অ্যামেলিয়া

            \ ১১ \

জেরেমিস : কী সুন্দর খেলছে। আমার ইচ্ছে করছে মাঠে নেমে পড়ি।

মোলি : সে তো পড়তেই পারো। দিনরাত খেলা চলছে।

জেরেমিস : ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে।

মোলি : এরকম খেলতে?

জেরেমিস : না, খেলতাম না। লুবলিয়ানা থেকে দূরে গ্রামে আমাদের একটা বাড়ি আছে। আমার ছোটবেলা সেখানেই কেটেছে। পাঁচ বছর বয়সে আমার টিবি হয়। টিবি জানো তো? আগে লেখক-কবি-888sport live chatীরা এই রোগে খুব মারা যেত। তো, আমার খেলা বন্ধ হয়ে গেল। বাচ্চারা মাঠে খেলত আর আমার ঠাকুরদাদা আমাকে পাহারা দিত। আমি কাঁদতাম বলে অনেক গল্পের বই কিনে দিত আমাকে। সারাদিন বইয়ে ডুবে থাকতাম। সেই খেলতে
না-পারার আক্ষেপ আমার কখনো যায়নি। যখন স্কুলে গেলাম, ঠাকুরদা বললেন, জেরেমিস, এই বৃদ্ধ বয়সে আমি তোমার জন্যই বেঁচে আছি। তুমিই আমার জীবন। আমার কথা শুনে চলো। যে-অসুখ তোমার আছে, তাতে দৌড়ঝাঁপ চলে না। ওসব করলে তুমি মারাও পড়তে পারো। তখন আমি কী করব? কোনো নিষেধ শুনতাম না। খুব খেলতাম। ছোটবেলায় আদর-ভালোবাসা পেতে যত ভালো লাগে, যে ভালোবাসে তার কথা শুনে চলতে তত ভালো লাগে না। বাচ্চারা খুব সুন্দর, কিন্তু স্বার্থপর। আমিও স্বার্থপর ছিলাম। ঠাকুরদাদার কাছে আমার আদর-আবদারের সীমা ছিল না। কিন্তু বল দেখলেই সব ভুলে যেতাম। ফলে আবার অসুখ করল।

মোলি : আবার টিবি!

জেরেমিস : না। তবে শরীরে ক্যালসিয়াম কমে গিয়েছিল। আর ফুসফুসে জল জমেছিল। আর একদিন মট করে গোড়ালির কাছটা ভেঙে গেল। একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে পড়লাম। মা আমার অবস্থা দেখে কাঁদত। ঠাকুমা প্রত্যেক রোববার চার্চে ধরনা দিত। বাবা বলত, আরে ধুর, ও তো একটা রুগ্ণ পোকা! বিছানায় শুয়ে খুব কান্না পেত আমার, জানো; কিন্তু কাউকে চোখের জল দেখাতে ইচ্ছে করত না। বুভুক্ষু মানুষের মতো বই পড়তাম। কিন্তু মন পড়ে থাকত খেলার মাঠে। আমার মন বুঝত শুধু ঠাকুরদা। আমি বিছানায় বন্দি, আমার সঙ্গে, আমার পাশে ঠাকুরদাও ঘরবন্দি। আমাকে বলত, খেলা তো ম্যাজিক, সব ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু বই-ও কম যায় না। আর খেলার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে একটাই জিনিস। সেটা হলো সুর। একদিন ঠাকুরদা আমার জন্য পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ান কিনে আনল।

মোলি : আহা রে! তোমার ঠাকুরদা কী ভালোই যে বাসতেন তোমাকে! এমন ভালোবাসা পাওয়া ভাগ্যের কথা। তিনি তোমার সত্যিকারের বন্ধু ছিলেন।

জেরেমিস : ঠিকই বলেছ তুমি মোলি। ঠাকুরদা ছিলেন আমার ফ্রেন্ড, ফিলোসফার অ্যান্ড গাইড। সাতানববই বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। তিনি বলতেন, আমিই তার জীবনীশক্তি। আর আমি ভাবতাম, তিনিই আমায় বাঁচিয়ে রেখেছেন। মুশকিল হলো, যখন আমাকে গ্রামের বাড়ি থেকে লুবলিয়ানায় নিয়ে আসা হলো।

মোলি : পা ভাঙার পরেই?

জেরেমিস : হ্যাঁ। বাবার ধারণা ছিল, শহরের স্কুলের কড়া আদব-কায়দা আমাকে ঠিক করে দেবে! ঠাকুরদা সঙ্গে এসেছিলেন, কিন্তু কিছুদিন পরেই ফিরে গেলেন। শহর তাঁর ভালো লাগত না। তাছাড়া গ্রামে চাষবাস, গরু-ঘোড়ার দেখাশুনো – সে সবই তিনি করতেন। কত কাজ! তবু তাকে কখনো সময়ের জন্য হাঁসফাঁস করতে দেখিনি। অত কাজের পরেও তাঁর আমার জন্য অবসর থাকত। বলতেন, সময় একটা মরীচিকার মতো। তার পশ্চাদ্ধাবনে লাভ হয় না কিছু। তোমাকে ঠিক করতে হবে তোমার আজকের কাজ কী কী। সেইগুলো করে ফেলো, ব্যস!

মোলি : কী সহজ ভাবনা! আমরা এরকম ভাবতে পারি না কেন?

জেরেমিস : পারো না বুঝি?

মোলি : নাহ্! সময় বেঁধে দিলেই আমি দিশেহারা হয়ে যাই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেরি করে ফেলি!

জেরেমিস : আজ তো সময়মতো এলে দেখছি।

মোলি : তার জন্য অনেক আগে থেকে তৈরি হয়েছি। সারা বারবার বলে গিয়েছেন যাতে দেরি না হয়।

জেরেমিস : এটা করব, ওটা করব, সেটা করব – এমনটা করো বুঝি?

মোলি : একদম।

জেরেমিস : বেশি কাজ হাতে নিয়ো না, তাহলেই আর গোলমাল নেই। যদিও তুমি না চাইলেও অনেক কাজের মধ্যে তোমাকে জুড়ে দেবার চেষ্টা করা হবে। এটাই এখন দস্ত্তর। তোমারও মনে হবে,  হ্যাঁ, আমাকে সব করতে হবে। সব। তবেই আমি অভীষ্ট লক্ষ্য পৌঁছতে পারব। তোমার লক্ষ্যটা আসলে কী?

মোলি : একজন ভালো 888sport live footballিক হওয়া। এমন কোনো কাজ যা  বাংলা 888sport live footballে চিরস্থায়ী হবে।

জেরেমিস : তার জন্য তুমি দৌড়োবে? নাকি লিখে নিজেই নিজের কীর্তিতে বিস্ময়াবিষ্ট হবে! আহা! কী লিখেছি!

 মোলি খুব জোরে হেসে উঠল। রাইটাররা নিজের মতো গল্প করতে করতে চলছিল। দল থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন হয়নি। কেউ এগিয়ে যায়নি বা পিছিয়ে পড়েনি। দু-চারজন মোলির দিকে তাকাল।

 জেরেমিস বলল, ‘এরকম আছে তো। যা লেখে তাই ভাবে অসাধারণ। নিজেই তা বলতে থাকে। যা একটা 888sport app download apk লিখেছি না! উহ্!’

মোলি হাসতে হাসতেই বলল, ‘না, না। আমি মোটেও তেমন নই।’

জেরেমিস : তেমন হওয়া উচিতও নয়। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ভালো থাকা। লিখলে যদি তুমি ভালো থাকো, লেখো। তোমার যদি ছাঁকনি দিয়ে প্রজাপতি ধরতে ভালো লাগে, ধরো। আমার ঘোড়ায় চাপতে একদম ভালো লাগত না। বাবা খুব বকুনি দিত। বলত ভীতু, বোকা, হাঁদা গঙ্গারাম! বাবাকে প্রচ- ভয় পেতাম জানো! কিন্তু ঠাকুরদা তো বাবার বাবা। বলল, ওর যদি ঘোড়ায় চাপতে ভালো না লাগে তো ও চাপবে না। ব্যস! সেই ঠাকুরদা যখন আমায় শহরে রেখে গ্রামে চলে গেল, আমি একা হয়ে গেলাম। এই প্রথম, বুঝলে মোলি, আমি একাকিত্ব অনুভব করলাম, সারাক্ষণ তারই মধ্যে ডুবে থাকতাম। আর অপেক্ষা করতাম কবে গ্রামে যাব!

মোলি : শহরের স্কুল কেমন ছিল?

জেরেমিস : কোনো স্কুল ভালো লাগত না আমার। বাবা তিনবার স্কুল পালটাল। অবশেষে একদিন আমার স্কুলপর্ব শেষ হলো।

মোলি : পর্বই বটে। তারপর?

জেরেমিস : স্কুল থেকে কলেজে গেলাম। বাবা আমাকে জোর করে ফিজিক্স পড়তে ঢুকিয়ে দিলো। আমার ভালো লাগত না। আমি স্কুলে পড়াশোনা ভালো করতাম। কিন্তু কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। আবার আমার টিবি হলো। দ্বিতীয়বার। বাড়িতে বসে বসে কী করব। একটা গল্প লিখে পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলাম। ছাপা হয়ে গেল। বাবা বলল, শেষ পর্যন্ত গপ্পো লিখবে। আমাদের বাড়িতে কেউ ডাক্তার, কেউ ফিজিসিস্ট, কেউ ইঞ্জিনিয়ার। আর তুমি কুলাঙ্গার।

মোলি : হা হা হা। রাইটারদের সর্বত্রই এক দুর্দশা দেখছি।

জেরেমিস : তুমি হাসছ! আমি মনের দুঃখে পথে পথে ঘুরতে লাগলাম। মনে হতো, কেন জন্মালাম! মরে গেলেই তো হয়! মনে হতো গ্রামে ঠাকুরদার কাছে চলে যাই। কিন্তু তখন তো আমি আর শিশু নই। এক অপদার্থ তরুণ। যার কোনো বর্তমান নেই, ভবিষ্যৎও নেই। ছোটবেলায় সহজে কষ্ট ভুলতে পারা যায়। বড় হয়ে গেলে নিজের কষ্ট, এমনকি সবচেয়ে কাছের মানুষটিকেও দিতে সংকোচ হয়। মনে হয়, ভালোবাসার বিনিময়ে ভার চাপিয়ে দিচ্ছি না তো? কেন আমরা সব তখন বড় হয়ে যাই মোলি? বলো তো! আমার বড় হতে ভাল্লাগে না! কিন্তু এ-কথা কাকে বলব? বলে লাভই বা কী! আমার সমবয়সীরা সব তখন বান্ধবী জোটাবার তাল করছে। আমার সেই ইচ্ছাও হয় না। এমন অপদার্থকে কোনো মেয়ে কেন পাত্তা দেবে? একদিন হঠাৎ আমার পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ান টিচার মিসেস পিকালোর সঙ্গে দেখা। তিনি আমার খোঁজখবর নিলেন। তারপর বললেন, কলেজে যাচ্ছ না যখন আবার মিউজিক ক্লাসে চলে এসো।

মোলি : তুমি ছেড়ে দিয়েছিলে বুঝি?

জেরেমিস : ছেড়ে দিয়েছিলাম কী, যন্তরটাকে দেখলেই আমার  হাড়পিত্তি জ্বলে যেত। খুব কঠিন লাগত আসলে। যতই আমি তাকে আয়ত্তে আনতে চাইতাম ততই সেটা শয়তানি করত। বেয়াড়া গার্লফ্রেন্ডের মতো। যদিও ট্রেনার মিসেস পিকালোকে আমার খুব ভালো লাগত। শান্ত। কখনো বকুনি দেন না। অপূর্ব বাজনার হাত!  আর ধরো, সেই আমার গোড়ালির হাড় ভাঙার সময় তিনি গ্রামের বাড়িতে আসতেন। তখন তো তিনি আরো সুন্দরী! সৌন্দর্যের প্রতি আমার ছোটবেলা থেকেই দুর্বলতা! বলতে পারো তাঁর টানেই যন্ত্রটা ঝেড়েঝুড়ে আমি আবার ক্লাসে গিয়ে জুটলাম। কী হলো জানো? ম্যাজিক! যন্ত্রটা আমার বশ হয়ে গেল। ওই যে কয়েক বছর অবহেলায়  সরিয়ে রেখেছিলাম, তাতেই শায়েস্তা হয়ে গেছে।

মোলি : মিসেস পিকালোর বয়স কত?

জেরেমিস : তুমি যা ভাবছ তা নয়।

মোলি : আমি কী ভাবছি?

জেরেমিস : ভাবছ আমি তাঁর প্রেম পড়েছিলাম? মোটেই নয়। তাঁর ব্যক্তিত্বের মধ্যে একটা প্রশাস্তি ছিল। যেমনটি তোমার মধ্যে আছে।

মোলি : আমার মধ্যে? তাই? ধন্যবাদ জেরেমিস।

জেরেমিস : এখনো পর্যন্ত তোমাকে দেখে আমার তাই মনে হয়েছে। মিসেস পিকালোকে যখন প্রথম দেখি, আমার স্কুলজীবনে, তখন তাঁর চুলে সবে পাক ধরেছে। দ্বিতীয়বার তাঁর স্কুলে যাওয়ার পর যন্ত্রটাকে আমি ভালোবেসে ফেললাম। ক্রমে সেই সম্পর্ক এত গভীর হয়ে উঠল যে আর তাকে ছাড়া থাকতে পারি না।

মোলি : এখনো বাজাও?

জেরেমিস : নিশ্চয়ই।

মোলি : আর লেখা? আবার কবে শুরু করলে?

জেরেমিস : মিসেস পিকালোর সান্নিধ্য এবং পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ান আমাকে একরকম শক্তি দিয়েছিল। মনে হলো, অন্য কেউ, তিনি আমার পিতা হলেও, আমার জীবন কেমন হবে সে-বিষয়ে জোর খাটাতে পারেন না। দেখো, কেউ কাউকে পরামর্শ দিতে পারে, জোর করতে পারে কি? আমার জীবনটা আমাকেই যাপন করতে হবে। এখন আমার জীবন নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। লিখি, গান গাই। বিয়ে-থা করে সংসারী হয়েছি। লুবলিয়ানায় লোকে আমাকে চেনে-জানে। মিসেস পিকালোর সঙ্গে যৌথভাবে আমি অনেক অনুষ্ঠান করেছি, এককভাবেও করি।

দুজনে এতই মগ্ন ছিল বাক্যালাপে, সারা যখন বলে উঠল, ‘এই হলো ব্যাংক!’ তারা অবাক হয়ে গেল। অমলিনী মনেই করতে পারছে না কোন রাস্তা দিয়ে তারা এলো। আমার তার অবস্থা দেখে মজা লাগছিল। জেরেমিস এতই আত্মমগ্ন ছিল নিজের কথা বলায়, যে তার অবস্থাও একই। আমি ভৌতিক মানুষ, আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লাগে না। দানিয়েল এলফিনস্টোন, এই আমি, জীবদ্দশায় এত অর্থ ও সম্পদের অধিকারী ছিলাম যে, ব্যাংকের সঙ্গে আমার বড়ই সদ্ভাব ছিল। মেরি-অ্যান কর্কট রোগ চিকিৎসালয়ের তহবিলে সেইসব অর্থ চলে গিয়েছে। আমি এখন অন্য অর্থ নিয়ে চলেছি। তার নাম ভালোবাসা। আমি দানিয়েল এলফিনস্টোন অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্টকে দেখে মুগ্ধ ছিলাম। আজ আমি কবর থেকে উঠে এসেছি ভালোবাসার স্বাদ নিতে। যা দিয়ে পূর্ণ হচ্ছে পাতার পর পাতা আমার অসমাপ্ত 888sport alternative link! এখন আমি অমলিনীর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছি। আমার অ্যামেলিয়া তার কাঁধে খানিক শিরশিরানি অনুভব করল বুঝি!

সারা মার্টিন কড়া গলায় বলে উঠল, ‘সবাই নিচু স্বরে কথা বলবে। ব্যাংকে হল্লাগুল্লা হলে কাজের অসুবিধে হবে।’

মেক্সিকোর অ্যালেক্স জারভিরোভা বলে উঠল, ‘সারা, আমরা কি শিশু নাকি যে ব্যাংকে গিয়ে হল্লা মচাবো?’

সারা বলল, ‘আমি দুঃখিত। সচেতন করে দেওয়া আমার কর্তব্য। চলো, আমরা ভেতরে যাই। দ্রম্নত সব সারতে হবে!’

খুব ভারি কাচের ঘূর্ণি দরজা ঠেলে তারা প্রবেশ করল। তারপর আরো এক ভারি দরজা পেল।

আমেরিকার সবকিছুর মতো ব্যাংকের ভেতরও সুবিশাল। এক বড় সভাঘরের গোলটেবিল ঘিরে তাদের বসতে দেওয়া হলো। চা, কফি, স্যান্ডউইচ ও কুকিস দেওয়া হলো খেতে। একটি করে স্টিলের ট্র্যাভেল মগ ও ব্যাগ উপহার পেল তারা। তারপর ফরম ভরতে লাগল। খুবই মামুলি ফরম। ঠিকঠাক নামের বানান আর পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য একটু মন দিয়ে লেখা দরকার। কিন্তু রাইটাররা কেউ কেউ খুবই উদ্বেগাকুল মুখে কাজ করতে লাগল। পরস্পর পরামর্শও করে নিচ্ছে। ঠিক যেন পরীক্ষা দিচ্ছে!

অ্যালেক্স ও জেরেমিস বেশ কয়েকটা স্যান্ডউইচ খেয়ে ফেলল। পেটপুরে প্রাতঃরাশ করার পরও অতো খাচ্ছে কী করে কে জানে!

অমলিনীর কাজ শেষ। সে কাজাখস্তানের সের্গেই ইরোনভস্কির পাশে বসে আছে। দেখতে পাচ্ছে সের্গেই ভারি বিচলিত। অমলিনী তাকে সাহায্য করল। সের্গেই ইংলিশ প্রায় জানে না বললেই চলে। এরই মধ্যে তার ধবধবে ফর্সা মুখ রাঙা হয়ে উঠেছে! কারণ ফরম পূরণ হলেই দূরবর্তী টেবিলে বসা অফিসারের কাছে মৌখিক প্রশ্নোত্তরের জন্য যেতে হচ্ছে। খুবই সামান্য ব্যাপার। তাঁরা ফরমের তথ্য ও ভিসা-পাসপোর্ট যাচিয়ে দেখে নিচ্ছেন। তার জন্য ইংলিশ বলা জরুরি। একেবারে বলতে না পারলেও হয়। দু-চারটি শব্দ আর নথিপত্র দিয়েই ওঁরা কাজ চালিয়ে নেন। প্রতি বছর এমন ইংলিশ-অজ্ঞ লেখক কতই এসেছেন। সের্গেই নতুন নয়। ভাঙা ইংলিশে একটু-আধটু কথা তো বলছেই। তবু সে উদ্বিগ্ন, লজ্জিত, হয়তো ভীতও।

অফিসারগণ অত্যন্ত ভদ্র, সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ তাঁদের। অমলিনীর অভিজ্ঞতায় আমেরিকানদের ভদ্রতাবোধ অতি উচ্চমানের। সে সের্গেইয়ের দশা দেখে ভাবতে লাগল, এই যুবক কী করে ভেনিজুয়েলার ভেরোনিকার সঙ্গে, বিমানে বসে, প্রথম আলাপেই জুটি বেঁধে ফেলল? ভেরোনিকা ইংলিশে খুব সমৃদ্ধ না হলেও ভালোই কাজ চালিয়ে নেয়। কিন্তু প্রথম রাত্রি থেকে একত্রিত বসবাসের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যত সপ্রতিভতা, যত বাগ্মী হওয়ার প্রয়োজন বলে সে মনে করে, তা এই মুহূর্তে সের্গেইয়ের মধ্যে নেই।

সে সের্গেইকে সাহস দিয়ে বলল, ‘তোমার লেখাপত্র তো শেষ। চলে যাও ওই অফিসারের কাছে।’

‘যাব।’ এই বলে হাত গুটিয়ে বসে রইল সের্গেই। অমলিনী প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি তো 888sport alternative link লেখো, তাই না?’

সের্গেই বলল, ‘লিখি, মানে, ছোটগল্প কয়েকটা লিখেছি। 888sport app download apk লিখেছি অনেক। আর 888sport alternative link লেখার কথা ভাবছি।’

‘বাহ্! ভাবনা-চিন্তা করেছ, কী লিখবে?’

‘হ্যাঁ! একটু ভেবেছি। একটা লোক শহরের জীবনে বিরক্ত হয়ে উঠল, তখন সে এক নির্জন দ্বীপে চলে গেল।’

‘বাহ্! তারপর?’

‘আর জানি না। ভেবে পাচ্ছি না লোকটা দ্বীপে গিয়ে কী করবে?’

সারা ঘুরে ঘুরে তদারকি করছিল। সের্গেইয়ের ফরম পূরণ হয়ে গেছে দেখে তাড়া দিলো। ‘যাও সের্গেই। যাও। দেরি করো না!’

অমলিনী উঠে এক কাপ কফি নিল। কফিতে চুমুক দিয়ে তার মনে হলো, কী আশ্চর্য এখানকার সবাই! মাত্র তিন মাসের জন্য তহবিল খোলা হচ্ছে, তবু কত যত্ন, কত সমাদর! দ্বিতীয় চুমুকে তার মনে হলো এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটছে তার জীবনে। সে, অমলিনী গুপ্ত, ভারতের এক পিছিয়ে থাকা জরাজীর্ণ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষার 888sport live footballিক, যার কোনো 888sport alternative link বছরে তিনশো কপি বিকোলে সে বর্তে যায়, সে কিনা আমেরিকান ব্যাংকে তহবিল খুলছে!

তৃতীয় চুমুকে সে তার কফি শেষ করে ফেলল! এক অনাস্বাদিতপূর্ব পুলকে, সে স্থির করল, আর সে সন্দীপনের বার্তা পাওয়ার জন্য কাঙালপনা করবে না। এই তিন মাসের প্রবাসে সে নিজেকে ওই আইওয়া নদীর মতো বইয়ে দেবে!

একে একে সকলের কাজ মিটে গেল। এই ঘরের দেয়ালে সুন্দর সব ছবি টাঙানো। অমলিনী সব ছবি দেখল ঘুরে ঘুরে।

অবশেষে ব্যাংক থেকে বেরোল তারা। ব্যাংক তাদের ডেবিট কার্ড দিলো। ভারি উত্তেজিত হয়ে উঠল রাইটাররা। ইচ্ছে করলে টানা দু-বছর এই অ্যাকাউন্ট রেখে দেওয়া যেতে পারে। তার জন্য ন্যূনতম একশ ডলার রাখতে হবে। অ্যাকাউন্ট রাখা উচিত, নাকি তিনমাস পর দেশে ফিরে যাওয়ার আগে বন্ধ করে দেওয়া উচিত – এ নিয়ে মতানৈক্য উপস্থিত হলো। তারা কলরব করতে করতে রাস্তা দিয়ে যেতে লাগল।

অ্যালেক্স, ইয়েরমেন এমন কয়েকজন মাঝে মাঝেই আমেরিকা আসে তা বেশ গর্বের সঙ্গে জাহির করে বলতে লাগল, এই কার্ড ও তহবিল তারা সক্রিয় রাখবে। প্রায়ই তো লাগে! একশ ডলার আর এমন কী টাকা! পাঁচদিন মদ খেলেই উড়ে যায়! সারা মার্টিন তাড়া দিতে লাগল। ‘পা চালাও। গাড়ি এসে অপেক্ষা করবে। তোমাদের বাজারে যেতে হবে তো। সেখান থেকে ফিরে রান্না করতে যাবে। রান্নার সময় তিনটে থেকে ছটা।’

ফেরার পথে জেরেমিস ইতালির রুবা ইলিয়ানা ও ইরাকের হারিক এল ওমেরের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হাঁটছে দেখতে পেল অমলিনী। মাঝে মাঝে রুবার কোমর জড়িয়ে ধরছে জেরেমিস। অ্যালেক্স আর আলজেরিয়ার হাসিন সুহালিও হাঁটছে কোমর জড়িয়ে। হাসিন খুবই দীর্ঘাঙ্গী। তার চেয়েও লম্বা জার্মানির লিলি হেববার। দীর্ঘাঙ্গী হাসিন অ্যালেক্সের গলা জড়িয়েছে। অ্যালেক্স খর্বকায়! কিন্তু নির্মেদ ও ছিপছিপে। তার হাঁটার ভঙ্গি ঘোড়ার মতো।

অমলিনী আপনমনে চলছিল। সাউথ কোরিয়ার সাইয়ুন পিয়াও এসে তার হাত ধরল। বলল, ‘বাজারে যাবে তো?’

অমলিনী বলল, ‘যাব। তুমি যাবে না?’

‘যাব। কিন্তু আমার প্রচুর কাজ। অনেক বড় কাজের চুক্তি করে এসেছি। সারাক্ষণ কাজটা আমাকে তাড়া করছে।’

ইমুতে ফিরে কোনোক্রমে একবার টয়লেটে যাওয়ার মতো সময় পেল অমলিনী। বাজারে যাবার গাড়ি এসে গিয়েছে। ব্যাংকের কাগজ, পাসপোর্ট, 888sport app জরুরি কাগজপত্র ইয়াপের ব্যাগেই রেখে, সমস্ত আলমারিতে ঢুকিয়ে সে দ্রম্নত পায়ে বেরিয়ে এলো!

মোট ছখানা গাড়িতে ভাগাভাগি করে বাজারে চলল তারা। অমলিনীর সঙ্গে আবার দেখা হয়ে গেল মার্কের। তাকে দেখে চমৎকার হাসল মার্ক। বলল, ‘প্রথম দিন তোমাদের ভুল প্রবেশপথে নামিয়েছিলাম। আমিও তো নতুন এখানে!’

অমলিনী বলল, ‘তার জন্য তোমারই পরিশ্রম হয়েছিল। অতো ভারি সব  স্যুটকেস তুমিই তো টেনে তুললে। অনেক ধন্যবাদ তার জন্য।’

‘ও কিছু নয়, ও কিছু নয়’, বলে ভারি বিনয় প্রকাশ করল মার্ক। আজ বাজারের প্রথম দিন। তাই ড্রাইভার ছাড়াও একজন করে ইয়াপ সদস্য তাদের সঙ্গে আছে। অমলিনীর গাড়িতে সারা রইল। রাইটারদের মধ্যে শবনম, রোজানা, হারিক, সাইয়ুন। অপরিকল্পিতভাবে গাড়িটা মেয়েদের দখলে চলে গিয়েছে।

শবনম : আমি ড্রাইভার সারা বা ইলিয়ানাকে চাই। মার্ক তুমি গাড়িতে বেমানান। মেয়েদের মধ্যে একমাত্র পুরুষ মানুষ। অদ্ ম্যান আউত্!

মার্ক : আমাকে ভুলে যাও।

শনবম : তুমি গাড়িতে থাকলে তোমাকে ভোলা যায়? ইউ আর সো গুদ লুকিং।

রোজানা : মার্ক, তুমি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে?

সারা : আমরা হাইভি মার্কেট যাব।

হারিক : আমি একবার মিডল ইস্টার্ন মার্কেটে যেতে চাই।

শবনম : আমিও চাই। এখানে আলডি নেই? আমার আলডি খুব পছন্দ। বেলজিয়ামে আলডি মার্কেটের ছড়াছড়ি।

রোজানা : আরব মার্কেট পেলে আমিও যেতে চাই।

সাইয়ুন : কোরিয়ান মার্কেট পেলে আমি যাব একবার।

সারা : তুমি দুঃখ করো না মোলি, তোমাকেও ইন্ডিয়ান গ্রোসারিতে নিয়ে যাব। আমি মাঝে মাঝেই যাই। একটা আচার কিনেছিলাম, এতো ঝাল এক চামচের বেশি খেতে পারিনি। তোমাকে এনে দেব। আমি জানি, বাঙালিরা ঝাল খায়।

প্রায় শোভাযাত্রার মতো চলতে লাগল ছখানা গাড়ি। দামি ও আরামদায়ক গাড়িগুলির গায়ে আইওয়া ইউনিভার্সিটির নাম ও প্রতীক!

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বেরিয়ে আমেরিকার মসৃণ চওড়া রাস্তার দুধারে সবুজের শোভা দেখতে দেখতে যেতে লাগল তারা। এক জায়গায় রাস্তা বাঁক নিতেই তাদের ডানদিক বরাবর রেলের লাইন। এবং কী আশ্চর্য, এখনো এখানে মিটার গেজ লাইন। তাতে ছোট ছোট রেলগাড়ি চলে। যাত্রীবাহী গাড়িও আছে, মালগাড়িও আছে। সেগুলি আবার অতি দীর্ঘ! কত সম্ভার সে বয়ে নিয়ে চলেছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে!

মাঝে মাঝে ছোট ছোট লোকালয়। পেট্রোল পাম্প, যাকে আমেরিকায় বলে গ্যাস স্টেশন, তাকে ঘিরে ছোট বাজার, রেসেত্মারাঁ! সবকিছুই গোছানো, পারিষ্কার, সুন্দর!

অবশেষে তারা হাইভি পৌঁছল। ছখানা গাড়ি পার্ক করা হলো। দরজা খুলে রাইটাররা নামল। সারা বলল, ‘সময় শুরু হলো। ঠিক পঁচিশ মিনিটে বাজার সারবে। বাকি পাঁচ মিনিটে গাড়ির কাছে চলে আসবে। যে যেই গাড়িতে এসেছ, সে তাতেই উঠবে। তাতে আমাদের বুঝতে সুবিধা হবে, সবাই ঠিকমতো ফিরল কিনা।’ রাইটাররা দ্রম্নতপদে হাইভির অভ্যন্তরে প্রস্থান করল। সারা বলল, ‘এক নম্বর গেটে ফুলের কাউন্টারের সামনে আমি অপেক্ষা করব। যাও। হাবিজাবি খরচা করো না।’ (চলবে)