(দ্বিতীয় কিস্তি)
সাত
১৯৬৯ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। দীর্ঘ ষোলো বছর পর ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে আবার 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন তিনি। তাঁর এই দীর্ঘ ষোলো বছর চট্টগ্রামে অবস্থান নিয়ে প্রাবন্ধিক-গবেষক আবুল মোমেন তাঁর একটি 888sport sign up bonusচারণমূলক রচনায় লিখেছেন : ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য অনেকের যোগদানের চেয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের যুক্ত হওয়ার তাৎপর্য ছিল ভিন্নমাত্রার ও সুদূরপ্রসারী। এখানে তিনি যখন যোগ দিচ্ছেন তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩২ বছর; কিন্তু এরই মধ্যে মেধা, গবেষণা ও অধ্যাপনার গুণে তিনি উচ্চ শিক্ষাঙ্গন, বাংলা ভাষা-888sport live football চর্চার জগৎ এবং মননশীল 888sport liveের জন্য দেশজোড়া – অনেকাংশে কলকাতাসহ দেশের বাইরেও – সুপরিচিত, জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত। তবে তখনকার সময়ের বিচারে তাঁর দেশজোড়া খ্যাতি ও জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ ষাটের দশকে জায়মান বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার জোয়ারে 888sport live football-888sport live chat-সংস্কৃতি অঙ্গনের যে-অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাতে এই তরুণ শিক্ষাবিদের সক্রিয় সুস্পষ্ট বলিষ্ঠ ভূমিকা। তরুণ এই শিক্ষাব্রতীর মানস কেবল নিজ পেশা ও নিজের মূল কর্মক্ষেত্র – গবেষণা-অধ্যাপনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁর মানসে দেশ, মানুষ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং সমকালীন রাজনীতি ও ঘটনাপ্রবাহের সক্রিয় ভূমিকা ছিল অত্যন্ত জোরালো। দেশ, মানুষ ও সময়ের দাবি একজন সচেতন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে আনিসুজ্জামান কখনো এড়াতে পারেননি, বরং বলা উচিত, এড়াতে চাননি। বরাবর – জীবনের শেষদিন পর্যন্ত – এরকম ডাকে সাড়া দিয়ে গেছেন, প্রয়োজনে অন্যদের ডেকে নিয়ে নিজেই যথোপযুক্ত কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে তিনি যখন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে প্রদেশবাসীর বিরাট সাফল্যের অব্যবহিত পরে চট্টগ্রাম এলেন তখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাই নন, জেলার প্রগতিশীল মহলের মধ্যেও প্রত্যাশার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।’ (‘চট্টগ্রামে তাঁর ষোলো বছর’, কালি ও কলম, আষাঢ়-শ্রাবণ, ১৪২৭)
আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার দায়িত্বের বাইরেও 888sport app দায়িত্ব পালন করেছিলেন; তার মধ্যে ছিল ছাত্রদের হলের প্রশাসনিক দায়িত্বও। এর বাইরে চট্টগ্রামের 888sport live football-সংস্কৃতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গেও তাঁর সক্রিয় সংযোগ ছিল। এ-প্রসঙ্গে আবুল মোমেন লিখেছেন : ‘এসব কাজের সূত্র ধরে কয়েকটি অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ আনিস স্যারের গুণগ্রাহীদের জানানো যায়। একবার ভাবতে হবে, স্যার থাকতেন শহর থেকে প্রায় কুড়ি মাইল দূরে ক্যাম্পাসে। সেখান থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে একাই শহরে আসতেন। এটা তাঁকে অনেক সময় সপ্তাহে হয়তো চার-পাঁচদিনও করতে হতো। অনেক সময় সামান্য সাংগঠনিক সভাতেই – হয়তো আমাদের বা আমাদের মতো অন্যদের চাপাচাপিতে – একইভাবে আসা-যাওয়া করতেন। কোনোদিন আমরা বা অন্য কেউ তাঁর ওপর এর শারীরিক ধকল এবং আর্থিক ব্যয়ের কথা বিবেচনায় আনিনি, স্যার কোনোদিন বলেনওনি, তাঁর আচরণে-কথায় ঘুণাক্ষরে কিছু প্রকাশ করেননি। তখনই লক্ষ করেছি এমন মানুষের অনুরোধে এমন সব অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত হতেন, এই একই রকমের কষ্ট স্বীকার করে, যা হয়তো আমরাও ওই বয়সে পরিহারের সুযোগ খুঁজতাম।’
সবার সঙ্গে সহজে মিশতে পারা এবং ব্যক্তিগত-সামাজিক-রাষ্ট্রিক সংকটে সকলের পাশে থাকার যে অনুকরণীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল আনিসুজ্জামানের, তার ফলে চট্টগ্রামে যাওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই প্রায় সব ধরনের মানুষের সঙ্গে তাঁর সহজ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে আসেননি এমন লোকজনও তাঁকে 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসার চোখে দেখতেন।
আনিসুজ্জামান যে-সময়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন সে-সময়কাল জাতীয় পরিস্থিতির বিবেচনায়ও ছিল অস্থির এক সময়। স্বৈরশাসক আইয়ুবের বিদায় ও নতুন সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্রহণ এবং ঊনসত্তরের গণআন্দোলন-পরবর্তী পরিস্থিতি সারাদেশে আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাস সৃষ্টি করেছিল। এর মধ্যে শীতের ছুটিতে – ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি 888sport appয় যান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর এই প্রথম 888sport appয় আসা। আগের মাসে 888sport app ও নারায়ণগঞ্জে বাঙালি-বিহারি দাঙ্গা হয়ে গেছে। এর পেছনে সরকারেরও ইন্ধন কিছুটা ছিল বলে তিনি শুনেছিলেন। ‘888sport appয় অনেকেই মনে করেছিলেন যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও সামরিক সরকার তা বাতিল করার অজুহাত খুঁজছে – বিহারিদের হাতে কিছু অস্ত্রশস্ত্র সেনাবাহিনীই তুলে দিয়েছে।’
888sport appয় এসে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা থেকে একটা চিঠি পেয়েছিলেন তিনি। সে-চিঠিতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, ১৯৭২ সালে ব্রিটানিকার দুশো বছরপূর্তি উপলক্ষে যে-নতুন সংস্করণ বের হবে, তাতে দক্ষিণ এশীয় 888sport live football-বিষয়ে একটি বড়ো 888sport live লিখতে। যাঁরাই এ-আমন্ত্রণ বিষয়ে জানলেন, তাঁরাই তাঁকে কাজটি করতে উৎসাহ দিলেন। কিন্তু দক্ষিণ এশীয় 888sport live football বিষয়ে 888sport live লেখার উপকরণ পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল তাঁর মনে। ‘888sport app ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে যা পাওয়া যায়, তা যথেষ্ট নয় – বিশেষ করে সাম্প্রতিককালের 888sport live football সম্পর্কে লেখার জন্যে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতীয় ও সিংহলি হাই কমিশন ও নেপালি দূতাবাসের কাছে বই চেয়ে চিঠি লিখলেন। তবে বই পেতে অনেক বিলম্ব হয়েছিল। অনেককাল পরে সিংহলি হাই কমিশন থেকে একটি এবং ভারতীয় হাই কমিশন থেকে তিনটি বই পেয়েছিলেন। তবে, শেষ পর্যন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার জন্য প্রার্থিত নিবন্ধটি তিনি লিখতে পেরেছিলেন কি না কিংবা সেটি তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কি না তার উল্লেখ কাল নিরবধির সংশ্লিষ্ট স্থানে নেই, তবে আমার একাত্তর-এ তিনি লিখেছেন যে, নিবন্ধটির খানিকটা লিখেছিলেন, অনেকখানিই লেখা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকালে আগরতলা থেকে ব্রিটানিকার সংশ্লিষ্ট সম্পাদককে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, এই অবস্থায় লেখাটি শেষ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
888sport appয় থাকতে বিভাগের বাঁধা কমিটির বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো কাজে আনিসুজ্জামানকে তেমন জড়িত থাকতে হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রামে আসার পর বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ আলী আহসানের অনুপস্থিতিতে তাঁকে যেমন বিভাগের দায়িত্বে থাকতে হতো, তেমনি এক বছরের মধ্যেই প্রভোস্টের দায়িত্ব গ্রহণ ছাড়াও হলেন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের সদস্য। এদিকে দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া তখন অনিশ্চিত ও উত্তেজনাপূর্ণ। সত্তরের ১২ই নভেম্বর রাতের ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহ অভিজ্ঞতাও লাভ করলেন তিনি। অবশেষে এলো ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন। প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করতে গেলেন দুর্গম সীমান্ত-সংলগ্ন হেয়াকুতে। এতেও নতুন অভিজ্ঞতা অর্জিত হলো। নির্বাচনের ফলাফল মেনে জাতীয় পরিষদের 888sport free betগরিষ্ঠ আসনের অধিকারী আওয়ামী লীগকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গঠনের সুযোগ দিলো না সামরিক শাসকরা। রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে লাগল দ্রুত।
আট
এই সময়কার সার্বিক পরিস্থিতির একটি সংক্ষিপ্ত অথচ সুস্পষ্ট বর্ণনা আছে আনিসুজ্জামানের কাল নিরবধিতে। তাতে তিনি লিখেছেন : ‘… ১৯৭১ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান 888sport appয় এলেন এবং শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী আখ্যা দিয়ে চলে গেলেন। তারপর তিনি লারকানায় গিয়ে ভুট্টোর সঙ্গে গোপন আলোচনায় বসলেন। জানুয়ারির শেষে ভুট্টো 888sport appয় এলেন শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক করতে এবং বৈঠকের শেষে স্পষ্টই জানালেন, তিনি ছয় দফা মেনে নেননি।
‘ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যেতে না যেতে কয়েকজন যুবক একটি ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে এবং কয়েকদিন পরে তা জ্বালিয়ে দেয়। ভারত তার আকাশসীমা দিয়ে পাকিস্তানি বিমানের চলাচল নিষিদ্ধ করে। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিমান চলাচল করতে হয় কলম্বো হয়ে, ছিনতাইয়ের ঘটনার নিন্দা করেন বঙ্গবন্ধু এবং আরো কয়েকটি দলের নেতারা, ভুট্টো প্রকারান্তরে ছিনতাইকারীদের পক্ষ নেন।
‘ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে এসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করলেন 888sport appয়, মার্চের ১ তারিখে। ভুট্টো ঘোষণা করলেন, তিনি পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন না, পশ্চিম পাকিস্তানের আর কোনো সদস্য যোগ দিতে এগোলে তার পা ভেঙে দেবেন। তিনি বললেন, দেশে ক্ষমতা দুর্গ তিনটি। আওয়ামী লীগ, পিপিপি ও সেনাবাহিনী। দেশে কিছু করতে হলে এ তিনের সম্মতিক্রমে তা করতে হবে। …
‘… দেশে ‘ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট’ দেখা দিয়েছে জানিয়ে ১ মার্চে ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতুবি করার ঘোষণা দিলেন। … প্রেসিডেন্টের ঘোষণা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই লোকজন 888sport appর পথে নেমে এলো এবং বঙ্গবন্ধুর কাছে দাবি করলো কঠোর কর্মসূচি। তিনি ২ মার্চে 888sport appয় এবং ৩ মার্চে সমগ্র প্রদেশে ধর্মঘট আহ্বান করলেন, কিন্তু কার্যত ১ মার্চ থেকেই ধর্মঘট শুরু হয়ে গেল।’
১লা মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শেষ পর্ব এমএ পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। পরীক্ষা নিচ্ছিলেন পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, বহিরাগত সদস্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম, অভ্যন্তরীণ সদস্য ড. মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল ও ড. আনিসুজ্জামান। পরীক্ষা গ্রহণের মধ্যেই খবর এলো, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দিয়েছেন, এর প্রতিবাদে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সহকর্মীদের নিয়ে সভা করছেন বঙ্গবন্ধু, খানিক বাদেই আন্দোলনের কর্মসূচি পাওয়া যাবে। মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ স্থগিত হয়ে গেল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী সমিতি প্রেসিডেন্টের ঘোষণার নিন্দা করে পৃথক পৃথক বিবৃতি দিলো। সন্ধ্যায় দক্ষিণ ক্যাম্পাসে খোলা জায়গায় ছাত্র-শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীর এক যৌথ প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হলো। অন্যদের সঙ্গে আনিসুজ্জামানও সে-সভায় বক্তৃতা দিলেন। চট্টগ্রামে অসহযোগ আন্দোলন মূলত মার্চের ১ তারিখ থেকেই শুরু হয়ে যায় এবং ২৫শে মার্চ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ 888sport app বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় ৮ই মার্চ সকালে। আনিসুজ্জামান অবশ্য আগের দিন রাতেই 888sport appয় অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীকে ফোন করে সে-বক্তৃতার বিবরণ শুনেছিলেন। ৮ই মার্চ সকাল এগারোটায় ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি সভা অনুষ্ঠিত হলো ভাইস-চ্যান্সেলর ড. এ আর মল্লিকের সভাপতিত্বে। সভায় গঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ’। তার যুগ্ম-আহ্বায়ক নির্বাচিত হলেন গণিত বিভাগের ফজলী হোসেন ও বাংলার মাহবুব তালুকদার। সদস্য ছিলেন বাংলা বিভাগের সৈয়দ আলী আহসান ও আনিসুজ্জামান, ইতিহাস বিভাগের আবদুল করিম ও রফিউদ্দিন আহমদ, রাষ্ট্র888sport apk বিভাগের এখলাসউদ্দিন আহমদ, সমাজ888sport apkের এম বদরুদ্দোজা, চারুকলার রশিদ চৌধুরী, অর্থনীতির হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, রেজিস্ট্রার মুহম্মদ খলিলুর রহমান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোহাম্মদ মহসীন ও সহকারী ইন্জিনিয়ার সুধীররঞ্জন সেন।
সেদিন (৮ই মার্চ) বিকেলেই অধ্যাপক আবুল ফজলের বাসভবন জুবিলী রোডের ‘888sport live football নিকেতনে’ সংস্কৃতিসেবীদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেটিও ছিল স্বতঃস্ফূর্ত সভা। সেখানে গঠিত হয় ‘888sport live chatী-888sport live footballিক-সংস্কৃতিসেবী প্রতিরোধ-সংঘ’। এর পৃষ্ঠপোষক ও সভাপতি নির্বাচিত হন যথাক্রমে অধ্যাপক আবুল ফজল ও সৈয়দ আলী আহসান। দুজন সহ-সভাপতির একজন ছিলেন ড. আনিসুজ্জামান ও অপরজন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সংস্কৃতিসেবী ডা. কামাল এ খান। সভাশেষে একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয় – ‘888sport live football নিকেতন’ থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত।
এরপর ১৫ই মার্চ থেকে লালদীঘি ময়দানে প্রতিদিন প্রতিবাদ-সভা ও গণজাগরণমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় প্রতিরোধ সংঘ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিসহ 888sport app সংগঠনের উদ্যোগে। আনিসুজ্জামান নিজের গাড়ি চালিয়ে ক্যাম্পাস থেকে শহরে আসতেন প্রায়দিনই। এ-রকম এসেছিলেন ২৪ তারিখেও। সেদিন সভা হচ্ছিল প্যারেড গ্রাউন্ডে। সভা চলাকালেই খবর আসে, ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে পাকিস্তানিরা অস্ত্র খালাসের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং তাদের বাধা দিতে হাজার হাজার মানুষ বন্দর-এলাকা ঘিরে রেখেছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যারিকেড বসাচ্ছে। সভা ছেড়ে মানুষজন বন্দরের দিকে ছুটে যায়। আনিসুজ্জামানও ক্যাম্পাসে নিজ আবাসে ফিরে আসেন।
২৪ তারিখ রাতে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পর আনিসুজ্জামান বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অন্য কারো পক্ষে আর চট্টগ্রাম শহরে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ২৪ তারিখ রাত থেকেই শহরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কপথে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাস্তবে উত্তর চট্টগ্রামের সঙ্গে যানচলাচল আর সম্ভব ছিল না। আনিসুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মচারীরা সবাই গভীর উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়ে যান।
এই সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সুবিধাজনক বিবেচনা করে সেখানে ভাইস-চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে কিছু তৎপরতা শুরু করা হয়। সীমান্ত থেকে প্রত্যাহৃত ইপিআর জওয়ানদের একটি দলকে সেখানে মোতায়েন করা হয়। সহকর্মীদের সঙ্গে আনিসুজ্জামানও এসব তৎপরতায় অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু নানা ঘটনায় অচিরেই বুঝতে পারা যায় যে, প্রশিক্ষিত ও সংগঠিত এবং সামরিক সরঞ্জাম ও ভারী যুদ্ধাস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রগমন ও অধিকার বিস্তারের চেষ্টা এর দ্বারা প্রতিহত করা সম্ভব নয়। অতএব ক্যাম্পাস ত্যাগ করে কাছাকাছি গ্রামসমূহে বা অন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়াই উচিত বলে সবাই ভাবতে থাকেন। এপ্রিলের ১ তারিখে ক্যাম্পাস ছেড়ে নিকটস্থ গহিরায় কুণ্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের হোস্টেলে আশ্রয় নেন আনিসুজ্জামান তাঁর পরিবারের সবাইকে নিয়ে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন শিক্ষক আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁদের পরিবার-পরিজনসমেত। সেখান থেকে গেলেন কাটিরহাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মীর বাড়িতে; তারপর রামগড়। রামগড়ের পাশেই ফেনী নদী – সেটি পেরোলেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম। এরপর সাব্রুম হয়ে আগরতলা গিয়ে পৌঁছান ২৬শে এপ্রিল সোমবার। আগরতলায় ছিলেন ১৪ই মে পর্যন্ত। ১৫ই মে জাম এয়ারের কার্গো বহনকারী একটি বিমানের ফিরতি ফ্লাইটে কলকাতায় পৌঁছলেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। সকালে রওনা দিয়ে গৌহাটিতে যাত্রাবিরতি করে কলকাতায় পৌঁছলেন সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে।
নয়
আনিসুজ্জামান তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুকন্যা এবং শ্যালক আবদুল আজিজ ও তাঁর স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে দমদম বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সিযোগে সরাসরি গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীর ছোট ফুপুর পার্ক সার্কাস অঞ্চলের দিলখুশা স্ট্রিটের বাড়িতে। এই পার্ক সার্কাস অঞ্চলেই তাঁর শৈশব কেটেছিল দিলখুশা স্ট্রিটেরই প্রায় সংলগ্ন কংগ্রেস এক্জিবিশন রোডের দুটি বাড়িতে। তখন পার্ক সার্কাস স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৭-এ কলকাতা ছেড়ে আসার পর ১৯৫৯-এ একবার গিয়েছিলেন সেখানে। এবার কলকাতায় এলেন শরণার্থী হিসেবে। প্রায় কপর্দকশূন্য অবস্থায়। একদিন পর অর্থাৎ ১৭ই মে তারিখে গেলেন দ্বারভাঙ্গা বিল্ডিংয়ে। সেই ভবনেরই দোতলার এক ঘরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 888sport apps সহায়ক সমিতির অফিস। ‘এই সহায়ক সমিতি গঠিত হয়েছিল ৩ এপ্রিল, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সব দলমতের শিক্ষকদের নিয়ে।’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন এর সভাপতি, সম্পাদক সিটি কলেজের অর্থনীতির শিক্ষক ও সিনেট-সদস্য দিলীপ কুমার চক্রবর্তী। প্রথম দিনেই স্থির হলো – আনিসুজ্জামান রোজ ওই অফিসে বসবেন, শরণার্থী শিক্ষক যাঁরা আসবেন তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন ও তাঁদের আর্থিক প্রয়োজন পরিমাপ করবেন। বাড়তি আর একটি দায়িত্বও দেওয়া হলো তাঁকে – 888sport appsের উদ্বাস্তু শিক্ষকদের একটা নিজস্ব সমিতি গঠনের উদ্যোগও নেবেন তিনি।
প্রস্তাবিত এই শিক্ষক সমিতি গঠনের সূত্রেই জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্য ও পূর্ব পাকিস্তান শিক্ষক সমিতির সভাপতি জনাব কামরুজ্জামান ড. মল্লিক ও ড. আনিসুজ্জামানকে নিয়ে গেলেন বালিগঞ্জের এক বাড়িতে। সেখানেই দেখা হলো অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। আমার একাত্তর-এ আনিসুজ্জামান লিখেছেন :
‘… ওই বাড়ির দোতলায় তখন সৈয়দ নজরুল থাকেন, তাজউদ্দীন থাকেন, বোধহয় মন্ত্রীদের আরো কেউ কেউ থাকেন। নিচের তলায় থাকেন অনেকে। যাঁদের হাতে দেশের ভাগ্য-নির্ধারণের ভার, ওই মুহূর্তে তাঁদের অবস্থা একেবারেই ঈর্ষণীয় ছিল না।
‘তাজউদ্দীনের সঙ্গে আমীর উল ইসলাম ছিল। মল্লিক সাহেব ও আমি ঘরে ঢুকলাম। মল্লিক সাহেব কলকাতায় এসেছিলেন সরকারের ডাকে, কিন্তু তাঁর আসতে দেরি হয়েছিল। ততোদিনে তাজউদ্দীন কলকাতার বাইরে চলে যাওয়ায় তাঁদের দেখাও হয়নি, কাজটাও হয়নি। ড. মল্লিক সেই ব্যাখ্যা দিলেন। তারপর তাজউদ্দীন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, তাঁর ইচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আমি যোগ দিই। আমার হয়ে মল্লিক সাহেব জবাব দিলেন, শিক্ষক সমিতির কথা বললেন। তাজউদ্দীন বললেন, শিক্ষক সমিতির জন্যে কি আর কাউকে পাওয়া যাবে না? আমীর ও মল্লিক সাহেবকে বসিয়ে রেখে তিনি ভিতরের ঘরে আমাকে নিয়ে গেলেন। জানতে চাইলেন, ‘সত্যিই আপনি আমার সঙ্গে থাকবেন না?’ আমি বললাম, ‘সেই কবে থেকে আপনাকে খবর পাঠাচ্ছি, কোনো সাড়া পাইনি। এখন তো সমিতির ব্যাপারে কথা দিয়ে ফেলেছি। তবে আপনি যখন যে কাজে বলবেন, আমি করে দেবো।’ তিনি বললেন, ‘আপনার আসার খবর আমি আমীর উলের কাছে পাই। তারপর তো বাইরে চলে গেলাম। ফিরে এসেই আপনাকে খবর দিয়েছি।’ ‘তাহেরউদ্দিন ঠাকুর কিছু জানাননি?’ ‘না তো।’ [আগরতলায় কর্নেল চৌমুহনীতে তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে দেখা হলে আনিসুজ্জামান তাঁকে বলেছিলেন তাঁর আসার সংবাদটি তাজউদ্দীন আহমদকে জানাতে।] তারপর আর কোনো কথা না বলে তাজউদ্দীন বাইরে চলে এলেন। তিনি কিছু বললেন না দেখে মল্লিক সাহেব স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে বললেন, ‘শিক্ষক সমিতি দাঁড়িয়ে গেলে আনিসকে ছেড়ে দেবো – তখন আপনি ওকে কাজে লাগাবেন।’ তাজউদ্দীনকে আমি জোহরা ভাবি এবং তাঁদের সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করলাম। উনি শুধু বললেন, ‘নিশ্চিত কিছু জানি না।’
আনিসুজ্জামানের অবশ্য পরে মনে হয়েছিল তাজউদ্দীনের কথামতোই তাঁর সেদিন কাজ করা উচিত ছিল।
২১শে মে তারিখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে 888sport apps থেকে আসা শিক্ষকদের এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং এই সভায় 888sport apps শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যথাক্রমে ড. এ. আর. মল্লিক ও ড. আনিসুজ্জামান।
২৫শে মে থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচার শুরু হয় মিডিয়াম ওয়েভে। অনেকেই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বলতে এই মিডিয়াম ওয়েভের অনুষ্ঠান-প্রচার বুঝে থাকেন, আগের শর্ট ওয়েভে প্রচারিত অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো ধারণা তাঁদের না-থাকার ফলে। সৈয়দ হাসান ইমাম (অভিনেতা, আবৃত্তিকার) তাঁকে সেদিন বালিগঞ্জের সেই বাড়িটিতে নিয়ে যান যেখানে তিনি তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। সেই বাড়িতেই ছিল বেতার-অনুষ্ঠান রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা আর বেতারের সঙ্গে যুক্ত সকলের থাকার ব্যবস্থা। সেদিন ছিল কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন, অর্থাৎ ১১ই জ্যৈষ্ঠ। আনিসুজ্জামান মুখে মুখে কিছু বললেন, তার সঙ্গে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের কথাটা যুক্ত করে। স্বনামেই তাঁর অনুষ্ঠান প্রচারিত হলো, 888sport appয় তাঁর পিতা ও পরিবারের অন্যদের জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও।
কলকাতায় 888sport apps শিক্ষক সমিতির সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘সহায়ক সমিতির অফিসই ছিল শিক্ষক সমিতির অফিস। আমি রোজ যেতাম সকালে, সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে থেকে কিংবা বিকেলে সেখান থেকে বেরিয়ে অন্য কোনো কাজ সেরে ফিরতাম রাতে। ফুপুর বাড়িতে রাতে রুটি খাওয়া হতো, তাই ওই ক-মাস রোববার ছাড়া ভাত খাওয়ার সুযোগ পাইনি – তাতে আমার কোনো অসুবিধে হয়নি। …
‘শিক্ষক সমিতি থেকে মল্লিক সাহেবের স্বাক্ষরে চিঠি গিয়েছিল বিভিন্ন বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে – 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ এবং শরণার্থী শিক্ষকদের বিষয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে।’
888sport app ও নোয়াখালির চৌমুহনীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘পুথিঘর’-এর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা নিজ উদ্যোগে ‘স্বাধীন বাংলা 888sport live football পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়াস নেন। শিয়ালদহের কাছে এন্টনী বাগান লেনে এর কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। ঠিক করেছিলেন – এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘মুক্তধারা’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থাও থাকবে। ‘মুক্তধারা’ থেকে রক্তাক্ত বাংলা নামে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে 888sport appsের লেখকদের লেখা 888sport liveের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সম্পাদনায় 888sport apps কথা কয় নামে 888sport appsের লেখকদের লেখা ছোটগল্পের একটি সংকলনও মুক্তধারা প্রকাশ করে। ‘মুক্তধারা’ আনিসুজ্জামানের মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football বইটিও তখন পুনর্মুদ্রণ করেছিল। বইটির কোনো কপি তখন আনিসুজ্জামানের কাছে ছিল না। প্রণবরঞ্জন রায় সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন তাঁর পিতা নীহাররঞ্জন রায়কে লেখকের উপহার-দেওয়া কপিটি। নীহাররঞ্জন রায় নতুন সংস্করণের ভূমিকাও লিখে দিয়েছিলেন।
দশ
আনিসুজ্জামান প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে যে-কথা দিয়েছিলেন – ‘তবে আপনি যখন যে কাজে বলবেন, আমি করে দেবো’, তা যে শুধু কথা-প্রসঙ্গে মুখের কথাই ছিল না সে আমাদের অনেকেরই জানা। আমার একাত্তর-এ আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘আমি কলকাতায় আসার পরে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা বা বিবৃতি লেখার সময় হলে, থিয়েটার রোডে আমার ডাক পড়তো। প্রধানমন্ত্রীর শয়নকক্ষে [নিচের তলায় অনতিপরিসর এক ঘরে প্রধানমন্ত্রী বসতেন, তার পেছনে একটা বড়ো ঘরে তিনি থাকতেন, খেতেন এবং প্রয়োজনে গোপনীয় কথাবার্তা বলতেন। সংলগ্ন বাথরুমে তিনি নিজের কাপড় নিজেই ধুতেন।] গিয়ে হয় দেখতাম অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ অপেক্ষা করছেন, নয় অনতিবিলম্বে তিনি এসে পড়তেন। প্রথমে তাজউদ্দীন আমাদের কাছে পরিস্থিতি – অথবা পরিস্থিতির যতোটা তিনি বলতে চান, তা ব্যাখ্যা করতেন। তারপর বক্তৃতা বা বিবৃতিতে কী থাকা দরকার বলে উনি মনে করেন, সে কথা বলতেন এবং সে সম্পর্কে আমাদের পরামর্শ চাইতেন। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে কিছু যোগ করার বা তা থেকে কিছু বাদ দেওয়ার কথা আমরা বললে, হয় তিনি তা মেনে নিতেন নয় আমাদের যুক্তি খণ্ডন করতেন। আমিই সাধারণত আলোচনার নোট রাখতাম। এমনি করে আলোচনার ভিত্তিতে একমত হওয়ার পরে হয় আমি বাংলা খসড়া করতাম এবং তার চূড়ান্ত রূপদানের পরে সারওয়ার মুরশিদ তার ইংরেজি ভাষ্য তৈরি করতেন, নয় তিনি প্রথমে ইংরেজি খসড়া করার পরে আমি চূড়ান্ত খসড়ার বাংলা রূপ দিতাম। দুই ভাষায়ই তাজউদ্দীনের অধিকার অসামান্য ছিল – একই শব্দের নানারকম অর্থভেদ সম্পর্কে তিনি খুব সচেতন ছিলেন এবং জুতসই শব্দ খোঁজার জন্যে তিনি সর্বদাই সময় দিতে তৈরি থাকতেন।’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 888sport apps সহায়ক সমিতি ভারতীয় অ্যাকাডেমিক সমাজ এবং সেই সঙ্গে যতোটা সম্ভব রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী ও নাগরিকদের কাছে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে প্রচার চালাতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য 888sport apps শিক্ষক সমিতিকে পরামর্শ দিয়েছিল। সে অনুযায়ী কয়েকটি দল গঠনের কথাও বলা হয়, যার মধ্যে প্রথমটি যাবে উত্তর ভারতে, তার পরেরটি মধ্যপ্রদেশে ও তারপর একটি বোম্বাই (বর্তমান মুম্বাই) অঞ্চলে। প্রথম দলটি রওনা হয় ১০ই জুন, হাওড়া থেকে ট্রেনযোগে এলাহাবাদের উদ্দেশে। এই দলে ছিলেন ড. এ. আর. মল্লিক ও ড. আনিসুজ্জামান এবং সহায়ক সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক – অনিল সরকার, অনিরুদ্ধ রায় ও বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী এবং সিনেট-সদস্য সৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। এঁদের সঙ্গে আরো যোগ দিয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত সদস্য সুবিদ আলী, সরকারের মনোনীত সদস্য হিসেবে। পরদিন এলাহাবাদ পৌঁছানোর পর প্রথম বক্তৃতা হলো এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস-চ্যান্সেলরের সভাপতিত্বে। ড. মল্লিক বক্তৃতা দিলেন মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সংবিধান-রচনা ও রাষ্ট্র-পরিচালনার অধিকার হরণ এবং নিরস্ত্র মানুষের ওপর সশস্ত্র সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে। আনিসুজ্জামান বললেন পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবীরা ২৪ বছর ধরে যে-ভূমিকা পালন করেছেন সে-বিষয়ে এবং বিশেষ করে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-হত্যা সম্পর্কে। বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী হিন্দিতে বক্ততা করলেন পূর্ব বাংলার 888sport live footballে প্রতিবাদী চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বোধের বিকাশ সম্পর্কে। আমার একাত্তরে আনিসুজ্জামান লিখেছেন যে, তাঁর বক্তৃতা খুব খারাপ হয়েছিল এবং জীবনে আর একবারই মাত্র অতো খারাপ বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
পরদিন সন্ধ্যায় এলাহাবাদে নাগরিক সভা হলো। সেটি ছিল অনেকটাই অনানুষ্ঠানিক ধরনের। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন ড. এ. আর. মল্লিক; আনিসুজ্জামান ছিলেন তাঁর জোগানদার। দর্শক- শ্রোতাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনিও দিয়েছিলেন।
তার পরদিন অনুষ্ঠিত হলো প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজিত সভা। ড. মল্লিক সেখানে যাননি; তিনি বিশ্রাম নিলেন ঘরে বসেই। সেখানে আনিসুজ্জামান বাংলায় বলার সুযোগ পেলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বলা ছাড়াও পূর্ব বাংলার 888sport live footballের প্রাসঙ্গিক দিক সম্পর্কেও কিছু বললেন। তাঁর ভাষায় : ‘প্রথমবারের খারাপ বলার ক্ষতি এবার পূরণ করে নিয়েছিলাম। মনে পড়ে, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’ গল্পের সারমর্ম শুনে অনেক লোকের চোখ ছলছল করে উঠেছিল।’
প্রতিনিধিদল এলাহাবাদ থেকে গিয়েছিল আলিগড়ে তথা আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে আনিসুজ্জামানের মূল্যায়ন : ‘আলিগড়ে সবকিছুই ছিল অত্যন্ত কেতাদুরস্ত, সময়ানুবর্তী, তবে আনুষ্ঠানিক এবং হৃদয়ের উষ্ণতাহীন।’ তবে আদর-আপ্যায়নের কোনো ঘাটতি ছিল না। পরদিন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখানো হলো তাঁদের। চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. এস. এম. ইউসুফের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানালেন, পূর্ব পাকিস্তানের সর্বশেষ সামরিক আইন প্রশাসক সাহেবজাদা ইয়াকুব খান তাঁর ভাই। তিনি এখন করাচিতে গৃহবন্দি। তাঁর জন্যে দোয়া করতে বলে একটা খবর পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তাঁর কোনো খবর তাঁরা জানেন না। আনিসুজ্জামানের মনে পড়েছিল – সাহেবজাদা ইয়াকুব খান তাঁর সহানুভূতিশীল আচরণের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ড. মল্লিক সেখানে বক্তৃতা করেন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘সেদিন মল্লিক সাহেব আমার শোনা তাঁর শ্রেষ্ঠ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। হয়তো আলিগড়ের ঠান্ডা পরিবেশ তাঁর ভিতরের আগুনকে উসকে দিয়েছিল।’ পরদিন শহরে আয়োজিত একটি সভায় আনিসুজ্জামান ও সুবিদ আলী বক্তৃতা করেন।
এ-যাত্রায় তাঁরা দিল্লিতেও গিয়েছিলেন এবং বিশিষ্ট বিদ্বজ্জনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থী-শিক্ষকদের সহায়তাদানের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। আনিসুজ্জামান আমন্ত্রণ পান 888sport live football অকাদেমির পক্ষ থেকে পূর্ব বাংলার 888sport live football সম্পর্কে বক্তৃতা দেওয়ার। অকাদেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে সেদিন সভাপতিত্ব করেছিলেন আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। আনিসুজ্জামান এবং সভাপতি দুজনেই বক্তৃতা দেন ইংরেজিতে। শ্রোতাদের মধ্যে অম্লান দত্তের মতো বাঙালি বিদ্বজ্জন যেমন ছিলেন, তেমনি অনেক অবাঙালি বিশিষ্টজনও ছিলেন।
প্রতিনিধিদল ১৭ই জুন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইন্দিরা গান্ধী খুব ধৈর্যের সঙ্গে ড. মল্লিক ও আনিসুজ্জামানের বক্তব্য শোনেন এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর ও ভারত সরকারের বিবেচনা ও অবস্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। তিনি তাঁদের পি.এন. হাকসারের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন। তাঁরা তা করেন। কথা বলেন আরো অনেকের সঙ্গে। সে-বিবরণ বিশদভাবে আনিসুজ্জামান তাঁর আমার একাত্তর বইতে দিয়েছেন। দিল্লি থেকে আগ্রা এবং সেখান থেকে লখনৌ যাওয়ার পর তাঁরা ২৭শে জুন কলকাতায় ফিরে আসেন।
আমার একাত্তর-এর চতুর্দশ অধ্যায়ে ১৯৭১ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার কয়েকজন শিক্ষক ও কূটনীতিক এবং সাহায্য-সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শরণার্থী শিক্ষক, 888sport live footballিক ও সাংবাদিকদের যোগাযোগ ও তাঁদের অর্থসাহায্য বিষয়ে আনিসুজ্জামান কিছু ব্যক্তিগত 888sport sign up bonusচারণ করেছেন। এসব তথ্য তৎকালীন পরিস্থিতি অনুধাবনের পক্ষে নানাভাবে সহায়ক হবে বলে মনে হয়। এঁদের মধ্যে একজন ছিলেন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ব্যারী মরিসন। তাঁর সঙ্গে ১৯৬৩ সালেই আনিসুজ্জামানের পরিচয় এবং পরে ১৯৬৬ সালে তিনি আবার 888sport appয় আসেন ও আনিসুজ্জামানের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্থানে কিছুকাল ছিলেন। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড সি ডিমকের কাছ থেকে আনিসুজ্জামানের শরণার্থী হিসেবে সপরিবার ভারতে চলে আসার সংবাদ পেয়ে ব্যারী মরিসন তাঁকে লেখেন যে, তাঁর সম্মতি থাকলে সপরিবার তাঁকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা তিনি করবেন। আনিসুজ্জামান তাঁকে লেখেন যে, ওই অবস্থায় কলকাতা ছেড়ে যাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে নয়, সংগতও হবে না।
এগারো
শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিদল যখন উত্তর ভারত সফর করছিলেন, সেই সময় আমেরিকা থেকে রেহমান সোবহান এসেছিলেন কলকাতায়। তখন তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি প্রস্তাব করেন যে, 888sport apps সরকারের উচিত একটা পরিকল্পনা-কমিশন গঠন করা। তাজউদ্দীন আহমদ প্রথমটায় এ-ব্যাপারে উৎসাহ না দেখানোয় রেহমান সোবহান লিখিতভাবে তাঁর প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেন এবং কমিশনের সদস্য হতে পারেন এমন কয়েকজনের নাম নিয়েও আলোচনা করেন। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্থির করেন যে, পুরোপুরি পরিকল্পনা-কমিশন গঠন না করে প্রথমে একটা পরিকল্পনা-সেল গঠন করা হোক, পরে এটাকে কমিশনের রূপ দেওয়া যেতে পারে। জুন মাসের শেষ দিকে রেহমান সোবহান ইউরোপ হয়ে আমেরিকায় ফিরে যান। অতঃপর জুলাই মাসে মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনা-সেল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদিত হলে চারজনকে সেলের সদস্য নিয়োগ করা হয়। আনিসুজ্জামান এই চারজনের মধ্যে ছিলেন। অন্য তিনজন ছিলেন খান সারওয়ার মুরশিদ, মুশারফ হোসেন ও স্বদেশরঞ্জন বসু। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ888sport apk বিভাগের শিক্ষক ড. অজয় রায়ের কাছে 888sport apps শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব হস্তান্তর করে আনিসুজ্জামান জুলাই মাসেই পরিকল্পনা-সেলে যোগ দেন।
পরিকল্পনা-সেলের অফিস স্থাপিত হলো সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউয়ের একটি বাড়ির দোতলায়। সদস্যদের মধ্যে কাজের ক্ষেত্রও ভাগ করা হয় এবং ঠিক হয়, রেহমান সোবহান বাইরে থেকে সাহায্য করবেন। তবে সেলের কাজ শুরুর আগেই পূর্বনির্ধারিত ‘ক্রিশ্চিয়ান ইনস্টিটিউট ফর দি স্টাডি অফ রিলিজিয়ন অ্যান্ড সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে আনিসুজ্জামানকে দিল্লি যেতে হয়। সেখানে সরল চ্যাটার্জির বাসায় কিছুটা অসুস্থতার মধ্যে আনিসুজ্জামান সেমিনারে উপস্থাপনের জন্যে একটু একটু করে লিখলেন তাঁর 888sport live ‘কনফ্লিক্টস অন কালচারাল প্লেন’। সেমিনারের আগে তা দেওয়া হয় টাইপ করতে, কিন্তু সেমিনারের দিন না পেলেন টাইপ-করা কপি, না পেলেন তাঁর পাণ্ডুলিপি। শেষ পর্যন্ত যেটুকু মনে ছিল মুখে মুখেই তা বললেন, কোনো নোট ছাড়াই। এই অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন নীহাররঞ্জন রায়। ১৯৭২ সালে এই সেমিনারের 888sport liveগুলো মাদ্রাজ থেকে প্রোফাইলস অফ 888sport apps নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
দিল্লি থেকে ফিরে আসার পর আনিসুজ্জামান খবর পেলেন, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। তিনি পরিকল্পনা-সেলের (তখন বলা হলো প্ল্যানিং কমিশন) সভাপতি নিযুক্ত হলেন। এখন সেলের কাজের ‘বিন্যাসটি হলো মোটামুটি এরকম : মোজাফফর আহমদ চৌধুরী রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও লোকপ্রশাসন সম্পর্কে কাগজপত্র তৈরি করবেন; খান সারওয়ার মুরশিদ করবেন সামাজিক দিকটা নিয়ে – বিশেষ করে, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও নির্যাতিতা মহিলাদের পুনর্বাসন-সম্পর্কিত পরিকল্পনা করা হবে তাঁর দায়িত্ব; মুশারফ হোসেন দেখবেন অর্থনৈতিক কাঠামোর দিকটা; স্বদেশরঞ্জন বসু অভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও বহির্বাণিজ্য নিয়ে কাজ করবেন; আর শিক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করবেন আনিসুজ্জামান।
আমার একাত্তর-এর ১৮শ অধ্যায়ে আনিসুজ্জামান পরিকল্পনা- সেল বা প্ল্যানিং কমিশনে তাঁদের কাজের কিছু প্রাথমিক বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তাঁদের কাজের প্রকৃতি ও সীমাবদ্ধতার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে এসেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন : ‘মোজাফফর আহমদ চৌধুরী 888sport appsের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে দীর্ঘ একটি পরিকল্পনা রচনা করেন অফিসে বসে, পেন্সিলে, একাকী এবং দ্রুতগতিতে। 888sport appsের ভবিষ্যৎ সংবিধানের একটা রূপরেখাও তিনি তৈরি করেছিলেন বলে মনে পড়ে। সারওয়ার মুরশিদ রচনা করেছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ডিমবিলাইজেশন, বেসামরিক অথচ জনকল্যাণমূলক কাজে তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্তকরণ এবং নির্যাতিতা ও সহায়হীনা 888sport promo codeদের পুনর্বাসন সম্পর্কে পরিকল্পনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনের নানাদিক নিয়ে মুশারফ হোসেন এবং স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে জরুরি জিনিসপত্রের সরবরাহ সম্পর্কে স্বদেশ বসু বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি গোটাকয়েক কাগজ তৈরি করি।’
এসব কাজ করতে গিয়ে যে-অভিজ্ঞতা তাঁরা লাভ করলেন তার ব্যাপ্তি সম্পর্কে কোনো ধারণা সম্ভবত আগে তাঁরা করতে পারেননি। হয়তো অন্যদের পক্ষেও তা ধারণা করা সম্ভব হয়নি। আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে কেবল শরণার্থী-পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করতে গিয়ে দেখা গেলো, বিষয়টি কতো দুরূহ। ভারতে যদি এক কোটি শরণার্থী এসে থাকে তাহলে প্রাথমিক জরিপ-অনুযায়ী এর ৬০ শতাংশ ছিল কৃষিজীবী পরিবারের সদস্য। গড়পড়তা ছয়জনের পরিবার ধরলে হয় ১০ লাখ পরিবার। প্রতি পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য যদি একজোড়া হালের বলদ দিতে হয় তাহলে প্রয়োজন হবে ২০ লাখ বলদের। ঘর বাঁধতে হলে যতো বাঁশ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রীর প্রয়োজন হবে, সংসার চালাতে হলে যতোটা কেরোসিন তেল লাগবে, তার পরিমাণ বিস্ময়জনক। জরুরি ভিত্তিতে সেতু মেরামত, হাসপাতাল চালু, বাজারে খাদ্যদ্রব্য রাখা – এর জন্যেও বিপুল আয়োজনের দরকার। আমরা যখন এইরকম হিসেব নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি, তখন অধ্যাপক আনিসুর রহমান চলে এলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তিনিও প্রয়োজনের এই তালিকা করতে সাহায্য করলেন।’
আনিসুজ্জামান আরো লিখেছেন যে, ‘ভারতের কাছে ছাড়া এসব জিনিস চাওয়ার ক্ষেত্র আমাদের ছিল না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছেও তালিকায় বর্ণিত সামগ্রীর পরিমাণ অপ্রত্যাশিত ছিল।’
ইতোমধ্যে আনিসুজ্জামান আগরতলায় রেখে আসা তাঁর গাড়িটি কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য অক্টোবরের ২০ তারিখে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসযোগে আগরতলা যান। সঙ্গে নিয়ে যান মন্ত্রিসভা-সচিব এইচ. টি. ইমামের একটি আধা-সরকারি চিঠি (ত্রিপুরা সরকারের স্বরাষ্ট্র-সচিবকে লেখা) এবং একজন পেশাদার চালককে। আগরতলায় তিনি উঠেছিলেন ক্র্যাফটস হোস্টেলে। এবারে পূর্বপরিচিত অনেকের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল আগরতলায়। সীমান্তসংলগ্ন জায়গা বলে কিছু নতুন অভিজ্ঞতাও হয়েছিল। তবে গাড়ি নেওয়ার অনুমতি পেতে সপ্তাহকাল সময় লেগেছিল তাঁর। অবশেষে ২৮শে অক্টোবর সে-অনুমতি পাওয়ার পর দুপুরে ভাত খেয়েই রওনা দিলেন। পথে সামান্য বিশ্রাম করে রাতে না থেমে করিমগঞ্জ ও শিলং হয়ে গৌহাটি পৌঁছলেন পরদিন রাতে। ৩০ তারিখ সকালে গৌহাটি থেকে বেরিয়ে কুচবিহার হয়ে শিলিগুড়িতে এলেন সন্ধ্যার আগে। সেখানে আরেক রাত কাটিয়ে কলকাতা পৌঁছলেন ৩১শে অক্টোবর রাতে। চারদিনের এই মোটরযাত্রার বিস্তারিত বিবরণ অবশ্য আমার একাত্তর-এ নেই। থাকলে মন্দ হতো না।
আমার একাত্তর-এর ত্রয়োবিংশ অধ্যায়ে আনিসুজ্জামান দুটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। দুটিই খুব ছোট ঘটনা, কিন্তু হৃদয়কে স্পর্শ করে যায় নানাভাবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেবার রমজান মাসে রোজা পালন করতে হয়েছিল বিশেষ কৃচ্ছ্রসাধন করে এবং দেশ ও দেশের মানুষের আশু মুক্তি ও মঙ্গলকামনায়। ঈদের কদিন আগে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন কিছু আলোচনার জন্য। কথাবার্তা শেষ হবার পর তাজউদ্দীন তাঁর ঘরের আয়রন সেফ খুলে একটি খাম আনিসুজ্জামানের হাতে দেন। খাম হাতে নিয়ে আনিসুজ্জামান জানতে চেয়েছিলেন, ‘কী এটা?’ তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘সামনে ঈদ, তাই।’ খামে পাঁচশো টাকা ছিল। আনিসুজ্জামান সে-টাকা নিতে না চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘ঈদে আপনার বাচ্চাদের তো আমি উপহার দিতে পারি, নাকি।’ কথাটা বলতে গিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ নিজেই ভাবাবেগপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন এবং আনিসুজ্জামানও খুব অভিভূত হয়ে আর কিছু বলতে পারেননি।
এই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘তাঁর এ ধরনের ভাবাবেগের পরিচয় আমি আরো পেয়েছিলাম। এক সকালে তাঁর ঘরে ঢুকে দেখি, তাঁর চুল উসকো-খুসকো, চোখ দুটি লাল। জানতে চাইলাম, শরীর খারাপ কিনা। তিনি মৃদুস্বরে বললেন, ‘না।’ তারপর যা বললেন, তা এই : আগের রাতে তুমুল ঝড় বৃষ্টিতে তাঁর ঘরের জানালার পাল্লা খুলে গিয়েছিল। জানালা বন্ধ করতে গিয়ে তিনি ঝড়বৃষ্টির প্রবলতা অনুভব করলেন। বাইরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে, জানলা লাগিয়ে, তিনি শুয়ে পড়লেন, কিন্তু সারারাত আর ঘুমোতে পারলেন না। তাঁর কেবল মনে হচ্ছিল, যারা শরণার্থী-শিবিরে আছে, এই রাত কী দুর্দশার মধ্যেই না তারা কাটাচ্ছে।’
১৬ই ডিসেম্বর মুক্তযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর যখন মুক্ত স্বদেশে ফিরে আসার চিন্তায় সবাই উদ্বেলিত, ঠিক সেই সময়েই, ১৮ই ডিসেম্বর সকালে আনিসুজ্জামান ও তাঁর পরিবারের লোকেরা খবরের কাগজে দেখলেন 888sport appয় আল-বদরদের হাতে বুদ্ধিজীবী হত্যার বৃত্তান্ত। পরের দিন কাগজে বেরিয়েছিল রায়ের বাজারের বধ্যভূমির বিস্তৃত বর্ণনা। বিজয়ের আনন্দ মলিন হয়ে গেল বিষাদের ছোঁয়ায়। পাকিস্তানিদের পৈশাচিকতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরও তাদের দোসর আল-বদর বাহিনীর এই নৃশংসতার বিবরণ পড়ে শিউরে না উঠে কেউ পারেনি।
পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশে ফেরার আগেই ২৩শে ডিসেম্বর 888sport appsে গেলেন আনিসুজ্জামান। তাঁরা গিয়েছিলেন দুটি গাড়ি নিয়ে। আনিসুজ্জামানের গাড়িতে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 888sport apps সহায়তা সমিতির অনিল সরকার ও অনিরুদ্ধ রায়। রাত কাটালেন সবাই যশোরে – সার্কিট হাউজে। পরদিন আনিসুজ্জামান একাই গাড়ি নিয়ে গেলেন খুলনা। সেখানে ছিলেন তাঁর মেজ বোন, দুলাভাই ও তাঁদের ছেলেমেয়েরা। দিনে দিনে খুলনা থেকে ফিরে রাতেই সবাই ফিরে এলেন কলকাতায়।
এদিকে ২০শে ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে পরিকল্পনা-কমিশনের সদস্যপদ ত্যাগ করে লেখা চিঠিটা তাঁর হাতে দিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। চিঠিতে তিনি লেখেন যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পূর্বপদে ফিরে যেতে চান তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৫ই জানুয়ারি সকালে দেশে ফেরার যাত্রা শুরু হলো। আবারো দুই গাড়ি, তাঁর এবং শ্যালক আবদুল আজিজের। খুলনায় দুদিন থাকলেন বোনের বাড়িতে। ৮ই জানুয়ারি রাতে পৌঁছলেন 888sport appয় – ঠাটারীবাজারের বাড়িতে। ১০ তারিখ রাতে একটি দুঃসাহসের কাজ করলেন। তাঁদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন অবাঙালি মাহবুবের মা। তাঁকে পৌঁছে দিয়ে এলেন মিরপুরে – বিহারি-অধ্যুষিত অঞ্চলে। বাসায় কারো সায় ছিল না এতে। রাতে যখন গাড়ি চালিয়ে একা বাসায় ফিরলেন, তখন দেখলেন – ওই মধ্যরাতে দোতলার বারান্দায় উৎকণ্ঠিতচিত্তে দাঁড়িয়ে তাঁর বাবা এবং বাড়ির আর সবাই।
বারো
জানুয়ারি মাসের ১৭-১৮ তারিখে আনিসুজ্জামান ফিরে গেলেন চট্টগ্রামে, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কর্মস্থলে যোগ দিতে। এক গাড়িতে উপাচার্য ড. এ. আর. মল্লিক ও পদার্থ888sport apk বিভাগের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামসুল হক; আর অন্য গাড়িতে রেজিস্ট্রার মুহম্মদ খলিলুর রহমান ও আনিসুজ্জামান। অসংখ্য রাস্তাঘাট, পুল ও কালভার্ট ভাঙা – বিকল্প পথ ধরে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। যুদ্ধোত্তর সময়ে এটিই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছিলেন সবাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে অনেক দেরি হলো। পরদিন বিকেলে মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে ‘বাংলার সংগ্রামী বুদ্ধিজীবীদের বীরোচিত সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠিত হলো। এর আয়োজন করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। এর কয়েকদিন পরেই ড. এ. আর. মল্লিক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেলেন শিক্ষা সচিব হিসেবে নতুন পদে যোগ দিতে।
জানুয়ারি (১৯৭২) মাসের শেষদিকে সৈয়দ আলী আহসান আনিসুজ্জামানকে বললেন যে, শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী তাঁকে বাংলা একাডেমির পরিচালক নিযুক্ত করতে চান। তাঁর সম্মতি তাতে আছে কি না তা জেনে নেওয়ার ভার দিয়েছেন সৈয়দ আলী আহসানকে। আনিসুজ্জামান তখনই তাঁকে জানিয়ে দিলেন যে, শিক্ষকতার বাইরে কিছু করার ইচ্ছে তাঁর নেই। ফেব্রুয়ারি মাসে আগে পরে সব বিশ্ববিদ্যালয় খুলে গেল। তার আগে নতুন উপাচার্য নিযুক্ত হলেন – 888sport appয় মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, রাজশাহীতে খান সারওয়ার মুরশিদ, জাহাঙ্গীরনগরে সৈয়দ আলী আহসান এবং চট্টগ্রামে এম ইন্নাছ আলী। সৈয়দ আলী আহসান জাহাঙ্গীরনগর চলে আসায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ হলেন আনিসুজ্জামান।
এদিকে এপ্রিল (১৯৭২) মাস থেকেই সংবিধান প্রণয়নের কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন আনিসুজ্জামান। ড. কামাল হোসেন তাঁকে জানালেন, সংবিধান প্রণয়নের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি খসড়া করবেন, আনিসুজ্জামানকে তার বাংলা করে দিতে হবে, শেষ পর্যন্ত বাংলাটাই গৃহীত হবে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে। আনিসুজ্জামান বললেন, একা পারব না। একটা দল চাই। আবাল্য বন্ধু নেয়ামাল বাসিরের নাম বললেন তিনি – বাংলা-উর্দু-ফারসিতে অগাধ অধিকার তাঁর। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিযুক্ত ছিলেন দোভাষী হিসেবে। ওই পরিষদের দফতর 888sport appয় চলে আসার পরে হয়েছেন সহকারী বিতর্ক-সম্পাদক। নেয়ামাল বাসির 888sport app download apk latest versionকের দলে এ. কে. এম. শামসুদ্দীন নামে তাঁর এক সহকর্মীকেও যুক্ত করলেন। 888sport sign up bonusকথা বিপুলা পৃথিবীতে আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘মনে পড়ে, আইনমন্ত্রীর দপ্তরে এক দুপুরে কামাল আর আমি মুখোমুখি বসে। প্যাডের কাগজে খসখস করে লিখতে শুরু করলেন সংবিধানের প্রস্তাবনা। এক স্লিপ লেখা হলে সাদা কাগজের সঙ্গে সেটা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি 888sport app download apk latest version করতে শুরু করলাম। একটা অনাস্বাদিত শিহরণ জাগলো দেহে-মনে। এই আমার স্বাধীন দেশ, তার সংবিধান-রচনার কাজে হাত দিয়েছি।
‘কামালকে বললাম, 888sport app download apk latest versionটা মাজাঘষা করতে হবে, বাড়ি নিয়ে যাই। তিনি বললেন, মূলটারও কিছু উন্নতি ঘটাতে হবে, কাল আবার বসবো একসঙ্গে।’
সংবিধান রচনার কাজে কি পরিমাণে শ্রম ও সময় দিয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত একটি বিবরণ পাওয়া যাবে নিচের উদ্ধৃতিতে। আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘সংবিধানের কাজে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে পনেরো দিন আমি 888sport appয় থেকেছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশে পুরো সময়টাই কাটিয়েছি 888sport appয়। এক-আধবার ছাড়া সড়কপথে নিজেই গাড়ি চালিয়ে সপরিবারে আসা-যাওয়া করেছি। গণপরিষদ ভবনে – পরে যা রূপান্তরিত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে – আমাকে একটা কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, সেখানেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেটেছে। কখনো বেশি রাত হয়ে গেলে কামালের বাড়ির বসার ঘরে শুয়ে বাকি রাত যাপন করেছি, সকালে সে-বাড়িতেই নাশতা করে দ্রুত চলে এসেছি গণপরিষদে। …
‘কামাল খসড়া তৈরি করে যাচ্ছিলেন আর আমরা 888sport app download apk latest version করে যাচ্ছিলাম। মাঝে মাঝে বাংলা ভাষ্যের প্রয়োজনে কামাল তাঁর ইংরেজি বাক্য বা তার বিন্যাস পরিবর্তন করতেন। নেয়ামালের পটুত্ব খুব কাজে এসেছিল। শব্দের উদ্ভাবনে তার নৈপুণ্য ছিল। ওমবুড্সম্যানের প্রতিশব্দ ন্যায়পাল তারই তৈরি। তবে তার মধ্যে এক ধরনের রক্ষণশীলতা ছিল। যেমন, ইংরেজিতে বহুবচন থাকলে বাংলায় সে বহুবচনই ব্যবহার করবে; মূলে যদি পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার্স থাকে, তাহলে 888sport app download apk latest versionে সে সংসদ-বিষয়াবলি করবে, কিছুতেই সংসদবিষয়ক করতে রাজি হবে না। সে বারবার বলতো, দেখো, এক জায়গায় গিয়ে তুমি হয়তো দেখবে, বাংলায়ও বহুবচন ব্যবহার না করে উপায় নেই, তখন কী হবে? ইংরেজির বহুবচন বাংলায় কোথাও একবচন করবো, আবার কোথাও বহুবচন করবো, এতে সঙ্গতি থাকে না। তবে সংবিধানে সে আরো বাংলা পারিভাষিক শব্দ ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিল, আমিও ছিলাম। কিন্তু শাসনতন্ত্র কমিটিতে আমি সেগুলোর অনুমোদন নিতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। শাসনতন্ত্রের বদলে সংবিধান শব্দটা গ্রহণ করাতেই আমাকে বেগ পেতে হয়েছিল। …’
সংবিধান প্রণয়ন-সংক্রান্ত কাজে নিজের শ্রম ও সংশ্লিষ্টতার বিবরণ উপস্থাপন করতে গিয়ে আনিসুজ্জামান তাঁর ব্যক্তিগত ভাবনা ও বিবেচনার দিকটিও বিপুলা পৃথিবীর সপ্তম অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং প্রাসঙ্গিক নানা বিষয় তাতে যুক্ত করেছেন। আগ্রহী পাঠকরা সেখানে তার সন্ধান করতে পারবেন।
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক-পদ পূরণের লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি বের হয়। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, আনিসুজ্জামানের প্রতি স্নেহবশত, তাঁকে দরখাস্ত করতে বলেন। কিন্তু আনিসুজ্জামান তাতে রাজি হতে পারলেন না। তিনি বললেন, ‘আমি চট্টগ্রামে গেছি এখনো তিন বছর হয়নি – এখন 888sport appয় আবার চাকরির আবেদন করলে অস্থিরচিত্ততার পরিচয় দেওয়া হবে মাত্র।’ রাজ্জাক সাহেব তখন উপাচার্য মুজাফফর আহমদ চৌধুরীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, উপাচার্য যেন নির্বাচকমণ্ডলীর সভায় আনিসুজ্জামানের নামটিও বিবেচনা করতে বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-অনুযায়ী আবেদনকারীদের বাইরেও কারো নাম নির্বাচকমণ্ডলীকে বিবেচনা করতে বলার অধিকার উপাচার্যের ছিল।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অস্থায়ী অধ্যাপক-পদ বিজ্ঞাপিত হলে আনিসুজ্জামান যথারীতি আবেদন করলেন এবং অক্টোবর (১৯৭২) মাসে সে-পদে নিয়োগ পেলেন। অবশ্য তাতেও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়নি। নানারকম গুজব ও প্রচার বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আনিসুজ্জামান তাঁর বিপুলা পৃথিবী বইটিতে যা লিখেছেন তা এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন :
‘888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সচিব একদিন আমাকে পাকড়াও করে বললেন, ‘ভিসি আপনার একটা সিভি চেয়েছেন, এই সপ্তাহে দিয়ে যাবেন।’ কদিন পরে আমার জীবন তাঁর হাতেই সমর্পণ করলাম। তিনি পাকা লোক, জানতে চাইলেন, ওতে আমার স্বাক্ষর আছে কি না। উত্তর শুনে বললেন, এখনই স্বাক্ষর করে দিয়ে যান।
‘অক্টোবর মাসের কোনো এক সময়ে নির্বাচকমণ্ডলীর সভা বসলো 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রার্থী 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীলিমা ইব্রাহিম ও আহমদ শরীফ, রাজশাহী থেকে কাজী আবদুল মান্নান, সরকারি কলেজ থেকে আলাউদ্দিন আল আজাদ। তার ওপর উপাচার্য আমার জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করেছেন। আব্দুর রাজ্জাকের মুখে শুনলাম, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
‘অন্যেরাও নিশ্চয় এমনই শুনেছিলেন। তার প্রতিক্রিয়া হলো প্রবল। একদল ছাত্র অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনে চড়াও হলো, নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের ফুলার রোডের বাসায় গিয়েও তাঁর খোঁজ করলো। নির্বাচকমণ্ডলীর আরেকজন সদস্য সৈয়দ আলী আহসানকে ফোন করে গালমন্দ করলো কেউ কেউ, জানতে চাইলো, আমি কেন আমার স্ত্রীকে বিধবা করতে চাই। আমাকে অনেকে পরামর্শ দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে দূরে থাকতে। এদিকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যাপকের আরো ২৪টি পদ সৃষ্টি হলো, তার মধ্যে একটি বাংলায়। বাংলা বিভাগে অধ্যাপকের দুটি পদে দুজন নিয়োগ পাবেন – এরকম সম্ভাবনায়ও ক্ষোভ প্রশমিত হলো না – বাড়লো হয়তো। বিভাগে ছাত্রদের আনুষ্ঠানিক সভায় ‘একজন প্রভাবশালী সহকারী অধ্যাপকের প্রিয় পাত্রকে’ ‘পেছন দরজা দিয়ে নিয়োগের চেষ্টা’র প্রতিবাদ করা হলো, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে স্বজনপ্রীতি, অবৈধ নীতি ইত্যাদি পরিত্যাগ করার আহ্বান জানানো হলো, অন্যথায় সচেতন ছাত্রসমাজ যে চরম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সে-সংকল্পও ব্যক্ত হলো। উপাচার্য প্রমাদ গুনলেন। রাজ্জাক সাহেবের অনুরোধ ছাড়াও, তিনি নিজে থেকেই আমাকে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে আনতে চেয়েছিলেন। অল্প কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী যে আমাকে 888sport appয় নিয়ে আসতে বলেছিলেন তাঁকে, তাও তাঁর মনে ছিল। এখন দেখলেন ছাত্রলীগের মধ্যম সারির নেতারাই আমাকে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে চায় না। অবস্থা এমন হলো যে, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অধ্যাপক-নিয়োগের নীতিমালা ব্যাখ্যা করার দাবি জানালো। তাদের পর্যবেক্ষণ : ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নোংরা রাজনীতি শুরু হয়েছে। … কেউ কেউ ব্যক্তিগত পদোন্নতি ইত্যাদির আকাক্সক্ষায় দলাদলি করার চেষ্টা করছেন। তাঁরা ছাত্রদেরকেও তাঁদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। কর্তৃপক্ষও কোন প্রকার দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণ করছেন না, বরং দলাদলির সুযোগ করে দিচ্ছেন।
‘888sport app বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সাধারণ ছাত্রদের নামে মুদ্রিত একটি প্রচারপত্র এ-সময়ে বিতরণ করা হলো। তার ভাষা বেশ অগ্নিগর্ভ। মুজাফফর আহমদ চৌধুরী, মীর্জা নূরুল হুদা, আব্দুর রাজ্জাক ও সৈয়দ আলী আহসান তার আক্রমণের লক্ষ্য – আমি তো আছিই। এবারে আমি বিচলিত না হয়ে পারলাম না। আমার কারণে আমার শ্রদ্ধেয় মানুষেরা এভাবে অপমানিত হবেন, তা আমার কাছে খুবই খারাপ লাগতে লাগলো। ভাবলাম, যথেষ্ট হয়েছে, এবার জনসমক্ষে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা দরকার যে, এই প্রতিযোগিতায় আমি আর নেই। মুজাফফর আহমদ চৌধুরীকে আমার অভিপ্রায় টেলিফোনে জানালাম। স্বভাবতই উনি ক্ষুণ্ন হলেন, আমি মাফ চাইলাম। উনি বললেন, ‘ইট ইজ ইওর ডিসিশন, আফটার অল, তবে, প্লিজ, সারের সঙ্গে কথা বলে নেবেন বিফোর ইউ গো পাবলিক।’ সৈয়দ আলী আহসানকে ফোন করলাম – ওঁর কথাও প্রায় তাই। এদিকে রাজ্জাক সাহেবকে বাড়িতে ধরতে পারছি না। একবার গিয়ে পেলাম ওঁর অব্যবহিত কনিষ্ঠ আবদুল খালেককে। তিনি বাড়িতেই বেশির ভাগ থাকেন – ছাত্রদের রোষের ব্যাপারটা স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি আমার সঙ্গে একমত। তবে কারণটা একটু ভিন্ন : ‘আপনার সারের বউ-বাচ্চা নাই, দুনিয়াদারির খবর নাই – তার কথা আলাদা। আপনে ক্যান এই রিস্কের মধ্যে যাইবেন? যা দিনকাল, বলা যায় না।’
‘সেদিন নভেম্বরের ২ তারিখ। আমাদের অগ্রজস্থানীয় বন্ধু, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্র888sport apk বিভাগের শিক্ষক, জয়নুল আবেদীন দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা গেছেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে বাদ আসর জানাজা। গণপরিষদ ভবন থেকে সেখানে এলাম এবং যেমন ভেবেছিলাম, রাজ্জাক সাহেবকেও পেয়ে গেলাম। জানাজার পরে সারকে বললাম, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।’ উনি জানতে চাইলেন, গাড়ি আছে? হাঁ-সূচক উত্তর শুনে বললেন, ‘তবে কামালের বাড়ি চলেন।’ যেতে যেতে আমার কথাটা বললাম। বিবৃতির খসড়া আমার পকেটে ছিল, কামাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে সেটা ওঁর হাতে দিলাম। হামিদাও আমার অভিপ্রায় সমর্থন করলেন। বিবৃতিতে কোন শব্দের প্রয়োগ জুতসই হয়েছে, সেটাই র্সা বললেন আমাকে; আমার কী করণীয়, সে-বিষয়ে কিছুই বললেন না। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটা প্রেসে পাঠিয়ে দিই?’ সার বললেন, ‘আপনি তো মন ঠিক কইরাই কাগজটা লিখছেন।’ আমি সে-রাতেই দৈনিক বাংলা, সংবাদ ও পূর্বদেশে প্রকাশের জন্যে বিবৃতিটা পাঠিয়ে দিলাম। অন্যকোনো কাগজে বেরিয়েছিল কি না, মনে নেই, তবে পূর্বদেশে তা পরদিনই ছাপা হয়েছিল। আমার পক্ষে তাই ছিল যথেষ্ট, কেননা আক্রমণাত্মক বিষয়গুলো মূলত পূর্বদেশেই পত্রস্থ হয়েছিল।
আমার বিবৃতিটি ছিল এরকম :
গত দুদিনে কোন কোন সংবাদপত্রের 888sport world cup rateে এবং একটি মুদ্রিত প্রচারপত্রে স্বনামে ও অনামে আমি উল্লিখিত হয়েছি। এ থেকে বোঝা যায় যে, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পদ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন ভেবে অনেকে বিচলিত বোধ করেছেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন পদের জন্য আমি আবেদন করিনি, সেখান থেকে কোন নিয়োগও লাভ করিনি। এই অবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মে এ প্রসঙ্গে আমার কিছু বলার কথা নয়। কিন্তু মুদ্রিত বিষয়বস্তুর ভাষার তীব্রতা ও ভাবের গভীরতা এমন পর্যায়ের যে, আমি এই স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটাতে বাধ্য হচ্ছি।
888sport app বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের ছাত্র, শিক্ষক ও হিতৈষীদের আমি এই বলে আশ্বস্ত করতে চাই যে, অদূর ভবিষ্যতে এরকম নিয়োগ গ্রহণের কোনো পরিকল্পনা আমার নেই। আশা করি যে, এই বিবৃতির পরে চরিত্র হননের পালা সাঙ্গ হবে।
‘এই বিবৃতি দিয়ে আত্মসম্মান রক্ষা করতে পেরেছিলাম কি না জানি না, কিন্তু আমার জন্যে গুরুজনদের সম্মানহানি রোধ করতে পারিনি। সেদিক দিয়ে ওই বিবৃতির সঙ্গে আমার স্বার্থপরতা জড়িত হয়েছিল। তবে উপাচার্যের জন্যে তা একটু স্বস্তিকরও হয়ে থাকতে পারে। তিনি বাংলা বিভাগের অধ্যাপকের দুই পদে নীলিমা ইব্রাহিম ও আহমদ শরীফকে নিয়োগ দিতে পেরেছিলেন। নভেম্বর মাসেই তাঁরা নতুন পদে যোগ দিয়েছিলেন। ততদিনে শুনেছি, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তৃতীয় একটি অধ্যাপকের পদও বাংলা বিভাগে সৃষ্টি করা হয়েছিল। তা হতে হতে অবশ্য আমি আর দৃশ্যপটে ছিলাম না।’
উদ্ধৃতি দীর্ঘ হলো; কিন্তু তার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। সে-সময়ে এসব ঘটনার কথা লোকমুখেও নানাভাবে বিস্তার লাভ করেছিল। আমাদের এও 888sport app download for androidে রাখা দরকার, আনিসুজ্জামান এ-সময়ে সংবিধান প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং সে-কাজ শেষ পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে শেষ করতে পেরেছিলেন। তার অনুপুঙ্খ বর্ণনাও বিপুলা পৃথিবীতে স্থান পেয়েছে। তবে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক নিয়োগের এই ঘটনার অবসান যে খুব সহজে ঘটেনি তার আভাস আনিসুজ্জামান দিয়েছেন এ-কথা বলে যে, ‘এই ঘটনা থেকে আরো কিছু ধূলিরাশি সঞ্চারিত হয়েছিল।’ নিকট-পরবর্তীকালে এম.এ. পরীক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সময় তিনি যে আবার বিব্রতকর এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন (বহিরাগত পরীক্ষক হিসেবে) তার কিঞ্চিৎ বর্ণনাও বিপুলা পৃথিবীতে তিনি দিয়েছেন। তবে নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয়টির একটি সমাপ্তি-কাণ্ডও আছে। সে অবশ্য অনেক পরের কথা। আনিসুজ্জামান লিখেছেন :
‘সমস্ত ঘটনার দুটি পাদটীকা আছে। যেসব ছাত্র ১৯৭২ সালে আমার নিয়োগের বিরোধিতা করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, অনেক বছর পর তাদের অন্তত দুজন আমার কাছে নিজেদের আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল এবং অন্তত আরো দুজন তাদের ব্যবহারের দ্বারা বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, তারা অনুতপ্ত।
‘পরবর্তীকালে রাজ্জাক সাহেব কখনো এই ঘটনা নিয়ে আমাকে কিছু বলেননি।’
তেরো
১৯৭৩ সালে 888sport apps ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের তখনকার পরিচালক ড. স্বদেশ বসুর কাছ থেকে আনিসুজ্জামান জানতে পারেন যে, সে-বছরই প্যারিসে ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ ওরিয়েন্টালিস্ট-এর দ্বিশতবর্ষপূর্তি উদ্যাপিত হবে এবং অধ্যাপক ড্যানিয়েলের ইচ্ছা, তিনি যেন তাতে যোগ দেন। আমেরিকান নাগরিক অধ্যাপক ড্যানিয়েল থরনার সত্তরের দশকে ছিলেন সোরবোনের ইকোল প্রাতিক দেজৎ ইতুদের দিরেজর দেতুদ। এই অর্থনীতিবিদ ছিলেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মুশারফ হোসেন ও ড. স্বদেশরঞ্জন বসুর (888sport appsের তিন কৃতী অর্থনীতিবিদ) বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তানদের সাহায্য করেছিলেন এবং নিজেও প্যারিস থেকে কলকাতায় এসেছিলেন বন্ধুবান্ধবের খোঁজখবর করতে। তখনই আনিসুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আমন্ত্রণপত্র এলো যথাসময়ে, টিকিটও। 888sport app থেকে প্রথমে দিল্লিতে গেলেন আনিসুজ্জামান। ড. এ. আর. মল্লিক তখন সেখানে 888sport appsের হাই কমিশনার। তাঁর বাড়িতে একদিন থেকে পরদিন গেলেন বোম্বাই, সেখান থেকে সোজা প্যারিস।
888sport app বিমানবন্দরে এসে দেখলেন, অধ্যাপক আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পরিচালক ড. এম. এ. গফুর সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে কংগ্রেসে যোগ দিতে যাচ্ছেন। বোম্বাইতে পেলেন ভারতীয় প্রতিনিধিদলের পশ্চিমবঙ্গীয় সদস্যদের – ইতিহাসবিদ ড. বরুণ দে, ড. অনিরুদ্ধ রায়, ড. হিতেশরঞ্জন সান্যাল, ড. কল্যাণ কুমার দাশগুপ্ত এবং 888sport live footballিক ও তুলনামূলক 888sport live footballের বিশেষজ্ঞ ড. নবনীতা দেবসেন। বিমান888sport slot game আনন্দে কাটলেও প্যারিসে নেমে দেখলেন তাঁদের যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। কংগ্রেস উপলক্ষে সারা দুনিয়া থেকে লোক এসেছে – থাকার জায়গা সুলভ নয়। ভরসা অনিরুদ্ধ রায় – প্যারিস তাঁর নখদর্পণে। তাঁর সাহায্যেই বঙ্গসন্তানদের থাকার জায়গা মিলল। প্রথমে ব্যবস্থা হলো অধ্যাপক আবু মহামেদ হবিবুল্লাহ এবং এম. এ. গফুরের, পরে অন্য দুজনের। অধ্যাপক ড্যানিয়েলের তৎপরতায় একটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করলেন আনিসুজ্জামান।
এক সকালে সদলে বেরিয়ে দেখা হলো মিসরীয় সাংবাদিক আনোয়ার আবদেল মালেকের সঙ্গে। পরিচয় করিয়ে দিলেন বরুণ দে। মিশরের জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল আন্দোলনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। জামাল আবদেল নাসের যখন বামপন্থীদের দমন করতে শুরু করেন, তখন তিনি পালিয়ে চলে আসেন প্যারিসে। সেখানে সিএনআরএস নামে পরিচিত একটি বড় প্রতিষ্ঠানে তিনি গবেষণা অধ্যাপক। সেদিন আনোয়ার আবদেল মালেকের সঙ্গে ফুটপাতের ক্যাফেতে পরিচয়ের পর তাঁদের দুজনের মধ্যে ভালো একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, পরবর্তীকালে যা অক্ষুণ্ন থাকে ও নানা কাজের সূত্রে আরো গভীর হয়। পরে একবার আনোয়ার আবদেল মালেকের প্যারিসের অ্যাপার্টমেন্টে নাসেরের একটি বাঁধানো ছবি দেখে আনিসুজ্জামান তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি না নাসেরের দ্বারা নির্যাতিত?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার প্রতি তিনি অন্যায় করেছেন, কিন্তু মিশরের জন্যে তিনি যা করেছেন, তার জন্যে তাঁর প্রতি সকল মিশরবাসীর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।’ আনিসুজ্জামান এই কথাটা কখনো ভুলতে পারেননি।
১৯৭৩ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি ও মস্কোয় গিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান – যথাক্রমে 888sport apps আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের (আপসো) দলভুক্ত হয়ে ও ওয়ার্ল্ড পিস ওয়েভে যোগ দেওয়ার জন্য। তাসখন্দ, মস্কো হয়ে হাঙ্গেরি যাওয়ার সময় হেলথ কার্ড খুঁজে পাচ্ছিলেন না। হোটেল লাউঞ্জ থেকে আবার রুমে গিয়েছিলেন সেটি খুঁজতে। পেলেন না। এয়ারপোর্টে যাওয়ার তাড়া থাকায় লাউঞ্জে ফেলে গেলেন ওভারকোট। বুদাপেস্ট বিমানবন্দরে হেলথ কার্ড দেখাতে না পারায় দুদিনের কোয়ারেন্টাইনে যেতে হলো। ইনজেকশনও নিতে হলো। শেষদিন ফিরে পেলেন ওভারকোট, তার পকেটে হেলথ সার্টিফিকেট। এবার ব্যতিক্রম ঘটনা – দুটি হেলথ সার্টিফিকেটের মালিক হয়ে গেলেন।
আপসো’র আমন্ত্রণে গেলেও 888sport appsের প্রতিনিধিদল, এবং 888sport app দেশেরও, ছিলেন সরকারি অতিথি। আদর-আপ্যায়নের কমতি ছিল না। দেখতে গিয়েছিলেন তাঁরা বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থান – যেমন, ‘হাঙ্গেরি মদ-প্রস্তুতকারক দেশ। যেখানে ওয়াইন তৈরি হয়, সেখানে যাওয়া গেল। আঙুরভর্তি বড়ো বড়ো কাঠের গামলায় একেক দল সুসজ্জিত মেয়ে রবারের গাম-বুট পায়ে তালে তালে আঙুর পিষছে। মনে হয়, তারা কাজ করছে না, নাচছে। এ-দৃশ্য বড়ো মনোহর। শেষ পর্যন্ত এই শ্রমের ফসল যা দাঁড়ায়, তাও সুস্বাদু।’
আরো দেখতে গিয়েছিলেন লেক বালাতন। তার বর্ণনা আনিসুজ্জামানের ভাষাতেই চমৎকার : ‘আমাদের অভিভাবক জানতে চেয়েছিলেন, আমরা বিশেষ কিছু দেখতে চাই কি না। আমি বললাম, লেক বালাতন দেখতে চাই – তার তীরে এক স্বাস্থ্যনিবাসে আমাদের কবি একটি কাব্যের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন। শুনে তিনি অবাক হন। খোঁজখবর নিয়ে বলেন, ওখানে এক ভারতীয় কবির স্মারক আছে – 888sport appsের কবির কথা তো কেউ জানে না। বলি, তিনি রবীন্দ্রনাথ, ভারতের কবি, আমাদেরও কবি, এই দুই দেশের জাতীয় সংগীতই তাঁর রচনা। শুনে তিনি আরো অবাক হন।
বালাতন হ্রদের তীরে যাই। রবীন্দ্রনাথ যে-বাড়িতে বসে লেখন কাব্যের পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন – তাঁর হাতের লেখা দিয়েই বইটি বেরিয়েছিল – সে-বাড়ি দেখি। বাড়ির সামনে তিনি একটি গাছ লাগিয়েছিলেন – সেটি তখন বেশ বড়ো। সেখানে তাঁর একটি স্মারক আছে।
কবির কথায় আমাদের অভিভাবক বলেন হাঙ্গেরির জাতীয় কবি সান্দর পেতোফির (হাঙ্গেরীয়রা বলে পেতোফি সান্দর) কথা। তিনি শুধু কবি নন, ওদের জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্গাতা। ১৮৪৮ সালে হাঙ্গেরির বিপ্লবে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সান্দর তাঁদের একজন। কবি হিসেবে তিনি খুব উঁচুদরের – বিশ্ব888sport live footballের শ্রেষ্ঠ সম্ভারের মধ্যে গণ্য হয় তাঁর কাব্য। অথচ তাঁর 888sport app download apk ও গান ওদেশে খুবই জনপ্রিয়। আশ্চর্য নয় যে, সান্দর বলতে পেরেছিলেন, জনপ্রিয় 888sport app download apkই হলো আসল 888sport app download apk। হাঙ্গেরির কাগুজে মুদ্রায় তাঁর প্রতিকৃতি আছে। আমাদের অভিভাবক তাঁর মূর্তির কাছে নিয়ে যান, তাঁর সুমুদ্রিত কাব্যগ্রন্থ উপহার দেন, প্লাস্টার অফ প্যারিসে তৈরি তাঁর মুখাবয়ব দান করেন।
‘বালাতন হ্রদ থেকে ফেরার পথে আমি লেখন থেকে দু-চরণের একটি 888sport app download apk উদ্ধৃত করেছিলাম :
বিদেশে অচেনা ফুল পথিক কবিরে ডেকে কহে –
‘যে দেশ আমার, কবি, সেই দেশ তোমারো কি নহে?’
‘এর একটা অক্ষম 888sport app download apk latest version করেছিলাম ইংরেজিতে। তা শুনেই ওঁরা বলেন, ভারি চমৎকার, এই উপলক্ষে খুবই মানানসই।’
১৯৭৩ সালের মে মাসে 888sport appয় অনুষ্ঠিত হয় ইতিহাস পরিষদের তৃতীয় বার্ষিক সম্মেলন। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনে আনিসুজ্জামান যোগ দিতে পারেননি। তবে সম্মেলনশেষে ভারতীয় ইতিহাসবিদ ও আনিসুজ্জামানের বন্ধু অনিরুদ্ধ রায় অপর দুই অতিথি রমিলা থাপার ও অধ্যাপক গ্রোভারকে নিয়ে চট্টগ্রামে আনিসুজ্জামানের বাসায় বেড়াতে যান। এর আগে ফরাসি লেখক ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী অঁদ্রে মালরো এপ্রিলের শেষে এসেছিলেন 888sport appsে। অঁদ্রে মালরো তিরিশের দশকে আন্তর্জাতিক ব্রিগেডে যোগ দিয়ে স্পেনের গৃহযুদ্ধে প্রজাতন্ত্রীদের পক্ষে লড়াই করেছিলেন, চল্লিশের দশকে মাতৃভূমি রক্ষায় যুদ্ধ করেছিলেন হিটলারের জার্মানির বিরুদ্ধে। 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী হয়ে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন তাঁর বয়স ৭০ বছর। 888sport apps সরকার সে-কথা মনে রেখে তাঁকে 888sport appsে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। স্বাধীনতা লাভের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডি-লিট্ উপাধিতে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। 888sport app সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন তাঁকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন। সে-সময়ে মালরোর সঙ্গে আনিসুজ্জামানের সাক্ষাৎ হয়েছিল। r (চলবে)


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.