॥ ৩ ॥
আইমিউ পৌঁছতেই ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে এলো সারা মার্টিন।
সারা : তোমরা এসে গিয়েছ? পুরো খেতে পারোনি? ঠিক আছে। ফ্রিজে রেখে দাও। শোনো, ২১৩ হলো ব্রেকফাস্ট রুম। সকাল ছটা থেকে নটা। শনি-রবি দশটা পর্যন্ত। যা খাবার ওখানেই খাবে। একগাদা খাবার ঘরে নিয়ে যাবে না। ব্রেকফাস্ট ফ্রি। ২১৪ আমার অফিস। কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে। ২১৫ রাইটারদের আড্ডাখানা।
মোলি : সারা, শুনেছিলাম একটা নদী আছে, কই দেখছি না তো।
সারা : নদী, নদী, নদী! সব্বার এক কথা! নদী চাই!
জিনত : আমার ঘর থেকে নদীটা দেখা যায়। আমি আসি? ক্লান্ত লাগছে। মোলি, কাল কখন ব্রেকফাস্ট করবে?
মোলি : আটটা।
জিনত : আমাকে ডেকো। শুভরাত্রি।
সারা : মোলি, তোমার ঘর পছন্দ হয়নি? ওই একটা মাডি রিভার, মাঝেমধ্যে বন্যায় ডুবিয়ে দেওয়া ছাড়া যার কোনো কাজ নেই, তা নিয়ে রাইটারদের এতো মাতামাতি কেন?
মোলি : আমার ঘর খুবই পছন্দ সারা। অনেক ধন্যবাদ। আসলে কি জানো, নদীর জল স্বচ্ছ হোক আর কাদায় গোলা হোক, নদীর আকর্ষণ তবু থেকেই যায়। আমাদের কলকাতা শহরের গঙ্গানদীর দুই পাড় অত্যন্ত ঘিঞ্জি আর অপরিচ্ছন্ন! তবু লোকে তার কাছে গিয়ে দুদ- বসে। শান্তি খোঁজে। নৌবিহার করে জ্বালা জুড়োয়।
সারা : তোমরা সব কবি-888sport live footballিক, তোমাদের কথা আলাদা। এই আইওয়া নদীকে আমার এক আপদ ছাড়া আর কিছু মনে হয় না! আচ্ছা। জিনত তো হড়বড়িয়ে চলে গেল। তুমি দেখে নাও। এই যে ক্যাবিনেট, এতে টয়লেট পেপার, গারবেজ প্লাস্টিক, কম্বল সব স্টোর করা। খাবার জল কোথায় পাওয়া যায় জানো? এই দেখো ওই দরজা খুললেই একটা করিডোর পাবে। সোজা হেঁটে যাবে। একদম শেষ প্রান্তে খাবার জলের একটা ফাউন্টেন আছে। খাবারের অসুবিধে নেই। কাল সকাল থেকে বেসমেন্টে সব দোকান খোলা পাবে।
মোলি : এখানে রান্নাঘরটা কোথায়?
সারা : রান্নাঘর? কী করবে?
মোলি হাসল। কার্ড ছুঁইয়ে দরজা খুলে বলল, ‘ভেতরে এসো সারা। বসো। আমি তো শুনেছিলাম দস্তুরমতো রান্নাঘর পাওয়া যাবে। আসলে আমি নিজে রান্না করেই খেতে চাই।
সারা : এখানে তো রান্নাঘর নেই। আজ শনিবার। মঙ্গলবারের আগে তুমি বাজার করতেও পারবে না। আর ওই একদিনই তোমরা রান্না করবে। সারা সপ্তাহেরটা একবারে। তোমাদের জন্য আমরা একটা পাবলিক কিচেন নিয়েছি। ওখানে বাসন-কোসন সব আছে। শুধু যাবে আর রাঁধবে।
মোলি : ঘরে কোনো ব্যবস্থা নেই? আমি কিছু জিনিস এনেছিলাম। প্রথম দু-চারদিন চালিয়ে দেওয়ার মতো। তাও চালের প্যাকেটটা ইমিগ্রেশন এন্ট্রিতে রেখে দিলো।
সারা : কী চাল ছিল? বাসমতী?
মোলি : হ্যাঁ। বাসমতী। ইন্ডিয়া গেট। এখানে এই ব্র্যান্ড বিক্রি হয়।
সারা : তা হতে পারে। কিন্তু আমেরিকায় এখন টেক্সমতী চাল চাষ হচ্ছে। অবাণিজ্যিকভাবে আর বাসমতী ঢুকতে দেয় না। আর কী কী এনেছ তুমি?
মোলি : মসুর ডাল। নুন, চিনি, চা, কফি। কিছু গুঁড়ো মশলা। ইনডাকশন কুকারে রান্না করার মতো একখানা পাত্র।
সারা : খুব খুশি হলাম শুনে মোলি যে তুমি নিজে এতো কিছু গুছিয়ে এনেছ। এখানে মাইক্রোওভেন ব্যবহার করো। শুধু লক্ষ রেখো বেশি ধোঁয়া যেন না হয়। ধোঁয়া হলেই ওই যন্ত্রটায় ধরা পড়বে আর সারাবাড়ি কাঁপিয়ে ঘণ্টি বেজে উঠবে। বাঙালি রান্না খুব মশলাদার আর দারুণ সুগন্ধ। আমি জানি। আচ্ছা, তোমাকে লন্ড্রি চেনানো হলো না। জিনতের ঘরের দিকটায়, ২৩৭ নম্বরের ঠিক উলটো দিকে। কাচতে ছটা কোয়ার্টার লাগবে, শুকোতে চারটে। নিচে ডলার দিলে ওরা তোমাকে কোয়ার্টার খুচরো করে দেবে। কাল তোমায় দেখিয়ে দেবো কী করে মেশিনে কাচাকুচি করবে। আজ ভালো করে ঘুমোও। আরে! অতখানি তুলেছ কেন ব্লাইন্ডটাকে। নামানোর জন্য লোক ডাকতে হবে তো।
মোলি : হবে না সারা। আমি পারব।
সারা : কই, করো তো। অতখানি খোলা থাকলে বাইরের আলোয় তোমার ঘুম হবে না। আর শোনো, কাল কিন্তু ঠিক আড়াইটায় নিচের লবিতে হাজির থাকবে। সপ্তাহের প্রোগ্রাম ক্যালেন্ডার আমি কাল দিয়ে যাব। আজ একবার মেইল চেক করে নাও। এতোক্ষণে এসে গিয়েছে।
মোলি : মেইল? আসলে আমার ফোনটা কাজ করছে না।
সারা : ল্যাপটপ?
মোলি : নেই। মানে, আনিনি। আসলে শুনেছিলাম এখানে রাইটারদের ল্যাপটপ দেওয়া হয় এই কদিনের জন্যে।
সারা : দেওয়া হতো। একটা সংস্থা ছিল, তারা ব্যবস্থা করত। এখন বন্ধ। এখন অনেক কিছুই বন্ধ। ট্রাম্প সরকার আসার পর ইয়াপও অনুদান কম পাচ্ছে। এবার আমাদের পঞ্চাশ বছর। কত বড় উদ্যাপন। কত খরচ। কীভাবে যে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে, কী আর বলব! তোমরা আমাদের অতিথি, বেশি কথা বলব না। কিন্তু তোমার জন্য তো একটা ল্যাপটপের ব্যবস্থা করতে হয়। দেখি মেডেসাকে বলে।
মোলি : আমার স্মার্টফোন সক্রিয় হলে ল্যাপটপ প্রয়োজন হবে না সারা। তোমাদের আইটি ডিপার্টমেন্ট কোথায় যদি বলো, একবার চেষ্টা করব।
সারা : সোমবারের আগে তো কিছুই পাবে না মোলি। তাছাড়া তুমি লিখবে কী করে?
মোলি : আমি হাতে লিখি সারা।
সারা : হাতে! বলো কী! তারপর কী করো?
মোলি : ইংলিশে কিছু লিখতে হলে সরাসরি কম্পিউটারে লিখি, কিন্তু বাংলায় হাতে লিখি। অন্য কেউ কম্পিউটারে টাইপ করে দেয়।
সারা : দ্বিগুণ খাটনি। তার চেয়ে সরাসরি কম্পিউটারে লেখাই তো ভালো।
মোলি : ভালো লাগে সারা। কাগজ, কলম, টেবিল, ঘরের কোণ – সব মিলিয়ে একটা অন্তরঙ্গ পরিবেশ তৈরি হয়। যন্ত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে সময় লাগে একটু।
সারা : তুমি অবাক করছ মোলি। মানুষ প্রযুক্তিগত সুবিধার পেছনে ছুটছে, আমি পর্যন্ত হাতে লিখতে পারি না আর, আর তুমি কাগজ-কলম নিয়ে বসে আছো। যা-হোক, শোনো, কোনো প্রিন্ট নিতে হলে আমার ঘরে আসবে। প্রিন্টার তুমি যে-কোনো সময় ব্যবহার করতে পারো। ফোনটা নিয়ে কনসিয়াজে যাও একবার। ওখানে ওরা সব একালের ছেলেপিলে। সবাই ইউ-আইওয়ার ছাত্র। ওরা কিছু করতে পারে। টেক-স্যাবি যাকে বলে।
সারা বিদায় নিল। ঘরে সে। আর আমি। যদি এমন হতো, সে জানে আমার কথা, আমি শরীরী হয়ে উঠি, যদি, যদি সে আমাকে ভালোবাসে, এই একান্ত মুহূর্ত হয়ে উঠতে পারত সুন্দর। রোমান্টিক। কাকে বলে রোমান্টিক? কোন মানসিক অবস্থা? কোন শরীরী অনুভব?
888sport live footballিক অমলিনী গুপ্তা। যে জানে না, যে অবহিত নয়, এই দৃশ্যমানতার মধ্যে কত স্বচ্ছ ভুবন। ভূত, প্রেত, অশরীরী আত্মা এবং ঈশ্বর জীবিতের চেতনায় বিশ্বাস ও অবিশ্বাসরূপে রাজিত। তাতে অদৃশ্য জগতের কিছু পরিবর্তন হয় না। জীবিতাবস্থায় আমি যুক্তির মধ্যে সত্য পেতে চেয়েছি। কিন্তু যুক্তি হলো ধারণা থেকে বিশ্বাসে উপনীত হওয়া। সব সময়ই কিছু শর্তসাপেক্ষ।
অমলিনী কনসিয়াজে গেল। জন তার ফোন নিয়ে খুটুর-খাটুর করল। জনের পাশে ব্ল্যাক ছেলে জেমস। সে-ও তার পাণ্ডিত্য প্রয়োগ করল। কেউ কিছুই করতে পারল না। অমলিনী পাজামার পকেট থেকে কল কার্ড বের করল। সেটিও সক্রিয় করার আপ্রাণ প্রয়াস নিল জেমস ও জন। অবশেষে নিষ্ফল প্রয়াসের জন্য ভারি দুঃখ প্রকাশ করল দুজনে। তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে ফিরে চলল অমলিনী। বিশাল লিফটের গহ্বরে একলা দাঁড়িয়ে তার মনে হলো, ফোন সক্রিয় করার জন্য এতো ব্যগ্রতা কিসের? সে কি মনে মনে সন্দীপনের কাছ থেকে কোনো বার্তা আশা করছে! গত ছমাস তাদের মধ্যে ন্যূনতম বাক্যালাপটুকুও হয়নি। দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেল তারা পৃথক বসবাস করছে। কেন তারা বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেনি? সন্দীপনেরও কোনো উদ্যোগ নেই। সম্প্রতি তার স্কুলের সহপাঠিনী মালবিকার বিবাহবিচ্ছেদ হলো। মালবিকা এককালীন পঁচিশ লাখ টাকা আদায় করেছে। তার কথা ভাবতে ভাবতে দরজা খুলল অমলিনী। সম্পর্কটা ভাঙতে পেরে আনন্দে আছে মালু, মালবিকা। তার কোনো দ্বিধা নেই। সে বলে তার দুঃখও নেই। বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়ার মতো টাকা সে পেয়ে গেছে।
মোলি : টাকাটা একবারে নিলি?
মালু : মাসে মাসে নেওয়া মানে তো জুড়ে থাকা। প্রতি মাসে টেনশন। দেবে তো! না দিলে আবার কোর্ট-কাছারি। ছেলের দায়িত্বও নিইনি। অধিকারও চাইনি। ছেলে এখন ষোলো। বড় করে দিয়েছি। আমি স্বাধীন। এই ভালো হলো। তুই কেন আটকে আছিস? দর বাড়াচ্ছিস?
মোলি : কিসের দর?
মালু : কত নিবি ভাবছিস? পঞ্চাশের কমে ছাড়বি না। ডাক্তারদের অনেক টাকা।
মোলি : সন্দীপনও কোনো তাড়া দিচ্ছে না।
মালু : দিচ্ছে না কারণ দিলেই তুই দর হাঁকানোর সুযোগ পাবি।
বিয়ে হলো সম্পর্কের সেতু। সম্পর্কই যদি না থাকে, শেষ পর্যন্ত দরাদরি, শেষ পর্যন্ত অর্থ রোজগারের যন্ত্র? অসম্ভব। সে নিজেকে অসহায় মনে করে না। সে একজন স্বাধীন মানুষ। তার আত্মসম্মানবোধ আছে। টাকা-পয়সা জরুরি। কিন্তু প্রধান নয়। জীবনে সবচেয়ে সুন্দর ও কাক্সিক্ষত বস্তু হলো প্রেম। ভালোবাসা। স্নেহরূপে, প্রণয়রূপে, 888sport apk download apk latest versionয়, বন্ধুত্বে। তার টাকার প্রয়োজন আছে। এ পৃথিবীতে কার-ই বা নেই! জীবিত ব্যক্তিমাত্রই ধনধান্যর ওপর নির্ভর। কিন্তু সে কিছুতেই মালবিকা হতে পারল না। সে মালুকে হীন মনে করে না।
মালু আইনানুগ কাজ করেছে। সমাজ যে-নিয়ম বেঁধেছে, তাকেই ব্যবহার করেছে। দুষ্টু গোরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো – এই নীতি তার। কিন্তু ছেলেটা? এক ষোলো বছরের কিশোর মায়ের সাহচর্য ছাড়া বেঁচে থাকতে শিখে যায়? অমলিনীর আজো মাকে প্রয়োজন! সেই প্রয়োজন ব্যাখ্যাতীত। মহাজাগতিক আলোর মতো। মা ঠিক ব্যক্তি হিসেবে অপরিহার্য থাকেন না আর। মাতৃত্ব সম্পর্কে রহস্যময় আকর্ষণ ও অনুদ্ঘাটিত শান্তির টান সব মানুষকেই কমবেশি মায়ের কাছে ফেরায়। অন্তরে ও বাইরে।
সে আর ভাবতে চাইল না। আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়ল। সেই শয়নপদ্ধতিও বড়ই পরিপাটি। নরম বালিশ, নরম বিছানা, তবু সে এপাশ-ওপাশ করতে লাগল। উঠল। আলো জ্বালাল। বিছানার চাদর ও বালিশের ঢাকনার কাপড় পরখ করল। কোনোটাই অবিমিশ্র সুতি নয়। সুতি আর রেশম ছাড়া তার কিছুই সহ্য হয় না। সে কী করে? যন্ত্রের ঠান্ডা বাড়িয়ে দিলো। আমি বায়বীয় হাতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। যতক্ষণ না সে ঘুমিয়ে পড়ে, এভাবেই তাকে আদর করব আমি। কিন্তু আবার সে উঠে বসল। বিছানা থেকে নেমে ব্লাইন্ড তুলে দিলো। জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল বাইরে। নিচে পার্কিং লটের অর্ধেক জুড়ে বাড়ি তৈরির যন্ত্রপাতি। ইমুর উচ্চতম তলে পুনর্গঠন চলছে। তার জন্য সুউচ্চ ক্রেন। গাড়ি। বিশাল বিশাল লোহার গামলায় ভাঙা দ্রব্যের স্তূপ। এতো বড় কর্মকা- চলছে, অথচ কোথাও এতোটুকু ময়লা নেই। আবর্জনা নেই। দূরের রাস্তায় মাঝেমধ্যে গাড়ি চলেছে। রাত্রি সাড়ে এগারোটা হলো। আলোয় আলোয় ঝলমলানো ইউ-আইওয়া। ওল্ড ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়ের মাথায় পতাকা উড়ছে। উজ্জ্বল আলোয় সেই পতাকা সদাদৃশ্যমান।
সে ভাবছে। আইওয়া। আজ আইওয়ায় তার প্রথম রাত। সে এলো। সে কী পাবে? একজন বাংলার 888sport live footballিককে আইওয়া কী দেয়?
২০ আগস্ট … প্রথম সকালে, চেনা হল অচেনা আড়ালে রবিবার চেনা রোদ্দুর পড়ে অচেনা গাছের ডালে ডালে ॥
সকালে তার ঘুম ভাঙল আশ্চর্য কলরব ও ধাতব শব্দ সম্মিলনে। আটটা বাজে। ঘন নীল আকাশ। বাইরে ঝলমল করছে রোদ্দুর। আমেরিকার পক্ষে ভারী সুখের এ-সময়। এশিয়া-আফ্রিকার মানুষ ভাবতেই পারে না এই আলো, এই শরীর পোড়ানো রোদ্দুর আমেরিকায় কতখানি কাক্সিক্ষত।
জিনতের কথা তার মনে পড়ল। আটটায় একসঙ্গে প্রাতরাশ করার কথা। হয়তো অপেক্ষা করবে জিনত। সে ইন্টারকমে কল করল। একবার, দুবার, তিনবার। হয়তো ঘুমোচ্ছে। এবার সে ধাতব শব্দের উৎস সন্ধানে সচকিত হলো। পার্কিং লটে বিশাল বিশাল গাড়ি আসছে জিনিস ফেলছে, চলে যাচ্ছে। ক্রেন সেসব পৌঁছে দিচ্ছে নির্মাণস্থলে। ক্রমাগত লোহায় আঘাত করার শব্দ উঠছে। প্রতি আঘাতের সঙ্গে থরো থরো কেঁপে উঠছে বাড়ি। কোন সকাল থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছে এরা।
বহুজনের হাসি ও কথার গুঞ্জন ভেসে আসছে। মাঝেমধ্যে মিলিত হাসির উল্লসিত বিস্ফোরণ। কোথায়? কারা?
সে পরিচ্ছন্ন হয়ে বেরিয়ে এলো। ব্রেকফাস্ট রুমে রাইটাররা দলে দলে টেবিল দখল করে বসেছে। সকলেই হাসছে। সকলেই কথা বলছে, যেন কতকালের চেনা। সে বিস্মিত বোধ করছে। কখন এমন চেনাজানা হলো? সে লক্ষ করল, জিনত অন্য কজনের সঙ্গে বসে খাচ্ছে। এখানে আসার আগে জিনত তাকে ডাকেনি! তার মন খারাপ হয়ে গেল। কথা ভারী মূল্যবান তার কাছে। আজ বলি, কাল ভুলি – এমনটা সে একটুও পছন্দ করে না! জিনত এমনকি লক্ষও করল না মোলি খাবার ঘরে এসেছে। সে-ও ডাকল না। আমি, অশরীরী দানিয়েল, বুঝলাম কত অভিমানী সে!
একটি মেয়ে গলায় নিকন ক্যামেরা ঝুলিয়ে এ-টেবিল ও-টেবিল করছে। ভারতীয়দের মতো দেখতে। বড় বড় চোখে পুরু কাজল। শরীরে মেদ জমেছে। কালচে গায়ের রং। থোকা থোকা চুল সযতেœ আধুনিক ধরনে ছাঁটা। সারা পিঠে ছড়ানো। শরীর কামড়ানো জিনস। সুতির শার্ট। হাতে বড় বড় আংটি। নাকে ফুল। কানের গয়না চুলে ঢেকে আছে। ভারত থেকে আর কেউ এসেছে?
অমলিনী কোথায় বসবে ভাবতে ভাবতে একটি টেবিল পেল যেখানে একজনই বসে আছে। চৈনিক অবয়ব। শক্ত পেশিবহুল কাঁধ। সরু চোখ। চুপচাপ খাচ্ছে। সে বলল, ‘এখানে বসতে পারি?’
‘নিশ্চয়ই।’
‘আমি অমলিনী। ভারত থেকে এসেছি।’
‘আমি জিয়াং। জিয়াং জাও জেং। হংকং।
সে খাবার নিতে গেল। বুফে। পাউরুটি টোস্ট করে নাও। এছাড়া নানাবিধ বেকারির খাবার – কেক, পেস্ট্রি, ডোনাট, কলা, আপেল, ডিমসেদ্ধ, দই, কমলালেবু, কমলা ও আপেলের রস, দুধ, তিনরকম কর্নফ্লেক্স, নানাবিধ চা, কোকো ও কফি। পেটপুরে খেলে অনায়াসে লাঞ্চ না খেয়ে থাকা যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে বিকেলে কিছু খেতে হবে।
সে ভাবতে ভাবতে খাবার নিয়ে বসল। জিয়াং ফলের রসে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে পড়ল। যাওয়ার সময় কিছু বলে গেল না। অমলিনী একা একা খাচ্ছে। হঠাৎ একজন এসে দাঁড়াল তার সামনে। শ্বেতাঙ্গ। দীর্ঘকায়। চোখে চশমা। কেশবিরল মাথাটি গোল। প্রথম দর্শনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কথা মনে পড়ল অমলিনীর। সে কিছু বলার আগেই সেই ইউরোপীয় হাত জোড় করে বলে উঠল, ‘আমালাইনি ঘুফথা। ইনদিয়া। নামাসকার।’
অমলিনী হেসে ফেলল। উঠে দাঁড়াল সে। হেসেই বলল, ‘নমস্কার। তুমি বুঝি ভারতে ছিলে কখনো? বসো।’
‘নো। মি নত। আই হ্যাভ এ ইনদিয়ান ফ্রেন্দ। হি তত মি ইয়োগা। আই দু সুব্রিয়ানামাসকার এভরি দে।’
‘তুমি সূর্যনমস্কার করো? আমিও যোগাভ্যাস করি রোজ। ইয়ে, মানে, তোমার নামটা বলবে প্লিজ। আমি খুবই দুঃখিত যে আমি জানি না।’
‘ইয়াকভ করচাগিন ফ্রম ম্যাসিদোনিয়া।’ ছ-ফুট দু-ইঞ্চির ইয়াকভ আলতো করে জড়িয়ে ধরল অমলিনীকে। ছোট্ট চুমু গেল গালে। বসল মুখোমুখি।
ইয়াকভ : তোমার কোনো ছোট নাম বলো আমালাইনি। ঘুফথা বলেও ডাকতে পারি।
অমলিনী : ওটা আমার পদবি। আমাকে মোলি বলে ডেকো।
ইয়াকভ : সুপার্ব! মোলি! তোমার জেটল্যাগ হচ্ছে না?
মোলি : কাল রাতে ঘুম আসছিল না। ভারতে সাড়ে দশ ঘণ্টা আগে সূর্যোদয় হয়।
ইয়াকভ : কদিন পরেই ওটা সাড়ে ন-ঘণ্টা হয়ে যাবে। এদেশের সূর্য এক ঘণ্টা আগে উঠবে। হা হা হা।
মোলি : এদেশে তো আবার একেক রাজ্যে একেক সময় সূর্য ওঠে। তোমাদের সঙ্গে তফাৎটা কেমন?
ইয়াকভ : তোমাদের থেকে আমরা চার ঘণ্টা পিছিয়ে।
মোলি : তোমার পদবি শুনে আমার খুব প্রিয় বইয়ের এক প্রিয় চরিত্র মনে পড়ছে।
ইয়াকভ : কী বলো তো?
মোলি : নিকোলাই অস্ত্রভস্কির ইস্পাত। পাভেল করচাগিন তার মূল চরিত্র ছিল। আমি এতোই ভালোবাসতাম তাকে যে আমার প্রথম প্রেমিককে পাভেল বলে ডাকতাম।
ইয়াকভ : তাই নাকি? খুবই বিখ্যাত বই। আমি পড়েছি কিন্তু এতো কিছু মনে নেই। কমিউনিস্ট রাশিয়া আর কিছু না দিক, ভালো বই দিয়েছিল কিছু।
জিনত নিঃশব্দে এসে ইয়াকভকে পেছন থেকে জড়িয়ে চুমু খেল গালে। ওপাশে আরো একজন। ব্ল্যাক। দীর্ঘদেহী মহিলা। তার কুচো কুচো বিনুনি পাকানো চুল। এই সকালেই নিখুঁত ও সুন্দর সাজপোশাক। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সাজ ও প্রসাধন। সে হেসে বলল, ‘হাই!’ কণ্ঠস্বর একটু ভারি। ইয়াকভ বলে উঠল, ‘মোলি, তোমার অবশিষ্ট খাবার নিয়ে
২১৫-য় চলো। নটায় এ-ঘর ছেড়ে দেওয়ার কথা। ওখানে জমিয়ে বসা যাবে।’
এরই মধ্যে অনেকেই ২১৫-য় আড্ডায় বসেছে। হাই, হ্যালো, হাই, হ্যালো, শোনা যাচ্ছে ক্রমাগত। দুটো বড় টেবিল জুড়ে প্রায় কুড়িটি চেয়ার। একজন ব্ল্যাক ছেলের পাশে বসল অমলিনী। হাই আমি কাম্বা নাকান্দা, ফ্রম নাইজেরিয়া। অমলিনীর পাশে ব্ল্যাক মহিলা। ইয়াকভের হাত জড়িয়ে পাশে বসল জিনত। তাদের পাশে বসল আরো দুই ইউরোপীয়। একজন 888sport promo code, একজন পুরুষ।
ব্ল্যাক মহিলা বলল, ‘হাই, আমি মেধিয়াম্বো লোরেনটিনা, ফ্রম নাইজের।’
ইউরোপীয় মেয়েটি : হাই কাম্বা। মাই ডিয়ার হাজব্যান্ড। তুমি কি আমার পরিচয় দিয়েছ? তুমি যা লাজুক! এর মধ্যে তুমি বউ জুটিয়ে ফেলেছ, এ-কথা কি কেউ জানে? হ্যালো রাইটার্স আমি রুথ রুপার্ট, ফ্রম হাঙ্গেরি। ওখানে আমার স্বামী ও পুত্র আছে। কিন্তু এখানে আমার স্বামী কাম্বা নাকান্দা। কাল বা সঠিক অর্থে পরশু ফ্র্যাঙ্কফুর্ট এয়ারপোর্টে আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ। আর তখন থেকেই আমরা স্বামী-স্ত্রী।
ইউরোপীয় পুরুষ : তোমার বলা শেষ, রুথ? এবার আমি বলি? আমি জেরেমিস মিকালোকা, ফ্রম সেøাভেনিয়া।
লোরেনটিনা : তোমাদের জেটল্যাগ হচ্ছে না? নাইজের থেকে লম্বা সফর করে এসে আমি এখনো ঘুম আর জাগরণের মধ্যিখানে রয়েছি।
জিনত : আমি এই প্রথম শুনলাম কেউ নিজের দেশের নাম ভুল বলছে। লোরেনটিনা, তোমার বলা উচিত নাইজেরিয়া।
লোরেনটিনা : না। নাইজের। অথবা নীজের।
পরিষ্কার ইংলিশে সে বলে চলেছে এবং এ পর্যন্ত তার ও কাম্বা নাকান্দার ইংলিশে কোনো গোলমাল পায়নি অমলিনী। ‘তুমি বোধহয় জানো না নাইজের বলে একটি দেশ আছে আফ্রিকায়।’
জিনত : হ্যাঁ। আর সেটাই নাইজেরিয়া।
কাম্বা : জিনত, আমি নাইজেরিয়ান। লোরেনটিনার দেশ নাইজের। দুটো এক নয়। আমরা আফ্রিকা মহাদেশের ঠিকই, কিন্তু এক দেশ নয়। হতে পারে তুমি নাইজের দেশের নাম শোনোনি। তাই বলে যার দেশ, তাকেই শেখাবে সেই দেশের নাম কী!
জিনত : জিনত, জিন্নত, জন্নত … তোমরা কেউ কি আমার নামটা ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারো না? আমি অপমানিত বোধ করছি। আমি জিনেট। জিনেট। শুনেছ তোমরা?
রুথ উঠে এসে জিনেটকে জড়িয়ে ধরল। গালে গাল রেখে বলল, ‘অতো রাগ করো না। শান্তি, শান্তি। ভুল তো হতেই পারে।’
টেবিলের অন্যদিক থেকে স্প্যানিশ রাইটার ইয়েরমেন ভেরালট বলে উঠল, প্রায় দুর্বোধ্য উচ্চারণে, ভুল ইংলিশে, ‘জিনেট, তুমি খুব সুন্দর। এই মুহূর্তে তোমাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে।’
ইয়াকভ : অবশ্যই। 888sport promo code মাত্রই সুন্দর।
জেরেমিস : আমি অবশ্য তা মানি না।
ইয়াকভ : এই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা না করাই ভালো। লোরেনটিনা আমি দুঃখিত। আমার নাইজের সম্পর্কে কিছুই জানা নেই। তুমি কি একটু আলোকপাত করবে?
লোরেনটিনা : কেন নয়? যদিও আমি জন্মসূত্রে জ্যামাইকান। কিন্তু আমি একজন নাইজেরিয়ান নাগরিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্বের অধ্যাপক এবং নাইজের সরকারের 888sport live chat ও 888sport live footballবিষয়ক উপদেষ্টা। তোমরা হয়তো জানো না, আমার রাষ্ট্রভাষার মধ্যে একটি ইংলিশ। শুধু আমার কেন, ওই যে নাইজেরিয়ান কাম্বা নাকান্দা, ওই যে ইউগান্ডার মানঘিল ঘিলা – ওদেরও একটি রাষ্ট্রভাষা ইংলিশ। সেটা কথা নয়, কথা হলো নাইজের চিরকালই অবহেলিত। এই প্রথম ইয়াপ নাইজের থেকে একজন রাইটারকে ডাকল। পৃথিবীর ইতিহাসে মাউ মাউ, মাজি মাজি বিদ্রোহ নিয়ে কথা হয়, ক্যামেরুন, মাদাগাস্কার, টাঙ্গানিকা নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু নাইজের নিয়ে হয় না। অথচ উনিশশো পঞ্চাশের দশক থেকে নাইজেরে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়ে চলেছে। নাইজেরের সোয়াবা আন্দোলনের কথা কজন জানে? আসলে কি জানো, ফরাসি অধিকৃত পশ্চিম আফ্রিকার উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনগুলো এখনো বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে এবং ঐতিহাসিক মাত্রায় আলোচিত হয়নি, সামগ্রিকতায় ধরাও হয়নি। অনেক ছোটখাটো আন্দোলন, যার হয়তো উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই, ইতিহাসের পাতায় তার নাম ওঠেনি।
মানঘিল ঘিলা : আরো একটা বিষয়। আমাদের ইতিহাস মূলত লিখেছে ইউরোপিয়ানরাই। আর ইউরোপীয়রা রাজত্বভিত্তিক ইতিহাস লেখে। রাজার বা শাসকের ইতিহাস। রাজার কৃষিনীতি, খাজনা, ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম। সাধারণ মানুষের কথা থাকে না।
ইয়াকভ : না মানঘিল, ইউরোপীয় ইতিহাসের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি পালটাচ্ছে। এখন ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান বাস্তব পর্যবেক্ষণ। শুধু নথিপত্র ঘাঁটা নয়। সত্যের কাছাকাছি পৌঁছানো। ঘটনার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাসঞ্জাত বিবৃতি থেকে তথ্য উদ্ঘাটন।
কাম্বা : ঠিক ইয়াকভ। ফ্রেডরিখ কুপারের একটা বক্তব্য আছে। তিনি বলছেন, আফ্রিকায় বসবাস করেননি, আফ্রিকার নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বিক্ষুব্ধ মানুষের যন্ত্রণা স্বচক্ষে দেখেননি, এমন কারো পক্ষে আফ্রিকার ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়।
লোরেনটিনা : অর্থাৎ ইতিহাসবিদ সম্পূর্ণ আবেগশূন্য হবেন না।
ইয়াকভ : হওয়া সম্ভবও নয়। ইতিহাস যত সত্যনিষ্ঠ হবে, ঐতিহাসিকের হৃদয় তত বেশি পক্ষপাতী হবে।
মোলি : থুকিডাইডিস পেলোপোনেসিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস লিখতে গিয়ে হৃদয়ানুভূতি, আবেগ, এমনকি দর্শনের আশ্রয়ও নিয়েছিলেন। তাতে ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠতা এতটুকুও হ্রাস পায়নি।
কাম্বা : একদম ঠিক। থুকিডাইডিস প্রসঙ্গে পেরেজ জাগরিন কী বলেছেন জানো? কোনো বিষয় বুঝতে গেলে নিরাবেগ, নৈর্ব্যক্তিক, নিরুৎসুক বা নিজস্ব মূল্যবোধ বিষয়ে নিরপেক্ষ হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন সত্যনিষ্ঠা, পরিশ্রম। প্রয়োজন সমস্ত মিথ্যা রটনা, পূর্বার্জিত সংস্কার ও ভুল ধারণার কুসংস্কারাচ্ছন্ন কুয়াশা কাটিয়ে উপসংহারে পৌঁছানো।
থুকিডাইডিস তাই করেছেন। তিনি সত্যের অপলাপ ঘটাননি। প্রামাণ্য তথ্যের অমর্যাদা করেননি।
লোরেনটিনা : সোয়াবা আন্দোলন এমনই আবেগময় ইতিহাস দাবি করে না কি কাম্বা? সোয়াবা আন্দোলনই নাইজেরকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। এবং নয়া উপনিবেশবাদ সম্পর্কে মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। সেজন্যে সোয়াবা আন্দোলনের নথিপত্র দীর্ঘকাল গোপন রাখা হয়েছে। নাইজেরের গেরিলা অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেক তথ্য পাবে। উত্তর নাইজেরিয়া, ডাহোমে, মালি ও আলজেরিয়া জুড়ে ছড়ানো সেই গেরিলা যুদ্ধ সোয়াবা আন্দোলনেরই আগুন। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা পেলেও বহু রক্তক্ষয়ের পর মাত্র কিছু বছর হলো নাইজের একটি একক আত্মনির্ভর দেশ। রাজনৈতিকভাবে বহুদলীয় এবং গণতান্ত্রিক। ফরাসি উপনিবেশের জন্য এখনো নাইজেরে ইংলিশের সঙ্গে ফরাসি সমান গুরুত্ব পায়।
মোলি : তুমি ফরাসি জানো?
লোরেনটিনা : ইংলিশ, ফরাসি, স্প্যানিশ। এছাড়া আমাদের আফ্রিকান কয়েকটি ভাষা। আমাকে যে-কোনো ভাষায় প্রশ্ন করতে পারো।
কিছুক্ষণের নীরবতা।
অমলিনী ভারি সংকোচ বোধ করতে লাগল। সে তো বাংলা ছাড়া আর কিছুই জানে না। ইংলিশের শিক্ষক, কিন্তু এই ভাষায় কি 888sport live football রচনা করতে পারবে সে? ইচ্ছেই হয়নি কখনো। ভাষা প্রাণময় প্রকাশ। তার সঙ্গে জীবনযাপন করতে হয়। শুধু পড়া বা পড়ানোর মধ্য দিয়ে তা হয় না। ভাষার শ্রাব্যতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার শ্রবণও একমাত্র বিষয় নয়। সে হিন্দিতে আলোচনা শোনে, ফিল্ম দেখে, প্রয়োজন হলে বলতে পারে। কিন্তু সে কি দাবি করতে পারে, সে হিন্দি জানে?
হঠাৎ মেক্সিকান নাট্যকার অ্যালেক্স জারভিরোভা চেঁচিয়ে গেয়ে উঠল :
It’s been a hard day’s night and I been working like a dog
It’s been a hard day’s night, I should be sleeping like a log.
জেরেমিস : : But when I got home to you I find the things that you do. Will make me feel alright.
জেরেমিস, জেরেমিসের পর ইয়াকভ, ইয়াকভের পর কাম্বা, সিঙ্গাপুরের জেনিফার জুং, ইতালির রুবা ইলিয়ানা, লোরেনটিনা, মানঘিল, সাউথ কোরিয়ার সাইয়ুন পিয়াও, আর্জেন্টিনার ফিলিপ, ফিলিপিন্সের জর্জ, গায়ানার সমীর। সেই সঙ্গে অমলিনী। আমার অ্যামেলিয়া চোখের অধিকারিণী আমালাইনি ঘুফথা।
When I’m home everything seems to be right
When I’m home feeling you holding me tight, tight
সমবেত সংগীতে গমগম করতে লাগল ঘরখানা। তারা কেউ কাউকে এখনো চেনে না, কেউ কারো নাম সঠিকভাবে মনে করতে পারছে না, কেউ কারো ভাষা জানে না, অধিকাংশই ভাঙা, অশুদ্ধ ইংলিশে কাজ চালায়। কিন্তু বিটলস সবার গান। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা চারটি মহাদেশ মিশে গাইছে, বাড়ি ফিরলে মনে হয় এই তো, সবকিছুই ঠিকই আছে। বাড়ি ফিরলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো যখন, যখন তুমি আমার খুব কাছে …। [চলবে]


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.