আমাদের এই পাড়াটা, কালীঘাটে আমি থাকি, কেওড়াতলা শ্মশানের কাছে রজনী ভট্টাচার্য লেনে। এখানে শ্মশানকালীর পুজো হয়। আমাদের সময় কালীপুজো হতো তিন-চার মাস ধরে। এই পাড়াটায় ছিলো বাজির কারখানা। চেতলা-হাটে সেগুলো বিক্রি হতো। সব বাড়িতে বাজি বানানো হতো। আর কালীপুজোর সময় শুরু হতো বাজির লড়াই। চেতলা-কালীঘাট। আদিগঙ্গার এ-পাড় আর ও-পাড়। সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোক আসতো। সে এমন লোক আসতো, লক্ষাধিক লোক। আর দুপাড়ে প্যাক্ড লোক। সে এমন বাজির লড়াই, ঝামেলা হতো, লোক মারা যেতে শুরু করলো। তখন পুলিশ সেটা বন্ধ করে দিলো। বাজি জ্বালিয়ে গঙ্গায় ফেলতো। দুষ্টুমি করতো। সেজন্য এখানে সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে লোক আসতো বাজির লড়াই দেখতে। এটা তিন-চার মাস ধরে চলতো। সেটা এখানে বিখ্যাত ছিলো। আর বিখ্যাত ছিলো – এখানে দুজন বিখ্যাত গুন্ডা ছিলো। ছোটবেলায় দেখেছি আমি। মোষ কানাই আর টি কে পচা। তরবারি নিয়ে তারা দৌড়াতো। মারামারি করতো। গঙ্গাটা তখন মন্দিরের অনেক কাছে ছিলো। এখন সরে গেছে। নৌকায় করে লোকে চেতলা যায়। গলি দিয়ে চেতলা-হাটে যায়। এখানে থাকলে জানতে পারবেন কালীঘাটের ইতিহাস।
এই বাড়িটার বয়স আশি বছর। এইটুকুন থাকতে আমি এই বাড়িতে এসেছি। আমি বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করি। গাছ লাগানো। পাড়া-প্রতিবেশীকে বলা, গাছ লাগাও। গাছ লাগাও।
আমি বহুবার 888sport app গিয়েছি। 888sport appতে নিয়ে গেছে একজন বাঙালি মুসলমান, আর্ট ভালোবাসে। লিটু। তাঁর বাড়িতেও থেকেছি দু-একবার। আর্ট ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেছে। পরবর্তীকালে বিরাট বড় আর্ট ক্যাম্প করলো। বিরাট একটা বাড়িতে। পাঁচ-ছতলা বাড়িতে। ও আর্ট ভালোবাসে। ঘুরে ঘুরে অনেককে ইনভাইট করে। একবার একটা স্কুলবাড়িতে বোধহয় বিরাট ক্যাম্প হয়েছিলো। বাইরে থেকেও 888sport live chatীরা ছিলো। একজনের কার্পেটের কারখানা আছে, কার্পেট তৈরি করে, জুটের কার্পেট। আমাদের দিয়েছিলো, সবাইকে দিয়েছিলো। যে যত পারো নিয়ে যাও। 888sport apps থেকে কলকাতা। আপনি 888sport apps যান? ও আপনার দেশ সেখানে? ঘনঘন যান? খুব লাকি আপনি। 888sport apps খুব সুন্দর। আমি ছোটবেলা কখনো যাইনি। বড় হয়েই গিয়েছি। আমি তো ওয়েস্ট বেঙ্গলের লোক। আদি বাড়ি এখানে।
এসব জায়গা – আমার মনে আছে – আমাদের বাড়িটাই বোধহয় প্রথম। এই বাড়িগুলোর জায়গায় হোগলার বন ছিলো। এখানে, মনে আছে, জাপানিরা যখন বোমা ফেলে, তখন আমাদের বাড়িতে সব সিঁড়ির তলায়, নিচে আশ্রয় নিয়েছিলো। তারপর সিআরপিদের বাঁশি শোনা যেতো, ‘আলো বন্ধ করো, আলো বন্ধ করো।’ রাত্তিরবেলা দেখা যেতো বম্বিং হচ্ছে। খিদিরপুর ডকে। দিনের বেলাতেও বম্বিং হতো। আমাদের বাড়ির কাছেই। জানালা-দরজার কাচে ক্রস করে কাগজ লাগানো থাকতো, ভেঙে যাবে বলে। কেউ ছিলো না এই এলাকায়। সব পালিয়ে গিয়েছিলো। আমরা থাকতাম। তখনো এখানে অন্য বাড়িঘর হয়নি। আমাদেরটা প্রথম। পরে আস্তে আস্তে অন্য বাড়ি হলো।
দুই
আমি ছোটবেলা থেকেই খুব খেলাধুলা করতাম। আমি খেলাধুলা এত ভালোবাসি, সবরকম খেলা খেলতে পারি। এখনো পারি, কিন্তু খেলি না। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ক্যারম বোর্ড। মানে সবগুলো। খেলাটা খুব সিরিয়াসলি নিতাম। ধারে খেলতে যেতাম। ধার করে নিয়ে যেত ফুটবল খেলার জন্য। নাকতলা, বাঁশদ্রোণীতে নিয়ে যেতো। এত ভালো খেলতে পারতাম যে, সেসব জায়গা থেকে আমাকে ধার করে নিয়ে যাওয়া হতো। আমি বিশেষ কোনো ক্লাবে ছিলাম না। এখানে আমাদের নিজস্ব ক্লাব ছিলো। পাড়ায়। আমি শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভালো খেলতাম, সেটা সবাই জানতে পারতো। সেজন্য ধার করে, ভাড়া করে নিয়ে যেতো। খেলাতো, তারপর আবার টাকা-পয়সা দিতো। নাকতলা, বাঁশদ্রোণী। সেদিন গেছে একরকম। এখন ওসব নেই।
তারপর আর্ট কলেজে ঢুকলাম। আমি শখে অাঁকতাম। আর্ট কলেজে অ্যাডমিশন নিলাম। সবাই বললো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটা গঠনমূলক দিক তৈরি করবে। টেস্ট দিয়ে একেবারে ডাইরেক্ট সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি হলাম। এত ভালো পরীক্ষা দিলাম, আমাকে সেকেন্ড ইয়ারে নিয়ে নিলো। আমার ন্যাক ছিলো। বাড়ি থেকেও আপত্তি করেনি। আর্ট কলেজে থার্ড ইয়ারে থাকাকালে প্রথমবার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেলাম। সেটা ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতির হাত থেকে নিয়েছিলাম। তিনি ছিলেন রাজেন্দ্রপ্রসাদ। একটা বিশেষ ছবির জন্য পেয়েছিলাম সেই 888sport app download bd। কী ছবি ছিলো বলছি। আমি তো সেকেন্ড ইয়ারে ভর্তি হলাম এবং সবাই বললো, তুমি যদি প্রতিবছর ফার্স্ট হও, তাহলে ফ্রি স্কলারশিপ পাবে। এদিকে পরিচয় বলে একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম, উট, মুঠ, ঘুট যে অাঁকতে পারবে সে একজন বিশিষ্ট 888sport live chatী হবে। উট তো উট, মুঠ হলো হাতের মুঠো আর ঘুট হচ্ছে ঘোড়া। এই তিনটে খুব কঠিন। কয়েক হাজার হাতের মুঠো এঁকেছিলাম। যেখানে বসে থাকি, সেখানে অাঁকছি। উট তো পাই না। এসএন ব্যানার্জি রোডে মাউন্টেড পুলিশের ঘোড়ার আস্তাবল ছিলো। ওখানে রাত কাটাতাম। ঘোড়ার ছবি অাঁকতাম। ঘোড়া শুয়ে আছে, আমি অাঁকছি। আমার সঙ্গে ঘোড়ার প্রেম হয়ে গেলো। সত্যি সত্যি। মানে আমাকে আদর করতো ঘোড়া। তারপর ঘোড়া অাঁকতে অাঁকতে জাতীয় 888sport app download bd পেলাম। আমাকে সবাই চ্যাংদোলা করে নাচছে। কী? না উনি রাষ্ট্রপতি 888sport app download bd পেয়েছেন। প্রথমবার। পরেও দু-তিনবার পেয়েছি রাষ্ট্রপতি 888sport app download bd। অন্য ছবি এঁকে, ঘোড়া নয়। মনে আছে প্রথমবার 888sport app download bdের কথা। আমার বয়স হয়তো ১৭ কি ১৮। আর্ট কলেজে বোধহয় থার্ড ইয়ারে পড়ি কি সেকেন্ড ইয়ারে। তখন পেলাম। দিল্লি গেলাম। অনেক ঘটনা। বলতে অনেক সময় লাগবে। যা-ই হোক।
যে-বাড়িতে বিখ্যাত সব 888sport live chatী আড্ডা মারছেন, তার বাঁদিকে আমেরিকান লাইব্রেরি। আমি সেজন্য একটু কুণ্ঠিতই ছিলাম, হুমায়ুন কবির ছিলেন ওপরে। আমি দোতলায় নামতেই এক ভদ্রলোক বললেন, ‘ও তুমি সুনীল দাস। এসো, এসো, এসো।’ তারপর নিয়ে গেলেন নিচে, দোতলার ঘরে। শুনছি সব হাসাহাসি, আড্ডা এসব। দরজা খুলে উনি বললেন, ‘এসো, এসো, তোমাকে আলাপ করিয়ে দিই।’ উনি দরজা খুলে নিয়ে গেলেন। এঁরা সব বিশিষ্ট ব্যক্তি আড্ডা মারছেন। আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন। পরে হুমায়ুন কবির খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘তুমি তো বাচ্চা ছেলে, কী করে প্রাইজ পেলে? চুরি করেছো?’ আমি বললাম, ‘আমি কী করে চুরি করবো? আমি তো 888sport live chatী, চর্চা করেছি।’
একদিকে তো খেলার জন্য যেতাম। বাঁশদ্রোণী। ফুটবল খেলতে যেতাম। অন্যদিকে ছবি অাঁকতাম। তখনকার দিনে আমাদের ছিলো হ্যান্ডরাইটিং ম্যাগাজিন। এখন তো নেই। হাতেলেখা ম্যাগাজিন। সেটা তত্ত্বাবধান করতাম। প্রতি পাতা ডেকোরেশন করতাম, আলপনা অাঁকতাম। পাতাগুলোকে সুন্দর করে ডেকোরেশন করতাম। পাড়ার যারা 888sport app download apk লিখতো, 888sport live football করতো, তাদের বললাম, ‘সবাই লেখো।’ সেগুলো নিয়ে কম্বাইন্ড করে বড় একটা খাতা হলো। সব 888sport app download apkর চারপাশে নকশা করতাম। এটা প্রতি বাড়িতে ১৫ দিন করে থাকতো। মানে শিক্ষার প্রচার। নিজে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা। সেজন্য এ-বাড়ি ও-বাড়ি, ও-বাড়ি, এ-বাড়ি। মাসের পর মাস। সমস্ত পাড়ায়। একটাই খাতা, সব বাড়িতে ঘুরতো। সবাই দেখছে, পড়ছে। এখন এসব উঠে গেছে। কেউ এসব করে না।
পাড়ার ছেলেদের উৎসাহ ছিলো ক্যারম বোর্ড খেলা। এখন খেলার মধ্যে ক্যারম বোর্ডটাই খেলে, বাকি সব উঠে গেছে। রাস্তায় দেখবেন, সন্ধ্যা হলেই দেখতে পাবেন, লাইট জ্বলেছে আর ক্যারম খেলা চলছে। আর কিছু খেলে না। তবে আমাদের এখানে, এই পাড়ায়, ছেলেরা ক্রিকেট খেলে, লাইট-টাইট জ্বালিয়ে। প্রত্যেক বাড়িতে লাইট জ্বালায়। খেলার কম্পিটিশন চলে। ক্রিকেট আর ফুটবল। রাত্রিবেলা লাইট জ্বালিয়ে খেলে। পাঁচ-ছটা টিম, নানারকম জার্সি পরে খেলে। প্রত্যেক বাড়ি থেকে চার-পাঁচটা বাচ্চা আসে। খেলে।
আমি আরো কয়েকবার জাতীয় 888sport app download bd পেয়েছি, তবে ঘোড়ার ছবি এঁকে নয়, অন্য ছবি এঁকে। একটা বিরাট ছবি ছিলো – দশ ফুট বাই দশ ফুট। রোটেশন অব ম্যানকাইন্ড। তখন অন্যরকম ছবি অাঁকতাম। ঘোড়া প্রথমবারই পেয়েছি। ঘোড়ার ছবি পাঁচ-ছয় হাজার এঁকেছি। সেটা আমার সিগনেচার ছিলো। তখন অনেকে আমাকে চিনতো। পাগলের মতো অাঁকতাম। তখন সবাই চিনতো। বলতো, ‘সুনীল, এই শনিবার আমার বাড়িতে ডেমোনেস্ট্রেশন দেবে। হাই-ফাই সোসাইটির মহিলাদের ডাকতো। তারা সব চেয়ারে, সোফাতে বসে আছে। আমাকে বলতো, ‘সুনীল, তুমি ল্যাজ থেকে অাঁকো তো।’ আমি অাঁকতাম।
‘কত দাম?’
‘একশ টাকা।’
‘ইয়েস, এটা আমি কিনবো।’
তখন একশ অনেক টাকা। পঞ্চাশ বছর আগে। দিদিরা আলিপুরে সব আত্মীয়-স্বজন নিয়ে থাকতো। তাঁরা সব মরে গেছে এখন। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেসব।
এখানে তো ঘোড়া অাঁকতাম। তারপর যখন ফরাসি বৃত্তি পেলাম, ১৯৬০ সালে, তখন প্যারিস গেলাম। ওখানে ‘একোল দ্য বোজার্টে’ ছবি অাঁকা শিখতাম। বিখ্যাত আর্ট কলেজ। একোল মানে স্কুল। বো মানে সুন্দর। সুন্দর আর্ট। বড় বড় বিখ্যাত 888sport live chatী শেখাতেন। ওখান থেকে গেলাম বেড়াতে, মিউজিয়াম দেখতে। স্পেনে। মোটেলে থাকতাম সস্তায়। রাত্রে আড্ডা দিচ্ছি। গল্প করতে করতে ওরা যখন জানলো আমি ছবি-টবি অাঁকি, তখন বললো, ‘যাও না। বুলফাইট হয়। বুলফাইট আঁকতে পারো? দেখে এসো।’ আমি বললাম, ‘কোথায়?’ বললো, অনেক জায়গায় হয়, বার্সেলোনা, মাদ্রিদ, টলেডো। বললো, ‘আমরা তোমাকে বলে দেবো কোথায় হচ্ছে।’ বুলফাইট দেখতে যেতাম। ফাইটিং, তার ওপর সুন্দর ড্রেস। ফ্ল্যামিঙ্গো নাচছে। আবার অাঁকতে শুরু করলাম। তিনশো টাকায় বিক্রি হলো। ফরাসি তিনশো টাকা। সাতদিনের জন্য গিয়েছিলাম। তিন মাস ছিলাম। কয়েক হাজার টাকার ছবি বিক্রি করেছি। তারপরে সেখান থেকে যেতাম মিউজিয়াম দেখতে। স্টাডি করতাম। ছবি অাঁকতাম। ভালোই ছিলাম বিদেশে। খারাপ না। প্যারিসে তিন-চার বছর ছিলাম। আমি একমাস সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা, অডিও-ভিজ্যুয়ালে ফরাসি শিখেছিলাম। বুঝলাম যে, না, ভাষা না জানলে কিছু করতে পারবো না। আমি গভর্নমেন্টকে বললাম, ‘আমি ফরাসি শিখতে চাই।’ ওরা বললো, ‘ঠিক আছে, তুমি চলে যাও – এখানে পারবে না। এখানে অডিও-ভিজ্যুয়ালটা অন্যরকম হয়। তুমি সাউথ অব ফ্রান্সে যাও।’ সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত ফরাসি শেখা। অডিও-ভিজ্যুয়াল। ওখানে একমাস শিখলাম। জলের মতো ফরাসি বলতাম। লিখতে-পড়তে পারতাম না। বলতে পারতাম। মানে খাবার লাইনে দাঁড়িয়ে এক থেকে হাজার মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। তার পাশে বাংলায় লিখে নিতাম। তখন ফরাসি বলতে শুরু করলাম। তারপর প্যারিস জয় করে ফেললাম। প্যারিসে ছবি এঁকে, ফরাসি বলে আমার সময় ভালো কেটেছে। অনেক জায়গায় আমার এক্সিবিশন হচ্ছে, ছবি বিক্রি হচ্ছে। আই ওয়াজ কিং অব প্যারিস। তারপর এমন হলো, যদি কেউ আসে, ইন্ডিয়ান এমবাসিতে, বলতো, ‘যাও সুনীল দাসের কাছে।’ যে-ই আসতো, আমার কাছে পাঠিয়ে দিতো। ও মা, একদিন রাত্তিরবেলা এসে দেখি আমার ঘরে আলো জ্বলছে। কী ব্যাপার? দেখি এক ভদ্রলোক শুয়ে আছেন।
‘আপনি?’
বলেন, ‘ইন্ডিয়ান এমবাসি আপনার কাছে পাঠিয়েছে।’
‘খেয়েছেন?’ তখন রাত আড়াইটা বাজে, আমি আড্ডা-ফাড্ডা মেরে ফিরছি।
বলেন, ‘না।’
‘খাননি? কখন এসেছেন?’ তিনি এসেছেন সাড়ে পাঁচটায়, তখন বাজে আড়াইটা। বললাম, ‘চলুন, চলুন।’ তাঁকে খাওয়ালাম-দাওয়ালাম। তিনি আশুতোষ কলেজে পড়ান। কোনো একটা পড়াশোনা করার জন্য গিয়েছিলেন। কথা বলে ভালোই লাগলো। কী করতে চান শুনে সেখানে নিয়ে গেলাম। উপকার করলাম আর কী।
কেউ বললো, ‘আমি এর জন্য জুতো এনেছি। পাঠিয়ে দিতে হবে। কী করে পাঠাবো?’ বললাম, ‘ঠিক আছে, রেখে যাও। পাঠিয়ে দেবো।’ তখন বাটার কী একটা জুতো ছিলো, খুব ভালো। ব্ল্যাক জুতো। এসব লোকের উপকার করতাম। প্যারিসে অনেক ঘটনা আছে। সবে তো শুরু। যাই হোক। মোটামুটি টাচ করে বলি।
প্যারিস থেকে ফিরে চাকরি খুঁজতে লাগলাম। চাকরি তো পাই না। তখন দিল্লি গেলাম এক্সিবিশন করতে। সকালবেলা, সেটা ছিলো রোববার দিন, সানডে। আমি ছবি টাঙাচ্ছি। এক ভদ্রলোক এলো। হাফ প্যানট পরা, শর্ট গেঞ্জি। সব ঘুরে-ঘুরে দেখছে। অনেক ছবি। প্রায় ৮০-৯০টা ছবি। দেখে-টেখে বললেন, ‘হু ইজ দ্য আর্টিস্ট?’ আমি বললাম যে, আমি। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দিজ আর ফর সেল?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ বললো, ‘ওকে, আই উইল বাই এভরিথিং।’ ভদ্রলোক কিনলো সব। বললো, ‘আমার কার্ডটা রাখো। আই উইল সেন্ড দ্য কার। আফটার এইট ও’ক্লক। ইউ কাম টু মাই হাউস।’ বলে কার্ডটা দিলো। ইতালিয়ান এমবাসাডর, ড. কারারা নাম। ও সব কিনে নিলো। সেই দেখে পাশের ঘরে যে এক্সিবিশন করছে আর্টিস্ট, সে রেগেটেগে বোম। ভীষণ রেগে গেলো। গালাগালি করতে লাগলো। আমি কী করবো। ভদ্রলোকের পছন্দ হলো আমার ছবি। কিনে নিলো। অনেক ঘটনা আছে। ছবির জগতের অনেক ঘটনা আছে। আমি যখন প্রথমবার জাতীয় 888sport app download bd পাই। সমস্ত আর্ট কলেজে ছুটি। উইদিন আ সেকেন্ড। আনন্দে। গভর্নমেন্ট কলেজের একটা বেদি আছে। বিরাট। সেখানে আমাকে বসিয়ে মালাফালা দিচ্ছে। সব কলেজ থেকে সবাই চলে এসেছে আর্টিস্টরা। সব ছাত্র। হইহই ব্যাপার হলো।
ছোটবেলা খেলাধুলা করতাম। নাম ছিলো খেলাধুলায়। ছবি আঁকতাম। দেশ-বিদেশ ঘোরা, এখানে ঘোরা, ওখানে ঘোরা। ও,
যে-কথা বলতে গিয়েছিলাম, সেটা মনে পড়েছে। চাকরি খুঁজছিলাম, চাকরি পাই না। জে ডি টাইটলার নামে এক ভদ্রলোক ছিলো। সিনেমাও করেছিলো। ব্রিটিশ, জে ডি টাইটলার। সে ছবি দেখতে এসেছে, দেখে-টেখে খুব ভালো লেগেছে। সে বললো, ‘কী করো?’ বললাম, ‘কিছু করি না। ছবি অাঁকছি আর চাকরি খুঁজছি।’ বললো, ‘কাম অ্যান্ড জয়েন মাই স্কুল।’ ওর একটা স্কুল আছে। স্কুলটার নাম জে ডি টাইটলার স্কুল। সেখানে আমি চাকরি করলাম। ওর অ্যাডাপটেড সন ছিলো, পোষ্যপুত্র। ভাবতো, বাবারই তো স্কুল, ওখানে এসে আড্ডা মারতো। আমাদের সঙ্গেও আড্ডা মারতো। আমি টিচার। ওর নাম হচ্ছে জগদীশ টাইটলার। ও মিনিস্টার-ফিনিস্টার হয়েছিলো। এটা ১৯৬৫ হতে পারে, ঠিক খেয়াল নেই, তবে ষাটের দশকের মাঝামাঝি হবে। আমাদের একটা ভালো গ্রুপ হয় গিয়েছিলো। জেমস ওয়াটান নেসলের ডাইরেক্টর। প্রতাপ রায়। দিল্লিতে থাকতো, আমার আর্ট সম্পর্কে ওদের খুব আগ্রহ ছিলো, কাজেই আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। দিল্লিতে তখন ডিফেন্স কলোনি তৈরি হচ্ছে। ফাঁকা, খোলা। লোকজন নেই সেখানে। ওরা বাড়ি করছে, আর ফ্ল্যাট নিয়েছে। জগদীশ টাইটলার, সঞ্জয় গান্ধি, জেসম ওয়াটান, আমরা সব আড্ডা মারতাম ডিফেন্স কলোনিতে। টাইটলারদের স্কুলটা পুশা রোডে ছিলো, এখনো আছে। টাইটলার আর নেই। দিল্লিতে থাকলাম, তারপর দিল্লিতে আন্দোলনে যোগ দিলাম। গেলার্ড রেস্টুরেন্ট ছিলো, জায়গাটার নাম যেন কী? কনট প্লেসের ওখানে, আগে নাম ছিলো পালিকা বাজার। আগে বাজারটা ছিলো না, খোলা মাঠ, ওই মাঠে রাত্তিরে সমাজসেবা করতাম। লাইট-টাইট লাগিয়ে গান-বাজনা, কফি বিক্রি করা। ওইসব হতো। ছবির এক্সিবিশন টাঙিয়ে ওইসব হতো। গেলার্ড রেস্টুরেন্টে স্ট্রাইক হলো। ওদের ওয়ার্কারদের নিয়ে মুভিং কমিউনিটি শুরু করলাম। মুভিং কফি। শনি-রোববার প্রচুর লোক আসতো। পরে ছোট করে ঘর তৈরি হলো – চাল হলো, দেয়াল হলো, কফি-বার হয়ে গেলো। ইন্দিরা গান্ধি সেটা ভেঙে দিলো এমার্জেন্সির সময়। তারপরে নানা রকম আন্দোলন, মারামারি, এসব হতে আরম্ভ করলো।
আমি অ্যাপ্লাই করলাম চাকরির জন্য, সেটা হচ্ছে উইভার্স সার্ভিস সেন্টারে। তার সুপ্রিম বস ছিলেন পুগুল ডাটা। মারা গেছেন। এদিকে ঠিক সেই সময় আমার দিল্লিতে আর্ট এক্সিবিশন হওয়ার কথা চলছে। চিঠি এলো বম্বেতে ইন্টারভিউ হবে। জানালাম, ‘আমার এখন এক্সিবিশন চলছে। জনপথে। আই কান্ট গো।’ ইন্টারভিউ দিলাম না। তারপরে, বেশ কিছুদিন পরে চিঠি এলো – ‘ইউ জয়েন ক্যালকাটা’। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর হিসেবে। আমি জয়েন করলাম। সেখানে ছিলাম, ডাইরেক্টর অবস্থায় সেটা ছাড়লাম। খুব নাম করেছিলাম। টেক্সটাইল ডিজাইনে। শাড়ি-ফাড়ি, হ্যান-ত্যান, নানা রকমের। আইডিয়া দিতাম। অনেক তাঁতি থাকতো। ওদের ডাইরেকশন দিতাম, এটা বানাও, ওটা বানাও। নীলাম্বরী তৈরি করতাম। নানা রকম এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে কাজ করেছি। প্রচুর। উইভার্স সার্ভিস এখনো আছে, কিন্তু ভাইব্রেশনটা নেই। তার কারণ আমি তখন মোটামুটি নামকরা 888sport live chatী। আমার সব বন্ধু-বান্ধব আমার অফিসে আসতো। তারা দেখতো। বলতো, ‘এইটা আমাকে দাও’, ‘ওইটা আমাকে দাও।’ জামদানি, নতুন রকমের জামদানি। দুশো কাউন্ট, ফাইন সুতো। ধরলে দেখা যায় না। সেই সুতোর জামদানি বানাতাম। জামদানি শাড়ি, তার দাম তখন ছিলো আড়াই হাজার, তিন হাজার। এখন ৩২ লাখ টাকা হবে। সমস্ত আর্টিস্ট আসতো। দিল্লি, বম্বে থেকে। সবাই আসতো আমার সঙ্গে মিট করতে। বলতো, ‘তোমার শোরুমে চলো।’ শোরুম খুলে দিলাম। সব দেখছে। নানা রকম শাড়ি। সব ক্রিয়েটিভ। দ্বিতীয় নেই। সব সিঙ্গল। এক ডিজাইনের একটাই। বন্ধুরা নিয়ে যেতো। খুব নাম হয়েছিলো। সেই কাজে আমার আন্তরিক ভালোবাসা ছিলো। ভালোবাসা না থাকলে কোনো জিনিস হয় না। আমি বলতাম, ‘চাকরি আমি করি না, চাকরি আমাকে করে।’ সেজন্য খুব ভালোবাসা ছিলো। অন্য চাকরি করিনি। উইভার্স সার্ভিস থেকেই অবসর নিয়েছি। ১৯৯৭ সালে কি ওরকম কোনো সময়ে। আমার লাস্ট পোস্টিং হয়েছিলো গৌহাটিতে। ডাইরেক্টর হিসেবে পোস্টিং হলো। ওখানেও খুব কাজ করেছি। গৌহাটিতে মেখলা-চাদর করেছি। অনেক কাজ করেছি। আমার সঙ্গে আমার টিম ছিলো। ছিল অন্য আর্টিস্টরা। তারা বন্ধু। বাড়িতে আড্ডা হতো। ভোর হয়ে গেছে। বাড়ি যাচ্ছে হেঁটে হেঁটে। টিম স্পিরিট, ভালোবাসা – সব ছিলো। আমার ওয়াইফ সব খাবার-দাবার বানাতো। রাতে সব আড্ডা মারছে। মদ-টদও খাওয়া হতো। গৌহাটি থেকেই রিটায়ার করলাম। ’৯৭-এ বোধহয়। তারপরে তো ওসব পাট বন্ধ। তখনো ছবি অাঁকতাম। এখন আর অন্য কিছু করি না। শুধু ছবি অাঁকি। আমার কোনো বিশেষ মিডিয়াম নেই। আমি একটা ব্যক্তিত্ব, যে-কোনো মিডিয়ামে অাঁকতে পারি। পছন্দ কিছু নেই। যখন যেটা, তখন সেই মিডিয়ামে অাঁকি। যে-888sport live chat আমাকে নিজেই তাড়া করে, তা ও-ই বলে দেয়, এখন কোন মিডিয়ামে কাজ করতে হবে। আমি যে-কোনো মিডিয়ামকে হ্যান্ডল করতে পারি। প্রচুর ট্যাপেস্ট্রি করেছি। তাতে কখনো গল্প থাকতো, কখনো অন্য কিছু। কখনো অ্যানিমেল, গ্রুপ অব অ্যানিমেল। আমি এমন ট্যাপেস্ট্রি করেছি যার দুদিকই সোজা। দুদিকেই একরকম। সেটা আগে কেউ করেনি। উইভিংয়ের টেকনিক। ইন্টারলক করে করা। আমি নিজেও তাঁত বুনতে পারি। আর্ট অব সুনীল দাস নামের বইতে সব আছে। ১৭-১৮ বছর বয়সে প্রথম জাতীয় 888sport app download bd পেয়েছি আর গত বছর আমি পদ্মশ্রী পেয়েছি। r
* এ-রচনাটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে রচিত। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন উর্মি রহমান। সুনীল দাস বলে গেছেন, উর্মি সে-কথাগুলো ধারণ করেছেন।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.