রবিন পাল
সোনার সিঁড়ির উপকথা
অঞ্জলি লাহিড়ী
দে’জ পাবলিশিং
কলকাতা, ২০১১
২৫০ ভারতীয় টাকা
আদিবাসী সমাজের ক্রমবিকাশ, আদি জনজাতির সঙ্গে বহিরাগত মিশনারি এবং সাম্রাজ্যবাদীদের সম্পর্ক ও সংঘাত 888sport alternative link-সৃজনে বারংবার দেখা গেছে। এ-ধরনের 888sport alternative linkে মিথের ভূমিকা প্রায়ই লক্ষ করা যাবে। মিথ এক পুরাগল্প, যাতে অতিলৌকিক সত্তার প্রাধান্য, মিথ জাতি-গোষ্ঠীর সৃজনের কথা বলে, প্রমিথিউস বা হারকিউলিস, ডায়ানা বা অর্ফিয়ুস প্রভৃতির গল্প মুখে মুখে চলত Primitive explanations of the natural order and cosmic forces হিসেবে। রোমান, জার্মান, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান, চীনা, ভারতীয়, মিশরীয়, লাতিন আমেরিকান মিথ এভাবে 888sport alternative linkে, গল্পে, 888sport app download apkয় দ্যুতি বিকীর্ণ করেছে। হেরমান মেলভিল (মবি ডিক 888sport alternative linkে), জেমস জয়েস (ইউলিসিস 888sport alternative linkে), ডি এইচ লরেন্স (দ্য প্লুমড সার্পেন্ট 888sport alternative linkে) বিচিত্র মিথিক্যাল উপাদান ব্যবহার করেছেন, যা য়ুং-কথিত ‘সমষ্টিগত অবচেতনের’ সঞ্চয়। O. Mannoni ঔপনিবেশিকতার মনস্তাত্ত্বিক প্রসঙ্গায়ন করতে গিয়ে শেক্সপিয়রের টেমপেস্ট অনুষঙ্গে প্রসপেরো (the archetypal colonizer) এবং ক্যালিবানের (the archetypal colonized) কথা তুলে বলেছিলেন, প্রসপেরোর মতো সাদা মানুষ প্রাধান্যবিস্তারী আর ক্যালিবানের মতো কালো মানুষ সাদার কর্তৃত্বে বাঁধা উপনিবিষ্ট হয়ে থাকে। (The colonizer and the colonized – Albert Menoni, pg. Introduction) ফ্রাঞ্চ ফানন এবং এইমে সেজেয়ার মেননির বক্তব্য অসম্পূর্ণ মনে করেন, কারণ এ-ব্যাখ্যায় অর্থনৈতিক প্রবঞ্চনা উপেক্ষিত। সে যাই হোক, এই Prospero Syndrome আফ্রিকান 888sport alternative linkে, লাতিন আমেরিকার 888sport alternative linkে কার্যকারী হয়েছে। প্রথমত, উপনিবেশ বিস্তারকারীরা প্রচার করত, আফ্রিকার কোনো সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নেই। তাই পঞ্চাশের দশক থেকেই জাতিসচেতন আফ্রিকান লেখকরা এই সমৃদ্ধ ঐতিহ্য, মিথ, পুরাণকথা, গান প্রভৃতি তাঁদের রচনায় তুলে ধরে জাতীয় আইডেনটিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, এসব লেখক তাঁদের সাংস্কৃতিক মুক্তিসংগ্রামের সহায়ক করে তুলেছেন তাঁদের রচনাকে। তৃতীয়ত, এসব সৃজন, তাঁরা বিশ্বাস করেন সহায়ক হবে জাতীয় মুক্তি-আন্দোলনে।
অঞ্জলি লাহিড়ীর 888sport alternative linkটিতে একাধিকবার শিকড়ের সন্ধানের গুরুত্বের কথা আছে। ধর্মনির্ভর খাসিরা অনেককাল পর্যন্ত তাদের জাতিগত উৎপত্তি, পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য, সামাজিক প্রথা পালন প্রভৃতি বিষয়ে আগ্রহী ছিল।
পাসান জ্যাঠা বা দলিপ সিং মাস্টারমশাই বারংবার খাসিদের 888sport app download for android করিয়ে দেয় সেসব প্রাচীন কথা। লোকসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের কথাও আছে পৃ ২৮৩-তে, কারণ – ‘এখন ধর্মটর্ম সব চুলোয় গেছে।’ (পৃ ৩১০) শিকড়ের সন্ধানের Context-য়েই আমেরিকান ঔপন্যাসিক অ্যালেক্স হেলির Roots 888sport alternative linkটির কথা মনে পড়ে। দুটিতেই মাতৃতান্ত্রিক সমাজের কথা আছে, যদিও তফাৎ আছে বিস্তর। হেলি ‘আবিষ্কার করতে চেয়েছেন তাঁর পূর্বপুরুষের সেই অবলুপ্ত অতীত’। ১৭৫০ থেকে বিংশ শতাব্দীর বিশের দশক পর্যন্ত আফ্রিকান নিগ্রোদের একটি গোষ্ঠীর জীবনপরম্পরার অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন লেখক এবং ইতিহাসের আবিষ্কার প্রচেষ্টা আছে নিপীড়িতজনের দৃষ্টিকোণ থেকে। ক্রীতদাস করে নিয়ে যাওয়ার কথা অবশ্য বাংলা 888sport alternative linkটিতে নেই, কিন্তু ‘দেশের ইতিহাস মুখে মুখে আবৃত্তি করে শোনানো’ দুটিতেই আছে। দুটি ক্ষেত্রেই আছে মৌলিক ইতিহাস, চিত্রলিপি, নানা ধর্ম-সামাজিক কৃত্য, বিচিত্র উদ্ভিদ ও প্রাণী খাদ্য হিসেবে ব্যবহার আর গল্প বলা ও শোনার নিরন্তর আগ্রহ। সাদা-কালোর দ্বন্দ্ব শিকড় 888sport alternative linkে মুখ্য, বাংলা 888sport alternative linkটিতে ভিনদেশে গমনের পরিবর্তে স্বায়ত্তশাসন, উগ্র জাতীয়তা, শিক্ষা ও জীবিকা-বদল এবং অর্থ-মুখ্য মানসিকতা। তবু দুজন লেখকই বর্তমান থেকে যেতে চান ‘শিকড়’ অন্বেষণে – কখনো ব্যক্তিক টানে, পূর্বপুরুষ ইতিবৃত্তায়নে, কখনো সামাজিক টানে, অখন্ড ভারতবোধে।
এসব কথা মনে এলো প্রবীণ সমাজসেবী অঞ্জলি লাহিড়ী-রচিত সোনার সিঁড়ির উপকথা 888sport alternative linkটি পাঠ করতে গিয়ে। অঞ্জলি লাহিড়ী শোভাবাজারের মেয়ে, শিলং, ময়মনসিংহ, কলকাতা, সিলেটে বড় হয়েছেন, ছাত্রজীবন থেকে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, জেল খেটেছেন, 888sport appsে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সিলেট-মেঘালয় সীমান্তে শরণার্থী শিবিরে কাজ করেছেন। এ-888sport alternative link শিলং ও সন্নিকট অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবন-বিবর্তনের ইতিকথা। তিনি জন্মসূত্রে এসব সম্প্রদায়ের নন, কিন্তু সমাজসেবা ও রাজনীতিসূত্রে এদের কাছের মানুষ। ষাটের দশক থেকে আশির দশকের মধ্যে এসব সম্প্রদায়ের ক্যালিবানদের জীবন কীভাবে বদলে গেল, বদলাতে বাধ্য হলো, সেখানে প্রসপেরোদের ভূমিকা কী, তাদের প্রভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদে বিপর্যস্ত মানুষ কেমন তা অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে তুলে ধরেছেন। এসব সম্প্রদায়ের মিথ, সংস্কৃতি, ছড়া, গান যেমন, তেমনি রাজনীতি – কোনোটাকেই তিনি উপেক্ষা করেননি। সেদিক থেকে আফ্রিকান কথা888sport live footballের অবতারণা সম্ভবত অপ্রাসঙ্গিক নয় বলেই মনে করি।
অঞ্জলি লাহিড়ী-রচিত 888sport alternative linkটির নাম সোনার সিঁড়ির উপকথা। চতুর্থ অধ্যায়ে এই সোনার সিঁড়ির মিথটি বর্ণিত। শিলং সন্নিকটের এক গ্রামে শীতের শুরুতে হাজির হয় পাসান অর্থাৎ জনৈক জ্যাঠা। মেঘালয় রাজ্য গঠনের প্রাক্কালে স্বশাসিত পার্বত্যভূমির দাবিতে বিক্ষোভে শামিল হতে গাঁ-বাসী গিয়েছিল শিলংয়ে। পাসান বলে – নিজের শিকড়, সেই শিকড়ে বেড়ে ওঠা গাছটিকে অর্থাৎ উদ্ভবের অতীত ইতিহাস জানা দরকার। সবার অনুরোধে এই জ্যাঠা গল্প বলতে শুরু করে। পুরাকালে তীর-ধনুক নিয়ে একদল মানুষ ঘুরতে ঘুরতে হাজির হয় এক পার্বত্য-অরণ্যে, যেখানে গাছের সঙ্গে লাগানো এক সোনার সিঁড়ি গাছ থেকে আকাশ বরাবর লাগানো দেখে তারা অবাক হয়ে যায়। হঠাৎ আকাশ থেকে কয়েকজন নেমে আসে। যাযাবরদের অনুরোধে নেমে আসা দলপতি জানায়, তারা ষোলো ঘর আকাশে থাকে ঈশ্বরের সঙ্গে। সারাদিন এই সুন্দর পৃথিবীতে কাটিয়ে তারা ফিরে যায়। তাদের মধ্যে পাপ, হিংসা, ভেদাভেদ কিছু নেই। পৃথিবী আর স্বর্গ এই সোনার সিঁড়ি দিয়ে বাঁধা। যাযাবররা এখানে আশ্রয়ের অনুমতি চায়। আকাশবাসীর নেতা জানায়, যদি তারা নিয়ম মেনে চলে তাহলে উব্লেই বা ঈশ্বর আপত্তি করবেন না। তিনটি মান্য নিয়ম হলো – ঈশ্বর তাদের জন্ম দিয়েছেন, তাই ঈশ্বরের নিয়ম মানতে হবে। দ্বিতীয় নিয়ম – সৎভাবে জীবনযাপন করতে হবে। তৃতীয় নিয়ম – উপার্জন করতে হবে সৎভাবে, ঠকানো চলবে না। তাহলে মৃত্যুর পর ঈশ্বরের ঘরে ঠাঁই হবে। এরা রাজি হলে দলপতি ঈশ্বরের সঙ্গে পরামর্শ করতে যায়। একদিন নেমে আসে মাত্র সাতটি ঘর। শুরু হয় খেত-খামারি। কিন্তু একজন হিংসুটে কুড়াল দিয়ে গাছটা কেটে ফেলে, সোনার সিঁড়ি ভেঙে দু-টুকরো হয়ে যায়। ফলে বাকি নয় ঘর নামল না, স্বর্গে যাওয়ার পথ বন্ধ হলো। আকাশের দলপতি ওই সাতটি নীড় বা শিকড়ের সঙ্গে এসে মিশে যাবার, যাযাবর অতীত ভোলার নির্দেশ দিলেন। এইভাবে ‘সি’ মায়ের সন্তান হিসেবে জন্ম নিল খাসি জাত। এরপর এলো পশ্চিম থেকে আগত আরেক দল। তারা মিশে গেল পূর্বোক্তদের সঙ্গে। সমস্যার নিদান মিলবে মহাজ্ঞানী উ-শিলংয়ের কাছে। তাঁর কাছে গেলে তিনি জানান, আরেক পাহাড়ে থাকেন এক জাগ্রত ঈশ্বর, যিনি মানুষ ও জীবদের বন্ধু। তাঁর মেয়ে লা পা সিনতিউর নির্দেশে নংক্রেমে প্রতিবছর হয় নাচ-গানের উৎসব। লোক বাড়লে এই পাহাড়ের নাম হয় শিলং। এই মোটামুটি খাসি জাতির উদ্ভব এবং শিলং শহর পত্তনের মিথ। মিথ-বিশেষজ্ঞরা বলেন – মিথ পৃথিবী সৃজনের গল্প, এর চরিত্রেরা দেবতা বা প্রায়-দেবতা। তাঁরা বলছেন – মিথ পৃথিবী সৃজনের ব্যাখ্যাতা, মিথ ধর্মের অংশ, জানায় ঈশ্বর কীভাবে ঘটনা ঘটান। Stephen Jay Gould তাঁর Rocks of Ages-এ বলেন, 888sport apk এককালে প্রাকৃতিক পৃথিবীর বস্ত্তসত্যের বিবরণ দিয়েছে, ঘটনা ব্যাখ্যা করেছে। তার আগে ধর্ম মানব উদ্দেশ্য, অর্থ, মূল্যবোধকে তার মতো করে জানান দিয়েছে। (Myth – Robert A. Segal) মানুষে মানুষে বিরোধহীনতা, শান্তির রাজত্ব, মনের মালিন্যে ভরে যায় দুঃখে। খাসি জাতের উদ্ভব, সোনার সিঁড়ির দু-টুকরো হওয়া, আকাশস্পর্শী গাছের ছিন্নতা – এসবকেই বুঝিয়ে দেয়।
কোনো কোনো পাঠকের মনে পড়তে পারে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়-রচিত হাঁসুলী বাঁকের উপকথা 888sport alternative linkে বর্ণিত কাহারদের উদ্ভবের মিথ। আমাদের আলোচ্য 888sport alternative linkটিতে অন্যত্র বলা হয়েছে, খাসি জয়ন্তিয়া পাহাড়ে তিনটি রাজবংশই শুধু ঈশ্বরজাত আর আছে একাধিক আদিমাতার কথা। (পৃ ৭৪) এর থেকে বোঝা যাবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা, মাতৃসূত্রী সমাজব্যবস্থার কথা। এর আগের পৃষ্ঠায় আছে এক রহস্যময়ী 888sport promo code ‘লা পা সিনতিউ’র রাজবংশ প্রতিষ্ঠা ঘোষণার কথা। (পৃ ৭৩) পরে পাব এক গোষ্ঠীর আদিমাতা ইয়াও বেইয়ের কথা (পৃ ১২৮), দেবতাদের বাজারের কথা। এসব অনুষঙ্গে মিলে রক্ষাকর্তা (উব্লেই নংবু), স্রষ্টা (নংখলাও), বিশ্বসত্তা (নংসেই), অস্তিত্বের (নংপিন্নলং) প্রসঙ্গ। (পৃ ১৪৭) যেহেতু অনগ্রসর শিক্ষাবঞ্চিত মানুষ, তাই খাসিরা নানা দেবতায় বিশ্বাস করত, যেমন – বিপদতারিণী (তাইরুত), রাজ্যদেব (উব্লেই মুলুক), জলদেব (উব্লেই উমতং), ধনদেবী (উব্লেই লংস্পা), মঙ্গলদেব (উব্লেই বাসা স্নং), মহামারি দেব (কা দুবা, কাপ্রাই), সর্পদেবী (উ-থেলন) প্রমুখ। (পৃ ১৪৮-১৪৯) তাছাড়া আছে মৃত্যুতে প্রাণ (উ-মইনা), শরীরের খাঁচা (কাপুড-রু) প্রভৃতি প্রসঙ্গ। (পৃ ১৮৩) লেখিকা অন্যত্র বলেছেন – উকসুইতের ভুতুড়ে নিশ্বাস, মন্ত্রপূত কাকিয়াদভেজা চালের কথা। (পৃ ২১১) হাঁসুলী বাঁকের উপকথায় কাহার সৃজন মিথ ছাড়াও ছিল কর্তাবাবা ও তার বাহনের মিথ, অপদেবতা, ইন্দ্র, রাম, রাবণ, বাণ গোঁসাই, সাপ, উকুনের কথা। এ-888sport alternative linkেও কিছু বিচিত্র বিশ্বাস, সংস্কার, মিথের কথা বললাম। একটা কথা বলতে চাই। কোনো কোনো ঔপন্যাসিক প্রাচীন মিথের মহিমাকেই 888sport alternative linkে উপজীব্য করে তুলতে চান। তারাশঙ্কর এবং অঞ্জলি কেউই তা চাননি। শুধুমাত্র আরণ্যক মানুষগুলির শিকড়-সচেতনতা বোঝানোর জন্য অঞ্জলি এসব মিথ ও বিশ্বাসের দেবতা, উপদেবতার অবতারণা করেছেন।
এ-888sport alternative linkে ঈশ্বর উপাসনার কথা আছে, মৃত্যু অনুষ্ঠানে ধর্মীয় কৃত্যের কথা আছে, ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা আছে, আদিম ধর্মবিশ্বাসের কথা আছে, মন্ত্রপূত চালের কথা আছে – উদ্দেশ্য খাসিজীবনের আদি বৈশিষ্ট্যগুলিকে নানা দিক থেকে তুলে ধরা।
আফ্রিকান ঔপন্যাসিকরা বিষয় হিসেবে বেছে নেন এক আদিবাসী পৃথিবী, অথবা এক ‘transitional’ সমাজ, ফলে মুখ্য হয়ে ওঠে সমষ্টিগত অস্তিত্বরক্ষার কাহিনি। পাঠক লক্ষ করবেন Anthills of the savannah বাদে চিনুয়া আচেবের সবকটি 888sport alternative linkের নায়কেরা, নগুগি ওয়া থিয়ং বা, টি এম আলুকো বা নুরুদ্দিন ফারার 888sport alternative linkে উপনিবিষ্ট পৃথিবীতে বসবাসের আদিপর্বে পারস্পরিক শান্তিতে বসবাস করত; কিন্তু ধীরে ধীরে সংঘাত শুরু হলো উপনিবেশবাদীদের পৃথিবীর সঙ্গে, তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের সঙ্গে পশ্চিমি শিক্ষা, ব্যক্তিমুখ্য সমাজকাঠামো সরকার এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভোগকেন্দ্রিক প্রথার সঙ্গে, যেসবের থেকে এতদিন তারা বিযুক্ত ছিল। অঞ্জলি লাহিড়ীর 888sport alternative linkটিতে কতকটা এই ধরন লক্ষ করা যাবে। আরেকটি কথা, লেখিকা পূর্ববর্ণিত আফ্রিকান লেখকদের মতো ওই দেশের জাতিকা নন, তাঁর শিক্ষাদীক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতির ধারণা ভিন্ন, কিন্তু তিনি দীর্ঘকালীন তাদের সহযাত্রী।
এই বাংলা 888sport alternative linkটি আমার ভালো লেগেছে। তাই এর রস উপভোগে পাঠকের প্রসারিত আগ্রহের সঙ্গী হব বলে আরো কিছু কথা বলে নিতে চাই। আলোচ্য 888sport alternative linkের লেখিকা পরিচয়ে অঞ্জলির মেক্সিকোর মায়া-অ্যাজটেক সভ্যতার ইতিহাস সম্বন্ধে ‘কৌতূহলী চর্চার’ কথা আছে। তাই লাতিন আমেরিকান সংস্কৃতিচর্চার সূত্রে 888sport alternative link-চর্চার দু-একটি কথা বলি। ইউরোপীয় high culture-এর বিপরীত প্রান্তে লাতিন আমেরিকা ঔপনিবেশিক শাসনে বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্তির জন্য Labyrinth of solitude কাটাতে তাঁরা আধুনিক কৌতূহল বজায় রেখেই Primitive Culture-এ আগ্রহী হন, আফ্রিকান আর্ট, নিগ্রো মিউজিক, black speech তাঁদের পছন্দ হয়। তাঁদের মধ্যে প্রিমিটিভিজম-প্রীতি থেকেই সমকালের ইন্ডিয়ান কমিউনিটির দিকে আগ্রহ বর্ধিত হয়। পেরুর বুদ্ধিজীবী Manuel González Prada জন্ম দিলেন indigenismo আন্দোলনের। Icaza সমাজবাস্তবতাকে ইন্ডোজেনিসমো বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন। ভারতীয় জীবন রূপায়ণে রাজনীতি মিশ্রিত হয়ে একটা মডেল তৈরি হলো, যা সোনার সিঁড়ির উপকথা 888sport alternative linkে আছে। কেচুয়া লোকসংস্কৃতিতে পারঙ্গম Arguedas তাঁর Yawar Fiesta (১৯৪১) 888sport alternative linkে ন্যারেটিভের সঙ্গে আন্ডিয়ান মিথ ও রিচুয়াল মিশিয়ে দিলেন। আরেকজনের কথা বলতেই হবে। তিনি হলেন Miguel Angel Asturias, যিনি ওই একই পথের পথিক, প্রথমে লিখলেন Legends of Guatemala (১৯৩০) এবং তারপর Men of Maize (১৯৪৯) 888sport alternative linkে বিষয় করে তুললেন পুঁজিবাদী বিকাশে এক organic culture-এর ধ্বংস। ‘The originality of this novel was its use of Maya Myths as much to structure the story as to provide a spiritual defense for the Indian community against its white exploiters.’ (The Penguin History of Latin America – Edwin Williamson, p 545.) আমাদের লেখিকার মায়া সভ্যতায় কৌতূহলসূত্রে এ-কথা বোধকরি অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
এবার ভারতীয় প্রসঙ্গ। G. N. Devy বলেন, এথনোগ্রাফি বা ইতিহাসের সূত্রে ভারতীয় ট্রাইবালদের যথাযথভাবে চেনা যাবে না। এই উপমহাদেশে একসময় long distance nomadism চলিত ছিল (যা খাসি জাতির গোষ্ঠী রচনাসূত্রে আমরা এ-888sport alternative linkে পাচ্ছি), অন্যদিকে ননট্রাইবাল জনজাতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ট্রাইবালদের ওষুধ, লোকসংস্কৃতি, ন্যারেটিভ টেকনিক, ধর্মীয় বিমূর্ততা, সংগীত, নৃত্য, থিয়েটার, কৃষিকৌশল বিষয়ে আদান-প্রদান চলেছে। এই আদিবাসীদের সম্পর্কে ডেভি বলছেন, তাঁদের আছে a secular mode of creativity (যা লেখিকা 888sport alternative linkে দেখিয়েছেন), অন্যদিকে আদিবাসী কল্পনা অনেকটা স্বপ্নময় এবং hallucinatory, তারা various planes of existence, levels of time-কে মেনে নেয়। তাই আদিবাসী কল্পনায় মহাসাগর উড়তে পারে আকাশে পাখির মতো, পর্বত সাঁতার দিতে পারে মাছের মতো, বন্যপ্রাণী কথা বলতে পারে মানুষের মতো, নক্ষত্রেরা বিকশিত হয় গাছপালার মতো। আদিবাসী স্রষ্টা emotion and the narrative motif-এর অনুষঙ্গকে মেনে নেয়। তাছাড়া এ-888sport live football প্রধানত মৌলিক, অবশ্য এখন কিছু কিছু লেখ্যরূপ গড়ে উঠছে। (Painted Words – Ed. by G. N. Devy, ভূমিকা) মৌখিক গল্পগাছা, গান, ছড়া আমাদের এ-888sport alternative linkে ছড়িয়ে আছে আদ্যন্ত, মানুষ স্বপ্নদ্রষ্টা, মানুষ তার আদিম জীবনকে একালেও মিশিয়ে ভাবতে চায়।
কুড়িটি অধ্যায় সমন্বিত ৩২৬ পৃষ্ঠার এই 888sport alternative linkটি আসলে খাসি জাতির উদ্ভব-বিকাশ সংক্রান্ত, পটভূমি খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়কেন্দ্রিক। লেখিকা বলেছেন, ‘ষাটের দশক থেকে আশির দশকের সময়সীমায় আমার এই কাহিনি সীমাবদ্ধ। এই সময়ের মধ্যে মেঘালয়ের চালচিত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। ১৯৭৯-এর রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিক্ষিপ্ত হত্যা, অপহরণ ইত্যাদি বাদ দিয়ে বর্তমানে সেখানকার রাজনৈতিক বাতাবরণে অনেকটা স্থিতাবস্থা দেখা দিয়েছে।’ স্থিতাবস্থা এসেছে কি আসেনি সে-প্রশ্নে যাচ্ছি না, তবে নানা সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিক সংঘাত ও সংকট এসেছে এ-888sport alternative linkে। লেখিকা ভালো করেই জানেন, তিন দশকের ইতিবৃত্ত উপস্থাপনাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে, ইতিবৃত্তকে বাঁধতে হলে প্রয়োজন একটি ব্যক্তিজীবনের গল্প। এ-ধরনের এপিক-গুণান্বিত 888sport alternative linkে কোনো কোনো লেখক অবশ্য একাধিক ব্যক্তির কাহিনিকেও হাজির করে থাকেন। এখানে রাপলাং এই ব্যক্তিক কাহিনির প্রধান পুরুষ চরিত্র, যে ভিনদেশের ‘কেমন তরো’ ছেলে। চাষ করলেও অন্য চাষিদের সঙ্গে তার অমিল। রাপলাং গানে বিভোর। ও হলো জোয়াই দেশের লোক, যেখানকার মানুষ গানপাগল – বেহালা, গিটার, দোতারা বানায়; গান গেয়ে চলে দেশে-দেশান্তরে। আর সে ‘সবার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।’ তবে ‘কাজের চেয়ে স্বপ্নটাই দেখে বেশি’। শিলংয়ে থাকতে ব্যবসা করত, মনে সংস্কার নেই, জাতপাতের বালাই নেই, সবার হাতেই খায়। মহাজনরা যখন আলুচাষিদের ঠকায়, তখন ব্যথিত ক্ষুব্ধ মানুষগুলিকে সান্ত্বনা দেয় – ‘দিন নিশ্চয়ই একদিন বদলাবে।’ দ্বিতীয় অধ্যায়ে দেখব, নির্বাচনী সভা বসেছে লিংডো বাড়িতে, রাপলাংও আছে ভিড়ের মধ্যে। গ্রামের লোকের রাজনৈতিক সচেতনতা তাকে মুগ্ধ করে। গ্রামের ছেলেদের নিয়ে পাহাড়-শীর্ষে বেড়াবার সময় দেবভূমির পাশে থিরিশিয়ানাম্নী যুবতীকে দেখে তার ভালো লেগে যায়, তাকে সিনতিউ পাতায় খোবর বা দূরবার্তাবাহী ফুল উপহার দেয়। একদিন সে নিজেই থিরিশিয়ার বাড়িতে আসে, আলাপ করে মায়ের সঙ্গে, অল্পবয়সীরা তার পরিচিত। আত্মভোলা গিটারে সুর তোলা রাপলাংয়ের সঙ্গে প্রেমের গভীরতা, পারস্পরিক জীবনকথা বিনিময়, উদ্বেলতা। তৃতীয় অধ্যায়ে দেশজোড়া, পাহাড়জোড়া স্বাধিকারের দাবির উত্তেজনা, সেখানেও রাপলাং। তার বন্ধু অঞ্জন, বামপন্থী, বাম মানসিকতা রাপলাংয়ের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। ষষ্ঠ অধ্যায়ে রাপলাংয়ের আলুচাষে সাফল্য, সে কিছুতেই মহাজনের ফাঁদে পা দিতে চায় না। রাপলাং তার গল্পের ঝুলি, গানের ঝুলি নিয়ে আসর জমায়, তিরত রাজার কাহিনি বলে, তারপরই মানুষের খেপে ওঠার কথা বলে। সপ্তম অধ্যায়ে লিংডো বাড়ির মেয়ে থিরিশিয়াকে ঘরে নিয়ে আসার কথা। পারস্পরিক গান, হাতে আংটি পরিয়ে দেওয়া, বিয়েতে পরিবারের আপত্তি। অষ্টম অধ্যায়ে ধর্মযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে চায় রাপলাং। নবম অধ্যায়ে থিরিশিয়াকে অন্যত্র বিয়ের কথায় তার আপত্তি। দশম অধ্যায়ে লুংকে নিয়ে বাড়ির লোকের অসাক্ষাতে থিরিশিয়া চলে আসে রাপলাংয়ের ঘরে। এবার রাপলাং বাজারে দোকান দেয়, মুদির জিনিস, ওষুধপথ্য, তাদের দাম্পত্যের সূচনা। অঞ্জনের সঙ্গে থিরিশিয়ার আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। একাদশ অধ্যায়ে থিরিশিয়া বিয়ের পর একা বাড়ি ফেরে। পাড়াপড়শীর ঘরেও যায়। ল্যামবকের মরার খবর পেয়ে রাপলাংও ছুটে আসে শিলং থেকে। দ্বাদশ অধ্যায়ে রাপলাংয়ের ছেলের জন্ম। ছেলের নাম দেওয়া হয় – লুম সাই বা আলোর দূত। চতুর্দশ অধ্যায়ে বাজার মন্দা বলে রাপলাংয়ের দুশ্চিন্তা। তবু চারপাশের মানুষ প্রতিবাদে তৎপর বলে উদ্দীপনা। থিরিশিয়া রাপলাংকে চিঠি লেখে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাপলাং এসে থিরিশিয়া ও তার বাচ্চাকে নিয়ে যেতে চেয়েও পারে না। এদিকে ভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালার তাগিদ। অঞ্জনের সঙ্গে রাজনৈতিক কথাবার্তায়, রসিকতায় কিছুটা শান্তি। সপ্তদশ অধ্যায়ে থিরিশিয়া বাচ্চাকে নিয়ে এসে দারিদ্রে্য পড়ে। এবার থিরিশিয়া মেয়েদের সংঘ গড়তে, দাম্পত্য নিরাপত্তা রক্ষা করতে উদ্যোগী হয়। ঊনবিংশ অধ্যায়ে নেপালি বস্তি পোড়ানো, থিরিশিয়ার আতঙ্ক, রাপলাং দ্রুতগতিতে বাজারের দিকে গিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের শান্ত করতে চেষ্টা করে। মার খায়। রাপলাং অঞ্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে পালটা প্রতিরোধ সংগ্রামে নামতে চায়। রাপলাং বউকে বলে – ‘আমি বড় ক্লান্ত।’ এত মৃত্যু, ঘর পোড়ানো, নৃশংসতা দেখে তার ভেতরের পাখিটা যেন আর ডানা নাড়ে না। রাপলাং বন্ধুদের অনুরোধে সজীব হয়, গান ধরে। সংঘবদ্ধ হলে যে উগ্র জাতীয়তার গুন্ডামি, সমতল বিদ্বেষ কমানো যাবে তা বোঝে। 888sport alternative link শেষ হয় – গিটার কাঁধে, রাপলাংয়ের ঘরের বাইরে আসায়। এই গল্পটিতে আমরা রাপলাং চরিত্রের প্রেমিকসত্তা ও সাংগীতিক অনুপ্রেরণার সত্তাকে যেমন পাই, তেমনি রাজনৈতিক সচেতনতার দিকটাও পাই। পাঠক লক্ষ করবেন, রাপলাং চরিত্রের এই ত্রিবিধ বৈশিষ্ট্য কোনোটিই অতিরিক্ততা পায়নি। লেখিকা এই তিনের মধ্যে একটা ভারসাম্য রচনা করতে সমর্থ হয়েছেন। থিরিশিয়া চরিত্রের সমাজসচেতনতা কিছুটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও তার প্রেমিকাসত্তা, ব্যক্তিসত্তা বড় করে তোলা হয়নি। এটা সম্ভব হয়েছে লেখিকার অভীপ্সিত পরিকল্পনার জন্য। লাতিন আমেরিকান ঔপন্যাসিক ইকাজা যেমন করে সমাজবাস্তবতাকে ইন্ডিজেনিসমোর সঙ্গে মিলিয়ে দেন, অঞ্জলি লাহিড়ীও তেমন করে সমাজবাস্তবতাকে খাসি জনজীবনের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেন। গান, ছড়া, নাচ, উৎসব হয়ে ওঠে এই দুয়ের যোগসূত্র।
এখানে বলে নেওয়া দরকার – সমাজবাস্তবতার পরিসর কিন্তু প্রসারিত। একদিকে তা যেমন ব্যক্তিকে ঘিরে যে-সমাজ, তার সংস্কার, অর্থনীতি, পারিবারিক রীতিনীতি; অন্যদিকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন কোনো সংঘাতে যেতে বাধ্য হয়, অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে সেটিও সমাজবাস্তবতার মধ্যে পড়ে। 888sport alternative linkটি পাঠ করতে গেলে পাঠক লক্ষ করবেন, লেখিকা মোটেই কোনো রোমান্টিক একটি 888sport alternative link রচনা করে পাঠকের কৌতূহল জাগাতে চাননি। দীর্ঘকালীন অভিনিবেশে খাসি-জীবনের রীতি, সমস্যা, সংকটের অন্তর্গত হয়েই 888sport alternative linkটির আবহ নির্মাণ করতে চেয়েছেন। কিছু আলোচনা করা যেতে পারে দুটি পর্যায়ে। 888sport alternative linkটির ভূমিকা থেকেই জানতে পারছি খাসি সমাজ ‘মাতৃসূত্রী’ এবং ‘মা ও ছোট মেয়ের মাধ্যমে সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও ক্রমস্বত্বাধিকারের অধিকারী এরা।’ অবশ্য মেয়েদের ভোটাধিকার নেই। খাসিদের ‘ভূমিব্যবস্থায় মোটামুটি তিনটি ভাগ – ক) পরিবারের নিজস্ব জমি, যা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া, খ) গোষ্ঠীর সমবেত জমি, যা গ্রামভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর সমবেত অধিকারভুক্ত এবং গ) নিজস্ব মালিকানার জমি।’ বোঝা যায়, বাংলা ভূমি বিভাজনের সঙ্গে এর বেশ তফাৎ আছে। খাসিরা প্রধানত কৃষিনির্ভর, কৃষিপণ্য-বিক্রয়নির্ভর। গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে বহিরাগতের সমাদর নেই। শিক্ষাপ্রাপ্ত মানুষরাই সংস্কার, জাতপাতের ভাবনামুক্ত। এদেশের লোক গানপাগল, নিজেরাই বেহালা, গিটার, দোতারা বানায়, গান গেয়ে বেড়ায়। সংস্কার, প্রাচীন লোককথা, প্রবীণের মিথকেন্দ্রিক ধারণা দীর্ঘকাল পর্যন্ত মান্যতা পেয়ে এসেছে। লেখিকা তাদের কিছু খাবারের কথা বলেছেন। যেমন – জাড (খাসি-পোলাও), শুয়োরের মাংস, দিনান্তে চালের সঙ্গে ভুট্টার গুড়, ক্রাইশস্যের দানা মিশিয়ে ভাত, যখন-তখন চা পান, কোয়াই চিবুনো, গেঁজানো আলু, মাছের শুঁটকি, ফানফুটের চাটনি, মাছ পুড়িয়ে খাওয়া, গেঁজিয়ে নেওয়া সয়াবিনের চাটনি, কালো তিলের মতো শস্য নিয়ে মুলোর চাটনি, পান খাওয়া, বাচ্চাদের কলা, জাপানি ছাতা, সবজে তিতকুটে বড় বড় টিট বা মাশরুম, চালের গুঁড়ার ভাপা পিঠে, উনুনের ওপরে ঝোলানো নাড়িভুঁড়ি কেটে লঙ্কাকুচি দিয়ে সুরুয়া, কাকিয়াদ বা মদ খাওয়া, জেমারতে পাতা ও নুন-লঙ্কাসহ ভাত, শুয়োরের ঘিলুর চাটনি, চালের গুঁড়ার পিঠে।
আর আছে ব্যবহার্য উপকরণ – যেমন কাখনুপ (বেতের তিন কোনা ছাতা), তাপম (মাথা 888sport appর আবরণ), কাপলা (থলি), খাবার জিনিস মোড়ার পাতা, মখিউ (কোদাল), মেয়েদের পোশাক জাইনসেম ইত্যাদি।
বিচিত্র জীবিকা, যেমন – মধুর ব্যবসা, আলু নিয়ে শহরে বিক্রি, ভেষজ ওষুধ বিক্রি, মিষ্টিআলুর চাষ, তীর-ধনুক নিয়ে শিকার, শুয়োরের বাচ্চা বিক্রি, মুলো, আলু, লাইশাক বিক্রি, গোবর ও সার বিক্রি, রাস্তা তৈরির কাজ, শুঁটকিমাছ বিক্রি, 888sport appsে আগত নানান সস্তা জিনিস কেনাবেচা, পাহাড় কেটে ধাপ বানানো, ওপরের ঝরনা থেকে জল টেনে আনা ইত্যাদি।
নানা প্রথা, যেমন – রোগ নির্ণয়ে মুরগি বলি দিয়ে নাড়িভুঁড়িতে মন্ত্রপুত চাল, নাচ-গানের উৎসব, মৃত্যু অনুষ্ঠান, খাওয়ার আগে মুরগি বলি, পবিত্র পূজাস্থানে পূজা, ডাইনি বিশ্বাস, ভুতুড়ে বিশ্বাস, গাঁওবুড়োর কাছে ফল পান কোয়াই নিয়ে পরামর্শ, মহাজনি শোষণ, বসন্ত সমাগমে নাচের উৎসব। বংশমর্যাদা রক্ষা এ-অঞ্চলে গুরুত্ব পায় যথেষ্ট।
আসলে লেখিকার অভিপ্রায় খাসিদের নিজের শেকড় চেনার আগ্রহের দিকে গুরুত্ব দান। (পৃ ৬৩) পরে মেঘালয়ের জন্মসূত্রে লেখিকা বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া মানুষ খুঁজতে থাকে তাদের অস্তিত্বের শিকড়। আত্মাভিমান স্বাধিকার বোধ প্রকট হয়ে ওঠে।’ (পৃ ২০৩) আরেক জায়গায় আছে অঞ্জনের মুখে – ‘ছেলেদের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা অনেক বেড়েছে।’ (পৃ ২৩৯)
অনেকগুলো শিলংছোঁয়া গ্রামের নাম আছে। তাছাড়া আছে কত রকমের বিশেষণযুক্ত নদী, নানা নামের পাহাড়, নানা নামের ফুল, কখনো যা সৌন্দর্যবর্ধক, কখনো অন্য কাজে ব্যবহৃত – এগুলো সমাজবাস্তবতার আবহ নির্মাণে কাজে লেগেছে।
সমাজ পরিবর্তনের কথা আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। খ্রিষ্টান বিশ্বাসে, স্বল্পসংখ্যকের মধ্যে ব্রাহ্মবিশ্বাসে, সমতলের মানুষের ভিন্ন রুচির প্রভাবে, ইংরেজি সংস্কারের প্রভাব, 888sport live chatায়নের প্রভাবে (যেমন – নদী বেঁধে হাইড্রেল প্রজেক্ট) সমাজ বদলাচ্ছে। আরেকটা ব্যাপার। খাসি সমাজে আগে যে জীবনবোধ, মূল্যবোধ ছিল তা বদল হচ্ছে। ‘টাকা দিয়ে আজকাল সবকিছু কেনা যায়। এমনকি নেতাদেরও কেনা যায়।’ (পৃ ১৬৫) এর পাশে পাশেই পাই পল রোবসনের Old Man River, কেন্টাকি হোমের গান, মাওয়ের রাজনীতির কথা। কেউ কেউ পুরনো কুসংস্কার ভেঙে খাসিদের আত্মরক্ষায় প্রস্ত্তত করে। আরেক জায়গায় ইস্কট বলে পুরনো খাসিরীতি ধীরে ধীরে পালটাচ্ছে, সমাজে আসছে সামন্তবাদ (পৃ ২১৯)।
সমাজবাস্তবতার অন্যদিকের প্রসঙ্গায়নে লেখিকা অত্যন্ত সচেতন। পৃ ২৬-২৭-এ আছে লিংডো বাড়িতে নির্বাচনী সভা, মানুষের জমায়েত যা আভালাঁশের মতো। তৃতীয় অধ্যায়ে এল শহরে দেশব্যাপী উন্মাদনার কথা। ১৯৫২ সালের ২৭ জুন খাসি, জয়ন্তিয়া, গারো পাহাড়ে জন্ম নিল জেলা পরিষদ সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায়। অসমিয়া ভাষাকে জোর করে এসব পাহাড়ি অঞ্চলে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, প্রতিবাদও ধ্বনিত হচ্ছে। নেতারা বলে, খাসি পাহাড়ে পঁচিশটা দেশীয় রাজ্যের কথা, ইংরেজি ভাষা শেখার আগ্রহের কথা। চতুর্থ অধ্যায় শুরু হয় লাগাতার জমায়েত, মিটিং-মিছিল, পদযাত্রার কথায়। নিজেদের সরকার গড়ার দাবির কথা। এখানে কৌশল করে লেখিকা খাসি জাতির উদ্ভবসংক্রান্ত মিথটি পাসান মারফত বলে নেন। পঞ্চম অধ্যায়ে আসছে নেতা ফিজোর কথা, যিনি পাহাড়ি জাতির স্বকীয়তা নিয়ে কথা বলেন রেভারেন্ডের সঙ্গে, তার কথা থেকে সংবিধান তৈরির সময় থেকে ইতিবৃত্ত, স্বাধীন নাগাল্যান্ডের জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ১৯৫১-তে নাগা গ্রামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঝাঁপিয়ে পড়া, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি, রাজনীতি, মেঘালয়ের সাতঘরের মানুষকে সম্মিলিত করার জন্য ফিজোর স্বপ্ন প্রভৃতি আছে। পরের অধ্যায়ে ১৮৬১ থেকে ১৮৬৩-র রাজনৈতিক আন্দোলনের কথা। বর্মী রাজারা বারবার অসম আক্রমণ করেছে, মানুষ পালিয়েছে নানা অঞ্চলে। তিরত রাজার রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা পাই রাপলাংয়ের মুখে। গল্প পিছিয়ে যায় ১৮৩২-এ। এখানে লক্ষণীয়, লেখিকা এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ইতিবৃত্তকে বলছেন কোনো একজন ন্যারেটরের মারফত নয়; বরং নানাজন বলছে, ফলে বর্ণিত বিষয় পাচ্ছে নানান স্বাদ, তার সঙ্গে অধ্যায়গুলিতে অন্য প্রসঙ্গ থাকায় স্বাদবাহী হয়ে উঠেছে পাঠকের কাছে। এই কারুকৌশল-চেতনা প্রশংসনীয়। বর্ডারের লোকদের নানা ব্যবসা, ঘুষ, বিপন্নতা, ব্যক্তিগত জীবনের কথা আছে পৃ ১৪৩-এ। পৃ ১৬০-এ পাঠক জানতে পারেন নগরায়ণে মানুষের উদ্বাস্ত্ত হওয়ার কথা। দ্বাদশ অধ্যায় শুরু হয় ইন্দিরা গান্ধীর হাতে মেঘালয় উদ্বোধনের কথায়। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারির এই অনুষ্ঠানের সূত্রে বলে নেন নানা ধাঁচের নেতার মঞ্চে উপবেশনের কথা, মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন সাংমার কথা। এখানে পাই সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল বাস্তবায়নের রূপকার বাঙালি আইনবিশারদ নীরেন্দ্র মোহন লাহিড়ী, সম্ভবত যিনি ছিলেন লেখিকার স্বামী। পৃ ২৪৬-এ আমরা পাচ্ছি অসমিয়া উডখার মারছে বাঙালি উডখারদের। রাপলাং থিরিশিয়ার সংসারে শহুরে গন্ডগোল আতঙ্ক ছড়ায়। ষোড়শ অধ্যায়ে আছে অসময়ের উদীয়মান কিছু বিপ্লবী নেতার সঙ্গে মেঘালয়ের যুবকদের সাক্ষাৎকারের কথা। বিপ্লবীরা বলে, তারা দুমুখো সাঁড়াশির মতো আন্দোলন করবে – দিল্লির হাত থেকে সশস্ত্র বিপলব মারফত পূর্বাঞ্চলের জন্য স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রযন্ত্র আদায় করবে এবং বহিরাগতদের ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে ভূমিপুত্রদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তুলে দেবে। এ-প্রসঙ্গে তারা মিজোরামের উদাহরণ তুলে ধরে, যেখানে আবেদন-নিবেদনের ব্যর্থতার পর মিজো ন্যাশনাল ফেমিন ফ্রন্ট গেরিলা যুদ্ধ চালাল। উদাহরণ দিলো নাগাল্যান্ডের, সেখানে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই চলেছে। সপ্তদশ অধ্যায়ের মাঝামাঝি পাই মেঘালয়ে নতুন বিপ্লবী দলের জন্ম (এইচএনএলসি), স্লোগানে সাতঘরের দেশ, বিদেশি ও উডখাররা অর্থাৎ সমতলের ভদ্রলোকরা দেশ ছাড়ো। জনতার মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদ জাগাতে পারলে ব্যবসায়ীদের, মন্ত্রীদের লাভ। অন্যদিকে তিন লাখ উদ্বাস্ত্ত মেঘালয়ের সীমান্তে। উডখারদের দোকানে ইট পড়ে, মাল ছিনতাই হয়, মস্তানের দল জন্ম নেয়, উডখারদের ঘরবাড়ি জলের দরে বিক্রি হতে থাকে। ফলে একশ্রেণির চাষি কয়লাপতি হলো, চার-পাঁচটা নতুন মডেলের গাড়ি হলো, তাদের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হতে লাগল দামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। অতীত ঐতিহ্য, সকলে মিলে থাকার ঐতিহ্য নষ্ট হতে লাগল। এরাই নির্দেশ দিলো খাসি মেয়েদের, উডখার-স্বামী রাখা চলবে না। রাপলাংয়ের বউ থিরিশিয়া মেয়েদের সংঘ গড়ে এসবে বাধা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু ভেদাভেদ বেড়ে গেল। এই উগ্রতার মধ্যে কমিউনিস্টকর্মীদের জোর কমে গেল। জাতিবিদ্বেষ বাড়তে লাগল ক্যান্সার বিষের মতো। দলিপ সিং মাস্টার মশাইয়ের বিরাশি বছরের জন্মদিনে আগত বন্ধু, বিভিন্ন ধরনের শুভেচ্ছাদাতা অল্পবয়সী বন্ধুদের সমাগমে বিচ্ছিন্নতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, খ্রিষ্টান মিশনারিদের অবদান, দক্ষিণ আমেরিকার মায়া সভ্যতা ধ্বংস করে সুসভ্য মানবসমাজ গঠন, ব্রাহ্ম প্রচার, ইংরেজ সরকার-প্রেরিত মিশনারিদের দ্বারা রোমান হরফে খাসি ভাষা শেখার প্রচলন, ধর্মভাবনার ব্যাপক পরিবর্তন, খাসি সমাজে ব্রাহ্মজীবন রায় ও তাঁর অনুগামীদের প্রয়াস, খাসি 888sport live footballভান্ডারের পরিপুষ্টি, গীতার খাসি 888sport app download apk latest version, পুরাণকাহিনির 888sport app download apk latest version, সেংখাসি নামে জাতীয়তাবাদী সংগঠনের প্রতিষ্ঠা, খাসি স্বার্থ সংরক্ষণে লড়াই, খাসি জয়ন্তিয়া পাহাড়ে শিক্ষাব্যবস্থায় অসম সরকারি হস্তক্ষেপ, ব্রাহ্ম সংগীতের খাসি ভাষায় 888sport app download apk latest version ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে, যা খাসি জীবনকেন্দ্রিক সমাজ-সংস্কৃতি রাজনীতির কিছু ভালো কিছু মন্দ, কিছু ঐক্যবিধায়ক, কিছু নিন্দাজনক প্রসঙ্গ হাজির করে। এই ব্যাপক বিবরণ থেকে পাঠক খাসি সমাজের দুই শতাব্দীব্যাপী জীবনের যাবতীয় সামাজিক বাস্তবতার প্রসঙ্গগুলি পাবেন। লেখিকার স্বচ্ছ ধারণা, সুশৃঙ্খল চিন্তা, সমাজবাস্তবতা উপস্থাপনার নৈপুণ্য আমাদের বিস্মিত করে বললে অত্যুক্তি হয় না।
আমরা এটাও লক্ষ করব – খাসিদের জীবনে পরিবর্তনপরম্পরা আনায় খ্রিষ্টান মিশনারি, সাম্যবাদী প্রয়াস, ব্রাহ্মসমাজ, আঞ্চলিক দলের রাজনীতি, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সমতলের ভদ্রলোক বিরাগ প্রভৃতি কাজ করেছে, যা বলা হয়েছে নানা ঘটনা, নানা সংলাপ, নানা ব্যক্তির কথা ও জীবনাচরণের মাধ্যমে। লেখিকা নৈর্ব্যক্তিক ভঙ্গিতে এসবের সক্রিয়তা তুলে ধরেছেন। এই ভারসাম্য বজায় রাখা সত্যই প্রশংনীয়।
888sport alternative linkের শেষাংশে আমরা দেখব রাপলাং উডখারবিরোধী মস্তানিতে বাধা দিতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়, অঞ্জন বিস্তর মার খায়, অমিতাভ খুন হয়, তারা দুজনেই লক্ষ করে – ‘মানুষগুলো যেন মাস হিস্টিরিয়ায় ভুগছে।’ খাসিরা স্বপ্ন দেখেছিল স্বর্গ থেকে একদা সাত ঘর নেমে এসেছিল, এবার বাকি নয় ঘর নেমে এসে শান্তি ফিরিয়ে দেবে। ক্লান্তি ও হতাশা জাগে। রাপলাং ও তার অনুগামীরা যাত্রা করে আজন্মলালিত পবিত্র অরণ্যের দেশে। নবউত্থিত সভ্যতা সিমেন্ট কংক্রিট পাথরের জঙ্গল করছে, সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু রাপলাংরা ধর্মবিশ্বাসী, তাই ধর্মাচরণ পথেই মঙ্গল হবে মনে করে। কিন্তু শিক্ষা পেলে কী হবে, এ নিয়ে সংশয়। নদীর জল বিষাক্ত করা হচ্ছে, মাছ ধ্বংস করছে, প্লাসিক নদীর গতিরোধ করছে। রাপলাং ভাবে, এসব কথাই সে প্রচার করবে মানুষের মাঝে – কথায় ও গানে গানে। সে স্বপ্ন দেখে, খাসি সমাজে শান্তি ফিরবে, সোনার দেশ হবে মেঘালয়। গিটার-কাঁধে স্বপ্নাচ্ছন্ন অবিচলিত রাপলাং বেরিয়ে পড়ে স্ত্রী-পুত্র-পরিবারের বন্ধন ছেড়ে পাইন বনের পথে।
888sport live footballের ইতিহাসের তন্নিষ্ঠ পাঠকমাত্রই জানেন, রুশ 888sport live footballে ত্রিশের দশকে positive hero সৃজনের ঝোঁক এসেছিল। সদর্থক নায়ক নির্মাণ রুশবাস্তবতার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবদান হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক উপযোগবাদী ও সদর্থক নায়ক রচনাবিশ্বাসী বামপন্থী লেখকদের কাছে ত্রিবিধ কারণে – রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ, 888sport live football-ধারণা, নৈতিক মূল্যবোধের সমন্বয় সাধনের কথা মাথায় রেখে (এ-সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা আছে The Positive Hero in Russian Literature – Refus W. Mathewson, jr. বইয়ে)। রাপলাং চরিত্রটির ক্রমবিকাশ উপস্থাপনার এই সদর্থক নায়ক নির্মাণ লক্ষ্যে ছিল বলে মনে হয়।
888sport alternative linkটির নাম – সোনার সিঁড়ির উপকথা। ‘উপকথা’ কথাটির অর্থ নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ বলেন রূপকথা হলো অদ্ভুত ঘটনা কল্পনাযুক্ত উপকথা, কেউ বলেন এটি ছেলে-ভোলানো গল্প, পশুপাখির গল্প উপকথা। অন্যদিকে বলা হয়, কথা হলো কাহিনি, সংক্ষিপ্ত কথা বা কথার সদৃশ হলো উপকথা। বঙ্কিমচন্দ্র, ইন্দিরা, রাধারানী প্রভৃতি লেখাকে উপকথা আখ্যা দেন। তারাশঙ্কর তাঁর হাঁসুলী বাঁকের উপকথা যখন লেখেন, তখন তিনি ‘উপকথা’ শব্দের অর্থকে অনেক প্রসারিত করে দেখেন। এক সমালোচক বিচার করে বলছেন – ‘একটি কল্পিত সামগ্রিক কাহিনি যেখানে ধর্ম, সংস্কার, লৌকিক ও অলৌকিক মিলেমিশে একাকার হয়েছে ‘উপকথা’ শব্দের এটি ছিল ঔপন্যাসিক – অভীষ্ট অর্থ।’ (উপকথার কথক সুচাঁদ-তপতী মুখোপাধ্যায়, প্রসঙ্গ হাঁসুলী বাঁকের উপকথা গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত 888sport live) এই সমালোচক আরেকটি ব্যাখ্যাও দেন। তা হলো – ভদ্র মানুষের জীবন হলো ‘কথা’ এবং ভদ্রেতর মানুষের কাহিনি ‘উপকথা’। অঞ্জলি লাহিড়ীর এই 888sport alternative linkটি খাসি জীবনের ধর্ম, সংস্কার, লৌকিক ও অলৌকিক মিলিত-মিশ্রিত রূপ, আর রাপলাং থিরিশিয়া প্রভৃতি চরিত্র ভদ্রেতর সম্প্রদায়ের। এই দুটি দিক থেকেই উপকথা শব্দটি 888sport alternative linkের বিষয় বিচারে সুপ্রযুক্ত। তারাশঙ্কর তাঁর 888sport alternative linkটি শেষ করেন এভাবে – ‘উপকথার কোপাইকে ইতিহাসের গঙ্গায় মিশিয়ে দেবার পথ কাটছে … নতুন হাঁসুলী বাঁক।’
অন্যদিকে অঞ্জলির 888sport alternative link শুরু হয় শিলং বাজারে আগত গ্রামীণ চাষিদের মহাজনি শোষণ ও প্রতারণায়। তারপর অরণ্য প্রকৃতি, আদি মাতা ইয়াও বেই যিনি গুহা থেকে বেরিয়ে রামধনুর রং-তুলি দিয়ে রঙিন করতেন অর্কিডের পাপড়ি। দ্বিতীয় অধ্যায়ে আদিবাসী মানুষের জমায়েত – একেবারে ষাটের রাজনৈতিক প্রসঙ্গ। কিন্তু পাশেই থাকছে দেবভূমির বর্ণনা। রাপলাং ও থিরিশিয়ার প্রেমের অঙ্কুরোদ্গম, সদ্য জাগ্রত পাহাড়ি মানুষের বিদেশি ভাষা না-মানার জেহাদ, তারপর জমিব্যবস্থা। চতুর্থ অধ্যায় শুরু শিলং শহরে লাগাতার জমায়েত, মিটিং, মিছিল, পদযাত্রায়। এই অধ্যায়েই পাসান জ্যাঠার মুখে খাসি সমাজ উদ্ভবসংক্রান্ত মিথ বিস্তারে বর্ণিত। ধর্ম বা সংস্কার বা পূজা বা লোকনৃত্য চলছে অলৌকিকের পাশে পাশে। মিথের বর্ণনা গানে, কথা বৃত্তান্তে, বিশ্বাস নানা ঘটনায় বিধৃত। অতএব আমরা বলতে পারি, তারাশঙ্করের 888sport alternative linkটি থেকে এটির পার্থক্য আছে। এখানে উপকথাকে ইতিহাসের গঙ্গায় মিশিয়ে দেওয়ার বদলে আছে উপকথা (মিথ, ধর্ম, সংস্কার, কাহিনি, প্রথা অর্থে) ও ইতিহাসের পাশাপাশি চলা গোড়া থেকে শেষ পর্যন্ত – মানুষের আচার-আচরণে, কথায়, গানে, ছড়ায়।
888sport alternative linkের নায়ক রাপলাং এবং 888sport alternative linkের লেখক অঞ্জলি লাহিড়ী দুজনেই নিরন্তর স্বপ্ন বুনে চলেন। স্বপ্ন বোনাই সৃজন888sport live footballের প্রাণবিনদু। এ-কথা সবার খেয়াল থাকে না। বিষয়গত নতুনত্বের জন্য, বিশেষ জনজীবনের উদ্ভব থেকে রাজনৈতিক সাম্প্রতিকতা পর্যন্ত ভারসাম্য বজায় রেখে উপস্থাপনা, সর্বোপরি মানবদরদের জন্য 888sport alternative linkটি অভিনন্দনযোগ্য।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.