ফেরদৌস আরা আলীম
একটি নিঃঙ্গ তালগাছ
বিশ্বজিৎ চৌধুরী
শিখা প্রকাশনী
888sport app, ২০১১
১২৫ টাকা
কবি, কথা888sport live footballিক ও সাংবাদিক – এই তিন পরিচয়ে খুব চেনামুখ বিশ্বজিৎ চৌধুরী। সত্যি কথাটা হলো, এই তিনের দৌড়ে এখন কবি বিশ্বজিৎ চৌধুরী অনেক পেছনে পড়ে আছেন। কবির কলমটি এখন তন্বিষ্ঠ, সৎ, সাহসী 888sport world cup rate লিখে সাধুবাদ পাচ্ছে প্রচুর। সেজন্যেই কথা888sport live footballিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর বর্তমান নিয়ে ভাবতে ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হতে আমরা প্রলুব্ধ হই। তবে একটি মাত্র 888sport alternative link হাতে নিয়ে একজন সাধারণ পাঠক তো দূরের কথা যথার্থ একই বোদ্ধার পক্ষেও কোনো স্থায়ী মন্তব্য করা সম্ভব নয়, সমীচীনও নয়। আমাদের মানতেই হবে যে পুতুল নাচের ইতিকথা বা পথের পাঁচালির মতো 888sport live chatসৃষ্টি বা মানিক-বিভূতির মতো 888sport live chatীর জন্ম এই বিশ্বায়নের ডামাডোলে অসম্ভব। আসলে এসব কথা এখন বলা অনেকটা বাহুল্যই বটে।
একটি নিঃসঙ্গ তালগাছ বইটি হাতে নিয়ে দোনমনায় ভুগেছি বেশ কিছুক্ষণ, খুলে দেখবো কি দেখবো না। আদিগন্ত প্রচ্ছদের অন্ধকারে একটি তালগাছের লীন হয়ে থাকাটা সম্ভব কিন্তু নতমুখী, এলোচুলে হলদে-পাখি লালটিপের তরুণী – একসারি জ্বলন্ত মাটির প্রদীপ সামনে রেখে কোন নিঃসঙ্গতা বা বিষণ্ণতায় দ্যোতনা দিচ্ছে, কে জানে! তবু বই-ই তো, পাতা ওলটাতে হয়। উৎসর্গপত্রে বন্ধু জুনায়েদ আকতারকে মনে করে লেখক বলছেন, ‘ওয়েস্ট পামবিক থেকে অরল্যান্ডে যাওয়ায় পথে সুরে-বেসুরে গান গেয়েছিলাম আমরা…।’ একটু যেন হাহাকার বাজে কোথাও। তারপর সাতের পাতায় 888sport alternative linkের শুরুতে ‘আমরা আজ আমেরিকা যাচ্ছি। আমরা মানে তিনজনের একটি বিষণ্ণ পরিবার।’ বিষণ্ণতার চাদর গায়ে জড়িয়ে পাঠককে এবার ওদের সঙ্গী হতে হবে এবং যেতে হবে শেষ পর্যন্ত। না গিয়ে উপায় নেই। কারণ আপনি তো 888sport alternative link পড়তে বসেননি। আপনি ছবিঘরের অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে বসে আছেন; বাতি জ্বলে না ওঠা পর্যন্ত আসন ছেড়ে ওঠার কথা আপনার মনেই আসবে না! বরং প্রচ্ছদে কড়া হলুদরঙা যে-মেয়েটিকে দেখে আপনার মন খারাপ হয়েছিল ওর জায়গায় 888sport alternative linkের পরের পৃষ্ঠায়, ‘হালকা সবুজ আর গাঢ় সবুজে মিলিয়ে শাড়িটা, তার সঙ্গে লাল ব্লাউজ আর কপালে লাল টিপের সাদামাটা সাজে অসাধারণ মেয়েটিকে’ প্রচ্ছদে বসিয়ে দিয়ে আপনি এখন নির্ভার।
গলাকে যথাসম্ভব খাদে নামিয়ে, নিজেকে যথাসম্ভব দুঃখী করে, নিজের প্রতি যথাসম্ভব রূঢ় হয়ে, নিজেকে যথাসম্ভব নিচে নামিয়ে যে-আমি তার গল্পটি বলে যাচ্ছে তাকে তার নিচে আর আপনি নামাতে পারবেন না। বরং নিজেকে নিচে নামিয়ে সে আপনার দৃষ্টির সবটুকু অধিকার করে নিয়েছে। তাকে দেখতে, শুনতে, জানতে আপনি এখন বাধ্য; আমি বাধ্য হয়েছি। গ্রাম-শহরের সমন্বয়ে গড়া আরশিছড়ি। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি আসা-যাওয়ার বড় রাস্তার পথে এক জায়গায় নেমে ইট-কাদায় ভাঙাচোরা প্রায় দুই কিলোমিটার পথের দুপাশে ধানক্ষেত, বড় বড় দীঘি, অজস্র পুকুর, পাহাড়, ছড়া, অভাবী জেলে-চাষি এবং সম্পন্ন গৃহস্থঘর মিলিয়ে চমৎকার একটি গ্রাম আরশিছড়ি। গ্রামটির অর্থনৈতিক সচ্ছলতার অন্যতম কারণ প্রায় প্রতিটি পরিবারের দু-একজন সদস্যের মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী জীবন। এই গ্রামের ‘মোমেনা-মতলব; কলেজে ইংরেজির শিক্ষক হয়ে আসা শিহাব আমাদের 888sport alternative linkের নায়ক। উত্তম পুরুষে নিজের নিজের গল্পটি তিনি বলবেন। বিশ্বজিৎ চৌধুরী 888sport alternative linkের নায়কের গৎবাঁধা নায়কোচিত চেহারা, ভাব-ভঙ্গি, অভিব্যক্তি, বাকভঙ্গি সবকিছু দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে তার উত্তম পুরুষের ভিন্নমাত্রিক মর্যাদার প্রতি পাঠককে সহানুভূতিশীল করার চেষ্টা করেছেন এবং তিনি সফল হয়েছেন। নিজের জন্য একটি ভরাট কণ্ঠস্বরের চমৎকার আবৃত্তির গুণ এবং সাংস্কৃতিক দক্ষতা ছাড়া তার আর যা কিছু ছিল তাতে প্রিন্সিপাল নলিনী বাবু তার দুটি সুন্দরী ও সপ্রতিভ কন্যার জন্য ভয়ের কিছু দেখেননি। কিন্তু তার দুটি কন্যাই শিহাব স্যারকে ভালোবেসেছে এবং জ্যেষ্ঠ কন্যাটি পিতাকে নির্মম আঘাত দিয়ে তাকে বিয়ে করেছে। এই বিয়ে নলিনীবাবুর পরিবারকে সামাজিক নানা সমস্যার মুখে ঠেলে দিয়েছিল, যার ফলে কলকাতায় দোজবরে পাত্রের হাতে ছোট মেয়েটির বিয়ে দিতে হয় এবং অকালমৃত্যুর শিকার হন নলিনীবাবু।
888sport alternative linkের মূল যবনিকা উঠবে এখন; রঙ্গমঞ্চ তৈরি। আট বছরের ফুটফুটে সন্তানটিকে নিয়ে আমেরিকা যাচ্ছে শিহাব-পূরবী দম্পতি; তাদের পুত্র রাহুল ক্যান্সারাক্রান্ত। পূরবীর দৃঢ় বিশ্বাস, এ তাঁর পিতার অভিশাপ। শিহাবের পারিবারিক ইতিহাস হানা দেয় – না, সুখ তার জন্য নয়। শৈশবে মা, কৈশোরে পিতা, যৌবনে একমাত্র ছোট বোনটিকে হারিয়ে শিহাব সম্পূর্ণ একা। অতঃপর রাহুলের চিকিৎসার আয়োজনটি যেভাবে সম্পন্ন হলো তাতে একই সঙ্গে আশা-নিরাশা, স্বস্তি-অস্বস্তি, আলো-অাঁধারের এক স্যাটেলাইট বিশ্বে প্রবেশ করতে হবে পাঠককে। টেলিভিশনের কোনো এক চ্যানেলে একটি দেবতুল্য ফুটফুটে শিশুর আর্তি ফুটে উঠবে : আমি বাঁচতে চাই। এবং ঝনঝন করে অদৃশ্য মুদ্রাকৃতির শব্দ শুনতে হবে পাঠককে। ডলারের হাতছানি আসবে খোদ আমেরিকা থেকে। স্বপ্নের দেশে সেই যাত্রাটি দিয়েই 888sport alternative link শুরু হয়। আকাশের ওপারে আরেকটি আকাশে শিহাব, পূরবী ও রাহুলের সঙ্গী হবেন পাঠক। স্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে কিছুদিন রজনী কাটবে পাঠকেরও। দেশে ফিরবে সুস্থ রাহুল, নির্ভার এক মা এবং উদ্বৃত্ত বিশাল এক টাকার অঙ্ক নিয়ে ছাপোষা এক বেসরকারি কলেজ শিক্ষক; কী করবেন তিনি এই টাকা দিয়ে? তার পক্ষে কী করা সম্ভব?
দাম্পত্য জীবনের যুগলবন্দি সময়ে কলকাতা-দার্জিলিং-গ্যাংটক ঘুরে এসেছে এই দম্পতি। কলকাতার শ্যালিকা ও ভায়রার সঙ্গে সেই একত্র 888sport slot gameের একটু বিলাসের 888sport sign up bonusর সঙ্গে এবার যুক্ত হলো আমেরিকায় 888sport sign up bonusবৈভব। রাহুলের একটি নিশ্চিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন তো থাকতেই পারে পিতার মনে। পূরবী যখন পুত্রের রোগমুক্তির আনন্দ অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়ে টাকাটা কোনো চ্যারিটেবল ফান্ডে দান করতে চায় তখন পূরবীর ভূমিকাটাকে শিহাবের কাছে ‘যাত্রাপালার বিবেকের ভূমিকা’ মনে হয়। এ যেন তাকে ‘একটা অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দেওয়া’ – অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণ, এরই মধ্যে পূরবীকে না জানিয়ে শিহাব একটা ফ্ল্যাটের আগাম বুকিং দিয়েছে ওই টাকায়। আসলে আমাদের নায়ক, 888sport alternative linkের শুরু থেকেই তাকে আমরা অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগতে দেখি। দ্বন্দ্বের কারণ যে-সত্য, সেই সত্যটাকে কৌতুকে-তামাশায় উড়িয়ে দিতে চায়। কখনো একা দাঁড়িয়ে তার ভেতর-বাহির, আগাপাছতলা দেখে নিতে চায় (এই পথেই 888sport alternative linkটির নামকরণ)। এ-888sport alternative linkে তাকে আমরা বারবার পাঠকের হাত ধরতে দেখি, পাঠকের চোখে চোখ রাখতে দেখি, পাঠককে ‘নো কোশ্চেন অননুপত্তি’জাত প্রশ্ন করে নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করতে দেখি। 888sport alternative linkটিও যেন তার বাধ্য, অনুগত সঙ্গীটি। সুখের চূড়ায় উঠেই পা হড়কে পড়ে যায় কোনো স্বপ্নদৃশ্যের মতো। এই প্রথম একটু ঘটা করে, দু-চারজন বন্ধুবান্ধব ডেকে বিবাহবার্ষিকীটা উদযাপন করলো তারা। এর ঠিক দুদিনের মাথায় হাউইয়ের মতো জ্বলে ওঠা সুখের বাতিটা দপ্ করে নিভে গেল।
রাহুলের ক্যান্সার রিল্যাপ্স করেছে। পূরবী ফ্ল্যাট বিক্রি করে সে-টাকায় আবার আমেরিকা যেতে চেয়েছে। শিহাব 888sport appয় একটু দেখিয়ে নেবার কথা ভেবেছে। কিন্তু মাত্র তিন দিনের মধ্যে নিভে গেল রাহুলের জীবনপ্রদীপ। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো। হয় না। কারণ উত্তম পুরুষকে নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ তালগাছ করতে হবে লেখককে। রক্তমাংসের যে-মানুষটি ‘অসম্ভব রূপবান’ একমাত্র পুত্রকে কবরস্থ করার পর এক ফোঁটা চোখের জলের সান্ত্বনাও নিজেকে দিতে পারে না (একটু কাঁদতে ইচ্ছে করছিল, ডুকরে কেঁদে উঠতে চাইছিলাম আমি, কিন্তু পুরো শরীরে দলা পাকিয়ে ওঠা যন্ত্রণাগুলো সেভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল না কিছুতেই।) নিয়তির বিরুদ্ধে তার আক্রোশ বা ক্ষোভ তিনি মেটাবেন কী করে? সেজন্যেই সন্তান হারানো শোকের মুখে যখন তারা নিজেরাই পরস্পরের সান্ত্বনা হতে পারতো তখন ‘নীরবতা ভেঙে, সেই অদ্ভুত তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে পূরবী বললো, আমি আর তোমার সঙ্গে থাকবো না।’
এখানেও শেষ হতে পারতো আমাদের 888sport alternative link। পূরবী তার পিতৃগৃহে ছোট ভাইটির সংসারে আশ্রয় নেওয়ার পরেও শিহাবের গল্প শেষ হয় না। পূরবী স্বগৃহে, স্বধর্মে ফিরে গেছে। পূবরী বৈধব্যের ব্রত নিয়েছে। হিন্দু বিধবার জীবনে পূরবী থিতু হয়েছে। কিন্তু শিহাব? শিহাবের ঘরময় ছড়ানো রাহুলের জিনিসপত্র – ‘সব জিনিসপত্রের সঙ্গেই একেকটা গল্প।’ এই গল্পগুলোর 888sport sign up bonus শিহাবকে সারারাত জাগিয়ে রাখে। ঘুমে-জাগরণে রাহুলের ‘বাবা-বাবা’ ডাকটা শুনতে পায় শিহাব। শিহাবের এক স্বপ্নে রাহুল মারা যায়, স্বপ্নের ভেতরে আরেক স্বপ্নে রাহুল বেঁচে থাকে। আনন্দে-আবেগে চিৎকার দিতে গিয়ে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলে সত্য এসে ধরা দেয়। পূরবীকে ফিরিয়ে আনার শেষ ব্যর্থ চেষ্টাটি করতে আমাদের নায়ককে একবার শেষবারের মতো আরশিছড়ি যেতে হয়। তার আসা-যাওয়া পথের ধারে তাকে কেন্দ্র করে পাঠক প্রত্যক্ষ করবেন, কীভাবে মাত্র এক যুগেরও কম সময়ের পুঁজিবাদী গতিময়তায় আরশিছড়ি ব্যাপক, অতল ‘একখন্ড অন্ধকারে’র 888sport sign up bonus হয়ে যায়। 888sport alternative linkের শেষাংশের ওপর হাহাকারের, নিঃসঙ্গতার, বিষণ্ণতার অন্তহীন পর্দা টেনে দিয়ে বিশ্বজিৎ চৌধুরী তাঁর 888sport alternative link শেষ করেন। তাঁর পাঠক-দর্শক বিষণ্ণমনে এবারে গাত্রোত্থান করবেন। শুধু যাঁরা কলম ধরতে চাইবেন বা কিছু বলার তাগিদ বোধ করবেন 888sport alternative linkটি নিয়ে তাঁরা হয়তো বলবেন, আহা, ঔপন্যাসিকের হাতের লাঙল মাটির আরো গভীরে কেন গেল না… কেউ বলবেন, ডিটেইলসের কাজ আরো অনেকখানি জায়গাজুড়ে কেন হলো না? আবার কেউবা হয়তো বলে উঠবেন, সময়ের জমিন পেলাম, দলিল কেন পেলাম না – ইত্যাদি, ইত্যাদি।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.