আমার যতীন স্যার

যতীন স্যারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের দিনটি এখনো স্পষ্ট মনে আছে। ১৯৯৫ সাল। ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আমি। দৈনিক পত্রিকায় গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে চিঠি লিখি, এখানে-ওখানে বিতর্ক করি; ভালো ছাত্র হিসেবেও সুনাম রয়েছে। যতীন সরকার নামে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ময়মনসিংহে আছেন তা আমি জানতাম, বাবার মুখে তাঁর নাম শুনেছি একাধিকবার। কখনো তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ ঘটেনি। একদিন আমার স্কুলের শিক্ষক শফিউল্লাহ স্যার জানালেন

সংবাদ-এর চিঠিপত্র কলামে ব্যাকরণ বিষয়ে আমার অনুসন্ধিৎসা যতীন স্যারের চোখে পড়েছে। আমি যেন দেখা করি তাঁর সঙ্গে। বাবার হাত ধরে স্যারের বাসায় গেলাম ১১ই ফেব্রুয়ারি বিকেলে।

প্রথম দেখাতেই আপন করে নিলেন। আলাপচারিতায় জানা গেল, আমার বাবার শিক্ষক প্রয়াত কবি নূরুল হকের শিক্ষক যতীন স্যার। প্রায় চার ঘণ্টা ছিলাম তাঁর বাসায়। আমি কী পড়ি, কী লিখি সবই জিজ্ঞাসা করলেন। বাবা ও স্যারের কথোপকথন বেশ উপভোগ করছিলাম। সেদিনই বলে দিলেন, ২০শে ফেব্রুয়ারি দুর্গাবাড়িতে অনুষ্ঠেয় পূর্ণিমা সম্মেলনে যেন যোগদান করি। সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে অপ্রস্তুত হলাম। প্রত্যেক পূর্ণিমা তিথিতে দুর্গাবাড়িতে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। স্যার আমাকে আহ্বান জানালেন কিছু বলার জন্য। আমি বিনীতভাবে বললাম, ‘আরেকদিন বলব, আজ শুধু দেখতে এসেছি।’

কিছুদিন পরে আরো বড় বিস্ময় ঘটে গেল। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি আমাকে আলোচক হতে বললেন। রবীন্দ্রজয়ন্তীর আলোচক দশম শ্রেণি পড়ুয়া বালক – এমন দৃশ্য কে কবে দেখেছে! আমি এই দুঃসাহসিক কাজে প্রবৃত্ত হতে রাজি হলাম অন্য কারণে। স্যারের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সুদীপ্তাও ওই অনুষ্ঠানের আলোচক। ভাবলাম, আমার ছোট হয়ে সে যদি আলোচনা করতে পারে তবে আমি কেন পারবো না। যথারীতি আলোচনা করলাম এবং ময়মনসিংহের সুধী সমাজের চোখে ‘কেউকেটা’ হয়ে গেলাম। আমি তখন নতুন লেখক ও বক্তা হওয়ার আনন্দে বিভোর। দৈনিক পত্রিকায় সেই অনুষ্ঠানের বিবরণ ও তাতে আমার নাম দেখে আনন্দ শতগুণ বেড়ে গেল। একই ঘটনা ঘটলো কিছুদিন পরে নজরুলজয়ন্তীতে। সেখানেও আমি আলোচক। এভাবে যতীন স্যারের হাত ধরে 888sport live football-সংস্কৃতির বিস্তৃত জগতে আমার পদচারণার সূত্রপাত।

আমার প্রতি শুধু স্নেহপ্রদর্শন নয়, আমার নির্মম সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেননি স্যার। উদ্দেশ্য ছিল শুধরে দেওয়া। অস্থিরমতি হয়ে অনেক বেশি লেখালেখিকে নেতিবাচক লক্ষণ মনে করতেন স্যার। বেশি পড়তে বলতেন, সিস্টেমেটিক পড়াশোনা করতে বলতেন। শুধু আমাকে নয়, সম্ভাবনাময় বিভিন্ন তরুণকে তিনি উদ্ধুদ্ধ করেছেন সিস্টেমেটিক পড়াশোনার জন্য। মুক্তচিন্তা ও 888sport apkমনস্কতার প্রতি আমাদের আগ্রহী করে তুলতেন। ১৯৯৬ সালে এসএসসি পাশ করে 888sport appয় নটর ডেম কলেজে চলে আসি। স্যারের সঙ্গে সাময়িক বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। দু-বছর পর আবার স্যারের সঙ্গে নিয়মিত দেখা হয়। তাঁর বক্তৃতা শুনতে বিভিন্ন জায়গায় যাই। তাঁর বিভিন্ন লেখা প্রায়ই পড়ে শোনান আমাকে। আমি নানাভাবে সমৃদ্ধ হতে থাকি।

২০০১ সালে আমার প্রথম বই 888sport appsে ধর্মনিরপেক্ষতার ভবিষ্যৎ প্রকাশিত হয়। প্রিয় শিক্ষক স্বপন ধরের আগ্রহে এর একটি প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যতীন স্যার। আমার মতো নবীন লেখকের জন্য পরম পাওয়া ছিল তাঁর লেখা ভূমিকা। আমাকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে সেই ভূমিকার শেষে লিখেছিলেন, ‘বাংলার সারস্বত সমাজে এই লেখক একদিন মর্যাদার আসনে আসীন হবে বলে আমি মনে করি।’ কিন্তু আমার বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তাঁর অন্যরূপ। আমাকে ঘিরে এরই মধ্যে একটি প্রশংসাবলয় গড়ে উঠেছিল। আমিও বেশ খোশমেজাজে ছিলাম। নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ছিলাম অসচেতন। স্যার তাঁর বক্তৃতায় বঙ্কিমচন্দ্র-লিখিত ‘বাংলার নব্যলেখকদের প্রতি’ পাঠ করে শোনালেন। আমার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বললেন দর্শক-শ্রোতার সামনে। সেদিন মনটা বিষণ্ন হয়েছিল, পরে বুঝেছি সেদিনের কড়া বাক্যবর্ষণ আমার জন্য দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছে।

আমার প্রতি স্যারের অসীম স্নেহ সবসময় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। আমার বইয়ে কী লিখে তাঁকে উপহার দেব তা নিয়ে যখন দ্বন্দ্বে ভুগছি, তখন সাহায্য করেন আমার বাবা। তাঁর পরামর্শে স্যারকে লিখেছিলাম ‘পিতৃপ্রতিমেষু’। আমার মানসজগতে তাঁর অবস্থান সত্যিই পিতৃতুল্য।

মনে পড়ছে ২০০৪ সালের একটি ঘটনার কথা। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে আঘাতের প্রতিবাদে আমরা 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছি। ময়মনসিংহেও একটি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। আমি সেখানে অংশগ্রহণ করি। বক্তারা জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখছেন। স্যার অনুষ্ঠানের ঘোষককে বললেন আমাকে ডাকার জন্য। সেই ঘোষক আমাকে ডাকলেন না। একপর্যায়ে যতীন স্যারকে বক্তৃতা করতে ডাকা হলো। এই ধরনের আয়োজনে স্যারই সাধারণত শেষ বক্তা। অবাক হয়ে দেখলাম বক্তৃতার পর স্যার ঘোষককে ভর্ৎসনা করছেন আমাকে না ডাকার জন্য। ‘ছেলেটি 888sport app থেকে এসেছে, ওদের শিক্ষককে মেরেছে। ওকে বলতে দিচ্ছো না কেন?’ স্যার রেগে কথাগুলো বললেন। আমাকে ডাকা হলো। লজ্জা ও রাগ এ দুয়ের মিশ্র অনুভূতি হলো আমার মাঝে। যতীন স্যারের মতো বক্তার বক্তব্যের পর আমার পালা – লজ্জা এ জন্য। রাগ হলো ওই উপস্থাপকের বেয়াদবি দেখে। মনে হলো, স্যারের মুখ রক্ষার জন্য হলেও খুব ভালো বলতে হবে আমাকে। সেদিন স্যারের মর্যাদা রক্ষা করেছিলাম।

আমার যে-কোনো দুর্যোগে তিনি ছুটে এসেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বাসায় ছেলের মতো যাতায়াত করেছি। ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছি। স্যারের পরিবার থেকে যথেষ্ট সমর্থন পেয়েছি তখন। ২০০৮ সালে ১লা ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই আমার বাবা লোকান্তরিত হলেন। আমি সুদূর বাগেরহাট থেকে ময়মনসিংহে ছুটে আসছি। সেদিন 888sport appয় স্যারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল, তিনি সেখানে না গিয়ে আমার বাসায় উপস্থিত। যখন বাবার মুখের দিকে তাকাতে যাব, স্যার পরম স্নেহে আমার মাথায় হাত রাখলেন। বাবার দেহ যখন কাঁধে করে গাড়িতে তুলছি, স্যার অশ্রু মুছে মুখ সরিয়ে নিলেন।

স্যার প্রকাশপ্রিয় নন। আমাকে তিনি যতটা স্নেহ করেন, তার সামান্য বহিঃপ্রকাশই ঘটিয়েছেন। তাঁর প্রতি আমার 888sport apk download apk latest version অসীম। আরেক 888sport apk download apk latest versionভাজন শিক্ষক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তাঁকে সম্বোধন করেন ‘রাজীবের গুরু’ বলে। আমি আক্ষেপ করে ভাবি – হায়! তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করার সৌভাগ্য আমার হলো না। তাঁর শিষ্য হওয়ার মতো মেধা হয়তো আমার ছিল, ছিল না পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা। তাঁর সামনে এই দুর্বলতা স্বীকারে আমার কোনো সংকোচ ছিল না। আমি আজ যা হয়েছি, যতটুকু অর্জন করেছি তার নেপথ্য রূপকার দুজন – আমার বাবা ও যতীন স্যার। আমার জন্মদিনে একটি বই উপহার দিয়ে স্যার লিখেছিলেন – ‘রাজীব, তোমার সজীব মন/ হবে প্রজ্ঞার প্রজ্ঞাপন/ জ্ঞান ও কর্মের হবে যোগ/ দূরে যাবে সব দুর্ভোগ।’ এমন আশীর্বাণী আমাকে সবসময় উদ্দীপ্ত করে।

স্যারকে নিয়ে ব্যক্তিগত 888sport sign up bonusচারণার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। এখানে ‘আমি’ শুধু ‘আমি’ নই। আমার মতো বিভিন্ন তরুণ স্যারের সান্নিধ্যে এসেছে এবং তাদের জীবনের গুণগত পরিবর্তন আমি ঘটতে দেখেছি। এখানে তাঁর অন্যতম বিশেষত্ব। সমকালীন লেখক-বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই যখন তরুণদের সামনে কোনো আদর্শ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ, নতুন প্রজন্মকে সময় দিতে অপারগ তখন যতীন স্যার উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। তিনি সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন তরুণদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য। সেটি বিতর্ক সভা, পাঠচক্র, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক সমাবেশ যা-ই হোক না কেন। অন্তত তিনটি প্রজন্মকে তিনি শিক্ষিত করেছেন। আমরা তাঁর প্রজ্ঞা ও মেধার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারিনি। তাঁর হাসি, রসিকতা, ধমক, ক্ষোভ, আশাবাদ – কোনো কিছুই অর্থহীন নয়।

আমার সৌভাগ্য, তাঁর মতো একজন কীর্তিমান বাঙালির ঘনিষ্ঠ সাহচর্য পেয়েছি। তিনি আমার জীবনকে বদলে দিয়েছেন। খুব ভালো অ্যাকাডেমিক ফলাফল করে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল আমার। কিন্তু সেদিকে না গিয়ে জ্ঞানের বিচিত্র শাখা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি আগ্রহী হয়েছি তাঁর প্রত্যক্ষ প্রভাবে। তিনি আমাকে নতুনভাবে চিন্তা করতে শিখিয়েছেন, বিস্মৃত পরিসরে জগৎকে দেখার উপায় বাতলেছেন। আমি এক সাধারণ লেখক। স্যারের মতো বড় লেখকের বই নিয়ে আলোচনা করার দুঃসাহস দেখিয়েছি ছাত্রজীবনেই। তাঁর অর্জিত জ্ঞানের আলো দিয়ে তিনি আমাকে আলোকিত করতে চেয়েছেন।

আমার পারিবারিক নাম জয়। পত্রপত্রিকায় লিখতাম ‘রাজীব কুমার সরকার জয়’ নামে। নিজের নামের সঙ্গে ডাকনাম জুড়ে দেওয়ার প্রবণতা এদেশের অনেক মানুষের রয়েছে। স্যার খুব অপছন্দ করেন এই রীতিকে। তাঁর পরামর্শে আমি ‘রাজীব সরকার’ হয়ে গেলাম। এ শুধু আমার নতুন নামকরণ নয়, নবজন্ম লাভও। স্যারের জীবনদর্শন অনুসরণ করতে পারিনি, তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হইনি; কিন্তু তিনি আমার রূপান্তর ঘটিয়েছেন অন্যভাবে। সবকিছুকে যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করার ও নির্মোহভাবে দেখার শিক্ষা আমি তাঁর কাছেই পেয়েছি।

যতীন স্যারের পাণ্ডিত্য, সততা ও গণমানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রশ্নাতীত। সাম্যবাদী চেতনার বলিষ্ঠ ধারক ছিলেন তিনি। সারাজীবন নির্লোভ, সৎ ও আদর্শবাদী জীবন যাপন করেছেন। গাড়ি, বাড়ি বা অন্য কোনো মোহ তাঁকে কখনো আচ্ছন্ন করতে পারেনি। তাঁর একমাত্র সম্পদ ছিল বই। ধনার্জন অপেক্ষা জ্ঞানার্জন মহত্তর – এই ছিল স্যারের দৃষ্টিভঙ্গি। স্যারের অত্যন্ত সমৃদ্ধ লাইব্রেরি দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। 888sport live football, 888sport live chat-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, দর্শন, ইতিহাসসহ বিচিত্র বিষয়ে দেশ-বিদেশের বইয়ের বিপুল সংগ্রহ ছিল তাঁর। শুধু সংগ্রহ নয়, তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব বই পড়তেন। বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় তিনি দাগ দিয়েছেন, কোনো কোনো পৃষ্ঠায় নিজের মন্তব্য লিখেছেন। স্যার নিজের লেখা বা অন্য লেখকের লেখা দর্শনার্থীদের পাঠ করে শোনাতেন। স্যারের বহু লেখার প্রথম পাঠক আমি। অন্তত পঁচিশ বছর স্যারের কাছ থেকে এভাবে শিক্ষা গ্রহণের সৌভাগ্য আমার হয়েছে।

আমার মতো বহু শিক্ষার্থীকে স্যার বলেছেন, প্রত্যেকের জীবনে একটি দর্শন থাকা উচিত। জীবনদর্শন ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। যে-কোনো মননশীল ব্যক্তিরই জীবনদর্শন থাকে। প্রাজ্ঞ ও মননশীল যতীন স্যার নিজের জীবনদর্শনকে মূর্ত করে লিখেছিলেন ‘আমি অদৃষ্টে বিশ্বাসী, নিয়তিবাদী ও 888sport apkসচেতন’ 888sport liveটি। তিনি দ্বান্দ্বিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদে বিশ্বাসী, যা মার্কস-অ্যাঙ্গেলসের চিন্তার সংহত রূপ। বিচার-বিশ্লেষণহীন মার্কসবাদী তিনি নন। প্রকৃতি ও সমাজের দ্বান্দ্বিকতা, ইতিহাসের বিচিত্রবিধ গতি এবং ব্যক্তিমানুষের চিন্তা ও কর্মের বহুমাত্রিক দ্বন্দ্ব সম্পর্কে তিনি সচেতন। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে বাদ ও প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তত্ত্বের বোধ গড়ে ওঠার প্রাচীন ভারতীয় ন্যায়সূত্র তিনি কৈশোরেই চেতনায় ধারণ করেছিলেন। যৌবনে মার্কসীয় 888sport live footballপাঠ এবং নিবিড় অনুশীলন তাঁকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের অনুসারী হতে প্রেরণা জোগায়। প্রথাগত মার্কসবাদীদের মতো ধর্মচর্চাকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেননি, অস্বীকার করেননি সভ্যতার অগ্রগতিতে বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থার প্রগতিশীল অবদানকে।

স্যার যতদিন সুস্থ ছিলেন ততদিনই শিক্ষার্থী, অনুরাগী ও দর্শনার্থীদের সময় দিয়েছেন। তাঁর বাসভবন ‘বানপ্রস্থ’ হয়ে উঠেছিল এক অনানুষ্ঠানিক বিদ্যানিকেতন। নিজ গৃহে ছোট ভাই অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকারের সহায়তায় গড়ে তুলেছিলেন রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র। বাসার সামনে উন্মুক্ত প্রান্তরে নিয়মিত আয়োজিত হয়েছে বিভিন্ন উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানগুলোতে যতীন স্যার ছিলেন মধ্যমণি। শুধু নেত্রকোনায় নয়, তাঁর দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ময়মনসিংহেও যেকোনো অনুষ্ঠানে যতীন স্যারের বক্তৃতা ছিল প্রধান আকর্ষণ। তাঁর অতুলনীয় বাগ্মিতার কাছে মøান হয়ে যেত পদাধিকারী জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের সাড়ম্বর উপস্থিতি। দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছে। তাতে যতীন স্যারের মাহাত্ম্যের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটেনি। তিনি বরাবরই 888sport apk download apk latest versionর উচ্চ আসনে আসীন ছিলেন।

ময়মনসিংহ শহরে দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক জগতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন যতীন স্যার। নব্বইয়ের দশকে আমি যখন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের ছাত্র, তখন দেখেছি – মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীলতার ধারক ব্যক্তি-গোষ্ঠীর প্রধান আশ্রয়স্থল যতীন স্যার। দীর্ঘ সময় ধরে ‘মুক্ত বাতায়ন পাঠচক্র’ পরিচালনা করেছেন। পূর্ণিমা সম্মেলনের মতো ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী ও উদারমনস্ক ব্যক্তিদের সংগঠিত করেছেন। বিভিন্ন পাঠচক্র ও আলোচনাসভায় তাঁর কথা শুনে আমি শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। শুধু আমি নই, যে-কোনো জ্ঞানপিপাসু তরুণের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য যতীন স্যারের বাসা ছিল এক উজ্জ্বল বিদ্যাপীঠ। যখনই তাঁর বাসায় গিয়েছি, দেখেছি তাঁকে ঘিরে উৎসাহী শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও রাজনৈতিক কর্মীদের আড্ডা। বুদ্ধিদীপ্ত, পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও রসিকতাময় আলাপে তিনি প্রাণবন্ত করে তুলেছেন আড্ডাকে।

দেশের কেন্দ্রস্থল রাজধানীতে বসবাস না করেও বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক জগতে যে নেতৃত্ব দেওয়া যায় তাঁর উজ্জ্বল উদাহরণ যতীন স্যার। বাংলা একাডেমি, 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, উদীচী কার্যালয়, বিশ্ব888sport live football কেন্দ্রসহ নানা স্থানে যতীন স্যার অসংখ্য আলোচনা ও প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেছেন। শ্রোতারা সাধারণত দীর্ঘ বক্তৃতা পছন্দ করেন না। তিনি ছিলেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। শ্রোতার আসনে বসে বহুবার উপলব্ধি করেছি, পিনপতন নীরবতার মধ্য দিয়ে তাঁর দীর্ঘ বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে যাচ্ছেন দর্শক-শ্রোতা। 888sport appসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা করে এই অসাধারণ বাগ্মী নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন।

সমকালীন বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যতীন স্যারের অনন্যতার একটি কারণ ছিল সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা। যতীন স্যারের মানের যেসব বুদ্ধিজীবী 888sport app বা বিশ্বের 888sport app শহরে বসবাস করেন, তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে ইমেইলে বা টেলিফোনে সময় নির্ধারণ করে যেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারেন না। কিন্তু যতীন স্যারের বাসা ছিল সকলের জন্য উন্মুক্ত। যখন খুশি যতক্ষণ খুশি তাঁর বাসায় গিয়ে থাকতেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বহুদিন আমি দেখেছি, সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাঁর ঘরে ঢুকে স্যারের সঙ্গে কথা বলছেন। তাঁর নিরাপত্তা ও স্বস্তির কথা ভেবে আমরা মাঝে মাঝে নিরুৎসাহিত করেছি স্যারকে। কিন্তু তিনি আমাদের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিতেন। প্রাণখোলা হাসি ও রসপূর্ণ পাণ্ডিত্য দিয়ে তিনি জমিয়ে তুলতেন ঘরোয়া আড্ডাকে। রবীন্দ্রনাথের মতোই বিশ্বাস করতেন – ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’

স্যারের এই অতি সাধারণ জীবনযাপন থেকে এক অসাধারণ কিংবদন্তি হওয়ার পেছনে তাঁর পরিবারের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। নিজের মা-বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা – কারো প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেননি যতীন স্যার। তাঁর স্ত্রী-সন্তান হাসিমুখে স্যারের সাধারণ জীবনযাপন মেনে নিয়েছেন। কখনো কোনো বিষয়ে তাদের অভিযোগ ছিল না। তিনি সন্তানদের বড় করেছেন শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের আলো দিয়ে। ঘটনাচক্রে এই আলোকিত পরিবারের অংশীদার আমিও।

২০০৯ সালে স্যারের একমাত্র কন্যা সুদীপ্তা সরকারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় মধ্য দিয়ে স্যারের পরিবারের সদস্য হয়ে গেলাম। শ্বশুর-জামাতার প্রথাগত সম্পর্ক আমাদের মধ্যে ছিল না। তাঁর শিক্ষক পরিচয়টি আমার কাছে মুখ্য ছিল। ‘বাবা’ না ডেকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেছি সবসময়। অনেকেই অবাক হয়েছে এই ভেবে, শ্বশুরকে কবে কোন জামাতা স্যার ডেকেছে! স্যার সানন্দে আমার সম্বোধন মেনে নিয়েছিলেন। তিনি রসিকতা করে বলতেন, ‘অন্য 888sport promo codeকে যত সহজে মা ডাকা যায়, অন্য পুরুষকে তত সহজে বাবা ডাকা যায় না।’ স্যারের সঙ্গে আমার কিছু স্বভাবগত মিল ছিল। বিভিন্ন পারিবারিক আড্ডায় দেখা যেত আমি ও স্যার এক দলভুক্ত, আমার স্ত্রী ও শাশুড়ি অন্য দলে। আমার শাশুড়ি মজা করে বলতেন, ‘বাবার মতো ছেলে হয় শুনেছি, মায়ের মতো মেয়ে হয় সেটিও শুনেছি। কিন্তু শ্বশুরের মতো জামাই হয় এটি আগে দেখিনি।’ আমার প্রতি স্যারের এক অদৃশ্য পক্ষপাত ছিল। আমি ভোজনরসিক নই। খুব অখাদ্য না হলে যেকোনো খাবার আমি খেতে পারি। রান্নার বিশেষ প্রশংসা বা সমালোচনা সাধারণত আমি করি না। এ নিয়ে সুদীপ্তার অনুযোগের শেষ নেই। একদিন সে তার বাবার কাছে নালিশ করে বললো, আমার মুখে কোনো স্বাদ নেই, রান্নার ভালোমন্দ আমি বুঝি না। স্যার হাসতে হাসতে মেয়েকে বললেন, ‘রাজীবের মুখে স্বাদ না থাকা যে তোমার কত বড় ভাগ্য বুঝতে পারছো? রাজীব ভোজনরসিক হলে সারাদিন তোমাকে রান্নাঘরে কাটাতে হতো। এ যন্ত্রণা থেকে তো বেঁচে গেছ।’

স্যারের খ্যাতি যে শুধু 888sport appsে সীমাবদ্ধ নয়, বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল এর প্রমাণ পেয়েছিলাম তেরো বছর আগে ইউরোপে। একটি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরের জন্য অধ্যয়ন করেছিলাম। তখন ইউরোপের 888sport app দেশে যাওয়ারও সুযোগ হয়েছে। প্রত্যেক দেশের বাঙালি সমাজে যখন গেছি, দেখেছি যতীন স্যারের প্রতি তাদের অগাধ 888sport apk download apk latest version। স্যারের জামাতা হিসেবে তখন তাদের কাছে অতিরিক্ত সমাদর লাভ করেছি।

ছাত্রজীবন থেকেই সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের প্রতি আমার আগ্রহ। এ-আগ্রহ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন আমার প্রয়াত পিতা শ্যামল সরকার। লেখালেখি, বিতর্কসহ সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে আমি নিজেকে যুক্ত করেছিলাম। আমার এ-প্রবণতা পূর্ণতা পায় যতীন স্যারের সান্নিধ্যে। রচনা প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিতে, বিতর্কের স্ক্রিপ্ট তৈরিতে স্যারের

 মূল্যবান পরামর্শ পেয়েছি। বিভিন্ন বিতর্ক সংগঠনের অনুরোধে প্রায়ই স্যার সভাপতির আসন অলংকৃত করতেন। দুই যুগ আগে আমার অনুরোধে স্যার 888sport app ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় টিএসসি মিলনায়তনে সভাপতিত্ব করেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন খ্যাতিমান শিক্ষক সেই অনুষ্ঠানে বিচারক ছিলেন। সেখানেও যতীন স্যার হয়ে উঠেছিলেন অনানুষ্ঠানিক শ্রেষ্ঠ বক্তা।

888sport live football, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস, ধর্ম, দর্শনসহ বিচিত্র বিষয়ে অসাধারণ সব বই লিখেছেন যতীন স্যার। লেখার গুণগত মান সম্পর্কে খুব সচেতন ছিলেন তিনি। স্যার ডায়েরিতে খসড়া লিখতেন। তাঁর বিভিন্ন লেখার খসড়া দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। নিজে সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত লেখা চূড়ান্ত করতেন না। এমনও হয়েছে, একদিনে মাত্র একটি বাক্য লিখেছেন। তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছিল পঞ্চাশ বছর বয়সে। তাঁর লেখা বইয়ের 888sport free bet খুব বেশি নয়। তবে প্রতিটি বই বাংলা 888sport live footballের অমূল্য সম্পদ। তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রে ছিল সংস্কৃতি। হাঙ্গেরির দার্শনিক লুকাচকে উদ্ধৃত করে স্যার প্রায়ই বলতেন, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে মূল লক্ষ্য, রাজনীতি সেই লক্ষ্যে পৌঁছার উপায়মাত্র।’ স্যারের লেখা সর্বশেষ বইয়ের শিরোনাম সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা। তাঁর সারা জীবনের সাধনা ছিল সাংস্কৃতিক জাগরণ। এক্ষেত্রে তাত্ত্বিক ও সংগঠক – দুই ভূমিকাতেই অসাধারণ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। স্যারের সম্মানে একাধিক সংকলনগ্রন্থের কাজ করতে গিয়ে একটি ব্যতিক্রমী বিষয় লক্ষ করেছি। আমাদের সমাজ বহুধাবিভক্ত। বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, লেখক, শিক্ষক – সব পেশাতেই বিভক্তি ও কোন্দল। কিন্তু যতীন স্যারকে নিয়ে সবাই আগ্রহভরে লিখেছেন। বিভিন্ন মতাদর্শের ব্যক্তির কাছে এমন আন্তরিক গ্রহণযোগ্যতা এ-যুগে অত্যন্ত বিরল।

আমার পেশাগত জীবনকে যতীন স্যার অনুপ্রাণিত করেছেন। মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আমি কাজ করেছি। দুটি জেলা ও দুটি উপজেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে বইমেলা আয়োজন করেছিলাম। স্যার প্রতিটি অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থেকে বইমেলাকে আলোকিত করেছেন। মফস্বলের এ-অনুষ্ঠানগুলোতে স্যারের মতো এত বড় মাপের বুদ্ধিজীবী ও লেখকের উপস্থিতি অগণিত অনুরাগীকে আনন্দিত করেছিল। এ-বিষয়ে একটি আক্ষেপের কথা না বললেই নয়। ২০২৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করি। জেলার
888sport live chat-সংস্কৃতির মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী বইমেলা আয়োজিত হয়। খ্যাতিমান কথা888sport live footballিক হরিশংকর জলদাসসহ বিশিষ্ট লেখক ও কবিগণ এ-মেলায় অংশগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুরের বিদ্বৎসমাজের দাবি ছিল – এই বইমেলায় যতীন স্যারের উপস্থিতি। স্যারের শারীরিক অসুস্থতা এবং ভৌগোলিক দূরত্বের কথা ভেবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর সাহস পাইনি। বইমেলায় তাঁর মূল্যবান সব বইয়ের উপস্থিতি আমার আক্ষেপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।

পরমতের প্রতি 888sport apk download apk latest version ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির কথা মুখে অনেকে উচ্চারণ করলেও বাস্তবে তা অনুসরণ করেন খুব স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তি। যতীন স্যার সেই বিরল ব্যক্তিদের অন্যতম। ‘তোমার মতের সাথে আমি একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে পারি’ – ভলতেয়ারের এ-বাণীতে ছিল তাঁর অগাধ আস্থা। কাউকে খারিজ করে দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি ছিলেন না। মার্কসবাদী চিন্তক হিসেবে তিনি ছিলেন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী জীবনদর্শনের অধিকারী। কিন্তু তিনি কট্টর বামপন্থিদের মতো বুর্জোয়া প্রগতিশীলদের ভূমিকা বা উদার মানবতাবাদী চিন্তাধারার গুরুত্বকে অস্বীকার করতেন না। আপাত ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ হিসেবে চিহ্নিত আল্লামা ইকবাল ও দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের ব্যতিক্রমী মূল্যায়ন করেছেন তিনি। লোকসংস্কৃতি ও লোক888sport live football স্রষ্টাদের অবদান সম্পর্কে অসাধারণ বিশ্লেষণ করেছেন। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন তিনি।

‘888sport live chatের জন্য 888sport live chat’ বা কলাকৈবল্যবাদী জীবনদর্শনের ঘোরবিরোধী ছিলেন যতীন স্যার। তিরিশের আধুনিক কবিদের সমালোচনা করেছেন তাঁদের কলাকৈবল্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য। তাঁদের দলপতি বুদ্ধদেব বসু যে নজরুল ও সুকান্তের কাব্যপ্রতিভার প্রতি সুবিচার করেননি তা প্রায়ই বলতেন। পাশাপাশি এটিও বলতেন, বুদ্ধদেব বসু অপূর্ব প্রতিভাসম্পন্ন সু888sport live footballিক। ২০১৭ সালে আমার লেখা বহুমাত্রিক বুদ্ধদেব বসু : বৈচিত্র্যে বৈশিষ্ট্যে বইটি প্রকাশিত হয়। তিনি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন বইটির। নজরুল ও বুদ্ধদেব বসু প্রসঙ্গে বহুবার স্যারের সঙ্গে আমার তর্ক হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মতভিন্নতা হয়েছে। আমার ভিন্নমতকে তিনি প্রশ্রয় দিয়েছেন। নজরুলের উচ্চ মূল্যায়ন করতেন স্যার। ইতিহাসে যাঁর যতটুকু প্রাপ্য সেটুকু স্বীকৃতি দিতে তিনি কুণ্ঠিত হননি। কট্টর মার্কসবাদী 888sport live football সমালোচকেরা রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথের মতো মনীষীদের বিভিন্ন সময়ে অবমূল্যায়ন করেছেন। যতীন স্যার কখনোই এমন একদেশদর্শী সমালোচক ছিলেন না। ঘরোয়া আড্ডায় এবং নিজের লেখায় এই মনীষীদের অবদানকে গভীর 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে 888sport app download for android করেছেন। যতীন স্যারই সম্ভবত একমাত্র মার্কসবাদী চিন্তক যিনি রবীন্দ্রদর্শনকে অভিহিত করেছেন ‘ভাববাদের নির্মোকে বস্তুবাদের অন্তঃসার’ হিসেবে।

স্যার পড়াশোনার ক্ষেত্রে হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচ বা সর্বাত্মক দৃষ্টিভঙ্গির ধারণের কথা প্রায়ই আমাকে বলতেন। বাংলা 888sport live football ও বিশ্ব888sport live football পাঠ এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে স্যারের নির্দেশনা মানার চেষ্টা করেছি। উগ্রবাদ ফ্যাসিবাদ ও রবীন্দ্রনাথ এবং রেনেসাঁস ও রবীন্দ্রনাথ বই দুটি রচনার সময় স্যারের মূল্যবান পরামর্শ নিয়েছি। আমার বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সবচেয়ে বড় শিক্ষক ছিলেন তিনি। পত্রিকায় বা 888sport live footballপত্রে আমার কোনো লেখা চোখে পড়লে তিনি আগ্রহ নিয়ে পড়তেন এবং মতামত জানাতেন। শুধু আমার নয়, অন্য লেখকদের লেখাও তিনি মন দিয়ে পড়তেন এবং প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন। সুস্থ থাকা পর্যন্ত তাঁর পাঠতৃষ্ণা ছিল অত্যন্ত প্রবল। ঘরোয়া আড্ডায় দেখেছি, এমন লেখকের লেখার প্রশংসাও তিনি করছেন যিনি অখ্যাত এবং তরুণ।

পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে স্যারের জামাতা আমি। প্রতিবছর তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এ-পরিচয় দিয়ে আমাকে অনুভূতি ব্যক্ত করতে বলা হতো। আমি রসিকতা করে বলতাম, ‘যে ব্যক্তি নিজের পরিচয়ে পরিচিত তিনি উত্তম, যিনি বাবার পরিচয়ে পরিচিত তিনি মধ্যম, যিনি শ্বশুরের পরিচয়ে পরিচিত তিনি অধম।’ এরপর বলতাম, এমন অধম হতে পেরে আমি গর্বিত। ১৮ই আগস্ট স্যারের জন্মদিন। এ-দিনটিকে কেন্দ্র করে নেত্রকোনায় স্যারের বাসভবন ‘বানপ্রস্থ’ উৎসবমুখর হয়ে উঠতো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মী, 888sport live chatী, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসায় সিক্ত হতেন স্যার। বিখ্যাত ব্যক্তি থেকে শুরু করে অতি সাধারণ মানুষও উপস্থিত থাকতেন স্যারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। অতিথিদের বক্তৃতা ও 888sport live chatীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর স্যারের বক্তৃতা ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলতেন, মানুষের ভালোবাসা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় 888sport app download bd। যতীন স্যারের স্বভাবের এমন এক সারল্য ছিল যে আবালবৃদ্ধবনিতা সহজেই তাঁর মতো এমন বড় মানুষের সঙ্গে মিশতে পারতো। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে গল্প করতে করতে তিনি শিক্ষকতা করতেন। আমাদের দুই পুত্র সাগ্নিক ও ঋত্বিকের শিক্ষায় হাতেখড়ি হয়েছে যতীন স্যারের কাছে। নবম শ্রেণি পড়ুয়া সাগ্নিক তাঁর দাদুর উৎসাহে আরো সাত বছর আগে থেকে বক্তৃতা ও আবৃত্তি করতে শিখেছে। তিনি দুই দৌহিত্রকে লেখালেখি করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যখনই কোনো পত্র-পত্রিকায় সাগ্নিক ও ঋত্বিকের লেখা ছাপা হয়েছে, তিনি পড়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন ও তাদের অকৃপণ প্রশংসা করে উৎসাহ দিয়েছেন।

কালি ও কলমে যতীন স্যারকে নিয়ে লিখতে গিয়ে মনে পড়ছে কবি ও সম্পাদক আবুল হাসনাতের কথা। কয়েক বছর আগে তাঁর আমন্ত্রণে কালি ও কলমে লিখেছিলাম ‘যতীন সরকার : সাঁকো বাঁধার নিপুণ কারিগর’ 888sport liveটি। 888sport liveের শেষে বলেছিলাম, নিজের অর্ধশতাব্দীর 888sport live footballসাধনার সঙ্গে যতীন সরকার যুক্ত করতে চেয়েছেন প্রাকৃতজন তথা গণমানুষের চৈতন্যকে। 888sport live chatের সঙ্গে জীবনের সাঁকো বাঁধার প্রত্যয়ে অদম্য ক্রিয়াশীল তিনি। শ্রমঘনিষ্ঠ জনগণের সঙ্গে 888sport live chat-888sport live football-সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটানোর ক্ষেত্রে দৃঢ়প্রত্যয়ী তাঁর বিবেক। সাঁকো বাঁধার নিপুণ কারিগর তিনি।

স্যারের কাছ থেকে পুত্রের স্নেহ পেয়েছি। পরিচিতজনদের অনেকেই বলতেন, আমি স্যারের উত্তরসূরি। স্যারও গভীর আস্থা রাখতেন আমার ওপর। যদিও জানি আমি এর যোগ্য নই। স্যারের মতো গভীর মনীষা, লড়াকু মানসিকতা, অসাধারণ মানবপ্রেম ও নিখাদ দেশপ্রেম অর্জন প্রায় অসম্ভব। স্যারের প্রতি আমার অশেষ ঋণ। সেই ঋণ পরিশোধের স্পর্ধা নেই, ঋণ স্বীকারের চেষ্টা করে যাবো আজীবন। স্যার আমার রবীন্দ্র অবলোকন বইটি আমাকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন, ‘পরম স্নেহাস্পদ শ্রীমান রাজীব সরকার আত্মজ-প্রতিমেষু।’

গত কয়েক বছর ধরে স্যার বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। আক্ষেপ করে বলতেন, ‘আমি বেঁচে নেই, জীবিত আছি।’ বেঁচে থাকা মানে শুধু প্রাণ ধারণ করা নয়, সৃষ্টিশীল থাকা। তিনি বলতেন, রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন বেঁচেছিলেন। স্যার আর লিখতে পারছিলেন না বলে মনে করতেন তিনি বেঁচে নেই। অথচ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ঘরোয়া আড্ডায় কথা বলেছেন অনুরাগীদের সঙ্গে। তখন তাঁর তীব্র প্রাণশক্তির পরিচয় পাওয়া যেত। তাঁর উচ্ছ্বসিত হাসির মধ্যে নিষ্কলুষ হৃদয়ের প্রতিফলন ঘটত। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর জীবনের অন্যতম আলোকবর্তিকা। তাঁর 888sport app download apkর উদ্ধৃতি উচ্চারণ করে বলতেন – ‘সত্য যে কঠিন/ কঠিনেরে ভালোবাসিলাম/ সে কখনো করে না বঞ্চনা।’ কবিগুরুর আরেকটি 888sport app download apk থেকে বলতেন, ‘মনেরে আজ কহ যে/ ভালোমন্দ যাহাই আসুক/ সত্যেরে লও সহজে।’

নিজের জীবনদর্শন ও আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা যতীন স্যারের চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বাঙালি মনীষীগণ সাধারণত যৌবনে প্রগতিশীল ও 888sport apkমনস্ক চিন্তা-চেতনার অধিকারী হলেও জীবন সায়াহ্নে তাঁদের অনেকেই কুসংস্কার ও অবৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণায় নিমজ্জিত হন। যতীন স্যার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন যুক্তিবাদী ও 888sport apkমনস্ক। তীব্র রোগযন্ত্রণায় যখন হাসপাতালে কষ্ট পাচ্ছেন তখনো দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের মেয়েকে বলেছেন, ‘আমি তো ভাববাদী নই, বস্তুবাদী। আধুনিক চিকিৎসা888sport apk আমাকে সুস্থ করতে পারবে না?’

‘সর্বত্র জয় কামনা করবে, শুধু পুত্র ও শিষ্যের কাছে পরাজয় কামনা করবে’ – প্রাচীন সংস্কৃত শ্লোকের মর্মার্থ যতীন স্যার প্রায়ই উচ্চারণ করতেন। তাঁর সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ থাকার মানে হচ্ছে দেশ-বিদেশের বিখ্যাত মনীষীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, বিখ্যাত বইয়ের উদ্ধৃতি শোনা, জগৎ-জীবনের 888sport apkমনস্ক ও রসঘন আলোচনার অংশীদার হওয়া। অফুরন্ত প্রাণরসে ভরপুর যতীন স্যারের সাহচর্য পাওয়া অগণিত অনুরাগীর এই অভিজ্ঞতা হয়েছে।

সারাজীবন মফস্বলে বাস করেও শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন এই চলন্ত বিশ্বকোষ। শ্রেণিকক্ষের গণ্ডি পার হয়ে বৃহত্তর সমাজে গণশিক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন আজীবন। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা 888sport app download bdে ভূষিত এই মানবতাবাদী মনীষীর ব্যক্তিত্বে প্রজ্ঞা, আদর্শবাদ, রসিকতা ও বাগ্মিতার অসাধারণ মেলবন্ধন ঘটেছে। বৈষয়িক স্বার্থবুদ্ধিকে প্রত্যাখ্যান করে যে অনাড়ম্বর ও নির্লোভ জীবন তিনি যাপন করেছেন, সমকালে এর উদাহরণ বিরল। স্পষ্টবাদিতা, সত্যভাষণ, সততা, দেশপ্রেম ও পরার্থপরতার মতো গুণ যে স্বল্পসংখ্যক লেখক-বুদ্ধিজীবীর মধ্যে দেখা গিয়েছিল যতীন স্যার তাঁদের অন্যতম। নিজের সম্পর্কে তিনি নির্মোহ মূল্যায়ন করতেন। লেখক হিসেবে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতেন না। নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘কষ্টলেখক’ হিসেবে। শিক্ষক হিসেবে নিজেকে খুব সার্থক মনে করতেন। প্রায়ই বলতেন, ‘আমার চেয়ে ভালো মাস্টার কেউ নেই। এই কাজটি আমি সবচেয়ে ভালো পারি।’ স্যারের সান্নিধ্যে যাঁরা এসেছেন তাঁরা জানেন, তিনি অতিশয়োক্তি করেননি।

বাংলা ভাষায় ‘শিক্ষা’ অর্থে ‘শিক্ষাদীক্ষা’ শব্দটি কেন ব্যবহৃত হয়, কেন ভারতীয় ঐতিহ্যে শিক্ষকই ‘গুরু’ এবং গুরুর স্থান সবার উপরে, তা এ-যুগে কোনো কোনো বিরল শিক্ষকের চরিত্রে প্রতিফলিত হয়। যতীন স্যার ছিলেন সেই বিরল শিক্ষকদের একজন। তিনি আজীবন জ্ঞানের তপস্যা করেছেন, জ্ঞানের আলো ছড়িয়েছেন এবং সেই আলোয় সমাজ পরিবর্তনে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।

জ্ঞানতাপস যতীন স্যার গত ১৩ই আগস্ট জীবনমঞ্চ থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। তাঁর কাছে পুত্র ও শিষ্যের আসন লাভের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। পুত্র ও শিষ্যদের কাছে তিনি যতই পরাজয় কামনা করুন, আমি নিশ্চিত যে কারো পক্ষেই তাঁকে পরাজিত করা সম্ভব নয়।