলেন তাঁর প্রাণের 888sport app download apkকে। ‘কেউ কথা রাখে না’, স্বরচিত এই উক্তিকে খ-ন করে তিনি আমৃত্যু 888sport app download apkর পাশে থেকেছেন। কথা রেখেছেন তিনি। আবার এই 888sport app download apkকে দেওয়া কথা রাখতেই হাত পাকিয়েছেন গদ্যরচনায়। এ যেন এক অমোঘ স্বার্থত্যাগ। এক একটি সার্থক 888sport app download apk জন্মাতে লেগে যায় প্রায় একজীবন, এ-কথা তিনি হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করেছিলেন। আর তাই বোধহয় লিখতে পেরেছিলেন :

শুধু 888sport app download apkর জন্য এই

শুধু 888sport app download apkর জন্য কিছু খেলা

শুধু 888sport app download apkর জন্য একা হিম সন্ধ্যে বেলা

ভুবন পেরিয়ে আসা

… শুধু 888sport app download apkর জন্য, আরো দীর্ঘদিন

বেঁচে থাকতে লোভ হয়।

মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা।

শুধু 888sport app download apkর জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি …।

 

তথ্যসূত্র

১.    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ২০০২, অর্ধেক জীবন, পঞ্চম সং, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, পৃ ১০৪।

২.    তদেব, পৃ ৭।

৩.   তদেব, পৃ ৭।

৪.    তদেব, পৃ ২৬।

৫.    তদেব, পৃ ২৩।

৬.   তদেব, পৃ ২৫।

৭.    তদেব, পৃ ৩০।

৮.   তদেব, পৃ ৯১।

৯.   রফিক উল ইসলাম-সম্পাদিত, ২০১৩, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কথাবার্তা সংগ্রহ
, সং নেই, প্রতিভাস, কলকাতা, পৃ ২৬।

১০. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ২০০২, অর্ধেক জীবন, পঞ্চম সং, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা, পৃ ৯১।

১১. তদেব, পৃ ১৬০।

১২. তদেব, পৃ ১৬২।

১৩. তদেব, পৃ ১৩৩।

১৪. তদেব, পৃ ৩০২।

১৫. তদেব, পৃ ১৩৪।

১৬. তদেব, পৃ ১২১।

১৭. তদেব, পৃ ২৯৫।

১৮. তদেব, পৃ ২৯৬।

 

গ্রন্থপঞ্জি

১.    রফিক উল ইসলাম-সম্পাদিত, ২০১৩, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
কথাবার্তা সংগ্রহ
, সং নেই, প্রতিভাস, কলকাতা।

২.    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ১৯৭১, অর্জুন, প্রথম সং, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

৩.   সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ২০০২, অর্ধেক জীবন, পঞ্চম সং, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা।

৪.    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ১৯৮৯, পূর্ব পশ্চিম, প্রথম সং, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা।

৫.            বিমলকুমার মুখোপাধ্যায়, ১৯৮৯, 888sport live football-বিচার : তত্ত্ব ও প্রয়োগ, পঞ্চম সং, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।