আনিসদার চলে যাওয়ার খবর পেলাম বিকেলবেলায়। আমার তিনতলার ঘরের জানলায় বসে মরা রোদ দেখছিলাম, 888sport app থেকে ফোন এল, আনিসদা নেই। তিনি খুব অসুস্থ, হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন চিকিৎসকরা, এই খবর আগেই পেয়েছিলাম। স্বীকার করছি, আমি বিচলিত হইনি। কারণ আমি জানতাম, এটা আর একটা প্রবল ঢেউ; কিন্তু আনিসদা যা সহজেই পার হয়ে এসে দেখা হলে বলবেন, ‘আছ কেমন?’ কয়েক বছর আগে যে অসুস্থ মানুষকে প্রায় হুঁশহীন অবস্থায় চিকিৎসার জন্যে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তিনি যে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন তা অনেকেই কল্পনা করেনি। কিন্তু এসেছিলেন। আসার কয়েক মাস পরে সেই জীবন যাপন করেছেন যা সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় করতেন। 888sport app ক্লাবে আমার ঘরে ঢুকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘সমরেশ, আছ কেমন?’ আমি তাঁকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। অত্যন্ত শীর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। একটু যেন খাটো। পরণের পাঞ্জাবির দু-পাশের পুট নেমে গিয়েছে অনেকখানি। আমি বলেছিলাম, ‘আমি ঠিক আছি, আপনি?’
‘কই মাছের প্রাণ তো, সহজে যাবে না।’ হেসে বলেছিলেন আনিসদা।
এ-জীবনে কত মানুষের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসেছি তার হিসেব করতে গিয়ে অন্তত একশ জনের মুখ মনে পড়ছে, কিন্তু তাঁদের কতজনকে আমৃত্যু মনে রাখব? অনেক ভেবেও চারজনের বেশি মুখ মনে পড়ল না। শেষতম মানুষ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অথচ এই মানুষটিকে আমি আনিসদা ছাড়া অন্য নামে ভাবতে পারিনি। তাঁর স্ত্রী হলেন 888sport appsে আমার একমাত্র বউদি। এই দুজনকে নিয়ে আমি আমার জন্মস্থান চা-বাগানে দুটো রাত কাটিয়ে এসেছিলাম গতবছর।
আনিসদার 888sport live footballবোধ এবং পাণ্ডিত্য নিয়ে নিশ্চয়ই আলোচনা হবে। বাংলা888sport live football নিয়ে চর্চা করে 888sport appsের যাবতীয় সম্মান তাঁকে অর্পণ করা হয়েছে, কলকাতার বিখ্যাত আনন্দ 888sport app download bdে দু’বার তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল। কিন্তু তিনিই হলেন একমাত্র লেখক যিনি বাংলাভাষায় লেখালেখি করেও ভারতীয় না হয়েও ভারতবর্ষের জাতীয় 888sport app download bd ‘পদ্মভূষণে’ সম্মানিত হয়েছিলেন। কিন্তু কী আশ্চর্য ব্যাপার, বছরের পর বছর আড্ডায় বা নিভৃতে আমি তাঁর সঙ্গ পেলেও কখনোই তাঁকে নিজের লেখালেখি নিয়ে আলোচনা করতে শুনিনি। একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ এবং শরৎচন্দ্রের পরে বাংলা 888sport live footballে বিখ্যাত লেখক অনেকেই। বোধহয় সবচেয়ে শিক্ষিত লেখক বুদ্ধদেব বসু এবং অন্নদাশংকর রায়; কিন্তু বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাণ্ডিত্য অনেক কম হলেও লেখক হিসেবে অনেক বেশি সম্মানীয়।’ বিনীত এই মানুষটিকে কখনোই নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে দেখিনি।
পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যে আমি ওঁর অনেক ছোটভাইয়ের একজন হয়ে গিয়েছিলাম। যখনই 888sport appয় গিয়েছি এবং তিনি শহরে আছেন তখন কোনো সন্ধ্যাই তাঁর সঙ্গ ছাড়া কাটতো না। আমার ভাগ্যে কয়েকজন মানুষ এসেছেন যাঁদের সান্নিধ্যে মন আনন্দ, আরাম এবং শান্তিতে স্থির হয়ে যায়। আনিসদা তাঁদের একজন। এই কালি ও কলম কাগজের জন্যে আমাকে 888sport alternative link লিখতে বলেছিলেন। লিখেওছিলাম কিন্তু মন ভরেনি। তিনি হেসে বলেছেন, ‘এর পরের বার নিশ্চয়ই তোমার আক্ষেপ থাকবে না।’ আমি অবাক চোখে তাকিয়েছিলাম। ভালো হয়নি শব্দ-দুটো উচ্চারণ না করেও কত সহজে অর্থটা বুঝিয়ে দিতে পেরেছিলেন তিনি।
কলকাতায় পা দিয়েই আমায় ফোন করতেন। ‘সমরেশ, এসে গিয়েছি।’ সেই এসে যাওয়ার দিনগুলো তাঁর সাহচর্যে কি সুখে কেটে যেত। আমি জানতাম পশ্চিমবাংলার ডুয়ার্স অঞ্চলে তিনি কখনো যাননি। দু-বছর আগে শরীর যখন বেশ দুর্বল তখন কলকাতায় এসে আমায় বললেন, ‘শরীরের যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে আর কলকাতায় আসা হবে না। তাই তোমার জন্মস্থান দেখা হল না হে।’
জলপাইগুড়ির একটি চা-বাগানে বাবা চাকরি করতেন। সেখানেই আমার জন্ম। নানান লেখায় সে-কথা লিখেছি। এখন সেখানে নিজের বাড়ি নেই, কিন্তু বন্ধুরা আছেন, তাঁরা আত্মীয়ের চেয়ে কম নন। আনিসদা কলকাতায় আসেন খুব কম সময়ের জন্য। তাই জলপাইগুড়িতে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব তাঁকে কখনো দিইনি। সেদিন আনিসদার মুখে আমার জন্মস্থানের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বউদি পাশে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘তোমার দাদার খুব ইচ্ছে ছিল চা-বাগানে বেড়াতে যাওয়ার; কিন্তু এই শরীরে বোধহয় যাওয়া ঠিক হবে না।’
কিন্তু আমি বউদির মুখ দেখে বুঝতে পারছিলাম তাঁর মন যেতে চাইছে। আনিসদার কলকাতার কাজ যেদিন শেষ হচ্ছে তার পরের দিন বিমানের টিকিট কাটা হল। দমদম থেকে বাগডোগরা। আমার ভ্রাতৃপ্রতিম অন্বিন্দু রায় ডুয়ার্সের প্রান্তে ভুটানের লাগোয়া একটি চা-বাগানের ম্যানেজার। সে আনিসদার লেখা পড়েছে। আমার কথা শুনে সব ব্যবস্থা করে গাড়ি নিয়ে চলে আসবে বাগডোগরা বিমানবন্দরে।
বিমানে বসে আনিসদা বললেন, ‘সমরেশ, আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে ডাক্তার নেই তো?’
‘আছেন। চা-বাগানের ডাক্তার। খুব বড় ডিগ্রি নেই।’
‘বাঁচা গেল। নার্সিংহোম বা বড় হাসপাতাল?’
‘না। তবে তিন ঘণ্টা দূরে শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়িতে আছে।’
‘বাঃ। আরো ভালো।’ হাসলেন তিনি।
‘আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না দাদা!
‘এই দুদিন নতুন কোনো ওষুধ আমাকে খেতে হবে না। নতুন ডাক্তারের কাছে গেলেই তিনি আমাকে নতুন ওষুধ খাওয়াবেনই।’ হেসে বলেছিলেন আনিসদা।
বিমান আকাশে উড়ল; কিন্তু আমি ক্রমশ নার্ভাস বোধ করতে লাগলাম। ওই ভয়ংকর নির্জন চা-বাগানে যদি আনিসদা অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে তাঁর ঠিকঠাক চিকিৎসা শুরু হবে অন্তত চার ঘণ্টা পরে। তার মধ্যে যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি তামাম বাঙালির কাছে মুখ দেখাবো কি করে! এই চিন্তা যদি আগে মনে আসতো তাহলে আমি ঝুঁকি নিতাম না।
বাগডোগরা বিমানবন্দরে আমরা নেমেছিলাম দুপুর একটায়। ভয় মানুষের মনে জেঁকে বসলে তা থেকে বের হওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই কাছাকাছি থাকলে ওঁর মুখের দিকে আড়চোখে তাকাতাম, কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা তা বুঝতে!
বাগডোগরা বিমানবন্দরে অন্বিন্দু গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। আলাপ হওয়ার মিনিট-পাঁচেক পরে আনিসদা আর অন্বিন্দুর কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল ওরা বহুদিনের পরিচিত। বউদির কথা বলার ভঙ্গিতে বুঝতে পারছিলাম, অন্বিন্দুকে তাঁরও পছন্দ হয়েছে।
বাগডোগরা থেকে ডুয়ার্সে যেতে হলে শিলিগুড়ি শহরটি পার হতে হয়। অন্বিন্দু বলল, ‘দুটো পথ আছে, একটা পাহাড়ি, সেবক ব্রিজ দিয়ে তিস্তা নদী পার হয়ে ডুয়ার্সে যেতে হবে। অন্যটা পাহাড় এড়িয়ে তিস্তা থেকে খাল কেটে আনা দীর্ঘ জলপথের পাশ দিয়ে গিয়ে আমরা মালবাজারের কাছাকাছি আগের পথটির সঙ্গে মিলিত হতে পারি।’ আনিসদা বললেন, ‘তাহলে এই দ্বিতীয় পথে চলো, তিস্তাকে দেখতে দেখতে যাই। সমরেশের গল্প-888sport alternative linkে তো অনেকবার তিস্তাকে পড়েছি।’ কথাটা শুনলেও আমি কোনো মন্তব্য করিনি, উনি যে আমার লেখা পড়ে মনে রেখেছেন তাই তো জানতাম না।
মালবাজারে পৌঁছে আমরা অবাক। বড় রাস্তার মাঝখানে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, ‘বাংলাভাষার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, 888sport appsের জাতীয় অধ্যাপক, ভারতবর্ষের জাতীয় সম্মান পদ্মভূষণপ্রাপ্ত লেখক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই মুহূর্তে আমাদের মালবাজারে এসে পৌঁছেছেন। আমরা তাঁকে অনুরোধ করছি কিছুক্ষণের জন্যে মঞ্চে আসতে।’
আনিসদা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন, ‘একি!’
আমিও খুবই অবাক হয়েছিলাম। পরে জেনেছিলাম অন্বিন্দুর মুখে, তাঁর আসার খবর পেয়ে মালবাজারের পুরপ্রধান এই আয়োজন করেছেন।
সেদিন আমি অবাক হয়ে শুনেছিলাম! কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই যাত্রার ধকল উপেক্ষা করে আনিসদা মঞ্চে দাঁড়িয়ে চমৎকার ভাষণ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে শ্রোতার 888sport free bet বেড়ে গেছে। প্রস্তুতি ছাড়া এরকম একটি অনুষ্ঠানের সাক্ষী হয়ে গর্ব বোধ করছিলাম। গাড়িতে উঠে আনিসদা বললেন, ‘এরকম অভিজ্ঞতা এই প্রথম হলো। এটা কি সমরেশের ব্যবস্থাপনায়?’
প্রতিবাদ করেছিলাম, এঁদের কাউকে আমি চিনি না। তখন অন্বিন্দু তথ্যটা দিলো। মালবাজারের মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান টেলিফোনে অন্বিন্দুর কাছে আনিসদার আসার খবর জানতে পেরে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
যে চা-বাগানে আমি মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে এসেছিলেম সেখানে পৌঁছাতে সূর্য প্রায় ডুবতে চলেছিল। আনিসদা চা-বাগানের কোয়ার্টার্স দেখতে দেখতে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সেই চাঁপাফুলের গাছটা কোথায়?’
আমি চমকে উঠেছিলাম। উত্তরাধিকার 888sport alternative linkে ওই চাঁপাফুলের গাছের কথা বেশ কয়েকবার লিখেছিলাম। আনিসদা 888sport alternative linkটি শুধু পড়েননি, পড়ে মনেও রেখেছেন। বললাম, ‘বোধহয় গাছটাকে কেটে ফেলেছে।’
‘আহা!’ বলে চুপ করে গিয়েছিলেন। আমার শরীরে কাঁটা ফুটেছিল। আশি সালে প্রকাশিত আমার ওই 888sport alternative link পড়ে মনে রেখেছেন তিনি। ভাবাই যায় না!
বিরাট জলদাপাড়ার বসত ছাড়িয়ে তোর্ষা নদীর ওপর লম্বা সেতু পেরিয়ে ভুটানের সীমান্ত-লাগোয়া সুভাষিণী চা-বাগানে যখন পৌঁছেছিলাম তখন মরা আলোয় গাছগুলো মাখামাখি, সূর্য ডুবে গেছে। অন্বিন্দুর বাংলোর সামনে গাড়ি থেকে নেমে আনিসদা বললেন, ‘বাঃ, চমৎকার।’
বাংলোর সামনে বিরাট ফুলফলের বাগান। পাখিরা তাদের আস্তানায় ফিরে এসে তুমুল চিৎকার করছে ঘুমের আগে। আনিসদা অন্বিন্দুকে বললেন, ‘বড় ভালো জায়গায় থাকো তুমি।’
বাংলোর যে-ঘরটিতে বউদি আর আনিসদা ছিলেন সেটা কাঠের তৈরি। ভারি পছন্দ হয়েছির ওঁদের। সেই সন্ধেটা বাংলোর বারান্দায় বসে আমরা নানান গল্প করেছিলাম। আনিসদা বলেছিলেন, ‘সমরেশ, ব্রিটিশরা এদেশে চায়ের চাষ শুরু করেছিল। বিহার থেকে শ্রমিক নিয়ে এসে অত্যাচারের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। তুমি ওই সময় নিয়ে একটা 888sport alternative link লেখো। তুমিই পারবে।’ তখন কিছু বলিনি। পরের বছর চেষ্টা করেছিলাম। দেশ পত্রিকায় ওই বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক 888sport alternative link লিখেছিলাম।
পরের দিন জলদাপাড়া জঙ্গলের বনবিভাগের বড়কর্তার সৌজন্যে দুটো গাড়িতে আমরা জঙ্গলের সেই অঞ্চলে গেলাম যেখানে টুরিস্টদের যেতে দেওয়া হয় না। জঙ্গলের প্রাণীরা নির্ভয়ে সেখানে বিচরণ করতে পারে। সেই দুপুর-বিকেলে আমরা একের পর এক বাইসন, গণ্ডার, হরিণ এবং হাতির দলকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অন্বিন্দু বলেছিল, ‘বাইসনরাই সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। কখন মেজাজ হারাবে কেউ জানে না।’ বাংলোয় ফিরে এসে আনিসদা বললেন, ‘সমরেশ, যাদের হিংস্র প্রাণী বলা হয় তাদের আমরা খুব কাছ থেকে দেখলাম। কিন্তু সত্যি কি ওরা মানুষের চেয়ে বেশি হিংস্র?’
আমার হঠাৎ মনে হলো, পৃথিবীর হিংস্রতম মানুষদের যদি একটা ঘেরা জায়গায় আটকে রেখে সাধারণ মানুষকে তাদের দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে কি এই দেখার চেয়ে বেশি আনন্দ পাওয়া যেত?
পরের দিন সকালে বেরিয়ে সুন্দর মসৃণ রাস্তায় ডুয়ার্স পেরিয়ে সেবক ব্রিজের ওপর এসে আনিসদা ড্রাইভারকে বললেন গাড়িটাকে একটু থামাতে। তারপর ব্রিজের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমাকে ধন্যবাদ সমরেশ, যে-নদীকে নিয়ে এত মতান্তর তার প্রথম চেহারাটা তো তোমার জন্যেই দেখতে পেলাম।’
আনিসদার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি চিৎকার না করে প্রতিবাদের কথা বলতে অভ্যস্ত ছিলেন।
ক’জন পারেন।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.