আমাদের বেড়ে ওঠার কাল

আহমাদ মোস্তফা কামাল
শিরোনামে ‘আমাদের’ লিখেছি, ‘আমার’ নয়! বেড়ে ওঠার সময়টিকে একবার ফিরে দেখতে চাই এই লেখায়। তবে সেটি শুধু নিজের নয়, একটি প্রজন্মের বেড়ে ওঠা। কেমন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা বড় হয়ে উঠেছি? কেমন কেটেছে আমাদের সোনালি তারুণ্য? আমরা, মানে, মুক্তিযুদ্ধের দু-চার বছর আগে-পরে জন্ম নেওয়া প্রজন্মটি? কেমন ছিল আমাদের শৈশব-কৈশোর? 888sport app download apkর মতো করে সম্ভবত বলা যায়, আমরা হচ্ছি আশির দশকে বেড়ে ওঠা অসুখী কিশোর। ওই বয়সেই আমাদের দেখতে হয়েছে, সময়টি বড়ো বদ্ধ, যেন কিছুতেই আর এগোনো যাচ্ছে না সামনে। মনে আছে, কৈশোরের কোনো এক সুন্দর সকালে ঘুম ভেঙেই শুনেছিলাম – এই দুর্ভাগ্যপীড়িত জাতিটিকে উদ্ধার করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে এক মহামানব নাজেল হয়েছেন। নাজেল হয়েই তিনি আদেশ জারি করেছেন – ‘তাঁর’ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের কাজকর্মের কোনো সমালোচনা করা যাবে না, করলে এই শাস্তি ওই শাস্তি ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি জমায়েতও করা যাবে না, করলে দেখামাত্র গুলি করা হবে! সামরিক শাসনের নামে এমনই এক বীভৎস, ভয়ংকর, পৈশাচিক শাসন চেপে বসেছিল সারা জাতির বুকের ওপর। এমনিতেই আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোটি নানারকম বাধা-নিষেধের বেড়াজালে বন্দি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাও কেবল নিষেধই করে যায়। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না, এটা বলা যাবে না,  ওটা বলা যাবে না – কী যে করা যাবে, আর কী যে বলা যাবে সেটি আর বলে না কেউ। নাগরিক জীবনে এই বিধিনিষেধ আরো ভয়ংকর – শৈশব-কৈশোর এখানে বন্দি হয়ে থাকে চার দেয়ালের মধ্যে, কোনো আকাশ নেই চোখ মেলে তাকানোর মতো, কোনো মাঠ নেই ছুটে বেড়ানোর মতো। বাসার সামনে গলিতে? না, তোমার বড় হয়ে ওঠার চেয়ে প্রতিবেশীর জানালার কাচ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ – খেলতে গিয়ে যদি সেটা ভেঙে ফেলো! তাহলে বাসার একচিলতে বারান্দায় বা করিডোরে? না, ওখানে দৌড়াদৌড়ি করো না – নিচতলা থেকে, পাশের ফ্ল্যাট থেকে কমপ্লেইন আসবে – তাদের শান্তি বিঘিœত করো না। ‘তাহলে কী করবো?’ গল্পের সেই বুড়োর মতো উত্তর দেয় সবাই – ‘কী’ তো করাই যাবে না! তো আমাদের কৈশোরে এইসব নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা। রাষ্ট্রযন্ত্রই বলে দিচ্ছিল কী কী বলা যাবে না, কী কী করা যাবে না! ওই যে – ‘তঁাঁর’ কোনো সমালোচনা করা যাবে না, একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি জমায়েতও করা যাবে না, মিছিল-মিটিং করা যাবে না, ‘তঁাঁর’ বিরুদ্ধে কিছু লেখা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি –  কিন্তু কী কী বলা বা করা যাবে, তা আর বলেনি কোনোদিন। মাঝে মাঝে সো-কলড গণতন্ত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করলেও ওই মহামানবের কল্যাণে আমাদের কৈশোর কেটেছে এমনই সব বিচিত্র নিষেধাজ্ঞায়। শুধু তাই নয়, ওই পবিত্র বয়সেই আমরা দেখেছিলাম – সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে অবিশ্বাস-দ্বন্দ্ব-সন্দেহ। কেউ কারো ওপরে আস্থা রাখতে পারছে না, কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না, দেয়ালেরও কান আছে  ভেবে কথা বলছে ফিসফিসিয়ে। দুজন মানুষের ফিসফিসানি কথা প্রেমময় হতে পারে, কিন্তু আমাদের সময়টি ছিল এমন যে, ওটারও অর্থ পালটে গিয়েছিল। দুজন ফিসফিস করছে মানে হচ্ছে, তাদের মধ্যে তৃতীয় কেউ শুনে ফেলার ভয় বা শঙ্কা কাজ করছে। তা তৃতীয় কেউ শুনে ফেললে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো – তাকে যে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না, যদি সে বলে দেয় কাউকে, যদি নেমে আসে পাশবিক নিপীড়ন! সামরিক শাসনের প্রভাব শুধু রাষ্ট্রীয় জীবনেই নয়, ব্যক্তিজীবনেও এরকমভাবে পড়েছিল। রাষ্ট্রের অবস্থাই বা কেমন ছিল? আমরা দেখেছি আলোর ইশারাবিহীন অতল অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে স্বদেশ, কোথাও কোনো সম্ভাবনা থাকছে না, চারদিকে কেবল গভীর অন্ধকার, কেবল অনিশ্চয়তা, কেবল হতাশা। দেখেছি, প্রতিবাদী মিছিলে উঠে যাচ্ছে সামরিক ট্রাক, দেখেছি প্রাচীন রাজনীতিবিদরা তাদের দীর্ঘদিনের ত্যাগ-তিতিক্ষা বিসর্জন দিয়ে লুটিয়ে পড়ছেন সামরিক প্রভুর কদর্য পায়ে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রকম্পিত হচ্ছে অস্ত্রের ঝনঝনানিতে, ছাত্রনেতাদের চারপাশে উড়ছে টাকা আর ক্ষমতা, আর তার লোভে পড়ে আজকের বিপ্লবী কালকেই হয়ে যাচ্ছে প্রভুর চামচা, টাকা এবং টাকাই হয়ে উঠছে সবকিছুর একমাত্র নিয়ামক শক্তি, কোনো নীতিবোধ বা মূল্যবোধ আর চালকের আসনে থাকছে না, রাষ্ট্রই উৎসাহিত করছে অসৎ হতে, আদর্শহীন হতে, নীতিহীন হতে, তাই রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি অফিসের পিয়ন-দারোয়ান পর্যন্ত অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করাটাকে প্রায় বৈধ কাজ বলে ধরে নিয়েছে, আর এভাবেই দুর্নীতিকে দেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যখন-তখন, লেখক-888sport live chatী-সংবাদকর্মীরা নিগৃহীত হচ্ছেন অহরহ, আর এসব কিছুর মধ্যে দিয়ে ধূমায়িত হচ্ছে ক্ষোভ। যে-বয়সে তরুণদের মুখে থাকবে প্রেমের মধুর বাক্য, সে-বয়সে নিজেকে জাগিয়ে তুলতে হচ্ছে ক্ষোভ ও বিদ্রোহের তীব্র-তীক্ষè বাক্য দিয়ে। শুধু জাতীয় জীবনেই নয়, আন্তর্জাতিক বিশ্বেও তখন ঘটছে এক বিপুল বিপর্যয়। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোকে দখল করে নিচ্ছে বীভৎস পুঁজিবাদ। একসময় তরুণদের এক বিরাট অংশ ওইসব রাষ্ট্রের আদলে নিজের দেশেও একটি বিপ্লবী পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতো (সেই স্বপ্ন ভুল ছিল কি শুদ্ধ ছিল তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, তরুণদের সামনে ওরকম একটি স্বপ্ন ছিল, ছিল আদর্শ) – আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ে সেই স্বপ্নও ভেঙে যেতে থাকে, পায়ের নিচ থেকে সরে যেতে থাকে দাঁড়ানোর মাটি।
এমনই এক লক্ষ্যহীন-আদর্শহীন-নীতিহীন-স্বপ্নবিহীন সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি। কোথাও ছিল না কিছু আশাবাদী হওয়ার মতো, কোথাও এমন কিছু ছিল না, যাকে অবলম্বন করে একজন তরুণ জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলার স্বপ্ন দেখতে পারে। এমন একটি সময়ের মধ্যে দিয়ে যাদের কৈশোর ও তারুণ্য কাটে, তারা ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, কোথাও কোনোকিছুর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয় না। আমাদের সময়টি আসলে সম্পর্কহীনতার সময়। এই সময়ের মানুষগুলো কোথাও সম্পর্কিত নয়, আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে থাকে অবিশ্বাস, আমাদের প্রেমগুলো তুচ্ছ কারণে ভেঙে যায় সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে, এমনকি পরিবার থেকেও, আমরা একটি নিরাপদ দূরত্ব রচনা করে চলি। যেন পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি কার্যকর ভাষা নির্মাণের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি আমরা। কী করে প্রেম হবে আমাদের, হবে বন্ধুত্ব? প্রেম তো মানুষের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্তের নাম, আমাদের জীবনে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত কোথায়? সবই তো অন্ধকার। যে- বয়সে মানুষের সর্বোচ্চ মানসিক বিকাশ ঘটে, সে-বয়সটি যদি কাটে এমন একটি আবদ্ধ সময়ে, আবদ্ধ পরিবেশে তাহলে সে হয়ে ওঠে অসম্পূূর্ণ মানুষ। আমাদের সময়টি তাই অসম্পূর্ণ মানুষে ভরতি। আমাদের সময়টি, আগেই বলেছি, তাই স্বপ্নহীনতা ও সম্পর্কহীনতার সময়।
এটি দৃশ্যের একটি দিক। সময়ের ডাকে সাড়া দিতে যারা দ্বিধাবোধ করে, যারা গুটিয়ে থাকে নিজের ভেতরে, তাদের ব্যক্তিগত জীবনে এরকম গভীর বিচ্ছিন্নতা ঘনিয়ে আসা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু অন্য একটি দিকও আছে। সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনটি ক্রমশ বেগবান হয়ে ওঠার ফলে আমরা শুনতে পেয়েছিলাম সময়ের ডাক। দল-মত ভুলে, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে, সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল আমাদের সময়ের তরুণরা। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া, ভালো লাগা না-লাগা, প্রেম-প্রণয়-বন্ধুত্ব ইত্যাদির চেয়ে বড়ো হয়ে উঠেছিল ‘বিশ্ববেহায়া’র কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার দায়। এ-কাজটি একা একা করা যায় না, করতে হয় সম্মিলিতভাবেই। পায়ে পা মিলিয়ে চলা, হাতে হাত জড়িয়ে চলা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার কোনো বিকল্প থাকে না। এই অর্থে আমাদের সময়টি যেমন ব্যক্তিগত অপূর্ণতার, তেমনই সম্মিলিত অর্জনেরও। একটু পরই এ-বিষয়ে  বিস্তারিত বলবো।
তার আগে বলে নেওয়া দরকার, কেন এমন একটি সময়কে আঁকার তাগিদ অনুভব করেছি। একজন সৃজনশীল মানুষ যে-সময়টিতে বেড়ে ওঠেন, যে-পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কৈশোর ও তারুণ্য কাটে – তাঁর সারাজীবনের কাজে সে-সময় ও পরিপ্রেক্ষিতের অভিঘাত পড়ে। কৈশোরের নানা অনুষঙ্গ, সেই সময়, প্রেক্ষাপট আর তার পরিপ্রেক্ষিত কবির কাছে 888sport app download apk, গল্পকারের কাছে গল্প, live chat 888sportকারের কাছে live chat 888sport, সংগীতকারের কাছে সংগীত, চিত্রকরের কাছে ছবি হয়ে ধরা দেয়। সব মহান 888sport live chatীই আসলে তাঁদের 888sport live chatকর্মে সমকালকেই আঁকেন, তার কোনো কোনোটি মহাকালে গৃহীত হয় মাত্র – পেরিয়ে যায় সমকালের সীমানা। কিন্তু এ কি শুধু সৃজনশীল-সৃষ্টিশীল মানুষের জন্যই সত্যি, যে-কোনো মানুষের জন্যই কি শৈশব-কৈশোর একটি দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়? যে-কোনো মানুষের মানসগঠনটি কি তৈরি হয়ে যায় না সেই ছোটবেলাতেই? যায়। যায় বলেই বেড়ে ওঠার সময়টিকে একটু চিনে নেওয়ার চেষ্টা করা দরকার।

দুই
এই সময়টিকে ফিরে দেখতে হলে কথা বলতে হবে অনেক বিষয় নিয়ে। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, এবং যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে আমি এই সময়ে লেখালেখির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছি। তাই সমকালীন লেখালেখি এবং তার আনুষঙ্গিক প্রসঙ্গ নিয়েও। কিন্তু আমি শুরু করতে চাই এই সময়ে ঘটে যাওয়া দুটো রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধ দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি, সত্তরের দশকের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিটিও আমরা অনুভব করে উঠতে পারিনি বয়সের কারণেই। কারো কারো হয়তো আবছাভাবে ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষের দু-একটা টুকরো 888sport sign up bonus মনে থাকতে পারে, তা-ও কেবল পারিবারিক টানাপড়েনের কথাই – সারাদেশে কী ঘটেছিল সেগুলো নয়; কারো হয়তো মনে পড়বে স্বাধীনতার প্রধান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা – যদিও সেটা কেবলই খবর আকারে এসেছিল আমাদের কাছে, এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার মতো বোধ-বুদ্ধি তখনো হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যেহেতু আশির দশকে আমাদের কৈশোর কেটেছে এবং তারুণ্যে উপনীত হয়েছি, তাই এ-সময়ের ঘটনাপ্রবাহ বেশ ভালোভাবেই মনে থাকার কথা। মনে দাগ কাটার মতো বেশ কিছু ঘটনা ঘটে এই দশকের শুরুতেই, এবং তার ধারাবাহিকতা চলতে থাকে দশকজুড়েই। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড, ’৮১-র রাষ্ট্রপতি নির্বাচন (এখন মনে হয়, এই নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। ড. কামাল হোসেনকে পরাজিত করে বিচারপতি সাত্তার নির্বাচিত হয়েছিলেন, এ-কথা তো সবারই জানা। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, জাসদ-সমর্থিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিলকে টপকে হাফেজ্জি হুজুরের তৃতীয় স্থান লাভ। একটি ইসলামপন্থী দলের প্রার্থী হয়ে তিনি কীভাবে তৃতীয় হলেন, তা-ও মেজর জলিলের মতো একজন বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদকে টপকে, যারা তাকে ভোট দিয়েছিলেন তারা বিচারপতি সাত্তারের বদলে তাকে বেছে নিয়েছিলেন কেন, এগুলো ভাবার মতো বিষয়। এ-কথা ভাবা কঠিন যে, তার ভোটাররা সকলেই তার অনুসারী ছিল, আমার মনে হয় এই সময় থেকেই ইসলামপন্থীরা নিজস্ব অবস্থান নিতে শুরু করে – আর হাফেজ্জি হুজুরের এই ফলাফল সেটিই বুঝিয়ে দেয়।), ’৮২-তে এরশাদের ক্ষমতা দখল, ’৮৩-র ১৪ ফেব্র“য়ারি ছাত্রদের মিছিলে ট্রাক উঠিয়ে দেওয়া এবং কয়েকজনের শাহাদতবরণ (হায়, এই দিনটিতে এখন তরুণরা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ উদযাপন করে! শফিক রেহমানরা নতুন প্রজন্মকে ১৪ ফেব্র“য়ারির মর্মন্তুদ ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন!), ’৮৬-র নির্বাচনে আকস্মিকভাবে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ (এর কয়েকদিন আগেই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এই নির্বাচনে যারা অংশ নেবে  তারা জাতীয় বেইমান! এরকম কঠিন অবস্থান পরিবর্তন করে তিনি সেদিন নির্বাচন করেছিলেন কেন, সেটি এখনো পর্যন্ত রহস্যময় রয়ে গেছে।), সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসনকে জায়েজ করে নেওয়া, কিংবা আবার সংশোধন করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা ইত্যাদি এই সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে মনে পড়ে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী-লাগাতার আন্দোলনের কথা। সে-আন্দোলনে  জোয়ার-ভাটা ছিল; কিন্তু একেবারে থেমে যায়নি কখনো এবং তরুণরা আপস করেনি কোনোভাবেই।
আমি এই সময়ের তরুণদের দুটো সাফল্যকে বড়ো করে দেখি। প্রথমটি হলো, আপসহীন অবস্থান নিয়ে একটি সফল গণআন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো, আরেকটি হলো, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মতো একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক-দালালবিরোধী একটি গুরুত্বপূর্ণ-অর্থপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তোলা। যে-কোনো আন্দোলনেরই, তা যত ক্ষুদ্রই হোক, এমনকি সেটি যদি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থও হয় তবু, একটা তাৎপর্য থাকে, থাকে অর্জন। এই দুটো আন্দোলনেরও তেমন কিছু গভীর তাৎপর্য আছে।
এ-কথা অনস্বীকার্য যে, এরশাদের পতন ঘটেছিল মূলত তাঁর বিরুদ্ধে তরুণদের অনমনীয় অবস্থান গ্রহণের কারণেই। আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-অবিশ্বাস-সন্দেহ-ভুল বোঝাবুঝি এসব লেগেই ছিল (এমনকি আন্দোলনের দুই প্রধান নেত্রীকে একবারের জন্যও এক মঞ্চে আনা যায়নি হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও), কে যে কখন সামরিক প্রভুর পদতলে ভূলুণ্ঠিত হয়ে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করে ফেলে তার কোনো ঠিকঠিকানা ছিল না এবং এ-ধরনের ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে, কিন্তু এসব ঘটনায় তরুণরা কখনো হতোদ্যম হয়ে পড়েনি। আমি সেসব তরুণের কথা বলছি যারা নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল বা এর কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না অথচ আন্দোলনে তাদের ছিল নিয়মিত অংশগ্রহণ। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের বিপুল অবদানের কথাও অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করা উচিত। তারাও যে-কোনো মূল্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল । কিন্তু আমার মনে হয়, তারা এটা করতে বাধ্য হচ্ছিল মূলত নির্দলীয় তরুণদের প্রত্যাশার চাপেই, ব্যাপারটা আর তাদের দলীয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না, থাকলে মূল দলগুলোর অন্তর্বিরোধের ছাপ পড়তোই। যাহোক, আমার বলার কথাটি হচ্ছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তরুণরা ছাড়াও মূলত নির্দলীয় তরুণদের প্রবল অংশগ্রহণই নব্বইয়ের আন্দোলনকে সফল করে তোলে। আর এখানেই এই গণআন্দোলনের বিশেষত্ব। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তরুণরা এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং জাতির বুকের ওপর চেপে বসা যে-ব্যক্তিটিকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা ছিল আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব ব্যাপার, সেটিকেই এই তরুণরা সম্ভবপর করে তুলেছিল। ’৭১-এর পর ’৯০-এর আগ পর্যন্ত অন্য কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে এমন স্বতঃস্ফূর্ত তুমুল অংশগ্রহণ আর দেখা যায়নি। যদিও একাত্তরের সঙ্গে এ-আন্দোলনের কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। একাত্তরে ছিল আপামর জনতার অংশগ্রহণ এবং তাদের সামনে ছিল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন, এবং বুঝে হোক না বুঝে হোক তারা যে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতো তা হওয়ার কথা ছিল উদার, মানবিক, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, যার অর্থনীতি পরিচালিত হবে সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। অন্যদিকে নব্বইয়ের আন্দোলন ছিল মূলত শহুরে মধ্যবিত্তদের আন্দোলন এবং এর কোনো সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল না কোনো স্বপ্নও, এরশাদের পতন হলে কোন ধরনের সরকার ব্যবস্থা আমাদের কাম্য তা নিয়েও ছিল না কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের দাবিতে এরকম বিপুল আন্দোলন গড়ে ওঠার কথা নয়, যদি না সেই সরকারের কাছে প্রত্যাশাটি পরিষ্কারভাবে সবার সামনে উপস্থিত থাকে। ফলে সত্যি সত্যি যখন স্বৈরাচারী-সামরিক সরকারের পতন ঘটলো তখন একটি সুস্থ প্রগতিশীল মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার বিষয়টি চলে গেল পেছনে, একটি ‘সুষ্ঠু’, ‘অবাধ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানই ধ্যান-জ্ঞান হয়ে উঠলো। দলীয় তরুণরা ঝাঁপিয়ে পড়লো নির্বাচনযজ্ঞে, আর নির্দলীয় তরুণরা সুবোধ বালকের মতো ঘরে চলে গেল। তাদের এই ঘরবন্দি হয়ে পড়াটাই পরবর্তীকালের নির্বাচিত ‘গণতান্ত্রিক’ সরকারগুলোকে খেয়ালখুশি মাফিক রাষ্ট্র পরিচালনার সাহস জুগিয়েছে। অবশ্য স্বীকার করে নেওয়া উচিত যে, অনেক নেতিবাচকতা সত্ত্বেও কিংবা অনেক স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করা সত্ত্বেও নব্বই-পরবর্তী সরকারগুলো এরশাদের মতো বীভৎস পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করেননি। এরশাদের শাসনামলের কথা যাদের মনে আছে, তারা সম্ভবত আমার এ-কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন। আমার এই বক্তব্যের পক্ষে একটা ছোট উদাহরণ দেওয়া যায়। নব্বইয়ের পর থেকে এই সময় পর্যন্ত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো (বিটিভি ছাড়া) যেটুকু স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে, এরশাদের শাসনামলে তার কণামাত্রও ভোগ করতো না। প্রতি রাতে খবর সেন্সর করার জন্য সরকারের তরফ থেকে ফোন আসা এবং অহরহ পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া ছিল তখন এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এখন অন্তত মিডিয়াগুলোকে সে-যন্ত্রণা পোহাতে হয় না। অবশ্য এখনো যে সেন্সরশিপের ঘটনা ঘটে না তা নয়, কিন্তু তা যতটা না সরকারি নির্দেশে, তার চেয়ে বেশি সেল্ফ-সেন্সরশিপের কারণে। ওই সময় সরকারের মন জুগিয়ে চলতে চলতে মিডিয়াকর্মীদের মানসিক গঠনটাই এমন হয়ে গেছে যে, সরকার বা সেনাবাহিনী রুষ্ট হতে পারে এমন কোনো সংবাদ পরিবেশনের আগে মিডিয়াগুলো বিশেষ ‘সাবধানতা’ অবলম্বন করে। মিডিয়াগুলোও যেহেতু ধোয়া তুলসীপাতা নয়, নানাবিধ অপকর্মের সঙ্গে এদেরও যেহেতু যোগসূত্র আছে, তাই ক্ষমতাসীনদের তারা সহসা রাগাতে চায় না। বলা বাহুল্য, এখনো, এই ‘গণতান্ত্রিক’ সময়েও সংবাদকর্মীদের নানাভাবে নিগৃহীত হতে হচ্ছে। এটা ঘটছে ক্ষমতাসীনদের অসহনশীলতার জন্য। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনা করতে হলে যে-সহনশীলতার প্রয়োজন হয়, এদের বেশিরভাগেরই তা নেই। থাকবে কী করে? এদের শৈশব-কৈশোর-যৌবনও তো কেটেছে সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে। গণতন্ত্র কী জিনিস এরা তো চোখেই দেখেনি। বয়সে বৃদ্ধ হলেও গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে এরা হচ্ছে প্রথম প্রজন্ম। এদের কাছে তাই বিশুদ্ধ গণতন্ত্র আশা করাও হাস্যকর। আর এই অসহিষ্ণুতার জন্যই তাদের সমালোচনা করে কোনো রিপোর্ট হলে এরা দৃষ্টিকটুভাবে ক্ষিপ্ত হন, সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের ওপর চোটপাট করেন, এমনকি নির্যাতনটি কখনো কখনো শারীরিক পর্যায়েও পৌঁছায়।
যাহোক, আগেই বলেছি, নব্বইয়ের আন্দোলনের কোনো সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল না, ছিল না তেমন কোনো স্বপ্ন, যেমন ছিল মুক্তিযুদ্ধের, তাই স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে যে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় জর্জরিত হয়েছিল দেশের মানুষ, নব্বইয়ের পর সেটা ঘটেনি। আমার ধারণা, যে-তরুণরা এ-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল বা একে সমর্থন করেছিল তারা জানতো এরশাদের পতন হলেও ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি এবং এ দুদলের কাছেই যে বিশেষ কিছু আশা করার নেই এটাও তাদের অজানা ছিল না। যে-দলগুলো কখনোই গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে দিয়ে যায়নি, তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের গণতান্ত্রিক আচরণই বা আশা করা যায়? যাদের কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক মেনিফেস্টো নেই, তারা দেশের অর্থনীতিতে কী-ই বা মৌলিক পরিবর্তন ঘটাবে? এমনকি কোনো বিষয়েই এদের কোনো কমিটমেন্ট লক্ষ করা যায়নি। অতএব নব্বইয়ের আন্দোলনের ফল হিসেবে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন ঘটবে, এই পরিবর্তনটুকু ছাড়া আর কোনো মৌলিক পরিবর্তন বিশেষভাবে দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে না। তবু এ আন্দোলনের একটি বিশেষ অর্জন আছে বলে মনে করি আমি। পাকিস্তান আমল থেকে যে সামরিক শাসন হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই দেশের মানুষের ললাটলিখন, নব্বইয়ের পর সে-সম্ভাবনা সুদূরপরাহত হয়ে গেছে। আমার ধারণা, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের চিন্তাভাবনায়ও পরিবর্তন এসেছে, আগে তাদের অন্তত একটি অংশ ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর থাকতো, এখন সেই প্রবণতা কমেছে বলে মনে হচ্ছে। মানুষও আগে আতঙ্কে ভুগতো যে, কোনো এক সুন্দর সকালে তারা শুনবে, কোনো এক মহামানব জাতিকে উদ্ধার করার মহান ব্রত নিয়ে নাজিল হয়েছেন, এখন সেই আতঙ্কও বেশ অনেকটাই কেটে গেছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে এই প্রথম আমরা একটানা ২০ বছর সামরিক শাসনের বাইরে আছি (মাঝখানের দুবছর সামরিক সমর্থিত সুশীল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন ছাড়া), আরো বছর বিশেক এভাবে কাটাতে পারলে এদেশে আর কোনোদিন ওই পাশবিক শাসন আর ফিরে আসবে না বলে বিশ্বাস করি আমি, গণতন্ত্রও ততদিনে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
একাত্তরের ঘাতক-দালালবিরোধী আন্দোলনটিও ছিল নব্বইয়ের দশকের আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ আন্দোলন, যদিও কোনো সাফল্য পাওয়ার আগেই এই তুমুল আন্দোলনটি কতিপয় রাজনৈতিক দলের হঠকারিতার জন্য হিমাগারে চলে যায়। সাফল্য না পেলেও এই আন্দোলনে যে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তরুণরা পথে নেমে এসেছিল সে-কথা অনস্বীকার্য। এমনকি ঘাতকদের প্রত্যক্ষ সহমর্মী ও আশ্রয়দাতা দল বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অনেক কর্মীকেও এ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখেছি, যদিও দলীয়ভাবে তারা এর পক্ষে ছিল না। আর কর্মীদের এই অংশগ্রহণে ছাত্রনেতাদের সায় ছিল না সেটাও বলা যায় না, কারণ ওই সময় ছাত্রদলের একজন প্রভাবশালী ডাকসাইটে নেতা, একইসঙ্গে যিনি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন, অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন – সাতদিনের মধ্যে গোলাম আযমকে দেশছাড়া করা হবে! ছাত্রদলের একজন নেতার মুখে এ-ধরনের হুমকি বেমানান শোনায় বইকি, যেহেতু তাদেরই আশ্রয়-প্রশ্রয়ে-আদরে-আহ্লাদে ঘাতক-দালালরা এতদূর পর্যন্ত এসেছে এবং ক্ষমতার অংশীদারও হয়েছে, এমনকি ইসলামি জঙ্গিবাদও বিস্তারলাভ করেছে তাদেরই জন্য। কিন্তু ওই সময় হুমকিটিকে অস্বাভাবিক মনে হয়নি, বরং মনে হয়েছিল, যে-দলই করুন না কেন, তিনি তো তরুণদেরই প্রতিনিধিত্ব করেন, তরুণদের আবেগকে তিনি অস্বীকার করবেন কীভাবে? যাহোক, কেন এই আন্দোলন বিপুল আকার ধারণ করার পরও সাফল্যের মুখ দেখেনি, সে-কথা সবারই কমবেশি জানা। ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি’র লাইসেন্সধারী দলটি এই আন্দোলনের স্পিরিট ও সাফল্যকে পকেটে পুরে, আন্দোলনকে দলীয় রূপ দান করে, নিজেরাই ঘাতক-দালালদের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমেছিল। ওই দলের ধামাধরা বুদ্ধিজীবীরা ঘটনাটিকে ‘ক্ষমাসুন্দর’ দৃষ্টিতে দেখলেও, এবং একে একটি রাজনৈতিক ‘কৌশল’ বলে চালানোর চেষ্টা করলেও এই কৌশলে শেষ পর্যন্ত লাভবান হয়েছে ঘাতকরাই। ’৭৫-এর পর থেকেই ঘাতকরা সংগঠিত হতে শুরু করে, সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ মদদে জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তারা মাঠেও নামে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়, কিন্তু তারা ছিল জোট-বিচ্ছিন্ন, নিঃসঙ্গ। রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা বা স্বীকৃতি বলতে যা বোঝায় তা তাদের ছিল না। আওয়ামী লীগের ওই আত্মঘাতী কৌশল জামায়াতকে দেয় সেই সোনার হরিণ – রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতি। ’৯৬-এর সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ভরাডুবি ঘটলে তাদের দলীয় ফোরামে এর জন্য দায়ী করা হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বাঁধার ঘটনাটিকে এবং গোলাম আযমকে এর জন্য প্রবল সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। দলীয় সমালোচনার জবাবে গোলাম আযম তখন বলেছিলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বা অন্য কোনো দল নয়, আওয়ামী লীগ। এদেশে শেষ পর্যন্ত দুটো দল থাকবে – একটি আওয়ামী লীগ, অন্যটি জামায়াত। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত আমাদের কোনো রাজনৈতিক স্বীকৃতি ছিল না, কারণ আওয়ামী লীগ আমাদের স্বীকৃতি দেয়নি। তাদের সঙ্গে জোট বেঁধে আমি সেই স্বীকৃতি আদায় করে দিয়েছি, আমার দায়িত্ব শেষ, এরপরের কাজগুলো আপনারা করে নেবেন।’ তখনকার পত্রপত্রিকায় এই খবরটি বেরিয়েছিল – কিন্তু আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা আবারো তা এড়িয়ে গেছেন, অথচ গোলাম আযমের এই বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে বিশ্লেষিত হওয়া উচিত ছিল। জামায়াত যে সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকেই তখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল তা বোঝা গেল কয়েক বছরের মধ্যেই। সমমনা বিএনপির সঙ্গে নতুন করে জোট বেঁধে নির্বাচনে গেল তারা, হলো ক্ষমতার অংশীদার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ছিল অদূরদর্শী, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং বিএনপিকে বন্ধুহীন করার জন্য তারা এটা করেছিল। তার ফলও ভোগ করতে হয়েছে জাতিকে বিপুল মূল্য দিয়ে। পরবর্তী নির্বাচনে জিতেই জামায়াত-বিএনপি জোট সারাদেশে যে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নেতৃত্ব দেয় এবং পাঁচ বছরের শাসনামলে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে যে বিপুল জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটায় তার ক্ষত এ-জাতির শরীর থেকে এত সহজে শুকাবে না।
যাহোক, ঘাতক-দালালবিরোধী আন্দোলন তাৎক্ষণিকভাবে সাফল্যের মুখ না দেখলেও এর একটি ইতিবাচক গুরুত্ব আছে। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের সমর্থন, আবেগ ও ভালোবাসা এবং ঘাতকদের প্রতি তাদের ঘৃণা প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছিল। 888sport appsের মানুষ বুঝতে পেরেছিল, তরুণদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়, এই বিষয়টি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কারো জন্যই শুভ হবে না। আমাদের ভরসার জায়গা এ-তরুণরাই। দেশে যতই    মৌলবাদী-প্রতিক্রিয়াশীল-জঙ্গিবাদী তৎপরতা বিস্তারলাভ করুক না কেন, এই তরুণরা শেষ পর্যন্ত তা ঠেকিয়ে দেবেই। যে-দেশ অর্জিত হয়েছে একটি রক্তাক্ত যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে, যে-যুদ্ধের কেন্দ্রে ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাষ্ট্রের স্বপ্ন, সে-দেশটিকে কিছুতেই মৌলবাদের দিকে ঠেলে দিতে দেবে না তারা, আমি অন্তত সে-বিশ্বাস রাখি।
এই আন্দোলনের আরেকটি গুরুত্বের কথাও এ-প্রসঙ্গে উল্লেখ করে রাখি। আন্দোলনটি তরুণদের জাগিয়ে তুলেছিল, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে সচেতন করে তুলেছিল, ঘাতকদের প্রতি ঘৃণা জাগিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছিল। সেই তরুণরাই দীর্ঘ সময় ধরে নানাভাবে বিভিন্ন প্রচারের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে এসব বার্তা পৌঁছে দিতে সমর্থ হয়েছিল। পরবর্তীকালে জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধার ব্যাপারটিকে আওয়ামী লীগ সম্ভবত ভুল হিসেবেই চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছিল এবং গত নির্বাচনে ভুল সংশোধনের জন্য নির্বাচনী ইশতেহারে ঘাতক-দালাল-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করেছিল। তরুণরা সে-অঙ্গীকারে আস্থা রেখে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে দলটিকে, এবং দলটি ক্ষমতায় গিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও সে-কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং আশা করা যায় অচিরেই ঘাতকদের শাস্তি দিয়ে এই জাতি ৪১ বছরের পুরনো পাপ ও গ্লানি থেকে মুক্তি লাভ করবে।

তিন
আমাদের বেড়ে ওঠা আর সমকাল নিয়ে কথা বলতে গেলে কথা কেবল বেড়েই চলে – কত কিছু যে বলার আছে আরো তার ইয়ত্তা নেই। এতক্ষণ যা বলা হলো তা কেবল কথাসূত্র মাত্র। আমাদের এই সময়ে 888sport apps অর্জন করেছে কিছু অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। মিডিয়ার আশ্চর্য উত্থান তার মধ্যে একটি। সমাজ-জীবনে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে, 888sport live football-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে মিডিয়ার প্রভাব এখন অপরিসীম। এনজিও তৎপরতা, সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদের উৎপাত, মুক্তবাজার অর্থনীতির ফাঁদ, বামপন্থী রাজনীতির হালচাল ও তাদের কাছে প্রত্যাশা, আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, পরস্পর সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আমাদের 888sport live football চর্চা এবং 888sport live footballে আমাদের অর্জন ও ব্যর্থতা, প্রকৃত লেখক হওয়ার চেয়ে তারকা লেখক হওয়ার প্রবণতা, সংস্কৃতি-চর্চার 888sport app দিক – এসব কিছু নিয়েই অনেক কথা বলা যায়।
আশির দশকে নানাদিক থেকেই জাতীয় জীবনে ও ব্যক্তি মানুষের সামাজিক জীবনে দৃষ্টিগ্রাহ্য পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। এমনকি অনড়-পরিবর্তনহীন গ্রামীণ জীবনেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছিল। এর কারণ বহুবিধ। উদাহরণ হিসেবে দু-একটির কথা বলা যাক।
এই দশকের মাঝামাঝিতে সামরিক সরকারের উদ্যোগে দেশে উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়, এবং মহকুমা শহরগুলোকে জেলা হিসেবে উন্নীত করা হয়। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের নামে কাজটি করা হলেও দেশের 888sport free betগরিষ্ঠ নিরক্ষর মানুষের কাছে এ-ব্যবস্থা একেবারেই অপরিচিত ছিল। হঠাৎ করেই তারা দেখতে পেলো – বড়ো বড়ো সরকারি ‘অফিসাররা’ তার ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। বিষয়টি তাদের জন্য সহজ ছিল না। কারণ আমলাতন্ত্র যেখানে যায় সেখানে একইসঙ্গে যায় এর যাবতীয় ইতি ও নেতিবাচকতা। হঠাৎ করেই শুরু হয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শত বছর ধরে যেখানে কেউ একটা পাকা সড়কের কথা কল্পনাও করেনি, সেখানে রাতারাতি শুরু হয়ে যায় নির্মাণযজ্ঞ – রাস্তাঘাট, দালানকোঠা ইত্যাদি। সরকারি কর্মকর্তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত করার প্রয়োজন দেখা দেয়, তেমনি নতুন নতুন অফিস-আদালত, ব্যাংক-হাসপাতাল ইত্যাদিও নির্মিত হতে থাকে। আর অনিবার্যভাবেই বেড়ে যায় কন্ট্রাক্টরের 888sport free bet, টেন্ডারবাজি, লেনদেন, টাউট-বাটপার ইত্যাদি। শুধু তাই নয়। ব্যবস্থাটি যেহেতু চালু হয়েছে, কিছু কাজকর্মও তো দেখাতে হবে! উপজেলা ভবনে বসে অফিসাররা নানা ভালো-মন্দ কাজের নমুনা দেখাতে ব্যগ্র হয়ে ওঠেন। বসে মুন্সেফি আদালত। কালো গাউন-পরা উকিলদের আনাগোনা বাড়ে। শত বছর ধরে যেসব ঝগড়াঝাঁটি সামাজিক সমঝোতা ও বিচার-সালিশের মাধ্যমে মেটানো হতো সেসব নিয়েও কুচুটে গ্রামবাসীরা থানা-পুলিশ, আইন-আদালতের আশ্রয় নিতে থাকে। সেখানেও টাউট-বাটপারের আনাগোনা। ঝগড়াঝাঁটিতে উসকানি দেয় তারা, উৎসাহ দেয় মামলা-মোকদ্দমায়, সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেঁসে যায় গ্রামের মানুষ, আর দু-পয়সা কামিয়ে নেয় ধান্ধাবাজেরা। সামাজিক সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়ে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটি নষ্ট হতে থাকে, গ্রামীণ সমাজের আদিরূপ পালটে যেতে থাকে। শহর যখন গ্রামের দিকে এগিয়ে যায়, তখন অনেক নাগরিক সুবিধার সঙ্গে নাগরিক কলুষতাগুলোও গিয়ে হাজির হয়। গ্রামের মানুষ সেগুলোর সঙ্গে পরিচিত নয়, সহজে খাপ খাওয়াতেও পারে না, তবে তরুণরা নতুনত্বের পূজারি বলে গ্রহণ করে নেয় সহজেই। আর তখন সামাজিক সম্পর্কে আরেকবার ধাক্কা লাগে। চিরপুরাতন 888sport apk download apk latest version ও স্নেহের সম্পর্কটি ধোঁয়াটে হয়ে যায়, তরুণরা নিজেদের অধিকতর জ্ঞানী ও বুঝদার বলে মনে করতে থাকে, গুরুজনদের প্রতি 888sport apk download apk latest version হারাতে থাকে, আর অগ্রজ সম্পর্কীয়দের কাছে ক্রমশ অচেনা হয়ে ওঠে বলে স্নেহ হারায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে শহরে যাতায়াত বাড়ে মানুষের, সম্পর্কের নতুন নতুন মাত্রার সঙ্গে পরিচিত হয় তারা, আর ভেতর থেকে পুরনো ধাঁচের সম্পর্কগুলো ক্ষয়ে যেতে থাকে।
গ্রামীণ জীবনে পরিবর্তন আসার পেছনে আরেকটি কারণও খুব বড়ো ভূমিকা পালন করেছে। এই সময়েই এনজিওগুলোর কার্যক্রম বিপুল আকার ধারণ করে। দারিদ্র্যমুক্তির স্লোগান নিয়ে হাজির হয়েছিল তারা – ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ, 888sport promo codeর ক্ষমতায়ন, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সচেতনতা ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনে এনেছিল পরিবর্তনের ছোঁয়া। গ্রামের পথে মেয়েদের মোটরসাইকেল চালাতে দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে মানুষের, এনজিওর কল্যাণে। তবে তাদের সবচেয়ে প্রভাবশালী কর্মসূচি ছিল ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প। প্রায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা বুঝিয়েছে ক্ষুদ্রঋণের মাহাত্ম্য, দেখিয়েছে রাতারাতি বড়োলোক হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। ‘শিক্ষিত’ ছেলেমেয়েদের মিষ্টি-মধুর বাক্যে পটে গিয়ে অনেকেই পা দিয়েছে এক সর্বনাশা চক্রে। কী রকম? নিজের চোখে দেখা কিছু ঘটনার সারসংক্ষেপ বললেই বোঝা যাবে ব্যাপারটা। ধরুন, একজন অতিদরিদ্র মানুষকে কয়েক হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হলো। সে তার পরিবারের জন্য নিয়মিত খাবার জোগাড় করতে পারে না, নিজের এবং বউ-ছেলে-মেয়ের পরনের কাপড়চোপড়ও শতচ্ছিন্ন, ঘরের চাল ফুটো – বৃষ্টি এলে পানি পড়ে, একটা বাচ্চা হয়তো দীর্ঘদিন অসুখে ভুগছে, টাকার অভাবে চিকিৎসা করা হয়নি ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত একজন লোক হাতে টাকা পেলে প্রথম কাজটি কী করবে? বলা বাহুল্য, প্রথমদিনই সে ভালোমন্দ বাজার করবে, পেটপুরে খাবে, বউ-বাচ্চাদের জন্য দু-একটা কাপড়চোপড় কিনবে, সম্ভব হলে ঘরের চালটাও ঠিক করে নেবে। অথচ সপ্তাহ শেষ হতে না হতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে তাকে। ঋণ নিয়ে ওই টাকা দিয়ে সে কী করেছে, এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই এনজিওগুলোর, সপ্তাহান্তে কিস্তির টাকা বুঝে পেলেই হলো। কিন্তু লোকটি তো ওই টাকা ব্যবহার করে কোনো আয়-রোজগারের ব্যবস্থাই করে উঠতে পারেনি, কিস্তি দেবে কোত্থেকে? দেবে ওই ঋণের টাকা থেকেই। এভাবেই  দু-এক মাসের মধ্যে টাকা শেষ হয়ে যাবে; কিন্তু এনজিও কর্মকর্তারা কিস্তি পরিশোধের জন্য তাগাদা অব্যাহত রাখবে। ঠিক এ-সুযোগটিই ব্যবহার করবে সুদখোর মহাজনের মতো আরেকটি এনজিও। তারা তাকে বোঝাবে – আগের এনজিওটি খারাপ বলেই ওরা তার সমস্যাটি বুঝতে চাইছে না, নতুন করে ঋণ নিয়ে পুরনোটি শোধ করে দিতে। সরল বিশ্বাসে সে আবারো ঋণ নেবে, পুরনো ঋণ শোধ করে দেবে বটে, কিন্তু নতুন এনজিওর কাছে আরো বেশি পরিমাণ ঋণে আবদ্ধ হবে। কিছুদিন পর আগের ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটবে, এবং কোনোদিনই সে আর এই চক্র থেকে বেরোতে পারবে না। এনজিওকর্মীদের অমানবিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অতঃপর কোনো এক রাতের অন্ধকারে নিজের ভিটেবাড়িটুকু বিক্রি করে দিয়ে পালিয়ে শহরে চলে আসবে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে গ্রাম থেকে শহরমুখী মানুষের স্রোত যে বেড়েই চলেছে এবং শহরে প্রচুর বস্তি গড়ে উঠেছে তার প্রধানতম কারণ এটিই। যে-কোনো বস্তিতে গিয়ে একটা জরিপ চালালে এই নির্মম সত্যটি উঠে আসে যে, এই লোকগুলোর আর গ্রামে ফেরার উপায় নেই, কারণ এনজিওর অত্যাচারে ভিটেমাটিও বিক্রি করে দিয়ে পালিয়ে এসেছে তারা। এই যদি প্রকৃত অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে – এত উচ্চপ্রশংসিত ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির কোনো সাফল্যই কি নেই? না, দারিদ্র্য দূরীকরণে কোনো সাফল্য নেই, বরং অতিদরিদ্রদের তারা দারিদ্র্যের একেবারে শেষ সীমানায় পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে, যারা একটু সচ্ছল, যাদের খাওয়া-পরার তেমন কোনো সমস্যা নেই, অথচ নগদ অর্থের অভাবে কোনো একটি অর্থকরী কাজে উদ্যোগ নিতে পারছিল না, তাদের ক্ষেত্রে এ-কর্মসূচি দারুণ ফলদায়ক হয়েছে। তারা ঋণ নিয়ে ছোটখাটো খামার করে নিজেদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সমর্থ হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য তাই দারিদ্র্য দূরীকরণে নয়, বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভেতরে তুলনামূলক সচ্ছল জনগোষ্ঠীকে অধিকতর সচ্ছলতা প্রদানে। কিন্তু একই সঙ্গে আরেকটি ঘটনাও ঘটেছে। একবার যারা ঋণ নিয়ে সেটির সদ্ব্যবহার করে এনজিওগুলোর আস্থা অর্জন করতে পেরেছে, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে এনজিওর 888sport app কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ত হতে হয়েছে। আর এভাবেই গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর এক বিশাল অংশকে নিজেদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে এনজিওগুলো সমাজ ও রাষ্ট্রে দারুণ প্রভাবশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ব্র্যাক বা গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বড়ো এনজিওগুলোর দেশব্যাপী যে নেটওয়ার্ক ও স্থাপনা, তা দেখে নিঃসন্দেহে বলা যায়, একটা সমান্তরাল সরকার চালানোর মতো ক্ষমতা ও অবকাঠামো তারা তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, উপজেলা ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং এনজিও-কর্মকাণ্ড গ্রামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চাঞ্চল্য আনতে সমর্থ হয়েছিল, দীর্ঘকাল ধরে অনড়-অচল-পরিবর্তনহীন গ্রামীণ সমাজে গতিশীলতা এনেছিল, কিন্তু একইসঙ্গে ঘটেছিল অনেক নেতিবাচক ঘটনাও, যা সমাজ-কাঠামোকে ভেতর থেকে পালটে দিতে ভূমিকা রেখেছিল।
আশির দশকে শহরে আরেকটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছিল। সেটি হচ্ছে – শয়ে শয়ে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপন। এসব গার্মেন্টের প্রধান কর্মী 888sport promo codeরা। স্বল্প বেতনে পরিশ্রমী শ্রমিক হিসেবে বাঙালি 888sport promo codeদের তুলনা মেলা ভার। চতুর গার্মেন্ট মালিকরা সেই সুযোগটিই গ্রহণ করেছে। শ্রমিকদের ঘামে ও রক্তে তারা ফুলেফেঁপে বিশালদেহী হয়েছে, অথচ শ্রমিকরা যে-তিমিরে ছিল রয়ে গেছে সেই তিমিরেই।
আগেই বলেছি, সামরিক সরকারের প্রধান ব্যক্তি আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিলেন এবং অন্যদের জন্যও দুর্নীতিকে সহজ করে দিয়েছিলেন। এর আগ পর্যন্ত ঘুষ খাওয়ার মতো দুর্নীতিকে সাধারণভাবে লজ্জা পাওয়ার মতো কাজ বলে মনে করা হতো, অর্থাৎ সামাজিক নৈতিকতা ওরকমই ছিল। কিন্তু এই সময়ে এসে সেই নৈতিকতাও বদলে যেতে থাকে। ওই শাসক এমনকি মানুষের সততার দৌড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত সেটিও পরীক্ষা করে দেখতেন। তিনি তার সভাসদ এবং রাষ্ট্রের বিধি-ব্যবস্থাকে এমনভাবে তৈরি করেছিলেন যে, সৎ থাকাটাই তখন কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সৎ থাকলে তিরস্কার আর অসৎ হলে 888sport app download bd – এই ছিল তার নীতি! প্রশাসনের কোথাও কোনো সৎ মানুষের খোঁজ পেলে তিনি লোকটার সততা পরীক্ষা করার জন্য তার বিশ্বস্ত সহকারীদের নির্দেশ দিতেন! নানারকম লোভ দেখাতেন আর টোপ ফেলতেন, ভয়ভীতি দেখানোর ব্যবস্থাও করতেন! তার সময়েই মানুষ ভাবতে শিখলো – অসৎ হওয়াটা খারাপ কিছু নয়, সততা বলতে কিছু নেই, ওটা দুর্বল মনের মানুষদের সাহসের অভাব, ইত্যাদি! এই খেলায় অধিকাংশ সময়ই তিনি জয়ী হতেন। একজন সৎ মানুষ হয়তো জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে একটা বড়ো টোপ গিলে সারাজীবনের সততাকে জলাঞ্জলি দিতেন। এইভাবে জাতির নৈতিক মেরুদণ্ড  ভেঙে দিয়েছিলেন তিনি। একজন মানুষ যেমন সুনির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা দিয়ে জীবন চালিয়ে নেয়, একটি সমাজও এরকম কিছু নৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত হয়। সেটা কারো ব্যক্তিগত নৈতিকতার সঙ্গে না মিললেও সামষ্টিক কারণে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। একটি জাতিও এরকম কিছু বৃহত্তম নৈতিকতা মেনে চলে বা চলতে বাধ্য হয়, কেউ না মানলে সে খারাপ মানুষ বলে চিহ্নিত হয়। সততা-অসততা, পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ সব ব্যাপারেই একটি জাতির নিজস্ব কিছু ধারণা থাকে। সততা যে প্রশংসনীয় গুণ আর অসততা নিন্দনীয় ব্যাপার, এটিই ছিল এই জাতির নৈতিক অবস্থান, তিনি সেটি ভেঙে দিতে সমর্থ হয়েছেন। এখন আর অসৎ হওয়াটাকে কেউ খারাপ চোখে দেখে না। আরেকটা কথা, একজন মানুষের ব্যক্তিগত অসততা প্রকাশিত হতে সময় লাগে কম, সমষ্টির জন্য ক্ষয়ক্ষতিও কম; কিন্তু একটি জাতির নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেলে সেটা বুঝতে অনেকটা সময় লেগে যায়, আর যতদিনে বোঝা যায় ততদিনে ফেরার পথ প্রায় রুদ্ধ। আমাদের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে। ওই সামরিক শাসক সৃষ্ট দুর্যোগের প্রকাশ ঘটছে এখন, বিপুলভাবে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
অসৎ উপায়ে অর্জিত বিপুল অর্থের কারণেই নব্বইয়ের পর দেশের প্রাইভেট সেক্টরে বিপ্লব ঘটে, যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা আসে – 888sport live chat-কলকারখানা স্থাপন করলে অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হবে না। এই ঘোষণার পর এক দশকের মধ্যে দেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন 888sport live chat-বাণিজ্যের চেহারাই পালটে যায়। আজকে দেশে যে প্রাইভেট সেক্টরের জয়জয়কার, মাত্র দুযুগ আগেও তা ছিল কল্পনার অতীত। হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র 888sport live chat-উদ্যোক্তা ছিলেন দেশে, আর এখন হাজার হাজার। কোটিপতি শব্দটিও এসেছিল অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য বোঝাতে, এখন সে-888sport free betও অগুনতি। একটি দেশে যখন এত অবৈধ অর্থের ছড়াছড়ি থাকে, তখন তা খরচ করার জন্য অনুৎপাদনশীল ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও বাড়ায়। আর সেজন্যই শহরজুড়ে গড়ে ওঠে অজস্র মার্কেট, খাবার দোকান, বিলাসবহুল হোটেল, থিম পার্ক ইত্যাদি। এখন শহরের যে-চেহারা, তার কারণও এটিই। সর্বত্র ভোগবাদী সমাজ গড়ে ওঠার চারিত্র্য-লক্ষণ খুব প্রকটভাবেই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে ক্রমশ।
ওই সামরিক প্রভুর আরেকটি নেশা ছিল – মানুষের ধর্মানুভূতিতে সুড়সুড়ি দেওয়া। প্রতি শুক্রবার কোনো একটি মসজিদে গিয়ে তিনি বলতেন – কাল রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, এই মসজিদে এসে আপনাদের সঙ্গে মিলে নামাজ পড়ছি। তাই আজকে এলাম। সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট রাতে, কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া, তিনি একই স্বপ্ন দেখতেন কীভাবে – এ-প্রশ্ন করতো না কেউ! তাছাড়া, একজন শাসক তো যখন-তখন যেখানে-সেখানে যেতে পারেন না! একটা নিরাপত্তার ব্যাপার আছে না? তিনি কোথাও যাওয়ার অন্তত  দু-সপ্তাহ আগে থেকেই বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী ওই জায়গাটার ওপর নজর রাখতো। অথচ তিনি গিয়ে বলতেন – কাল রাতে স্বপ্নে দেখেছেন! এ নিয়ে কেউ কিছু বলতোও না! ওই যে ধর্মানুভূতি! তিনি বুঝে গিয়েছিলেন – ধর্মের যথেচ্ছ ব্যবহারই তার টিকে থাকার অন্যতম হাতিয়ার। কিন্তু এত ভান-ভণ্ডামি করেও যখন কাজ হচ্ছিল না, মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনে কোনোভাবেই সফল হচ্ছিলেন না, তখন চরম আঘাতটি হানেন তিনি। সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে অধিষ্ঠিত করেন, আর এই  নীতিহীন-আদর্শহীন-ভণ্ড লোকটির এই কুকর্মের জন্য কলমের এক খোঁচায় ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বী সব মানুষ মুহূর্তের মধ্যেই বনে যান দেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক!
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ-উদার-প্রগতিশীল রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছিল, পঁচাত্তর-পরবর্তী দুই সামরিক শাসকের কল্যাণে সেই রাষ্ট্রের অপমৃত্যু ঘটেছে, জন্ম নিয়েছে এক তথাকথিত ধর্মরাষ্ট্রের, যার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির কয়েক বছরের মাথায় সেই যে পেছনে হাঁটা শুরু হয়েছিল, এখনো তা অব্যাহত আছে। আমরা আমাদের সংবিধান থেকে আজো রাষ্ট্রধর্মের ধারাটি মুছে ফেলতে পারিনি।

চার

আমরা যখন লিখতে এসেছিলাম – নব্বইয়ের দশকের শুরুতে – তখনো আশির উত্তাপ প্রবলভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছিল, আর এই উত্তাপ একই সঙ্গে আমাদের জন্য ছিল স্বস্তির ও অস্বস্তিকর।    অস্বস্তির কারণটি আগে বলা যাক। বাংলা 888sport live footballে দশক বিভাজন নিয়ে বিতর্কটা পুরনো হলেও এখনো এর কোনো সুরাহা হয়নি, এটা ভালো কি মন্দ সে বিষয়েও কোনো মীমাংসায় পৌঁছনো যায়নি। প্রায় সবাই-ই এর সম্বন্ধে বিরূপ মন্তব্য করলেও দশক বিভাজন চলছে এবং আগামীতেও চলবে বলে ধারণা করি। এই বিভাজন একই সঙ্গে সুবিধা ও সংকট তৈরি করেছে, আর এ দুটোই ভোগ করে প্রধানত তরুণ লেখকরা। এখন এমন একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, তরুণদের চিহ্নিত করার জন্য এর কোনো বিকল্প পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু চিহ্নিত করাই নয়, তাদের পরিচিতি পাওয়া সহজ হয় এবং আলোচনায় তাদের নাম উঠে আসে এই বিভাজনের কারণেই। এটুকু তাদের জন্য সুবিধাজনক। আবার অসুবিধাটি হলো, কোনো একটি দশক যদি খুব ফলবান হয় বা প্রবলভাবে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী শতকের লেখকদের জন্য নিজেদের একটি জায়গা তৈরি করে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আগেই বলেছি, আশির উত্তাপ আমাদের জন্য ছিল  অস্বস্তিকর, কারণ, তখনো তাঁরা এমন কিছু বুড়িয়ে যাননি, বরং অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয়ে তখন তাঁরা নবাগত তরুণদের কাছে ঈর্ষণীয় চরিত্র, দাঁড়িয়েও আছেন প্রবলভাবে, আমাদের কাছে একেকটি নাম যেন একেকটি প্রতীক, দ্রোহের ও সৃজনশীলতার প্রতীক। এই প্রবল লেখকদের পাশে আমরা দাঁড়াবো কীভাবে? অস্বস্তির কারণটি ছিল এ-ই। কারণ আরো ছিল – আশির লেখকরা শুধু যে দ্রোহী এবং সৃজনশীল ছিলেন তা-ই নয়, একইসঙ্গে ছিলেন নিজেদের সময় ও কাজ নিয়ে অহংকারী, বহুদিন পর্যন্ত তারা পরবর্তী লেখকদের দিকে ফিরেও তাকাননি, তাঁদের গল্প-888sport app download apk-888sport live-888sport alternative link পড়া তো দূরের কথা, খোঁজখবর রাখার বা এমনকি দেখা হলে কথা বলারও প্রয়োজন অনুভব করেননি। সুখের কথা, তাঁদের এই তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ তরুণদের মধ্যে হীনম্মন্যতার জন্ম না দিয়ে জন্ম দিয়েছিল জেদের, তারা তাদের মতো করে লিখে গেছেন এবং কেবলমাত্র লেখার মাধ্যমে কোনোরকম গোষ্ঠীবদ্ধতা ছাড়াই এই দশকটি ফুলে-ফলে বিকশিত হয়ে উঠেছে।
স্বস্তির কথাটি বলতে হলে আমাদের আরেকটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে, কথা বলতে হবে আমাদের 888sport live footballের ইতিহাস নিয়ে। এই কথাগুলো অবশ্য আমি অন্যত্র খানিকটা বলেছি, তবু প্রয়োজনের খাতিরে কিছুটা পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে। আজকের যে 888sport appsের 888sport live football, তার যাত্রা শুরু হয়েছিল চল্লিশের দশকের বিহ্বল একটি সময়ে, বাঙালি মুসলমান তখন অতিক্রম করছিল এক অভূতপূর্ব ক্রান্তিকাল – দ্বিজাতি-তত্ত্বের আফিম খেয়ে ভুল স্বপ্নে মেতে ওঠা এক বিভ্রান্ত জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন-কল্পনা ও আশা-আকাক্সক্ষা, সংস্কার, মূল্যবোধ ও জীবনাচরণের সচিত্র সচল উপস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র 888sport live footballকর্মী। 888sport app download apk ও কথা888sport live chatে এই প্রথম একসঙ্গে বেশ কয়েকজন মেধাবী তরুণ পাওয়া গেল এ-অঞ্চলে। এঁরা যদিও বহমান বাংলা888sport live footballের উত্তরাধিকার ছিলেন, তবু অস্বীকার করা যাবে না, তাঁদের সামনে খুব গভীর একটি সমস্যাও ছিল। একটি নতুন রাষ্ট্র আর তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা স্বপ্ন, মানুষের জীবনাচরণে নব্য রাষ্ট্রের নতুন ধরনের খবরদারি ভূমিকায় সৃষ্ট দ্বন্দ্ব ও সংঘাত এত সহজে রূপায়ণ করা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া, এ-অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ করে বাঙালি মুসলমান, এতদিন পর্যন্ত বাংলা 888sport live footballে মোটামুটিভাবে উপেক্ষিতই ছিল, ফলে এক্ষেত্রে কোনো ঐতিহ্যের ভাগীদার তাঁরা হতে পারেননি। তা সত্ত্বেও একটি বিষয় স্বীকার করতেই হবে, তাঁদের আন্তরিক চেষ্টা এবং আমৃত্যু 888sport live footballের প্রতি তাঁদের কমিটমেন্ট আমাদের 888sport live footballের একটি ভিত রচনা করে দিয়েছিল। 888sport appsের 888sport live football প্রাথমিক পর্ব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখলো পঞ্চাশের দশকে। এই সময়টিও ছিল নানা দিক থেকেই বিহ্বলতার। 888sport sign up bonusতে তখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষ, ছেচল্লিশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, আর দেশবিভাগজনিত আবেগ-বিহ্বলতা ও হাহাকার। দুই বাংলার শেকড়হীন মানুষ – উদ্বাস্তু, অসহায় –  নতুন দেশে বসবাসের জন্য তাদের চোখ, স্বপ্নে নয়, বেদনায় ম্লান। মানুষ কীভাবে তার শৈশব-কৈশোরের 888sport sign up bonusবাহী জন্মভূমি, নদী, আকাশ আর প্রান্তর ছেড়ে ভালো থাকবে? এরই মধ্যে ঘটে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে; হতাশা, অবক্ষয় বাড়ছে, মানুষ যেন হঠাৎই উপস্থিত হয়েছে তার চূড়ান্ত পরিণতির সামনে। যে অদ্ভুত সময়ে পঞ্চাশের লেখকরা লিখতে শুরু করেছিলেন, সহজ ছিল না সময়টিকে 888sport live footballে ধারণ করার – অন্তর্গত রক্তক্ষরণ যতই হোক না কেন! ততদিনে অবশ্য চল্লিশের লেখকরা বেশ স্থিত। নতুন রাষ্ট্রপ্রাপ্তির আফিম-মার্কা মোহ ইতোমধ্যেই কাটতে শুরু করেছে, পূর্ববাংলার মানুষ প্রস্তুত হচ্ছে ভাষা-আন্দোলনের মতো অনন্য ইতিহাস নির্মাণ করার জন্য। পাকিস্তান সৃষ্টির অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ভাষা-আন্দোলনের সূচনা এ-অঞ্চলের মানুষের প্রকৃত জাতিসত্তাকেই মূর্ত করে তুলেছিল, আর এই জাতির বিকাশ ও মননচর্চায় অবদান রাখার জন্য অনিবার্যভাবে মেধাবী 888sport live football888sport live chatীদের আগমনও ঘটেছিল। এই সময়ে যারা এলেন তাঁরা অনেকটা নীরবেই একটি যুদ্ধ করে গেছেন – রাষ্ট্রের যাবতীয় ষড়যন্ত্র ও কূটকৌশল উপেক্ষা করে নিজ ভাষাকে টিকিয়ে রাখার, নিজের ভাষায় 888sport live football রচনার এবং এর একটি মানসম্মত রূপদান করার যুদ্ধ। আর এই পটভূমিতেই 888sport appsের 888sport live football প্রথমবারের মতো দৃষ্টিগ্রাহ্য বাঁক পরিবর্তন করে ষাটের দশকে। ততদিনে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রতত্ত্বের মোহ কেটে গেছে, বাঙালি দাঁড়িয়ে আছে তার আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন সামনে নিয়ে। সেই অর্থে সময়টি নানাদিক থেকে সংকট ও নির্মাণেরও বটে। একদিকে জাতীয়তাবোধ ও স্বাতন্ত্র্যবোধ নির্মাণের প্রবল-প্রচুর কর্মকাণ্ড, অন্যদিকে বাঙালির বিরুদ্ধে অব্যাহত ষড়যন্ত্র। 888sport live footballের ভূমিটি তখনো ছিল কিছুটা নরম-কর্দমাক্ত। বীজক্ষেত্র কীভাবে নির্মিত হবে সেটি নির্ভর করছিল লেখকদের ওপরই। আমাদের সৌভাগ্য এবং এটা মহান 888sport live chatবোধের একটি ঐতিহ্যও বটে যে, তাঁরা আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন, নইলে 888sport appsের 888sport live football আরো অনেকখানি পিছিয়ে থাকতো। এই দ্বন্দ্ব ও সংকটমুখর সময়ে ষাটের 888sport live footballকর্মীরা নিয়ে এসেছিলেন প্রথা ভাঙার তীব্র জেদ, নতুন কিছু নির্মাণের আন্তরিক, উদ্দাম উচ্ছল প্রচেষ্টা। পূর্ববর্তী লেখকদের ট্র্যাডিশনাল (!) 888sport live footballচর্চাকে তীব্র কণ্ঠে অস্বীকার করে, তারুণ্যের অহংকারকে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট করে দিয়েছিলেন 888sport live footballের সঙ্গেই। এর জন্য যে দীপ্ত, উজ্জ্বল তরুণ গোষ্ঠী প্রয়োজন ষাটের তাও ছিল। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ষাটের লেখকরাই সবচেয়ে বেশি সক্রিয় এবং প্রভাবশালী হয়ে আছেন। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, তাঁদের তুমুল সক্রিয়তা ও সৃজনশীলতা আমাদের 888sport live footballের গতিমুখ ঠিক করে দিয়েছিল, তবে এই প্রভাবের পেছনের কারণটি যে শুধু তাঁদের সৃজনশীলতা এবং বিরামহীন 888sport live footballচর্চা, তা নয়। ষাটের লেখকরা নিজেদের সময় এবং সহযাত্রী লেখকদের সম্বন্ধে অবিরাম বলে গেছেন, এখনো বলে যাচ্ছেন। নিজেদের কথা নিজেরা বলার ক্ষেত্রে তাঁদের জুড়ি নেই, এবং বলতে বলতেই নিজেদের সময় সম্বন্ধে এমন একটা ইমেজ তাঁরা দাঁড় করিয়েছেন যে, মনে হয় তাঁদের প্রতিভাকে অতিক্রম করার যোগ্যতা আর কারো নেই। ষাটের এই প্রবল অবস্থানের কারণেই সত্তরের লেখকরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এমনকি মাথা তুলে দাঁড়াতেও প্রচুর সময় লেগেছে তাঁদের, যদিও সত্তরের দশক নিয়ে এসেছিল এক অভূতপূর্ব ও অনাস্বাদিত অভিজ্ঞতা 888sport appsের জন্য। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ও সত্তরের প্রলয়ংকরী জলোচ্ছ্বাসের দাগ তখনো শুকোয়নি এই দেশ থেকে – তার মধ্যেই এলো একাত্তর। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। শতাব্দী শতাব্দীতে এরকম ঘটনা একবারই ঘটে। সুমহান ত্যাগ ও বীরত্বের গৌরবে ভাস্বর, আকাশসমান স্বপ্ন, অপরিমেয় রক্তপাত ও 888sport promo codeর সম্ভ্রমহানি, নিরীহ-নিরস্ত্র একটি জাতির হঠাৎ যোদ্ধা হয়ে ওঠার অভূতপূর্ব ঘটনা, একটি শোষণহীন মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয় – এসব নিয়েই তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। যে বিশাল স্বপ্ন  নিয়ে এই জাতি অংশ নিয়েছিল যুদ্ধে তা কি পূরণ হয়েছে? হয়নি তো! মূলত সত্তর ছিল এক দ্বন্দ্বমুখর বহুবিচিত্র অভিজ্ঞতার দশক। ত্যাগ ও স্বপ্ন মিলে জাতীয় জীবনে   যে-আকাক্সক্ষা জন্ম নিয়েছিল – স্বাধীনতাপ্রাপ্তির বছরখানেকের মধ্যে শাসককুলের বর্বরতার ফলে তাতে ধুলো জমতে থাকে। আকাশসমান স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, অন্তঃসারশূন্য রাজনীতি, বিশৃঙ্খলা, নেতৃত্বের ব্যর্থতা, শাসকগোষ্ঠীর সীমাহীন দুর্নীতি ও বর্বরতা, রক্তাক্ত যুদ্ধজয়ের পরও প্রিয় স্বদেশভূমিতে বিতর্কিত রক্তপাত, হতাশা, মূল্যবোধের অবক্ষয়, হাহাকার, ক্ষুধা, মানবতার হৃদয়হীন পদদলন, প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহকদের ওপর শাসকদের প্রতিহিংসাপরায়ণ রোষ, একাত্তরের ঘাতকদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা, দুর্ভিক্ষ, একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করে গণতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক মৃত্যু ঘোষণা, সর্বোপরি স্বাধীনতাপ্রাপ্তির মাত্র চার বছরের মাথায় স্বাধীনতার প্রধান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড – ইত্যাদি 888sport free betহীন নেতিবাচক ঘটনা প্রবল আঘাত হানলো মননশীল মানুষদের মননে। যে সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে 888sport apps যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল সেই সামরিক জান্তাই ভিন্ন রূপ নিয়ে দখল করলো এ-দেশ। ক্ষমতার মসনদে সদম্ভ প্রত্যাবর্তন ঘটলো ঘাতকদের। এসব মিলিয়ে সত্তর ছিল প্রায় সম্ভাবনাহীন নেতিবাচকতার দশক। এমন একটি সময়েই বেড়ে উঠছিলেন এই সময়ের লেখকরা। কে না স্বীকার করবেন যে, লেখকরাই সমাজের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ; আর তার সঙ্গে যদি যোগ হয় অসহায় তারুণ্য – অসহায়, কারণ এসব নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে তাদের করার ছিল না কিছুই। তাহলে এসব ঘটনা কতটা অস্থিরতা ও বিপন্নতা সৃষ্টি করতে পারে, সেটা বলা বাহুল্য। যাহোক, সবদিক বিবেচনা করলে এই সময়ের কয়েকজন লেখকের অর্জন উল্লেখযোগ্যতার দাবি রাখে; কিন্তু এই সময়েই 888sport live footballক্ষেত্রে যে গুণগত পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে গেছে তার দায়-দায়িত্বও তাঁদের ওপরই বর্তায়। এই সময়েই জনপ্রিয় 888sport live footballের ক্ষতিকর ধারাটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, অসংখ্য 888sport live footballবোধহীন রচনা পুুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে, পাঠকের কাছে পৌঁছেও গেছে দ্রুত। ষাটের লেখকদের তুমুল সক্রিয়তার ফলে 888sport live footballের গতিমুখ নির্ণীত হয়ে যাওয়ার পরও সত্তরের অদ্ভুত আঁধার ও জনপ্রিয় 888sport live footballের ডামাডোলে 888sport live football নামক স্পর্শকাতর 888sport live chatমাধ্যমটি ঘোর দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আশির দশকে যারা এলেন, প্রথমেই তাদের প্রয়োজন হয়ে পড়লো এই নষ্ট স্রোতের বিরুদ্ধে তারুণ্যের দ্রোহ নিয়ে দাঁড়াবার। 888sport live footballের মতো সমাজ ও জাতীয় জীবনেও তখন অদ্ভুত এক আঁধার নেমেছে। অমানবিক সামরিক শাসন চেপে বসেছে 888sport appsের বুকের ওপর। হতাশা ও নৈরাজ্য বেড়ে চলেছে প্রতিদিন। সামরিক সরকারের কূটকচালে দুর্নীতি যেমন সর্বগ্রাসী রূপে চেপে বসেছে 888sport appsে, 888sport live footballভুবনেও পড়েছে তার প্রভাব। 888sport live footballিকরা শিবিরবিভক্ত। একদল বঙ্গভবনে, অন্যদল রাজপথে; 888sport app download apk স্লোগানমুখর, কথা888sport live footballকে পিঠে করে বয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে ‘জনপ্রিয়তা’ নামক এক উদ্ভট উট। এরকম একটি ক্রান্তিকালে আগমন ঘটেছিল আশির লেখকদের। এবং এসে তাঁরা 888sport app download apkর এই স্লোগানমুখরতা আর কথা888sport live footballের জনপ্রিয় ধারার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন। আর এ-কথা তো এখন কারো অজানা নয় যে, দ্রোহী তারুণ্যকে একমাত্র লিটল ম্যাগাজিনই ধারণ করতে পারে। দেশের দৈনিক পত্রিকার 888sport live football সাময়িকী ও সাপ্তাহিক-পাক্ষিক-মাসিক ম্যাগাজিনগুলো যখন পাঠক মনোরঞ্জনে ব্যস্ত, জনপ্রিয় ধারার 888sport live footballকে যাবতীয় আশ্রয়-প্রশ্রয়-প্রেরণা দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তখন অনেকটা নিঃশব্দেই লিটল ম্যাগাজিনগুলো আশ্রয় দিয়েছে তরুণ লেখকদের। সম্ভবত এ-কারণেই ষাটের পর আশিতে এসে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের এই আন্দোলন এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী অবস্থান – অনেক ভুলত্র“টি সত্ত্বেও – আমাদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছিল।
এটা মোটামুটি একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে যে, যে-কোনো প্রজন্মের লেখকরা লিখতে এসেই তাঁদের নিকটবর্তী অগ্রজদের অস্বীকার করে। তিরিশের দশকেই এটা শুরু হয়েছিল। সবাই জানেন, তিরিশের কবিরা রবীন্দ্র-বিরোধিতার নামে মূলত অগ্রজদেরকেই অস্বীকার করতে চেয়েছিলেন। তাঁদের সামনে যেহেতু রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আর তেমন কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল না, তাই রবীন্দ্রনাথই টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন। এরকম ঘটনা পঞ্চাশের দশকে পশ্চিমবঙ্গে এবং ষাটের দশকে দুই বাংলায়ই ঘটেছিল। আরেকটি নিয়মের কথা আগেই বলেছি, কোনো একটি দশক প্রবল হলে পরের দশকটি ম্রিয়মাণ হয়। আশির লেখকরাও তাঁদের পূর্ববর্তী প্রজন্মকে অস্বীকার করেছিলেন এবং এই অস্বীকারের মধ্যে দিয়েই নিজেদের প্রবল ইমেজ দাঁড় করিয়েছিলেন। রীতি অনুযায়ী নব্বইয়ের লেখকরা আশিকে অস্বীকার করতে পারতেন, কিন্তু এখানটায় এসে তারা প্রথমবারের মতো নিয়ম ভাঙেন। তারা আশির লেখকদের অস্বীকার তো করেনইনি, বরং বরাবর তাঁদের প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে এসেছেন। আশির লেখকরা অবশ্য বিষয়টি বুঝতে অনেক দেরি করে ফেলেছেন, ব্যস্ত থেকেছেন নিজেদের নিয়ে, ষাটের মতো তাঁরাও নিজেদের কথা নিজেরাই বলে গেছেন অবিরাম, চারপাশে ফিরে দেখেননি যে কোথায় কী হচ্ছে, ফলে তরুণদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত সম্পর্কটি গড়ে উঠতে পারেনি। দ্বিতীয় নিয়মটিও নব্বইয়ের লেখকরাই ভেঙেছেন। প্রতাপশালী আশির পরে নব্বই ম্রিয়মাণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। সেটা হয়নি, বরং এখন, এই এতদিন পর, এসে মনে হচ্ছে – নব্বই আশির চেয়েও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রথমটি হলো – নব্বইয়ের লেখকরা কথার চেয়ে কাজ বেশি করেছেন। অর্থাৎ বেশ কয়েকজন কথা888sport live chatী ও কবি কোনোদিকে না তাকিয়ে, কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে নিয়মিত লিখে গেছেন অর্থাৎ আগাগোড়া সক্রিয় থেকেছেন, এবং একই সময়ে কোনো এক অজ্ঞাত এবং অনির্ণেয় কারণে আশির অধিকাংশ লেখকই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া আশির অনেক লেখকই কেন তাঁদের লেখালেখিতে দীর্ঘ ছেদ টানলেন সেটা বোঝা মুশকিল। তাঁদের এই নিষ্ক্রিয়তা এবং অন্যদিকে নব্বইয়ের প্রবল সক্রিয়তা আমাদের সময়টিকে আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে। নব্বইয়ের লেখকদের মধ্যে কখনো তেমন কোনো গোষ্ঠীবদ্ধতা তৈরি হয়নি, একসঙ্গে মিলেমিশে কোনো একটা কিছু করাও তাঁদের দ্বারা হয়ে ওঠেনি। এমনকি পারস্পরিক পরিচয়টিও হয়েছে অনেক দেরিতে, বন্ধুত্ব তো আরো পরের ঘটনা। কিন্তু একবার গড়ে ওঠার পর সহসা সেটি ভেঙেও যায়নি, এখন পর্যন্ত নব্বইয়ের লেখকদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া অন্যদের কাছে ঈর্ষণীয় বিষয়। দ্বিতীয় কারণটি হলো – মিডিয়ার উত্থান, মিডিয়ায় এ-সময়ের তরুণদের প্রভাবশালী অবস্থান এবং তরুণ লেখকদের প্রতি নানা কারণে মিডিয়ার পক্ষপাত। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর, এরশাদ সরকার পদত্যাগ করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে প্রথমেই ’৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইনে পত্রপত্রিকার বিরুদ্ধে যেসব কালাকানুন ছিল, যার কল্যাণে সরকার যে-কোনো খবর সেন্সর করতে পারতো কিংবা যে-কোনো সময় যে-কোনো পত্রিকা বন্ধ করে দিতে পারতো, সেগুলো বিলুপ্ত করে দেন। এই সিদ্ধান্তটি 888sport appsের সংবাদপত্রের জগতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। প্রকাশিত হতে থাকে একের পর এক পত্রিকা এবং প্রধানত তরুণরাই হয়ে ওঠেন এসব পত্রিকার প্রাণ। অবশ্য এই পালাবদল শুরু হয়েছিল আরো কিছুদিন আগে থেকেই। এরশাদ শাসনামলের শেষদিকে কয়েকটি সাপ্তাহিক পত্রিকা দুর্দান্ত সাহসিকতার পরিচয় দেয়। এর মধ্যে সাপ্তাহিক খবরের কাগজ, বিচিন্তা, প্রিয়প্রজন্ম, পূর্বাভাস, দেশবন্ধু ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্যের দাবি রাখে। তারুণ্যনির্ভর এসব পত্রিকা সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে থোড়াই-কেয়ার করে একদিকে যেমন অসাধারণ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করতে থাকে, তেমনি সমাজের অনড় মূল্যবোধের ওপর হানতে থাকে কার্যকর আঘাত। উদাহরণ হিসেবে সাপ্তাহিক খবরের কাগজের কথা বলা যায়। এ-পত্রিকাটি বিভিন্ন ধরনের কলাম ছেপে একদিকে যেমন রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছিল, অন্যদিকে সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় প্রচলিত মূল্যবোধের ওপর আঘাত হানার জন্য প্রকাশ করছিল তসলিমা নাসরীনের কলাম। মূলত এই কলামগুলোই তসলিমাকে তারকাখ্যাতি এনে দেয়, নিয়ে আসে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু এসবের কিছুই সম্ভব হতো না, যদি সাপ্তাহিক খবরের কাগজের সম্পাদক এবং প্রকাশক এসব প্রকাশের সাহস না দেখাতেন। যাহোক, সাপ্তাহিক খবরের কাগজের সাফল্যই হয়তো এর প্রকাশক ও সম্পাদককে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের সাহস জুগিয়েছিল, এবং এর ধারাবাহিকতায় দৈনিক আজকের কাগজ প্রকাশিত হয়ে 888sport appsের দৈনিক পত্রিকার জগতে একটি বিপ্লব সাধন করেছিল। আজকের কাগজ 888sport appsকে ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক বাংলা বা বাংলার বাণীর যুগ থেকে মুক্তি দিয়েছিল। এর গেটআপ-মেকআপে যেমন ছিল অভিনবত্ব, তেমনি এর নিউজ ট্রিটমেন্ট, ফিচার পাতাগুলোর বিষয়-আশয়েও ছিল নতুন যুগ-সূচনার ইঙ্গিত। মনে পড়ে, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুর পর আজকের কাগজের 888sport live football সাময়িকী একটি বিশেষ 888sport free bet বের করে। চারপাতাজুড়েই ছিল রুদ্রকে নিয়ে নানারকম লেখা যার অনেকখানি জুড়ে ছিল তাঁর বেহিসেবি জীবনযাপনের বর্ণনা। একজন তরুণ কবির মৃত্যুর পর তাঁর 888sport app download for androidে প্রকাশিত হওয়া বিশেষ 888sport free betয় তিনি মদ্যপান করতেন বা পতিতালয়ে যেতেন – এসব কথা যে লেখা যায়, তা আমার কল্পনায়ও ছিল না। এই একটি 888sport free betই এ-কথা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট যে, এর সম্পাদক ছিলেন চিন্তাচেতনার দিক থেকে সংস্কারমুক্ত ও সাহসী। আজকের কাগজের সাফল্য আরো অনেক দৈনিক পত্রিকার জন্মকে সম্ভবপর করে তোলে। একে একে প্রকাশিত হয় ভোরের কাগজ, জনকণ্ঠ, বাংলাবাজার পত্রিকা, মুক্তকণ্ঠ, ট্যাবলয়েড মানবজমিন, প্রথম আলো, যুগান্তর এবং অধুনা আমার দেশ, আমাদের সময় ও সমকাল (এর বাইরে আরো বহু দৈনিক-সাপ্তাহিক বেরিয়েছে এই সময়ে, কিন্তু সবগুলো প্রভাবশালী মিডিয়া হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি)। আগেই বলেছি, এই পত্রিকাগুলো সমাজজীবনে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে, 888sport live football-সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। এই লেখায় শুধুমাত্র 888sport live footballের ক্ষেত্রে পত্রিকাগুলোর ভূমিকা নিয়ে দু-চারটি কথা বলতে চাই। আমাদের সংবাদপত্রজগতে যেমন পরিবর্তন এসেছে, বেড়েছে পাঠক, তেমনি প্রতিযোগিতাও বেড়েছে অনেক। আরো অনেক বিষয়ের মতো 888sport live footballও এসব পত্রিকার সৌন্দর্যবর্ধন এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। বুদ্ধিজীবী মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেতে হলে 888sport live footballের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া গতি নেই। সেটা এসব পত্রিকার মালিক-সম্পাদকদের বুঝে নিতে দেরি হয়নি। কিন্তু এত পত্রিকা, সে-তুলনায় লেখকের 888sport free bet কম, অতএব তরুণের দিকে চোখ ফেরাতে বাধ্য হলো পত্রিকাগুলো। তাছাড়া, অধিকাংশ পত্রিকার 888sport live football সাময়িকীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তরুণরাই। পত্রপত্রিকার 888sport app বিভাগেও এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ-সময়ের তরুণরা পালন করছেন পলিসিমেকারের ভূমিকা। তাঁরা যে নিজেদের সময়ের লেখকদের খানিকটা হাইলাইট করবেন, তা আর অস্বাভাবিক কী? এসব কারণেই নব্বইয়ের লেখকরা অল্প বয়সেই মিডিয়ার কাছ থেকে ব্যাপক প্রশ্রয় পেয়েছেন। পত্রিকাগুলো শুধু তাঁদের লেখা ছেপেই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছে, তাঁদের লেখা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ করে দিয়েছে, তাঁদের নিয়ে বৈঠকি, লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে নিয়মিতভাবে বিশেষ 888sport free bet প্রকাশ করেছে, তরুণদের অপ্রকাশিত প্রথম পাণ্ডুলিপিকে পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করেছে ইত্যাদি। আমাদের সময়ের আগে অন্য কোনো সময়ের লেখকরা মিডিয়ার মাধ্যমে এতখানি প্রচার পাননি। শুধু প্রচারই নয়, মিডিয়ার কল্যাণে কোনো কোনো লেখক রীতিমতো তারকাখ্যাতি পেয়েছেন। তারকা লেখক তৈরির প্রক্রিয়াটিও দৈনিক পত্রিকার 888sport live football সম্পাদকদের মস্তিষ্কজাত। প্রথম আলো সাময়িকী, অধুনালুপ্ত আজকের কাগজ সাময়িকী, অধুনালুপ্ত মুক্তকণ্ঠের 888sport live football সাময়িকী এক্ষেত্রে অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করেছে। এই সময়ের কথা888sport live chatীদের খ্যাতিমান করে তোলার পেছনে ঈদ888sport free betরও একটা ভূমিকা আছে। আগে একটা 888sport alternative link প্রকাশের জন্য লেখকদের সাপ্তাহিক বিচিত্রা বা রোববার বা সচিত্র সন্ধানীর ঈদ888sport free betর দিকে সারাবছর তাকিয়ে থাকতে হতো। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি ঈদ888sport free bet সব লেখককে সে-সুযোগ দিতে পারতো না। এখন চিত্রটা একেবারে বিপরীত। প্রতি বছর ঈদ888sport free bet বেরোয় কমপক্ষে বিশটি। একেকটি 888sport free betয় 888sport alternative link প্রকাশিত হয় কম হলেও দশটি করে। তার মানে, কমপক্ষে ২০০টি 888sport alternative linkের প্রয়োজন হয়; কিন্তু এত ঔপন্যাসিক কোথায়? ফলে পৃষ্ঠা ভরানোর জন্য হলেও তরুণ লেখকদের খোঁজ পড়ে। আমার সমকালের লেখকদের নিয়ে এসব কথা বলার অর্থ এই নয় যে, শুধুমাত্র মিডিয়ার কল্যাণে এঁরা লেখক হতে পেরেছেন, বরং নব্বইয়ের লেখকরা মিডিয়ার কী রকম আনুকূল্য পেয়েছেন তার সামান্য কিছু উদাহরণ হিসেবেই এ-কথাগুলো বলা হলো। আগেই বলেছি, আমাদের সময়ের লেখকরা রচনার প্রাচুর্যে, বৈচিত্র্যে, বহুমাত্রিকতায় এবং 888sport live chatকুশলতায় এমনসব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যা বিপুলভাবে 888sport live footballামোদী পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। তবে মিডিয়ার এতসব প্রচার-প্রপাগান্ডা, এতসব কলাকৌশল আর কারসাজিতে বিভ্রান্ত আমাদেরই কোনো কোনো বন্ধুর মধ্যে লেখক হওয়ার চেয়ে তারকা লেখক হওয়ার, কবি হওয়ার চেয়ে প্রধান কবি হওয়ার মানসিকতা জন্ম নিয়েছে। এই বিষয়টিকেই আমি আমাদের সময়ের সবচেয়ে নেতিবাচক দিক হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই।
এই সময়ে 888sport appsের প্রকাশনাজগতেও তরুণদের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর অন্তত একটি হলেও তরুণদের বই প্রকাশ করে। এ ছাড়াও কোনো কোনো নতুন প্রকাশক শুধু তরুণদের বই প্রকাশ করেই ব্যাপক মিডিয়া কাভারেজ পেয়ে খ্যাতিমান হয়ে উঠেছেন। তরুণদের বই প্রকাশ করলেই যে এমন মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যায়, তার কারণ কী? কারণ ওই একটিই – মিডিয়ায় তারুণ্যের প্রভাবশালী অবস্থান। বেশ কয়েক বছর ধরে বইমেলার সময় প্রতিটি দৈনিক পত্রিকা বইমেলা নিয়ে ব্যাক কভার পৃষ্ঠায় বিস্তারিতভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করে, এবং রিপোর্টাররা প্রধানত তরুণ। তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই তরুণ লেখকদের বইয়ের প্রকাশকদের প্রতি পক্ষপাত দেখান।
সব মিলিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে এই সময়ের তরুণদের প্রতিষ্ঠার পেছনে মিডিয়াগুলো নানাভাবে ভূমিকা রেখেছে। এর আগের প্রজন্মের কোনো লেখক এমন সুবিধা পেয়েছেন বলে মনে হয় না। তাহলে কি মিডিয়াই এই সময়ের নায়ক, তরুণরা কিছু নয়?  সে-কথা বলা খুবই অসংগত হবে। 888sport appsের সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে বহুমাত্রিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলছে, তরুণরা সেখানে রাখছে একটি প্রধান ভূমিকা। তরুণদের উপেক্ষা করে এই পরিবর্তনকে কোনোভাবেই বোঝা যাবে না। তরুণ লেখকরাও এই পরিবর্তন প্রক্রিয়ার অংশ। নব্বইয়ের দশকের নানারকম ডামাডোলের মধ্যে থেকেও এই সময়ের তরুণ লেখকরা এমন কিছু গল্প-888sport app download apk-888sport alternative link-888sport live রচনা করেছেন যে, একটু সচেতন হয়ে পাঠ করলেই বোঝা যায়, এই লেখকরা কোনোরকম উচ্চবাচ্য ছাড়াই 888sport appsের 888sport live footballকে পাশ ফেরাতে ভূমিকা রাখছেন।

পাঁচ
বেড়ে ওঠার সময়টি ফিরে দেখতে গিয়ে অনেক কথাই বলা হলো, আবার বহু কথা না-বলাই থেকে গেল। সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলোর প্রভাব কীভাবে 888sport live chatচর্চায় এসে পড়েছিল, সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদের উৎপাত, মুক্তবাজার অর্থনীতির ফাঁদ, বামপন্থী রাজনীতির হালচাল ও তাদের কাছে প্রত্যাশা, আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, সংস্কৃতি-চর্চার 888sport app দিক – সেসব নিয়েও অনেক কথা বলা যেত। ভবিষ্যতে অন্য কোথাও অন্য কোনো লেখায় তা বলার আকাক্সক্ষাও রইলো।