পাদটীকা
বাসা থেকে বেরোতেই ইলশেগুঁড়ি। অফিসে এসেই গতকালের রেখে যাওয়া দুটি ফাইল দেখেন আজাদ রহমান। তিনটে চেকে সই করে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন। তখন সকাল সাড়ে দশটা হবে – কাকে যেন ফোনে মেলাতে বললেন পিএকে। মোবাইল বেজে ওঠে তখন।
– এটি কি আজাদ রহমান সাহেবের নম্বর? ও প্রান্ত থেকে স্পষ্ট প্রশ্ন।
– বলছি। কে কথা বলছেন, প্লিজ।
– স্যার, আমি রেলওয়ে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর জয়নুল বারি।
– জি বলুন।
– স্যার, তেজগাঁও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মাঝামাঝি রেললাইনের ওপর একটা ডেডবডি পাওয়া গেছে শেষরাতের দিকে, এখন পর্যন্ত নিকটজন কেউ আসেনি। ডিসিস্টের মোবাইলটা অক্ষত আছে। তাতে গত দু-সপ্তাহের কললিস্টে এই নম্বরটা পেলাম। একবার যদি আসেন স্যার।
– ওকে। এগজাস্ট লোকেশন প্লিজ।
পুলিশের ফোন পেয়ে আর অফিসে বসে থাকা যায় না, তাতে বিপদ হতে পারে। আবার ফোন পেয়ে অকুস্থলে যাওয়ার মধ্যেও আশু সমস্যা থাকতে পারে, নাও পারে – এটা ভাবতে ভাবতেই বেরিয়ে পড়েন তিনি।
কেবল পুলিশই নয়, আরো মানুষের ভিড় জমেছে। ডেডবডিটা লাইনের পাশে টেনে একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। আজাদ রহমান পৌঁছতেই কাপড়টা তুলে দিলেন দারোগা জয়নুল বারি। কোমরের নিচের অংশ কাটা পড়েছে। কিন্তু ওপরের দিকটা অবিকল জীবিতের মতোই। কেন জানি চোখদুটো এখনো খোলা – সেই চাহনি; প্রথমদিকে এই চাহনিটাই আজাদের আদিম ও লুকিয়ে থাকা ইচ্ছাশক্তিকে কিছুক্ষণের জন্য প্ররোচনা দিয়েছিল। আজো সে-কথা মনে আছে তার। মুখটা দেখেও সেই চেনা হাসিটাই যেন দেখতে পান আজাদ সাহেব। নৈঃশব্দ্যে ভরপুর একরৈখিক সাবলীল হাসি – হয়তো বলতে চাচ্ছে, আজাদ স্যার, আপনাকে অনিঃশেষ ধন্যবাদ, আমি কৃতজ্ঞ। আপনি আমাকে ভালো করার চেষ্টা করেছিলেন, আমিও চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম; পারিনি – আমার নিয়তিই আমাকে এই পরিণতির দিকে নিয়ে এসেছে। কেমন নিষ্পাপ হয়ে ঘুমিয়ে আছে যেন – দেখে মনে হতে থাকে আজাদ রহমানের।
এবার মনে পড়ছে সেই চিঠিটার কথা, ব্যস্ততার জন্য হয়তো ভালো করে দেখা হয়নি, কেবল একবার চোখ বুলিয়ে ড্রয়ারে যত্ন করে রেখে দেওয়া; এমন কত চিঠিই তো আসে, কিন্তু এটি এমন একজনের চিঠি যে ঠিক অ্যাভয়েড করা যায় না, আবার ঠিক পড়ারও সময় হয়নি –
স্যার, দিয়ে শুরু। আর শেষে নামটা, যে-নামে আজাদ জানতেন তাকে। চিঠিটা খুলে একবার চোখ দিয়েই ড্রয়ারে রেখে দিয়েছেন আজাদ রহমান – আজ ফিরে নিশ্চয়ই চিঠিটা পড়বেন তিনি। হয়তো ফোনে বেশিক্ষণ কিংবা সবটা না বলতে পেরেই চিঠিটা ড্রপ করেছিল। ই-মেইল অথবা ফেসবুকের অভ্যাস থাকলে হয়তো চিঠিটা লিখতে হতো না মেয়েটিকে।
আজাদ রহমান ভুলেও সে-চিঠির কথা কাউকে আর বলবেন না; 888sport app শহরে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরে নানা প্রকারের পুলিশ দেখে দেখেই এবং হ্যান্ডল করে করেই ব্যবসাটা ধরে রেখেছেন। আজ তার করপোরেট বিজনেস – গোটাসাতেক প্রতিষ্ঠান এখন এই হাউসের অধীনে।
আজাদ রহমান বললেন – বছরদুয়েক আগে আমাদের কোম্পানিতে একটা ছোট্ট চাকরি করত, হঠাৎই না বলে চলে গিয়েছিল। দিনদশেক আগে ফোন করে বলেছিল, একটা কাজ খুবই দরকার ওর। আমি ব্যস্ত বলে কথা বলতে পারিনি তখন; প্রথমে চিনতেই কষ্ট হয়েছে – এর বেশি তো আর জানিনে আমি। জয়নুল বারি বললেন – স্যরি স্যার, আপনাকে এখানে আসতে বলেছি। কিন্তু ততক্ষণে দারোগার তীক্ষন পুলিশিচোখে আজাদ রহমানের পা থেকে মাথাতক যাবতীয় নিরীক্ষণ সমাপ্ত হয়ে গেছে। বললেন – বরং একটা ভিজিটিং কার্ড রেখে যান, দরকারে আমিই দেখা করব।
ব্যবসায়ী আজাদ রহমান ইন্সপেক্টরের দিকে আবার তাকান – ষটপ্রাজ্ঞ আজাদ রহমানের পুলিশের এ-দেখা করার ইঙ্গিত না-বোঝার কথা নয় – তেমন হলে এই বিশাল শহরে ব্যবসা করা চলে না।
ততক্ষণে পুলিশের লোকজন স্পন্দনহীন দেহটা গাড়িতে তুলছে। আজাদও এক রাজ্যের কষ্ট নিয়ে গাড়িতে উঠলেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিটা এবার বেশ জোরে পড়ছে। পুরনো ড্রাইভার – বসের মেজাজ আর রুচি, দুটোই তার বিদিত। সিডিটা অন করে দিলো সে। শ্রীকান্ত আচার্যের কণ্ঠে বাজছে আজাদ রহমানের অতিপছন্দের একটি গান – একই গান তিনি পঙ্কজ মল্লিক কিংবা অরবিন্দু ঘোষের কণ্ঠেও শোনেন, তবে সেই সিডিটা গাড়িতে নেই এখন :
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এ-গানটার একটু পরেই আছে আরো দু-তিনটে আবেগঘন লাইন; আজাদ রহমান বরাবরই তামাম মনোযোগ দিয়ে এ-গানটা শোনেন –
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার।
আজ আর আজাদ রহমানের মনোভার নামে না; বরং গানটা শুনে শুনে তার দীর্ঘশ্বাস আরো ভারী হয়ে যায়; আর সেটা এসি গাড়ির ভেতরটা আরো গুমোট করে তোলে এবং গানটিতে শ্রীকান্তের কণ্ঠের সঙ্গে পণ্ডিত আমজাদ আলি খানের সরোদসংগতের বিষাদময় সুরের মূর্ছনা যেন আজকের আকাশ-মেঘ-বৃষ্টির মতোই আজাদ রহমানের বুকের ভেতরে জমে থাকা কষ্টগুলোকে একাকার করে দিচ্ছে; ক্রমশ নীল থেকে প্রগাঢ় নীলে 888sport app পড়ছে আজাদ রহমানের সেই কষ্টগুলো – ঠিক বর্ষাধোয়া নীল আকাশের মতো। নীলিমার সব কাজল যেন নেমে এসে আজাদ রহমানের যাবতীয় ভাবনাকে ঘিরে ধরেছে। মনে হচ্ছে, সৃষ্টির আগের অনাদি-অনন্ত আঁধার যেন গ্রাস করে নিতে চাইছে বিস্মৃত চরাচর, এই সকাল-দুপুর – সঙ্গে মন আর মগজ; যেন সবকিছুই। কিছুই এখন ভালো লাগছে না তার। কেবল মাথায় ঘুরছে – আহা, বাঁচানো গেল না আর!
চিঠি
স্যার
একমাত্র আপনিই আমার সবটা জানেন। আমার মাকেও সবটা বলা যায়নি, পাছে কষ্ট পান কিংবা টেনশন করেন। পরামর্শ নয়, বলতে পারেন আপনার নির্দেশেই ভালো হয়ে ওঠার অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকদিন পর সেদিন গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আপনার অফিস থেকে ফিরে এসেছি। আপনি বিদেশিদের সঙ্গে সাইডে ছিলেন। আমার এখন একটা কাজ জরুরি, আজই দরকার – যেটা ফোনে বলেছিলাম। আপনার দেওয়া শেষ কাজটাও ছাড়তে হয়েছে; এর কারণ দেখা হলেই বলব, এ-ও এক মজার কাহিনি।
আপনাকে একজনের কথা বলেছিলাম, বলেছিলেন, ভালোই তো, ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই তো বেশ। কিন্তু সে আবার এখন টালবাহানা করছে। এদিকে আমি…। আগে অনাগতকে মেরে ফেলতে হবে – আমি কিছুতেই রাজি হচ্ছি না, জীবনে আর তো কিছুই হবে না, অন্তত এ নিয়ে যদি বাঁচতে পারি। এখন হুমকি দিচ্ছে, তাহলে বিয়েই হবে না – আমি নিদেনপক্ষে এদ্দিনে এটা বুঝেছি যে, এই সন্তানই হতে পারে ওর সঙ্গে বিয়ের একমাত্র হাতিয়ার, সে-কারণে সতর্কও হয়নি তেমন; বিয়েরও পাকা কথা দিয়েছিল বলেই, না…। পরে কী হবে সে-জানিনে। তবে এটা ঠিক এর সঙ্গে ঘর-সংসার হবে বলে মনে হয় না। আসলে ঠিক চিনতে পারিনি – পথ চলতে যাদের দেখা পেয়েছি তাদেরই একজন যেন; ভদ্রলোকের চশমার আড়ালে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা আর দশজন – এই ক্ষুদ্র জীবনেও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার মোটেই কম সমৃদ্ধ নয়, যার কিছুটা আপনার জানা আছে। বলেছি, তোমার বাবা-মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াব। যাবতীয় রক্তচক্ষু শেষে এখন বলছে, ‘বেমালুম হাওয়া করে দেবো।’
এখন আমার জীবনই বিপন্ন, কঠিন বিপদের মধ্যে আছি আমি। যে-কোনোদিন ও আর ওর দল কিংবা ভাড়াটে কেউ আমাকে হয়তো শেষ করে দেবে – নিজের জীবনের জন্য আর কোনো মায়া অবশিষ্ট নেই; চলে গেলে মাকে আর ভাইটাকে যদি একটু…। এটা জানানোর জন্যই এ-চিঠি।
আপনার আশীর্বাদধন্য –
প্রাক্-কথন
দুপুর বারোটা হবে তখন। করপোরেট অফিসের বাইরে একটা মিটিং সেরে ফিরেছেন আজাদ রহমান। সিটে বসতেই পিএ বললেন – স্যার, আপনার বন্ধু মামুন সাহেবের রেফারেন্সে একজন মেয়ে এসেছেন দেখা করতে, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায়। মামুনের কথা বলতেই কালকের কথা মনে পড়ল আজাদ রহমানের। অনেকদিন পর মামুনের সঙ্গে দেখা। গুলশান ক্লাবে।
– ক্লাবে আসা ছেড়েই দিয়েছিস মনে হয়। আমি রোজই ইতিউতি করে খুঁজি তোকে। একসঙ্গে না বসলে গলাটা কেমন জানি শুকনো থেকে যায়।
শালা বলে একটা গাল প্রায় এসেই যাচ্ছিল। বলতে চাইছিলেন, শালা, একটা ফোন তো করতে পারিস, খোঁজটা তো আমিই রাখি। নিজেকে সামলে বললেন – না, সেরকম কিছু নয়, এই বেরোতে বেরোতে দেরি হয়ে যায়, বাসায় ফেরার তাগিদ তো শুরু হয় সেই বিকেল থেকেই।
– হুঁ।
এমন তাগিদের কথা জানা মামুনের। স্ত্রীর এমন তাগিদ কি আর একদিনে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়েছে – সে-যুদ্ধটায় অনেক সময় গেছে মামুনুর রহমানের। শেষমেশ হালই ছেড়ে দিয়েছেন মিসেস মামুন – এখন ব্যস্ত ছেলেমেয়ে নিয়ে। কিন্তু সেরকম যুযুধানে হেরে গেছেন আজাদ রহমান। আর এ-ব্যাপারটা বন্ধু মামুনও জানেন। একসময়ে দুজনই হরিহর আত্মা ছিলেন, এখনো সেটা শেষ হয়ে যায়নি, তবে যোগাযোগটা আর আগের মতো নিয়মিত হয় না। একসঙ্গে খুব ছোট একটা ব্যবসা দিয়ে দু-বন্ধুর যাত্রা শুরু। তার আগে হলজীবনের পাঁচ-ছ বছরের ঘনিষ্ঠতা। ছোট ব্যবসা থেকে একটু বড়, আরো বড়। অতঃপর আলাদাভাবে পথচলা – তাতেও বন্ধুত্বটা ঠিক জায়গাতেই আছে; ব্যস্ততায় দেখা-সাক্ষাৎ কম হচ্ছে, এই যা। হলজীবন এবং একসঙ্গে ব্যবসা ছাড়াও একটা সম্পর্ক ছিল দুজনের।
টাকার একটা গরম আছে, সেটি বাড়তে থাকলে নান্দনিক নগর-সভ্যতায় নানা উপকরণ-উপসর্গ যোগ হতে পারে – পানীয়-888sport promo codeয়; সেটাও একসঙ্গে শুরু হয়েছিল আজাদ রহমান আর মামুনুর রহমানের। ব্যবসায়ে এবং সেটা ওপরে উঠতে থাকলে তার সঙ্গে নানাবিধ বাড়তি অনুষঙ্গও থাকতে হয়। কাজ পাওয়া, কর কমিয়ে নেওয়া, কমিশন হ্রাসকরণ – এসব। এসবের জন্য সব জায়গা আবার উপযুক্ত নয়; একটু গলা ভেজাতে হবে, নিজের স্ত্রী বা সুন্দরী ও অবিবাহিত শ্যালিকার উন্মুক্ত বুক বসদের দেখানোর জন্য এসব ক্লাবই যে উপযুক্ত; সামাজিক যোগাযোগেরও দরকার হয় টাকাওয়ালাদের। সেসব বসাও এসব জায়গাকে নিরাপদ মনে করে পান করে, আড্ডা দেয় – ক্লাবে নানা কথার মধ্যে হাজার-কোটি টাকার কথাও পাকা হয়ে যেতে পারে। ব্যবসার একটা জুতসই উপজীব্য হিসেবে দু-বন্ধুই চেষ্টা করেছিলেন 888sport app ক্লাবে ঢুকতে। পারেননি, দৌড়টা একটু দীর্ঘই বটে। অবশেষে এক-ওকে ধরে গুলশান ক্লাবের মেম্বারশিপ হাসিল করেছেন দু-বন্ধু – যেন এটি না হলে আর মান থাকে না।
বক্স এসিটা টোয়েন্টি টুতে দেওয়া আছে – দেখা যায়। ঘরটা বেশ ঠান্ডাও। কিন্তু মামুনুর রহমান একটু ঘামছেন। সেটা অবশ্য দ্রব্যগুণে। কতটা গলাধঃকরণ হয়েছে বোঝার উপায় নেই; তিনি অবশ্য অবলীলায় অনেক টানতে পারেন। টেবিলের গ্লাসটায় এখনো আধেকটা উঁকি দিচ্ছে। কোনো এক ফাঁকে ওয়েটারকে আরো দেওয়ার আদেশও জারি হয়ে গেছে। ওয়েটার সেটা টেবিলে রাখতেই মামুনুর রহমান বললেন – ধর, শুরু কর। আর ওয়েটারকে আরো একটা ফিশ ফিঙ্গার দিতে বলেই বন্ধুর সঙ্গে চিয়ার্স ছাড়া গ্লাসে ঠোঁট রাখলেন মামুনুর রহমান। এই ঘরটাতে ওরা আগেও বসেছেন। ছোট্ট কক্ষ – চারজনের বসার মতোই। পানের জন্য উপযোগী মধুশালা – 888sport appর অনেক ক্লাবেই এমন আছে।
– আমি ঠিক সেভাবে আর খাই না মামুন।
– সে কী! হজে যাবি নাকি?
– না, বাসায় ফিরব। গন্ধ-টন্ধ পেলে আবার তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাবে। রাতের ঘুমটাই না ট্রিকসে পড়ে যায়।
বলতে বলতে গ্লাসে চুমুক দিলেন আজাদ রহমান। আজ তাকে বাসায় ফেরার আগে একটু বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে – কোথাও দাঁড়িয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নেওয়া বা এরকম কিছু। সেজন্য পুরো পেগটা শেষ করা ঠিক হবে না। মামুনের রুচি জানা আছে আজাদের। কড়া মালই নিয়ে বসেছেন তিনি। একটু বেশি পেটে পড়লে বাসায় আজ বিপদ হতে পারে আজাদের – ইদানীং মায়ের সঙ্গে মেয়েও বাপের এসব কাজের দস্তুর প্রতিবাদী।
– ওসব থোড়াই কেয়ার করি। অগাধ টাকা দিয়ে রেখেছি। এখান-সেখানে যাও, ইচ্ছামতো কেনো, যা খুশি খাও। মা আর মেয়ের জন্য তিনটে গাড়ি দিয়ে রেখেছি। যত রাত করেই ফিরি না কেন, কোনো বাধা নেই, এসব নিয়ে এখন আর কোনো রা-টা নেই তোর ভাবির।
– ভালোই ম্যানেজ করেছিস তাহলে।
– কেমন চালাচ্ছিস?
এ-প্রশ্নটা বুঝতে অসুবিধে হয় না আজাদ রহমানের। তিনি নড়েচড়ে বসেন।
– না, বন্ধু। প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। ডায়াবেটিসটা দেখা দেওয়ার পর একটু কেমন লাগে যেন।
– সে কী কথা রে! এসব ধরা যায়, ছাড়া যায় না, তুই-ই না বলিস।
– ঠিক তাও না। নানা ঝামেলায় থাকি। তোর খবর কী!
– ব্যবসা আর সঙ্গীয় অনুষঙ্গ – যা শিখিয়েছিলি, স্যরি দোস্ত, আই মিন একসঙ্গে শিখেছিলাম। কদিন হলো একটা মেঘবালিকা জুটেছে – যাবি নাকি?
এই যাবির মানে আজাদের কাছে পানির মতোই পরিষ্কার – বছরদুয়েক আগে এটিকে আরো স্লাং করেই বলতেন মামুন; কিন্তু ধন্ধ লাগে মেঘবালিকা শুনে। যদিও অনেক কিছুতেই এমন মজা করেন মামুন – মডেল গার্লদের বলেন, বিপণনকন্যা।
– মেঘবালিকা, সে আবার কী জিনিস বন্ধু?
– বুঝলিনে, এয়ার হোস্টেস।
আজাদ রহমান কিছুই বলেন না। বরং বাসায় ফেরার তাড়া বোঝাতে চাচ্ছেন বন্ধুকে, ঘড়ি দেখছেন। আর পুরনো বন্ধুর সঙ্গে এসব আলোচনায় নিবৃত্ত হতে চাচ্ছেন না কেন জানি – কিছুদিনের চোখের আড়ালটা হয়তো কোনো এক অচেনা অবগুণ্ঠনে 888sport app দিতে চাইছেন, যদিও কদিন আগে এসব করেছেন একরকম যৌথতায়। তবে এয়ার হোস্টেস শব্দটা শুনে চোখ-কান একটু খাড়া হয়েছে ঠিকই। মনে মনে ভাবলেন – ব্যবসায়ে প্রসার বাড়ার সঙ্গে রুচিও সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে – সেটা তার একার নয়, মামুনের ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাহলে; এটাই হয়তো নিয়ম। একবার ‘সেই হিট মডেলের খবর’ কী জিজ্ঞেস করতে গিয়ে আবার থেমে গেছেন তিনি।
– তাহলে আর বসবি না।
আরো এক পেগ শুরু করেছেন মামুন। কথা সামান্য একটু ঘুলিয়ে আসছে হয়তো। বললেন – বাইদা বাই, বিজনেস নিয়ে তো কোনো টকই হলো না হে। শোন, একটা চাকরি দিতে পারবি, খুবই জরুরি, এই হাজারবিশেক দিলেই চলবে। আমি পারছিনে টেকনিক্যাল ফলটের জন্য, তোকে দিতেই হবে। বলিস, কালই পাঠিয়ে দেবো।
– ওকে, পাঠিয়ে দিস।
কোনো কিছু না ভেবেই পাকা কথা দিলেন আজাদ রহমান। এমন চাকরির লেনদেন আগেও দু-একবার হয়েছে তাদের।
অতঃপর
একটি মেয়েই যে আসবে তা মামুন বলেননি। অনেক সময় নিকটজনকে কাজ দিতে হয়, কিন্তু সেটা কুটুম্বিতার সঙ্গে মানানসই হয় না বলে বন্ধুদের রিকোয়েস্ট করতে হয় – এমনই ভেবেছিলেন আজাদ রহমান। কার্ডটা এগিয়ে দিতে উদ্যত হয় মেয়েটি।
– থাক। কার্ডের দরকার হবে না। বলে দেন আজাদ।
কোনো এক মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বলেই মনে হয়। কাপড়-চোপড় এই সময়ের ক্রেজের সঙ্গে শতভাগ যায় না। তবে মিলিয়ে নেওয়ার একটা চেষ্টা সহজেই অনুমেয়। যাই-ই পরেছে, খুবই পরিচ্ছন্ন তা। ওড়নার ভাঁজ পেরিয়ে সুডৌল স্তনযুগল ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে সমুদয় শাসন উপেক্ষা করেই – আজাদ রহমানের চোখ পড়তেই সেটি একটু আড়াল করার তড়িঘড়ি ভাব দেখাল সে। গায়ের রংটা শ্যাম হলেও একধরনের মাদকতা আছে, যা আজাদদের সহজেই নেশা ধরিয়ে দিতে পারে। মুখ-চোখ! যে-কোনো পুরুষই বারতিনেক তাকাতে বাধ্য হবে – একটা অভাবনীয় আকর্ষণ আছে যেন মেয়েটির মধ্যে। আজাদ সাহেবরা অনেককে দেখেছেন নানাভাবে, কিন্তু একি! এতটা সুন্দর – নিজের অজান্তে মনে মনে উচ্চারিত হয় আজাদের। নিমিষেই মনের কোণে ঘাপটি মেরে থাকা আদিম প্রবৃত্তি উঁকি দেয় যেন। দ্রুতই সতর্ক হয়ে যান তিনি – এটি একটি বিশাল করপোরেট অফিস। এখানে এবং সাইডে কিংবা ফ্যাক্টরিতে অনেক মেয়েই কাজ করে। ফলে অফিসপ্রধানকে এসব ব্যাপারে অনেস্ট থাকতে হয় – এটি বিজনেস এথিক। এছাড়া মানুষের ভালো-খারাপ দুটো প্রবৃত্তিই ভেতরে লুকিয়ে বাস করে। কখন কোনটি চাঙ্গা হয়ে ওঠে কেউ জানে না। হয়তো সে-কারণেই সবার দেখা একজন ভালো মানুষের অপরদিকটা হঠাৎ দেখে মানুষ বিস্মিত হয়। অবাক হয় সবার জানা একজন খারাপ
প্রকৃতির মানুষকে ভালো কিছু করতে দেখলে। হঠাৎই আজাদ রহমানের ভালো প্রবৃত্তিটা দ্রুত আর ঝড়ের বেগে চাঙ্গা হয়ে ওঠে – মনে হয় তার, একটি গোলাপকে নিজের মতো করেই বাড়তে দেওয়া উচিত, কোনো অযাচিত হস্তক্ষেপে তাকে থামিয়ে দেওয়ার মানে হয় না। এই মুহূর্তে নিজের কলেজপড়ুয়া মেয়ের কথা মনে আসছে তার – ভালো প্রবৃত্তি উন্মোচনের এমনই এক রহস্য! কিন্তু এরকমের একটা মেয়েকে মামুন কেন নিজের কাছে না রেখে এখানে পাঠিয়েছেন – এ-প্রশ্নে মনটা আনচান করে আজাদের। তবে কৌতূহলটা আপাতত চেপে রাখতে হয় তাকে।
কথা শুনে বড়সড় ডিগ্রিধারী মনে হয় না, কথার মধ্যে ইংরেজি শব্দের প্রয়োগে তা বোঝা যায়। সেটাই একটু পর পরিষ্কার হয়ে যায় – উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করা সম্ভব হয়েছে মাত্র। এসএসসির পরই বাবার দুরারোগ্য পক্ষাঘাত – বেঁচেছিলেন মাত্র আরো এক বছর। অনেক কষ্টেই এইচএসসি শেষ করা গেছে। আরো অনেক কিছুই পরে জেনেছেন আজাদ রহমান।
– হ্যাঁ। মামুন বলেছে আমায়। সিভি এনেছেন কি?
– জি স্যার। বলেই এগিয়ে দেয় সিভিটা।
এরপর আগের অফিসের কাজ নিয়ে কথা হয়। কথা হয় বেতন নিয়েও। পিএকে ডেকে বলেন – একে তোমার পাশে একটি টেবিল দিয়ে বসিয়ে দাও। তুমি না বলেছিলে, একা পারছ না।
মেয়েটির নাম যদি কুসুমই হয় (বলা বাহুল্য, তার আসল নাম এ-গল্পে জানা যায় না, জানা হয় না তার যাবতীয় পরিচয়)।
কুসুম তিন মাসেই বুঝে গেছে, এই বস তার জন্য নিরাপদ বই কিছু নয়। বাবার মৃত্যুর পর বছরদুয়েক পরই সেসব দুর্বিষহ জীবন কুসুমের জন্য সত্য হয়ে উঠেছিল – এ-শহরে সিদ্ধ আর অসিদ্ধ, দুপথেই হাঁটতে হয়েছে তাকে। অসুস্থ মা আর ছোট ভাইকে দেখার কাজটা তারই ওপর বর্তেছে বাবা চলে যাওয়ার পরপর। তাই এই বয়সে মানুষ চেনার একটা পরিপক্বতাও আছে তার – এইটুকুন সময়েই নানারকমের মানুষ সে দেখেছে কঠিন বাস্তবতায়।
কুসুমপর্ব
সম্পর্কের এক মামা পরিচিত আরেকজনকে বলে গার্মেন্টসে কাজ দিয়েছিলেন কুসুমকে। কাজটা মনেও ধরেছিল তার – প্রধান নির্বাহীর ব্যক্তিগত সহকারী। অসাধারণ ভালো বস পেয়েছিল চাকরির ঊষালগ্নে। গোল বাধিয়েছে বসের স্টাফ অফিসার – তখনো বিশ পেরোয়নি কুসুমের, জানত না দূর কিংবা নিকট ভবিষ্যতের কথা। দ্রোহে কাজটা ছেড়েই দিয়েছিল সে। মামা হয়তো বুঝেছিলেন কিছু না বললেও। তিনিই একটা বায়িং হাউসে প্রায় একই ধরনের কাজ জুটিয়ে দিলেন ভাগ্নিকে। কিন্তু এসব প্রাইভেট অফিসের অনেকগুলোতে যা হয়, এটি তার ব্যতিক্রম নয়। মালিক নিজেই একদিন কাছে টেনে নিল। উপায়ান্তর না পেয়ে কষ্ট আর কান্নায় সেটি সাময়িক মেনে নিয়েছিল এই জনমদুঃখি মেয়েটি। কিন্তু মালিকের এমবিএ করা ছেলেটিও একই অফিসে এটা-সেটা করে – তারও চোখ পড়েছে কুসুমের দিকে। সেই কাজটি ক্ষোভ আর ঘৃণায় ছেড়েছিল কুসুম। এদিকে মায়ের ওষুধ কিনতে চাই টাকা। ছোট বাসা। কিন্তু মাসশেষে ভাড়া দিতে হয়, দুবেলা খেতেও হয়; ছোট ভাইকে তখন স্কুলে দেওয়ার কথা। কাছেই একটা সরকারি স্কুল। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার মতো কাপড়-চোপড় তো ফ্রি দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়নি। বাবার রেখে যাওয়া সামান্য টাকাও নিঃশেষ হতে বাকি নেই বেশি। বাচ্চাদের স্কুলে তখনই একটা কাজ জুটলেও বেতন নেই – কদিনেই সেটা ছেড়ে ফিরতে হয়েছে তাকে।
সেই মামা এবার কুসুমকে মালয়েশিয়া পাঠাতে চাইছিল – কুসুম যায়নি। মা আর ভাইকে এভাবে আরো অসহায় অবস্থায় রেখে যাওয়া হয়নি। ওখানে গিয়ে কী করবে সেটাও নিশ্চিত ছিল না। ফলে এক দুর্বিষহ জীবন। 888sport appর অভিজাত এলাকার এ-বাসা, সে-বাসায় এক দুর্বোধ্য জীবন পেরিয়েছে বছরটাক – ওদেরই একজন কী ভেবে এবং দয়াপরবশ হয়ে একটি কাজ জুটিয়ে দিলো। অফিসের নাম মামুন অ্যাসোসিয়েটস। চেয়ারম্যান আবশ্যিকভাবেই মামুনুর রহমান।
এক বছরের যাবতীয় গ্লানি মুছেই যাচ্ছিল। নিজের যোগ্যতায় এই এক বছর প্রায় ভুলেই গিয়েছিল কুসুম। কিন্তু কিছু কিছু ঘা আছে যা ওষুধে সারে না। একটা সময়ে আবার ফিরে আসে। বস মামুনের চোখটা প্রথাবিরোধী উপায়েই কুসুমের বুকে নিক্ষিপ্ত হতো। কিন্তু মামুনরা অতিশয় ধুরন্ধর – দু-মাসেই পারিবারিক বিষয়টা জেনে নিল। বেতনের অধিক অর্থ দিতেও সময় লাগেনি তেমন। দু-মাসের অধিক মামুনের মতো শিকারির পক্ষে অপেক্ষা করা কঠিন – তাও নিজের অফিসের পিএর জন্য! সহজেই মানতে হয়েছে কুসুমকে – পেছনের এক বছরের তিক্ততায় যাতে আবার পড়তে না হয়। বেতন-টেতনও ভালো দিচ্ছিলেন মামুন। তখনো মিসেস মামুন ততটা সিজন্ড হননি। স্বামীর অফিসে দূরসম্পর্কীয় এক কুটুম্বও কাজ করছে; এই নির্বাচনটা মিসেস মামুনের। স্বামীদের নাকি একটু চোখে চোখে রাখা ভালো – যদিও আখেরে শেষ রক্ষা হয় না। সেদিন দুপুরে বেনামে কেনা খালি ফ্ল্যাটটায় ছিল মামুন আর কুসুম। এ-ফ্ল্যাটটা মামুন এ-কাজেই ব্যবহার করেন। অফিসের তথ্যমতে মামুন সাহেব সাইডে আছেন। তার পিও একটার দিকে ম্যানেজারকে বলে শর্ট লিভ নিয়েছেন কী জরুরি কাজে। মিসেস মামুন এভাবে নিজেই হাজির হবেন সেটা ধুরন্ধর মামুন ভাবতে পারেননি।
মামুন কিংবা আজাদ; এসব মানুষের একটা জায়গায় মিল আছে – ধরা খেলে সেদিকে আর পা না দেওয়া। সেই অ্যাপার্টমেন্ট সেল হয়ে গেছে। দৃশ্যত কুসুম নামে কাউকে আর চেনেন না মামুন। তবে মাসকয়েক পর নিজে থেকেই কুসুমকে ফোন দিয়েছিলেন।
– তোমার সমস্যাটা বুঝি না এমন নয়। কিন্তু এই অফিসে তো প্রশ্নই আসে না, আমার অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানেও তোমার কাজ করার উপায় নেই।
– অন্য কোথাও তো পারেন স্যার।
– সেটা দেখব। আর শোনো, তোমার ব্যাংক হিসাবে কালকেই কিছু টাকা জমা হয়েছে, দেখে তুলে নিও।
কুসুমের ব্যাপারে আশ্চর্যজনকভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন আজাদ রহমান – সেই ঘুমিয়ে থাকা সুকুমারবৃত্তির কারণেই হয়তো। বসের নানা গল্পই শুনেছে কুসুম পুরনো পিএ থেকে।
– আপনার কোনো সমস্যা হয়নি?
– একদম না। তিনি অফিসে এসবে নেই। আর আমি এখানে সেই প্রথম থেকেই আছি – আর এসেছিলেম বন্ধুর ভাগ্নি বিবেচনায়। এখন তো অনেক বিশ্বস্ত হয়ে গেছি। এমন ভাব দেখাই যে কিছুই জানিনে। স্যারও অফিসে সবার সামনে বউপাগল বলেই খ্যাত।
ছ-সাত মাস তাই দেখেছে কুসুমও। মামুন কেন নিজের অফিসে কাজ দেয়নি – সেটা জানতে গিয়েই একদিন-দুদিন-তিনদিনে নানা কথা বেরিয়ে এসেছে। প্রথম প্রথম সংকোচ থাকলেও সেটা কেটে গেছে এখন। একধরনের নির্ভরতাও সৃষ্টি হয়েছে বস আজাদ রহমানের ওপর। এখন অফিসে এসেই জানতে চান – তোমার মায়ের শরীর কেমন? মা আর ভাইয়ের জন্য বাড়তি টাকাও দিচ্ছেন আজাদ। এসব লোক আবার শখ করেই জাকাতের ভান করে। তারই একটা ক্ষুদ্র অংশ দিয়ে এসবও করছেন কেউ কেউ।
এখন অফিসে একটু ফুরসত পেলেই ফেলে আসা জীবনের নানা অভিজ্ঞতা শুনতে চান বস আজাদ রহমান – এও মনে হয় এক রোগের নাম হবে। তবে একটা কাজ ভালো করছেন আজাদ – ভালো থাকার নানা থেরাপি দিচ্ছেন প্রতিদিন। তখন কুসুমের মনে হয়, বাবা-মামা-খালু কথা বলছেন ওর সঙ্গে।
ছেলের পরীক্ষার কারণে এবার আর ব্যাংকক যেতে পারবেন না মিসেস আজাদ। বছরের এ-সময়ে মালয়েশিয়া যান আজাদ দম্পতি। বেড়ানো ছাড়াও কিছু কাজ জমেছে আজাদের। বসের বাইরে বেরিয়ে পড়ার আগেই কুসুম দশ দিনের ছুটিতে গেছে। বস ফিরে এলেই তারও ফেরার কথা।
মালয়েশিয়া – তাও সপ্তাহটাকের জন্য, নিজের কোনো খরচা নেই। জীবনের প্রথম এবং হয়তো শেষ বিদেশ 888sport slot gameটা তামাম দম নিয়েই উপভোগ করছিল কুসুম। হোটেলে একই কক্ষে থাকছে বসের সঙ্গে, কিন্তু ভয়ডরহীন; পরম নির্ভরতার গ্যারান্টি সহকারে।
– দেশের বাইরে যাচ্ছি কুসুম, যাবে নাকি?
কী বলছে এই পঞ্চাশোত্তীর্ণ বস! সরাসরি জবাব দেয় না কুসুম।
– কোথায় যাচ্ছেন স্যার?
– মালয়েশিয়া। দু-তিন মাস পর একবার চীনেও যেতে হবে।
– চুক্তি নবায়নের জন্য। চলো আমার সঙ্গে ঘুরে আসবে – এবার বেগম সাহেবা যাবেন না।
– কী করে? কেউ আসছে কিনা সেটা দেখার জন্য দরোজার দিকে তাকিয়ে কুসুম বলে।
– সেটা আমাকে ভাবতে দাও।
রাতটা ভাবতেই চলে গেছে কুসুমের। ভেবেছে, সে-কি স্ত্রীর বিকল্প? বস কী তাহলে এদ্দিন অভিনয়ই করেছে – সেটাই-বা কেন? সবটা জানার পর বসের কাছে অধরা থাকার কোনো মানে হয় না; বস বললেই তার সঙ্গে কোথাও যাওয়া যেত। কিন্তু তেমন হাবভাব তো আজাদ রহমানের মধ্যে দেখা যায়নি। বরং কথা হলেই – এসবের মধ্যে আর যেও না। দেখি, একটা বিয়ে দিয়ে দেবো, এবার ঘর-সংসার শুরু করবে।
যাওয়ার আগে কিছুই পরিষ্কার করেন না বস। একটা ধোঁয়াশা নিয়েই প্লেনে উঠতে হয় কুসুমকে – কোনো কিছুতেই কুসুমের আপত্তি নেই; একধরনের কৃতজ্ঞতার কাছে যেন ক্রমশ লীন হচ্ছে কুসুম।
রাতে প্রায় নির্ঘুম থেকেছে কুসুম। হোটেলের একই কক্ষে দুজন নর-888sport promo code। তাদের একজন বস; বয়স পঞ্চাশের একটু বেশি – সবার প্রতি নয়, তবে কিছু কিছু মেয়ে নিয়ে আদিম খেলায় মেতে থাকার অভ্যেস আছে তার। মেয়েটি উদ্ভিন্ন সময় পেরিয়ে এখন আরো বেশির জন্য অপেক্ষমাণ। ঘুম হয় কী করে! বস কি রাতে ডেকে তুলবেন, না ঘুমের মধ্যেই জড়িয়ে ধরে সোফা থেকে বিছানায় তুলে নেবেন? কিংবা নিজ থেকেই সবটা অবলীলায় তুলে দেবেন! শেষরাতে আধাঘুম-আধানির্ঘুম চোখে ভেবেছে, এ-ও কি সম্ভব! তিনি এসব ব্যাপারে ভালো মানুষ বলে শোনা যায়নি। ঈর্ষণীয় ফিগারের পঁচিশ বছর বয়সী অফিস-পিএকে নিয়ে বিভুঁইয়ে নিরাপদ রাত কাটাচ্ছেন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে – তবে মতলবটা কী; এসব ভাবতে ভাবতে কোনো একসময় কুসুম ঘুমিয়ে পড়ে। ডেকে তোলেন বসই – সময় পেরিয়ে গেলে হোটেল ভাড়ার সঙ্গে নির্দিষ্ট করা প্রাতরাশ মিলিয়ে যাবে যে।
পরের সন্ধ্যা। দু-তিনটে বিয়ার নিয়ে বসেছেন আজাদ রহমান। সারাদিন হোটেলের কাছে দু-তিনটে শপিংমলে ঘোরাঘুরি করেই কেটেছে।
– খাবে নাকি একটু। খেয়েছ কখনো?
– ঠিক সেরকম করে না স্যার।
– কেন, কেউ খেতে বলেনি?
– বলেছে কেউ কেউ, খাইনি। কখনো-বা একটু মুখ লাগিয়েছি মাত্র। একবারই বিপদ হয়েছিল।
– কী সেটা, বলবে?
বসকে জীবনের অনেকটাই বলা হয়েছে – এ আর তেমন কিছু নয়।
– গুলশানের একটা বাসায় – ইচ্ছার বিরুদ্ধেই খেতে হয়েছে, সেটা আবার বিয়ার নয়। র-ওয়াইন। পুরো রাতই থাকার কথা, কিন্তু ঘুমই ভেঙেছে পরের দিন দুপুরে; ভাগ্যিস বাসাটা খালিই ছিল।
– খুব বেশি খেয়েছিলে? আবার প্রশ্ন করেন বস।
– লোকটা বোধহয় একটু পাগলাটেই ছিল। নিজেও টাল হয়েছে, আমাকেও জোর করে পেগের পর পেগ খাইয়েছে – ভয়ও দেখিয়েছে না বলায়।
এরপর এ-রাতের বাকি লুকানো কথাও বসকে শোনাতে হয় কুসুমকে – যদিও দ্রব্যগুণে সবটা মনে নেই তার।
চলে আসার আগের দিন রাতের কথা। ডিনারের আগে বস আজ দু-পেগ লিকার নিয়েছেন। হোটেলে ফিরে এসে আবার বিয়ার নিয়ে বসেছেন। এ-কদিনের ঘুম – খাটে বস, সোফায় কুসুম। ব্যতিক্রম হয়নি; গোটা রাত এভাবেই কেটেছে। আচরণও সেই প্রথম রাতের মতোই। বিয়ার খেতে খেতে বসের চাহনির মধ্যে কেমন পরিবর্তন দেখতে পেল কুসুম। সেই প্রথমদিন যেভাবে কুসুমের বুকের দিকে শ্যেনদৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন। সেটা এক লহমায় তীক্ষন থেকে তীক্ষন, আরো ভয়াবহ হতে থাকে। ঝটিতি ভেবে নেয় কুসুম – কিছুই পাওয়ার নেই, কিছুই হারানোর নেই। আবার দেখল বসকে। না ঠিকই আছে, পুরো আউট হয়েছে বলে মনে হয় না।
– এই মেয়ে আমাকে কখনো ভুলে যাবে না তো?
এ-সময়ে কণ্ঠজড়ানো এমন প্রশ্নের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না কুসুম।
– না, স্যার।
– ধুৎ, কেবল স্যার স্যার করছ কেন। বলবে…, কী বলবে, হ্যাঁ তাই তো… কী বলবে…।
সেটা আর খোলসা করেন না বস।
বললেন – জানালার কাছে যাও আর বুকটা আমার দিকে মেলে ধরো।
একজন অনুগতের মতো তাই করল কুসুম।
– ওভাবে নয়। ওপরের কাপড়টা খুলতে বলছি।
বাধ্যের মতোই ওড়নাবিহীন শর্ট কামিজটা অতি দ্রুততায় খুলে নিমিষেই বাঁ-হাতে রুমের এককোণে ছুড়ে মারল।
– চমৎকার। একদম ঠিক হয়েছে, অবিকল হয়েছে – ঠিক বুড়ো অমিতাভের দিকে ক্যাটরিনা যেভাবে ছুড়েছিল, দেখেছ নাকি ছবিটা? অসাধারণ এক 888sport live chat! বহুবার দেখেছি সিনটা। মাধুরীও ওভাবে পারত কিনা আমার সন্দেহ। যদিও মাধুরীর ধ্রুপদী ঘরানার নাচ আমাকে আনমনা করে দেয়।
এগারো তলার এ-রুমটায় এখন ক্ষীণ আলো। বাইরের কোনো শব্দও সবকিছু ভেদ করে হোটেলের রুমে পৌঁছতে পারে না – চরম নির্জনতা আছড়ে পড়ছে যেন গোটা রুমের মধ্যে। কথার জবাব না দিয়েই কী ঘটতে যাচ্ছে একটু পরই সে-চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে কুসুম। ভেতরে কেমন একরকমের উথাল-পাথাল অবস্থা তখন।
– খোলো। ওটাও খুলে ফেল। আজ আমি জোড়-পূর্ণিমা দেখতে চাই।
তাই করল কুসুম। বুকের শেষ আবরণটাও এখন আর নেই। দ্বিধাহীনভাবেই করল তা – বসকে খুশি করতে পারার মধ্যে যে-আনন্দ আছে, তা পেতে চায় কুসুম। এতক্ষণে নিজের লুকিয়ে থাকা ইচ্ছাশক্তিটাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে যেন। এখন সুকঠিন অপেক্ষা, কখন ড্রেসের বাকিটা খুলতে বলেন বস।
অনেকক্ষণ অনিমিখ তাকিয়ে থাকলেন আজাদ রহমান, শিকার ধরার আগে বাজপাখি যেমন অপলক চেয়ে থাকে; কিন্তু এটুকুনই। কেবল একবার বললেন, বাহ্। অদ্ভুত! এতটা সৌন্দর্য আগে দেখেছি বলে মনে করতে পারি না। কুসুম তাতে মোটেই অবাক হলো না। বাথরুমে বহুবারই নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়েছে – এত অত্যাচারের পরও অবিকল আগের মতোই আছে কী করে! আজ বরং অবাক এবং হতবাক হলো বসের শেষ আচরণটায়; এতটা ভালোমানুষি ঠিক প্রত্যাশিত ছিল না এ-মুহূর্তে। আর এই নিয়ে একটা বিস্ময়ের ঘোর রাতভর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে কুসুমের – উপেক্ষা, নাকি নির্লিপ্ততা! অনেকদিন পর আজ সবটা মেলে ধরার ইচ্ছা ছিল কুসুমের;… পুরুষরা বিছানায় কী কী চায় সে-ব্যাকরণ কুসুমের ভালোই রপ্ত আছে – যদিও কদিন আগেও পুরুষ শব্দটা বিষবৎ মনে হতো তার। কী করে এই ভদ্রলোক নিজেকে সংবরণ করল আজ! এমন ভাবনায় বাকি রাতটা নির্ঘুম পার হলো কুসুমের।
ফেরার দিন মিসেস আজাদ মেয়েকে নিয়েই এয়ারপোর্টে ছিলেন – আগে কখনো এভাবে সি-অফ বা রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে দেখা যায়নি তাকে। তবে ভদ্রতা কম দেখাননি – এয়ারপোর্টে কিছুই বলেননি নিজের স্বামীকে। কী করে এই খবর পেল; আজাদ রহমান বের করতে পারেননি আজো। ভাবেন – কত কঠিন কঠিন অধ্যায় পেরিয়ে গেল কত সহজে; আর কিছুতে কিছু না, সেখানেই দুনিয়ার যত বিপত্তি – লঘু পাপে গুরু দণ্ড কি একেই বলে!
রেললাইনে সেই রাত
তিন মাস স্ব-বেতনে কর্মহীন ছিল কুসুম। মাসে মাসে বেতনের সমান টাকা বাসায় পৌঁছে গেছে। ক্রমশ আবার হ্রাস পেয়েছে তা। এই কাজটাও আজাদ রহমানই জুটিয়ে দিয়েছেন। এটিও একটা বহুমুখী কোম্পানি – বাবা চেয়ারম্যান ও সিইও; সম্প্রতি বাইরে থেকে এমবিএ করা ছেলে অ্যাডিশনাল সিইও। নতুন এমবিএর দাপট চলছে অফিসটায়। এই দাপুটের চোখ পড়ল কদিনেই – তবে সেটা আপাতত ভালোবাসার।
– স্যার, আমার আবার বিয়ে! ভালোবাসা – সে তো মঙ্গলে যাত্রার মতোই দুরূহ। আজাদ সাহেবকে একদিন বলেছিল কুসুম। কিন্তু নতুন অফিসের সেকেন্ড বস সে-ধারণাকে মিথ্যে প্রতিপন্ন করতে যাচ্ছে বলেই আপাতত মনে হতে থাকে কুসুমের। ভালোলাগা-ভালোবাসার লোভটা পাগল করে দেয় কুসুমকে। নানা স্বপ্ন এসে মনের কোণে ভিড় জমায়।
– এবার বিয়েটা হতে পারে। কুসুমই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে – একদিন নয়, পরপর কদিন।
কোনোবারই অফিসের দ্বিতীয় বস সে-কথায় না বলেননি। এরপর কোনো এক মাসে মানবীয় শরীরে পূর্ণিমা কিংবা জোয়ারের দেখা মেলেনি – তখনই কুসুমের চাপটা বাড়তে থাকে।
– হবে তো। আগে একটু ক্লিয়ার হয়ে নেওয়া ভালো। তুমি তো বলেছিলে, অসুবিধে নেই, হলো কী করে!
এ-কথার জবাব নেই। হয়তো সে বুঝতে পারছে – তাকে ট্রিকসে আটকাতে চাচ্ছে কুসুম। এরই ফাঁকে বাবাকে দিয়ে কুসুমের চাকরিটা খেয়ে নেয় এই এমবিএ যুবক। বলে – এখানে চাকরিতে থাকলে বিয়ে করাটা অন্যদের চোখে বিস্বাদ লাগবে, যা অফিসের জন্যও বেমানান দেখাবে। তখনো সবটা বুঝে উঠতে পারেনি কুসুম, তার চোখে এক স্বপ্ন যদি এই হাতবদলটা শেষ হয়। এরপরই সেই টানাপড়েন – টাকা দিয়ে সবটা চেপে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরই বিয়ে নামের অভিনয়ের পথ বেছে নেয় সে।
হঠাৎই একদিন উৎফুল্ল হয়ে যায় কুসুম। প্রিয় মানুষটার ফোন – আজ রাতেই সেই শুভ ভয়ংকর।
– আপাতত বন্ধুদের নিয়েই কাজির কাজটা সেরে নিতে চাই, মাই সুইট হার্ট। পরে বাবা-মাকে বলব। সন্ধ্যায় চলে এসো, কাজি-সাক্ষী সব ঠিক করা আছে।
এ-বাসায় আগেও দুবার গিয়েছে কুসুম; কয়েকবার বাহুলগ্ন হয়েছে এই যুবকেরই। বন্ধুর বাসা। একসঙ্গে বাইরে এমবিএ করেছে – তার বাবা-মা এ-সময়ে বাইরে আছেন। কুসুম আজ এ-বাসায় যাচ্ছে চোখে-মুখে একগুচ্ছ স্বপ্ন নিয়ে – এই স্বপ্নের নাম বিয়ে ও সংসার; একটি মেয়ে যা অনেকদিন ধরেই লালন করতে থাকে। কুসুম পৌঁছতেই তিন-চারজনে ধরে হাত-পা-মুখ বেঁধে নিয়েছে ঠিক কুসুমের কিছু বুঝে ওঠার আগেই। একটি 888sport promo codeদেহ অনায়াসেই চার-পুরুষের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে – এরপর একটি, মাত্র একটি ইনজেকশন। রাত তিনটের পর তিন বন্ধু জীবিত অথচ নিশ্চল দেহটি রেললাইনের ওপর সযত্নে রেখে নিজেদের দায় শেষ করেছে – প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে কুসুমের প্রেমিকের!
কাল রাত তিনটের পর নাকি বৃষ্টি হয়েছিল এদিকে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.