আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

গোলাম মুস্তাফা

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় জন্মেছিলেন ১৮৯০ সালের ২৬ নভেম্বর, হাওড়ার শিবপুরে, তাঁর মামার বাড়িতে। উত্তর ভারতের কান্যকুব্জ থেকে, একাদশ-দ্বাদশ শতকের দিকে যে পাঁচজন ব্রাহ্মণ বঙ্গদেশে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন, তাঁদেরই একজন ছিলেন সুনীতিকুমারের ত্রয়োদশ পূর্বপুরুষ – বীতরাগ। বীতরাগের এক পৌত্র সুলোচনকে বল্লাল সেন পশ্চিমবঙ্গের চাউটুতি গ্রাম দান করেছিলেন। তুর্কিদের বঙ্গদেশ অধিকারের পর এই পরিবার পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে এসে বাস করতে থাকেন। সুনীতিকুমারের প্রপিতামহ ভৈরব চট্টোপাধ্যায় পিতৃভিটা ত্যাগ করে হুগলিতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। কুলীন ব্রাহ্মণদের ঐতিহ্য অনুসরণে দারপরিগ্রহণ করেই তিনি জীবিকানির্বাহ করতেন। একাধিক বিয়ে করেছিলেন, তবে থাকতেন হুগলিনিবাসী পত্নীর সঙ্গে।

পিতা হরিদাস চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ইংরেজ সওদাগরি অফিসের চাকুরে। মাতা কাত্যায়নী দেবীকে হারিয়েছেন বাল্যকালেই। মাতৃহারা সুনীতিকুমার প্রতিপালিত হয়েছেন পিতার যত্নে ও তাঁর ঠাকুরমার স্নেহচ্ছায়ায়। মায়ের কাছেই অক্ষরজ্ঞান লাভ করেছিলেন শৈশবে। এরপর ঠাকুরদাদা ঈশ্বরচন্দ্রের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে পড়ালেখার প্রাথমিক পাঠ লাভ করেন। ঈশ্বরচন্দ্র ফারসি ও ইংরেজি জানতেন, সংস্কৃত ভাষাও রপ্ত করেছিলেন পরে। ফারসি 888sport live footballের অনেক গল্প শোনাতেন পৌত্রদের। তাঁর কাছ থেকে শুনে শুনে গুলিস্তাঁর অনেক বয়েৎ মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল সুনীতিকুমারের। কলকাতার সুকিয়াস স্ট্রিটের একটি সাবেকি পাঠশালায় সুনীতিকুমারের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। গোলপাতার একটি কুঁড়েঘরের সামনের খোলা মাঠে চলতো পাঠশালার পাঠদান। এরপর দুবছরের জন্য পড়েন আমহার্স্ট স্ট্রিটের ক্যালকাটা একাডেমিতে। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় প্লেগের মড়ক দেখা দিলে তাঁদের পরিবার শিবপুরে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। তখন বাড়িতেই পড়তেন ঠাকুরদাদার কাছে। এক বছর পর আবার কলকাতায় ফিরে এসে ভর্তি হন মতিলাল শীলের ফ্রি স্কুলে। এই স্কুল থেকেই ১৯০৭ সালে তিনি এন্ট্রান্স পাস করেন। বিনে মাইনেতে স্কুলে পড়ার সুযোগ পাওয়ায় মতিলাল শীলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সুনীতিকুমার :

আমরা চার ভাই প্রত্যেকেই ৮ বা ৭ বছর ক’রে মোতীলাল শীলের দাক্ষিণ্যে তাঁর-ই স্থাপিত ইস্কুলে বিনা বেতনে প’ড়ে মানুষ হই। তাঁর কাছে আমাদের ঋণ অপরিশোধ্য, কৃতজ্ঞ হৃদয়ে নতমস্তকে তাঁর পুণ্য 888sport sign up bonusর উদ্দেশে আমাদের আন্তরিক 888sport apk download apk latest version নিবেদন করি।

এন্ট্রান্সের নির্বাচনী পরীক্ষায় গণিতে শূন্য পেয়েছিলেন, কাজেই এই বিষয়ে পাশ করবেন কি না এই নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত পরীক্ষার আগের কয়েক মাস অনলস সাধনায় গণিত রপ্ত করলেন ভালোভাবেই। পরীক্ষায় ফল বেশ ভালো হলো – মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান। এফ.এ. পড়লেন  জেনারেল অ্যাসেম্বলি মিশনারির কলেজে, এটি পরে ডাফের কলেজের সঙ্গে একীভূত হয়। এখন এর নাম স্কটিশ চার্চ কলেজ। এফ.এ. পরীক্ষার ফলও ভালো হলো, তৃতীয় স্থান অর্জন করলেন। উভয় পরীক্ষায় মেধা-বৃত্তি পাওয়ায় তাঁর উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ প্রশস্ত হলো। প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজি স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হলেন, অনার্সসহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করলেন। প্রেসিডেন্সিতে এম.এ. পড়লেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে প্রায়ই ক্লাস করতেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণির পাঠদান তখন সবে শুরু হয়েছে। এম.এ.তে সুনীতিকুমার 888sport live footballের পরিবর্তে ভাষা শাখায় পরীক্ষা দিলেন; এজন্য তাঁকে অধ্যয়ন করতে হয়েছে প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইংরেজি ভাষা। ভাষা888sport apkও পড়েছেন অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে। এম.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেই। বঙ্গীয় সংস্কৃত পর্ষদের অধীনে অনুষ্ঠিত সংস্কৃত পরীক্ষায়ও পাশ করলেন কৃতিত্বের সঙ্গে।

স্কটিশ চার্চ কলেজে তিনি বেশ কয়েকজন গুণী শিক্ষকের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। ইতিহাসের অধ্যাপক বিপিনচন্দ্র সেন ও অধরচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন গ্রিস ও রোমের ইতিহাস অধ্যয়নের অনুপ্রেরণা। গ্রিক ও রোমান 888sport live football অধ্যয়নের সূচনা হলো। এ ভাষাদুটি তিনি জানতেন না, শিখতে শুরু করলেন। এই দুই সভ্যতার ভাস্কর্য তাঁকে আকৃষ্ট করতে থাকে। প্রেসিডেন্সির অধ্যাপক এইচ.এম. পার্সিভাল তাঁকে ইউরোপীয় জীবন ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী  করে তোলেন।

সুনীতিকুমারের চাকরিজীবনের সূচনা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে। কিছুদিন পর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক রবার্ট নক্সের সহকারী পদে নিয়োগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে তিনি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।  প্রাচীন-মধ্যযুগের ইংরেজি এবং টিউটনিক ভাষা সম্পর্কে এম.এ. পড়ার সময়েই কিছুটা ধারণা তাঁর হয়েছিল। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার জার্মানিক শাখা সম্পর্কে গবেষণা করার কথা ভাবছিলেন, কিন্তু যোগ্য তত্ত্বাবধায়ক পেলেন না। এই সময়ের কিছু আগে-পরে বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের ক্ষেত্রে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন ঘটে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও বসন্তরঞ্জন বিদ্বদ্বল্লভের চয্যাচর্য্যবিনিশ্চয় ও  শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনের  পুথি আবিষ্কার, রবীন্দ্রনাথের নোবেল 888sport app download bdপ্রাপ্তি – এইসব ঘটনা সুনীতিকুমারকে বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে অনুসন্ধানী করে তোলে। তিন বছর ধরে গবেষণা করেন তিনি বাংলা ভাষায় ফারসি উপাদান, বাংলা ক্রিয়া ও ক্রিয়ামূল এবং চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে। এই গবেষণা কাজের জন্য তিনি প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। বাংলার উপভাষা সম্পর্কে গবেষণার জন্য পেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবিলি 888sport app download bd। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রভাষকের চাকরিও জুটে যায় ১৯১৭ সালে। ১৯১৯ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি পান ইউরোপে গিয়ে ভাষা888sport apk অধ্যয়নের জন্য।

বিলেতে গিয়ে তিনি ভর্তি হলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে। ১৯১৯ থেকে ১৯২২ – এই তিন বছর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা888sport apkের সেরা অধ্যাপকদের কাছে তিনি শিক্ষালাভের সুযোগ পেয়েছেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এল.ডি. বার্নেট ছিলেন তাঁর গবেষণা নির্দেশক। বার্নেটের কাছ থেকে শিখেছেন পালি। তুলনামূলক ভাষা888sport apkের অধ্যাপক এফ.এ. থমাসের কাছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী সম্পর্কে জেনেছেন। ধ্বনি888sport apkের পাঠ নিয়েছেন অধ্যাপক ড্যানিয়েল জোন্সের মতো পন্ডিতের কাছ থেকে। ড্যানিয়েল ছিলেন একই সঙ্গে তাঁর শিক্ষাগুরু ও সুহৃদ। এই সময়ে সার ই. ডেনিসন রস, অধ্যাপক আর.ডব্লিউ চেম্বারস, ই.এইচ.জি গ্রাটান ও রবিন ফ্লাওয়ারের ক্লাসে বসে শিখেছেন যথাক্রমে ফারসি, প্রাচীন ইংরেজি, গোথিক ও প্রাচীন আইরিশ। সার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সনের সঙ্গে এই সময়ে তাঁর যোগাযোগ ছিল। গ্রিয়ার্সন সুনীতিবাবুর কাজ সম্পর্কে বেশ আগ্রহী ও উৎসাহী ছিলেন। The Origin and Development of the Bengali Language-এর ভূমিকাও লিখেছেন গ্রিয়ার্সন।

প্যারিসে তিনি অধ্যাপক অাঁতোয়েন মেইলেত ও জুল ব্লখের কাছ থেকে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী, বিশেষত ভারতীয় আর্যভাষাসমূহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছেন।  সিলভাঁ লেভি, পল পেলিওত ও জাঁ প্রিজিলুস্কির (Przylusky) সান্নিধ্যেও তিনি বেশ উপকৃত হয়েছেন।

১৯২২ সালের নভেম্বরে তিনি ফিরে আসেন কলকাতায়। ততদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধ্বনি888sport apk বিভাগে খয়রা অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি হয়েছে। সুনীতিকুমার এই পদে যোগ দিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে তিনি পড়াতেন বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, সংস্কৃত ও তুলনামূলক ভাষা888sport apk। পরে ফারসি, পালি, ইসলামের ইতিহাস ও ফরাসি বিষয়ে ক্লাস নেন। ধ্বনি888sport apkও পড়িয়েছেন।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনীতিকুমার বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে গবেষণা করে ডি.লিট উপাধি অর্জন করেন ১৯২১ সালে। তাঁর গবেষণা অভিসন্দর্ভটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। ১৯২৬ সালে এটি প্রকাশিত হয় The Origin and Development of the Bengali Language নামে। এই অভিসন্দর্ভটি সুনীতিকুমারের প্রধান কীর্তি, একটি অসাধারণ ও বড় মাপের কাজ, – Magnum Opus।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষার ঠিকুজি নির্ণয়ের একটি পরিশ্রমসাধ্য কাজ করেছেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১-এর মধ্যে – এই অল্পসময়ে – এই ধরনের একটি কাজ সমাপ্ত করা প্রায় অকল্পনীয়। নিজের মাতৃভাষা সম্পর্কে এরকম একটি গবেষণা করার চিন্তা তাঁর মনে এসেছিল প্রায় একযুগ আগে –  এম.এ. পড়ার সময়। ইংরেজি ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের আধুনিক পদ্ধতি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। বাংলা ভাষাও ইংরেজির মতো ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই কারণে ভাষা888sport apkের পদ্ধতি অবলম্বন করে বাংলা ভাষার বিশ্লেষণ করার সম্ভাবনার কথা ভেবে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন।

বাংলা ভাষার ঠিকুজি অনুসন্ধান করতে গিয়ে সুনীতিকুমার একটি বিশাল পটে কাজ করেছেন। বাংলা ভাষার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিস্তীর্ণ ভূগোলের অনেক ভাষার সম্পর্ক। বঙ্গীয় ইতিহাসের পর্বান্তরের সঙ্গেও এই ভাষার বিকাশ সম্পর্কিত। বিষয়টি শুধু ভাষাতাত্ত্বিক নয়, বিদ্যানুশীলনের 888sport app শৃঙ্খলার সঙ্গেও এর সংযোগ আছে। এই কারণে তাঁর এই কাজ ভূগোল, ইতিহাস ও জনগোষ্ঠীগত ইতিহাসের একটি সমন্বিত অধ্যয়ন। সুনীতিকুমারের আগে জন বীমস্ ভারতীয় ভাষার বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর অনুসন্ধান-পদ্ধতির সঙ্গে সুনীতিকুমারের পার্থক্য আছে। বীমস্ ভারতের সব ভাষাকে একক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করে একটির সঙ্গে অন্যটির তুলনামূলক আলোচনা করে একটি সূত্র আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন। সুনীতিকুমার একটি ভাষাকে আলোচনার ভিত্তি করেছেন, নির্দিষ্ট ভাষার সার্বিক আলোচনা করে অন্যভাষার সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনার  সূত্রপাত করেছেন। এই পার্থক্যের কথা জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সনও উল্লেখ করেছেন, বইটির ভূমিকায়। তিনি বীমসের পদ্ধতির প্রশংসা করেও এর সীমাবদ্ধতার দিকটি নির্দেশ করেছন :

…but such an attempt, ¯ admirable though Beam’s work was, ¯ cannot be really successful till each of the different languages has been separately and minutely dissected under the strictest  scientific rules. The palace of comparative grammar cannot be built without bricks, and the bricks are made up of the facts of each particular language.

গ্রিয়ার্সনের A Linguistic Survey of India-র বাংলা ভাষা-সম্পর্কিত অংশের সঙ্গে একমত হতে পারেননি সুনীতিকুমার। তবু, সুনীতিকুমারের মেধা ও কাজ সম্পর্কে গ্রিয়ার্সনের ছিল অকুণ্ঠিত স্বীকৃতি।

বাংলা ভাষার উদ্ভব-ক্রমবিকাশের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য বিচার করতে গিয়ে জুল ব্লখের La Formation de la Langue Marathe-র কাঠামোকে সুনীতিকুমার অনুসরণীয় বিচেনা করেছেন। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ-রচনায় রামমোহন রায়, চিন্তামণি গাঙ্গুলি, নকুলেশ্বর বিদ্যাভূষণ ও হৃষিকেশ শাস্ত্রীর অবদানকে উল্লেখযোগ্য মনে করলেও বৈজ্ঞানিকভাবে এই ভাষার সমস্যাগুলো আলোচনা করার পথিকৃতের কৃতিত্ব দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে।

বাংলা ভাষার ইতিহাস ও প্রকৃতি নির্ণয়ের জন্য তিনি প্রধানত নির্ভর করেছেন জ্ঞানেন্দ্র মোহন দাসের বাঙ্গালা ভাষার অভিধান ও বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ-আবিষ্কৃত শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনের ওপর। চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়ের উপকরণও তাঁর আলোচনায় প্রভূত পরিমাণে ব্যবহৃত হয়েছে।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সবচেয়ে পূর্বপ্রান্তের ভাষা বাংলা ও অসমীয়া। অসমীয়াকে সুনীতিকুমার বাংলার সহোদরারূপে  বিবেচনা করেছেন। ১৯১১ সালের জনগণনার হিসাবে ভারতে বাংলাভাষীর 888sport free bet ছিল পাঁচ কোটিরও কম – ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯১৫ জন। বাংলাভাষীর 888sport free bet তখন ভারতে ছিল সর্বাধিক। এই প্রসঙ্গে হিন্দিভাষীর 888sport free betর প্রসঙ্গও এসে যায়। পশ্চিমী হিন্দির একটি সংস্কৃতরূপ তখন আর্যভারতের এক বিশাল ভূখন্ডের 888sport live football, শিক্ষা, আদালত ও জনজীবনের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিহারি, পূর্বী হিন্দি, পাঞ্জাবি, লাহন্দি, মধ্য ও পশ্চিমি পাহাড়ি এবং রাজস্থানি ভাষাভাষী অঞ্চলে এ-ভাষার প্রচলন ছিল। হিন্দি তখন এসব অঞ্চলের লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা ছিল। কিন্তু হিন্দি মাতৃভাষা ছিল সাড়ে চার কোটি মানুষের।

বঙ্গদেশের বিরান্নববই শতাংশ মানুষই বাংলাভাষী ছিলেন; অসম, বিহার ও উড়িষ্যারও বেশকিছু এলাকায় বাংলা কথিত হতো। এসব অঞ্চলকে বাংলা ভাষা-ভূগোলের অন্তর্গত গণ্য করেছেন সুনীতিকুমার। ওড়িয়া, মাগহি, মৈথিলি ও অসমীয়া ভাষায়ও বাংলার প্রভাব লক্ষ করেছেন তিনি। ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম অঞ্চল থেকে আগত অভিবাসীদের কারণে বাংলায় হিন্দি ভাষার অনেক শব্দ ও বাকভঙ্গির প্রবেশ ঘটেছে। দার্জিলিং এলাকায় বাংলা ভাষার সঙ্গে মিশে গেছে খাসকুরা বা পর্বতীয়া ভাষার অনেক বৈশিষ্ট্য। এছাড়া বঙ্গদেশের পশ্চিম সীমান্তে অস্ট্রিক গোষ্ঠীর মুন্ডা শাখার সাঁওতালি, হো ও মুন্ডারি ভাষার সংস্পর্শে এসেছে বাংলা ভাষা। মাল্টো, কুরুখ ও ওঁরাও ভাষার সঙ্গেও বাংলার মিথষ্ক্রিয়া ঘটেছে।

বাংলা ভাষার সঙ্গে ভারতীয় আর্যভাষা শাখার অন্য ভাষাগুলোর সংস্পর্শ ও মিথষ্ক্রিয়া ঘটেছে নানা কারণে। এই বিবেচনায় বাংলা ভাষার গতি-প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণ             করতে গিয়ে অন্য ভাষাগুলোর পরিচয় দিয়েছেন সুনীতিকুমার।  উত্তর-পশ্চিম ভারতের দার্দিক ভাষা উল্লিখিত ভাষা-শাখার অন্তর্গত না হলেও এই ভাষার আলোচনাও করেছেন তিনি। পশ্চিম পাঞ্জাবি বা লাহন্দি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, রাজস্থানি শাখার মারওয়ারি, জয়পুরি, মেওয়াতি, পাহাড়ি বা খাশা, খাসকুরা, পশ্চিমি হিন্দি এবং এর বিভিন্ন রূপ, পূর্বীয় হিন্দি, মারাঠি, ভোজপুরিয়া, সিংহলি এবং পশ্চিম এশিয়ার  জিপসিদের ভাষার পরিচয় আছে The Origin and Development of the Bengali Language-এ। ভাষাগুলোর ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর ইতিহাসও তুলে ধরেছেন তিনি।

ধ্বনিতত্ত্ব ও রূপতত্ত্বের বিচারে ভারতীয় আর্যভাষা শাখার বিবর্তনধারাকে – ক. প্রাচীন ভারতীয়, খ. মধ্যভারতীয় ও গ. নব্যভারতীয় – এই তিনটি পর্বে বিন্যস্ত করেছেন সুনীতিকুমার। প্রতিটি পর্বেই ভারতীয় আর্য শাখার ভাষাগুলোর বিবর্তন ঘটেছে – প্রতিটি ভাষা ক্রমশ স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য অর্জন করে বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করেছে। প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার কালনির্দেশ সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। তবে বৈদিক শ্লোকগুলো রচিত হওয়ার সময় থেকে (খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ১৫০০ থেকে ১২০০) গৌতম বুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বপর্যন্ত তিনি এই পর্বের কালসীমা বলে বিবেচনা করেছেন। মধ্যভারতীয় আর্যভাষার কাল মোটামুটি খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নব্যভারতীয় আর্যভাষার পর্ব শুরু হয়। এই পর্বের প্রথম কয়েক শতাব্দীকে সুনীতিকুমার নব্যভারতীয় আর্যভাষার আদি বা প্রাথমিক পর্যায় বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকে এই পর্ব ক্রমশ পরিণত হয়ে ওঠে, স্থানীয় ভাষাগুলোও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

ভারতবর্ষে আর্যদের আগমন ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে এখানে আসা আর্যদের ভাষাও একরকম ছিল না। বেশ কয়েকটি উপভাষার প্রচলন ছিল তাদের মধ্যে। এর মধ্যে একটি উপভাষা বা উপভাষাগুচ্ছের নিদর্শন পাওয়া যায় বেদে। বেদবহির্ভূত বেশ কয়েকটি আর্য উপভাষাও প্রচলিত ছিল। এগুলোর মধ্য থেকেই নব্যভারতীয় আর্যভাষা স্তরের কোনো কোনো ভাষা বিবর্তিত হয়েছে বলে সুনীতিকুমার মনে করেন।

ভারতীয় আর্যভাষার বিবর্তনের তিনটি স্তর নিয়েই অনেক গবেষণা হয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার মধ্যে বৈদিক ও সংস্কৃত অন্তর্ভুক্ত। এই দুটি ভাষা সম্পর্কে ইউরোপে গবেষণা হয়েছে প্রচুর।

বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিবর্তনের ধারা অনুসন্ধানের জন্য  ভারতে আর্যদের আগমন-ইতিহাসের পর্যালোচনাও তিনি প্রাসঙ্গিক মনে করেছেন। ভারতবর্ষের আর্যাবর্তে ঋগ্বেদ ধর্মীয় ও 888sport live footballিক অভিব্যক্তির প্রধান অবলম্বন হয়ে ওঠে। আর্য জীবনধারার দুটি কেন্দ্র সেই সময়ে ভারতে বিকশিত হয় – একটি গন্ধার, অন্যটি ব্রহ্মবর্ত। আর্যভাষীদের সকলেই বৈদিক ছিলেন না। বৈদিক আর্যদের সঙ্গে অনার্যদের বিরোধ তো ছিলই, অবৈদিক আর্যদের সঙ্গেও তাদের সংঘাত চলেছিল। তবে          আর্য-অনার্য বিরোধ-সংঘাতের মধ্যেও অনার্য সংস্কৃতি ও ভাষা দীর্ঘদিন ধরেই রক্ষা পেয়েছিল। আর্য-অনার্যের এই দ্বন্দ্ব একসময়ে সমন্বয়ের পথে অগ্রসর হয়, উভয়ই একে অপরের জীবনদৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে আত্মস্থ করে। এই সমন্বয় পরিপূর্ণতা লাভ করেছিল গাঙ্গেয় উপত্যকায়। এই বিরোধ-সমন্বয়ের প্রক্রিয়ায় আর্যভাষার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – উত্তর ভারতে, এমনকি  দক্ষিণেও, একসময়ে ভাবের বাহন হয়ে উঠল আর্যভাষা।

সুনীতিকুমার মনে করেন, বঙ্গদেশের জনগণ খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যভাগেও আর্যভাষী ছিলেন না। আর্যভাষা বঙ্গদেশে আসে মগধ ও 888sport app অঞ্চলের সৈনিক, ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ-জৈন প্রচারক ও বণিকদের মাধ্যমে। বঙ্গদেশের আর্যায়নের সূচনা হয়, সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে। মৌর্য ও  গুপ্ত শাসনামল জুড়ে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। সপ্তম খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই আর্যায়ন প্রক্রিয়া মোটামুটি সম্পন্ন হয়।

সুনীতিকুমারের বিবেচনায় খ্রিষ্টীয় দশম শতকের মধ্যভাগে বাংলা ভাষা তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চর্যাপদের আলোচনা-প্রসঙ্গে সুনীতিকুমার বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল নির্ণয় করেছেন। লুইপাকে আদি কবি ধরে নিয়ে তিনি দশম শতককে বাংলা ভাষার উদ্ভবকাল বলে সাব্যস্ত করেছেন। অবশ্য তাঁর আগে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীও অনুরূপ মত ব্যক্ত করেছিলেন। The Origin and Development of the Bengali Language-এ চর্যার ভাষাও বিচার করেছেন সুনীতিকুমার। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যার ভাষাকে বাংলা বলে সাব্যস্ত করেছিলেন। কয়েকজন কবির শব্দ-বিচার করে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। তবে বিজয়চন্দ্র মজুমদার তাঁর The History of the Bengali Language (১৯২০)-এ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় The Origin and Development of the Bengali Language-এ সুস্পষ্টভাবেই চর্যার ভাষা বাংলা এই মত ব্যক্ত করেন :

 

The Language of the Caryâs is the genuine vernacular of Bengal at its basis. It belongs to the Early or old NIA. stage. The declension is still more like MIA. rather than NIA., although the  system of post-positions has come in.

চর্যার ভাষার মূল রূপটি বাংলা বলে সাব্যস্ত করলেও এর মধ্যে সুনীতিকুমার শৌরসেনী অপভ্রংশের প্রভাব লক্ষ করেছেন, সংস্কৃত ও মধ্যভারতীয় আর্যভাষা স্তরের 888sport live footballিক প্রাকৃতের বৈশিষ্ট্যও কিছুটা লক্ষ করেছেন। সুনীতিকুমারই প্রথম ভাষাতাত্ত্বিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে চর্যার ভাষা ও ব্যাকরণ পর্যালোচনা করেন। বাংলায় ক্রিয়াপদে -ইল অতীতকাল এবং -ইব ভবিষ্যৎ জ্ঞাপক। চর্যাপদে এই ধরনের প্রয়োগ লক্ষ করে এর ভাষাকে বাংলা বলে সাব্যস্ত করার অন্যতম যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু  অতীতকালের চিহ্ন -ইল-র প্রয়োগ তখনো সবক্ষেত্রে হয়নি, অনেক ক্ষেত্রেই             -ইঅ রক্ষিত হয়েছে; চর্যাপদের ছন্দ ও টীকাভাষ্য পর্যালোচনা করে তিনি  সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেছেন যে, মূল শব্দে -ইল ছিল।

চর্যার ভাষা সম্পর্কে সুনীতিকুমারের মত অনেকের কাছেই গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়নি। বিশেষত ওড়িয়া, অসমীয় ও মৈথিলি পন্ডিতগণ চর্যাপদকে তাঁদের স্ব-স্ব ভাষার রচনা বলে দাবি করেছেন। বাঙালি পন্ডিতগণও এই সম্পর্কে সকলে একমত নন। পন্ডিত বিজয়চন্দ্র মজুমদারের কথা পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে, দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর History of Bengali Language and Literature-এর প্রথম সংস্করণে এই সম্পর্কে কোনো আলোচনা না করলেও এর দ্বিতীয় সংস্করণে (১৯৫৪) চর্যার ভাষা নিয়ে           বিস্তারিত আলোচনা করেছেন; এবং চর্যাপদের ভাষা বাংলা নয় বলে সাব্যস্ত করেছেন। আহমদ শরীফও চর্যার ভাষাকে বাংলা বলে মানতে চাননি।  মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ চর্যার ভাষাকে বাংলা সাব্যস্ত করলেও একে ‘বঙ্গ-কামরূপী’ নামে অভিহিত করতে চান। সুনীতিকুমার চর্যার ভাষা মূলত পশ্চিমবঙ্গের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এই সম্পর্কেও শহীদুল্লাহ্ ভিন্নমত ব্যক্ত করেছেন :

আমরা বৌদ্ধগানের ভাষাকে পশ্চিমবঙ্গের বলিয়া নির্দেশ না করিয়া প্রাচীন বাঙ্গালা কিংবা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রাচীন            বঙ্গ-কামরূপী ভাষা বলাই সঙ্গত মনে করি।

চর্যার কাল নির্ণয় সম্পর্কেও ভিন্নমত আছে। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ লুইপাকে প্রাচীনতম চর্যাকার হিসেবে মেনে নেননি। তাঁর মতে, চর্যা-রচয়িতাদের মধ্যে শবরীপাই প্রাচীনতম। মৎস্যেন্দ্রনাথকে তিনি সপ্তম শতকের বলে বিবেচনা করে ওই সময়টা বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। শহীদুল্লাহ্র এই মত সম্পর্কে আলোচনা-প্রসঙ্গে সুনীতিকুমার তাঁর ‘The Tertiary Stage of Indo-Aryan’ 888sport liveে মৎস্যেন্দ্রনাথের কাল সম্পর্কে তারনাথ-উল্লিখিত কিংবদন্তি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। শহীদুল্লাহ্র মত মেনে নিলে ভারতীয় আর্যভাষার তৃতীয় স্তরের উদ্ভবকাল সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হয়। সুনীতিকুমারের মতে, সপ্তম শতকের কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন শব্দে হয়তো তৃতীয় স্তরের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, কিন্তু সামগ্রিক বিচারে এই স্তরের সূচনা দশম শতকেই। সুনীতিকুমার ও শহীদুল্লাহ্র মতপার্থক্যের উল্লেখ করছি এই কারণে যে, বাংলা ভাষার উৎপত্তিকাল সম্পর্কে সুনীতিকুমার ও শহীদুল্লাহ্র অনুসারী পন্ডিতগণ দুই ধারায় বিভক্ত। পশ্চিমবঙ্গে সুনীতিকুমারের মত স্বীকৃত, 888sport appsের প্রায় সকলেই শহীদুল্লাহ্র অনুসারী।

সুনীতিকুমার The Origin and Development of the Bengali Language-এ বাংলা ভাষার প্রত্ননিদর্শন প্রসঙ্গে প্রাকৃতপৈঙ্গলের কথা উল্লেখ করেছেন। বিজয়চন্দ্র মজুমদার প্রাকৃতপৈঙ্গলের কয়েকটি 888sport app download apkকে প্রাচীন বাংলায় রচিত বলে নির্ণয় করেছিলেন। সুনীতিকুমার এই মত অনেকটাই স্বীকার করে  নিয়েছেন :

It is very likely that in their original form these poems were in Old Bengali, or rather in           Proto-Bengali, with MIA. characteristics still present.

শ্রীকৃষ্ণকীর্ত্তনের ভাষাকে তিনি চতুর্দশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের বলে বিবেচনা করেন। এতে পশ্চিমবঙ্গীয় ভাষার প্রাধান্যের কথা বলেছেন তিনি, তবে প্রাচীনতার কারণে এই ভাষার সঙ্গে উত্তরবঙ্গ ও অসমীয়া ভাষার সাদৃশ্যও তাঁর চোখে পড়েছে। কিছুটা ওড়িয়া প্রভাবের কথাও তিনি বলেছেন। তবে প্রাচীন অসমীয়া ভাষার উপস্থিতির কারণে পুথির কিছুটা জাল কি না, অনেকের এই সন্দেহের বিষয়টিও উল্লেখ করতে ভোলেননি।

The Origin and Development of the Bengali language-এ বাংলা ভাষার বিবর্তন-ইতিহাসকে তিনি তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন। পরে, ‘বাংলা ভাষার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ শীর্ষক একটি 888sport liveে এই বিভাজনকে আরেকটু বিস্তৃত করেছেন তিনি। ভাষার সঙ্গে বাংলা 888sport live footballের যুগবিভাগেরও একটি রূপরেখা দিয়েছেন তিনি। ভাষা ও 888sport live footballের যুগবিভাগের ক্ষেত্রে তিনি সমান্তরলতার অনুসারী। তাঁর মতে :

বাংলা ভাষার ইতিহাসে যেরূপ যুগবিভাগ করিতে পারা যায় বাঙ্গালা 888sport live footballেও সেইরূপ যুগবিভাগ প্রশস্ত।

সুনীতিকুমারের যুগবিন্যাসটি এই প্রসঙ্গে দেখা যেতে পারে :

 

বাংলাভাষার যুগ-বিভাগ            বাংলা 888sport live footballের যুগ বিভাগ

 

১.   বাঙ্গালা ভাষার আদি বা    ১.  প্রাচীন বা মুসলমান-পূর্ব

প্রাচীন যুগ : খ্রীষ্টাব্দ          যুগ : ১২০০ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত;

১২০০ পর্যন্ত;

 

২.   যুগান্তর কাল : ১২০০   ২. তুর্কী-বিজয়ের যুগ :  ১২০০

হইতে ১৩০০ পর্যন্ত;     হইতে ১৩০০ পর্যন্ত;

 

৩. আদি মধ্যযুগ, প্রাক-চৈতন্য  ৩. আদি মধ্য যুগ বা

বা চৈতন্য-পূর্ব যুগ :               প্রাক-চৈতন্য যুগ :

১৩০০ হইতে ১৫০০ পর্যন্ত;    ১৩০০ হইতে ১৫০০ পর্যন্ত;

৪.   অন্ত্য মধ্য-যুগ : ১৫০০      ৪.   অন্ত্য মধ্য-যুগ : ১৫০০

হইতে ১৮০০ পর্যন্ত;         হইতে ১৮০০ পর্যন্ত;

ক. চৈতন্য-যুগ বা বৈষ্ণব-

888sport live football-প্রধান যুগ :

১৫০০-১৭০০

খ. অষ্টাদশ শতক ( নবাবী                               আমল) : ১৭০০-১৮০০;

৫.আধুনিক যুগ : ১৮০০ হইতে।    ৫. নবীন বা আধুনিক বা ইংরেজ

যুগ : ১৮০০ হইতে।

 

বাংলা 888sport live footballের যুগবিভাজনের সঙ্গে বঙ্গদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সমান্তরলতা আছে। সুনীতিকুমার এই ক্ষেত্রে ভাষার বিবর্তনকে বিবেচনায় এনেছেন। এর সঙ্গেও রাজনৈতিক ইতিহাসের সাদৃশ্য আছে, তবে ভাষার সঙ্গে 888sport live footballের বিকাশকে সম্পর্কিত করার যুক্তিটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে হয়।

১৯৪৩ সালে প্রকাশিত রমেশচন্দ্র মজুমদার-সম্পাদিত History of Bengal-এর প্রথম খন্ডের দ্বাদশ অধ্যায়ে ‘Rise of Vernacular Literature’ শীর্ষক রচনায় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রাচীন বাংলা 888sport live footballের পরিচয়  লিপিবদ্ধ করেছেন। আলোচনার শুরুতে তিনি বাঙালি জনগোষ্ঠীর পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর মতে, বঙ্গদেশে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর আগমন ও তাদের পারস্পরিক সংমিশ্রণের ফলে খ্রিষ্টপূর্ব বঙ্গদেশের ভাষা-পরিস্থিতি বেশ জটিল ও অনির্দিষ্ট ছিল। আর্যভাষীদের আগমনের ফলেই বাঙালি জনগোষ্ঠীর গঠন সম্পন্ন হয় এবং বাংলা ভাষার বিকাশের সম্ভাবনা দেখা দেয় বলে মনে করেন তিনি। এই আলোচনায় প্রাচীনযুগে রচিত বাংলা 888sport live footballকে তিনি ১. Buddhist, ২. Brahminical ও ৩. Secular – এই তিন ভাগে বিন্যস্ত করেছেন। বৌদ্ধ888sport live football অংশে তিনি আলোচনা করেছেন চর্যাপদ সম্পর্কে। ব্রাহ্মণ্য 888sport live football অংশে মানসোল্লাসের সূত্রে জ্ঞাত প্রাচীন বাংলা ও অপভ্রংশে রচিত বিষ্ণু ও কৃষ্ণ-বিষয়ক রচনার কথা উল্লেখ করেছেন।  প্রাক-মুসলমান পর্বে ধর্মনিরপেক্ষ প্রেম-888sport app download apk রচিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন তিনি। এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গলে রক্ষিত প্রাকৃতপৈঙ্গলে সংকলিত কয়েকটি  888sport app download apk এবং  সেক-শুভোদয়ায় উদ্ধৃত একটি প্রেমমূলক 888sport app download apkর কথা এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন।

সুনীতিকুমার বাংলা উপভাষার শ্রেণিবিন্যাসও করেছেন The Origin and Development of the Bengali Language বইতে। এই বিন্যাসের জন্য তিনি বাংলা ভাষার আধুনিক রূপকেই বেছে নিয়েছেন। তাঁর মতে, প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভাষাবিচারে উপভাষার শ্রেণিকরণ যুক্তিযুক্ত নয়, ভাষার প্রচলিত রীতিকে বিবেচনায় নিয়েই এই শ্রেণিকরণ করা বিধেয়।

বাংলা উপভাষাগুলোর সঙ্গে মৈথিলির বেশ কিছু সাদৃশ্য সনাক্ত করেছেন তিনি। বঙ্গদেশের ভাগলপুর ও মিথিলার চিকাচিকি এলাকার সমন্বয়ে ‘অঙ্গ’ নামে পরিচিত এলাকায় বাংলা উপভাষাগুলোর প্রাথমিক রূপ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর এই উপভাষা-বৈশিষ্ট্যের বিস্তার ঘটে রাঢ় এবং পুন্ড্র বা বরেন্দ্রভূমিতে। মিথিলা ও বরেন্দ্রভূমি থেকে ব্যাপক হারে অভিবাসনের ফলে অসম উপত্যকায়ও এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। রাঢ় এলাকা থেকে এই উপভাষা-বৈশিষ্ট্য বিস্তৃত হয় দক্ষিণ বঙ্গে। সুনীতিকুমার বাংলা উপভাষাকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন – রাঢ়, পুন্ড্র বা বরেন্দ্র, বঙ্গ ও কামরূপ – এই চারটি জনপদের সঙ্গে সম্পর্কিত করে এই বিন্যাস করেছেন তিনি। তবে, উপভাষার শ্রেণিকরণ খুব সহজ নয় – একথাও উল্লেখ করছেন। কাছাড়, সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি ও ত্রিপুরা অঞ্চলের পৃথক ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য, 888sport live footballিক ভাষার ক্রমবর্ধমান প্রভাব, ব্যাপক অভিবাসনের ফলে ভাষার মিশ্রণ – এসব কারণে উপভাষাগুলোর বিচার বেশ জটিল।

সুনীতিকুমার মনে করেন, বাংলার উপভাষাগুলো কোনো একক আদিম উৎস থেকে উৎসারিত নয়। মাগধী অপভ্রংশের বিভিন্ন স্থানিক বৈশিষ্ট্য নিয়েই সেগুলো বিকশিত হয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রমান্বয়ে একটি সর্ববঙ্গীয় চরিত্র – তাঁর ভাষায়, pan-Bengali – অর্জন করেছে।  বাংলা 888sport live footballের ভাষাও pan-Bengali বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে বলে তিনি মনে করেন। উপভাষা-বিচারের ক্ষেত্রে তিনি  ভৌগোলিক উপভাষাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, শ্রেণি-উপভাষা সম্পর্কেও তিনি আলোচনা করেছেন।

সুনীতিকুমারের The Origin and Development of the Bengali Language প্রকৃত অর্থেই একটি মহাগ্রন্থ। বাংলাভাষার ইতিহাস, গঠন-বেশিষ্ট্য ও ব্যাকরণ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি কার্যত বাঙালির ইতিহাস, ভূগোল ও মানস-সংস্কৃতিরও পরিচয় তুলে ধরেছেন। বাঙালি মনীষার একটি উল্লেখযোগ্য কৃতি এই অসাধারণ গ্রন্থটি।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি.লিটের কাজ শেষ করার পর ড্যানিয়েল জোনসের তত্ত্বাবধানে বাংলাভাষার ধ্বনি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই গবেষণার ভিত্তিতে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দুটি বই – A Bengali Phonetic Reader Bengali Self-taughtA Bengali Phonetic Reader-এর ভূমিকায় সুনীতিকুমার উল্লেখ করেছেন, বাংলা ভাষার একটি রীতির উচ্চারণকে ভিত্তি করেই তাঁর গ্রন্থটি রচিত হয়েছে। কলকাতার শিক্ষিতজনের ভাষাকে প্রমিত ধরে নিয়ে তিনি এই কাজ করেছেন। উচ্চারণের ক্ষেত্রে নির্ভর করেছেন তাঁর নিজের উচ্চারণের ওপর। বাংলা ধ্বনিগুলোর পরিচয় ও সেগুলোর ধ্বনিগুণ সম্পর্কে আলোচনায় ধ্বনিমূলের ধারণাটি প্রয়োগের ব্যাপারে সুনীতিকুমারই পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলা অবিভাজ্য ধ্বনি ও শ্বাসাঘাত নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি। চর্চা করেছেন সংস্কৃত ধ্বনি নিয়েও। ‘The Pronunciation of Sanskrit’   শীর্ষক 888sport liveে পাণিনি-যুগের সংস্কৃত উচ্চারণ এবং কিছু কিছু শব্দের আধুনিক কাল পর্যন্ত বিবর্তনের রূপগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। সুনীতিকুমার যে-সময়ে বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা করেন, তখন ঐতিহাসিক-তুলনামূলক রীতির প্রাধান্য ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি বর্ণনামূলক পদ্ধতিরও প্রয়োগ করেছেন তাঁর ভাষাচর্চায়। ধ্বনি888sport apkে তাঁর পারদর্শিতা ছিল প্রশ্নাতীত। ধ্বনি888sport apkে পান্ডিত্যের জন্যই তিনি ১৯৬৯ সালে International Phonetic Association-এর সভাপতি নির্বাচিত হন।

বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ পর্যালোচনা করতে গিয়ে বাংলা ব্যাকরণের প্রতি তিনি মনোযোগী হয়েছিলেন। The Origin and Development of the Bengali Language-এ তিনি বাংলা ভাষার ধ্বনিবিচার করেছেন, রূপতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন, বাংলা লিপিরও পর্যালোচনা করেছেন। বাংলা ভাষা সম্পর্কে তাঁর সামগ্রিক আগ্রহ ও গবেষণার প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষার একটি ব্যাকরণ রচনায় উদ্যোগী হওয়া তাঁর জন্য প্রায় অনিবার্যই ছিল। সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুকরণে বাংলা ব্যাকরণ রচিত হওয়া উচিত নয় – এই মনোভাব তিনি ব্যক্ত করেছিলেন, ১৯২৮ সালে The Origin and Development of the Bengali Language প্রকাশিত হওয়ার দু-বছরের মধ্যেই। বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে এই ধরনের চিন্তা অবশ্য আরো আগেই শুরু হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথও বাংলা ভাষার জন্য সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাবমুক্ত ব্যাকরণ-রচনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন।

১৯৩৯ সালে প্রকাশিত ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণে সুনীতিকুমার বাংলা ব্যাকরণের একটি আদর্শ রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পরে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপযোগী এই ব্যাকরণের একটি সরল সংস্করণও তিনি রচনা করেছেন সরল ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ নামে। ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের  আলোচনায়  সুনীতিকুমারের এই ব্যাকরণ বাংলা ব্যাকরণচর্চার ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। বাংলা ব্যাকরণের আলোচনায় বর্ণনামূলক ভাষা888sport apkের প্রয়োগ করার ফলে এই ব্যাকরণটি ভাষা বিচার ও শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি আদর্শ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।

সুনীতিকুমার বাংলা ভাষাচর্চাতেই সীমিত থাকেননি। ভাষাচর্চায় তাঁর আগ্রহ অধিকার ব্যাপক। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর ধ্বনিবিচার করেছেন (‘Evolution in Speech Sounds’), ভারতীয় আর্যভাষার তৃতীয় স্তরের উদ্ভব ও এর  বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন (‘The Tertiary Stage of Indo-Aryan’), ভারতীয় আর্যভাষায় অনার্য উপাদান শনাক্ত করেছেন (‘Non-Aryan Elements in Indo Aryan’), কলকাতার হিন্দুস্তানি ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন (‘Calcutta Hindustani’)। এখানে আমরা সুনীতিকুমারের ভাষাবিষয়ক রচনার কয়েকটির মাত্র উল্লেখ করলাম। সুনীতিকুমারের ভাষা-জ্ঞান সম্পর্কে বিখ্যাত অস্ট্রীয় পন্ডিত ও A History of Indian Literature-এর লেখক মরিজ ভিন্টারনিজের (Moriz Winternitz) মূল্যায়নটি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে :

He had a knowledge of linguistic factor which no European scholar could even hope to acquire.

বহুভাষীর দেশ ভারতে ভাষা-সমস্যার দিকটি বহুমাত্রিক। সুনীতিকুমার এই সমস্যার নানাদিক সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, ভেবেছেনও এই নিয়ে। তাঁর মতে, ‘The original barrier of  language was sometimes more potent than the barrier of sea or mountains.’। তিনি অবশ্য এটাও বলেছেন, মানবসভ্যতার  সংস্কৃতিগুলোর স্বাতন্ত্র্য ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ফলে এই ব্যবধান অনেকটাই দূরীভূত হয়। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ভাষা-চয়নের সমস্যার দিকটি নিয়েও তিনি আলোচনা করেছেন। এই প্রসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা-মাধ্যম নির্ধারণের সমস্যার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরেছেন। ভারতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বিদেশি ভাষার জায়গায় ক্রমান্বয়ে মাতৃভাষাকে অবলম্বনের কথা বলেছেন। তবে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য বিদেশি ভাষা শেখার ব্যাপারে যাতে কোনো বাধা না থাকে সেদিকটি বিবেচনা করাও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন।

ভারতে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় ভাষা নির্ধারণের প্রশ্নটি বিতর্কাতীত নয়। বর্তমানে হিন্দি ভাষা বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, অন্তত কয়েক দশক আগের চাইতে। ১৯৭২ সালে ভারতের ভাষা-পরিস্থিতি সম্পর্কে হতাশা ব্যক্ত করে সুনীতিকুমার লিখছেন :

The hope that India will be integrated into one single nation through Hindi as its National Language is now shattered; and Hindi, in so far as it is sought to be forced upon the rest of India by some unimaginative short sighted political elements, by various means, overt and covert, while bringing certain definite advantages to Hindi-speakers, and Hindi-users, with an attendant waste of millions and millions of money, is proving to be a disintegrating force. It is bringing in Linguism in other linguistic areas also.

এই পর্যবেক্ষণ তিনি ব্যক্ত করেছেন তাঁর ‘A Roman Alphabet for India’ 888sport liveে।  ভারতীয় বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক বোধগম্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারতীয় ভাষাগুলোর জন্য রোমান হরফ প্রচলনের কথা তিনি ভেবেছিলেন। ভারতীয় ভাষাগুলোর পার্থক্যের মতো সেগুলোর লিপিও পৃথক। সুনীতিকুমার এই রোমান লিপির চিন্তাটি অবশ্য বেশ আগেই প্রকাশ করেছিলেন, ১৯৩৫ সালে। তাঁর এই চিন্তা অবশ্য গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়নি। ভারতীয় ভাষাগুলোর জন্য রোমান লিপি গ্রহণের কথা বললেও নাগরী লিপি চাপিয়ে দেওয়ার সমর্থক তিনি ছিলেন না। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের ভাষাগুলোর জন্য রোমান বা আরবি হরফ ব্যবহারের কথা উঠেছিল। তখন এর মধ্যে রাজনৈতিক প্রভুত্ব-প্রয়াসের আশঙ্কা করেছিলাম আমরা। কিন্তু সুনীতিকুমারের প্রস্তাবে সেইরকম ষড়যন্ত্র খোঁজার চেষ্টা করা সমীচীন হবে না। তাঁর চিন্তাটি একজন উৎকণ্ঠিত ভাষা888sport apkীর, যিনি নিজের দেশের সামগ্রিক ঐক্য চেয়েছিলেন, বৈচিত্র্যকে সমন্বিত করে।

ভাষাকে সুনীতিকুমার একটি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ফসল রূপেই বিবেচনা করেছেন। এ-কারণেই, বোধকরি, ভাষা বিচার করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে উৎসাহী হয়েছেন, সেই সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন এবং তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণ ও পান্ডিত্যপূর্ণ মত প্রকাশ করেছেন। বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞানের পরিচয় আমরা The Origin and Development of the Bengali Language-এ পেয়েছি। ‘বাঙ্গালীর ইতিবৃত্ত : জাতিগঠনে’ 888sport liveে তিনি বাঙালির ইতিহাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অনেক  সিদ্ধান্তই প্রকাশ করেছেন। ইংরেজি caste, tribe, people, nation প্রভৃতি শব্দের জন্য ভারতীয় ভাষাগুলোতে জাতি শব্দটিই ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সুনীতিকুমার এর একটি সমাধান দিযেছেন উল্লিখিত আলোচনায়।  Nation অর্থে রাষ্ট্র, People – জনগণ, Tribe – উপজাতি, Caste – বর্ণ, Race – জাতি – এরকম একটি সমাধান তিনি দিয়েছেন। তাঁর এই সমাধান এখন মোটামুটি গৃহীত। Culture শব্দের জন্য যে সংস্কৃতি শব্দটি আমরা এখন ব্যবহার করি সেটিও তো বাংলায় এসেছিল সুনীতিকুমারের উদ্যোগে, রবীন্দ্রনাথের কাছে শব্দটি গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছিল।

বাঙালি জনগোষ্ঠীর উদ্ভবের সঙ্গে বাংলা ভাষার উৎপত্তিকে তিনি সম্পর্কিত করেছেন। স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে বাংলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে এই জনগোষ্ঠীর বাঙালি পরিচয়ও স্বীকৃত হয়নি। সিংহলবিজয়ী বিজয় সিংহকে এই কারণেই তিনি বাঙালি বলতে রাজি নন। জাতিগঠনে ভাষা প্রধান বাঁধন হলেও অন্য কতগুলো দিকও উপেক্ষণীয় নয়। এক ধরনের চিন্তা-কল্পনা, অর্থনৈতিক জীবনের সমধর্মিতা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, বাসস্থানের প্রকৃতি, গৃহস্থালি ও জীবিকার সরঞ্জাম – এই উপকরণগুলোও বাঙালির একক জাতিসত্তা গঠনে সহায়তা করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি উল্লেখ করেছেন :

বাঙালী মুসলমানের সঙ্গে মানসিক-প্রবৃত্তিগত, প্রকৃতিগত মিল পাওয়া যাবে বাঙালী হিন্দু বা বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টানের সঙ্গে, পাঠান বা তুর্কী বা আরব মুসলমানের সঙ্গে নয়।

বাঙালির জীবন-সংস্কৃতি ও 888sport live football ভাবনা সম্পর্কে একটি দীর্ঘ 888sport live লিখেছেন তিনি ‘জাতি, সংস্কৃতি ও 888sport live football’ নামে। বাঙালি বিভিন্ন জাতির জীবন-সংস্কৃতি-ভাষা ও জীবিকার পথকে কীভাবে আত্মস্থ করেছে তার একটি প্রাঞ্জল ও তথ্যবহুল বিবরণ              এতে আছে। বাঙালির জীবনে Confusion of issues বা বিষয়-বিভ্রম সৃষ্টির উপাদানও কম নয়। এই সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শও তিনি দিয়েছেন।

শুধু বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতিই তাঁর আগ্রহ ও আলোচনার বিষয় নয়। কিরাত জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ও পরিচয় সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা তাঁর Kirât Janakriti। কোচ ও রাজবংশীসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর পরিচয় তুলে ধরেছেন তিনি। মঙ্গোলীয় নৃগোষ্ঠীর আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি গৌতম বুদ্ধকে খাঁটি বা মিশ্র কিরাত বলে উল্লেখ করেছেন। এই আলোচনা করতে গিয়ে তিনি অনুভব করেছেন, কোনো জনগোষ্ঠীর অধ্যয়নে অনেক বিদ্যাশৃঙ্খলার সহযোগিতা প্রয়োজন। তাঁর মতে :

Closer study through the various human sciences should be carried  on with greater intensity through linguistics, through sociology, through anthropology, through political history and through comparative religion.

দ্রাবিড়, কোলদের জীবন-সংস্কৃতিও তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন গভীর আগ্রহের সঙ্গে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের অর্কেস্ট্রা শুনতে চেয়েছেন তিনি। সামগ্রিকভাবে ভারতীয় জীবন-ভাষা-সংস্কৃতি-চিন্তা-দর্শন-মনোজগৎ-বহির্জগতের সকল বিষয়েই ছিল তাঁর আগ্রহ। ভারতীয় জীবন সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর মত :

মানুষকে সভ্য এবং মানবোচিত পদে উন্নীত করিবার জন্য পৃথিবীতে যে সমস্ত মনোভাব ও চেষ্টা কার্য্যকর হইয়াছে, ভারতের সংস্কৃতি সেগুলির মধ্যে অন্যতম।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুনীতিকুমারের সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক 888sport apk download apk latest versionর। সুনীতিকুমার রবীন্দ্রনাথের চেয়ে ঊনত্রিশ বছরের ছোটো ছিলেন – বয়সের বিচারে এক প্রজন্মের ব্যবধান। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ সুনীতিবাবুর পান্ডিত্যকে সমীহ করতেন। শেষের 888sport app download apkর অমিত নির্জনতা-ভোগের জন্য শিলঙে গিয়ে ‘পাহাড়ের ঢালুতে দেওদারু গাছের ছায়ায়’ বসে পড়েছে ‘সুনীতি চাটুজ্যের  বাংলা ভাষার শব্দতত্ত্ব’। রবীন্দ্রনাথ অমিতের শব্দতত্ত্ব-চর্চার  কথা বয়ান করায় সুনীতিকুমার বেশ আমোদিত হয়েছিলেন, বন্ধুদের প্রায়ই বলতেন, ‘তোমাদের রবীন্দ্রনাথ তো আমাকে বিখ্যাত করে দিলেন।’ ভাষাবিষয়ক যে-কোনো প্রশ্নের মীমাংসার জন্য রবীন্দ্রনাথের আস্থাভাজন ছিলেন সুনীতিকুমার। ১৯২৭ সালে মালয়, যবদ্বীপ ও শ্যামদেশ 888sport slot gameের সময়ে রবীন্দ্রনাথের সফরসঙ্গী ছিলেন তিনি। সেই 888sport slot gameের বৃত্তান্ত রচনায় সুনীতিকুমারের পর্যবেক্ষণ ও পারদর্শিতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন কবি। সুনীতিকুমারও রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীল মনীষাকে 888sport apk download apk latest version করেছেন। রবীন্দ্রনাথকে তিনি সাব্যস্ত করেছেন, ‘last great expression of World  literature for the present age’ হিসেবে। তাঁর বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথ একই সঙ্গে স্বদেশের ও বিশ্বমানবতার সম্পদ। রবীন্দ্র প্রতিভা, সৃষ্টি ও কর্মের  বিচিত্রমুখী প্রয়াস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেন :

A cursory survey of his life would thus reveal Rabindranath to be like a diamond with many facets. There was hardly any normal venue or avocation of man ¯ excepting highly specialised military and technical and other scientific lines ¯ in which Rabindranath did not make his mark.

 

ভাষা888sport apkের মতো কঠিন বিষয়ের চর্চা করেও  সুনীতিকুমার জীবনের রসোপভোগে নিজেকে বঞ্চিত করেননি। সংগীতে তাঁর বেশ অনুরাগ ছিল। মামার বাড়িতে সাংগীতিক পরিবেশ ছিল। সেই পরিবেশেই তিনি ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। শিবপুরে থাকার সময়ে নিকুঞ্জ দত্তের ধ্রুপদ, শ্যামা-সংগীত ও নিধুবাবুর টপ্পা শুনে শুনে তাঁর সংগীতরুচি গড়ে উঠেছিল। ভারতীয় সংগীতের বিবর্তন-ইতিহাস সম্পর্কেও তিনি বেশ অবহিত ছিলেন। চিত্রাঙ্কনেও তিনি বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর লাইন-ড্রয়িংগুলো উল্লেখ করার মতো।

আমরা এর আগে বলেছি, ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বাঙালির জীবন-ইতিহাসের সামগ্রিক রূপ অনুসন্ধান করেছেন, কিন্তু তাতে তৃপ্ত না হয়ে তিনি সমগ্র ভারতের জীবন ও সংস্কৃতিকে অধ্যয়ন ও আস্বাদন করেছেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। তিনি বিশ্বের সকল জাতির জীবন ও সংস্কৃতির প্রতিই আগ্রহী ছিলেন। মানুষের সৃজনশীলতার সকল প্রচেষ্টাকেই তিনি উপলব্ধি ও উপভোগ করতে চেয়েছেন। নিজেকে প্রসারিত করতে চেয়েছেন বিশ্বের বিদ্বৎ-চর্চার ধারায়। পান্ডিত্যে-মনীষায়-রসোপভোগ্যতায় তাঁর তুলনা বিরল।