মাহমুদ আল জামান
কে. জি. সুব্রহ্মণ্যন ভারতবর্ষের আধুনিক ও অগ্রণী 888sport live chatীদের অন্যতম। তিনি ছিলেন প্রভাবশালী শিক্ষক, 888sport live chatকলা-বিষয়ক গ্রন্থের লেখক, লোক888sport live chat ও উপজাতীয় 888sport live chatের বিশেষজ্ঞ।
888sport appsের কয়েকজন 888sport live chatী বরোদায় তাঁর কাছে চিত্রবিদ্যা শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। প্রভাবশালী এই শিক্ষক সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের দীক্ষা দিয়েছেন। 888sport live chatের প্রকরণের অভিমুখীনতা ও ঐতিহ্য-জিজ্ঞাসায় এই শিক্ষা তাঁদের সর্বক্ষণ দীপিত করেছে। তাঁদের বৈশিষ্ট্য ও চিত্রভাষা হয়ে উঠেছে আধুনিক বোধের প্রকাশে উজ্জ্বল। যদিও তাঁদের সৃজন-কল্পনায় ও চিত্রকর্মে কখনো-সখনো কে. জি. সুব্রহ্মণ্যনের প্রভাবকে প্রত্যক্ষ করা যায়, তবু তাঁরা নানাভাবে তাঁদের কর্মের দ্বারা এদেশের চিত্রকলাকে সমৃদ্ধ করেছেন। এই 888sport live chatীগোষ্ঠীর কয়েকজনের 888sport sign up bonusচারণা ও কথোপকথন থেকে জানা যায়, তাঁর 888sport live chat ও 888sport live chatাদর্শ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন; লোকজীবনের নানা অনুষঙ্গ, জাতীয় বোধে উজ্জীবন ও চরিত্রনির্মাণ কোন পথে সার্থক হতে পারে – এ-সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করতেন। অন্যদিকে ঐতিহ্যের মর্মও তাঁর কাছে প্রণিধানযোগ্য ছিল। শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত শক্তি ও সৃজনের কোন অভিমুখ তাঁর সম্ভাবনার দিগন্তকে উন্মোচিত করবে, শিক্ষার্থীর 888sport live chatচৈতন্যে গভীর হবে – এ নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণশক্তি ছিল গভীর। বিদ্যার্থীকে তিনি সেভাবে চালনা করতেন। এভাবেই তিনি এই শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। যাঁরা সান্নিধ্যে এসেছিলেন তাঁরা কোনোদিন তাঁর 888sport live chatাদর্শকে ভোলেননি। সেজন্য সুব্রহ্মণ্যনের 888sport live chat-দীক্ষার্থীরা তাঁদের সৃজন ও কল্পনায় এই শিক্ষককে মান্য করে নিয়েছিলেন। 888sport apps ও ভারতবর্ষে তাঁর অগণিত ছাত্র রয়েছে।
এই খ্যাতনামা 888sport live chatী সত্তর বছরের চিত্রসাধনার মধ্য দিয়ে যে-স্বকীয় চিত্রভাষা নির্মাণ করেন, তা তাঁর সৃজন-উদ্যানে বিশিষ্ট হয়ে আছে। আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে তাঁর সৃষ্টি হয়ে উঠেছিল গহনতাসঞ্চারী। ভারতীয় লোক-ঐতিহ্যে তাঁর নিমজ্জন হয়েছিল। তিনি লোক888sport live chat ও লৌকিক প্রকরণকে 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে অনুধাবন করতেন। সেজন্যেই সর্বদা নব্য উদ্ভাবনী কৌশল ও বিষয় প্রকরণে ভারতীয় লোক-ঐতিহ্যে তিনি আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। তাঁর বহুকৌণিক চিত্রসাধনায় ও চর্চায় লোক-ঐতিহ্যের পরম্পরা উপেক্ষণীয় ছিল না। প্রারম্ভিক জীবনে বেঙ্গল স্কুলের ধারায় তাঁর অবগাহন হয়েছিল। ছবি অঙ্কন করতে-করতে ও সাধনার অন্তর্মুখিতার চাপে তিনি এই ধারা থেকে বেরিয়ে এলেন। একই বৃত্তে আর আটকে থাকেননি। নানা মাধ্যমে তাঁর আগ্রহ ছিল। আর দিবারাত্রি অজস্র ছবি এঁকে স্বকীয় চিত্রভাষা নির্মাণ করেছিলেন। যুবা বয়সেই শিক্ষক বিনোদবিহারীর 888sport live chatভাবনায় সঞ্জীবিত হয়ে অর্জন করলেন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্টাইল, যা হয়ে উঠেছিল তাঁর নিজস্ব। এই 888sport live chatসৃজনকে ধমনীতে নিয়ে 888sport live chat সম্পর্কে তাঁর ভাবনা নবীন আলোকে উন্মোচিত হয়েছে। এই সৃজন 888sport live chat-শিক্ষার্থীদের জন্য এক আলোকস্তম্ভ হয়ে আছে।
তাঁর সৃষ্ট রেখা বলিষ্ঠ ও সাবলীল। নমিত ও শান্ত মেজাজের হলেও তাঁর সৃষ্টিতে এই রেখাই তাঁর চিত্রভুবনে উজ্জ্বল। 888sport live chatী নিজেও তাঁর সৃষ্টিতে রেখাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতেন। রেখা তাঁর চিত্র উৎকর্ষে হয়ে উঠেছিল প্রাণভোমরা।
রবীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, বিনোদবিহারী ও রামকিঙ্করের যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন সুব্রহ্মণ্যন। অন্তিম বেশ কয়েক বছর কন্যা উমার সঙ্গে থাকতেন বরোদায়; কিন্তু মন পড়ে থাকত শান্তিনিকেতনে। সেজন্য ড্রইং ও লিথোগ্রাফে শান্তিনিকেতনের উদার প্রকৃতি, চেনা বৃক্ষরাজি, তাল ও তমালের প্রগাঢ় নিকুঞ্জ খুবই উজ্জ্বল হয়ে উঠত। শান্তিনিকেতনের উদার প্রকৃতি ও কলাভবন সমস্ত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাঁর ব্যক্তিস্বরূপকে অভ্রময় করে তুলেছিল।
তাঁর চিত্র-সৃজনের দীর্ঘ পথে রয়েছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এক পর্ব থেকে আরেক পর্বের যাত্রায় তিনি অবয়ব গঠনের শৃঙ্খলায় প্রতিটি পর্বেই নবীন উদ্ভাবনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর এসব নিরীক্ষায় প্রাধান্য বিস্তার করে আছে মানুষ। কতভাবেই না তাঁর সৃষ্টিকর্মে এই মানুষ ও কখনো নিসর্গের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হয়েছে।
তিনি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিত্রকলার সকল মাধ্যমে কাজের মধ্য দিয়ে যে-বৈশিষ্ট্য অর্জন করেন তা তাঁকে ভারতবর্ষের শীর্ষ 888sport live chatীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। বিশেষত অ্যাক্রিলিক, তেলরং, মুরাল, আয়না চিত্র, এচিং, লিথো ও দেয়ালচিত্রে তাঁর মতো অজস্র কাজ আর কেউ করেননি। শান্তিনিকেতনে তিনি একটি দেয়ালচিত্র করেন ৯০ বছর বয়সে। এতে তাঁর 888sport live chatবোধ, মনীষা ও ঐতিহ্যবোধ এবং 888sport live chat সম্পর্কে ভাবনা নবীন আলোকে উন্মোচিত হয়েছে। এই সৃজন 888sport live chat-শিক্ষার্থীদের জন্য জীবের দ্যুতির মতো উজ্জ্বল হয়ে আছে।
তার নবতিতম জন্মদিন পালন উপলক্ষে যে-প্রদর্শনী আয়োজিত হয়েছিল তা ছিল নানা দিক থেকে তাৎপর্যময় ও মাত্রাসঞ্চারী। ওই প্রদর্শনীর সকল ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল ভারতের প্রধান শহরগুলোতে। 888sport live chatানুরাগীরা প্রদর্শনীটির চিত্রগুচ্ছের বিষয় ও প্রকরণে মুগ্ধ হয়েছিলেন। 888sport live chatীর সৃজন-কল্পনা এবং শক্তিমত্তা তাঁকে ভারতবর্ষের শীর্ষ 888sport live chatীর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিল।
বছর কয়েক আগে তাঁর একটি প্রদর্শনী হয়েছিল কলকাতার সিগাল গ্যালারিতে। তাঁর শক্তিমত্তা, রেখার প্রাণময়তা ও বিষয়ের বৈচিত্র্য প্রত্যক্ষণ করে খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। বলিষ্ঠ রেখার মধ্যে দিয়ে তিনি গল্প বলার প্রয়াস গ্রহণ করেছিলেন সে-প্রদর্শনীতে।
কে. জি. সুব্রহ্মন্যনের বাল্য ও কৈশোর অতিবাহিত হয়েছিল কেরলের মাহে শহরে। বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত কয়েকটি সাক্ষাৎকারে তাঁর চিত্রকর্মে রেখার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি শৈশবের এই মাহে শহরের পরিবেশ কেমন ছিল সে-কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ছোটোবেলাটা আমার কাছে রূপকথার মতো। সেই সময়ের কথা বলতে গেলে একটা বড়ো গল্পের মধ্যে ঢুকে পড়তে হবে আমাদের। তার আগে একটা কথা বলে নিতে চাই। জীবনের অনেকটা সময় আমার কেটেছে শান্তিনিকেতনে। বাংলার সঙ্গে সে-কারণেই আমার এত নিবিড় যোগ। এই যোগাযোগ আমার কৈশোরোত্তর পর্ব থেকে শুরু হয়েছিল। আমি পারিবারিক সূত্রে একজন তামিলিয়ান। কেরলের পালঘাট অঞ্চলে সেই সময়ে প্রচুর তামিল পরিবার বাস করত। পালঘাটকে বলা যেতে পারে তামিলনাড়– থেকে কেরলে ঢোকার সদর দরজা। কিংবা এভাবেও বলতে পারি, পালঘাট হচ্ছে মালাবার অঞ্চলের একটি তামিল সীমান্তচৌকি। আমার বাবা ছিলেন পালঘাটের লোক। মা ত্রিবাঙ্কুরের এক জমিদার পরিবারের মেয়ে।
শহরটা ছিল অদ্ভুত। ফরাসিদের শাসনে চলত। আকারে তেমন বড়ো নয়। মোটে এক বর্গমাইল আয়তন। ছোটো হলেও মাহে ছিল একটি শুল্কহীন ফরাসি বন্দর-শহর। তবে, সেখানে কোনো নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় সেই শহর দুষ্কৃতিদের কাছে, বিশেষত, হিরে ও রুপো পাচারকারীদের কাছে হয়ে উঠেছিল স্বর্গরাজ্য। এছাড়াও, সেখানে পাওয়া যেত সস্তায় বিভিন্ন ধরনের মদ। শ্যাম্পেন-ট্যাম্পেনও মিলত খুবই কম দামে। মধুর চাক ঘিরে যেমন ভনভন করে মৌমাছি ওড়ে, মাহেতেও তেমনই, সস্তায় মদের লোভে ছিল মানুষের ভিড়। ভাবাই যায় না, সেসময় ওইটুকু একটা শহরে ত্রিশটারও বেশি মদের দোকান ছিল। তার মধ্যে মাত্র পাঁচ থেকে ছটা দোকানে মিলত বিলিতি মদ। কয়েকদিন এই শহরে থেকে, ফুর্তি-টুর্তি করে যে যার মতো চলেও যেত। আসলে, এ সবকিছুই সম্ভব হতো প্রশাসন সেখানে খুব আলগা ছিল বলে। প-িচেরির মতো এখানে ফরাসি শাসনব্যবস্থার মধ্যে থেকেও তলায় তলায় চলত এক ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা-।
সংস্কৃতির প্রচুর আচার অনুষ্ঠান সেখানে নিয়মিত পালিত হতো। থেইয়াম হত। কথাকলিও দেখেছি। অজস্র মন্দির ছিল সেখানে। সেগুলোও আমাকে আকৃষ্ট করত। আকর্ষণের কারণ মন্দিরের গায়ে কাঠের খোদাই, যার মধ্যে ধরা ছিল উন্নত 888sport live chatচিন্তা।’
অভিজাত ও শিক্ষিত পরিবারের সন্তান কে. জি. সুব্রহ্মন্যন মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অধ্যয়ন শেষ করে 888sport live chatী দেবীপ্রসাদ রায় চৌধুরীর অনুপ্রেরণা ও আনুকূল্যে 888sport live chatশিক্ষা গ্রহণ করেন ১৯৪৪-৪৮ সালে বিশ্বভারতীর কলাভবনে।
যৌবনকালে কমিউনিজমের আদর্শে সঞ্জীবিত হলেও পরবর্তীকালে গান্ধীর পথ ও মত তাঁকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে। গান্ধীবাদী রাজনৈতিক কারণে কারাবরণও করেন তিনি। শান্তিনিকেতনে চিত্রবিদ্যা পাঠ করতে আসেন রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর চার বছর পরে। এই সময়ে তিনি গান্ধীর রাজনৈতিক আদর্শে আলোড়িত হলেও পরবর্তীকালে তাঁর জীবন ও মননে ছবি অঙ্কনই হয়ে ওঠে ধ্যান-জ্ঞান। শান্তিনিকেতনে তিন মাস্টারমশাই তাঁর 888sport live chatবোধ ও আদর্শে ছাপ ফেলেন। শান্তিনিকেতনের নিসর্গ, জ্ঞানতৃষ্ণা এবং তিন মাস্টারমশাই – নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও রামকিঙ্কর বেইজ তাঁর চিত্রচর্চার দিগন্তকে প্রসারিত এবং আধুনিক বোধ ও বুদ্ধির দীপ্তিময় পথ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁরা হয়ে ওঠেন জীবনদৃষ্টিতে নানা ধরনের ব্যবধান সত্ত্বেও তাঁর আদর্শ। শান্তিনিকেতনে চিত্রবিদ্যা অধ্যয়নের প্রাথমিক পর্যায়েই তিনি দুই শিক্ষক বিনোদবিহারী ও রামকিঙ্কর বেইজের সৃজন ও চিত্র-সাধনায় আধুনিকতার প্রকাশ দেখে অভিভূত হন ও চিত্রকলার সৃজন-ভাবনাকে কেন্দ্র করে, ভাববিনিময় ও চিত্রচর্চায় আধুনিকতা নিয়ে কথা বলতে-বলতে সখ্য গড়ে তোলেন। শান্তিনিকেতনের লাইব্রেরিও ছাত্রাবস্থায় হয়ে ওঠে তাঁর বিচরণের ক্ষেত্র। তাঁর জ্ঞান ও পঠন-পাঠনের ব্যাপ্তি তাঁকে পাশ্চাত্যের চিত্র-আন্দোলন সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। রামকিঙ্কর বেইজের সঙ্গে ঘুরে-ঘুরে স্কেচও করেছেন। রামকিঙ্করও তাঁকে প্রবল উৎসাহ যেমন দিতেন, তেমনি তাঁর খুঁতগুলোও ধরিয়ে দিতেন।
ভাবতে ভালো লাগে যে, সেই যুবা বয়সে কলাভবনে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি দিল্লিতে এই দুই শিক্ষকের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। সেই সময় এই দুই শিক্ষকের কোনো পরিচিতি ছিল না। তিনি ভাবলেন, বৃহৎ এই দিল্লিতে এ দুজনের প্রতিষ্ঠা ও তাঁদের 888sport live chatকর্ম সম্পর্কে বৃহত্তর অনুরাগী ও 888sport live chat-সমালোচকরা অবহিত হোক। এক সাক্ষাৎকারে সুব্রহ্মণ্যন এ নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন, ‘শান্তিনিকেতনে গোড়ার দিকে খুব স্কেচ করতে ভালো লাগত। কিঙ্করদার সঙ্গে বহুদিন ঘুরে-ঘুরে ছবি এঁকেছি। সে এক অন্য অভিজ্ঞতা। একদিন, কী মনে হলো, কিছু স্কেচ মাস্টারমশাইয়ের কাছে নিয়ে গেলাম। দেখে তিনি বিস্মিত, বললেন – ‘তুমি তো অনেক কাজ করেছ হে!’ উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি ছবির খুঁতগুলোও ধরিয়ে দিলেন। স্কেচে বিষয়গুলিকে আমি যে খুব অনুপুঙ্খভাবে নিয়ে এসেছি, অর্থাৎ ডিটেলিং, সেই প্রবণতার থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিলেন তিনি। আরো বললেন, ‘তুমি তো পেনসিল-পেন দিয়ে ড্র করো না? আমি তোমাকে একটা বড়ো চারকোল দিই। ওটা দিয়ে ড্র করো দেখি -’ এই প্রথম আমি হাতেনাতে বুঝলাম, দুটো মাধ্যমের ভাষা কতখানি ভিন্ন। মাস্টারমশাই সেটা আমাকে প্রথম ধরিয়ে দিলেন। বিনোদদাও ছিলেন আমার জীবনে এরকমই একজন শিক্ষক। আমি সবসময় ওঁর সঙ্গে ছায়ার মতো ঘুরতাম। আর, এটা তো স্বাভাবিকই, শান্তিনিকেতনে ভর্তিই হয়েছিলাম সবকিছু শিখব বলে। কলাভবনে ভর্তির পর দু-এক মাস কেটে গেল। এরই মধ্যে আমার 888sport live chatীবন্ধু জিতেন্দ্রকুমারের বার্তা পেলাম। জিতেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের লোক। ওর কাকা সে-সময় 888sport live chatীদের ছবি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় এক্সিবিশন করতেন। তিনি ছিলেন বিনোদদা এবং কিঙ্করদার কাজের অসম্ভব অনুরাগী। জিতেন্দ্র আমাকে একটা প্রস্তাব দিলো। ওঁদের দুজনের কাজ নিয়ে দিল্লিতে একটা প্রদর্শনী করে এলে কেমন হয়? জিতেন্দ্রর অনেক আত্মীয়ই দিল্লিনিবাসী। আমার বয়স তখন সবেমাত্র কুড়ি। কোনোদিনই যাইনি দিল্লিতে। এমনকি সেখানে আত্মীয়-স্বজনও কেউ নেই। ব্যাপারটা বিনোদদাকে বললাম। তিনি জানালেন, সেখানে তারও পরিচিত কেউ থাকে না। চেনাজানাদের মধ্যে একমাত্র নীরদবাবুই তখন রয়েছেন দিল্লিতে। শেষে বিনোদদা বললেন – তুমি নীরদদাকেই গিয়ে বলো। অতএব, সেই এক্সিবিশনকে ঘিরে আমার প্রথম দিল্লি যাত্রা।
নীরদ সি চৌধুরীকে আমি আগে চিনতাম না। গিয়ে দেখলাম, এমনিতে ছোটখাটো মানুষ হলে কী হবে, ব্যক্তিত্ব খুবই উজ্জ্বল। আর তখনো তিনি সাহেব হয়ে ওঠেননি, যদিও সাহেবদের সঙ্গে বিস্তর কাজ করে ফেলেছেন। নীরদবাবুকে জানালাম আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য। অনুরোধ করলাম, এক্সিবিশনের ফোল্ডারের জন্য উনি যদি কিছু লিখে দেন। এও বললাম, প্রদর্শনীর প্রচারের দিকটাও যাতে উনি দেখেন আর সে-ব্যাপারে তাঁরও যদি কোনো পরামর্শ থাকে সেটাও জানতে চাইলাম। নীরদবাবু বললেন, ‘দ্যাখো, এখন, এই মুহূর্তে এখানে কোনো এগজিবিশন করতে গেলে তো সবার আগে একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা দরকার। ওপেনিং-এর জন্য আমি বলব তোমরা জাকির হুসেনের কাছে যাও।’ ড. জাকির হুসেন তখন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর। জিতেন্দ্র তাঁকে ফোন করল। তিনি জানালেন, ‘আমি তো ওঁদের করা কাজ আগে দেখিনি। দেখতে চাই।’ বিনোদদা আর কিঙ্করদার কাজ দেখানো তখন আমাদের কাছে কোনো সমস্যাই নয়। দিল্লিতে এসেছিলাম ওঁদের
দু-বাক্স ছবি সঙ্গে নিয়ে। ইতিমধ্যে খোঁজ চালালাম ভালো-ভালো আর্ট গ্যালারি কী কী রয়েছে, সে-ব্যাপারেও। কিন্তু সে-সময় তেমন কোনো বড়ো গ্যালারি ছিল না। অবশেষে একটার খোঁজ মিলল। দিল্লির কিংসওয়ে অঞ্চলের কাছাকাছি অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্ট সোসাইটির একটা বড়ো গ্যালারি ছিল। আমরা সেখানে গেলাম। একসময়ের উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরিজীবী অথবা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা অবসরের পর সেই সোসাইটির ভার গ্রহণ করতেন। ঊষানাথ সেনের মতো অনেক বাঙালিই সেই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সদস্য ছিলেন। মুশকিল হলো, কিঙ্করদা বা বিনোদদার কাজ বোঝার মতো অভিজ্ঞতা তাঁদের ছিল না। ভারতীয় চিত্র888sport live chatের এমন আধুনিক কাজ আগে তাঁরা দেখেননি। তাঁদের অজ্ঞতা আমাদের হতাশ করল।
এবার তাহলে কী করব? প্রদর্শনী কোথায় হবে? ভাবতে-ভাবতে দুজনে হাঁটছি। হঠাৎ ওয়াইএমসিএ ইনস্টিটিউটের দিকে চোখ গেল। কেন জানি না, মনে হলো, সেখানে ঢুকে একবার চেষ্টা করা যেতে পারে। সেখানে আলাপ হলো একজন কেরালিয়ান ভদ্রলোকের সঙ্গে। আমি তখনো মালয়ালম ভাষাটা বেশ বলতে পারতাম। তাঁকে সবটা খুলে বললাম। খানিকক্ষণ চিন্তা করে তিনি জানালেন, সেখানে একটা ব্রিটিশ হল রয়েছে, কিন্তু সেটা কি প্রদর্শনীর জন্য উপযুক্ত? হলের চারিদিকে অসংখ্য জানালা। কী সমাধান? বললাম, জানালাগুলো যদি পাটের চট দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায়? তিনি রাজি হলেন। এরপর, কবে কোথায় কতদিনের জন্য সেই প্রদর্শনীটি হচ্ছে – সব খবর জানালাম জাকিরসাবকে। এরই মধ্যে আমাদের কাছ থেকে তিনি বিনোদদা এবং কিঙ্করদার ছবিও দেখে ফেলেছেন। ছবিগুলো তাঁর খুবই ভালো লেগেছিল। কিন্তু এবার নতুন সমস্যা উদ্বোধনের দিন নিয়ে। জাকিরসাব জানালেন, যেভাবেই হোক, সেদিন তাঁকে জার্মানিতে রওনা দিতেই হবে। অথচ একজন উদ্বোধকেরও তো দরকার। জাকির সাহেব একজন লোকের কাছে যেতে আমাদের পরামর্শ দিলেন। এতদিন পর আর তাঁর নাম মনে পড়ছে না। জাকির সাহেব এ-ও বলেছিলেন, সেই ভদ্রলোক চিত্রকলা সম্পর্কে কিছু না জানলেও অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি এবং লোকে তাঁকে মান্য করে। আমরা তাঁর কাছে গেলাম। তিনি রাজিও হলেন। দেখলাম, তিনি উদ্বোধন করতে এসেছেন বলেই প্রদর্শনীতে প্রচুর দর্শকও উপস্থিত। অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্ট সোসাইটির লোকজনও এসেছিলেন। একবার উঁকি দিয়েই তাঁরা হাওয়া। আধুনিক চিত্র888sport live chat বলতে তাঁরা বড়জোর অমৃতা শেরগিল কিংবা সুধীর খাস্তগীরদের কাজ দেখতেই অভ্যস্ত। বিনোদদা কিংবা কিঙ্করদার ছবি তো আরো আধুনিক, আরো নতুন। বিশেষ করে বিনোদদার ব্রাশ ওয়ার্কে করা ছবিগুলো তো হজম করা তাঁদের পক্ষে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ছিল।
যাই হোক, কাশ্মিরি গেটের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কলাবিভাগ থেকে সেখানকার অধ্যক্ষ মি. উডস এসেছিলেন। তিনি কিঙ্করদার এবং বিনোদদা, উভয়েরই দুটো করে ছবি কিনে নিলেন। প্রদর্শনী চলাকালীন সেটাই ছিল আমাদের একমাত্র বিক্রি। বিনোদদার দুটো ছবি এখনো ওখানে আছে। আর কিঙ্করদার একটা। জলরঙে করা ওঁর আরেকটা ছবি যে কোথায় আছে তা ওই প্রতিষ্ঠানের এখনকার লোকজন আমাকে জানাতে পারেননি।
তখনকার সময়ে কেউই আমরা অত পেশাদার ছিলাম না। ছবিগুলো বিক্রি হয়েছিল মাত্র দেড়-দু-হাজার টাকায়? তাতেই আমরা খুশি – যাক, খরচা তো উঠে গেল।’
এক সাক্ষাৎকারে তিনি রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালেও চল্লিশের দশকে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ কেমন ছিল সে-কথা বলেছেন, ‘এমন একটা সময়ে এসেছিলাম, যখন রবীন্দ্রনাথের পার্সোনালিটি কীরকম ছিল, তা জানার থেকেও অনেক বেশি আগ্রহী ছিলাম ওঁর আইডিয়া সম্বন্ধে। এছাড়াও, মানুষ রবীন্দ্রনাথের কোন দিকটা আমাকে টানত জানেন? উদাহরণ দিয়েই বলি। শুনেছি, সে-সময় যেসব ছাত্রছাত্রী শান্তিনিকেতনে পড়তে আসত, তাদের উনি নিজে কখনো পরীক্ষা না নিলেও, যেটা আবশ্যিক ছিল, প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকেই নিয়ে যাওয়া হতো তাঁর কাছে। তিনি সকলের সঙ্গে আলাপ করতেন। উমার মা, মানে আমার স্ত্রী সুশীলা আমার আগেই শান্তিনিকেতনে ভরতি হয়েছিল, ১৯৪০ সালে। সত্যজিৎ রায়, প্রীতীশ নিয়োগী, মৃণালিনী সারাভাই – এঁরা ছিলেন সুশীলার ব্যাচমেট। সুশীলা আমাকে বলেছিল, রবীন্দ্রনাথ ওকেও একবার ডেকেছিলেন। বলেছিলেন, ‘তুমি তো এখানে পড়াশোনা করছ, এরপর কী করার ইচ্ছে তোমার?’ সুশীলা বেনারসের মেয়ে। ও জানিয়েছিল, পড়া শেষ করে সেখানেই ফিরে যাবে, শিক্ষকতা করবে। রবীন্দ্রনাথের সায় মেলেনি, বলেছিলেন, ‘না, এখানেই থাকো। এখানেই মন দাও। এখানেই তুমি নিজের আত্মাকে খুঁজে পাবে।’
পরবর্তীসময়ে আমরা শান্তিনিকেতনেও ছিলাম। সেই আত্মার খোঁজেই গিয়েছিলাম। যদিও, তাকে আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আসলে সেই আত্মার গায়ে এতদিনে এত আস্তরণ জমে গিয়েছে যে, আত্মাটি থাকলেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
বিনোদবিহারীর সঙ্গে তাঁর সৌহার্দ্যরে যে-সম্পর্ক ছিল সে-সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শান্তিনিকেতনে আমার সেই প্রথম দিনটার কথায় একটু আসি। সেখানে গিয়ে দেখলাম, 888sport app সকল শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা রবীন্দ্রনাথের একটি নাটক করার উপলক্ষ্যে মুম্বই গিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তখন তিনজনের কাঁধে। মাস্টারমশাই, বিনোদদা এবং কিঙ্করদা। ফলে, প্রথমেই আমি তাঁদের মুখোমুখি হলাম। অবশ্য, আমার জীবনে সেটা একটা সৌভাগ্য। নন্দলাল বসু আমাকে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র করে নিলেও আমার কোনো কাজই তখনও পর্যন্ত তিনি দেখেননি। তাই, অন্য সকলকে যা বলতেন, আমাকেও তা-ই বললেন। ছবি করে দ্যাখাও।
আমিও আঁকতে বসে গেলাম। সবেমাত্র দুটো ছবি হয়েছে, মাস্টারমশাই দেখলেন। ছবি দুটো দেখে তিনি এত খুশি হলেন যে, উপস্থিত অন্যদেরও ছবিগুলো দেখাতে লাগলেন। আসলে, ছবি আঁকার একটা শিক্ষা তো আমার ছিলই। শান্তিনিকেতনে আসার আগে থেকেই তো আমার ছবি আঁকায় হাতেখড়ি। মাস্টারমশাই খুশি হয়েছেন দেখে আমারও আনন্দের সীমা রইল না। কিন্তু বিপত্তি ঘটল এর পর।
তিনি আমার পরবর্তী কাজগুলিও দেখলেন। সেসব ছবির সঙ্গে অন্য দেশীয় আর্ট ফর্মের কোথাও একটা সাদৃশ্য ছিল হয়তো। থাকাটা অস্বাভাবিকও নয়। মাহের রিডিংরুমে বসে আমি তো বিভিন্ন দেশের ছবি দেখেছি। আগ্রহ জন্মেছে। মাস্টারমশাই নতুন আঁকা ওই ছবিগুলো মেনে নিলেন না। একদিন ডেকে বললেন, ‘তুমি দেশের ছেলেদের মতো কাপড়-টাপড় তো পড়ো, কিন্তু তোমার মন তো বিদেশের।’ তিনি ঠিক কী বলতে চাইছেন, সেটা আমি বুঝতে পারলাম। সত্যি, বাংলার চিত্রঘরানা সম্পর্কে আমি তখনও অব্দি অতটা ওয়াকিবহাল নই। কিন্তু এ কীরকম কথা – ‘বিদেশের মতো’? একজন, যে দেশের কথা ভেবে জেলে চলে গেল, তার ক্ষেত্রে কি ওই কথাটা খাটে? আমার মুখচোখ দেখে হয়তো মাস্টারমশাইও বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি একটু বেশিই বলে ফেলেছেন। সামলে নিয়ে বললেন, ‘আচ্ছা, আচ্ছা, তুমি এইসব ব্যাপারে একটু বিনোদের সঙ্গে কথা বলো।’ আজ বুঝি, মাস্টারমশাই এইভাবে আমাকে একেবারে বিনোদদার কোলে তুলে দিলেন। আমিও বিনোদদার কাছে গেলাম।
বিনোদদা! তাঁর মতো খুব কম লোকই দেখেছি, বিনোদদার মতো, যিনি অন্য লোক কী বলতে চাইছেন সেটা বুঝে, জেনে তারপর নিজের কথাটি বলতেন। তাঁর ছবি বা চিত্রকলা সম্পর্কে জ্ঞান যে অপরিসীম ছিল সেটা নিয়েও নতুন কিছু বলার নেই। পাশাপাশি, 888sport live football সম্পর্কেও তাঁর উৎসাহ ছিল দৃষ্টান্তমূলক। যে-বইটি তিনি পড়ে ফেলেছেন, তার পাতায় পাতায় কী লেখা আছে, বইটি না দেখে অনুপুঙ্খ বলতে পারতেন বিনোদদা। এরকম ভিজুয়াল মেমোরিসম্পন্ন লোককে তো পাওয়াই মুশকিল। আরো একটা গুণ ছিল ওঁর – ‘সকল বিষয় নিয়েই খোলামেলা কথা বলতে পছন্দ করতেন তিনি।’
রাবীন্দ্রিক ধ্যান-অনুধ্যান নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে কে. জি. সুব্রহ্মণ্যনের। আমৃত্যু রবীন্দ্র সংস্কৃতি ও জীবনবোধ তাঁকে সকল কাজে প্রাণিত করেছে। রবীন্দ্রনাথকে সম্যক উপলব্ধির জন্য তাঁর গান, 888sport app download apk, 888sport alternative link, নাটক ও ছোটগল্পের চেতনাকে ধমনিতে ধারণ করার জন্য বাংলা শেখেন তিনি। কেরালার এই মানুষটি সুন্দর বাংলা বলতেন এবং বাংলায় তাঁর লেখনী খুবই মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছিল। শান্তিনিকেতনে অবস্থানকালে আড্ডা ও কথোপকথন তাঁর হৃদয়গ্রাহী বাংলা ও এ-ভাষার সড়গড় হওয়ায় তাঁকে অবাঙালি বলে ঠাহর করা যেত না। রবীন্দ্রচর্চার সঙ্গে বাংলা ভাষার চর্চাও করেন তিনি। বাংলা ভাষার চিরায়ত 888sport live footballের প্রতিও আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। যদিও বিগত পঁচিশ বছরে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ ও কলাভবনের জ্ঞানচর্চায় রবীন্দ্রনাথকে তিনি আর খুঁজে পাননি। এ নিয়ে ব্যথিত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে, কিন্তু শান্তিনিকেতনের প্রতি যে ভালোবাসা ও অনুরাগ জন্মেছিল তা থেকে সরে আসেননি। এই শান্তিনিকেতনই তাঁর হৃদয়মনে সর্বক্ষণ জাগ্রত ছিল। পরবর্তীকালে তাঁদের সান্নিধ্য তাঁর চিত্র-সৃজনের ক্ষেত্রকে করে তোলে সমৃদ্ধ। নন্দলাল বসুর মৃত্যুর পর রামকিঙ্কর ও বিনোদবিহারীকে বন্ধু ও শিক্ষক হিসেবে তিনি গণ্য করেছিলেন। তাঁদের সৃজনধর্মিতা 888sport live chatের পথে নিঃসঙ্গ যাত্রা এবং এই দুজনের জীবনের বৈপরীত্য সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে সখ্যের যে-চিত্র পাই তা সত্যিকার অর্থেই অনন্য। চিত্রবিদ্যায় শিক্ষাগ্রহণের পর বরোদায় অধ্যাপনাকালে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনই হয়ে ওঠে তাঁর মানসভুবনে ও সকল সৃজনের অভিমুখীনতার প্রেরণাস্থল। একথা ভাবতে ভালো লাগে যে, রবীন্দ্রনাথ কেবল শিক্ষাগুরু হয়ে থাকেননি তাঁর কাছে, রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন জীবনকে সুন্দর ও মহৎ করার এক প্রেরণা। রবীন্দ্রনাথের চিত্রচর্চা নিয়ে তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
দুই
রবীন্দ্র-সার্ধশতবর্ষের সময়ে ছায়ানটের আমন্ত্রণে তিনি 888sport appয় এসেছিলেন। সুব্রহ্মণ্যনকে ছায়ানট-আয়োজিত অনুষ্ঠানে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। এই মহান ও ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ 888sport live chatী রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা সম্পর্কে দীর্ঘ এক ভাষণ দিয়েছিলেন। এ-ভাষণে রবীন্দ্রনাথের আদর্শ ও সৃজনবোধ সম্পর্কে আলোকপাত করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের চিত্রের সৃজন উৎকর্ষ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা এবং বিশেষত অবচেতন প্রসঙ্গটি তিনি খ-ন করেছিলেন। একজন 888sport live chatীর এই বোধ ও অনুভব, রবীন্দ্রনাথের চিত্র সৃজনের মৌলিকত্ব যে কত তীক্ষè ছিল, তা তাঁর ভাষণে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল।
এ-অনুষ্ঠানের একদিন পরে ছায়ানট ভবনে তাঁর সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলেন 888sport appর কয়েকজন 888sport live chatী, শিক্ষানুরাগী, 888sport live chat-সমালোচক ও তাঁর কয়েকজন 888sport appsের ছাত্র। এই অনুষ্ঠানে তিনি তাঁর শৈশব, শান্তিনিকেতনের 888sport live chatশিক্ষা এবং তৎকালীন পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী ও রামকিঙ্করের সৃজন উদ্যান এবং 888sport live chatের আধুনিকতাসহ স্বাভাবিকভাবেই উঠেছিল শান্তিনিকেতনের বর্তমান পরিবেশ প্রসঙ্গ। বিনোদবিহারী ও রামকিঙ্করের ব্যক্তিত্ব, সৃষ্টির উন্মুখতা, তাঁদের পঠন-পাঠনের ব্যাপ্তিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। তিনি খুব খোলা আলোচনা করেছিলেন। এই আলোচনায় তাঁর যৌবনকালে প্রত্যক্ষ করা দুই মাস্টারমশাইয়ের কথা অনেকের কাছে অমøান 888sport sign up bonus হয়ে আছে। তাঁর মৃত্যুর পর 888sport live chatী সনৎ কর লিখেছেন – ‘শান্তিনিকেতনে 888sport live chatচর্চার ধারাটির সূত্রপাত করেছিলেন অবশ্য রবীন্দ্রনাথ। ভারতীয় 888sport live chatকলার যে-বিশেষ দিকটি হারিয়ে গিয়েছিল তিনি তাকে শান্তিনিকেতনের কলাভবনে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন 888sport live chatী নন্দলাল বসুর সাহায্যে। সেটি হল ‘মুরাল’ বা ভিত্তিচিত্রের ধারা।’
888sport live chatকলার এমন কোনো দিক নেই যা নিয়ে মানিদা কিছু না কিছু চর্চা করেননি। তাঁর ড্রয়িং বা রেখাঙ্কন ছিল বলিষ্ঠ অথচ নরম,
মন-ছোঁয়া, অনুভূতিমাথা, এক অসীম সৌন্দর্যে ভরা। আর তাঁর ওয়াশ বা জলরঙের কাজ তো তুলনাহীন, একবার দেখলে চোখ ফেরানো যায় না, এমন। সাধারণ মানুষকে তিনি তাঁর চিত্রে ব্যবহার করেছেন নানাভাবে। সাধারণ ও অতিসামান্যকে অসাধারণ ও অনন্য করে তুলতে তাঁর জুড়ি পাওয়া ভার। তাঁর সর্বদা হাসিভরা মুখটি মনে পড়ে। যে মুখ যে-কোনো মানুষকে যে-কোনো সময় কাছে টেনে নিয়ে সানন্দ গল্পগাছায় তাকে আপন করে নিতে পারত। নিজের মনের রঙে অন্যের মনকে রাঙিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা আর ক্ষমতার কোনো শেষ ছিল না। তাঁর চরিত্র ছিল অনন্য; বিরল তাঁর মতো প্রতিভা ও ব্যক্তিত্ব।
সহায়ক গ্রন্থ : সাক্ষাৎকার, কে. জি. সুব্রহ্মন্যন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সৌরভ দেব ও দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়।
এই গ্রন্থ থেকেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ নেওয়া হয়েছে।
-লেখক

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.