আবার সঞ্চয়িতা পড়তে পড়তে

এক তরুণ কবি ১২৮৯ বঙ্গাব্দের ভোরের সূর্যোদয় দেখতে দেখতে অনুভব করলেন তাঁর চারদিকে যেন কঠিন কারাগার, লিখলেন, ‘ওরে, চারি দিকে মোর/ এ কী কারাগার ঘোর -/ ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত র্ক।/ ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি,/ এসেছে রবির

কর ॥’ সেদিন কবি ওই সূর্যোদয় দেখেছিলেন কলকাতা মহানগরীর সদর স্ট্রিটের বারান্দা থেকে। আবার ১৩২১ বঙ্গাব্দে শান্তিনিকেতনের পুবের লাল আকাশে সূর্যোদয় দেখে মাঝবয়সী কবি ঘরে এসে খোলা জানালার পেছনে ডেস্কে বসে জানালার সামনে গাছের পাতায় পাতায় সোনালি রোদ্দুর দেখে লিখলেন, ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা,/ ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ,/ আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’

‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ আর ‘সবুজের অভিযান’ 888sport app download apkদুটি রচিত হয়েছে যথেষ্ট সময়ের ব্যবধানে এবং দুটি পৃথক স্থানে। কিন্তু দুজন কবির মধ্যে একটা যেন আবেগের ও ভাবের মিল, প্রণোদনার সাদৃশ্য।

একই কবি তরুণ বয়সে লিখেছিলেন, – ‘ফেলো গো বসন ফেলো – ঘুচাও অঞ্চল।/ পরো শুধু সৌন্দর্যের নগ্ন আবরণ।’ মধ্যবয়সে ওই কবি লিখলেন – ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।’ এই রূপান্তর বা তূরীয় স্তরে আরোহণ স্বাভাবিক মনে হয়। সময়ের প্রবাহে ভাবের পরিবর্তন ঘটাই তো স্বাভাবিক।

একটু প্রসঙ্গান্তরে যাই।

‘সবুজের অভিযান’ কবি লিখেছিলেন প্রমথ চৌধুরীর অনুরোধে সবুজপত্র পত্রিকার প্রথম 888sport free betর জন্য। যখন এলাহাবাদ থেকে রামানন্দ চট্টোপাধ্যয় রবীন্দ্রনাথকে লিখলেন, তিনি প্রবাসী নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে চলেছেন, তার জন্য একটি রচনা চাই, তখন রবীন্দ্রনাথ প্রথম 888sport free betর জন্য লিখে পাঠালেন – ‘সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।/ … ঘরে ঘরে আছে পরমাত্মীয়, তারে আমি ফিরি খুঁজিয়া।’ ওই একটি 888sport app download apkই লিখে পাঠিয়েছিলেন।

কিন্তু সবুজপত্রের জন্য রবীন্দ্রনাথ লিখে পাঠালেন – ১. ‘সবুজের অভিযান’, ২. ‘বিবেচনা ও অবিবেচনা’ ও ৩. ‘হালদার গোষ্ঠী’। প্রথমটি 888sport app download apk, দ্বিতীয়টি 888sport live, তৃতীয়টি ছোটগল্প। বোঝা যাচ্ছে সবুজপত্র রবীন্দ্রনাথের স্নেহবৃষ্টিতে শ্যামল-সবুজ হয়ে উঠেছিল।

‘সবুজের অভিযান’-এ ছিল আধমরাদের ঘা মেরে বাঁচাবার ডাক। ‘বিবেচনা ও অবিবেচনা’য় ছিল বিবেচনায় সময় নষ্ট না করে দুঃসাহসে ভর করে বৃহৎ কার্য সমাধা করাতে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্ররোচনা, – প্রবল প্রেরণা। কী হবে-না-হবে ভেবে সময় না কাটানোর পরামর্শ ও প্রৈতি। আর ‘হালদার গোষ্ঠী’তে ধনী জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে চাকরিজীবী মধ্যবিত্তের প্রতি

সমর্থন-সম্মতি। রবীন্দ্রনাথ নিজে জমিদার হলেও চেয়েছিলেন মধ্যবিত্ত ও সাধারণ শ্রেণির সঙ্গে মিশে যেতে। জীবনসায়াহ্নে লিখেছেন, ‘মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে; ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল না একেবারে।’ জীবনে নিজে যা পারেননি তাকেই সত্য করেছেন ‘হালদার গোষ্ঠী’তে কল্পনায়। তার নায়ক জমিদারি ছেড়ে চাকরি বেছে নিয়েছে।

সবুজপত্র প্রসঙ্গে লিখতে লিখতে চলে গেছি একেবার জীবনের অন্তিম প্রান্তে। ফিরে আসি ‘সবুজের অভিযান’ পর্বে। তার মানে সবুজপত্রের পর্বে।

সবুজপত্র পর্বের সমান্তরালে চলেছে বলাকা পর্ব। একই পর্বের দুটি মাত্রা – সবুজপত্র আর বলাকা। আর ‘বলাকা’ মানে মুক্তছন্দ, কিছুটা গতিতত্ত্ব। একপ্রকার দার্শনিকতা। বলাকা পর্বের পিছে পিছে এলো পলাতকা পর্ব। রাতারাতি পালটে গেল, – সব পালটে গেল, – ছন্দ, ভাষা, ভাব, বিষয়, আধার ও আধেয়। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের জীবনে ও সৃজনে নেমে এলো দুঃখের, যন্ত্রণার, শোকের কালো ছায়া। নিয়তি আর কাকে বলে! কিন্তু নিয়তির কাছে হার না মেনে তাকে দুঃখের আগুনে পুড়িয়ে নতুন এক রূপ দিলেন পলাতকার 888sport app download apkয়। কোন দুঃখ? কীসের যন্ত্রণা?

প্রথম দুঃখ বড় মেয়ে মাধুরীলতার জীবন। তার বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর গুরুতুল্য কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর পুত্র শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীর সঙ্গে; কিন্তু বিয়েটা সুখের হয়নি। রবীন্দ্রনাথ জামাতা শরচ্চন্দ্রের সঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বলতে গেলে জামাতা শ্বশুর বলে, অথবা নোবেলপ্রাপক বলে রেয়াত করেননি, প্রচ- অপমান করেন। মাধুরীলতা, ডাকনাম বেলা, বেলি, বাবাকে বলেন, ‘বাবা, তুমি আর এ বাড়িতে এসো না।’ কিন্তু কিছুদিন পরে বেলার অসুখের খবর পেলেন। আন্দাজ করলেন যে, শরৎ স্ত্রীর চিকিৎসা না করে মরণের পথে তাকে এগিয়ে দেবে। আবার অপমানিত হবেন জেনেও রবীন্দ্রনাথ শরতের বাড়িতে এলেন। এসে শুনলেন ইতোমধ্যেই বেলার (সম্ভবত বিনা চিকিৎসায়) মৃত্যু হয়েছে। এ-কথা শুনে রবীন্দ্রনাথ তক্ষণই দরজা থেকে ফিরে আসেন।

কিন্তু তিনি কি বেলার মৃত্যুর জন্য কাউকে – নিজেকে অথবা জামাইকে – দায়ী করেছিলেন? পলাতকার ‘মুক্তি’ 888sport app download apkটিতে যে-মুক্তির কথা বলা হয়েছে, সে-মুক্তি যেন বেলার মহাকাশে মহাবিশ্বে মুক্তি। আবার ‘নিষ্কৃতি’র বাপের ওপরে যেন শরচ্চন্দ্রের ছায়া। এই বাপ কারো পরোয়া করে না, অত্যন্ত কঠিন হৃদয়ের মানুষ – ‘কঠিন আমি কেই বা জানে না সে।’ শুধু নিজের স্বার্থকে জানে।

আবার ‘হারিয়ে যাওয়া’ 888sport app download apkটির বামী যেন মাধুরীলতাই, যে তার বাবাকে কেঁদে বলছে ‘হারিয়ে গেছি আমি।’ আর বাবা রবীন্দ্রনাথের মনে হয় তাঁর আদরের মেয়ে সংসার ছেড়ে আকাশে গিয়ে তারা হয়ে গেছে। এই যে বলছি ‘মুক্তি’, ‘নিষ্কৃতি’ ও ‘হারিয়ে যাওয়া’তে শরচ্চন্দ্র ও মাধুরীলতা নতুন রূপ ধরে এসেছে, এই ব্যাখ্যা কি কষ্টকল্পিত ব্যাখ্যা? স্পষ্ট না হলেও আবছা আবছা মনে হয়।

এবার মাধুরীলতার কাহিনি ছেড়ে রেণুকার কাহিনিতে আসি। রেণুকার যক্ষ্মা হলো। তখনকার কালে যক্ষ্মার কোনো চিকিৎসা ছিল না। অনেকে বললেন, পাহাড়ে প্রকৃতির কোলে নিয়ে গেলে সারতে পারে। মা তো নেই, কে নিয়ে যাবে, কে সেখানে এই মেয়েকে দেখাশুনা করবে? বাবাই চললেন রেণুকাকে নিয়ে আলমোড়া। বাবাই তার সেবাযত্ন করেন। কিন্তু ব্যাধিবীজ রেণুকার ফুসফুসকে কুরে কুরে খেল। রেণুকা মারা গেল। রবীন্দ্রনাথ একা ফিরলেন কলকাতায়। রেণুকাকে নিয়ে যাওয়া রেলপথে, আবার একা প্রত্যাবর্তন – এই ঘটনাটা ‘ফাঁকি’ 888sport app download apkটিতে সম্পূর্ণ রূপ লাভ করেছে। বিলাসপুর বলে কোনো স্টেশন নেই আলমোড়ার পথে, তবে তখন হয়তো অন্য কোনো জংশন স্টেশন ছিল – এই যেমন একদা কলকাতা থেকে হায়দরাবাদে আসতে হলে বেজোয়াদা জংশনে ট্রেন বদল করতে হতো। ছন্দের খাতিরে রবীন্দ্রনাথ জংশন স্টেশনটার নাম দিয়েছেন বিলাসপুর। হয়তো প্রকৃতই আলমোড়া যাওয়ার সময় একটা জংশন স্টেশনে তাঁদের ওয়েটিংরুমে ঘণ্টাকয়েক থাকতে হয়েছিল আর সেখানে রু´িণীর ঘটনাটা ঘটেছিল। এবং পরিশেষে পিতার পরিতাপ! 888sport live chatে সত্যকে নতুন রূপ তো পরানোই হয়।

‘পলাতকা’র মধ্যে কোনো গতিতত্ত্ব নেই। আছে সাধারণ সাংসারিক জীবনের কথা। তাই এর ছন্দ, ভাষা, শৈলী সব মামুলি জীবনঘেঁষা। ‘বলাকা’র মুক্তছন্দ, যা গতির সঙ্গে মেলে, সেই ছন্দকে পরিহার করে ‘পলাতকা’ লিখলেন বাক্ছন্দে বা কথ্যছন্দে।

রবীন্দ্রকাব্যের আলোচনায় ‘পলাতকা’ যেন বেশ উপেক্ষিতা। কীভাবে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ কোন কলে 888sport live chatের প্রসঙ্গ হয়ে বেরিয়ে এসেছে তা আলোচনা ও বিশ্লেষণের বিষয়ই বটে। সব কথা888sport live chatের অন্তরালে থাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা। আর তার সঙ্গে থাকে সেই অভিজ্ঞতাকে সৃষ্টির আগুনে পুড়িয়ে বা আখ-মাড়াইকলে পিষে নতুন এক রূপ দেওয়ার প্রতিভা।

আবার ‘পলাতকা’র মধ্যে লুকিয়ে আছে 888sport promo codeমুক্তির চিন্তা। এই মুক্তিচিন্তা ব্যক্তিগত স্তর থেকে উচ্ছ্রিত হয়েছে মহুয়ার ‘সবলা’ 888sport app download apkয়। ‘888sport promo codeকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি রবে অধিকার?’ 888sport promo code কি শুধু ‘উর্বশী’ হয়েই থাকবে? ‘উর্বশী’ ক্রমে হয়ে ওঠে ‘ল্যাবরেটরি’র সোহিনী। সোহিনী তার স্বামীর 888sport apkচর্চা ও সাধনাকে তুলে দিতে চেয়েছে এক সম্ভাবনাময় তরুণ 888sport apkীর হাতে। কিন্তু সোহিনী, যার মধ্যে উর্বশীর ছায়া দেখতে পাই, সে আসলে আধুনিকার প্রতিমূর্তি। তাই তার স্বামীর 888sport apkচর্চা ও সাধনাকে সে তুলে দিতে চায় এক তরুণ 888sport apkীর হাতে। কিন্তু সোহিনীর ইচ্ছে ও স্বপ্ন প্রাচীনতার প্রতিমূর্তি পিসিমার ইচ্ছায় প- হয়। আধুনিকতা ও প্রাচীনতার মধ্যে দ্বন্দ্ব যে কত গভীর তা রবীন্দ্রনাথ ভালোই জানতেন।

কথায় কথায় চলে এসেছি সঞ্চয়িতার সীমানা ছাড়িয়ে শেষ বয়সে লেখা গল্পের প্রসঙ্গে। হঠাৎ পড়ল মনে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে ৩১ শ্রাবণে লেখা ‘শেষ চিঠি’ 888sport app download apkটি। ওইদিন তিনি কি বৃষ্টির দিনে উত্তর কলকাতার কোনো পথ দিয়ে গাড়ি করে যেতে যেতে এসে পড়েছিলেন শরচ্চন্দ্রের বাড়ির সামনে, গাড়ি থেকে সেই বাড়িটার সামনে দিয়ে যেতে যেতে মনে পড়ল মাধুরীলতা-বেলির 888sport sign up bonus – এই বাড়ির সামনে এসে একদিন বেলির মৃত্যু-খবর পেয়ে ভেতরে না ঢুকে দরজা থেকেই ফিরে গিয়েছিলেন। বেলি তো বিয়ে

করতে চায়নি, বাবার আদরেই জীবন কাটাতে চেয়েছিল। কিন্তু সমাজ-রূপিণী মাসির চাপে তাকে বিয়ে দিতে হলো শরচ্চন্দ্রের সঙ্গে। তার পরিণাম ভালো হয়নি। মৃত্যুর আগে তার কি বাবাকে দেখতে ইচ্ছে করেছিল? সে কি একান্তে বাবাকে সেই ইচ্ছেটা জানিয়ে চিঠি লিখেও বিরূপ স্বামীর চোখ এড়িয়ে সে-চিঠি ডাকে দিতে পারেনি। শরচ্চন্দ্রের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে এমন কথা ভেবেই রবীন্দ্রনাথ এই 888sport app download apkটি নির্মাণ করেছিলেন কি?

এবার আবার ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পের প্রসঙ্গে – সঞ্চয়িতার সীমানা ছাড়িয়ে – একবার ফিরে যাই। ‘ল্যাবরেটরি’তে আধুনিকতার প্রতীক সোহিনীর স্বপ্ন প- করার জন্য এক পিসিমা আছেন। সোহিনী 888sport apkের চর্চাকে বাঁচাতে চেয়েছিল, পিসিমার প্রভাবে পারেনি।

এই কাহিনির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে যোগাযোগ 888sport alternative linkের – এখানে স্থূল মানসিকতার, একপ্রকার অসভ্যতার প্রতিমূর্তি মধুসূদনের সূক্ষ্ম সংস্কৃতিমনের প্রতিমূর্তি বিপ্রদাসের বিরোধ – এ যেন শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিরোধ।

কোনোখানেই বাস্তব সত্য হুবহু প্রতিফলিত হয়নি, সৃষ্টিরহস্যের গোপন সুড়ঙ্গপথে 888sport live footballে রূপ পেয়েছে। হয়তো এ শুধুই আমার মনের কল্পনা, তবে কষ্টকল্পনা কি স্বচ্ছকল্পনা তা সংবেদনশীল পাঠক ভেবে দেখুন। সমস্তই যেন সম্ভাবনার সীমানা ছুঁয়ে ছুঁয়ে বয়ে চলা বিনিদ্র রজনীর সময়যাপনা।