আত্মঘাতী সাধনার অনবদ্য 888sport live chatভাষ্য

আবু সাঈদ তুলু

 

সাপের মন্ত্রে সিদ্ধকামলোভী ব্রতধারী সাধকের মর্মযন্ত্রণা ও নির্মম পরিণতির চিত্র নীলাখ্যান নাটক। সম্প্রতি মহাকাল নাট্যসম্প্রদায় প্রযোজনা করেছে নাটকটি। কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ কাহিনি অবলম্বনে আনন জামান-রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান অর্ক। ৮ এপ্রিল ২০১৬ 888sport appর সেগুনবাগিচার 888sport live chatকলা একাডেমিতে নাটকটির প্রদর্শনী হয়। ওই প্রদর্শনীর ওপর ভিত্তি করে কাজী নজরুল ইসলামের কাহিনি-প্রসঙ্গ, নাট্যরূপ, উপস্থাপন-কৌশল, বৈচিত্র্য, নান্দনিকতা ও দর্শকের উপযোগিতা অন্বেষণই এ-লেখার মূল লক্ষ্য।

কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ কাহিনিটি তাঁর প্রকাশিত কোনো গল্পগ্রন্থে পাওয়া যায় না। তাঁর এ-কাহিনি সাপুড়ে live chat 888sportের কাহিনিসংক্ষেপ। বাংলা 888sport live footballজগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সদর্পে পদচারণা কাজী নজরুল ইসলামের। তিনি কবি ও গীতিকার হিসেবে সমধিক সমাদৃত। সমাজের মানুষের অন্যায়, অত্যাচার ও শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চারকণ্ঠ। 888sport app download apkয় বিদ্রোহী চেতনার কারণে তাঁকে বাংলা 888sport live footballে বিদ্রোহী কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তিনি একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ।

সৃষ্টিশীলতায় অনন্য, দ্রোহ ও প্রেমের অনবদ্য রূপকার কাজী নজরুল ইসলাম গত শতকের তিরিশের দশকে live chat 888sportের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। সংগীত-পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনা, অভিনয় ও পরিচালনাসহ live chat 888sportের নানা দিকে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন তথ্যমতে, তিনি প্রায় 888sport cricket BPL rateটি live chat 888sportের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। উলেস্নখযোগ্য live chat 888sport হলো – ধ্রম্নব (১৯৩৩, গান রচনা, সুর ও সংগীত-পরিচালনা, অভিনয়), পাতালপুরী (১৯৩৫, গান রচনা, সুর ও সংগীত-পরিচালক), গ্রহের ফের (সুর ও সংগীত- পরিচালনা), বিদ্যাপতি (কাহিনিকার, গান ও সুর), গোরা (১৯৩৮, গান রচনা, সুর ও সংগীত-পরিচালনা), সাপুড়ে (১৯৩৯, কাহিনি, গান, সুর ও চিত্রনাট্য), সাপেড়া (১৯৩৯, হিন্দি, কাহিনি, গান রচনা ও সুর), নন্দিনী (১৯৪১, গান রচনা ও সুর), চৌরঙ্গী (হিন্দি, গান রচনা, সুর ও সংগীত পরিচালনা) ইত্যাদি।

সাপুড়ে live chat 888sportটি ১৯৩৯ সালে মুক্তি পায়। বেদে সম্প্রদায় নিয়ে খুব সম্ভবত এটিই ভারতবর্ষের প্রথম live chat 888sport। live chat 888sportটির কাহিনি তৈরি করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। নিউ থিয়েটার্স-প্রযোজিত এ-live chat 888sportে পরিচালক ছিলেন দেবকী বসু। কাহিনি ছাড়াও live chat 888sportটিতে গান রচনা, গানের সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। যদিও এর কোনো প্রিন্ট বর্তমানে পাওয়া যায় না। নানা তথ্যে জানা যায়, সাপুড়ে live chat 888sportটি সে-সময়ে অত্যমত্ম ব্যবসাসফল ছিল। একই বছর এ-live chat 888sport সাপেড়া নামে হিন্দিতেও নির্মাণ করা হয়। এ-live chat 888sportে অভিনয় করেছেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, মেনকা, আলাউদ্দিন সরকার, আগা আলী প্রমুখ। হিন্দি live chat 888sportটিতেও প্রায় একই অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলেন।

সাপুড়ে প্রদর্শনের আগে সিনেমা হলে live chat 888sportটির কাহিনিসংক্ষেপ ও গান দিয়ে ছাপা পুস্তিকা বিক্রি করা হতো। (নজরুল রচনাবলি, সপ্তম খ-, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি – রফিকুল ইসলাম, বাংলা একাডেমি, ২০১২, পৃ ৩৭১)। এ-পুস্তিকায় বর্ণিত সাপুড়ে live chat 888sportের কাহিনিই নীলাখ্যান নাটকের মূল। নাট্যকার আনন জামান এ সাপুড়ে live chat 888sportে কাহিনিসংক্ষেপকে নতুন মাত্রায়, নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে নাট্যে রূপায়ণ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের অত্যমত্ম জনপ্রিয় ‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙ্গা পলাশ ফুল, এনে দে, এনে দে, নইলে বাঁধবো না বাঁধবো না চুল…’ এই গানটি এ-live chat 888sportেরই।

কাজী নজরুল ইসলামের সাপুড়ের আশ্রয়ে আনন জামান-রচিত নীলাখ্যান নাটকটি মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় দলীয় প্রযোজনা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ১৯৮৩ সালে মহাকাল নাট্য

সম্প্রদায় দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রায় তিন যুগ হতে চলল 888sport appsের নাট্যাঙ্গনে উপহার দিয়ে চলেছে একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক। দলীয় প্রচারপত্রে উলেস্নখ, ‘মহাকাল’ চায় মানুষের স্বচ্ছ, সরলরৈখিক জীবনের চূড়ামত্ম উত্তরণ। বীরগর্ভা-মঞ্চে জেগে উঠুক সত্যনিষ্ঠ সাহসী মানুষ। মানুষ জেগে উঠুক তার মুক্তির প্রশ্নে, 888sport live chatের প্রশ্নে, সত্যের প্রশ্নে। ‘মহাকাল’ একদা মঞ্চে আনবে জীবন888sport live chatের কথা, বলবে – জীবন সংগ্রামে বিপর্যসত্ম 888sport free betগরিষ্ঠ মেহনতি যোদ্ধার কথা। আঘাত করবে কলুষিত সমাজব্যবস্থাকে, খুঁজতে প্রয়াসী হবে মানুষের ভেতরের মানুষকে। নীলাখ্যান নাটকটি মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের ছত্রিশতম প্রযোজনা।

নীলাখ্যান নাটকটির কাহিনি বিন্যাসে দেখা যায় – বেদিয়ার সর্দার জহর। জহরের বিষজয় সাধনায় মনসা কর্তৃক কাম নিষিদ্ধ। জহরের স্ত্রী বিমত্মী রানী আড়ালি বিলে রাশি-রাশি সাদা শাপলার বনে আত্মহত্যা করে। জহর আত্মসংযম ধারণ করে থাকে। সাধনা সিদ্ধি পেতে চায়। একদিন সাপ ধরতে গিয়ে নদীর তীরে সাপেকাটা মৃতপ্রায় এক বালিকাকে দেখতে পায় জহর। মেয়েটিকে বাঁচিয়ে তোলে। নানা প্রতিকূলতায় জহরের সাধনায় 888sport promo code নিষিদ্ধ বলে 888sport sign up bonusভ্রষ্ট বালিকা বালকের পরিচয়ে বেড়ে ওঠে বহরে। বালিকা চন্দনের কাছে বিমত্মীর সুরভিই যেন পায় জহর। ধীরে-ধীরে ঋতুমতী হয়ে ওঠে চন্দন। চন্দনের 888sport promo codeত্বের স্ফুরণে জহর যেন প্রেম, কামনায় পাগলপ্রায় হয়ে ওঠে। সাধনার সংযমের বাঁধ ভেঙে যেতে চাইলেও অতিকষ্টে তা সংবরণ করে। সাধনায় পুনঃআত্মনিয়োগ করে জহর। এদিকে বেদিয়ার দলে চন্দনকে ঘিরে তৈরি হয় নানা বিচিত্রমুখী সংকট। চন্দনকে পুরুষ জ্ঞানে দলের মৌটুসী প্রেম নিবেদন করে। একদিন বেদিয়াদের উৎসবে অকস্মাৎ চন্দনের 888sport promo codeত্বের পরিচয় উন্মোচিত হয়ে পড়ে। চন্দনকে নিয়ে দলের অতিবৃদ্ধ ঘণ্টাবুড়োর নানা সতর্কবাণী কানে না নিলেও ঘটতে থাকে সেসব অনাকাঙিক্ষত বিপদ। দলের ঝুমরো ভালোবাসে চন্দনকে। চন্দন প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে। এমনকি একসময় সাধনার বাঁধ ভেঙে যায় সর্দার জহরের। নিজের পালিত কন্যাতুল্য চন্দনকে বিয়েও করতে চায়; কিন্তু চন্দনের বুদ্ধিমত্তায় নিজের ভুল বুঝতে পারে জহর। নানা দ্বন্দ্ব, নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে চন্দন বেদিয়ার যুবক ঝুমরোর সঙ্গে পালিয়ে চলে যায়। প্রচ- প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে জহর। জহরের প্রেরিত সাপের দংশনে ঝুমরো মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কিন্তু চন্দনের অনুরোধে ঝুমরোর বিষ নামিয়ে দেয় সর্দার জহর। জহরের অমত্মরে বাজে, চন্দন চেয়েছিল গাঢ় নীল রঙের ফতুয়া। অবশেষে বিষজয়ের সাধনায় মত্ত জহর একশতম সাপের দংশন নেয়। বিষে নীল হয়ে ওঠে জহর। এভাবেই নাটকের কাহিনি এগিয়ে চলে।

কাজী নজরুল ইসলামের মূল সাপুড়ে কাহিনিতে জহর ছিল সর্পবিষজয়ী ব্রতচারী। আজীবন চিরকুমার থেকে নিষ্কামভাবে সিদ্ধিলাভে উন্মত্ত ছিলেন। জহর 888sport promo codeস্পর্শকে সম্পূর্ণ সাধনা বিধ্বংসী বলে মনে করতেন। হঠাৎ একদিন নদীর জলে কলার ভেলায় ভেসে-আসা সর্পদংশনে মৃততুল্য সুন্দরী বালিকাকে পুনর্জীবিত করে তোলেন। বিষের প্রকোপে তার 888sport sign up bonusশক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। 888sport promo codeসুলভ চেতনাকে অবদমন করিয়ে ‘চন্দন’ নামে বালক হিসেবে প্রতিপালন করেন। নানা ঘটনায় একদিন উৎসবে বিশুনের ছেলে তেঁতুলের সঙ্গে চন্দনের ঝগড়ার এক পর্যায়ে উন্মোচিত হয়ে পড়ে চন্দন 888sport promo code। বহরের সবাই বিস্মিত হয়। জহরের সংযমের বাঁধ ভেঙে যেতে থাকে। একদিন বিশুন জানায়, ঝুমরোর সঙ্গে চন্দন পালিয়ে গেছে। কাহিনির অমেত্ম সাধনার সর্পদংশনে জহর আত্মহননের পথ বেছে নেয়।

নাট্যকার আনন জামান বলেন, ‘শব্দে সুরে ভাবের বিত্তবৈভব বিনির্মাণে বাংলা 888sport live footballে কী সংগীতের ঐশ্বর্য-কবি কাজী নজরুল ইসলাম। …‘সাপুড়ে’ গল্প পাঠের পর বেদিয়া জহরই আমার কাছে যা কিছু বেদনা বলবার – বলেছিল – আপনার চরিত্রের ভাবকথা আমি অনুলিপি করেছি মাত্র। সাপুড়ে গল্পের বেদিয়াদের ঝাঁপির ভেতর যা ছিল গোপন – সেই ঝাঁপি খুলে গোপন উন্মোচনের চেষ্টায় এ নবতর নাট্য আয়োজন। ঘুম অথবা জাগরণের ভেতর ভুবন থেকে মনসা বলেছিল অখ- চাঁদের সাঁজক্ষণে যদি একশ সাপের দংশন শরীরে নেয় আর কাম রাখে আপন শরীরে বন্ধক তবে বিষ বশ করতে পারবে জহর। একটি সাপের বিষ বুকে সয়ে – জহর হত হয় কাম আর প্রেমের দংশনে। নীলাখ্যান নাট্য জহরের পরান আর চৈতন্যের গোপন পাত্রের রতি আর আরতির নাট্য।’ (নাটকের সুভ্যেনির)

শুরুতেই দেখা যায়, তিনদিক-দর্শকবেষ্টিত মাঝখানে মঞ্চ। আবহমান বাংলা নাট্যের মঞ্চবিন্যাসে সাধারণত চারদিকে দর্শকবেষ্টিত মধ্যমঞ্চে উপস্থাপন হতে দেখা যায়। কিন্তু এ-মঞ্চ অনেকাংশে বাংলা নাট্য উপস্থাপন মঞ্চের মতো। কিন্তু গ্রিক নাট্যমঞ্চের মতো তিনদিক-বেষ্টিত দর্শক। মঞ্চের মাঝখান থেকে পেছন হয়ে ওপর দিকে ঝোলানো এবং বাঁকা একটি সিঁড়ির সিম্বল। সিঁড়িটির গোড়ায় একটি ঘট। পাশেই একটি বাক্স। সিঁড়িটি দেখে কারো বুঝতে সমস্যা হয় না, এটি সাধনার উচ্চ ধাপে পৌঁছানোর নৈর্ব্যক্তিক বিন্যাস।

প্রথমেই বাদক দলের বাদনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপনাটিতে প্রবেশ করেন তিনপাশে দর্শকের সারিতে বিভিন্ন ধর্মের পুরোহিত চরিত্র
এবং প্রত্যেক ধর্মের একসঙ্গে সত্মব, প্রার্থনা বা বন্দনার ধর্মীয় কৃত্যের মধ্য দিয়ে নাট্যটি শুরু হয়। অসাধারণ ধ্বনিমাধুর্য সৃষ্টি হয়। মিউজিক ও ধর্মীয় শেস্নাকের বোলে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না।  ধর্মীয় কৃত্য শেষ হলে দেবী মনসাকে পূজা দিয়ে গল্পের শুরু। এক বেদেবহর। তার সর্দার গল্পের প্রধান চরিত্র। সর্দার মনসার সাধনায় রপ্ত। বিষ জয় করতে চায়। চারজন 888sport promo code অখ- মনসা দেবীরূপকে প্রকাশ করে। অসাধারণ অভিনয়। তখন মঞ্চটি হয়ে ওঠে মনসার মন্দির।

সর্দার জহর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মীর জাহিদ। অসাধারণ প্রাণবমত্ম অভিনয়। ভান মনে হয়নি। সর্দার মনসার সাধনায় সিদ্ধি পেতে চাওয়াটার মধ্যে তীব্রতা লক্ষ করা গেছে। তবে উক্তি-প্রত্যুক্তির নিয়ন্ত্রণে আরো মনোযোগ প্রয়োজন। পোশাকগুলো সাজেস্টিক। পোশাকে স্থান-কালকে ফেলে জীবনচরিতটাই মুখ্য হয়ে উঠেছে। নাটকের শুরু থেকেই পেছনে যন্ত্রী দল বসা ছিল। কখনো ঘটনার আবহ তৈরি করেছে যন্ত্রী দল; কখনো বৈচিত্র্যমুখী বোল ও সংগীতের দ্বারা নাটকটিকে করেছে প্রাণবমত্ম।

কৃত্য, মনসার বন্দনা, বেদে দলের নাচের পরেই জহরের মৃতপ্রায় চন্দনকে প্রাপ্তি দিয়ে শুরু হয় ঘটনায় অনুপ্রবেশ। বাংলার আবহমান অভিনয়রীতির বৈশিষ্ট্যে বর্ণনাত্মক চরিত্রাভিনয়ে উপস্থাপিত হয়েছে নাট্যটি। অভিনয়ে বাংলার আবহমান বর্ণনাত্মক ধারার সঙ্গে পাশ্চাত্যের চরিত্রাভিনয়ের মিশ্রণ ঘটেছে। ঘটনা বা গল্পের প্রয়োজনে শুধু বর্ণনা হয়েছে। সর্দারের নদীতে খুঁজতে যাওয়া লাশপ্রাপ্তিতে চমৎকার একটি নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি করেছেন নির্দেশক। যখন সর্দার কিছু একটা দেখতে পেয়ে খুঁজতে-খুঁজতে নদীর ধারে চলে যায়, তখন মঞ্চের সব আলো নিভে গিয়ে সর্দারকে ফোকাস করে লাইট। লাইট সর্দারকে অনুসরণ করতে থাকে। এ-অন্ধকারের মধ্যে মৃতপ্রায় বালিকাটি মঞ্চে এসে শুয়ে থাকে। সর্দার খুঁজতে-খুঁজতে মঞ্চে প্রবেশ করে তখনো লাইট অনুসরণ করছিল। নদীতীরে মৃততুল্য এক বালিকা। দর্শকের মধ্যে এক জাদুকরী মোহ তৈরি করে। নির্দেশকের অসাধারণ কল্পনার পরিচয় পাওয়া যায় এতে। সমসত্ম নাট্যটির মধ্যে কোরিওগ্রাফিও অসাধারণ। বেদেদের সাপ ধরতে যাওয়া, সাপ ধরাসহ নৃত্যগীত অসাধারণ ভালো লাগা তৈরি করেছে। চন্দনকে নিয়ে দলের মধ্যে যে কৌতূহল তা অত্যমত্ম পরিমিত বিন্যাসে উপস্থাপিত। নির্দেশক অত্যমত্ম দক্ষতায় চরিত্রগুলোর মাত্রা বিন্যসত্ম করেছেন।

চন্দন চরিত্রের অভিনয়ও অত্যমত্ম প্রাণবমত্ম। এক ধরনের ইনারবিউটি ছড়িয়ে যায় দর্শকের মধ্যে। চন্দনের প্রকৃত পরিচয় নাটকের শেষ পর্যমত্ম মনে থাকে না চন্দনের। চন্দনের বুদ্ধিমত্তার উপস্থাপন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বয়সের মাত্রাও অত্যমত্ম নিখুঁতভাবে উপস্থাপিত। মাথায় একটি পাগড়ি দিয়ে বালকের বেশ উপস্থাপন করেছেন। সাধনা-উন্মুখ জহরের কামনা-বাসনায় নীল পর্দার সিম্বল ব্যবহৃত হয়। নীল কাপড় টানায় একদিকে বিষের সাধনা এবং অন্যদিকে কামনা-বাসনার উন্মত্ততা কী প্রকাশ করে! তারপর ওপর থেকে প্যাঁচানো নীল পর্দা নেমে আসে। বোঝা যায়, জহর বিষ-নীল যন্ত্রণা জয়লাভের সাধনায় ঊর্ধ্বমুখী। চন্দনের ঋতুমতী ঘটনায় মিউজিক অসাধারণ। মূল কাহিনিতে এ-অংশটুকু না থাকলেও নাট্যকার দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করতেই সম্ভবত এ-দৃশ্যের অবতারণা করেছেন। সর্দার জহর বুঝতে পারে, চন্দন পরিপূর্ণ 888sport promo code হতে চলেছে। সন্তানতুল্য চন্দনকে সেণহে কোলে করে নিয়ে চলে যায়। চন্দনকে নিয়ে মৌটুসীর ভাবনাটি অত্যমত্ম বিনোদিত করে দর্শককে। মৌটুসীর অভিনয়ও অত্যমত্ম প্রাণবমত্ম। নিজ কন্যাতুল্য চন্দনকে নিয়ে সর্দার আজেবাজে স্বপ্ন দেখলেও পরক্ষণেই নিজের মনকে প্রবোধ  দেন জহর। চরিত্রাভিনয়ের সঙ্গে বর্ণাত্মক ধারায় কাহিনি উপস্থাপিত হতে থাকে; কিন্তু উপস্থাপনাটির মধ্যে দেখা যায় পাশে একজন সাদা কাপড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর কাপড়ের একপাশ টেনে চন্দনের বুকের ওপর দিয়ে নিয়ে যায়। দর্শকের বুঝতে সমস্যা হয় না যে, বিষয়টা মেকি। সে-সময়ই আবার ওপর থেকে বল পড়ে। এটায় নির্দেশক চাঁদ ঝরেপড়া বোঝাতে চেয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। ওপর থেকে বল পড়াটা কী অর্থ তৈরি করেছে, তা স্পষ্ট নয়। বহরের নৃত্যগীত অসাধারণ। সাধারণত যারা অভিনয়ের প্রয়োজনে নৃত্য করেন তাদের মধ্যে এত নমনীয়তা লক্ষ করা যায় না। নাচগুলোর মধ্যে সত্যিকারের নৃত্য888sport live chatীদের মতোই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল। নাচতে-নাচতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে চন্দন ছেলে নয়; 888sport promo code। মিউজিকের সঙ্গে দৃশ্যটি উপস্থাপন বেশ সাবলীল। তবে চরিত্রগুলোর পোশাকের রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দেশকের আরো সচেতনতা প্রয়োজন। সর্দার জহর চন্দনকে বিয়ে করতে চায়। পরক্ষণে চন্দনই সর্দারকে মতিবিভ্রামিত্ম রোধে সহায়তা করে। কথোপকথন, অভিনয়, আবহে অসাধারণ দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে দৃশ্যটিতে। বাচিক অভিনয়ে আরো সুস্পষ্টতা প্রয়োজন। জহর সর্দার পুনরায় মনসার সাধনায়

ব্যাপ্ত হয়ে ওঠেন। বৃদ্ধের কাহিনিতে সংযোগ বারবার প্রক্ষেপ্তই মনে হয়েছে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে মনসার ঘট ভেঙে ফেলে সর্দার জহর।

নাটকটি দেখতে-দেখতে প্রশ্ন জাগে 888sport promo codeসঙ্গ সত্যিই সাধনাকে নষ্ট করে দেয় কি? শেষ পর্যমত্ম চন্দন ঝুমরোর সঙ্গে পালিয়ে বনে চলে যায়, যেখানে শুধু দুজন দুজনকে ঘিরে বাঁচবে বলে। গান, বর্ণনা, নৃত্য, কথোপকথনের এক মেলবন্ধন রচিত হয়েছে নাট্যটিতে। নাট্যটি উপস্থাপনে অত্যমত্ম পরিমিতিবোধের পরিচয় পাওয়া গেছে। এ-সময় উপজাতির কাঠিনৃত্য উপস্থাপিত হয়। নাচের সময় ওপর থেকে সাদা পলিথিন পড়ে। এ সাদা পলিথিন কী ব্যঞ্জনা প্রকাশ করেছে, তাও স্পষ্ট নয়। জহর সর্দারের পোষা সাপ এসে ঝুমরোকে দংশন করে। জহর যেন প্রতিহিংসার আগুনে আত্মহারা হয়ে উঠেছে; কিন্তু চন্দন পিতৃতুল্য ও ওস্তাদ জহরকে অনুরোধ করে ঝুমরোকে বাঁচাতে। পা বেঁধে সর্দার বিন বাজায়। সাপ এসে বিষ শুষে নিয়ে চলে যায়। জীয়মত্ম হয়ে ওঠে ঝুমরো। এখানে সর্দারের মহত্ত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। একে-একে জড়ো হতে থাকে বেদেবহরের লোকজন। এ-সময় আত্মঘাতী সিদ্ধামত্ম নেয় সর্দার জহর। সর্দার নিজেই সাপের বিষের ছোবল নিয়ে বিষের যন্ত্রণায় নীল হয়ে ওঠে। মৃত্যু-যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে ওঠে জহর। আর নেপথ্যে নজরুলের সেই বিখ্যাত গান বাজতে থাকে – ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেব না ভুলিতে।’ এক অসাধারণ বিয়োগামত্ম পরিবেশের  মধ্য দিয়ে নাট্যটির পরিসমাপ্তি ঘটে।

নাটকটির নামটিতে আরো মনোযোগ প্রয়োজন ছিল। নামকরণ করা হয়েছে নীলাখ্যান। দীনবন্ধু মিত্রের নাটক নীলদর্পণের অসাধারণ জনপ্রিয়তায় নীল বলতে প্রথমত নীলকরদের নীল চাষের চিত্র চোখে ভেসে ওঠে। সনাতন ধর্মীয় পুরাণে বিষে শিবের নীলকণ্ঠ হয়েছিল বটে; কিন্তু বিষক্রিয়ায় নীল হওয়া কি বাসত্মবে দেখা যায়! এ-বিষয়ে নাট্যকারের আরো ভাবনার প্রয়োজন ছিল। দলীয় প্রচারপত্রে উলেস্নখ করা হয়েছে নাটকটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ গল্প অবলম্বনে। এ-888sport liveে কাহিনির উৎসমূল আগেই উলিস্নখিত হয়েছে। এক্ষেত্রে নাট্যকার, নির্দেশক কিংবা দলীয় প্রচারপত্রে বিভ্রামিত্ম না রেখে সঠিক ও সহজতর তথ্য উপস্থাপন প্রয়োজন।

নির্দেশক ইউসুফ হাসান অর্কের বর্ণনায়, ‘কাহিনিটির প্রেক্ষাপট বেদেবহর হলেও কবি নজরুল এর অমত্মস্রোতে এমন এক সর্বজনীন বীজ ভাসিয়ে দিয়েছেন, যা স্পষ্টতই গোটা মানবকুলের সর্বকালকে ছুঁয়ে যায়।… এ নাট্যে অভিনেতা নিজেই চরিত্র ও পরিস্থিতির বিবরণ উপস্থাপন করেন মঞ্চক্রিয়া সহযোগে। একে শুদ্ধ চরিত্রাভিনয় না বলে আমরা ‘বর্ণনাত্মক চরিত্রাভিনয়’ বলছি। এ-অভিনয় আমাদের আবিষ্কার নয়, আমাদের পালাকার-গায়েন-বয়াতিরা এভাবেই অভিনয় করেন। তাতে কাহিনির রসাস্বাদনে কোনো অসুবিধা হয় না। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, সেখানে একজনই কাহিনি বয়ান করেন আর এখানে সকলে মিলে একটি গল্প বলার চেষ্টা করেন। প্রযোজনায় খুব বেশি ইমেজ তৈরি করার চেষ্টা ছিল না এ-কারণে যে, নির্দেশকের বিশ্বাস, ‘বর্ণনাত্মক’ এমন একটি 888sport live chat-আঙ্গিক, যেখানে শ্রম্নতিময়তা দিয়েই দৃশ্যময়তা তৈরি হয় দর্শকচিত্তে। সে-কারণে নাটকটির নামকরণেও ‘আখ্যান’ শব্দটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে।’

সব মিলিয়ে পরিমিতিবোধসম্পন্ন এক অনন্যসাধারণ শৈল্পিক প্রযোজনা নীলাখ্যান নাটকটি। বিষয়বস্ত্ত, উপস্থাপন চিমত্মন, অভিনয়, আবহ ও কর্মোদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। নাটকটির উপস্থাপন সুখ দর্শন অনুভূতি তৈরি করেছে, তা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে। অত্যমত্ম তারুণ্যদীপ্ত প্রাণবমত্ম প্রযোজনা। আমরা নাটকটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি। এমন নান্দনিক উপস্থাপনার জন্য নাট্যকার, নির্দেশক, 888sport live chatীবৃন্দ এবং মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। সবার প্রত্যাশা, হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারায় বাংলা নাট্য বিশ্ব নাট্যসমারোহে স্বমর্যাদায় সুমহিমান্বিত হোক।

নীলাখ্যান নাটকের অভিনয়888sport live chatীরা হলেন – পলি বিশ্বাস, মনামী ইসলাম কনক, লিটু ম-ল, জেরিন তাসনীম এশা, কোনাল আলী, চৈতী, সাথী, তনু ঘোষ, মামুনুর রশীদ, আমিনুল আশরাফ, আসাদুজ্জামান রাফিন, মোহাম্মদ আহাদ, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, ইয়াছির আরাফাত, তৌহিদুর রহমান শিশির, ইকবাল চৌধুরী, জাহিদুল কামাল চৌধুরী দিপু, মো. শাহনেওয়াজ ও মীর জাহিদ হাসান। তাছাড়া নেপথ্যে অর্থাৎ মঞ্চ, সুর সংযোজন ও আবহসংগীত পরিকল্পনায় ইউসুফ হাসান অর্ক, আলোক পরিকল্পনায় ঠা-ু রায়হান, পোশাক পরিকল্পনায় ড. সোমা মুমতাজ, কোরিওগ্রাফিতে জেরিন তাসনীম এশা, প্রপস পরিকল্পনা ও নির্মাণে হাসনাত রিপন, রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, পোস্টার ও 888sport app download for androidিকা ডিজাইনে পংকজ নিনাদ, মঞ্চ-ব্যবস্থাপনায় জাহিদ কামাল চৌধুরী এবং প্রযোজনা অধিকর্তা ছিলেন মীর জাহিদ হাসান।