আবুবকর সিদ্দিকের 888sport app download apk-ছোটগল্প 888sport free betধিক্যে ও 888sport live chatগুণে দ্যুতিমান। 888sport alternative link, 888sport live, 888sport sign up bonusকথা, জীবনী ও গণসংগীত রচনায় তাঁর সুানাম সঞ্চয়ও অপ্রতুল নয়। জলরাক্ষস, খরাদাহ, বারুদপোড়া প্রহর ও একাত্তরের হৃদয়ভস্ম – এই চারটি 888sport alternative linkই তাঁকে বরেণ্য ঔপন্যাসিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সমর্থ। 888sport live-শিরোনামা সত্যানুসন্ধানের জন্যে আমরা কেবল জলরাক্ষস ও খরাদাহ 888sport alternative linkকে প্রামাণ্য সীমানায় রাখবো।
দুই
চিত্রীর হাতের তুলি দিয়ে সমাজজীবনের চিত্র যেভাবে তুলে ধরা সম্ভব, লেখকের কলমে হয়তো তা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই নবান্ন নাটকের লেখক বিজন ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘লেখনী ফেলে দিয়ে যদি তুলি নিতে পারতাম জয়নুল আবেদিনের মতো, তবে নবান্ন নাটকে যা বলতে চেয়েছি তা স্পষ্ট হত।’ 888sport live chatাচার্যের তুলি এবং গণনাট্যকর্মীর কলমের ওপর যথেষ্ট 888sport apk download apk latest version রেখেও বলতে হয়, কখনো কখনো প্রতিভাধর লেখকের লেখনীও মহৎ চিত্রের সমকক্ষ হতে পারে, কিংবা তাকে অতিক্রম করার যোগ্যতা অর্জন করে। আবুবকর সিদ্দিক তাঁর প্রথম 888sport alternative link জলরাক্ষসে (১৯৯৫, দ্বি. প্র. ২০০১) প্রকৃতি ও মানুষ-পীড়িত সমাজব্যবস্থার যে-দগদগে ছবি এঁকেছেন তা কথা888sport live football হয়েও তুলিচিত্রের মর্যাদা পেয়েছে।
নদী-নালা-খাল-বিল ভরা 888sport apps। এদেশে প্রায় প্রতিবছরই বড় রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। ঝড়-বৃষ্টি-বন্যায় মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। মানুষ স্বজনহারা হয়। আশ্রয়হীন হয়। অনাহার ও মহামারি তার নিত্যসাথি হয়ে দেখা দেয়। প্রকৃতির এই নির্মম নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত হয় সুবিধাবাদী একশ্রেণির মানুষের স্বার্থোদ্ধার অভিযান। রিলিফ পাচার থেকে শুরু করে অসহায় 888sport promo codeকে প্রলোভনের জালে ফেলে সম্ভোগ করা তাদের নৈমিত্তিক ব্যাপার হয় দাঁড়ায়। রাক্ষুসে জল, ঝড় ও মানুষের হাত থেকে অসংখ্য নিরীহ মানুষ বাঁচতে চায়। এই মরা-বাঁচার এক ভয়ংকর দলিল রচনা করেছেন আবুবকর সিদ্দিক তাঁর জলরাক্ষস 888sport alternative linkে। শওকত ওসমানের ভাষায় – ‘তীক্ষè সমাজসচেতন লেখক ক্ষমাহীন চাবুক হেনেছেন অবিচার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে।’ (গ্রন্থের দ্বিতীয় প্রচ্ছদ)
888sport app download for androidযোগ্য যে, বাংলা 888sport alternative linkে প্রকৃতির বর্ণনা, এমনকি আদিম শক্তির উৎস হিসেবে প্রকৃতির উপস্থাপনা কম হয়নি। আর সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবনচর্চার ব্যবচ্ছেদ কিংবা বিশ্লেষণ প্রচুর হয়েছে। রবীন্দ্র888sport live footballে প্রকৃতি এসেছে কখনো মানুষের বন্ধু হিসেবে, কখনো বা শত্রু হিসেবে। তবে শত্রু হলেও সেই প্রকৃতি প্রচণ্ড হিংস্রতায় আঘাত হানেনি। কখনো কখনো মানুষকে কাঁদিয়েছে মাত্র। স্নিগ্ধ স্বাভাবিক প্রকৃতির মাঝে মানুষের স্বচ্ছন্দ বিচরণের কথা বলেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মানিকের হাতে-গড়া কিছুসংখ্যক চরিত্র নদীমাতৃক প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেছে অহরহ। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র কাঁদো নদী কাঁদো 888sport alternative linkে ক্ষয়িষ্ণু নদী ও জীবনের আলেখ্য বিধৃত হয়েছে। কিন্তু আবুবকর সিদ্দিকের হাতে ‘জল’ রাক্ষসে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতি ও জীবন একটা বড় ক্যানভাসে ধরা দিয়েছে। 888sport alternative linkে জল, বৃষ্টি, মেঘ, ঝড়, নদী ও সংশ্লিষ্ট মানুষের ওপর ফোকাস ফেলা হয়েছে। কাহিনির বৈচিত্র্যে, ঘটনার সময়সীমা, এমনকি আয়তনের দিক দিয়ে জলরাক্ষস অবশ্য স্ফীতকায় নয়। কিন্তু পড়ার পর উপলব্ধি করা যায় যে, এ-ব্যাপারগুলো একান্তই বাহ্য। মূলত উপলক্ষ হিসেবে মানবজীবনের একটা বিশেষ বিপর্যয়কে অবলম্বন করে লেখক জীবনের একটা বড় সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন পাঠককে। সে-সত্যটি হচ্ছে : চিরাচরিত সর্বপ্রকার বিরুদ্ধশক্তির মোকাবিলায় প্রতিবাদী মানুষের চিরকালীন অনমনীয় সংগ্রাম। সোজা কথায়, বাঁচার লড়াই। এই লড়াইকেই লেখক তাঁর অভিজ্ঞতার রগরগে প্রয়োগে, প্রতীকী নিরীক্ষার ব্যবহারে ও জীবনবোধের রূপায়ণে শেষ পর্যন্ত একটা ধ্রুপদী আয়তন দিতে পেরেছেন।
দক্ষিণ বাংলার, বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাটের নিম্নভূমির মানুষ ও আবহাওয়া অবলম্বনে জলরাক্ষসের মূল কাহিনি গড়ে উঠেছে। এতে লেখকের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধির স্বাক্ষর আছে। ‘ছবিগুলো মূলত আমার অভিজ্ঞতার পুঁজি থেকে। চরিত্র সবই বানানো।’ (লেখক – ভূমিকা) তথাপি গোনজোরালি, জরিন, ইদু মুনশি, ছবরোদ্দি, আয়নাসুন্দরী, চৌধুরি, ঘেঁড়েল মেয়েলোক – সবই এ-সমাজের পরিচিতজন। লেখকের বর্ণনা ও উপস্থাপনার গুণে আমরা জলরাক্ষসে এদের যেন নতুন করে দেখি। কেননা, সমাজজীবনের বহুতর বৈষম্য তো বরাবরই আছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সৃষ্টিশীল লেখক তার কত গভীরে প্রবেশ করার যোগ্যতা দেখাতে পারেন ও সমস্যাগুলো উদ্ঘাটনে বা শনাক্তকরণে কতখানি সাহস এবং ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। বলা বাহুল্য, জলরাক্ষসে এই শক্তি পরীক্ষা একাধিক ক্ষেত্রে ঘটেছে এবং লেখক সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মানুষের এ্যাখন মার খাওয়ার কথা। পিঠ পেতে মার খায়। প্রকৃতির মার আর মানুষের মার। এইভাবে এই পালা খতম হবে।
পাল্টা মার দেবার সময় আসবে তারপর। তখন পিঠ ঘুরিয়ে বুক নিয়ে দাঁড়ানো
লাগবে ঠিক।’ (পৃ ১২২)
‘পুরানো পুঁজে আর পুরানো রক্তে দলা পাকানো খারাপ মেঘ’ (পৃ ১) থেকে প্রলয় ও ক্ষয়ের উৎপত্তি হয়েছে। গোনজোরালি ও জরিনদের জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। যে-গোনজোরালিকে লেঠেল বানিয়ে চৌধুরি টাকার পাহাড় গড়েছে, স্বার্থ রক্ষা করেছে, সেই গোনজোরালির বিপদে চৌধুরি সাড়া দেয়নি – অবজ্ঞায় দূরে ঠেলে দিয়েছে। তাই গোনজোরালি ক্ষোভে-দুঃখে চৌধুরির মাথা চিবোয়, ‘পোকা খাওয়া দাঁত। চাপা খেদে মাড়িতে ঘষা খায়। জাঁতায় জাঁতা পেষার শব্দ। দুই জাতার ফাঁকে চৌধুরির খুলি চোয়াল গ্রীবার হাড় চরম পেষাইয়ে গুঁড়ো হয়ে যেতে থাকে।’
লেখকের শ্রেণিচেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই গোনজোরালি ও চৌধুরি। চৌধুরির আছে কয়েক পুরুষের আঁকড়ে থাকা তেল-খাওয়ানো সিন্দুক। ভেতরে পুঞ্জি করা ধন। খাতকচাষি, বর্গাচাষি, বন্ধকিচাষির রক্তচোষা মালামাল, যা দিয়ে ভূমিহীন গোনজোরালিদের নিয়ন্ত্রণ করে। গোনজোরালিরা মার খায়। কখনো বা বাঁচার জন্যে উঠে দাঁড়ায়। এভাবেই তাদের জীবনচক্র চলে আসছে।
জরিন নিঃসন্তান রমণী – গোনজোরালির স্ত্রী। স্বামী তার শখ-আহ্লাদ কিছুই পূরণ করতে পারেনি। বরং জন্মনাড়ি কাটিয়ে কিছু টাকা পেয়েছে। তবু জরিনের মা হওয়ার সাধ জাগে। তাই কুড়িয়ে পাওয়া এক ছেলেকে দেখে ‘মা ডাক টাটিয়ে ওঠে স্তনের তলায়।’ ছেলেটির ভেদবমি শুরু হলে জরিন ওষুধের সন্ধানে ছোটাছুটি করে; কিন্তু টাকা কোথায়? টাকা নেই, আছে একামাত্র সম্বল শরীর। ভুঁড়েলে রিলিফ অফিসার লোভ দেখায়, শরীরের বিনিময়েও জরিন প্রতারিত হয়। ওষুধ পায় না। তাই ক্রোধে ফেটে পড়ে। চারদিকে আগুন ধরিয়ে দেয়। টাকা ও পাপকে পুড়িয়ে মারে। অবশেষে গোনজোরালিও সম্পত্তির হাঁড়ি নিজের দখলে আনে। স্বপ্নের ঘোরে সে স্ত্রীকে বলে, ‘ভাবিসডা কী? ধোনে সব হয়। ঘর বান্বো। নিকে করবো। ছোয়াল বানাবো। তোর কোল ভরে দেবো।’ তাই তারা নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে বাঁচতে চায়; কিন্তু পারে না।
নদীর বুকে উন্মত্ত তুফান জাগে। ওরা শূন্যে হারিয়ে যায়।
লেখকের ক্ষমতা বিশেষভাবে পরীক্ষিত হয়েছে 888sport alternative linkের একেবারে শেষে ঝড়ে বিক্ষিপ্ত তুফানের মাথায় নৌকার বৈঠা ধরে সংগ্রামরত নায়কের অদম্য ভূমিকার বর্ণনায় এবং তার পরিণতিতে :
সাড়ে পাঁচ হাত উঁচু ঢেউ ঘিরে আসে দিগন্ত জোড়া। তাদের মাথায় সাদা ফেনার পাড়।
গোনজোরালির দুই বাইসেপ ফুলে ওঠে। পেশিগুলো কামড়ের চোটে ফেটে যেতে চায়। বুকের মধ্যে ঘড় ঘড় হাঁপানী। বিশাল তুফানের বেড় এসে পড়ার আগে এ কী কানফাটানো গর্জন! বুকে বৈঠা চেপে কাঁপতে থাকে সে। জলের দিকে চেয়ে চোখ রাঙায়,
কী, মার খাবি? মাইর!
পালটা, মাথা ভাঙতে ভাঙতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঢেউয়ের মার।
জরিন চ্যাঁচাতে থাকে, ওরে আল্লা
গ আল্লা! এ কই যান?
যাই? যাই আরেক চরে। নয়তো কোন গঞ্জে। বাঁচতি হবে না?
(পৃ ১২৭)
অতঃপর –
বেপাত্তা বাচ্চার লাশ আঁকড়ানো জরিন শোলার মতো উড়ে যায় শূন্যে। আগ্রাসী তুফান জিভের ডগায় ধরে নেয়।
সাদা শুঁড় ডগার উপর তুলে নেয় লিকলিকে কালো ডিঙিটাকে। তার গোড়ায় উড়ন্ত গোনজোরালি।
(পৃ ১৩০)
নায়ক-নায়িকার মৃত্যু হওয়ায় ঔপন্যাসিকের দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক বলে মনে হতে পারে; কিন্তু অনুধাবন করলে দেখা যাবে, এই নেতির মাঝেই ইতির ইঙ্গিত – মৃত্যুর মাঝেই লুকিয়ে আছে উজ্জীবনের দীপ্তি। এক গোনজোরালির পতন হলেও সে গোটা প্রতিবাদী মানবজাতির প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ‘জীবন আপাতত অদৃশ্য’ হলেও একদিন ওরা জেগে উঠবে – ‘তিনভাগ গোঁ গোঁ জলের বেয়াদবিতে একভাগ ধুক ধুক মাটি তলিয়ে যায় কখনো। কখনো বা ভেসে ওঠে।’
(পৃ ১৩০)
অপ্রধান চরিত্রচিত্রণ, পরিবেশ পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রেও লেখকের কৃতিত্ব চোখে পড়ে। এমনি কিছু খণ্ডচিত্র :
১. মড়াটাকে সবাই মিলে নদীতে ভাসাবার তাল করছে। আর কী করার? আয়নাসুন্দরী ফ্যাড়াৎ করে পরনকাপড় ছিঁড়ে খুলে ফ্যালে। হিস্টিরিয়ার বাই ওঠা রুগীর মতো চ্যাঁচায়, এই ন্যাও কাফন। পতিধোন গো তুমি কাফন নি পরে যাও।
(পৃ ৪৮)
২. টুকটুকে ফর্শা চাষীবউ নৌকোর গুরোতে পেট বাধিয়ে উবু হয়ে ঝুলছে। ঝুলছে নয়, দু’হাতে সামনের গুরোর কাঠ চেপে ধরে, দু’পায়ে খোলে ঠ্যাকনা বাধিয়ে নিরুপায় বেপরোয়া মেয়েটা মানুষ বিয়োচ্ছে। (পৃ ৬০)
৩. বাইরে ঝুপঝাপ পাড় ধসার
শব্দ। লাশ নিয়ে ক্ষুধার্ত শেয়ালেকুকুরে কাড়াকাড়ি। পুবঘেঁষা বাতাসের ঘষা খেয়ে দুমড়েমুচড়ে ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাসে ফুলে ওঠে পাশের নদী। ছোবল মেরে তুলে নিয়েছিল কোনো এক ঝুপড়ির পেছন দিক। মাচাসুদ্ধ দুধের বাচ্চা জলের খাবলে তলিয়ে গ্যাছে। নয়তো ভেসে গ্যাছে। ফলে আধাপ্রহরের যৌথ উত্তেজনা। ঘাটে ঘাটে ফ্যালা, ডুবোডুবি। বাপটা বুক চাপড়ায়। মায়ে সুর তোলে মড়াকান্নায়। না খেয়ে শুকনো নাঈয়ের গোড়া দিয়ে পেঁচিয়ে ওঠা যে কান্না, বেশিক্ষণ তার ধার টিকে থাকার কথা নয়। স্বরটুকু মরে গিয়ে এখন টনটনে শিসের ফলা কুঁইয়ে কুঁইয়ে লক্ষ্যবিন্দু হাড়ে ফিরছে অন্ধকারের নোংরায়।
(পৃ ৬০-৬২)
জীবনকে দেখা ও দেখানোর ক্ষেত্রে আবুবকর সিদ্দিক যুক্তিনিষ্ঠ, উদার মানবতাবাদী এবং প্রাণশক্তির অধিকারী এক বলিষ্ঠ লেখক। তিনি শোষণ ও নির্যাতনের অবসান চেয়েছেন, স্বার্থান্বেষী মহলের মুখোশ উন্মোচন করেছেন, গণমানুষের আর্থসামাজিক মুক্তি চেয়েছেন। তাঁর এ-চাওয়া গতানুগতিকভাবে নয়, সাদামাটাভাবেও নয়। এ-চাওয়ার মাঝে আছে লেখকের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং 888sport live chatবোধ। আপাত মনে হতে
পারে, এ-888sport alternative linkে আদিরসের প্রাধান্য বেশি। আসলে চরিত্র ও পরিস্থিতির অনিবার্য কারণেই কোথাও কোথাও আদিরস স্থান পেয়েছে – লেখক অহেতুক পাঠককে সুড়সুড়ি দেওয়ার জন্যে তা করেননি। যেমন, এক জায়গায় সন্তানহীন জরিনের মাতৃহৃদয়ের তীব্রতা প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘তার স্তনজোড়া কাঁচা দুধে ফুলে বিশাল ভারী। ব্যথায় টাটান দিচ্ছে। বুকের উপর বোবা ছেলেটা উবুড় হয়ে শুয়ে আছে। তার মুখের মধ্যে বারবার বোঁটা ঠেলে দিচ্ছে, কিন্তু সে মুখ সে দেহ সবি পাথরের। ভেতরে থুথু নেই রস নেই শ্বাস নেই। ঠান্ডা কঠিন পাথর বেয়ে গরম দুধ গড়িয়ে পড়ে। আর জরিনের বুকের দম বন্ধ হয়ে আসে পাথরের ভারে। বাতাস। বাতাস তুমি কোথায় ?’ (পৃ ১১৫)
আবুবকর সিদ্দিকের অভিজ্ঞতার পুঁজি, প্রগতিচেতনা, বাস্তববোধ, আন্তরিকতা, প্রতীকের নতুনত্ব, আঞ্চলিক ভাষা-ব্যবহারের দক্ষতা এবং প্রকৃতি, নিসর্গ ও গ্রামজীবন সম্পর্কে একান্ত পরিচিতি জলরাক্ষস 888sport alternative linkটিকে দীর্ঘায়ু প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে সমর্থ।
তিন
খরাদাহ (১৯৮৭) 888sport alternative linkটি পড়ার পর সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় আবুবকর সিদ্দিককে লিখেছিলেন, ‘একজন লেখক সোনার দোয়াত-কলম কামনা করে। আমি কামনা করবো আপনার লোহার দোয়াত-কলম হোক।’ (চিঠি : ২৯.৬.৮৭) খরাদাহ পাঠ করে অশ্রুকুমার সিকদারও অনুরূপ ভাষায় তাঁর আনন্দ প্রকাশ করেন। ১৯৮৭-তে এই 888sport alternative link কলকাতার পাক্ষিক প্রতিক্ষণে ধারাবাহিক কিস্তিতে বেরুনোর সময় পশ্চিমবঙ্গের পাঠকসমাজ বিপুলভাবে আকৃষ্ট হন। অরুণ সেন এ-888sport alternative linkটিকে একটি ‘এ্যামবিশ্যাস’ রচনা বলে মন্তব্য করেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, প্রতিক্ষণের পাতায় খরাদাহ পড়ার সময় উত্তেজিত সমরেশ বসু একদিন নৈহাটিতে বন্ধু সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গিয়ে প্রস্তাব দেন, দুজনে মিলে 888sport appsে আবুবকর সিদ্দিকের কাছে যাবেন এবং সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে খরাদাহের মূলভূমি দেখার জন্যে বেরিয়ে পড়বেন। খরাদাহ নামক এরকম একটি 888sport alternative link 888sport appsে প্রকাশিত, অথচ এদেশেই কম পরিচিত ও সামান্য আলোচিত। যদিও সম্প্রতি বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণ হয়েছে (২০০০)।
খরাদাহ 888sport alternative linkের বিষয় দুর্ভিক্ষ ও পটভূমি উত্তরবঙ্গের বরেন্দ্র অঞ্চল, যাকে স্থানীয় কথ্য বাংলায় বলে ‘বরীন’। বাংলা 888sport live footballে দুর্ভিক্ষ নিয়ে 888sport alternative link যথেষ্ট লেখা হয়েছে। আবার উত্তরবঙ্গের পটভূমি নিয়ে রচিত 888sport alternative linkেরও অভাব নেই। তাছাড়া, খরাদাহর ব্রাত্য চরিত্রগুলোর দোসরও বাংলা 888sport alternative linkে অপ্রতুল নয়। মানিক, তারাশঙ্কর থেকে শুরু করে সমরেশ, সতীনাথ, কমলকুমার, অমিয়ভূষণ, দেবেশ রায় পর্যন্ত অনেক মুণির নাম এই মুহূর্তে 888sport sign up bonusর তালিকায় চলে আসে, এমনকি এঁদের একাধিক 888sport alternative link খরাদাহর তুলনায় উৎকৃষ্টতর তথা বাংলা 888sport live footballের কালজয়ী 888sport live chatকর্ম। একজন নিয়মিত পাঠকের এই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অনস্বীকার্য কথাটি হলো, খরাদাহ বাংলা কথাসহিত্যে এক সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী সৃষ্টি। আবুবকর সিদ্দিক শুরুতেই খরায় পোড়া বিরান মাহপটভূমি ও তার কুক্ষিগত কয়েকটি পুত্তলিবৎ সামান্য মানবপ্রাণীর অসহায় এক পীড়িত ছবি এঁকে কাহিনির একটি বিশ্বাসযোগ্য 888sport world cup rate তুলে ধরেছেন। নিচে পোড়া প্রান্তর, মাথার ওপর আকাশজোড়া গলন্ত রোদ আর সমস্ত চরাচর জুড়ে মাঝে মাঝেই দমকে দমকে ফোস্কা পড়ানো লু হাওয়া। এই বিভীষিকার ফ্রেমে বন্দি একদল খরাযাত্রী। তারা ধুঁকে ধুঁকে চলেছে হয়তো কোনো এক উত্তরণের লক্ষ্যে। আবুবকর সিদ্দিকের কলমের দক্ষতায় এই বর্ণনাটুকু, শুধু এই বর্ণনাটুকুই বা বলি কেন, গ্রন্থের আদ্যন্ত বর্ণনাই ক্ল্যাসিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু এও অন্যদের রচনাশৈলীতে অপ্রচলিত নয়। আশ্চর্যজনক ব্যতিক্রম ধরা পড়ে অন্য ক্ষেত্রে এবং সেই ক্ষেত্রটি হচ্ছে ঔপন্যাসিকের কল্পনাশক্তির অভিনবত্ব ও তার প্রকাশের উপযোগী ভাষার স্পর্ধিত নতুনত্ব। একজন প্রগতিশীল মানবতাবাদী কথা888sport live chatীর পক্ষে ওপরে বর্ণিত সূচনাপর্বের (খরাযাত্রী) চরিত্রগুলোকে নিশ্চয় খুৎপীড়িত ও শোষিত শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে আঁকবার লোভ সংবরণ করতে না-পারারই কথা। আবুবকর সিদ্দিকও সে-পথ ধরেছেন। তবে তাঁর কল্পনার সম্পূর্ণ অভিনবত্ব এই, তাঁর চরিত্রগুলো 888sport app প্রচলিত 888sport alternative linkের মতো প্রথাসিদ্ধ আচরণের অনুকারী নয়। এরা আসলে একটি বরযাত্রী-পার্টি। একদিকে দয়াহীন প্রকৃতির বীভৎস আক্রমণ, অন্যদিকে ঢোলডগর, সানাই, কাঁসর সহযোগে বিয়েপার্টির মাতলামো ও খেউড়। কাহারদের নাভিশ্বাস ও বিয়ের গান। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত 888sport alternative linkজুড়ে এই আশ্চর্য কন্ট্রাস্টের 888sport live chatচাতুর্য। তীক্ষè সিরিয়াসনেসের সঙ্গে খুব সূক্ষ্ম কৌশলে স্যাটায়ার ও হিউমার মিশিয়ে রূঢ় বাস্তবের ভয়াবহতাকে ক্রমাগত প্রকট করে তোলা হয়েছে। পাঠক কখনো আতঙ্কে শিউরে ওঠেন, কখনো বিজাতীয় বমিবোধে আর্ত হন, যখন দেখেন, সমূহ মৃত্যুর দাঁতের ওপর দাঁড়িয়ে চরিত্রগুলো অবলীলায় অশ্লীল ফিচলেমিতে মত্ত।
নিছক ন্যাচারালিস্টদের মতো উদোম বাস্তবের ছবি আঁকাই আবুবকর সিদ্দিকের মুখ্য লক্ষ্য নয়। খরাদাহ 888sport alternative linkে যে-কটি বিচিত্র ও বিপরীতমুখী উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন তিনি, সবই অত্যন্ত সচেতনভাবে একটি মহৎ তাৎপর্যে উপনীত হওয়ার ধ্রুব উদ্দেশ্য নিয়ে। সেই উদ্দেশ্যটি হলো, সমাজের নিচতলায় বসবাসকারী শোষিত ও সর্বহারা মানুষের বাঁচার লড়াইকে সদর্থক করা। বলা বাহুল্য, কাহিনির সূচনাপর্বে উপস্থাপিত বরযাত্রী-পার্টির বিচিত্র ও হাস্যকর চেহারা এবং সম্মিলিত খিস্তিখেউড় আর কিছুই নয়, অচিরেই মূল কাহিনির ব্রাত্য চরিত্রগুলো মিলে যে মহৎ সংগ্রামে পারিপার্শ্বিক নিসর্গকে স্তম্ভিত করে তুলবে, ও যেন তারই প্রাথমিক প্রস্তুতিপর্ব, তথা পাঠককেও বৈপরীত্যের ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে নেওয়ার একটি কৌশলী মাত্রা বটে। কেননা, 888sport promo codeব্যবসায়ী বাহাউদ্দিনের সাজানো বর নপুংসক দলিলকে বিয়ে করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদিনী চিকনদাসীর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে সামন্ত প্রভু মসিদ খাঁর বিরুদ্ধে ভল্লার নেতৃত্বে আড়াইশো কিষাণের মহিষবাহিনীর বিদ্রোহ পর্যন্ত পুরো উপসংহার জুড়ে দেখা যায়, প্রারম্ভের খুচরো সব রঙ্গ-রসিকতা কোন অদৃশ্যে পানসে হয়ে মিলিয়ে যায়। 888sport alternative linkের উপসংহারে
একে একে রূপায়িত বিজয়ী লোকনায়ক ভল্লার মহাপতনদৃশ্য, শহুরে পুঁজিপতি বাহাউদ্দিনের নিরুপায় বিনাশ ও সবশেষে খরায়-খাওয়া কাঁঠালগাছটির জবানীতে আসন্ন বৃষ্টির সংকেতে উজ্জীবনের আশাবাণী; সব মিলিয়ে মানব-অস্তিত্বের এক এপিক সংবাদই যেন চিরায়ত লিপিতে বিধৃত হয়।
খরাদাহ স্টাইল ও ফর্মের দিক দিয়ে তার গোত্রের আর পাঁচটা 888sport alternative linkের সমান্তরাল হয়েও সমান নয়। একজন শ্রেণিসচেতন লেখক তাঁর 888sport alternative linkে শ্রেণিযুদ্ধের ছবিটি আঁকার জন্যে প্রথম থেকেই একটা সিরিয়াস অ্যাটিচিউড পোষণ করেন। পক্ষান্তরে, একজন ননকমিটেড জীবন888sport live chatীর কলম রসিকতা করার উদ্দেশ্যেই 888sport alternative linkে হাস্যরসের উপাদানগুলো ব্যবহার করে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে সর্বহারা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অধিকাংশ লেখক চরিত্রগুলোর রক্তমাংসের দিকটি প্রায়ই বিস্মৃত হন। পরিণামে এক ধরনের যান্ত্রিকতা এসে 888sport live chatের বিশ্বাস্য আবেদন নষ্ট করে দিতে বসে। খরাদাহ 888sport alternative linkের ফর্মের দুই বিপরীতধর্মী উপাদানের 888sport live chatিত মিলন ঘটার ফলে চরিত্রগুলো শেষ পর্যন্ত আর নিরেট যন্ত্র বা পুতুল হয়ে থাকতে পারে না। এমনকি প্রথমদিকের ক্লাউনসদৃশ নাটু ঘটকও সংঘাতের ক্লাইম্যাক্সে এক আশ্চর্য জীবন্ত মানুষের বিশ্বাসযোগ্য প্রতীকে পরিণত হয়। বাহ্য-টাইপ চরিত্র গ্রামীণ জোতদার মসিদ খাঁ স্বল্পপরিসরেই পাঠকের জুগুপ্সা জাগিয়ে শেষে যখন অমোঘ নিয়তির প্রতীক কালনাগের দৃষ্টির সম্মুখে সম্মোহিত ও সমর্পিত হয়ে পড়ে, তখন সেও এক সীমাবদ্ধ জীব বই আর কিছু নয়। একই টাইপ চরিত্র বাহাউদ্দিনের অন্তিম ছবিটিও এই প্রসঙ্গে ভেসে আসে। অবৈধ সম্পদের মালিকানার দাপটে আত্মম্ভরী মহাজন বাহাউদ্দিন মুমূর্ষু অবস্থায় প্রতিশোধকামী
প্রকৃতির পৈশাচিক আক্রমণগুলো দাবিয়ে দিতে চায় তার বরাবরের অভ্যস্ত ‘চওপ’ হুংকারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু নিদানের মার কে পারে এড়াতে? বাহাউদ্দিনের বিনাশ; সেও উদ্ধত অবোধ মানবজীবনের যে নিয়মিত ট্র্যাজেডি, তারই এক বিশ্বস্ত প্রতিলিপি। 888sport live chatগত দিক দিয়ে আরেকটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য রচিত হয়েছে ভল্লার পতন-ঘটনার মাধ্যমে। কাহিনি শেষে বিজয়ী নায়কের প্রতিষ্ঠা, এটা প্রায় ক্ষেত্রেই একটা আপ্তরীতি। এ-পদ্ধতিও বহুল ব্যবহারের দরুন এক ধরনের যান্ত্রিকতায় পর্যবসিত হয়। ভল্লা যুদ্ধের ফলাফলে জয়ী হয় বটে, কিন্তু সেও রক্তমাংসের নিয়মাধীন এক সাধারণ মানুষ। তাই তার নিপাতন অপ্রত্যাশিত হলেও প্রথাসিদ্ধ। এভাবেই চরিত্রগুলো একপেশে কৃত্রিমতার সংক্রমণ থেকে বেঁচে যায়।
শুধু যে যান্ত্রিকতামুক্ত তা নয়, খরাদাহ 888sport alternative linkের আদ্যোপান্ত নিষ্ঠুর নিসর্গ ও জীবনপদ্ধতির ক্ষমাহীন বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে কী অসাধারণ সব মানবরসে আর্দ্র নম্র চিত্র চকিতে পাঠকের সংবেদনাকে নাড়া দিয়ে যায়। মানুষের প্রতি অপরিসীম মমতাই একজন লেখকের রচনায় এমন হিউম্যান কোয়ালিটি সঞ্চারিত করতে পারে। বিয়ের আসরে ঘুমিয়েপড়া কাজী সাহেবের তড়াক করে লাফিয়ে ওঠা ও মেশিনের মতো কলেমা পড়াতে শুরু করা, জ্যোৎস্নারাতে বিয়েবাড়ির কোলাহল থেকে সরে আসা সংচরিত্র নাটু ঘটকের নিরালায় বসে করুণ কণ্ঠে মালসী গীত গাওয়া, বিয়েবাড়ির ভোজনপর্ব চলাকালে জোতদারের লাঠিয়াল বাহিনীর লাঠির চাপে হুমড়ি খেয়ে পড়া ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল ঠেকিয়ে রাখার দৃশ্য, বাসরঘরে বরকে নিয়ে অশীতিপরা নানীবুড়ির হাস্যমশকরা, বিয়ের ভোজনের পাশাপাশি এক ভিখারির – ভাতের পাগলের – টিনের থালায় নাঙা হাড় গড়িয়ে যাওয়ার অতিপ্রাকৃত গড়গড় শব্দ ও সেইসঙ্গে ভিখারির কণ্ঠের আর্তনাদ :
‘অয় মাতারীগে একমুট ভাদ দে । জানট্যা নাইখ!’ (পৃ ৪১)
মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে রাতারাতি ভিটেমাটি বিকিয়ে দিয়ে ভোরবেলায় সেই বিকোনো ভিটের ওপর বসে সপরিবারে পোলাও খেতে উদ্যত কিসমতের পাতের সামনে নয়া মালিক মসিদ খাঁর লেঠেলের আবির্ভাব, ভিটেমাটি থেকে উৎখাত কিসমত পরিবারের অনিশ্চিত যাত্রাপথে সহসা বিয়েবঞ্চিত বেকার রমাপদ ঢ্যানার দাঁতাল হাসি, পালকির মধ্যে নববধূ চিকনদাসীর প্রতি মাতৃস্নেহবঞ্চিত নপুংসক বর দলিলের মাতৃভক্তি ও কামপ্রবৃত্তিতাড়িত এক দ্বন্দ্ব জটিল বিচিত্র আচরণ, খোলা মাঠে বৃষ্টির জন্যে নামাজরত অবস্থায় খরায় ও অনাহারে মুমূর্ষু বৃদ্ধের চোখের মণিতে চিলের ঠোকরানি, খরাদগ্ধ নিরাশ্রয় প্রান্তরের মধ্যে জামাই দলিলকে প্রসবোন্মুখ তরুদাসীর ‘ব্যাটা’ বলে সম্বোধন ও সেই অপত্য ডাকের অভিঘাতে ছন্নছাড়া দলিলেরও ওই মাকে বাঁচানোর জন্যে উন্মাদের মতো দৌড়াদৌড়ি – এসব খণ্ড দৃশ্য এই বইয়ের অমূল্য যত মানবরস-জারিত সম্পদ।
বিশেষ করে, কবরে এক পা দেওয়া নানীবুড়ির অদম্য জীবনপিপাসার চিত্রগুলো বাংলা কথা888sport live footballের অমর 888sport live chatকর্ম। নানীবুড়ি বাসরঘরে নতুন বরের কান মলে দিয়ে ছড়া কাটে : ‘হেই গ জামাই তুমহাল মুকে পাদি। হামি না তোর কেনা বাঁদী। হাঁচি হামি মেইয়ার নানী। হনু তুমহাল লতুন রাণী।’ (পৃ ৫৫) খেক প্রতিটি আচরণের মধ্য দিয়ে নানীবুড়িকে একেবারে জলজ্যান্ত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হয়েছেন। সূর্যোদয়ের আগেই নতুন মালিক মসিদ খাঁর ম্যানেজারকে ভিটেমাটির মালিকানা সঁপে দিয়ে উন্মূল কিসমতকে সপরিবারে পথে নামতে হয়। তবু সে অন্তিম বিদায়পর্ব কিছুটা বিলম্বিত হয়ে যায় নানীবুড়ির পোলাও খাওয়ার তাড়নায়! ‘নানীবুড়ি কোনো দিকে না তাকিয়ে হাপুর হুপুর সেই পোলাও গিলে চলেছে। কী তার তাড়া আর তাড়না! যেন যম এসে পাতের সামনে থানা পেতে খাড়া। বুড়ির বাঁ হাত উঁচুতে তুলে ধরা। বুঝি শমনকে ঠ্যাকা দিয়ে রেখেছে সেই হাত দিয়ে।’ (পৃ ৬৭)
সারা অস্তিত্বের সাক্ষাৎমৃত্যুকে সাথি করেও তাকে পদে পদে অস্বীকার করার মতো এমন জীবনরসিক বৃদ্ধার চরিত্র বাংলা 888sport alternative linkে দ্বিতীয় আর আছে বলে জানি না। সর্বস্বান্ত কিসমত দারাপুত্রপরিবার নিয়ে অগস্ত্যযাত্রায় চলেছে। এমন সমূহ সংকটেও নানীবুড়ির উদ্দীপনা অন্তহীন। বর্ণনাটুকু উদ্ধৃত করার লোভ সংবরণ করা কঠিন : ‘নানীবুড়ি বড়ো লাফিয়ে লাফিয়ে পথ ডিঙোচ্ছে। এতো পুলক কিসের? বলে, দনিয়া দেখছি! পোলাওর উদ্গার তোলে গলা দিয়ে পায়ু দিয়ে ঢ্যাস! নাকের কাছে হাত দিয়ে ঘি-গোলাবজলের বাস শোকে আর স্বস্তিতে মাথা নাড়ে। লাঠিতে ভর দিয়ে কোমর ঠ্যাকনা দ্যায়। খাঁ বাড়ির নেড়ি কুকুরটা পিছু নিয়ে হাঁটছে। তার সংগে আলাপ চালায়। ভোটান যাবি আ গদা? হেমালয় যাবি আ গদা?’ (পৃ ১২৪-১২৫) এমনকি এই পরিবারের চির অনুচর কুকুর গদাও একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্রের স্বীকৃতি পেয়ে যায় লেখকের সংক্ষিপ্ত অথচ জীবন্ত বর্ণনাগুণে।
একই কথা কাঁঠালগাছটির বেলায়ও প্রযোজ্য। কাহিনির শুরুর দিকে তার খরালাঞ্ছিত হতচ্ছন্ন চেহারা আর একেবারে শেষে নবজীবনের প্রত্যাশায় মুখর তার শাখা-প্রশাখা। একটি গাছের বিবর্তিত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে লেখক কত অবধারিতভাবে তাঁর পাঠককে বাঞ্ছিত উপজীব্যের তাৎপর্যে পৌঁছে দিতে পারেন।
এক চাঁদনী রাতে বসতবাড়ি থেকে দূরে পুকুরপাড়ের ঢালুতে মাঠঘেঁষে কিষান লেঠেল ভল্লা ও বিয়েবাড়ি থেকে পলাতকা চিকনদাসীর মুখোমুখি সাক্ষাতের দৃশ্যটি এই 888sport alternative linkের খরাপোড়া নির্দয় কাঠামোর মধ্যে হঠাৎ করে স্নিগ্ধ-শ্যামল দ্বীপের মতো একটুকরো শান্তিকল্যাণ বয়ে আনে। চতুর্দিকে দাউদাউ খরা, ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, নিখিলনাস্তি, শঠতা, শোষণ ও ব্যাপক অপ্রেম। সেই চরম শূন্যতার চূড়ায় দাঁড়িয়ে বিশাল পুরুষ ভল্লা বড় মমতাভরা কণ্ঠে দুঃখিনী চিকনকে ডাক দেয়, ‘মানহুষ বড়ো রবমান হলচে। বড়ো কানচে। লয়?’ (পৃ ৫১) এ তো পৃথিবীর আপামর ঘাই হরিণীর তরে সমস্ত পুরুষ হরিণের আবহমান আহ্বান। এই মর্মস্পর্শী জায়গাটিতে এসেই সচেতন পাঠকের বোধোদয় হওয়ার কথা, কেন গ্রন্থকার 888sport alternative linkের সূচনাপৃষ্ঠায় শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apkর ধ্রুপদী লাইনটি তুলে দিয়েছেন, ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।’ ভল্লা-চিকন সাক্ষাৎকারের উল্লিখিত দৃশ্যের কিছু পরেই লেখক নিজেও শক্তির 888sport app download apkর ওই লাইনটি আবার তুলে দিয়েছেন। বোঝা যায়, খরাদাহের প্রধান
অভিমুখ শ্রেণিসংগ্রাম হলেও ধুয়োপদটি আসলে মানুষের জন্যে মানুষের চিরমানবিক ভালোবাসার কান্না।
খরাদাহ 888sport alternative linkের কাহিনি মাত্র এক রাত দুদিনের পরিমিত পাল্লায় দ্রুত ধাবমান এবং সম্পূর্ণ কাহিনিটাই ফ্যান্টাসি না হলেও একটা টোটাল রূপক। লেখক এক বিবাহ অনুষ্ঠান উপলক্ষে শহুরে পুঁজিপতির প্রতিভূ চামড়া ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন ও গ্রামীণ সামন্ত-অবশেষের প্রতিভূ মসিদ খাঁকে মুখোমুখি এনে সমাজের দুই প্রান্তের দুটি টাইপ-শোষককে সনাক্ত করেছেন। আর ভল্লা ও তার সঙ্গী আড়াইশো কিষানসহ সোয়াশো মোষ; এ আর কিছু নয়, যুগ-যুগান্তের শোষণের বিরুদ্ধে উদীয়মান গণঅভ্যুত্থানের কালাপাহাড়ি রূপায়ণ। এই এপিক উপস্থাপনের কারণে কাহিনির ক্যানভাসটি আমাদের চোখের সামনে এক নিমেষে বিশাল হয়ে দেখা দেয়। মানবজীবনকে এরকম বড় মাপে ধরতে গিয়ে লেখক প্রক্ষিপ্ত আকারে তেভাগা আন্দোলনের প্রসঙ্গটিও নিয়ে আসতে পেরেছেন। এতে মূল প্লটটি অনেকখানি পূর্ণতা লাভ করেছে।
পুরো বইয়ের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক প্রকৃতি ও মানুষের অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধের দৃশ্যগুলো। এসব দৃশ্যের কয়েকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত; খরাজ্বলা প্রান্তর পাড়ি দেওয়া বরযাত্রীর দৃশ্য, পোড়ামাঠের মধ্যে রোদের আগুনে বৃষ্টির জন্যে গ্রামবাসীরে এসতেগ্ফার নামাজ আদায়ের দৃশ্য, বিয়েবাড়ির ভোজনদৃশ্য, মসিদ খাঁর অন্দরমহলের বর্ণনা, বাসরঘরের বর্ণনা, গুহমশাইদের বসত দখলের বর্ণনা, ভল্লার নেতৃত্বে মহিষবাহিনীর বিদ্রোহের বার্তা বয়ে আনা বিক্ষত নাটু ঘটকের আগমনদৃশ্য, ভল্লার দলের রণপ্রস্তুতির বর্ণনা, দুর্ভিক্ষের তাড়নায় গ্রামত্যাগী পরিবারগুলোর অনিশ্চিত যাত্রার দৃশ্য – এ-রকম বহু দৃশ্যের উল্লেখ করা যায়, লেখকের প্রাণোচ্ছল অংকনগুণে যা একদিকে জীবন্ত, অন্যদিকে ক্ল্যাসিক 888sport live chat হয়ে উঠেছে।
সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ও গতিশীল ভাষার সমন্বয়ে এক একটি সামান্য চরিত্র বা ছোটখাটো দৃশ্যও মুহূর্তের ঝলকে টাটকা বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে ধরা দেয়। এসতেগফার নামাজে সিজদারত ক্রন্দনমুখর মুসল্লিদের দৃশ্য দেখে স্ত্রৈণ মোটাশীতল তার একদা স্ত্রী ভামিনীর পদসেবার কথা মনে করে কেঁদে বুক ভাসায়। অদ্ভুত এই সব চরিত্র 888sport alternative linkটিকে জীবনরসে উষ্ণ করে রেখেছে। বর দলিলকে পালকি থেকে টেনে নামিয়ে মুটুশীতল তার মধ্যে উঠে বসতে চায়। কারণ খরায় জ্বলেপুড়ে বিশাল প্রান্তর পাড়ি দিতে দিতে সেও মহাক্লান্ত। বর-কনের বিচিত্র সব কাণ্ড চলে – পালকির ভিতর দিয়ে চিৎকার করে বাহাউদ্দিনকে ডেকে বলে, ‘হামাক মারচে।’ জোতদার মসিদ খাঁ এক হাতে দোর্দণ্ডপ্রতাপে প্রজাশাসন চালাবার কালেই অন্য হাতে লুঙ্গির ভেতর দিয়ে গোপনে রক্ত-পুঁজ মুছে আনে; কলমের একটি আঁচড়ে লেখক 888sport appsের সামন্ত-অবশেষের ক্ষয়িষ্ণু ছবিটি মুহূর্তে উদ্ঘাটিত করে দেন। অসৎ ধনীর ধর্মাচরণ প্রায়শ একটা নিয়মরক্ষার ব্যাপার মাত্র। মসিদ খাঁও তার ঘরোয়া মসজিদে একজন নাতিযুবক হাফেজ সাহেবকে পোষে। অবদমিত কামের কামড়ে মসজিদের শানে উবুড় শুয়ে যৌন888sport live football পাঠের অভিযোগে হাফেজ সাহেব ধরা পড়ে ও বিচারের জন্যে মসিদ খাঁর কাছে আনীত হয়। ধর্মব্যবসায়ীদের সম্পূর্ণ ভণ্ডামি একপলকে বেআব্রু হয়ে পড়ে এই বর্ণনায়। দেনাপাওনা নিয়ে কুতর্কের দরুন বিয়ে বন্ধ হতে হতে একসময়ে যখন সমস্ত বিয়েবাড়ি ঝিমিয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন হঠাৎ মীমাংসার দৌলতে গোটা পরিবেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ঘুমিয়েপড়া ‘মুলবী সায়েব’ অদ্ভুত তৎপরতায় লাফিয়ে ওঠে। ‘বুঝি জেগেই ছিল। ফ্যাকাশে অন্ধকার ফুঁড়ে তড়াক করে লাফিয়ে ওঠে তুর্কি টুপি দুবলা দাড়ি নীল সুন্নতি পান্জাবির
উপর তেলচিটে গামছা খাটো লুংগি বেঁটে মানুষটি। চোখ কচলে টালুমালু করে তাকায়।’ (পৃ ৪২) সামান্য কয়েকটি কথায় কেমন জীবন্ত হয়ে ওঠে এই গুরুত্বহীন একটি চরিত্র। তারপর বিয়ে পড়ানোর সময় এহেন নগণ্য মৌলবীর ‘কাঁপা কাঁপা সুরেলা গলায় কী সে গৎবাঁধা তথী!’ (পৃ ৪৩) আর মৌলবির শাসনাধীন দুলামিয়া দলিলের সেয়ানা আচরণটিও কৌতুকের উত্তেজক, সন্দেহ নেই; ‘ভালোমানুষ দলিল মাছখাওয়া বেড়ালের মতো পিট্ পিট্ করে তাকিয়ে দুবলা দাড়ির নাচন দ্যাখে। চোখের ভাষা
বলে, কী বালের তামিল দেচে র্যা! বিহ্যাতে বইসত্যে বইসত্যে উ দশলাইনের পাটটো হামার মুখস্থ। অর আগে হামিই বাত্ল্যে দিত্যাছি।’ (পৃ ৪৪) বাংলা 888sport live footballে বিয়েবাড়ির এমন বিচিত্রসব বর্ণনা অপূর্ব। তেমনি মসিদ খাঁর কাছারিঘরে অপেক্ষমাণ নরোত্তম কবিরাজের আশ্চর্য ছবিটি : ‘খাটের উপর বসে ঘামে সেদ্ধ হয়ে ঝিমুচ্ছিলো সাতাশ/আটাশ বছর বয়েসের শাদা শলা শলা চুল ও খোঁচা খোঁচা দাড়িঅলা এক কবিরাজ। তার পরনে ময়লা ধুতি পায়ে ক্যাম্বিশের জুতো। গায়ে জামাগেন্জিহীন একটা ঢলঢলে রংজ্বলা কালো কোট। কতো কাল খেতে পায় না যেন? যেন গর্তে সেঁধানো
চোখ। সে চোখে আলো নেই। সে তো চোখ দিয়ে দ্যাখে না। নাড়ি টিপে দ্যাখে। তার নাম নরোত্তম কবিরাজ। খাঁ সাহেবের ‘কল’ পেয়ে
রাত একপহর থাকতে ম্যালা করেছে। পাঁচগাঁয়ের ধুলো ঠেঙিয়ে ভোরবেলা এসে বসে রয়েছে।’ (পৃ ৭৪)
শুধু মানুষ নয়, লেখকের সংবেদনশীল বর্ণনার গুণে এই গ্রন্থের জীবজন্তুগুলোও একেবারে মানবিক অস্তিত্ব নিয়ে বাস্তবতায় প্রত্যক্ষ হয়ে উঠেছে। ফলে 888sport alternative linkের তুঙ্গ মুহূর্তে মসিদ খাঁর পোষা সোয়াশো মোষ আড়াইশো কিষানের নিয়ন্ত্রণে একটি পরিপূর্ণ গণবিপ্লবের শরিক হয়ে ওঠে আর বিশেষ করে কালবাউশ নামের মোষটি, সেও যেন এই বিপ্লবেরই এক অগ্রনায়ক চরিত্র। তেমনি বাস্তুহারা কিসমতদের কুকুর গদাও এই কাহিনির এক অবিচ্ছেদ্য চরিত্র।
দুর্ভিক্ষপীড়িত গ্রাম থেকে উপবাসী মেয়েদের কিনে নিয়ে যায় শহরের পাইকারি 888sport promo codeব্যবসায়ী। ভীতচকিত মেয়েরা পথ চলতে পিছিয়ে বা এলোমেলো হয়ে পড়লে তাদের খাসিবকরির মতো তাড়িয়ে নিয়ে চলে দালাল। 888sport alternative linkে চিত্রটি বড় মর্মস্পর্শী ভাষায় অঙ্কিত হয়েছে : ‘কসাই যেমন গোরু ঠাহর করে, তরুকে দেখে তেমনি দাঁড়িয়ে পড়ে লোকটা। ওদিকে মেয়েরা দলছুট। ঝট করে কিসমতকে বলে, ট্যাকা লিব্যেন জী? লগদালগদি। বহু তুমহার সতীলারী হয়, শহরে যায়্যা ভি ট্যাকা এম ও করবে। কিসমত হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। আশকারা মনে করে লোকটা দুকদম এগিয়ে আসে। হঠাৎ করে ফড়িয়া-পাইকের ভাষা চালাতে থাকে, ফের ই আকালটে কাটল্যে পর ঘরের বিবি ঘরকে ফিরব্যেক। অখন তুমহি ছ্যালাপোল্যা সামহাল দাও। খাও পরো। মনে ল্যায় মাগী একটো মাঙনা লিয়্যা ল্যাও ভাগাড় ঘাঁট্য। দিনাদুয়েকের মামলা বটে।’ (পৃ ১২৮) দালালটি দলের মেয়েদের তাড়া করে এই ভাষায় : ‘আ যাযা! মাগীগুলান ধায় কি বা! বুকপাটায় হেম্মত হয়্যাছে লয়? আরে হে-ই হ্যাট্ হ্যাট্!’ (পৃ ১২৯)
বিষয় ও ভাষা এমন অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে গিয়েছে যে, বর্ণনাগুলো মুহূর্তের মধ্যে সপ্রাণ হয়ে ওঠে। মসিদ খাঁর লম্পট বংশধর আরশাদকে হত্যা করার ব্যাপারে
প্রৌঢ় কিষান সুবিদ দ্বিধা প্রকাশ করতে লাগলে ভল্লা তাকে তার নিজের মতো একধরনের ভুয়োদর্শী ভাষায় একটা অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে বুঝ দেয় – ‘বিষের পরে মায়া? কহ। বিষের শ্যাষ দে লিক্যাশ। কুরানে কহে কী না? কহ।’ (পৃ ১১৪) এরকম আরো একটি মজার উল্লেখ পাই পথচলতি নানীবুুড়ির প্রস্রাবরত দৃশ্য দেখে
মেয়ে তরুদাসী যখন তিরস্কার করে ওঠে : ‘আ মরণ! বুড়িট্যা দেঁড়িয়ে মোতে। শরিয়ত মানে না!’ (পৃ ১৩৩)
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আবুবকর সিদ্দিকও তাঁর গল্প-888sport alternative linkের চরিত্রগুলোর মুখে নিজেই গান রচনা করে বসিয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত। খরাদাহ 888sport alternative linkের শুরুতে দাহজ্বলা প্রান্তর পাড়ি দেওয়া খরাযাত্রীর মুখে এমন একটি খেউড় গান লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার চটুল ভাষা ও অশ্লীল রস একদিকে যেমন পুরো
বরযাত্রী-পার্টির ইয়ার্কি দেওয়া অস্তিত্বকে মূর্ত করে তোলে, অন্যদিকে তেমনি এই এক গানের খিস্তি গ্যাজলানি চারদিকের দয়াহীন প্রকৃতির সংহারমূর্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ্য মানুষের চ্যালেঞ্জের আঘাত রূপে নিক্ষিপ্ত হয় যেন। আবার চতুর্দিকের কটকটে রোদের মধ্যে বিশাল হা-হা দগ্ধ প্রান্তরের বুক এই গানের ভাষা ও গায়কদের চেহারা সবমিলিয়ে এক আশ্চর্য অতিপ্রাকৃত চালচিত্র নির্মাণ করে :
ঠিক দুক্ষুর ব্যালা
ভূতে মারে্য ঢ্যালা রে ভাই
ভূতে মারে ঢ্যালা।
ঢ্যালা খায়্যা লাচন লাগায়
শতেক ন্যালাখ্যাপা ভাই
শতেক খ্যাপান্যালা।
(পৃ ১৩-১৪)
এই এক গানেই 888sport alternative linkের ধুয়োটি বেঁধে দিয়েছেন লেখক। তবে কাহিনির মূল কেন্দ্রে পৌঁছানোর পর পাঠকের কানে আসল ধুয়ো নির্ভুলভাবে ধ্বনিত হয় : ‘এয়া আলী! এয়া আলী-ই-।’ (পৃ ১১৫) আসলে সামন্ত-প্রভুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী দাস সমাজের এই রণহুংকার বাংলার চিরকালীন গণজাগরণের দ্যোতক।
তারাশঙ্কর, সতীনাথ, দেবেশ রায়ের মতো অত্যন্ত সফলভাবে আঞ্চলিক ভাষার সংলাপ রচনা করেছেন ঔপন্যাসিক। বরীন এলাকার কথ্যভাষার নিপুণ টাটকা প্রয়োগে চরিত্রগুলো এবং পরিবেশ-পটভূমি চোখের পলকে জ্যান্ত হয়ে ওঠে। খরাযাত্রীদের কিছু উচ্চারণ – ‘ভিতরিবাগে ঘিলু ভি শুথায়্যা গেলছে উস্তাদ লাকের ফুটো দিয়া হাওয়া লিছি তো শালোর মগজের খোল তামাৎ বাঁশি বাজ্যে।’
(পৃ ১৩) আবার – ‘ম্যাঘটুক্ পালাইছে গ।
পোড়া গন্ধোটুক শুধু জগত জুড়্যা খোঁদল খুড়ত্যাছে।’ (পৃ ১৩)
আগুনজ্বলা প্রান্তরে তৃষ্ণায় ছটফট করা খরাযাত্রীর আর্তনাদ : ‘লাচবি লাচ্। তু নাঙ কুঁজাট্যা চূরলি কেনে শালো? চুচুক চচুক!
আঃ, শেতল পানি ছেলো এ ককুজ্যা পুন্ন গ!’ (পৃ ১৭-১৮)
আরেকটি জায়গায় শুধু সংলাপের মধ্য দিয়ে খরার পুরো ভয়াবহতা অত্যন্ত রোমাঞ্চকরভাবে ফুটে উঠেছে – ‘হোই শেতলমামা গ, একফোট্ মুত্ আলচে না যি! কুন্ঠে গেলচে শালো মুত্ আঁ! পালাইচে কুন্ঠে আঁই? শীতল পর পর দুটো কোঁৎ দিয়ে তারপর কথা বলে, খরার দ্যাশে সবটুক খার্যা লিলচ্ ের্যা। নবী আঁৎকে উঠে প্রশ্ন করে, শরপেৎ খালাম যি?
উ শরপেতও খায়্যা লিল্চে আরো বেগ দিস দিকিস্। ত্যাখন অক্তর ফোট ঝুরব্যে। চায়্যা দেখিস্ তু চান্দের আলায়।’ (পৃ ২৯)
নাটুঘটক যখন ষাঁড়-লড়াইয়ের মেলায় গিয়ে মসিদ খাঁর কাছে মেয়েমানুষের বর্ণনা দেয়, শুধু সংলাপের জাদুতে সেই শব্দগুলো একটি উদম্যযৌবনা 888sport promo codeদেহকে মূর্তিমতী করে তোলে : ‘আল্লাজী লিজ হাতে বানায়্যাছেন। কামিখ্যার সতীলারী। চউখে ঠাটাঝিল্কি – ঠোঁট দেখ্যা দাঁত কালকুট্টি হয়। উয়ার জোড়াবুকে পাথর চাপল্যা ভি ধসে না বস্যে না। আর হায় পাছা দেখলা পর্যাণ ভি পাছাড় খায়!’ (পৃ ৩৫)
চামচামার্কা বিচিত্র চরিত্র নাটু মিয়া রাতের বেলা মোষের ডাক শুনে চিঁচিঁ করে বলে, ‘শালী গরম হলচে। অখন গাভিন হবেক।’ (পৃ ৩৬)
888sport appsের গ্রাম এলাকায় খানাপিনার আসরে একটা মজার ব্যাপার চালু আছে। পরিবেশনকারী যখন মাংস বিলি করতে শুরু করে, ঠিক সেই মুহূর্তে বাবুর্চি সাহেব আবির্ভূত হন এবং সহাস্য বিনয়ে নিজের রন্ধননৈপুণ্যের প্রশংসাটি আদায় করে নেন উপস্থিত ভোজনতৃপ্ত অতিথিদের কাছে থেকে। খরাদাহ 888sport alternative linkে এ-ছবিটি বড় চমৎকারভাবে এসেছে। বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে এমনটি এঁকে দেওয়া সম্ভব নয় : ‘যথারীতি হেডবাবুর্চির আবির্ভাব ঘটে। কেউ তলব করে না, তবু মাথা নাড়িয়ে কৈফিয়ৎ দিতে থাকে, জী পাক ক্যামুন হয়্যাছে আঁ? দলিল তার বরসুলভ গাম্ভীর্যের ভান ভুলে গিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, ফাস্কিলাস্! আপুনকাকে শউরে লিয়্যা যাবো হাঁ। …’ এক একটা বাক্যে বিদ্যুতের মতো চলকে উঠেছে এক একটি বাস্তব ঘটনা ও চরিত্র। ভাষার উইটি ব্যবহারের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ – ‘কিসমত খবরদারি করছিলো। বড়ো ছেলেটিকে হুকুম দ্যায়, পটক্যারা। দুল্যাভাইয়ের মস্তকট্যে বাড়ির ভিত্রি লিয়্যে যা। পাটায় ছেঁচ্যা লিয়্যায়।’ (পৃ ৪৫)
এমন রূঢ় ও রসালো সংলাপের মধ্যেই আবার একটি রোমান্টিক সংলাপের পরিবেশও কখন জানি নীরবে মানিয়ে যায়। রাতের বেলা পুকুরপাড়ে ভল্লা-চিকনদাসীর প্রথম সাক্ষাতের সংলাপ এই কাহিনির একটি 888sport app download for androidীয় অংশ :
হামাক ই খরার লরক থাক্যা লিয়্যা যাবি ভল্লা?
লিব্যো।
কুনঠে সি? পানির দ্যাশে?
লিব্যো।
আঃ! ভাতের দ্যাশে?
লিব্যো।
আঃ! গাছের দ্যাশে?
লিব্যো।
আঃ হায় গ! মানহুষের দ্যাশে লিব্যি?
লিব্যো।
(পৃ ৫৩)
এটা অবশ্য একটি ব্যতিক্রমী অংশ। বরং সংলাপের স্বাভাবিক রসোজ্জ্বল উদাহরণগুলোতে ফিরে আসি। পালকির মধ্যে বরবধূর যে-কথোপকথন খরাদাহ 888sport alternative linkে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা যেমন বিচিত্র, তেমনি অভিনব। বর দলিল তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রী চিকনদাসীকে আত্মপরিচয় দিচ্ছে : ‘অসভ্য সঙ অমনি ফট করে বলে দ্যায়, ববুজান গ, হামি তো জরমোহিঁজরা। হামার যে স্যা নাইখ। বলতে বলতে পেন্টুলেন বোতাম খুলে তলাকার ম্যাজিক দেখিয়ে দ্যায়।’ (পৃ ১৪৪)
একেবারে উপসংহারে এসে গোটা 888sport alternative linkের সারসংবাদটি অবশ্য খরাসাক্ষী কাঁঠালগাছ অবিকল বরীন বাংলায় শোনায় আমাদের – ‘হামার ই হাড্ডিগুড্ডিসার শরীলখান। সাজসজ্জা নাইখ। উ শালোর জোদ্দারমার্কা খরাট্যে শুষ্যা শষ্যা শুখায়্যা লিয়্যাছে। … হামার ই হাড়কাঠামো লিয়্যা হামি কালীম্যাঘের আওয়াজ শুনি গুমাগুম। খলখল বরখ্যার ঢল লাম্যে। হামি সোঁদা সোঁদা বাস পাই। হার লাতি-লাতিন আছে মাটির তলবাগে। ই বরখ্যায় অরা সভে জাগ্যা উঠবে। তুমহাকে ফল দিব্যে, রস দিব্যে। তুরা প্যাটপুরা খাবি। তুদের আওলাদ বাচ্চারা ভি খাব্যে। খাটো কদিন আর?’ (পৃ ১৬৫)
একসময়ের শক্তিধর পুঁজিপতি মহাজন বাহাউদ্দিন ঊরুভাঙা দশায় বিশাল খাদের মধ্যে পড়ে থেকে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে এই 888sport alternative linkের দুর্জন পক্ষ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের অন্ত্যপর্বে দ্বৈপায়ন হ্রদে ঊরুভাঙা দুর্যোধনের অর্ধমগ্ন দশার আদলে বাহাউদ্দিনের এই পতনদৃশ্য আঁকা সুপ্রযুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, উদ্বাস্তু কিসমত সপরিবার সর্বনাশা অগস্ত্যযাত্রায় চলেছে। সঙ্গে পোষা কুকুর গদা। এ একেবারে সেই মহাভারতের শেষপর্বে হিমালয় পাড়ি দিয়ে স্বর্গের পথে পঞ্চপাণ্ডবের মহাপ্রস্থান-যাত্রার দৃশ্য। এমনকি, নানীবুড়িও রসিকতা করে গদাকে বলে, ‘ভোটান যাবি আ গদা? হেমালয় যাবি আ গদা?’ (পৃ ১২৫) মহাপ্রস্থানের পথযাত্রী যুধিষ্ঠিরের শেষ সঙ্গীটি ছিল ধর্মবেশী কুকুর।
মাত্র দুদিন একরাতের ঘটনা ও স্বল্প পরিসরের মধ্যে আবুবকর সিদ্দিক মানবজীবনের একটি বড় পরিধির ধ্রুপদী ক্যানভাস অংকন করেছেন। বলা যায়, আবুবকর সিদ্দিক বাংলা 888sport alternative linkের যে ট্র্যাডিশনাল ও অ-জনপ্রিয় দুরূহ পথটি বেছে নিয়েছেন, এটা তাঁর সততা ও কমিটমেন্টের চাপপ্রসূত।
888sport appsের দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চলের
প্রকৃতি ও জনজীবনের যে-ভিন্নতা, দক্ষিণে পানির আধিক্য ও ভয়াল ছোবল, উত্তরে খরাপোড়া ধূসর জনপ্রান্তর; এ নিসর্গ-জীবনকে কথা888sport live chat রূপ দিয়েছেন আবুবকর সিদ্দিক। কেবল ধ্বংস নয়, ধ্বংসের মধ্যেই জীবনেরও জয়গান আছে। সেখানেই ঔপন্যাসিকের সাফল্য ও 888sport live chatসৌন্দর্য প্রতিফলিত। উল্লিখিত উপকরণভিত্তিক 888sport alternative linkের তিনিই প্রথম সম্প্রসারিত ও দক্ষ রূপকার।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.