আনিসুজ্জামান-জীবনকথা

(তৃতীয় কিস্তি)

চৌদ্দ

চট্টগ্রামে আসার পর প্রথমদিকে গবেষণার কাজে নিজেকে বিশেষভাবে নিয়োজিত রাখার সুযোগ আনিসুজ্জামান তেমন একটা পাননি। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার জন্যে 888sport live লিখতে গিয়ে যথেষ্ট শ্রম ও সময় দিয়েছিলেন। যথাসময়ে সেটি শেষ করতে পারেননি। তাঁর নিজের কথায় (এই সময়ে) ‘অন্যের বইয়ের ভূমিকা লিখেছি, স্মারকগ্রন্থের জন্যে 888sport live লিখেছি, খানিক গবেষণামূলক-খানিক সাধারণ-পাঠযোগ্য 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি লিখেছি মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মৃত্যুতে। কিন্তু প্রকৃত গবেষণার কাজে হাত দিতে পারিনি। সময় যে বৃথা ক্ষেপণ করেছি, তাও নয়। সংবিধান বা 888sport app যেসব কাজ করেছি বাংলার প্রয়োগ নিয়ে, সেও তো আমার কাজ। শিক্ষা কমিশনের জন্যে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মে যে-সময় দিয়েছি তাও তো অকাজে নয়। তবু অনুভব করেছি, 888sport app দায়িত্ব থেকে সরে এসে গবেষণায় ফেরা দরকার।’

তবে গবেষণার কাজের জন্য সময় দিতে না পারলেও তাঁর মনের মধ্যে একটা কাজের পরিকল্পনা ছিল। সুশীল কুমার দে-র হিস্ট্রি অফ  বেঙ্গলি লিটারেচার ইন দি নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি (কলকাতা, ১৯১৯) বইতে পুরনো বাংলা গদ্য সম্পর্কে যে একটি পরিশিষ্ট আছে; সেটি পড়ে তাঁর মনে হয়েছিল, এ-বিষয়ে কিছু কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সুকুমার সেনের বাঙ্গালা 888sport live footballে গদ্য (কলকাতা, ১৯৩৪) বইটি থেকেও সে-ধারণার সমর্থন পান। স্থির করেন, ‘১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের, অর্থাৎ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ-প্রতিষ্ঠার আগের, বাংলা গদ্য নিয়ে গবেষণা করব।’ সেই ধারণা মাথায় রেখেই, কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমিক স্টাফ ফেলোশিপের জন্য যখন আবেদন চাওয়া হলো ১৯৭৩ সালে, তখন সেই বিষয়ের প্রস্তাব দিয়ে দরখাস্ত দিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনয়নও পেয়ে গেলেন।

১৯৭৪ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজযোগে স্ত্রী-পুত্র ও দুই কন্যা নিয়ে লন্ডনের পথে রওনা হন আনিসুজ্জামান। সেদিনই রাতে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছলেন। তাঁরা যাওয়ার আগেই ভাগ্নে মামুন তাঁদের জন্য লন্ডনের দক্ষিণ-পশ্চিমে কলিয়ার্স উড অঞ্চলে একটি বাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলেন। ২০ ক্লাইভ রোডের এই বাড়িতে দোতলায় আড়াইটে শোবার ঘর, টয়লেট ও বাথরুম; নিচে বসার ঘর, খাবার ঘর ও রান্নাঘর। পেছনে একটু খালি জমি। ফেলোশিপ এক বছরের। অতদিন কারো বাসায় বা অন্য কোথাও থাকা যায় না বলেই এই ব্যবস্থা। দুই কন্যা রুচি ও শুচিকে তাদের বয়স অনুযায়ী দুই স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলো। দেশের মতো লন্ডনেও সংসারের সব দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিলেন মিসেস সিদ্দিকা জামান।

মাসাধিককাল বিদেশ সফরশেষে দেশে ফেরার পথে তাজউদ্দীন আহমদ লন্ডনে এসে পৌঁছেছিলেন অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। আনিসুজ্জামান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন হোটেল। সেখানে তাঁর শয়নকক্ষে একান্তে কথা বলেছিলেন তাঁরা দুজন, তবে তা পুরোপুরি নিরুপদ্রব ছিল না। তাজউদ্দীন এখানেই তাঁকে জানান যে, দেশে ফিরেই মন্ত্রিত্বের পদ ত্যাগ করবেন তিনি। লন্ডনের এই সাক্ষাৎকারই ছিল তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তাঁর শেষ সাক্ষাৎ।

এদিকে ড. কামাল হোসেনও ১৯৭৫ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি মন্ত্রিত্ব থেকে ছুটি নিয়ে অক্সফোর্ডে গিয়েছিলেন অল সোলস কলেজের ফেলো হয়ে। সঙ্গে তাঁর পরিবারের সকলে। আনিসুজ্জামান পরিবারের সবাইকে নিয়ে অক্সফোর্ডে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে দেখা পেলেন অর্থনীতিবিদ ড. নূরুল ইসলামের। তিনিও পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সেন্ট অ্যান্থনিজ কলেজে যোগ দিয়েছেন ফেলো হয়ে। সেখানেই খানিকক্ষণ পরে এক বাঙালি ছাত্র এসে খবর দিয়েছিল, 888sport appsের জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার এবং একটিমাত্র জাতীয় রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও বাকশালের সভাপতির পদ গ্রহণ করেছেন। এই খবর শুনে আনিসুজ্জামান বিমর্ষ হয়ে পড়লে ড. নূরুল ইসলাম তাঁকে বলেছিলেন, ‘অত চিন্তার কোনো কারণ নেই। 888sport appsে কোনো ব্যবস্থাই ঠিকমতো চলে না। দেখবেন, আপনি যেরকম একদলীয় ব্যবস্থার কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করছেন, আসলে ব্যাপারটা সেরকম হবে না।’ অন্যদিকে, কামাল হোসেনের প্রতিক্রিয়া থেকে আনিসুজ্জামানের ধারণা হয়েছিল – এমন যে একটা কিছু হতে যাচ্ছে, তা তিনি জানতেন। এ জন্যই তিনি মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে ছুটি নিয়ে লেখাপড়ার জগতে ফিরে এসেছেন।

ফেলোশিপের কাজে আনিসুজ্জামান যুক্ত হয়েছিলেন ‘সোয়াসে’র (লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ‘স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ’) সঙ্গে। তবে তাঁর গবেষণার উপকরণ সোয়াসের লাইব্রেরিতে তেমন ছিল না। সে-অভাব তিনি পূরণ করেছিলেন ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি এবং প্রধানত ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে। অবশ্য আনুষঙ্গিক 888sport app বিষয়ে পড়ালেখার জন্যে সোয়াসের লাইব্রেরিও তাঁর বেশ কাজে এসেছিল, সে-কথা তিনি বলেছেন। পূর্বোক্ত দুই লাইব্রেরিতে গবেষণার কাজ করার বিষয়ে নানা খুঁটিনাটি বর্ণনা আছে আনিসুজ্জামানের বিপুলা পৃথিবী গ্রন্থে। সে-বিবরণ সংক্ষিপ্ত হলেও আকর্ষণীয়। সেটি সরাসরি আস্বাদিত হওয়াই বরং ভালো। আনিসুজ্জামান লিখেছেন :

ব্রিটিশ মিউজিয়ম লাইব্রেরিতে আমার গবেষণার উপকরণ ছিল অপেক্ষাকৃত কম, তাই সেখানকার কাজ আগে শেষ করতে চাইলাম। আঠারো শতক থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিত্যনতুন যেসব আইন প্রণয়ন  করছিল, তার বাংলা মুদ্রিত 888sport app download apk latest version সেখানে রক্ষিত ছিল। একেবারে আন্দাজের ওপর ভর করে ওয়ারেন হেস্টিংসের ব্যক্তিগত কাগজপত্রের সংগ্রহ খুঁজতে আরম্ভ করলাম এবং সত্যিই তার মধ্যে বাংলা হস্তাক্ষরে কাগজ পেয়ে গেলাম। লন্ডনে যখন হেস্টিংসের অভিশংসন হচ্ছিল, তখন ‘বড় মানুষ ও সওদাগর ও আশরাফ ও ভদ্রলোক কলিকাতা শহরের বাসীসকল’ হেস্টিংসের পক্ষসমর্থন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডাইরেক্টরদের কাছে বাংলা ভাষায় এক আবেদনপত্র – এখনকার ভাষায়, স্মারকলিপি – পাঠিয়েছিলেন, তার একাধিক নকল পাওয়া গেল। ওই লাইব্রেরিতে টোকাটুকি যা করার করলাম, বেশকিছু কাগজপত্রের ফটোকপিও সংগ্রহ করলাম। যেদিন ফটোকপি পেলাম, সেদিন এই ভেবে লাইব্রেরি থেকে বের হলাম যে, আপাতত এখানে আর না এলেও চলবে।

‘বাড়ি ফেরার পথে সেই দিনই টিউবে আমার ব্রিফকেস ফেলে এলাম। আমার যত টোকা, যত ফটোকপি, ঠিকানা ও টেলিফোন-নম্বরের বই, চেকবই, এটাসেটা – সবই তার মধ্যে। কী করে যে ব্রিফকেস ছাড়া গাড়ি থেকে নামলাম সেটা ভেবে অবাক হই এবং নিজেকে ধিক্কার দিই। যখন টের পেলাম, তখনো অবশ্য ট্রেনটা দেখা যাচ্ছিল, কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে বলে কোনো লাভ হলো না। পরদিন যথারীতি লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ডের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডে ফরম পূরণ করে হারানোর খবর জানালাম। কিমাশ্চর্যতঃপরম! আমাদের ডাক এলেই ওপর থেকে শব্দ পেয়ে আনন্দ এক দৌড়ে নিচে চলে যেতো চিঠিপত্র আনতে। একদিন সে একতলা থেকেই চেঁচাতে আরম্ভ করলো, ‘তোমার ব্যাগ পাওয়া গেছে।’ খোলা ডাকে যে চিঠি এসেছিল, তাতে ছড়ি-ছাতা-ব্যাগের ছবি ছিল, তা দেখেই সে অনুমান করে নিয়েছে। সেই চিঠি নিয়ে যখন লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের জায়গায় পৌঁছোলাম, ব্রিফকেস সমর্পণ করে বয়স্ক অ্যাটেনডেন্ট সন্দেহ প্রকাশ করলেন, আমার তালিকার সব জিনিস তাতে আছে কি না। আসলে সবই ছিল, কিছুই খোয়া যায়নি। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বিলেতে যান, তখন সেখানে পৌঁছে ইংরেজি গীতাঞ্জলির পাণ্ডুলিপিসমেত একটা পোর্টম্যানটো ব্যাগ ব্রিটিশ রেলে ফেলে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ – সেটিও লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড থেকে পাওয়া গিয়েছিল।’

হারানো ব্রিফকেস ফেরত পাওয়ার আগেই আনিসুজ্জামান ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। সেখানকার সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত বই ও পাণ্ডুলিপির সহকারী সংরক্ষক ছিলেন মাইকেল ও’কিফ। তাঁর সঙ্গে কিছুটা বন্ধুত্ব হওয়ার পর আনিসুজ্জামান একদিন তাঁকে নিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তালিকায় নেই এমন বাংলা কাগজপত্র লাইব্রেরির কোথাও গচ্ছিত আছে কি না। মাইকেল বললেন, আছে কিছু, তবে সেসব যে কী, তা আমার জানা নেই, লাইব্রেরির আর কেউও জানে না।’ আনিসুজ্জামানের কৌতূহল বেড়ে গেল। তারপর মাইকেল একদিন তাঁকে ডেকে নিয়ে গেলেন স্ট্যাকে। এরপর, লিখেছেন আনিসুজ্জামান : ‘সেখানে একটা শেলফের একেবারে নিচের তাকে বেশকিছু কাগজপত্র, সুতোয় গাঁথা খাতার পাতা। এমন গোটা দুই খাতা পড়ার ঘরে এনে দেখার ব্যবস্থা হলো। খানিক পরীক্ষার পরে বুঝতে পারলাম,  এসব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির 888sport app কুঠির দৈনন্দিন চিঠিপত্র। 888sport app কুঠি কাপড়ের ব্যবসা করতো। 888sport app, ময়মনসিংহ ও ত্রিপুরার কয়েকটি জায়গায় ছিল কোম্পানির আড়ং। সেসব আড়ংয়ের গোমস্তারা তাঁতিদের ফরমাশ ও দাদন দিয়ে কাপড় তৈরি করিয়ে নিতো। ফরমাশ আসতো লন্ডন থেকে কলকাতায়, কলকাতা থেকে 888sport appয়, 888sport app থেকে এসব আড়ংয়ে, আড়ং থেকে তাঁতিদের কাছে। তাঁতিরা কাপড় বুনে দিলে তা যাচাই-বাছাই হয়ে উলটো পথে লন্ডনে পৌঁছোতো। চিঠিগুলি কুঠি ও আড়ংয়ের মধ্যে চালাচালি হয়েছিল। বাংলার অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটা অধ্যায় স্পষ্ট হয় এসব চিঠিপত্রের সাহায্যে। এর ভাষা ও রীতিও উল্লেখযোগ্য। আমি কিছু চিঠি হাতে নকল করে নিতে থাকলাম – কেননা এগুলো ফটোকপি করা যাবে না।

‘এই অবস্থায় মাইকেল একদিন বললো, তুমি কি এই কাগজপত্রের একটা তালিকা করে দেবে – সামান্য কিছু বিবরণ দিয়ে? আমি তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলাম। খাতাগুলোতে ওদের রীতি অনুযায়ী ডাক-নম্বর বসালাম। বিবরণীতে কাগজের মাপ-জোক, ধরন, প্রেরক ও প্রাপকের নামধাম, পৃষ্ঠা 888sport free bet ইত্যাদি দেওয়া গেল। নিজে হাতে টাইপ করে একটা বাইন্ডার লাগিয়ে  A Handlist of Uncatalogued Bengali Manuscripts in India Office Library and Recovers নাম দিয়ে তালিকাটা মাইকেলকে দিলাম। সে খুব খুশি হয়ে বললো, এটা বরঞ্চ তুমি আমাদের ডাইরেক্টরের হাতে দাও – আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করছি। মিস জোন ল্যানকাস্টার ডাকসাইটে গ্রন্থাগারিক – সহকর্মীরা তাঁকে একটু বেশিই সমীহ করতেন। তাঁর হাতে যখন তালিকাটি সমর্পণ করলাম, তিনি যথেষ্ট সন্তোষ ও সৌজন্য প্রদর্শন করলেন। বললেন, তাঁর দেখা হয়ে গেলে ওটা ক্যাটালগ হলে 888sport app তালিকাগ্রন্থের সঙ্গে স্থান পাবে। এটা আমার জন্যেও ছিল আশাতীত 888sport app download bd।’

প্রসঙ্গক্রমে বলতে হচ্ছে, এরপর আরো দুবার আনিসুজ্জামান এই কাজটির অনুসরণে লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেন মূলত বিনা পারিশ্রমিকেই। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে দেশে ফেরার বছর দেড়েক পর ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরির পরিচালক তাঁকে জানান যে, 888sport app কুঠির কাগজপত্রের যে-হ্যান্ডলিস্ট দ্রুততার সঙ্গে তিনি করে দিয়ে এসেছিলেন তার পূর্ণতাদানের আবশ্যকতা তাঁরা অনুভব করছেন। এই সঙ্গে এ-কথাও তাঁরা জানিয়ে দেন যে, আনিসুজ্জামানের জন্য তিন মাস লন্ডনবাসের ব্যয় নির্বাহের ব্যবস্থা তাঁরা করতে পারবেন, তবে যাতায়াতের বিমান-ভাড়ার ব্যবস্থা তাঁকেই করতে হবে। নিজের কাজের সমাপ্তি টানার আশায় আনিসুজ্জামান রাজি হলেন এবং এ-যাত্রায় হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছলেন ১৯৭৭ সালের ২৫শে মার্চ সকালে। থাকার জায়গা পেলেন সুহৃদ আবদুল মোমেনের ল্যাম্বল স্ট্রিটের কাউন্সিল-ফ্ল্যাটে। বন্ধুগৃহে দিনযাপনের ও 888sport app ঘটনার বিবরণ আছে তাঁর বিপুলা পৃথিবী গ্রন্থে। আরো আছে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে তাঁর এবারের কাজের কিছু বর্ণনা। আনিসুজ্জামান লিখেছেন :

‘ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে বসলাম চিঠিপত্রের খাতা নিয়ে। 888sport app কুঠির অধীনে 888sport app, ময়মনসিংহ ও ত্রিপুরায় কোম্পানির আটটি আড়ং ছিল। এ আড়ং মেলা নয়, কোম্পানির ফরমাশ মতো কাপড় বুনে তাঁতিরা এখানে জমা দিয়ে দাম বুঝে নিতো। ফরমাশ আসতো লন্ডন থেকে কলকাতায়, সেখান থেকে 888sport app কুঠিতে, কুঠি থেকে আড়ংয়ে। আড়ংয়ের গোমস্তা দাদন দিয়ে কাপড় তৈরি করাতেন। কাপড় বিন্যস্ত হতো পাঁচ শ্রেণিতে। গোমস্তার মনঃপুত না হলে একশ্রেণির কাপড় হয়তো নেওয়া হতো তার নিচের শ্রেণিতে, নয়তো ফেরত দেওয়া হতো। তাঁতির পাওনা থেকে দাদন বাবদ দেওয়া টাকার হিসাব বাদ দিয়ে যদি তার কিছু প্রাপ্য হয়, পেতো। নইলে নতুন করে দাদন নিয়ে সে কোম্পানির কাছে বাঁধা পড়ে থাকতো। এক আড়ংয়ে একবার 888sport app থেকে যে-পরিমাণ টাকা গিয়েছিল, ঠিক সে পরিমাণ টাকাই আদায় হিসেবে ফিরে আসে। দাদন-নেওয়া তাঁতি অন্য কারো কাছে কাপড় বেচতে পারতো না। সে মারা গেলে কোম্পানি তার ঘটিবাটি বেচে দাদনের টাকা আদায় করতো। গোমস্তারা যে-পরিমাণ কাপড় আদায় করতে চাইতো, তা অনেক সময়ে তাঁতি দিতে পারতো না। তখন সে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যেতো, পেশা বদল করে অন্য

কোথাও বসবাস করতো।

‘আমি এসব চিঠির সার-সংকলন করতাম ইংরেজিতে। চিঠির ওপরে ইংরেজিতে কিছু নোট রাখতেন ফ্যাক্টর [কোম্পানির বাণিজ্য-ঘাঁটির শ্বেতাঙ্গ পরিচালক] বা তাঁর অধীন কোনো ইংরেজ কর্মচারী। সেগুলো কাজে লাগতো। একবার ferretted শব্দ দেখে খুব বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। যখন নতুন পুরোনো কোনো ইংরেজি অভিধানে তা খুঁজে পেলাম না, তখন বুঝতে পারলাম, ওটা ফেরত শব্দের সাহেবি রূপ। লাইব্রেরিতে বসে যা নোট করি, বাড়ি এসে সেসব গুছিয়ে পরিষ্কার করে লিখি। তারপর মাইকেল ও’কিফের হাতে দিই। লাইব্রেরির টাইপিস্টকে দিয়ে টাইপ করিয়ে সেগুলো সে আমাকে দেয়। আমি আবার বাড়িতে বসে সংশোধন করি। তারপর চূড়ান্তভাবে টাইপ হয়। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে মাইকেল ছিল আমার প্রধান সহায়। দুই উপপরিচালক মার্টিন ময়ার ও আর. ডেমন্ড খোঁজখবর নিয়ে এবং অন্যভাবেও সাহায্য করেন। পুরোনো মানচিত্র থেকে আড়ংয়ের অবস্থানগুলো দেখিয়ে দেন অ্যান্ড্রু কুক।’

ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরির কাজ তিন মাসে শেষ হবে বলে ধারণা করা হলেও সে-কাজ শেষ করতে আরো এক মাস লেগে যায়। আনিসুজ্জামান ৩০শে জুলাই (১৯৭৭) দেশের পথে রওনা হন।

এই কাজের পেছনে আনিসুজ্জামান কী পরিমাণ মেধা ও শ্রম উজাড় করে দিয়েছিলেন তার কিছুটা পরিচয় পাওয়া যাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্র ও  কনিষ্ঠ সহকর্মী (সম্প্রতি প্রয়াত, ২২শে জুলাই ২০২১) ভূঁইয়া ইকবালকে লেখা একটি চিঠি থেকে

‘… প্রায় ১১০০ চিঠির প্রতিটি চিঠির সারমর্ম লিখছি ইংরেজিতে। চল্লিশটা বা তার কিছু বেশি চিঠির পুরো 888sport app download apk latest version করতে হবে। Glossary থাকবে, Biographical notes on civilians mentioned in the correspondence দিতে হবে। তারপর ভূমিকা। …

‘… লাইব্রেরিতে যা পেন্সিলে নোট করি (ওখানে কলম বা বল পয়েন্টের ব্যবহার নিষিদ্ধ), সেগুলো আবার পরিষ্কার করে লিখে typist-কে দিই, typed কপি শুদ্ধ করে লাইব্রেরিতে দিই। পরে সবটা revise করে Final type-এ যাবে। Introduction লেখার জন্য দু-একটা বই পড়তে হচ্ছে, যার ক-খ পর্যন্ত জানি না Trade and commercial Organization in Bengal ধরনের মহৎ 888sport live football।’

এর পরে আনিসুজ্জামান ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরির কাছ থেকে আরো একবার একই কাজের আমন্ত্রণ পান। তখন তাঁরা তাঁকে জানান যে, তিনি ১৯৭৭ সালে 888sport app কুঠির কাগজপত্রের তালিকা তৈরি করে দিয়ে আসার পরে লাইব্রেরিতে সে-ধরনের আরো কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। পরিচালক ব্লুমফিল্ড তাঁকে লিখলেন, আরেকবার লন্ডনে গিয়ে তিনি যদি এগুলোর তালিকা করে দিতে পারেন, তাহলে একসঙ্গে বই করে ছাপা যাবে। যাতায়াতের বিমান ভাড়া ও আর্থিক প্রাপ্তি আগের মতোই। সৌজন্যমূলক টিকিট পাওয়া গেল বিমান থেকে। লন্ডন রওনা হলেন ১০ই মার্চ (১৯৭৯)। এবারের সর্বমোট এরূপ কাজের যে-তালিকা আনিসুজ্জামান বিপুল পৃথিবীতে দিয়েছেন তা এরকম :

‘(১) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির 888sport app কুঠির সঙ্গে 888sport app, ময়মনসিংহ ও ত্রিপুরায় অবস্থিত তাদের আটটি আড়ং অর্থাৎ সুতি বস্ত্র-উৎপাদন কেন্দ্রের (888sport app, ধামরাই, সোনারগাঁও, টিটবাদী; জঙ্গলবাড়ি-বাজিতপুর; চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ ও শ্রীপুর) ১৭৯২ ও ১৮০০ সালে লেখা ২৯ খণ্ড দৈনন্দিন চিঠি; (২) ১৭৯১ থেকে ১৮০৯ সালের মধ্যে নানা সময়কার 888sport app কুঠির বস্ত্র-উৎপাদনের ১৬ খণ্ড হিসাবখাতা; (৩) মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুর কুঠির এবং তার অধীন তিনটি আড়ঙ্গের অর্থাৎ রেশমি বস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রের ১৭৯১ ও ১৮০৯ সালের ১৭ খণ্ড হিসাবখাতা; (৪) মুর্শিদাবাদের কাসিমবাজার কুঠির রেশমি বস্ত্র-ব্যবসাসংক্রান্ত ১৮০০-০১ সালের দুটি হিসাবখাতা; (৫) চাকলা জাহাঙ্গীরনগরের ১৭৭৭-৭৮ সালের (বাংলা ১১৮৪ সনের) রাজস্ব সংক্রান্ত একটি হিসাব খাতা, চাকলা মেদিনীপুর ও চাকলা জলাসোরের ১৭৮৩ সালের রাজস্ব সংক্রান্ত কিছু কাগজ; নদীয়ার কৃষ্ণনগর-বোলান্দিয়ার ভাড়ার রসিদপত্র; মুর্শিদাবাদের আবগারি মহালের ১৮০৮ সালের একটি হিসাব খাতা ও একই সময়ে হিসাবের কিছু কাগজ, ২৪ পরগনার একটি তালুকের ১৮১০ সালের দুটি রোবকারি ও একটি আমলদারি, ওই জেলার বানিয়াঘাটা ফেরিসংক্রান্ত ১৮১২ সালের কিছু কাগজপত্র, ২৪ পরগনা কালেক্টরির ১৮১০ থেকে ১৮১৩ সালের মধ্যেকার নানা ধরনের পরোয়ানা, দস্তক, শিয়া, তৌজি ও ট্রেজারির মাসিক হিসাব; (৬) 888sport appর কোর্ট অফ অ্যাপিল অ্যান্ড সার্কিটের ১৭৯৫-৯৬ ও ১৮১৪ সালের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার কাগজপত্র, হুগলির জেলা জজ আদালতের ১৮০৩ ও ১৮১৪ সালের কাগজপত্র – এর মধ্যে বর্ধমানের মহারাজা তেজচন্দ্রের, হাজি মুহম্মদ মহসিনের এবং রামমোহন রায়ের মামলার কাগজ আছে, সদর দেওয়ানি আদালতে  রানি ভবানী ও 888sport appের ১৮০৬ সালের আপিলের কাগজপত্র, হুগলির ফৌজদারি আদালতের ১৮১৪ সালের কাগজপত্র, যশোর দেওয়ানি আদালতের ১৭৯০ সালের, বর্ধমান দেওয়ানি আদালতের ১৭৯৭ সালের ও ২৪ পরগনার দেওয়ানি আদালতের ১৭৯৭ সালের হিসাবসংক্রান্ত কাগজপত্র; (৭) জর্জ বেঙ্গলের সংগ্রহে ১৭৭৭ থেকে ১৭৭৯ সালের মধ্যেকার নানা ধরনের কাগজপত্র; (৮) ব্রায়ান হজসনের সংগ্রহে তারিখবিহীন একটি শব্দতালিকা – বাংলা, অসমিয়া ও আরো দুটি ভাষায় লেখা; এবং (৯) ১৭৭৯, ১৮১০ ও ১৮১৩ সালের তিনটি বিবিধ কাগজ।

আগেরবার আনিসুজ্জামান ১২ খণ্ড চিঠিপত্র তালিকাভুক্ত করেছিলেন। তার তুলনায় এবারে কাজ বেশি। মাইকেল ও’কিফকে বললেন, আরো তিন খণ্ড যদি না-ও হয়, অন্তত আরো একখণ্ড চিঠিপত্র কোথাও থেকে থাকবে। তিনি চলে আসার পর একটি খণ্ড বের হয়েছিল। আনিসুজ্জামান পরে সেটি তালিকাভুক্ত করেছিলেন। এবার অবশ্য দেশে ফিরে এসেছিলেন আট মাস পর, ১৯৭৯ সালের ১২ই নভেম্বর। পরে ১৯৮১ সালে লন্ডন থেকে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি আনিসুজ্জামানের এই কাজগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে Factory correspondence and other Bengali Documents in the India office Library and Records নামে।

লাইব্রেরি-কর্তৃপক্ষ আনিসুজ্জামানের জন্য বই পাঠিয়েছিলেন 888sport appয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের কাছে। আনিসুজ্জামান 888sport appয় এসে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে সঙ্গে নিয়ে সে-বই সংগ্রহ করেন এবং তাঁরা দুজনে স্বামীবাগে গেলেন আনিসুজ্জামানের শ্বশুরবাড়িতে। সেখানেই তখন সিদ্দিকা জামান ছিলেন ছেলেমেয়েদের নিয়ে। আব্দুর রাজ্জাক সাহেব বইটির ব্যাপারে খুবই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। তিনি আনিসুজ্জামানের স্ত্রীকে বলেছিলেন, আনিসুজ্জামানের ষাট বছর বয়সে এ-বই বের হলে তিনি অত উত্তেজিত হতেন না, মধ্য-চল্লিশে ব্লুমহার্টের ক্যাটালগের সাপ্লিমেন্টারি ভলিউম প্রকাশ করতে পারা একেবারে সামান্য অর্জন নয়। নিজের এ-কাজটি সম্পর্কে আনিসুজ্জামান লিখেছেন :

Factory correspondence-এর প্রকাশ আমার জীবনের একটি 888sport app download for androidীয় ঘটনা, একথা আমি সব সময়ে স্বীকার করবো। ওটি আমার অশেষ পরিশ্রমের ফসল। Bulletin of the School of Oriental and African Studies-এ এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Modern Asian Studies-এ তার অনুকূল সমালোচনা বের হয়েছিল। তা না হলেও, আমি জানতাম, আমি ফাঁকি দিইনি। কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমিক স্টাফ ফেলো হিসেবে আমি নামমাত্র যুক্ত ছিলাম সোয়াসের ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, 888sport apps অ্যান্ড সিলোন ডিপার্টমেন্টের প্রধান প্রফেসর রাইটের সঙ্গে। সংস্কৃতের পরে বিকশিত হয়েছে, এমন কোনো ভাষার 888sport live football সম্পর্কে আগ্রহী হওয়ার কোনো কারণ তাঁর ছিল না। তিনি যখন প্রথম শোনেন যে, আমি ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোন 888sport app কুঠির ‘লেটার-বুকস’ নিয়ে মেতে উঠেছি (‘লেটার-বুকস’ কথাটিতেই তাঁর আপত্তি ছিল), তখন 888sport live footballের অধ্যাপকের এহেন দুর্মতিতে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন, যদিও তা যথাসাধ্য চেপে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি ওঁকে এক কপি বই পাঠিয়েছিলেন সৌজন্যস্বরূপ, তিনি পত্রপাঠ-সম্ভবত বইটির একটি পাতা না খুলেই – সেটা চালান করে দিয়েছিলেন সোয়াস লাইব্রেরিতে। পরে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আশা করি, আমি কাজটা ঠিকই করেছি।’

প্রাবন্ধিক-গবেষক মফিদুল হক আনিসুজ্জামানের এ-কাজের মূল্যায়ন করেছেন এভাবে : ‘আনিসুজ্জামান যখন কাজ করেছেন ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে, দুই শতাধিক বছরের আগেকার চিঠিপত্র পাঠ, তথ্য ও সারকথা লিপিবদ্ধ করার শ্রমে নিবেদিত হয়েছেন নিঃসঙ্গ সাধকের মতো, অতীত ইতিহাসের দূর অবস্থান থেকে দূরতর প্রান্তে পৌঁছে সবার জন্য তুলে আনছেন বাংলা গদ্যের আদিরূপ, পুনরুদ্ধারকৃত সেই লুপ্ত সম্পদ এখন বাংলা 888sport live footballের ইতিহাসের অঙ্গাঙ্গি অংশ। একই কাজের সূত্রে তিনি তো কেবল গদ্যের সুলুকসন্ধান করেননি, ঔপনিবেশিক ক্ষমতার দাপটে বাংলার তাঁতিদের বিপর্যস্ত জীবন-বাস্তবতাও তিনি অনুভব করেছিলেন নিবিড়ভাবে, সবার জন্য মেলে ধরেছেন সেই ছবি।’ (‘অন্য আনিসুজ্জামান : চিন্তাপথের অভিযাত্রী’, আনিসুজ্জামান 888sport app download for android, বেঙ্গল পাকলিশকেশন্স)

পনেরো

১৯৭৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অফ ওরিয়েন্টালিস্ট সংস্থার দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্যারিসে আয়োজিত বিশ্ব-সম্মেলনকালে প্যারিসের রোডসাইড কাফেতে মিসরীয় দেশত্যাগী সাংবাদিক আনোয়ার আবদেল-মালেকের সঙ্গে আনিসুজ্জামানের প্রথম পরিচয়। বয়সের বেশ বড় ব্যবধান সত্ত্বেও (প্রায় সতেরো বছর) তাঁদের দুজনের এই পরিচয় ক্রমে গভীর সৌহার্দ্যে পরিণতি লাভ করে। এডওয়ার্ড সাঈদের মতো আনোয়ারও ছিলেন কপটিক খ্রিষ্টান। পড়াশোনা করেছেন সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে। জামাল আবদেল নাসেরের অভ্যুত্থানের সোৎসাহী সমর্থক হলেও পরে নাসেরের বিরাগভাজন হন এবং মিশর ছেড়ে ফ্রান্সে চলে আসেন। নিজে কমিউনিস্ট সদস্য আনোয়ার আবদেল-মালেক, মূলত ‘মিশর ও আরব ভূমির পরিবর্তন এবং মানুষের মুক্তি’ তাঁর ভাবনার প্রধান ক্ষেত্র থাকলেও, ধীরে ধীরে ‘তৃতীয় বিশ্বের জাগরণ এবং পাশ্চাত্য চিন্তার গণ্ডি ভেঙে প্রাচ্য-চিন্তার পরিপুষ্টি ও ভিন্নতা জোরদার করার দিকে ঝোঁকেন। … ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ Orientalism in Crisis এই চিন্তার প্রকাশ ঘটায়।’ এডওয়ার্ড সাঈদের Orientalism গ্রন্থ প্রকাশের (১৯৭৮) দেড় দশক আগে প্রকাশিত হয় আনোয়ার আবদেল-মালেকের বই। এ-কারণে আনোয়ার আবদেল-মালেককে ‘ওরিয়েন্টালিজম’ চিন্তাধারার পূর্বসূরি মনে করা হয়।

১৯৭৪ সালে প্যারিস থেকে আনোয়ার আবদেল-মালেক আনিসুজ্জামানকে চিঠি লিখে জানালেন যে, কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে ‘ইনইকুয়েলিটি’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার হবে – আনিসুজ্জামান যেন তাতে যোগ দেন; তিনি নিজে যেতে পারবেন না, তবে নিশ্চিত জানেন সেখানে আনিসুজ্জামান অনেক চিন্তাশীল মানুষের দেখা পাবেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসের মধ্যভাগে ক্যুবেক সেন্টার অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল মুভমেন্টস অ্যান্ড ইম্পিরিয়ালিজম-সম্পর্কিত রিসার্চ কমিশনের যৌথ উদ্যোগে মন্ট্রিয়লে ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়ালিটি শীর্ষক একটি কলোকিয়াম অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ব্রাজিলিয়ান অংশগ্রহণকারী যে 888sport liveটি পড়বেন সেটি নিয়ে তাঁকে আলোচনা করতে হবে। কলোকিয়ামে যাওয়ার আগে আনিসুজ্জামান 888sport liveটি পাননি, সেখানে গিয়েও নয়। সে-কথা আনিসুজ্জামানের বয়ানেই শোনা যেতে পারে : ‘মন্ট্রিয়লের হোটেলে পৌঁছালোম বিকেলবেলায়। আমার আলোচ্য 888sport live তখনো হাতে পেলাম না। নিজেকে দোভাষী পরিচয় দিয়ে একটি মেয়ে এসে বললো, ব্রাজিলিয়ান অংশগ্রহণকারী 888sport liveটি লিখেছেন পর্তুগিজে; সে একটা টেপ-রেকর্ডারে তা মুখে মুখে 888sport app download apk latest version করে দেবে; রাতে টেপ শুনে আমার মন্তব্য তৈরি করতে হবে। তারা দুঃখিত, কিন্তু এখন লিখিত 888sport app download apk latest version প্রস্তুত করার সময় নেই। রাতে একবার টেপ শুনে কিছু কথা টুকে রাখলাম, ভোরবেলা আরেক দফা কসরত করলাম। সেদিন সকালের অধিবেশনে এই 888sport live-পাঠ এবং আমার মৌখিক আলোচনা। পরে দোভাষী আমাকে বলেছিল, 888sport live-উপস্থাপনের সময়ে ভদ্রলোক বেশ কিছু কথা বাদ দিয়েছেন, নতুন দু-একটি কথা যোগ করেছেন। আগে টেপে 888sport app download apk latest version শোনায় আমি আর ওঁর তাৎক্ষণিক উপস্থাপনের 888sport app download apk latest versionে মনোযোগ দিইনি। ফলে, দোভাষীর মতে, 888sport liveে ও আলোচনায় কিছু গরমিল রয়ে গেছিল। 888sport liveের সঙ্গে আমার মন্তব্যের যোগ সেখানে শ্রোতারা খুঁজে পাননি, সেসব জায়গা হয়তো তাঁরা আমার মৌলিক বক্তব্য বলে ধরে নিয়েছিলেন। যাঁরা আমার আলোচনায় প্রীত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সিক্স ভিলেজেস অফ বেঙ্গল (কলকাতা, ১৯৪৪)-খ্যাত রামকৃষ্ণ মুখার্জি। তিনি তখন কলকাতায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট ডিসটিংগুইশ্ড সাইনটিস্ট পদের অধিকারী এবং সম্ভবত ওই কলোকিয়ামের সবচেয়ে প্রবীণ অংশগ্রহণকারী। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আমাকে তাঁর পক্ষপুটের আশ্রয়ে নিয়েছিলেন।’

আনোয়ার আবদেল-মালেকের সূত্রে ১৯৭৮ সালের নভেম্বর মাসে (১৩-১৭) জাপানের কিয়োটোতে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়ান সিম্পোজিয়াম অন ইনটেলেকচুয়াল ক্রিয়েটিভিটি ইন এনডোজেনাস কালচার’-এ 888sport live পড়েছিলেন আনিসুজ্জামান। 888sport live-পাঠ ছাড়াও সিম্পোজিয়ামের চারটি অধিবেশনের একটিতে র‌্যাপোর্টিয়রও ছিলেন তিনি। সিম্পোজিয়ামে যোগ দিয়েছিলেন ২২টি দেশের ৬৬ বিদ্বজ্জন।

জাপানের কিয়োটোয় অনুষ্ঠিত সিম্পোজিয়ামের পর, আনোয়ার আবদেল-মালেকের সূত্রে, আনিসুজ্জামান আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি মেক্সিকো সম্মেলন (১৯৭৯)। এখানে অবশ্য যোগদান ও 888sport slot game ছাড়া অন্য কিছু করতে হয়নি তাঁকে। তাঁর মনে হয়েছিল, এর আয়োজন ও আলোচনা ছিল ঢিলেঢালা ধরনের। অপরটি কুয়েতে (১৯৮০) – সেখানে আনিসুজ্জামান পেশ করেন An Outsider’s view of Arab Endogenous Intellectual Creativity শীর্ষক একটি 888sport live। এতে ‘তিনি আরব সৃষ্টিশীলতায় শনাক্ত করেছিলেন তিনটি বৃত্ত – প্রথমত আঞ্চলিক, দ্বিতীয়ত ইসলামি এবং তৃতীয়ত বিশ্বের সঙ্গে যোগে আধুনিক।’

১৯৮০ সালে আনিসুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন (১২.০৯.১৯৮০ – ১১.০৯.১৯৮২)।  ইতোমধ্যে আনোয়ার আবদেল-মালেক তাঁকে জানালেন যে, তিনি যদি দেশীয় সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কে চট্টগ্রামে দু-একটি ওয়ার্কশপ করতে চান তাহলে জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ে আনোয়ার আবদেল-মালেকের প্রকল্প থেকে তার খরচ জোগানো যাবে। আনিসুজ্জামান উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। ওয়ার্কশপের নাম রাখা হলো Creativity and the Integration of Traditions and Modern Attitudes। একটি উপ-শিরোনামও দেওয়া হলো : With Special Reference to Bangladesh and the Indian। কর্মশালার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ইতিহাসবিদ অধ্যাপক আবদুল করিম। কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল ভাষণ দিয়েছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আর বাকি অধিবেশনগুলো হয়েছিল চট্টগ্রাম শহরে মোমিন রোডে (চেরাগি পাহাড়) মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের মিলনায়তনে। বলা বাহুল্য, কর্মশালাটি পরিচালনা করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

দ্বিতীয় কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালের নভেম্বরে। এবারে কর্মশালা উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আবদুল আজিজ খান। এবারও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল ক্যাম্পাসে এবং 888sport app অধিবেশন চিটাগাং পোর্ট ট্রেনিং সেন্টারের মিলনায়তনে।

১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের (যা সমধিক পরিচিত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন নামে) পঞ্চাশ বছরপূর্তি উদ্যাপনের জন্য নাগরিকদের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠিত হয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট শফিউল আলমকে সম্পাদক করে। কমিটি যে-জালালাবাদ পাহাড়ে সূর্য সেনেরা যুদ্ধ করেছিলেন সেখানে একটি 888sport sign up bonusস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব করে। পাহাড়টি বর্তমানে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের চৌহদ্দির অন্তর্ভুক্ত বলে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কমিটির পক্ষ থেকে চিঠি লেখা হয়। সে-চিঠির কোনো জবাব না আসায় কমিটির পক্ষ থেকে আনিসুজ্জামান এবং কয়েকজন সদস্য চট্টগ্রামের তখনকার জিওসি মেজর জেনারেল মনজুরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর মেজর জেনারেল মনজুরের সৌজন্যে ও সহায়তায় ১৮ই এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের নির্দিষ্ট স্থানে প্রস্তাবিত 888sport sign up bonusস্তম্ভ স্থাপন করা হয়। সেদিন সন্ধ্যায় মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে 888sport app download for androidসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হয়ে 888sport app থেকে এসেছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মুহম্মদ হোসেন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন যে, সেই সন্ধ্যায় তিনি খুব উদ্দীপনাময় ভাষণ দিয়েছিলেন।

ষোলো

১৯৮০ সালে আই.সি.সি.আর-এর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল) এক কর্মকর্তা অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে গিয়েছিলেন তাঁকে ভারত-888sport slot gameের আমন্ত্রণ জানাতে। তিনি সেই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনারা ড. আনিসুজ্জামানকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন না? আই.সি.সি.আর কর্মকর্তা বুঝতে পেরেছিলেন, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক চাইছেন ড. আনিসুজ্জামানকেও তাঁর সঙ্গী করতে। অবশেষে সে-ব্যবস্থা হলো। তিন সপ্তাহের ভারত-888sport slot gameে প্রথমে তাঁরা গেলেন দিল্লি। অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক তাঁর শিক্ষক অমিয় দাশগুপ্তের (তখন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) জন্য বাজার ঢুঁড়ে 888sport app থেকে দুটি বড় ইলিশ মাছ কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন। রাজ্জাক সাহেব 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্র ছিলেন (১৯৩২ থেকে ১৯৩৬) এবং পরে রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে সহকর্মী হয়েছিলেন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘দিল্লিতে গুরুশিষ্যের মিলনের দৃশ্যটা ছিল দেখার মতো। অমিয় দাশগুপ্ত সাগ্রহে আমাদের আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন। রাজ্জাক সাহেব তাঁর পা ছুঁতেই তিনি যে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, সে-আলিঙ্গন সহজে শেষ হয় না। অমিয় বাবুর স্ত্রী কাছে দাঁড়িয়ে মুখে হাসি ছড়িয়ে স্নেহের দৃষ্টিতে রাজ্জাক সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সার তাঁকেও পা ছুঁয়ে সালাম করলেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করলাম। …’ (বি. পৃ., পৃ ২৮৬)

দিল্লিতে তাঁরা সৌজন্য-সাক্ষাৎ করতে গেলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল হাসানের সঙ্গেও দেখা করলেন তাঁরা। দিল্লি থেকে গেলেন জয়পুর, তারপর বোম্বাই (বর্তমান মুম্বাই), ত্রিবান্দ্রাম, মাদ্রাজ, – সবশেষে কলকাতা। কলকাতায় হোটেল ছেড়ে থাকলেন সেন্টার ফর দি স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেস-এর অতিথি-ভবনে। সেখান থেকে পরদিন ফিরে এলেন কলকাতায়। সেন্টারে আনিসুজ্জামান বক্তৃতা করলেন। তাঁর বর্ণনায় : ‘ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিতব্য আমার Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Office Library and Records বইটির ভূমিকার খানিকটা অংশ সামনে খোলা রেখে বাংলায় বলে গেলাম। বক্তৃতা যেমনই হোক, শ্রোতার 888sport free bet ছিল আশাতীত। …’ (বি. পৃ., পৃ ২৯০) কলকাতা থেকেই তাঁরা ‘সানন্দচিত্তে’ দেশে ফিরেছিলেন।

১৯৮১ সালে লন্ডন থেকে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি আনিসুজ্জামানের Factory Documents…বইটি প্রকাশ করে। এ-বছরেই ১৯৭৮ সালে জাপানের কিয়োটোতে অনুষ্ঠিত সিম্পোজিয়ামের মনোগ্রাফগুলি আনোয়ার আবদেল-মালেক ও এ এন পাণ্ডেয়ার সম্পাদনায় Culture and Thought in the Transformation of the World নামে টোকিও থেকে প্রকাশিত হয়।

জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-প্রকল্পের অংশস্বরূপ আনোয়ার আবদেল-মালেক ‘বিশ্বের রূপান্তর’ (Transformation of the World) শিরোনামে পাঁচটি নতুন সেমিনার অনুষ্ঠানের প্রস্তাব অনুমোদন করিয়ে নেন। তার প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় বেলগ্রেডে ১৯৭৯ সালে; বিষয় ছিল 888sport apk ও প্রযুক্তি। দ্বিতীয়টি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে মাদ্রিদে; বিষয় ছিল অর্থনীতি ও সমাজ। আনোয়ার আবদেল-মালেক এতে যোগদানের জন্য আনিসুজ্জামানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয় তাঁর নিজের এলাকাভুক্ত না-হওয়ায় আনিসুজ্জামান সে-প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর তৃতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় আলজিয়ার্সে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে; বিষয় ছিল Culture and Thought in the Transformation of the World। এই সেমিনারে যোগ দেওয়া ছাড়াও সেমিনারের বিবরণ গ্রন্থাকারে প্রকাশের জন্য আনোয়ার আবদেল-মালেকের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনার কাজটিও করেন আনিসুজ্জামান। সম্পাদনার এই কাজের জন্য তিন মাস প্যারিসে অবস্থান করেন তিনি।

প্যারিসে থাকাকালে বিখ্যাত ফরাসি কবি আর্ত্যুর র‌্যাবোর 888sport app download apkর (নরকে এক ঋতু) 888sport app download apk latest versionক লোকনাথ ভট্টাচার্যের স্ত্রী ফ্রাঁস ভট্টাচার্যের আয়োজনে ইনালকো-তে (আঁস্তিত্যু নাসিওনাল দ্যে লংগ এ সিভিলিজাসিঁও ওরিয়ঁতাল অর্থাৎ প্রাচ্যের ভাষা ও সভ্যতা সম্পর্কিত জাতীয় ইনস্টিটিউট) আনিসুজ্জামান একদিন একটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ফ্রাঁস ভট্টাচার্য তখন সেখানে বাংলা ভাষার শিক্ষক। ‘মঙ্গলকাব্য’ সম্পর্কে গবেষণা করে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন ফ্রাঁস; বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী ফরাসিতে 888sport app download apk latest version ছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের অনেক ছবির ফরাসি সাবটাইটেল করে খ্যাতিও পেয়েছিলেন।

ফ্রাঁস, আনিসুজ্জামানের অনুরোধে, তাঁকে বিবলিওলেক নাসিওনালে নিয়ে যান এবং সেখানকার সদস্য হতে সাহায্য করেন। আনিসুজ্জামান তাঁর সময় ও সুযোগ মতো সেখানে বসে আঠারো শতকের বাংলা পাণ্ডুলিপিগুলো দেখেন এবং এর মধ্যে ‘ইন্দ্রাণীর সংগৃহীত’ সেক্রেতেয়ার বেঙ্গলের যে-পাণ্ডুলিপি ছিল তার সবটাই হাতে নকল করে নেন।

প্যারিসের কাজ শেষ করে মার্চের ৬ তারিখে (১৯৮২) লন্ডন রওনা দেন তিনি। তার আগে অবশ্য একদিন বাসে করে আমস্টারডাম যান এবং পরদিন ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য – বড় চিত্র888sport live chatীদের কাজ দেখা। লন্ডনে আসার পর ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে গিয়ে জানতে পেলেন, ১৯৭৯ সালে সেখানে কাজ করতে গিয়ে 888sport app কুঠির যে তেইশটা খাতা পান সেগুলি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছিল আরো একটি খাতা লাইব্রেরির কোথাও অগোচরে আছে, সেই খাতাটি এখন পাওয়া গেছে। এদিকে বই তো বেরিয়ে গেছে। লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ বললেন, তিনি যদি সেটি তালিকাভুক্ত করতে রাজি থাকেন তাহলে তাঁরা ছোটো আকারে একটি সাপ্লিমেন্ট বের করবেন, তবে এর জন্য আনিসুজ্জামান কোনো সম্মানী পাবেন না। তথাস্তু। পরদিন থেকেই কাজে নেমে গেলেন আনিসুজ্জামান।

এদিকে, আনিসুজ্জামান প্যারিস থেকে লন্ডনে আসবেন জেনে আনোয়ার আবদেল-মালেক কেমব্রিজে তিনি যে সেমিনার করতে যাচ্ছেন (Geo-political Visions of the World) তাতে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানালেন তাঁকে। আনিসুজ্জামান তাঁর কথায় রাজি হলেন। সেমিনারে তাঁর দেখা হলো বিশ্বখ্যাত 888sport apkের ইতিহাসবিদ জোসেফ নিডহামের সঙ্গে। কয়েক খণ্ডে রচিত Science and Civilization in China (১৯৫৪) তাঁর অতুলনীয় কীর্তি। ‘তাঁর গবেষণার সুবিধের জন্যে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা একটি গ্রন্থাগার তৈরি করে দিয়েছেন – পূর্ব এশিয়ার 888sport apk ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত 888sport free bet login দিয়ে। তাছাড়া কয়েকজন বিশিষ্ট সহকারীও দিয়েছেন তাঁর কাজে সাহায্য করতে।’

সেমিনারের মধ্যে একদিন খবর পেলেন, যশোর থেকে ছোটোবু-দুলাভাই বাসে করে 888sport appয় ফিরছিলেন। সাভারের কাছে আরেক বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ছোটোবু আসনে বসেই মারা গেছেন, ছোটো দুলাভাই গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এলেন দেশে।

সতেরো

আনিসুজ্জামান আলজিয়ার্স যাওয়ার আগেই তাঁর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন জীবনানন্দের 888sport app download apkর 888sport app download apk latest versionক ও গবেষক এবং জীবনানন্দের সুখ্যাত জীবনীকার ক্লিনটন বুথ সিলী। তিনি তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছিলেন। তাঁর বই A Poet Apart উচ্চপ্রশংসিত হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে ভূমিকার জন্য তিনি ইতোমধ্যেই ‘আনন্দ 888sport app download bd’ লাভ করেছেন এবং সে-888sport app download bdের অর্থও জীবনানন্দের 888sport app download apkর প্রচার ও প্রসারের জন্য কবির পরিবারের হাতে তুলে দেন।

১৯৮১ সালে গবেষণার উপকরণ সংগ্রহ করার কাজে 888sport appsে আসা ও ছ-মাস অবস্থানের জন্য ফুলব্রাইট বৃত্তি পান সিলী। তিনি ঠিক করেছিলেন – এই ছ-মাসের তিন মাস 888sport appয় ও বাকি তিন মাস চট্টগ্রামে কাটাবেন। আনিসুজ্জামানকে তিনি লেখেন চট্টগ্রামে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করতে। আনিসুজ্জামান তাঁকে তাঁর বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দেন। সিলী সে-প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং বাড়ির সদস্যদের একজন হয়েই সেখানে ছিলেন, এমনকি আনিসুজ্জামান বিদেশে যাওয়ার পরও যে-কদিন তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন তখনও।

এদিকে জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত সেমিনারের যে-রিপোর্ট আনিসুজ্জামান পরের বছর প্যারিসে বসে তৈরি করেছিলেন সেটি ১৯৮৩ সালের শেষদিকে লন্ডনে ম্যাকমিলান প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির নাম Culture and Thought। এটি ছিল Transformation of the world– এর তৃতীয় খণ্ড। প্রথম খণ্ড Economy and Society বেরিয়েছিল আগের বছর অর্থাৎ ১৯৮২ সালে। দ্বিতীয় খণ্ড Economy and Society প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে। পরিকল্পিত চতুর্থ ও পঞ্চম খণ্ডের নাম ছিল যথাক্রমে Religion and Philosophy এবং The Making of a New International Order : A Perspective

এবার অন্য একটি প্রসঙ্গ। সে-কথা শোনা যেতে পারে আনিসুজ্জামানের উপস্থাপনে – ‘বাংলা 888sport live footballের মানসম্পন্ন ইতিহাসগুলোয় যেসব বিবরণ অবহেলিত হয়েছে কিংবা ওইসব প্রকাশের পরে যেসব উপাদান আবিষ্কৃত হয়েছে, সেসব বিষয়কে যথাযথ স্থান দিয়ে বাংলা 888sport live footballের একটি নতুন ইতিহাস রচনার চিন্তা অনেকদিন ধরে আমাদের অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল। ১৯৬৮ সালে অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই আমাকে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেন। বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন পরিচ্ছেদ লিখবেন এবং একটি সম্পাদকমণ্ডলী তা সম্পাদনা করে গ্রন্থের আকার দেবেন, এই ধারণার ভিত্তিতে আমি চারখণ্ডে বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস রচনার পরিকল্পনা প্রণয়ন করি। হাই সাহেব প্রস্তাবটি পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করলে মন্ত্রণালয় অনুকূল সাড়া দেয় এবং প্রাথমিক পর্যায়ে এক লক্ষ টাকার অনুদান মঞ্জুর করে। মুহম্মদ আবদুল হাইকে সভাপতি, মুনীর চৌধুরী ও আহমদ শরীফকে সদস্য এবং আমাকে সদস্য-সচিব করে সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়। ১৯৬৯ সালে হাই সাহেবের মৃত্যুর এবং আমার চট্টগ্রামে চলে যাওয়ার পরে এ-বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

‘১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদ আবার বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস রচনার উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা 888sport live football বিষয়ে একটি এবং আধুনিক বাংলা 888sport live football বিষয়ে অপর একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটি দুটি প্রাথমিক পরিকল্পনার কাজে কিছুদূর অগ্রসর হলেও খুব বেশিদূর যেতে পারেনি। ১৯৮৩ সালে আমি বিদেশ থেকে ফিরে এলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মনজুরে মওলা আমাকে এই দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ করেন।

‘আমাকে প্রধান সম্পাদক করে এবং আহমদ শরীফ, কাজী দীন মুহম্মদ, মমতাজুর রহমান তরফদার ও মুস্তাফা নূরউল ইসলামকে সদস্য করে সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়। আমার পরিকল্পনা-অনুযায়ী ইতিহাসটি বিন্যস্ত হবে পাঁচ খণ্ডে : প্রথম খণ্ডে থাকবে চৌদ্দ শতক পর্যন্ত, দ্বিতীয় খণ্ডে পনেরো ও ষোলো শতকের, তৃতীয় খণ্ডে সতেরো ও আঠারো শতকের, চতুর্থ খণ্ডে উনিশ শতকের এবং পঞ্চম খণ্ডে বিশ শতকের বাংলা 888sport live footballের পরিচয়। প্রতি খণ্ডের থাকবে দুটি ভাগ – একভাগে ঐতিহাসিক পটভূমি অর্থাৎ বর্ণিত কালের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের আলোচনা থাকবে। দ্বিতীয়ভাগে থাকবে সে-সময়কার বাংলা 888sport live footballের বিভিন্ন ধারার পরিচয়। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এক বা একাধিক অধ্যায় লিখবেন। সম্পাদকমণ্ডলী তাতে প্রয়োজনীয় সংশোধন-সংযোজন করবেন। …’

এ-পরিকল্পনা সম্পাদকমণ্ডলী অনুমোদন করেন এবং তদনুসারে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ১৯৮৭ ও ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালে প্রথম খণ্ডের সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সংশোধন ও পরিমার্জনার কাজটি করেন, প্রধান সম্পাদক হিসেবে, আনিসুজ্জামান।

এখানে বলা প্রয়োজন, বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম খণ্ড আর প্রকাশিত হয়নি। তবে বাংলা একাডেমি এবং প্রধান সম্পাদকের পক্ষ থেকে বিষয় ও লেখক নির্বাচন করে লেখার জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও কোনো কোনো লেখক লেখা দেননি এবং ‘প্রধান সম্পাদক মানসম্পন্ন লেখা পাননি’। সন্ধ্যারবি অস্তমিত হওয়ার পর তাঁর কার্য এমনকি  কোনো মাটির প্রদীপও এখন গ্রহণ করবে কি না তা বলা কঠিন।

বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস  রচনার এসব আয়োজন চলাকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মনজুরে মওলা একদিন ফোন করে আনিসুজ্জামানকে জানালেন যে, একাডেমিতে ‘বাংলা একাডেমী বক্তৃতামালা’ প্রবর্তিত হতে যাচ্ছে এবং তিনি চান প্রথম বক্তৃতাটা যেন অল্প সময়ের মধ্যে তিনিই দেন। বক্তৃতার বিষয় আনিসুজ্জামানই ঠিক করবেন। কিঞ্চিৎ ইতস্তত করে তিনি সম্মত হলেন। ১৯৮৪ সালের ১৬, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি তিনদিন বক্তৃতাটি দিলেন আনিসুজ্জামান। সে-অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় বাংলা একাডেমির প্রেস ভবনের দোতলার একটি অংশকে সংস্কার করে নির্মিত মাঝারি আয়তনের একটি সভাকক্ষে। মনজুরে মওলা এ-সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ববর্তী বাংলা গদ্য সম্পর্কে নিজের সংগৃহীত মালমশলা এবং নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আনিসুজ্জামান এ-বক্তৃতা উপস্থাপন করেন। আনিসুজ্জামান যাঁর বিবেচনা ও মূল্যায়নকে সমধিক গুরুত্ব দিতেন সেই অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক তিনদিনই বক্তৃতা-অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং ‘তাঁর হাবভাবে’ আনিসুজ্জামানের মনে হয়েছিল, বক্তৃতাটি ‘নিতান্ত মন্দ হয়নি’। বক্তৃতাটি খুব দ্রুত মুদ্রিত হলো এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পুরোনো বাংলা গদ্য নামে বাংলা একাডেমি থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো।

আঠারো

আনিসুজ্জামান দুবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন।

প্রথমবার ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১২ই সেপ্টেম্বর,  ১৯৮০ থেকে ১১ই সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের নির্বাচিত ডিন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৪ঠা নভেম্বর, ১৯৮২ তারিখে এবং সে-দায়িত্ব পালন করেন ৩রা নভেম্বর, ১৯৮৪ পর্যন্ত। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরে তাঁর গবেষণাগ্রন্থ আঠারো শতকের বাংলা চিঠি প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা 888sport live football সমিতি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিধ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনসহ প্রায় সকল কাজে তাঁর সম্পৃক্ততা ছিল নিয়মিত। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিপন্থী ও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক শিক্ষকদের মধ্যে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন আনিসুজ্জামান। স্বাধীনতা-উত্তর যুগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিপন্থী শিক্ষক গ্রুপের তিনিই ছিলেন আহ্বায়ক। এ-প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ888sport apk বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অনুপম সেনের একটি মূল্যায়ন উদ্ধৃত করা যায় : ‘ড. আনিসুজ্জামান 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার ফলে আমরা এমন একজনকে হারাই, যিনি ছিলেন অত্যন্ত স্থিতধী। খুব কম ক্ষেত্রেই তাঁকে বিচলিত হতে দেখেছি। তাঁর সিদ্ধান্ত প্রায়ই সব পক্ষ মেনে নিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য যে-প্যানেল নির্বাচন করা হয় তাতেও একবার নির্বাচনপ্রার্থী হয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। সে-বিবরণ তিনি দিয়েছেন তাঁর বিপুলা পৃথিবী বইটিতে। তাঁর নিজের কথাতেই সে-কাহিনি শোনা যেতে পারে : ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট উপাচার্য-নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল তৈরি করবে। একপক্ষ থেকে মনোনীত হলেন ইংরেজির মোহাম্মদ আলী, রসায়নের এ কে এম শামসুদ্দীন আহমদ ও ইতিহাসের আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজউদ্দীন। আমরা দলে ভারি নই। তাই স্থির হলো, শুধু আমিই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো এ-পক্ষ থেকে। কেউ কেউ প্রস্তাব করেছিলেন বর্তমান উপাচার্য আবদুল আজিজ খানকে আমার সঙ্গে নিতে। উপাচার্য নিজেও তা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমাদের মতের মিল খুব সামান্যই। সেক্ষেত্রে একপক্ষভুক্ত হওয়া আমাদের কারো জন্যেই ঠিক হবে না। উপাচার্যও একাই নামলেন প্রতিযোগিতায়।

‘প্রথামাফিক সিনেট-সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করতে হলো। ব্যাপারটা আনন্দজনক নয়। ভোট চাইতে না গেলে যিনি স্বতই সমাদর করতেন, তিনি এখন উদাসীনতা দেখালেন। কেউ জানিয়ে দিলেন, অন্য প্রার্থীরাও তাঁর কাছে এসেছিলেন, এ-অবস্থায় তিনি বিপন্নবোধ করছেন। কেউ বললেন, মুখ ফুটে কিছু বলার দরকার নেই, তিনি মোটের উপর ওয়াকিবহাল এবং যোগ্যকে বঞ্চিত করবেন না। সহকর্মীদের অনেকেই আমার জন্যে উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছিলেন আন্তরিকভাবে।

‘নির্বাচনের ফল প্রকাশ পেলে দেখা গেল, মোহাম্মদ আলী সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন, তারপর আমি, তারপর আলমগীর সিরাজউদ্দীন।’

নিয়ম হলো, প্যানেলে যে-তিনজনের নাম থাকবে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে চ্যান্সেলর (এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি) উপাচার্য নিয়োগ করবেন। সে-নিয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তদবিরও শুরু হলো। যথারীতি আনিসুজ্জামানও তাতে শামিল হতে বাধ্য হলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে উপাচার্য নিয়োগ করলেন চ্যান্সেলর।

এই সময়কার একটি মজার ঘটনার উল্লেখ করেছেন আনিসুজ্জামান তাঁর বইতে (বি.পৃ., পৃ ৩৫৫)

‘আমি যখন এ-ব্যাপারে 888sport appয়, তখন রাজ্জাক সাহেব আমাকে বলেছিলেন, ভাইস-চ্যান্সেলর হয়ে আমি কী করতে চাই, তা যেন একটা কাগজে লিখে ফেলি।

‘আমি পরিহাস করে বললাম, ‘আমি যদি ভাইস-চ্যান্সেলর হইতাম’ শিরোনামে রচনা?

‘সার, বললেন, ‘আপনি যদি অ্যাকাডেমিক কাজকর্ম করতে চান, তাহলে কী করবেন, তার একটা লিস্টি করা ভালো। যদি ফিজিকাল ডেভেলপমেন্ট করবার ইচ্ছা করেন, তয় সেক্ষেত্রে কী করবেন, তার একটা হিসাব করা ভালো। তা না হইলে রোজকার কাজের চাপে কিছুই করতে পারবেন না।’

‘তখন মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেলের মতো। এখন বুঝি ওটা খুবই দরকারি বিষয়।’

মনে হয়, লিস্টি বানানোর সে-কাজটা অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে করতে হয়নি, কারণ রাজ্জাক সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাতের অল্প কয়েকদিন পরেই চ্যান্সেলর (রাষ্ট্রপতি জেনারেল এরশাদ) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-পদে নিয়োগ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানারকম প্রশাসনিক কাজকর্ম এবং শিক্ষাদান ও গবেষণামূলক কার্যাদি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটালেও, সেসবের বাইরে আরো অনেক কাজের সঙ্গে আনিসুজ্জামান নিজেকে যুক্ত করেছিলেন চট্টগ্রামে তাঁর অবস্থানকালে। কবি ও প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন লিখেছেন – ‘তাঁর মানসে দেশ, মানুষ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং সমকালীন রাজনীতি ও ঘটনাপ্রবাহের সক্রিয় ভূমিকা ছিল অত্যন্ত জোরালো। দেশ, মানুষ ও সময়ের দাবি একজন সচেতন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে আনিসুজ্জামান কখনো এড়াতে পারেননি, বরং বলা উচিত, এড়াতে চাননি। বরাবর – জীবনের শেষদিন পর্যন্ত – এরকম ডাকে সাড়া দিয়ে গেছেন, প্রয়োজনে অন্যদের ডেকে নিয়ে নিজেই যথোপযুক্ত কাজের উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে তিনি যখন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে প্রদেশবাসীর বিরাট সাফল্যের অব্যবহিত পরে চট্টগ্রাম এলেন তখন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরাই নন, জেলার প্রগতিশীল মহলের মধ্যেও প্রত্যাশার আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।’ (‘চট্টগ্রামে তাঁর ষোলো বছর’, আনিসুজ্জামান 888sport app download for android, বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, 888sport app)।

এই একই লেখায় আবুল মোমেন আরো লিখেছেন : ‘জিয়ার শাসনকাল এবং পরবর্তী এরশাদের সামরিক শাসনের প্রথম দিক ছিল প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য অত্যন্ত কঠিন সময়। বলতেই হবে, এ-সময় মাথার ওপর আনিস স্যার ছিলেন ঝড়-বৃষ্টিতে ছাতার মতো, পরম নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব। তবে এটাও বলতে হবে, তিনি কিন্তু কেবল আলংকারিক ভূমিকায় ক্ষান্ত থাকতেন না, রীতিমতো সাংগঠনিক সভাতেও যোগ দিতেন; আমাদের কোনো খসড়ায় মাহবুব ভাইয়েরও – লেখক ও গবেষক ড. মাহবুবুল হক – সংশয় থাকলে আনিস স্যার ছিলেন শেষ নিশ্চিন্ত আশ্রয়, তাৎক্ষণিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। তাছাড়া আমাদের আয়োজনের বাইরেও এ-ধরনের প্রগতিশীল 888sport live football-সংস্কৃতির বিভিন্ন আয়োজনেও তিনি নিয়মিত যোগ দিতেন। বিরাশি-তিরাশির দিকে মাঝে কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এছাড়া ১৯৮৫-র জুনে [আগস্ট] চট্টগ্রাম ছাড়ার পূর্ব পর্যন্ত তাঁকে নিয়েই অন্তত সাত-আট বছর আমাদের সামরিক স্বৈরাচারী শাসন-বিরোধী গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সম্মিলিত উদ্যোগগুলো, বলা যায়, সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ষাটের দশকের মতো এই সময়ে, বরং 888sport free betয় অনেক বেশি ও বহরে অনেক বড় বড় আয়োজন এ কয়েক বছরে সারাদেশেই হয়েছে। চট্টগ্রাম তাতে এগিয়ে ছিল। তখন পুনরায় বাঙালি জাতীয়তা, বাঙালি সংস্কৃতি, প্রগতিশীল চেতনার পক্ষে প্রচুর লেখালেখি, নানা সভা-সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে 888sport appsে। চট্টগ্রামে আমাদের তৎপরতার অভিভাবক ছিলেন আনিসুজ্জামান। তাঁকে মাথায় রেখে আমাদের পক্ষে মাঠে সাহসী কাজে সক্রিয় হওয়া সম্ভব ছিল। এর একটি বড় কারণ পরিচিতির পাশাপাশি তাঁর জন-ভাবমূর্তি এবং সরকারি-বেসরকারি নানা বিভাগ ও স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে তাঁর প্রতি আন্তরিক 888sport apk download apk latest versionবোধ।’

আবুল মোমেনের এই লেখা থেকে আমরা আরো জানতে পারি, ১৯৭৬ সালে আবুল মোমেন ও তাঁর সহযাত্রীরা যখন ছোটদের সাংস্কৃতিক পাঠ ও চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান ‘ফুলকি’ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন তখন থেকে আনিসুজ্জামানের সহযোগিতা পেয়েছিলেন তাঁরা। প্রথম দু-বছর, ১৯৭৬-৭৮, আবুল ফজল-পত্নী উমরতুল ফজল ছিলেন ‘ফুলকি’র সভাপতি; ১৯৭৮ সালে এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন আনিসুজ্জামান এবং সে-দায়িত্ব যথার্থ অর্থে পালন করেন চট্টগ্রাম ছেড়ে আসা পর্যন্ত। ‘ফুলকি’র দুঃসময়ে, ১৯৮০ সালের দিকে, এর উদ্যোক্তারা যখন প্রায় হাল ছেড়ে দেওয়ার অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন তখন আনিসুজ্জামান তাঁদের হতোদ্যম না হয়ে আরো এক বছর চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন। 888sport live football-সংস্কৃতি ও শিক্ষার ব্যতিক্রমী এক পাদপীঠ হিসেবে ‘ফুলকি’র আজকের ঈর্ষণীয় অবস্থানের পেছনে আনিসুজ্জামানের অবদানের কথা তাই তাঁরা আজো কৃতজ্ঞচিত্তে 888sport app download for android করেন।

শিক্ষা-সংস্কৃতি ও 888sport live football ভুবন ছাড়াও প্রধানত একজন সচেতন সামাজিক মানুষ হিসেবে আনিসুজ্জামান তাঁর লেখালেখি ও কাজকর্ম দ্বারা প্রায় সকলের কাছেই প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন – সে-কথা অনায়াসে বলা যায়। কারো কারো কাছে অবশ্য ঈর্ষার পাত্রও ছিলেন। তাছাড়া, বিভিন্ন সংকটকালীন সময়ে সমাজ ও দেশের মানুষের কল্যাণচিন্তায় সাহসী ভূমিকা নিতেও এগিয়ে আসতে দ্বিধা করেননি তিনি। এমন একটি ঘটনার কথা জানা যায় ভূঁইয়া ইকবালের লেখা থেকে। ২০১৭ সালে চন্দ্রাবতী একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত আনিসুজ্জামান সম্মাননা গ্রন্থে ভূঁইয়া ইকবাল উল্লেখ করেছেন, স্বৈরাচারী এরশাদ যখন রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছিলেন তখন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চট্টগ্রামের সর্বশ্রেণির নাগরিকদের একটি সভা আহ্বান করেন। তাঁর নিজের হাতে লেখা বিজ্ঞপ্তিতে (বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য) তিনি লিখেছিলেন : ‘888sport appsে যে-স্বৈরশাসন চলছে এবং রাষ্ট্রীয় ধর্ম ঘোষণা ও 888sport app ঘটনার মধ্য দিয়ে যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার পুনরুত্থানের প্রচেষ্টা চলছে, তা একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাকে আঘাত করছে, অন্যদিকে তেমনি জাতির ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ ও জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা চট্টগ্রামের সর্বশ্রেণির নাগরিকদের একটি সভা আহ্বান করেছি।’

চট্টগ্রাম ছেড়ে 888sport appয় ফিরে আসার জন্য অনুরোধ, উপরোধ ও আমন্ত্রণ আনিসুজ্জামান পাচ্ছিলেন স্বাধীন 888sport apps সৃষ্টির পর থেকেই। একবার 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর যোগদান করার সম্ভাবনা নিয়ে যে অপ্রীতিকর ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল সে-কথা আমরা আগেই বলেছি। এজন্য 888sport appয় ফেরার ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছা যে বিশেষ আগ্রহে পরিণত হয়েছিল এমন নয়। কিন্তু চর্যাপদের হরিণীর মাংসই যে তার মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে সেটি তো আর মিথ্যা নয়। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন ছাড়াও তাঁর 888sport app স্বাভাবিক দক্ষতার কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অনেক মানুষের নির্ভরতার আশ্রয়স্থল। তবে, একই সঙ্গে, কারো কারো ঈর্ষার পাত্রও যে হয়েছিলেন সে-কথাও অস্বীকার করা যায় না। ছোটখাটো ঘটনায় তার প্রমাণও যে ছিল না তা নয়। তবে আনিসুজ্জামান, মনে হয়, সেগুলোকে খুব গুরুত্ব দিতেন না, কিংবা ব্যক্তিগত বিদ্বেষকেও তেমন বড় করে দেখতেন না। অন্তত এটুকু জানা গেছে যে, এগুলো নিয়ে তিনি অন্যের কাছে তেমন কোনো মন্তব্য করেননি, ব্যক্তিগত ক্ষোভও প্রকাশ করেননি।

আনিসুজ্জামান যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন তখন সেখানে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আপত্তি জানিয়েছিলেন অনেক ছাত্রছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কেবল যে তাঁর বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ছিলেন তা নয়, 888sport app বিভাগের ছাত্রছাত্রীরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাঁর কাছে দাবি জানাতে এসেছিলেন তাঁদের ছেড়ে না আসার জন্যে। চট্টগ্রামে তাঁর গুণগ্রাহী ও প্রীতিভাজনরা এই বিচ্ছেদকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। আনুষ্ঠানিক বিদায়-সংবর্ধনার আয়োজনও তাঁরা করেননি। আবুল মোমেন লিখেছেন (পূর্বোক্ত 888sport live) : ‘আমরা দ্রুত আনিস স্যারের বিদায় উপলক্ষে চারুকলা কলেজের মনোরম প্রাঙ্গণে (এখন আর তা নেই, পুরো জায়গাটাই ভবনে আকীর্ণ) দিনব্যাপী প্রীতি-সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম। সব মহলের গুণগ্রাহী এবং আমাদের কর্মীবাহিনীকে তাতে উপস্থিত  করেছিলাম। গান, খাওয়া-দাওয়া এবং ছোট ছোট আড্ডায় সময়টা ভালোই কেটেছিল।’

১৮ই আগস্ট (১৯৮৫) রাতের ট্রেনে সপরিবার চট্টগ্রাম ছেড়ে এসেছিলেন আনিসুজ্জামান। গোলাম মোস্তফার বর্ণনায় : ‘বিদায়ের দিন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, চট্টগ্রামের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী, এমনকি রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিড়ে স্টেশন হয়ে উঠল লোকারণ্য। পুষ্পস্তবকে ভরে গেল তাঁর কম্পার্টমেন্ট। আক্ষরিক অর্থেই সেদিন ট্রেনের কামরায় পুষ্পশয্যায় শায়িত হয়েই তিনি চট্টগ্রাম ত্যাগ করলেন। এরকম ঘটনা বিরল।’

উনিশ

শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসের ১৯ তারিখে আনিসুজ্জামান ফিরে এলেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে। ‘শেষ পর্যন্ত’ কথাটি এতে যুক্ত করা হলো এজন্য যে, এবারো মনুষ্যসৃষ্ট নানারকম বাধাবিঘ্ন তাঁর এই প্রত্যাবর্তন নানাভাবে অস্বস্তিকর করার পথে সহায়ক হয়ে উঠেছিল। এর ইঙ্গিতপূর্ণ বয়ান তিনি দিয়েছেন তাঁর বিপুলা পৃথিবী গ্রন্থে; অবশ্যই তাঁর নিজের বৈশিষ্ট্যময় ভঙ্গিতে। আগ্রহী পাঠক এ-বয়ানের মর্মোদ্ধার করতে পারবেন বলেই আমাদের ধারণা। আনিসুজ্জামান লিখেছেন, বিভাগে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ‘কারো পরিত্যক্ত রুটিন’। সেজন্য এমন কিছু তাঁকে পড়াতে হচ্ছিল যা তাঁর নিজের এলাকার নয় এবং যা তিনি আগে পড়াননি। তাঁর 888sport free bet loginও তখন অনেক দূরে, যেহেতু 888sport appয় এসে তিনি উঠেছিলেন স্বামীবাগে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে এবং তাঁর 888sport free bet login ও 888sport app মালামাল রাখতে হয়েছিল তাঁর দুই শ্যালিকার বাড়িতে। তাই তাঁর একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার। তিনি লিখেছেন, ‘বিভাগের আবহাওয়া মোটের ওপর ভালোই। আহমদ শরীফ ও নীলিমা ইব্রাহিমকে নিয়ে যে দ্বন্দ্ব ছিল সেখানে, তাঁদের অনুপস্থিতিতে সেটা অনেকটা দূর হয়েছে। বিভাগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সবাইকে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি তেমন সুবিধাজনক নয়। রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছে – তাতে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে সরকারপন্থী ছাত্রদের সশস্ত্র সংঘাত দেখা দিচ্ছে। আমি ক্লাসে বক্তৃতা করছি, তার মধ্যে বোমা বা গুলির আওয়াজ পাওয়া গেল। কোত্থেকে একদল ছেলেমেয়ে এসে হুড়মুড় করে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে গেল এবং বিনা বাক্যব্যয়ে বেঞ্চিতে আসন নিয়ে বক্তৃতা শোনার ভান করতে লাগলো। এই অবস্থায় আমার পক্ষে পড়িয়ে যাওয়ার ভান করা মুশকিল।’

888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ি পাবার আগে পর্যন্ত, প্রায় এক বছরের বেশি, আনিসুজ্জামান সপরিবার স্বামীবাগে শ্বশুরবাড়িতেই ছিলেন। বড় মেয়ে রুচি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়তেন বলে আগে থেকেই সেখানে থাকতেন। তবে আনিসুজ্জামান-পত্নী চট্টগ্রাম ছেড়েছিলেন আরো প্রায় আট মাস পরে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে কাজ করতেন। সেখানে চাকরির বয়স দশ বছর পূর্ণ হলে আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে – এই আশায় তিনি সেখানে কাজ করে গিয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি প্রায় নিয়মিত চট্টগ্রাম-888sport app আসা-যাওয়া করতেন। ক্যাম্পাসের বাসা তাঁরা ছেড়ে দিয়েছিলেন বলে তিনি চট্টগ্রাম শহরে তাঁর ছোটভাই আমেরের বাসায় থাকতেন। আমের তাঁর বড়ভাই আবদুল আজিজের চট্টগ্রামের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। সিদ্দিকা জামান প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে ক্যাম্পাসে চাকরিতে যেতেন এবং সেখান থেকে ফিরে আসতেন। চট্টগ্রামে থাকতেই সিদ্দিকা জামান 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার এবং ব্যবসায় ইনস্টিটিউটে চাকরির দরখাস্ত করেন। অবশেষে, জমানো ছুটিগুলো ব্যবহার করে ও বেশ কিছুদিন 888sport app-চট্টগ্রাম যাতায়াত করে, ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন এবং ৬ই এপ্রিল সহকারী গ্রন্থাগারিক হিসেবে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ) যোগ দেন। এ-প্রসঙ্গে সিদ্দিকা জামান লিখেছেন (আমার বিপুলা পৃথিবী) : ‘ড. মোজাফফর আহমদ তখন পরিচালক হিসেবে থাকায় খুব উপকার হয়েছিল। যে-কোনো সমস্যার সমাধান সহজেই হয়ে যেত। ওঁর অকৃত্রিম সাহায্য ও সহযোগিতা এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। আমৃত্যু উনি আনিসুজ্জামান ও আমার বন্ধু ছিলেন। ওঁর স্ত্রী রওশন আপা আমার শিক্ষক ছিলেন, ইডেন কলেজে। তাঁর ভালোবাসা ও স্নেহ আমি এখনো পাই।’

888sport appয় আসার তেরো মাস পর, ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন পেয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর ও তাঁর স্ত্রী, দুজনের পয়েন্ট মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা পেতে কিছুটা সুবিধা হয়েছিল। এর আগে স্বামীবাগ থেকে আসা-যাওয়া করতেন তাঁরা। সিদ্দিকা জামান লিখেছেন : ‘শুরুর দিকে স্বামীবাগ থেকেই অফিস করতাম। সকাল ৭:৩০টায় আমরা সবাই একসঙ্গে বের হতাম। প্রথমে সুচিকে ভিকারুন নিসা কলেজে নামিয়ে, তারপর আমাকে আইবিএ-তে, আনন্দকে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে নামাত আনিসুজ্জামান। শেষে রুচিকে নিয়ে ও কলাভবনে যেত। আবার ফেরার সময় একইভাবে আমাদের উঠিয়ে নিত। ওর কষ্ট দেখে মাঝে মাঝে খারাপ লাগত, কিন্তু তখন আমাদের ড্রাইভার রাখার সামর্থ্য ছিল না।’

আনিসুজ্জামানের চট্টগ্রাম ছেড়ে আসা প্রসঙ্গে সিদ্দিকা জামান আরো জানাচ্ছেন : ‘আনিসুজ্জামান 888sport appয় এসে শুরুতে একদম ভালো ছিল না। প্রথম কারণ 888sport appয় আসা এবং দ্বিতীয় কারণ আসার আগে ২৫ বছরের অভ্যাস – সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেওয়া। উইথড্রয়াল সিনড্রোম খুব প্রবল হয়ে গেছিল। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম আনিসুজ্জামান ওখানে থাকলে পদে পদে বিব্রত হতো, জীবনটা হতো দুর্বিষহ। …’ আনিসুজ্জামান নিজে অবশ্য তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ বিপুলা পৃথিবীতে এই ‘বিব্রত’ হওয়ার বিষয়টি কোথাও সবিস্তারে বলেননি, তবে তাঁর কিছু ইঙ্গিতপূর্ণ বর্ণনায় ও মন্তব্যে এর কিছু আভাস লক্ষ করা যায়। আবুল মোমেনের পূর্বোক্ত লেখাটি থেকেও তার ইঙ্গিত মেলে। সম্ভবত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা-সংক্রান্ত কোনো প্রশাসনিক পদের নিবাচনপ্রার্থী হওয়া এর অন্যতম কারণ ছিল, যা সচরাচর ঘটতে দেখা যায়। আনিসুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন পেয়েছিলেন ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে – ৩২/ই ঈসা খান রোডের বাড়িতে। এর অবস্থান ছিল ‘একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে’। সামনে-পিছনে বিশাল দুটি বারান্দা। সিদ্দিকা জামান লিখেছেন : ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপার্টমেন্টে আমাদের ঠিক ওপরতলায় থাকতেন বাংলার ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অন্যপাশে মৃত্তিকা 888sport apk বিভাগের ড. আমিনুল ইসলাম। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর স্ত্রী, তাঁর দুই ছেলে – সুমন ও শোভনকে নিয়ে। আমাদের ঠিক নিচে, শহীদ মুনীর চৌধুরীর স্ত্রী – লিলি ভাবি, মিশুক-মঞ্জুলী ও তন্ময়কে নিয়ে থাকতেন। অপর পাশে ইসলামের ইতিহাসের ড. মমতাজুর রহমান তরফদার, নিচের তলায় উদ্ভিদ 888sport apkের আহমদ শামসুল ইসলাম, অন্যপাশে লোকপ্রশাসনের নূর মোহাম্মদ মিঞা। এই বিল্ডিংয়ের সবচেয়ে বড় আনন্দ ছিল সবাই সমমনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক ছিল বলে।’ (আমার বিপুলা পৃথিবী, সিদ্দিকা জামান)