যমজ কন্যাদ্বয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অস্ফুট স্বরে তাদের বয়সী বাবা শুধু আওড়াতে শিখলেন – ‘আগুন’, ‘আগুন’। একসময় তার মুখে কোনোদিন আর কেউ ‘আগুন’ শব্দ ছাড়া অন্য কোনোই শব্দ উচ্চারিত হতে শুনল না। ‘আগুন’ ছাড়া পৃথিবীতে আর যত শব্দ আছে তার সবকিছু তিনি ভুলেও গেলেন; কিন্তু সব কথা ভুলে গেলেও তার বুকের ভেতর লুকিয়ে থাকা কথাগুলো সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়া থেকে ঝর্ণাধারার মতো প্রবাহিত হয়। সেই কথাগুলো শব্দ হয়ে নয়, অনুভব হয়ে হৃৎপি–র অলিন্দ থেকে ফুসফুস হয়ে কোথায় যেন হারিয়ে যায়। সেসব কথার অর্থ কী, সেসব কথা কেন শরীর পায় না, কেন তা শব্দ করে কণ্ঠনালিতে খেলা করে না – তা তিনি জানেন না। বুকের কোথায় তার উৎপত্তি, কোথায় তার বিরতি এবং কোথায় তার মৃত্যু তাও তিনি জানেন না। প্রথম জীবনে যখন তিনি তার বড়কন্যা দোলার মায়ের দেখা পেয়েছিলেন, সেদিনও এমন হয়েছিল। তাকে অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করেছিল।
শৈশব-কৈশোরে দারিদ্রে্যর সঙ্গে লড়াই করে বিএ পাশ করায় এক বড় ওষুধ প্রস্ত্ততকারক কোম্পানি যেদিন তাকে সামান্য ফায়ারম্যান পদে চাকরি দিলো, সেদিনই তিনি যেন প্রথম তার
সাদা-কালো নির্মম জীবন থেকে এই পৃথিবীর দিকে প্রথম চোখ মেলে দেখলেন। মনে হলো, তার পৃথিবীটা বদলে গেছে। সেখানে রং আছে, নদী-পাহাড় আছে, আছে সকালের নরম রোদে কুমড়া ফুলের সঙ্গে সদ্য প্রস্ফুটিত সবুজ শসাফুলের নিবিড় মাখামাখি। আছে অনাবিল এক আকাশ, যেখানে রাতে জোছনার ময়দামাখা আলো বলে, এই জীবন এক মায়ার কুহেলিকা। সংগ্রামমুখর বর্ণহীন জীবনে শুধু আকাঙক্ষা আর স্বপ্নের পতনবিন্দু চিনে চিনে যার বড় হওয়া তার জীবনকে এমন বর্ণময় করে তোলার জন্য মহান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে চোখ ভিজিয়ে ফেলেছিলেন।
আজো তার চোখে ভিজে ওঠে কিন্তু ঠোঁটে কোনো শব্দ আর খেলা করে না। কণ্ঠনালি এবং ঠোঁটেরও হাঁপানি রোগ হয় বুঝি! হাঁপানি নামের রোগটার কারণে বাতাসের সাগরে ডুবে থেকেও হাতড়ে হাতড়ে বাতাস খুঁজে ফিরলেও ফুসফুসকে যেমন তার সন্ধান দিতে কৃপণতা করে, তেমনি ভেতরের এসব শব্দপ্রবাহ ধরতে গিয়ে বৃদ্ধের ঠোঁট আর কণ্ঠনালি শুধু কেঁপেই যায় …
কিন্তু তিনি পুনরায় অন্য শব্দগুলো খুঁজে পেলেন, যেদিন আগন্তুক তাকে জিজ্ঞাসা করল,
সিরিয়ায় আইএসের সঙ্গে যোগদানের আগে আপনার মেয়ের কোনো কর্মকা- কি টের পেয়েছিলেন?
আই … এ … স! সিরি … য়া?
আপনার দুই মেয়েই সিরিয়ায় চলে গেছে।
‘সিরিয়া’ শব্দটা কী, কেন এবং কীভাবে … ভাবতে গিয়ে তার ভেতর প্রগলভ হয়ে উঠল। আগন্তুকের এমন কথায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল বৃদ্ধের অন্তর। আগন্তুক তাকে পুনরায় বলল,
কয়েকদিন আগে দুই মেয়েকে অপহরণ করে আপনার কাছ থেকে যে মুক্তিপণ আদায় করা হলো, ভুলে গেলেন? ভাগ্যিস পুরো টাকাটা দেননি। সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য ওসবই আপনার মেয়েদের কারসাজি। যাই-ই বলেন, দারুণ চটপটে আপনার মেয়েদুটো। আগুনে পুড়ে মরে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে তারা সিরিয়ার যুদ্ধে আগুন জ্বালাতে গেল!
দোলার মায়ের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের দিন তার অন্তর যেভাবে আন্দোলিত হয়েছিল আজ সেই আন্দোলনে ‘আনন্দ’ শব্দটুকুর পরিবর্তে ‘ভীতি’ এবং চরম ‘হতাশা’ যোগ হলো। তবু, সেই শব্দের ভেতর তিনি সামান্য আলোর ইঙ্গিত খুঁজলেন। যদি সত্যিই তার মেয়েদুটি সিরিয়ায় গিয়ে থাকে! তাহলে হয়তো এতক্ষণ বেঁচে আছে। সুস্থভাবে মানুষের বেঁচে থাকার চেয়ে সুন্দর পৃথিবীতে আর কিছু তো নয়। দুই বোনের ছোটবেলা থেকে বড় হয়ে-ওঠার সকল ক্ষণ live chat 888sportের দৃশ্যের মতো তার চোখে ভেসে উঠল। দুই বোন একসঙ্গে ঘুমাত, একসঙ্গে খাবার খেত, একসঙ্গে বেড়াত এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে অংশগ্রহণ করত। আহা, মেয়েদের প্রতিভাদীপ্ত সুন্দর মুখশ্রীর খোঁপায় গুঁজে থাকা রজনীগন্ধার সঙ্গে ফাল্গুনের পলাশ তার চোখে ভেসে উঠে তাকে কেমন আনমনা করে তুলছে। যেন, নিজের শৈশব থেকে পলাশ আর শিমুলের এক চৈত্রের পূর্বাহ্ণের ঘ্রাণ তিনি আস্বাদন করছেন।
কথাটা ভাবতেই তার চোখ অশ্রম্নতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল। তিনি ঝাপসা চোখেই দেখলেন, বাতাসে পতপত করে উড়ছে তার মেয়ের রেশমি ওড়না। এই অলৌলিক দৃশ্য দেখে তার মুখে হাসি ফুটে উঠলে তিনি চোখ মোছামাত্র দেখলেন, রোদ ঝলমল অবারিত আকাশ। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুনরায় আগুনের ফুলকি দেখলেন যেন। তার পুনরায় মনে পড়ল, মেয়ের পুড়ে যাওয়া ওড়নার এক প্রান্ত লেলিহান আগুনের শিখাকে ফাঁকি দিয়ে উত্তপ্ত বাতাসে পালকের মতো উড়তে উড়তে তার মাথার ওপর এসে পড়েছিল। যেন, সেই অগ্নি থেকে বেঁচে যাওয়া ওড়নার প্রান্ত তাকে মনে করিয়ে দিতে এসেছে – তার কন্যাদ্বয়ের ছোট্টবেলার কোনো এক ক্ষণ।
এবার অন্য এক 888sport sign up bonusলোকে তিনি তলিয়ে গেলেন। যে-888sport sign up bonus বারবার, অনেকবার; মানুষ হিসেবে তিনি কত ব্যর্থ তা তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। দিচ্ছে। এই জীবনের বাকি সময়ের প্রতিটি ক্ষণ হয়তো সেই একদিনের 888sport sign up bonus তাঁর স্বপ্ন এবং আকাঙক্ষার পতনবিন্দুকে চিনিয়ে দেবে।
দুই
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। স্কুলের পাশে একটা বড় কেনাকাটার দোকান থেকে দোলার বাবার মোবাইল ফোনে কল এলো,
আপনি তাড়াতাড়ি আপনার মেয়ের স্কুলের পাশে আমাদের আগোরার দোকানে চলে আসুন। এখানে আমরা আপনার মেয়েকে আটকে রেখেছি।
কেন, আমার মেয়ে কী করেছে?
সে আপনি এলেই জানবেন।
ছা-পোষা মানুষ তিনি। সামান্য এই কথাতেই তার কপাল ঘামতে থাকল। নিজের হৃদ্স্পন্দনের দ্রুতগতির ধ্বনি নিজেই শুনলেন। সামান্য ফায়ারম্যান হয়ে কাজ থেকে কিছুক্ষণের ছুটি নিয়ে নিজেকে ছোটাতে যখন গলদঘর্ম, তখন পুনরায় তাকে ফোন করে বলা হলো,
আপনি এত সময় নিলে আপনার মেয়েকে আমরা পুলিশে দিতে বাধ্য হবো।
অবশেষে হন্তদন্ত হয়ে তিনি বিরাট শপিংমলটার দরজায় পা রেখে থমকে দাঁড়ালেন। দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের একপাশে দোলা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার ডান হাতের মুঠি শক্ত করে লুকিয়ে রেখেছে কী যেন। সেই লুকানো বস্ত্তটার চেয়ে মানুষের আগ্রহ মনে হয় তার কৃতকর্মে সংঘটিত ‘পাপটুকুর’ প্রতি। পুরুষ মানুষগুলো সেই পাপ খুঁজছে মেয়েটার বাড়ন্ত শরীরে আর 888sport promo codeরা তা খুঁজছে অশ্রম্নজলে ভেজা তার মুখশ্রীর সৌন্দর্যে। সৌন্দর্যেই যত পাপ কিনা!
মাত্র চার ধাপ সিঁড়ি বেয়ে দোকানের অধোভাগে উঠতে গিয়েও তার মনে হলো তিনি উঁচু এক পাহাড়ে উঠছেন, যে-পথটা আর শেষ হচ্ছে না। তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া একজন মহিলা সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে বললেন,
কেমন হতচ্ছাড়া মেয়ে। স্কুলড্রেসেও চকলেট চুরি করে! স্কুলের মান-ইজ্জত সব খেল। বলি, এদের বাপ-মা কি …
ঠিক তখনই তার মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। কান তালা লাগামাত্র চারপাশে একবার তাকালেন তিনি। মানুষগুলোর সব পা আর সকল যানবাহনের সব চাকা সচল থাকলেও সব শব্দ কেমন মোমের মূর্তির মতো নিশ্চল, স্তব্ধ হয়ে গলে যাওয়া অংশ নিয়ে একে অন্যের গায়ে লেপ্টে আছে। আশপাশের শব্দ, ধ্বনি-প্রতিধ্বনি সব কেমন মিলিয়ে গেছে কোনো এক অদৃশ্যলোকে।
মধ্যাহ্নের সূর্য আকাশে গনগনে আগুন ছড়ালেও ঝিঁঝি পোকারা ডাকছে, সেইসব লেপ্টে-থমকে থাকা কম্পাঙ্কহীন শব্দের আড়াল থেকে। আড়াল কি এক ধরনের অন্ধকার? তিনি চোখে অন্ধকার দেখলেন। কিন্তু সেই অন্ধকারের মাঝে ঝাপসা চোখের ভীত অথচ মায়াবী দৃষ্টি যেন তাকে মাটি থেকে লুটিয়ে পড়া থেকে বাঁচাল।
দোলা তার বড় মেয়ে – তার সব শ্রম এবং ঘামকে জয় করার প্রেরণার নাম দোলা। সেই মেয়ের চোখে একসাগর লজ্জা আর অপমানের দৃশ্য তাকে অস্থির করে তুলল। তিনি ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে।
দোকানের সিসি টিভি ক্যামেরার অপারেটর ম্যানেজার নিরাপদ দূরত্ব থেকে মেয়েটাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল। কয়েক ঘণ্টা ধরে তারা সেখান থেকে তাকে এক পাও নড়তে দেয়নি। মেয়ের বাবাকে পেয়ে তারা এলেন।
আমার মেয়ে কী করেছে?
কী আর করেনি। মাত্র সাত টাকা দামের একটা চুলের ক্লিপের বিল দিয়ে দামি চকলেট চুরি করে পকেটে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। তাকে বাইরে থেকে ধরে এনে জিজ্ঞাসা করলেও সে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। এই বয়সে এমন পাকনা মেয়ে আমরা আর দেখিনি! কেমন একটা চোর মেয়ে পয়দা করেছেন?
দোলার টলটল অশ্রম্নতে পরিপূর্ণ চোখে অসহায়ত্বের জ্বালার চেয়ে তার বাবাকে অপমানের কষ্টের ভাষা তাকে মাটিতে মিশিয়ে দিলো যেন! আকুল হৃদয়ে সে কল্পনা করল, এটা যেন স্বপ্নের কোনো ক্ষণ হয় অথবা স্রষ্টা যেন কয়েক ঘণ্টা আগের শ্রেণিকক্ষে তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে সে আর কোনোদিন এই দোকানে ঢুকবে না। চকলেট খাওয়ার লোভ করবে না। বাবার কণ্ঠ শুনে সে বুঝল, সময়ের পাখা আছে কিন্তু সেই পাখা পেছনে উড়তে জানে না। সুতরাং পেছনে গিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপায় নেই বলে এবার তার খুব ইচ্ছা করল সেই পাখায় ভর করে খুব দ্রুত জীবনের শেষ গন্তব্য মৃত্যুর কাছে পৌঁছে যেতে। যদি তা পারা যেত! তবে দোলা সত্যিই বেঁচে যেত। যদি বাবার সলজ্জ আর ব্যথাতুর চোখদুটো দেখতে না হতো! দোলার বাবা নিচু আর কাঁপা কণ্ঠে বললেন,
বাবা, আমি চকলেটের দামটা দিয়ে দিচ্ছি … দোষ আমার মেয়ের নয়, বাবা। কতদিন মেয়েটা আমার একটা চকলেট কেনার জন্য একশ টাকা চেয়ে বায়না ধরেছে। ওর সব বন্ধু তো মাঝে মাঝে এখান থেকে চকলেট কেনে … আমি দুঃখিত, লজ্জিত।
বাক্যটা বলে বাবা তার মেয়ের দিকে মায়াভরে তাকালেন। বাবা-মেয়ের চোখাচোখির মুহূর্তে তিনি খেয়াল করলেন মুঠিতে ধরা চকলেট নিয়েই কন্যা তার ভিজিয়ে ফেলা গ-দেশ লুকাতে মরিয়া। হাতে-ধরে-থাকা চকলেট দুমড়ে-মুচড়ে ভর্তা হয়ে গিয়েছে কখন, সেদিকে তার খেয়ালও নেই। দোলার কান্না নিঃশব্দ হলেও ভেতরে বয়ে চলা ঝড় ছড়িয়ে যাচ্ছে তার কিশোরী তনুতে। বাবা হয়ে কন্যাকে এই কিশোরী বয়সে প্রবল ঝড়ে বিধ্বস্ত হতে দেখে তার ভেতরটা মূক হয়ে গেল এই ভেবে যে, সমাজের প্রবল এই ঝড় থেকে তিনি তার প্রাণাধিক কন্যাদ্বয়কে রক্ষার জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেননি। যে-সমাজ শুধু আইনের দৃষ্টিতে পাপ-পুণ্যকে মাপার বাটখারা নিয়ে দাঁড়িয়ে। শিশু-কিশোর এবং অসহায় মানুষের মানবিকতার দিকে নয়, সেসব নিক্তির কাঁটা ঘুরে যায় তাদের দিকে যারা নিক্তির একদিকে চাপ প্রয়োগ করে এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারে। দোকান ব্যবস্থাপক বললেন,
গরিবের এই এক ঘোড়ারোগ। মুরোদ নাই কিন্তু স্বপ্ন দেখে প্রাসাদের। অন্যায় করলে বলে ‘লজ্জিত’। আরে লজ্জা থাকলে না লজ্জিত হবেন। যাকগে, চকলেটের দাম দিলেই তো আর হবে না, সে যে অপরাধ করল তার জরিমানা তো দিতে হবে।
ঝাপসা দৃষ্টিতে দোলার বাবা যন্ত্রের মতো মেয়ের চকলেটের জন্য একশ টাকা এবং জরিমানা বাবদ আরো এক হাজার টাকা দেওয়ার সময়ও জীবনের অদ্ভুত এক হিসাব কষলেন। মেয়ের সাধ মেটাতে পাঁচশো টাকা খরচ করলেও হয়তো আজ তাকে এমন লজ্জায় পড়তে হতো না। তিনি মেয়ের হাত ধরে বাড়ি ফেরার পথে মেয়েকে কিছু না বলে নিজের কানে কানে নিজেই ফিসফিস করে বললেন, অপমানের চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। ঠিক সেই সময় তার 888sport sign up bonusপটে গ্রামের প্রায় শুকনা নদীর পাড়ে বহুকাল ধরে দাঁড়িয়েথাকা একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ ভেসে উঠল। স্রষ্টা যেন তাকে এক ইঙ্গিত দিলেন। মেয়েকে তিনি বললেন,
মা, তুমি তোমার মাকে আজকের ঘটনার কিছুই বলবে না। আর হ্যাঁ, তোমাদের নিয়ে আগামী সপ্তাহে গ্রামে বেড়াতে যাব। সেখানে নদীর পাড়ে কৃষ্ণচূড়া গাছটায় বৃষ্টিভেজা সবুজের মাঝে এখন আগুনের মতো ফুল ফুটে আছে। সেই ফুলগুলোর মতো তুমি সুন্দর, মা।
তিন
আগন্তকটি এবার বিরক্ত হয়ে বললেন,
কী হলো আপনি যে কিছু বলেন না, চাচা?
কৃষ্ণচূড়া ফুলের টকটকে লাল একজন বাবার স্নিগ্ধ, সতেজ এবং সবুজ 888sport sign up bonusলোকে আজ নতুন করে আগুন জ্বালিয়ে দিলো। এতক্ষণ পর তিনি বাস্তবে ফিরলেন। রহস্যময় আগন্তুক লোকটার চোখে চোখ রাখলেন। মনে হলো, লোকটার হৃদয় থেকে এক আগুনের শিখা তার চোখ-মুখের অভিব্যক্তিতে খেলা করছে। এই অনুভব হওয়ামাত্র আগুনে ভস্মীভূত আত্মজাদের আত্মার নিরাপত্তাহীনতায় একজন বাবার হৃদয় হাহাকার করে উঠল। তিনি বললেন,
কক্ষনো নয়, বাবা। আমার মেয়েরা, আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা ধর্ম পালন করলেও তা নিয়ে গোঁড়ামি করার মানসিকতা কারো মাঝে নেই। সিরিয়ায় অনেক মেয়ের যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে আমার ছোট মেয়ে একদিন বলছিল, ‘এই মেয়েগুলো এতো গর্দভ কেন? আল্লাহর কাছে তো সেই দু’জন মানুষও সমান নয়, যে দেখতে পায় এবং যে চোখ থেকেও দেখতে পায় না। এরা এত একচোখা!’
কিন্তু ওরা তো বদলে যেতেই পারে।
তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। এতবড় অপবাদ আমার মেয়েদের ওপর চাপিয়ে দিও না, বাবা। তিনি আগন্তুকের হাত আকুল আবেগে চেপে ধরলেন,
আমার দুই মেয়ে 888sport cricket BPL rateের গান গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে শুধু চুড়ি কিনতে একটা দোকানে একটু থেমেছিল। সেখান থেকে একটু পরেই ফিরবে বলে আমাকে ফোনে জানিয়েছিল। আমার কললিস্ট তোমরা চেক করে দেখো!
আগুনে পোড়া মৃতের 888sport free bet বাড়িয়ে কী লাভ, চাচা? আপনাকে কীভাবে বোঝাই, 888sport free bet কতবড় এক মানসিক চাপ। কোথাও তা বাড়লে সমস্যা। কোথাও সমস্যা কমে গেলে। বোঝার চেষ্টা করেন একটু … তাদেরকে কেউ-ই তো পুড়তে দেখেনি। কোনটা তাদের লাশ তা তো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বৃদ্ধের দিকে আগন্তুক একটা ছবি এগিয়ে দিয়ে বললেন,
এই ছবিতে দেখুন …
বলে মেয়ে দুজন চুড়িপট্টি হয়ে কীভাবে সিরিয়ার যুদ্ধে গমন করেছে ছবিসহ তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিলো লোকটি। বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে দোলার বাবা এবার আগন্তুক ছেলেটির দিকে তাকালেন। তাকিয়েই থাকলেন। তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় প্রশ্ন করার সামর্থ্যও তার তৈরি হলো। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেন,
এত বিস্তারিত তোমার পক্ষে জানা সম্ভব হলো! কিন্তু দুই বছর হলো, আমার বড় মেয়েকে কে বা কারা লাঞ্ছিত করল – তার হদিস অথবা বিচার তো হলো না! তুমি তো সবই জানো, দুই বছর আগে 888sport cricket BPL rateের গান গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে আমার মেয়েকে কে বা কারা লাঞ্ছিত করেছিল … এই তথ্যটা কি তোমাদের জানা আছে?
এমন ঘটনা তো শুনিনি। কিন্তু চাচা, আপনার মেয়েদের সব ঘটনা কেন 888sport cricket BPL rateের গানের সঙ্গে জড়িত?
তা তো জানি না, বাবা। তবে 888sport cricket BPL rateের গানটা ওদের কণ্ঠে এমনভাবে সুর তোলে যে, অনেকের চোখ ভিজে যায়। সেজন্যই তো আমার মেয়ে দুজন 888sport cricket BPL rateকন্যা বলে খ্যাত! এ আমার বড় অহংকার …। তুমি কি জানো, কারা কাজটি করেছে?
তা জানি না। তবে আমার ধারণা … সেই শোধ নিতেই তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে।
দোলার বাবা বড় মেয়ের পোড়া ওড়নার একাংশ দিয়ে চোখ মুছলেন। বললেন,
যারা অমন দরদ দিয়ে গান গায় – তারা হাতে অস্ত্র নিতে পারে না।
দেশ-কাল-সমাজ সব বদলে গেছে, চাচা। এখন 888sport live chatী, শিক্ষক-অধ্যাপক, চিকিৎসক-প্রকোশলী, ব্যবসায়ী কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।
দোলার বাবা খেয়াল করলেন, অবিশ্বাসের ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশাকে উলেস্নখ করলেও আগন্তুক কিছু শ্রেণি-পেশাকে সন্তর্পণে এড়িয়ে গেল। ময়লা পাঞ্জাবির পকেট থেকে বড় মেয়ে দোলার পুড়ে যাওয়া ওড়নার অর্ধাংশ তিনি বের করলেন। জর্জেটের মেরুন-সবুজের অর্ধাংশটুকুতে আজ তিনি আবার আগুন জ্বলতে দেখলেন। পুড়তে থাকল তার ঢিপঢিপ করে বিদ্রোহ করা হৃদয়ের সব প্রান্তর। সেই বিদ্রোহ তার শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে দ্রুততর করতে গিয়ে অলিন্দ হতে তীব্রগতিতে ভুল পথে তার মস্তিষ্কে আঘাত হানল।
বৃদ্ধের উদাস দৃষ্টি সংকুচিত হয়ে এলো। নিজের আত্মায়, সত্তায় মেয়ের 888sport sign up bonusকে সুরক্ষিত করতে না পারার অপরাধে তার অন্তর পৃথিবীর জানা-অজানা সব ভাষায় এতো তীব্র প্রতিবাদ করতে চাইল যে, এবার তিনি ‘আগুন’ শব্দটাও ভুলে গেলেন। অর্ধপোড়া ওড়নায় ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা আগুন কেন আগুন, কবে তার জন্ম তিনি তারই সবই ভুলে গেলেন। বিছানায় পড়ে থাকা এবং বহু লক্ষ-কোটি বছর আগে মানব প্রজাতির এক ডিএনএর সজাগ স্নায়ুতন্ত্রের 888sport sign up bonusঘোরে আটকে থাকা তার নিয়তি হয়ে উঠল।
সেই 888sport sign up bonusঘোরে তার চোখের সামনে একটা দৃশ্যই আজকাল ভাসতে থাকে, তার মেয়ের ওড়নায় আগুন জ্বালিয়ে গুহার সামনে একদল উলঙ্গ-অর্ধউলঙ্গ মানুষ কি ঝলসে ঝলসে খেয়ে নিচ্ছে!


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.