নব্বইয়ের দশকে, মানে ১৯৯২ সাল থেকে, আমরা যখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়তে শুরু করলাম, বিভাগের তখন স্বর্ণযুগের মধ্যম পর্যায় বলা যায়। কারণ এর আগেরও খুবই উজ্জ্বল সময়ের গল্প চালু রয়েছে বিভাগজুড়ে এবং সেই সুবর্ণধারা তখনো প্রবাহিত। এত এত স্বনামধন্য শিক্ষক প্রতিদিন ক্লাস নিচ্ছেন, কলাভবনের দোতলায় ইংরেজি বিভাগের লম্বা করিডোর দিয়ে তাঁরা এ-ক্লাস থেকে সে-ক্লাসে হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছেন – বিভাগে সারাদিনই তাঁদের সরব, উজ্জ্বল উপস্থিতি। শিক্ষকদের রুমের বাইরে নামগুলো সব হীরামানিকের মতো ঝলমল করে! কবীর চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, খান সারওয়ার মুরশিদ, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ফকরুল আলম, খন্দকার আশরাফ হোসেন, নিয়াজ জামান, ফেরদৌস আজীম, কায়সার হামিদুল হক, কাশীনাথ রায়, শওকত হোসেন, রেবেকা হক, রেজাউর রহমান, আনোয়ারুল হক (টিভিতে বাংলা সংবাদ পড়তেন বহু বছর ধরে) – নামগুলো বলে যেন শেষ করা যায় না। তাঁরা শুধু বিভাগীয় শিক্ষকই নন, জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের উজ্জ্বল, সরব পদচারণা।
এতসব উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে বিভাগে অনন্য উচ্চতায় ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করে একজনের নাম, চল্লিশের মধ্য আগেই তিনি যেন পৌঁছে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়! শিক্ষার্থীরা তাঁর ক্লাসে সচরাচর কেউ অনুপস্থিত থাকে না। ছাত্রছাত্রী উপচে পড়ে তাঁর ক্লাসে। তিনি সবার প্রিয় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সংক্ষেপে সবার ঝগও স্যার। কি এক জাদুকরী ভঙ্গিতে তিনি পড়াতেন, বুঝি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা! আমরা তন্ময় হয়ে তাঁর কথা শুনে যেতাম, হারিয়ে যেতাম জীবনের দর্পণ, 888sport live footballের পাতায় পাতায়। আমাদের সেই মুগ্ধতার রেশ এ-জীবন জুড়ে রয়ে গেছে, রয়েও যাবে আজীবন।
প্রথম বর্ষে পড়াতেন টি এস এলিয়টের ‘দ্য লাভ সং অফ জে আলফ্রেড প্রুফ্রক’। তাঁর পড়ানোর ক্যারিশমায় বিভাগজুড়ে তখন আমাদের জীবনই যেন হয়ে উঠেছিল J Alfred Prufrock-ময়। বাতাসে বাতাসে ভেসে বেড়াত, Let us go then, you and I, When the evening is spread out against the sïn… আজো এমন প্রাসঙ্গিকতা তৈরি হলে এই লাইনগুলোই ভেসে ওঠে সবচেয়ে আগে চোখের সামনে। সেইসঙ্গে সামনে এসে দাঁড়ান মনজুর স্যার, মুখে সেই স্মিত হাসি!
পড়িয়েছেন ডব্লিউ বি ইয়েটসের যুগান্তকারী 888sport app download apk ‘সেকেন্ড কামিং’ ও 888sport app, ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ডক্টর ফস্টাস’, শেক্সপিয়রের সনেট – অবি888sport app download for androidীয় সব ব্যাখ্যাসহ। মাস্টার্সে দিয়েছেন উত্তর-আধুনিক 888sport live footballের পরশ, অ্যালবেয়ার কামুর ‘দ্য আউটসাইডার’, ফ্রানজ কাফকার ‘মেটামরফসিস’। আহা! সেসব দুর্দান্ত ক্লাস! আধুনিক জটিল মনস্তত্ত্বের মানুষের জীবন ধাঁধার অনায়াস আলোচনায় আমরা হয়েছি বাকরুদ্ধ। কে পড়াবে 888sport appsে তাঁর মতো করে আধুনিক, উত্তর-আধুনিক 888sport live football, নিংড়ে আনবে নন্দনতত্ত্বের নির্যাস! ইংরেজি 888sport live football পড়তে গিয়ে আমাদের সেই অল্প বয়সে এসব কঠিন বিষয় হয়ে উঠতো ‘জলবৎ তরলং’ – কারণ পড়াতেন এসএমআই! কত সহজ করে ফেলতেন সব। বোঝা না বোঝার দোলাচল কেটে যেত তাঁর সেই বিখ্যাত উইটি লেকচারে। ইংরেজিতে ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ হঠাৎ একটা বাংলা উইটি কমেন্ট। পুরো ক্লাস হেসে উঠতো, গুমোট, গম্ভীর সব বিষয় মুহূর্তে তুলার মতো হালকা।
১৯৯২-৯৭, প্রায় প্রতিদিন তাঁকে আমরা ক্লাসে পেয়েছি – সেসব শুধু তো ক্লাসই ছিল না, ছিল 888sport live footballের বাতাবরণে জীবনের গভীরতর জিজ্ঞাসার নানাবিধ উত্তর, যা ক্লাসের লেকচারের মধ্য দিয়ে ঢুকে গেছে মগজের কোষে কোষে। শুধু প্রাত্যহিকতাতেই নয়, বরং আমাদের মননে সেসব স্থায়িত্ব পেয়েছে সারাজীবনের জন্য। যারা সেসব মনে রাখার, রেখেছে, নিজেরাই ঋদ্ধ হয়েছে নিঃসন্দেহে। আজ মনে হয় মনজুর স্যারের ক্লাসগুলো ছিল এই জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন। কীভাবেই না আলো ছড়িয়েছেন চারদিকে, শুধু তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর জীবনে নয়, যারা তাঁকে জেনেছে, চিনেছে তাদের সকলের মধ্যে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার আমার শিক্ষক, এ-কথা ভেবে কী যে গর্ব বোধ হয়, তেমন আর কোনো কিছুতেই কি হয়!
বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসার পর বহু বছর স্যারের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। শিক্ষকতায় ঢুকিনি, তাই আমার
যে-কাজের ক্ষেত্র, উন্নয়ন সেক্টর, সেখানে স্যারের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ আর ছিল না, যদিও টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা, নানা লেখা, স্যারের সবকিছুতেই চোখ রেখেছি, সবসময়ই। দেখে গেছি ক্রমশ তাঁর আরো বেশি দ্যুতি ছড়ানো জীবন।
ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির করিডোরে বহু বছর পরে আবার মনজুর স্যারের সঙ্গে হঠাৎ সামনাসামনি দেখা ২০২০ সালে। আমার কন্যা লিথীকে নিয়ে গিয়েছিলাম ইউল্যাবে ভর্তি সংক্রান্ত কাজে। এত বছর পর আমাকে চেনার কোনো কারণ নেই স্যারের, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়-পরবর্তী জীবনে কোনো কারণেই স্যারের কাছে কখনো আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তাই সালাম দিয়ে নাম ও কোন ব্যাচে ছিলাম সেটা বললাম। কেন এসেছি সেটা বলতে গিয়ে স্যারের সঙ্গে লিথীরও পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম, মেয়েও ইংরেজি 888sport live football নিয়ে পড়ছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল স্কলারশিপ নিয়ে। এক সেমিস্টার ক্লাসও করে ফেলেছে; কিন্তু এখন পরিবর্তন করতে চাইছে। প্রথম সারির সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের ব্যবচ্ছেদ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে ইউল্যাবেই পড়বে। স্যার শুনে বললেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমার মনে হয় ওর ভালো লাগবে এখানে, আর আমি তো আছি, আমাকে হয়তো দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই পাবে।’
আগেই খোঁজখবর করতে গিয়ে জেনেছিলাম যে, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যার, ফকরুল আলম স্যার এবং কায়সার হামিদুল হক স্যার ইউল্যাবের সঙ্গে যুক্ত এবং পড়াচ্ছেনও। সে-খবর জেনে আমারও সব দোলাচল দূর হয়ে গিয়েছিল মেয়ের হঠাৎ ইউল্যাবে পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে। যেখানে আমাদের এই তিনজন তারকা স্যার রয়েছেন সে-জায়গা নিয়ে আমার আর কোনো সংশয় ছিল না। বরং মনে হয়েছিল, ইংরেজি 888sport live football নিয়ে পড়ে যদি এইসব কিংবদন্তি শিক্ষকের ক্লাসই না করতে পারে, তাহলে তো পড়াটাই অনেকটা অসম্পূর্ণ রয়ে যায়, বিশেষ করে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের ক্লাস করতে পারাটা কত বড় সৌভাগ্যের বিষয়! মেয়েকে প্রায়ই গল্প করে বলি – আমাদের সময়ের 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ আর অসাধারণ সব শিক্ষকের কথা। 888sport live footballের প্রতি তার অনুরাগ দেখে মাঝে মধ্যে বলেছি, যদি তোমাকে আমাদের সময়টা আর সেই সব অতুলনীয় শিক্ষকদের ক্লাসগুলো উপহার দিতে পারতাম!
তারপরই আমাকে স্যারের হঠাৎ প্রশ্ন, ‘জীবনটা কেমন চলছে তানিয়া?’ বলার ধরনের গভীরতায় আমি ভেতরে ভেতরে থতমত খেয়ে যাই – মনজুর স্যার! মনজুর স্যার আমাকে এমনভাবে জিজ্ঞাসা করছেন! ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সেই প্রথম বর্ষের মতো গলা যেন শুকিয়ে এলো, স্যার যদি হঠাৎ কিছু জিজ্ঞাসা করে বসে কী বলবো – এমন ভয় ছিল যখন। একটু সামলে নিয়ে বলি, স্যার, এই তো, চলছে। আবার হেসে জিজ্ঞাসা, ‘কেমন চলছে?’ আমার হাসি ছাড়া আর উপায় থাকে না, এই মহীরুহের সামনে কি বলতে কী বলি! স্যারের মতো ব্যস্ত একজন মানুষ বেশ খানিকক্ষণ সময় নিয়ে সেদিন আমাদের মা-মেয়ের সঙ্গে গল্প করলেন এমন সহজভাবে যেন প্রায়ই তাঁর সঙ্গে আমাদের দেখা হয়! পরে কন্যা তার লেখাপড়া ও নানা কাজে সফলতার আলো ছড়িয়েছে সেখানে পড়াকালীন সময়ে। ইউল্যাবে পড়ার সময়ে লিথীর নানা অনুষ্ঠানে, নানা সফলতার 888sport app download bdে স্যারকে পাশে দেখে আমার মুখের হাসি আরো অনেক চওড়া হয়েছে খুশিতে! লিথীকে তিনি আলাদাভাবেই চিনেছেন 888sport live footballের উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় এক ছাত্রী হিসেবে – সেটা যে আমার জন্য কী গর্বের এক বিষয় তা বলে বোঝানো কঠিন।
বছর তিনেক আগে একটি পাঁচতারকা হোটেলে আমাদের ইংরেজি বিভাগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে স্যারের সঙ্গে আবার দেখা, সালাম দিয়ে পাশে দাঁড়াতেই আরেকজনকে বললেন, ‘এই যে লিথীর মা! দেখো, মা-মেয়ে দুজনেই আমার ছাত্রী, এমন ভাগ্য কজনের হয়।’ স্যার তো এমনভাবেই প্রবল রসবোধ নিয়ে কথা বলতেন আর যা শুনে আমি একইসঙ্গে কিছুটা লজ্জা আর অনেক অনেক খুশিতে যেন জ্বলজ্বল করতে লাগলাম।
এই অনুষ্ঠানেই স্যারের সঙ্গে আমাদের কত 888sport sign up bonus তৈরি হলো নতুন করে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ডিজিটাল বোর্ডে একের পর এক সøাইড শোতে চলছিল পুরনো দিনের ছবির প্রদর্শনী। যখনই আমাদের ছবি আসে, দেখা গেছে আনন্দে ফেটে পড়ছিলাম। মনজুর স্যারের সঙ্গেও ছিল বেশ কিছু ছবি। সেসব দেখতে দেখতে আমাদের খুশির অন্ত ছিল না। বিভাগীয় পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানগুলোতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য ফটোগ্রাফার পিয়ারু ভাই ছবি তোলেন সবসময়। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবার ফেরার পথে সেসব ছবির ডিসপ্লে থাকে, যার যার ছবি খুঁজে নিয়ে নিতে পারে সবাই ওইদিনের 888sport sign up bonusর স্তূপ থেকে 888sport sign up bonusস্বরূপ। আমরাও যার যার ছবি সেখান থেকে পছন্দমতো তুলে নিচ্ছি, হঠাৎ চোখে পড়ল মনজুর স্যারের সঙ্গে আমাদের বন্ধুদের কথোপকথনের সময় তোলা বেশকিছু ছবি। – রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে গেল কয়েক বন্ধুর মধ্যে, কে কোনটা নেবে! এসএমআইয়ের সঙ্গে তোলা ছবি সকলেই নিজের কাছে রাখতে চায়। কথা বলার ফাঁকে স্যারের সঙ্গে আমাদের আলাদা আলাদা ছবিও সুযোগ বুঝে পিয়ারু ভাই তুলে ফেলেছেন, সেই ছবি খুঁজে পেয়ে মনে হলো, নিজের জীবনের অন্যতম সেরা ছবিটা হাতে পেয়েছি। মনজুর স্যারের সঙ্গে আলাদা করে একটা ছবি – যত্ন করে তোলা রইলো। ওইদিন আমরা স্যারের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি ছবি তুলেছিলাম, আর কখনো কোনো নতুন ছবি তোলা হবে না বলেই কি!
কত মানুষ কত ভাবেই তাঁর সঙ্গে যার যেটুকু 888sport sign up bonus সেসব রোমন্থন করে চলেছেন, আমিও তাদের একজন। স্যারের সঙ্গে 888sport sign up bonusগুলো নিজেদের জীবনেরই এক বড় প্রাপ্তি আর ভীষণ গর্বের এক বিষয়। আমাদের কী সৌভাগ্য, এমন কয়েকজন শিক্ষক পেয়েছিলাম, যাঁরা জীবনব্যাপী তাঁদের উজ্জ্বল জীবনবোধ দিয়ে আমাদের মানস গঠনে কতটা যে-ভূমিকা পালন করেছেন তা হয়তো তাঁরা নিজেরাও জানেন না। এমন কত সহস্র মানুষের জীবনেই যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে সমাজকে সমৃদ্ধ করেছেন, আজকে আমাদের মধ্যে তাঁর শারীরিক অনুপস্থিতিতে বারবার সে-কথাই মনে হচ্ছে। কিছু মানুষের সঙ্গে যেন আমরা কতকাল ধরে একসঙ্গে পথ চলি – সবসময় দেখা না হলেও জানি, তিনি আছেন। কেউ তবু যখন মনুষ্যশরীর ত্যাগ করে চলে যান – তাঁকে যে আর কখনো জীবনে দেখতে পাব না – সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের তেমন অনুপস্থিতির শূন্যতা সহ্য করা অসহ্য মনে হয়।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.