আনিসুজ্জামান-জীবনকথা

কুড়ি

১৯৮৬ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর আনিসুজ্জামান তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন। তার আগে স্বামীবাগে থাকতে দুটি কাজ শেষ করেছিলেন তিনি। দুটিই ছিল বাংলা একাডেমির কাজ। এর মধ্যে একটি ছিল মুনীর চৌধুরী রচনাবলীর ভূমিকা লেখা আর দ্বিতীয়টি বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস প্রথম খণ্ডের সম্পাদনা। বিপুলা পৃথিবীতে তিনি লিখেছেন : ‘মনজুরে মওলার অন্তহীন দাবি না থাকলে তা করে উঠতে পারতাম না।’ কাজী মুহম্মদ মনজুরে মওলা ১৯৮২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ই মার্চ পর্যন্ত বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত ছিলেন। বাংলা 888sport live footballের ইতিহাস প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর পাঠ্যপুস্তক সংস্করণ ২০০৮ সালের জুন মাসে। এই সংস্করণের সংশোধন ও পরিমার্জনার কাজটিও করেন আনিসুজ্জামান। উল্লেখ্য, পাঠ্যপুস্তক সংস্করণ অবশ্য কোনো ভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল না; পাঠ্যপুস্তকের জন্য নির্ধারিত বাজেট-বরাদ্দ থেকে এর যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছিল বলেই একে পাঠ্যপুস্তক সংস্করণ নামে অভিহিত করা হয়। প্রধান সম্পাদক হিসেবে আনিসুজ্জামান দুটি সংস্করণই আদ্যোপান্ত সম্পাদনা করেন এবং ‘নিবেদন’ ও ‘পাঠ্যপুস্তক সংস্করণের নিবেদন’ নামে দুটি ভূমিকা লেখেন।

এই সময়ে আনিসুজ্জামান আরো একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ শাম্সউল হককে সভাপতি করে সরকার একটি পরীক্ষা-সংস্কার কমিটি গঠন করেছিল। কমিটির সদস্যদের মধ্যে মুহম্মদ ফেরদাউস খান, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দীন, এ এম হারুন অর রশিদের সঙ্গে আনিসুজ্জামানও ছিলেন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন যে, এঁদের সঙ্গে কাজ করা তাঁর কাছে আনন্দদায়ক হয়েছিল। তবে কমিটি যে সর্বসম্মত সুপারিশ দাখিল করেছিল তার মধ্যে একটি বা দুটি মাত্র সরকার গ্রহণ করে।

দেশভাবনা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা আনিসুজ্জামানের মধ্যে সহজাত ছিল এবং তরুণ বয়স থেকেই তিনি নানা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। এই সময়ে দেশের রাজনৈতিক হালচাল ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি তাঁর ভাবনার মধ্যে যথেষ্ট জায়গা করে নিয়েছিল। আশির দশকের (বিশ শতক) দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই এসব বিষয় সম্পর্কে আনিসুজ্জামানের ধারণার কিছু আলোকপাত তাঁর বিপুলা পৃথিবী বইয়ে পাওয়া যায়। উপর্যুক্ত সময়কাল প্রসঙ্গে সেখানে তিনি লিখেছেন : ‘১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি গঠিত হয়। সেপ্টেম্বরের আগে এরশাদ তাতে যোগ দেন না, কিন্তু প্রথম থেকে সবাই জানে, এটাই তাঁর দল। তিনি সংসদ নির্বাচন দেবেন বলে স্থির করেন। শোনা যায়, বিরোধী দল একজোট হয়েছে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া ১৫০টি আসনে প্রার্থী হবেন। নতুন অধ্যাদেশ জারি হয়, পাঁচটির অধিক আসনে কেউ প্রার্থী হতে পারবে না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল, জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে সাতদল এবং স্বতন্ত্রভাবে জামায়াতে ইসলামী একই ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর একটা ফল এই হয় যে, দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত বৈধতা পেতে শুরু করে। এরশাদ সংসদ-নির্বাচনের সময়সূচি নতুন করে ঘোষণা করেন। বিরোধী দলগুলো তা বর্জন করবে বলে জানায়। তারপর হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। শুনেছি, আওয়ামী লীগের ড. কামাল হোসেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন এর মূল প্রবক্তা। আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত ১৫ দলের মধ্যেই ভাঙন ধরায়। সংসদ নির্বাচন হয় ৭ মে। জাতীয় পার্টি সংসদে অর্ধেকের বেশি আসন পায়। কামাল হোসেনকে এবং আরো কাউকে কাউকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির সেই 888sport free betধিক্য আরো দৃঢ় হয়। এতদিনে এরশাদ সেনাবাহিনী থেকে অবসরগ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী এবং মওদুদ আহমদ, ডা. এম এ মতিন ও কাজী জাফর আহমদ উপপ্রধানমন্ত্রী হন।

‘নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদ সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী গ্রহণ করে এরশাদের সামরিক শাসনকালে গৃহীত সকল ব্যবস্থা অনুমোদন করে। আওয়ামী লীগ অবশ্য সংসদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে বিরোধী দলের কিছু সদস্য এবং কয়েকজন স্বতন্ত্র সদস্যের সমর্থন লাভ করে সরকার সংবিধান-সংশোধনে প্রয়োজনীয় 888sport free betগরিষ্ঠতা অর্জন করে। …

‘সংসদের বাইরে এরশাদবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন রাষ্ট্রীয় কোনো এজেন্সির সহায়তায় অর্থ ও অস্ত্রবলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। তারা অব্যাহতগতিতে সন্ত্রাস চালাতে থাকে। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রভাব পড়ে সর্বাধিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন, প্রকৌশলী-কৃষিবিদ ও চিকিৎসকেরা সমষ্টিগতভাবে ভূমিকা নেন, পেশাজীবীদের ব্যাপক ঐক্য গড়ে ওঠে। তারপরও সামনে কী ঘটবে, তা অজ্ঞাত রয়ে যায়।’

এইরকম রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ‘নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে কোনো একটা উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না’ এমন ভাবনায় একদিন ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সঙ্গে আনিসুজ্জামানের বাসায় অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ও আনিসুজ্জামান

 একদিন আলোচনায় বসলেন। তাঁরা সবাই মনে করলেন, ‘সংবিধানের আওতায় বিকল্প একটি সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে যদি একটা বিবৃতি দেওয়া যায়, তাহলে হয়তো নতুন একটা চিন্তার সূচনা হতে পারে।’ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের সঙ্গে বসে আনিসুজ্জামান সে-বিবৃতির খসড়া তৈরি করলেন। সে-খসড়া নিয়ে আলোচনার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব নিলেন অধ্যাপক মুশারফ হোসেন। অতঃপর খসড়া নিয়ে আলোচনার জন্যে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের বাড়িতে বসবার ব্যবস্থা হলো। তাতে অবশ্য, হঠাৎ জ্বরাক্রান্ত হয়ে গেলেন বলে, আনিসুজ্জামান উপস্থিত থাকতে পারলেন না। বিবৃতির চূড়ান্ত রূপদান হলো সেখানে এবং স্বাক্ষরদানও করলেন উপস্থিত সকলেই। আনিসুজ্জামান স্বাক্ষর দিলেন পরদিন। ১৯৮৭ সালের ৩১শে মার্চ সব কাগজে প্রকাশিত হলো সে-বিবৃতি। স্বাক্ষরকারীর 888sport free bet ৩১ হওয়ায় সেটি পরিচিত হলো ৩১ বুদ্ধিজীবী বা ৩১ নাগরিকের বিবৃতি বলে। বিপুলা পৃথিবীতে বিবৃতিটা যেভাবে উদ্ধৃত হয়েছে এখানে সেভাবে সেটি তুলে দেওয়া হলো আগ্রহীজনদের জ্ঞাতার্থে না পুনঃজ্ঞাতার্থে :

888sport appsে এখন এক গুরুতর সংকটের মধ্যে আমরা কালাতিপাত করছি। সর্বতোমুখী এই সংকট আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্র স্পর্শ করেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক গভীর হতাশা বিদ্যমান, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের ব্যাপ্তি ও অসাম্যের বিস্তার, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি, সামাজিক ক্ষেত্রে চরম নৈরাশ্য ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সবচেয়ে যা ভয়াবহ, তা হলো, দেশের প্রায় সকল পর্যায়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে ফেলা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নামে প্রহসনের অবতারণা করায় রাষ্ট্রপতির আসনের মর্যাদা ও জাতীয় সংসদের বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন নষ্ট হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের ভোটদানের মতো প্রয়োজনীয় অধিকার হরণ করে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যেও গণতান্ত্রিক নীতি ও পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে অনেকেই সংশয়গ্রস্ত। তেমনি ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে দল ভাঙাভাঙি ও সুবিধাবাদের যে খেলা চলছে, তাতেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে মানুষের 888sport apk download apk latest version নষ্ট হচ্ছে। …

এই নৈরাজ্য থেকে মুক্তির পথ অবিমিশ্র গণতন্ত্র। সন্ত্রাসের মাঝে মানুষের ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে যে তথাকথিত প্রহসনমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে সংবিধানের পূর্ণ গণতান্ত্রিক

প্রকৃতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এ জন্য সংবিধানের অধীনে দলনিরপেক্ষ, চরিত্রবান ব্যক্তি সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা সহায়ক হবে। সে সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে সর্বজনীন গণতান্ত্রিক অধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সর্বনিম্ন সময়ে দলীয় ভিত্তিতে সুষ্ঠু সন্ত্রাসমুক্ত জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, সে জনপ্রতিনিধিরা সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে যে অগণতান্ত্রিকতা আর্থ-রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে, তার নিরসন করবেন। রাজনীতিকে অস্ত্রমুক্ত এবং সামরিক বাহিনীকে রাজনীতিমুক্ত করার পদক্ষেপও তাঁরা গ্রহণ করবেন। দলনিরপেক্ষ সরকারের কেউই নির্বাচনে কোন প্রকার অংশগ্রহণ করবেন না বা অর্থবহভাবে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবেন না। আমরা মনে করি, বর্তমান নৈরাজ্য ও নৈরাশ্য থেকে মুক্তির এটিই একমাত্র পথ। গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল 888sport apps গঠনের জন্য এ ব্যাপারে আমরা দেশের সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় সমর্থন প্রার্থনা করি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, প্রাক্তন বিচারপতি দেবেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, বেগম সুফিয়া কামাল, প্রাক্তন উপাচার্য ও অর্থমন্ত্রী ড. আজিজুর রহমান মল্লিক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা নীলিমা ইব্রাহিম, প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, প্রাক্তন সচিব এ কে এম আহসান, প্রাক্তন সচিব সানাউল হক, প্রাক্তন সচিব আবদুল খালেক, পুলিশের প্রাক্তন মহাপরিদর্শক এ বি এম জি কিবরিয়া, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবউদ্দীন আহমাদ, 888sport app মেডিক্যাল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক জহুরুল হক, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম, অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক ইকবাল মাহমুদ, অধ্যাপক সন্জীদা খাতুন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশীদ, 888sport live chatী কামরুল হাসান, কবি শামসুর রাহমান, সাংবাদিক ফয়েজ আহমদ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, অধ্যাপক মুশারফ হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ও ড. ফসীহউদ্দীন মাহতাব।

৩১ বুদ্ধিজীবী বা ৩১ নাগরিকের এই বিবৃতি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তার কিছু প্রতিক্রিয়া ঘটে এবং পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্য আসে। আনিসুজ্জামানের বিপুলা পৃথিবীতে সেসবের সংক্ষিপ্ত উল্লেখ  রয়েছে। তবে আনিসুজ্জামানকে প্রথমে তাঁর দুই নিকটজনের অবিলম্ব প্রতিক্রিয়ারও সম্মুখীন হতে হয়। এঁরা ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৈয়দ আহমদ হোসেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসাবিদ ডা. সারোয়ার আলী। প্রতিক্রিয়ার সে-বিবরণ আনিসুজ্জামানের জবানিতেই শোনা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন (বিপুলা পৃথিবী) : ‘সকালবেলায় বিবৃতি পড়ে বেজায় ক্রুদ্ধ হয়ে আমার বন্ধু সৈয়দ আহমদ হোসেন ছুটে এলো আমার বাড়িতে। আমরা এমন একটা বিবৃতি দিতে যাচ্ছি, অথচ তাকে কিছু জানতে দিইনি, এ ছিল তার অভিযোগ। আরো গুরুতর অভিযোগ এই যে, আমরা একটা মার্কিন পরিকল্পনার ফাঁদে পা দিয়েছি এবং এর পেছনে বড়োরকম অসদুদ্দেশ্য আছে। একটু পরে এলো ডা. সারোয়ার আলী – সে তখনো কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত। তার স্বভাবসিদ্ধ হাসি হেসে একেবারেই অনুত্তেজিত কণ্ঠে সে বললো, ‘আনিস ভাই, বলেন দেখি, ব্যাপারটা কী। আপনারা এতজনে সই করলেন, অথচ বাইরের কেউ জানতে পারলো না – এমনটা তো 888sport appsে সচরাচর ঘটে না। সত্যি বলছি, আমি বুঝতে এলাম, কী ভেবে আপনারা এমন একটা প্রস্তাব তুললেন এবং এর পরে আপনারা কোন দিকে যাবেন।’

৩১ বুদ্ধিজীবীর এই বিবৃতি 888sport appsের তৎকালীন রাজনৈতিক অঙ্গনে যে কিছুটা আলোড়ন তুলেছিল সে-কথা অস্বীকার করা যায় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের প্রস্তাবের একটি সাংবিধানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সেটি তৈরি করলেন বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, তার পুনর্লিখন করলেন আনিসুজ্জামান। তবে এবারে দুজন তাতে স্বাক্ষর করলেন না। অবশ্য বিবৃতিটি প্রকাশ পেল ৩১ জনের পক্ষেই। এই বিবৃতি-প্রক্রিয়ার পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘জেনারেল এরশাদের পতন পর্যন্ত অর্থাৎ পরবর্তী তিন বছর আট মাস পর্যন্ত ৩১ জনের এই গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল, তবে সকলে আমরা একযোগে থাকতে পারিনি। অনেকের ওপর চাপ আসছিল নানারকম, কেউ কেউ উৎসাহ হারিয়ে ফেলছিলেন, পরিবারের সদস্যদের অস্বাচ্ছন্দ্যের কারণে কেউ কেউ আর এরসঙ্গে থাকতে চাইছিলেন না। …

‘আমাদের বেশিরভাগ বৈঠক হতো মুশারফ হোসেন কিংবা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসস্থানে। বক্তব্য স্থির করার পর মুসাবিদা করার ভার অধিকাংশ সময়ে আমার ওপর পড়তো। বিবৃতি তৈরি হয়ে গেলে মইনুল হোসেন ইত্তেফাকের লোকবলের সাহায্যে তা বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠাতেন।’

‘অল্প সময়ের মধ্যেই জনসমাজে আমাদের বিবৃতির একটা গ্রহণযোগ্যতা দাঁড়িয়ে যায়। বিরোধী দলের কেউ আর আমাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে কটাক্ষ করেননি। সরকারি প্রতিক্রিয়া যে বিরূপ ছিল তা আগেই বলেছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকেও আর কেউ প্রকাশ্য বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হননি।’

888sport cricket BPL rate

এদিকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষকের পরিবার 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কোয়ার্টারে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁদের ১৫ বছরের বরাদ্দ শেষ হতে যাচ্ছিল ১৯৮৭ সালে। আনিসুজ্জামান দেখলেন যে, ১৯৮৭ সালে যদি তাঁদের বাসস্থান ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে অনেকে বিপদে পড়বেন। তাঁর মনে হলো, এই বরাদ্দ যদি আরো অন্তত পাঁচ বছর বাড়ানো যায় তাহলে তাঁদের মধ্যে অনেকেই উপকৃত হবেন। বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে কাউকে কাউকে কথাটা বলায় তাঁরাও এই মর্মে প্রস্তাব করতে সম্মত হলেন। এবার বাংলা বিভাগের শহীদ শিক্ষকদের পরিবারের জন্য এই সুবিধা চেয়ে আবেদনপত্রে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের স্বাক্ষর নিয়ে আনিসুজ্জামান সেটি নিয়ে গেলেন উপাচার্যের কাছে। তিনি যথেষ্ট সহানুভূতি প্রকাশ করে বললেন, বিষয়টা সিন্ডিকেটে নিতে হবে। যে সিদ্ধান্তই হোক, তা প্রযোজ্য হবে সকল শহীদ শিক্ষকের পরিবারের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, এ-প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে, সকল শহীদ শিক্ষকের পরিবারকে আরো পাঁচ বছরের জন্য বাড়িতে

থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। অবশ্য আনিসুজ্জামানের এ-উদ্যোগ যে বিভাগের সব শিক্ষকের সমর্থন পেয়েছিল, তা নয়। একজন তো আনিসুজ্জামানের কাছে অভিযোগের সুরে বলেছিলেন, ‘আপনারা কি ক্যাম্পাসের বাড়িঘর কেবল মৃতদেরকেই দেবেন, যারা জীবিত তাদের পরিবারের কথা ভাববেন না?’ তিনি বিভাগের প্যাডের কাগজে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট এমন অনুরোধ জানানোর বৈধতার প্রশ্নও উত্থাপন করেছিলেন। এই শিক্ষক, যতদূর জানা যায়, বাংলা বিভাগের শহীদ শিক্ষকদের সরাসরি ছাত্রই ছিলেন।

১৯৮৭ সালের অক্টোবরে এশিয়ান রিলেশনস্ কোমেমোরেটিভ কনফারেন্স-এর দ্বিতীয় সম্মেলন আয়োজিত হয় নয়াদিল্লিতে, ভারত সরকারের উদ্যোগে। এতে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক মুশারফ হোসেন ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। এশিয়ান রিলেশনস্ কনফারেন্স প্রথম অনুষ্ঠিত হয় নয়াদিল্লিতে, ১৯৪৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে। এর উদ্যোক্তা ছিলেন ভারতের জওহরলাল নেহরু এবং বার্মার অং সান। সে-বছর এপ্রিল মাসে বার্মায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে অং সান তাতে যোগ দিতে পারেননি। তবে এশিয়ার ত্রিশটি দেশের প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা এতে যোগ দিয়েছিলেন এবং জাতিসংঘ ও 888sport app আন্তর্জাতিক সংস্থা পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল।

এই সম্মেলনের 888sport app download for androidে চল্লিশ বছর পর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় বলেই এর নাম দেওয়া হয় এশিয়ান রিলেশনস কোমেমোরেটিভ কনফারেন্স। আনিসুজ্জামান লিখেছেন যে, তাঁরা তিনজন ছাড়াও 888sport apps থেকে আরো কেউ কেউ বোধহয় গিয়েছিলেন। এই সম্মেলন প্রসঙ্গে আনিসুজ্জামান লিখেছেন (বিপুলা পৃথিবী) : ‘এশিয়ার নানা দেশ থেকে প্রতিনিধি এসেছিলেন এই বিশাল আনন্দযজ্ঞে। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ড. শঙ্কর দয়াল শর্মা সম্মেলন উদ্বোধন করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী স্বাগত ভাষণ দিয়েছিলেন। শঙ্কর দয়াল শর্মা উদ্ধৃত করেছিলেন বৈদিক মন্ত্র, রাজীব গান্ধী বাংলায় ও ইংরেজিতে উদ্ধৃত করেছিলেন নজরুল ইসলামের 888sport app download apkর চরণ।’

‘সম্মেলন হয়েছিল 888sport apk ভবনে। বহু লোকজন, আলোচ্য বিষয় অনেক। একই সঙ্গে একাধিক কক্ষে অধিবেশন বসছে। অধিবেশনের বাইরেও একান্তে কিংবা দল বেঁধে গল্পমগ্ন অথবা তর্ক চলছে। রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, অধ্যাপক, সাংবাদিক, 888sport live chatী – নানা পেশার, নানা মতের লোক রয়েছেন। কে আসছেন, কে যাচ্ছেন, তাও সবসময়ে ঠাহর করা যায় না।’

এই সম্মেলনের ছোট একটি অভিজ্ঞতার কথা আনিসুজ্জামান আমাদের জানিয়েছেন। তখন ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলছিল। সেই যুদ্ধ কখন থামবে সে-কথা তিনি জানতে চেয়েছিলেন একজন ইরানি প্রতিনিধির কাছ থেকে। তিনি আনিসুজ্জামানের জিজ্ঞাসার উত্তরে বলেছিলেন, তাঁর আশা, যুদ্ধ অচিরে শেষ হবে। আর তা হবে, ইরাককে হারাতে পারলেই। এই একই প্রশ্ন ইরাকের দুজন প্রতিনিধিকে করায় তাঁরা বলেছিলেন, ইরানকে পর্যুদস্ত করেই শান্তি প্রতিষ্ঠা ঘটবে। এদিকে, সম্মেলনে আগত সব দেশের প্রতিনিধিরাই এশিয়ায় শান্তি ও ঐক্যপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন। মনে হয়, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

১৯৮৭ সালের বেশিরভাগ সময়ে এবং বছরের শেষ দিকে ও ১৯৮৮ সালের শুরুতে 888sport appsে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেশ প্রবল হয়ে ওঠে। এ-সময়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির সভানেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্তরীণাবদ্ধ করা হয়, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও জাতীয় সংসদ বিলোপ করা হয়। ছাত্রদের আন্দোলন উত্তাল হয়ে ওঠে এবং প্রধানত 888sport appয় সরকারপক্ষীয় ও বিরোধীদলীয় ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে। চট্টগ্রামে হাসিনার নেতৃত্বাধীন মিছিলে পুলিশের গুলিচালনায় কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে। সরকার 888sport appsে বিবিসি’র কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। অনেককে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে আনিসুজ্জামানদের পরিবারেও বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে এ-সময়ে। ১৯৮৭ সালের জুন মাসে আনিসুজ্জামান পরিবারের সবাইকে নিয়ে খুলনায় যান তাঁর মেজবোনের ছোট ছেলের বিয়েতে যোগ দিতে।

সিদ্দিকা জামান লিখেছেন (আমার বিপুলা পৃথিবী) : ‘১৯৮৭ সালের জুন মাসে আমরা খুলনা গেলাম আমার মেজ ননদের ছোট ছেলে শাহিদের বিয়ে উপলক্ষে। আমার মেজ ননদাই খুলনার বিশিষ্ট 888sport live chatপতি সৈয়দ আলী হোসেন। দারুণ উদার মনের মানুষ ছিলেন। আমার প্রতি তাঁর স্নেহ, ভালোবাসার কথা ভুলতে পারব না। খুব ধুমধাম করে বিয়ে দিলেন। এই বিয়ের একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো – পাত্রী রুমা আমার ভাই আজিজের বন্ধু রফিকের মেয়ে। আর ঘটনাচক্রে রফিকের বিয়ের বরযাত্রাও হয়েছিল আমার এই ননদের বাড়ি থেকেই। প্রায় ২০-২২ বছরের ব্যবধানে মা-মেয়ের বিয়ের বরযাত্রা হলো একই বাড়ি থেকে।

‘খুলনা থেকে ফিরে আসার পর থেকেই আমাদের দুই পরিবারকে অসুখ-বিসুখ-বিপদ-মৃত্যু যেন ঘিরে ধরল। এক বছরের মধ্যে আমরা তিন নিকটজন হারালাম। বিয়ের পরপর মেজবু নতুন বউয়ের গয়না নিয়ে 888sport appয় আসলেন, উঠলেন ছেলের বাড়িতে। সেখান থেকে সবকিছু ডাকাতি হয়ে গেল। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই

 মেজ দুলাভাই হঠাৎ করে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এমনি ওঁর শরীর অনেকদিন ধরেই ভালো যাচ্ছিল না। কয়েকদিন পরেই ১৯৮৭ সালের ২৭ জুন, মারা গেলেন তিনি। …

‘১৯৮৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাতে আনিসুজ্জামানের জ্বর হয়। পরদিন সকালে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করে গেলাম। উনি ওর কাছে সবকিছু শুনে পরীক্ষা শেষে প্রেসক্রিপশন লেখা শুরু করলেন। আমি তখন ওঁকে বললাম, রাতে আনিসুজ্জামান চোয়ালে ব্যথা অনুভব করেছিল। কথাটা শুনেই উনি কলম থামিয়ে রাগত স্বরে আনিসুজ্জামানকে বললেন, ‘কথাটা আমাকে আগে বলেননি কেন? এখনই শুয়ে পড়েন, একটা ইসিজি করতে হবে।’ ইসিজি করে বললেন, ‘ছোটখাটো একটা হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে।’ আগের প্রেসক্রিপশন ছিঁড়ে নতুন করে আবার লিখলেন। ওর সবচেয়ে পছন্দের খাবার, ডিম আর গরুর গোস্ত সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করলেন। পরে রসিকতা করে আমাকে বললেন, ‘চোয়ালে ও বাঁ হাতে ব্যথা হলে বুঝবেন ব্যাপারটা হৃদয়ঘটিত।’ আরো বললেন, ‘যাঁরা ডায়াবেটিক রোগী তাঁরা এই ব্যথা অনুভব করেন না। তাঁদের জন্য ব্যাপারটা ভয়ঙ্কর। অতএব ডায়াবেটিস থেকে সাবধান থাকবেন।’ এক মাস পর আবার দেখা করতে বললেন। দারুণ দুশ্চিন্তা নিয়ে ফিরে এলাম।’

এ-ঘটনার মাস-দুয়েক পর চট্টগ্রামের সন্তান লন্ডনপ্রবাসী ডাক্তার বিবি চৌধুরীর আমন্ত্রণে ১৯৮৮-এর 888sport cricket BPL rateে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসেবে যোগ দিতে লন্ডন গিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। ডা. চৌধুরী তাঁকে বলে দিয়েছিলেন, তিনি যেন তাঁর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যান। ডা. চৌধুরী পূর্ব লন্ডনে জেনারেল প্র্যাকটিস করতেন। সেখানে পিপলস্ হেলথ ক্লিনিক নামে তাঁর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল, যেখানে প্রায় বিনামূল্যেই চিকিৎসা পাওয়া যেত। 888sport cricket BPL rateের বক্তৃতা-পর্ব ইত্যাদি শেষ হওয়ার পর আনিসুজ্জামান গেলেন ডাক্তার দেখাতে। তাঁকে দেখলেন ডা. জ্যাকসন, কিংস হসপিটালে। প্রাথমিক পরীক্ষার পর ডা. জ্যাকসন জানালেন, রোগীর অ্যানজিওগ্রাম করা দরকার। ডা. জ্যাকসনের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে রেখেছিলেন ড. কামাল হোসেনের বোন আহমদী। এবার অবশ্য অ্যানজিওগ্রাম করাতে তাঁকে ডা. মার্টিন রথম্যানের কাছে নিয়ে গেলেন ডা. বি বি চৌধুরী। ডা. রথম্যান তাঁর অ্যানজিওগ্রাম করলেন স্টেপনি গ্রিনের কাছে লন্ডন ইনডিপেনডেন্ট হসপিটাল নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। অ্যানজিওগ্রামশেষে ডা. রথম্যান জানালেন, একটি ব্লক পাওয়া গেছে। অ্যানজিওপ্লাস্টি তথা বেলুনিং করতে হবে। সেটিও করানো হলো। অনেক খরচের ধাক্কা। আনিসুজ্জামানের দু-একজন আত্মীয় ও লন্ডনপ্রবাসী বন্ধুরাই সবাই মিলে সে-খরচটা সামলে নেবেন – প্রথমে সে-রকমই স্থির হয়েছিল। কেউ কেউ চেকও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করতে হলো না। পুরো খরচ বহন করল বিসিসিআই ফাউন্ডেশন। সে-ঘটনার বিবরণ আনিসুজ্জামানের জবানিতেই শোনা যেতে পারে।

‘888sport apps ব্যাংকের সাবেক গভর্নর একে নাজিরউদ্দীন আহমদ তখন বিসিসিআই ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত। তিনি দেশ থেকে লন্ডন হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছিলেন সস্ত্রীক। কার কাছে খবর পেয়ে শফিকে [বন্ধু এবিএম শফিউল্লাহ] ফোন করলেন – আমাদের দুজনকে লাঞ্চে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর হোটেলে।

‘খেতে খেতে আমার স্বাস্থ্যের খবর নিলেন, ডাক্তারের মতামত শুনলেন, চিকিৎসার সম্ভাব্য ব্যয়ের পরিমাণ জানতে চাইলেন। শেষে বললেন, আমার আপত্তি না থাকলে পুরো খরচটা তিনি বিসিসিআই ফাউন্ডেশনকে বহন করতে বলবেন। আমাকে কিছুই করতে হবে না, কোনো আবেদনও নয়। ফাউন্ডেশনকে তিনি লিখবেন, শফি আমার হয়ে চেক গ্রহণ করবেন, শুধু ব্যয়সংক্রান্ত সকল রসিদপত্র ফাউন্ডেশনকে পাঠিয়ে দিতে হবে।’

‘আমি একেবারেই হতবাক। নাজিরউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আমার পরিচয় এতটা ঘনিষ্ঠ নয় যে আমার চিকিৎসার দায়দায়িত্ব তাঁকে ঘাড়ে তুলে নিতে হবে। আমি যে-পরিস্থিতিতে ছিলাম তাতে বললে

অর্থ-সাহায্যের জন্যে আবেদন করতে আমি যে খুব ইতস্তত করতাম, তা নয়। কিন্তু আমার সম্মান তিনিই রক্ষা করতে এগিয়ে এলেন। এসব বিষয়ে তিনি আগেই ভেবে রেখেছিলেন। তাঁর ব্যবহারে আপ্লুত না হয়ে উপায় ছিল না।

‘ঘরে ফিরে শফি পাওয়া চেকগুলো ফেরত দিতে শুরু করলেন। প্রত্যেককেই দীর্ঘ কৈফিয়ত দিতে হলো। নাজির ভাই যদিও বলে দেননি, তবু শফি ও আমি বিসিসিআই ফাউন্ডেশনের নামটা প্রচার না করারই সিদ্ধান্ত নিলাম। ফলে, যাঁদের সাহায্য ধন্যবাদের সঙ্গে ফেরত দেওয়া হলো, তাঁদের সবার মনে নিশ্চয় এই প্রশ্ন জেগেছিল যে, হঠাৎ করে এত অর্থের সংস্থান কীভাবে হলো।’ (বিপুলা পৃথিবী)

এর আগে তাঁর মেজ দুলাভাইয়ের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। মেজ দুলাভাইয়ের মৃত্যুর কিছুকাল পরেই হঠাৎ করে বড়ো দুলাভাইয়ের পাকস্থলীতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা বললেন, তাঁরা অস্ত্রোপচার করতে চান, তার ফল ভালো হতে পারে, মন্দও হতে পারে। তাঁর বড়ো দুলাভাই এতে সম্মতি দিলেন। ও.টি-তে নিয়ে যাওয়ার পর যথাবিহিত প্রস্তুতি সেরে অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীর তলপেট কেটে সঙ্গে সঙ্গেই সেটি আবার জোড়া দিলেন শল্যবিদেরা। তাঁদের আর কিছু করার ছিল না। ক্যান্সার ভিতরে সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর তিনি মাসখানেক বেঁচে ছিলেন। মারা যান ১৫ই ফেব্রুয়ারি (১৯৮৮)। অভিভাবকতুল্য ছিলেন তাঁর বড়ো দুলাভাই। আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘বড়োবুর বিয়ে হয়েছিল ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে। বিয়ের পরে দীর্ঘকাল দুলাভাই আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমরাও আবার 888sport appয় এসে তাঁর সঙ্গে ছিলাম অনেকদিন। এসবের মধ্য দিয়ে একটা ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল তো বটেই। তার ওপর, আব্বা বলতেন, বড়ো জামাই-ই তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র, দুলাভাইও সব বিষয়ে কর্তব্যের অধিক করতেন। আব্বাকে কিছু বোঝাতে হলে আমরা দুলাভাইয়ের শরণাপন্ন হতাম। আমাদের পরিবারের সকল সিদ্ধান্তে তিনি শরিক ছিলেন। কতদিক দিয়ে যে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা-নেতৃত্ব দিয়েছেন, তা বলে শেষ করা যায় না।

‘১৫ তারিখে দুলাভাই মারা গেলেন, ১৬ তারিখে আমার লন্ডনে যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ করার কথা। যাবো কি যাবো না, এমন দোটানায় পড়ে গেলাম। উদ্ধার করলো বড়োবুই। বললো, তুমি যাও – সবকিছুর ব্যবস্থা যেখানে করা আছে, সেখানে না-যাওয়াটা ঠিক হবে না।’

লন্ডনে আনিসুজ্জামান চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরোতে না বেরোতেই তাঁর মেজো ভায়রা তফাজ্জল আলী ওরফে মাখন সস্ত্রীক সেখানে গিয়ে হাজির হন। তিনি বেশ কিছুকাল ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন। কেমোথেরাপি নিয়ে, আনিসুজ্জামানের ফেরার পর, তিনিও দেশে ফিরে এসেছিলেন; কিন্তু শরীর খারাপ হয়ে পড়ায় আবার তাঁকে নেওয়া হয় লন্ডনে। চিকিৎসা নিয়ে আবার তিনি দেশে ফিরে আসেন; কিন্তু বাঁচলেন না বেশিদিন। ১৯৮৮ সালের ২০শে জুন মারা গেলেন তিনি।

বছরখানেকের মধ্যে পরিবারের তিন ঘনিষ্ঠজনের মৃত্যু দেখলেন আনিসুজ্জামান। তাঁর নিজের অসুস্থতাও নেহাত কম ছিল না। এই মৃত্যুগুলির 888sport sign up bonusচারণ করে সিদ্দিকা জামান লিখেছেন : ‘মাস চারেক আগে বড় নন্দাইয়ের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই আমার বাবার পরিবারেও প্রথমবারের মতো মৃত্যু হানা দিল। আমার মেজ বোনের স্বামী মাখন ভাই মারা গেলেন, প্রায় বছরখানেক ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে। শেষের দিকে বিলেতেও চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট হলো না। ১৯৮৮ সালের ২০ জুন তিনি চলে গেলেন। আমাদের পরিবারের নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ শেষ হয়ে গেল। আনিসুজ্জামান ও আমি দাফনের উদ্দেশ্যে সিলেটে গেলাম। কয়েকদিন সেখানে থেকে নাজুর সঙ্গে ট্রেনে করে 888sport appয় ফিরলাম। ঘটনাচক্রে সেদিন ট্রেনে ফেরার পথে সব দুঃখের গানগুলোই বাজছিল। পুরো রাস্তাতেই চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরে গেল আমাদের দুই বোনের।’

বাইশ

আনিসুজ্জামানের জীবনে ১৯৮৮ সাল ছিল বেশ ঘটনাবহুল বছর। এর মধ্যে একটি হলো একমাত্র পুত্রসন্তান আনন্দ জামানের ম্যাট্রিক পরীক্ষা। সে-বছরও যথারীতি মার্চ মাসেই ম্যাট্রিক পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আনন্দকে সিটি কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি করে দেওয়া হয়। কাছের সরকারি 888sport app কলেজ বাদ দিয়ে বেসরকারি সিটি কলেজে ছেলেকে ভর্তি করানোর কারণ হিসেবে সিদ্দিকা জামান লিখেছেন যে, ‘তখন ওই কলেজ কঠিন নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলত। ফলে ছাত্রদের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ল। আনন্দ পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী হয়ে উঠল।’ এই সিদ্ধান্তের ফলাফল যে ভালোই হয়েছিল তা সত্যিই বোঝা গিয়েছিল ১৯৯০ সালে। সে-বছর আনন্দ মেধাতালিকায় ১৮তম স্থান অধিকার করে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে।

১৯৮৮ সালের আরেকটি ঘটনা হলো, আপসোর (অঅচঝঙ) সপ্তম কংগ্রেসে আনিসুজ্জামানের যোগদান। সেটি অনুষ্ঠিত হয় নয়াদিল্লিতে, ২৪ থেকে ২৮শে আগস্ট। কংগ্রেসে 888sport appsের প্রতিনিধিদলে ছিলেন শেখ হাসিনা, আহমদুল কবির, হায়দার আকবর খান রনো, সুধাংশু শেখর হালদার, মোনায়েম সরকার, কামাল হায়দার, সাইদুর রহমান, আনিসুজ্জামানসহ আরো কয়েকজন। এশিয়া ও আফ্রিকার ৫৪টি দেশের প্রতিনিধিদল ছাড়াও সহযোগীরূপে ইউরোপের নয়টি দেশের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও সহযোগীরূপে যোগ দিয়েছিলেন ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশের সাংগঠনিক প্রতিনিধিরা। এসেছিলেন জাতিসংঘ এবং আরো কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। সম্মেলন উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। সম্মেলনের একটি দিন জওহরলাল নেহরুর শতবার্ষিকী পালনে নিয়োজিত হয়। এভাবে নানারকম ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে সম্মেলনের দিনগুলি কেটে যায়। এই সম্মেলনে আপসোর কেন্দ্রীয় সংগঠনের নতুন কমিটিতে সহসভাপতির একটি পদ 888sport appsের মনোনয়নের জন্য শূন্য রাখা হয় এবং পরে আনিসুজ্জামান সে-পদের জন্য মনোনীত হন।

১৯৮৮ সালের জুন মাসে সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী গৃহীত হয়। এই সংশোধনীতে 888sport appর বাইরে ছয়টি জেলায় হাইকোর্ট বিভাগের আসন নির্দিষ্ট হয় এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে পরদিনই 888sport app এবং দেশের আরো কয়েকটি শহরে ধর্মঘট পালিত হয়। এ-সময় 888sport appsের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেনকে সভাপতি করে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। সে-কমিটিতে আনিসুজ্জামানও শরিক হন। কমিটি একাধিক সভা করে রাষ্ট্রধর্মের প্রত্যাহার দাবি করে। পরবর্তীকালে কমিটির উদ্যোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মামলার আবেদনটি তৈরি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। আবেদনকারী দশজন ছিলেন বিচারপতি কামালউদ্দিন হোসেন, বিচারপতি কে এম সোবহান, বিচারপতি দেবেশচন্দ্র ভট্টাচার্য, সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, কবীর চৌধুরী, বদরুদ্দীন উমর, ফয়েজ আহমদ ও আনিসুজ্জামান। আনিসুজ্জামান লিখেছেন (বিপুলা পৃথিবী) :

‘আমাদের মামলা গৃহীত হলো। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এটি নিয়ে আর অগ্রসর হওয়া সম্ভবপর হয়নি। তার প্রধান কারণ মামলার সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে আমাদের দ্বিধা ও দুশ্চিন্তা। ফলে মামলাটি নথিভুক্ত হয়ে রইলো, তার আর শুনানি হলো না। তবে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি বেশ কিছুকাল সক্রিয় ছিল। একটি গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ 888sport apps গড়ে তোলার লক্ষ্যে

এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদ্দেশ্যে আমরা সভা করেছি, একটি 888sport live সংকলন প্রকাশ করেছি। কয়েকটি ঘরোয়া বৈঠক হয় আমার বাসায়। তাতে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন।’

স্বাধীন-সার্বভৌম 888sport appsের যে-সংবিধান রচনার সঙ্গে আনিসুজ্জামান একাত্মভাবে জড়িত ছিলেন, সে-সংবিধানের এরূপ অঙ্গহানি তাঁর পক্ষে মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। 888sport free betলঘু সম্প্রদায়ের এক বন্ধু একদিন একান্তে তাঁকে বলেছিলেন, ‘আমার তো মনে হয়, স্বতন্ত্র নির্বাচন ফিরিয়ে আনা ছাড়া 888sport free betলঘুদের স্বার্থরক্ষার উপায় নেই।’

এই অপ্রত্যাশিত উক্তি শুনে আনিসুজ্জামান তাঁকে বলেছিলেন, ‘তাহলেই ধর্মনিরপেক্ষতার সম্পূর্ণ পরাজয় হবে। আমাদের নেতারা স্বতন্ত্র নির্বাচন-ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন অনেক আন্দোলন করে। এখন তা ফিরিয়ে আনলে স্বাধীন 888sport appsে পাকিস্তানকেই ফিরিয়ে আনা হবে।’

এর ঠিক পরেই আনিসুজ্জামান প্রায় স্বগতোক্তির মতো লিখেছেন – ‘তবে তিনি কী গভীর বেদনা ও হতাশা থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিলেন, তা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।’ এই উপলব্ধি আনিসুজ্জামানের মতো সহমর্মী মানবতাবাদীর পক্ষেই সম্ভব, অন্যদের পক্ষে নয়।

এবারে আসা যাক আনিসুজ্জামানের একান্ত পারিবারিক প্রসঙ্গে। দাদাভাই রোকনুজ্জামান খান ছিলেন কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যেসব গুণীজন ও সমাজহিতৈষী বিশিষ্ট ব্যক্তি কচি-কাঁচার মেলা ও দাদাভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হন তাঁদের মধ্যে বেগম সুফিয়া কামাল, 888sport live chatাচার্য জয়নুল আবেদিন, অধ্যাপক অজিত কুমার গুহ, 888sport apkলেখক আবদুল্লাহ আল-মুতী প্রমুখের সঙ্গে আনিসুজ্জামানও ছিলেন।

১৯৮৮-এর শেষের দিকে এক রাতে দাদাভাই আনিসুজ্জামানদের বাসায় এসে জানতে চাইলেন, বড়ো মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভাবছেন কি না। রুচি তখন অর্থনীতিতে অনার্স পাশ করে এমএ পড়ছে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। আনিসুজ্জামানের ইচ্ছে ছিল, মেয়ে আগে এমএ পাশ করুক, তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। দাদাভাই বললেন, তাঁর হাতে সৎপাত্র আছে। এখানে বিয়ে হলে রুচি তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। মরহুম বিচারপতি আবদুল মওদুদের কনিষ্ঠ পুত্র আবু রায়হান আজিজুল হক বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্সে মাস্টার্স করে বছরখানেক পড়াশোনা করেছে আমেরিকার লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এখন 888sport appর আইসিডিডিআরবি-তে কাজ করছে। থাকে তার বড়ো বোন বেবী মওদুদের সঙ্গে। বেবী নিজেও আনিসুজ্জামানের ছাত্রী ছিলেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করছিলেন। সেই সূত্রে দাদাভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল, স্নেহের পাত্রী ছিলেন। পাত্র দেখে পছন্দ হলো। বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেল। রুচি ও রায়হানের বিয়ে হলো ১৯৮৯ সালের মার্চে। তার আগে আনিসুজ্জামানদের পরিবারের সবাই কলকাতা গিয়ে ঘুরে এলেন। সিদ্দিকা জামান লিখেছেন, ১৯৭৩ সালে সেই যে একবার তাঁরা সবাই মিলে কলকাতা গিয়েছিলেন, তারপর আর সেভাবে কোথাও যাওয়া হয়নি। আট-দশদিন কলকাতায় থেকে এলেন তাঁরা সবাই, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে এবং বিয়ের কিছু কেনাকাটাও।

এরপর ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের (আপসো) এক আন্তর্জাতিক সভায় যোগ দেওয়ার জন্য জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী ইয়েমেনের রাজধানী এডেনে যান আনিসুজ্জামান। টিকিট পেলেন সোভিয়েত রাশিয়ার বিমান সংস্থা এরোফ্লোতের। যাতায়াত করতে হবে মস্কো হয়ে। বুঝতে পারলেন, টিকিটটা আসছে সোভিয়েত ইউনিয়নের সৌজন্যে। ভাবলেন, এতে ভালোই হলো, শেষবার রাশিয়া গিয়েছিলেন ১৯৭৩ সালে, তারপর আর সেখানে যাওয়া হয়নি। এডেন যাওয়ার পথে দুদিন এবং ফেরার পথে একদিন থাকার কথা। এই সামান্য সময়ের অবস্থানেই তাঁর মনে হলো, সোভিয়েত ইউনিয়ন কোথায় যাচ্ছে। সে-অভিজ্ঞতার সামান্য বর্ণনাও আছে তাঁর বিপুলা পৃথিবীতে। তিনি লিখেছেন : ‘পথে যেতে খাদ্যসামগ্রীর দোকানে লম্বা লাইন দেখি। আমার প্রশ্নের উত্তরে দোভাষী বলে, আমাদের এমন লম্বা লাইন দিয়েই জিনিসপত্র কিনতে হয়। মস্কোতে যত দোকান দেখবেন, সর্বত্রই এ রকম অবস্থা। শুধু রাইসাকে (গর্বাচেভের স্ত্রী) কিউতে দাঁড়াতে হয় না। তার জন্যে অন্য ব্যবস্থা। হয়তো আরো দু-একজনের জন্যে। কিন্তু আপামর জনসাধারণকে ভোগ্যপণ্য কিনতে হলে এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় কেউ দোকানে ঢুকে দেখে, তার দরকারি জিনিসের মজুদ শেষ হয়ে গেছে, কখনো দোকানের সিঁড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে কারো মুখের ওপর দোকানের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

‘কথাগুলো যে সত্যি, তা আমাদের স্বদেশি বন্ধুদের কাছ থেকেই জানতে পারি। তারপরও মেয়েটির প্রতি বাক্যে যে-তীব্র ক্ষোভ লক্ষ করি, তা আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল।

‘গর্বাচেভের পেরেস্ত্রোইকার কি এই হাল? তাঁর গ্লাসনস্তের কি এই ফল? মেয়েটি তো পারলে চোখের আগুন দিয়েই সোভিয়েত সমাজব্যবস্থা ভস্ম করে ফেলে। …

‘হোটেলের রেস্টুরেন্টে অনেক রুশ দেখি। সোভিয়েত আপসোর এক কর্মকর্তা বললেন, মনে হয়, এরা নব্য ধনী। ব্যবসা করে দু-পয়সা করেছে। একটা কথা বলি, কিছু মনে কোরো না। আমাদের যেসব ব্যবসায়ী স্মাগলিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে 888sport appsি তরুণদের খুব সমাদর। 888sport appsি আর প্যালেস্টিনিয়ানদের। বিমানে করে ওদের সিঙ্গাপুর হংকং পাঠায়, ওরা সেখান থেকে জিনিসপত্র স্মাগ্ল করে নিয়ে আসে – খুব পটু এ-ব্যাপারে। ধরা না পড়লে তারাও বেশ করে খাচ্ছে। তোমার দেশের অনেক ছেলেই এখন লেখাপড়া স্থগিত রেখে এই কাজে নেমেছে। নগদ পয়সার বিকল্প নেই।’

আনিসুজ্জামান যখন এডেন গিয়ে পৌঁছান, তখন সেখানে দুই ইয়েমেনের (উত্তর ও দক্ষিণ) আসন্ন একত্রীকরণের আমেজ। উত্তর ইয়েমেন আরব প্রজাতন্ত্র ছিল পাশ্চাত্য-প্রভাবিত আর দক্ষিণ ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত বলয়ের অধীন। বিশ শতকের ষাটের দশকে ইয়েমেন দু-ভাগে ভাগ হয়ে যায় এবং সত্তরের দশকে দুই ইয়েমেনের মধ্যে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধও সংঘটিত হয়। আপসোর সভায় যোগ দেওয়ার পর যথাসময়ে আনিসুজ্জামান আবার এরোফ্লোতযোগে মস্কো হয়ে 888sport appয় ফিরে আসেন।

এডেন থেকে ফেরার কয়েক মাসের মধ্যেই আমন্ত্রণ এলো কেন্দ্রীয় আপসো থেকে। বান্দুং সম্মেলনের ৩৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কায়রোতে আন্তর্জাতিক সেমিনার। তাঁরা 888sport apps থেকে দুজনকে নিতে চান, তার মধ্যে একজনকে লিখিত 888sport live পড়তে হবে। ঠিক হলো আনিসুজ্জামানের সঙ্গী হবেন মোস্তাফিজুর রহমান  (সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি)। লিখিত 888sport liveটি পড়বেন আনিসুজ্জামান।

যথারীতি এরোফ্লোতযোগে মাত্রা। মস্কোয় যাত্রাবিরতি। মস্কোর হোটেলে দেখা হলো ভিয়েতনামের ন্গুয়েন সি বিনের সঙ্গে। এর আগে দিল্লিতে একবার দেখা পেয়েছিলেন তাঁর। কিন্তু সেবারে পরিচয় হয়েছিল মাত্র, আলাপ কিংবা কথাবার্তার তেমন সুযোগ ঘটেনি। এবারে হলো। আনিসুজ্জামান সে-প্রসঙ্গের একটি খুবই সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছেন তাঁর বইয়ে (বিপুলা পৃথিবী) :

‘ভদ্রমহিলা বয়সে আমার বছর দশেক বড়ো হবেন। ফরাসি ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন ছাত্রাবস্থায়। কমিউনিস্টদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অপরাধে জেল খেটেছেন কয়েক বছর। ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টে যোগ দিয়ে দ্রুত তার নেতৃস্থানীয় পদে উন্নীত হয়েছেন। দক্ষিণ ভিয়েতনামের অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। পূর্বাপর প্যারিস শান্তি আলোচনায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শেষ দফা আলোচনায় টেবিল ঘিরে কীভাবে বসা হবে, সে-সম্পর্কে আপত্তি তুলে সভার কাজ বন্ধ রেখেছিলেন দীর্ঘক্ষণ। তাঁর দৃঢ়চিত্ততা পাশ্চাত্য সাংবাদিকদের প্রশংসা অর্জন করেছিল।

‘মস্কোতে তাঁকে আমি দেখলাম অত্যন্ত বিনয়ী, নম্র, মৃদুভাষী মানুষ হিসেবে। এমনিতে গম্ভীর, কিন্তু তীক্ষè রসবোধের পরিচয় দেন। তাঁকে আমার খুবই ভালো লাগতে থাকে।’

আনিসুজ্জামান স্বীকারোক্তি করেছেন যে, কোনো লেখাই তিনি সময়মতো শেষ করতে পারেন না। কায়রোয় পঠিতব্য লেখাটিও তিনি দেশে থাকতেই শেষ করতে পারেননি। এবার তাই মস্কোতে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে হোটেলের কক্ষে নিজেকে আবদ্ধ রেখে 888sport liveটি শেষ করলেন তিনি। তাঁর লেখাটি একটু বড়ো হয়ে গিয়েছিল। সেমিনারে পড়ার সময় সভাপতির তাগিদে ও নির্ধারিত সময়ে শেষ করার তাগিদে তিনি এতো দ্রুত পড়ছিলেন যে, যে-মহিলা ইংরেজি আরবি দোভাষী, তিনি ইংরেজিতেই বললেন, ‘হি ইজ রিডিং টুউ ফাস্ট ফর মি।’ এটুকু বলেই তিনি থেমে গিয়েছিলেন।

যাঁরা আনিসুজ্জামানকে জানেন, তাঁরা এ-ও জানেন যে, এমন ঘটনা ছিল তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। লিখিত বা মৌখিক – যেভাবেই তিনি বক্তব্য উপস্থাপন করতেন না কেন, তা হতো স্বচ্ছন্দ, গোছানো, পরিপাটি ও সংক্ষিপ্ত। এই সেমিনারে আনিসুজ্জামানের পঠিত 888sport liveের বিষয় ছিল – জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের ত্রিশ বছর। এই প্রথম কায়রো 888sport slot game আনিসুজ্জামানের। তাই ঘুরে ঘুরে অনেক কিছু দেখলেন – নীল নদ, পিরামিড, স্ফিংস। সেই সঙ্গে আরো একটি লাভ হয়েছিল তাঁর। সেটি হলো, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তির সংগ্রামী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে দেখা হওয়া। ২৮ বছর পর কারাগার থেকে বেরিয়ে সম্ভবত এটিই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর ছিল।

১৯৯০-এ আনিসুজ্জামান কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত ঝড়ঁঃয অংরধ ঋড়ৎঁস ভড়ৎ ঐঁসধহ জরমযঃ-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগদান করেন।

তেইশ

১৯৮৮-১৯৮৯ সালের দিকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ক্রমশ সংহত রূপ পেতে শুরু করে। সে-আন্দোলন প্রথম দিকে কেন্দ্রীভূত ছিল মূলত ছাত্রসমাজের মধ্যে। তবে তার বাইরেও আন্দোলনের ঢেউ ক্রমে ক্রমে বেশ ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সময়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার-প্রাঙ্গণে একটি বড় ঘটনা ঘটে। ১৯৮৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সেখানে জাতীয় 888sport app download apk পরিষদ আয়োজিত জাতীয় 888sport app download apk সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয়দিনে 888sport app download apk-পাঠের আসরে কবি আবুল হোসেনকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি তাতে উপস্থিত হতে না পারায় ওই আসন দেওয়া হয় 888sport live chatী কামরুল হাসানকে, যিনি নিজেকে ‘পটুয়া’ বলতেই অধিক পছন্দ করতেন। মঞ্চে বসে জেনারেল এরশাদের ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন তিনি। সে-চিত্রের পরিচিতিতে লিখেছিলেন – ‘দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’। আকস্মিকভাবে প্রবল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই মঞ্চেই ঢলে পড়েন তিনি। শেখ হাসিনার গাড়িতে তাঁকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। কিন্তু তার আগেই করাল মৃত্যু এসে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়েছে সকলের কাছ থেকে। প্রসঙ্গত স্মর্তব্য, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালেও 888sport live chatী কামরুল হাসান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার একটি ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন, যেখানে জেনারেলের মুখটি আঁকা হয়েছিল নরখাদক বাঘের আদলে।

888sport live chatী কামরুল হাসানের আঁকা এই ব্যঙ্গচিত্র ও আকস্মিক মৃত্যু সে-সময়ে জনমনে বিশেষ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যাঁর জায়গায় কামরুল হাসান ঘটনাক্রমে প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেছিলেন মঞ্চে সেই কবি আবুল হোসেন ওই অনুষ্ঠানে তাঁদের জায়গা-বদল নিয়ে পরে ‘নিয়তি’ নামে একটি মর্মস্পর্শী 888sport app download apk লিখেছিলেন।

১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। প্রায় সকল ছাত্র ও গণআন্দোলনের সূতিকাগার এবং কেন্দ্রভূমি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব আন্দোলনের অভিঘাত ছিল সবচেয়ে বেশি। সারাবছর ধরেই ছাত্রদের ধর্মঘট ও সরকার সমর্থক ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষ, চিকিৎসকদের ধর্মঘট, আইনজীবীদের প্রতিবাদ, শ্রমিক-সংঘর্ষ, পরিবহন-ধর্মঘট, ছাত্র-পুলিশ সংঘাত, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, হরতাল ইত্যাদি অব্যাহত থাকে। অক্টোবর মাসে সারাদেশে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধের কর্মসূচি পালিত হয়।

এই সময়ে ৩০-শে অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় বাবরি মসজিদ বিধ্বস্ত হওয়ার কল্পিত খবর ছাপা হয়। এই খবরে সারাদেশে ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে চট্টগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে হিন্দুদের বাড়িঘর ও দোকানপাট আক্রান্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। এ-অবস্থায় ইনকিলাব ৩১-শে অক্টোবর সংশোধনী ছাপে তাদের পত্রিকায়। এই সংশোধনী ছাপা হয়েছিল কিন্তু ছোটো ছোটো অক্ষরে। ফলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা নিরসনে তা কোনো কাজে আসেনি। বিজয়নগরে মিষ্টির দোকান লুণ্ঠিত হয়, নারিন্দায় 888sport free betলঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি আক্রান্ত হয় এবং ইসলামপুরে স্বর্ণের দোকান (যার মধ্যে মুসলমান মালিকের দোকানও ছিল) লুণ্ঠিত হয়। এছাড়া 888sport app শহরের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুমন্দিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটে এবং 888sport free betলঘুরা জানমাল হারানোর ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে ৩১ তারিখ সকালেই আনিসুজ্জামানসহ সচেতন ও প্রগতিশীল নাগরিকদের অনেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবে উপস্থিত হন তাঁদের করণীয় নির্ধারণের জন্যে। করণীয় সম্পর্কে আলাপ-আলোচনার পর তাঁরা দাঙ্গাবিরোধী মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাব থেকে শাঁখারিবাজার পর্যন্ত যান এবং সেখান থেকে আবার প্রেসক্লাবে ফিরে আসেন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন যে, ৩১-শে অক্টোবরেই কয়েকটি পাড়ায় শান্তিরক্ষার জন্যে স্কোয়াড গঠন করা সম্ভবপর হয়েছিল। তাঁরা অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে, সরকারবিরোধী আন্দোলন বিঘ্নিত করার জন্যে এই পরিস্থিতি তৈরি করেছিল সরকার

ইচ্ছাকৃতভাবে। কিন্তু তাতে আন্দোলন থামেনি, এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমিত হলে আন্দোলন আরো গতি পায়। এবার আন্দোলনের একটি মূলকেন্দ্র বিবেচনা করে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকারি নির্দেশ অগ্রাহ্য করে শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছাত্ররাও ক্লাসে আসতে থাকে।

এই অবস্থায় সরকারের দমননীতি প্রবলতর হয়ে ওঠে এবং 888sport appয় ও 888sport appর বাইরেও সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। অনেক মানুষও মারা যায়। টিএসসির উল্টোদিকে গুলিতে মারা গেলেন ডা. মিলন। সারাদেশ স্তম্ভিত হয়ে গেল, গর্জে উঠল প্রতিবাদে। ২৯-শে নভেম্বর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে শিক্ষক সমিতির সভায় স্থির হলো যে, 888sport app  বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক একযোগে পদত্যাগ করবেন। সভাশেষে মিছিল করে শিক্ষকরা সবাই সচিবালয়ের দিকে রওনা হয়ে গেলেন। কার্জন হল পার হতেই এলো পুলিশের বাধা। একটু পরেই শুরু হলো মিছিলকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ। স্বাভাবিকভাবেই মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। কেউ কেউ রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। তাঁদের ধরে তুলে সবাই আবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ফিরে এলেন।

এসব ঘটনার কিছুটা বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন আনিসুজ্জামান তাঁর বিপুলা পৃথিবী বইটিতে। ব্যক্তিগত 888sport sign up bonusচারণায় তিনি তুলে ধরেছেন স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের কাহিনি। সে-কাহিনি আমাদের অনেকেরই জানা। তবে আনিসুজ্জামানের বর্ণনায় তার 888sport sign up bonus ঝালিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তিনি লিখেছেন :

‘পরবর্তী তিন-চারদিন আন্দোলন আরো জোরালো হলো, আরো প্রাণহানি ঘটলো। সচিবালয় এবং সরকারি-আধা-সরকারি সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এবারে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে রাজপথে মিছিল করে নামলেন। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে নানারকম প্রস্তাব দেওয়া হলো, কিন্তু সরকারের পদত্যাগ ছাড়া অন্য কিছুতে তাঁরা রাজি নন বলে জানিয়ে দিলেন। সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য যথেষ্ট প্ররোচনা দিলেন এরশাদ, কিন্তু সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নূরউদ্দিন তাঁকে বলে দিলেন যে, এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী সে-পথে পা বাড়াবে না। ৪ ডিসেম্বর জানা গেল, এরশাদ পদত্যাগ করবেন এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির পদে তিন রাজনৈতিক জোট প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নিয়োগদানে একমত হয়। তাঁর সম্মতি পেতে দেরি হচ্ছিল। তখন বিকল্পের সন্ধান শুরু হয়। মঈদুল হাসানের পরামর্শে আমি এয়ার ভাইস-মার্শাল (অব.) এ কে খোন্দকারের নাম প্রস্তাব করি ড. কামাল হোসেনের কাছে। কামাল তখন আত্মগোপনে ছিলেন। এই নাম আলোচিত হতে হতে জানা গেল, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এই দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছেন এই শর্তে যে, দায়িত্বকাল শেষে তাঁকে আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফিরে যেতে দেওয়া হবে।

‘৫ তারিখ রাতের খবরে নিশ্চিত হওয়া গেল যে, এরশাদ যাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামলো রাজপথে। মুহূর্তের মধ্যে বেবী ও আনন্দ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল মিছিলে যোগ দিতে। আমি ঘরে বসে রইলাম টেলিভিশন সেটের সামনে। তাতে মানুষের আনন্দের যে-প্রকাশ দেখা গেল, তা বহুকাল দেখিনি।’

উদ্ধৃতি একটু দীর্ঘ হলো বটে, তবে এতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কিছু ঐকান্তিক পরিচয়ও স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রথম যৌবনে ভাষা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও নিজ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে আনিসুজ্জামান দেশের একজন অগ্রসর সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেকে সবসময় তুলে ধরেছেন। বৃহত্তর জনসমাজের আশা-আকাক্সক্ষার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করার মধ্যেই, মনে হয়, তাঁর জীবনসাধনার মূলমন্ত্র নিহিত।

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আনিসুজ্জামান ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখলেন, ভোটার তালিকায় তাঁর স্ত্রী সিদ্দিকা জামানের ও পুত্র আনন্দ জামানের নাম আছে, কিন্তু তাঁর নাম নেই। দিনশেষে সংবাদ-সম্মেলনে ভোটার তালিকার অসম্পূর্ণতার দৃষ্টান্ত হিসেবে শেখ হাসিনা এই বিষয়টির উল্লেখ করেন। কয়েকটি পত্রিকা থেকেও আনিসুজ্জামানকে ফোন করে প্রকৃত অবস্থা জানতে চাওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের সচিব আইয়ুবুর রহমানও তাঁকে ফোন করেন এবং প্রতিকারের জন্য তাঁর অফিসে যেতে বলেন।

পরদিন নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, বিএনপি ১৪০টি এবং আওয়ামী লীগ ৮৪টি আসনে জয়লাভ করেছে। আর জেনারেল এরশাদের দল জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। খালেদা জিয়া ও এরশাদ পাঁচ-পাঁচটি আসনেই নির্বাচিত হন। তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেখ হাসিনা জিতলেন একটি আসনে। অনেকের কাছেই নির্বাচনের এ-ফলাফল অপ্রত্যাশিত ছিল। কেউ কেউ বললেন, আওয়ামী লীগের আত্মতুষ্টি বেশি ছিল বলে তাঁরা নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে যথাযোগ্য ব্যবস্থাপনায় বিএনপির চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন, কর্মী ও সমর্থকদের পুরোপুরি সংগঠিত করতে পারেননি। এর ফল নেতিবাচক হয়েছিল।

কোনো দলই একক 888sport free betগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে কিছুটা বিলম্ব হয়। অবশেষে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির প্রতি সমর্থন জানালে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এক পর্যায়ে মন্ত্রিসভা গঠনের আমন্ত্রণ জানান। ১৯৯১ সালের ২৯-শে মার্চ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।

আনিসুজ্জামানের জীবনকথার বিবরণে অপরিহার্যভাবে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনাপ্রবাহে তাঁর সক্রিয়তার কথা চলে আসে। আনিসুজ্জামান নিজে কখনো এসব আয়োজন থেকে নিজেকে বিযুক্ত রাখেননি, কিংবা রাখতে পারেননি। তবে একই সঙ্গে তাঁর শিক্ষকতার দায়িত্ব এবং লেখালেখি ও গবেষণার কাজও তিনি যথেষ্ট নিয়মিতভাবে চালিয়ে গেছেন। আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর

(১১-৩-১৯৮৬) তাঁর আগ্রহে ও প্রয়াসে আনিসুজ্জামান বাংলা একাডেমি কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। আনিসুজ্জামানকে তিনি একাডেমির নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত করেন। এর মধ্যে একটি ছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বাংলা বৈদ্যুতিক টাইপরাইটারের কি-বোর্ড তৈরির কাজ। একই সঙ্গে কিবোর্ডের বিন্যাস এবং হরফের আদল সৃষ্টি। আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘বিন্যাসের বিষয়ে মূল কাজটি করলেন জামিল চৌধুরী। মুনীর অপটিমার দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে ছিল, তার বিন্যাস সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের কিছু সমালোচনা বা পরামর্শ আমরা গণ্য করেছিলাম। হরফের বিষয়ে কাইয়ুম চৌধুরীকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করে একাধিক নমুনা আঁকিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা তখনই প্রশ্ন তুলেছিলাম, কম্পিউটারে বাংলা সফটওয়ারের উদ্ভাবনের বিষয় যখন আমাদের চিন্তা করা উচিত, তখন আমরা ইলেকট্রিক টাইপরাইটারের জন্য চেষ্টিত হচ্ছি কেন? দেখা গেল, মন্ত্রণালয় মনে করছে, কম্পিউটারে বাংলার ব্যবহার করতে সময় নেবে, ততদিনে ইলেকট্রিক টাইপরাইটারের ব্যবহার আমাদের কাজে গতি দেবে।

‘আবু হেনা আরেকটি কাজে আমাকে যুক্ত করেছিলেন – বাংলা ভাষা প্রয়োগে সাধারণ ভুলগুলো সংকলন করে সকলের সামনে তুলে ধরা। এখানে মোহাম্মদ আবদুল কাইউম আমাদের সঙ্গে ছিলেন, একাডেমির একাধিক কর্মকর্তাও এতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বাংলা ভাষার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ (১৯৮৭) নামে বইটি যখন বের হলো, তখন তা সমাদৃত হয়।’

‘888sport live football-সাধক-চরিতমালা’র আদলে বাংলা একাডেমি থেকে ‘জীবনী গ্রন্থমালা’র প্রকাশও ছিল আবু হেনা মোস্তফা কামালের একটি পরিকল্পনা। আনিসুজ্জামান এই গ্রন্থমালার অধীনে মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯৮৮) বইটি লিখেছিলেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালেই আকস্মিক অসুস্থতায় আবু হেনা মোস্তফা কামাল ১৯৮৯ সালের ২৩-শে সেপ্টেম্বর  মৃত্যুবরণ করেন। পরে বাংলা একাডেমি আনিসুজ্জামানকে আবু হেনা মোস্তফা কামাল রচনাবলী সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়। বিশ্বজিৎ ঘোষের সহযোগে তিনি তা সম্পন্ন করেন এবং ২০০১ সালে এই রচনাবলীর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। এর আগে 888sport live chatকলা একাডেমী থেকে আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা গানের সংকলন আমি সাগরের নীল প্রকাশিত হয়। তাঁর পরিবারের ইচ্ছাক্রমে আনিসুজ্জামান সেটির ভূমিকা লিখেছিলেন।