এক-একটি অভিবাসী পরিবারকে কতটা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আমেরিকায় এসে টিকে থাকতে হয়, তার বেদনাচিহ্ন নিয়ে কুইন্স কাউন্সিল অন আর্টসের আর্থিক অনুদান এবং উৎসব ডটকমের সৌজন্যে নিউইয়র্কের কুইন্স থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়ে গেল গার্গী মুখোপাধ্যায়ের লেখা ও গোলাম সারওয়ার হারুন-নির্দেশিত 888sport appsি জনসমাজের থিয়েটার গ্রম্নপ 888sport app ড্রামার নাটক স্টোরিজ অব জ্যাকসন হাইটস।
অতালিকাভুক্ত 888sport appsি একটি পরিবারের অভিবাসন প্রক্রিয়ার গোলকধাঁধার ওপর অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে এ-নাটকের গল্প। দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের প্রতি এদেশের অভিবাসন আইনের পক্ষপাত এ-নাটকের একটি প্রধান বিষয়। আর আছে প্রসঙ্গত চলে আসা মৌলবাদ ও বর্ণবাদের পৃথিবীময় উত্থানের কথা! অথচ একই জাহাজে যারা ইউরোপ থেকে আমেরিকায় আসে তাদের সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করা হয়, সেরকম ভালো আচরণ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল থেকে আগতরা পায় না। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগতদের সঙ্গেও আচরণ অনেকটা একই রকম।
স্টোরিজ অব জ্যাকসন হাইটসের কেন্দ্রীয় চরিত্র শায়লা এদেরই প্রতিনিধি। শায়লা তার পরিবার নিয়ে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া আমেরিকায় বসবাস করছে। পরিবারের উপার্জনকারী মানুষটি শায়লার স্বামী অভিবাসন পুলিশের হাতে আটক হলে দুই মেয়েকে নিয়ে শায়লাকে চালাতে হয় সংগ্রাম! একটি গ–র বাইরে যেন শায়লা না যেতে পারে সেজন্য তার পায়ের গোড়ালিতে একটা সিকিউরিটি ব্রেসলেট পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সীমিত গ–র ভেতরেই তাকে চলাফেরা করতে হয়। নির্ধারিত সময় পরপর তাকে সেই ব্রেসলেটের ব্যাটারি চার্জ দিতে হয়! তা না হলে কর্তৃপক্ষের খড়্গ নেমে আসে। উৎসব-পার্বণ কিংবা কোনো জরুরি প্রয়োজনে সেই সীমা অতিক্রমের উপায় থাকে না।
শায়লার দুটি মেয়ে স্কুলে যায়। সেখানেও মুখোমুখি হয় নানা প্রতিবন্ধকতার। শায়লার স্বামী ডিটেনশন কারাগারে বন্দি। কখনো কখনো সেখান থেকে ফোনে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায়। এমনই মর্মস্পর্শী অনেক গল্পের একটি নিয়ে এই নাটক। উপস্থিত দর্শকরা যে ভাষা ও সংস্কৃতিরই হোন না কেন, বেদনার সমরূপতাময় ঘটমান দৃশ্যগুলোর সঙ্গে নিজেদের নৈকট্য অনুভব করছিলেন। অনেক ক্ষুদ্র মর্মাস্তিক ঘটনার মধ্যে যে-ঘটনাটি মনে সবচেয়ে বেশি মর্মস্পর্শী হয়ে ওঠে তা হলো, সাত-আট বছর বয়সী ছোট মেয়ে তার স্কুলে student of the month হওয়ার 888sport app download bd হিসেবে বাবা যখন ফোনে জানতে চায় – ‘তুমি কী চাও?’ এবং মেয়ে যখন উত্তরে বলে – ‘আমি তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।’ তখন শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় মিলনায়তন জুড়ে।
নাটকের একেবারে শেষ দৃশ্যে কেন্দ্রীয় চরিত্র শায়লার মুখে উচ্চারিত হয় – হয়তো কোনো একদিন অভিবাসী জীবনের এই ভীতি ও সন্ত্রাসের অবসান ঘটবে, আমেরিকা হয়ে উঠবে সত্যিকারের বহুজাতিক বহু বর্ণের এক মানবসভ্যতা!
অভিবাসী জীবনের দুঃখ ও বেদনা নিয়ে লেখা এবং 888sport appsের 888sport live chatীদের অভিনীত এই ইংরেজি ভাষার নাটকটি দেখতে উপস্থিত ছিলেন মিলনায়তনপূর্ণ দর্শক। অন্য সংস্কৃতির দর্শক888sport free betও ছিল উল্লেখ করার মতো। প্রবাসে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা, যারা সাধারণত কোনো 888sport appsি জনসমাজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসতে একেবারেই আগ্রহী হয় না, তাদেরও অনেকে এসেছিলেন। নাটকশেষে দর্শকদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে ইতিবাচক সাড়া! আমার পাশে বসেই নাটক দেখছিলেন 888sport app থিয়েটারের বিখ্যাত নাট্যজন খায়রুল ইসলাম পাখি। তিনিও স্বীকার করলেন, নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে এমন একটি প্রযোজনা করা সহজ নয়! তিনি অনুভব করছিলেন যে, মাঝে মাঝেই সৃষ্টি হচ্ছিল ম্যাজিক নাট্যমুহূর্ত! দর্শক হিসেবে আমারও উচ্ছ্বাস এ-কারণেই যে, একটা যথার্থ থিয়েটারি প্রয়াস উপভোগ করলাম। অফ-অফ-ব্রডওয়েতে হয়তো এরকম নাটক নিয়মিত মঞ্চায়ন সফল হতে প্রারে।
নাটকের সংলাপ ইংরেজি ভাষায় হলেও খুব সহজবোধ্য করে লেখা। ইংরেজি যাঁরা ভালো জানেন না, তাঁদেরও বুঝতে তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। গোলাম সারওয়ার হারুন অভিজ্ঞ নাট্যজন। 888sport appsে গ্রম্নপ থিয়েটারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা যেমন তাঁর আছে, তেমনি আছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রডওয়ে, অফ-ব্রডওয়ে কিংবা অফ-অফ-ব্রডওয়ের প্রচুর থিয়েটার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষের অভিজ্ঞতা। নিউইয়র্ক-নিউজার্সিকেন্দ্রিক থিয়েটার চর্চার অভিজ্ঞতার আলোকে এখানকার সীমাবদ্ধতাকে উপলব্ধিতে রেখে তা অতিক্রমণের প্রয়াসে তিনি নিপুণতার পরিচয় রেখেছেন।
ছোট অনেকগুলো দৃশ্যের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে নাটকটি। দৃশ্যের দৈর্ঘ্য বেশি বড় নয়। কোনো কোনো দৃশ্য তো বেশ ছোট! ছোট ছোট দৃশ্যের সমন্বয়ে নাটকের কাহিনি গতিশীল হয়েছে। দৃশ্যান্তর তথা মঞ্চসজ্জা পরিবর্তনের সময়ে কখনো কখনো সময় কিছুটা বেশি লেগেছে বলে মনে হয়েছে। আলোক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও আরো মসৃণতা কাম্য ছিল। আলাপ করে জেনেছি, কারিগরি মঞ্চায়নে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। 888sport appর মঞ্চে থিয়েটার দেখার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, প্রথম দিককার কয়েকটি প্রদর্শনী লেগে যায় উপস্থাপনাকে মসৃণ করতে। হয়তো স্বল্প ব্যবধানে ভালো মহড়ার মধ্য দিয়ে এসব অসুবিধা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কম মহড়ায় করা প্রথম প্রদর্শনী হিসেবে আমার কাছে যথেষ্ট ভালো লেগেছে। অভিনয়ের ক্ষেত্রে গড় মান ভালো। সংলাপ প্রক্ষেপণে স্বরগমের উচ্চাবচতার সমতা হয়ত মহড়ার মধ্য দিয়ে আনা সম্ভব হবে। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন কৃতী অভিনেত্রী গার্গী মুখোপাধ্যায়, যাঁর রয়েছে অফ-ব্রডওয়েতে কাজ করার অভিজ্ঞতা; রয়েছেন রেখা আহমেদের মতো 888sport appsের এককালের খ্যাতিমান মঞ্চ-অভিনেত্রী। আছেন 888sport appsের মঞ্চ-টিভি-সিনেমার দক্ষ কুশীলব শিরীন বকুল। এজাজ আলম, বসুনিয়া সুমন, সুমি, জেফ হোসেনেরও রয়েছে 888sport appsের গ্রম্নপ থিয়েটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা। এছাড়া অন্য কুশীলরা হলেন মিথিলা গাজী, জেরেমি প্যারেজ, রেশমা চৌধুরী, দ্বৈতা তালুকদার ও গোলাম সারওয়ার হারুন।
মঞ্চ-পরিকল্পনাকে যথার্থই বলতে হবে। প্রপস ব্যবহারে
আরো মসৃণতা আনা গেলে ভালো হতো। পোশাক পরিকল্পনা করেছেন 888sport appsের নাট্যজন আইরীন
পারভীন লোপা। তাঁর
পোশাক-পরিকল্পনায়ও রয়েছে গভীর নাট্যবোধের ছাপ। এই নাটকের আলোক পরিকল্পনা
করেছেন আন্তর্জাতিকভাবে
খ্যাতিমান বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটারের যোগ্য অনুসারী শুভাশীষ দাশ। আলোক
পরিকল্পনাতেও রয়েছে সেই দীর্ঘ নাট্য-অভিজ্ঞতার চিহ্ন। স্টোরিজ অব জ্যাকসন
হাইটসের সংগীত পরিচালনা করেছেন জাজ সংগীতের উদীয়মান সংগীতজ্ঞ বিরসা
চ্যাটার্জী। তাঁর সঙ্গে গিটারে ছিলেন নিউইয়র্কের 888sport appsি জনসমাজের অতিপরিচিত মুখ
আল আমিন বাবু এবং পার্কাশনে ছিলেন শফিক মিয়া। সংগীত-পরিকল্পনার পাশাপাশি বিরসা
নিজেই স্যাক্সোফোন ধরেছেন নাট্য-আবহকে মর্মস্পর্শী করে তুলতে। নাট্য-দর্শকরা অনুভব
করেছেন তাঁর সামর্থ্যকে। সেট আর ক্র্যাফট করেছেন বরোদা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার অব
ফাইন আর্টসে প্রেসিডেন্ট 888sport app download bdে ভূষিত সৈয়দ আজিজুর রহমান। অভিনয় ছাড়াও প্রযোজনা-ব্যবস্থাপনায়
ছিলেন এজাজ আলম; শব্দ প্রক্ষেপণে ছিলেন মুনির। স্টোরিজ অব জ্যাকসন হাইটস দেখতে
গিয়ে মনে হয়েছে দলগতভাবে সকলেই ছিলেন আন্তরিক। স্পন্সরদের অন্য
আয়োজনের বকবকানি না থাকায় দর্শকরা থিয়েটার উপভোগের প্রতি মনোযোগী থাকতে পেরেছিলেন।
নিউইয়র্কে 888sport appsি জনসমাজের জমকালো অনেক পরিবেশনমূলক প্রদর্শনীই মার খেতে দেখেছি
প্রদর্শনীপূর্ব আনুষ্ঠানিকতার বাড়াবাড়িতে। স্টোরিজ অব জ্যাকসন হাইটস ছিল এর
ব্যতিক্রম। দর্শকরা সরাসরিই থিয়েটারে প্রবেশ করতে পেরেছেন। ফলে অভিনেতৃবর্গ ও
কলাকুশলীদের মনোসংযোগে সুবিধা হয়েছে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.