আড্ডার এপার-ওপার

দেবব্রত চক্রবর্তী

আড্ডাপ্রিয় বাঙালি। মাছ, ভাত, রসগোলস্না আর আড্ডা। তবে সেই আড্ডায় ভাটা পড়েছে। সেই রকম জমজমাটি আড্ডা এই হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকের যুগে একটা অন্য রূপ পেয়েছে। বৈঠকি আড্ডায় সেই অনির্বাণ রূপটি আর নেই। তাই আড্ডা এখন নস্টালজিয়া। ফিরে দেখা 888sport sign up bonusর পাতা। 888sport sign up bonus-বি888sport sign up bonusর ছবি। কিছু উজ্জ্বল, আবার কিছুটা অনুজ্জ্বলও বটে। তবে আড্ডা কখনো থেমে থাকে না। কলকাতার কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের (অ্যালবার্ট হল) সত্তরের দশকের আড্ডায় বহু 888sport live chatী, 888sport live footballিক, কবি, নাট্যকার সবাইকে পেয়েছি। 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামের যুগের সময় আল মাহমুদ এবং নির্মলেন্দু গুণের মতো কবিদের উপস্থিতি কফি হাউসের টেবিলে। 888sport appsের সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের নাম ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ’। সেই সময় এই কফি হাউসটা হয়ে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের শিবির। এখানের টেবিলে বসে সিকান্দার আবু জাফর, আহমদ ছফা, আল মাহমুদ, নির্মলেন্দু গুণ রচনা করেছেন তাঁদের কত সৃষ্টি। দীর্ঘদেহী 888sport live chatী দেবব্রত মুখোপাধ্যায় কাঁধে শামিত্মনিকেতনি ঝোলা নিয়ে জর্দা-পান চিবুতে-চিবুতে কফি হাউসে ঢুকতেন। সঙ্গে থাকত ছাত্রী শিপ্রা আদিত্য। একদিন তিনি বললেন, ‘তুই একবার শিপ্রার সঙ্গে রেডিয়ান্ট প্রসেসে যা। জয় বাংলার বন্ধুদের কাছ থেকে পাকিসত্মানি সেনাদের অত্যাচারের ছবি সংগ্রহ করেছে শিপ্রা।’ এসব ছবি থেকে বাছাই করে অ্যালবাম ছাপা হয়েছিল রেডিয়ান্ট প্রসেস থেকে। তখনকার অস্থায়ী 888sport apps সরকারের অনুমতিক্রমে এই অ্যালবামের নাম রাখা হলো বিস্নডিং 888sport apps। সম্পাদনায় শিপ্রা আদিত্য, ওঁকে সাহায্য করেছিলেন 888sport apps ত্রাণ সমিতির অধ্যাপক দিলীপ চক্রবর্তী।

কফি হাউসের আড্ডার রকমফের নানা টেবিলে নানা রকম। জমজমাট কোলাহলপূর্ণ কফি হাউসও এক-একদিন মনে হতো জনমানবশূন্য। কেন এটা মনে হতো, তা খোলাসা করে বলি। কফি হাউসে ঢুকে বাঁদিকের মধ্যিখানে একটা টেবিল জুড়ে আড্ডা চলছে। আড্ডার মধ্যমণি ‘জনদা’। টকটকে সাহেবদের মতো গায়ের রং। মুখে জ্বলমত্ম সিগারেট। মুখের কাটিংটা অনেকটা হলিউড ফিল্মের গ্যারি কুপারের মতো। ব্যাকব্রাশ করা সাদা চুল। পরনে ফুলহাতা শার্ট আর কোঁচা-লোটানো ধুতি। দুটোই সাদা ধবধবে। ডানদিকের চোখ ফেরালেই একটা কোণের টেবিলে আমাদের বন্ধু মানব। হাতের জ্বলমত্ম সিগারেটের ধোঁয়াচ্ছন্ন মানব টেবিলের সবাইকে বোঝাচ্ছে, বন্দুকের ধোঁয়ায় বিপস্নবের আগুন যা মুক্তির পথ দেখাবে। সেই জ্বলমত্ম চারমিনার সিগারেটের ধোঁয়াটাই যেন বন্দুকের ধোঁয়া। যেদিন জনদা আর মানব কফি হাউসে অনুপস্থিত থাকত, সেদিন আমরা বলতাম জনমানবশূন্য কফি হাউস। কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আড্ডার ঠেকও ছিল। একটু এগিয়ে মির্জাপুর স্ট্রিটের ‘ফেভারিট কেবিনে’র আড্ডায় সেই সময় বহু জ্ঞানী-গুণীজন আড্ডা মারতে আসতেন। ফ্রন্টিয়ার পত্রিকার সম্পাদক সমর সেনকেও দেখা যেত ওই ফেভারিট কেবিনের আড্ডায়। কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের মধ্যে চিত্র888sport live chatী গণেশ পাইন ভক্তপরিবৃত হয়ে আড্ডায় মশগুল থাকতেন। কফি হাউসে প্রখ্যাত-বিখ্যাত ছাড়াও অনেক অখ্যাত আড্ডাবাজ লোক আসতেন। সেই অখ্যাতজনেরা আমাদের কাছে বিখ্যাত আড্ডাবাজ রূপে গণ্য হতেন। এমনই একজন রবি মুখার্জী ওরফে স্বনামধন্য রবিদা। কফি হাউসের গ–র বাইরে কিছু আড্ডার ঠেকে রবিদার জনপ্রিয়তা উচ্চতার শিখরে পৌঁছেছিল। চটজলদি রসিকতার গভীরতা এবং উপস্থাপনা – রবিদার মতো কাউকে আমরা দেখিনি। তার দু-একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। একদিন সন্ধেবেলায় আমরা কয়েকজন বন্ধু কফি হাউসের বাইরে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছি। তখন দেখলাম রবিদা কফি হাউসে ঢুকছেন। হঠাৎ আমি বললাম, ‘কী রবিদা, কফি হাউসে চললেন?’ রবিদা আমার দিকে না ফিরে বললেন, ‘না, একটু সিনেমা দেখতে যাচ্ছি।’ এই বলে উনি কফি হাউসে ঢুকে গেলেন। বন্ধুরা সমন্বরে হেসে উঠে বলল, ‘দেখতেই পাচ্ছিস রবিদা কফি হাউসে ঢুকছেন, তবে ওই প্রশ্ন করলি কেন?’ আমার এ-সময় কান লাল হয়ে গেল।

এর প্রতিদান অবশ্য পরে দিয়েছিলাম। একদিন ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে জুতো পালিশ করাচ্ছি, দেখলাম রবিদা আসছেন। আমার কাছে এসে বললেন, ‘কিরে, জুতো পালিশ হচ্ছে?’ আমি গম্ভীরভাবে বললাম, ‘না, একটু আইসক্রিম খাচ্ছি।’ রবিদা থমকে গিয়ে হেসে বললেন, ‘বাহ! ভালো বদলা নিলি তো সেদিনের ব্যাপারে।’ এই হচ্ছে রবিদা। রবিদার আড্ডায় বসলে কোথা দিয়ে সময় কেটে যায়। রবিদার আড্ডার ঝোলায় উত্তম থেকে সত্যজিৎ – কী নেই। সেসব বিখ্যাত মানুষজনের অনেক না-জানা কথা। রবিদার পরিচিত মানুষের মধ্যে টপ সেলিব্রেটি থেকে রাসত্মার ওই ছোট্ট জুতো পালিশ করা শিশু শ্রমিকটি পর্যমত্মও আছে। রবিদার সেই মজাদার গল্পের ঝুলি থেকে একটা ফাটাফাটি গপ্পো আজকে শোনাব। তার আগে আরো কয়েকজন আড্ডা-ব্যক্তিত্বের কথা বলি। তখন 888sport appsের জন্ম হয়নি। ষাটের দশকের শেষের দিকে একজন পূর্ববাংলা থেকে আগত কবি আমাদের এখানে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর নাম বেলাল চৌধুরী। কফি হাউসে ঢুকে ডানদিকের কোনায় নির্দিষ্ট আসন ছিল এক্ষণ পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক নির্মাল্য আচার্যের।

ওই কোনার দিকের টেবিলে এক্ষণের আরেক সম্পাদক রূপোলি পর্দার নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রায় প্রতি রোববার সকালে আসতেন। ওই টেবিল আলো করে থাকতেন জ্যোতিষ্করা। নির্মাল্য, সৌমিত্র ছাড়াও ‘সুবর্ণরেখা’ প্রকাশনার কর্ণধার ইন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রখ্যাত 888sport live footballিক ও 888sport live chatী কমলকুমার মজুমদার প্রমুখ। ওই টেবিলে বেলাল চৌধুরীকে দেখা যেত। তবে অন্য টেবিলেও বেলালের অবাধ গতিবিধি ছিল। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বা সামশের আনোয়ারের মতো কবিদের আড্ডায় আলো করে বসতেন বেলাল। সম্ভবত ১৯৬৭-৬৮ সালে কৃত্তিবাসের একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল কলেজ স্ট্রিটের ওভারটুন হলে। সে ওভারটুন হল এখন নেই। আমরা তখন ওইখানে কৃত্তিবাস পত্রিকার ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। তখন আমি আর্ট কলেজের সেকেন্ড ইয়ার-থার্ড ইয়ারের ছাত্র। শক্তি, সুনীল, সন্দীপন, সামশের, তুষার রায় প্রমুখের গল্পপাঠ এবং 888sport app download apkপাঠের জমজমাট অনুষ্ঠান। ওখানে বেলাল চৌধুরীও তাঁর একগুচ্ছ 888sport app download apk পাঠ করতে এলেন। নীল রঙের টি-শার্ট আর জিন্স পরা বেলাল চৌধুরীর দিব্যকামিত্ম চেহারার ভক্ত ছিলাম আমরা অর্থাৎ সেই সময়ের তরম্নণ-তরম্নণীরা। মেয়েদের হার্টথ্রব ছিলেন বেলাল। বেলাল চৌধুরী স্টেজে উঠে বললেন, আমার প্রথম 888sport app download apk এইটা বলে মুখে দু-আঙুল পুরে একটা প্রচ- জোরে সিটি দিলেন। হল ফেটে পড়ল। সেই বেলালদার সঙ্গে সত্তরের দশকে আলাপ-পরিচয় ঘটেছিল কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সুবাদে। এর পরে, অনেক-অনেক বছর পরে বেলালদার সঙ্গে দেখা 888sport appর একটি গ্যালারিতে। সম্ভবত ২০১০ সালে। শাহাবুদ্দিনের একক প্রদর্শনীতে। 888sport appর গুলশানে সাজু আর্ট গ্যালারিতে। আমার সঙ্গে ছিল কলকাতার 888sport live chatী সুখময় মজুমদার। ও বলল, ‘দূরের ওই ভদ্রলোক আপনাকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করছেন।’ আমি ঘুরে ভদ্রলোককে দেখে অবাক! দেখি, বেলালদা হাসতে-আসতে আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। সেই হাসি, তবে বয়স এবং দেহের ভারে ওই হেঁটে আসাটা সেই আগের মতো চটপটে নেই। তিনি এসে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘কবে এসেছো?’ তার পরে আর বেলালদার সঙ্গে দেখা হয়নি। এবার 888sport appsে গেলে অবশ্যই বেলালদার কাছে যাব। 888sport appsে ২০১০ এবং ২০১২-তে দুবার গেছি, ওখানকার 888sport live chatী-888sport live footballিকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা কতটা প্রাণের টানের, তা উপলব্ধি করেছি। ওঁদের আতিথেয়তার তুলনা নেই। সেই জায়গায় আমরা হেরে বসে আছি। এই আড্ডা-বৃত্তামত্ম এপার আর ওপারের অর্থাৎ এপার বাংলার আর ওপার বাংলার। আর একবার ওপার থেকে এপারে ফিরে আসি। আবার ওপারে যাব। এইভাবে পারাপারের আড্ডা-বৃত্তামত্ম চলবে।

তুষার রায়ের 888sport app download apk ও ছড়া সকলকে মাতিয়ে রাখত। এরকম বর্ণময় চরিত্র খুব কম দেখেছি। ওঁর লেখা বিখ্যাত ছড়া কবি ও 888sport live chatীদের নিয়ে তখন মুখে-মুখে ঘুরত। ছড়াটি ছিল এরকম – ‘ইনি একটু অাঁকেন টাকেন/ উনি একটু লেখেন/ ইনি একটু হাঁকেন ডাকেন/ উনি ব্যবসা শেখেন/ ইনি একটু লম্বা ঢ্যাঙ্গা/ উনি একটু বেঁটে/ ইনি উনি দুই-ই সমান/ একটু পড়লে পেটে।’ তুষার রায়ের প্রায় কিম্ভুতকিমাকার চেহারা। মাথায় একরাশ অবিন্যসত্ম চুল। বাজপাখির ঠোঁটের মতো নাক। পা বাঁকানো শীর্ণ চেহারায় ফুলহাতা শার্ট আর ট্রাউজার্স ভীষণই নোংরা। জামার গলা এবং হাতের বোতাম হিন্দি ছবির নায়ক দেবানন্দ স্টাইলে আটকানো। তুষার রায় কফি হাউসে বসে লিখেছিলেন, ‘কফি হাউসে দেখেছি অদ্য/ কলা বিভাগের স্নাতক সদ্য/  888sport appsের গদ্য পদ্য/  কোথায় গিয়াছে নাইকো ঠিক…’ 888sport apps বলতে এই পশ্চিমবঙ্গকেই বুঝিয়েছিলেন। তখনো 888sport appsের জন্ম হয়নি।

হ্যাঁ, রবিদা প্রসঙ্গে আবার আসি। এই গল্পটা একটি ট্রেনের টিকিটকে নিয়ে। রবিদার বাচনভঙ্গি এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কফি হাউসের টেবিল ঘিরে বসতাম। এইবার সেই গল্পে আসা যাক। রবিদা ক্যাপস্টান সিগারেটে টান দিয়ে বললেন, ‘তা প্রায় অনেকদিন হয়ে গেল, তখন ওই জুতোর কোম্পানি বাটা ইন্ডিয়াতে পার্সোনেল ম্যানেজারের চাকরি করি। ট্রেনে করে বাটানগর যাই। আমার ফার্স্ট ক্লাসের মান্থলি ছিল। কলকাতায় ফেরার সময় আমার জুনিয়র রাজ্জাকও আমার সঙ্গে একই ট্রেনে কলকাতায় ফেরে। একদিন হাওড়া স্টেশনে নেমে গেট দিয়ে বেরোতে যাব আমি আর রাজ্জাক, হঠাৎ চার নম্বর গেটের টিকিট চেকার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্যার আপনার টিকিটটা?’  আমি বুকপকেটে হাত দিতেই ধড়াস করে ওঠে বুকটা। আমার মান্থলিটা অফিসের ড্রয়ারে ফেলে এসেছি। তবু গম্ভীরভাবে বলি, ‘আমি রেগুলার ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করি। বাটা কোম্পানির পার্সোনেল ম্যানেজার। আমার ফার্স্ট ক্লাসের

মান্থলি আছে।’ চেকার তবু নাছোড়বান্দা। বলে ওঠেন, ‘মান্থলিটাই দেখি।’ আমি গম্ভীরভাবে বলি, ‘মান্থলিটা অফিসের ড্রয়ারে ফেলে এসেছি। এই দেখুন আমার আইডেনটিটি কার্ড।’ চেকার বাঁকা হাসি হেসে বলেন, ‘হ্যাঁ। সব আমার জানা আছে। ভদ্রবেশী টিকিট ফাঁকিবাজদের আমি চিনি না? না, আপনাকে দশ টাকা ফাইন দিতে হবে।’ অনেক তর্কাতর্কি করে কিছু হলো না। সেই দশ টাকা গচ্চা দিতে হলো।’ এই বলে রবিদা থামলেন। কফিতে চুমুক দিয়ে আবার একটা সিগারেট ধরালেন। গোপালের আর তর সয় না। জিজ্ঞেস করে, ‘তারপর কী হলো?’ রবিদা মুচকি হেসে বলেন, ‘তারপর ওই চার নম্বর গেট দিয়ে রাজ্জাককে নিয়ে বেরিয়ে সাত নম্বর গেটের চেকারকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওই চার নম্বর গেটের চেকারের নাম অবিনাশবাবু না?’ উনি হেসে বললেন, ‘আজ্ঞে ওঁর নাম সুশীলবাবু।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওঁর আবার কবে ডিউটি আছে?’ সাত নম্বর গেটের চেকার সাহেব ব্যসত্মতার মধ্যে বললেন, ‘এই তো পরশুদিন। উনি ওই গেটেই দাঁড়াবেন।’

আমি পরশুদিন রাজ্জাককে নিয়ে বাটানগর স্টেশন থেকে একটা ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কাটলাম। রাজ্জাক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার, আজ তো মান্থলিটা ঠিকঠাক পকেটে পুরেছেন, তবে আবার টিকিট কেন?’ আমি গম্ভীরভাবে বললাম, ‘ওটা তোমায় ভাবতে হবে না, তুমি নেমে স্টেশনের গেট দিয়ে সোজা বাড়ি চলে যাবে। পেছন ফিরে তাকাবে না। কাল অফিসে দেখা হবে।’ এবার হাওড়া স্টেশনে নেমে ওই টিকিটটার ওপরে লাল কালির কলম দিয়ে একটা সই করলাম ইংরেজিতে জ. গঁশযবৎলবব এই নামে। সেই টিকিটটা রাজ্জাকের হাতে দিয়ে বললাম, ‘এটা গেটে দিয়ে বেরিয়ে যাবে।’ ও বিস্ময়ে বলল, ‘স্যার, আমার তো মান্থলি আছে?’ আমি বললাম, ‘যা বলছি তাই করো!’ রাজ্জাক আমার কথামতো টিকিটটা চেকার সুশীলবাবুর হাতে দিয়ে চার নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি রাজ্জাকের পরে, দু-তিনজন লোকের পরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এবার বেরোতে যাব সুশীলবাবু বললেন, ‘আপনার টিকিটটা দেখি।’ আমি গম্ভীরভাবে বললাম, ‘টিকিটটা তো দিলাম।’ সুশীলবাবু রেগে গিয়ে আমাকে চিনতে পেরে চেঁচিয়ে বললেন, ‘আরে? সেই টিকিট-ফাঁকিবাজটা না?’ আমি রেগে গিয়ে বললাম, ‘মুখ সামলে কথা বলবেন। একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় সে-ভদ্রতাটুকু শেখেননি?’ আমার চারপাশে ভিড় জমতে শুরম্ন করেছে। উৎসাহী নিত্যযাত্রীরা আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কী হয়েছে?’ সুশীলবাবুর মুখ-চোখ লাল। ওঁদের বলেন, ‘এই ভদ্রলোক এর আগের দিনেও টিকিট ফাঁকি দেওয়ার মতলবে বলেছিলেন, আমার মান্থলি অফিসের ড্রয়ারে আছে।’ আমি জনতার উদ্দেশে বললাম, ‘আমি আমার ফার্স্ট ক্লাসের টিকিটটা ওঁকে দিয়েছি।’ একজন মুরম্নবিব গোছের ভদ্রলোক বললেন, ‘চেকার সাহেবের হাতে তো অনেক টিকিট জমেছে। ওর মধ্য থেকে আপনার টিকিট কোনটা  সে-প্রমাণটা কী করে হবে?’ আমি গম্ভীরভাবে বললাম, ‘প্রমাণ আছে।’ ‘প্রমাণ আছে!’ সবাই অবাক হয়ে সমস্বরে বলে উঠলেন। এবার সুশীলবাবু আরো রেগে আমাকে ভেংচি কেটে বললেন, ‘দেখান সেই প্রমাণ। গুল মারার আর জায়গা পাননি?’ আমি উৎসুক জনতার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমার একটা অভ্যাস আছে। সেটা ভালো না খারাপ জানি না। আমি সব সময় ট্রেনের টিকিটের ওপরে আমার এই লাল কালির কলম (বুকপকেট থেকে কলম বের করে দেখাই) দিয়ে আমার নাম সই করি ইংরেজিতে। একটা কাগজ দিন সেই সই করে দেখিয়ে দিচ্ছি। গেটের পাশে একটা টেবিল ছিল। জনতা ক্ষেপে গিয়ে চেকারকে বললেন, ‘আপনার হাতের টিকিট এখানে ফেলুন। আর এই কাগজটা আমরা দিচ্ছি, (এই বলে আমার দিকে তাকিয়ে) আপনি ওই কলম দিয়ে একটা সই করম্নন।’ আমি সই করে দিলাম আর টিকিট ঘেঁটে আমার সই করা টিকিটটা বেরিয়ে গেল। জনতা ক্ষেপে আগুন। চেকারকে এই মারে তো সেই মারে। তারা চেঁচিয়ে বলেন, ‘ভদ্রলোকের পা ধরে ক্ষমা চান।’ সুশীলবাবু হাঁটু গেড়ে জোড় হাতে আমার দিকে তাকান। আমি জনতাকে শামত্ম করে বলি, ‘না, পা ধরে ক্ষমা চাইতে হবে না। আপনারা নিজের নিজের কাজে যান।’ বলাতে জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল। তখনো সুশীলবাবু হাত জোড় করে আছেন। প্রায় কেঁদে ফেলেন আর কি। বলেন, ‘স্যার কিছুতেই বুঝতে পারছি না, টিকিটটা আপনি কখন দিলেন?’ আমি হেসে ওঁর জোড় হাত খুলে আমার হাত পিঠে রেখে এই টিকিট পাচারের রহস্যটা ব্যক্ত করি। সুশীলবাবু হো-হো করে হেসে বলেন, ‘স্যার, আপনি বাটা ছেড়ে রেলে আসুন। এখানে অনেক লাভ হবে।’ আমি হাসতে-হাসতে বলি, ‘ওই বাটাই ভালো।’… রবিদা থামেন তখন আমরা হো-হো করে হাসছি।

888sport app শহরে প্রথম গেলাম ২০১০-এর জানুয়ারিতে। 888sport appsের বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে। ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি আমাদের ‘ক্যালকাটা পেইন্টার্স’ 888sport live chatী দলের প্রদর্শনী 888sport appর বেঙ্গল ফাইন আর্টস গ্যালারিতে। পরে 888sport app শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে নড়াইলে ‘মধুমতি আর্ট ক্যাম্প’। আমাদের ১৫ জন আর 888sport appsের ৬০ জন 888sport live chatীকে নিয়ে বড়মাপের আর্ট ক্যাম্প, যা এযাবৎ 888sport appsে হয়নি। দুঘণ্টা পদ্মাপারের অভিজ্ঞতার পর আমরা পৌঁছেছিলাম নড়াইলে। এখানেও একটা জল পার হওয়ার ছোটখাটো ব্যাপার ছিল। সেটি মধুমতি নদী। পানিপাড়ায় অরম্নণিমা কান্ট্রি সাইড এবং গল্ফ রিসোর্টে আমাদের সেই আর্ট ক্যাম্প। নড়াইলের কৃতী সমত্মান কালোত্তীর্ণ চিত্র888sport live chatী প্রয়াত এস.এম. সুলতানের প্রতি 888sport apk download apk latest version জানিয়ে এই আর্ট ক্যাম্প। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সুবীর চৌধুরীর প্রচেষ্টায় এ-888sport live chatশিবির। এপার বাংলার রাধিকা দত্ত এবং আসাদুলস্না গায়েনের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল ক্যালকাটা পেইন্টার্সের 888sport live chatীদের ওপার বাংলায় নিয়ে যাওয়ার। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটুর (লিটুভাই) বাড়ির ডিনারে লিটুভাইয়ের সহধর্মিণী মহুয়া খায়েরও তাঁর স্বামীর সঙ্গে আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন। ওখানে ছবি অাঁকতে গিয়ে আলাপ হলো বহু 888sport live chatীর সঙ্গে, যেমন – কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, কালিদাস কর্মকার, মোহাম্মদ ইউনুস, আবদুস শাকুর, হাশেম খান, শহিদ কবীর, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, গুলশান হোসেন, রোকেয়া সুলতানা, মাহমুদুল হক – এরকম কত 888sport live chatী। আর একজনের সঙ্গে আলাপ হলো, নাজমা আখতার। ওঁর বাড়িতে আমরা একদিন লাঞ্চও করলাম। খুব ঘনিষ্ঠতা হলো কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদক আবুল হাসনাতের সঙ্গে। দ্বিতীয়বার 888sport app শহরে গেলাম দুবছর পরে ২০১২ সালের ২২ মে চিত্রী বিজন চৌধুরীর একক প্রদর্শনীতে। প্রয়াত 888sport live chatীর প্রতি 888sport apk download apk latest version জানিয়ে ‘888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য বিজন চৌধুরী’ শীর্ষক প্রদর্শনী উদ্বোধনে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টস্, 888sport appয়। আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ওই গ্যালারির কর্ণধার সুবীর চৌধুরী। ওখানে ২০ তারিখে পৌঁছে 888sport appsের প্রখ্যাত চিত্রী সফিউদ্দীন আহমেদ পরলোকগমন করেছেন খবর পেলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। সফিউদ্দীন সাহেবের চিত্রকলা সম্পর্কে অবহিত ছিলাম। এই চিত্রীর চিত্র ও ছাপচিত্র দুই-ই অসাধারণ। নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছানোর পর সুবীর চৌধুরী ফোন করে বললেন, ‘চটপট ব্রেকফাস্ট সেরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে আসুন।’ ওখানে পৌঁছে দেখলাম শোকাতুর মানুষের ভিড়। 888sport live chatীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী, চারম্নকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ভক্ত-অনুরাগী, 888sport live chatী ও বিশিষ্টজনেরা 888sport live chatীর মরদেহে ফুল দিয়ে 888sport apk download apk latest version জানান। সফিউদ্দীন আহমেদের প্রয়াণ আর তারপর প্রয়াত বিজন চৌধুরীর একক প্রদর্শনী।     এপার-ওপার বাংলায় এক অনন্য মেলবন্ধন।

আসলে ২০ মে 888sport app রওনা হয়ে ২৪ তারিখে কলকাতায় ফিরব – এমনটাই কথা ছিল। হঠাৎ সুবীর 888sport app থেকে ফোন করে বললেন, ‘২৫ তারিখে যোগেন চৌধুরী 888sport appয় আসছেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের নতুন প্রকাশনা 888sport live chat ও 888sport live chatী পত্রিকার উদ্বোধন করতে।’ অতএব যোগেনদার ইচ্ছাতে সুবীরের অনুরোধে আমার ফেরার দিন ঠিক হলো ২৭ তারিখে। ২৫ মে যোগেনদার ফ্লাইট প্রায় আট ঘণ্টা লেটে পৌঁছল। একদিন দুপুরে সুবীর চৌধুরী ফোন করে বললেন, ‘ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সলমন খুরশিদ, বিজন চৌধুরীর প্রদর্শনী দেখতে আসছেন। ওখানে আপনি, কাইয়ুম চৌধুরী এবং আনিসুজ্জামান সাহেব উপস্থিত

থাকবেন।’ তড়িঘড়ি করে গ্যালারিতে পৌঁছলাম, ততক্ষণে মন্ত্রী এসে গেছেন। শুভেচ্ছা বিনিময় আলাপ-পরিচয় এবং বিজন চৌধুরীর সৃজন-সম্পর্কিত কথাবার্তা আদান-প্রদান হলো।

এর মধ্যে আমরা 888sport live chatী মাহমুদুল হকের গেস্ট হয়ে 888sport app ক্লাবে ডিনারের আমন্ত্রণ পেলাম। আমাদের সঙ্গে সুবীর চৌধুরী, আবুল হাসনাত, কাইয়ুম চৌধুরী। খানাপিনার সঙ্গে জমজমাট আড্ডা। একদিন গেলাম বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আরেকটি গ্যালারিতে, যা নতুন তৈরি হয়েছে। এই নতুন গ্যালারির নাম ‘বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জ’। 888sport appর গুলশান এলাকায় অবস্থিত এ-গ্যালারি। পাঁচ 888sport live chatী যথাক্রমে – আয়েশা সুলতানা, মোহাম্মদ হাসনুর রহমান, শেহজাদ চৌধুরী, ইয়াসমিন জাহান নূপুর এবং সালজার রহমান। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ফ্রি ফল’। প্রদর্শনীর কিউরেটরের ভূমিকায় এরড়ৎমরড় এঁমষরবষসরহড়র। অনবদ্য প্রদর্শনী। আধুনিক মননের সৃজন। ইনস্টলেশন, ভিডিওগ্রাফি ইত্যাদি নিয়ে এক অন্য মাত্রায় সার্বিক প্রদর্শনী। ২৫ তারিখে আমাদের পার্টি লুভা নাহিদ চৌধুরীর বাড়িতে। এর আগেরবার অর্থাৎ ২০১০ সালে এসে লুভার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। লুভা বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্ব। ভদ্রমহিলা অসাধারণ গানও করেন। এবার এসে ওঁর গান শোনা হয়নি। লুভার বাড়িতে নক্ষত্রের ভিড়। চিত্র888sport live chatীদের মধ্যে এসেছেন কাইয়ুম চৌধুরী (সস্ত্রীক), রফিকুন নবী, মাহমুদুল হক, ফরিদা জামান, মোহাম্মদ ইকবাল এবং ওঁর স্ত্রী নীপা, কনক চাঁপা চাকমা, মনিরম্নল ইসলাম ছাড়াও সস্ত্রীক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সুবীর চৌধুরী এবং যোগেন চৌধুরীও এসে হাজির। আর আছেন লিটুভাই, যাঁর নাম আবুল খায়ের। তিনি বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রাণপুরম্নষ, যাঁর প্রচেষ্টায় এই সংস্থার 888sport live chatের জন্য এগিয়ে চলা। তিনি একজন বিশেষ 888sport live chat-সংগ্রাহকও বটে। তাঁর সংগ্রহে শুধু ভারত-888sport appsের 888sport live chatীদের সৃজন সংরক্ষেত নয়, সারাবিশ্বের 888sport live chatীদের সৃজন তাঁর সংগ্রহশালায়। এত বড়মাপের মানুষ হয়েও তিনি সবসময় লো-প্রোফাইল মেইনটেইন করেন। মুখে সবসময় স্নিগ্ধ হাসির আমেজ। বিশিষ্ট সংগীত888sport live chatী শামা রহমানের অনবদ্য গানে ককটেল ডিনারের আসর সন্ধে গড়িয়ে গভীর রাতে পৌঁছল। এ এক অন্য স্বাদের অনুষ্ঠান, মনে রাখার মতো। আবুল হাসনাত এসেছেন, তিনি 888sport appsের বহুল প্রচারিত কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদক। পত্রিকার প্রকাশক আবুল খায়ের (লিটুভাই)। নতুন পত্রিকা 888sport live chat ও 888sport live chatীর সম্পাদক ও প্রকাশক – এঁরা দুজনেই। সহযোগী সম্পাদক লুভা নাহিদ চৌধুরী। live chat 888sportবিষয়ক সম্পাদক ফৌজিয়া খান। সম্পাদকম-লীতে আছেন – আনিসুজ্জামান, যোগেন চৌধুরী, রফিকুন নবী, রামেন্দু মজুমদার, সুশোভন অধিকারী, মনিরম্নল ইসলাম, রবিউল হুসাইন, আবুল মনসুর, সুবীর চৌধুরী ও ইফ্ফাত আরা দেওয়ান। 888sport live chat ও 888sport live chatী বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হয়। এঁদের উপস্থিতিতে পরের দিন ‘বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টসে’ যোগেন চৌধুরী প্রথম বর্ষ চতুর্থ 888sport free betটি প্রকাশ করলেন। সবার বক্তব্যের শেষে যোগেন চৌধুরীর 888sport live chatবিষয়ক আলোচনার প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল। জমজমাট অনুষ্ঠানে সবাই বসার সুযোগ পাননি। কিন্তু 888sport live chatের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে বিস্মিত হতে হয়।

২৬ মে ২০১২, যেদিন 888sport live chat ও 888sport live chatী পত্রিকার উদ্বোধন হলো, সেদিন রাতে 888sport app ক্লাবে আমাদের ডিনার দিচ্ছেন আনিসুজ্জামান। 888sport app ক্লাবে ড্রেস কোড মেনে আমরা হাজির হলাম। 888sport app ক্লাবে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের একটি লাউঞ্জ ছবি দিয়ে সাজানো। এই ডিনারে হাজির লিটুভাই, আবুল হাসনাত, সুবীর চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, লুভা নাহিদ চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মাহমুদুল হক, যোগেন চৌধুরী এবং আমরা। তুমুল আড্ডা। যোগেনদা আমাকে বললেন, তোমার আড্ডার একটা গল্প শোনাও। রফিকুন নবী বললেন, বাঙালির জীবনে আড্ডাই প্রধান অঙ্গ। তিনজন বাঙালি না হলেও দুজন হলেই আড্ডার চূড়ামত্ম হয়, এখানে তো আমরা অনেকজন। কাইয়ুম চৌধুরী হেসে নীরবে সম্মতি জানালেন।

আমি বলতে শুরম্ন করি, ‘এটা সত্যি ঘটনা। এবং এমন উলেস্নখযোগ্য মজার ঘটনা আমার জীবনে আর দ্বিতীয়টি নেই। সেটা ১৯৭৩ বা ’৭৪ সাল, কলকাতায় নকশাল আন্দোলনের অবসান ঘটেছে। তবে তার আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে পশ্চিমবঙ্গের আনাচে-কানাচে। আমি আর্ট কলেজ থেকে তিন বছর আগে পাশ করে বেরিয়েছি। তখন গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন প্রখ্যাত 888sport live chatী চিমত্মামণি কর। ছবি এঁকে 888sport live chatী হব – এই ব্রত নিয়ে ফাইন আর্ট পড়ে কেউকেটা হব ভেবেছিলাম। কঠিন বাসত্মবের মুখোমুখি হলাম কলেজ থেকে বেরিয়ে। ৪৫-৪৬ বছর আগেও কলকাতায় চাকরির অবস্থা খুবই খারাপ। বেকার জীবন নিয়ে অনেক তরম্নণের স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে। একটা স্কুলে কিছুদিন কাজ করার পর হঠাৎ করে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় অদ্ভুতভাবে ইলাসট্রেটরের চাকরি জুটে গেল। আবার আর্ট কলেজের সহপাঠী অজয় নিয়োগী ওই কাগজের অফিসে কাজ করত। একদিন ধর্মতলার মোড়ের বিখ্যাত রঙের দোকান জি.সি. লাহাতে ওর সঙ্গে দেখা। ও আমাদের কলেজ থেকে কমার্শিয়াল আর্ট নিয়ে পাশ করেছিল। তবু তখনকার দিনে কমার্শিয়াল আর্টিস্টদের অনেক চাকরির সুযোগ ছিল, ফাইন আর্টসের ছাত্রদের কোনো সুযোগই ছিল না। ওর সুপারিশে দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় চাকরি জুটল। তখন ওই পত্রিকা দপ্তর থেকে একটা ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। তার নাম জে এস (জুনিয়র স্টেটসম্যান)। পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ডেসমন্ড ডয়েগ। জে এস ম্যাগাজিন তখন ভারতবর্ষে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।

 

যাই হোক সামান্য মাইনের চাকরি হলো। চাকরি পাকা হবে ছমাস পরে। ভাউচারে মাইনে পাই। ম্যাগাজিন বলে দশটা-পাঁচটা অফিস, মূল কাগজের চাকরিজীবীদের মতো রাতে অফিস করতে হয় না। তখন থাকি উত্তর কলকাতার বাদুড়বাগানে। প্রথম মাসের মাইনে পেয়ে ঝকঝকে শার্ট-প্যান্ট কিনে ফেললাম। খুব সাজগোজের শখ ছিল। আমাদের একটা সান্ধ্যকালীন আড্ডা ছিল কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসে। আমার অভিন্নহৃদয় বন্ধু গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রোজ অফিস ছুটির পর ওই আড্ডায় যেতাম। আটটা বাজলে উঠে বাড়ির দিকে হাঁটাপথে বাড়ি ফিরতাম। গোপাল থাকত বেহালার দিকে। ও কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট ধরে হেঁটে আমায় সঙ্গ দিতে আসত কৈলাশ বসু স্ট্রিটের মোড় অবধি। তারপর ধর্মতলার বাস ধরে এবং পরে বাস বদল করে বেহালায় পৌঁছত। আমাদের দুজনেরই খুব রোগা চেহারা। তার ওপর গোপাল বেশ বেঁটে এবং সবসময় নোংরা জামাকাপড় পরে না-কামানো দাড়ি নিয়ে ঘুরত। ও কাজ করত সপ্তাহ বলে সিপিআইর একটা পত্রিকায়। চাকরিটা ছিল

ঘুরে-ঘুরে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা। বাড়ি ফেরার পথে কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটের ফুটপাত ধরে প্রায়ই দেখতাম বিখ্যাত লেখক শিবরাম চক্রবর্তী হেঁটে যাচ্ছেন। আমরা অবাক হয়ে শিবরামকে দেখতাম। আমাদের স্বপ্নের শিবরাম চক্রবর্তী। শৈল চক্রবর্তীর অাঁকা শিবরামের কার্টুনের ভক্ত ছিলাম। লেখার ভক্তের 888sport free bet তখন কতজন ছিল তা বলা যাবে না। সেই শিবরাম আমাদের সামনে দিয়ে হেঁটে চলেছেন। মাথায় কাঁচাপাকা লম্বা বাবরি চুল। বড়-বড় চোখ। মুখের মধ্যে একটা বড়মাপের অাঁচিল। ফুলহাতা সিল্কের আধময়লা শার্টের হাতের বোতাম খোলা। ভূলুণ্ঠিত ধুতির কোঁচা, পায়ে নিউকাট জুতা। শিবরামের একটা নির্দিষ্ট রম্নটিন ছিল। দেখতাম হাঁটতে-হাঁটতে উনি ঠনঠনিয়া কালীতলায় এসে সামনে-বসা ফল বিক্রির লোকটির কাছ থেকে একটি ফল কিনে কালীবাড়িতে প্রণাম ঠুকে রাসত্মায় ভিখিরির ছেলেদের হাতে সেই ফল দিয়ে আবার হাঁটা শুরম্ন করতেন ওঁর মেসের উদ্দেশে। উনি থাকতেন উত্তর কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে। উনি নিজেই বলতেন, উনি ভালোবাসার কাঙাল। তাই ওখানে যথার্থ ভালোবাসা পেয়েছেন। মুক্তি এবং আরাম দুই-ই আছে সেখানে। একাই একটি কাজের লোক নিয়ে থাকতেন। শুনেছি, ঘরের দেয়াল জুড়ে বিভিন্নজনের ঠিকানা লেখা। কেউ গেলে, আলাপ হলে দেয়ালে ঠিকানা লিখে রাখতেন। দেয়ালের নিচের অংশ ভরে গেলে টুলে উঠে ওপরে লিখতেন। আর যে-গিয়েছে সে-ই বলেছে, উনি কাউকে কিছু না খাইয়ে ছাড়তেন না। ঘরে যা থাকত লজেন্স, বিস্কুট, সন্দেশ, নকুলদানা কেউ না কেউ পেত না, সকলেই পেত। এরকম একদিন শিবরাম রাসত্মার বাচ্চা ছেলেটির হাতে ফল দিয়ে যেই ঘুরেছেন, তখন আমি আর গোপাল ওঁর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের চোখে বিস্ময়। মনের মধ্যে কী হচ্ছে কে জানে। আমাদের সামনে খুব কাছেই সেই প্রখ্যাত 888sport live footballিক শিবরাম চক্রবর্তী।

আমাদের দেখে উনি কয়েক হাত পিছিয়ে গেলেন। তারপর একটু দূর থেকে আমাদের নিরীক্ষণ করতে থাকলেন। ভাবছেন আমরা কী নকশাল? এটাই আমাদের মনে হলো। একটু বাদে উনি        হাসতে-হাসতে এগিয়ে এলেন। আমাদের দেখে বোধহয় মনে হলো, এই দুই রোগাপটকা তরম্নণকে দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর যাই হোক এদের দ্বারা বিপস্নব হবে না। হঠাৎ হাত বাড়িয়ে আমার নতুন জামার কলার ধরলেন। আমি ঘেমে-নেয়ে অস্থির। কী করলাম, উনি মারবেন নাকি? উনি স্মিত হেসে আমায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাহ! কী সুন্দর জামার কাপড়টা। কত করে মিটার নিল ভাই?’ আমি তো থ! আমি আমতা-আমতা করে বলি, ‘এটা রেডিমেড শার্ট’। উনি এবার আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কী করো ভাই?’ তখন দ্য স্টেটসম্যান একমাত্র ইংরেজি সর্বভারতীয় কাগজ, বিপুল জনপ্রিয় অভিজাত সংবাদপত্র। যদিও চাকরি পাকা হয়নি। ভাউচারে মাইনে পাই। সরাসরি ওই সংবাদপত্রের কাজ নয়। ওই পত্রিকা দপ্তরের একটি প্রকাশনার কাজ, তবু বেশ গর্বের সঙ্গে বললাম। ‘আমি দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় কাজ করি।’ এরপর উনি গোপালের দিকে ফিরে তাকালেন। গোপালের আধময়লা জামাকাপড়, না-কামানো দাড়ি, কাঁধে পেলস্নায় ঝোলা ব্যাগ। ওর দিকে আঙুল তুলে শিবরাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘উনিই বুঝি ওই কাগজের এডিটর?’ আমরা তো থ! গোপাল তাড়াতাড়ি সামলে উঠে বলে, ‘না, আমি মেইন স্ট্রিম পত্রিকায় কাজ করি।’ আমি অবাক! ওকে পরে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তুই ওই পত্রিকার নাম বললি কেন?’ ও গম্ভীর মুখে বলেছিল, সপ্তাহ পত্রিকা সিপিআইয়ের কাগজ আর নিখিল চক্রবর্তী-সম্পাদিত মেইন স্ট্রিম পত্রিকাও সিপিআইয়ের কাগজ। তুই একটা বড় ইংরেজি কাগজে কাজ করিস, তাই আমিও ওই কাগজের নাম বলেছি।’ এবার শিবরামকে আবদারের সুরে আমি বললাম, ‘শিবরামদা, আমরা আপনার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের বাসায় যাব।’ উনি গম্ভীরভাবে বললেন, ‘না, ভাই এসো না।’ আমার মুখ শুকিয়ে গেল। এইভাবে আঘাত পাব জানতাম না। এবার শিবরাম আমায় জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা তুমি আমুল হোল মিল্ক খাও?’ আমি অবাক! থতমত খেয়ে বলি, ‘আমুল মিল্ক, হ্যাঁ খাই।’ উনি যেন খানিকটা নিশ্চিমত্ম হলেন। এবার হেসে বললেন, ‘তাহলে একদিন এসো। আসলে চাকরটা দেশে গেছে। আমি আবার চা করতে পারি না। আমুল মিল্ক গুলে দেবো, তাই খেয়ো।’

এরপর আমার শিবরামের মেসে যাওয়া হয়নি। গোপাল একদিন ঘুরতে-ঘুরতে ওইখানে হাজির হয়েছিল। শিবরাম দরজা খুলে ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কে?’ গোপাল থতমত খেয়ে বলে, ‘আজ্ঞে, আমি গোপাল।’ উনি জিজ্ঞেস করেন, ‘কোন গোপাল? সেই গোপাল, অতি সুবোধ বালক সেই গোপাল?’ গোপাল বলে ওঠে, ‘আরে না না। সেই যে আপনার সঙ্গে ঠনঠনে কালীতলায় দেখা হলো। আমার বন্ধু ছিল, যে স্টেটসম্যানে কাজ করে।…’

শিবরাম কী বুঝলেন কে জানে। উনি গোপালকে ডেকে ঘরে এনে টেবিল থেকে তুলে কী যেন দিলেন। বললেন, ‘এই দেখো, এখানে এক গস্নাস জলও আছে। ওটা খেয়ে নাও।’ গোপাল দেখে, ওর হাতে শিবরাম দুটো স্যারিডনের বড়ি দিয়েছেন। গোপাল ভয় পেয়ে বলে, ‘স্যারিডন কেন? আমার তো মাথা ধরেনি।’ উনি গম্ভীরভাবে বলেন, ‘ধরতে কতক্ষণ? এসেছ শিবরামের সঙ্গে আড্ডা দিতে।’

এই গল্প শুনে সবাই সমস্বরে হেসে উঠলেন। যোগেনদা বললেন, ‘তোমার এবং আড্ডা বইটা এনেছো?’ আমি বলি, ‘না, আনা হয়নি।’ ইতোমধ্যে কাইয়ুম চৌধুরী উপহার দিলেন ওঁর রেখাচিত্র বইটি। রফিকুন নবী উপহার দিলেন ওঁর রনবীর বিশ্বদর্শন ও রম্যকথন বইটি। রফিকুন নবী সাহেব কার্টুনিস্ট, পেইন্টার এবং লেখক। যোগেনদা হেসে বললেন, ‘দেবব্রত আমাদের দেশের রফিকুন নবী।’

আবুল হাসনাত বললেন, ‘আমাকে কলকাতায় উনি একটা বই দিয়েছেন।’ এরপর আড্ডা যেরকম জমল তা বলার নয়। হোটেলে রাতে সেরকম ঘুম হলো না। সকালের ফ্লাইট। ঘুমোলাম পেস্ননে মাত্র ৪০ মিনিট। মনটা খারাপ হয়ে গেল এ-লেখাটা লিখতে-লিখতে। ইতোমধ্যে চলে গেলেন কাইয়ুম চৌধুরী ও সুবীর চৌধুরী। এই প্রয়াণ বড় আঘাত দিয়েছে। চোখ বুজলেই সেদিনের 888sport app ক্লাবের আড্ডার টেবিলের ওই দুজনকে বড্ড বেশি করে মনে পড়ছে। এই লেখাটা এপার বাংলা-ওপার বাংলার আড্ডার মেলবন্ধনের বৃত্তামত্ম। 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই আড্ডা জমে উঠেছিল কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে (অ্যালবার্ট হল)। সেখান থেকে প্রবাহিত আড্ডার ধারায় দুই বাংলার লেখক, 888sport live chatী এবং ব্যতিক্রমী আড্ডা-ব্যক্তিত্বদের নিয়ে 888sport sign up bonusর কথামালা শেষ হলো ২০১২-তে 888sport appsের 888sport app ক্লাবে। সেই সময়ের আড্ডালিপিতে কত গুণীজন। আজ অনেকেই প্রয়াত। সেই প্রয়াতদের 888sport apk download apk latest version জানিয়ে এ-আড্ডার বর্ণমালা।