আনিসুজ্জামান-জীবনকথা

আটাশ

সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘888sport apps বেতার ও 888sport apps টেলিভিশনে সৃজনশীলতা, গতিময়তা, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলা আনয়ন এবং এ দুটি প্রতিষ্ঠানের অধিকতর স্বায়ত্তশাসন প্রদানের নীতিমালা-সংক্রান্ত বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্য’ অবসরপ্রাপ্ত সচিব, সংগীত888sport live chatী ও ক্রীড়াবিদ মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্কে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে একটি কমিশন গঠন করে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (জালালউদ্দিন আহামেদ) এর সদস্য-সচিব নিযুক্ত হন। পদাধিকারবলে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে কমিশনের সদস্য নিযুক্ত হন ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক, ড. আনিসুজ্জামান, আসাদুজ্জামান নূর, সৈয়দ হাসান ইমাম, জামালউদ্দীন হোসেন, কে জি মুস্তাফা, কলিম শরাফী এবং রামেন্দু মজুমদার।

অন্য কোথাও প্রচারমাধ্যমের স্বায়ত্তশাসন কীভাবে কার্যকর হয়েছে সরেজমিনে তা দেখার জন্যে কমিশনের সদস্যেরা চারটি দলে ভাগ হয়ে গেলেন ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনসে। আনিসুজ্জামানও ফিলিপাইনগামী দলে ছিলেন। ১৯৯৭ সালের ১লা জুন 888sport app থেকে রওনা দিয়ে ৮ই জুন ফিরে এলেন 888sport appয়। তারপর বিভিন্ন দলের অভিজ্ঞতাবিনিময়, আলোচনা ও বিবিধ প্রসঙ্গ বিবেচনার পর রিপোর্ট লেখা হলো। পরিমার্জনাও করা হলো বিভিন্ন পর্যায়ে। অবশেষে ছাপা হলো এবং মুদ্রিত রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিলেন কমিশন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘রিপোর্টে আমরা একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন-প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলাম। এর চেয়ারম্যান ও সদস্যেরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। এই কমিশন জবাবদিহি করবে তথ্য সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সংসদের কাছে। মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্তৃত্ব এর ওপর থাকবে না। বেতার ও টেলিভিশন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানরূপে এর তত্ত্বাবধানে কাজ করবে। সেখানেও মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ থাকবে না।

‘করদাতার টাকা যেখানে খরচ হবে, করদাতাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সেখানে নাক গলাবেন না – এমন একটা পরিস্থিতি অনেকের পছন্দ হয়নি। তাঁরা বেতার-টেলিভিশনকে স্বায়ত্তশাসন দিতে চেয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব বজায় রেখে।

‘ওই রিপোর্ট সম্পর্কে এবং বেতার-টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে তারপর আমরা আর কিছু শুনিনি।’ (বিপুলা পৃথিবী)

১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় 888sport appsের বিজয়লাভের পঁচিশ বছরপূর্তি উপলক্ষে ড. রওনক জাহান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আন্তর্জাতিক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। এতে যোগ দিতে আরো কয়েকজনের সঙ্গে আনিসুজ্জামানও যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেমিনারে পঠিত 888sport liveগুলি পরে রওনক জাহানের সম্পাদনায় Bangladesh Ñ Promise and Performance নামে 888sport app থেকে প্রকাশিত হয়েছিল (ইউপিএল, ২০০০)।

এই সফরেই আনিসুজ্জামান কলাম্বিয়া থেকে সিয়াটলে গিয়েছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনে বক্তৃতা দিতে ড. ক্যারল সলোমনের আমন্ত্রণে। ড. ক্যারল তখন পেনসিলভানিয়া ছেড়ে সিয়াটলে চলে এসেছিলেন তাঁর স্বামী ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের ইতিহাসের অধ্যাপক রিচার্ড সলোমনের কাছে। সেখানে নিজের লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। নতুন 888sport live লেখার সময় ও সুযোগ ছিল না বলে ড. ক্যারলের পরামর্শে আনিসুজ্জামান কলাম্বিয়ায় পঠিত 888sport liveটিই আবার পড়লেন। সিয়াটলের শ্রোতারা তো কলাম্বিয়ায় ছিলেন না!

কলাম্বিয়ায় সেমিনারের বাইরে আনিসুজ্জামানের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সুগত বসু (সুভাষ বসুর দাদা রাজনীতিবিদ শরৎচন্দ্র বসুর পৌত্র ও ডা. শিশিরকুমার বসুর পুত্র) এবং তাঁর পাকিস্তানি বান্ধবী ও পণ্ডিত আয়েশা জালালের সঙ্গে। সুগত বসু আনিসুজ্জামানের পূর্বপরিচিত। সেখানেই তিনি আনিসুজ্জামানকে বলে রেখেছিলেন, ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে কলকাতায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মশতবার্ষিক অনুষ্ঠানে তাঁকে আসতে হবে। লিখিত 888sport live উপস্থাপন আবশ্যক নয়, মুখে বললেও চলবে। 888sport appয় ফিরে আসার পরপরই নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পেলেন ড. শিশিরকুমার বসুর স্বাক্ষরে। আনিসুজ্জামান যথাসময়ে সুভাষ-জন্মশতবার্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এবং ‘আমাদের কালের পরিপ্রেক্ষিত থেকে’ সুভাষ বসু সম্পর্কে ‘দু-চার কথা’ বলেছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে সুভাষের সহপাঠী কাজী আবদুল ওদুদের ‘সুভাষচন্দ্র’ 888sport app download apkটির কথাও উল্লেখ করেছিলেন। পরবর্তীকালে শিশির বসুর অনুরোধে 888sport appয় ফিরে 888sport app download apkটি তাঁকে পাঠিয়ে দেন।

এই অনুষ্ঠানকালে জগজিৎ সিং অরোরার সঙ্গে ‘খুব সুসম্পর্ক’ হয়ে গিয়েছিল আনিসুজ্জামানের। অনুষ্ঠানের সকল অংশগ্রহণকারীকে ক্যালকাটা ক্লাবে নৈশভোজে আপ্যায়িত করেছিলেন শিশির বসু। সে-প্রসঙ্গের উল্লেখ রয়েছে বিপুলা পৃথিবীতে – ‘পুরো সময়টা জেনারেল অরোরা এবং আমি এক সোফায় বসে গল্প করে কাটিয়েছিলাম।’

এর কয়েক মাস পরে আনিসুজ্জামান যখন দিল্লি যান তখন জেনারেল অরোরার দিল্লির ফ্রেন্ডস কলোনি ইস্ট-এর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছিলেন এবং নানা বিষয়ে কথা বলেছিলেন। ‘১৯৭১-এর পর তিনি আর 888sport appsে যাননি। ১৯৯৬ সালের বিজয় দিবস বেশ জমকালো করে পালিত হয়েছে, অনেক বিদেশি অতিথি তাতে যোগ দিয়েছিলেন – এসব কথা তিনি শুনেছেন। 888sport appsে যে তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিমন্ত্রিত হননি, তার জন্যে একটু দুঃখবোধ হয়তো তাঁর মধ্যে ছিল, কিন্তু জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি যেমন এ-ধরনের বোধ নিজের মধ্যেই রেখে দেন তিনিও সম্ভবত তাই করেছিলেন।’

সম্ভবত বছরখানেক পর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা ভাবছিলেন জাদুঘরের ট্রাস্টিরা। তাঁদের অনুরোধে 888sport app থেকে তাঁকে ফোন করেন আনিসুজ্জামান। সে-অনুরোধ রক্ষা করে জেনারেল অরোরা 888sport appয় আসেন ১৯৯৮ সালের ১৯শে মার্চ। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে অন্যদের সঙ্গে আনিসুজ্জামানও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। ২১ তারিখে জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিক বক্তৃতা। সেখানে রেহমান সোবহান সভাপতি, আনিসুজ্জামান স্বাগত ভাষক এবং জেনারেল অরোরা মূল বক্তা। অনুষ্ঠানস্থল লোকে লোকারণ্য। সেদিন জেনারেল অরোরা যা বলেছিলেন তা 888sport app download for android করে আনিসুজ্জামান লিখেছেন (বিপুলা পৃথিবী) : ‘তিনি বলেছিলেন, ভারতের সাহায্য ছাড়াও 888sport apps স্বাধীন হতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচেষ্টায়, তবে তাতে সময় লাগত, অনেক বেশি রক্তক্ষয় হতো।’ জেনারেল অরোরা সাভারে জাতীয় 888sport sign up bonusসৌধ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে তাঁর কাছে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছিল, সেসব স্থান পরিদর্শন করেন। আনিসুজ্জামান তাঁর সঙ্গে ছিলেন। জেনারেল অরোরার এই সফরকালে মিসেস আনিসুজ্জামান তাঁকে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করায় আনিসুজ্জামান তার ব্যবস্থা করেন। সিদ্দিকা জামান সাতাশটি গোলাপের একটি তোড়া জেনারেল অরোরার হাতে তুলে দিয়ে তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনি স্বাধীনতার সাতাশ বছর পর এলেন, সেজন্য এই সাতাশটা গোলাপ আপনার জন্য।’ জেনারেল অরোরা, স্বাভাবিকভাবেই, আনিসুজ্জামান-পত্নীর এই আন্তরিক উপহার পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন।

১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তখন সংস্কৃতির বিষয়াবলি ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এই সময়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মনোনীত করেন। এরপর বিএনপি সরকারের আমলে সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন জাহানারা বেগম। তিনিও আনিসুজ্জামানের ট্রাস্টি বোর্ডের এই সদস্যপদের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিলেন। এছাড়া, সরকারের গ্রন্থনীতি প্রণয়ন কমিটিতেও আনিসুজ্জামান সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

আনিসুজ্জামান যখন ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন তখন সওগাত-সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি। তিনি আগে থেকেই সভাপতি ছিলেন এবং তখন সভাপতিরূপে তাঁর দায়িত্বকাল সপ্তম বর্ষে পৌঁছেছে। তাঁর অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল। তবে শারীরিক সামর্থ্যরে অভাব না ঘটলে তিনি ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় অবশ্যই আসতেন এবং ইনস্টিটিউটের 888sport app অনুষ্ঠানেও যোগ দিতেন। ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় তিনি চাইতেন, আনিসুজ্জামান যেন তাঁর পাশে বসেন। অবশ্যই আনিসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে তাঁর পরিচিত ও প্রিয়পাত্র ছিলেন। তবে এর অন্য একটা কারণও ছিল। তখন নাসিরউদ্দীন সাহেবের শ্রবণশক্তি কমে গিয়েছিল। সেজন্য তিনি চাইতেন, আনিসুজ্জামান যেন তাঁর পাশে বসে প্রয়োজনমতো আলোচনার বিষয়বস্তু তাঁকে বুঝিয়ে বলেন। কোনো কারণে সভায় আসতে না পারলে, তিনি বলে পাঠাতেন – আনিসুজ্জামান যেন বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করেন। বিষয়টি আনিসুজ্জামানের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠত। এই সময়ে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। তাঁর কার্যকালে বাংলা একাডেমি আবদুল কাদির-সম্পাদিত পাঁচ খণ্ড নজরুল রচনাবলীর একটি নতুন সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ-কাজের জন্য গঠিত সম্পাদনা পরিষদ ছিল : সভাপতি – আনিসুজ্জামান; সদস্য – মোহাম্মদ আবদুল কাইউম, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মনিরুজ্জানান, আবদুল মান্নান সৈয়দ, করুণাময় গোস্বামী; সদস্য-সচিব – সেলিনা হোসেন। আনিসুজ্জামান লিখেছেন : ‘বৎসরাধিক পরিশ্রম করে আমরা চার খণ্ডে এই নতুন সংস্করণ প্রকাশ (১৯৯৩) করতে সমর্থ হই। এই সংস্করণে কবির প্রকাশিত বইগুলো কালানুক্রমিকভাবে বিন্যস্ত হয়। কবির সুস্থাবস্থায় প্রকাশিত 888sport free bet loginের সর্বশেষ সংস্করণের পাঠ অনুসৃত হয় এবং কবির অসুস্থাবস্থায় প্রকাশিত বইগুলির প্রথম সংস্করণের পাঠ গৃহীত হয়। গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত নজরুলের কিছু রচনা নানা গুচ্ছ করে আবদুল কাদিরের দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন নামে রচনাবলীতে সংকলিত হয়েছিল। সেসব নামে এবং সেসব লেখা নিয়ে কখনো কোনো বই প্রকাশিত হয়নি বলে আমরা গ্রন্থনাম বাদ দিয়ে সেসব লেখা ‘গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা’র অন্তর্ভুক্ত করি। নজরুলের গানের ক্ষেত্রে আমরা  অনুসরণ করি মুদ্রিত পাঠ, রেকর্ডে ধারণকৃত বা স্বরলিপিতে বিধৃত গানের পাঠে ভেদ থাকলে আমরা তা নির্দেশ করিনি, কেননা তা করতে গেলে বহু সময় লাগতো। নজরুলের অসুস্থাবস্থায় প্রকাশিত যেসব গ্রন্থে তাঁর 888sport app প্রকাশিত গ্রন্থের 888sport app download apk অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, আমরা সেসবের পুনরাবৃত্তি বর্জন করি, তবে এ-সংক্রান্ত তথ্য গ্রন্থপরিচয়ে উল্লেখ করি। আবদুল কাদির-প্রদত্ত গ্রন্থপরিচয় অক্ষুণ্ন রেখে আমরা ‘পুনশ্চ’ শিরোনামে অতিরিক্ত তথ্য সন্নিবেশ করি। আমরা সাধারণভাবে আধুনিক বানানপদ্ধতি অনুসরণ করি, তবে নজরুলের গ্রন্থনামের বানান এবং যেসব ক্ষেত্রে বানানের কোনো বিশেষত্ব রক্ষা করা অপরিহার্য বিবেচিত হয়, সেসব ক্ষেত্রে মূলের বানান অপরিবর্তিত রাখি। আবদুল কাদিরের নিষ্ঠা ও শ্রমের প্রতি 888sport apk download apk latest versionর নিদর্শনস্বরূপ সম্পাদনা-পরিষদের নামের ওপরে আমরা ‘আবদুল কাদির-সম্পাদিত নজরুল-রচনাবলী’ কথাগুলো লিপিবদ্ধ করি।’

নজরুল-রচনাবলীর এই সংস্করণটি প্রকাশিত হওয়ার পর ‘প্রায় সকলেই এটাকে প্রামাণ্য এবং অপেক্ষাকৃত উন্নত সংস্করণ বলে গ্রহণ করেছিলেন।’ বাংলা একাডেমি থেকে এর পুনর্মুদ্রণও হয়। পরবর্তীকালে বাংলা একাডেমি আবারো নজরুল-রচনাবলীর একটি পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশে উদ্যোগী হয়। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। বিপুলা পৃথিবী গ্রন্থে আনিসুজ্জামান সেটি বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন : ‘আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ তখন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক [২৪.০২.২০০৫ থেকে ১৬.১১.২০০৬]। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠিতে জানা গেল যে, একাডেমী নজরুল-রচনাবলীর একটি পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক এবং সেই উদ্দেশ্যে তাঁর দপ্তরে আহূত একটি সভায় আমি আমন্ত্রিত। বস্তুত ওই রচনাবলীর একটি নতুনতর সংস্করণ প্রকাশের আবশ্যকতা ছিল। ১৯৯৩ সালের পরে নজরুলের আরো কিছু লেখা উদ্ধার করা গিয়েছিল, আমাদের সংস্করণের এক-আধটি পুনরাবৃত্তি বর্জনের অপেক্ষায় ছিল। সুতরাং চিঠি পেয়ে খুশি হওয়ারই কথা। কিন্তু সভা-অনুষ্ঠানের একদিন আগে একাডেমীর একজন কর্মকর্তা ফোন করে বললেন যে, মহাপরিচালক ওই সভা স্থগিত করেছেন, পুনর্নির্ধারিত সভার স্থানকাল পরে জানানো হবে। এ-বিষয়ে একাডেমী থেকে কেউ আর কিছু জানাননি। অনেক পরে অন্য সূত্রে জানতে পারি, নজরুল-রচনাবলীর সম্পাদনা-পরিষদ পুনর্গঠিত হয়েছে এবং তাতে আগের সম্পাদনা-পরিষদের যে-পাঁচজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আমি একজন, আর নতুন যে-দুজন যুক্ত হয়েছেন, তার মধ্যে আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ একজন। সম্পাদনা-পরিষদ পুনর্গঠনের অধিকার তো একাডেমীর আছেই, তবে তা নিয়ে লুকোচুরি খেলতে হবে কেন?’

নজরুল-প্রসঙ্গে এবার আবারো নজরুল ইনস্টিটিউটের কথায় ফিরে যেতে হয়। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান তাঁর দু-বছর কার্যকাল শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেলে ১৯৯৩ সালে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আবারো যোগ দেন মোহাম্মদ মাহ্্ফুজ্উল্লাহ। আবারো এজন্য যে, ১৯৮৫ সালে নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনিই এই পদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবার তিনি পরিকল্পনা নিলেন নজরুলের ছবির একটি অ্যালবাম প্রকাশ করার। সরকারের বিশেষ অনুদানও পেলেন। নজরুল-অ্যালবাম প্রকাশের জন্য যে-কমিটি গঠিত হলো আনিসুজ্জামান হলেন তার আহ্বায়ক। ছবি সংগ্রহ ও বাছাই করতে সময় লেগেছিল। আনিসুজ্জামান চারটি ছবি সংগ্রহ করে দেন – তিনটি তাঁর বন্ধু আবদুল আলীর বড়ো ভাবি বেগম এ জেড এম আব্দুল আলিম এবং একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ইরশাদ কামালের কাছ থেকে। নজরুল-অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। অ্যালবামটির 888sport live chatনির্দেশক ছিলেন 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী। অ্যালবামের মুখবন্ধও লিখেছিলেন আনিসুজ্জামান।

১৯৯৪ সালের মে মাসে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মৃত্যুর পর নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হন সাংবাদিক ওবায়েদ-উল-হক। ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদ মাহ্ফুজ্উল্লাহর কার্যকাল শেষ হলে সে-জায়গায় নির্বাহী পরিচালক নিযুক্ত হন মুহম্মদ নূরুল হুদা। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে ওবায়েদ-উল-হকের কার্যকাল শেষ হলে তাঁর জায়গায় ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি মনোনীত হন আনিসুজ্জামান। বিপুলা পৃথিবীতে আনিসুজ্জামান উল্লেখ করেছেন যে, এ-দায়িত্ব নিতে তিনি তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তবে পরের বছর থেকে নজরুল-জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের সূচনা হবে – এই কারণে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁকে ফোনে বিশেষ অনুরোধ জানালে তিনি সম্মত হন। নজরুল ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে নজরুল-জন্মশতবর্ষ জাতীয়ভাবে পালিত হয় ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। আনিসুজ্জামান বিপুলা পৃথিবীতে সংক্ষিপ্তভাবে এর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। সে-বিবরণ বেশ আগ্রহোদ্দীপক এবং কিছু মন্তব্য, আনিসুজ্জামানের রচ888sport promo codeতির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, ইঙ্গিতবহ। ওয়াকিবহাল মহলের কাছে সে-সবের অর্থোদ্ধার কঠিন নয় বলেই আমাদের মনে হয়।

ঊনত্রিশ

১৯৭০ সালে, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় ভুক্তি রচনার সুযোগ পেয়েও পরিস্থিতির কারণে তা লিখতে পারেননি আনিসুজ্জামান। এবার, ১৯৯৮ সালে, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার কাজে অংশগ্রহণের একটা সুযোগ এলো তাঁর কাছে, শিকাগো থেকে বন্ধু র‌্যালফ নিকোলাসের মারফত। র‌্যালফ নিকোলাস চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিলেন – এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা স্বতন্ত্রভাবে একটি এশীয় সংস্করণ প্রকাশ করতে যাচ্ছে, তার সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকতে আনিসুজ্জামান সম্মত আছেন কি না। কালবিলম্ব না করে আনিসুজ্জামান জানিয়ে দিলেন, তিনি রাজি। সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছিল যাঁদের নিয়ে তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভারত থেকে বিশিষ্ট পণ্ডিত কপিলা বাৎস্যায়ন, ইতিহাসবিদ রমিলা থাপার, ভূগোলবিদ সত্যেশ চক্রবর্তী, পাকিস্তান থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদ রফিক মুঘল, শ্রীলংকা থেকে পেরেদানিয়া ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর ইতিহাসবিদ লেসলি গুণারত্নে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে র‌্যালফ নিকোলাস এবং 888sport apps থেকে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ। দিল্লিতেই সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক হতো। সে-সময়ে ব্রিটানিকার সদর দফতর থেকে একজন সম্পাদক তাতে নিয়মিত যোগদান করতেন। আবাসিক সম্পাদক ছিলেন ইন্দু রামচন্দ্রানী। তিনি কোনো বিশেষ ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, তবে প্রকাশনা-সংস্থায় সম্পাদক হিসেবে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ছিল।

আনিসুজ্জামান লিখেছেন যে, বিমানে তাঁদের দিল্লি যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল বিজনেস ক্লাসে, থাকার ব্যবস্থা ছিল ইন্ডিয়ান হ্যাবিটাট সেন্টারে আর স্থানীয়ভাবে চলাফেরার জন্য থাকত দিল্লি অফিসের সৌজন্যে ভাড়া-করা সার্বক্ষণিক গাড়ি। সম্পাদকীয় বৈঠক হতো

দুদিন ধরে।

888sport appsের নানান দিক নিয়ে লেখা সংগ্রহ ও সম্পাদনার দায়িত্ব ছিল আনিসুজ্জামানের। তিনি অনেকের লেখা পেয়েছিলেন। দুটো লেখার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপরে। তার মধ্যে একটি বাংলা ভাষা সম্পর্কে। সেটি লিখে জমা দেওয়ার পর ব্রিটানিকা জুনিয়র এনসাইক্লোপিডিয়ায় তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। অপর লেখাটি ছিল 888sport appsের 888sport live football-বিষয়ে। শেষ পর্যন্ত সেটি আর লেখা হয়নি বলেই তিনি জানিয়েছেন। সম্ভবত তার কিছু কারণ ছিল। প্রধান কারণ ছিল আবাসিক সম্পাদক ইন্দু রামচন্দ্রানীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হওয়া। বিপুলা পৃথিবীতে তার উল্লেখ রয়েছে। আনিসুজ্জামান ২০০০ সালে শিকাগোতে ব্রিটানিকার প্রধান কার্যালয়ে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। কিছুকাল পরে, সম্পাদকমণ্ডলীর অপর এক সদস্য ইতিহাসবিদ রমিলা

থাপারও প্রায় একই কারণে প্রকল্পের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখেননি বলে আনিসুজ্জামানকে জানান। আরো পরে আনিসুজ্জামান জানতে পারেন যে, প্রকল্পটি বাতিল হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার সঙ্গে সম্পর্কস্থাপনের দ্বিতীয় সুযোগটাও এভাবে নষ্ট হলো।’

বিপুলা পৃথিবীতে আনিসুজ্জামান এক জায়গায় লিখেছেন যে, ‘নির্ঝঞ্ঝাট শিক্ষকতা করি আর মাঝে-মধ্যে এদেশ-সেদেশে সভাসমিতিতে যোগ দিতে যাই।’ তাঁর এই নির্ঝঞ্ঝাট শিক্ষকতার সামান্য একটু কথা তিনি বিপুলা পৃথিবীতে লিখেছেন। সেটুকু উদ্ধৃত করলে পানিতে ভেসে থাকা বরফের পানির নিচের অংশটুকুর পরিচয় কিছুটা আঁচ করা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি পাঠদান চলে। ১৯৯৫ সালে বিভাগীয় সভাপতি হওয়ার নিয়োগপত্র পেলে ওই দায়িত্বগ্রহণে অপারগতা জানাই। তাতেও কিছু কটু কথা শুনতে হয় তাদের কাছ থেকে যারা এক সময়ে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ফিরে আসার বিরোধিতা করেছিল। পরে যখন ফিরে আসি, তখনো যথাসম্ভব তা বিলম্বিত করতে অনেকেই তৎপর ছিলেন, যাতে আমার অন্য কয়েকজন সহকর্মী অধ্যাপক পদলাভের জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার কাল পূর্ণ করতে পারেন। হয়তো এসবের মূলে ছিল আমার বিভাগীয় প্রধান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। ওই আসনে না বসাই ভালো বলে মনে হয়েছিল। …’

সভা-সমিতিতে যোগদান এবং সেমিনার ও সম্মেলন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের জন্য ঘন ঘন বিদেশ 888sport slot gameের কারণে আনিসুজ্জামানের নিজের পরিকল্পনামতো পড়াশোনা ও লেখালেখি যে কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছিল সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই। এসব কাজ অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের ‘খুব অপছন্দ’ ছিল। উনি বলতেন, ‘আপনি লেখালিখি করবেন নিজের প্ল্যান-অনুযায়ী, নিজের পছন্দের বিষয়ে। অন্যেরা সেমিনার-কনফারেন্স করে, তাদের ফরমাইশ আপনি খাটতে যাবেন কেন?’ এর উত্তরে আনিসুজ্জামানেরও বলার কিছু থাকে। তিনি বলেন, ‘সারের এই তিরস্কার সত্ত্বেও বাইরে যাই। অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়, অনেক বিষয়ে জানতে পারি, অভিজ্ঞতা বাড়ে, দৃষ্টিভঙ্গির কিছু উন্নতি হয়।’

আনিসুজ্জামানের এই বয়ান থেকে মনে হয়, নিছক পুথিসর্বস্ব জ্ঞানানুসন্ধানের মধ্যেই নিজেকে নিবদ্ধ রাখতে তিনি উৎসাহী ছিলেন না; মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও সমাজের ঐতিহাসিক-সমকালিক বাস্তবতা থেকে শিক্ষাগ্রহণের প্রতিই তাঁর অনুরাগ ছিল বেশি। এজন্যই তিনি যেমন সুদূরের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেননি, তেমনি নিজের চারপাশের সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাবলি ও সেসবের বাস্তবতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পাননি। সেসবের মধ্যে প্রবেশ করেই সেগুলোর অনুধাবন ও অন্তর্গত ঐতিহাসিকতার মূল্যায়ন করতে চেয়েছেন।

শিক্ষক হিসেবে তাঁর ছাত্ররা তাঁকে যেভাবে পেয়েছেন তার একটি চিত্র পাওয়া যায় তাঁর ছাত্র কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাতের একটি লেখায়। আবুল হাসনাত তাঁর সম্পাদিত আনিসুজ্জামান 888sport app download for android গ্রন্থে ‘স্বরূপসন্ধানী আনিসুজ্জামান’ শিরোনামাঙ্কিত রচনায় লিখেছেন, ‘আমি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তাঁর সরাসরি ছাত্র ছিলাম। তখন দেখেছি কত ছাত্রকে দীক্ষিত করেছেন 888sport live footballের রস গ্রহণ ও রুচি নির্মাণে। ষাটের দশকের মধ্য পর্যায়ে তাঁর কাছে পাঠ নিয়েছিলাম রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমচন্দ্র। কখনো দেশ-আত্মার মর্মবেদনা উপলব্ধির জন্য আহ্বানও করেছেন। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেদের জীবন ও মননকে কোনো কোনো শিক্ষার্থী করে তুলেছেন শাণিত।

ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু হয়েছে তাঁর কর্ম। এই কর্ম নানাভাবে, নানাদিকে প্রসারিত হয়েছে। আমরা যাঁরা দীক্ষাগ্রহণ করেছি তাঁর কাছে, কত কিছু যে পেয়েছি তা বিস্তারিত বলার নয়।’

আনিসুজ্জামানের অপর এক ছাত্র সু888sport live footballিক কাদের মাহমুদ লিখেছেন (আনিসুজ্জামান 888sport app download for android, ‘আমার শিক্ষক ডক্টর আনিসুজ্জামান’) : ‘বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে তখন তুলনামূলকভাবে কম বয়সী হলেও ডক্টর আনিসুজ্জামান নামটি প্রাগ্রসর বাঙালিদের মধ্যে ভালোই চেনা ছিল বটে। ছাত্র হিসেবে আমি তাঁর নিকটতর হতেই বুঝতে পারলাম তাঁর মধ্যে অহমিকার লেশমাত্র নেই। সবাইকে নিমেষে আপন করে নিতেন তিনি, তাঁর কাছে সামাজিক ভেদ ছিল না। বিভাগের করিডোর দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সমান লয়ে চলাফেরা করতেন। শাদা পাঞ্জাবি-পাজামা পরে, চটি পায়ে হেঁটে কখন যে তিনি পাঠকক্ষে জনাষাটেক শিক্ষার্থীর সামনে হাজির হতেন তা আমরা টেরই পেতাম না। তাঁর পাঠভাষণ ছিল অনুচ্চ ও মিষ্টিমধুর, অথচ কক্ষের সীমান্তে সবার কাছে পৌঁছুতে পারত। আদপেই তিনি নৈর্ব্যক্তিক ছিলেন না, বরং সকলের প্রতিই ছিল তাঁর নজর। তাঁর প্রতিও থাকত সকলের নজর। বিমুগ্ধ হয়ে শুনতে হতো তাঁর বিদগ্ধ পাঠ। আমার মতো যাদের পড়াশোনায় বিপত্তি ছিল, তাদের পক্ষে মনোযোগ দিয়ে স্যারের ভাষণ শুনলেই যেন চলত।’

শিক্ষক হিসেবে আনিসুজ্জামান কেমন ছিলেন সে-বিষয়ে ওপরের দুটি উদ্ধৃতি থেকে অনেককিছুই জানা ও বুঝতে পারা যায়। আরো অনেকের লেখায় এই প্রসঙ্গটির উল্লেখ আছে, তবে সেসবের উদ্ধৃতির তেমন কোনো বেশি প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ক্ষেত্রে আনিসুজ্জামানের নিজস্ব ভঙ্গি ও দক্ষতার বিষয়ে ওপরে দুজনের সরল বর্ণনা শোনা গেল। এবার দেখা যেতে পারে গবেষণা-তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তাঁর ভূমিকার কথা। সে-বিষয়টি পাওয়া যাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছাত্রী ও পরবর্তীকালে বিভাগীয় অধ্যাপক শিপ্রা রক্ষিত দস্তিদারের লেখা থেকে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত আনিসুজ্জামান সংবর্ধনা স্মারক গ্রন্থে ‘আমার শিক্ষক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান’ শীর্ষক রচনায় তিনি লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আমি যখন যোগদান করি তখন বিভাগের বেশির ভাগ শিক্ষকই আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন। যথেষ্ট কুণ্ঠা ও সতর্কতার সঙ্গে চলবার চেষ্টা করেছি তখন। কয়েক বছরের মধ্যে আমার শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই 888sport app, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। যোগদানের প্রায় আট-নয় বছরে আমি গবেষণার বিষয় নির্বাচন নিয়ে যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি তখন একদিন আনিসুজ্জামান স্যারের কাছে গেলাম। স্যার আমাকে ভাষাতত্ত্ববিদ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ওপর কোনো গবেষণা কাজ হয়েছে কি না তার খোঁজ নিতে বললেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্বন্ধে বিচ্ছিন্ন

দুই-একটি 888sport live ও জীবনীগ্রন্থ ছাড়া মৌলিক কোনো গবেষণা হয়নি। আমি স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী এই প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ পণ্ডিতের প্রায় সমুদয় 888sport live footballকর্ম দিয়ে গবেষণার কাজ শুরু করি। প্রথমদিকে গবেষণা অভিসন্দর্ভের প্রস্তাবিত ছক অনুযায়ী বিষয় বিন্যাস করতে গিয়ে রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়লাম। আমার নির্দেশক আমাকে সাহস ও ভরসা না দিলে এই কাজের গভীরে প্রবেশ করা সম্ভব হতো না। বছর দুই যাওয়ার পর যখন তথ্য-উপাত্ত যথেষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ হয়েছে তখন আমার মধ্যে কিঞ্চিৎ ভরসা এলো যে, এবার হয়তো ছক অনুযায়ী একটা কিছু দাঁড় করাতে পারব। আমার বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী বিষয়গুলো ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্যারের পরামর্শ চেয়েছি, উনি বলেছেন, তুমি তোমার মতো করে যাও, পরে দেখা যাবে। এতে আমার নিজের মতামত ও মূল্যায়নের দায়িত্ব বেড়ে গেল। প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় মূল অভিসন্দর্ভের প্রথম খসড়া পাণ্ডুলিপি তৈরি হলো। পাঁচ বছর ধরে এই কাজ করার সময় আমি স্যারের পরামর্শ ও উপদেশ যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। নির্দেশক হিসেবে তাঁর কোনো মত তিনি চাপিয়ে দেননি। আমার নিজস্ব চিন্তা, বিচার-বিশ্লেষণ ও রচনাকৌশল নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেননি। কিন্তু খসড়ার পুরো পাণ্ডুলিপি পড়ে যেখানে যেখানে সংযোজন ও বিয়োজন করা প্রয়োজন তা জানিয়েছেন। পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হবার পরে স্যারের অনুমোদন সাপেক্ষে মুদ্রণ শুরু হয়েছে। ভূমিকা ও উপসংহার লিখতে গিয়ে আমার কলম আর এগোয় না। প্রচণ্ড অনীহা ও ক্লান্তির ফলে এই দুটি অংশ সবচেয়ে কঠিন মনে হয়েছে। স্যার আমাকে সাহস দিয়েছেন, বলেছেন, ‘এতটা পেরেছ যখন এটাও পারবে।’ অনেক কষ্টে ভূমিকা ও উপসংহার শেষ হলো। এ জন্য স্যারের কাছে আমার ঋণ নিরবধি।’