অশনিসংকেত : 888sport cricket BPL rateে ও 888sport apps

সকল উন্নত জাতিরই গর্ব করার মতো কিছু জায়গা থাকে। বাঙালির ছিল মেধা। সে-মেধার প্রকাশ ছিল রাজনীতিতে ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে। ভারতবর্ষীয় উপমহাদেশের বিগত শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত একশ’ বছরের ইতিহাস তা প্রমাণ করে। এখন যতদিন যাচ্ছে সে- সব কাহিনী ক্রমশ পুরাকীর্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে ভাবলে সম্ভবত ভুল করা হবে না।

রাজনৈতিক ইতিহাস যেমনই ভাঙাগড়ার ভিতর দিয়ে চলুক অখণ্ড বাঙালিত্বের চেতনায় কখনো ধস নামেনি। বঙ্গদেশ যখন ১৯৪৭-এ দ্বিখণ্ডিত হলো তখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্বখণ্ডের অধিবাসীরা নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ে বাঙালি ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনি এবং ১৯৭১-এ যখন সেই অংশটুকু সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এসে 888sport apps তৈরি করল তখনো বাঙালিত্বের যুগিয়েছিল।

বোধই পিছনে কাজ করেছিল, সংগ্রাম ও সংগ্রাম ও সংহতির । শক্তি যুগিয়েছিল।

এই রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাস্কৃতিক প্রেক্ষাপট যদি 888sport app download for androidে রাখি তা হলে ধরা পড়ে যে, ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা-আন্দোলন ও ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম পূর্বাপর এক গাঁথা। সেখানে বিজয়স্মারক হিসেবে দুটি একসূত্রে ঘটনা বাঙালির ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে: বাংলা একাডেমী এবং বাঙালির প্রতিষ্ঠা। । প্রথমটি সাংস্কৃতিক ও দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক বিজয়। এবং উভয়েরই উৎসে রয়ে গেছে একটিমাত্র চেতনাগত ঐক্যবোধ ও গর্ব : বাংলা ভাষা ও বাঙালির সংস্কৃতির অবিনাশী চিরীবতা।

বিশ শতকের মধ্যভাগের ও তার প্রায় দেড় যুগ পরে ঘটে যাওয়া এ দুই ঘটনার সঙ্গে এদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্তির প্রভাব এখনো 888sport cricket BPL rate শতকের প্রারম্ভে সক্রিয় ও ফলপ্রসূ লপ্রস কিনা তার খতিয়ান নেয়া নানা কারণে খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। দুটি কারণ তো আমার মতো যে-কোনো সাধারণ মানুষ শনাক্ত করতে পারেন। প্রথমটি, সরকারি আলিঙ্গনের চাপে বাংলা একাডেমীর শ্বাসকষ্ট; দ্বিতীয়টি, মুক্তিযুদ্ধজয়ী ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক 888sport appsের ক্রমান্বয়ে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব অবস্থানে অঘোষিতভাবে প্রত্যাবর্তন। এর কোনোটাই প্রত্যাশিত নয় এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। কিন্তু যৎকিঞ্চিৎ চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, এ দুয়ের ভিতরে গভীর সংযে আছে। সংযোগ এইখানে যে, দেশবাসীর যে আবেগ-অনুভূতি এবং আশা ও স্বপ্নের সাংস্কৃতিক প্রতিফলন ছিল বাংলা একাডেমী, তারই রাজনৈতিক বাস্তবায়ন ছিল স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী 888sport apps। এ যেন যমজ সন্তানের দৈহিক ব্যাধির পরস্পরলগ্নতা: পৃথক শরীর নিয়েও অলক্ষ বন্ধনে জড়িয়ে থাকা—যেখানে একের অসুখ হলে অন্যেও অনিবার্যভাবে অসুস্থ হয়। ব্যাধিগ্রস্ত দেশে প্রতিষ্ঠানের সুস্থতা দুরাশা বটে এবং আমাদের পক্ষে তেমন দাবি যুক্তিহীন বলে মনে হতে পারে বৈকি। কিন্তু অসুখের কার্যকারণ ও ব্যাখ্যার চেয়ে রোগনিরাময় হাজার গুণ বেশি কাম্য দেশবাসীর কাছে।

একটি বিষয় অনুধাবন করা প্রয়োজন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের 888sport free betগরিষ্ঠ নাগরিকের মাতৃভাষা বাংলা, অথচ সেই ভাষার কোনো রাষ্ট্রিক-রাজনৈতিক স্বীকৃতি না দিয়ে এমন একটি ভাষা যা আঙুলে গোনা কিছু অভিবাসী ছাড়া কারুরই মাতৃভাষা নয় সেই উর্দুকে (ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঠিকই বলেছিলেন ‘আগন্তুক ভাষা’) রাষ্ট্রভাষা করা যুক্তিহীন, অন্যায় ও আধিপত্যপ্রয়াসী ছিল বোঝাই যায়। বাঙালির প্রতিবাদ ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের জন্যই হয়েছিল। ভাষা নিয়ে চক্রান্তের সূত্রপাত ১৯৪৮ সালে জিন্নাহ সাহেবের বক্তৃতায় নয়, বহু পূর্বেই শুরু হয়েছিল। সেজন্যেই ১৯৪৭-এর সেপ্টেম্বরেই, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক মাসের মাথায়, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু?’ পুস্তিকা ছেপেছিল তমুদ্দুন মজলিস। ১৯৫২ সালের ২১-২২ ফেব্রুয়ারির রক্তক্ষয়ী ঘটনার অনেক আগে থেকে বাংলা ভাষা নিয়ে পূর্ববঙ্গীয় বাঙালির আন্দোলন শিক্ষা-সংস্কৃতির চৌহদ্দি অতিক্রম করে অনেক বড় রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় মাত্রা অর্জন করে বসেছিল। কিন্তু সে সবের সঙ্গে বাংলা একাডেমী | প্রতিষ্ঠার ও স্পষ্ট যোগ আন্দোলনের প্রস্তাবাবলি-দাবিনামা নৃত্য দিনে এমন কিছু ছিল বোলে আমরা জানি না। ফলে একাডেমী ও রাষ্ট্রভাষাসংগ্রাম ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট নয়। তাহলে বাংলা একাডেমীর কথা উঠেছিল কেন? এ প্রশ্নের উত্তর না জানলে আমাদের সামাজিক-সাস্কৃতিক জীবনে বাংলা একাডেমীর প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব বোঝা সম্ভব নয়।

দুই

বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার পিছনে দেশের সরকার প্রত্যক্ষভাবে দায়ী ছিল না, তার রাষ্ট্রনীতি বা পরিচালনাদক্ষতা কোনোটির সঙ্গেই এ জাতীয় স্বারস্বত প্রতিষ্ঠানের ধারণা ও উদ্ভাবনা জড়িত ছিল না। দাবিটি এসেছিল বিদ্বৎসমাজের কাছ থেকে, যারা জাতির মননশক্তি। ১৯৪৮ সালের ৩১শে ডিসেম্বর একটি 888sport live football সম্মেলন 888sport appয় অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে সভাপতির অভিভাষণে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সর্বপ্রথম একাডেমীর ধারণা ব্যক্ত করেন এবং বিদ্যাচর্চায় মানুষের চিন্তার প্রতিফলনে সরকার কীভাবে সংশ্লিষ্ট হতে পারে, অবদান রাখতে পারে তা তুলে ধরেছিলেন। আমাদের গণ888sport sign up bonus দুর্বল হওয়ায় আমরা মনে রাখি নি। মনে করানোর জন্য বশীর আলহেলাল রচিত ‘বাংলা একাডেমীর ইতিহাস’ থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ধার করি :

স্বাধীন পূর্ববাংলার স্বাধীন নাগরিক রূপে আজ আমাদের প্রয়োজন হয়েছে সর্বশাখায় সুসমৃদ্ধ এক 888sport live football। …. এই 888sport live football হবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়। … আমরা বাংলার হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান এক মিশ্রিত জাতি, আমাদের ভাষা বাংলাও তেমনি এক মিশ্রিত ভাষা। বাংলার উৎপত্তি গৌড় অপভ্রংশ থেকে। সংস্কৃতের সঙ্গে তার সম্পর্কটা অতি দূরের। …. ঘৃণা ঘৃণাকে জন্ম দেয়। গোঁড়ামি গোঁড়ামিকে জন্ম দেয়। একদল যেমন বাংলাকে সংস্কৃতঘেঁসা করতে চেয়েছে, তেমনি আর একদল বাংলাকে আরবি পারসিঘেঁসা করতে উদ্যত হয়েছে। আমরা পূর্ববাংলার সরকারকে ধন্যবাদ দেই যে তাঁরা বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করে বাংলা ভাষার দাবিকে আংশিকরূপে স্বীকার করেছেন। কিন্তু সরকারের ও জনসাধারণের এক বিপুল কর্তব্য সম্মুখে রয়েছে। পূর্ববাংলা জন888sport free betয় গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, আরব পারস্য, তুর্কি প্রভৃতি দেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই সোনার বাংলাকে কেবল জনে নয়, ধনে ধান্যে, জ্ঞানে গুণে, শিক্ষা-888sport apkে পৃথিবীর যে-কোনো সভ্য দেশের সমকক্ষ করতে হবে। তাই কেবল কাব্য ও 888sport alternative linkের ক্ষেত্রে বাংলাকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, অর্থনীতি, মনো888sport apk, প্রত্নতত্ত্ব প্রভৃতি জ্ঞান888sport apkের সকল বিভাগে বাংলাকে উচ্চ আসন নিতে ও দিতে হবে। তার জন্য শিক্ষার মাধ্যম স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আগাগোড়া বাংলা করতে হবে। … আমাদিগে একটি একাডেমী (পরিষদ) গড়তে হবে, যার কতর্ব্য হবে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা থেকে ‘জ্ঞান-888sport apk ও 888sport live football বিষয়ে শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাবলির 888sport app download apk latest version বাংলায় প্রকাশ।…

পরে ভাষা আন্দোলনের সমকালীন পর্যায়ে সে সময়ের সর্বাধিক প্রভাবশালী দৈনিক আজাদ’ পত্রিকা, কাণ্ডারী 888sport live football মজলিশ ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন লেখক-সাংবাদিক, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমী প্রতিষ্ঠার ধারণাটি এগিয়ে নিয়ে যান। উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যে কোনো ভিন্নতা ছিল না। পরে ১৯৫৫-র ৩রা ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারের আনুকূল্যে। ‘আনুকূল্যে’ এজন্য যে ১৯৫৪ সালে নির্বাচনের পূর্বে যুক্তফ্রন্ট তার ২১-দফা প্রস্তাবের ষোড়শ দফায় বলেছিল যে, “বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলাভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা হইবে।’ আবু হোসেন সরকার মুখ্যমন্ত্রী (দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার) হিসেবে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালন করেছিলেন।

“একাডেমী প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় যে লক্ষ্য সরকারের শিক্ষা বিভাগ দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল; The Academy will in course of time not only grow into a centre for translation and publication of philo- sophical, technical, scientific and literary works from other languages, but will also be a centre for research and discus- sions among scholars of the Bengali language. শুরু এইভাবে। পরে স্থায়ীভাবে ধার্য রূপকাঠামোর মধ্যে সবচেয়ে লক্ষণীয় ছিল ১. বাংলা একাডেমী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হবে এবং ২. মূল চারটি বিভাগ নিয়ে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে—(ক) গবেষণা, (খ) 888sport app download apk latest version, (গ) সঙ্কলন ও প্রকাশনা, এবং (ঘ) সাংস্কৃতিক। ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থাপক পরিষদে বাংলা একাডেমী অ্যাক্ট পাস হয়। পরিচালক ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক তাঁর 888sport world cup rateে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্তব্য করেন যা বাংলা একাডেমী প্রসঙ্গে দেশবাসীর চিরকাল 888sport app download for android রাখা কতব্য বলে বিবেচনা করি। তিনি লিখেছিলেন: “বাঙলা একাডেমীকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই ‘বাঙলা এ্যকট’-এর একমাত্র উদ্দেশ্য নহে, ইহার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য আরও ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। প্রধানত সরকারি সাহায্যপুষ্ট হইলেও যাহাতে সরকারী কর্তৃত্বের বাহিরে থাকিয়া দেশের জনসাধারণ স্বাধীনভাবে ও নিঃসঙ্কোচে আপন মাতৃভাষার এবং এই ভাষায় রচিত 888sport live footballের উন্নত প্রকৃতির অনুশীলনে সমর্থ হয়, তৎপ্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখিয়াই ‘একটটি’ প্রণয়ন করা হইয়াছে। … দেশের সরকার আজ দেশের ভাষা ও 888sport live footballের যথাযথ অনুশীলনের দায়িত্ব দেশের জনসাধারণের হাতে নাস্ত করিয়াই নিশ্চিন্ত হইতে চাহেন।”

পরে এই এ্যাক্ট নানা সময়ে পরিবর্ধিত, বিশদীকৃত, অনুপুঙ্খ হয়, অন্তত কাগজে-কলমে নীতিমালার ব্যত্যয় তেমন দেখা যায় না। অর্থাৎ স্বায়ত্তশাসন বহাল থাকে এবং বিদ্যাচর্চা সম্পৃক্ত দায়িত্বাবলিও মোটামুটি একই রয়ে যায়। কিন্তু কার্যত দেখা গেল, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আমলে বাংলা একাডেমী যতদিকে যতখানি স্বায়ত্তশাসন ভোগ করতো স্বাধীন 888sport appsে তা খর্বিত হতে হতে এখন প্রতিষ্ঠানটি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রায় একটি সরকারি দপ্তরে রূপান্তরিত হয়ে গেছে।

বাংলা একাডেমী বর্তমানে মুমূর্ষু একটি প্রতিষ্ঠান যার একমাত্র দায়িত্ব যেন নির্ধারিত কিছু লোকরঞ্জক অনুষ্ঠান জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা। এক কালে অনেক যত্নে গড়ে তোলা সমৃদ্ধ পাঠাগারটি এখন অবিন্যস্ত ও ধ্বংসোন্মুখ। প্রবীণ বিদ্বকুল ও গবেষক তাঁদের সম্মিলনক্ষেত্র ও ভাবনা আদানপ্রদানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি আর বিবেচনা করেন না। বিভিন্ন ভাষায় বিদেশের ভাবসম্পদ বাংলায় 888sport app download apk latest version করা যে একাডেমী প্রতিষ্ঠার আদি ও মুখ্য লক্ষ্য ছিল পরিত্যক্ত হয়েছে বলে ‘888sport app download apk latest version বিভাগটি’ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন জনগণের কাছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই এর যেটুকু মূল্য। সংকলন বিভাগটিই একমাত্র সক্রিয় আছে দেখতে পাই, কারণ শুধু এর কর্মপ্রবর্তনাই লোকজন চাক্ষুষ করতে পারে।

তিন

বর্তমানে এমন মনে করার সঙ্গত কারণ আছে যে, বাংলা একাডেমী তার কর্তব্য ভুলেছে অথবা না ভুললেও সরকারি চাপে তার করণীয় কাজ করতে পারছে না। সর্বপ্রথম প্রয়োজন একাডেমীর স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। সরকারি আমলা অধিকাংশই কাণ্ডজ্ঞানহীন হয়ে থাকেন, নইলে জনৈক মহাপরিচালক থাকার সময়েই এই স্বাধীনতা খোয়ানোর অপকর্মটি সংসাধিত হয় কী করে। আর বাঘ নরমাংসের স্বাদ পেলে অন্য সকল আহার্যে যেমন তার অরুচি জন্মায়, আমলাতন্ত্রের নিকট তেমনি ক্ষমতালিপ্সা। ফলে একবার যে-ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কুক্ষিগত হয়েছে তাকে ছিনিয়ে নেয়া সহজ কর্ম নয়, তবে সম্ভব। মহাপরিচালক যদি সাহসী হন ও জাতীয় কর্তব্যবোধ দ্বারা তাড়িত হন তবেই সম্ভব, নইলে নয়। দেশবাসী যেহেতু সর্বদাই এই প্রতিষ্ঠানটিকে স্বায়ত্তাধীন দেখতে চেয়েছে, তাই সরকারশাসিত বাংলা একাডেমীর এককালের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণ এগিয়েই আসবে।

কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মকানুন ও বিধিবদ্ধতার বাইরে বাংলা একাডেমী দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে আরেকটি বড় জায়গায়। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বাঙালির যে আবেগ ও গর্ববোধ তার সহায়ক উদ্বেজক শক্তি হিসেবে একাডেমী কোনো ভূমিকা রাখে নি। যে-কোনো সম্পদই সংরক্ষণ করতে হয়, অন্যথায় নষ্ট হয়ে যায় বা নিঃশেষিত হয়। 888sport appsে বিগত দেড় দশক থেকে, দেখা গেছে, সিংহাসনচ্যুত ইংরেজিকে ফিরিয়ে আনা ও বিদেশী সংস্কৃতিকে আবাহনের কাজ শুরু হয়। একাডেমীর নৈতিক কর্তব্য ছিল পাল্টা হাওয়া তৈরি করা। প্রত্যক্ষ প্রতিরোধ নয়, এমন বহু কর্মপ্রচেষ্টা গ্রহণ করা যেত এবং এখনো যায়, যাতে সরকারি ভুল সিদ্ধান্ত নিষ্ক্রিয় ও অপচয়িত হয়। বস্তুতপক্ষে, ভাষা-সংবেদনা নিয়ে গণসচেতনতার কোনো কাজই সে করেনি বা করার কথাই ভাবনাচিন্তা করেনি। সাধারণ লোকের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কেও তো দু- একটি ফলপ্রদ চিন্তা আসে, তাও বাংলা একাডেমীর মাথায় আসেনি। যেমন ধরা যাক : ১. বাংলা থেকে ইংরেজিতে 888sport appর দোকানপশারির নাম-পরিবর্তন রোধে প্রচারণা চালানো যেত, ২. রাস্তাঘাটে-বিপণিতে, যে কোনো প্রকাশ্য স্থানে অশুদ্ধ বাংলা লেখার বিরুদ্ধে কর্মিবাহিনী নিয়োগ করে শুদ্ধি অভিযান সম্ভব করা যেত, ৩. 888sport appsের সংবিধানে অনুসৃত রাষ্ট্রভাষার অধিকার রক্ষার জন্য ইংরেজিমাধ্যম বিদ্যালয় ও বিদেশমনস্কতা উভয়েরই প্রসার রোধের উদ্দেশ্যে একাডেমী সরকারকে উপদেশ দিতে পারত। এ সবই তার নৈতিক দায়িত্বের অন্তর্গত বলেই মনে করি, প্রশাসনিক কর্তব্য যদি নাও হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পরে, যখন মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রভাষা হওয়ার অধিকার অর্জন সম্পন্ন হয়েছে, দেশবাসী রাষ্ট্র ও বাংলা একাডেমীর নিকট একটি হিসেব চাইতেই পারে: বাংলা ভাষাকে নিয়ে ১৯৫২ সালে বাঙালির মনে যে গর্ব ও আকাঙ্ক্ষা ছিল তা আরো গভীর ও ব্যাপ্ত কতটুকু করতে পারলেন জমাখরচের সেই জাবেদা খাতাটা খুলে একটু দেখান তো!

চার

খাতা খুললে কী দেখা যাবে আমরা জানি। সেই ছবি ব্যর্থতার, আশাভঙ্গের ও জনগণকে প্রতারণার। কারণ ছবিটি এরকম : ইংরেজিমাধ্যমের বিদ্যালয় শুধু রাজধানী শহরে নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিস্তৃত হচ্ছে; এই মুহূর্তে দেশে একান্নটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু আছে যার কোনোটিতেই বাংলা ভাষায় কিছু পড়ানো হয় না এবং বাংলা ভাষা-888sport live football-সংস্কৃতি পাঠ্য বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়; গ্রামাঞ্চলের শিক্ষায়তনগুলোর অবস্থা শোচনীয় ও গুণগত মান অকল্পনীয় খারাপ; শহরের বাংলামাধ্যমের ইশকুলগুলো অপুষ্টিতে ভুগছে, কেননা অবস্থাপন্ন পরিবারের সাধারণ মেধার ছেলেমেয়েরাও যেমন সেখানে ভর্তি হতে চাইছে না, তেমনি সাধারণ আয়ের পরিবার থেকে আসা মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাও তাতে প্রত্যাশিত পরিমণ্ডল না পাওয়ায় মনঃকষ্ট ও হতাশার মধ্যে থাকছে। দেশব্যাপী এক প্রচণ্ড অবোধ আত্মধ্বংসী প্রক্রিয়া বহুকাল যাবৎ চলছে যার সারাৎসার হলো বাংলার ও বাঙালির কিছুই ভালো নয়, না ভাষা, না সামাজিক আচরণ, না সঙ্গীত, না পার্বণ-উৎসব। এই অপরাধের, জাতিবৈর চেতনার, যাবতীয় দায়দায়িত্বের সিংহভাগ রাষ্ট্রের। বাঙালি তার বাঙালিত্ব ত্যাগ করে কাকে গ্রহণ করবে রাষ্ট্র তার নির্দেশ প্রত্যক্ষভাবে দিচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু পরিপ্রেক্ষিতে ও পরিবেশে এত বিদেশমনস্কতার জয়গান শোনাচ্ছে, উপকরণাদি ছড়িয়ে রাখছে, পাশ্চাত্যের সামাজিক আচরণ আমদানি করছে এবং দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমে এত নিয়ন্ত্রণহীন জয়ঢাক ক্রমাগত বেজে যাচ্ছে যে, আমজনতার মূল্যবোধ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত, তার হিতাহিতজ্ঞান অবলুপ্ত এবং নিজেকে নিয়ে আত্মসম্মানজ্ঞান ও 888sport apk download apk latest versionবোধ প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।

888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারির আত্মদান এ-সবের জন্য তো হয়নি, বাংলা একাডেমীও মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির বিসর্জন নীরবে অবলোকন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

এখন থেকে ঠিক পনেরো বছর পূর্বে আমারই প্রকাশিত এক রচনার ক’টি ছত্র এখানে উদ্ধৃত করি, কারণ আমার মনোভাব ও বক্তব্য পূর্ববৎই রয়ে গেছে :

সালাম, বরকত, জব্বার, সালাউদ্দিন, রফিক, শফিউর এখন কোথায়? অনন্ত ভবিষ্যতের লক্ষ কোটি 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারিও কি তাহাদের একজনকেও ফিরাইয়া আনিতে পারিবে? আমার মাথা তাহাদের পদতলে প্রণত হইয়া পড়িতেছে। এই ভীরু মিথ্যাচারী নির্লজ্জ খোশামুদে জাতিকে তাহারা অন্তত এই কথা বলিয়া গেল: তোমরা কী আমরা জানি, আমাদের তোমরা মনে রাখিবে না ইহাও জানি, তবু আমরা মরিলাম শুধু এই কথা বুঝাইবার জন্য যে আমরা তোমাদেরই সন্তান, ‘মানুষ’ বলিয়াই মরিলাম, দেখ, তোমরাও মানুষ হইতে পারো কি না।

হইতে যে পারি নাই, তাহা তো দেখিতেই পাইতেছি। প্রতি মুহূর্তে মিছিলে আন্দোলন করিয়া গলা ভাঙিতেছি-‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’। পরক্ষণেই ভুলিয়া গিয়া সিগারেট ফুঁকিতে ফুঁকিতে আড্ডা মারিতেছি। হৃদয়ে জ্বালা নাই, চক্ষে আগুন নাই, বুকে সাহস নাই।

..আপনাদের কি এতটুকু লজ্জা নাই, মৃতের প্রতি কৃতজ্ঞতা নাই, সম্ভ্রমবোধ নাই, থাকিলে সব ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিয়া একা, কিংবা সদলে কিংবা দলে দলে, কিংবা হাজারে হাজারে, লাখে লাখে, কোটিতে কোটিতে, পঙ্গপালের মতো… রাস্তায় নামিয়া আসুন, শত্রুর বুকে ঝাঁপাইয়া পড়ুন। না পারিলে, আর কিছু নয়—এই খেলা-খেলা 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি বন্ধ করুন। সুবোধ বালকের মতো ঘরে বসিয়া থাকুন, পান চিবাইতে চিবাইতে অফিস করুন, প্রেমিকাকে লইয়া টিএসসির চতুর মধুময় করিয়া তুলুন। কিন্তু খবরদার রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারদের নাম মুখে আনিবেন না। মুখে আনতে হলে যোগ্যতার প্রয়োজন হয়, ন্যূনতম হলেও। আজ অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সে অধিকার হারিয়েছি।

‘888sport apps’ এবং ‘বাংলা একাডেমী’ শব্দ দুটি তো প্রতীক। দেশের মানুষই যদি আর বাঙালি না থাকে, নিজের ভাষা-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ভুলে যাওয়াকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন ‘জ্ঞান করে, তাহলে দেশ বা প্রতিষ্ঠানের অমন হাস্যকর নাম থাকারই বা কারণ কী! ‘888sport appsে’র জন্যই মানুষকে বাঙালি হতে হবে, বাঙালিত্বের সাধনা করতে হবে; ‘বাংলা একাডেমী’র অস্তিত্বের কারণেই বাংলাভাষা ও 888sport live footballের ঋদ্ধির ব্যাপারে মানুষকে নিষ্ঠাবান হতে হবে। তা না হলে দুটোরই মৃত্যু অনিবার্য। আমরা, দেশবাসী, সেই অন্তিম দশার পানে ছুটে যাচ্ছি কিনা সে ভয়ঙ্কর প্রশ্ন ইতিহাস আমাদের সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে।