লেখক পণ্ডিত সংগীতবিশারদ আবদুশ শাকুরকে কী নামে কী অভিধায় এককভাবে চিহ্নিতকরণ অতি দুরূহ কর্ম; এ-কথা তাঁর নিকটজন, সুহৃদ-সতীর্থ, সহকর্মী মোহিত-পাঠককুলসহ আমার মতো তাঁর অনুজপ্রতিম সুদৃষ্টিপ্রাপ্ত অনেকেই স্বীকার করবেন। মূলত একজন গল্পকাররূপে তাঁর প্রারম্ভকালীন 888sport live footballচর্চার যৌবনে আমরা তাঁকে প্রত্যক্ষ করলেও কলাবিষযক আবদুশ শাকুরের অনন্যঅসাধারণ
পাণ্ডিত্যশৈলী প্রকাশিত হতে থাকে ক্রমশ তাঁর চল্লিশ-উত্তীর্ণ বয়সকালে।
কথাবার্তায় অতিপরিশীলত অথচ চটুল-রসিকতায় বেশ প্রাজ্ঞ (এখানে ওস্তাদ বললে অতিশয়োক্তি হবে না) আবদুশ শাকুরকে আমার চেনার সুযোগ হয়েছিল তাঁর যৌবন ও 888sport live footballকর্ম বিকাশের সময় থেকে। সেই এক দুর্দম-দুর্বার সময় ছিল ষাটের দশকের সূচনালগ্নে। আমি তখন অষ্টাদশবর্ষীয় তরুণ; সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করেছি আর তখনই শুরু হয়ে গেছে বাষট্টির ছাত্র-আন্দোলন – আইয়ুবশাহীর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে। শাকুরভাই তখন ইংরেজি 888sport live footballে øাতকধারী। মাদ্রাসা থেকে কামেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষটি কেমন করে আরবি ভাষা ও অন্য আরেকটি শিক্ষাপ্রণালি থেকে আধুনিক শিক্ষাব্রতী হয়ে এবং তদুপরি ইংরেজি 888sport live footballে মনোনিবেশ ও অধ্যায়নে ব্যাপৃত হলেন; এসব বিষয় সে-সময়ে আমাদের বিস্মিত ও চমৎকৃত করতো। আধুনিক শিক্ষার একটা স্বীকৃত বয়স নিবন্ধিত থাকলেও, তাঁর বয়স নিয়ে সতীর্থ মহলে কারো কারো সন্দেহের উদ্রেক হলেও আমাদের কাছে শাকুরভাই ছিরেন তাঁর সতীর্থ অন্য অনেকের চাইতে তরুণ ও দীপ্তমান। তারও প্রকাশ দেখালাম অল্পদিন পরে।
উনিশশো বাষট্টির অগ্নি-উদ্গিরণকালের শিক্ষা-আন্দোলনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন যেমন নেতৃত্ব দিয়েছিল; তেমনি এই ছাত্র সংগঠনটির বিস্তৃতি ঘটেছিল অন্য নেতৃস্থানীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের চাইতেও বেশি। বাষট্টি-তেষট্টির ছাত্র ইউনিয়ন যে বৃহৎ কলেবর ও শক্তি অর্জন করেছিল তথা ছাত্র রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে যে-সুবাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল, ১৯৬৪-৬৫ সালে তা দ্বিধাবিভক্ত না হলে এবং সেদিনের বাম রাজনীতিতে তথাকথিত মস্কো-পিকিং তাত্ত্বিক মতানৈক্য ও বিভক্তির প্রভাব তাদের মধ্যে সঞ্চারিত না হতো তাহলে 888sport appsের অভ্যুদয়ের ইতিহাস অন্যরকম হতে পারতো। আবদুশ শাকুর এই দ্বিধাবিভক্তির আগেই ১৯৬৪ সালে ইংরেজিতে øাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন বিশাল কর্মক্ষেত্রে। ’৬২-৬৩ সালের যে-কথা বলেছিলাম সেই সময়ে এসএম হলের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে সাজ-সাজ পড়ে গেল ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে। এসএম হলকে তখন এনএসএফ (আইয়ুব-মোনায়েম তথা সরকারের সমর্থক দল) দুর্গ বলা হতো। এই প্রথম তারা বিরাট ধাক্কা খেল ছাত্র ইউনিয়নের কাছে কেননা এবারের ছাত্র ইউনিয়নও তাদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক লড়াই লড়বে। আমরা নবীনরা সন্ধ্যা থেকে রাত জেগে কাজ করছি; পেছনে শক্তি জোগাচ্ছেন বড়োরা। ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনী-প্যানেলে সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন (পরবর্তীকালে সিএসপি, বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ও 888sport apps ব্যাংকের গভর্নর), ন্যাশনাল ছাত্র ফেডারেশন (এনএসএফের) প্যানেলে সহ-সভাপতি চৌধুরী শফি সামী (পরবর্তীকালে পিএফএস, 888sport appsের পররাষ্ট্র সচিব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন সাবেক উপদেষ্টা)। দুজনেই মেধাবী ও তুখোড় ছাত্র; অনেকটা সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই। এনএসএফের মধ্যে ওই সময়ে অতি মেধাবী ছাত্র ছিল অপ্রতুল; কিন্তু এসএম হলে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটলো। ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনী-প্রচারে সন্ধ্যা নামতেই যোগ দিলেন শাকুরভাই। অন্য এক আবদুশ শাকুরকে প্রথম দেখলাম কাঁধে হারমোনিযাম ঝুলিয়ে গান ধরেছেন Ñ গণসংগীত ‘এই ওয়াক্ত কি আওয়াজ হ্যায় মিলকে চলো/ ইয়া জিন্দেগি কা করার হ্যায় মিলকে চলো’। আইপিটির একসময়ের দুর্দান্ত গান। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে আসা তাঁর বন্ধু আবু তালেব এবং আমাদের ছোটদের অনেকে। শাকুরভাইয়ের গলা ছিল হালকা, একটু মিহি তবে মধুর। তাঁর সঙ্গে পরবর্তীকালে গণসংগীতে গলা-মেলাতো সম্ভবত আমাদের সবচেয়ে নবীন দরাজ কণ্ঠ মনু। শাকুরভাই একটার পর একটা গান ধরছেন আর নির্বাচনী প্রচারের মজমা জমাচ্ছেন; তালে তালে আমরা নেচে চলেছি। রমেশ শীল এ-সময় আমাদের একজন আরাধ্য গীতিকবি ছিলেন, যাঁর পরিচয় আমাদের সামনে শাকুরভাই তুলে ধরেছিলেন। আমরা অনেকেই মনে করতাম, কবিয়াল রমেশ শীল মাইজভাণ্ডারী আধ্যাত্মিক সুরসাধক ছিলেন ও আধ্যাত্মিক অনেক গান বেঁধেছেন মনমোহন দত্তের মতন। শাকুরভাই আমাদের নির্বাচনী প্রচারণায় গাইলেন ‘রইস্যার বাপরে রইস্যার বাপ/ উপায় কিরে রইস্যার বাপ’ এবং কবিয়াল রমেশ শীলের সমাজ-সচেতনতামূলক প্রগতিশীল একাধিক গান। রাত একটু গভীর হলে পলাশী রেলগেট পেরিয়ে চায়ের দোকানে ঢুকতাম; তখনো এসএম হল থেকে হারমোনিয়াম কাঁধে চলছেন; এবার তার কণ্ঠে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে/ তবে একলা চলো রে।’ আমরা সমস্বরে তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতাম।
সংগীতবিষয়ক তিনি যে পরবর্তীকালে প্রাজ্ঞ-পণ্ডিত হবেন; এমন বিদ্যুচ্চমক আবদুশ শাকুর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমাদের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এক নির্বাচনী প্রচারণায় দশ-ভূতের মেলায় গান গাওয়া ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদ কিংবা ডাকসুর কোনো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়কালীন কোনো সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় তিনি অংশ নেননি। আসলে তখন তাঁর নিভৃতে সংগীতসাধনা চলছিল ও সাংগীতিক নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকতেন। নিজের কণ্ঠ সম্পর্কে একটু নেতিবাচক ছিলেন বলেই সুধী-সমাজে কণ্ঠ-শীলনে তাঁর বোধকরি অনীহা ছিল। অথচ স্বজনে, বন্ধু-বান্ধব বাড়িতে এসে 888sport app প্রসঙ্গের মধ্যে হঠাৎ হারমোনিয়াম টেনে বের করে গান শোনাতে তাঁর আগ্রহ লক্ষ করেছি। তাঁর সীমাবদ্ধতা ছিল এখানেই; নিজের আল-জিহ্বার সঞ্চালনে ঈষৎ সমস্যার কারণে তাঁকে প্রায়শ এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পরিমাণ বিরতি দিয়ে হালকা কাশি দিতে হতো অথবা ওষ্ঠযুগল নাড়াতে হতো যা তেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়; বিরক্তিকর তো নয়ই। সংগীত পরিবেশনে আবদুশ শাকুরের যথাবিহিত-মুদ্রা আশ্চর্যজনকভাবে তাঁর বচনশৈলীতে পর্যবসিত হয়েছিল।
জীবনের শেষার্ধে ভারতের বিখ্যাত ভি. বালসারার আয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চকবির আরো দুজন সহযোগে গান রেকর্ড করেন; তার মতে, নিতান্ত অনীহা সত্ত্বেও নিজের গলাকে যাচাই করার জন্য। আশ্চর্যের বিষয় এবং প্রকৃত সত্য এই যে, এখানে তার গলার ক্ষুদ্র ত্র“টিগুলো মোটেই লক্ষণীয় নয়, সংগত কারণে তাঁর গায়কী ঢঙের জন্য। একজন বিশালমাপের সংগীতজ্ঞ ও সংগীতবিশারদ আবদুশ শাকুরের গানের গলার বিষয়টি এই জন্য অবতারণা করলাম কেননা, এসএম হলে নির্বাচনী মজমা জমানো তাঁর গলা আমি প্রথমবর্ষের ছাত্র থাকাকালে শুনেছিলাম। অবাক হতে হয়, গান নিয়ে গহন-গভীরে যাওয়া শুরু হয়েছিল তাঁর পরিণত বয়সে; নব্বইয়ের দশকে যখন তিনি রবীন্দ্রনাথে নিমগ্ন। তাঁর মহামহিম রবীন্দ্রনাথ, সংগীত সংবিৎ, সঙ্গীত-সঙ্গীত ইত্যাদির রচনাকাল নব্বইয়ের দশকে এবং দশকের শেষদিকে গ্রন্থাকারে ভাবনাগুলো প্রকাশিত হয়। অথচ তাঁর লেখালেখি তথা গল্পকার হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ হয়েছিল যা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অটুট রেখেছেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যাবস্থায় আবদুশ শাকুরের ক্ষীয়মান প্রকাশিত হয়। মুদ্রিত পুস্তকসমেত বোধকরি তিনিই ছাত্রত্বকালীন প্রথম লেখক আমাদের সময়ে। মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আতিকুল মাওলার সঙ্গে পুরনো 888sport appর কোনো একটি প্রখ্যাত স্থানে আড্ডা মারতে মারতে যথারীতি তাঁকে বশ করে ফেলেন। বশীভূত করবেনই। আড্ডার মজলিশি বলেন-বচনে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আতিকুল মাওলা ভুল করেননি। ক্ষীয়মান এতোই প্রচার পেয়েছিল যে, আমরা আবদুশ শাকুর মানে ক্ষীয়মান ধরে নিতাম। তাঁর প্রাথমিক জীবনের চট্টগ্রাম অবস্থানকালীন পাতানো-ভাগনে কবি বেলাল চৌধুরীর মূল্যায়ন : ‘তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল রম্য লেখক হিসেবে প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ক্ষীয়মান দিয়ে। কোনো প্যাঁচ-পয়জার নেই। নিখুঁত চলনের গল্প। নেহাত রামগরুড়ের ছানা না হলে বিরসবদনে ওই গল্প হজম করা কঠিন।’ ক্ষীয়মান যখন বেরোয় কবি বেলাল চৌধুরী তখনো কলকাতা থেকে 888sport appয় এসে স্থিত হননি। ক্ষীয়মান প্রকাশের বেশ কিছুদিন পরে বইটি তাঁর হাতে পৌঁছেছিল। আবদুশ শাকুরের আরো একজন পাতানো ভাগনে অতি নিকট-সুহৃদ একদার কুশলী কথা888sport live chatী, পরে টেলিভিশন সংবাদ সম্প্রচারের আদিপিতা হুমায়ূন চৌধুরীর ক্ষীয়মান প্রসঙ্গে মন্তব্য, ‘শাকুরের এত সাংঘাতিক 888sport live footballবোধ ও রসবোধের উৎস কী ভাবতে অবাক লাগে।’
আবদুশ শাকুরের সমসাময়িক হায়াৎ মামুদ, সেবাব্রত চৌধুরী, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, হুমায়ুন চৌধুরী, মনজুরে মওলা সপ্তক, কালবেলা ইত্যাদি লিটল ম্যাগাজিন ও 888sport live football আন্দোলনে সমর্পিত ছিলেন। আমরা তাঁদের একটু ছোটরা আবদুশ শাকুরদের সমসায়িক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের নেতৃত্বে স্বাক্ষর, স্যাড জেনারেশন, কণ্ঠস্বর ইত্যাদি নিয়ে নতুনতর 888sport live football অভিযাত্রায় ছিলাম অবগাহিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এবং তখনকার 888sport live footballজগতে এই দুই গোষ্ঠীর দামামা ও তূর্য-নিনাদের কোথাও আবদুশ শাকুর ছিলেন না; বরং উভয়ের সঙ্গে ছিল তাঁর সখ্য। আমার সঙ্গে ছিল ব্যক্তিগত সিনিয়র-জুনিয়র বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। একটা উদাহরণ দিই। ১৯৬৫ সালে অনার্স পরীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম যাবো। তখন 888sport app-চট্টগ্রাম পথে দ্রুতগামী গ্রিন-অ্যারো নামে একটি ট্রেন যুক্ত হয়েছে। আমি নিচের ক্লাসের টিকিট কেটে ট্রেনে উঠতে যাবো; দেখি একটা কালো অ্যাটাশে-সুটকেস নিয়ে শাকুরভাই দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠছেন। আমাকে জোর করে ওঠালেন এবং বললেন, ‘টিকিট চেকার এলে তোমার টিকিটের বাকি পয়সা আমি দেব’। সেই সময় দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠা বিশাল ব্যাপার। মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকেরা রেলের ইন্টারক্লাসে 888sport slot game করতেন। প্রথম শ্রেণি তো আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বহুকাল আগের কথা, কিন্তু ভাস্বর 888sport sign up bonusতে। তিনি এসেছিলেন ডিপিআই অফিসে 888sport appয় বদলির তদবিরে। সরকারি কলেজে যোগ দিয়েছেন অধ্যাপনায়; 888sport appয় আসতে চান সিএসএস পরীক্ষা দেবেন বলে মনস্থ করেছেন। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে কলকাতার তারা-নিউজের জন্য আমি কবি মনজুরে মওলা ও আবদুশ শাকুরের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। মূলত এটি স্টুডিওভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান ছিল, যার বিষয়বস্তু রবীন্দ্রনাথ। বিটিভির সাবেক ইংরেজি সংবাদ পাঠক শামীম আহমেদ তাঁর প্রতিষ্ঠান এষণার হয়ে তারা-নিউজের কাজ করতেন। হুমায়ুন চৌধুরী ও আমি তাঁর সঙ্গে যুুক্ত হয়েছিলাম। তখন নির্বাচন প্রাক্-কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নানা কারণে দেশের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। নিত্যদিন সংবাদচিত্র ও বিশদ 888sport world cup rate ছাড়া স্টুডিওভিত্তিক রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠান ধারণ করে কলকাতায় পাঠানো হতো। আবদুশ শাকুর ও কবি মনজুরে মওলার সঙ্গে আমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক। প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী আলোচনা অনুষ্ঠানে তাঁরা রবীন্দ্রনাথ ও দেশের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নিয়ে কথা বলেন। ১/১১-এর সময় দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তারা-নিউজের কাজ আমরা বন্ধ করে দিই। ওই আলোচনা-অনুষ্ঠানের রেকর্ড/ ডিভিডির সন্ধান করেও আমি পাইনি, এখানে আবদুশ শাকুরের কিছু কথা সংযুক্তির জন্যে। এই লেখা তৈরির স্বল্প সময়ে তা উদ্ধার করা যায়নি। তবে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এসে আবদুশ শাকুর শামীম আহমেদকে বলেছিলেন, তাঁর সিভিল-সার্ভিসে যোগ দেওয়ার নেপথ্য কারণ ছিল শামীম আহমেদের পিতা অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদের পরামর্শ। সরকারি কলেজের অধ্যাপনা নিয়ে আবদুশ শাকুর মোটামুটি সুখীই ছিলেন। বদলির তদবিরে এসে শিক্ষাভবনে ডিপিআইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাঁকে তাঁর কক্ষের জানালা দিয়ে নিচে দেখতে বললেন। শাকুরভাই নিচে তাকিয়ে বলছিলেন, স্যার, নিচে তো একটা সাইকেল ছাড়া কিছুই দেখছি না। অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, ওই সাইকেলটা তাঁর এবং প্রতিদিন তিনি সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাওয়া-আসা করেন। শাকুরভাই মহিউদ্দিন স্যারের ইঙ্গিত ধরতে পেরেছিলেন, শিক্ষকজীবনে জ্ঞান বিতরণ করা যায়; কিন্তু একজন শিক্ষকের কষ্ট করার ধৈর্য এবং দারিদ্র্যকে জয় করার ক্ষমতা ও সৎসাহস কতটুকু আছে; তা অবশ্যই পরীক্ষণীয়! মহিউদ্দিন সাহেবই তাঁকে বলেছিলেন শিক্ষক হয়ে থাকলে তাঁর মতো সারাজীবন সাইকেল চালাতে হবে, গাড়িতে চড়া সম্ভব হবে না। অধ্যাপক মহিউদ্দিনের প্ররোচনায় তিনি সিএসএস পরীক্ষা দিতে ব্রতী হন। অতি সাদাসিধে নির্লোভ ঋষিতুল্য অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমেদ ইংরেজি উচ্চারণ ও ধ্বনিতত্ত্বে সুপণ্ডিত ছিলেন। বিটিভির ইংরেজি সংবাদ পাঠকদের অডিশন ও মূল্যায়নে আমাদের অনুরোধে তিনি আসতেন। কিন্তু তার দুই পুত্র শামীম আহমেদ ও নাফিস ইমতিয়াজ উদ্দিনের ইংরেজি সংবাদ-পাঠের মূল্যায়নে তিনি কোনোদিন পরীক্ষক বা বিচারক হননি।
১৯৬৫ সালের শেষদিকে ট্রেনে সাক্ষাতের পর দীর্ঘদিন শাকুরভাইয়ের সঙ্গে দেখা নেই আমার, কেননা আমাদের জীবন সম্প্রসারিত হয়েছে; রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে; পেশার তাগিদে আমাদের স্থির হওয়ার সময় বহুদূর প্রসারিত হয়েছে। আশির শুরুতে হঠাৎ দেখা হলো যখন তাঁর কন্যা শামীমা নাসরীন টিভিতে খবর পড়তে এলো তাঁর পিতার সঙ্গে। ওই সময় তিনি নিয়মিত ‘কড়চা’ লিখছেন সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্য এবং রম্যরচনায় আরো পাকাপোক্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে বেরিয়েছে 888sport alternative link ক্রাইসিস, ছোটগল্প সংকলন এপিটাফ, ধস ও বিচলিত প্রার্থনা। আমি তাঁর কড়চার প্রশংসা করতেই তিনি ‘গোলাপ-চাষের’ কথা বললেন। ধানমণ্ডির দুই নম্বর সড়কে সরকারি বাড়িতে শুরু করেছেন এক অনিন্দ্যসুন্দর উদ্যান গোলাপের। ইতোপূর্বে যৎকিঞ্চিৎ তাঁর গোলাপ চাষের গল্প শুনেছি। ভারতীয় হাইকমিশনের অফিস দুই নম্বর সড়কে আর তিন নম্বর সড়কে কবি বেলাল চৌধুরী ভারত-বিচিত্রার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন হাইকমিশনেরই অন্য একটি দপ্তরে। আশির গোড়ার দিকের কথা, হাইকমিশনের প্রধান ও দাপ্তরিক কর্মচারীরা 888sport cricket BPL rateের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ-মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। কী করে যেন হাইকমিশনারের জানা ছিল অদূরে এক সরকারি আমলার বাড়ির ছাদে বহুবিচিত্র গোলাপের সমাহার রয়েছে। দায়িত্ব পড়লো কবি বেলাল চৌধুরীর ওপর গোলাপ সংগ্রহের। মামুর কাছে ভাগনে গোলাপ চাইতেই মামু গোলাপের ওপর নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিলেন। মামু একবার কথা শুরু করলে আর থামেন না, ইংরেজি বাংলায় তো বটে, আরবি, ফার্সি, উর্দুতে গোলাপবিষয়ক যত 888sport app download apk আছে তা উদ্ধৃত করে চললেন, গোলাপের যে কত বিচিত্র জাত-কুল আছে তারও কত কাহিনি! কবি বেলাল চৌধুরী পুষ্পচয়ন করতে এসে পুষ্পবিষয়ক বিশদ জ্ঞান অর্জন করলেন এবং এই জ্ঞান মনুষ্যকুলে বিতরণের জন্য মামাকে জোর অনুরোধ করলেন।
ভাগনের অনুরোধ ফেলতে পারেননি আবদুশ শাকুর। আজকের গোলাপ সংগ্রহ গ্রন্থের আঁতুড়ঘরের সন্ধান দিয়েছিলেন কবি বেলাল চৌধুরী। তাঁর ভাষায়, তিনি তখন একটি অকিঞ্চিতকর পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পরামর্শকরূপে। ট্যাবলয়েড গোছের সেই কাগজে গোলাপ সংগ্রহের কয়েকটি কিস্তি আশির দশকে প্রকাশিত হয়েছিল। সন্দ্বীপ নামের সেই পত্রিকাটির কপি খুঁজলে প্রাথমিক লেখাগুলো পাওয়া যাবে। পরবর্তীকালে মিজানুর রহমানের ত্রৈমাসিকেও গোলাপ সংগ্রহের কিছু কিস্তি প্রকাশিত হয়। আবদুশ শাকুরের জীবনের সম্ভবত শ্রেষ্ঠ সুকৃতি গোলাপ সংগ্রহ ২০০৪ সালে গ্রন্থাকারে বের হয়। গ্রন্থটি ওই সালের ‘প্রথম আলো বর্ষ সেরা বই’ 888sport app download bd লাভ করে।
১৯৮৭ সালের এক সকালে ধানমণ্ডির দুই নম্বর সড়কের বাড়িতে আমি তাঁর গোলাপ-উদ্যান দেখে অভিভূত হয়ে পড়ি। তিনি অনুরোধ করেছিলেন আমাকে বিটিভির বার্তা-প্রযোজক হাশিম রেজাকে সঙ্গে আনতে এবং গোলাপ-উদ্যানের একটি 888sport world cup rate তৈরি ও প্রচার করতে। হাশিম রেজার সঙ্গে যথারীতি চিত্রগ্রাহক ও শব্দ-প্রক্ষেপক প্রকৌশলী ছিলেন। আমি গোলাপে-মশগুল এবং মেহেদি হাসানের বিখ্যাত গজল ‘গুল মে রঙ্গ-ভরে/ বাগ্ মে বাহার আয়ি’ যেন গুনগুন করছে মস্তিষ্কে এবং সেইসঙ্গে সদ্য-পড়া কমলকুমার মজুমদারের কঠিন গদ্য-কাহিনি গোলাপ-সুন্দরীর বিলাসের কথা। গোলাপ-সুন্দরীর মূল চরিত্র বিলাস, হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবার পর একটি স্বাস্থ্যকর নির্জন জায়গায় এক বাড়িতে থাকে। একা। সে-বাগানে ফুল ফোটায়, বিশেষত একটি গোলাপ, যার রং ঠিক কী রকম লাল হবে, তা সে নিজেই জানে না, যে-গোলাপের জন্য নির্দিষ্ট একটি 888sport promo code আছে, সেই 888sport promo code যদি কখনো আসে গোলাপের কাছে, তাহলে তাকে ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে উচ্চারণ করতে হবে না। আবদুশ শাকুরকে কমলকুমার মজুমদারের সুররিয়ালিস্ট গল্পকাহিনির বিলাসের কল্প বাতাস, না ভূতে পেয়েছে কিনা, এই ভেবে সেদিন মনে শঙ্কা হচ্ছিল! কিন্তু আবদুশ শাকুর মানুষটি নীরবে-নিভৃতে কী গভীর অনুসন্ধানী গবেষণাকর্মে নিমগ্ন ছিলেন তা পরে বুঝতে পেরেছি। সেদিন বিটিভির সাক্ষাৎকার 888sport world cup rateে তঁাঁর একটি কথা ঘুরেফিরে আমার এখনো মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘গোলাপ হচ্ছে রূপ কি রানী, রানীর যেমন প্রতিদিন পদযুগল ধৌত করে দিতে হয়; তেমনি গোলাপেরও প্রতিদিন পা-ধুয়ে দিতে হয়। অর্থাৎ তার শেকড়ের পরিচর্যা করতে হয় প্রতিদিন।’ সেদিন আমি একটি 888sport app download apkও লিখেছিলাম ‘গোলাপ বিসম্বাদ’ শিরোনামে তাঁকে উৎসর্গ করে।
আবদুশ শাকুরের ‘সাধের সাহত্যি’ ও ‘শখের সংগীতের’ মধ্যে গোলাপ চাষে নিষ্ক্রমণ এবং গোলাপ-সুন্দরীর হাত ধরে তাঁর গভীর প্রেমসলিলে নিমজ্জন শুধু ঈর্ষণীয় নয়, সমগ্র বাংলা 888sport live footballে কিংবা বিশ্ব888sport live footballে এই ত্রিমাত্রিক মানুষ পাওয়া দুষ্কর। মূলত আবদুশ শাকুর ছিলেন একজন বহুমাত্রিক 888sport live chatকলাবিদ সৌন্দর্যপিয়াসী বড়মাপের পণ্ডিত। আমাদের সমসাময়িককালে তাঁর পাণ্ডিত্যের সঙ্গে তুল্য একমাত্র আবদুল মান্নান সৈয়দ। মান্নান সৈয়দ গান করেননি, গোলাপ-চর্চা করেননি। আবদুশ শাকুর 888sport app download apk-চর্চা করেননি। তবে দুজনেই সাহত্যিপ্রেমী, সংগীতপ্রেমী। দুজনেরই মিল এক জায়গায় Ñ অগাধ পাণ্ডিত্য সর্ববিষয়ে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.