কে বানাল এমন রংমহলখানা
বাউলতত্ত্বে মানবশরীরকে নৌকা, অধরচাঁদ, রংমহল ইত্যাদি অভিধায় রূপকার্থে চিহ্নিত করা হয়। মানবকে যিনিই বানাক, জগৎ-সংসারে প্রাত্যহিক নানা কাজের জন্য মানব নিজেকে নিজেই উপযুক্ত করে তৈরি করেন তথা বানান। আনোয়ার হোসেনও (৬ অক্টোবর ১৯৪৮-১ ডিসেম্বর ২০১৮) তাঁর মর্জিমাফিক কাজের জন্য নিজেকে নিজেই বানিয়ে নিয়েছিলেন। নিজেকে শুধু চিত্রধারক বানাননি, মেধাবী ছাত্র, live chat 888sportবিদ্যার শিক্ষক, live chat 888sportবিষয়ক লেখক-বক্তা হিসেবেও গড়ে তুলেছিলেন। মাধ্যমিক পরীক্ষায় 888sport app বিভাগের মেধাতালিকায় তিনি প্রথমদিকেই ছিলেন। নটর ডেম কলেজের কৃতী ছাত্র ছিলেন। ১৯৭৪ সালে বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউ অব ইন্ডিয়া’ থেকে সিনেমাটোগ্রাফির ওপর পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন ডিপেস্নামা করেন। পনেরোটির বেশি পূর্ণ ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের live chat 888sport ও ত্রিশটির বেশি প্রামাণ্যচিত্রে ডিরেক্টর অব ফটোগ্রাফি ছিলেন। বিজ্ঞাপন, প্রচারণামূলক live chat 888sportেও ক্যামেরা চালিয়েছেন। ক্যামেরা-সঞ্চালনে নান্দনিক মাত্রা সৃষ্টির জন্য পনেরোবার জাতীয় live chat 888sport 888sport app download bd পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক পরিসর থেকেও পেয়েছেন অনেক 888sport app download bd-স্বীকৃতি। লুই কানের সঙ্গে স্থাপত্যকলার কাজও করেছেন।
তিনি ফটোগ্রাফি (স্থিরচিত্র) ও সিনেমাটোগ্রাফি – দুটোতেই পারদর্শী ছিলেন। দুটি ক্ষেত্রেই নিজেকে নিজেই দক্ষ কারিগর বানিয়েছিলেন। স্থিরচিত্রধারক হিসেবে ষাটটিরও বেশি আন্তর্জাতিক 888sport app download bd পেয়েছেন। পঁচিশটিরও অধিক দেশে তাঁর স্থিরচিত্রের প্রদর্শনী হয়েছে শতাধিকবার। ফটোগ্রাফির ওপর লিখেছেন কয়েকটি গ্রন্থ। শিক্ষকতা করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। কাজ করেছেন দেশ-বিদেশের নানা সংস্থায়। সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করেছেন – ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত ‘888sport apps ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজে’র সহ-সভাপতি ছিলেন; ১৯৮৭-১৯৯৩ পর্যন্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন ‘888sport apps ফেডারেশন অব ফটোগ্রাফি’র।১ ১৯৯৭ সাল থেকে ফ্রান্সে ফরাসি স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। মাঝে মাঝে দেশে আসতেন। শেষের দিকে দেশে এলে গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে নির্জনবাসে থাকতেন। এসব তথ্য প্রমাণ করে, তিনি লালনকথিত ‘রংমহল’ই ছিলেন। এই রংমহলের মালিক মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কাঁধে রাইফেল, অন্য কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে রণাঙ্গনে ছিলেন। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন – যদিও মৃত্যুর পর শহিদমিনারে তাঁর মরদেহ নেওয়া হলে পুলিশ বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়নি, কারণ মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট যে তাঁর নেই!
স্থিরচিত্রধারক হিসেবে তিনি ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’-পরবর্তীকালের নারকীয় ঘটনার ছবি তুলেছেন; ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বুড়িগঙ্গায় ভাসমান লাশের ছবি – নবাবগঞ্জের দোহারে মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি তুলেছেন; ১৬ ডিসেম্বর 888sport appsের অভ্যুদয়কালের ছবিও তুলেছিলেন যেগুলো ফ্রেমিং-কম্পোজিশন ও নিরীক্ষায় অনন্য। তাছাড়া সারাজীবনই প্রকৃতি, নানা পেশার মানুষের মুখ, 888sport promo code-শিশুর ছবি তুলেছেন যা একান্তই তাঁর নিজস্ব ঢংয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবেও দক্ষতা দেখিয়েছেন সূর্য দীঘল বাড়ী (১৯৭৯), দহন (১৯৮৫), নদীর নাম মধুমতী (১৯৯৬), চিত্রা নদীর পারে (১৯৯৮), লালসালু (২০০১), শ্যামল ছায়া (২০০৪), চাকা (১৯৯৩), অচিনপাখী (১৯৯৬) প্রভৃতি live chat 888sportে। সব কাজই তিনি স্ব-প্রশিক্ষিত হয়েই সম্পন্ন করেছেন। সাধনা ছাড়া যে গুরুকৃপা মেলে না, সাধনমার্গে পৌঁছানো যায় না, তা তাঁর স্বভাব-বাউল সত্তা অনুধাবন করেছিল বইকি।
শুধু স্থির ও মুভি ক্যামেরা চালিয়ে নয়, ক্যামেরা-সঞ্চালনসংক্রান্ত রচনা লিখেও নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন। সত্যজিৎ রায়ের ক্যামেরা-সঞ্চালন তথা দৃশ্যধারণরীতি তাঁর অধ্যয়নের আওতায় বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। ২০১৩ সালে সত্যজিতের স্রষ্টাবৃত্তি শীর্ষক একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করি, তাতে আনোয়ার হোসেনের দুটি রচনা রাখি। ভূমিকায় দুটি রচনার সারসংক্ষেপ লিখতে গিয়ে লিখেছিলাম :
আনোয়ার হোসেন ‘সত্যজিতের live chat 888sportে ক্যামেরা’ নামক রচনায় সত্যজিতের live chat 888sportে নানা ধরনের আলো তৈরির কৌশল, শটের ব্যবহার, ক্যামেরার মুভমেন্ট, কম্পোজিশনের ধরন, ডিটেইলের ব্যবহার, গ্রাফিক সেন্সের ব্যবহার ইত্যাদি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। আনোয়ার হোসেন ‘সত্যজিতের ক্যামেরায় রবীন্দ্র888sport live football’ 888sport liveে সত্যজিতের ক্যামেরাকর্মের ওপর আলোচনা করেছেন। তাঁর বিবেচনায় সত্যজিৎ live chat 888sportের নিজস্ব ভাষায় রবীন্দ্র 888sport live footballকে live chat 888sport মাধ্যমে পরিবাহিত করেছেন। এক্ষেত্রে সত্যজিৎ একেবারে নিজস্ব ধরনে ট্রলির ব্যবহার করেছেন; রিফ্লেকশন শট, ক্লোজআপ, নানারকম অ্যাঙ্গেল প্রভৃতির ব্যবহার করেছেন বলে আনোয়ারের অভিমত। সত্যজিতের live chat 888sportাঙ্গিক সম্পর্কে তাঁর বিবেচনা : ‘সত্যজিৎ রায় সার্বিক অর্থে নিজেকে প্রকাশ করেছেন এপিক আঙ্গিকে। … তাই সত্যজিতের live chat 888sportে আমরা কখনো ঘন ঘন ইন্টারকাট কিংবা মমত্মাজ অথবা অতিদ্রুত কোনো ট্রলি বা জুমিং-এর অতিরিক্ত ব্যবহার দেখতে পাই না।২
সত্যজিতের দৃশ্যধারণরীতি-অধ্যয়ন হয়তো কোনো-না-কোনোভাবে আনোয়ার হোসেনের নিজের দৃশ্যধারণরীতির মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে থাকতে পারে। না-করলেও সত্যজিতের ক্যামেরা-পরিচালনসংক্রান্ত অর্জিত পরিজ্ঞান তাঁর নিজের দৃশ্যধারণরীতি খুঁজে পেতে সহায়ক হয়েছে নিশ্চয়।
আগে বাতাস ধরো, গতি চিনে
আনোয়ার হোসেন ছিলেন ‘বাউল’ প্রকৃতির মানুষ। বাউল চিত্রগ্রাহকও বলা যায়। বাউল সাধনা শরীরনির্ভর। বাউলতত্ত্বে মানবশরীরের বাইরে কিছু নেই। এই তত্ত্বে সাধনকর্মে বাতাস গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ-প্রসঙ্গে ফকির মহিন শাহ তানভীর মোকাম্মেল-নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র অচিনপাখীতে বলেন : ‘বায়ু + উল = বাউল। অর্থাৎ যাঁরা ধর্মীয় পন্থায় বায়ুর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আত্মসাধনা বা ভজনসাধনার কর্ম সম্পাদন করে। যেখানে দাঁড়িয়ে বাউল বলে থাকে : ‘আগে বাতাস ধরো, গতি চিনে। নিরিখে সে থাকে বসে, দিনযাপনে।’ বায়ু সাধনার মূল উৎস বাতাস। বাতাসের তিনটি গতি – ঊর্ধ্ব, অধো এবং মধ্যা। এই তিন গতির মাধ্যমে যোগ সাধনায় জ্ঞান, পাতাল, লেজ, কুম্ভ এবং মোক্ষ – এই যে পাঁচটি সাধন – এই সাধনমার্গে যে ব্যক্তি উন্নীত হতে পেরেছে – সে-ই বাউল।’৩
(অচিনপাখী : ০ : ১৪ : ৪৬ – ০ : ১৬ : ০৫)
live chat 888sportাঙ্গিকেরও নিজস্ব শরীর আছে। এই শরীরের ফিজিক্যাল প্রপারটিজ তথা ভৌত উপাদান তিনটি : দৃশ্য, শব্দ ও সম্পাদনাগত মাত্রা। আনোয়ার হোসেন দৃশ্যমাত্রার সাধনা করতেন এবং এই সাধনার মাধ্যমে ‘সাধনমার্গে উন্নীত হতে পেরেছে’ বলে আমার ধারণা। তিনি আগে দৃশ্যরূপের সাধনা করেছেন – প্রথমে স্থিরচিত্রকে ধরে স্থিরচিত্রের সাধনা, পরে গতিচিত্রের সাধনা। তবে প্রথমটিকে তিনি কখনো ছাড়েননি। উভয়ের গতিপ্রকৃতি ও রূপ-রূপান্তর তাঁর কাছে ধরা দিয়েছিল। আনোয়ার হোসেনকে ধরতে হলে, ধারণা করি তাঁর ক্যামেরা-সঞ্চালনের গতিপ্রকৃতি চিনতে হবে, ধরতে হবে।
এই চেনার কাজে তাঁর চিত্রায়িত তিনটি live chat 888sport : চাকা, সূর্যদীঘল বাড়ী ও অচিনপাখীর দৃশ্যধারণরীতি অনুধাবনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বর্তমান রচনায়। প্রথম দুটি সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করে শুধু অচিনপাখী প্রসঙ্গেই বিস্তারে যাব। চাকাতে যশস্বী অভিনয়888sport live chatী আশীষ খন্দকার অভিনয় করেছিলেন – ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮-তে 888sport apps শর্টফিল্ম ফোরাম আয়োজিত প্রয়াত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন 888sport app download for androidে আলোচনা ও live chat 888sport প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে এসেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে তখন কথা বলে আনোয়ার হোসেনের দৃশ্যধারণরীতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি :
প্রশ্ন : আজ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ – কথা বলছি আশীষ খন্দকারের সঙ্গে। তিনি চাকাতে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। আশীষ খন্দকারের প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কাজ করার একটা অভিজ্ঞতা আছে। সেই সূত্রে আমি তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করছি যে, আনোয়ার হোসেনের যে-চিত্রধারণরীতি, এটা তাঁর কাছে কী ধরনের মনে হয়?
উত্তর : আনোয়ার হোসেনের চিত্রধারণের যে রীতি-পদ্ধতি – সেই বিষয়টাকে আসলে কোনো ধরনের মেথডলজিক্যাল জায়গায় ফেলা যাবে না। এটার জন্য কিসের যেন একটা অপেক্ষা ছিল তাঁর। এই অপেক্ষাটা চাকায় এসে কিছুটা জায়গা করে নেয়। প্রকৃতিকে চিত্রে ধারণ করার একটা অপেক্ষা তাঁর ছিল। সেটা ছিল খুবই একটা আধ্যাত্মিক চেতনালোকের আঁধারে অপেক্ষা। চাকাতে সেই অপেক্ষার পিউরিফিকেশন ঘটে বলে আমার অভিমত।
প্রশ্ন : এই পিউরিফিকেশনের ক্ষেত্রে চাকার নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের সঙ্গে আনোয়ার হোসেনের কেমিস্ট্রিটা কী রকম ছিল?
উত্তর : তাঁদের আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা ওয়ার্ড বেইজড ছিল না। তাঁদের মধ্যে ইন্টারনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং একটা সিনক্রোনাইজেশন ছিল। তাঁরা উভয়কে উভয়ে এক ধরনের সম্মানজনক জায়গায় রেখে দিয়েছিলেন। তাঁদের ভেতরে কথাবার্তাটা খুব কম হতো। তাঁদের নিজেদের মধ্যকার আলোচনাটা কোথাও গিয়ে – ধরুন গাছতলায় কিংবা ক্ষেতের আইলে দাঁড়িয়ে – সেরে ফেলতেন। কখনো কখনো একটা দৃশ্যধারণ না করেই ওটার জন্য পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলতেন আনোয়ার হোসেন। হঠাৎ করে তিনি বলে উঠতেন যে, আমার মনে হচ্ছে, টাইম হ্যাজ অলরেডি বিন পাসড, আজকে দৃশ্যটা না ধরলেও হয়, বরং আমরা অন্য কোনো দৃশ্যে যাই।
প্রশ্ন : আলোর কন্ডিশনটা লক্ষ করে বোধহয় বলতেন?
উত্তর : হ্যাঁ।
প্রশ্ন : এই পর্যন্ত আপনার কথা থেকে যেটা বুঝতে পারছি যে, প্রকৃতিকে ধরার যে-বাসনাটা তাঁর মধ্যে ছিল, সেটা তিনি চাকার মধ্যে পেয়ে যান। পটভূমিটা তিনি পেয়ে যান। এটা একটা তাঁর ইটারনাল জার্নির মতো ছিল।
উত্তর : তাঁর যে এক্সটারনাল কারেক্টারাইজেশন অব পার্সোনালিটি ছিল অ্যাজ অ্যা সিনেমাটোগ্রাফার – সেটাতে কিন্তু আপনি ওই জার্নিটাকে খুঁজে পাবেন না।
প্রশ্ন : তাঁর সঙ্গে অচিনপাখীতে কাজ করে বুঝেছি যে, তিনি ভেতরে ভেতরে কিছুটা অস্থির প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। বাইরের দিক থেকে আবার কথা বলতে খুব পছন্দ করতেন।
উত্তর : কিন্তু ক্যামেরার লক খোলার পরে নয়। আলাদা ধরনের একটা ট্রান্সফরমেশন ঘটত তখন তাঁর।
প্রশ্ন : তিনি তখন কী অবস্থায় থাকতেন, মানসিকভাবে?
উত্তর : ভেতরে কিছু একটা চলছে কিন্তু বাইরে তিনি অন্য একটা কিছুকে ডিল করছেন। আমি অভিনেতার জায়গা থেকে বলছি – তাঁর কাছ থেকেই একটা জিনিস প্রথম শিখতে পেলাম যে, রিয়ালিস্টিক সিনেমাটোগ্রাফার আসলে কী খোঁজেন পটভূমিতে, একজন অভিনেতার কাজে …।
প্রশ্ন : চাকা তো অনেকটা রিয়ালিস্টিক ধারার live chat 888sportই, না?
উত্তর : হ্যাঁ। কনটেন্টের ধারাবাহিকতায় হয়তো কিছুটা সুররিয়ালিস্টিক। কিন্তু প্রেজেন্টেশন অ্যাপ্রোচ তো রিয়ালিস্টিকই।
প্রশ্ন : তিনি কীভাবে শট টেক করতেন?
উত্তর : তাঁর তো নিজস্ব চয়েজ একটা থাকতোই। যেমন ধরুন ন্যাচারাল টাইমভিত্তিক যেসব শট নিতেন, সেগুলো কিন্তু খুব গুরুত্ব দিয়ে ধারণ করতেন।
প্রশ্ন : ল্যান্ডস্কেপ, আলো …।
উত্তর : সব মিলিয়ে। পুরো ক্যানভাস ধরার জন্য তিনি ন্যাচারাল ম্যাথমেটিক্সকে প্রাধান্য দিতেন। কোনো আরোপিত ম্যাথমেটিক্স পছন্দ করতেন না। এখনকার সিনেমাটোগ্রাফাররা কিংবা সিনেমা-নির্দেশকরা কিন্তু অনেক সিকিউরড। বায়ো-সিনেমাটোগ্রাফির পরবর্তী রিয়ালাইজেশনের ট্রান্সফরমেশনই আমরা দেখতে পাই এখনকার ডিজিটাল সিনেমাটোগ্রাফির লেন্স কিংবা ক্যামেরা-পরিচালনার অন্য জায়গাগুলোতে – এ-বিষয়গুলো কিন্তু বড় বড় সিনেমাটোগ্রাফারের স্কলারশিপেরই আইডেন্টিফিকেশন। আজকে যে ডিজিট ক্যারেক্টারাইজেশন আমরা দেখতে পাচ্ছি ফিল্মে, সে-জায়গাটায় আনোয়ার হোসেন ছিলেন একেবারেই ম্যানুয়েল।
প্রশ্ন : তিনি ন্যাচারাল লাইট পছন্দ করতেন, না আর্টিফিশিয়াল লাইট?
উত্তর : ন্যাচারাল লাইট। কিন্তু পুরো ছবিজুড়েই দু-ধরনের লাইটই আছে।
প্রশ্ন : প্রাকৃতিক আলো ও জেনারেটর এইডেড আর্টিফিশিয়াল আলো আছে। চাকায় একটা দৃশ্য আছে – যেখানে আর্টিফিশিয়াল আলো দিয়ে অন্ধকার তৈরি করা হয়েছে। সেই দৃশ্যে কিছুটা অন্ধকার কিছুটা আলোয় দেখা যায় মৃত যুবকটি একটা সিগারেট হাতে বড় গাড়োয়ানের দিকে হেঁটে আসছে – এসে সিগারেট ধরানোর জন্য আগুন চায়। বড় গাড়োয়ান দিয়াশলাই জ্বালিয়ে আগুন দেয়। সেই আগুনে সিগারেট ধরিয়ে ছেলেটি আবার ধীরে ধীরে আলো-আঁধারিতে মিলিয়ে যায়। দৃশ্যটা অবশ্যই সুররিয়ালিস্টিক …।
উত্তর : অন্ধকারে রিয়ালিস্টিক আলো তৈরি করা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। এটা তিনি তৈরি করতে পারতেন।
প্রশ্ন : এই রিয়ালিটি একটা কনস্ট্রাকটেড রিয়ালিটি। live chat 888sportে আলো দিয়েই তো অন্ধকার তৈরি করতে হয়, তাই না?
উত্তর : ঠিক তাই। এই সিনেমাটোগ্রাফার ভদ্রলোক অন্য একটা জগৎ-সংসারের মানুষ ছিলেন। সুফি-মাওলানা গোছের। যেটা একেবারে আননোন ফর আস। আমি একজন আর্টিস্ট হিসেবে ওটা ফিল করতে পারতাম। যাই হোক, তাঁর দক্ষতার জায়গাটা উন্মোচিত হতো ক্যামেরার লক খোলার পর। সাদাকালো জীবনের চিত্রায়ণের জায়গাটায় তাঁর একটা দখল ছিল। অভিনেতা, অবজেক্ট এবং সারফেস – এই তিনটি জিনিসের সিনক্রোনাইজেশন বা রূপকায়ণের জন্য টেক্সটের মাত্রাগুলো ধরে ছবিকে দর্শনগত জায়গা থেকে রিচমেন্টের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাকায় তাঁর আপ্রাণ একটা চেষ্টা ছিল। … একটা এনলাইটেনমেন্ট তাঁর ভেতর ছিল। সেই এনলাইটেনমেন্টের এক ধরনের যন্ত্রণাও তাঁর মধ্যে ছিল। এই যন্ত্রণার জায়গা থেকে এক ধরনের অস্থিরতাও ছিল। প্রচুর ওয়ার্ড ইউজ করতেন। কিন্তু জীবনকে চিত্রায়ণের জন্য যখন লুক দিচ্ছেন ক্যামেরায় তখন তিনি ওয়ার্ডলেস হয়ে যেতেন। অ্যাকশন ওকে হওয়ার পর তাঁর যদি অ্যাক্টরকে ভালো লাগত তাহলে ক্যামেরার পাশ থেকে একটা লুক দিতেন যেটাতে এ-কথাটা প্রকাশ পেত যে, ইউ হ্যাভ ডান ওয়েল। … তো মানুষ আনোয়ার হোসেনকে আবিষ্কার করেছি খুবই সিম্পল একজন ম্যান হিসেবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের কফিশপে আড্ডার সময় – সবসময় মায়া খুঁজে বেড়াচ্ছেন, ভালোবাসা খুঁজে বেড়াচ্ছেন, আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছেন, প্রেরণা খুঁজে বেড়াচ্ছেন, কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু নিজেকে কমিউনিকেট করতে পারছেন না, এসবের একটা যন্ত্রণা তাঁর ভেতর ছিল।৪
আশীষ খন্দকারের কথা থেকে আনোয়ার হোসেনের দৃশ্যধারণরীতি, তাঁর জীবনদর্শন, তাঁর একাকিত্ব, অস্তিত্বের যন্ত্রণা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। চাকা দেখার পর আমি নিজে ১৯৯৩ সালে লিখেছিলাম – ‘এই live chat 888sportের মূল সম্পদ এর চিত্রগ্রহণ। গ্রামাঞ্চলে scenic beauty চিত্রায়ণের ক্ষেত্রে আনোয়ার হোসেন অনবদ্য। তাঁর ক্যামেরায় ভর করে মৃত যুবককে নিয়ে যে-যাত্রা শুরু তা শেষ হয় নদীতীরে জেগে ওঠা বালুর বিছানার তলে মৃত যুবকের সৎকারের মধ্য দিয়ে।’৫ ওই একই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে এসেছিলেন সূর্য দীঘল বাড়ীর অন্যতম পরিচালক মসিহ্উদ্দিন শাকের (অন্যজন হলেন প্রয়াত শেখ নিয়ামত আলী)। তিনি ওই live chat 888sportে আনোয়ার হোসেনকে দৃশ্যধারণকর্তা হিসেবে যেভাবে মূল্যায়ন করেন তা প্রাসঙ্গিক বলে লিপিবদ্ধ করছি :
আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ে – তিনিও আর্কিটেকচারের ছাত্র ছিলেন। আমার চেয়ে দু-বছরের জুনিয়র। প্রথম থেকেই আমাদের ডিপার্টমেন্টে একটা গুঞ্জন যে, খুব ভালো একজন ফটোগ্রাফার ভর্তি হয়েছে, ভালো ছবি তোলে। … আনোয়ার (পুনে থেকে) আসার আগেই চিঠি লিখে জানালাম যে, এসেই কিন্তু এ-ছবিতে (সূর্য দীঘল বাড়ী) হাত দিতে হবে। আসার পর তিনি ছবিতে হাত দিলেন। … এটা ঠিক যে, মুভিতে যদিও স্টিল ফটোগ্রাফির সবকিছু অতো কাজে লাগে না। কিন্তু কিছু জিনিস আছে খুবই কাজে লাগে – কম্পোজিশন সেন্স, আলো-আঁধারের ব্যাপারটা – সেটাতে দেখলাম আনোয়ার হোসেন বেশ ভালো করছেন, সেই ব্যাকগ্রাউন্ড তাঁর ছিল। এটা তো তাঁর প্রথম ছবি, আমার নিজেরও তাই। কোনো ধরনের অভিজ্ঞতাই ছিল না ছবি বানাবার। … আনোয়ার হোসেনকে বা শুধু আনোয়ার হোসেন কেন, যে-কাউকে পরিচালনা করা খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপারই ছিল আমার জন্য। সেই দিক থেকে আনোয়ার হোসেন অনেক সহনশীল ছিলেন। আমার যে অভিজ্ঞতার অভাব, সেটা তিনি বুঝতে দেননি। তিনি যে-লেভেলে পড়াশোনা করে এসেছেন – সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর (সূর্য দীঘল বাড়ীর) বিশেষ একটা দৃশ্যে মনে হয়েছিল যে, দৃশ্যটা এভাবে নিলে ভালো হয়। আমাকে তিনি বললেনও। আমি তখন ভেবে দেখে এ-সিদ্ধান্তে আসি যে – না, আমি এতোদিন ধরে চিত্রনাট্য পর্যায়ে যেভাবে চিমত্মা করে এসেছি, সেক্ষেত্রে হঠাৎ করে নতুন চিমত্মায় গেলে হয়তো শট হিসেবে ওটা খুব ভালো হতে পারে, কিন্তু পুরো ছবিতে সেটাকে খাপ না-ও খাওয়ানো যেতে পারে; হয়তো অন্য শটগুলোর সঙ্গে সেভাবে যাবেও না। তখন আমি তাঁকে বলেছি – না, আমি যেভাবে বলেছি, সেভাবে করুন – আসলে একটা live chat 888sport তো live chat 888sportকারের ভাবনা-স্বপ্ন – কাজেই দীর্ঘদিন ধরে একজন live chat 888sportকার যেটা ভাবেন, সেটা এক মুহূর্তেই ভালো একটা শটের জন্যে বা ভালো একটা উপাদানের জন্যে সেখান থেকে সরে আসা যায় না। এটা কিছুদিন পরে তিনি বুঝেও গিয়েছিলেন। তারপর থেকে তিনি আর কোনো রকমের সাজেশন দিতেন না। ঠিক যেভাবে বলতাম যে – ক্যামেরা এখানে বসবে, এভাবেই শটটা নেওয়া হবে, সেভাবেই কাজ করেছিলেন। তার মধ্যে যা কিছু করা যায় – যতটুকু সুন্দর করা যায়, লাইটিংটা যত ভালো করা যায় – সেই চেষ্টা তো তাঁর ছিলই।৬
সূর্য দীঘল বাড়ী ও চাকার দৃশ্যমাত্রার তুলনামূলক আলোচনা করলেই দেখা যাবে যে, দুই live chat 888sportে বেশ চোখে পড়ার মতো দুই ধরনের দৃশ্যধারণরীতি উপস্থিত। কারণ প্রথমোক্তটিতে আনোয়ার হোসেনের শাসন ততটা ক্রিয়াশীল ছিল না, যতটা দ্বিতীয়টিতে ছিল – এ-কথার সত্যতা মসিহ্উদ্দিন শাকের ও আশীষ খন্দকারের কথায় যেমন পাই, তেমনি দুটি live chat 888sportের দৃশ্যমাত্রা নিরীক্ষণ করলেও বুঝতে পারবো। সূর্য দীঘল বাড়ীতে নির্মাতা যেভাবে দৃশ্যধারণ করতে বলেছেন, ঠিক সেইভাবেই তা গৃহীত হয়েছে। প্রায়শই স্ট্যাটিক ফ্রেমের মধ্যেই সব চরিত্র চলাফেরা করেছে; সব ঘটনা ঘটেছে; চরিত্র-ঘটনাকে অনুসরণ করে ক্যামেরা মাঝেমধ্যে প্যানজুম ইন-জুম আউট করেছে; টিল্ট আপ-টিল্ট ডাউন প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে চাকার দৃশ্যধারণের ক্ষেত্রে নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম আর ক্যামেরা-সঞ্চালক আলোচনা করে তথা একে-অন্যের মতামত গ্রহণ করে শট নিতেন বলে এতে আনোয়ার হোসেনের শাসন বেশ ক্রিয়াশীল ছিল, যার প্রমাণ আশীষ খন্দকারের কথায় পাওয়া যায়, live chat 888sportটিতে তো আছেই।
চাকায় স্ট্যাটিক ফ্রেমের আধিক্য খুবই কম, যা সূর্য দীঘল বাড়ীতে প্রবলভাবে বিদ্যমান। বদলে টিল্ট আপ-টিল্ট ডাউন বা প্যান করে চরিত্র-ঘটনাকে তথা সাবজেক্টকে ধরা হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ ফ্রেমের ওপরের অনেকটা জুড়েই আকাশ-প্রকৃতি দেখা যায়; প্রাকৃতিক আলোর মাত্রিক ব্যবহারও আছে; রাতের দৃশ্যের আলোও বেশ সফট; আলো-আঁধারীর খেলা ও সিলুএট তথা অনুজ্জ্বল পটভূমিতে দৃশ্যকে ধরা হয়েছে। সিলুএটে ধারণ করা একটি শটে দেখা যায় দুই গাড়োয়ান গরুর গাড়িতে একটি আন-আইডেন্টিফাইড যুবকের লাশ নিয়ে গাঁয়ের কাঁচা রাস্তা ধরে চলেছে – প্রকৃতিতে তখন সন্ধ্যা নামছে : অসাধারণ একটি দৃশ্য – প্রকৃতি যে মানুষের সুখ-দুঃখের প্রতি নিদারুণভাবে উদাসীন এবং নিজে যে দারুণভাবে গরীয়ান-মহীয়ান – তা এ-দৃশ্যে প্রকাশমান। উলিস্নখিত সবকিছুতেই আনোয়ার হোসেনের নিজস্ব কম্পোজিশন সেন্সের নান্দনিকবোধের চিহ্ন পরিস্ফুট। এই প্রবণতা আনোয়ার হোসেনের একটা বিশেষ দৃশ্যধারণরীতি বলেই মনে হয়। তানভীর মোকাম্মেল-পরিচালিত লালসালুতেও এই প্রবণতার কিছু উপস্থিতি আছে – live chat 888sportটির দৃশ্যধারণরীতি দেখে আনোয়ার হোসেনকে এর অন্যতম একজন অথর বলে মনে হয়েছিল। তখন লিখেছিলাম – ‘লালসালু’র অথরশিপের প্রশ্নে এর ক্যামেরা-সঞ্চালক আনোয়ার হোসেনকে বারবার 888sport app download for android করতে হবে। তাঁর ক্যামেরায় প্রাণ ও প্রকৃতি এমন 888sport live chatিতভাবে চিত্রায়িত হয়েছে, যাতে করে বলতে দ্বিধা নেই যে, ‘লালসালু’র অথর দুজন নয় – তিনজন (সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, তানভীর মোকাম্মেল ও আনোয়ার হোসেন)। ‘live chat 888sportীয় 888sport live chat’র বেলায় এভাবেই ‘অথরশিপ’ ভাগ করে নিতে হয়।’৭ সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে যে, দৃশ্যধারণ ক্ষেত্রে আনোয়ার হোসেনের একটা বিশেষ ধরন ছিল। একটা ধরন যখন পৌনঃপুনিকভাবে ফিরে আসে, তখনই তাকে রীতি বলে শনাক্ত করা সমীচীন।
এই বিশেষ ধরনের উপস্থিতি প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয় তানভীর মোকাম্মেল-পরিচালিত ও আনোয়ার হোসেন-চিত্রায়িত অচিনপাখী প্রামাণ্যচিত্রে। এই প্রামাণ্যচিত্রে পরিচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলাম। অভিনয়ও করেছি পুরোহিতের চরিত্রে – কুমারখালি শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গড়াই নদীতে ধুতি পরে খালি গায়ে পইতাসহ সূর্যবন্দনা করেছি। তখন সাত-আট দিন একসঙ্গে কাজ করার সূত্রে আনোয়ার হোসেনের শটগ্রহণের ধরন কাছে থেকে দেখেছি। লালন শাহের মাজার, মাজারের পেছনের তাঁতিদের বাড়ি, কুমারখালি, শাহজাদপুর, পদ্মার পাড়ে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি-কাছারিবাড়ি প্রভৃতি জায়গায় শুটিং করতে হয়েছে। তখন দেখেছি তিনি পরিচালকের কথা শুনতেন বটে; কিন্তু প্রায়শই নিজের মতো করে শট নিতেন। মূল সাবজেক্টে তিনি আসতেন কখনো বাঁ-ডান থেকে প্যান করে; কখনো টিল্ট ডাউন-টিল্ট আপের মাধ্যমে। তাছাড়া অহরহ জুম ইন-জুম আউটের মাধ্যমে সাবজেক্টের কাছে আসতেন, দূরে সরে যেতেন।
অচিনপাখীর শুরুতেই পুরো ফ্রেম জুড়ে একতারার ওপরের অংশ দৃষ্ট হয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে এসে ক্যামেরা থামে – আমরা একতারার সঙ্গে যুক্ত একটি পাখির অবয়ব দেখতে পাই। ফ্রেমটি ফিক্সড হলে ফ্রন্ট টাইটেল শুরু হয়। কাট – এবার পড়ন্তবেলার সূর্য – ক্যামেরা টিল্ট ডাউন হয় – নদীর জলে সূর্যের ছটা – নৌকা চলছে। কাট – ক্যামেরা এবার জুম ব্যাক করে। কাট – আবার নদীতে নৌকা বয়ে চলেছে – ক্যামেরাও প্যান করে। শুরুতেই ক্যামেরা-সঞ্চালনের গতিপ্রকৃতির ধরন-চলন দাঁড় করান আনোয়ার হোসেন। দেখা যাচ্ছে ক্যামেরা বাঁ-ডান বা ওপর-নিচ থেকে সাবজেক্টের কাছে আসে – যেন নিজেই সে একটি চোখ।
(অচিনপাখী : ০ : ০০ : ০১ – ০ : ০০; ২০)
আনোয়ার হোসেন দৃশ্যধারণের সময় ইম্প্রোভাইজ করতেন – নিজের ইনস্টিংকট ব্যবহার করতেন। আলোচ্য প্রামাণ্যচিত্রের একটি জায়গায় ফকির মহিন শাহ যখন পদ্মার পাড়ে নৌকায় বসে ‘শুদ্ধ প্রেম রসিক বিনে কে তারে পায়’ গানটি করছেন তখন ক্যামেরা বাঁদিক থেকে প্যান করে এসে তাঁকে ধরে। (অচিনপাখী : ০ : ১৬ : ১৫ – ০ : ১৭ ; ৩৯)। আরেকটি জায়গায় মহিন শাহ গড়াই নদীর পাড়ে বসে প্রাক্-সন্ধ্যায় কথা বলছেন। একপর্যায়ে গান ধরেন – ‘মদিনায় রাসুল নামে কে এলো ভাই’ – ক্যামেরা একসময় মহিন শাহকে ছেড়ে খেজুর গাছ বেয়ে ওপরে ওঠে আকাশে স্থিত হয় – কিছুক্ষণ স্থির থাকার পর আবার আবার নেমে এসে সাবজেক্ট তথা মহিন শাহকে ধরে এবং একইসঙ্গে জুম করে তাঁর কাছে চলে আসে (ক্লোজআপ)। এই কম্পোজিশন তাৎক্ষণিকভাবে-তাৎস্থানিকভাবে আনোয়ার হোসেন ক্যামেরায় চোখ রেখেই করেছিলেন।
মনিটরে নির্মাতা তো ছিলেনই – তাঁরও ইনপুট ছিল এরকম শট-কম্পোজিশনে।
(অচিনপাখী : ০ : ২০ : ৪০ – ০ : ২১; ২৭)
আলোচ্য প্রামাণ্যচিত্রে ‘বাড়ির কাছে আরশী নগর’ গানটি যখন গীত হয় ক্যামেরা তখন প্রকৃতি-গাছগাছালি-নদী-নৌকা ধরে। গান চলাকালে ক্যামেরা স্ট্যাটিক ফ্রেম থেকে জুম আউট হয় এবং একপর্যায়ে প্যান করে নদীতে চলমান নৌকার সঙ্গে বয়ে চলে। এভাবে প্রকৃতির সঙ্গে আনোয়ার হোসেনের ক্যামেরা ইন্টারঅ্যাকশনে গেছে পুরো প্রামাণ্যচিত্রটি জুড়েই। (অচিনপাখী : ০ : ২১ : ৫৭ – ০ : ২২; ১৭)। প্রামাণ্যচিত্রে ক্যামেরা-সঞ্চালক যতটা স্বাধীনতা পান, কাহিনিধর্মী live chat 888sportে ততোটা পান না – এ-বোধ আমার অচিনপাখীতে কাজ করতে গিয়ে জন্মেছে। তাছাড়া মসিহ্উদ্দিন শাকেরের কথাতেও তার সত্যতা পাওয়া যায়। আরেক জায়গায় ফকির মহিন শাহ যখন আখড়ায় বাউলতত্ত্ব সম্পর্কে কথা বলছেন তখন ক্যামেরাকে প্রো-অ্যাকটিভ হয়ে উঠতে দেখি। ক্যামেরা বক্তা ছেড়ে আশপাশের ঘটনাবলি ধরা শুরু করে : এক সাধক দিয়াশলাইয়ের জ্বলন্ত কাঠির আগুনে আগরবাতি জ্বালাচ্ছে – ক্যামেরা জ্বলন্ত কাঠির ক্লোজআপ থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠে এক সাধককে ফ্রেমবন্দি করে। সাধুসঙ্গ চলছে বোঝা যায়। ক্যামেরা আবার সাধকের কাছ থেকে জুম ব্যাক করলে দেখা যায় তিনি একটা বালুভরা গ্লাসে আগরবাতিগুলো পুঁতে দিচ্ছেন। এখানে ক্যামেরা দিয়ে যেন কথামালা তৈরি করেছেন আনোয়ার হোসেন। (অচিনপাখী : ০ : ২২ : ৫৭ – ০ : ২৫; ০৮)।
অন্যত্র একদল বাউল গান করছে – ফ্রেমে গাছ ধরা – ক্যামেরা স্টাটিক পজিশন থেকে টিল্ট ডাউন হয়ে নিচে নামে : গান হচ্ছে – ক্যামেরা জুম করে প্রথমে গায়কের কাছে আসে, তাঁকে ছেড়ে অতি ধীর লয়ে দোতারা বাদকের কাছে যায়। কাট – ক্লোজআপে দোতারা – জুম আউট। কাট – ক্যামেরা অতি ধীরে ট্রলিতে চেপে আখড়ায় আসা বাউলদের ধরে। গানের লয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই আনোয়ার হোসেন এ-দৃশ্যে ক্যামেরা চালিয়েছেন। (অচিনপাখী : ০ : ২৫ : ২২ – ০ : ২৬; ২৬) প্রামাণ্যচিত্রটির কিছু অংশ পশ্চিমবঙ্গে তোলা হয়েছে। ওখানে ক্যামেরা চালিয়েছেন রঞ্জিত পালিত। একটা জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের বাউলতত্ত্ববিদ সুধীর চক্রবর্তী কথা বলছেন গুরু-মুরশিদ সম্পর্ক প্রসঙ্গে। কথার ফাঁকে বাউলদের কিছু শট ইনসার্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে – জুম ইন-জুম আউট এবং প্যানও করে ক্যামেরা, কিন্তু ক্যামেরা সততই স্থির। যিনি মূল কথক (সুধীর চক্রবর্তী) তিনিও ফিক্সড ফ্রেমেই থাকেন। (অচিনপাখী : ০ : ২৬ : ৭৭ – ০ : ২৭ ; ৩১/০ : ৩৫ : ২২ – ০ : ৪৩; ০৮)। অন্যদিকে আমরা দেখেছি আনোয়ার হোসেন কথককে ফেলে চলে গেছেন বাঁয়ে-ডানে; বাঁ-ডান থেকে এসে কথককে ধরেছেন; জুম ইন-জুম আউট করেছেন; টিল্ট ডাউন-টিল্ট আপ করেছেন; মন্থর গতির ট্রলি শটও নিয়েছেন; কিন্তু রঞ্জিত পালিত তা করেননি। তাঁর ফ্রেমিং-কম্পোজিশনও ভিন্ন। এ থেকে বোঝা যায়, অচিনপাখীর দৃশ্যধারণরীতির ক্ষেত্রে আনোয়ার হোসেনের নিজস্ব একটা স্কিম তথা সংকল্পনা ছিল।
এই সংকল্পনার পরিপূর্ণ রূপ বুঝতে হলে আনোয়ার হোসেন যেসব live chat 888sportে ক্যামেরা-সঞ্চালন করেছেন সেসব live chat 888sportের দৃশ্যমাত্রা তথা ভিজ্যুয়াল কনস্ট্রাকশনটি ভেঙে ভেঙে পাঠ করতে হবে। আমি এই রচনায় সামান্য একটি উদ্যোগ নিয়েছি মাত্র। ওইসব দৃশ্যমাত্রার মধ্যেই তো তিনি বেঁচে আছেন। ওখানেই তো আনোয়ার হোসেন নামে আসল মানুষ তথা অধরচাঁদ আছেন। বাউলরা যেমন বাতাস ধরে-ছেঁকে অধর মানুষকে পাবার সাধনা করেন, তেমনি আনোয়ার হোসেন কর্তৃক গৃহীত দৃশ্যখ-সমূহ ধরেই-ছেঁকেই তাঁকে পেতে হবে। কারণ তাঁর live chat 888sportায়িত live chat 888sportগুচ্ছের শরীরেই তো তাঁর অধিষ্ঠান!
তথ্যনির্দেশ
১. মাজিদ মিঠু, ‘আনোয়ার হোসেন’, ডিজলভ্, সম্পাদক : ড. সাজ্জাদ বকুল, রাজশাহী, ২০১৫, পৃ ১৬।
২. সাজেদুল আউয়াল, ‘গ্রন্থমুখ’, সত্যজিতের স্রষ্টাবৃত্তি, সম্পাদক : সাজেদুল আউয়াল, নান্দনিক, 888sport app, ২০১৩, পৃ ১৮।
৩. অচিনপাখী, নির্মাতা : তানভীর মোকাম্মেল, ডিভিডি : মেমোরি, 888sport app, ১৯৯৬। এই রচনায় ব্যবহৃত অচিনপাখীর সকল টাইমলাইন উলিস্নখিত ডিভিডি থেকে নেওয়া।
৪. ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮তে 888sport apps শর্টফিল্ম ফোরাম-আয়োজিত প্রয়াত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন 888sport app download for androidে আলোচনা ও live chat 888sport-প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত বক্তা আশীষ খন্দকারের সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ।
৫. সাজেদুল আউয়াল, ‘চাকা : ঈর্ষণীয় সৃষ্টি’, live chat 888sportকলা, বাংলা একাডেমি, 888sport app, ২০১০, পৃ ৫৭।
৬. ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮-তে 888sport apps শর্টফিল্ম ফোরাম-আয়োজিত প্রয়াত আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন 888sport app download for androidে আলোচনা ও live chat 888sport প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত বক্তা মসিহ্উদ্দিন শাকেরের বক্তৃতার অংশবিশেষ।
৭. সাজেদুল আউয়াল, ‘চাকা : ‘লালসালু’ 888sport alternative linkের live chat 888sportরূপ প্রসঙ্গে’, পূর্বোক্ত, পাদটীকা নং ৫, পৃ ৭৯।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.