সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম – যাঁকে তাঁর ছাত্র, বন্ধু ও সহকর্মীরা ভালোবেসে এস.এম.আই. বলে ডাকতেন – তিনি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হিসেবে আমার এক বছর সিনিয়র ছিলেন। এমন অবস্থায় যেমনটি ঘটে থাকে, আমাদের চলাফেরার বৃত্ত আলাদা ছিল। আমরা মূলত একে অন্যকে ভালোভাবে চিনতে শুরু করি যখন আমরা দুজনই শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হই। একদিন আবিষ্কার করলাম, তিনি আমার চেয়ে মাত্র দুদিনের বড়। তখন আমি তাঁকে মজা করে ‘দুইদিনের দাদা’ বলতে শুরু করলাম, যা আমাদের বন্ধুমহলে বেশ কৌতুকের জন্ম দিত। এই দলে ছিল আমার সহপাঠী ফকরুল আলমও। আমাদের তিনজনকে – মনজুর, ফকরুল ও আমি – অনেকে ত্রিরত্ন হিসেবে চিনত। তবে আমাদের একসময়ের শিক্ষক, সিনিয়র সহকর্মী ও পরামর্শদাতা অধ্যাপক নিয়াজ জামান সম্প্রতি আমাকে বলেছিলেন, যদিও আমরা তিনজন খুব ভালো বন্ধু ছিলাম, কিন্তু আমরা প্রত্যেকে ছিলাম ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের।
আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডার পাশাপাশি 888sport live footballও ছিল অন্যতম আলোচনার বিষয়। একসময় আবুল খায়ের লিটু, যিনি আমাদের কাছে লিটু ভাই নামে পরিচিত, আমাদের তিনজনকে তাঁর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা প্রকল্পগুলোর সঙ্গে যুক্ত করেন। এই প্রকল্পগুলোর কার্যপরিসর ছিল বেশ বিস্তৃত – একদিকে ছিল ঝলমলে জনপ্রিয় লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ICE Today (নামটি রেখেছিলেন লিটুভাই) এবং চারবেলা চারদিক (নামটি দিয়েছিলেন মনজুর)। অন্যদিকে ছিল উচ্চমানসম্পন্ন 888sport live chat ও 888sport live football বিষয়ক পত্রিকা যামিনী, পরে কালি ও কলম এবং Six Seasons ReviewG.
এসব উদ্যোগের কেন্দ্রীয় মানুষটি ছিলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি চারবেলা চারদিক পরিচালনা করতেন এবং অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রয়াণের পর কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব নেন। অন্য সাময়িকীগুলির সম্পাদকীয় বোর্ডেও তিনি ছিলেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের দায়িত্বের বাইরে তিনি নাগরিক সমাজের নানা কমিটিতে ছিলেন এবং প্রকাশক মাজহারুল ইসলামের অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত অন্যদিন পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হয় আমার কাছে।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের 888sport live footballজীবন অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের। খুব কম লোকেই জানেন যে, সর্বপ্রথম তাঁর কিছু 888sport app download apk প্রকাশিত হয়েছিল। এ-বিষয়ে পরে তিনি একবার আমাকে বলেছিলেন, কবি হিসেবে যে তিনি খুব বেশিদূর যেতে পারবেন না তা অনুভব করতে পেরেছিলেন। তাই পরবর্তী সময়ে তিনি গদ্যে মনোযোগ দেন। এই পর্যায়ের শুরুর দিকে তিনি 888sport live chat-সমালোচনা লিখতে শুরু করেন বিভিন্ন পত্রিকায়, প্রদর্শনীর ক্যাটালগে ও সংকলনে। তাঁর শেষ 888sport live chatবিষয়ক 888sport liveটি প্রকাশিত হবে Routledge Handbook of Bangladeshi Literary Culture -এ, যা আমি অধ্যাপক শামসাদ মর্তুজার সঙ্গে সম্পাদনা করছি।
এসব কার্যক্রম, অর্থাৎ 888sport live chat-সমালোচনা ও 888sport live football সম্পাদনা, তুলনামূলকভাবে একজনকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু মনজুর একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন – বিশেষত তাঁর লেখা কলাম ও 888sport live এবং গণমাধ্যমে উপস্থিতির জন্য। আমি স্বীকার করছি, তাঁর এই দিকটি সম্পর্কে আমি অতটা গভীরভাবে জ্ঞাত নই। কিন্তু শুনেছি, পাঠক ও দর্শক-শ্রোতার ওপর তাঁর প্রভাব ছিল গভীর। আমার জানামতে, তাঁর জনপ্রিয় 888sport live footballবিষয়ক কলাম ছিল দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত ‘অলস দিনের হাওয়া’, যা তরুণ প্রজন্মের পাঠাভ্যাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
জেনারেশন জেড বা আলফার মানুষদের হয়তো কল্পনা করে নিতে হবে, ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন আসার আগে 888sport live football-সংস্কৃতির জীবন কেমন ছিল। তখন বছরে 888sport live footballে নোবেলজয়ীর নাম আমরা টিভির খবর থেকে শুনতাম আর পত্রিকার 888sport live football সম্পাদকরা দ্রুত কোনো লেখককে খুঁজতেন, যিনি ওই 888sport app download bdজয়ীর ওপর একটি 888sport live লিখতে পারেন। যখন নতুন বা অপরিচিত কেউ 888sport app download bd পেতেন, তখন তাঁর লেখা বই ও তাঁর সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে তড়িঘড়ি একটি লেখা দাঁড় করানো হতো। মনে আছে, মনজুর এমন অনেক চমৎকার লেখা লিখেছিলেন।
তাঁর কলাম ও 888sport liveে সমাজের নানা প্রশ্নও উঠে আসত। পাঠক পছন্দ করতেন তাঁর বিচার-বিবেচনাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যা তিনি কখনো কখনো টেলিভিশনের আলোচনাতেও প্রকাশ করতেন।
এতসব কিছুর পরও সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মনে রাখবে একজন কথা888sport live footballিক হিসেবেই। আমি মনে করি, তিনি ছিলেন মূলত গল্পকার, যদিও একাধিক সুখপাঠ্য 888sport alternative link লিখেছেন। আমি খুব কাছ থেকে তাঁর কথা888sport live footballিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ প্রত্যক্ষ করেছি। তখন আমরা নবীন প্রভাষক, প্রচুর পরীক্ষা ডিউটি করতে হতো। পরীক্ষার ফাঁকে তিনি হয়তো একটি প্যারাগ্রাফ অথবা কয়েকটি লাইন লিখতেন। এভাবেই তিনি বহু গল্প লিখেছেন। অনেক সময় বলতেন, কোনো অদ্ভুত সংবাদ বা ঘটনা শুনেছেন, এখন সেটার ওপর গল্প লিখছেন। গল্প লেখার এ এক অভিনব কৌশল। মাঝে মাঝে আমি ভাবতাম, এভাবে লিখলে গল্প এলোমেলো হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। কিন্তু তাঁর বেলায় তেমনটি কখনো ঘটেনি। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাঁর বয়ান নিয়ন্ত্রণ করতেন। ফলে গল্পগুলো পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠত। পরে একই পদ্ধতি তিনি 888sport alternative link লেখার বেলায়ও প্রয়োগ করেন।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের প্রভাব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ওপর ছিল প্রবল। মার্কেজে তিনি এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে স্প্যানিশ ভাষা শেখার কোর্সও করেছিলেন। মার্কিন পোস্টমডার্ন লেখক কুর্ট ভনাগাট দ্বারাও তিনি প্রবলভাবে প্রভাবিত ছিলেন। তিনি লাতিন আমেরিকার ম্যাজিক রিয়ালিজম ও আমেরিকান পোস্টমডার্নিজম বিষয়ে সুবক্তা হয়ে ওঠেন এবং এ-বিষয়ে পাঠদান অত্যন্ত উপভোগ করতেন।
এটাই ছিল আমাদের মধ্যে একধরনের বৌদ্ধিক মতভেদ। কখনো কখনো মনজুর ‘Aûthing goes’ ধরনের চরম পোস্টমডার্ন মতের দিকে ঝুঁকতেন। আমার ধারণা ছিল, এমন দর্শন আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তিকেই টলিয়ে দেয়। আমি ভনাগাটকে তাঁর মতোই ভালোবাসতাম, কিন্তু মনে করিয়ে দিতাম – ভনাগাটের পোস্টমডার্নিজম আসলে একটি 888sport live footballিক কৌশল; তাঁর লেখার মূলে ছিল নৈতিক বোধ।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এখন নেই। তাঁকে ছাড়া এই বিষাদের পৃথিবীতে তাঁর সঙ্গে সেই বিতর্কগুলো আর হবে না। তাঁর ছাত্ররা হারিয়েছে এক উদার শিক্ষককে, পাঠক হারিয়েছেন তাঁর নতুন রচনা আর আমরা, বন্ধুরা,
হারিয়েছি তাঁর হাস্যরসপূর্ণ সান্নিধ্য। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু সবার জন্য ছিল এক বজ্রাঘাত।
তাঁর হৃৎপিণ্ডে স্টেন্ট বসানোর পর সুস্থতার আশা জেগে উঠেছিল। তারপর হঠাৎই সবকিছু বদলে যায়। আমরা গভীর বেদনাবিধুর অবিশ্বাস নিয়ে দেখেছি তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি। এতটা কষ্টের মধ্যেও সৌভাগ্যের বিষয় ছিল, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মৃত্যুর আগে বোস্টনে আইনপেশায় নিয়োজিত ছেলেসহ দেশে ফিরতে পেরেছিলেন তাঁর স্ত্রী সানজিদা। তাঁরা তাঁদের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ মানুষটির সঙ্গে শেষ মুহূর্তে কিছু কথাবিনিময় করতে পেরেছিলেন। আমার মনে হয়েছিল, শেষ মুহূর্তের এই সান্নিধ্য তাঁদের কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দেবে। সানজিদা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী। সে সেই চিরপরিচিত ভঙ্গিতে বললো, ‘দোস্ত, closure শব্দটা কেবল একরকমের সান্ত্বনা, বাস্তবে কোনো closure নেই।’ বুকটা কষ্টে চিনচিন করে উঠল। এখন প্রিয় সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো কিছুই করার নেই আমাদের – তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.