মন্ময় জাফর
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে পাঠ গ্রহণ করেছি নববইয়ের দশকে। তার পরেও স্যারের কাছে পাঠগ্রহণ অব্যাহত আছে। কারণ তাঁর লেখনী এখনো সচল, বয়স যদিও আশি ছুঁয়েছে। 888sport live football, সমাজ, রাজনীতি বিষয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ888sport free bet একশ বলেই আমার বিশ্বাস। সম্প্রতি বেশ কটি বড় কাজ তিনি সমাপ্ত করেছেন, যার মধ্যে বাঙালীর জাতীয়তাবাদ এবং জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে। 888sport apps বিষয়ক তাঁর লেখাসমূহ ব্যবহার করেছি আমার গবেষণায়, সুদূর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে। শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক তাঁর একাগ্রতা ও পরিশ্রমের ফসল গবেষণাগ্রন্থগুলো এভাবেই পাঠিয়েছেন শ্রেণিকক্ষের বাইরে সংস্থাপিত আমাকে এবং আমার মতো বহু পাঠক, গবেষককে। অধ্যাপক চৌধুরী এভাবেই পরিণত হয়েছেন আমার শিক্ষক হতে আমাদের শিক্ষকে।
বিগত চার দশকে অনেকগুলো পরিচয়ে অধ্যাপক চৌধুরীকে দেখার, জানার সুযোগ হয়েছে। কখনো তিনি ছিলেন আমাদের প্রতিবেশী, কখনো শিক্ষক ও সহকর্মী এবং সবসময়কার লেখক। আমার বর্তমান রচনাটি একটি প্রয়াস মাত্র, তাঁর অশীতিতম জন্মবার্ষিকীতে কিছু 888sport sign up bonus, অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধিকে পুঁজি করে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলার।
অধ্যাপক যখন প্রতিবেশী
888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদমিনারের উলটোদিকে শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় থাকার সুবাদে অধ্যাপক চৌধুরী এবং তাঁর পরিবারকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। নিতান্তই শিশু যখন বাবা-মায়ের হাত ধরে ওঁদের বাসায় গিয়েছিলাম, ওঁর স্ত্রী ডক্টর নাজমা জেসমিন চৌধুরীর শিশু নাট্যদল 888sport app লিট্ল থিয়েটারে যোগদান করতে। ওঁর স্ত্রী ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত। নাট্যকার, ছোটগল্প-লেখক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও সংগঠক। ওঁর নাটকের দলে কাজ করতেন নামকরা live chat 888sportকার মোরশেদুল ইসলাম, সে-সময়ে তিনি তরুণ যুবা। নাটকের সূত্রে ওঁদের বাড়িতে মহড়া বসতো প্রতি বিকেলে। খুদে অভিনেতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকতো ঘরদোর। ডক্টর নাজমা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে অভিনয় করেছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তাসের দেশ নাটকে, যার মঞ্চায়ন হয় বাংলা একাডেমি ও ব্রিটিশ কাউন্সিলে। স্ত্রীর নাট্যচর্চা ও নাট্য-আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তির ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী। ওঁর স্ত্রীও নানাবিধ দায়িত্ব পালন করে গেছেন দশভুজা দুর্গার মতো। সংসার সামলেছেন, করেছেন গবেষণা, পড়িয়েছেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজের লেখালেখির ক্ষতিটুকু স্বীকার করে নিয়েই তিনি সুগম করে দিয়েছিলেন স্বামীর পড়ালেখা ও রাজনীতির পথ। বেডরুম-সংলগ্ন খোলা জায়গায় মাটিতে উপুড় হয়ে লেখালেখির কাজটি সারতেন তিনি। তখন অধ্যাপক আহমদ শরীফের তত্ত্বাবধানে বাংলা 888sport alternative link ও রাজনীতি-শীর্ষক পিএইচ.ডি অভিসন্দর্ভ রচনায় ব্যসত্ম, যা পরে কলকাতা ও 888sport app থেকে প্রকাশিত হয়ে সমাদৃত হয়।
আমার বাবা 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম আন্দোলনের পুরোধা ‘গোলাপি দলে’ ছিলেন অধ্যাপক চৌধুরীর সহযোদ্ধা। আমার মা রোকেয়া হলের প্রিন্সিপাল আবাসিক শিক্ষক শাহেদা জাফরের ভাব ছিল চৌধুরী-দম্পতির সঙ্গে, ওঁদের দু-কন্যার সঙ্গে আমাদের দু-ভাইবোন তাতা ও মন্ময়ের। ‘জাফর, একটু উঁকি দেবে কি? – সিইচৌ’-স্বাক্ষর সংবলিত এমন বহু চিরকুট বাবাকে পৌঁছে দিয়েছি ‘নাই টেলিফোন নাই রে পিয়নের’ সেই আশির দশকে। আগেই বলেছি, শহিদমিনার সংলগ্ন-পাড়ায় আমরা থাকতাম; সেই সূত্রে ওঁরা আমাদের প্রতিবেশী। অধ্যাপক চৌধুরীকে দেখতাম 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে মেয়েদের স্কুল থেকে বাসায় এনে কাজে বসে যেতে। খেলার মাঠসংলগ্ন দীঘল বারান্দার এক প্রামেত্ম ছিল তাঁর অফিস, 888sport free bet login আর কাগজে ঠাসা। টেবিলে বসে তিনি দীর্ঘ সময় লেখালেখির কাজ করতেন, তবে গবেষণার কাগজপত্র ছড়ানো ছিল পুরো বারান্দায়। পথ চলতে, হাতের ডানে-বাঁয়ে চিরকুট কিংবা পরিত্যক্ত লেফাফায় তিনি নোট রাখতেন, কখনো পাঠযোগ্য, কখনো দুর্বোধ্য হাতের লেখায়। চিমত্মাভাবনা এবং লেখালেখির প্রক্রিয়াটি তাঁর ক্ষেত্রে ছিল অর্গানিক, জীবনধারণের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় শ্বাসকার্যের মতো। চিমত্মার জগতে এতটাই বুঁদ হয়ে থাকতেন যে, সংসার ও সমত্মানের দেখাশোনার কাজটি তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীর হাতে। অধ্যাপক চৌধুরীর বিখ্যাত হয়ে-ওঠার পেছনে ডক্টর নাজমা চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। বলা বাহুল্য, দুয়ে মিলে ওঁরা পরিণত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ার এক আকর্ষণীয় দম্পতিতে। মেধা, গবেষণা ও সাংগঠনিক কর্মকা– স্বামী-স্ত্রীর এমন মণিকাঞ্চনযোগ বিরল বটে।
ডক্টর নাজমা চৌধুরীর রসবোধ ছিল প্রখর। অধ্যাপক চৌধুরী তখন দৈনিক সংবাদে ‘সময় বহিয়া যায়’ শীর্ষক কলাম লিখছেন গাছপাথর ছদ্মনামে। তিনি বলতেন, ‘তোমাদের স্যার গাছে উঠে পাথর ছুড়ছেন।’ চুড়ি পরতেন না। কারণ চুড়ির শব্দে ওঁর স্বামীর কর্ণকুহরে ঝনঝন আওয়াজ হবে এবং ধ্যানভঙ্গ হবে। স্বামীর আত্মমগ্নতার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, একবার কোনো এক বিয়েবাড়িতে খাদ্যগ্রহণ এবং কুশলালাপ সেরে অধ্যাপক চৌধুরী স্ত্রীর কথা বেমালুম ভুলে যান। বাড়ি চলে আসেন ভরা মজলিশে স্ত্রীকে ফেলে। বিলেতে থাকাকালে জ্বরের ঘোরে দুদিন স্বামীর জিম্মায় সমত্মান রেখেছিলেন, জ্বর থেকে উঠে দেখলেন, ওঁদের শিশুকন্যা জামাকাপড়ের যেসব অংশ নষ্ট করেছে সেসব কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে বাকি অংশ দড়িতে ঝুলিয়ে রেখেছেন ওঁর অধ্যাপক-স্বামী।
আশির দশকের শেষভাগে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। ওঁর বিদুষী স্ত্রী, যাঁকে তিনি বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন, ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। 888sport appর চিকিৎসাব্যবস্থা তখন প্রকৃতার্থেই প্রাগৈতিহাসিক। ডক্টর নাজমা চৌধুরীকে বিদেশেও নেওয়া হয়। কিন্তু ততদিনে কর্কট রোগ রীতিমতো বাসা বেঁধেছে শরীরের যত্রতত্র। মাত্র উনপঞ্চাশ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়। এ-সময়ে আরো একটি বিপর্যয় ওঁদের পরিবারকে নাড়া দেয়। ওঁর স্ত্রীর শেষ দিনগুলোতে অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে রাতের বেলা বাড়ির গ্রিল কেটে চোর লুটে নিয়ে যায় ওঁদের সদ্যবিবাহিত বড় মেয়ের সকল অলংকার। পুলিশি তৎপরতায় ওঁরা বুঝতে সমর্থ হন যে, ওঁদের বাড়ির দুটি কাজের মেয়ে, যারা বিগত এক দশক ধরে পরিবারের সদস্যের মতোই হয়ে উঠেছিল, তারাই এই দস্যুবৃত্তির পেছনে চালিকাশক্তি। ওদের ছাঁটাই করা হয়, কিন্তু পরিবারে ওদের অতীত অবদানের কথা 888sport app download for android করে নিজ গুণে ওদের ক্ষমা করে দেন অধ্যাপক চৌধুরী। ওঁর বটবৃক্ষসম উদারনৈতিক মনের এই পরিচয় কিশোর বয়সে আমাকে ওঁর প্রতি আরো 888sport apk download apk latest versionশীল করেছিল।
একসময়ে শহিদমিনার পাড়া ছেড়ে আমরা অন্যত্র বসতি স্থাপন করলে চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে প্রাত্যহিক যোগাযোগে যতি পড়ে। রাজনৈতিক অসমঝোতার কারণে আমার বাবা ও অধ্যাপক চৌধুরীও তখন ভিন্ন পথে হাঁটতে শুরু করেছেন। ওঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধটুকু বজায় ছিল, তবে ভাটা পড়েছিল নিত্যদিনের সৌহার্দ্যে।
শিক্ষক এবং সহকর্মী
শহিদমিনার পাড়া ছাড়ার অর্ধযুগ পরে অধ্যাপক চৌধুরীর সঙ্গে আবারো দেখা হয় যখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষ সম্মান শ্রেণির ছাত্র হিসেবে আমার পদযাত্রা শুরু হয়। ইংরেজি বিভাগের তখন স্বর্ণযুগ চলছে। কবীর চৌধুরী, খান সারওয়ার মুরশিদ, আহসানুল হক, রাজিয়া খান আমিন এবং সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতো প্রথিতযশা শিক্ষকরা তখন পড়াচ্ছেন। এঁদের অনেকেই আজ আমাদের মধ্যে নেই। বেশ মনে আছে, অধ্যাপক চৌধুরী আমাদের প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বর্ষে পড়াননি। পড়িয়েছিলেন 888sport live 888sport live football, বেকনের – তৃতীয় বর্ষে। ওঁর বেকনের মৌমাছিরা বোধ করি ততদিনে বেরিয়ে গেছে। 888sport appsের 888sport liveের অন্যতম দিকপাল যে বিলেতের 888sport liveের দিকপালকে পড়াবেন এতে আর বিস্ময়ের কী আছে! খুব ভালো বক্তৃতা দিয়েছিলেন। মুখোচ্চারিত প্রতিটি বাক্যই খাতায় লিপিবদ্ধ হওয়ার দাবিদার। গুরুগম্ভীর কণ্ঠে পড়াতেন। পঞ্চাশ মিনিটের টানা বক্তৃতা। মাঝখানে থেমে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথোপকথন কিংবা সংযোগ স্থাপনের সুযোগ তিনি রাখতেন না। তাঁর জ্ঞানতাড়িত দৃষ্টি আমাদের বিদ্ধ করে রাখত পুরোটা সময়। ক্লাসে বক্তৃতা ইংরেজিতে দিতেন, বাংলার কোনো মিশেল সেখানে ছিল না। ক্লাসের বাইরে কথা বলতেন বাংলায়, ইংরেজি শব্দ আমদানি ছাড়া। প্রয়োজনে প্রেসকে ছাপাখানা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেননি। দুটি ভাষার জগাখিচুড়ি অধ্যাপক চৌধুরীর কাছে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হতো।
মাস্টার্সে আমাদের পড়িয়েছিলেন ডি. এইচ. লরেন্স, যা কিনা বিলেতের লিড্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঁর পিএইচ.ডি গবেষণার অন্তর্গত বিষয় ছিল। বিভাগে প্রচলিত ছিল, বিখ্যাত ও বিতর্কিত ঔপন্যাসিক লরেন্সের যৌনতার বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যেতেন তাঁর বক্তৃতায়। ‘He taught us Lawrence without mentioning the word sex!’ একজন অধ্যাপিকা, যিনি অধ্যাপক চৌধুরীর প্রাক্তন ছাত্রী, প্রায়ই কৌতুক করে এই কথাটি বলতেন। ঠিকই বলেছিলেন। যৌনতা নয়, বরং শ্রেণির প্রশ্নটিই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছিল অধ্যাপক চৌধুরীর বক্তৃতায়। সেখানেই বিশেস্নষণাত্মক থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর গবেষণা, লেখালেখি, বাম বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমাজের সঙ্গে, বিবিধ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, এ সবকিছুই প্রভাবিত করেছিল লরেন্সকে তিনি কীভাবে পড়তে ও পড়াতে চান, শ্রেণিকক্ষে। ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর একটি দূরত্ব ছিল – সে-দূরত্ব জ্ঞানের, বয়সের, ব্যক্তিত্বের। ভয়মিশ্রিত সম্মান তিনি উদ্রেক করতেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তাঁর লেখায় তিনি বারবার বলেছেন, ‘দরজাটা খুলে দাও।’ কিন্তু বিভাগে তাঁর অফিসকক্ষের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করার সাহস খুব কম জনেরই ছিল; কথাটি সম্ভবত এখনো প্রযোজ্য।
বিভাগে তিনি প্রতিদিনই আসতেন। ক্লাস থাকুক আর না-ই থাকুক। অনুমতিসাপেক্ষে তাঁর অফিসে প্রবেশ করে অধিকাংশ সময় তাঁকে পঠনরত দেখেছি। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির ইংরেজি 888sport live footballের যে-কটি বই পড়তে গেছি, রেকর্ডে দেখেছি আমার আগেই সেটি পড়ে রেখেছেন। নববইয়ের দশকের শেষদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জমানা এসে গেল। অতিরিক্ত রোজগারের আশায় অনেক শিক্ষক তখন উত্তর-দক্ষেণ, পূর্ব-পশ্চিম নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। এত ডামাডোলের মধ্যে অর্থগৃধণু হওয়ার হাতছানিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন অধ্যাপক চৌধুরী। জীবনযাপনের জন্য কখনোই বেশি অর্থের প্রয়োজন তাঁর ছিল না। প্রয়োজন ছিল, প্রাধান্য ছিল চিমত্মার জগতের। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের নামজাদা অধ্যাপকদের মধ্যে অধ্যাপক চৌধুরীরই কোনো গাড়ি ছিল না। তিনি ক্লাসে আসতেন রিকশায় চড়ে।
১৯৯৮ সালে তাঁকে পেলাম 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সহকর্মী হিসেবে; বয়স তখন তাঁর ষাট পেরিয়েছে। বিভাগীয় রাজনীতি নিয়ে স্যারকে কিছুটা বিরক্তই মনে হয়েছে। ফলে বিবিধ বিষয়ে তাঁর দূরত্বসূচক নির্লিপ্ততা লক্ষ করেছি। কোনোরকম পঙ্কে পা ডোবাতে নারাজ ছিলেন। কোনো বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে যে-ব্যক্তি বড় হতে পারেন, অধ্যাপক চৌধুরী তার বড় প্রমাণ। ‘আমার রয়েছে বিশ্বলোক’ – এইরকম একটি দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিল। জীবনের গোধূলিবেলায় তাঁর লেখক পরিচয়টিই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনী’ হুঙ্কাররত দুর্যোধনদের সঙ্গে যুঝবার রুচি অধ্যাপক চৌধুরীর ছিল না।
সম্প্রতি আমার বর্তমান কর্মস্থল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত এক বক্তৃতায় তিনি 888sport appsের শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলতে গিয়ে ভাষাকে প্রধান করে, 888sport live footballকে পাশ কাটিয়ে তথাকথিত ELT চালু করার প্রবণতার সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, উনিশ শতকে ইংরেজি বাঙালির সামনে বিশ্বের দুয়ার খুলে দিয়েছিল। কিন্তু অধুনা শিক্ষা শুধু কারিগরি প্রয়োজননির্ভর হয়ে পড়ায় এই শিক্ষা অনুগত দাস সৃষ্টি করছে, যারা একটি বৃত্তে আবদ্ধ। সেই বৃত্ত ভেঙে কীভাবে বের হতে হবে, কীভাবে নতুন কিছু সৃজন করতে হবে, মননশীলতার চর্চা করতে হবে, বর্তমান শিক্ষা তা শেখায় না। ছকে ফেলে মানুষ তৈরির এই প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, 888sport appsের ইংরেজি 888sport live footballের বিভাগগুলো একে-একে যেন ইংরেজি ভাষাশিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে; 888sport live football সেখানে অনেকাংশে নির্বাসিত। এর প্রতিবাদ আসতে হবে বিভাগের ভেতর থেকেই। দুঃখজনক হলেও সত্য, তাঁর নিজ কর্মস্থল 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ক্রমশ ইংরেজি ভাষাশিক্ষার স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে, তিনি তা ঠেকাতে পারেননি। মতাদর্শ প্রচার ও প্রয়োগের মধ্যকার এই ফারাক পীড়াদায়ক।
সবসময়কার লেখক
সাম্প্রতিক সময়ে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর মধ্যে বাঙালীর জাতীয়তাবাদ; জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি, উপনিবেশের সংস্কৃতি এবং দুই যাত্রায় এক যাত্রী প্রণিধানযোগ্য। ওঁর লেখায় প্রবলভাবে উঠে এসেছে 888sport live football, সমাজ, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ভাষার প্রশ্ন – বাঙালিকে ঘিরে। ১৯৪৭ এবং ১৯৭১-কে তিনি বাঙালি জীবনের দুটি নিয়ন্ত্রক বছর হিসেবে দেখেছেন এবং দেখিয়েছেন কীভাবে সংশিস্নষ্ট রাজনৈতিক ঘটনাবলি তাঁর জীবন ও দর্শনকে প্রভাবিত করেছে। 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামের আমূল বিশেস্নষণ তিনি করেছেন এ-গ্রন্থগুলোতে। বলেছেন, একাত্তরে স্বাধীনতা এসেছে, কিন্তু জনগণের মুক্তি আসেনি। যে শোষণমুক্ত, শ্রেণিহীন সমাজ ও রাষ্ট্রের কথা একাত্তরে ভাবনায় ছিল তা বাসত্মবায়িত হয়নি। জনগণ যে শুধু মুক্ত হয়নি তা-ই নয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও তারা লাভ করেনি। ব্রিটিশ উপনিবেশ যুগের পুঁজিবাদ ও আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর যেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে, তেমনি ১৯৭১ সালে 888sport apps সৃষ্টির মাধ্যমে পাকিস্তানের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও আমলাতান্ত্রিকতারও কোনো পরিবর্তন হয়নি, মূল কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন সাধিত না হওয়ায়। যে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা পাকিস্তানের দুটি ডানার বিভাজনকে অনিবার্য করে তুলেছিল, স্বাধীন 888sport appsে সেই বৈষম্য কমেনি, বরং বেড়েছে। বিশ শতকে এই উপমহাদেশের মানুষ দাঙ্গা দেখেছে, ক্ষমতার হস্তান্তর দেখল, এমনকি বড়-বড় নেতাও পেল, কিন্তু ‘ক্ষমতার হস্তান্তরকে স্বাধীনতার লক্ষক্ষ্য নিয়ে যাবার মতো নেতৃত্ব পাওয়া গেল না’। নেতৃত্বের সংকট প্রবল হয়েছে স্বাধীন 888sport appsেও। যেমন, বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা 888sport appsের মূলনীতির অংশ ছিল, কিন্তু রাষ্ট্রের কার্যপ্রণালি এবং দৈনন্দিন শাসনে এর প্রয়োগ কীভাবে হবে তা নিয়ে ’৭১-পরবর্তী সরকারের ধারণা অস্পষ্ট ছিল বলেই অধ্যাপক চৌধুরী মনে করেন। ‘ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা আগে হয় নি, চট করে তার চর্চা সম্ভবও হলো না। প্রতিবিপ্লবী শক্তিরা ছিলো, তারা সুযোগ খুঁজতে লাগলো মুসলিম বাংলার আওয়াজ তুলবার। আর ক্ষমতাসীন মহলও মনে হলো যেন দ্বিধায় আছে, বার বার বলা হতে লাগলো যে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়।’
888sport appsের অভ্যুদয়কে তিনি উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটেই বিচার করে থাকেন তাঁর লেখায়। সমাজবিপ্লবে বিশ্বাসী এই লেখক মনে করেন, ১৯৪৭-পরবর্তী সময়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রই সমাজবিপ্লবকে প্রতিহত করতে চেয়েছে। এর জন্যে তারা রাষ্ট্রের অখ-তা, সীমামেত্ম যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি, নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার – কোনো কিছুই বাদ রাখেনি। উৎসাহিত করেছে সামাজিকভাবে পশ্চাৎপদ নানাবিধ ধারণাকে। ধর্মের বিভিন্নমাত্রিক রাজনৈতিক ব্যবহার আমরা এই সময়ে দেখি, যার ধারা অব্যাহত রয়েছে এখনো। এ সকল সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখায় মধ্যবিত্ত। কিন্তু যে-মধ্যবিত্ত প্রগতির কথা বলে, সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন দেখায়, নিজের সুবিধাগত অর্থনৈতিক অবস্থান ছাড়তে গররাজি বলে, সে-ই আবার বিপ্লবের পথ থেকে পিছিয়ে আসে। মধ্যবিত্তের এই দোদুল্যমানতাকে সংগত কারণেই দুষেছেন অধ্যাপক চৌধুরী। পুঁজিবাদ যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে এবং এই বিচ্ছিন্নতা যে অধুনা 888sport appsের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিপ্রাপ্ত শ্রেণিকে ক্রমাগত গ্রাস করছে তা অধ্যাপক চৌধুরীর মতো জোর দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে খুব কম লেখকই বলেছেন। যে ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য মানুষ ১৯৭১ সালে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল, তা তারা পায়নি। 888sport apps রাষ্ট্রের এটিই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি বলে তিনি মনে করেন।
অধ্যাপক চৌধুরীর গদ্যরীতি সম্পর্কে দু-একটি কথা না বললেই নয়। আজকাল আভিধানিক বাংলা লেখার একটি প্রয়াস লক্ষ করা যায়। হয়তো একটি টেক্সট সম্বন্ধে ধারণা অস্পষ্ট, কিন্তু নানাবিধ অপ্রচলিত বাংলা শব্দ ব্যবহার করে এমন একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয় যে, অনভিজ্ঞ পাঠকের কাছে মনে হতেই পারে তিনি ব্যাপক কিছু পাঠ করে বসেছেন। কিন্তু এ-ধরনের লেখা একটু খুঁটিয়ে পড়লেই লেখকের চিমত্মার অস্বচ্ছতা এবং বক্তব্যের অসারতা ধরা পড়ে। অধ্যাপক চৌধুরী তাঁর লেখায় স্বচ্ছতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং ভাষার যে মূল উদ্দেশ্য যোগাযোগ, সেটিকে সামনে এনেছেন, যার কারণে তাঁর গদ্য বাঁধভাঙা নদীর মতো প্রবহমান। কোথাও ঠেকে যায় না, কোথাও হোঁচট খায় না। গল্পকথনের একটি নিজস্ব ভঙ্গি তাঁর আছে, যা পাঠককে টেনে নিয়ে যায় রচনার মর্মমূলে। এই ভঙ্গিটি হয়তো অনিবার্য ছিল, কেননা প্রথম জীবনে তিনি গল্পকারই হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে পথ পরিবর্তন করে হয়ে গেলেন প্রাবন্ধিক। অনেকে অবশ্য বলেন, তাঁর লেখা কখনো কখনো হয়েছে পুনরাবৃত্তি দোষে দুষ্ট। তবে পারফেক্শনিস্ট বা নিখুঁতবাদী হলে অধ্যাপক চৌধুরীর পক্ষে হয়তো এতো কাজ করা সম্ভব হতো না।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আশিতে পা রাখা উপলক্ষে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাই। কৃতার্থ বোধ করি, কারণ তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন এবং ক্রমাগত লিখছেন। বাঙালির ইতিহাস, 888sport live football, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে তাঁর মতো খুব কম লেখকই পড়েছেন, জেনেছেন, বুঝেছেন। তাঁর কলম সক্রিয় থাক, পাঠবিমুখ এবং ফেসবুকপীড়িত বর্তমান প্রজন্মকে বইমুখী করুক এবং জাতিকে বিভিন্ন সংকট উত্তরণের পথ দেখাক – এই কামনা করি।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.