সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এটা একেবারেই মিথ্যা নয় যে, সৈয়দ শামসুল হকের মাথার ভেতর একটা পোকা ছিল। মাথার এই পোকাকে ঘাড়ের ভূতও বলা হয়। নামান্তরে এটি হচ্ছে প্রতিভা, যেটি যার ওপর ভর করে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে দেয় না, তাড়িয়ে বেড়ায়। শামসুল হকও তাড়া-খাওয়া মানুষ ছিলেন। তাঁর কোনো বিশ্রাম ছিল না। প্রতিভা তাঁকে ছুটি দেয় নি, মনেপ্রাণে এবং সর্বক্ষণের জন্য 888sport live footballের কাজে ব্যস্ত রেখেছে। 888sport live footballের বাইরে তিনি অনেক কাজ করেছেন, কিন্তু 888sport live footballেই ছিল তাঁর আসল কাজ। তিনি বলতেন, ওটাই তাঁর জীবন। মোটেই মিথ্যা বলতেন না।
শামসুল হক ও আমি সমবয়সী। সহপাঠীই হতাম যদি এক স্কুলে পড়তাম। কিন্তু সেটা ঘটে নি। শামসুল হক পড়েছেন কলেজিয়েট স্কুলে, আমি সেন্ট গ্রেগরিস স্কুলে। দুটোই সদরঘাট এলাকায়, মাঝখানে তখনকার ভিক্টোরিয়া পার্ক। দেখা হয়েছিল ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে। ওই সদরঘাটেরই, ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে, এখন যার নাম কবি নজরুল কলেজ। আমাদের সিট পড়েছিল একই সারিতে, এপাশে ওপাশে। কিশোর শামসুল হককে দেখেছি, মাথা নিচু করে অনবরত লিখছেন, প্রশ্নের উত্তর যেন তাঁর নখদর্পণে, ওদিকে সময় নেই সময় নষ্ট করবার, দাঁড়িয়ে আবার কাগজও চেয়ে নিচ্ছেন। খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং সপ্রতিভ। কতকাল আগের ছবি, সেই ১৯৫০ সালের, কিন্তু এখনো মনে আছে। দেখেই মনে হয়েছিল, এই ছেলে একদিন বড় কেউ হবে। কত বড়, কোন লাইনে বড় হবে জানতাম না। কিন্তু জানতাম বড় না হয়ে ছাড়বে না।
কিন্তু তার পরে তো অনেক দিন দেখাই হয় নি। হবে কী করে? তিনি তো চলে গেছেন বোম্বাইতে, ফিল্মে ঢুকবেন বলে। তাড়া খেয়েছেন প্রতিভার। আমরা, তাঁর সমসাময়িকেরা যখন গুডি গুডি গুটি গুটি কলেজে ঢুকেছি, শামসুল হক তখন বের হয়ে চলে গেছেন অজানা-অচেনা নির্বান্ধব বোম্বাই শহরে। এটা কেবল তাঁর পক্ষেই সম্ভব ছিল। থাকতেন তিনি কুড়িগ্রামে, সেখান থেকে দু-হাতে সব বাধা সরিয়ে, সহপাঠীদের পেছনে রেখে চলে এসেছেন 888sport appয়। 888sport appতে একাই থাকতেন; ম্যাট্রিক পাশ দিয়ে চলে গেলেন বোম্বাইতে।
ওই শহরের অভিজ্ঞতা শুনেছি তাঁর নিজের মুখে। কাজ নিয়েছিলেন ধনাঢ্য এক ব্যক্তির বাড়িতে। এক বিকেলে বিছানায় শুয়ে এক মনে নভেল পড়ছিলেন ডিকেন্সের, বাড়ির কিশোরী মেয়েটি দেখতে পেয়ে ‘মামি মামি’ বলে চেঁচামেচি করে ডেকেছে অন্যদের, কাজের ছেলে ইংরেজি বই পড়ে এই দৃশ্য দেখবার জন্য। কিশোর শামসুল হক পালিয়েছেন ওই বাড়ি ছেড়ে। তারপর বোম্বাই রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে পাইকারি দরে-কেনা ফাউনটেন পেন খুচরা দরে বিক্রি করেছেন, ‘লে লে বাবু, এক রুপেয়া’ করে। ওদিকে পিতা খুঁজতে বের হয়েছেন পুত্রকে, রেলস্টেশনে পেয়েছেন কি না মনে নেই আমার, পেতেও পারেন, কিন্তু ধরে নিয়ে এসে জগন্নাথ কলেজে যে ভর্তি করে দিয়েছেন সেটা ঠিক।
সেখান থেকে পড়তে এসেছিলেন তিনি 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইংরেজিতে। তখন দেখেছি তাঁকে, আমাদের দু-বছরের জুনিয়র হয়ে গেছেন। কিন্তু পড়েন নি শেষ অবধি, দু-বছর পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন। সেটাই ছিল স্বাভাবিক। বড় জগৎটা যাকে টানছে, সে কী করে টিউটরিয়াল ক্লাস করে, লেকচার শোনে শান্ত ধরনের, লাইব্রেরিতে গিয়ে বিফল হয় প্রয়োজনীয় বইটি পেতে? ওসব কর্তব্যপালন শোভা পায় আমরা যারা আবদ্ধ তাদেরই। ততদিনে 888sport app শহরেই শামসুল হকের কর্মক্ষেত্রটি বেশ বড় হয়ে গেছে। মহীউদ্দিন বলে একজন ছিলেন, সজ্জন ব্যক্তি, রেডিওর প্রোগ্রাম প্রডিউসার, তিনি সিনেমা তৈরি করছিলেন মাটির পাহাড় নামে, শামসুল হক তার চিত্রনাট্য লিখে দিয়েছেন। ওটাই শুরু, এরপর বহু live chat 888sportের কাহিনি ও চিত্রনাট্য বের হয়েছে শামসুল হকের হাত দিয়ে।
ওদিকে তিনি কাজ নিয়েছেন সাপ্তাহিক চিত্রালীতে। চিত্রালী ছিল এক অসম্ভব জনপ্রিয় কাগজ। সিনেমা তখনো ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে গড়ে ওঠেনি 888sport appতে, কিন্তু সিনেমা সাপ্তাহিক এসে গেছে। এবং সে-পত্রিকার কাটতি বাড়ছে তো বাড়ছেই। এক সময়ে হামিদুল হক চৌধুরী ওটি কিনে নেন, গুজব আছে যে, তিনি ভাবছিলেন চিত্রালীকে দৈনিক করে দিয়ে দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারকে সাপ্তাহিক বানাবেন, তাতে মুনাফা থাকবে বেশি। ওই পত্রিকার জনপ্রিয়তার পেছনে ছিল দু-জন, এসএম পারভেজ, যিনি সম্পাদক, আর সৈয়দ শামসুল হক, পারভেজের যে সহযোগী। বলা হতো যে, পত্রিকাটির দর্শক ছিল বেশি, পাঠকের তুলনায়; কিন্তু পত্রিকাতে 888sport live footballও থাকতো, এবং 888sport live footballের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। 888sport live footballিক বৈদগ্ধটা বিশেষভাবে প্রকাশ পেতো চিঠিপত্রের জবাবে; সেগুলো শামসুল হকই লিখতেন বলে জানতাম। প্রচুর চিঠি আসতো নিশ্চয়ই, উপভোগ্য করে জবাব দেওয়া হতো। আমার ধারণা, কিছু চিঠি ওরা বানিয়েও নিতো, মনমতো জবাব দেওয়ার সুযোগ তৈরি করার জন্য। ধারণাটির বস্তুগত ভিত্তিও আছে; ও-কাজ আমিও করতাম, আমাদের হাতেলেখা পত্রিকাতে। তবে মস্তবড় তফাৎটা এইখানে যে, শামসুল হক করতেন একটি জনপ্রিয় পত্রিকাতে, আর আমার কাজটা ছিল আমাদের আবাসিক এলাকার নিজস্ব প্রকাশনায়। এক শহরের ভেতরে আসলেই অনেক শহর থাকে।
সৈয়দ হক অনেক কিছু করেছেন, কিন্তু যা-ই করুন করেছেন বীরের মতোই। কঠিন অসুখে পড়েছিলেন তিনি তিনবার, দুইবার বের হয়ে এসেছেন বীরের মনোবল নিয়েই, রোগকে পরাভূত করে। তৃতীয়বারের আক্রমণটা ছিল সবচেয়ে নির্মম, সেটি তাঁকে রেহাই দেয় নি, কিন্তু তিনি পরাভব মানেন নি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে গেছেন, এবং সেই কথাটাই বলতে চেয়েছেন যেটি তাঁর নায়ক, নূরলদীন বলে গেছে। কথাটা হলো, ব্যক্তির মৃত্যু আছে, জীবনের মৃত্যু নেই।
আমরা তো ধারণাই করেছিলাম যে, এবারের রোগটা ছাড় দেবে না; তাঁর নিজেরও অনুমান ছিল ওই রকমেরই; কিন্তু মেনে নেন নি ওই বাস্তবতাকে। তাঁর চলে যাওয়ার চার-পাঁচদিন আগে ফোন করেছিলাম আনোয়ারা সৈয়দ হককে। মোবাইলে, অত্যন্ত সংকোচের সঙ্গে। খবর নিতে নয়, খবর তো পাওয়া যাচ্ছিলই, শুধু এটুকু জানাতে যে, আমরা আছি তাঁদের সঙ্গে। আনোয়ারা সৈয়দ হক বললেন, কথা বলবেন? আমি সেটা আশা করি নি। আরো যা আশা করিনি সেটা তাঁর সেই আগের কণ্ঠস্বর। কিন্তু অবিকল সেটাই শুনতে পেলাম। অসুখের ভেতরে কী-কী কাজ করেছেন সে-কথাই বললেন। হ্যামলেটের 888sport app download apk latest version শেষ করে ফেলেছেন, গল্প লিখেছেন, 888sport app download apk লিখেছেন। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল তাঁর মনোবলকে। মুহূর্তের জন্য এই বিভ্রমও তৈরি হয়েছিল যে, রোগী আসলে কে, তিনি না আমি? ওই রোগের যন্ত্রণা কেমন নিষ্ঠুর তার একটা ধারণা আমার আছে। আমার স্ত্রী, নাজমা জেসমিন চৌধুরী, মারা গেছে ওই রোগেই, ঠিক ওইভাবেই। তাঁর যন্ত্রণাটা দেখেছি। সেই কষ্টের মধ্যে সৈয়দ হক পরিষ্কারভাবে জানালেন তাঁর কাজের কথা, বললেন, মানুষ যে তাঁকে এতটা ভালোবাসে তিনি জানতেন না, ওই ভালোবাসা তাঁকে অভিভূত করেছে। লেখক হিসেবে ভালোবাসাই তাঁর প্রাপ্য ছিল, তিনি জেনেছেন যে, সেটা তিনি পেয়েছেন।
শামসুল হকের ওই গলার স্বর আরো একটি বিশেষ মুহূর্তে সময়ে আমি শুনেছিলাম। সাতাশ বছর আগে, নাজমার মৃত্যুর কয়েকদিন পরে। শামসুল হক 888sport appয় ছিলেন না, ফিরে এসে ফোন করেছেন আমাকে। গলাটা এখনো কানে বাজে। বলেছিলেন, বিমানবন্দরে তাঁকে যাঁরা আনতে গিয়েছিলেন তাঁরা তাঁকে খবরটা দিয়েছেন, ঘরে ফিরেই ফোন করেছেন। কী-কী কথা হয়েছিল মনে নেই। কিন্তু স্বর ও সুরটা ভুলি নি। পরাণের গহীন ভিতর থেকে এসেছিল কথাগুলো। শামসুল হকের সঙ্গে নাজমার কথা হয়েছিল এর কিছুদিন আগে, বাংলা একাডেমির এক আলোচনা সভাতে; সৈয়দ হক তাতে 888sport live পড়েছেন, নাজমা ছিল আলোচকদের একজন। এর অল্পদিন আগে সৈয়দ হকের বোন মারা গেছেন, ওই একই রোগে। সে-কথা বলেছিলেন তিনি নাজমাকে। নাজমা আমাকে জানিয়েছে, খুবই যন্ত্রণাকাতর মনে হয়েছিল সৈয়দ হককে। এর কিছুদিন পরে নাজমা নিজেই তো চলে গেলো। একই রোগে, একই ভাবে।
দুই
সৈয়দ শামসুল হক সবার আগে একজন কবি। এ-খবর তিনি নিজেও রাখতেন, বলতেনও, আমরাও জানতাম সেটা। তাঁর সব কাজের ভেতরই উদ্ভাবন, ছন্দ, রুচি ও শৃঙ্খলা থাকতো। ভাষার ব্যবহারে ছিলেন অত্যন্ত সচেতন, যুক্তির সঙ্গে মিলেমিশে থাকতো কল্পনা। যা লিখতেন গেঁথে যেত পাঠকের মনে। তাঁর সকল রচনাই 888sport app download apkর মতো, এবং তাঁর মনীষার বিশেষ প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কাব্যনাট্যে, যেখানে 888sport app download apk ও নাটক একত্র হয়ে গেছে। তাঁর যে-কোনো রচনাতেই ওই দুইয়ের একত্রযোগটা টের পাওয়া যায়, যেটির অসাধারণ প্রকাশ ঘটেছে নূরলদীনের সারাজীবন ও পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় কাব্যনাটক দুটিতে।
ব্যক্তিগত কথাবার্তাতেও কবিপ্রতিভার উপস্থিতিটা টের পাওয়া যেত। মনে পড়ে, একবার এক টেলিভিশন নাট্যপ্রতিযোগিতায় আমরা বিচারক ছিলাম; সৈয়দ শামসুল হক, আতিকুল হক চৌধুরী ও আমি। অডিও-ভিডিওতে নাটকগুলো দেখতে হচ্ছিল। আমাদের ভেতর কে একজন বললেন, কাজটার জন্য তো সম্মানীর ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমরা একমত হলাম। ব্যবস্থাপকরা বললেন, তাঁরা স্পন্সরকে জানাবেন। দু-দিন পরে আবার যখন মিলিত হয়েছি সৈয়দ হক বললেন, স্পন্সরের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, এবং কথাটা তিনি তুলেছিলেন। শুনে স্পন্সর নাকি বলেছেন, তিনি তো আকাশ থেকে পড়লেন। আমি বলেছিলাম, ‘আপনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন না তাঁর আকাশটা কত উঁচু ছিল?’ সৈয়দ হক বললেন, ‘হ্যাঁ, করেছিলাম। বলেছিলাম, তা ব্যথাট্যথা পাননি তো?’ তৎক্ষণাৎ বুঝলাম তিনি কেন 888sport app download apk লেখেন, আর আমি কেন লিখি 888sport live। কথা একই, কিন্তু তাঁর জিজ্ঞাসায় সেটা কেমন জীবন্ত ও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, আমার কথার তুলনায়।
মনে পড়ে আরেকদিনের কথা। আমরা বসেছিলাম শহীদ মিনারের পাদদেশে Ñ শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক ও আমি; পাশাপাশি। সভা তখনো শুরু হয় নি; শামসুর রাহমান বললেন, ‘হাসানের কথা খুব মনে পড়ছে।’ হাসান মানে হাসান হাফিজুর রহমান। আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, হাসান ভাইয়ের তো আজ এখানে থাকার কথা ছিল।’ সৈয়দ হক বললেন, ‘আমি যেন শুনতে পেলাম হাসান চুপি চুপি বলছেন, একটু সরুন, আমি বসবো।’ এমন ভাবে বললেন যে আমার মনে হয়েছিল পেছনে ফিরে তাকালে দেখতে পাবো হাসানভাই দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ক্ষমতাটা কবির, গদ্যলেখকের নয়। পার্থক্যটা বারবার দেখি, দেখবার ব্যাপারও বৈকি।
একই পত্রিকায় আমরা লিখেছি, কিন্তু আগ্রহের ক্ষেত্র ছিল ভিন্ন-ভিন্ন। আমার মূল আগ্রহটা ছিল সংস্কৃতিতে, 888sport live football আসতো
সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। শামসুল হকের ব্যাপারটা ছিল একেবারে ভিন্ন। তাঁর কাছে 888sport live footballই ছিল কেন্দ্রভূমিতে, সংস্কৃতিকে আসতে হতো 888sport live footballের প্রয়োজনে। বিচিত্রা এক সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক ছিল, সেখানে শামসুল হক কলাম লিখতেন ‘মার্জিনে মন্তব্য’, আমি লিখতাম ‘উপর-কাঠামোর ভেতরেই’। দৈনিক সংবাদেও লিখতাম দু-জনেই। শামসুল হক লিখতেন 888sport live football সাময়িকীতে; কলামের নাম ‘হৃৎকলমের টানে’, আমি লিখতাম উপসম্পাদকীয় পাতাতে, নাম ‘সময় বহিয়া যায়’, লেখকের নাম ‘গাছপাথর’। পার্থক্যটা পরিষ্কার। যথার্থ কবিরা ভালো গদ্যও লেখেন, সৈয়দ হকও লিখতেন।
অন্য একদিন আমরা ছিলাম বড় এক অডিটরিয়ামের মঞ্চে। সবকিছুই সেখানে বড়-বড়, শ্রোতার 888sport free bet ছাড়া। শামসুল হক বললেন, ‘ওই যে দেখুন একজন শ্রোতা আসছেন। আমার স্ত্রী!’ আমি বলেছিলাম, ‘ব্যবস্থা করে এসেছিলেন বুঝি?’ শামসুল হক বললেন, ‘হ্যাঁ। জানি তো এমনটা হবে।’ শামসুল হক জানতেন, কিন্তু মানতেন না। জানতেন যে, 888sport live footballচর্চার জন্য পরিবেশ ও পরিস্থিতি মোটেই অনুকূল নয়, বরং খুবই বিরূপ; কিন্তু সেটাকে মানতেন না। তাঁর সব কাজেই সময়ের প্রতিকূলতাকে মেনে
না-নেওয়ার ব্যাপারটা ছিল। বিরূপ বিশ্বে তিনি ছিলেন একজন সাহসী মানুষ। তাঁর নূরলদীনের মতো।
সময় তো মানুষের মিত্র নয়। ব্যক্তিগত সময় শত্রুতা করে, ব্যক্তিকে অনবরত মৃত্যুর দিকে ঠেলতে থাকে, জন্মের পর থেকেই; আর সমষ্টিগত সময় করে ঠিক উলটো কাজ, থামিয়ে দিতে চায়, খুশি হয় থামিয়ে রাখতে পারলে। শামসুল হক ওই দুই সময়ের কোনোটির কাছেই নত হন নি। ব্যক্তিগত সময়ের বৈরিতাকে জয় করতে চেয়েছেন নিজের কাজের মধ্য দিয়ে, সমষ্টিগত সময়কে অতিক্রম করতে চেয়েছেন সমসাময়িকতার সীমানা লঙ্ঘন করে, আধুনিক হওয়ার শ্রম ও অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে। আমরা তো জানি যে, সমসাময়িক হওয়াটা কঠিন নয়, কিন্তু আধুনিক হওয়াটা খুবই কঠিন। অনুকরণ, অনুসরণ, চালিয়াতি, ঢঙ, ভাবভঙ্গি Ñ এসব সমসাময়িকতার লক্ষণ। আধুনিকতা গভীরের ব্যাপার; আধুনিকতায় সমসাময়িকতা থাকে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে থাকে সমসাময়িকের একটি মূল্যায়ন এবং সমসাময়িককে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা। এ অর্থে তিরিশের লেখকদের সকলেই সমসাময়িক ছিলেন, কিন্তু সবাই আধুনিক ছিলেন না। রবীন্দ্রনাথের কথা বাদ, তিনি সবসময়েই আধুনিক; রবীন্দ্রনাথের পরে আধুনিক ছিলেন বিশেষভাবে দু-জন, কাজী নজরুল ইসলাম ও জীবনানন্দ দাশ। সৈয়দ শামসুল হকও আধুনিক ছিলেন ওই অর্থেই। তিনি সমসাময়িক ছিলেন, কিন্তু তাঁর সীমানা ডিঙিয়ে যেতে সচেষ্ট থেকেছেন। যেজন্য দেখি, তিনি চলে যাচ্ছেন ইতিহাসের কাছে, সন্নিকটবর্তী হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধ ও
কৃষক-বিদ্রোহের, এবং কাব্যভাষাতে লোকভাষার শব্দ, বাক্য ও রীতিকে নিয়ে আসছেন। আবার নিজের ভেতরে লালন-পালন করছেন আন্তর্জাতিকতাকে।
তাঁর বাল্যকাল কেটেছে কুড়িগ্রামে। সেখানেই থাকতে পারতেন। কিন্তু তাঁর মনীষা তাঁকে সেখানে থাকতে দেয় নি, দেওয়ার কথাও নয়। তাড়া দিয়ে নিয়ে এসেছে 888sport appতে। পরে 888sport app থেকে চলে গেছেন লন্ডনে। এক সময়ে বসবাস ছিল 888sport appতে ও লন্ডনে; কিন্তু মানুষটা রয়ে গেছেন কুড়িগ্রামেরই। গ্রাম্য মানুষ নন, আধুনিক মানুষ, কিন্তু বাংলার মানুষ, ‘বিশাল বাংলা’র, যে-নামে তাঁর একটা বই আছে, যে-বইতে বাংলার মানুষের সঙ্গে তাঁর মেলামেশার কাহিনি আছে, 888sport alternative linkের আকারে নয়, রিপোর্টের আকারে। বাংলার মানুষ ও প্রকৃতি তাঁকে ছাড়ে নি, তিনিও তাদেরকে ছাড়েন নি। কক্ষনো নয়। শেষ ঠিকানা তাঁর এই গ্রামেই।
শামসুল হকের ভেতর গ্রাম্যতার বালাই ছিল না। গ্রামের সংকীর্ণতা, অল্পসন্তোষ, ক্ষুদ্রমনস্কতা, কলহপ্রবণতা Ñ এসব থেকে অনেক-অনেক দূরে ছিলেন তিনি। সেসব সামান্যতা থেকে ছুটে বের হয়ে এসেছিলেন কৈশোরে, কিন্তু ঠিকানা স্থির ছিল বাংলার জনপদেই। ইচ্ছাটা প্রত্যাবর্তনের ছিল না, ছিল বিচ্ছিন্ন না-হওয়ার। সৈয়দ হক বিচ্ছিন্ন হতে পুরোপুরি অসম্মত ছিলেন।
বিচ্ছিন্নতা জিনিসটা সবকালেই সত্য ছিল। কিন্তু এ-কালে সেটা চরম আকার ধারণ করেছে। পুঁজিবাদী উন্নতি যোগাযোগের উপায়গুলোকে অভাবনীয় উৎকর্ষে নিয়ে গেছে, কিন্তু ব্যক্তিমানুষ কেবলি খাটো হয়ে পড়ছে, যথার্থ যোগাযোগের অভাবে। যন্ত্র মানুষকে কাছে আনে, কিন্তু দূরেও রাখে। যন্ত্রের কারণে মানুষে মানুষে মৈত্রী গড়ে ওঠে না। শামসুল হকের লেখাতেই পড়েছি একটি কাল্পনিক কিন্তু অত্যন্ত বাস্তবিক ঘটনার কথা। ঝড়ের রাতের অন্ধকারে এক জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল বিপন্ন একটি মানুষ। দেখে পাশে আছে একটি কুকুর। কিন্তু দুটি প্রাণীর কেউ কাউকে কিছু বলছে না, নীরবে সহাবস্থান করছে দু-জনে। বজ্রবিদ্যুতের ভেতর ভিজতে-ভিজতে হঠাৎ সেখানে এসে উপস্থিত হয়েছে আরেকটি মানুষ। একে অপরকে দেখে চমকে উঠেছে তারা ভয়ে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না, কী ঘটতে পারে কল্পনা করে আতঙ্কে কাঁপছে। প্রকৃতি শত্রুতা করছে, কিন্তু মানুষ হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। এই বিচ্ছিন্নতা দূর করতে পারে 888sport live football। সৈয়দ হক ওই বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে ছিলেন, সেজন্যই 888sport live footballচর্চা করতেন। নিজে তিনি যুক্ত হতে চেয়েছেন; মানুষের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে, ইতিহাসের সঙ্গে। এবং পাঠকদের সাহায্য করেছেন বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠতে, সংবেদনশীলতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে।
শামসুল হক পড়তে ভালোবাসতেন। 888sport live footballপাঠই ছিল তাঁর প্রধান বিনোদন। বিশ্ব888sport live football পড়তেন, স্থানীয় লেখা পড়তেন। মনে পড়ে রেডিওতে পাঠ-করা আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল মাসিক পূবালীতে। শামসুল হক বললেন, ‘আপনার লেখাটি পড়লাম।’ আমি বলেছি, ওটি কিন্তু রেডিও টক। হেসে বললেন, ‘তাই? আমি ভাবলাম স্টাইল বদল করলেন বুঝি।’ স্টাইল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শামসুল হক করতেন। অন্যরা করছে দেখলে খুশি হতেন।
প্রতিভাও কিন্তু মলিন হয়ে যায় ব্যবহার না করলে। সৈয়দ হক তাঁর প্রতিভাকে নিরন্তর ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ পরিশ্রম করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি একজন মেহনতি মানুষ, যেন কৃষকই একজন। তাঁর সময়ে প্রতিভাবান মানুষ আরো ছিলেন নিশ্চয়ই, 888sport live footballের চর্চাতেও ছিলেন; কিন্তু তাঁরা অতদূর যেতে পারেন নি, সৈয়দ হক যতটা গেছেন। কাউকে গ্রাস করে ফেলেছে পেশা, কেউ হয়তো ভঙ্গ দিয়েছেন রণে Ñ মেহনতের ভয়ে।
আমাদের এক বন্ধু ছিল, আবিদ হোসেন। সেও পড়াশোনা শেষ করে নি। থার্ড ইয়ারে উঠে বিএ ডিগ্রি নিয়ে চলে গেছে বিলেতে, ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য। তুখোড় ছিল চলনে বলনে, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বে। হৃদয় ছিল ঊষ্ণ। সৈয়দ শামসুল হকের সৈয়দ হক নামটা তাঁরই দেওয়া। আবিদ ব্যারিস্টার হয়েছিল, দেশেও ফিরে এসেছিল। কিন্তু ফেরত চলে গেছে একাত্তরের গণহত্যার শুরুতেই। এর অল্প পরে মারা গেছে সে লন্ডনেই। বেঁচে থাকলে আবিদ নিশ্চয়ই আবার ফিরে আসতো, কিন্তু যথোপযুক্ত কর্মভূমি পেতে তাঁর কষ্ট হতো। সৈয়দ হকের বেলাতে সেটা ঘটে নি, তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল সুনির্দিষ্ট, সেখান থেকে তিনি নড়েন নি। এক চুলও নয়।
পঞ্চাশের দশকে আমরা যারা বেড়ে উঠেছি, তারা ছড়িয়ে পড়েছি নানা ক্ষেত্রে ও পথে, পথ যে নিষ্কণ্টক ছিল তা নয়, তবু কিছু-কিছু সুযোগ এসেছিল, একটা সুযোগ নাগরিক হওয়ার। আমাদের কৌতূহল ছিল, উদ্বেগ ছিল, আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম না। আমরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছি, আমরা ভেবেছি, সমাজ ও রাষ্ট্র যেভাবে চলছে তেমন ভাবে চলা উচিত নয়। উচ্চশিক্ষার জন্য অনেকে বিদেশে গেছে। সৈয়দ হকও গিয়েছিলেন, প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষার জন্য নয়, সেটা তো তাঁর ধাঁচেই ছিল না, গিয়েছিলেন পেশাগতভাবে কাজ করতে, বিবিসিতে। কিন্তু লন্ডন তো নিজেই একটা বড় বিশ্ববিদ্যালয় Ñ উন্মুক্ত এবং প্রশস্ত। সেখানে 888sport live footballচর্চার জন্য পাঠগ্রহণের যতগুলো সুযোগ ছিল তিনি ব্যবহার করেছেন। পড়েছেন, প্রচুর পরিমাণে, এবং নাটক দেখেছেন, যখনই সুযোগ পেয়েছেন। আর তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-কাজ, নূরলদীনের সারাজীবন, তার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিঠিপত্র দেখেছেন, ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে গিয়ে। তাঁর ভেতরকার আন্তর্জাতিকতা ও ইতিহাসের বোধ দুটোই সমৃদ্ধ হয়েছে লন্ডন-প্রবাসে।
পঞ্চাশের ওই দশকে আমাদের এই 888sport app শহর আড়মোড়া ভাঙছিল। জাগবে, তাকে জাগতে হবে, সেটা সে টের পেয়েছে। কিন্তু জেগে উঠে করবেটা কী, ঠিক বুঝতে পারে নি। তাকে আধুনিক হতে হবে, তার জন্য দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, যানবাহন, লেখাপড়া Ñ এসব যে লাগবে সেটা সে জেনেছে; কিন্তু আরো কী লাগবে তা বুঝতে পারে নি আমাদের এই শহর। যাঁরা কর্তা ছিলেন রাষ্ট্রের তাঁরা নিজেদের স্বার্থ বুঝতেন, জনস্বার্থ একেবারেই বুঝতেন না। তরুণরাও চেষ্টা করছিল নিজে-নিজে, অনেকটা
একা-একাই আধুনিক হওয়ার। ধাক্কাটা কিন্তু এসেছিল বায়ান্নতেই, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে। সে-আন্দোলন মধ্যবিত্তকে একই সঙ্গে রাজনীতিমনস্ক ও জাতীয়তাবাদী করে তুললো। সেটা একটা দিক, আরেকটা দিক পশ্চিমের অনুসরণ করা, অনেক ক্ষেত্রেই যা অনুকরণে পরিণত হতো। অনেক তরুণই একটা আচ্ছন্নতার ভেতর পড়েছিল। পড়েছিলেন হয়তো শামসুল হকও। কিন্তু তাঁর জন্য আশ্রয়ের জায়গাটা ছিল 888sport live footballে। আর ছিল প্রতিভা। আমরা দেখলাম, শামসুল হক নাগরিক রুচিকে লালন করছেন, তাঁর নিজের মধ্যে। নাগরিক জীবনকে নিয়ে আসতে চাইছেন তাঁর 888sport live footballে। তাঁর গল্পের বইয়ের নাম দাঁড়াচ্ছে তাস, 888sport alternative linkের নাম দিচ্ছেন এক মহিলার ছবি। এক মহিলার ছবি নামটি মনে করিয়ে দেয় আমেরিকান ঔপন্যাসিক হেনরি জেমসের 888sport alternative link দি পোর্ট্রেইট অব এ লেডির কথা। কিন্তু হেনরি জেমস তাঁর নায়িকার জন্য যে-রকমের উচ্চবিত্ত নাগরিক সমাজকে অতিসহজে পেয়েছেন, শামসুল হক তা পাবেন কোথায়? পান নি, তবু চেষ্টা করেছেন।
তাঁর অনেক কাজের মধ্যে খুব বড় মাপের কাজ হচ্ছে 888sport app download apk latest version। অকাতরে 888sport app download apk latest version করেছেন 888sport app download apk, 888sport alternative link ও নাটক। 888sport app download apk latest version আমাদের জন্য মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। 888sport app download apk latest version ছাড়া বিশ্বের জ্ঞান888sport apkকে আত্মস্থ করার উপায় নেই। 888sport app download apk latest versionের ভেতর দিয়ে ভাষার গ্রহণ, ধারণ ও প্রকাশ Ñ তিনটি ক্ষমতাই বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু দায়িত্বটা আমরা কাঁধে তুলে নিতে পারি নি। আরো অনেক জায়গার মতো, ওইখানেও আমাদের আধুনিকতা সবলে উঠে দাঁড়ায় নি। পঞ্চাশের দশকে, ক্রিকেটে হানিফ মোহাম্মদ সেঞ্চুরি করেছেন Ñ এই খবর সংবাদপত্র অফিসে অনূদিত হয়েছিল ‘হানিফ এক শতাব্দী ধরিয়া ব্যাটাইতেছে’ রূপে। সমষ্টিগত নিরিখে আমরা সেখান থেকে খুব বেশি উঁচুতে উঠতে পেরেছি, এমনটা মনে করার কারণ নেই। এক্ষেত্রে সৈয়দ শামসুল হকের কাজ গুরুত্বপূর্ণ। ঔপন্যাসিক সল বেলো নোবেল 888sport app download bd পেয়েছিলেন, তাঁর 888sport alternative link হেন্ডারসন দি রেইন কিংয়ের 888sport app download apk latest version সৈয়দ হক করেছেন শ্রাবণরাজা নাম দিয়ে। ওই রকমের নাম একজন কবির পক্ষেই দেওয়া সম্ভব, ভেতরের 888sport app download apk latest versionও কবির হাতেরই।
শামসুল হক শেক্সপিয়রের চার-চারটি নাটক 888sport app download apk latest version করেছেন; ম্যাকবেথ, টেমপেস্ট, ট্রয়লাস অ্যান্ড ক্রেসিডা এবং সবশেষে হ্যামলেট। 888sport app download apk latest versionে তিনি একত্রে নিয়োগ করেছেন তাঁর কাব্যপ্রতিভা ও শ্রমশীলতাকে। অমন বড় ও দুঃসাহসিক কাজের জন্য দুটোই প্রয়োজন; কেবল কাব্যপ্রতিভায় কুলায় না, প্রতিভাহীন মেহনতও কাজে লাগে না। বাংলাভাষায় শেক্সপিয়র 888sport app download apk latest versionের ক্ষেত্রে তাঁর নিযুক্তি যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।
তিন
সৈয়দ হকের সবচেয়ে বিতর্কিত কাজ তাঁর 888sport alternative link খেলারাম খেলে যা। রচনাটির 888sport live chatগত উৎকর্ষ নিয়ে আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। এ-888sport alternative link থেকে কোন ধরনের পাঠক কী ধরনের আনন্দ পাবেন সেটাও পাঠকের ব্যক্তিগত সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। রচনাটিতে ভøাদিমির নবোকোভের 888sport alternative link লোলিটার ছাপ কতটা পড়েছে বা পড়েনি সেটাও আমার বিবেচ্য নয়, এখানে। লোলিটা ষাটের দশকে মস্ত বড় হইচই ফেলেছিল। বিপতœীক বিকারগ্রস্ত মধ্যবয়সী হাম্বার্ট প্রেমে পড়েছে নাবালিকা লোলিটার। সে-প্রেমের কাহিনি নিয়েই ওই 888sport alternative link।
এখানে আমাদের বিবেচ্য 888sport alternative linkে উপস্থিত সামাজিক বাস্তবতা। লক্ষ করি এই যে, খেলারাম খেলে যার নায়ক বাবর আলী খানকে নায়ক বলা কঠিন। কেননা সে একজন সিরিয়াল রেইপিস্ট। মেয়েদের ধর্ষণ করাই তার জীবনের ব্রত। অন্য ধর্ষকরা কাজটা করে ‘অভদ্র’ভাবে, তার কাজটা ভদ্রজনোচিত, কেননা সে তার রিরংসা চরিতার্থ করে তার শিকারদের সম্মতি আদায় করে নিয়ে, তাদের অনিচ্ছাতে নয়। কিন্তু তার ওই কাজে প্রেম-ভালোবাসার নামগন্ধ নেই, ওইসব বস্তুতে সে বিশ্বাসই করে না। তার প্রধান ভিকটিম কিশোরী জাহেদা, যে একটি ইংরেজি মাধ্যমের কলেজে পড়ে, ফলে ভালো বাংলা জানে না, বাংলা বলতে পারলেও বুঝতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার একমাত্র পরিচয় ‘ছুটি’ গল্পের ইংরেজি 888sport app download apk latest versionের মাধ্যমে। বাবর তাকে প্রেম সম্পর্কে লেকচার দেয়, এবং বাংলাতে বললে জাহেদা তা অনুধাবন করতে পারবে না বলে ধরে নিয়ে ইংরেজি ভাষাই ব্যবহার করে। প্রেমের ওই তত্ত্ব অল্পশিক্ষিত তরুণীটি কতটা বোঝে বোঝা যায় না, তবে মোহিত যে হয় তা অনুমান করা যায়। মোহ সৃষ্টিতে বাবর খুবই দক্ষ। সে একজন সফল অভিনেতা। টেলিভিশনে জনপ্রিয় ধাঁধার অনুষ্ঠানের সে উপস্থাপক, এবং ওই প্রোগ্রামে বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়ের গুণে কিশোরী মেয়ে ও তাদের মাদের কাছে সে একজন হিরোতে পরিণত। কিশোরীরা তাকে পেলে বর্তে যায়, এবং তার ইচ্ছার কাছে সানন্দে আত্মসমর্পণ করে। সিনেমার নায়ককে তো পাওয়ার উপায় নেই, তাদের জন্য টেলিভিশনের নায়ক খারাপ বিকল্প নয়। মেয়েদের মাদের ব্যাপারে অবশ্যই বাবরের কোনো উৎসাহ নেই, তার রুচিতে কুলায় না। মিসেস নফিস, যিনি গাড়ি চালান, সিগারেট খান, হোটেলে হোটেলে ঘুরে বেড়ান, স্বামীকে নিয়ে যিনি সন্তুষ্ট নন, তিনি বাবরকে ডাকাডাকি করেন। বাবর তার কাছে যায়। কিন্তু আগ্রহ বোধ করে না। তার উৎসাহ কিশোরীদের ব্যাপারে, যাদের কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা নেই। এর পেছনে একটা কারণ হয়তো এই যে, ছেচল্লিশের দাঙ্গায় তার বোন অপহৃত হয়েছে; ঘটনাটা ঘটেছে তার চোখের সামনে, সে কিছু করতে পারে নি, নিজের জান নিয়ে পালিয়েছে। সেই দুঃখেরই কি সে প্রতিশোধ নিচ্ছে তার বোনের বয়সী কিশোরীদের ধর্ষণ করে? সেটা সে বলে না। এবং সে-কারণে যে তার কাজ বৈধতা পেয়ে যায় তা নয়। বৈধতা যে সে দিতে চায় তাও নয়। সে একজন খেলারাম, সে খেলতে ভালোবাসে এবং খেলতেই থাকে। তাকে থামাবে এমন কেউ নেই, কেননা মেয়েরা তার খেলার সাথি হয় সানন্দে। বাবর আলী রমণীমোহন এবং অবিবাহিত। বয়স হয়েছে, চুলে পাক ধরেছে, যাদের কুমারীত্ব সে হরণ করে তারা তার মেয়ের বয়সী। বাবর আলী বাধা পেয়েছিল তিনজন সশস্ত্র যুবকের কাছ থেকে। তারা ভাগ চেয়েছে। যুবক তিনজন সন্ধ্যাবেলা বনে এসেছিল কাঁঠালগাছের পাতা কাটতে। বনের ভেতর বাবর ও জাহেদাকে পেয়ে জাহেদাকে তারা ছিনিয়ে নিয়েছে, এবং বাবরকে ছুরি দিয়ে কুপিয়েছে। তারা ভেবেছিল বাবর বাধা দেবে, কিন্তু বাবরের তেমন কোনো ইচ্ছা ছিল না, কেননা তার নিজের কাজটা সে ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে, জাহেদার ব্যাপারে তার তাই কোনো উৎসাহ অবশিষ্ট নেই। কিন্তু বাবরের জন্য বিপদটা বাধাল জাহেদাই, প্রথমে, ‘বাবা-বা-বা’, পরে ‘দা-দা-দা’ বলে আর্তনাদ করে। ফলে বাবরের ভেতর ভগ্নি888sport sign up bonus জেগে উঠেছে, এবং প্রবল শক্তিতে সে ছিনতাইকারী ধর্ষণোন্মুখ যুবকদের কবল থেকে জাহেদাকে উদ্ধার করেছে। তারপর অতিশয় দ্রুতবেগে মোটর চালাতে গিয়ে রাস্তা থেকে নিচে পড়ে গিয়ে জাহেদাসহ নিহত হয়েছে।
তার ওই পরিণতিতে 888sport WC rateটা কী হওয়ার কথা সেটা বলা মুশকিল। তার কারণ, কিশোরীদের কাছে হিরো হলেও পাঠকের কাছে তার পক্ষে হিরো হওয়াটা দুঃসাধ্য। তার নৈতিকতার সঙ্গে অতীতে বর্ধমান শহরে যে-গুন্ডারা তার বোনকে অপহরণ করেছিল, এবং বর্তমানে বনের ভেতর যারা জাহেদাকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয়েছে, তাদের কাজের যে-পার্থক্য সেটা আবরণের মাত্র, নইলে সারবস্তুতে ঘটনা একই।
পাঠক কি তাকে করুণা করবে? সেটাও সম্ভব নয়। কেননা সে একজন নষ্ট পুরুষ, যে মেয়েদের নষ্ট হতে সাহায্য করে। তাহলে পাত্র হবে কি সে বিদ্রƒপের? না, সেটাও ঘটবে না, কেননা মানুষ হিসেবে সে অতিশয় সামান্য। তার সাবেক শিকারের একজন হচ্ছে লতিফা, আধা-মফস্বলী বালিকা সে। তার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, এবং বিয়ে হয়ে যাচ্ছে দেখে বাবর যে বিচলিত তা মোটেই নয়, উলটো দেখা যাচ্ছে যে লতিফার বাবাকে সে সাহায্য করছে ক্যাটালগ দেখে গহনার ডিজাইন পছন্দ করতে। লতিফা ধরে ফেলেছে যে, বাবর আলী তাকে মোটেই ভালোবাসে না, তাকে সে ব্যবহার করেছে মাত্র। রাত্রিবেলায় গোপনে এসে রেগেমেগে সে বাবরকে মিথ্যুক, ভ-, পশু ইত্যাদি বলেছে। এসব অভিধার কোনোটিই বাবরের অপ্রাপ্য নয়।
খেলারাম খেলে যার গুরুত্ব এইখানে যে, 888sport alternative linkটি সমাজ ও রাজনীতির একটি বাস্তবতাকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। 888sport live football এ-কাজটাও করে থাকে, আনন্দ দেয় এবং ইতিহাসকেও নিয়ে আসে সামনে। নষ্ট বাবর আলী খান হচ্ছে ষাটের দশকের লুম্পেন পেটি বুর্জোয়াদের প্রতিভূ। এরা আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের সুবিধাভোগী। এই সময়ে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনও গড়ে উঠেছে, যার পরিণতি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ; কিন্তু বাবর আলীরা তার সঙ্গে নেই; তারা বরঞ্চ বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গেই আছে। সে-অর্থে এদেরকে ব্যবস্থাটির দালাল বলাটা অসংগত নয়। বাবর আলী তার বাংলা না-জানা কিশোরী শিকারটিকে জানাচ্ছে যে, বাংলাভাষায় ‘দালাল’ শব্দটি খুবই অপমানজনক; কিন্তু নিজে সে অপ্রকাশ্যে সামরিক শাসনের সমর্থক বটে, সেই অর্থে দালাল বৈকি। আইয়ুব খান যে টেলিভিশন সম্প্রচার ব্যবস্থা চালু করেছেন, তার কল্যাণেই বাবরের সামাজিক প্রতিষ্ঠা লাভ ঘটেছে। ওদিকে তার মূল আয়টা আসে ব্যবসা থেকে, সে-ব্যবসা ইনডেন্টিংয়ের, খবরের কাগজে সে খবর পড়ে না, টেন্ডারের বিজ্ঞাপন পড়ে। লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সে ব্যবসায়িক সুবিধা সংগ্রহ করে থাকে। তার জীবন বিলাসে ভরপুর; সে পানি তেমন একটা খায় না, সুরাপান পছন্দ করে। দুর্দান্ত গতিতে গাড়ি চালায়। আবার ইংরেজি 888sport app download apkও পড়ে। আইয়ুবের সামরিক শাসন এই শ্রেণিটির ভোগবাদিতাকে সমর্থন জুগিয়েছে। বাবরের যেটুকু ক্ষমতা সবটাই ওই আইয়ুব শাসনেরই অবদান। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় তার বোনকে প্রাণ দিতে হয়েছে; সে যে রাষ্ট্রকে আক্রমণ করে বোনের প্রাণহানির প্রতিশোধ নেবে এমনটা ভাবে না, ব্যস্ত সে কিশোরীদের ধর্ষণ করার কাজে। ওই কাজের সুযোগ রাষ্ট্রই তাকে সরবরাহ করেছে। বনের ভেতর যে তিনজন যুবক জাহেদাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল শ্রেণিগতভাবে তারা গরিব, কিন্তু মতাদর্শিকভাবে বাবরের পথানুসারী, তারাও সে-কাজই করতে চায় বাবর যা করছে। বাবরের আছে অর্থ ও টেলিভিশন-প্রদত্ত রমণীমোহন ভাবমূর্তি; যুবকদের হাতে আছে পাতাকাটার লম্বা-লম্বা ছুরি। দূরত্ব অতটাই। সুবিধাভোগী বাবর ও সুবিধালোভী যুবকত্রয় Ñ এরা একপক্ষ অপরপক্ষের প্রতিদ্বন্দ্বী বটে, কিন্তু প্রতিপক্ষ নয়। স্বাধীন 888sport appsে বাবররা তো অবশ্যই, ওই যুবকদেরও কেউ-কেউ রাষ্ট্রক্ষমতার অংশভাগী হয়ে গেছে Ñ মাস্তানি, ব্যবসা, জবরদখল ইত্যাদির মধ্য দিয়ে।
888sport alternative linkের পটভূমির সময়টা ঊনসত্তরের অভ্যুত্থানের ঠিক পরের। তখনকার সংগ্রামের ছবিটা এখানে নেই। ওই সংগ্রামে মেয়েরাও ছিল। বেশ ভালোভাবেই ছিল। সংগ্রামী তরুণীরা এখানে অনুপস্থিত; কারণ পেটি বুর্জোয়াদের যে-অংশকে এখানে পাওয়া যাচ্ছে তারা আন্দোলনে উৎসাহী ছিল না। তবে আন্দোলনের সুফল তারা পাবে বলে আশা করছে। সামনে আছে নির্বাচন, তাতে শেখ মুজিব জিতবেন বলে এরা ভরসা করছে। বাবরের এক বন্ধু আওয়ামী লীগে ভিড়বার তালে আছে। অন্য এক বন্ধু জানাচ্ছে, ‘সবাই এখন শেখ সাহেব বলতে পাগল… শেখ সাহেবের পাশে একটু বসতে পারলে যেন কৃতার্থ হয়ে যায়। অথচ জানিস শেখ সাহেব যখন আগরতলা মামলার আসামি ছিলেন তখন তাঁর নাম পর্যন্ত মুখে আনত না ভয়ে।’ বাবর নিজে পলিটিক্স বোঝে না বলে দাবি করে, কিন্তু সেও পলিটিক্সের ভেতরেই আছে। যা পাচ্ছে তাতে সে সন্তুষ্ট নয়, আরো কিছু আশা করে, এবং এক ফাঁকে সেও শেখ মুজিবকে দেখে ফেলে। স্বপ্নে। ত্রাণকর্তা হিসেবে।
চাটগাঁতে গিয়ে হোটেলে ফিরোজ মাজমাদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় বাবরের। মাজমাদার তার ব্যবসায়ী বন্ধু। হোটেলের কামরায় বসে আরেক বন্ধুর সঙ্গে হুইস্কি খাচ্ছে, জুয়া খেলছে এবং পরিকল্পনা করছে রাঙামাটির কাছে শিয়ালবুকাতে গিয়ে পাহাড়ি মেয়ের সঙ্গে রাত্রিযাপন করে নিজের বিবাহিত জীবনের একঘেয়েমি ঘোচাবার। মাজমাদার পীড়াপীড়ি করে বাবরকে সঙ্গে নেওয়ার জন্য। বাবর রাজি নয়; রাজি হওয়ার কথাও নয়, তার তো ভিন্ন ব্যবস্থা আছে, বেশ রুচিসম্মত ব্যবস্থা। মাজমাদার দেখা যাচ্ছে বেশ রাজনীতি-সচেতন। অতসব ব্যস্ততার ভেতরেই বলছে সে, ‘অটোনমি না হলে রক্ষা নেই। আগাখানি আর পাঞ্জাবীরাই মধু খেয়ে যাচ্ছে, আর আমরা শালা বুড়ো আঙুল চুষে চুষে নৃত্য করে গেলাম।’ আল্লাহর কাছে সে দোয়া করে শেখ মুজিব পাওয়ারে আসুক। জুয়ার পার্টনারকে রীতিমতো সাবধান করে দেয়, ‘শেখ মুজিব ছাড়া অন্য কারো বাক্সে ভোট দেবেন তো আপনার সাথে কথা নাই।’ মাজমাদার ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছে যে, শেখ মুজিবের মতো একটা বাঘের বাচ্চা আর হয় না। ‘এত বড় কলিজাটা কার?’ শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী হবেন, অটোনমি আসবে, এটাই তাদের আশা। কিন্তু এর জন্য তারা যে কাজ করছে তা নয়, তারা ফল কুড়ানোতে অংশ নেবে, গাছের লালন-পালনের দায়িত্বটা অন্যদের।
খেলারাম খেলে যা ১৯৭০-৭৩-এ রচিত। এর পরে সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। ওই বিষয়ে তাঁর 888sport alternative link আছে নিষিদ্ধ লোবান ও নীল দংশন নামে। দুটোই উল্লেখযোগ্য রচনা; কিন্তু তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দুটি কাজ সে দুটি হলো, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় এবং নূরলদীনের সারাজীবন। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়-এর কাহিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত, নূরলদীনের সারাজীবনে একাত্তরের যুদ্ধ নেই ঠিকই, কিন্তু আমাদের মুক্তিসংগ্রাম আছে। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় সম্পর্কে তিনি নিজেই লিখেছেন,
‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে পাঠক ও দর্শকের কাছে চিহ্নিত হলেও, সবশেষে কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বলা দরকার যে Ñ এ নাটক আমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে রচনা করিনি; একাত্তর এ নাটকে একটি পরিচিত ও আমাদের প্রত্যেকের জীবন-স্পর্শকারী পটভূমি মাত্র। আমি চেয়েছি এই মুক্তিযুদ্ধকে পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আরো বড় একটি মুক্তির জন্যে দর্শককে প্রাণিত করতে Ñ সে মুক্তিযুদ্ধ ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, ধর্মের নৌকোয় নৈতিক অন্যায়কে পার করিয়ে দেবার যুগযুগান্তরের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে।
আরও বলেছেন, ‘এ নাটক আমি কল্পনা করেছি আরো ঝড় আরো প্রয়োজনীয় একটি মুক্তিযুদ্ধের নাটক হিসেবে।’ শেষ করেছেন এই উক্তিটি দিয়ে Ñ
নিজের সৃষ্টি হলেও বিনয় নিয়েই বলছি, সম্ভবত এই বৃহত্তর মাত্রাটির জন্যই ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ সমর্থ হয়ে উঠতে পেরেছে।
একাত্তর আসলেই আমাদের একটি বড় যুদ্ধের অংশ। সেই বড় যুদ্ধে ছিল কৃষকনেতা নূরলদীন অনেককাল আগে, সেই ১৭৮২ সালে। নূরলদীনের প্রসঙ্গে একটু পরে আসি। তার আগে সৈয়দ হকের 888sport live footballিক অগ্রগতির কথাটা বলি। আমাদের চিন্তার জগতে বায়ান্ন একটা ধাক্কা দিয়েছে, আরো বড় ধাক্কা এসেছে একাত্তরে। একাত্তরের কারণে বেশকিছু রদবদল ঘটেছে, পরিবর্তন এসেছে 888sport live footballেও। একাত্তরের আগে যে-কবি 888sport app download apk লিখেছিলেন ‘বেশ্যার বিড়াল’ নামে, একাত্তরের পরে তিনি লিখেছেন ‘ভাত দে হারামজাদা’ নামের 888sport app download apk। একাত্তরের আগের বিষয়-আশয় নিয়ে একাত্তরের পরে 888sport live footballরচনা দুরূহ ছিল। সমাজে বিপ্লব না ঘটুক কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, পাঠক বদলেছে, প্রকাশনার ধরন বদলেছে; লেখক যদি না বদলান তবে তো মনে হবে তিনি লেখকই নন। একাত্তরের পরে আমরা প্রত্যেকেই কিছুটা হলেও ভিন্নভাবে লিখেছি। শামসুল হকও তাই করেছেন। দেখা গেল, তিনি নাটক লিখছেন, সাধারণ নাটক নয়, কাব্যনাটক, যেখানে 888sport app download apk ও নাটক অবৈরী এক দ্বন্দ্বে নিয়োজিত, যাতে লাভ হয়েছে যেমন কাব্যের তেমনি নাটকের। এবং কাব্যনাটকের জন্য তিনি নতুন ভাষা খুঁজছেন, লোকভাষার কাছে চলে যাচ্ছেন। এটা ঘটছে কেবল এ-জন্য নয় যে, বিষয়বস্তু গ্রামের মানুষ; ঘটছে এই জন্যও যে, নাটকের প্রচলিত ভাষা 888sport app download apkকে ও নাটককে একসঙ্গে ও যথোপযুক্ত রূপে ধারণ করতে পারছিল না। তাছাড়া তাঁর নিজের ভেতরও নড়চড় ঘটেছিল। তাঁর অত্যন্ত 888sport app download for androidীয় কাজ পরাণের গহীন ভিতরের সনেটগুলোও লোকভাষাতেই রচিত।
একাত্তরের লড়াই, এবং তার চেয়ে বড় ইতিহাসব্যাপী-বিস্তৃত মুক্তির যে-সংগ্রাম সেটা মেহনতি মানুষই করেছে, বাবর আলীরা করে নি। বাবর আলীরা সুবিধাভোগী ও সুবিধালোভী; তারা পাকিস্তানি রাষ্ট্র থেকে সুবিধা নিয়েছে, আপন বোনের মূল্যে হলেও। একাত্তরে তারা গা বাঁচিয়ে চলেছে, কেউ-কেউ সহযোগিতা পর্যন্ত করেছে দখলদার হানাদারদের সঙ্গে, কলকাতায় যারা গেছে তাদেরও একাংশ বদনাম কুড়িয়েছে নানারকমের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। লড়াই করেছে কৃষক, লড়াই করেছে একাত্তরে, যেমন করেছে ১৭৮২-তে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলদারদের বিরুদ্ধে।
ওই দখলদারদেরই তৈরি সাম্প্রদায়িকতায় সম্ভ্রম ও প্রাণ দুটোই হারিয়েছে হাসনু, বাবরের ছোট বোন। সে-ঘটনা বাবরকে বিদ্রোহী করেনি। ওদিকে ইংরেজ শাসনের প্রথম যুগেই নূরলদীন তাঁর কৃষক পিতাকে হারিয়েছে। কোম্পানি, কোম্পানির দালাল জমিদার ও মহাজন মিলে যেভাবে নূরলদীনের পিতাকে শোষণ করেছে তাতে তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। গাভীর মতো কাঁধে জোয়াল লাগিয়ে লাঙল টানতে-টানতে গাভীর মতোই প্রাণ হারিয়েছে ওই কৃষক। কিশোর নূরলদীন প্রত্যক্ষদর্শী। বাবার মৃত্যুতে তাঁর বুকের ভেতর আগুন জ্বলে উঠেছে। সে ঠিক করেছে, যে-ব্যবস্থাটি তাঁর পিতাকে বলদে পরিণত করেছে তাকে সে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে। একা পারবে না, সেজন্য অন্য কৃষকদের ডাক দিয়েছে, ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়।’ অত্যাচারিত কৃষকেরা একত্র হয়েছে। কোম্পানির কর্তা, জমিদার, মহাজন, ভাড়াটে পাইক-বরকন্দাজ সবার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা সফল হয় নি, সফল হবার কথা নয়। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দানটা ছাড়ে নি, এবং উন্নততর অস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজকে নাস্তানাবুদ করে দিয়েছে। মৃত্যুর সময় নূরলদীন বলে গেছে যে, ব্যক্তি নূরলদীনের মৃত্যু আছে, কিন্তু জীবনের মৃত্যু নেই। খেলারাম বাবর আলীও মারা গেছে, কিন্তু তার বলার কিছু ছিল না, তাকে কেউ মনে রাখে নি, সে হারিয়ে গেছে রাতের অন্ধকারে।
তবে বাবর আলী মরে গেলেও বাবর আলীরা কিন্তু মরে নি। তারা ঠিকই আছে। কারণ ব্যবস্থাটা রয়ে গেছে। রাষ্ট্র ও সমাজ ধাক্কা খেয়েছে, কিন্তু বদলায় নি। যে-কারণে বাবর আলী যে-শ্রেণির প্রতিনিধি তারাই রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা হাতিয়ে নিতে পেরেছে। লড়াই করেছে নূরলদীন, সুবিধা হয়েছে বাবর আলীর। ফলে মুক্তি আসে নি। উপরন্তু আগের যে-কোনো সময়ের তুলনায় ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি, দুর্নীতি, আত্মহত্যা Ñ সবকিছুই বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নতির নামে বৃদ্ধি ঘটেছে বৈষম্যের এবং মানবাধিকার হরণের।
নূরলদীনের সারাজীবন সম্পর্কে সৈয়দ হক লিখেছেন :
এই কাব্যনাট্যটি লিখে ফেলবার পর আমার আশা এই যে, এই মাটিতে জন্ম নিয়েছিলেন এমন যে সব গণনায়কদের আমরা ভুলে গিয়েছি তাঁদের আবার আমরা সম্মুখে দেখব এবং জানব যে আমাদের গণ-আন্দোলনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের ও অনেক বড় মহিমার Ñ সবার ওপরে, উনিশ শো একাত্তরের সংগ্রাম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
সংগ্রামের এই ধারাবাহিকতা একটা ঐতিহাসিক সত্য। নাটকের শুরুতেই সূত্রধর জানাচ্ছে,
আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক, ‘জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়।’
নূরলদীনকে বারবার ফিরে ফিরে আসতেই হয়, কারণ যে-ব্যবস্থাটা মানুষের সঙ্গে শত্রুতা করছে, সে টিকে থাকে। নূরলদীনরা চায় সেটাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কেবল বিদ্রোহী নয়, সে বিপ্লবী। সিংহাসন দখল করতে আগ্রহী নয়, চায় কায়েমি সিংহাসনী ব্যবস্থাটাকে পুড়িয়ে ফেলতে। বুকে তাঁর আগুন আছে, সে-আগুন বাবর আলীর মতলবী আগুন নয়, বিপ্লবের আগুন। ইংরেজকে সে তাড়াবে, কারণ ‘হামার দেশে হামার অধিকার।’ হামার মানে কোনো একজন নয়, দেশের সকল মানুষ। তার জন্য শত্রু কয়েকজন বিদেশি নয়, তাঁর শত্রু ইংরেজদের দালাল কোম্পানি শাসনের সুবিধাভোগী জমিদার মহাজন জোতদার গাঁতিদার তহশিলদার লাঠিয়াল, সবাই।
একসাথে নিকাশ করেন কালা ধলার রাজ
[…]
মহাজনের চিতা জ্বালেন, ইংরাজের কবর।
নূরলদীনের এই অবস্থানটা এমনকি তাঁর অনুরাগী ও অনুসারীরাও ধরতে পারে না, তারা আওয়াজ দেয় ‘জয় নবাব নূরলদীন’। নূরলদীনকে তাঁর স্ত্রী আম্বিয়াও বোঝে না।
আম্বিয়া খোয়াব দ্যাখে, মুঁই বসি আছো সিংহাসনে
আর তাই রাজরানী বসি আছে পাশে।
আম্বিয়া বুঝতে চায় না যে, ‘সিংহাসনে বসিবার লোভ নাই যে আমার।’
[…] এক অগ্নি আছে হামার ভিতরে
এমন সে অগ্নি তাতে সিংহাসন পোড়ে
পুড়ি যায়।
কি জানিবে দুনিয়ায়, আর কি জানিবে আম্বিয়ায়?
বিদ্রোহী কিষানরা ছুটে এসেছে চতুর্দিক থেকে। হাজারে হাজার। তারা ধ্বনি দিচ্ছে, ‘জয় নবাব নূরলদীন’ বলে। নূরলদীনের বন্ধু আব্বাস ঠাট্টা করে বলে,
এইবার? Ñ নবাব নূরলদীন?
রংপুর, দিনাজপুর, কুচবিহার
সমুদয় রাজত্ব তোমার।
জবাবে নূরলদীন আব্বাসের টুঁটি চেপে ধরে। বলে, আব্বাসের তো জানা থাকার কথা যে নূরলদীন নবাবীর তোয়াক্কা করে না। নূরলদীন দেখতে চায় তার বুকের আগুন সকলের অন্তরে জ্বলে উঠেছে, এবং ওই আগুনে সব সিংহাসন জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে, মুক্তি ঘটেছে মানুষের। সকল মানুষের।
নাটকের সমাপ্তি যুদ্ধক্ষেত্রে। নূরলদীন নিহত হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ চলছে।
ধৈর্য সবে Ñ ধৈর্য ধরি করে আন্দোলন।
লাগে না লাগুক, বাহে, এক দুই কিংবা কয়েক জীবন।
সেই আন্দোলন এখনো চলছে, মাঝে-মাঝে তা যুদ্ধের আকার নেয়। আন্দোলনটা যে কেবল 888sport appsের তা নয়, আন্দোলন সারা বিশ্বেরই; কেননা বিশ্ব শাসিত হচ্ছে পুঁজিবাদের দ্বারা, বাংলায় যে-শাসনের সূত্রপাত ঘটেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের মধ্য দিয়ে।
চার
888sport live footballে ইতিহাস থাকে। থাকতেই হবে, না হলে 888sport live football তো নিছক রূপকথা। না, কথাটা ঠিক হলো না, কারণ রূপকথাও ইতিহাসের বাইরে নয়। সৈয়দ শামসুল হকের 888sport live footballকর্মে ইতিহাস অনিবার্যভাবেই উপস্থিত। এই ইতিহাসের এক প্রান্তে বাবর আলী, ওপর প্রান্তে নূরলদীন। পরস্পরের প্রতিপক্ষ। মাঝখানে আছে পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়-এর কিশোরী মেয়েটি। মাতব্বরের মেয়ে, মাতব্বর নিজে ছিল পাকিস্তানি দখলদার-হানাদারদের সহযোগী। কিন্তু মাতব্বর তার নিজের মেয়েকে রক্ষা করতে পারে নি। এটাও ইতিহাসের অংশ। মাতব্বর পাকিস্তানপন্থী, শক্ত শাসকের সে প্রকাশ্য ভক্ত, ‘মেলেটারি’কে সে উদ্ধারকারী হিসেবে কল্পনা করে। কিন্তু পরাজয় যখন আসন্ন তখন তার বন্ধু পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন মাতব্বরের মেয়েকে চেয়ে বসে। মাতব্বরের পক্ষে রাজি না হয়ে উপায় থাকে না। কাকুতি-মিনতি করে, শেষে সান্ত¡না হিসেবে ক্যাপ্টেনকে সম্মত করায় বিয়ের অভিনয় করতে। ক্যাপ্টেন তার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে পরের দিন ভোর হওয়ার আগেই সৈন্যসামন্ত নিয়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটি প্রকাশ্য জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে তার পিতাকে অভিযুক্ত করে। এবং নিজে বিষপান করে পিতাকে ধিক্কার জানিয়ে চলে যায়। মাতব্বর নিহত হয় গ্রামবাসীর হাতে। নাটকের সমাপ্তিতে অসংখ্য লাশ দেখা যায়, জানাজার আয়োজন করা হয় তাদের জন্য। বেঁচে থাকাটাই সেখানে শোকের গোজার। নূরলদীনের সারাজীবনের সমাপ্তিটা কিন্তু ভিন্নরকমের। নূরলদীন মারা গেছে, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর চেয়েও তাঁর বন্ধুদের আশাবাদটা বড়। সমাপ্তিতে বন্ধু আব্বাস হাত তুলে ঘোষণা করে যে, আগামীতে আরো যুদ্ধ হবে, একটি দুটি তিনটি যুদ্ধ, প্রয়োজনে অসংখ্য যুদ্ধ।
মেয়েদের কণ্ঠস্বর কোথায় কতটা শোনা যাচ্ছে তা দিয়েও সামাজিক বাস্তবতার বিষয়ে ধারণা পাওয়া সম্ভব। খেলারাম খেলে যার জগতে মেয়েদের স্বরটা খুবই সামান্য। মেয়েরা সেখানে পিতৃতান্ত্রিকতার দমন ও পীড়নকে নিঃশব্দে মেনে নিয়েছে। মেনে-নেওয়ার বাইরে তাদের চাওয়ার কিছু নেই। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়তে কিন্তু ব্যাপার একেবারেই ভিন্ন। সে-নাটকের কেন্দ্রে আছে মাতব্বরকন্যার দীর্ঘউক্তি।
দুশো বছর আগের 888sport promo code, নূরলদীনের সারাজীবনের লিসবেথ। সে কিন্তু কোম্পানির কালেক্টরকে পরিষ্কারভাবে ধরিয়ে দেয় যে, কোম্পানির কর্মচারীদের স্ত্রী হিসেবে ইন্ডিয়াতে এসে লিসবেথরা সাম্রাজ্যবিস্তারে সহায়ক হয়েছে, দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে একটি ঐতিহাসিক দায়িত্বই পালন করেছে। লিসবেথের বক্তব্য :
আমরা না এলে ইন্ডিয়ায়
ইংরেজ মোগল হতো,
হুঁকো টেনে, পালকী চড়ে, গোধূলি বর্ণের পুত্র জন্ম দিয়ে দিয়ে
ইন্ডিয়ান হতো, […] ইন্ডিয়ান এম্পায়ার হতো না।
বুঝতে অসুবিধা নেই যে, এই মেয়ের ভেতর ইংল্যান্ডে ঘটে-যাওয়া বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রভাব পড়েছে। সপ্তদশ শতাব্দীর ওই বিপ্লব পেছন থেকে কোম্পানির কর্মচারীদের উপনিবেশ স্থাপনের কাজে উৎসাহ জুগিয়েছে, নইলে তারা এতটা সাহসী হতো না। তাদের সঙ্গে যে মেয়েরা এসেছে তারাও ইতিহাসের ওই অগ্রগতির সুফলভোগী। নূরলদীনের স্ত্রী আম্বিয়া কোম্পানি-শাসিত
কৃষকসমাজের মেয়ে, কিন্তু যেহেতু তার স্বামী আছে যুদ্ধের ময়দানে, তাই সে ঘরের বাইরে আসতে পারে, তর্ক করতে পারে আব্বাসের সঙ্গে, আব্বাসকে ধমকে দিতে পারে ফাৎরামি না করতে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে সে কাঁদে, আবার গানও গায়। অক্ষরজ্ঞানবিহীন আম্বিয়া যে ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়, দুশো বছর পরে জন্মগ্রহণকারী বড়লোকের ইংরেজি-শিক্ষিত মেয়ে জাহেদা তার ধারে-কাছেও পৌঁছাতে পারে না।
ইতিহাস বিষয়ে সৈয়দ হকের 888sport app download apkয় একটি বক্তব্য 888sport app download for androidীয়। সেটি এ-রকমের :
ইতিহাস কিছু নয়
যদি না সে অগ্রসর হয়।
তাঁর 888sport live football ইতিহাসের এই অগ্রগামিতার খবরটা আমাদেরকে জানিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের ইতিহাস তো দেখা যাচ্ছে আটকা পড়ে গেছে ট্র্যাফিক জ্যামে। এর দায়টা পুরোপুরি বাবর আলীদের। ষাটের দশকে তারা বেপরোয়াভাবে কেবল যে গাড়ি চালিয়েছে তা নয়, বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি করে 888sport app শহরকে সয়লাব করে দেওয়ার কাজটি শুরু করে দিয়েছে। তাদের কারণেই রাজধানী 888sport app এখন অচল হয়ে গেছে। আটকা-পড়া এই ইতিহাসকে সচল করবে কে? অবশ্যই বাবর আলীরা করবে না, বাবর আলীরা তো গাড়ি ছাড়া চলতেই পারে না, এবং বাবর আলীরা নিজেরাই এখন নিজ-নিজ গাড়ির ভেতরে অচল অবস্থায় আটকা পড়ে গেছে। ইতিহাসের উদ্ধারকর্তা হচ্ছে নূরলদীন। ট্র্যাফিক জ্যাম ভাঙতে যদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বাড়াতে হয়, যদি দরকার পড়ে রাষ্ট্রক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের, পাতাল রেল তৈরি করার, নৌপথে যাতায়াত বাড়ানোর, বাবর আলীদের হাঁকিয়ে দেওয়ার, তবে সেসব কাজ তখনই সম্ভব হবে যখন নূরলদীনরা রাষ্ট্রক্ষমতা পাবে, তার আগে নয়। ইতিহাসের পালাবদলে বাধা দেবে অন্য কেউ নয়, বাধা দেবে আমাদের পরিচিত বাবর আলীরাই। দিচ্ছেও।
আমরা যারা নিজেদের আলোকিত ভাবি, বাবর আলীদের সঙ্গেই তাদের নিত্য ওঠাবসা, চলাফেরা, আত্মীয়তা এবং ঝগড়া-বিবাদ। ব্যক্তি সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গেও বাবর আলীর ভালো জানাশোনা রয়েছে, নইলে সে তাঁর 888sport alternative linkে প্রধান চরিত্র হলো কী করে? জানাশোনার কথাটা তো বাবর আলী নিজেও জানিয়েছে আমাদের। রংপুর-অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বাবর আলী গিয়েছিল রংপুর 888sport live football পরিষদের এক বৈঠকে, সেখানে স্থানীয় সংস্কৃতিসেবীরা ওই শহরে সংস্কৃতিচর্চার অন্তরায়গুলোকে সাড়স্বরে চিহ্নিত করছিল। জবাবে বাবর আলী কথার পিঠে কথা সাজিয়ে চমৎকার এক বক্তৃতা দাঁড় করিয়ে শেষে যোগ করলো এই কথাটা :
এবং হ্যাঁ, আপনাদের ক্ষোভ, আপনাদের প্রতিরোধের সংবাদ আমি 888sport appর 888sport live chatী 888sport live footballিকদের কাছে পৌঁছে দেব। আপনাদের রংপুরের ছেলে সৈয়দ শামসুল হক, টেলিভিশনে প্রায়ই আসেন, আমি তাঁকে বিশেষ করে বলবো।
পরিচিত ঠিকই, কিন্তু শামসুল হক কি বাবর আলীর সঙ্গে ছিলেন? মোটেই না। বাবর আলীকে তিনি গুরুত্ব দেন, তাকে বোঝার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাকে ‘হিরো’ বানাতে পারেন না। তাঁর কাছে নায়ক নূরলদীনই, যদিও তিনি জানেন যে, বাবর আলীরাই ক্ষমতা ধরে রাখবে, নূরলদীনদের থাকতে হবে দূরেই। কিন্তু ইতিহাসের ভবিষ্যৎ যে নূরলদীনদের হাতে এটা তাঁর কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট, এবং সে-কথা বলেছেনও তিনি তাঁর 888sport live footballে।
তবে সেটা বলার জন্য তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়েছে একাত্তরের যুুদ্ধ পর্যন্ত। একাত্তরের আগে নূরলদীনকে নায়ক করে 888sport live footballসৃষ্টি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদিও নূরলদীনের মতোই তিনিও রংপুরেরই লোক। মানুষের মনই 888sport live football সৃষ্টি করে, কিন্তু মানুষের মন ততটা স্বাধীন নয়, যতটা সে ধারণা করতে পছন্দ করে। বায়ান্নর ধাক্কা সৈয়দ শামসুল হককে লেখক হতে বলেছে, একাত্তরের ধাক্কা তাঁর কাছ থেকে তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনাগুলো বের করে এনেছে। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা নূরলদীনের সারাজীবন লেখা হয়েছিল ১৯৮২-তে, ওই কাব্যনাটকের অসামান্য উচ্চতা তিনি পরের কোনো লেখাতেই লঙ্ঘন করতে পারেন নি। তিনি কি অপেক্ষা করছিলেন নতুন একটি ধাক্কার জন্য? কিন্তু সেটা তো আর আসে নি। নূরলদীন নিজেই তো কষ্টে আছে। আমাদের সৃষ্টিশীলতার সাধারণ মানও তো থমকে গেছে, ইতিহাসের আটকে-পড়ার সঙ্গে তাল রেখে। এর জন্য বাবর আলীদের বাহাদুরি কতটা দায়ী তা সমীকরণ কষে বলা যাবে না। মাপজোখের কাজটা মোটেই সহজ নয়।
থাক সেটা। আপাতত শেষ করা যাক তাঁর সঙ্গে আমার শেষ কথাটা দিয়ে। বলেছিলাম, আমরা সবাই আপনার সঙ্গে আছি। কিন্তু আমরা তাঁর সঙ্গে থাকবো কী করে? তিনি তো চলে গেছেন সময়ের অপর পাড়ে। উলটো তিনিই আমাদের সঙ্গে থাকবেন, এখনকার আমাদের সঙ্গে যেমন, ভবিষ্যতের আমাদের সঙ্গেও তেমনি। থাকবেন তাঁর 888sport live footballকর্মের ভেতর দিয়ে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.