আনিসুজ্জামানের গবেষণার দুয়েকটি দিক

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আনন্দ জামান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এত ভক্তি, এত 888sport apk download apk latest version, এত ভালবাসা! আব্বার আর চাওয়ার কিছু নেই। একটি পরিপূর্ণ জীবনের সমাপ্তি।’ সত্যি, তাঁর জীবন ভালোবাসা ও পরিপূর্ণতায় ভরা। তিনি ছিলেন শিক্ষক। কৈশোরে ছবি বিশ্বাসের অভিনয় দেখে তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলেন শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে তাঁর সাফল্য কিংবদন্তিতুল্য। তিনি যখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হতে যান, তখন বিভাগের তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেছিলেন, ‘Welcome twice’। ড. শহীদুল্লাহ্ বাংলা বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক হয়েছিলেন। তিনি যখন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে বিভাগের ছাত্র হিসেবে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তখন কি তিনি জানতেন বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় এমেরিটাস অধ্যাপককেই তিনি বরণ করে নিচ্ছেন? যেদিন এমেরিটাস অধ্যাপকের পদে আনিসুজ্জামান নিযুক্ত হলেন, সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের একটি বৃত্ত পূর্ণ হলো।’ এর আগে তিনি ওই বিভাগের অধ্যাপক পদ থেকে অবসরগ্রহণের পর সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হয়েছিলেন। পরে হলেন 888sport appsের জাতীয় অধ্যাপক। শিক্ষক হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের স্বীকৃতি তো তিনি পেয়েছিলেন, ছাত্রছাত্রীদের কাছেও তিনি সবসময় সমাদৃত হয়েছেন।
আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন ষোলো বছর – ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত। তিনি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন বাংলা বিভাগসহ 888sport app বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁর বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছিল, তাদের বক্তব্য ছিল ‘যেতে নাহি দিব।’ বিভাগের একজন ছাত্র তো ঘোষণা করে বসলো, ‘স্যার যদি চলে যান, তাহলে আমি গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যা করবো।’ কেন সে এরকম চরম সিদ্ধান্ত নিল, জানতে চাইলে বলল, ‘স্যার আমার জীবনের আর কীই-বা এমন মূল্য? কিন্তু আনিস স্যার যদি থেকে যান তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক উপকার হবে।’ এই ঘটনায় আনিসুজ্জামান খুবই আপ্লুত হয়েছিলেন।
বিদায়ের দিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী, এমনকি রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিড়ে স্টেশন হয়ে উঠলো লোকারণ্য। পুষ্পস্তবকে ভরে গেল তাঁর কম্পার্টমেন্ট। আক্ষরিক অর্থেই সেদিন ট্রেনের কামরায় পুষ্পশয্যায় শায়িত হয়েই তিনি চট্টগ্রাম ত্যাগ করলেন। এরকম ঘটনা বিরল। এরকম আরেকটি তুলনীয় ঘটনার কথা আমরা জানি। পণ্ডিত সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ যখন মহীশুর বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন, তখন মহীশুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় করেছিলেন তাঁর শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা। ট্রেনে তাঁর কামরা ভরে উঠেছিল পুষ্পস্তবকে। ঘটনাটি জানিয়েছেন তাঁরই পুত্র বিখ্যাত ইতিহাসবিদ সর্বপল্লী গোপাল।
শিক্ষকতায় তাঁর অঙ্গীকার কতটা দৃঢ় ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় একটি ঘটনায়। বঙ্গবন্ধু তাঁকে 888sport appsের শিক্ষাসচিব করতে চেয়েছিলেন। 888sport appsের প্রথম শিক্ষা কমিশনের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হয়তো বিশ্বাস ছিল, শিক্ষাসচিব হলে শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজটি আনিসুজ্জামান যোগ্যতার সঙ্গেই পালন করবেন। কিন্তু তিনি শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাননি, শিক্ষকই থাকতে চেয়েছেন।
আনিসুজ্জামান শুধু শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকই ছিলেন না। তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাতির শিক্ষক। এদেশের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক জনগণ যখনই কোনো দ্বিধা বা সংশয়ের মুখোমুখি হয়েছেন, তখনই তাঁদের দিশারী হয়ে যুক্তিসংগত ও বাস্তবধর্মী পথের দিশা দিয়েছেন এই শিক্ষক। তাঁর মত ও সিদ্ধান্ত যে-কোনো সংকটকালে ছিল আমাদের পাথেয়।
আনিসুজ্জামান গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও সমাদৃত ছিলেন। তাঁর প্রথম গবেষণা ছিল ‘ইংরেজ আমলে বাংলা 888sport live footballে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা (১৭৫৭-১৯১৮)’। এই গবেষণার প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন :
মধ্যযুগের বাংলা 888sport live football হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের অবদানে সমৃদ্ধ। এর তুলনায় আধুনিক বাংলা 888sport live footballের ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানের পশ্চাৎপদতা বিস্ময়কর। বাংলা 888sport live footballের উৎসাহী পাঠক মাত্রই লক্ষ্য করেছেন যে ১৮০০ থেকে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অর্থাৎ আধুনিক বাংলা 888sport live footballের প্রস্তুতি পর্বে – বাঙালি মুসলমান সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। অথচ তাঁদের 888sport live footballানুরাগ বা সৃষ্টিক্ষমতা যে লোপ পায়নি, তার প্রমাণ আরবি-ফারসি শব্দবহুল কাব্যধারার মধ্যে পাওয়া যায়।
এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি বাঙালি মুসলমানের সামাজিক ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া অপরিহার্য মনে করেছেন। তাঁর মতে, ইংরেজ আমলে 888sport appsে যে-নবজাগরণের সূচনা হয়, বাংলার সমৃদ্ধ আধুনিক 888sport live football তারই ফল। এই জাগরণ দেখা দিয়েছিল বাংলার হিন্দুসমাজে। আলোচ্য সময়ে বাঙালি মুসলমানের প্রবণতা ছিল প্রাচীন ধর্মজীবনের আদর্শে প্রত্যাবর্তন। ফলে আধুনিক জীবনাদর্শের সঙ্গে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমান সম্পর্কে এই সম্প্রদায়ের আগ্রহ দেখা দেয় ১৮৭০-এর দিকে; সেই সময় আধুনিক শিক্ষার প্রতিও তাঁরা মনোযোগী হয়ে ওঠেন। তখন থেকেই আধুনিক 888sport live footballে তাঁদের মনোনিবেশ ঘটে। তবে বিদ্যাসাগর, মধুসূদন ও বঙ্কিমচন্দ্রের মতো প্রতিভাবান লেখকের অভাবে এই সময়ের 888sport live footballে বাঙালি মুসলমান অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিলেন। আনিসুজ্জামান মনে করেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক পটভূমি সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে আমাদের 888sport live footballবিচার বিচলিত হয়েছে। বাঙালি মুসলমানের 888sport live footballকর্মের মূল্যায়নের ব্যাপারে এই অসম্পূর্ণতা বা অভাবকেই তিনি দূর করতে চেয়েছেন।
বাঙালি মুসলমানের 888sport live footballচর্চায় আধুনিক জীবনবোধের অনুপস্থিতির কারণগুলো তিনি শনাক্ত করেছেন। এই সময়ে গ্রামকেন্দ্রিক স্বয়ংসম্পূর্ণ সমাজের ভাঙন, জীবনযাত্রার শহরমুখিনতা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জমির পরিবর্তে মুদ্রার প্রচলন ও প্রাধান্য – এসব কারণে সমাজকাঠামোয় পরিবর্তনের ফলে নতুন শ্রেণিবিন্যাস দেখা দেয়। কিন্তু এই পরিবর্তনের ফলেও মুসলমান সমাজ সংগঠিত হতে পারেনি। তাঁদের হাতে নগদ অর্থের সঞ্চয় ছিল না। পরিবর্তিত অবস্থায়ও হিন্দু সম্প্রদায়ই নিজেদের সুসংহত ও সমৃদ্ধ করে তোলে। মুসলমানগণ তাঁদের কর্মকাণ্ড সীমিত রাখেন ধর্মসংস্কার আন্দোলনের মধ্যে।
সামাজিক পশ্চাৎপদতার প্রভাব লক্ষ করা গেছে মুসলমানদের 888sport live football-রচনায়ও। ১৮৬০ সালে বাংলা 888sport live footballে আধুনিক জীবনচেতনার সূত্রপাত হলেও ১৮৬৯ সালে রচিত মীর মশাররফ হোসেনের রত্নাবতীর বিষয়বস্তু ছিল মধ্যযুগীয়। অষ্টাদশ শতকের সামাজিক ক্ষয়িষ্ণুতার প্রভাব উনিশ শতকেও অব্যাহত ছিল, এর প্রভাব 888sport live footballে কীভাবে প্রতিভাত হয়েছে, তার উল্লেখ করেছেন আনিসুজ্জামান :
এর মধ্যে যে প্রধান লক্ষণগুলো আছে, যেমন, বাস্তব জীবন থেকে সরে থাকার প্রচেষ্টা, আদর্শবাদের অভাব, সমকালীন জীবনের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ, 888sport promo code সৌন্দর্যের স্তুতি সত্ত্বেও 888sport promo codeর প্রতি 888sport apk download apk latest versionহীনতা – এর সব কিছুই ক্ষয়িষ্ণু সমাজভুক্ত মানুষের মানসিকতার ফল।
এই ক্ষয়িষ্ণু কালের মুসলমান লেখকদের রচনার ভাষা-বৈশিষ্ট্য বিচার করে আনিসুজ্জামান এগুলোকে ‘মিশ্রভাষারীতি’র 888sport live football বলে অভিহিত করেছেন। প্রসঙ্গত এই ধরনের রচনার ভাষাকে অনেকে ‘দোভাষী ভাষা’ বা ‘মুসলমানি বাংলা’ বলেও চিহ্নিত করেছেন। আনিসুজ্জামান মনে করেন :
ইদানীং এর ভাষাগত বৈশিষ্ট্য 888sport app download for android করে একে দোভাষী পুথি বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ভাষায় তো দুটি ভাষা নয়, বহু ভাষার (বাংলা, হিন্দি, ফারসি, আরবি ও তুর্কি) শব্দ এসে মিলেছে। যেখানে বাঙালি মুসলমান পরিবারে কথোপকথনের ক্ষেত্রে শতকরা পনেরো ভাগের বেশি আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার হয় না, সেখানে গরীবুল্লাহ্র ‘আমীর হামজা’য় শতকরা বত্রিশ ভাগ বিদেশি শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। সুতরাং বিদেশি শব্দবাহুল্যের কথা বিবেচনা করে একে মিশ্র ভাষারীতির কাব্য বলা অসঙ্গত নয় এবং তার অনুসরণে এই কাব্যধারাকেও মিশ্র ভাষারীতির কাব্য বলে অভিহিত করা যেতে পারে।
এখনো দোভাষারীতির কাব্য নামে উপরিউক্ত রচনাগুলো অভিহিত হলেও, এবং এই অভিধা বহুল ব্যবহৃত হলেও, যুক্তির বিচারে আনিসুজ্জামানের সিদ্ধান্তটিই সংগত – এতে সন্দেহ নেই।
বাঙালি মুসলমানের অনাধুনিকতার পেছনে কোনো সজ্ঞান আদর্শানুসরণের যোগ ছিল বলে তিনি মনে করেন না। তরিকা-ই- মুহম্মদী ফারায়েজি আন্দোলনের প্রভাবও মুসলমান লেখকদের মধ্যে দেখা যায়নি। মওলানা কেরামত আলী জৌনপুরীর প্রভাব বরং কিছুটা পড়েছিল।
আনিসুজ্জামান লক্ষ করেছেন, স্যার সৈয়দ আহমদ ও সৈয়দ আমীর আলীর সূচনাকৃত নতুন ভাব-আন্দোলনের প্রভাবে মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা দেখা দেয়, পাশ্চাত্য জীবনাদর্শের প্রতি তাঁদের বৈরিতাও প্রশমিত হয়। মধ্যযুগের 888sport live footballে হিন্দু-মুসলমানের মিলন-প্রয়াস যেমন ছিল, তেমনি স্বাতন্ত্র্য চিন্তারও উন্মেষ প্রত্যক্ষ করা গেছে। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ফলে হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে। আধুনিককালের সমাজ-আন্দোলনেও হিন্দু-মুসলমানের রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হয়।
এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের প্রতি আনিসুজ্জামান দৃষ্টিপাত করেছেন। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সময় উর্দুতে 888sport free bet login লেখার প্রবণতা দেখা দিলেও ক্রমশ বাংলা ভাষায় 888sport live footballচর্চার উপযোগিতার প্রতি মুসলমান লেখকগণ সচেতন হয়ে ওঠেন। নওসের আলীর রচনায়, মিহির-সুধাকরের সম্পাদকীয় 888sport liveে বাংলা ভাষার প্রতি আনুকূল্য প্রকাশ পায়।
আনিসুজ্জামান ১৮৭০ পর্যন্ত বাঙালি মুসলমানের রচনায় মধ্যযুগের অনুবৃত্তি লক্ষ করেছেন। ১৮৭০ থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত সমাজ-রূপান্তরের প্রেক্ষাপটে বাঙালি মুসলমানের চিন্তায় ও রচনায় যে-পরিবর্তন দেখা দেয়, তাকে আধুনিকতার প্রথম স্তর বলে অভিহিত করেছেন।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে, কালের ক্রমবিবর্তনে বাঙালি মুসলমান-মানসের যে-রূপান্তর ঘটেছে, মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live footballে, তার বস্তুনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা আনিসুজ্জামানের অনন্য কৃতিত্ব।
এই সময়ে আরেকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা-কাজ করেছেন আনিসুজ্জামান। তাঁর মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্রে (১৮৩১-১৯৩০) ১৮৩১ সালে বাঙালি মুসলমান-সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা থেকে শুরু করে ১৯৩০ পর্যন্ত মুসলমানদের উদ্যোগে প্রকাশিত-প্রচারিত পত্রিকাগুলোর একটি ধারাবাহিক তালিকা প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন তিনি। এই তালিকা প্রণয়নের জন্য তিনি ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি, কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি, বঙ্গীয় 888sport live football পরিষৎ গ্রন্থাগার, 888sport appর বাংলা একাডেমি ও কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড গ্রন্থাগারের সাহায্য নিয়েছেন। অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহেও তিনি ঈপ্সিত পত্র-পত্রিকার সন্ধান করেছেন। ১৮৩১ সালে প্রকাশিত সমাচার সভারাজেন্দ্র থেকে ১৯৩০ সালে প্রকাশিত সেবকের বাণী পর্যন্ত মোট একশ চল্লিশটি পত্রিকা ও সাময়িকপত্রের সন্ধান আমরা পেয়েছি এই তালিকায়।
এই তালিকা প্রণয়ন করে আনিসুজ্জামান বেশ কিছু কৌত‚হলোদ্দীপক তথ্যও জানিয়েছেন। মুসলমান-সম্পাদিত প্রথম পত্রিকা সমাচার সভারাজেন্দ্র ছিল বাংলা-ফারসি দ্বিভাষিক পত্র। এর কারণও ছিল। ১৮৩৫ পর্যন্ত ফারসি ছিল রাজভাষা। শিক্ষিত মুসলমানরা ফারসিকে নিজেদের ভাষা বলে গণ্য করতেন। কালের পরিবর্তনে ও প্রয়োজনে অন্য ভাষায়ও পত্রিকা প্রকাশ করার তাগিদ দেখা গেল মুসলমানদের মধ্যে। কলকাতার মুসলমানদের জন্য উর্দু, অমুসলমানদের জন্য হিন্দি এবং ইংরেজি রাজভাষা হওয়ার পর এই ভাষারও স্থান হলো সমাচার সভারাজেন্দ্র পত্রিকায়। প্রথম প্রকাশের পনেরো বছর পর বাংলা-ফারসির সঙ্গে ওই তিনটি ভাষা যুক্ত হয়ে সমাচার সভারাজেন্দ্র প্রকাশিত হতে থাকে পাঁচটি ভাষায়। উর্দু-বাংলায় বেশ কিছু দ্বিভাষিক পত্রিকাও এই সময়ে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। উনিশ শতকের শেষার্ধে বাংলায় পত্রিকা প্রকাশের ধারা প্রবল হয়ে ওঠে।
আনিসুজ্জামান শুধু পত্রিকাগুলোর তালিকাই করেননি, বিচার করেছেন এগুলোর ভাষা-বৈশিষ্ট্য; পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত সংবাদ ও সম্পাদকীয় বিশ্লেষণ করে সমকালীন সমাজ-ইতিহাসের স্বরূপ উদ্ঘাটন করারও প্রয়াসী হয়েছেন। সমাচার সভারাজেন্দ্রে প্রকাশিত বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা না গেলেও, পত্রিকার নাম থেকে তিনি অনুমান করেন, এর ভাষা ছিল, ‘তৎসম শব্দবহুল, সমাসবদ্ধ, পণ্ডিতী রীতির।’ নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি লিখেছেন, মুসলমান-সম্পাদিত দ্বিতীয় পত্রিকা জগদুদ্দীপক ভাস্কর-এর ভাষা ছিল অতিরিক্ত সংস্কৃতানুগ। মহাম্মদী আখবরের ভাষা ছিল দোভাষী রীতির সমগোত্র। মিহির ও হাফেজের ভাষা ছিল বাংলা সাধু গদ্যরীতির। পরবর্তীকালে ধূমকেতু ও শিখায় বাংলা কথ্যরীতির প্রতিষ্ঠা ঘটে। পত্রিকাগুলোর ভাষা বিচার করে আনিসুজ্জামান মন্তব্য করেছেন, ‘আরবি-ফারসি শব্দের বহুল ব্যবহার যে মুসলমান সম্পাদিত সাময়িকপত্রের সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল না, একথা নিঃসংশয়ে বলা চলে।’
আনিসুজ্জামান কৌতূহলের সঙ্গে লক্ষ করেছেন, সমাচার সভারাজেন্দ্র বা জগদুদ্দীপক ভাস্করের নামকরণে আরবি-ফারসি প্রভাব ছিল না। এই পত্রিকা দুটির নামকরণে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যজ্ঞাপক চিহ্ন নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে ওহাবি আন্দোলনের পরে। তখন থেকেই মুসলমান-সম্পাদিত পত্রিকাগুলোর নামকরণে আরবি-ফারসির প্রভাব লক্ষ করা গেছে। মহাম্মদী আখবার, আখবারে এসলামীয়া, মুসলমান, মুসলমান-বন্ধু, ইসলাম – এইসব পত্রিকার নামকরণে, তাঁর মতে, ‘স্বতন্ত্র চিহ্ন’ বিজ্ঞাপিত হয়েছে।
উপরিউক্ত একশ বছরের বাঙালি মুসলমান-সম্পাদিত পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, সম্পাদকীয় ও বিভিন্ন 888sport liveের আলোকে আনিসুজ্জামান ওই সময়ের বাঙালি মুসলমানের রাজনীতি-ইতিহাস ও জীবনচেতনার যে-তথ্য উপস্থাপন করেছেন, তা আমাদের সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচ্য। 888sport app দেশের মুসলমানদের কাছে আরবভূমি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এদেশের মুসলমানদের কাছে তখন তুরস্কের গুরুত্ব ছিল সর্বোচ্চে। ১৮৭৭ সালে রাশিয়া তুরস্ক আক্রমণ করলে বাঙালি মুসলমানরা তুরস্কের সঙ্গেই একাত্মতা বোধ করেন। তুরস্কের জন্য অর্থ প্রেরণের আহ্বান সংবলিত রচনা প্রকাশিত হতে থাকে সেই সময়ের পত্র-পত্রিকায়। বলকান যুদ্ধের সময় মেডিক্যাল মিশনের সদস্য হিসেবে তুরস্কে গেলেন ইসমাইল হোসেন সিরাজী। ফিরে এসে রচনা করলেন তুর্কিদের প্রশংসা করে একাধিক পুস্তক।
খিলাফত আন্দোলনের সময় ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে দেখা দেয় ‘হিজরত আন্দোলন’। ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষ ছেড়ে কোনো মুসলমান শাসনাধীন দেশে হিজরত করাই মুসলমানদের কর্তব্য – এই প্রেরণাই ছিল হিজরত আন্দোলনের মূলে। তবে এই ধরনের প্যানইসলামি চিন্তার বিরোধিতাও লক্ষ করা গেছে।
এই সময়ের পত্র-পত্রিকায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও খলিফাদের জীবনী প্রকাশিত হতে থাকে। বিভিন্ন দেশে মুসলিম অধিকার ও মুসলমানদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়েও বাঙালি মুসলমান-সম্পাদিত পত্রিকায় প্রশস্তিসূচক রচনা প্রকাশিত হয়। এই সময়ে বাঙালি মুসলমান ইতিহাসচর্চায় মনোযোগী হলেন বটে, কিন্তু সেই ইতিহাস ছিল কার্যত ইসলাম জগৎকে কেন্দ্র করেই। ভারতবর্ষের ইতিহাস তাঁদের চর্চায় গুরুত্ব লাভ করেনি। এইসব পত্র-পত্রিকার আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যরক্ষা ও ধর্মজীবনে প্রত্যাবর্তনের বিষয়।
উপরিউক্ত সময়ের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্য-চেতনার সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যচিন্তার যোগ ছিল কি? আনিসুজ্জামান মনে করেন, ‘তবু এই চেতনা সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্যবাদের সন্ধান করেনি বলে মনে হয়।’ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় এই সময় হিন্দু-মুসলমানের মিলনের বাণী প্রচার করেছে। কোনো কোনো পত্রিকায় মুসলমানদের প্রতি কংগ্রেসে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাধারণভাবে মুসলমানগণ বঙ্গভঙ্গের সমর্থক হলেও নবনূরে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করা হয়।
হিন্দু-মুসলমানের মিলনপ্রয়াসের বাণী কোনো কোনো লেখকের চিন্তায় ও রচনায় প্রকাশিত হলেও তা সম্ভব হয়নি। অনেকে এর জন্য হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানকে দায়ী করেছেন। 888sport live footballে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নও এই সময়ে প্রবল হয়ে ওঠে।
এই সময়ে মুসলমানগণ নিজেদের স্বাতন্ত্র্য সন্ধানের যে-প্রয়াস করেছিলেন, তার মধ্যে ভাষার প্রশ্নে তাঁদের দ্বিধান্বিত মনোভাব পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। অনেক মুসলমান লেখক বাংলাকে হিন্দুর ভাষা বলে অভিহিত করেছেন, আবার বাঙালি হয়েও নিজেদের মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের মানসিকতার নিন্দাও করেছেন কেউ কেউ। মুসলমান সমাজে আরবি-ফারসির গুরুত্ব নিয়ে যেমন মত প্রকাশিত হয়েছে, তেমনি বাংলা ভাষার প্রতি আনুগত্য প্রকাশের প্রমাণও এই সময়ে পরিলক্ষিত হয়।
বাঙালি মুসলমান লেখকদের ভাবজগতের যে-পরিচয় আমরা মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football এবং মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্রে পেয়েছি, তার আরো কিছু বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর ‘বাঙালি মুসলমান লেখকের ভাবজগৎ’ ও ‘The world of the Bengali Muslim writer in the nineteenth century’ 888sport liveদ্বয়ে। ‘The world of the Bengali Muslim writer in the nineteenth century’ 888sport liveটি উপস্থাপিত হয়েছিল সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের South Asian Studies Seminar-এ। ‘বাঙালি মুসলমান লেখকের ভাবজগৎ’ 888sport liveটিকে উপরিউক্ত ইংরেজি 888sport liveের বাংলাভাষ্য বলা চলে।
মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football এবং মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্রে যথাক্রমে বাঙালি মুসলমানের 888sport live footballরচনায় ও তাঁদের সম্পাদিত পত্র-পত্রিকায় বাঙালি মুসলমানের মানসজগতের যে-পরিচয় আনিসুজ্জামান অনুসন্ধান ও উদ্ঘাটন করেছেন, তারই ক্রমপরিণতি আমরা লক্ষ করি তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য রচনা স্বরূপের সন্ধানেতে।
এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্নের মীমাংসা অত্যন্ত জরুরি – আনিসুজ্জামান কেন মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live footballে এবং মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্রে বাঙালি মুসলমানের স্বরূপ সন্ধান করেছিলেন? এর মধ্যে কি কোনো স্বাতন্ত্র্যচেতনা কাজ করেছিল? তাঁর গবেষণার পূর্বাপর পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, কথিত স্বাতন্ত্র্যচেতনার পরিপোষকতা আনিসুজ্জামানের উদ্দেশ্য নয়। বাঙালি-মানসের যে-পরিচয় আমরা ইতিপূর্বে বিভিন্ন পণ্ডিত-গবেষকের কাছ থেকে পেয়েছি, তাতে বাঙালি মুসলমানের মানসজগৎ প্রায় অনুপস্থিত। অথচ বাঙালি মুসলমান সমগ্র বাঙালিরই অংশ। তাঁদের জীবন ও মানসের সন্ধান না পেলে বাঙালি-মানসের সমগ্রতার সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়। আনিসুজ্জামান বাঙালি-মানসের সেই প্রত্যাশিত সমগ্র রূপই অন্বেষণ ও চিত্রিত করতে চেয়েছেন। এই সত্যটিই প্রতিভাত হয়েছে তাঁর স্বরূপের সন্ধানেতে।
‘স্বরূপের সন্ধানে’ 888sport liveটি পঠিত হয় অক্সফোর্ডের Nuffield College-এর এক সেমিনারে। ‘স্বরূপের সন্ধানে’ সেই 888sport liveেরই ইংরেজি 888sport app download apk latest version। মূল ইংরেজি 888sport liveটি পরে প্রকাশিত হয়েছে ‘Towards a redefinition of identity : East Bengal, 1947-71’ নামে। 888sport liveটির ইংরেজি শিরোনামেই প্রতিভাত হয়, পূর্ববঙ্গের জনগণের স্বরূপ সম্পর্কিত ধারণার পুনর্বিচার নিয়েই আনিসুজ্জামান আলোচনা করেছেন। বাংলা শিরোনামেও বোঝা যায়, পূর্ববঙ্গের জনগণের স্বরূপ-অন্বেষা প্রয়াসই লেখকের লক্ষ্য।
আমরা ইতিপূর্বে মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football ও মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্রের আলোচনায় দেখেছি আনিসুজ্জামান বাঙালি মুসলমানের মানসজগৎ, তাঁদের স্বাতন্ত্র্যবোধ ও স্বরূপ-অন্বেষার নানামুখী প্রবণতা শনাক্ত করার চেষ্টা করেছেন। স্বরূপের সন্ধানেকে তাঁর সেই অনুসন্ধিৎসার ধারাবাহিকতা হিসেবেই বিবেচনা করা যায়।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর, ভারতবর্ষ বিভক্ত হলে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো। এর ফলে, সহস্রাধিক মাইলেরও অধিক দূরত্বের একটি ভূখণ্ডের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক ভাবে সম্পর্কিত হলো এবং বিচ্ছিন্ন হলো ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে – ‘যে অঞ্চলের সঙ্গে পূর্ব বাংলা দীর্ঘদিন ধরে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বহন করে এসেছে।’
এখানে আনিসুজ্জানের প্রশ্ন, ‘পূর্ব বাংলা কি সত্যিই বহন করে এসেছে একই ভাষা-সংস্কৃতির উত্তরাধিকার?’ এই প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেই দেশের ভাষা-সংস্কৃতির কীরূপ হবে এই নিয়ে পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে দ্বিধা-বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এই দ্বিধা-বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়, পাকিস্তান সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই বাঙালি মুসলমান বুদ্ধিজীবীগণ এই রাষ্ট্রের প্রস্তাবিত আদর্শানুযায়ী ভাষা ও সংস্কৃতির রূপ কী হবে – এই নিয়ে অনেক ভাবনা-চিন্তা করেছেন।
আনিসুজ্জামান বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে একটি গৌরববোধের অস্তিত্ব শনাক্ত করেছেন। বাংলা 888sport live footballের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমান শাসকদের ভূমিকা, মধ্যযুগের মুসলমান কবিদের কাব্য রচনা – এইসব বিষয়ে তাঁদের মধ্যে গৌরববোধ ছিল। তবে উনিশ শতকে হিন্দু লেখকদের রচনায় হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রকাশ, তাঁদের 888sport live footballে মুসলমানদের নিত্যব্যবহার্য আরবি-ফারসি শব্দ উপেক্ষিত হওয়া – এইসব কারণে বাঙালি মুসলমানগণ অপ্রসন্ন ছিলেন। বাঙালি হিন্দু লেখকদের রচনায় মুসলমান জীবনের অনুপস্থিতি এবং বহু শ্রদ্ধেয় ঐতিহাসিক মুসলিম চরিত্রকে কলঙ্কিত করার বিষয়েও তাঁদের আপত্তি ছিল।
বাঙালি মুসলমানগণ ভাষার প্রশ্নে দ্বিধান্বিত ছিলেন। ধর্মের ভাষা তাঁদের আরবি, ফারসি মুসলমানদের সংস্কৃতির বাহন, এবং সর্বভারতীয় মুসলমানদের সঙ্গে যোগাযোগের ভাষা হিসেবে উর্দুকে তাঁরা গ্রহণ করেছিলেন। সরকারি ভাষা ইংরেজি, বাংলা তাঁদের জন্মসূত্রে পাওয়া মাতৃভাষা। এতগুলো ভাষার মধ্যে অগ্রাধিকারের প্রশ্নে তাঁরা দ্বিধান্বিত ছিলেন। অনেকে উর্দুকে তাঁদের মাতৃভাষারূপে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। তবে ক্রমশ মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করার প্রবণতা বাড়তে থাকে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রাক্কালে, লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের পর থেকেই পাকিস্তানি জাতীয়তার স্বরূপ সম্বন্ধে কিছু কিছু আলোচনা শুরু হয়। ১৯৪৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান 888sport live football সংসদের বার্ষিক অধিবেশনে আবুল কালাম শামসুদ্দীন বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান শুধু রাজনীতি ক্ষেত্রে নয়, 888sport live footballক্ষেত্রেও রেনেসাঁ নিয়ে এসেছে।’ এই ‘রেনেসা’ চেতনার মধ্যে মুসলমান 888sport live footballিকদের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবোধের বিকাশ ঘটানোর চিন্তা সক্রিয় ছিল। পাকিস্তানের একটি সাংস্কৃতিক আদর্শ নির্মাণ ও জীবনচেতনা প্রতিষ্ঠায় ছিলেন অনেক বুদ্ধিজীবী সক্রিয়। ১৯৪৪ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটির সভায় আবুল মনসুর আহমদ বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballকে অতি উচ্চমানের 888sport live football বলে স্বীকার করেও মন্তব্য করেন, ‘তবু এ 888sport live football পূর্ব পাকিস্তানের 888sport live football নয়।’ তিনি বাংলার মুসলমানের 888sport live footballকে মুসলমানি বাংলা 888sport live football বা পুথি-888sport live football নামে অভিহিত করতে চেয়েছিলেন। এই 888sport live footballের ভাষা সম্পর্কে তাঁর অভিমত ছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানের 888sport live football রচিত হবে পূর্ব পাকিস্তানবাসীর মুখের ভাষায়। সে ভাষা সংস্কৃত বা তথাকথিত বাংলা ব্যাকরণের কোনো তোয়াক্কা রাখবে না।’ বাংলা বর্ণমালাকেও তিনি আবর্জনারূপ পরিত্যাজ্য বিবেচনা করেছিলেন।
পাকিস্তানি সংস্কৃতি ও 888sport live footballাদর্শ সৃষ্টির যে প্রয়াস চলছিল আনিসুজ্জামান তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি কয়েকটি চিন্তা ও প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেছেন। সৈয়দ আলী আহসান পাকিস্তানের জাতীয় ঐতিহ্যের স্বার্থে, প্রয়োজনবোধে, রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। কারণ তাঁর বিবেচনায়, ‘888sport live footballের চাইতে রাষ্ট্রীয় সংহতির প্রয়োজন আমাদের বেশি …।’ আলী আহসান 888sport live footballের উত্তরাধিকার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘পূর্ব বাংলার 888sport live footballক্ষেত্রে আমাদের উত্তরাধিকার হল ইসলামের প্রবহমান ঐতিহ্য, অগণিত অমার্জিত পুথি 888sport live football, অজস্র গ্রাম্যগাথা, বাউল ও অসংস্কৃত অঙ্গের পল্লীগান।’
বাংলাভাষার উৎপত্তি সম্পর্কেও একটি মত তখন প্রচলনের চেষ্টা হয়েছিল। সকল পণ্ডিতের মতে, বাংলা ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর ভাষা হলেও নাজিরুল ইসলাম মোহাম্মদ সুফিয়ান ও গোলাম মোস্তফা একে দ্রাবিড় গোষ্ঠীর ভাষা বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। এই প্রয়াসের মধ্যেও ছিল স্বাতন্ত্র্য চেতনার এক উৎকট প্রকাশ।
তবে এর বিরুদ্ধ মতও আমরা লক্ষ করেছি। ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান 888sport live football সম্মেলনের সভাপতির ভাষণে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মত প্রকাশ করেছিলেন যে, এদেশের 888sport live football হবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়। তিনি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা 888sport app download for android করিয়ে দিয়ে বাংলা অক্ষর বর্জনের চিন্তাকে অগ্রাহ্য করেছেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে, ‘আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশী সত্য আমরা বাঙ্গালী। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব সত্য।’ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌কে তাঁর এই মতের জন্য যথেষ্ট সমালোচিত হতে হয়েছিল।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পর্কে উপরিউক্ত মতামতগুলো ইতিহাসের পাতা থেকে উদ্ধার করে আনিসুজ্জামান সেগুলো বিচার করেছেন। তিনি লক্ষ করেছেন, আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, 888sport live footballের আদর্শ ও সংস্কৃতির রূপ সম্পর্কে বিপরীতমুখী চিন্তার দ্বন্দ্ব কীভাবে সংঘাতময় হয়ে উঠছিল।
১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু এই আন্দোলন শুধু ভাষার অধিকারের প্রশ্নেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আনিসুজ্জামানের মতে, এই আন্দোলন আমাদের সমাজে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করেছে। তবে পাকিস্তানের জন্য একটি কূপমণ্ডূক সাংস্কৃতিক আদর্শ নির্মাণে যাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, তাঁরা রবীন্দ্রশতবার্ষিকী উদ্যাপনে বাধা দেন। এর ফলে বাঙালিদের জাতীয় অহমিকা প্রবল হয়ে ওঠে। আনিসুজ্জামান মনে করেন, ‘এর ফলে রবীন্দ্রনাথকে নয়, বাংলার সমগ্র সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকেই নিজেদের বলে দাবি করার মনোভাব প্রকাশ পেয়েছিল।’
পূর্ব বাংলার জনগণের মনোভাব ক্রমশ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অনুক‚ল হতে থাকে। আবুল মনসুর আহমদ বাংলা বর্ণমালাকে আবর্জনাতুল্য বর্জনীয় বলে মত প্রকাশ করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের 888sport live footballকে আমাদের 888sport live football হিসেবে স্বীকার করতে চাননি। তিনিও ১৯৬২ সালে লিখলেন :
পূর্ব ও পশ্চিম বাঙালিদের ভাষা ও হরফ এক। আমাদের উভয়ের 888sport live footballিক ঐতিহ্য এক। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল ও সত্যেন দত্ত উভয় বাংলার গৌরব ও প্রেরণার বস্তু।
আনিসুজ্জামানের মতে, এই ধরনের পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের ঢেউ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে।’ যুগের পরিবর্তন ঘটছিল। পাকিস্তানি সংস্কৃতির যে ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানি ঐতিহ্যের অবয়ব তৈরি করা হচ্ছিল, তা থেকে দূরে সরে এসে বাঙালি সংস্কৃতির আঙিনায় দৃঢ়বদ্ধ হচ্ছিলেন পূর্ব বাংলার মুসলমান। পাকিস্তানি সংস্কৃতির নতুন রূপরেখা আনিসুজ্জামান শনাক্ত করেছেন আবদুল হকের চিন্তায়। আবদুল হক পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতিতে 888sport free betলঘুদের অবদানকেও সম্পর্কিত ও সমন্বিত করার কথা বললেন। 888sport free betলঘুদের সংস্কৃতিতে অনৈসলামিক বিষয় থাকতে পারে, তাই বলে আমাদের সংস্কৃতির বুননে দেশ-কাল-ইতিহাস-ঐতিহ্যের যে উপাদানসমূহ জড়িয়ে আছে – তাকে তো অস্বীকার করা যাবে না।
পাকিস্তান আমলে বাঙালিত্বের সঙ্গে মুসলমানিত্বের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির অপপ্রয়াসও হয়েছিল। রবীন্দ্রসংগীতকে পাকিস্তানের মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে বেতারে এর প্রচার হ্রাস ও বর্জনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে দুটি পক্ষ সৃষ্টি হয়। আনিসুজ্জামান এই সব ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা কীভাবে পূর্ব বাংলায় ক্রমশ বিকশিত ও বিস্তৃত হচ্ছিল, তার বিবরণ দিয়েছেন।
আনিসুজ্জামান দেখিয়েছেন, বাঙালির ভাষা-888sport live football-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে নানামুখী দ্বন্দ্ব ছিল। বাংলা বানান-সংস্কার নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিয়েছিল, কেউ কেউ ভিন্ন লিপিতে বাংলা লেখার প্রস্তাব করেছিলেন। ভারতীয় সকল ভাষার জন্য একটি লিপি গ্রহণের প্রস্তাবও হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে পূর্ববঙ্গের বিধায়ক সভায় আরবি হরফ বা রোমান বর্ণমালায় বাংলা লেখার প্রস্তাব করেছিলেন হবীবুল্লাহ্ বাহার। পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রীও আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। বর্ণমালা সংস্কারের বিষয়টি শুধু ভাষাতাত্ত্বিক বিবেচনার বিষয় থাকলো না, এই প্রচেষ্টাকে অনেকে বাংলা ভাষাকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করলেন। এই বর্ণমালা সংস্কারের বিরোধিতার মধ্যেও ক্রমপ্রসারমান বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রভাব প্রত্যক্ষ ছিল। আনিসুজ্জামান ইতিহাসের এই ঘটনাবলিকে সন্নিবেশিত করেছেন, অনেকটা তথ্য বিবরণীর মতো করে। নিজের মত খুব উচ্চকিতভাবে প্রকাশ করেননি। তবে বোঝা যায়, যেভাবে তিনি এই ঘটনাবলি বিবৃত করেছেন, তাতে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের বাঙালি হয়ে ওঠার, নিজের স্বরূপকে চেনার প্রয়াসই বিধৃত হয়েছে।
মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live footballে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের প্রথম দুই দশকের মধ্যে রচিত বাঙালি মুসলমানের 888sport live footballকর্মে প্রতিফলিত তাঁদের মানস-পরিচয় অনুসন্ধান করেছেন আনিসুজ্জামান। বাঙালি মুসলমানের মানস গঠনে সমাজ-রাজনীতি-ধর্মচেতনার প্রভাব ছিল। মুসলিম বাংলার সাময়িক পত্রেও উনিশ ও বিশ শতকের বাঙালি মুসলমানের সমাজ-রাজনীতি-বিশ্ববীক্ষা কীভাবে তাঁদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে তা বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। স্বরূপের সন্ধানেতে আমরা দেখলাম পাকিস্তান আমলে পূর্ব বাংলার মুসলমানগণ কীভাবে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া চিন্তা ও দ্বন্দ্বের মীমাংসা করে তাঁদের ভাষাভিত্তিক সত্তাকে প্রধান অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোনো জাতির স্বরূপ-অন্বেষণ সরলরৈখিক নয়। বিশেষত বাঙালি মুসলমানের তো নয়ই। ইতিহাসের বিভিন্নকালে বাঙালি মুসলমান যে-অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে, তাতে তাঁদের স্বরূপ-চিন্তায়ও পরিবর্তন-বিবর্তন ঘটেছে। আনিসুজ্জামানও স্বরূপ-সন্ধানের প্রক্রিয়ার নানা বিষয়কে তাঁর বিবেচনায় এনেছেন।
মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক পরিচয়ের রকমফের নিয়ে আনিসুজ্জামান আলোচনা করেছেন তাঁর ‘Many identities, Some Emphases: The case of Muslims of Bengal down to the eighteenth century’ 888sport liveে। এটি উপস্থাপিত হয়েছিল নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে। তাঁর আলোচনা প্রধানত অষ্টাদশ শতকের বাঙালি মুসলমানের নানামুখী পরিচয় নিয়ে। এই বাঙালি মুসলমানের পরিচয়ের নানাদিক আলোচনা করতে গিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিতের আলোচনা ছাড়াও তিনি সাহায্য নিয়েছেন মধ্যযুগের কয়েকটি 888sport live footballকর্মের।
সামাজিক স্তরবিন্যাসের নিরিখে 888sport appsের বা ভারতীয় মুসলমানদের ‘আশরাফ’ ও ‘আইলাফ বা আতরাফ’ – এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই বিভাজনের মধ্যে আভিজাত্যচেতনা কাজ করে। ধরে নেওয়া হয়, আশরাফগণ বিদেশ, বিশেষত আরব, মধ্য এশিয়া, আফগানিস্তান থেকে আগত। এঁরা সাধারণ সৈয়দ, মোগল বা পাঠান নামে পরিচিত। এই প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান বিপ্রদাস পিপিলাইয়ের কাব্যে সাইয়েদ, মোগল, পাঠানের সঙ্গে মোল্লা-কাজীর উল্লেখের কথা বলেছেন। আশরাফগণ সমাজের অভিজাত এবং আতরাফগণ অনভিজাত ও এদেশীয় বলে গণ্য হতেন।
ঢালাওভাবে ‘আশরাফ’ ও ‘আতরাফ’ নামে অভিহিত হলেও এঁদের মধ্যেও আবার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে বিরোধ ছিল। কয়েকজন আবিসিনীয় মুসলমান হোসেন শাহের হাতে নিহত হন, মোগল-পাঠানের দ্বন্দ্ব তো ছিলই। দ্বন্দ্ব ছিল সুন্নি ও শিয়াদের মধ্যেও। অনভিজাত আতরাফরা ছিলেন স্থানীয়। মুকুন্দরামের কাব্যে এঁদের মধ্যকার বিভিন্ন বৃত্তিজীবীর বিবরণ আছে। আশরাফরা ছিলেন সাধারণত নগরবাসী – তাঁরা থাকতেন বাণিজ্য ও ক্ষমতার কেন্দ্রে। তার অর্থ এই নয় যে, আশরাফ ও আতরাফরা ছিলেন দুই ভিন্ন জগতের অধিবাসী। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হতো। তবে সামাজিকভাবে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব ছিল, একসঙ্গে ওঠা-বসা খুবই কম হতো। এই দুই সামাজিকবর্গের মধ্যে বিয়ের মতো 888sport app বন্ধনও ঘটতো না। অনেক স্থানে আশরাফদের মসজিদে আতরাফদের প্রবেশাধিকার থাকতো না। তবে আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানের পরিবর্তনের ফলে আতরাফরাও আশরাফে পরিণত হতেন। সামাজিক অবস্থানের এই পরিবর্তনের পেছনে কাজ করতো আর্থিক সংগতির উন্নয়ন। এই প্রসঙ্গে একটি প্রচলিত উক্তি উদ্ধৃত করেছেন আনিসুজ্জামান :
গত বছর জোলা ছিলাম, এই বছর হয়েছি শেখ, পরের বছর ফসল ভাল হলে আমি সৈয়দ হয়ে যাব।
এই ধরনের আর্থিক উন্নয়নের ফলে আতরাফগণ আশরাফরূপে স্বীকৃত হতেন কি না সেই তথ্য অনেকটাই অবজ্ঞাত, তবে সমাজের নিম্নশ্রেণি বলে গণ্যদের মধ্যে নিজেদের সামাজিক পরিচয় ও অবস্থান পরিবর্তনের প্রয়াস যে ছিল, সে-কথা নিশ্চিতরূপেই বলা যায়।
এই সময়ের মুসলমানদের সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আনিসুজ্জামান বাংলা ভাষার ব্যবহার সম্পর্কে সমাজে যে-অস্থিরতা ছিল সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। পঞ্চদশ শতকের কবি শাহ মোহাম্মদ সগীর বাংলা ভাষায় কিছু রচনা করার ব্যাপারে অনেকের দ্বিধা ও ভীতির কথা জানাচ্ছেন, আবার তাঁর সমসাময়িক কবি মুজাম্মিল আরবি থেকে ধর্মশাস্ত্র 888sport app download apk latest versionের প্রতিজ্ঞা ঘোষণা করছেন। ইসলামি ধর্মশাস্ত্র বাংলায় 888sport app download apk latest versionের জন্য নিন্দিত হওয়ার কথাও জানিয়েছেন সৈয়দ সুলতান। সপ্তদশ শতকের শেখ মুতালিব ও আবদুল নবী বাংলা ভাষায় ধর্মগ্রন্থ 888sport app download apk latest versionের জন্য পাপকার্যে নিয়োজিত হওয়ার ও আল্লাহ্র অসন্তোষ অর্জনের ভয়ও করেছেন। এই প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান আবদুল হাকিমের কথা উল্লেখ করেছেন। আবদুল হাকিমও ধর্মগ্রন্থ আরবিতে পাঠের ওপরই গুরুত্বারোপ করেছেন, যাঁরা আরবি জানেন না, তাঁরা ফারসি 888sport app download apk latest versionে তা পাঠ করবেন – এই মতও তিনি প্রকাশ করেছেন। যাঁরা এই দুটি ভাষার কোনোটিই জানেন না, তারা ফারসি থেকে অনূদিত বাংলা ভাষ্য পাঠ করতে পারেন – এই অভিমত ছিল তাঁর। তবে বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনকারীদের প্রতি তাঁর তীব্র তিরস্কারপূর্ণ উক্তিও এই প্রসঙ্গে 888sport app download for androidীয়।
মধ্যযুগের 888sport live football অবলম্বনে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে অন্য ধর্মের রীতি-বিশ্বাসের সমন্বয়ও লক্ষ করেছেন আনিসুজ্জামান। তাওরাত ও ইঞ্জিলের সঙ্গে বেদকেও সৈয়দ সুলতান ঈশ্বর-প্রেরিত গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করেছেন। মুসলমান কবিদের মধ্যে অনেকেই রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদ রচনা করেছেন। আনিসুজ্জামানের মতে, বৈষ্ণবদের পরমেশ্বর ভাবনার সঙ্গে সুফিবাদের সাদৃশ্যই সম্ভবত এর কারণ। মুসলমানদের রচনায় এই সময় অনেক পৌরাণিক প্রসঙ্গেরও উল্লেখ দেখা যায়। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সত্যপীর বা সত্যনারায়ণের আনুগত্য লক্ষ করা গেছে; মুসলমান কবিগণ নাথ888sport live football রচনায়ও দ্বিধান্বিত হননি। অনৈসলামিক বিষয়ের প্রতি কয়েকজন মুসলমান কবির এ-ধরনের আগ্রহ যে সকলেই অনুমোদন করেছেন তা নয়।
উপরিউক্ত বিষয়াবলি বিশ্লেষণ করে আনিসুজ্জামান স্বরূপ বা আত্মপরিচয়ের বহুরূপিতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তাঁর মতে, একজন মানুষের পরিচয় একটি নয়, বরং নানা পরিচয়ের আবরণে একজনের স্বরূপ নির্ণীত হতে পারে। ইতিহাস ও সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের চেতনা-চিন্তা ও আত্মপরিচয়ের উপাদানগুলো গঠিত হয় :
A man is many things at once and he has, therefore, many identities rather than one identity. Depending on circumstances or points of reference he usually emphasizes one of these identities, but that should not be seen as his only identity or the identity he may consider most important.
বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় নির্ণয়ে যে-দ্বিধা সক্রিয় ছিল, তার একটি যুক্তিগ্রাহ্য মীমাংসা উত্থাপন করেছেন তিনি। বাঙালি না মুসলমান – এই দ্বন্দ্বের কারণ ছিল দুটি ভিন্ন পরিচয়বর্গকে এক করে দেখার ভ্রান্তি। এই সম্পর্কে তাঁর বিশ্লেষণ :
Many Muslims of Bengal in the late nineteenth and early twentieth centuries were torn between their Muslim and Bengali identities until they realized that these two different categories of identity, not necessarily conflicting ones.
ধর্ম, পেশা, ভাষা ইত্যাদি নানা পরিচয়ের কোনো একটি ইতিহাসের বিশেষ সময়ে প্রধান হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু তার পরিচয়ের বিভিন্ন সত্তাকে স্বীকার করে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। আনিসুজ্জামান স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন :
For a people, there appear periods in history when they emphasize one of the identities. That is why it is important to realize that unity can be achieved, not by forsaking plurality, but in diversity.
বাঙালি, বিশেষত পূর্ব বাংলার মুসলমানদের আত্মপরিচয় অন্বেষণ ও প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আনিসুজ্জামানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য 888sport live ‘The Bengali identity : Its arduous journey’ উপস্থাপিত হয় ২০১০ সালে University of Western Sydney-তে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে। ওই বছরই 888sport liveটির পরিবর্ধিত রূপ ‘বাঙালির আত্মপরিচয়’ উপস্থাপিত হয় 888sport appয় মিসবাহউদ্দিন খান স্মারক বক্তৃতা হিসেবে। এই 888sport liveে বাঙালির আত্মপরিচয় অনুসন্ধানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন আনিসুজ্জামান। ‘বঙ্গ’, ‘বাঙ্গালা’ অভিধার উৎপত্তি সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়ে ‘বঙ্গ’ ও ‘বঙ্গালী’ শব্দদ্বয়ের উপস্থিতির কারণে অনেকেই এই দুটি শব্দকে যথাক্রমে 888sport apps ও বঙ্গবাসী হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আনিসুজ্জামান এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, অনেক পণ্ডিতই ‘বঙ্গালী’ শব্দটিকে বঙ্গবাসী অর্থে গ্রহণ না করে একে সাধনমার্গের একটি পরিভাষারূপে ব্যবহার করেছেন। প্রসঙ্গত, এই মতটি ব্যক্ত করেছেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়ের ভূমিকায়ও সেরকম ইঙ্গিত আছে। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বঙ্গালী’সাধনপদ্ধতির নাম থেকেই জাতি হিসেবে বাঙালি নামের উৎপত্তি বলে যে-মত প্রকাশ করেছেন, আনিসুজ্জামান তা স্বীকার করেননি। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, মুঘল আমলের পূর্বে বাংলার অধিবাসী অর্থে বাঙালি শব্দের প্রয়োগ হয়নি। আনিসুজ্জামান দেখিয়েছেন, বন্দ্যেঘটীয় সর্বানন্দ দ্বাদশ শতকে টীকাসর্বস্ব নামে অমরকোষের যে টীকাভাষ্য রচনা করেছিলেন, তাতে অশিষ্ট বঙ্গবাসী অর্থে ‘বঙ্গালবচ্চার’ প্রয়োগ করা হয়েছে। চতুর্দশ শতকের বাংলার সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহকে শাহ-ই-বঙ্গালাহ, সুলতান-ই বঙ্গালাহ নামে অভিহিত করেছেন তাঁর সমসাময়িক ইতিহাসবিদগণ। সুকুমার সেন ‘বঙ্গ’ জাতি নামটি আর্যাবর্ত নামকরণের চেয়েও প্রাচীন বলে উল্লেখ করেছেন। আনিসুজ্জামান বিভিন্ন ঐতিহাসিক সাক্ষ্য ও 888sport live footballের প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, ষোড়শ শতকেই অধিবাসী ও বাংলাভাষী – এই উভয় অর্থেই বাঙালি নামটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
888sport live footballে, বিশেষত ধর্মগ্রন্থ 888sport app download apk latest versionে বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিয়ে বাঙালি মুসলমান লেখকদের দ্বিধার কথা এই 888sport liveেও আনিসুজ্জামান উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, বাঙালিরা ভাষা-সংস্কৃতি ও দেশের সঙ্গে নিজেদের দৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত করার প্রয়াস করেছে উনিশ শতক থেকে। এই প্রসঙ্গে তিনি ঈশ্বরগুপ্তের স্বদেশপ্রেম, মধুসূদনের ভাষাপ্রীতির কথা বলেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র, তাঁর মতে, বাঙালির বহুত্ব ও ঐক্য উপলব্ধি করেছিলেন; রবীন্দ্রনাথ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন ভাষার ওপর। বঙ্গভঙ্গের সময় বাঙালির ঐক্য যে চরম শিখরে পৌঁছেছিল, তার জন্য রবীন্দ্রনাথের ভূমিকাকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান এই কথা উল্লেখ করতে ভোলেননি যে, রামমোহন থেকে সুভাষ বসু পর্যন্ত বাঙালি নেতৃবৃন্দ ভারতীয় জাতীয়তার সাধনা করেছেন। ফলে :
বাঙালির পরিচয়কে এইসব অন্য পরিচয়ের সঙ্গে – ভারতীয়, হিন্দু ও মুসলিম পরিচিতির সঙ্গে – পাল্লা দিতে হয়েছে।
আনিসুজ্জামান মনে করেন :
ঔপনিবেশিককালের বাংলায় বাঙালিত্বের শক্তিপ্রদর্শনের শেষ মহামুহূর্ত এসেছিলে ১৯২৩-২৪ সালে – যখন চিত্তরঞ্জন দাশের (১৮৭০-১৯২৫) অধিনায়কত্বে বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতারা বেঙ্গল প্যাক্টে স্বাক্ষর করেন। এতে যে সম্ভাবনার দ্বার খুলে গিয়েছিল, চিত্তরঞ্জনের অকালমৃত্যুতে তা রুদ্ধ হয়ে গেল।
১৯৪৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাসিম, শরৎচন্দ্র বসু ও কিরণশঙ্কর রায়ের উদ্যোগে ভারত ও পাকিস্তানের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা প্রতিষ্ঠার যে-পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাও ব্যর্থ হয় হিন্দু মহাসভা, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের বিরোধিতার কারণে।
বাঙালির ঐক্যসাধনার ব্যর্থতার এই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে আনিসুজ্জামান লক্ষ করলেন, স্বাধীন ভারতের বাঙালি অধিবাসীরা ভারতীয় সত্তার সঙ্গে নিজেদের সমন্বিত করতে পেরেছে। কিন্তু পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত বাঙালিদের নতুন এক সংগ্রামের পথ ধরতে হলো নিজেদের সত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। পাকিস্তান আমলে সংঘটিত বিভিন্ন আন্দোলনের পর্যায়ক্রমিক নানা দিক উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করছেন :
বাঙালির আত্মপরিচয়ের জন্য 888sport appsের প্রতিষ্ঠা ছিল বড় এক অগ্রগতি। এখানে ভাষা ও অঞ্চলের অভূতপূর্ব মিলন ঘটল। 888sport appsের অভ্যুদয়ে সমজাতীয়তার ভাব এত প্রবল হল যে, দেশে যে 888sport app নৃতাত্ত্বিক জনসমষ্টি বাস করে, সে-কথা লোকে ভুলে গেল।
এই প্রসঙ্গে বাঙালি জাতীয়তার প্রশ্নটি আবার নতুন করে ভাবতে হলো আনিসুজ্জামানকে। বাঙালির, বিশেষত বাঙালি মুসলমানের, স্বরূপ-অন্বেষণ করতে গিয়ে তিনি কোনো রকম অনমনীয় মনোভাব বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। বাঙালি জাতীয়তাবাদে তাঁর আস্থা ছিল, গবেষণালব্ধ উপাত্ত ও তথ্য ব্যবহার করে তিনি এই জাতীয়তাবাদের পক্ষে যুক্তি ও সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করেছেন; কিন্তু এই প্রশ্নে সমাজে বিরাজমান 888sport app দ্বন্দ্ব সম্পর্কেও তিনি সচেতন ছিলেন। 888sport appsের স্বাধীনতার পর বাঙালি জাতীয়তবাদের ধারণাটি প্রশ্নের মুখোমুখি হয়। পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ এই পরিচয়ের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করেন। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা গণপরিষদে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ তাঁদের চাকমা, মার্মা ইত্যাদি পরিচয় বিসর্জন দিতে রাজি নন, তাঁরা ‘জুম্ম জাতি’ নামে পরিচিত হতে চান। এই প্রশ্নে আনিসুজ্জামান নীরব থাকেননি। সমস্যাটির গভীরতা ও যথার্থতা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ কিংবা 888sport appsি জাতীয়তাবাদকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তাতে চাকমাদের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয় – এই বাস্তবতা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। ১৯৯৫ সালে কলকাতার Maulana Abul Kalam Azad Institute of Asian Studies-এ ‘Identity, Religion and Recent History’ শীর্ষক যে-বক্তৃতা করেছিলেন তাতে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন :
We cannot include them within the fold of either Bengalee nationalism or Bangladeshi nationalism as these have been formulated. …
Whether the hillsmen are a conglomerate of tribes or a nation is a separate question altogether, but the fact remains that they are different from the plainsmen. These otherness must be respected even when they are few in number, even when it makes us less homogeneous.
পার্বত্য-জনগণের স্বকীয় জাতীয় চেতনার দিকটি আমরা অনেকেই উপলব্ধি করিনি। ফলে, এই সম্পর্কে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। আনিসুজ্জামান নিজে বাঙালি জাতীয়তাবাদের একজন অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও উগ্র বা আগ্রাসী জাতীয়তাবাদের ধারণাটি গ্রহণ করেননি। পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন উপজাতির সমন্বয়রূপে বিবেচনা করা বা তাঁদের একটি জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নটি আলোচনা না করেও তিনি তাঁদের স্বাতন্ত্র্য স্বীকার করে নিতে চান। এর ফলে আমাদের সমজাতীয়তার ধারণাটি খানিকটা ক্ষুণ্ন হলেও তা মেনে নেওয়া সংগত বলেই মনে করেছেন। তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ যে আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামকে উজ্জীবিত ও সফল করেছে তা সকলেরই, এমনকি পার্বত্য জনগোষ্ঠীরও মেনে নেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন :
It must also be acknowledged by all, including the hillsmen, that the War of Liberation was inspired Bengalee nationalism that grew from strength to strength between 1952 and 1971.
আমাদের জাতিসত্তার পরিচয় নিয়ে যতই তর্ক থাকুক না কেন, 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল প্রেরণা যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ – এই সত্যটিই দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছেন আনিসুজ্জামান।
আনিসুজ্জামান বাঙালি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা শঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। নৃতাত্তি¡ক 888sport free betলঘুদের অন্তর্ভুক্ত করার যুক্তিতে সংবিধানে ‘বাঙালি’র বদলে ‘888sport appsি’ শব্দ সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু 888sport appsি জাতীয়তাবাদের পক্ষে যে-যুক্তিগুলো প্রদর্শন করা হয়, আনিসুজ্জামানের মতে, ১৯৪০-এর দশকে মুসলিম লীগ দ্বিজাতিতত্তে¡র যে-ব্যাখ্যা দিয়েছিল তার সঙ্গে তা অভিন্ন। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য :
পাকিস্তান আমলে যে কারণে কিছু লোক বলতেন তাঁরা বাঙালি নন, পাকিস্তানি, সেই একই মানসিকতার বশবর্তী হয়ে এখন অনেকে বলতে আরম্ভ করলেন, তাঁরা বাঙালি নন, 888sport appsি। নাগরিকত্বের পরিচয় এবং নৃতাত্ত্বিক পরিচয়কে স্বতন্ত্র ধারায় দেখলে বাঙালি ও 888sport appsির মধ্যে বিরোধের সুযোগ থাকে না।
বাঙালির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস আনিসুজ্জামান সার্থকতার সঙ্গেই বিবৃত করেছেন তাঁর বিভিন্ন রচনায়। বাঙালি তাঁর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি নিষ্ঠাবান আনুগত্য দেখিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করবে, নিজেদের বিকাশের পথ দৃঢ়তর করবে – এই প্রত্যাশা ছিল তাঁর। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁর প্রত্যাশা বিচলিত হয়েছে, স্বপ্নভঙ্গও হয়েছে। বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি সমকালে যে-উদাসীনতা দেখা দিচ্ছে তাতে বিচলিত হয়েছেন তিনি :
888sport appsে অবশ্য বাঙালি আত্মপরিচয় সমুন্নত রাখার চেষ্টাতেই যথেষ্ট পরিমাণে দুর্বল হয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় কাজে এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ক্রমহ্রাসমান ব্যবহারে তার পরিচয় পাওয়া যাবে বিশেষ করে। … রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের শহিদদের প্রতি এখনও উদ্দীপনাসহকারে 888sport apk download apk latest version জানানো হয়, বাংলা নববর্ষ ক্রমবর্ধমান উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয়, কিন্তু বাংলা ভাষার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের যোগ ক্রমে বিলীয়মান হয়ে পড়েছে।
তাঁর এই পর্যবেক্ষণ ভারতের নব-প্রজন্মের বাঙালিদের সম্পর্কেও। গত কয়েক দশক ধরে 888sport apps ও ভারত থেকে অন্যভাষী অঞ্চলে বাঙালিদের অভিবাসন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে এই অভিবাসী বাঙালিদের সম্পর্ক ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে উঠছে। বিশ্বায়ন, কোনো না কোনো ধরনের মৌলবাদ, বিচ্ছিন্নতা – এই সব কারণে, আনিসুজ্জামানের মতে, ‘আজ বাঙালি আত্মপরিচয় নানারকম হুমকির মুখে …।’ তবে তিনি আশাবাদী :
আমার আশা, বাঙালি আত্মপরিচয়ের অপরাজেয় ভাব সকল প্রতিকূল অবস্থাকে অতিক্রম করে যাবে। ব্যক্তির ও সমষ্টির আত্মপরিচয়ের নানারকম সংঘাত ঘটতে পারে ভবিষ্যতে, তবে আমি নিশ্চিত যে, বিশ্বজনীন মানব পরিচয়ের সঙ্গে তার কখনো বিরোধ হবে না।
বাঙালির আত্মপরিচয়-সন্ধানী এই গবেষক ও 888sport appsপ্রেমীর উপরিউক্ত দৃঢ় বিশ্বাসই আমাদের পথের দিশারী হয়ে থাকবে।
আনিসুজ্জামান তাঁর বিশ্বাসে ও কর্মে ছিলেন নিরঙ্কুশ অসাম্প্রদায়িক। 888sport appsের ইতিহাসের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তিনি যেসব আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন সেগুলোর লক্ষ্য ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক দেশ ও সমাজ গড়ে তোলা। 888sport appsের ধর্মান্ধ শক্তির মতাদর্শ ও কর্মপরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন তিনি নির্ভীকভাবে, অনেক সময় ঝুঁকি নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে গঠিত প্রতীকী গণআদালতে তিনি অভিযোগনামা পাঠ করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন একজন মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে তিনি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে গবেষণামূলক-যুক্তিনির্ভর 888sport live ও পুস্তিকাও লিখেছেন। তাঁর বিশ্বাসকে তিনি অধ্যয়ন ও গবেষণার বিষয়েও পরিণত করেছেন।
আনিসুজ্জামান তাঁর ‘সাম্প্রদায়িকতার ভাবাদর্শ’ 888sport liveে উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ ও ইতিহাস বিবৃত করেছেন বিস্তারিতভাবে। সাম্প্রদায়িক শব্দটির কথাটি সম্প্রদায়গত অর্থে ব্যবহৃত হলেও পরে এর অর্থ পরিবর্তিত হয়ে সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি অর্থে ব্যবহৃত হতে থাকে। সাম্প্রদায়িকতার ভাবাদর্শ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ888sport apkী পিটার লেওনার্ডের মত পর্যালোচনা করেছেন। লেওনার্ড মনে করেন, মাতৃগর্ভে থাকার সময়ই শিশুর ওপর তার পিতামাতার ভাবাদর্শ প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। পরে সমাজের ভাবাদর্শ ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের নানা আদর্শ সে গ্রহণ করে। শিশুটি বড় হওয়ার পর যদি ধর্মের নৈতিক শিক্ষার প্রতি অনুগত না হয়ে ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যকে বড় করে দেখে তবে সে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে প্রভাবিত হয়ে পড়ে।
এই প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান এডওয়ার্ড শিল্‌সের মতও উল্লেখ করেছেন। শিল্সের মতে, সপ্তদশ শতক থেকে প্রত্যেক ভাবাদর্শেরই রাজনীতি সম্পর্কে একটি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। কিন্তু উনিশ শতকের পর প্রত্যেক ভাবাদর্শই রাজনীতিপ্রধান হয়ে ওঠে।
শিল্স পাশ্চাত্যদেশের প্রেক্ষাপটে এই কথা বললেও আনিসুজ্জামান মনে করেন, আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ সম্পর্কেও তা প্রযোজ্য। তিনি মনে করেন, ধর্মকেও একটি ভাবাদর্শ হিসেবে দেখা যায়, কিন্তু ধার্মিকতা ও সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য আছে। যিনি ধার্মিক তিনি ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন করেন, তার শ্রেষ্ঠত্বেও আস্থাও স্থাপন করেন, কিন্তু অন্যের ধর্ম পালনে বাধা দেন না। যিনি সাম্প্রদায়িক তিনি ধর্মপালনের চেয়ে নিজে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করতে বেশি উৎসাহী থাকেন, অন্য ধর্মের বিশ্বাস-আচার-অনুষ্ঠানের অসারতা প্রমাণে তৎপর থাকেন ও সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসীদের সেগুলো পালনে বাধা দেন। সাম্প্রদায়িক কীভাবে তার ভাবাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করে তার ব্যাখ্যা করেছেন আনিসুজ্জামান :
সাম্প্রদায়িক বলতে কী বা কাদের বোঝাবে, তার অর্থ কীভাবে রক্ষিত হবে বা বৃদ্ধি পাবে, সাম্প্রদায়িক তা স্থির করেন এবং তাঁর এই বীক্ষণই পৃথিবীর ওপরে চাপিয়ে দিতে চেষ্টিত হন। প্রচলিত ব্যবস্থায় বা সংস্কৃতিতে যদি নিজের ভাবাদর্শ বা তার কোনো উপাদান গুরুত্ব না পায়, তখন তিনি সেই ব্যবস্থা বা সংস্কৃতিকে হেয় করেন, তার বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ চালিয়ে যান এবং সেই মূলধারার গুরুত্বহীন ভাবাদর্শ বা উপাদানকে প্রতিষ্ঠা করা তাঁর কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হয়ে ওঠে।
ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা, শিয়া ও আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণার জন্য এদেশে একশ্রেণির মানুষের দাবির মধ্যে আনিসুজ্জামান সেই ধরনের মানসিকতারই প্রকাশ লক্ষ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর 888sport appsের অন্যতম রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে যখন প্রতিষ্ঠা করা হলো, তখন জনগণের একাংশ তা পছন্দ করেননি। এই শ্রেণির মানুষ প্রচার করতে থাকেন যে, এর ফলে ইসলাম ধর্মের গুরুত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে। এঁরা ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধিতা করেছেন, এখনো করছেন। আনিসুজ্জামান মনে করেন একই যুক্তিতে তাঁরা বাঙালি সংস্কৃতিকে অপাঙ্‌ক্তেয় মনে করেন এবং তাকে খণ্ডিত করার চেষ্টা করেন।
সাম্প্রদায়িক রাজনীতি 888sport appsের ধর্মনিরপেক্ষতাকে কীভাবে ক্ষুণ্ন করেছে তা ব্যাখ্যা করেছেন আনিসুজ্জামান। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াসের বিরোধিতা করেছেন, এই নিয়ে আদালতে যে-মামলা হয়েছে তার অন্যতম বাদীও ছিলেন তিনি। তাঁর মতে, ‘এর মধ্যে যে ভেদবুদ্ধি কাজ করেছে, তা সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শগত এবং দেশের জন্য তা কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি।’ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করার ফলে অমুসলিম নাগরিকগণ দেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছেন – এই সত্যটিও উল্লেখ করেছেন তিনি। 888sport appsের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ পাহাড়িদেরও 888sport appsের পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দিতে ইচ্ছুক নন। এ-ধরনের একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেছেন :
সম্প্রতি এক রাজনৈতিক নেতা বলেছেন, পাহাড়িরা আমাদের মত দেখতে নয়, তাই তারা এদেশের পূর্ণ নাগরিকের মর্যাদা দাবি করতে পারেন না। হিটলারের নৃতাত্ত্বিক ভাবাদর্শের সঙ্গে এই ভাবাদর্শ বেশি দূরের নয়।
ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে সম্পর্কিত করার প্রবণতাকে অনেকেই মৌলবাদ বলে অভিহিত করেছেন। আনিসুজ্জামান এই রাজনীতি বা বিশ্বাসকে মৌলবাদ নামে অভিহিত করাকে যুক্তিসংগত মনে করেননি। তিনি ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজমের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেছেন। উনিশ শতকে ডারউইনের বিবর্তনবাদ খ্রিষ্টীয় সৃষ্টিতত্ত্বকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। খ্রিষ্টীয় ধর্মতাত্ত্বিকগণ এর পরিপ্রেক্ষিতে বাইবেলের নতুন ব্যাখ্যা দিতে প্রবৃত্ত হন। এরই প্রতিক্রিয়ায় প্রোটেসট্যান্টবাদের মূল বিশ্বাসগুলোকে ধরে রাখার জন্য খ্রিষ্টীয় মৌলবাদের সূচনা হয় ১৯২০ সালের দিকে। এর আদলে ইহুদি মৌলবাদ দেখা দেয় ১৯৫০-এর দশকে। ’৭০-এর দিকে দেখা দেয় ইসলামি মৌলবাদ নামে অভিহিত এ-কালের আন্দোলন।
আনিসুজ্জামান এই সময়ের ইসলামি আন্দোলনকে মৌলবাদ হিসেবে অভিহিত করতে চান না – ঐতিহাসিক কারণেই। ইসলামের আদি বিশুদ্ধতায় ফিরে যাওয়ার আন্দোলন শুরু হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে। ভারতে শাহ ওয়ালিউল্লাহ এবং আরবদেশে আবদুল ওয়াহাব এই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এই আন্দোলন ওয়াহাবি আন্দোলন নামে খ্যাত হয়। বঙ্গদেশে তিতুমীরের সংগ্রামে এবং হাজি শরীয়তউল্লাহ ও তাঁর পুত্র দুদু মিয়ার নেতৃত্বাধীন ফারায়েজি আন্দোলনে তার প্রকাশ ঘটে। আদি ইসলামে প্রত্যাবর্তনের সেই আন্দোলনের সঙ্গে বর্তমানে ইসলামি মৌলবাদ নামে অভিহিত আন্দোলন বা রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বিশ্বাসের কোনো সাযুজ্য নেই। বর্তমানে যে-ভাবাদর্শকে মৌলবাদ হিসেবে অভিহিত করা হয়, আনিসুজ্জামান তাকে সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ নামে চিহ্নিত করার পক্ষপাতী। তিনি লক্ষ করেছেন, এই সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শ দেশের মানুষকে ক্রমশ বিভক্ত করছে। বিভক্তি দেখা দিচ্ছে মুসলমানে-অমুসলমানে, 888sport promo code-পুরুষে, সমতলবাসী-পাহাড়িতে। গ্রামাঞ্চলে ফতোয়ার নামে চলছে 888sport promo code-নিপীড়ন।
ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করার বিপদ সম্পর্কে আনিসুজ্জামান সবসময়ই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। 888sport appsে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ আজ প্রায় নির্বাসিত। আমাদের রাষ্ট্রীয় আদর্শে ও সমাজচিন্তায় এই আদর্শের পুনরুজ্জীবন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলনের সূচনা হচ্ছে না বলে তিনি কিছুটা হতাশাও ব্যক্ত করেছেন। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও 888sport apps’ 888sport liveে তিনি এই প্রসঙ্গে বলেছেন :
সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ সীমাবদ্ধ ক্ষমতা নিয়েও দাঁড়িয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক শক্তিগুলো কিন্তু ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের সৃষ্টি করতে সমর্থ হননি। বরঞ্চ ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো যেন নিজেদের – দল, নেতা ও কর্মীর – ধর্মীয় ভাবমূর্তি তুলে ধরতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখানেই আমাদের বড় সংকট। দেশে যখন ধর্মভিত্তিক রাজনীতির হাওয়া প্রবল ছিল, তখন আমাদের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাজনৈতিক নেতারা বৈরী পরিস্থিতিতেও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন এবং মানুষকে সেই আদর্শের দিকে নিয়ে গেছেন। অনুকূল পরিবেশ পেয়েও আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ধরে রাখতে পারলাম না এবং যে ধর্ম ব্যক্তিগত জীবনের বিষয়, তাকে প্রকাশ্যে এনে একধরনের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে উন্মুখ হলাম।
আনিসুজ্জামানের বিশ্বাস ছিল, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বিপন্ন হলে গণতন্ত্রও বিপদাপন্ন হবে। এই জন্য ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি :
আমরা যারা বিশ্বাস করি, ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া গণতন্ত্র হয় না, গণতন্ত্র ছাড়া 888sport appsের অগ্রগতি অসম্ভব, তাদের কর্তব্য নিজের সবকিছু দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে যুদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা।
আনিসুজ্জামান ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় রচিত প্রায় হাজার চারেক চিঠি ও দলিল আবিষ্কার করেছেন। বাংলা গদ্যরচনার এই বিপুল সংগ্রহ শুধু আবিষ্কারের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বাংলা গদ্যের ইতিহাস সম্পর্কেও এই চিঠি-দলিলের সংগ্রহ একটি নতুন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিয়েছে। এছাড়া বাংলার সামাজিক ইতিহাস, বিশেষত অর্থনৈতিক ইতিহাসেরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক এর ফলে উন্মোচিত হয়েছে। এই চিঠি ও দলিলগুলোর একটি বিবরণধর্মী তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন তিনি Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Office library and Records নামে। পরে এর একটি সম্পূরক খণ্ডও প্রকাশিত হয়েছে। এই তালিকা করতে গিয়ে আনিসুজ্জামান প্রাপ্ত চিঠিপত্র ও দলিলগুলোর গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন। ১৭৭৪ থেকে ১৮১৪ – এই চল্লিশ বছরের প্রায় চার হাজার চিঠি ও দলিল ছিল এই সংগ্রহে। বাংলা ভাষায় লেখা এত বিপুলসংখ্যক চিঠি ও দলিলের সংগ্রহ এর আগে পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে দু-হাজার মামলার দলিল পাওয়া গেল। এই দলিলগুলো যে সময়ের, সেই সময় আদালতে তিনটি ভাষা প্রচলিত ছিল। মামলার সওয়াল-জওয়াব হতো বাংলা ভাষায়, জুরিগণ তাঁদের মতামত দিতেন ফারসিতে আর বিচারক তাঁর রায় প্রকাশ করতেন ইংরেজিতে। মামলার বিবরণ ছাড়াও ইংরেজদের বস্ত্র উৎপাদন কারখানা ও আড়ংয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যে-পত্রবিনিময় হতো সেরকম প্রায় দু-হাজার চিঠি পাওয়া গেল এই সংগ্রহে। আবিষ্কৃত চিঠিপত্র-দলিলের কয়েকটি সংকলিত হয়েছে তাঁর আঠারো শতকের বাংলা চিঠি বইতে। এইসব চিঠি ও দলিলের ভাষা বিচার করে তাঁর পুরোনো বাংলা গদ্য বইতে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বাংলা গদ্যের উদ্ভাবন ও প্রচলনে ফোর্ট উইলিয়াম-পণ্ডিতদের ভূমিকার বিষয়টি ইতোপূর্বে যতটা গুরুত্বের সঙ্গে বলা হতো, প্রকৃত অবস্থা তা নয়।
ফোর্ট উইলিয়াম-পণ্ডিতদের বাংলা গদ্য রচনা প্রয়াসের আগেও বাংলা গদ্যের একটি প্রাঞ্জল ধারা ছিল। আঠারো শতক পর্যন্ত বাংলা গদ্যের ব্যবহার শুধু চিঠিপত্র বা দলিল-দস্তাবেজে সীমাবদ্ধ ছিল – এরকম ধারণাই পোষণ করতেন অনেকে। আনিসুজ্জামান এই ধারণাটি নতুনভাবে বিচার করতে উদ্বুদ্ধ হলেন। বাংলা গদ্য ব্যবহারের বিভিন্ন নিদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ধর্মসাধনার তত্ত্বগত দিকও বাংলা গদ্যে রচিত হয়েছে। ষোড়শ শতক থেকে বাংলা গদ্যের যে-নমুনাগুলো পাওয়া গেছে সেগুলোর পর্যায়ক্রমিক ভাষাবৈশিষ্ট্য বিচার করেছেন আনিসুজ্জামান। শূন্যপুরাণ, সেকশুভোদয়া, শঙ্করদেবের নাটকসমূহ, ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দে অহোম-নৃপতি চুকাম্ফা স্বর্গদেবকে লিখিত কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের পত্র, বৈষ্ণব সহজিয়া সাধকদের গদ্যরচনা ও সপ্তম শতকের কয়েকটি রচনার ভাষা বিচার করেছেন তিনি বাংলা গদ্যের উদ্ভবপর্ব সম্পর্কে তাঁর সিদ্ধান্ত প্রকাশের প্রমাণ ও যুক্তি হিসেবে।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, আনিসুজ্জামান ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে স্বরোদয় নামে একটি রচনার দুটি পুথির সন্ধান পেয়েছিলেন, ব্লুমহার্টের পুথি-তালিকাসূত্রে। স্বরোদয় মূলত একটি সংস্কৃত রচনার 888sport app download apk latest version। ব্লুমহার্ট এর রচয়িতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন দর্পনারায়ণ ঠাকুরের পুত্র অনন্তধনের নাম। আনিসুজ্জামানের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাটুরিয়াঘাটার ঠাকুর পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা দর্পনারায়ণ ঠাকুরের সাত সন্তানের মধ্যে অনন্তধন নামে কেউ ছিলেন না। অনন্তধন নামে মুর্শিদ কুলি খাঁর একজন কানুনগো ছিলেন। স্বরোদয় তাঁর রচনা হলে, এটি অষ্টাদশ শতকে রচিত ও লিপীকৃত হতে পারে। ব্লুমহার্টও এর লিপিকাল অষ্টাদশ শতক বলে উল্লেখ করেছেন, তবে এর রচনাকাল উল্লেখ করেননি। কিন্তু পুথির ভণিতায় ‘বর্ত্তমানয়ে যে লিখে ১৪৫০ শকে’ – এই তথ্যের ভিত্তিতে আনিসুজ্জামান মনে করেন এর রচনাকাল ১৪৫০ শকাব্দে বা ১৫২৮ খ্রিষ্টাব্দে। এর ভিত্তিতে তাঁর সিদ্ধান্ত স্বরোদয়ই বাংলায় রচিত প্রথম গদ্য-নিদর্শন। সুকুমার সেনের সূত্রে এতদিন ধরে আমরা জেনে এসেছি, ১৫৫৫ খ্রিষ্টাব্দে অহোম-নৃপতি চুকাম্ফা স্বর্গদেবকে লিখিত কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের পত্রই বাংলা গদ্যরচনার প্রাচীনতম নিদর্শন। আনিসুজ্জামানের সিদ্ধান্ত মেনে নিলে, স্বরোদয়কেই প্রাচীনতম বাংলা গদ্যরচনার নিদর্শন হিসেবে স্বীকার করে নিতে হয়। এই পুথির কোনো 888sport live footballিকমূল্য না থাকলেও, আনিসুজ্জামান মনে করেন, পদ্যরচনার যুগে গদ্যে রচিত একটি পুথি হিসেবে এটি টিকে থাকবে :
In the process was made a work of prose in the age of poetry. The work has no literary merit. It has survived by accident. It may survive as the earliest specimen of Bengal prose.
আনিসুজ্জামানের বিবেচনায় স্বরোদয়ের পুথিটির ভাষা অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধের পূর্বের নয়। এর দ্বিতীয় পুথিটি পদ্যে রচিত।
বৈষ্ণবদের কিছু তাত্ত্বিক রচনার সন্ধানও পাওয়া গেছে গদ্যে। বাংলা গদ্যের বিকাশধারা পর্যবেক্ষণ করে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে :
বৌদ্ধ সহজযানী সাধকেরা যেমন বাংলা কাব্যক্ষেত্রে পথিকৃত ছিলেন, ভাবের গদ্যরচনায় তেমনি পথিকৃত ছিলেন বৈষ্ণব সহজিয়া সাধকেরা।
আনিসুজ্জামানের পূর্বেও বাংলা গদ্যের বেশকিছু নিদর্শন আমরা পেয়েছি। শিবরতন মিত্র, ডা. সুরেন্দ্রনাথ সেন, পঞ্চানন মণ্ডল ও সুধাংশু তুঙ্গ প্রাচীন বাংলা গদ্যের সংকলন প্রকাশ করেছেন। সুধাংশু তুঙ্গের সংকলনে আমরা পেয়েছি অসমে প্রাপ্ত বাংলা গদ্যের কিছু নিদর্শন। ‘সুরুল নথি সংকলনে’ও বেশ কিছু বাংলা গদ্যের নিদর্শন আছে। কিন্তু 888sport free betর বিপুলতায় আনিসুজ্জামানের Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Office library and Records-এ উল্লিখিত বাংলা দলিল ও চিঠি অনেক সমৃদ্ধ। এগুলোর সামাজিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বও এই সঙ্গে স্মর্তব্য।
Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Office library and Records-এ উল্লিখিত চিঠিপত্র ও দলিল-দস্তাবেজের ভাষা বিচারও করেছেন তিনি। ইংরেজ-রচিত বাংলা রচনাসমূহের গদ্যভঙ্গিও বিচার করেছেন। চিঠিগুলোর ভাষাবৈশিষ্ট্য বিচার করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করলেন, ফ্যাক্টরির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আড়ংয়ের অধস্তন কর্মচারীদের মধ্যকার এই চিঠিগুলো অনেকটা আনুষ্ঠানিক পত্রের মতোই। ফারসি শব্দ ও বাকভঙ্গির প্রভাব আছে চিঠিগুলোতে। আরবি ও হিন্দুস্তানি শব্দও আছে, পূর্ববঙ্গের আঞ্চলিক শব্দ ও বাকভঙ্গিও দুর্লক্ষ নয়। চিঠিগুলোর ইরেজি সারসংক্ষেপেও ফারসি-আরবি ও হিন্দুস্তানি শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়েছে, যেমন : আমানত, ফাজিল, দরখাস্ত, রকমফের ইত্যাদি। অষ্টাদশ শতকের শেষ ও ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিককার ভাষাবৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আনিসুজ্জামানের আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ – এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আনিসুজ্জামান প্রাপ্ত চিঠিপত্র ও দলিলগুলোর বিপুলতা ও ভাষাবৈশিষ্ট্য বিচার করে বাংলা গদ্যের সূচনায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ভূমিকা সম্পর্কে যে অতিরিক্ত গুরুত্বারোপের প্রবণতা তাকে তিনি খণ্ডন করে বলেছেন :
নতুন দিনের সমারোহ পুরোনোকে সহজেই ভুলিয়ে দিল। এমন করে ভুলিয়ে দিল যে নতুন দিন যে প্রথম দিন নয়, সেকথা এখন নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
বাংলা গদ্যের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেই তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত সীমাবদ্ধ রাখেননি। চিঠিগুলোতে প্রাপ্ত তথ্যাবলির ভিত্তিতে আনিসুজ্জামান বাংলার অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি দিক উন্মোচন করেছেন। ইংরেজ বেনিয়াদের কৌশল ও ষড়যন্ত্রে বঙ্গের তাঁতিগণ কীভাবে ক্রমশ নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়েছেন তার একটি প্রামাণ্য ও যুক্তিনির্ভর বিবরণও রচনা করেছেন তিনি। দেবেন্দ্র বিজয় মিত্রের Cotton Weavers of Bengal-এ আমরা বাংলার বস্ত্র888sport live chat ও তাঁতিদের বিনাশের বিবরণ পেয়েছি। হামিদা হোসেনও এই নিয়ে গবেষণা করেছেন। কিন্তু আনিসুজ্জামান বস্ত্র উৎপাদন-কারখানা ও আড়ংয়ের মধ্যকার চিঠিপত্রের মধ্যে প্রাপ্ত যে মৌলিক ও প্রত্যক্ষ উপাদান-উপাত্তের ভিত্তিতে বাংলার অর্থনৈতিক ইতিহাসের এই দিকটি উন্মোচন করেছেন বঙ্গদেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আনিসুজ্জামানের গবেষণা ও অনুসন্ধানের পরিধি বেশ ব্যাপক। এই লেখককে একবার তিনি বলেছিলেন, বুদ্ধিবৃত্তির ইতিহাস বা Intellectual History-র প্রতিই তিনি আগ্রহী। তিনি যখন মুসলিম-মানসের স্বরূপ অন্বেষা করতে গিয়ে বাঙালি-মানসের সমগ্রতাকে আবিষ্কার করায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, তখন তিনি একটি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস রচনাতেই সমর্পিত ছিলেন। কিন্তু তিনি সচেতন ছিলেন যে, মানুষের চিন্তা-বুদ্ধিবৃত্তিকে পরিচালিত ও প্রভাবিত করে তার সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত।
তাঁর জীবনের আদর্শ, সংগ্রাম ও স্বপ্ন ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক 888sport appsের। এই নিয়ে তিনি শুধু সক্রিয়ই ছিলেন না, সাম্প্রদায়িকতার ভাবাদর্শ এবং এর ঐতিহাসিক-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আনিসুজ্জামানের গবেষণা ও চিন্তার সমগ্র পরিচয় আমরা এই আলোচনায় তুলে ধরতে পারিনি। তাঁর কয়েকটি কাজ নিয়েই আমরা আলোচনা করতে পেরেছি। আমাদের এই সীমাবদ্ধতাই তাঁর কাজের ব্যাপ্তির কথা মনে করিয়ে দেয়।
এই প্রসঙ্গে একটি বিষয়ের উল্লেখ প্রয়োজন মনে করি। আমরা লক্ষ করেছি, আনিসুজ্জামানের গবেষণা শুধু বুদ্ধিবৃত্তির চর্চায় সীমিত নয়, এগুলোর সামাজিক উপযোগিতা ও গুরুত্বও অনস্বীকার্য। আমাদের জীবন-সমাজ-রাষ্ট্রে যেসব দ্বন্দ্ব নানা সময়ে প্রকট হয়েছে, তিনি সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সেই দ্বন্দ্বগুলোর যুক্তিসংগত মীমাংসায় উপনীত হওয়াকে তাঁর কর্তব্য বলে মনে করেছেন। এ-কারণেই তাঁর পাণ্ডিত্য ও গবেষণা বিদ্যায়তনিক সীমাবদ্ধতা ছাপিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনের পাথেয় হয়ে উঠেছে।