আন্তিগোনে: দুঃখদহন ও প্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি

হোমরীয় (খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতক) মহাকাব্য দুটির কাহিনী ও ঘটনাপরম্পরা বিশ্লেষণ করে এটা বলা যায় যে, পশুপালন, সীমিত পর্যায়ের কৃষিকাজ ও লুণ্ঠন ইত্যাদি আশ্রয় করে প্রাচীন গ্রিসের আদিম পিতৃপ্রধান সমাজের বিকাশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ইতিহাসে গ্রিকদের উত্থানের কালেই দেখা যায় যে, তারা বিকশিত রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে আয়ত্ত করেছিল সমৃদ্ধ ভাষা – যা বিচিত্র পুরাণকথা ও 888sport live footballের বাহক হয়েছে অনায়াসেই। দাসশ্রমের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য-বাণিজ্যের মাধ্যমে গ্রিসে ধীরে ধীরে নগর-রাষ্ট্রের পত্তন হয়েছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম-৮ম শতকে গ্রিসে এই নগর-রাষ্ট্রের সূচনা হয়, যা অভিজাততন্ত্রের দ্বারা শাসিত হতো। এই অভিজাত শাসকবর্গ দাসসমাজ, কৃষকশ্রেণি ও সাধারণ মানুষের ওপর রীতিমতো শক্তিপ্রয়োগ করে নিজেদের শাসন বজায় রেখেছিল। এই অভিজাত শাসকের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের শুরুতে কৃষক, কারিগর, শ্রমিকদের সমবেত উদ্যোগে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অভিজাত সামন্ততান্ত্রিক শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করতে জনসাধারণের সঙ্গে উচ্চাভিলাষী ব্যবসায়ী সমাজও যুক্ত হয়েছিল। অভিজাততন্ত্র উচ্ছেদ হলেও তার স্থলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। একনায়কতন্ত্রের অধীনেই এথেন্স কৃষিজীবী রাষ্ট্র থেকে বাণিজ্যিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বাণিজ্য-প্রসারের ফলে এথেন্সের সমাজপটে নবতর আলোড়ন দেখা দেয়। এই আলোড়ন সংস্কৃতি-ক্ষেত্রে পরিবর্তনের সূচনা করে। এই পরিবর্তনের পথ ধরেই আবার স্বৈরতন্ত্রের পতন আসন্ন হয়ে ওঠে। গ্রিস ভূখণ্ডকে পারসিকদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার মতো শক্তি স্বৈরতন্ত্রের ছিল। পারসিকদের সাম্রাজ্য-বিস্তারের ফলে এথেন্সের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে। অভিজাততন্ত্রকে উচ্ছেদ করে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা সমাজের আমূল ধরে নাড়া দিয়েছিল এমন নয়। এথেন্সের গণতন্ত্রের ভিত্তি ছিল দাসশ্রম। দাস-সমাজ এবং 888sport promo code কেউই গণতন্ত্রের আস্বাদ গ্রহণ করতে পারত না। দাস-সমাজ, 888sport promo code, বিদেশী নাগরিক – এদের কোনো রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। এথেন্সের সমাজে এটাই স্বাভাবিক ছিল। সক্রেটিস এই নিয়ে কোনো প্রশ্নই তোলেননি। তাঁর শিষ্য প্লেটো (৪২৮-৩২৭ খ্রিষ্টপূর্ব) অবশ্য 888sport promo codeর সার্বিক মুক্তির (ঊসধহপরঢ়ধঃরড়হ) প্রস্তাব করেছিলেন।

পেরিক্লিসের রাজত্বকাল (৪৬১-৪২৯ খ্রিষ্টপূর্ব) এথেন্সের গণতন্ত্রের গৌরবময় যুগ। সক্রেটিস এই গৌরবের কালেই জন্মেছিলেন (৪৬৯-৩৯৯ খ্রিষ্টপূর্ব)। গণতন্ত্রের এই কালেই জীবনকে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও সমালোচনা করার কথা বললেন সক্রেটিস। ্লনিজের জীবনের মুখোমুখি হলো না যে-ব্যক্তি, কর্তব্য-অকর্তব্য, উত্তম-অনুত্তমের আর্দশ খুঁজল না যে-মানুষশ্ ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, সুন্দর-কুৎসিত, শ্রেয় পরিহার্য কিছুই করতে পারল না, তার বেঁচে থাকা তো উদ্ভিদ বা কীটপতঙ্গের বেঁচে থাকা। তার মূল্য কী? এথেনীয় নাগরিকের জীবন-ব্যক্তিজীবন, যৌথজীবন দুই-ই এথেনীয় সমাজ, এথেনীয় নাগরিকের সঠিক আচরণ, নগর-রাষ্ট্রের শেষ লক্ষ্য, উত্তম-জীবনের আদর্শ – এ-সবই সক্রেটিসের নিরন্তর সমালোচনার অধীনস্থ হলো। প্রায় সমসাময়িককালেই পেরিক্লিসের স্বর্ণযুগেই জন্মেছিলেন – গ্রিসের ধ্রুপদী নাট্যকারত্রয়ী – যথাক্রমে ইস্কাইলাস (খ্রিষ্টপূর্ব ৫২৫-৪৫৫), সফোক্লিস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৯৬-৪০৬) এবং ইউরিপিডিস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮০-৪০৭)। ৪৮০ থেকে ৪২৯ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে পেরিক্লিসের মৃত্যু পর্যন্ত এথেন্স অব্যাহত সমৃদ্ধি ও শান্তি ভোগ করেছিল। ধীরে ধীরে অসভ্য বর্বরতা থেকে গ্রিক সমাজ-সভ্যতার দৃঢ় ভিত্তির ওপরে দাঁড়াতে সমর্থ হলো। বলা যায়, ্লপঞ্চম শতকের শেষ কয় দশকে সমস্ত গ্রিস, বিশেষত এথেন্স একটি মননের যুগে পদার্পণ করেছিল। পশ্চিম ইউরোপে সতেরো শতকের শেষার্ধে যা ঘটেছিল তার সঙ্গে এর তুলনা চলে। এই যুক্তিবাদের নবযুগের মহত্তম প্রতিভূ-পুরুষ ছিলেন সক্রেটিস।শ্২ পাপ, পুণ্য, ন্যায়, অন্যায়, কর্তব্য, অকর্তব্য, রাজার অধিকারের সীমা, জাগতিক জীবনের নৈতিকতা ও ধর্ম – এই সমস্ত বিষয় নিয়ে এথেনীয় নাগরিকদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। সেসব প্রশ্ন মানুষকে দ্বন্দ্বের আবর্তে ফেলে কীভাবে আলোড়িত করেছিল তারই 888sport live chatিত ও পরিশীলিত রূপ দেখা যায় ধ্রুপদী নাট্যকারদের সৃষ্টিকর্মে। দুঃখভোগ ও প্রজ্ঞার মধ্যে যে-সম্বন্ধ রয়েছে তা ইস্কাইলাসের নাটকের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত হয়েছে। সফোক্লিসও অগ্রজের উত্তরাধিকার বহন করেছেন।

আন্তিগোনে নাটকও শেষ হয়েছে সংস্তবের (কোরাসের) এই বাণীতে – মানুষের কাছে প্রজ্ঞার চেয়ে মহত্তর আর কিছু নেই।শ্৩ রাজাজ্ঞা নিষেধ করে আন্তিগোনে পোলুনাইকেসকে কবর দিয়েছে। তার যুক্তিবাদী মন মৃত ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত রাখতে চায় না। রাজরোষ, কঠিনতম দণ্ড, প্রিয়বিচ্ছেদ – কিছুই আন্তিগোনেকে তার সংকল্প থেকে বিচ্যুত করেনি। এক পরম অভিশপ্ত, দুঃখী পিতার সন্তান তারা। পিতা ইডিপাস নিজের কাছে নিজেই করুণ, ঘৃণিত, অপরাধী, অসম্মানিত তার জীবন, দুই ভাই এতেয়াক্লেস আর পোলুনাইকেস আত্মঘাতী যুদ্ধে ছারখার হয়ে গেছে। একজন ক্রেয়নের আদেশে পেয়েছে বীরের সম্মান, শহীদের মর্যাদা। বোন ইসমেনে রাজাজ্ঞা অমান্য করতে ভয় পায়। দুঃখের আগুনে পুড়ে আন্তিগোনে উপলব্ধি করে পার্থিব জীবনের শত দুর্ভোগ সত্ত্বেও মৃত্যুর পরে মানুষের হাতে মৃত মানুষের কিছু প্রাপ্য থাকে। মৃত ব্যক্তির সৎকার করা সভ্য সমাজের কর্তব্য। মৃত ভাইকে উপযুক্ত অর্ঘ্য দিয়ে শেষশয্যা দেওয়া তার কর্তব্য। সেজন্যেই ইসমেনের প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, আমি আমাকে মানতে চাই, তিনি কেন হাত দিতে যান?শ্৪ রাজাজ্ঞা অমান্য করে মৃত ভাইকে সৎকার করার মতো সাহস ও প্রতিস্পর্ধা আন্তিগোনের আছে। অন্যদিকে সহোদরা ইসমেনে রাজশক্তিকে অবহেলা করার মতো শক্তি, মেধা ও সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি। সে তৎকালীন গ্রিসের চিরায়ত 888sport promo codeর মতোই বলেছে, ্লআমরা দুজনা একা, আন্তিগোনে, মোরা শুধু 888sport promo code,/ আমরা শুধু যে 888sport promo code, পুরুষের সঙ্গে পারব না,/ আমরা তাদের প্রজা, সর্বসহা, ধৈর্যমাত্রসার/ যারা পরলোকগত সবাকার ক্ষমা চেয়ে আমি/ জীবিত প্রভুর কাছে ছায়ার মতন অনুগত,/ সাধ্যের বাইরে যাওয়া আমাদের পক্ষে যে মূঢ়তা।শ্৫ আন্তিগোনে সাধ্যের বাইরে গিয়ে তার কর্তব্য সাধন করেছে; অকম্পিত চিত্তে সে ক্রেয়নের মুখোমুখি হয়েছে – তার কাছে যা অকর্তব্য, 888sport promo code হলেও আন্তিগোনের কাছে তা কর্তব্য। তৎকালীন গ্রিসের ব্যক্তি ও যৌথ-জীবনের কর্তব্য-অকর্তব্য শ্রেয়-পরিহার্যের দ্বন্দ্ব এভাবেই আন্তিগোনে ও রাজা ক্রেয়নের দ্বন্দ্বের মধ্যে বিকশিত হয়েছে। অন্যদিকে ইসমেনে বাধ্য, অনুগত, সর্বসহা, ধৈর্যশীল হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। নানাভাবে আন্তিগোনেকে নিরস্ত করতে চায়। ঋজু, একরোখা আন্তিগোনে বোনের দুর্বল, পরবশ উক্তির উত্তরে বলে, আমার ভাইকে দেবো সমাধির শান্তি, সেইজন্য/মৃত্যু যদি প্রয়োজনে হয়: তা-ও ভালো তাই ভালো।…সে-মৃত্যু বরেণ্য। মৃতকে সৎকার করা, আত্মীয়পরিজন সকলে মিলে তার জন্য শোকসন্তাপ প্রকাশ করার রীতি মহাকাব্যের যুগেও প্রচলিত ছিল। মৃত্যুর পর মানবীয় মর্যাদায় বীরের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। নিকটজনের মমতায়, স্নেহে তার সমাধি হবে। একজন মরণশীল মানুষের এটাই স্বাভাবিক পরিণতি বলে বিবেচিত হতো।

এখন আমরা গ্রিসের সমাজব্যবস্থার দিকে তাকালেই দেখতে পাবো 888sport promo codeর সামাজিক অবস্থান কেমন ছিল? পেরিক্লিসের এথেন্সে যে-গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল তার মধ্যে সীমাবদ্ধতা ছিল। তিন লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে মাত্র চল্লিশ হাজার স্বাধীন পুরুষমানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার অনুমোদন পেয়েছিল। গ্রিক সমাজে দাসপ্রথা ছিল দৃঢ়মূল, অপরিবর্তনীয়, 888sport promo codeর অবস্থা দাসদের মতো না-হলেও তারা ইসমেনের ভাষ্য অনুযায়ী ্লপুরুষের প্রজাশ্। প্রজার পক্ষে প্রভুর প্রতি অনুগত থাকাই বাপ্নীয়। পেরিক্লিসের এথেন্সে 888sport promo codeর অবস্থান কী-রূপ ছিল তা ঐতিহাসিক থুকিডাইডিসের একটি উক্তি থেকে কিছুটা জানা যায়। তিনি বলতেন ‘That women is best who is least spoken of among men’- whether for good or for evil তার প্রধান কাজ ছিল রান্না করা, তাঁত বোনা, গৃহস্থালি কাজকর্ম ও দাসদের তদারকি করা। তাকে কদাচিৎ প্রকাশ্য-সমাজে বের হবার অনুমতি দেওয়া হতো, এমন কী স্বামীর বন্ধুবর্গের সামনেও। অন্যদিকে স্পার্টা এবং ডোরীয়ান রাষ্ট্রগুলোয় 888sport promo codeর অবস্থান ছিল অনেক সম্মানজনক এবং বস্ত্তত সমাজেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

কারো কারো মতে, হেলেনীয় গ্রিস এসব থেকে মানুষকে মুক্ত করার চেষ্টাই করে চলেছিল। বিশেষত গ্রিকরা 888sport promo codeকে অবদমিত করে রাখেনি। প্লেটো (৪২৮-৩৪৭ খ্রিষ্টপূর্ব) তাঁর রিপাবলিক গ্রন্থে কৃত্রিম বাধা-নিষেধের অর্গল থেকে 888sport promo codeর সম্পূর্ণ মুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন। নাট্যকারদের মধ্যে ইউরিপিদিস প্রকৃষ্ট অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে উদার প্রশংসাসূচক 888sport promo codeচিত্র সৃষ্টি করেছেন। সমসাময়িক সাধারণ মানুষ যা ভাবত ইউরিপিদিসের মতো অসাধারণ প্রতিভাধর নাট্যকার তারই প্রমাণ যেন তাঁর নাটকে উপস্থিত করেছেন। আরো উল্লেখ্য, গ্রিক-ট্র্যাজেডির 888sport promo codeচরিত্রসমূহ। ভালো এবং মন্দ দুই রকমের চরিত্রের মধ্যে ক্লাইটেমেনেস্ত্রা, আন্তিগোনে, আলচেস্টিস, যোকাস্টা, ফিদ্রা, মিডিয়া এবং ট্র্যোজান 888sport promo codeকুল সবাই চিন্তা ও কর্মে মুক্ত, স্বাধীন। পুরুষ-চরিত্রের মতোই মনোযোগ, সহানুভূতি ও মর্যাদাসহকারে চরিত্রগুলো অঙ্কিত হয়েছে। আমরা দেখি, নাটকের উল্লেখযোগ্য 888sport promo codeচরিত্রগুলো অভিজাতসমাজেরই বাসিন্দা। অনভিজাত চরিত্র নিয়ে ধীরোদাও গুণসম্পন্ন ট্রাজিক চরিত্র নির্মাণ করা যায় না। বিদ্যমান অবরূদ্ধ অবস্থা থেকেই 888sport promo code তার মুক্তচিন্তার প্রকাশ ঘটিয়েছে। ইসমেনে ও আন্তিগোনের চরিত্র দুটির মধ্য দিয়ে তৎকালীন গ্রিসের 888sport promo codeর সামাজিক অবস্থার চিত্র আমরা পাই। একজন প্রথাকে মেনে রাজাজ্ঞা শিরোধার্য করে ্লপুরুষের প্রজাশ্ হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। অন্যজন রাজাজ্ঞার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের জন্যে সংগ্রামরত। তার যুক্তিবাদ ও সাহস অপ্রতিরোধ্য। নিরুদ্ধ আবেগে ক্রেয়নের প্রশ্নের উত্তরে নিষিদ্ধ আইন সম্বন্ধে সে উচ্চারণ করে, ্ল…রাজার আজ্ঞা দুষ্পিতার দৈববাণী নয়;/মৃত্যুর তমসাবৃত সূনৃতা প্রজ্ঞার সিংহাসন,/সেই সিংহাসন থেকে বারণ তো শুনতে পাইনি/ রাজার নিষেধ এত দৃঢ় নয় যে নশ্বর মানুষ/মুছে দেবে ঈশ্বরের অলিখিত অমোঘ নিয়ম।/ শুধু আজকের নয়, কিংবা শুধু কালকের নয়,/ নিত্যনিয়মের ধারা বয়ে চলে, উৎস যে কোথায়, কে জানে? কেউ জানে না।… জানি যে মানুষ মরে, আমাকেও মরতেই হবে আজ না-হয় কাল,/ …. শেষের প্রহর তাই ঘনাবার আগে আমি যদি/ পালা শেষ করি তবে জয় হবে আমার জয় হবে।

আন্তিগোনের পিতা নিয়তি-নির্দিষ্ট পাপের বোঝা বয়ে বেড়িয়েছে আমৃত্যু। পাপের অন্ধকারকে ইডিপাস সন্তের মতোই অতিক্রম করতে চেয়েছে নিজের দুচোখ নিজ হাতে দৃষ্টিহীন করে দিয়ে; যেন প্রার্থনা এই –

আঁখি গেলে মোর সীমা চলে যাবে

একাকী অসীম ভরা

আমারি আঁধারে মিলাবে গগণ

মিলাবে সকল ধরা।

ফ্রেডিরিক নিটশে ইডিপাসের এই নিয়তি-নির্দিষ্ট দুঃখবহনের যাত্রাকেই বলেছেন, Ô… The prelude to a victory hymn for the saint. আন্তিগোনে এই বেদনাবিক্ষত সন্ত পিতারই সন্তান। সফোক্লিসের বীরচরিত্রগুলো তাদের ব্যক্তিসত্তা, মহত্ত্ব, স্বাধীনতা ও শক্তিমত্তার ওপর জোর দিয়েছে। আপস-নমিত জীবনের চেয়ে মৃত্যুকে শ্রেয়তর মনে করেছে আন্তিগোনেও। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে সর্বকালের মহৎ দার্শনিক সক্রেটিস মৃত্যুদণ্ড পাবার পরে মেলেটাসের সঙ্গে সংলাপের এক পর্যায়ে বলছেন, ‘…এজাকস যিনি তেলামোনের পুত্র অথবা প্রাচীনদের মধ্যে অন্য কেউ যারা মর্ত্যে অন্যায় বিচারের রায়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও আলোচনা অবিমিশ্র আনন্দ-অভিজ্ঞতা এনে দেবে। তাঁদের সঙ্গে আমার নিজের বিচারের তুলনামূলক আলোচনাও অতীব আনন্দের কারণ হবে। সফোক্লিস এজাকসের চরিত্র নিয়ে নাটক রচনা করেছিলেন, যাতে নির্বাসিত ঘৃণিত ও লজ্জিত এজাকস আত্মহত্যা করেছিলেন।

সফোক্লিসের 888sport app বীরচরিত্রের মতোই আন্তিগোনে অন্তর্দৃষ্টি (Intution) দিয়ে নিজের ব্যক্তিসত্তাকে যৌক্তিক শৃঙ্খলায় প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফলত তা সংকট অতিক্রমণে সহায়ক শক্তির ভূমিকা পালন করেছে। ইসমেনে ক্রেয়নের অনুগত থাকতে চাইলেও বোনের কৃত অপরাধের জন্য দুজনকেই প্রহরীরা অন্দরমহলে নিয়ে গেল। ক্রেয়ন (যার অর্থ ক্ষয়রনক্ষ বা শাসক) আদেশ দিলেন, নিয়ে যাও দুবোনেরে অন্তঃপুরে ওরা যেন বোঝে 888sport promo codeর এলাকা শুধু অন্দরমহল।শ্ ক্রেয়ন যথার্থই দর্পিত শাসক, তিনি মনে করেন, মানুষের জগতে যত পাপ আছে, তার মধ্যে অবাধ্যতা সবচেয়ে গর্হিত কাজ, যা ঘরকে ধূলিসাৎ করে, রাজ্যকে শ্মশান বানায়। আন্তিগোনের শান্তিভঙ্গকারী অবাধ্য আচরণ তাই মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। পুত্র হাইমোনের দয়িতা জেনেও আন্তিগোনেকে ক্রেয়ন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন। তার আশা পুত্র ছায়ার মতো পিতাকে অনুসরণ করবে। পিতার শত্রু হবে পুত্রের শত্রু, পিতার সখা হবে পুত্রের সখা। শাসক ক্রেয়নের সবচেয়ে বড় লজ্জা, অসম্মান 888sport promo codeর অবাধ্যতাকে মেনে নেওয়া ্ল888sport promo code কিনা হবে পুরুষের দণ্ডমুণ্ডের মালিক?/পুরুষ হবে কি শেষে নামমাত্র পুরুষ মানুষ? এর চেয়ে লজ্জা নেই।… আমায় বোলো না 888sport promo codeনির্জিত বেচারি।

ক্রেয়ন চায় পুত্রের সহায়তা। পিতার প্রতি সম্ভ্রমপূর্ণ ভাষায় হাইমোনের উচ্চারণ,্লমানুষের মনে দেবতারা যতগুলো মানবিক অধিকার দিয়েছেন, যুক্তিশীলতাই তার মধ্যে প্রথম, প্রধান।ঞ্চ১৩ প্রস্তাবনার শুরুতেই হাইমোন আন্তিগোনের পক্ষে নিজের অবস্থানকে যুক্তির নিক্তিতে মেপে নিয়েছে। নগরীর সাধারণ মানুষের প্রতিত্র্কিয়া জানিয়ে বলেছে, ‘… এক বাক্যে তারা সবাই বলেছে: এ যে পাপহারা সুন্দর প্রতিমা,/ করেছে পুণ্যের কাজ মৃত্যু তাই সাজা হলো ওর?/ শিকারি কুকুর আর শকুনির আক্রমণ থেকে/সোদর ভাইকে ঢেকে রেখেছে সে, এই তার দোষ?/ লেখা যে উচিৎ ছিল ওর নাম সোনার অক্ষরে,/ – এইসব বলছে তারা অন্ধকার মুখে।ঞ্চঞ্চ১৪ রাজাজ্ঞার ভয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারে না, তারা গোপনে, অন্ধকারে বিরস মুখে মৃত সহোদরের জন্যে বোনের সায়ংকৃত্যকে স্বাগত জানিয়েছে। পুত্র হাইমোন দর্পিত পিতাকে সংযত, বিনীত জীবনের কথা বলে যায়, ্লপ্রাজ্ঞ মানুষকে তাই নম্র হয়ে জেনে নিতে হয়।ঞ্চ হাইমোন মনে করে, ্লকে শিক্ষক, তার চেয়ে শিক্ষা আরো বেশি মূল্যবান,/ বয়সের প্রশ্ন নয়, সত্যই তো বয়স্ক বিষয়।ঞ্চ১৫ রাজার অহমিকায় পিতা পুত্রকে ্ল888sport promo codeত্রাতা নরোত্তমশ্ বলে অভিহিত করে – পিতার বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ করে হাইমোন পিতা কর্তৃক মূর্খ, নরাধম অভিধায় ভূষিত হয়েছে। কিন্ত্ত হাইমোনের অকম্প উচ্চারণ, ্লসত্যের বিরুদ্ধে পাপ আরো-পাপ-অসত্যপূজারি।

শেষ পর্যন্ত হাইমোন তার দয়িতার সঙ্গেই আত্মহননের আয়োজন করে। আমরা দেখি, আন্তিগোনের সহযাত্রী আরো একজনকে, আর সহমর্মী অগুনতি সাধারণ থেবাই নগরীর মানুষ – যারা সবাই আইন পরিষদের সদস্য নয়। দর্পিত রাজার দণ্ডাজ্ঞার ভয়ে তারা উচ্চকণ্ঠ হতে পারে না। কিন্ত্ত রাজার অগোচরে থেবাই নগরীর মানুষ আন্তিগোনের জন্য বিলাপ করে – সংস্তবের ঐকতানেও নিত্যনিয়মের ধারায় বয়ে-চলা সত্যের জন্য চলে সাম গান। পূর্বপুরুষদের প্রমাদ বয়ে চলেছে আন্তিগোনে-জীবনে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে সে দেবী আখ্যা পায়। কিন্ত্ত দুর্ভাগা পিতা, হতমান মায়ের পাতকের দায় শোধ করেছে যেন দুই ভাই ও বোন। আর ক্রেয়ন ভাবে আন্তিগোনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে থেবাই নগরী রত্ত্কের দোষ থেকে পরিত্রাণ পাবে।

আন্তিগোনেকে সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়ার পথে তার করুণ বিলাপ ধ্বনিত হতে থাকে। সেই বিলাপের মধ্যে তার দেশপ্রেম নিসর্গপ্রীতি পার্থিব জীবনের দুর্লভ 888sport sign up bonus অনুরণিত হয়, আন্তিগোনের বিলাপগাথার সমান্তরাল সংস্তব উচ্চারিত হতে থাকে; ্লতুমি চলো, চলে গৌরব পিছুপিছু,/ … অসির উপরে গরীয়সী তুমি জ্বলো,/ নিজ নিয়তির নায়িকা, মৃত্যু দলো, সমাধির পানে একা চলে যাও ঋজু।শ্শ্১৭ নাটকীয় কৌশল এমনই যে আন্তিগোনে জানতে পারে না, তার সঙ্গেই রয়েছে থেবাই নগরীর সাধারণ মানুষ, কোরাসের নাগরিকবৃন্দ, সূত্রধার, বৃদ্ধ তাইরেসিয়াস এবং সর্বোপরি তার দয়িত হাইমোন। সত্যের জন্য নিঃসঙ্গ একক সংগ্রামরত আন্তিগোনে বরণ করতে চলেছে পাথরে গড়া সমাধি-কারাগারের মধ্যে তিলে তিলে মৃত্যুকে। জীবনে ও মরণে তার নিজস্ব নীড় কোথাও মিলল না, ্ল্লমিলল না কোনো সমবেদনার সখ্য নয়ননীর – হাইমোনের প্রেম কী অপরূপ নিরুদ্ধতায় পিতার ক্রুদ্ধ আবেগের সঙ্গে যুঝল তা আন্তিগোনে জানতে পারল না। ট্র্যাজেডি এখানেও। দুঃখের দহনে অঙ্গার হয়ে সে উচ্চারণ করে, আমি কারো বধূ নই, কারো মাতা নই, বন্ধু নই কারো, আমি একা। তাকে সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়ার পরে একের পর এক কোরাসের গানে পূর্ব পূর্ব কালের দেবতা ও মানুষের দ্বারা নির্জিত মানুষের কথা বলে চলে তারা। শেষ পর্যায়ে এলেন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, অন্ধ তাইরেসিয়াস।

আন্তিগোনেসহ চার ভাইবোন অভিশপ্ত পিতার সন্তান; কুকুর ও শকুন মিলে খেয়ে গেছে ইডিপাসের আত্মজের শরীর; তাইরেসিয়াসও মনে করেন, তারা যজ্ঞবেদির আহুতি অপবিত্র করে গেছে। তাই যজ্ঞের আগুন জ্বলেনি। মৃত মানুষকে অবজ্ঞা করে তাকে আবারো হত্যা করার মধ্যে কোনো পৌরুষ নেই। কিন্ত্ত ক্রেয়ন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা তাইরেসিয়াসকে চরম ব্যঙ্গ ও তাচ্ছিল্যভরে অস্বীকার করে। তার মতে, বৃদ্ধ মানুষ ও তত্ত্বকথার আচ্ছাদনে কুকথা বলে কিছু একটা লাভ করতে চায়। কিছুতেই ক্রেয়নের মনে ভুল সংশোধনের আকুতি জাগে না। চলে যাবার মুহূর্তে তাইরেসিয়াস বলেন, তুমি একটি জীবন পাঠিয়েছ মরণের পরীক্ষার্থিনী করে জীবন্ত কবরে।/ দ্বিতীয়ত, মৃত মানুষের মৃত্যুসূত্রে প্রাপ্য ন্যায্য অধিকার/ অস্বীকার করে তুমি এক মানুষের মৃতদেহ/ অনাদৃত স্বজনের রোদনবঞ্চিত অনাবৃত রেখেছ পথের মধ্যে। এর ফল কখনো ভেবেছ? কর্মফল ভোগ করো; প্রতিক্রুর নরকের প্রেত। ঘটনার ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে ক্রেয়নের কর্মফল ভোগ শুরু হয়ে যায়। তাইরেসিয়াস ক্রেয়নকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, মানুষ মাত্রই ভুল করে, তা স্বাভাবিক, ভুল সংশোধনও স্বাভাবিক কর্ম। ভুল সংশোধনের পরে সেই মানুষ দুর্জন বা নির্বোধ বলে আখ্যায়িত হয় না। চূড়ান্ত দুর্বাক্য বলে তাইরেসিয়াস বিদায় নিয়ে চলে যাবার পরে ক্রেয়নের চৈতন্যোদয় হলো সূত্রধারের কথায়। যে-দুর্বিনীত দম্ভের তাড়নায় ক্রেয়ন আন্তিগোনের জন্য জীবন্ত সমাধির ব্যবস্থা করেছিলেন নিয়তির দর্পনাশা ভূমিকার কথা ভেবে সেই ভুল সংশোধনের ইচ্ছা জাগে তার মনে; দর্পিতচিত্ত ক্রেয়নও উচ্চারণ করে, আগে তো বুঝিনি, বড়ো দেরিতে বুঝেছি/ … যত কষ্ট হয় হোক, আজীবন সনাতন সত্যরক্ষা ভালো। কিন্তু সত্য রক্ষার জন্যে ক্রেয়নের চেতনসত্তা যখন সংকল্পবদ্ধ হয়েছে, প্রায় তখনই কৃতৃকৃতকর্মে ক্ষোভে আত্মবিসর্জন দিয়েছে হাইমোন। আন্তিগোনের সঙ্গে মিলন ও মৃত্যু একাকার হয়ে গেল। আর বার্তাবহের মুখে আন্তিগোনের সমাধি খুঁজে বের করা, পিতা-পুত্রের সাক্ষাৎ, হাইমোনের মৃত্যুর দৃশ্যের বর্ণনা শুনতে শুনতে বহুদিনের দুঃখসহা রানি অয়রুদিকে অন্তঃপুরে ঢুকেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। মঞ্চে হাইমোনের মৃতদেহ নিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই ক্রেয়নকে বার্তাবহ রানির মৃত্যুসংবাদ জানাল। ইডিপাসের দুই পুত্র, কন্যা, ক্রেয়নের পুত্র, রানিসহ ট্র্যাজিক মৃত্যুর ঘটনাগুলো একটি পূর্ণবৃত্ত রচনা করেছে : এদের মধ্যে হাইমোন ও আন্তিগোনে সত্যরক্ষা ও পবিত্র কর্তব্য পালনের জন্য যুক্তির আশ্রয় নিয়েছে, থেবাই জনগণ অপ্রকাশ্যে এদের অনুগামী হয়েছে – তাইরেসিয়াস তাঁর স্বভাবভঙ্গিতে সত্যের পথে আত্মশুদ্ধির জন্য ক্রেয়নকে আহ্বান জানিয়েছেন – চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্রেয়নের আত্মোপলব্ধি ঘটেছে – কিন্ত্ত ঘটনাবলির যে-বীজ বোনা হয়েছিল আগেই তা অমোঘ অপ্রতিরোধ্য রয়ে গেছে। ব্যক্তির সঙ্গে, সমাজের সঙ্গে রাষ্ট্রশক্তির যে-দ্বন্দ্ব তা ভিন্ন কালের পরিপ্রেক্ষিতেও মানবসমাজে অনুভূত হতে থাকবে।

সফোক্লিস ইডিপাস ট্রিলজির তিনটি নাটকের মধ্যে প্রথমে রচনা করেছিলেন আন্তিগোনে। ব্যক্তি-মানুষ যুক্তিশীলতার মাপকাঠি দিয়ে সৎ-অসৎ, ন্যায়-অন্যায়ের সীমারেখা তৈরি করেছে। অশুভের বিরুদ্ধে আন্তিগোনের উত্থান তার অন্তর্গত বিবেকেরই উচ্চারণ, সফোক্লিস দার্শনিক বা কবি নন, তিনি নাট্যকার, তিনি দেখেছিলেন ঘটনা এবং আবেগের মধ্যে, প্রকৃতিতে, সমাজে এবং ইতিহাসে সর্বত্র একটি দ্বান্দ্বিক শক্তি বিরাজ করছে – সেই দ্বান্দ্বিক শক্তির প্রভাবেই তাঁর নায়ক-নায়িকারা দ্বন্দ্বের আবর্তে পড়ে আলোড়িত হচ্ছে; এক পর্যায়ে তারা দুঃখদহনের শেষে মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছে। ইডিপাস ও তার আত্মজা আন্তিগোনের জীবনে এমনই ঘটেছে। আন্তিগোনে পারিবারিক রক্ষণশীলতা, রাজাজ্ঞা ও গোত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তার ক্রোধ, সাহস এবং অহংকে ন্যায়ের জন্য, সত্যের জন্য উৎসর্গ করেছে। তার এই অবস্থান প্রতিস্পর্ধী, অকুতোভয় এবং অশঙ্কিত।২২ আন্তিগোনে মানুষ হিসেবে ভাইয়ের মৃতদেহ সৎকার করতে চেয়েছে। সে 888sport promo code বা পুরুষ নয়, একজন মানুষ। অন্যদিকে ক্রেয়ন তাকে 888sport promo code হিসেবে তিরস্কার করেছে। সফোক্লিসের দ্বান্দ্বিক বাস্তবতা সংকটের আবর্তে পতিত মানুষকে এইভাবে ন্যায়বিচারের পথ খুঁজে নিতে সংগ্রামে প্রাণিত করেছে।

আবার এটাও বলা যায় যে, সমাজে ও প্রকৃতিতে যে-দ্বান্দ্বিক শক্তি রয়েছে তা ঘটনা ও আবেগের মধ্যে, সমাজের পটধৃত মানুষের মধ্যে যে-সম্পর্ক রচনা করে তার উপরে কোনো বহিরাগত শক্তির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়লে তা আরো সুতীব্র রূপ ধারণ করে। নাটকগুলো যে-কাহিনীকে ঘিরে পূর্ণবৃত্ত রচনা করেছে তার মধ্যে ঐতিহ্যের পরম্পরা রক্ষিত হয়েছে। আমরা দেখি, লেয়াস, ইডিপাস, ইডিপাসের ছেলেরা এমন সব অপরাধ করেছে যা একটি পরিবারের অভ্যন্তরে ঘটতে পারে। দৈববাণী শুনে পিতামাতার ইডিপাসকে পরিত্যাগ (যা শিশুহত্যার পর্যায়ে পড়ে), পিতৃহত্যা, অনাচার, বংশপরম্পরাগত অভিশাপ, ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ, মৃতদেহের পবিত্রতা-লঙ্ঘন ইত্যাদি ঘটনা থেকে এটা ধারণা করা যায় যে, কেউ দেশটি দখল করতে চেয়েছিল।২৩ এবং এই সময়ে রাষ্ট্রশক্তির কর্ণধার চেয়েছে নিজের অনড় কর্তৃত্ব বজায় রেখে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্ত্ত রাজার অজ্ঞাতে থেবাই রাজ্যের সাধারণ মানুষ, সূত্রধর, বার্তাবহ, তাইরেসিয়াস, হাইমোন আন্তিগোনের ন্যায্য অবস্থানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ভবিতব্যের অমোঘ পরিণামের হাত থেকে ইডিপাসের পুরো পরিবারের মতো ক্রেয়নও পরিত্রাণ পায়নি।

আন্তিগোনে নাটকের বিষয় এথেনীয় গণতন্ত্রের আদর্শ ও প্রকৃতি তুলে ধরেছে। এই আদর্শ স্বৈরাচারী এবং সংকীর্ণ চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। রক্ত-সম্পর্কের পবিত্রতা, স্নেহ-ভালোবাসা ও আবেগের বন্ধন রক্ষা করে ব্যক্তি-মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার সৌন্দর্য প্রকাশ করেছে আন্তিগোনে। সামাজিক ন্যায়বিচারের (Intution) জন্যে ইডিপাসের কন্যা আত্মবিসর্জন দিয়েছে। ব্যক্তি-মানুষ হিসেবে যে-চিত্যবোধে সে প্রাণিত তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য দৃঢ়সংকল্প। ফলে ব্যক্তির সঙ্গে রাজশক্তির দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। পরবর্তীকালে ইউরিপিদিসের নাটকে ধর্ম ও নৈতিকতার দ্বন্দ্ব আরো সূক্ষ্ম, গভীর।

বস্ত্তত খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এথেন্সে পেরিক্লিসের শাসনামলে গ্রিকরা বর্বর আদিম গোত্রীয় সমাজের নিষ্ঠুরতা ঝেড়ে-ফেলে মানবিকতা ও বিশ্বজনীনতার দিকে নিজেদের উন্নীত করার চেষ্টা করেছিল। এই সময়কালে তিন নাট্যকার ইস্কাইলাস, সফোক্লিস ও ইউরিপিদিসের নাটকীয় চরিত্রসমূহের বিচিত্র জিজ্ঞাসা, যুক্তিবাদিতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান, তুলনামূলক বিচার, ধর্ম ও নৈতিকতার তুলনামূলক বিচার, ঐতিহ্যকে ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করার দৃশ্য দেখে এথেন্স নগরবাসীও উদ্দীপিত হয়েছিল। সর্বকনিষ্ঠ নাট্যকার ইউরিপিদিস সমগ্র এথেন্সে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর নাটকসমূহে ঐতিহ্যের সমালোচনা ছিল – তাঁকে বার্ষিক নাটক প্রতিযোগিতায় 888sport app download bd দেওয়া হতো না; কিন্ত্ত সক্রেটিসের সমর্থন তিনি পেয়েছিলেন। ইস্কাইলাসের নাটকে দুঃখভোগ ও প্রজ্ঞার মধ্যে একটি সদর্থক সম্বন্ধ রয়েছে যার পরম্পরা সফোক্লিসের থেবাই-সংক্রান্ত নাটকগুলোতে ভিন্নমাত্রায় দেখা যায়। ইডিপাস-বৃত্তের প্রথম নাটক আন্তিগোনে। দৈবতাড়িত ইডিপাসের আত্মজা মাথা নিচু করে অবমাননাকর জীবন বেছে নেয়নি; জন্মের পেছনে যে-কলঙ্কের দাগ, তা মাথায় নিয়ে মানুষের মতোই, নৈতিক, মানবিকবোধের ভেতরে বাঁচতে চেয়েছে। দুঃখের অঙ্গারে দগ্ধ আন্তিগোনের মূর্তি প্রজ্ঞার ছটায় সমুজ্জ্বল। নিয়তির বিরুদ্ধে, মানুষের সৃষ্ট অনিয়মের বিরুদ্ধে অকম্পিত চিত্তে দাঁড়িয়ে সে তার মানবিক কর্তব্য সাধন করেছে – পরিবর্তে করুণ, বেদনাঘন অথচ বীরের মতো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে।

১. হাসান আজিজুল হক, সক্রেটিস, বাংলা একাডেমী, ১৯৮৫; পৃ. ৫০।

২. অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত (অনূদিত), আন্তিগোনে; 888sport live football আকাদেমি, ১৯৮৯, পৃ. ৭।

৩. ঐ, পৃ. ৭২। ৪. ঐ, পৃ. ২৪।

৫. ঐ, পৃ. ২৫। ৬. ঐ, পৃ. ২৫।

৭. P.V.N.M. (myres) A short History of Ancient Times, Dhaka, N.D : pp. 159-160

৮. Gijbert Muray, Rise of the Greek Epic, Oxford University Press, 1967, p. 15-19.

৯. অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, পৃ. ৩৯।

১০. Thomas Woodward (edited) Sophocles, Friedrich Nieysche. Sophoclean Tragedz; Nwe Jersey, 1966, p. 15.

১১. কমলেশ চক্রবর্তী (অনূদিত), সক্রেটিসের বিচার ও প্রাণদণ্ড; কলকাতা, ১৯৯৯, পৃ. ৫২।

১২. অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, পৃ. ৪৭।

১৩. ঐ, পৃ. ৪৭।            ১৪. ঐ, পৃ. ৪৮।

১৫. ঐ, পৃ. ৪৯।           ১৬. ঐ, পৃ. ৪৯।

১৭. ঐ, পৃ. ৫২।           ১৮. ঐ, পৃ. ৫৩।

১৯. ঐ, পৃ. ৫৬।           ২০. ঐ, পৃ. ৬১-৬২।

২১. ঐ, পৃ. ৬৩।

২২. Thomas Woodward (edited) Sophocles, pp. 7-8

২৩. Gibert Murray, pp.31-32