আবুল হাসনাতের আড়ালে মাহমুদ আল জামান নামে যে একজন চৌকশ কবি বাস করতেন, তা অনেকেই জানতেন না। বিশেষ করে যারা তাঁকে বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী, সাংস্কৃতিক-যোদ্ধা, বার্তা বিভাগের কুশলী সহ-সম্পাদক এবং সংবাদ সাময়িকী ও কালি ও কলমের মেধাবী সম্পাদক হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু আমরা যেন ভুলে না যাই কবি মাহমুদ আল জামানও জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক ঘুরে একদিন 888sport app download apkর ‘ভুবনডাঙায়’ পৌঁছে গিয়েছিলেন।
একজন মানুষ যে সৃজনশীলতার কত মাধ্যমে, কত ভাবে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে পারেন, তার উজ্জ্বল উদাহরণ ছিলেন আবুল হাসনাত, আমাদের প্রিয় হাসনাতভাই। তাঁর সঙ্গে পরিচয় সত্তরের দশকের শেষে লেখালেখির সূত্রেই। তিনি তখন সংবাদ সাময়িকীর সম্পাদক। এরপর ঘটনাচক্রে যখন আমার সাংবাদিকতা সংবাদের বন্দরে এসে নোঙর ফেলল হাসনাতভাইকে পাই অগ্রজ সহকর্মী, ঘরোয়া আড্ডার এক সপ্রতিভ মানুষ হিসেবে। সংবাদের সম্পাদকীয় বিভাগের জ্যোতিষ্কগুচ্ছের মাঝে নিজেকে খুব নিষ্প্রভ মনে হতো। তাঁদের কাছ থেকে যা শিখেছি, সেটাই জীবনের বড় পাওনা বলে মনে করি। সেসব বিষয়ে বারান্তরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
আজকের লেখায় আবুল হাসনাতের আড়ালে থাকা কবি মাহমুদ আল জামানের সঙ্গে কয়েকটি দিনের 888sport sign up bonus বিশেষ করে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাটানো একটি সন্ধ্যার কথা বলব।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় বাংলা 888sport app download apkকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি গণমানুষের জীবন-সংগ্রামকে 888sport app download apkর বিষয় করেছিলেন; কিন্তু স্লোগান করেননি। সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে 888sport app download apkয় তুলে এনেছিলেন ছন্দের আশ্চর্য সৌকর্যে।
পাকিস্তান আমলে আমরা যখন স্কুলে পড়ি তখন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 888sport app download apk পাঠ্য হওয়ার সুযোগ ছিল না। তারপরও তাঁর ‘অগ্নিকোণ’, ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক’, ‘মে দিবসের 888sport app download apk’ প্রভৃতি অনেকের মুখে মুখে ফিরত। বিশেষ করে আবৃত্তির জন্য রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্তের সঙ্গে সুভাষের 888sport app download apkও হয়ে ওঠে অবশ্যপাঠ্য। তুরস্কের বিপ্লবী কবি নাজিম হিকমতকে বাংলাভাষী মানুষের কাছে প্রথম পরিচয় করিয়েও দিয়েছেন তিনি।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) করতেন। পরে পার্টি ভাগ হলে তিনি মূল দলেই থেকে যান; যারা পার্টির নকশাল আন্দোলনকে কখনো সমর্থন করেনি। কিন্তু সেই নকশালদের ওপর যখন রাষ্ট্রযন্ত্রের খড়্গ নেমে এলো, হাজার হাজার তরুণ বিপ্লবস্পৃহায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, তিনি লিখলেন, ‘ছেলে গেছে বনে’, ‘আর একটু পা চালিয়ে ভাই’। এখানে তাঁর রাজনৈতিক সত্তা ছাপিয়ে কবিসত্তাই প্রধান হয়ে ওঠে। এটাই প্রকৃত কবির কাজ।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় মারা যান ২০০৩ সালে। এর তিন বছর আগে ২০০০ সালে হাসনাতভাই-ই আমাদের (আমি ও আহমেদ মুজতাহিদ) নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর কাছে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাসনাতভাইয়ের পরিচয় একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। স্বাধীনতার পর সুভাষ মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমুখ লেখক-888sport live chatীকে 888sport appয় নিয়ে এসেছিল কমিউনিস্ট পার্টি, যার অন্যতম অনুঘটক ছিলেন আবুল হাসনাত। বিভিন্ন দেশে আফ্রো-এশীয় লেখক ইউনিয়ন ও আফ্রো-এশীয় গণসংহিত পরিষদের সম্মেলন আয়োজনেও তাঁরা একত্র হতেন। ভাববিনিময় করতেন।
সেবারে আমরা কলকাতায় গিয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সাক্ষাৎকার নিতে। কিন্তু হাসনাতভাইয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরনো বন্ধু, সুহৃদ ও অগ্রজ লেখক-কবিদের সঙ্গে সময় কাটানো। নতুন বইয়ের খোঁজখবর নেওয়া। নয়া উদ্যোগের পার্থশঙ্কর বসু আমাদের থাকার জন্য একটি বাংলোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তিন-চারদিন হাসনাতভাইয়ের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল খুবই আনন্দদায়ক। কলকাতার কোথায় কী আছে, কার কী নতুন বই বেরিয়েছে, সেসব ছিল তাঁর মুখস্থ।
লেখালেখির বাইরে চিত্রকলার প্রতি হাসনাতভাইয়ের ছিল প্রবল আগ্রহ। 888sport appsে চিত্রকলাকে যাঁরা জনপ্রিয় করেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য।
হাসনাতভাই পার্থ বসুকে আগেই বলে রেখেছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যেন আমাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। ঠিক হলো সন্ধ্যার পর আমরা তাঁর বাসায় যাব।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় থাকতেন একতলা একটি পুরনো বাসায়। আমরা 888sport apps থেকে এসেছি জেনে তিনি খুব খুশি হলেন। হাসনাতভাই আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। দুই প্রজন্মের দুই কবি পুরনো 888sport sign up bonusচারণায় মশগুল হলেন; যদিও সুভাষ মুখোপাধ্যায় তখন কানে প্রায় শোনেন না। হাসনাতভাই কাগজে লিখে কিছু প্রশ্ন করলেন। লেখালেখি সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তখন 888sport app download apkর চেয়ে গদ্যই বেশি লিখতেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি আগ্রহ ভরে 888sport appsের লেখক-কবিদের সম্পর্কে জানতে চাইলেন। বিশেষ করে শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদের কথা। আমিও হাসনাতভাইয়ের মাধ্যমে দু-একটি প্রশ্ন করেছিলাম। যে-কবি কৈশোর থেকে আমাদের হৃদয়-মন জুড়ে আছেন, তাঁকে সামনাসামনি দেখছি, কথা বলছি। অনেকটা স্বপ্নের মতো।
হাসনাতভাইকে সবাই জানেন কম কথার মানুষ হিসেবে। কিন্তু প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য পেলে তিনিও প্রগলভ হয়ে উঠতে পারেন, সেটা লক্ষ করেছি কলকাতায়। সেখানে তিনি মন খুলে কথা বলেছেন 888sport live chat, 888sport live football ও সংস্কৃতি সম্পর্কে। আলোচনা প্রসঙ্গে এসেছে রাজনীতিও।
মনে আছে, হাসনাতভাই সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি খানিকটা নিরাসক্ত কণ্ঠে বললেন, চর্যাপদ ধরলে বাংলা ভাষার বয়স এক হাজার বছরের বেশি হয়েছে। এটি কম সময় নয়। পৃথিবীর অনেক বড় ভাষা হারিয়ে গেছে।
না, তিনি বাংলা ভাষা হারিয়ে যাবে, সে-কথা বলেননি। বলেছেন, হারিয়ে গেলেও যেন আমরা দুঃখ না করি।
সেদিন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি নিয়েও কথা হলো। মনে হলো রাজনীতি নিয়ে সুভাষ মুখোপাধ্যায় বেশি কথা বলতে চান না। রাজনীতির ঘূর্ণিপাক যে কবির ভেতরের সত্তাকে রক্তাক্ত করেছে, তাও অনুভব করলাম। ফিরে আসার সময় হাসনাতভাই বললেন, সুভাষদা আবার দেখা হবে। তাঁদের আর দেখা হয়নি। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে 888sport appsের আত্মার বন্ধন রচিত হয় একাত্তরে। তার আগে থেকেই তিনি 888sport appsকে জানতেন। এখানকার প্রগতিশীল রাজনীতিক ও লেখকদের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল। 888sport apps নিয়ে তিনি একটি বই লিখেছেন। সে-বইয়ে কীভাবে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলির সঙ্গে একাত্ম হলেন, কীভাবে যুদ্ধসংবাদদাতা হিসেবে মুক্তাঙ্গনে ঘুরে বেড়িয়েছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ আছে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.