আনিসুজ্জামান-জীবনকথা

চব্বিশ

১৯৯১ সালের ২৮শে ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামী 888sport apps ঘোষণা করে যে, অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের সংগঠনের আমির নির্বাচিত হয়েছেন।

888sport apps স্বাধীন হওয়ার ঠিক আগে আগেই গোলাম আযম পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও 888sport appsি ভিসা নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১১ই জুলাই তিনি 888sport appsে আসেন তাঁর অসুস্থ মাকে দেখতে। সেই থেকে তিনি এদেশে থেকে যান এবং জামায়াতে ইসলামীর অঘোষিত নেতা হিসেবে সক্রিয় থাকেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি আর 888sport apps ত্যাগ করেননি এবং একাধিকবার 888sport appsের নাগরিকত্ব প্রার্থনা করে আবেদন জানালেও তাঁর আবেদন গৃহীত হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একাধিকবার জাতীয় সংসদে জানান যে, তাঁর নাগরিকত্ব প্রত্যর্পণের ইচ্ছা সরকারের নেই। এবারে তাঁর প্রকাশ্যে একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পেছনে গূঢ় কোনো অভিসন্ধি কাজ করছে বলে সকলের মনে হয়। এর প্রতিবাদে এবং 888sport apps থেকে তাঁকে বহিষ্কারের দাবিতে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিবৃতি দেয়। আওয়ামী লীগের ছাত্র-সংগঠন এতে ছিল। ১৯৯২ সালের ৮ই জানুয়ারি জাতীয় সংসদে গোলাম আযম সম্পর্কে আলোচনায় আওয়ামী লীগ তাঁর বহিষ্কার দাবি করে।

এই পরিস্থিতিতে ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমদিকে শাহরিয়ার কবির ফোন করে আনিসুজ্জামানকে জানান যে, একটি গণ-আদালত গঠন করে গোলাম আযমের বিচারের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে। শাহরিয়ার কবির জানতে চান, এমন একটা উদ্যোগ নেওয়া হলে আনিসুজ্জামান তার সঙ্গে থাকবেন কি না। আনিসুজ্জামান সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেন যে, তিনি তাতে থাকবেন। এর পরে শাহরিয়ার কবির কর্নেল (অব.) কাজী নূরউজ্জামানের বাড়িতে আহূত দুটি সভায় যোগ দেওয়ার জন্য আনিসুজ্জামানকে আমন্ত্রণ জানান। আনিসুজ্জামান এর কোনোটিতেই যোগ দিতে পারেননি, তবে শাহরিয়ার কবিরের কাছ থেকে প্রথম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত হয়ে তিনি তার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় সভায় গণ-আদালত আহ্বানের জন্যে গঠিত কমিটির নাম হয় ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’। ‘নির্মূল’ শব্দটি আনিসুজ্জামানের পছন্দ হয়নি। সে-কথা তিনি শাহরিয়ার কবিরকে জানিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে শাহরিয়ার তাঁকে জানান যে, নামটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে, ফলে এখন পুনর্বিবেচনার আর সুযোগ নেই। এই দ্বিতীয় সভাতেই জাহানারা ইমামকে আহ্বায়ক করে ১০১ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। আনিসুজ্জামানকেও সে-কমিটির সদস্য রাখা হয়।

‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠনের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী আনিসুজ্জামানকে জানান যে, তিনি এ-প্রয়াসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে চান। আনিসুজ্জামান তাঁকে শাহরিয়ার কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। এরপর ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্র প্রতিরোধ মঞ্চ’ গঠিত হয় অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরীর উদ্যোগে এবং মান্নান চৌধুরী তার একজন নেতারূপে তাতে সম্পৃক্ত হন। তাঁরা আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সমর্থন লাভ করেন। এরপর উপরিউক্ত দুই সংগঠনের মধ্যে কয়েকদফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দুটি সংগঠন মিলে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয় জাহানারা ইমামকে আহ্বায়ক রেখেই। পরবর্তী সময়ে আবদুল মান্নান চৌধুরী এর সদস্য-সচিব মনোনীত হন। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ২৬শে মার্চ (১৯৯২) তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশ্যে গণ-আদালত বসবে এবং সেখানে গোলাম আযমের বিচার অনুষ্ঠিত হবে।

এসব প্রসঙ্গ নিয়ে আনিসুজ্জামান তাঁর বিপুলা পৃথিবীতে লিখেছেন :

‘জাহানারা ইমাম আমার ছাত্রী ছিলেন। সেই দাবিতে তিনি বললেন, গণ-আদালতে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আমাকেই অভিযোগ উত্থাপন করতে হবে। আমি তাঁকে বললাম, এতে আমার আপত্তি নেই, তবে যেহেতু ১৯৭১ সালে আমি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম, তাই গোলাম আযমের তখনকার কার্যকলাপ সম্পর্কে আমার অভিযোগ হবে শোনা কথার সামিল। আমি বরঞ্চ ১৯৭২ সাল থেকে গোলাম আযম 888sport appsের বিরুদ্ধে যা যা করেছেন, সে-সম্পর্কে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ আনবো। আর কেউ ১৯৭১ সালে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে অভিযোগ করুক।’

‘আলোচনার পরে স্থির হলো, গণ-আদালতে অভিযোগকারী হবো আমরা তিনজন : বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গোলাম আযমের ভূমিকা সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করবেন সৈয়দ শামসুল হক; মুক্তিযুদ্ধকালে তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করবে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর; আর 888sport apps প্রতিষ্ঠার পর পৃথিবীর নানা দেশে তাঁর 888sport appsবিরোধী ভূমিকা সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপন করবো আমি।’

গণ-আদালতের খবরটি সাধারণ্যে ছড়িয়ে পড়ার পর তার পক্ষে সাধারণ মানুষের বিপুল সমর্থন সৃষ্টি হলো – বিশেষত ছাত্রদের মধ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের মধ্যে। জাতীয় 888sport app download apk উৎসবে উপস্থিত প্রায় সকলেই বিচারকার্যের সমর্থনে গণস্বাক্ষরে অংশগ্রহণ করলেন। বিপুলা পৃথিবীতে গণ-আদালত সম্পর্কিত নানাবিধ তথ্যের একটি নাতিদীর্ঘ বিবরণ আনিসুজ্জামান অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাতে দেখা যায়, অল্পকালের মধ্যেই জাহানারা ইমাম, মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী সন্তান রুমীর মা হিসেবে, ‘শহীদ-জননী’ আখ্যা লাভ করেন। তবে সরকার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে। ২২শে মার্চ লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, গোলাম আযম আইনের ঊর্ধ্বে নন, তবে গণ-আদালতে তাঁর বিচার সমর্থনযোগ্য  নয়।  অবশেষে  ২৬শে  মার্চ  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণ-আদালত বসে। বিচারকেরা গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তাঁরা বলেন, 888sport appsসহ পৃথিবীর সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশে এইসব অপরাধ দৃষ্টান্তমূলক মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।

এদিকে গণ-আদালত অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে গণ-আদালত প্রশ্নে সরকারের পক্ষ থেকে একটি ফৌজদারি মামলায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি হয়। আনিসুজ্জামানও এই ২৪ জনের মধ্যে ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০, ১২১, ১২৪(ক), ১৪৮, ৫০৪ এবং ৫০৫(ক ও খ) ধারায় অভিযোগ আনীত হয়। মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত থেকে তাঁদের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা বেরোয়। একজন সাংবাদিক টেলিফোনে আনিসুজ্জামানকে এ-খবর জানান। খবর শুনে তিনি ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদকে ফোন করে তাঁকে না পেয়ে ফোন করেন অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলামকে। তিনি জানান, যেসব ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে, তার মধ্যে কোনো কোনোটি জামিনের অযোগ্য। আজকের রাতে বাড়িতে না থাকাই ভালো। পরদিন হাইকোর্ট থেকে জামিনের চেষ্টা করা যেতে পারে। একটা ব্যাগে সামান্য কিছু কাপড়, প্রয়োজনীয় জিনিস আর ওষুধ নিয়ে বন্ধু মসিহুর রহমানের গুলশানের বাড়িতে রাত কাটাতে গেলেন আনিসুজ্জামান আরেক পারিবারিক বন্ধু আবদুল আলীর গাড়িতে করে। সিদ্দিকা জামান লিখেছেন (আমার বিপুলা পৃথিবী) : ‘প্রথম রাতেই বন্ধুদের উদ্বেগের কারণে আনিসুজ্জামান তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আত্মগোপনে চলে যায়। এই খবর শুনে পরদিন আমাদের সামাদের (প্রো-ভিসি, ঢাবি) স্ত্রী রীমা খুব সকালে হাজির হলো। আমার হাতে বেশ কিছু টাকা দিয়ে গেল। টাকার অঙ্কে খুব বেশি না হলেও দেখলাম তাতে রয়েছে অনেক ছোট ছোট নোট। বুঝলাম ওর হাতে ওই সময় যা ছিল তার সবটাই নিয়ে এসেছে। এই ভালোবাসা আমি কখনো ভুলব না। সেই নোটগুলো মনে হয় এখনো আমার চোখে ভাসে।

‘খুব সম্ভবত বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে আনিসুজ্জামান দুঃখ করে বলেছিল, যে দেশের সংবিধান প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছিলাম, সেই দেশেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ পেতে হলো। এই মামলা থাকায় পরবর্তী চার বছর আনিসুজ্জামানকে নানা ঝামেলায় পড়তে হলো। একবার কানাডার ভিসাও পেল না। এটা যে একটা হয়রানিমূলক মামলা তা বুঝলেও, দেশটির নিয়ম অনুযায়ী তারা ভিসা প্রদানে অপারগতা জানাল। এখানেই শেষ নয়। ১৯৯৬ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, আমাদের শেলী ভাই, ওকে উপদেষ্টা করতে চাইলেও এই মামলা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে উনার সময়ে এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু এর দুই বছর আগেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা মাথায় নিয়ে পৃথিবী ছাড়েন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।’

যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছিল তাঁরা ছিলেন – গণ-আদালতের বিচারক জাহানারা ইমাম, গাজীউল হক, আহমদ শরীফ, মাজহারুল ইসলাম, শফিক আহমেদ, ফয়েজ আহমদ, কবীর চৌধুরী, কলিম শরাফী, মওলানা আবদুল আউয়াল, কর্নেল নূরউজ্জামান, কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী ও শওকত আলী খান, উভয়পক্ষের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, শামসুদ্দীন বাবুল, উম্মে কুলসুম রেখা ও নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল), অভিযোগকারী আনিসুজ্জামান, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ও সৈয়দ শামসুল হক; গণ-আদালতে সাক্ষ্যদাতা শাহরিয়ার কবির, মওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ, আলী যাকের ও ডা. মোশতাক হোসেন; এবং সমন্বয় কমিটির সদস্য-সচিব আবদুল মান্নান চৌধুরী। এঁদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল বেআইনি সমাবেশের, রাষ্ট্রদ্রোহিতার, সরকারের বিরুদ্ধে বৈরিতা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির, জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার, জনশৃঙ্খলার ক্ষতিসাধনের ইত্যাদি ইত্যাদি।

৩০শে মার্চ হাইকোর্টে দ্বিতীয়বার জামিনের শুনানিশেষে আদালত অভিযুক্তদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। তবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন করতে তাঁদের  নির্দেশ দেন। কয়েকদিন পর তাঁরা 888sport appর অতিরিক্ত জেলা জজের আদালতে হাজিরা দেন এবং আদালত তাঁদের জামিন দেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁদের মেয়াদের একেবারে শেষে জাহানারা ইমাম ও অপর ২৩ জনের বিরুদ্ধে সরকারের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নেন। তার আগেই অবশ্য ক্যান্সারাক্রান্ত জাহানারা ইমাম যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মরদেহ দেশে নিয়ে আসতে কয়েকদিন সময় লাগে। তাঁর লাশ গ্রহণ করতে অন্যদের সঙ্গে আনিসুজ্জামানও বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। বহু মানুষ সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন শহীদ-জননীর প্রতি 888sport apk download apk latest version জানাতে। ১৯৯৪ সালের ৫ই জুলাই তিনি 888sport appয় সমাহিত হন।

‘নির্মূল কমিটি’ সম্পর্কিত ঘটনাবলির নাতিদীর্ঘ সুচারু বর্ণনা আনিসুজ্জামান তাঁর বইতে (বিপুলা পৃথিবী) তুলে ধরেছেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির আলোকে, যা নিঃসন্দেহে অনেক তথ্যপূর্ণ ও কৌতূহলোদ্দীপক।

পঁচিশ

১৯৯২ সালে সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে আনিসুজ্জামান 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নাজমা জেসমিন স্মারক বক্তৃতা ১৯৯২’ পর্যায়ে ‘উনিশ শতকের শিক্ষিত বাঙালির দৃষ্টিতে 888sport promo code’ বিষয়ে বক্তৃতা দেন। এরপর ৪ঠা অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বাংলা 888sport live football সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত ‘আবদুল করিম 888sport live footballবিশারদ স্মারক বক্তৃতা’ পর্যায়ে ‘পুরনো বাংলা 888sport live footballে 888sport promo codeসম্পর্কিত ধারণা’ বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন। এরপর ১৫ই ডিসেম্বর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক বক্তৃতা ১৯৯২’ পর্যায়ে বক্তৃতা প্রদান করেন ‘ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম’ বিষয়ে।

১৯৯৩ সালের প্রথমদিকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর দি আর্টস আনিসুজ্জামানকে আমন্ত্রণ জানায় – ইউনেস্কোর সহযোগিতায় এপ্রিল মাসে দিল্লিতে তাঁরা ‘ইন্টারফেস অফ কালচারাল আইডেনটিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (Interface of Cultural Identity and Development) বিষয়ে যে একটি আন্তর্জাতিক সভা করছে তাতে একটি 888sport live পড়তে। জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেমিনারে উন্নয়ন-বিষয়ে যেসব আলোচনা হয়েছিল তার ভিত্তিতে একটি 888sport live লিখলেন আনিসুজ্জামান; 888sport liveটির নাম দিলেন Ô Universality, Uniformity and Specificity : A view from a developing countryÕ। এপ্রিলের ১৯ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত আইজিএনসিএ’র ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আনিসুজ্জামান 888sport liveটি পড়লেন। একটি অধিবেশনে সভাপতিত্বও করলেন। এই সেমিনারে পঠিত 888sport liveগুলো পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় :  Baidyanath Saraswati (ed), Interface of Cultural Identity and Development (New Delhi, 1996)

১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে আনিসুজ্জামান কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে ‘ইন্দিরা গান্ধী স্মারক বক্তৃতা’ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন। এই স্মারক বক্তৃতা প্রবর্তিত হয় ১৯৮৫ সালে। আনিসুজ্জামানকে অনুরোধ জানানো হলো কালচারাল প্লুরালিজম বিষয়ে বলতে। ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর দুদিন বক্তৃতা দিলেন তিনি – লিখিত 888sport live। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই এশিয়াটিক সোসাইটি সেটি ছেপে বের করে এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা পুনর্মুদ্রিত হয়।

একই বছর নভেম্বরের শেষে আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের এক সম্মেলনে যোগ দিতে শ্রীলংকা গেলেন আনিসুজ্জামান, সঙ্গী ডা. এ এইচ এম সাইদুর রহমান ও অর্থনীতিবিদ ড. আবদুল গফুর। শ্রীলংকা থেকে ফিরে তিরানব্বই সালের ডিসেম্বরে আনিসুজ্জামান হায়দরাবাদ গেলেন একটি মার্কিন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত 888sport live footballের ইতিহাস-বিষয়ক এক সেমিনারে যোগ দিতে। হায়দরাবাদে পৌঁছে সেখানে তাঁর যে 888sport live পড়ার কথা ছিল সেটি লিখেছিলেন তিনি রাত জেগে। ১৯৯৩ সালে বিভিন্ন সভা, সম্মেলন ও সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্য কলকাতা, দিল্লি, শ্রীলংকা ও হায়দরাবাদে যাওয়া ছাড়াও এক সরকারি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের নেতা হয়ে মার্চে কলকাতা গিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। তখনো তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বহাল ছিল। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে বিদেশে যাচ্ছেন – এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না, ঘটার কথাও নয়। তার যে-বিবরণ আনিসুজ্জামান দিয়েছেন তা হলো : ‘প্রতিনিধিদলে ছিল হুমায়ূন আহমেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মনসুর মুসা, সেলিনা হোসেন, আরো অনেকে। ড. আশরাফ সিদ্দিকীও ছিলেন – প্রতিনিধিদলের নেতা হওয়া উচিত ছিল তাঁরই, কিন্তু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মনসুর মুসা আমার নাম প্রস্তাব করে ফেলায় আশরাফ সিদ্দিকী তা সমর্থন করে বসলেন। আমিও মজা পেলাম। তখন আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা ঝুলছে। এক মন্ত্রণালয় মামলা করছে, আরেক মন্ত্রণালয় প্রতিনিধি করে আমাকে বিদেশ পাঠাচ্ছে। সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাহানারা বেগমের উদারতার কথা স্বীকার করতে হয়।’

সেবারে আশরাফ সিদ্দিকী 888sport appর সন্তান জগদীশ বসাকের সঙ্গে আনিসুজ্জামানের পরিচয় করিয়ে দেন। জগদীশদের পৈতৃক বাড়ি ছিল 888sport appর নবাবপুরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ বিল্ডিংয়ের নিচতলায় তাঁর বইয়ের দোকান ছিল। সে-দোকানে প্রধানত পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যসহায়ক ও রেফারেন্স বই বিক্রি হতো। তাঁর স্ত্রী ড. শীলা বসাক ছিলেন লোকসংস্কৃতি-বিশেষজ্ঞ। এই যোগাযোগ অবিলম্বে পারিবারিক বন্ধুত্বে পরিণত হয় এবং সম্পর্ক এমনই নিবিড় হয়ে ওঠে যে, দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট রোডের ‘তরুবেলা’ বাড়িটিই অতঃপর কলকাতায় আনিসুজ্জামানের কলকাতার ঠিকানা হয়ে ওঠে। জগদীশ বসাকরাও 888sport appয় এলে বেশিরভাগ সময় আনিসুজ্জামানের বাড়িতে উঠতেন। ড. শীলা বসাক (জ. ১০ই সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭) ২০১৫ সালের ৮ই মার্চ লোকান্তরিত হন। তাঁর মৃত্যুর পর ২০১৭ সালের মে মাসে আনিসুজ্জামান, পবিত্র সরকার ও পল্লব সেনগুপ্তের সম্পাদনায় শীলা-লিপিমালা নামে একটি উচ্চমানসম্পন্ন স্মারকগ্রন্থ প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে। এতে পশ্চিমবঙ্গ ও 888sport appsের অনেক বিদগ্ধজন শীলা বসাকের 888sport sign up bonusচারণ করেছেন এবং তাঁর প্রকাশনা ও গবেষণা নিয়ে লিখেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সে-বছর ডিসেম্বর মাসে সেমিনারে যোগ দিতে হায়দরাবাদ যাওয়ার সময় আনিসুজ্জামানের স্ত্রী সিদ্দিকা জামান, কন্যা শুচি ও পুত্র আনন্দ তাঁর সঙ্গে কলকাতায় গিয়েছিলেন। তাঁরা কলকাতায় জগদীশ বসাকদের বাড়িতে ছিলেন এবং জগদীশ তাঁর স্ত্রী শীলা ও মেয়ে মিলিকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের পুরীতে বেড়াতে নিয়ে যান। সিদ্দিকা জামান লিখেছেন যে, এই 888sport slot gameটা দারুণ আনন্দের হয়েছিল।

ভারত সরকারের উদ্যোগে ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতায় মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ প্রতিষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল অধ্যাপক সৈয়দ নূরুল হাসানের আগ্রহে ও প্রবল সমর্থনে এর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন ড. বরুণ দে। ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় কর্মকর্তা হিসেবে তিনি নিয়ে এসেছিলেন রণবীর সমাদ্দারকে। তাঁরা দুজনেই গবেষণাকর্মে আগ্রহী ছিলেন বলে কয়েকজন তরুণ গবেষক সেখানে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া নিয়ে গবেষণাকার্যে নিযুক্ত হন। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে আনিসুজ্জামান যখন এশিয়াটিক সোসাইটিতে বক্তৃতা দিতে কলকাতায় যান, তখন বরুণ দে তাঁকে দু-মাসের জন্য তাঁদের ইনস্টিটিউটে ভিজিটিং ফেলো হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। ১৯৯৪ সালে আনিসুজ্জামান 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের স্যাবাটিক্যাল লিভ নেন এবং সে-বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ওই ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং ফেলোর দায়িত্ব পালন করেন। এই দু-মাস তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল গড়িয়াহাটের কাছে গোল পার্কে রামকৃষ্ণ মিশনের ইনস্টিটিউট অফ কালচারের অতিথি-ভবনে। আর নিয়মিত বসার ব্যবস্থা হয় বেহালায় মওলানা আজাদ ইনস্টিটিউটের দফতরে।

ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮, ১৯, ২২ ও ২৩ তারিখে আনিসুজ্জামান মওলানা আজাদ ইনস্টিটিউটে লিখিত বক্তৃতা উপস্থাপন করেন।

বক্তৃতাগুলোর শিরোনাম ছিল : A Question of Identity, Religion and Politics, Looking Back at 1971 এবং Looking Foreward to what? বক্তৃতার সারাংশ শ্রোতাদের মধ্যে বিলি করা হয়। প্রশ্নোত্তর-পর্বের আলোকে এবং রণবীর সমাদ্দারের পরামর্শে আনিসুজ্জামান পরে বক্তৃতাগুলো সামান্য পুনর্লিখন করেন। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে তাঁর বক্তৃতাগুলো ইনস্টিটিউটের পক্ষ হয়ে প্রকাশনা সংস্থা ‘নয়া উদ্যোগ’ Identity, Religion and Recent History নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে। বইটির উৎসর্গপত্রে স্বপ্ন সম্পর্কে হ্যাজলিটের একটি উক্তি তিনি উদ্ধৃত করেন : ÔWe often forget our dreams so speedily : if we cannot catch them as they are passing at the door, we never set eyes on then again.Õএ-উদ্ধৃতি সম্পর্কে প্রায় স্বগতোক্তির মতো, বিপুলা পৃথিবীতে, আনিসুজ্জামানের মন্তব্য : ‘888sport apps সম্পর্কে আমরা যে-স্বপ্ন দেখেছিলাম, তার সম্পর্কে, আমার বিশ্বাস, কথাটা খুব প্রযোজ্য।’

মার্চ মাসে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় আমন্ত্রণ জানাল সেখানকার স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সাউথ এশিয়ান ডিভিশন আয়োজিত দুদিনব্যাপী 888sport apps-সম্পর্কিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য। সেখানে আনিসুজ্জামান পড়লেন Religion and Politics in Bangladesh নামে একটি লেখা – তাঁর সরল স্বীকারোক্তি, ‘মওলানা আজাদ ইনস্টিটিউটে দেওয়া একটি বক্তৃতা খানিক অদল-বদল করে পড়ে দিয়ে এলাম।’ এই সেমিনারে 888sport appsের আরো অনেকে ছিলেন, যেমন – অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমেদ, আবুল মাল আবদুল মুহিত, রঙ্গলাল সেন, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ইমতিয়াজ আহমদ ও আবদুর রব খান। সেমিনারে পঠিত 888sport liveগুলো S. R. Chakravarty (ed.) Society, Polity and Economy of BangladeshForeign Policy of Bangladesh নামে দু-খণ্ডে নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত হয় (১৯৯৪)।

১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে কলকাতায় থাকার সময় পূর্বপরিচিত প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব মাহমুদের গুরুতর অসুস্থতার খবর পেয়ে আনিসুজ্জামান তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন পিজি [প্রেসিডেন্সি জেনারেল] হাসপাতালে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রণবীর সমাদ্দার ও আরো দু-একজন। তাঁদের কারো কাছেই শুনলেন, কল্পনা যোশীও ওই হাসপাতালে আছেন। তাঁকে দেখতে যাবেন?

কল্পনা দত্ত ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির তখনকার সাধারণ সম্পাদক পিসি যোশীকে বিয়ে করেন ১৯৪৩ সালে। তার আগে মাস্টারদা সূর্য সেনের অনুসারী হয়ে চট্টগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন এবং বিপ্লবীদের সঙ্গে কয়েকটি দুঃসাহসিক অভিযানে যোগ দেন। অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর তিনি গ্রেফতার হন। সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের সঙ্গেই তাঁর বিচার হয় এবং যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের আদেশ হয়। পরে সে-আদেশ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়। গান্ধীর চেষ্টায় ১৯৩৮ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন এবং আবার পড়ালেখা শুরু করে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। আনিসুজ্জামান ও তাঁর সঙ্গীরা যখন কল্পনা যোশীকে হাসপাতালে দেখতে যান তখন তাঁর বয়স আশি পেরিয়ে গেছে, শরীর ভেঙে পড়েছে, মানসিক বিপর্যয় ঘটেছে। পাছে পড়ে যান, তাই বিছানার চারপাশে রেলিং দেওয়া আছে। চট্টগ্রামের বিপ্লবী কল্পনা দত্তের এই শারীরিক-মানসিক অবস্থা দর্শনার্থীদের কাছে মোটেই সুখকর ছিল না।

পরদিন কবি জীবনানন্দ দাশের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর কন্যা মঞ্জুশ্রী দাশ-আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিরূপে উপস্থিত

 থাকেন আনিসুজ্জামান। তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন বরুণ দে। বরুণ দে তাঁকে জানিয়েছিলেন, জীবনানন্দ দাশ তাঁর মেসোমশায়। সেবারে কলকাতায় থাকাকালে আনিসুজ্জামানকে আরো একটি বক্তৃতা দিতে হয়েছিল। সেটি ছিল অনুষ্টুপ-আয়োজিত সমর সেন স্মারক-বক্তৃতা। ৫ই মার্চ স্টুডেন্টস হলে আয়োজিত এ-অনুষ্ঠানে প্রথমে বক্তৃতা দেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য। তাঁর বক্তৃতার বিষয় ছিল – ‘তথাকথিত বুদ্ধিজীবী : শ্রেণিচরিত্র ও রাজনীতি’। এ-বক্তৃতার পর আনিসুজ্জামান বলেন ‘বাঙালির আত্মপরিচয়ের সন্ধানে’ বিষয়ে। দুটোই ছিল অলিখিত বক্তৃতা।

১৯৯৪ সালে, ২৯ বছর পর, আনিসুজ্জামান আমেরিকায় যান যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড ও ওয়াশিংটন ডিসির প্রবাসী ও অভিবাসী 888sport appsিদের আয়োজিত নজরুল-জয়ন্তী উদ্যাপন উৎসবে যোগ দিতে। যুক্তরাষ্ট্রের নানা জায়গা থেকে শ্রোতা ও অংশগ্রহণকারীরা মেরিল্যান্ডে এসেছিলেন। সেখানকার একটি কলেজের মিলনায়তন ছিল নজরুল-জয়ন্তীর অনুষ্ঠানস্থল। সে-আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রদূত সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এবং 888sport appsের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর। আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘হুমায়ুন কবীর ভালো বললেন, তবে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের বক্তৃতা ছিল অতি চমৎকার। তিনি যে আশৈশব বাড়িতে নজরুলের কথা শুনতে শুনতে বড়ো হয়েছেন, তাঁর মাতামহ-মাতামহীর সঙ্গে নজরুলের যে কী আন্তরিক সম্পর্ক ছিল, চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুতে নজরুলের লেখা চিত্ত-নামা তাঁদের সকলকে যে কী অসাধারণ আলোড়িত করেছিল – সেসব কথা খুব হৃদয়গ্রাহী করে বললেন। কথার ফাঁকে ফাঁকে 888sport sign up bonus থেকে নজরুলের 888sport app download apkংশ উদ্ধৃত করেও তিনি সকলকে চমৎকৃত করেছিলেন।’

সেবার ইকবাল বাহার চৌধুরীর ব্যবস্থাপনায় দিনদশেক তিনি আমেরিকায় ছিলেন। যাওয়ার সময় ইকবাল বাহার চৌধুরীর জন্যে নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত নজরুল-পাণ্ডুলিপি – নজরুলের 888sport app download apkর খাতার হুবহু মুদ্রিত একটি প্রকাশনা।

১৯২৬ ও ১৯২৯ সালে কাজী নজরুল ইসলাম চট্টগ্রামে এসেছিলেন মুহম্মদ হবীবুল্লাহ বাহারের আগ্রহাতিশয্যে। দুবারই তিনি থেকেছিলেন হবীবুল্লাহ্ বাহারের মাতামহ খান বাহাদুর আবদুল আজীজের তামাকুমুণ্ডি লেনের বাড়িতে। দুবারই তিনি একটি করে রুল-টানা খাতায় বেশকিছু 888sport app download apk ও গান লিখেছিলেন। প্রথম খাতার 888sport app download apkগুলো মূলত সিন্ধু-হিল্লোল (১৯২৭) এবং দ্বিতীয় খাতার 888sport app download apkগুলো প্রধানত চক্রবাকে (১৯২৯) অন্তর্ভুক্ত হলেও মূল খাতা দুটি হবীবুল্লাহ বাহারের কাছেই ছিল। তাঁর কন্যা সেলিনা বাহার জামান সেগুলো বাংলা একাডেমিকে দেন এবং ১৯৯৪ সালে একাডেমি নজরুলের হস্তলিপিতেই নজরুল-পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করে অত্যন্ত সুচারুভাবে, 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরীর নির্দেশনায়। সেলিনা বাহার জামান বইটি সম্পাদনা করেন। উপদেশকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন আনিসুজ্জামান, মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ও আবদুল মান্নান সৈয়দ।

১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে এক মাসের জন্য প্যারিস গিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান ফ্রাঁস ভট্টাচার্যের আমন্ত্রণে। ফ্রাঁস ভট্টাচার্য ফরাসি কবি আঁর্তুর র‌্যাবোর 888sport app download apkর বইয়ের (নরকে এক ঋতু) বিখ্যাত 888sport app download apk latest versionক লোকনাথ ভট্টাচার্যের স্ত্রী। ১৯৬৯ সালে ফ্রাঁস ভট্টাচার্য-কৃত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর ফরাসি 888sport app download apk latest version লা কঁ প্ল্যাৎ দ্যু সাতিএঁ প্রকাশিত হয়।

ফ্রাঁস ভট্টাচার্য ছিলেন প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্য ভাষা ও সভ্যতা বিষয়ক ইনস্টিটিউটে (ইনালকো) বাংলা ভাষার অধ্যাপক। তিনি অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন তাঁর ইনস্টিটিউট ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিনিময়-কর্মসূচি নিয়ে একটা চুক্তি করতে। এজন্য তিনি অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় যাতে চুক্তিটি করতে সম্মত ও তৎপর হয়। কিন্তু নানা কারণে বিলম্বিত হচ্ছিল বলে তিনি 888sport appয় আসেন সেটি ত্বরান্বিত করতে। তাঁর 888sport appয় আসার পর বিনিময়-কর্মসূচির চুক্তি সই হয়। ফিরে যাওয়ার আগে তিনি ঢাবির উপাচার্যকে অনুরোধ জানান, এই চুক্তির অধীনে আনিসুজ্জামানকে এক মাসের জন্য মনোনয়ন দিতে। এর সকল আর্থিক দায় তাঁর ইনস্টিটিউট বহন করবে। আনিসুজ্জামান মনোনয়ন পেলেন।

প্যারিসে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল সোরবোনের অদূরে একটি চমৎকার অতিথিশালায়। প্যারিসে তাঁকে বক্তৃতা দিতে হবে পাঁচটি – দুটি সিএনআরএসে, একটি সোরবোনে ও দুটি ইনালকোতে। সিএনআরএসে তখনো আনোয়ার আবদেল মালেক আছেন। এর আগে প্যারিসে এসে বিবলিওথেক নাসিওনালে ওগুস্তে ওসাঁর

বাংলা-ফরাসি শব্দকোষের পাণ্ডুলিপি দেখে গিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে চন্দননগরে সংকলিত বাংলা-ফরাসি শব্দের এই সর্বপ্রথম সংকলনটির একটি ফটোকপি সংগ্রহ করেছিলেন ফ্রাঁস। প্রতি সপ্তাহান্তে তাঁর বাড়িতে বসে এর পাঠোদ্ধার করেন আনিসুজ্জামান। সেখানেই মধ্যাহ্নভোজন ও বিকেলের চা খাওয়া হয়। আনিসুজ্জামান লিখেছেন (বিপুলা পৃথিবী) : ‘শব্দকোষের কাজটিতেও মজা পাচ্ছিলাম। বাংলা শব্দের তালিকায় ফরাসি শব্দ ঢুকে গেছে – তা আমার পরিচিত নয়, ফ্রাঁস তা শনাক্ত করেন। আবার বাংলা বা ফরাসি শব্দের তালিকায় এমন শব্দ পাওয়া গেল, যা ফ্রাঁস বা আমি কেউ শনাক্ত করতে পারলাম না। পরে অভিধান ঘেঁটে ফ্রাঁস বের করলেন, ওগুলো পর্তুগিজ শব্দ।’

সোরবোনে তখন হেগিওগ্রাফি তথা সন্তজীবনী নিয়ে

যে-বক্তৃতামালা চলছিল ফ্রাঁস সেখানে আনিসুজ্জামানের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। আনিসুজ্জামান তাতে বক্তৃতা দিলেন সপ্তদশ শতাব্দীর কবি সৈয়দ সুলতানের নবী বংশ সম্পর্কে। আর সিএনআরএসে তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন 888sport appsে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে। ইনালকোতে নিজের বক্তৃতা সম্পর্কে আনিসুজ্জামান লিখেছেন (বিপুলা  পৃথিবী) : ‘ইনালকোতে বাংলা ভাষা-শিক্ষার্থীদের কাছে বক্তৃতা দেওয়া ছিল অন্য ধরনের ব্যাপার। আমি ইচ্ছে করেই বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করে প্রশ্ন ও উত্তর পর্বের জন্যে বেশি সময় রেখেছিলাম। সেটাই উপযুক্ত হয়েছিল। ছাত্রছাত্রীরা অনেক কিছু জানতে চেয়েছিল, আমি সাধ্যমতো উত্তর দিয়েছিলাম।’

প্যারিসে থাকতেই আনিসুজ্জামান তাঁর আমেরিকান বন্ধু বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্ববিদ টোনি স্টুয়ার্টের কাছ থেকে নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে দু-মাসের জন্য আমন্ত্রণ পেলেন। তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানালেন, ফেব্রুয়ারিতে (১৯৯৫) সেখানে যাবেন তিনি।

আনিসুজ্জামানের এবারের প্যারিসবাসের সমাপ্তিটা অবশ্য তেমন সুখকর হলো না। এর কারণ ছিল একটি দুর্ঘটনা। তবে তার বিবরণ ভুক্তভোগীর মুখ থেকেই শোনা ভালো। তিনি তাতে যে সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন তা হলো :

‘আমার সর্বশেষ বক্তৃতা হয়ে যাওয়ার পরে ফ্রাঁস আমাকে নিয়ে গেলেন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিদায় নিতে। সেখানে গিয়ে শুনলাম, থাইল্যান্ড থেকে আগত আরো এক অতিথি সেদিন সকালে ফিরতি টিকিট কিনতে এয়ারলাইনসের অফিসে যাচ্ছিলেন। পথে দুর্বৃত্তরা সব টাকাকড়ি ছিনিয়ে নিয়েছে তাঁর থেকে। উপস্থিত সকলে আমাকে সাবধানে থাকতে বললেন। আমি বললাম, আমি আছি আর দুদিন মাত্র, এতদিন যখন নিরাপদ ছিলাম, তখন আর দুটি দিন মনে হয় নিরাপদেই কাটিয়ে দিতে পারব।

‘সেই সন্ধ্যায় আমি একটু আয়েশ করার পরিকল্পনা করেছি। সাঁজে-এলিসের দিকে যাবো। পথের ধারে কোনো টেবিলে কিছু সময় কাটাবো। সন্ধ্যা নামার পরে ভালো একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করবো। কাজে যাচ্ছি না বলে ধীরপদে চলছি। একটা মেট্রোতে লাইন বদলাতে হবে। আমি ট্রেন থেকে নেমে ধীরে ধীরে হেঁটে এসকেলেটরে উঠেছি। প্রায় শেষ প্রান্তে যখন এসেছি, তখন পেছন থেকে ধাক্কা খেলাম। আমি লাফিয়ে সমান জায়গায় পড়লাম উপুড় হয়ে। পেছন থেকে লাফিয়ে এসে একজন আমার ঘাড়ের ওপর পড়ল। সামনে থেকে একজন এলো সাহায্য করতে – আমাকে নয়,  আমার আক্রমণকারীকে। আমি সাহায্যের জন্যে চিৎকার করতেই একটা ঘুসি খেলাম। মুহূর্তের মধ্যে আমার ট্রাউজারের পেছনের পকেট থেকে মানিব্যাগ, শার্টের বুকপকেট থেকে আইডি, কলম, মেট্রোর টিকিট কার্ড এবং জ্যাকেটের পকেট থেকে অ্যাড্রেসবুক নিয়ে তারা চলে গেল – শুধু পকেট-চিরুনিটা দিয়ে গেল।

‘ভূমিশয্যা ত্যাগ করে সিঁড়ি বেয়ে প্ল্যাটফরমে উঠলাম। অপেক্ষমাণ যাত্রীদের কাছে অনুচ্চকণ্ঠে জানতে চাইলাম, কেউ ইংরেজি বলেন কি না। একজন উত্তর দেওয়ায় তাঁকে আমার অবস্থার কথা বললাম। ট্রাউজারের পেছনের পকেটটা আক্রমণকারী ছিঁড়ে ফেলেছিল – সেটা দেখালাম। বললাম, আমি ফেরত যাবো, কিন্তু বিনা টিকিটে 888sport slot game করা কি ঠিক হবে? আমার কাছে টিকিটের মূল্য সাত ফ্রাঁ কেন, একটি ফ্রাঁও নেই। ভদ্রলোক আমাকে দশ ফ্রাঁ দিলেন। জানতে চাইলাম, কোথায় তাঁর অর্থ ফেরত দেবো? তিনি বললেন, ফেরত দিতে হবে না, এমন আমারও ঘটতে পারতো। ভিক্ষার টাকায় টিকিট করে ঘরে ফিরে এসে ফ্রাঁসকে ফোন করলাম। তাঁর কাছে খবর পেয়ে প্রলয় দত্ত এলো। আমাকে নিয়ে কাছাকাছি একটা ক্যাফেতে সে অনেকখানি সময় কাটালো। স্নায়বিক আঘাতে ভুগি কি না সেটাই বোধহয় তার দুশ্চিন্তা।

‘পরদিন আনোয়ার আবদেল মালেকের বাড়িতে আমার বিদায়ী নৈশভোজ। তাঁকে বললাম ঘটনাটা। তিনি জানতে চাইলেন, আক্রমণকারীরা দেখতে কেমন। বললাম, সামান্য যা দেখেছি, তাতে তো আরব মনে হলো।

‘তা শুনে তাঁর ফরাসি বান্ধবী খুব একচোট হাসলেন।’

প্যারিস থেকে কোচে লন্ডন গিয়ে, সেখানে কয়েকদিন থেকে, দেশে ফিরে এসেছিলেন আনিসুজ্জামান।

১৯৯৫-এর ফেব্রুয়ারিতে নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলো (ফেব্রুয়ারি-মে) হিসেবে আমেরিকায় গিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। এর পেছনে প্রধানত ছিল তাঁর বন্ধু টোনি কে. স্টুয়ার্টের প্রয়াস। টোনি তখন নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। তাঁর বিশেষ আগ্রহ ও অধ্যয়ন-অধ্যাপনার ক্ষেত্র গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম ও বাংলার লৌকিক ধর্ম। তিনি তখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এডওয়ার্ড সি. ডিমক জুনিয়রের সঙ্গে মিলে কৃষ্ণদাস কবিরাজের শ্রী চৈতন্যচরিতামৃত 888sport app download apk latest version করছিলেন ইংরেজিতে। টোনিই আনিসুজ্জামানের জন্যে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ 888sport apps স্টাডিজের কাছে প্রস্তাব দিয়ে অর্থ বরাদ্দ করিয়েছিলেন এবং তাঁর নিজের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমন্ত্রণপত্রের ব্যবস্থা করেছিলেন।

নর্থ ক্যালোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির তিনটি ক্যাম্পাস – রলে, ডিউক ও চ্যাপেল – ছিল। একটার সঙ্গে যুক্ত হলে বাকি দুটোর সকল সুবিধে ভোগ করা যায়। আন্তঃক্যাম্পাস বাসের ব্যবস্থাও আছে। আনিসুজ্জামান যুক্ত হয়েছিলেন রলের সঙ্গে। তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয় অ্যাভেন্ট ফেরি কমপ্লেক্স নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসনে, যা মূলত ছিল ছাত্রছাত্রীদেরই আবাস। 888sport appsের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রলের 888sport apps সমিতি ২৫শে মার্চ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেখানে আনিসুজ্জামানও বক্তৃতা করলেন। রলেতে তাঁর কাজের চাপ বেশি ছিল না। সেখানে একটি এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বক্তৃতা; আর দুটি সম্মেলনে যোগদান। এপ্রিলে প্রথম বক্তৃতা দিলেন ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ায় – বিষয় : বাংলা 888sport live footballে 888sport promo code। এরপর বক্তৃতা দিয়েছিলেন কলাম্বিয়া ও ডিউক ইউনিভার্সিটিতে। ডিউকে অনুষ্ঠিত হয় একটি সেমিনার (২০-২২শে এপ্রিল)। সেখানে আনিসুজ্জামানের বক্তৃতাটা দীর্ঘ হয়ে গিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে না পারায় বাড়তি সময়ে শুধু দ্রুত পড়ে গেলেন। মাসের শেষে শিকাগোয় যোগ দিলেন বেঙ্গল স্টাডিজ সম্মেলনে। সেখানে কোনো লেখা পড়লেন না, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বললেন। অনেক পরে এক মার্কিন বিদ্বজ্জন তাঁকে বলেছিলেন, সেই বক্তৃতা থেকে তিনি তাঁর গবেষণার বিষয়ের সন্ধান পান।

ছাব্বিশ

১৯৯৫ সালের ২৫শে আগস্ট আনিসুজ্জামানের ছোটো মেয়ে সুচির বিয়ে হয়ে যায়। পাত্র 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর বড়ো ছেলে তাসকিন হায়দার চৌধুরী ওরফে সুমন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় আবাসে আনিসুজ্জামানরা যে-ফ্ল্যাটে

থাকতেন তার পাশের ফ্ল্যাটটিতে থাকতেন শহীদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর পরিবার। আনিসুজ্জামান 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্র ছিলেন। দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকার ফলে উভয় পরিবারের মধ্যে সহজ মেলামেশার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সুমন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করে। সুচিও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রী ছিল। সুমন ও সুচি দুজন দুজনকে পছন্দ করত। সেই সূত্রে উভয় পরিবারের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কথাবার্তার পর সুচির এমএ পরীক্ষা হয়ে গেলে প্রত্যাশিত বিবাহ সুসম্পন্ন হয়।

এক্ষণে অন্য কয়েকটি প্রসঙ্গ বিবৃত করা প্রয়োজন বোধ হয়, যেগুলো বিগত কয়েক বছরে ঘটেছিল। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ১৯৯২ সালের ৪ঠা অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বাংলা 888sport live football সমিতি-আয়োজিত ‘আবদুল করিম 888sport live footballবিশারদ স্মারক বক্তৃতা’ পর্যায়ে ‘পুরোনো বাংলা 888sport live footballে 888sport promo code সম্পর্কিত ধারণা’ বিষয়ে বক্তৃতাপ্রদান। একই বছরের ১৫ই ডিসেম্বর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক বক্তৃতা ১৯৯২’ পর্যায়ে ‘ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম’ বিষয়ে বক্তৃতা দেন আনিসুজ্জামান।

১৯৯৪ সালের ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ শ্রুতি-প্রকাশনার জন্য

যৌথভাবে ‘আনন্দ 888sport app download bd’ লাভ করেন আনিসুজ্জামান ও নরেন বিশ্বাস। এই শ্রুতি-প্রকাশনার ইতিহাস সম্পর্কে বর্তমানে অনেকেই সম্যকভাবে অবহিত নন বলেই ধারণা করা যায়। তাই আনিসুজ্জামানের বিপুলা পৃথিবী থেকে এর প্রাসঙ্গিক কিছুটা অংশ উদ্ধৃত করাই উপযুক্ত হবে বলে মনে হয়। আনিসুজ্জামান লিখেছেন :

‘888sport app বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের উদ্যোগে ১৯৬৩ সালে আমরা যে বাংলা ভাষা ও 888sport live football সপ্তাহ উদ্যাপন করেছিলাম, তা বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। বিশেষ করে হাজার বছরের বাংলা 888sport live footballের নির্বাচিত অংশের পাঠ, অভিনয় ও গান সকলে খুব উপভোগ করেছিলেন। বেতারে-টেলিভিশনে তখনই এর খানিকটা স্বতন্ত্রভাবে প্রচারিত হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে নানা বিদ্যায়তনে এবং সাধারণ মঞ্চে হাজার বছরের বাংলা 888sport app download apk বা গানের অনুষ্ঠান করার একটা ঝোঁক দেখা দিয়েছিল।

‘১৯৬৩ সালে নরেন বিশ্বাস ছিল আমাদের ছাত্র এবং পূর্বোক্ত অনুষ্ঠানের এক সফল অংশগ্রহণকারী। পুরো আয়োজনটা তার মনে গভীর রেখাপাত করে এবং সেও নানা সময়ে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আশির দশকের শেষে নরেন স্থির করে যে, হাজার বছরের বাংলা 888sport app download apk ও গান, গদ্য ও নাটকের অডিও ক্যাসেটের একটা সিরিজ প্রকাশ করবে ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ নাম দিয়ে। এই পরিকল্পনায় সে আমাকে যুক্ত করে উপদেষ্টা হিসেবে। ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ নামটি আমার পছন্দ ছিল না, কিন্তু ওই নামের প্রতি নরেনের দুর্বলতা ছিল এবং সে নামটি প্রচারও করে ফেলেছিল, সুতরাং তা মেনে নিতে হয়। আমার কাজ ছিল রচনা নির্বাচন করা, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখবন্ধস্বরূপ কিছু বলা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নরেনের নির্বন্ধাতিশয্যে পাঠ করা। প্রথমে গোলাম মোর্শেদ ও আজিজুল হক চৌধুরী মানিক আর্থিক সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন, পরে এই কাজের অংশীদার হন ড. নারায়ণ বিশ্বাস ও ড. আখতার বানু। নরেন নির্দেশনা দেয়, আশরাফুল আলম আগাগোড়া

 গ্রন্থনার কাজটি করেন। দেশের বিশিষ্ট 888sport live chatী ও শিক্ষকেরা এতে অংশ নেন। শেষ পর্যন্ত বোধহয় ১৪টি ক্যাসেট প্রকাশ পেয়েছিল।

‘১৯৯৩ সালে কলকাতায় গৌরকিশোর ঘোষ একদিন আমার কাছে ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ সম্বন্ধে জানতে চান এবং এর কয়েকটি সেট কিনে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। তখন পর্যন্ত বোধহয় আটটি ক্যাসেট বের হয়েছিল। পরেরবার আমি যখন কলকাতায় যাই, তখন তাঁকে কয়েকটি সেট উপহারস্বরূপ দিয়ে আসি। অচিরেই বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে পাই যে, আমাদের এই প্রয়াস আনন্দ 888sport app download bd লাভ করতে যাচ্ছে।’

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী ‘আনন্দ 888sport app download bd’ প্রবর্তন করেন ১৯৫৮ সালে। তখন তাঁরা দুটি 888sport app download bd প্রদানের সূচনা করেন – একটি আনন্দবাজার পত্রিকার প্রয়াত সম্পাদক প্রফুল্লকুমার সরকারের নামে এবং অপরটি এই পত্রিকাগোষ্ঠীর পত্রিকাগুলোর সূচনাকারী ও বাংলা মুদ্রণ888sport live chatে লাইনো হরফ প্রযুক্তির প্রবর্তক সুরেশচন্দ্র মজুমদারের নামে। 888sport app download bd-দুটির প্রথম প্রাপক ছিলেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় (বন্দ্যোপাধ্যায় নন) ও সমরেশ বসু। সৃষ্টিশীল 888sport live footballের পাশাপাশি মননশীল 888sport live footballও তাঁদের বিবেচনায় ছিল – এ থেকেই তা স্পষ্ট হয়। এরপর আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অশোককুমার সরকারের মৃত্যুর পর এই পত্রিকাগোষ্ঠী ১৯৮৪ সালে তাঁর 888sport sign up bonusযুক্ত তৃতীয় একটি ‘আনন্দ 888sport app download bd’ প্রদানেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এই 888sport app download bdের প্রথম প্রাপক ছিলেন সুকুমার সেন, সাগরময় ঘোষ ও বিমল মিত্র। ১৯৯৪ সালে 888sport app download bdটি যৌথভাবে নরেন বিশ্বাস ও আনিসুজ্জামানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকার’ শ্রুতি-প্রকাশনার জন্য। সে-বছর সুরেশচন্দ্র 888sport sign up bonus আনন্দ 888sport app download bd লাভ করেন অন্নদাশঙ্কর রায় এবং প্রফুল্ল কুমার-888sport sign up bonus আনন্দ 888sport app download bd পান কবি শামসুর রাহমান যথাক্রমে তাঁদের 888sport liveগ্রন্থ 888sport liveসমগ্র এবং আকাশ আসবে নেমে কাব্যগ্রন্থের জন্যে। চৌরঙ্গীর গ্র্যান্ড হোটেলের বলরুমে আয়োজিত 888sport app download bd-প্রদান অনুষ্ঠানটির তারিখ ছিল ৩০শে এপ্রিল ১৯৯৪। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিবনারায়ণ রায়। শংসাবচন পাঠ করেন সাগরময় ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এতে বলা হয়, ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকারে’ পরিবেশিত ‘শ্রুতি-সংস্কৃতির উপদেশনার জন্য’ আনিসুজ্জামানকে এবং ‘সমগ্র প্রকল্পের নির্বাহী নায়ক’ হিসেবে ‘বাংলাভাষী মানুষের হাতে এমন একটি ঐতিহ্যময়, অথচ আধুনিক সাংস্কৃতিক উপহার তুলে দেওয়ার জন্য’ নরেন বিশ্বাসকে সম্মানিত করা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শামসুর রাহমান, আনিসুজ্জামান ও নরেন বিশ্বাসের পত্নীত্রয়ও কলকাতা যাত্রায় তাঁদের সঙ্গী হন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘ঐতিহ্যের অঙ্গীকারের আরো কয়েকটি ক্যাসেট প্রকাশ করে নরেন বিশ্বাসেরও মৃত্যু হয় ১৯৯৮ সালে। তার মৃত্যুকালে নাটকের দুটি ক্যাসেট প্রক্রিয়াধীন ছিল – সে দুটি প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য তার আগে থেকেই আমি তাকে বলছিলাম যে, আমাদের প্রকল্পের পূর্ণ যতি টানা দরকার, কেননা ভালো কিছুরও শেষ আছে। …’

১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি, 888sport app থেকে আনিসুজ্জামান-সম্পাদিত শহীদুল্লাহ্ রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় এক বছর পর, অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে।

এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক মনে হয়, এর আগে আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় মুনীর চৌধুরী রচনাবলীর চারটি খণ্ড বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়। এই চার খণ্ডের মধ্যে প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালের জুন মাসে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮৪ সালে এবং চতুর্থ খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৮৬ সালে।

এদিকে, ১৯৯৪-এর ১৫ই জুলাই আনিসুজ্জামানের শ্বশুর One Man’s Agony-এর লেখক আবদুল ওয়াহাব মারা যান। সিদ্দিকা জামান লিখেছেন যে, তাঁর পিতা সারাজীবন পরিমিত ও সময়মতো আহার করে মোটামুটি সুস্থ ছিলেন। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বার্ধক্যজনিত কিছু রোগ ও অ্যালঝেইমারে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন জটিল অসুস্থতায় ভোগার পর ৭৮ বছর বয়সে তিনি দেহরক্ষা করেন।

প্রসঙ্গক্রমে মনে হচ্ছে, আনিসুজ্জামান ইতিপূর্বে মুনীর চৌধুরী নামে শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর যে অসাধারণ হৃদয়গ্রাহী একটি জীবনী লিখেছিলেন সেটির কথা যথাস্থানে বলা হয়ে ওঠেনি। আনিসুজ্জামানের মুনীর চৌধুরী বইটি প্রকাশ করেছিল থিয়েটার, ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। প্রকাশিত হবার অল্পকালের মধ্যে বইটি পড়া শেষ করার পর মনে হয়েছিল, সেটি তিনি কলম দিয়ে লেখেননি, লিখেছিলেন হৃদয় দিয়ে। জীবনীগ্রন্থ এমনও হয়!

সাতাশ

দেশে স্বৈরাচারের অবসান ঘটলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা স্বচ্ছন্দগতি না পাওয়ায় সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে সহাবস্থানের অভাব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠতে থাকে। ১৯৯৩ সাল থেকেই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে থাকে। ইতোমধ্যে ১৯৯৪ সালের ২০শে মার্চে মাগুরায় অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থী কাজী সলিমুল হক কামাল নির্বাচিত হলে এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে সকল বিরোধীদল। এরপর সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি প্রবলতর হয়ে ওঠে। বিরোধীদল সংসদ বর্জন করে, বিরোধীদলীয় নেত্রী সরকারি বাসভবন ছেড়ে দেন এবং ডিসেম্বর মাসে সকল বিরোধীদলীয় সংসদ-সদস্য একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।

এই সময়কার পরিস্থিতি ও ১লা ফেব্রুয়ারি (১৯৯৬) বাংলা একাডেমিতে 888sport cricket BPL rateের বইমেলা উদ্বোধন উপলক্ষে যেসব ঘটনা ঘটে বিপুলা পৃথিবীতে আনিসুজ্জামান তাঁর ব্যক্তিগত উপলব্ধিতে তার যে-বর্ণনা দিয়েছেন তা আমাদের বি888sport app download for androidপ্রিয় মনকে পুনরায় 888sport app download for androidপ্রবণ করে তুলবে বলে মনে হয়। আনিসুজ্জামান লিখেছেন :

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দলের আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠেছে। একাদিক্রমে ৩৬ ঘণ্টা কী তারও বেশি সময় ধরে হরতাল চলছে – জনজীবন বিপর্যস্ত। সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা  ফেব্রুয়ারি মাসে। জানুয়ারি মাসেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা। মাঠে রয়েছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী, গুরুত্বহীন রাজনৈতিক দলের কিছু প্রার্থী, কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই বিক্ষোভ হচ্ছে, পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত ঘটছে। এরই মধ্যে, ১ ফেব্রুয়ারি 888sport cricket BPL rateের বইমেলা উদ্বোধন করতে খালেদা জিয়া বাংলা একাডেমিতে আসবেন বলে ঘোষিত হলো। বিশ্ববিদ্যালয়-এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের প্রতিবাদে ছাত্ররা প্রবল বিক্ষোভ করে। এতে সরকারের রোষ ধাবিত হয় মূলত জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্রদের প্রতি। ওই হলে প্রবেশ করে পুলিশ দরজা-জানালা আসবাবপত্র ভাঙে, ছাত্রদের প্রহার করে, তাদের বইখাতা নষ্ট করে, অনেককে ধরে নিয়ে যায়। ঘটনার পরে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকেই জগন্নাথ হলের অবস্থা নিজের চোখে দেখতে যাই। যা দেখি এবং ছাত্রদের মুখ থেকে যা শুনি তাতে আমরা প্রত্যেকেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে আসি। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমরা এই ঘটনার প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিই। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে মিছিল করে আমরা বাংলা একাডেমির দিকে যেতে চাই ১ ফেব্রুয়ারিতে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কাছাকাছি পৌঁছোতেই পুলিশ আমাদের গতিরোধ করে। আমরা যেখানে ছিলাম, সেখানেই রাস্তার ওপর বসে পড়ি। তাতে কোনো কাজ হয় না। আমরা বসে, পুলিশ দাঁড়িয়ে – এমন সহাবস্থান অনেকক্ষণ চলে। শেষ পর্যন্ত আমরা রণে ভঙ্গ দিয়ে কলাভবনে ফিরে আসি। পরে আমরা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করি বইমেলা-উপলক্ষে আয়োজিত 888sport live footballসভা বর্জন করে।’

কূটনীতিকমহল ও দেশের বেশকিছু বিশিষ্টজনের নানারকম প্রয়াস সত্ত্বেও সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যে কোনো সমঝোতা হলো না। ইতোমধ্যে ১৫ই ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল। কিন্তু তাতে চলমান অচলাবস্থার অবসান ঘটল না। বরং সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার মনোভাব সচিবালয়েও ছড়িয়ে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে আনিসুজ্জামানের একটি মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়। সে-বিবরণ আনিসুজ্জামানের কথাতেই শোনা যাক এবং অবশ্যই বিপুলা পৃথিবীর পৃষ্ঠা থেকে। তিনি লিখেছেন : ‘এই সময়ে বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো এক সাংবাদিক আমার মন্তব্য চান। আমি বলি, এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়, তবে সংকট উত্তরণের একটা সুযোগও এতে দেখা দিয়েছে। ষষ্ঠ সংসদ যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন পাশ করে, তাহলে সেই অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যায় এবং তার অধীনে নতুন করে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। সংবাদপত্রে আমার বক্তব্য তেমন গুরুত্বের সঙ্গে মুদ্রিত হয়নি, কিন্তু আতাউস সামাদ খুব গুরুত্ব সহকারে তা বিবিসিতে পাঠান এবং বিবিসির বাংলা সংবাদেও তা খুব প্রাধান্য লাভ করে। কেউ কেউ অবশ্য এতে খুব ক্ষুব্ধ হন।’

যাঁরা আনিসুজ্জামানের এই বক্তব্যে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তাঁদের বক্তব্য ছিল, এতে ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও ষষ্ঠ সংসদের অস্তিত্বকে বৈধতা দেওয়া হবে। তাঁকে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করেন একটি দৈনিকের সম্পাদক। তিনি স্বনামে কলাম লিখে ষষ্ঠ সংসদকে বৈধতাদানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের কূটকৌশলের নিন্দা জ্ঞাপন করেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে অবশ্য আনিসুজ্জামানের সেই নিরীহ উক্তিরই প্রতিফলন ঘটে বলে মনে হয়।

এদিকে আন্দোলনের মুখে ৩০শে মার্চ খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগ করে। তাঁর পরামর্শ-অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন এবং ষষ্ঠ সংসদে পাশ-করা আইন (সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী) অনুযায়ী দেশের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে আহ্বান জানান।

বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্ত্বাবধানে ১২ই জুন জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে আওয়ামী লীগ একক 888sport free betগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আর জুন মাসের শেষে, সম্ভবত তাঁদের শেষ কার্যদিবসে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাহানারা ইমাম ও অপর ২৩ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা প্রত্যাহার করে নেন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘সংবাদপত্রে পড়ার আগে এ-বিষয়ে আমি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি। ফৌজদারি অভিযোগ মাথায় নিয়ে চলা যে কী দায়, ততদিনে তা বেশ বুঝতে পেরেছি। সুতরাং প্রধান উপদেষ্টার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা বোধ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে জেনে গেছি, সকলে এটা ভালোভাবে নেয়নি; কেউ কেউ মনে করেছেন, এতে তাঁর ব্যক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক পক্ষপাত প্রকাশ পেয়েছে, হয়তো বা দুইই।’

সে-বছরই আগস্ট মাসে বার্লিনে অনুষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে জার্মানি গিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। তবে সে-বিষয়ে যাওয়ার আগে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন মনে হয়। এবং অবশ্যই সে-তথ্য মিসেস আনিসুজ্জামান তথা সিদ্দিকা জামানের রচনায় অধিকতর গ্রহণযোগ্যরূপে পাওয়া যাবে। তিনি লিখেছেন (আমার বিপুলা পৃথিবী) : ‘নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে আনন্দ অনার্স, মাস্টার্স পাশ করল। দুটোতেই ফার্স্ট ক্লাস পেল। মাস্টার্স পাশ করার পর আনন্দ ও তার বন্ধুরা চাকরির সন্ধানে লেগে গেল। দু-তিনজন চাকরিও শুরু করে দিল। এর মধ্যে আইবিএ-তে এমবিএ কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা দেবার সিদ্ধান্ত নিল তারা। উদ্দেশ্য, এবার ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান নেওয়া, চাকরির পরবর্তী কোনো এক সময়ে ঠিকমতো প্রস্তুতি নেওয়া ও ভর্তি হওয়া। ভর্তি পরীক্ষার ফল বের হলে দেখা গেল আনন্দ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ও তারপরও চাকরি করার পক্ষে মত দিল। আনিসুজ্জামান ওকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার পক্ষেই বোঝাল। আনন্দ চাকরির পাশাপাশি সান্ধ্যকালীন এমবিএতে ক্লাস করার প্রস্তাব দিল। এই শুনে আনিসুজ্জামান বলল, এভাবে তোমার অনেক বেশি কষ্ট হবে আর আমরা যেহেতু এখনো অবসরে যাইনি, সংসার চালাতে সক্ষম – তাই তোমার এত বোঝা নেবার দরকার নেই। শেষ পর্যন্ত আনন্দ আইবিএ-তে ভর্তি হলো।’

১৯৯৯ সালে ‘আনন্দ সিমেন্স থেকে ইন্টার্নশিপ শেষ করে এমবিএ পাশ করল। জুলাই মাসের ১ তারিখ যোগ দিল গ্রামীণফোনে। মোবাইল ফোন ও কোম্পানি – দুটোই তখন বেশ অপরিচিত ছিল। খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই সেখানে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নিল।’ এসব অবশ্য আরো অনেক পরের কথা।

রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা প্রত্যাহৃত হওয়ায় মাথা ও মনের ওপর থেকে চাপ সরে যাওয়ায় বেশ প্রফুল্লচিত্তেই আগস্টের (১৯৯৬) গোড়ার দিকে জার্মানি গেলেন আনিসুজ্জামান বার্লিনে আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে দুদিনের আলোচনা সভায় যোগ দিতে। তাঁর সঙ্গী হলেন অপর আমন্ত্রিত রবীন্দ্রসাধক সন্জীদা খাতুন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে গিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য দিলীপকুমার সিংহ, বিশ্বভারতীর দুই প্রাক্তন উপাচার্য নিমাইসাধন বসু ও অমøান দত্ত এবং বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ছাত্র অমিতাভ চৌধুরী। বার্লিনে মামুন নামে এক 888sport appsি তরুণের বাড়িতে সন্জীদা খাতুন ও আনিসুজ্জামানের থাকার ব্যবস্থা হয়। এবারের বার্লিন সফরের এবং সেখানে যাঁদের সঙ্গে তাঁর পরিচয়, সাক্ষাৎ ও আলাপ হয়েছে তার বিবরণ, স্বাভাবিকভাবেই, আনিসুজ্জামান তাঁর  বইয়ে (বিপুলা পৃথিবী) দিয়েছেন। কথায় কথায় অমিতাভ চৌধুরী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে চিনতেন কি না। আনিসুজ্জামান সে-প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, জগন্নাথ কলেজ ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি তাঁর ছাত্র ছিলেন, তাছাড়া তাঁর বড়ো ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে আনিসুজ্জামানের ছোটো মেয়ের। ‘অমিতাভ চৌধুরী এক ঝটকায় আপনি থেকে তুমিতে নেমে এলেন, ‘তাহলে তো তুমি আমার বেয়াই।’

অনতিবিলম্বে দিলীপ সিংহকে আক্রমণ : ‘দিলীপ, তুমি আমার বেয়াইকে বিশ্বভারতীতে নিয়ে আসছ না কেন?’ দিলীপ সিংহ হতভম্ব, কে যে অমিতাভ চৌধুরীর বেয়াই, তা তিনি ঠাহর করে উঠতে পারেন না। পরদিন আবার দিলীপ সিংহের প্রতি অমিতাভ চৌধুরী : ‘এই যে দিলীপ, আমার বেয়াইকে বিশ্বভারতীতে আনছ কবে? নিরুপায় উপাচার্য আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় আনবো। আপনি অনুগ্রহ করে আপনার একটি সিভি আমাকে পাঠিয়ে দেবেন? আমি বলি, ‘অবশ্যই’, যদিও জানি পাঠাবো না, কেননা এমন কথার ভিত্তিতে কোনো উপাচার্যকে জীবনবৃত্তান্ত পাঠানো তাঁকে বিব্রত করা এবং নিজে বিব্রত হওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।’

বার্লিনে অনুষ্ঠিত আলোচনার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। আট-দশজন জার্মান বিদ্বান 888sport live লিখে এনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে। নিমাইসাধন বসু, দিলীপ সিংহ, সন্জীদা খাতুন এবং আনিসুজ্জামানও লিখিত বক্তব্য নিয়ে গিয়েছিলেন। আনিসুজ্জামানের সদ্য-লেখা 888sport liveটির নাম ছিল ‘টেগোর অ্যান্ড দি ওয়েস্ট’।

বার্লিন থেকে আনিসুজ্জামান গিয়েছিলেন কোলন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী তাঁর ছাত্র আবদুল্লাহ আল ফারুক তখন জার্মান বেতার ডয়েটশেভেলের বাংলা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। কোলন স্টেশনে তিনি আনিসুজ্জামানকে নিতে এসেছিলেন। তাঁর বাসাতেই উঠেছিলেন আনিসুজ্জামান। ফারুকের স্ত্রী মালা হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। ডয়েটশেভেলেতে একটা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হলো আনিসুজ্জামানের। পরদিন ট্রেনে চেপে বন থেকে লন্ডন গেলেন তিনি। লন্ডনে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন তাঁর তালিকাগ্রন্থটি কখন বের হবে তার খোঁজ নিতে। অতঃপর এরোফ্লোতের বিমানে লন্ডন থেকে মস্কো-দিল্লি-কলকাতা হয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন দেশে।