আবদুল মান্নান সৈয়দ বাংলা 888sport live footballে বহুমাত্রিক প্রতিভায় প্রদীপ্ত। 888sport app download apk, গল্প, 888sport alternative link, নাটক, 888sport live, গবেষণা – সবটাই তাঁর মন, মনন আর সৃজনশীলতায় দ্যুতিময়। সৈয়দ শামসুল হকের মতো তিনি কতটা সব্যসাচী লেখক তা নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তিনি যে আপাদমস্তক একজন সফল 888sport live footballিক, তাতে কোনো দ্বিমত নেই। তাঁর শ্রমসাধনার বৃহৎ অংশ জুড়ে আছে 888sport app download apk ও 888sport live-গবেষণা। গল্প-888sport alternative linkের বিষয় আর নির্মাণশৈলী স্বাতন্ত্র্য-সাফল্যে অভিনন্দিত। তাঁর নাটক 888sport free betয় কম, 888sport live footballগুণে ঐশ্বর্যমণ্ডিত। তিনি লিখেছেন প্রহসন, কাব্যনাট্য, একাঙ্ক, শ্রুতি নাটক, পূর্ণাঙ্গ নাটক এবং 888sport app download apk latest version একাঙ্ক। এসব নাট্যসৃষ্টি কলেবরে ছোট, কিন্তু ভাবগভীরতা বহুদূর প্রসারিত। বক্তব্য আছে, থাকতেই হবে, তবে তা প্রকাশের জন্য যে চরিত্র ও সংলাপ সেটি কাব্যময়তায় ভরপুর – 888sport live footballগুণে উৎকৃষ্ট সৃজনকর্ম।
আবদুল মান্নান সৈয়দ-রচিত প্রহসনটির নাম প্রচণ্ড প্রহসন। 888sport app download for androidযোগ্য, আমাদের 888sport live football সমৃদ্ধির সূচনাকাল ষাটের দশক। মান্নান সৈয়দের আগমন ঘটে ওই সময়েই। তিনি বলেন, ‘ষাটের দশকে, আমার সেই প্রথম উত্থানের দিনগুলিতে, 888sport live footballের সব রাস্তায় ঘোড়া ছুটিয়েছিলাম।’১ মূল নাটকের ভিন্ন একটি শাখাই তো প্রহসন। সেখানে তিনি অনুপস্থিত থাকবেন কেন?
সত্য আর শুদ্ধকে সোজাভাবে না বলে একটু বাঁকিয়ে বলা, খানিকটা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের আড়ালে সেই সত্যকে প্রকাশ করার মাধ্যমরীতিই প্রহসন। আবদুল মান্নান সৈয়দ একে অতিরঞ্জিত করে নাম দিয়েছেন প্রচণ্ড প্রহসন। প্রহসনটির বিষয় – 888sport live footballের স্বরূপ ও সমৃদ্ধি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তথাকথিত 888sport live footballসেবীদের ভণ্ডামি। প্রহসনে আবদুল মান্নান সৈয়দ-প্রদত্ত চরিত্রনামা দেখলেই বোঝা যায় এরা কোন শ্রেণির 888sport live footballকর্মী; সভাপতি – মোহাম্মদ আপনি-রাজা, সহসভাপতি – তোৎলা তালুকদার, কবি – কবুতরউল্লাহ, ঔপন্যাসিক – চৌরবিদ্যাপারদর্শী, পণ্ডিত – চালাক চাটুয্যে, সমালোচক – ভুঁইফোঁড় ভূঁইয়া, ঘোষক – খোন্দকার খয়ের খাঁ।
আলোচ্য প্রহসনের ঘটনাস্থল একটি 888sport live footballসভার মঞ্চ। 888sport live footballের বিকাশসাধনের লক্ষ্যে লেখক-সমালোচক-পাঠক-শ্রোতাকে সঙ্গে নিয়েই পথ চলতে হয়। কিন্তু মেধাশূন্য কূটকৌশলী তথাকথিত মেকি 888sport live footballিক নামধারী ব্যক্তিদের অপকর্মে তা হয়ে ওঠে না। গত বছর 888sport live footballসভা শেষে ভূরিভোজের ব্যবস্থা ছিল না বলে মাত্র এগারোজন শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। আর এ-বছর আমন্ত্রণপত্রে ভূরিভোজের আয়োজন আছে উল্লেখ করায় দুশোর বেশি শ্রোতা উপস্থিত হয়েছেন। এই 888sport free betবৃদ্ধিকেই 888sport live footballের অগ্রগতি বা 888sport live footballপ্রীতি হিসেবে তাঁরা চিহ্নিত করেন। অথচ কবি কবুতরউল্লাহ বলেন, ‘আমার দুঃখ, 888sport app download apk কেউ পড়ে না। পরের কথা আর কী বলবো, আমার স্ত্রী, আমার নিজের স্ত্রী পর্যন্ত আমাদের 888sport app download apkর কাগজ দিয়ে আমার ছেলের দুধ গরম করেন।’
সমালোচক চালাক চাটুয্যে সম্পর্কে অনুষ্ঠানের ঘোষক বলেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে কোনো সত্যিকার পণ্ডিত বই লেখেন না, কারণ বই লেখা মানেই নিজেকে ধরা দেওয়া। চোর কি কখনো জেলখানায় এসে ধরা দ্যায়?’ প্রহসনের রীতি অনুযায়ী এখানে হাস্যরস আছে। আছে বিদ্রূপাত্মক হাসি। আর এ-বিদ্রূপের আড়ালেই আছে চিরায়ত সত্য, বাস্তবতার প্রকাশ। সত্যটি হচ্ছে, মেধাবী, শ্রমনিষ্ঠ, বস্তবাদী, মানবপ্রেমিক 888sport live footballিকবৃন্দই প্রকৃত 888sport live footballের বিকাশসাধন করতে পারেন। সে-বিচারে আবদুল মান্নান সৈয়দের প্রচণ্ড প্রহসন সার্থক সৃষ্টি।
888sport appsে কাব্যনাট্য রচয়িতার 888sport free bet সীমিত। মূল নাট্যধারার কেউ কেউ দু-চারটি কাব্যনাট্য লিখলেও তা তাঁদের সৃজিত 888sport live footballের তুলনায় অধিক মানসম্পন্ন নয়। ব্যতিক্রম সৈয়দ শামসুল হক। তাঁর পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, নূরলদীনের সারাজীবনের সমকক্ষ কাব্যনাটক কোথায়? আমরা আবদুল মান্নান সৈয়দকে সৈয়দ হকের প্রতিদ্বন্দ্বী কাব্যনাট্যকার হিসেবে দাঁড় করাতে চাই না। তবে মান্নান সৈয়দকে কাব্যনাট্যকার হিসেবে 888sport apk download apk latest version জানানোর প্রয়োজন বোধ করি। আবদুল মান্নান সৈয়দের প্রকাশিত কাব্যনাট্যের 888sport free bet ছয়টি – বিশ্বাসের তরু, জ্যোৎস্না-রৌদ্রের চিকিৎসা, ঈশ্বরপ্রাপ্তির ছোট্ট গাথা, চাকা, কবি ও অন্যেরা, আটতলার ওপরে। সদর্থক বিষয়গুণ ও কাব্যিক প্রকাশে এসব কাব্যনাট্য পেয়েছে প্রাতিস্বিক মর্যাদা।
আবদুল মান্নান সৈয়দ ব্যক্তিক, আর্থসামাজিক কিংবা রাষ্ট্রিক সমস্যা ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে নয়, দেখেন বৃহৎ প্রেক্ষাপটে। তাই নাট্যিক চরিত্রসমূহের নামকরণ নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির নামে নয়, তাদের পেশা বা পদবির নামে নামকরণ করেন। যেমন, বিশ্বাসের তরু (১৯৬৯) কাব্যনাট্যটির চরিত্র-বিন্যাস হয়েছে তিনজন কাঠুরে, এক মেয়ে কাঠকুড়ুনি, চৌকিদার ও দেবদূত। এ-নাটকে তিনজন কাঠুরে সারাদিন বন থেকে কাঠ কেটে সন্ধ্যায় বাজারে বিক্রি করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। বন পাহারায় আছে একজন চৌকিদার, নেপথ্যে আছেন বনের মালিক। তাই কাঠুরেদের ভয়ে ভয়ে কাঠ কাটতে হয়। এ তাদের পৈতৃক ও নিত্যদিনের কর্মপেশা।
নাট্যদৃশ্যে ক্ষণিকের জন্যে দেবদূত এসে কাঠুরেদের বিশ্বাসের মূলে আঘাত হানেন, তাদের কর্মপেশা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, বলেন – ‘এখন আমার কথা শোনো : / পরের বাগানে এই গাছ কাটা, তাই নিয়ে গিয়ে/ সন্ধ্যার আঁধারে শহরে ব্যবসা করা, ভালো নাকি -/ বলো তোমরাই?’ দেবদূতের কথা কাঠুরেদের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তৃতীয় কাঠুরে বলে, ‘এ তো যাকে বলে/ সোজাসুজি চুরি, রাহাজানি, কিন্তু এতকাল ধরে/ ব্যবসা চালাচ্ছি এখন কি করি।’ দ্বিতীয় কাঠুরের উচ্চারণ, ‘চাঁদের মতন এ-লোকটা যেন চারপাশে মেঘ/ ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিল ভাবনার।’ আর প্রথম কাঠুরের ঘোষণা, ‘ছাড়তে যদিও বুকে বাধে, তবু ভাই ছেড়ে দেবো/ পিতৃপুরুষের দীর্ঘ ব্যবসায়।’ এখানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় কাঠুরের কর্মচিন্তা অভিন্ন – যেন তিনজনের সমন্বয়ে একটিই চরিত্র।
কবি-নাট্যকার আবদুল মান্নান সৈয়দ খুব সচেতনভাবে কাঠকুড়ুনি নামে একটি মেয়ে-চরিত্র নির্মাণ করেন। পিতৃহীন দরিদ্র মেয়েটির সঙ্গে কাঠুরেদের সম্পর্ক ভালো। এরা সব প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। তাই মেয়েটি যখন জানতে পারে, কাঠুরেরা আর কাঠ কাটতে আসবে না, তখন সে বিস্মিত ও রাগান্বিত হয়। এ-সময় তাকে মলিন ও বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে কেন জানতে চাইলে সে বলে, ‘আমার সৌন্দর্য হয়েছে আমারি কাল।/ হরিণী, নিজের শত্রু। সুন্দর সহায়হীন, জেনো।/ বাস্তবের দারুণ কুঠারে চিরকাল সুন্দরের বলি দেওয়া হয়, কাঠুরিয়া, ভালো মানুষের দল,/ জেনো। আজকে দুপুরবেলা, সূর্য মাথার উপরে/ ঠিক, বনের উঠোনে, জারুল-পাতার বিছানায়/ জারুল-গাছের তলে চৌকিদার করেছে/ সর্বনাশ।’ এ-ধর্ষক চৌকিদারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারলেও কাঠুরেরা ক্ষিপ্ত হাতে ধ্বংস করে বিশ্বাসের তরু, নষ্ট হয় বাগানের খানিকাংশ এবং বিশ্বাস রাখে ‘এখন সম্পূর্ণ চাঁদ উঠে আসবে, পুরো সূর্য আসবে।’ অন্ধকার দূর হবে। তাই আশাবাদী নাট্যকার আবদুল মান্নান সৈয়দ কাঠুরের কণ্ঠে তুলে দেন শেষ সদর্থক সংলাপ, ‘ভাঙি বিশ্বাসের তরু, তবু/ ফিরবে একদা জানি, ওরা টেবিলে চেয়ারে আর/ নূতন আসবে ফিরে বহু মানবিক আশবাবে।’ কোনো কোনো কবি নিভৃতচারী হন। একান্ত নির্জনে, কল্পনায় ভর করে নির্মাণ করেন 888sport app download apk। কেবল কল্পনানির্ভর 888sport app download apkর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তাই কবিকে বাইরে যেতে হবে। জীবন ও জনপথ থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করা আবশ্যক। যে-কবির বসবাস অন্ধকারে, তাঁকে জ্যোৎস্না ও রোদ্রে এনে বোধের পরিবর্তন দরকার। এমনি এক
ভাবনা থেকে আবদুল মান্নান সৈয়দের কাব্যনাটক জ্যোৎস্না-রোদ্রের চিকিৎসা (১৯৬৯) রচিত।
কবি, কবি-প্রেমিক, কয়েকজন পুরুষ ও কয়েকজন মেয়ে – এ-নাটকের চরিত্র। কবি তাঁর ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখে, বাইরের কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে কাব্য নির্মাণ করেন। যে-কবির হাতে ঝাঁকে ঝাঁকে 888sport app download apk আসত, তাঁর এখন মন্দাভাব চলছে, 888sport app download apk ধরা দিচ্ছে না। কয়েকজন পুরুষ ও মেয়ে এবং এক কবি-প্রেমিক এসে কবির সঙ্গে ভাব জমায় আর দরজা-জানালা খুলে দিয়ে বাইরে যাওয়ার আহবান জানায়। আগতদের কথা ও পরামর্শে কবি কল্পনার জগৎ থেকে ক্রমশ বাস্তবতার পরিম-লে ফিরে আসেন। কবি বলেন, ‘তেজি আরবি ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে… 888sport app download apk আসছে। অনন্তকাল ধরে যে-888sport app download apk লিখিত হবার প্রতীক্ষায় আছে কিন্তু লেখা হয়নি, মনে হয়, সেই 888sport app download apkর আত্মা ভর করছে আমার উপর।’ কবি ও মেয়েটির অন্তরঙ্গ সংলাপ –
মেয়ে : আমি পাশে থাকলে তুমি 888sport app download apk লিখতে পারবে তো?
কবি : পারব। চৈত্রমাসে কেমন পাতা ওড়ে তেম্নি আমার হৃদয়ের তরু থেকে রাশি রাশি 888sport app download apk উড়বে।
মেয়ে : আমাকে তোমার ভালো লেগেছে?
কবি : জ্যোৎস্নার মতো ভালো লেগেছে তোমাকে। জ্যোৎস্নারাত্রির মতো। ইচ্ছে তোমার ঐ চুলের কোঁকড়া চাঁদ হয়ে ঝুঁকে থাকি কপালের বারান্দায়।
মেয়ে : আমার ইচ্ছে হচ্ছে : আমি তোমার কররেখা হয়ে যাই, তোমার কণ্ঠস্বর, তোমার কলম হয়ে থাকি।
এভাবেই আবদুল মান্নান সৈয়দের কাব্যসত্তা তাঁর কাব্যনাট্যেও প্রতিফলিত হয়েছে। কবি মান্নান সৈয়দই বলতে পারেন 888sport app download apkর, ‘কল্যাণে সাগরের পানির উপর দিয়ে
মানুষ-মানুষী হেঁটে যেতে পারে।’
মুস্তফা আনোয়ার-সম্পাদিত কুঁড়েঘর পত্রিকায় চাকা (১৯৮৫) কাব্যনাট্যটি প্রকাশিত এবং রেডিও 888sport apps থেকে প্রচারিত হয়। আবদুল মান্নান সৈয়দের চাকা তিন দৃশ্যবিশিষ্ট তিন চরিত্রের কাব্যনাট্য। মঞ্চে নেই, অথচ সংলাপে এসেছে আরো তিনটি চরিত্রের নাম – হীরক, অমল ও কায়সার।
চাকা একটি ব্যর্থ প্রেমের কাব্যগাথা। হাসান ভালোবাসে মীরাকে, রিনা হাসানকে। মীরা হাসানকে ভালোবাসলেও তার সঙ্গে সংসার বাঁধতে চায়নি। কারণ, মীরার সংলাপেই তা পরিষ্কার – ‘হাসান, বিশ্বাস করো : আমি তোমাকেই ভালোবাসি।/ কিন্তু তুমি বড় মৃদু, কোমল, কাতর, স্বপ্নাক্রান্ত, সংবেদনশীল -/ সামান্য কম্পনে তুমি বেজে ওঠো শততলে।/ হীরককে আমার চাই। সে অবিচলিত থাকে সব-কিছুতেই,/ সে কঠিন হীরকের মতো দ্যুতিময়।’ বোঝা যায়, মীরা চলমান জীবনে নির্ভরযোগ্য আশ্রয় চায়, চায় বিত্তবৈভব। তাই হাসান বলে, ‘মীরা, তোমার মন নেই। আছে শুধু রূপ। মনোহীন গাঢ় রূপ।’
অন্যদিকে রিনা হাসানকে ভালোবাসলেও হাসানের দিক থেকে তেমন সাড়া পায়নি। তাই নাট্যকার হাসানের কণ্ঠে সংলাপ তুলে দেন – ‘মীরাকে করেছি ক্ষমা, আশা করি রিনাও আমাকে।/ কিন্তু কিরকম আশ্চর্য ব্যাপার :/ মীরাকে চেয়েছিলাম আমি পাগলের মতো,/ রিনা চেয়েছিল তার সঙ্গী করে আমাকেই পেতে। কিন্তু চাকা ঘুরে যায়… কেউ কাউকে কিছুতে পায় না।’
এ-প্রেম সরলরৈখিক নয়, বৃত্তের মধ্যে চাকার মতো আবর্তিত হয়। মূলত প্রেমের, ব্যর্থতার এ এক অম্লমধুর নাট্যিক রূপায়ণ চাকা কাব্যনাট্য। আবদুল মান্নান সৈয়দের অপর কাব্যনাট্য কবি ও অন্যেরা (১৯৯৬)। কবি ছাড়াও এ-নাটকে আছেন – ট্রাফিক-পুলিশ, রাখাল-বালক, সার্জেন্ট, ডাক্তার, ঔপন্যাসিক, তরুণী প্রেমিকা (নিনা) ও কবির বউ। কবিই প্রধান চরিত্র। এ-চরিত্রের বিকাশ কিংবা সমৃদ্ধকরণের জন্যে এসেছে অপরাপর চরিত্র। তবে কবির সঙ্গে 888sport app চরিত্রের প্রাসঙ্গিকতা যে খুব একটা আছে, তা মনে হয় না – অন্তত মান্নান সৈয়দের 888sport app নাটকের তুলনায়। নাটকের প্রথম দৃশ্যে মহিষের পিঠে চড়ে গ্রাম থেকে রাজধানী 888sport appয় এসেছে এক রাখাল-বালক। মান্নান সৈয়দ রাখালের কণ্ঠে আঞ্চলিক ভাষা সংযুক্ত করেন। জনতার কৌতূহল, প্রচণ্ড ভিড় ও ট্রাফিক-পুলিশের সজাগ দায়িত্ব পালন দেখিয়ে গ্রাম-শহরের মধ্যে পার্থক্য প্রদর্শন করেন। জনতার ভিড়ে অতিষ্ঠ রাখাল-বালক বলে, ‘স্বপ্ন আমাগো গ্রামের নাম। বেহেশতের লাহান সুন্দর।’
আলোচ্য নাটকে নাট্যদ্বন্দ্ব তেমন না থাকলেও কিছু কিছু উজ্জ্বল কাব্যিক সংলাপ পাঠককে মোহিত করে। যেমন, কবি তাঁর প্রেমিকাকে বলছেন, ‘এত অপরূপ চোখ -/ আমি ঐ চোখের ভিতর দিয়ে/ চলে যাচ্ছি মিশরের সূর্যাস্তবেলায় – গ্রিসের প্রাসাদে।/ ঐ অপরূপ নাসা, ঐ অপরূপ ঠোঁট – যা ক্রমশ খুলে যাচ্ছে/ সোনার কৌটার মতো, আমি ওর ভিতর প্রবেশ করব।’
আবদুল মান্নান সৈয়দের আটতলার ওপরে (১৯৯৭) কাব্যনাটকটি রোমান্টিক ধাঁচের রচনা। আটতলার ওপরে এক রেসেত্মারাঁয় বসেছেন শাহেদ ও রূপা। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স। তারা একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে পড়তেন, একই ক্লাসে বসতেন, একই করিডরে হাঁটতেন। কিন্তু কথা হতো না। দুজনেরই প্রেম নিবেদনের গোপন ইচ্ছে থাকলেও সাহস ছিল না। পরিবেশ ছিল প্রতিকূল। শাহেদ ছিল মেধাবী, রূপা অপরূপ রূপবতী। এখন তাদের নিজ নিজ সংসার আছে, ছেলেমেয়ে আছে, আছে নাতি-নাতনিও। বহু বছর পর তাদের দেখা হলো, কথা হলো। তারা আটতলার খোলা ছাদে রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলেন। ফেলে আসা 888sport sign up bonus রোমন্থন করলেন স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতে। এ-কাব্যনাটকে আবদুল মান্নান সৈয়দ সেকাল আর একালের প্রেম-ভালোবাসা, আচার-আচরণ আর শিষ্টাচারের স্বরূপ সন্ধান করেছেন নাট্যিক কৌশলে। নাটকের শেষ দৃশ্যে শাহেদ তাঁদের উপলব্ধি আর অনুভবের কথা বলেন এভাবে –
আমরা বসে আছি সমতল থেকে
একটু দূরে –
আটতলার ওপরে। এই একটা
দিন
আমাদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে
অন্য জায়গায় চলে এসেছে।
সমতল থেকে একটু ওপরে।
তুমি ফিরে যাবে তোমার সংসারে,
আমি ঘুরব আমার চাকায়।
আবার যে-কে-সেই।
তবু এই একটা দিন জেগে থাকবে আমার ভিতরে।
এই একটা দিন বলে দিচ্ছে :
কোথাও-না-কোথাও পলাশ ফুটছে আজো,
জ্বলছে কৃষ্ণচূড়া।
কাব্যনাটকের পাশাপাশি আবদুল মান্নান সৈয়দ একাঙ্ক নাটক লিখেছেন। সমসাময়িক নাট্যকারদের তুলনায় তাঁর একাঙ্ক নাটক কলেবরে ছোট। তাঁর অন্যতম একাঙ্ক নাটক সংসার। স্বামী-স্ত্রীর রাগ-অনুরাগ, সুখ-দুঃখ, অম্লমধুর সম্পর্কের ভিত্তিতে রচিত হয়েছে সংসার নাটক। নাট্যকার উল্লেখ না করলেও বোঝা যায়, স্বামী-স্ত্রীর বিবাহিত জীবন বেশিদিন হয়নি। সংসারে বাচ্চাকাচ্চাও নেই। স্বামী চাকরিজীবী, স্ত্রী গৃহিণী। রাতশেষে সকালে স্ত্রী শয্যা ছেড়ে উঠে যান সংসারকর্মের জন্য। স্বামী আরো কিছুক্ষণ স্ত্রী-সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য আকুতি জানান। একপর্যায়ে স্ত্রী জানান, কাজের মেয়েকে বাদ দেওয়া হয়েছে। দুজনের সংসার, তিনি নিজেই সব কাজ করে উঠতে পারবেন। স্বামী কিছুটা ক্ষুব্ধ হন। স্ত্রী বলেন, মেয়েটির স্বভাব-চরিত্র ভালো না। তাই তাকে কাজে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। স্বামী রাগান্বিত হলেও পরে শান্ত হন। বিকেলে স্ত্রীকে তৈরি থাকতে বলেন, নিউমার্কেটে গিয়ে তার জন্য কিছু কেনাকাটা করবেন বলে।
সংসার নাটকে সংলাপের নাটকীয়তা আছে, চরিত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে, আবার মিলনের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বিরাজমান। নাটকীয় দ্বন্দ্বের একটি নমুনা –
স্বামী : তোমার মন এত ছোট তা জানতাম না।
স্ত্রী : তোমার বেশি বেশি দরদ আর অত্যন্ত উদারতা দেখেই আমার মন ছোট করতে হয়েছে।
স্বামী : যে-ঘরের মেয়ে সে-রকম হবে তো –
স্ত্রী : খবদ্দার! আমাকে যা বলবে বলো, আমার ঘর-বাড়ির কথা বলবে না –
স্বামী : যাও-যাও! বেশি কথা বোলো না।
স্ত্রী : তোমার মনে কু। তা না হলে এত বেশি কথা বলছ কেন? তোমার মনে পাপ। সেজন্যেই তো ওকে বিদায় করে দিয়েছি। জেনেশুনে তো আমি আমার সংসারে আগুন লাগাতে পারি না।
তিন চরিত্রবিশিষ্ট একাঙ্ক নাটক যুক্তিহীন যুগ। পঞ্চাশ বছর বয়সী খালেদ আহমদ, তার স্ত্রী আয়েশা ও নাতি টুলুকে নিয়ে এ-নাটক। সংসারজীবনের শুরুতে তাদের পদমর্যাদা ও আর্থিক সচ্ছলতা সন্তোষজনক ছিল না। খালেদ ছোট চাকরি থেকে পদস্থ কর্মকর্তা হয়েছেন। আজ তিনি গাড়ি-বাড়ি ও বিত্তের মালিক। ছেলেমেয়েদের ভালো চাকরি ও সংসার হয়েছে। এক সকালে খালেদ সহধর্মিণী আয়েশাকে নিয়ে বসেছেন ফেলে-আসা দিনগুলোর 888sport sign up bonus রোমন্থনে। কর্মনিষ্ঠা, একাগ্রতা ও সততার বলে খালেদ বিত্তবান হয়েছেন। অন্যদিকে সময় তাদের শারীরিক ও জৈবিক ক্ষমতা হারিয়েছে। এ-যৌবনশক্তি এখন পেয়েছে তার ছেলেমেয়ে ও জামাই। প্রাকৃতিক এ-সত্য অনিবার্য। নিয়মের চাকা মানুষকে বাড়ায়, আবার নামায়। যুগ-যুগান্তর ধরে এ-ধারা জীবজগতে প্রবহমান। তাকে খণ্ডিত করে দেখার সুযোগ নেই। নাট্যকার মান্নান সৈয়দ যুক্তিহীন যুগ নাটকে এ-সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আবদুল মান্নান সৈয়দের অপর একাঙ্ক নাটকের শিরোনাম সুখ-অসুখ। ফরিদ ও রশিদ – দুবন্ধুর নানা ভাবনা আর সুখ-দুঃখের খণ্ডচিত্রের সমন্বয়ে গঠিত এ-নাটক। রশিদ লেখক হতে চেয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। তাদের নিরন্তর চেষ্টা ছিল একটা চাকরি পাওয়া। ফরিদ চাকরি পেয়েছে। সে চাকরি নিয়ে সুখেই আছে। বন্ধু রশিদ ফরিদকে ব্যঙ্গ করে তেলের ব্যবসা করতে বলে। কারণ তেল দেওয়ায় ফরিদ বেশ পারদর্শী। স্নেহময়ী মা ছেলে ফরিদকে পরামর্শ দেন, সে যেন খামোকা দুঃখ না করে। ছেলের শেষ উক্তি, ‘দুঃখ আমার নেই। তুমি জানো না মা, এমন অসুখে আমি কত সুখী।’
আলোচ্য নাটকে স্বগতোক্তি কিংবা যাত্রার বিবেক চরিত্র নয়, খানিকটা ভিন্ন ঢংয়ে নাট্যকার মান্নান সৈয়দ ছায়ারশিদ, ছায়ামামী চরিত্রায়ণ করেন।
আবদুল মান্নান সৈয়দের খেলা একাঙ্ক নাটকে দেখা যায়, আশরাফ চৌধুরী পরিবারের সদস্য বাবলু, পিন্টু ও মুক্তাকে নিয়ে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গেছেন।
গৃহভৃত্য ইদ্রিস ও অল্পবয়স্ক এক ছোকরা রমিজ গৃহকর্তার অনুপস্থিতিতে চৌধুরী-ভৃত্য অভিনয় খেলায় নিমগ্ন হয়। মানুষ বাস্তবে যা নয়, কল্পনা বা অভিনয়-অনুকরণের
মাধ্যমে তা পুষিয়ে নিতে চায়। কিন্তু তা খুব সাময়িক সময়ের জন্যে। বাস্তবতা হচ্ছে চরম সত্য। যে যার অবস্থান থেকে উত্তরণের পথ হচ্ছে শিক্ষাদীক্ষা ও কর্মসাধনা। খেলা নাটক পড়তে বা দেখতে গিয়ে হয়তো মনে পড়বে বাদল সরকারের এবং ইন্দ্রজিৎ নাটকের কথা। বক্তব্যগত কিছুটা সাযুজ্য থাকলেও এবং ইন্দ্রজিৎ-এর প্রভাবজাত সৃষ্টি নয় খেলা।
আবদুল মান্নান সৈয়দের আরেক একাঙ্ক নাটক এসো অসম্ভব, এসো। নাটকটির প্রধান চরিত্র কামরান। কার্যকরণ, তাৎপর্য ও বিশ্বাসের ভিত্তিভূমি বিশ্লেষণ করলে কামরানকে খানিকটা অবাস্তব বা অসম্ভব চরিত্র বলে প্রতীয়মান হয়। সে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে ঘরে অলস সময় কাটায়। সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব, স্বজন – সবার সঙ্গেই সম্পর্ক ছেদ করে। বন্ধু শামিম বাসায় এসে তাকে বিভিন্নভাবে বোঝাতে থাকে। কর্ম ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বলে।
আকবর নামের এক লম্পট ব্যক্তি সবার সামনে দিয়ে, দিনের আলোয় কামরানের স্ত্রী আইভির কাছে যায়। টাকার বিনিময়ে ফুর্তি করে। কামরান তা জানে। এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করে না। বরং আকবর এলে কামরান বেডরুম ছেড়ে বাইরের ঘরে চলে যায়। কখনো-বা আকবরের সঙ্গেও কথা হয়। আকবর বলে, ‘আপনার নার্ভ খুব শক্ত।’ আইভিও চায় না আকবর নামের ওই কুৎসিত লোকটা তার কাছে আসুক – ফষ্টিনষ্টি করুক। এ-ব্যাপারে সে স্বামী কামরানকে দোষারোপ করে বলে, ‘ছি-ছি, তুমি এত ছোট, এত নীচ! তুমি কি একটা মানুষ যে, তোমার চোখের সামনে বাইরের লোক আসে। তুমি একজনের স্বামী – তোমার স্ত্রী আরেকজনের সঙ্গে শুচ্ছে – এতে তোমার যায়-আসে না! বাপ-মা, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব সব ছেড়েছি আমি তোমার জন্যে।’
আপাতভাবে যা অসম্ভব, তাকেই সম্ভব করতে হবে। এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। নাট্যকার মান্নান সৈয়দ এ-চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে চেয়েছেন এসো অসম্ভব, এসো নাটকে।
না ফেরেশতা না শয়তান আবদুল মান্নান সৈয়দের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ নাটক। নাটকটির রচনাকাল ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ। নাট্যকারের অভিমত, ‘এই নাটক পাঠকের জন্যেই রচিত। তবে অভিনীত হলে ভালো।’ নাটকে প্রধান চরিত্র জামিল। পারিপার্শ্বিক চরিত্রসমূহ নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে জামিল চরিত্রকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছে। এখানেও 888sport live football-ভাবনা আছে। 888sport live footballের স্বরূপ নির্ণয়ের প্রচেষ্টা আছে। যেমন আছে তাঁর শ্রুতিনাটক মৃত্যু একটি দরোজায়। ভালোমন্দের সমন্বয়েই জামিল চরিত্র। অবিবাহিত হলেও সে খারাপ পথে যায়নি। নেশা-টেশার ধারেও ঘেঁষেনি। কিন্তু মানুষের সব দিন সমান যায় না। তাই একদিন দেখা যায়, জোহরা নামের এক বেশ্যাকে নিয়ে রাত কাটাচ্ছে। আবার এই জামিলই বিবেকের দংশনে কাতর হয়। বলে, ‘ইশ কি-সাংঘাতিক কি বিছ্ছিরি স্বপ্ন দেখলাম, হ্যাঁ ছি-ছি, বিয়ে দিতে পারছি না যে-বোনটিকে সে কিনা এল আমার বিছানায়, আর আববার মুখ কি রকম দৈত্যের মুখে বদলে গেল – ইশ, বেশ্যাকে বুকে জড়িয়ে বোনের স্বপ্ন দেখলুম! ছি-ছি : কি ঘেন্নে!’
নাটকের শেষ দৃশ্যে জামিল এসে দাঁড়ায় পথের এক মাথায়, যেখানে পথ দুদিকে চলে গেছে। জামিল ভাবে এখন কোন রাস্তায় যাবে? একপর্যায়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় – সে না ফেরেশতা না শয়তান। অতএব সে মঞ্চের সামনে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দর্শকের মধ্যে নেমে আসে। এভাবেই নাট্যকার আবদুল মান্নান সৈয়দ জনতার, মানবতার জয় প্রদর্শন করেন।
আবদুল মান্নান সৈয়দের প্রতিটি নাটকে তাঁর কাব্যমানস, 888sport live chatীসত্তা, মানবতাবোধ ও আধুনিক চেতনার প্রতিফলন আছে। নাটকগুলো আকারে ছোট হলেও ভাবগাম্ভীর্যে, শৈল্পিক-ঐশ্বর্যে ভরপুর। তাঁর নাটকসমূহ যতটা না মঞ্চায়নযোগ্য, তার চেয়ে অধিক পঠন-উপযোগী এবং 888sport live footballগুণে সমৃদ্ধ। নাট্যসংলাপ, নাটকীয়তা ও যথাযথ হিউমার নির্মাণ-প্রয়োগে মান্নান সৈয়দ দক্ষ কারিগর।
তথ্যসূত্র
888sport liveে উদ্ধৃতি তথ্য-সংলাপ আবদুল
মান্নান সৈয়দের নাট্যসমগ্র (২০০৯) থেকে নেওয়া।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.