আদিবাসীদের মাতৃভাষার প্রতি যত্ন ও ভালোবাসা

এক

পৃথিবীতে মায়ের ভাষার চেয়ে মধুর আর আবেগের কীআছে? ‘মাতোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মাতোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ –শৈশব থেকে একটি গারো, হাজং, সাঁওতাল ও 888sport app আদিবাসী শিশু এই জাতীয়সংগীত গেয়ে বড় হয়। পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে তার মাতৃভাষা মধুর। একটি গারো শিশুজন্মের পরযে-ভাষায় কথা বলে, সে-ভাষার নাম আচিক ভাষা।

মাতৃভাষার চেয়ে মধুর আর কিছু নেই। ‘আ মরি বাংলাভাষা’ যেমন বাঙালিদের কাছে প্রাণের ও আবেগের এবং গভীর ভালোবাসার, গারোদের ‘আংআমানিখু’ বাত্রিপুরাদের ‘আমানিকক’ বা ‘আমার মায়ের ভাষা’ও তেমনি প্রাণের, আবেগের ও ভালোবাসার বিষয়। এ-কথাটা সকলকে সমানভাবে উপলব্ধি করতে হবে। সবার মাতৃভাষাকে সম্মান ও মর্যাদাপ্রদানেরসংস্কৃতিসমাজে গড়ে তুলতে হবে। এটাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূলচেতনা। আর এ-মুহূর্তে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি একাডেমি জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে পারে সরকার।

জন888sport free betর দিক থেকে কোনো জাতি যতই স্বল্প বা ক্ষুদ্র হোক, সবভাষাকে সংরক্ষণ করতে হবে। কোনোভাষাকে বিলুপ্ত হতে দেওয়া যাবে না। ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিকমাতৃভাষাদিবস ঘোষণার মূল বক্তব্যই হলো, ভাষার বহুত্ব, সাংস্কৃতিকবৈচিত্র্য ও ভিন্নতাকে সংরক্ষণ এবং এসবের উন্নয়ন করা। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে এ-বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে ইউনেস্কোর ঘোষণায়।

দুই

আমাদের প্রিয় 888sport apps খুব সুন্দর ও বৈচিত্র্যময়। কারণ এখানে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সুরমা নদীর পাশাপাশি সাংগু-মাইনী-সীমসাং-চেংগী-মেননেং নদী আছে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সুরমা নদী নিয়ে বাংলাভাষাভাষীমানুষগানগায়, আবার সাংগু-মাইনী-সীমসাং-বুগাইনদী নিয়ে আদিবাসী পাহাড়ি মানুষের জীবনেও গান আছে। 888sport apps বহুজাতি, বহুভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের দেশ- এ-কথার স্বীকৃতি দিলে আমাদের দেশটা আরো সুন্দর ও শক্তিশালী হয়। বৈচিত্র্যের মধ্যে সৌন্দর্য ও ঐকতান-কথাটি আমাদের জন্য প্রযোজ্য। 888sport appsে বাঙালি জাতির বাইরে আরো যে ৫০টি স্বতন্ত্র জাতি আছে, তাদেরঅনেকের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি আছে, ইতিহাস ও ঐতিহ্য আছে, 888sport live football, গল্প, মূল্যবোধ, আদিবাসীজ্ঞান, নৃত্য, গান ও 888sport app download apk আছে। তাদের রয়েছেসংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস। এসবইআমাদেরগর্ব, আমাদেরসম্পদ। অতি দুঃখের বিষয়, কারো কারো মাতৃভাষা হারিয়েগেছে।

জাতিসংঘ বলছে, ঐতিহাসিক কারণেই আদিবাসী জনগণ নানামুখী শোষণ, বৈষম্য ও বঞ্চনারশিকার। তাই তাদের অস্তিÍত্ব রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এসডিজির মূলসুর ‘লিভনোওয়ানবিহাইন্ড’ বা ‘কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না’ –কথাটি 888sport app প্রান্তিক মানুষের পাশাপাশি আদিবাসীদের জন্য প্রবলভাবে প্রযোজ্য। 888sport apps সরকার ও দেশের মানুষকে, বিশেষ করে 888sport free betগরিষ্ঠ বাঙালি জাতিকে এসব বিষয়ে আরো অনেক বেশি উদার ও সংবেদনশীল হতে হবে। আদিবাসী বলি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বলি, নৃ-জনগোষ্ঠী বলি, এটি তো সত্য যে, আমাদের দেশ হাজং, বানাই, কোচ, ত্রিপুরা, খিয়াং, লুসাই, চাক, ম্রো, গারো, সাঁওতাল, মুন্ডা, খাসিয়া, খুমি, বম, মনিপুরিসহ ৫০টি জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়েছে

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। এই স্বীকৃতি প্রশংসনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আমাদের জন্য।

তিন

ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিকে যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, তখন বলেছে, ভাষা হলো জ্ঞানের বাহন, যোগাযোগ ও সম্পৃক্ততার মাধ্যম এবং পরিচয় আর বৈচিত্র্যময়তার প্রকাশ। ইউনেস্কোর মতে, পৃথিবীতে ভাষার 888sport free bet প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার। তাদের আশঙ্কা, বিশ্বায়নের ফলে এবং বর্তমান ধারা চলতে থাকলে এর অর্ধেক, অর্থাৎ প্রায় ৩ হাজার ভাষা পৃথিবী থেকে হারিয়ে  যাবে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের মতে, বিশ্বব্যাপী আদিবাসীরা প্রায় ৫ হাজার ভাষায় কথা বলে। এই ভাষাগুলোই বিপন্ন। আদিবাসীদের ভাষা হারিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো জ্ঞান   অনুভূতি হারিয়ে  যাওয়া, একটা প্রাচীন সভ্যতা বিলীন হওয়া। সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, গল্প, মূল্যবোধ, সম্পদ হারিয়ে যায় তখন। আদিবাসীদের কাছে পৃথিবী হলো ধরিত্রী জননী বামাদার আর্থ। আদিবাসীরা কৃতজ্ঞতা জানায় ধরিত্রীর প্রতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি, সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট জীবের প্রতি। আদিবাসীরা ধন্যবাদ দেয় সূর্যকে, কেননা সূর্য আলো দেয়। তারা কৃতজ্ঞতা জানায় চাঁদকে। কারণ চাঁদ স্নিগ্ধ জোছনা ছড়ায় অন্ধকারে। আদিবাসীরা প্রার্থনায় বলে, নদী ও ঝরনাধারা তোমাকে ধন্যবাদ। কেননা, তারা মানুষের তৃষ্ণা মেটায়। আদিবাসী সংস্কৃতিতে নদীগুলো ওদের ভাইয়ের মতো। পাহাড় ও বন যেন ওদের বোনের মতো। অল ইজ কানেক্টেড, মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত। আদিবাসীরা বলে, ‘ধরিত্রী আমার নয়, আমিই ধরিত্রীর।’ অর্থাৎ আদিবাসী মানুষ নিজেকে সমর্পণ করে প্রকৃতি ও ধরিত্রীর কাছে। ওরা প্রকৃতিকে দখল ও ধ্বংস করে না। এই সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ওরা প্রকৃতিকে, পাহাড়, ভূমি, জলরাশিকে এতকাল রক্ষা করেছে। আদিবাসী ভাষা হারিয়ে গেলে এসব মূল্যবোধ ও চিন্তা চিরতরে হারিয়ে যাবে। আদিবাসীরা ভূমি-নদী-অরণ্যকে জীবনের অংশ হিসেবে দেখেছে। শুধু ভোগের বা মুনাফার অংশ হিসেবে দেখেনি। আদিবাসীরা প্রশ্ন করে, কী করে তোমরা কেনাবেচা করবে আকাশ, ধরিত্রীর উষ্ণতা? আমরা তোমাদের চিন্তা বুঝতে পারি না। জাতিসংঘ তথ্য দিয়েছে, বিশে^র মোট জন888sport free betর শতকরা মাত্র পাঁচ ভাগ হওয়া সত্ত্বেও এই  আদিবাসীরাই পৃথিবীর ৮০ ভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে চলেছে, যদিও এই জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির সম্মুখীন।  

চার

বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অবদান রয়েছে মাতৃভাষার জন্য। বাঙালি জাতি এমন একটি গর্বিত জাতি, যার সন্তানেরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ভাষার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। আমি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছিলাম এবং জগন্নাথ হলে থাকতাম আশির দশকে। তখন ২১শে ফেব্রুয়ারি এলে রাতে আলো-ঝলমল শহিদমিনারে শহিদদের প্রতি888sport apk download apk latest version জানাতে অনেকের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতাম। সকালে প্রভাতফেরিতে খালি পায়ে হাঁটতাম আর সকলে মিলে গাইতাম ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ কোমলশব্দ ও সুরের গান, মনের অজান্তে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তাম। বুকের ভেতর কীরকম যেন অনুভূতি হতো, ভাষায় বোঝাতে পারবো না। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন পেরিয়ে এসেছি অনেক বছর হলো। তিন দশকের বেশি সময় চলে গেল। দুঃখের বিষয়, আদিবাসীদের মাতৃভাষা এখনো সাংঘাতিক রকম উপেক্ষিত দেশে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট একটি সমীক্ষায় প্রকাশ করেছে, দেশে মাতৃভাষা আছে ৪১টি। এখানে বাংলা ও উর্দু ভাষা বাদ দিলে বাকি ৩৯টি ভাষাই হলো আদিবাসীদের ভাষা। এই সরকারি প্রতিষ্ঠান নিজে তাদের রিপোর্টে বলেছে, এখানে ১৪টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় বা হারিয়ে গেছে। তারা বলেছে, আরো অনেক ভাষা বিপন্ন।যে-দেশের মানুষ মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই দেশে অন্যজাতির মাতৃভাষা চিরতরে হারিয়ে গেল। এই দুঃখ কোথায় রাখি?

আদিবাসীদের ভাষার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এদের অধিকাংশ ভাষা মৌখিক ভাষা এবং এদের 888sport live footballও মৌখিক, ওরাল লিটারেচার। ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে ১২ নম্বর রেজুলেশন প্রথমেই স্বীকৃতি দিয়েছে সকল ভাষা রসংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্প্রসারণের। বিশ্বে একক প্রভাবশালী ভাষার হুমকি এবং 888sport app প্রান্তিক ভাষার বিপন্নতা বা বিলুপ্তির ঝুঁকি, আঞ্চলিক ভাষাসমূহ সংরক্ষণ এই ঘোষণার অন্যতম দিক। তাই সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি ইউনেস্কো সুপারিশ করেছে বহু ভাষায় শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে, বিদ্যালয়ে দ্বৈত ভাষায় পাঠদান, উচ্চতর শ্রেণিতে আরো অনেক ভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা করতে।  

পাঁচ

জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বের আদিবাসীদের অবস্থা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল নিউইয়র্ক সদর দফতর থেকে। এই রিপোর্টের প্রথম অধ্যায়ে একটি 888sport app download apk ছাপা হয়েছে। এখানে 888sport app download apkটি রূপান্তরের চেষ্টা করা হলো :

যতদিন আমাদের নদী ছিল,

যতদিন নদীতে জলছিল,

মাছেরা সাঁতার কাটতো।

যতদিন ভূমি ছিল আমাদের,

সবুজ ঘাস ছিল আমাদের,

সেখানে পশুপাখি বিচরণ করতো।

যতদিন আমাদের বনে বড় বৃক্ষ ছিল,

যতদিন তাতে বন্যপ্রাণী লুকোচুরি খেলতো,

ততদিন পৃথিবীতে আমরা নিরাপদ ছিলাম।

এ-রিপোর্টের মুখবন্ধে জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল শাজুকাং বলেছেন, আদিবাসী জনগণ বিশ্বের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চলের অধিকারী ও রক্ষাকারী। আদিবাসীরাই পৃথিবীর নানাভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ধারক ও বাহক। আদিবাসীদের প্রাচীন ও ঐতিহ্যগতজ্ঞান বিশ্বের অমূল্য সম্পদ, যা মানব সমাজকে 888sport app download for androidাতীত কাল থেকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের জন্য এতো অবদান সত্ত্বেও আদিবাসীজন গণনানামুখী  শোষণ, বৈষম্য, প্রান্তিকতা, অতিদারিদ্র্য ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের শিকার হচ্ছে। অনেক আদিবাসী তাদের স্বতঃসিদ্ধ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও আদিবাসী জীবনপ্রণালিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। আদিবাসীদের নিজস্বপ্রথা, রীতিনীতি, ভাষা, জীবনধারা হুমকির সম্মুখীনহচ্ছে। অনেক জায়গায় আদিবাসী সমাজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেছেন, রাষ্ট্রসমূহ আদিবাসী জনগণের ওপর এই হুমকিগুলোকে স্বীকার করে নিচ্ছে এবং কোথাও কোথাও আদিবাসী অধিকার স্বীকৃত হচ্ছে। আদিবাসীদের ভূমি অধিকার মেনে নেওয়া থেকে শুরু করে কোনো কোনো রাষ্ট্র আদিবাসীদের প্রতি অতীতের ভুল ও নিষ্ঠুর আচরণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার ঘোষণা পত্র বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ এক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

এই রিপোর্টের ভূমিকায় বলা হয়েছে, জাতিসংঘের প্রথম ষাট বছরে অনেক অর্জন সূচিত হলেও এখনো সমাজের

অতিদরিদ্র জনগণ, অতিপ্রান্তিক মানুষ এবং আদিবাসীরা মৌলিক মানবাধিকার, উন্নয়নের সুফল ও নিরাপত্তা ভোগ করতে পারছে না।

ছয়

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারের ১৮ অনুচ্ছেদে লিখেছে, ‘ধর্মীয় 888sport free betলঘু, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, আদিবাসী ও চা বাগানে কর্মরত শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর ওপর সন্ত্রাস, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিরঅবসান, তাদের জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম, মানমর্যাদার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করা হবে। … অনগ্রসর অঞ্চলসমূহের উন্নয়নে বর্ধিত উদ্যোগ, ক্ষুদ্রজাতিগোষ্ঠী, আদিবাসী ও 888sport app সম্প্রদায়ের অধিকারের স্বীকৃতি এবং তাদের ভাষা, 888sport live football, সংস্কৃতি ও জীবনধারার স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ ও তাদের সুষম উন্নয়নের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।’ এই কথাগুলোর প্রতিফলনে কার্যকর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

সাত

মহাশ্বেতা দেবী তাঁর টেরোড্যাকটিল, পূরণসহায় ও পিরথা 888sport alternative linkের ভূমিকায় লিখেছেন, ‘আদিবাসীদের সমাজব্যবস্থা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতিচেতনা, সভ্যতা, সব মিলিয়ে যেন নানা সম্পদে শোভিত এক মহাদেশ। আমরা, মূলস্রোতের মানুষেরা, সে মহাদেশকে জানার চেষ্টা না করেই ধ্বংস করে ফেলেছি, তা অস্বীকার করার পথ নেই। মূলস্রোতের ধাক্কায় এদের বারবার দেশান্তরী হতে হয়েছে। ফলে অনেক কিছু গেছে হারিয়ে। মূলস্রোত এই বিষয়ে যে অপরাধে অপরাধী তার ক্ষমা নেই।’

আদিবাসীদের জীবনধারা ও ওয়ার্ল্ডভিউকে বুঝতে বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্র অক্ষম। চলমান অপরিণামদর্শী উন্নয়নধারায় সে নিজেই বিপন্ন পরিবেশ বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ, মহামারি ইত্যাদি দ্বারা। শুধু 888sport apps নয়, বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির বিপন্নতার জন্য যুগে যুগে আধুনিক রাষ্ট্রসমূহের অমার্জনীয় উপেক্ষা ও অবহেলা দায়ী। এ কেমন কথা, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসে আমাদের দেশ থেকে ১৪টি মাতৃভাষা বিপন্ন হয়ে গেল? কেন হারিয়ে যাবে কড়া, খাড়িয়া, সৌরা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খেয়াং, লুসাই, পাত্র, রাজোয়াড় ভাষা?

আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং বিকাশের জন্য সরকারকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। বৃহত্তর সমাজের মানুষের বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব¡ সকলকে এ-কাজে ব্রতী হতে হবে। এখানে আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতির এই বৈচিত্র্য, সৌন্দর্য এবং শক্তিকে স্বীকৃতি ও উদ্যাপনের আয়োজন করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। আমরা বহুদিন ধরে আদিবাসীদের সঙ্গে বৃহত্তর বাঙালি সমাজের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও জানাজানির গুরুত্বের কথা বলে আসছি। আসামকে নিয়ে ভূপেন হাজারিকার একটি গান আছে, ‘পাহাড় এসে সমতলে বাজায় করতালি, বিহুর সাথে মিশে গেছে কখন ভাটিয়ালী।’ এভাবেই আদিবাসীদের সঙ্গে বাঙালি সমাজের একটি সংবাহন বিন্দু গড়ে উঠতে পারে।

আট

মহাশ্বেতা দেবী যখন 888sport appয় এসেছিলেন, তখন আমি দেখা করেছিলাম দিদির সঙ্গে। আরোমা দত্ত দিদির বাসায় মগবাজারে। 888sport appয় এসে তিনি বলেছেন, ‘ভারতবর্ষে আমরা সবাই কিন্তু বহিরাগত। আমাদের বহু আগে থেকেই ভারতবর্ষের বনে-জঙ্গলে বাস করতো আদিবাসীরা। পৃথিবীর বহু জায়গার মতো এখানেও তারা আদিম অধিবাসী। একটা কথা, আদিবাসীদের মূলস্রোতে নিয়ে আসার কথা কেন বলা হচ্ছে? আমি মনে করি মূলস্রোতধারা বলতে কিছু নেই। অবিভক্ত ভারতবর্ষে বহুসংখ্যক সতীদাহ হতো এবং তা কিন্তু তথাকথিত এলিট সম্প্রদায়ের মধ্যেই বেশি হতো। তাই কোনটা সভ্য, কোনটা নয়-সে-বিচার আমরা কেন করি? আদিবাসী সমাজের বন্ধন খুবই দৃঢ়। সেখানে 888sport promo code-পুরুষে কোনো বিভাজন নেই। একটা ছেলে জন্মাল, না মেয়ে জন্মাল, তাতে কিছু যায়-আসে না। আদিবাসী সমাজে দুজনেরই সমঅধিকার। তাদের বিয়েতে পাত্রপক্ষকে পণ দিতে হয় না। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই খেটে খায়। তারা যদি বিবাহবিচ্ছেদ করতে চায়, সেটাও খুব সহজ। আমাদের মতো ‘উইমেন্স কমিশন’ গঠন জাতীয় হাঙ্গামা করতে হয় না। সাধারণত পঞ্চায়েত বা মোড়ল টাইপের একজন লোক এসে সব জানাশোনার পর একটা গাছের পাতা ছিঁড়ে দু-টুকরো করে দিলেই বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেল। বিবাহবিচ্ছেদের পরস্বামী-স্ত্রী উভয়েই পুনর্বিবাহ করতে পারে। … কাজেই এরকম একটা সমাজকে সভ্য করে মূলস্রোতে আনার কী আছে? কাকে সভ্য করা হবে? কেন করা হবে? কী সভ্য করা হবে? তোমার মধ্যে এমন কী আছে বা কোন অধিকারে তাকে সভ্য করবে? তারাই সেই লোক যারা গঙ্গা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রকে রক্ষা করেছে, পাহাড় রক্ষা করেছে, মাটি রক্ষা করেছে, অরণ্য রক্ষা করেছে। তাকে তুমি কী শেখাবে?’

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে 888sport free betয় অল্প জাতির মানুষেরা তাদের আত্মপরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি ও নিজস্ব জীবনধারা নিয়ে মর্যাদার সঙ্গে এগিয়ে যাবে, এটিই সকলের কাম্য হওয়া উচিত। ওদের অস্তিত্ব যখন সংকটে পতিত হয়, ওদের মাতৃভাষা যখন বিপন্ন হয়, ওরা যখন আস্থা হারিয়ে দেশান্তরে চলে যায়, তখন ওই রাষ্ট্রের দুঃখিত হওয়া উচিত। একটি রাষ্ট্র ও সমাজ কতখানি উন্নত, সভ্য ও গণতান্ত্রিকতার বিচার্য বিষয় ও মানদণ্ড হলো সেই রাষ্ট্রে ও সমাজে 888sport free betলঘু জনগণ কেমন আছে। ইউনেস্কো ২০২২ থেকে ২০৩২ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডিকেড অব ইনডিজিনাস ল্যাঙ্গুয়েজ’ ঘোষণা করেছে। এই এক দশকে সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে আদিবাসী ভাষাসমূহের প্রতি সচেতনতা তৈরি, ভাষার বৈচিত্র্য, টেকসই উন্নয়নের জন্য বহুমাত্রিক ভাষাচর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। দশকজুড়ে সরকারি নীতিনির্ধারক, অ্যাকাডেমিক, আদিবাসী সংগঠন, আদিবাসী ভাষা বিষয়ে স্কলার ও এক্সপার্ট, জাতিসংঘের প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজসহ সকলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে আদিবাসীদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

আমাদের দেশের জন্য জাতিসংঘ-ঘোষিত এই ‘আদিবাসী ভাষা দশক’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে আদিবাসীদের মাতৃভাষার যত্ন ও বিকাশে এগিয়ে আসবেন। ৎ

ছবি : নিবন্ধকারের