অর্ফিয়ুসের মতো

বড় মন্থর গতিতে কেটে যায় বন্ধ্যা সময়,

দিন আর রাত্রির প্রভেদ বুঝি না আমি।

জানি না কীভাবে কেটে যায় দ্বিপ্রাহরিক অলস বেলা

অথবা মধ্যরাত্রির নিস্তব্ধ সময়।

শুধু মনে হয় নষ্ট-পচা সময় জুড়ে ব্যর্থতার

বিপুল আরতি বেজে চলে শ্রান্ত মেধায়;

শুধু অপেক্ষার বদে ভরিয়ে রাখি ভারাক্রান্ত মন।

এতো নয় যত্নে গড়া পুতুলের সাজানো সংসার!

অসম্ভব বাসনায় তীব্রতাপে পুড়ে যায়

শূন্যে বানানো ঘরখানি।

শতাব্দী সমান ভিখিরি রাধার হাতে

বেজে ওঠে উদাসীন রাখালের মোহময় বাঁশি-

তার রক্তিম ঠোঁট ছুঁয়ে যে অব্যর্থ সুর

ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী-

সেই সুরের সর্বগ্রাসী টানে কেঁপে ওঠে

পর্ণকুটির থেকে রাজপ্রাসাদ, দূরপ্রান্তরের উদাসীন মাঠ,

গভীর অরণ্যের ঘনসবুজ বুক, ঢেউভাঙা নদীর ঘাট;

কেঁপে ওঠে যমদূতের কঠিন দুয়ার,

তার হাত থেকে খসে পড়ে মৃত্যুদণ্ড।

ব্যাকুল সুরের টানে যেইভাবে অর্ফিয়ুস

ফিরিয়ে এনেছিলো তার হারিয়ে যাওয়া দয়িতাকে

অথবা একদিন যেইভাবে উর্বশী ভেঙেছিলো

ধ্যানমগ্ন তাপসের একাগ্র ঘুম,

ঠিক সেইভাবে তার সর্বগ্রাসী সুর বিদ্ধ করবে মর্মমূল

মুখাবয়বে ছড়িয়ে পড়বে আরক্তিম আভা,

অতঃপর একদিন প্লাবিত লবণের মায়ায়,

জেগে উঠবে ধ্যানস্থ সন্ন্যাসী।

হয়তো আসবে ফিরে একদিন- নীলকণ্ঠ পাখিটির দীর্ঘ দীর্ঘতম প্রতীক্ষার বিনিদ্র নীড়ে।