\ ৯ \
পরিচয়পর্ব শেষ হতেই খাবার পালা। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অমলিনী দেখছিল নানাবিধ মাংসের ডাববা, চাপাটি, রাইস, মাংস দেওয়া ডাল, মাংস মেশানো সালাড। অত লোকের খাবার, গন্ধে ভরে গিয়েছে জায়গাটা। কেউ একটুও তাড়া করছে না, কাউকে ঠেলে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে না। তার নিজের দেশে আপাত শিক্ষিত, সুভদ্র, সুশীল ও সুসজ্জিত মানুষেরা খাবার লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক সময়েই অমার্জিত আচরণ করেন। এমন পঙ্ক্তিভোজনে সে মোটেও স্বস্তি পায় না। সে লক্ষ করল প্রায় সবাই পেস্নট উপচানো খাবার নিয়ে নিচ্ছে। কারণ, পুনরায় কিছু নিতে গেলে ফের লাইনের লেজে গিয়ে দাঁড়াতে হবে।
মাংস, মাংস আর মাংস! আমি অদৃশ্য অবয়বে আমার প্রেয়সীর অঙ্গে লীন থেকে বুঝতে পারছি, এত মাংসের বাহুল্যে সে দিশেহারা! আমার অমলিনী গোমাংস ভক্ষণ করে না! সে ক্ষীণ স্বরে একজন পরিচারককে প্রশ্ন করল, ‘এর মধ্যে কোন কোন খাবার বিফ নয়?’
লোকটি বলল, ‘আমি ঠিক জানি না। তুমি কিচেনে গিয়ে জেনে নিতে পারো।’
কিচেন?
অসহায় চোখে বিশাল অলিন্দের বহুদূর প্রামেত্ম চাইল সে। এই অবস্থান ছেড়ে যাওয়া মানে আবার পেস্নট হাতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা! চিনেমাটির ভারী রেকাব বইতে তার হাত টাটিয়ে উঠছিল। নিজের অসহায়তার ভারী বেদনা বোধ করছি আমি! কী অদ্ভুত দশা! আমি আছি, কিন্তু নেই। আমি প্রাণ ভরে ভালোবাসতে পারি, কিন্তু ভার বইতে পারি না। আমার অসমাপ্ত 888sport alternative linkের পা-ুলিপিতে আমার ইচ্ছার অক্ষর লেখা হয়, সে-লেখা কেউ জানতে পারে না!
খাবার বেছে নেবার সময় নেই। তাই সে কয়েকটি চাপাটির টুকরো নিল, আচার আর নিরামিষ সালাড নিল। খাবারের পেস্নট নিয়ে ডেকে গেল যখন, সূর্যাস্তের সৌন্দর্য ঢেকে গিয়েছে মেঘে। ঘন কালো মেঘ ঝুলছে মাথার ওপর। পাখিরা সাঁতরে ডাঙার দিকে চলেছে। মেঘের জন্য একটু আগেই আঁধার নামছিল সেদিন। বর্ষণের আগেকার চাপা আলোয় সে দেখতে পাচ্ছিল ঝিলের জলে স্বাস্থ্যবান মাছগুলি। নিজের দেশ হলে ওই পাখিদের ডাক দিত সে। মাছেদের রুটির টুকরো দিত। কিন্তু এদেশে ওসব নিষেধ। সে দূরের বনপথ দেখতে দেখতে রুটি চিবোতে লাগল। রোজানা ও ইয়াসমিন এসে দাঁড়াল সামনে। ইয়াসমিন বলল, ‘খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। যেন মেঘের নিচে নীল ময়ূরী। ছবি নিই তোমার?’
‘ধন্যবাদ ইয়াসমিন। তুমি আজ সাজোনি কেন? সববাই কত সেজেগুজে এসেছে।’
‘ওঃ। তুমি জানো না? তিনদিন ধরে এক পোশাক পরে আছি আমি। ভাবলেই গা ঘিনঘিন করছে। আমার দুটো সুটকেসই হারিয়েছি।’
‘হারিয়েছ?’
‘এয়ারলাইন্সের ভুল মোলি।’
নানান কোণ থেকে অমলিনীর ছবি তুলে সে চলে গেল। থরে থরে নানাবিধ মাংস সাজানো থালা নিয়ে হাজির হলো হারিক। এমন বিপুল পরিমাণ খাদ্য নিয়ে কোনো সুন্দরী এমন জনসমাবেশে সপ্রতিভ এসে দাঁড়াবে কি তার দেশে?
হারিক তার লাল টকটকে ঠোঁটের আকর্ষণ রক্ষা করতে করতে মাংসখ– কামড় দিলো। অমলিনীর পাতে চোখ পড়তে বলে উঠল, ‘এরই মধ্যে খাওয়া শেষ?’
অমলিনী বলল, ‘না না। এই তো। খাচ্ছি।’
‘ওইটুকু! বলো কী! তোমার তুলনায় আমি তো রাক্ষস তাহলে।’
‘কী যে বলো! আমি আসলে মনের মতো খাবার খুঁজে পেলাম না। বিফ খাই না তো।’
‘চিকেন নিতে পারতে!’
‘আজ চিকেন খেতেও ইচ্ছে করছে না।’
‘তুমি কি কোনো মাংসই খাও না?’
‘খাই তো! বিফ ছাড়া সবই খাই।’
‘বিফে সমস্যা কী?’
‘কিছুই না! হিন্দুরা গরু খায় না। তাই ওটা খাবার অভ্যাস হয়নি। আমার ঠাকুমা-দিদিমারা চিকেনও খেতেন না। স্পর্শ পর্যন্ত করতেন না। খাদ্যাভ্যাস তো ছোট থেকেই তৈরি হয়ে যায়, তাই না?’
‘তা ঠিক। তবে বাবা-মায়ের হাতের বাইরে গেলে আমরা সবাই একটু-আধটু নিয়ম ভাঙতে শুরু করি। যাকে বলে, জীবনের স্বাদ নিই।’
‘ঠিক। আমার আর গরুর স্বাদ নেওয়া হয়নি। হরিণ খেয়েছি, ভেড়া, হাঁস, কোয়েল – কিছুই ভালো লাগেনি।’
‘হুম্ম! আমার হিন্দুত্ব সম্পর্কে বিশেষ ধারণা নেই জানো। বলিউড হিন্দি ফিল্মসে দেখেছি ইন্ডিয়ানরা অদ্ভুত সব মূর্তি তৈরি করে। ঢাকঢোল পিটিয়ে পুজো করে, তারপর মূর্তিগুলো জলে ফেলে দেয়।’
‘ওগুলো হিন্দুত্বের অংশ। আসলে হিন্দুত্ব অনেকগুলো আদর্শের সমন্বয়ে তৈরি একটি সংস্কৃতি। তাকে ধর্ম বললে ধর্ম!’
‘আমার খুব ইন্ডিয়া যেতে ইচ্ছে করে।’
‘অবশ্যই এসো।’
চুপ করে খাচ্ছিল রোজানা। তার থালাতেও বিপুল পরিমাণ খাদ্য ছিল। এখন প্রায় শেষ! সে বলল, ‘ইন্ডিয়ার সঙ্গে ইজিপ্টের দীর্ঘকালের সম্পর্ক। এমনকি আমাদের সংস্কৃতির মধ্যেও মিল পাওয়া যায়। যাই বলো আর তাই বলো, আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তোমার কপালের ওই ডট। বিন্দি বলে না?’
‘ঠিক, বিন্দিই বলে বটে। আমার নিজস্ব ভাষায় বলে টিপ।’
‘খুব, খুব সুন্দর!’
‘আমি দেব তোমাকে রোজানা। তুমি পরবে?’
‘আমি জানি না, ঠিক জানি না পরব কি না। দিও তুমি। সংগ্রহে থাকবে আমার।’
হারিক মাংস ভরা মুখে বলল, ‘এখানে ফওরলে খে ধেখথে যাচ্ছে?’
সবাই হেসে ফেলল শুনে। এখানে পরলে কে দেখতে যাচ্ছে? সত্যিই। এখানে পোশাক-আশাক সাজগোজ স্বাধীনভাবে করাই যায়। কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু স্বাধীনতার উপলব্ধি যে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া।
রোজানা হাসতে হাসতেও উদাসীন হয়ে গেল খানিক। তারপর কী ভেবে রোজানা বলল, ‘কেমন লাগছে এখানে তোমাদের!’
মোলি : এখনো পর্যন্ত ঠিক আছে। কী জানো, যখন পেস্নন থেকে নেমে ইমিগ্রেশনে দাঁড়াই, সেই সময়টা, একটা চাপা উদ্বেগ – সব ঠিক থাকবে তো? এটা খুব খারাপ লাগে। অফিসাররা অত্যন্ত ভদ্র, কিন্তু তাঁদের কাঠিন্য বড় রূঢ় মনে হয়। যেন তাঁরা খুব সন্দেহের চোখে দেখছেন আমায়। এটা ওঁদের কর্তব্য, কিন্তু নিজেকে সন্দেহভাজন ভাবতে অসুবিধে হয়।
রোজানা : ঠিক বলেছ। এমনসব যন্ত্রের ভেতর দিয়ে ওরা পরীক্ষা নেয়, যেন আমাদের মনের ভেতরটাও পড়ে ফেলবে। আমারও খুব খারাপ লাগে। আমি আরেকটু খাবার আনব। তুমি যাবে?
অমলিনীর আর খাবারের দরকার ছিল না। রোজানা চলে গেল। রোজানার প্রথমবারের খাবারের পরিমাণ ছিল তার চারগুণ। কাম্বা ঘালোন্দা এসে দাঁড়াল কাছে। আজ সে রাজার মতো পোশাক পরেছে। মাথায় চৌকো টুপি, তার থেকে ঝুমকো ঝোলা। গায়ে মুক্তোর পুঁতি বসানো আলখাল্লা প্রায় মাটিছোঁয়া। সাদা সিল্কের পোশাকে তাকে ধর্মযাজকের মতো লাগছে। সে বলল, ‘খাওয়া হয়নি? ওদিকে পানীয়র জন্য লম্বা লাইন।’
মোলি : তুমি খেয়েছ? পানীয়র লাইনে গেলে না?
কাম্বা : খাওয়া হয়ে গেছে। আমি মদ্যপান করি না।
মোলি : আমি মাঝে মাঝে করি। তবে আজ ভারী ক্লান্ত। আজ খাবো না। চলো বাইরে একটু হাঁটবে।
কাম্বা : কোথায় যাবে?
মোলি : ওই বনের দিকে যেতে ইচ্ছে করছে।
কাম্বা : বৃষ্টি আসছে।
মোলি : আরো ঘণ্টাখানেক।
কাম্বা : তুমি মেঘ দেখে বুঝতে পারো?
মোলি : পারি। আমি বলছি বলে যেতে হবে না। যদি তোমার ইচ্ছে করে তবেই চলো।
কাম্বা : আমি হাঁটতে খুব ভালোবাসি। তোমাকে বলা রইল, যেদিন যখন হাঁটতে ইচ্ছে করবে, আমায় ডেকো।
মোলি : বেশ তো। তুমি বলছিলে তুমি সাংবাদিক। এখনো কি তাই?
কাম্বা : অনেকদিন সাংবাদিকতার পর আমি নিজেই এখন একটি কাগজের অংশীদার এবং সম্পাদক। এসে তো পড়লাম আইওয়ায়। এখান থেকে ইন্টারনেটে অনেক দায়িত্ব সামলাতে হবে। তোমায় সেদিন বলছিলাম যে অর্থাভাবে আমি বিয়ে করতে পারিনি। আজ আমার প্রচুর অর্থ। মার্সিডিজ বেঞ্জ চাপি। বিশাল বাড়ি কিনেছি। মনের মতো করে সাজিয়েছি। জমি কিনেছি অনেক। বিষয়-আশয়ের আকর্ষণ আমার মিটে গিয়েছে। এখন আবার লেখাপড়া করতে ইচ্ছে করে। আমি দিলিস্ন গিয়েছিলাম পিএইচ.ডি করব বলে। তখন বাবা মারা গেল। দাদারা যে যারটা বুঝে নিল। মা-ও একা হয়ে গিয়েছিল। আমাকে ফিরে যেতে হলো দেশে। ভাবছি আমেরিকায় পিএইচ.ডি করব।
মোলি : কী নিয়ে পড়েছ তুমি?
কাম্বা : ইকোনমিক্স, সোশ্যাল সায়েন্স, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস।
মোলি : আর তোমার লেখালেখি?
কাম্বা : আমার একটা 888sport app download apkর বই আছে। কাগজের জন্য
888sport live-নিবন্ধ আমাকে নিয়মিতই লিখতে হয়। পাঁচ বছর আগে একটা 888sport alternative link শুরু করেছিলাম। আজো শেষ হয়নি।
মোলি : কেন?
কাম্বা : সময়ের অভাব। কাগজ চালানোর চাপ। নানারকম সামাজিক কাজ। আমার লেখার একটা অংশ একজন প্রকাশককে দিয়েছিলাম। তারা পছন্দ করেছে। কিন্তু আমার পরিকল্পনা তিন খ– একটা বিশাল 888sport alternative link লিখব। প্রকাশক বলছে সেটা একটা খ– সম্পূর্ণ করতে। বেশ নামী প্রকাশক। সারাবিশ্বে ব্যবসা করে। আমার প্রতিভা ওরা বুঝতে পেরেছে। দেখো, আমার দেশে আমার যা ক্ষমতা তাতে অনেক প্রকাশকই আমাকে খুশি করার জন্য বই ছেপে দেবে। কিন্তু আমি সেরকম চাই না।
মোলি : তাহলে তোমার উচিত প্রকাশকের প্রস্তাব মেনে নেওয়া।
কাম্বা : বলছ?
মোলি : নিশ্চয়ই। সেইসঙ্গে এই তিনমাস ব্যবহার করো। প্রতিভা ভাঁড়ারে জমিয়ে রাখলে চলবে কী করে? তুমি এখানে এসেছ যখন তোমার জায়গায় কাউকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছ তো?
কাম্বা : দিয়েছি তবু নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে ভরসা হয় না।
মোলি : সময় ভাগ করে নাও কাম্বা। এমন টানা তিন মাস তুমি আর পাবে না।
কাম্বা : ঠিক বলেছ মোলি। আমাদের মতো দেশে রুজিরোজগারই প্রধান হয়ে যায় তো, সৃজনশীল কাজ অবহেলিত হয়।
মোলি : আমারও একই সমস্যা। চাকরি রাখতে হবে। লিখে ভরণ-পোষণ চালাতে পারব না।
কাম্বা : বিয়ে করোনি?
মোলি : করেছি। কিন্তু বরের রোজগারে নিজের খরচ চালাতে আত্মসম্মানে লাগে।
কাম্বা : তা কেন! স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে তো একটাই পরিবার।
মোলি : তুমি বিয়ে করছ না কেন?
কাম্বা : করব। ভারতীয় মেয়েটিকে ভুলতে পারছিলাম না। তারপর মা মারা গেল। একেবারে একা হয়ে গেলাম বুঝলে।
মোলি : আর কেউ আসেনি জীবনে?
কাম্বা : বিষয়-সম্পত্তি, নাম-ডাক থাকলে মেয়ের অভাব হয় নাকি? আমারই কাউকে পছন্দ হয় না। সম্প্রতি একজনকে ভালো লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। মাস্টার্স করছে। তার পড়া শেষ করলে বিয়ে করব। আমার চেয়ে দশ বছরের ছোট।
মোলি : ছোট-বড় কিছু নয়, তুমিই তো বলছিলে। মনের মিল আর 888sport apk download apk latest version ভালোবাসা থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কাম্বা : ভালোবাসি কিনা জানি না। তবে আমার বউ হওয়ার যোগ্য মনে হয়।
মোলি : তাকে নির্বাচন করলে কেন?
কাম্বা : সে আমাকে খুবই ভক্তি-888sport apk download apk latest version করে। আমার কথার ওপর কথা বলে না। আমি তো একটু কেজো ধরনের। সে খুব হাসাতে পারে। আর কী। ভারতীয় মেয়েটি ছিল আমার মনের সঙ্গী, আমার ভাবনার সঙ্গী। চিন্তা, বুদ্ধি, সচেতনতা সব দিক দিয়ে আমার বরাবর। এমনকি যৌনজীবনেও আমাদের চমৎকার বোঝাপড়া ছিল। সহজে কি এমনটা পাওয়া যায়, বলো! তোমাকে পরে ছবি দেখাব। জানো তার বিয়ের পরও সে আমাকে ভুলতে পারেনি। কিছুদিন আগেও আমরা ফেসবুক চ্যাট করেছি। আমার নেশা ধরে গিয়েছিল। দিন নেই রাত নেই ফেসবুক খুলে বসে আছি কখন ও অনলাইন হয়! হাজারবার দেখা ওর ছবি আবার ফিরে ফিরে দেখছি। শতবার পড়া কথা পড়ছি ফের। ওর পারিবারিক জীবনের ছবি দেখে হিংসেয় জ্বলে যায় আমার বুক। রাতে ঘুম হয় না। কাজে মন লাগে না। আমার সব শান্তি গেল। যখন আমাদের ছাড়াছাড়ি হয় তখন যে-যন্ত্রণা পেয়েছি, তা যেন মর্মঘাতী হয়ে ফিরে এলো ফেসবুকে। একদিন মনে হলো, এই সম্পর্ক আমাকে কী দেবে? সুখ, নয়, শান্তি নয়, পরিবার নয়। এ দিয়ে আমি কী করব? একদিন হঠাৎ সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম। যা পাইনি তা নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই।
বিদ্যুৎ চমকাল। অন্ধকার গাঢ় হয়ে এসেছে। নিথর ঝিল কাচের মতো বিছিয়ে আছে। দূর থেকে যা বন মনে হচ্ছিল, কাছ থেকে তা রোপিত উদ্যান বলে মনে হয়। তারা ফেরার পথে ধরল। ডেকে লোক প্রায় নেই বললেই চলে। হাওয়া বইতে শুরু করল। তারা দ্রম্নত পা চালাল। ট্রাবলউড হলে পৌঁছে দেখল অর্ধেক অতিথি চলে গিয়েছে। সুরাপায়ীদের লাইন তখনো জারি আছে। সুরার মজা একবারে জমে না। বারবার খেতে হয়। সে মজায় লাইন দিয়েছে ইয়াসমিন, শবনম, জিনেট, রুথ, হারিক, লোরেনটিনা, ইয়েরমেন, অ্যালেক্স, রুবা, ফিলিপ আর হাসিন সুহালি।
অতিথিরাও আছেন সুরাপায়ীর লাইনে। ইয়াপ সদস্যরাও। এরই মধ্যে অনেকেই বেশ স্ফূর্তি প্রকাশ করছে। কাম্বা ঘালোন্দাকে ডেকে নিল রুথ। এক যুবককে নিয়ে এগিয়ে এলো মেডেসা মার্টিন।
‘হাই মোলি? কেমন লাগছে? আনন্দে আছ তো?’
মোলি বলল, ‘নিশ্চয়ই। কী সুন্দর এই জায়গা। তোমাদের ব্যবস্থাও কত ভালো!’
‘এ হলো নিক্সন। তোমার শাড়ি দেখে ও চমৎকৃত। তোমার সঙ্গে আলাপ করতে চায়। নিক আমার খুব ভালো বন্ধু।’
‘হাই নিক। দেখা হয়ে ভালো লাগল।’
‘হ্যালো মোলিস্ন!’
ভালোই পান করেছে নিক্সন। তার চোখমুখ উল্লাসে চকচক করছে। অমলিনীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো সে। অমলিনী সহজভাবেই নিক্সনের সঙ্গে করমর্দন করল। কিন্তু নিক্সন, অসভ্য কামাতুর মদ্যপ নিক্সন তাঁর আঙুল দিয়ে অমলিনীর করতলে আঁচড় কাটল। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো হাত ছাড়িয়ে নিল মোলি। আমি, তার নিরবয়ব প্রেমিক, কবর থেকে উঠে আসা অসহায় সত্তা, স্পষ্ট দেখলাম তার বিস্মিত, আহত, ব্যথিত দৃষ্টি! বেদনায় কুঁকড়ে যেতে লাগলাম আমি! তখন তার চোখ জ্বলে উঠল ক্রোধে! ঠিক সেই মুহূর্তে লাম্পট্যের চরমে পৌঁছে এক চোখ টিপল নিক্সন। অমলিনীর ইচ্ছে হলো প্রকা- চড় মারে ছেলেটিকে! ঠিক তখনই, পরিষ্কার উচ্চারণে একজন ডেকে উঠল, ‘অমলিনী, অমলিনী! কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।’
‘কবসে আপকি ইমেত্মজার মে হুঁ অমলিনী!’ পরিচ্ছন্ন বিশুদ্ধ হিন্দি শুনে চমকিত হলো অমলিনী! আমি আমার বায়ব শরীরে শীতল জলজ বর্ষণঘন আদরে আমার এই সামান্য আয়ুষ্কালের প্রণয়িনী আমার অ্যামেলিয়াকে ধুয়ে দিতে লাগলাম। ধুয়ে দিতে লাগলাম তার নিক্সনজনিত গস্নানি! মোলি, আমার সোনা, ওসব রাস্তার ময়লা! ভুলে যাও! তুমি তো ভারত থেকে এসেছ। কত মলময় পথ, কত আবিল মানুষ তুমি পেরিয়ে এসেছ আমার অমলিনী। অমল আমার!
অমলিনীর দিকে এগিয়ে এসেছে প্যাট্রিক। প্যাট্রিক উইলসন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দি বিভাগের প্রধান। তার সঙ্গে সেরিনা জিওফ্রে। সমাজ888sport apkের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।
রোগা সুউচ্চ প্যাট্রিক সম্পূর্ণ ভারতীয় ধরনে নমস্কার সেরে বলল, ‘তুমি এসেছ শুনেছি। দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। হিন্দিতে বই 888sport app download apk latest version হয়েছে কি হয়নি?’
মোলি বলল, ‘হয়েছে। আপনি এত ভালো হিন্দি বলেন, আমি কিন্তু বিশুদ্ধ হিন্দি বলতে গিয়ে হোঁচট খাই।’
‘তাতে কী! তোমার ভাষা তো বাংলা। আমি অবশ্য বাংলা পড়তে পারি না। আমাকে তোমার হিন্দি বই দেবে তো?’
‘আমি দুঃখিত প্যাট্রিক। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের জন্য কিছু বই এনেছি আমি, তার সবই বাংলা।’
‘ঠিক আছে, সংগ্রহ করে নেব আমি। কলকাতা আমার দ্বিতীয় বাসভূমি। শোনো অমলিনী, আজ খুব বৃষ্টি হবে। তাই আর দাঁড়াব না। তোমাদের একদিন আমার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করব। কথা হবে, কেমন?’
এতক্ষণে সেরিনা জিওফ্রে বলে উঠল, ‘প্যাট্রিক, তুমি আর পালটালে না। এতক্ষণে আমাকে একটি কথাও বলতে দাওনি।’
‘বলো বলো বলো সেরিনা! পরিচয় তো হয়েই গিয়েছে। বলো কী বলবে।’
সেরিনা বলল, ‘তোমার পরিচিতিতে দেখলাম অ্যামিশদের সম্পর্কে গবেষণা করতে চাও। তুমি কি সত্যি আগ্রহী? ওদের সম্পর্কে কতটা জানো?’
মোলি বলল, ‘খুব ভাসা-ভাসা ধারণা আছে সেরিনা। কিন্তু আমি আগ্রহী। আসলে গবেষণা করার পক্ষে তিন মাস যথেষ্ট নয়। কিন্তু যদি ওঁদের জীবনযাপন কাছ থেকে দেখতে পেতাম!’
‘দেখো আমোলিনি, অধ্যাপনা থেকে অবসর নেবার পরেও আমি অ্যামিশ সমাজ নিয়ে কাজ করে চলেছি। এই আমার কার্ড। যদি আগ্রহ বোধ করো, ফোন কোরো আমায়।’
‘অনেক ধন্যবাদ তোমাকে সেরিনা।’
প্যাট্রিক ও সেরিনা চলে যেতে মোলি দেখল, ট্রাবলউড সেন্টার আরো সুনসান হয়ে উঠেছে। খুব বিদ্যুৎ ঝলকাচ্ছে। চেনা মুখের খোঁজে সে এদিক-ওদিক চাইল।
ড্রাইভার দিলীপিতারোমের সঙ্গে দেখা হলো। দুটো গাড়ি চলে গিয়েছে। সে বলল, বাইরে কয়েকজন অপেক্ষা করছে, আর দুজন পেলেই সে গাড়ি ছাড়তে পারে। মোলি আর কাম্বা চলে যেতে রাজি হলো। বাইরে বেরিয়ে দেখল রোজানা, জেনিফার আর শ্রীরং নিবাস অপেক্ষা করছে।
একের পর এক গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে পার্কিং থেকে। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। একটা ছাতা পাবার জন্য ছুটোছুটি করতে লাগল দিলীপিতারোম। পার্কিং পর্যন্ত পৌঁছতে সবাই ভিজে চুপসে যাবে! সে তা হতে দিতে পারে না। এখানে যে গাড়িচালক, নিছকই চালক মাত্র নয়, সেখানেই তার দায়িত্ব ফুরোয় না। ইয়াপের কর্মী হিসেবে প্রত্যেক অতিথির সুবিধা-অসুবিধার দিকে লক্ষ রাখাও তার কাজ।
একখানা ছাতা সে ঠিকই সংগ্রহ করে আনল। বিশাল সেই ছাতার তলায় মোলি, কাম্বা, জেনিফার, রোজানা, শ্রীরং জড়িয়ে জাপটে দল পাকিয়ে হা হা হা হি হি হি করতে করতে পার্কিংয়ের দিকে এগোতে লাগল পায়ে পায়ে। সকলেই অল্পবিস্তর ভিজছে। দিলীপিতারোম ভিজতে ভিজতে চলে গেল গাড়ি চালু করে একটু কাছিয়ে আনবে বলে। হঠাৎ মোলি বলে উঠল, ‘আমি বৃষ্টিতে ভিজব।’
জেনিফার : পাগল নাকি? এই রাত্তিরে, ঠান্ডা জলে ভিজে সর্দি হোক আর কী!
রোজানা : তোমার এত সুন্দর শাড়ি ভিজে যাবে মোলি।
‘আমি ভিজব ও ও ও!’
দল ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল অমলিনী। ঝমঝমে শীতল বর্ষণে, দুহাতে শাড়ি গুটিয়ে ছুটতে লাগল সে। হাসছে শিশুর মতো। নির্বাধ আনন্দে সে এখন ছোট্ট বালিকা যেন। ভিজে হাওয়ায় মিশে, আমার মনে হলো তাকে কোলে তুলে নিই। ঠিক তখন, চালু করা গাড়ির আসন থেকে নেমে, প্রায় কোলে তুলে মোলিকে সামনের আসনে বসিয়ে দিলো দিলীপিতারোম। পরিষ্কার সাদা তোয়ালে দিয়ে বলল, ‘শিগগির মুছে নাও, ভিজে গিয়েছ।’
‘তুমিও তো ভিজে গিয়েছ।’
‘আমার কিছু হবে না।’
‘আমারও হবে না।’
‘এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে তুমি অভ্যস্ত হওনি মোলি।’
‘দ্যাটস ট্রু! থ্যাঙ্কস!’
দিলীপিতারোম গাড়ি আনতে তারা উঠে পড়ল। মোলি সামনের আসনটি বেছে নিয়েছিল। দিলীপিতারোম গাড়ি চালু করতেই প্রবল বর্ষণের সঙ্গে বড় বড় বরফখ- পড়তে লাগল। শিলাবৃষ্টি। দেখতে দেখতে সাদা হয়ে গেল পথ। গাড়ির ভেতর উষ্ণতা বাড়িয়ে দিলো দিলীপিতারোম। কাম্বা বলল, ‘ঠিক এক ঘণ্টা দশ মিনিট মোলি।’
রোজানা : কিসের?
কাম্বা : মোলি অনুমান করেছিল এক ঘণ্টা পর বৃষ্টি নামবে।
জেনিফার : মোলি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। কপালে ওর গোল জিনিসটা ওর তৃতীয় নয়ন।
শ্রীরং : দ্যাট ইজ বিন্দি। আই নো। দি হিন্দি মুভি। বলিউড।
কাম্বা : আই অলসো লাইক ওয়াচিং বলিউডি মুভিজ। শাহরুখ খান। ঐশ্বরিয়া রাই।
রোজানা : আমিও ভালোবাসি হিন্দি মুভিজ। কী সুন্দর সব গান। আর মেয়েরা কী সুন্দর পোশাক পরে। বিন্দিও আমি খুব পছন্দ করি। একবার ইন্ডিয়ান এমপোরিয়াম থেকে কিনেছিলাম। মোলিকে বলছিলাম সে-কথা। এর ধর্মীয় তাৎপর্য অবশ্য ব্যাখ্যা করেনি মোলি।
মোলি : ধর্ম নিয়ে আমার ধারণা খুবই কম রোজানা। জন্মসূত্রে আমি হিন্দু। কিন্তু আমার কোনো ধর্মীয় সচেতনতা নেই।
রোজানা : কিন্তু তুমি বিফ খাও না হিন্দু বলেই তো। তুমি নিজেই তা বলেছ।
মোলি : কী জানো রোজানা, আমি কী পেলাম, কী পারলাম না, ঈশ্বরকে পূর্বদিকে খুঁজলাম না পশ্চিম দিকে – এর কোনোটাই আমার কাছে ধর্ম নয়। ধর্ম হলো সত্য, সুন্দর ও প্রেমের আরাধনা। মানুষ ও জীবজগতের প্রতি ভালোবাসাই আমার কাছে ধর্ম। গরু খেলেও আমার ধর্ম যাবে না, না খেলেও আমি বিশাল ধার্মিক হয়ে যাচ্ছি না। আমাদের দেশে বেশ কিছু হিন্দু-চিন্তক মনে করেন প্রকাশ্যে গোমাংস ভক্ষণই নিরপেক্ষ ও প্রগতিশীলতার প্রমাণ। একটা মহাবিপস্নব! আমি এমনটা পছন্দ করি না। আমি তো শিং-মাগুর-কই মাছও খাই না। জাপানি সু-সি খাওয়ার কথা ভাবতেও পারি না। সাপের মাংস কখনো চেখে দেখিনি। চিকেন, মাছ বা গোট মিটের রান্নায় আঁশটে গন্ধ থাকলেও আমি খেতে পারি না। এর সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কোথায়?
কাম্বা : কিন্তু তোমার দেশে গরু বা ষাঁড় ভগবান। তাই না? আমি দিলিস্নতে ছিলাম ছ-মাস। তখন দেখেছি। গরুকেও বিন্দি, মালা এইসব পরানো হয়।
মোলি : ঠিক। শুধু গরু কেন? বাঘ, সিংহ, হনুমান, সাপ, ইঁদুর, ময়ূর, হাঁস – সবাই ভগবান। তারা কখনো ভগবানের বাহন, কখনো প্রতীক, কখনো প্রতিনিধি। হিন্দুরা মূর্তি গড়তে পছন্দ করে। আর টিপ হলো মঙ্গলচিহ্ন। এখন আমার কপালে অবশ্যই সাজের অঙ্গ!
কিছুক্ষণ সবাই নীরব। খুব ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে দিলীপিতারোম। জেনিফার বলে উঠল, ‘আমার ধর্ম আমি মানুষ। সিঙ্গাপুরে সততা ও পরিশ্রম সবচেয়ে বড় নৈতিক আদর্শ। রিলিজিওন নিয়ে কেউ ভাবে না।’
দিলীপিতারোম : সততা পৃথিবীর তামাম মানুষের নৈতিক আদর্শ! তবে আমার তো পরিশ্রমের চেয়ে বিশ্রামটাই আদর্শ মনে হয়!
তার বলার ভঙ্গিতে সবাই হেসে উঠল। বৃষ্টি খানিকটা ধরেছে। অন্ধকারে প্রায় কিছুই দেখা যায় না। গাড়ির আলোয় ভিজে মসৃণ পথ চকচক করে উঠছে। মোলি বলল, ‘তোমার কি এটাই শেষ সওয়ারি আজকের মতো?’
দিলীপ : না। আরেকবার আসতে হবে।
মোলি : অনেক রাত হয়ে যাবে, তাই না?
দিলীপ : তা হবে।
মোলি : তোমার নামটি খুব অদ্ভুত দিলীপিতারোম।
দিলীপ : আমি আদতে থাইল্যান্ডের মানুষ।
শ্রীরং : ইউ থাইল্যান্ড। মি থাইল্যান্ড। মি শ্রীরং নিবাস।
দিলীপ : নাইস টু মিট ইউ নিবাস। আমি কখনো থাইল্যান্ডে যাইনি। একবার যাবার ইচ্ছে আছে। আমাকে তোমরা মুর বলে ডেকো। দিলীপিতারোম খুব লম্বা নাম।
আস্তে আস্তে কথা থেমে গেল। যে যার নিজের ভাবনায় অথবা ক্লান্তিতে ডুবে গেল। আবার খুব জোরে বৃষ্টি নেমেছে। ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছে মুর। জিপিএস চালু রেখেছে। জায়গাটা শহর থেকে বেশ দূরে। অমলিনী মুরকে একবার ভালো করে দেখে নিল। লম্বা কাঁচাপাকা চুল খুলে রাখে মুর। তার চোখ ছোট। সুন্দর স্বাস্থ্য। গায়ের রং সাদা। কিন্তু আমেরিকান শ্বেতাঙ্গের মতো নয়। একটু হলদেটে ভাব। তার গালে দাড়ির অভাব। চিবুকের কাছে একগুচ্ছ মাত্র।
চুলের দৈর্ঘ্য বাদ দিলে, দিলীপিতারোমকে দেখার পর থেকে অনেকবার সন্দীপনের সঙ্গে মিল পেয়েছে সে। চাউনি, হাবভাব, ঠোঁট, নাক, শরীরের গড়ন। এবং, তার সন্দীপনের সঙ্গে কথা বলতে ভারী ইচ্ছে করছে। কে জানে, হয়তো সে ফোন করলে কথাবার্তা কিছু স্বাভাবিক হতে পারে। নিজেকে সে বুঝতে পারছে না কিছুতেই। সন্দীপনকে সে আজো ভালোবাসে, নাকি বাসে না! নিজের মধ্যে এই জবাব পাওয়া তার পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। মায়ের সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছে করছে খুব। সে হঠাৎ বলে ফেলল, ‘মুর, তুমি কি কাল ইমুতে আসবে?’
মুর : আসতে পারি। কেন? কোনো দরকার?
মোলি : আমাকে একবার তোমাদের আইটি বিভাগে নিয়ে যাবে?
মুর : কেন? তোমার আপত্তি না থাকলে বলতে পারো।
মোলি : আমার ফোনের সব ঠিক আছে। কিন্তু কিছুতেই
ওয়াইফাই সংযোগ করতে পারছি না। দেশে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছি না, ভারী খারাপ লাগছে। সারা বলল আইটিতে গেলে ওরা ঠিক করে দেবে।
মুর : আমি কি দেখতে পারি একবার মোলি?
ইমুর পার্কিং লটে যখন তারা পৌঁছল তখনো বৃষ্টি থামেনি। তারা দৌড়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠল, তবু ভিজে গেল খানিকটা। দিলীপিতারোম লবিতে অপেক্ষা করছিল। অমলিনী তার ভিজে শাড়ি পালটাবার অবকাশ পেল না। তার এই ভেবে খারাপ লাগছিল যে, আবার অতখানি পথ এই দুর্যোগে পাড়ি দিতে হবে মুরকে। শাড়ি খুলে অন্য পোশাক পরা সময়সাপেক্ষ। গোটা তিনেক সেফটিপিন খুলতে হবে। একটি শাড়ি মানে তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরো তিনখানা সহসম্পূরণ।
সে তার ফোন নিয়ে নিচের লবিতে চলল। দিলীপিতারোম ফোনের এটা-ওটা ঘাঁটতে লাগল। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট। আশা হারাতে শুরু করল অমলিনী। সে একবার না ভেবে পারল না, ফোন সমস্যার সমাধান করতে চাওয়ার দুঃসাহস প্রদর্শন মুরের উচিত হয়নি। মূর্খ মূঢ় মুর, তুমি বুঝতে পারছ না কেন, আমি ভিজে পোশাকে বসে আছি। শীতে কাঁপছি রীতিমতো।
সঙ্গে সঙ্গেই লজ্জিত হলো সে। এ কী স্বার্থপরতা। সমস্যা তার, মুরের নয়। মুরকে আরেকবার ফিরে যেতে হবে, সে বলছিল, কারণ ড্রাইভার সারা বিদায় নিয়েছে। তার বেস্নজার ভিজে গেছে। চুল থেকে জল পড়ছে টুপটাপ। হয়তো সে পারবে না। তবু এই সাহায্যের ইচ্ছেটুকুকে অসম্মান করতে পারে না সে।
সহসা দিলীপিতারোম চেঁচিয়ে উঠল। ‘ওঃ কী বোকা আমি! এই নাও হয়ে গেছে। ব্রাউজার বদলে দিলাম শুধু। এই দেখো। এখন তুমি স্বাধীন!’
অমলিনী বিশ্বাস করতে পারছিল না! একালের পড়ুয়া তরুণ
জন জেমস যা পারেনি, দিলীপিতারোম তা করে দিলো অবলীলায়!
মুর উঠে দাঁড়াল। ‘আমি আসি। আমাকে যেতে হবে। এখান থেকে প্রায় চলিস্নশ মাইল।’ মুরকে জড়িয়ে ধরল অমলিনী। অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে বলল, ‘ঈশ্বর তোমাকে পাঠিয়েছেন। ১৯ তারিখে এসেছি, আজ 888sport cricket BPL rate, আজ পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।’ মুর বলল, ‘চিল্যাক্স। আর তোমার চিন্তা নেই। যেখানেই যাও তোমার
ওয়াইফাই সংযোগে অসুবিধে হবে না। ইয়োর ওয়্যারলেস ফাইডেলিটি উইল কিপ ওয়ার্কিং। তুমি শিখে গিয়েছ।’ (চলবে)


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.