পৃথিবীর সব কোমল মধুর স্বচ্ছ শব্দ যেন এই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে আছে। মগধের পরাক্রমশালী রাজা বিম্বিসারের আলোকিত জলসাঘরের নূপুরনিক্কণ, চুড়ির রিনিঝিনি, ভূষণধ্বনি ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। বিম্বিসার কদিন আগে একটি রাজ্য জয় করে ফিরেছেন। রাজ্য জয় করে নিজ রাজ্যের পরিধি বিস্তার তাঁর নেশা। প্রাসাদের কক্ষগুলিতে তাঁর কয়েকশো স্ত্রী। তবু বিম্বিসারের স্ত্রী গ্রহণের আচ্ছন্নতা কাটেনি। শুধু বলপ্রয়োগ বা যুদ্ধ করে নয়, সুযোগ করে ভিনরাজ্যের রাজকুমারী, অভিজাত 888sport promo codeদের বিয়ে করেন, যৌতুক হিসেবে নেন ছোট-বড় এলাকার দখল। এমন বিয়ের আরো একটি লাভ – কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন; বিরোধ, শত্রুতা মিটিয়ে ফেলা।
আজকের নাচ-গানের আয়োজনটি নতুন একটি রাজ্য জয় উপলক্ষে। নগরীর বিখ্যাত নৃত্য888sport live chatী, গানের 888sport live chatী রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নৃত্য888sport live chatীর নাচের কলামাধুর্য এবং রূপমাধুরী রাজা বিম্বিসারের মনে ধরেছে। প্রকাশ্যে তার পঞ্চমুখ প্রশংসা করেছেন। এমনও বলেছেন, তাঁর দেখা অগণিত 888sport promo codeর মধ্যে এই নৃত্যপটিয়সীই সেরা সুন্দরী। রাজার কথাই শেষ কথা। আজ সামান্য ব্যতিক্রম ঘটল। একজন সভাসদ সাহস করে বললেন, ‘মহারাজ অপরাধ নেবেন না। যাকে আপনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী বলছেন, সে তো আম্রপালীর পায়ের নখের যোগ্যও নয়।’
রাজার মুখে কথা আটকে গেছে। চোখ দুটো পাথরের মতো স্থির। বাঁকা ভ্রু যেন কুঁচকানো কপালে উঠে গেছে। উপস্থিত সকলের বুক ঢিপঢিপ করছে – এই বুঝি মহা গর্জনে বজ্রপাত হলো!
রাজা যথেষ্ট নরম কণ্ঠে জানতে চাইলেন, ‘কে এই আম্রপালী!’
সভাসদ জানালেন, ‘অসামান্য রূপ ও গুণের অধিকারী, সে একজন নগরনটী।’
‘নগরনটী!’
রাজা বিম্বিসার আম্রপালীকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করলেন।
সভাসদ যথেষ্ট হতাশা ব্যক্ত করে জানালেন, আম্রপালীর দেখা পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কত লোক তার বাড়ির কাছে তাঁবু পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকে, আম্রপালীর কৃপা পেলে তবেই কারো ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে।
আম্রপালীর পিতা-মাতা কে, তা কারো জানা নেই।
সদ্যজাত একটি কন্যাশিশুকে বৈশালী নগরের কোণে আমবাগান থেকে কুড়িয়ে পান মহামানাম, তিনি পেশায় মালি। ছেঁড়া কাঁথার মধ্যে একটুকরো চাঁদ যেন ঝলমল করছে। মায়ায় পড়ে আচার কুমার শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে আসেন। তার স্ত্রী মল্লিকা তো অবাক! কোলে নিলেন। কী মায়াভরা মুখ! শিশুটি মিটমিট তাকাচ্ছে। মল্লিকা আনন্দে উচ্ছলিত। আমবাগান থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে, তাই শিশুটির নাম রাখা হলো ‘আম্রপালী’। হিন্দিতে ‘আম্র’ হচ্ছে ‘আম’ আর ‘পালী’ হচ্ছে ‘পল্লব’ বা ‘পাতা’।
মহামানাম সংগীতজ্ঞ, তার স্ত্রী মল্লিকা শাস্ত্রীয় নৃত্যে পারদর্শী। আম্রপালী পিতা-মাতার সংগীত এবং নৃত্যের সব গুণ-জ্ঞান অর্জনে ব্রতী থেকেছে। এই অর্জনটির জন্য প্রয়োজন কঠিন সাধনা ও অধ্যবসায়। মেয়েকে গড়ে তুলতে পেরে পিতা-মাতাও আনন্দিত। আম্রপালীর অতুলনীয় রূপ ও নৃত্যপারঙ্গমতার কথা দেশ-বিদেশে ছড়াতে থাকে।
বৈশালীর রাজা মানুদেবের প্রাসাদে নৃত্য প্রতিযোগিতা। আম্রপালীরও ডাক পড়েছে। রাজার আমন্ত্রণ বলে কথা। আম্রপালীর পিতা-মাতাও আছেন। সভাসদ, বোদ্ধা, সুধীজনের উপস্থিতিতে আজকের প্রতিযোগিতায় আম্রপালী শিরোপা পেলো। মেয়ের এমন সাফল্য ওর পিতা-মাতাও খুশি ।
মেয়েদের দৃষ্টি একটু তীক্ষèই হয়। এতো আনন্দ-উল্লাসের মধ্যেও মল্লিকা কারো কারো চোখে লোলুপতার ছায়া দেখেছেন। রাজার চোখের ভাষাটাও কেমন যেন! বাড়ি ফিরে এসব কথা মল্লিকা স্বামীকে জানিয়েছেন। মেয়ে বড় হয়েছে, এখন তো একটু ভেবে-চিন্তে চলতে হবে।
কৈশোর পেরিয়ে আম্রপালী যৌবনে পা রেখেছে। দিন যায়, শরীরের নানা অংশে 888sport promo codeত্বের লালিত্য স্পষ্ট হতে থাকে। এখনি ওর বিয়েটা জরুরি। এ নিয়ে পিতা-মাতা অনেকটা পথ এগিয়েই আছেন। পুষ্পকুমার – আম্রপালীর বাল্যসখা, পাত্র হিসেবে একেই গ্রহণ করা হবে।
ঐশ্বর্য, প্রতিপত্তি, বিত্ত, ভোগ-বিলাসিতা, এখন সবই আম্রপালীর পদতলমুখী। সে এসবের কিছুই চায় না। শুধু চায়, হৃদয়ে প্রেমের দিন, ভালোবাসার অকলুষ অহম।
আগেও দেখেছে, কিন্তু এখন বন-বাগানের সব ফুল অধিক রঙিন। সুরের লালিত্যসুধা হেসে উঠছে পাখিদের সুরচিত গানে। আম্রপালীর চোখে অসুন্দর বলে কিছু নেই, কুৎসিত বলে কোনো বিষয় কিংবা বস্তু নেই।
পুষ্পকুমারকে ঘিরেই তার সব স্বপ্ন, আশার সকল আলো। পুণ্যপ্রেম আর ভালোবাসার জ্যোতিতে ভরে থাকুক বেঁচে থাকার প্রতিটি সময়। প্রত্যাশার তালিকাটি নাতিদীর্ঘ হলে, বন্ধন স্বাধীন হলে, ইচ্ছের একবিন্দু জলে যদি নানা বর্ণের হাসি হাসতে থাকে – জীবনের ক্লান্তিকর একঘেয়ে মানে পাল্টে যায়। পুষ্পকুমার-আম্রপালী চায় এমনি এক সরলরেখার জীবন। আরোপিত, কৃত্রিম ছদ্ম কোনো সুখ নয়, অণু অণু করে গড়ে ওঠা স্বরচিত সুখ।
সব প্রস্তুতি শেষ। এখন, আগামীকাল লগ্ন মিলিয়ে আম্রপালী আর পুষ্পকুমারের শুধু বিয়ের পিঁড়িতে বসা। বিয়ের আগের রাতে রাজরোষে পুষ্পকুমারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো।
অনেক লোকের ভিড়। পুষ্পকুমারের মরদেহ পড়ে আছে মন্দির-বাড়ির ঝোপে। ভিড়টা গলিয়ে আম্রপালী পুষ্পকুমারের বুকে আছড়ে পড়ল। এই বুকেই তো পাখিদম্পতির মতো ছোট্ট একটা নীড় বাঁধতে চেয়েছিল, হলো না। দেখলে মনে হয় পুষ্পকুমার ঘুমিয়ে আছ। আম্রপালীর চেনা শব্দ-গন্ধ পেয়ে জেগে উঠবে। রক্তের দাগ তখনো তরল। মরদেহটা কাত করে সে দেখল, অস্ত্রের আঘাতচিহ্ন পিঠেই বেশি। সামনে দাঁড়ানোর সাহস ছিল না। কাপুরুষ তো পেছন থেকেই আক্রমণ করে! প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুষ্পকুমারের হাতের আঙুল ক্ষতাক্ত হয়েছে। সবার অলক্ষ্যে ওর ডান হাতের মাঝের আঙুলের শীর্ষ থেকে ক-ফোঁটা রক্ত নিজের আঙুলে মেখেছে আম্রপালী। কিছুদূর গিয়ে আবার ফিরল। পুষ্পকুমারের বুকে মাথা ঠেকিয়ে মন্ত্রের মতো আম্রপালী উচ্চারণ করল, পুষ্প, তোমার এই বুকে এতো ভালোবাসা ছিল। হারাতে দেব না, মনে ধরে রাখব, বুকে তুলে রাখব।
চেষ্টা করেও আম্রপালী চোখের জল ফেরাতে পারেনি। ঝাপসা লাগছিল পুষ্পকুমারের মুখ। আঁচলের খুঁটে নিজের চোখ মুছল, পরম মমতায় মুছে দিলো পুষ্পকুমারের মুখ। তাকাল ওপরের দিকে। রোদনে ভেজা উচ্চারণে বলল, হে আলো, আমার পুষ্পের মুখ চিরদিন আমার চোখে আলো করে রাখো।
আম্রপালী ঘরে ফেরেনি। ওদের বাড়ি-লাগোয়া একটা পুকুর। চারপাশে নানা জাতর আমগাছ। জায়গাটা আম্রপালী আর পুষ্পের খুব প্রিয়। প্রায়ই গল্পে গল্পে ওদের বিকেলগুলো সন্ধে হয়ে উঠত।
শানবাঁধানো ঘাট। আম্রপালী সিঁড়ির শেষ ধাপে বসে পায়ে জল ছুঁয়েছে। ঝুঁকে দেখে, চিকন ঢেউয়ে ওর ছায়া পড়েছে। মনে হলো, পাশের ছায়াটা পুষ্পকুমারের, ওর ঠোঁটে-চোখে নরম রোদের মতো হাসি চেয়ে আছে। আম্রপালীর আঙুলে পুষ্পকুমারের আঙুল থেকে তুলে আনা ফোঁটারক্ত, এখনো তরল। জলে, নিজের ছবির দিকে তাকিয়ে একবিন্দু রক্ত সিঁথিতে এঁকে নিয়ে বলল, ‘পুষ্প, খুশি তো, আমি তোমার চিরকালের হয়ে গেলাম।’
হঠাৎই আম্রপালীর মনে হলো, পুকুরে কোনো জল নেই। সব জল তার চোখের মধ্যে। এই জলে তো পুষ্পকুমারের ছায়া পড়ে আছে। হে পুকুর, তোমার চোখে থাকুক। তোমাকে আমি শুকাতে দেব না। তাহলে যে আমার প্রাণের পুষ্পও হারিয়ে যাবে।
পুষ্পকুমারের এমন করুণ মৃত্যু! অনেকের মুখে হাসি ফুটেছে। অদ্ভুত মানবচরিত্র! পথের কাঁটা দূর হয়েছে। এখন আম্রপালীকে বিয়ে করার সম্ভাবনা তৈরি হলো। অনেকেই আগের চেয়ে মরিয়া। বিয়ের প্রস্তাব শুনতে শুনতে আম্রপালীর পিতা-মাতা অস্থির। কে বিয়ে করবে, এ-নিয়ে ঝগড়া, মারামারির খবরও আসছে। কী উপায়!
কোনো পথ না-দেখে, আম্রপালীর পিতা বৈশালীর রাজা মনুদেবের কাছে গেলেন, বললেন আম্রপালীর বিয়ে-প্রস্তাবের প্রাদুর্ভাবের কথা। সব শুনে রাজা জানালেন, বৈশালী একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তিনি একা কোনো বিধান দিতে পারেন না। পরিষদ আছে, পারিষদ আছে – সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হবে।
একদিন, খুব আয়োজন করে, আম্রপালীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত-সভা শুরু হলো। আম্রপালীর একমাত্র অপরাধ – সে রূপবতী। তার সৌন্দর্যে দেশ-বিদেশের মানুষ পাগল হয়ে উঠেছে, বিয়ে-প্রতিযোগিতায় সবার নাছোড় প্রতিজ্ঞা।
অদ্ভুত, সৌন্দর্যকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়।
অনেক কথাকাটাকাটি। বিতর্ক-বিতণ্ডা। শেষ পর্যন্ত সাব্যস্ত হলো, এতো পুরুষের কামনার 888sport promo code কোনো একজনের স্ত্রী হতে পারে না। সে হবে নগরবধূ। তার ওপর স্বামীয়ানা সবাই দেখাতে পারবে। বিরল সৌন্দর্য উপভোগের থাকবে আমজনতার অধিকার।
সুন্দরী হওয়ার অপরাধে (?) বিচার-অনুষ্ঠানে পিতা-মাতার সঙ্গে আম্রপালীও উপস্থিত ছিল। সে এমন অমানবিক রায়ের প্রতিবাদ করল। আগুনের দলা ছিটকে পড়ছে তার চোখ থেকে। শৈলচূড়ার মতো মাথা উঁচু। স্পষ্ট কণ্ঠে বলল, ‘স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসারধর্ম পালন করা প্রত্যেক 888sport promo codeর জন্মগত অধিকার। মহারাজ, এ-অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। যদি চান, আত্মবিসর্জন দিয়ে সুন্দরী হওয়ার অপরাধ স্খালন করতে পারি।’
উপস্থিতি কেমন নড়েচড়ে উঠল। কানাঘুষা চলতে থাকে। আম্রপালী আবারো মুখ খোলে, ‘আমি এ-ও কথা দিতে পারি, চিরকুমারী থেকে যাব, দয়া করুন, আমার 888sport promo codeত্বকে সব পুরুষের অধিকার করে দেবেন না।’ পারিষদ, পরিষদ অনড়। আম্রপালীর কোনো কথা তাদের কানে ওঠেনি ।
এবার এলো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চাপ। বলা হলো, সর্বসম্মত এই রায় অমান্য করলে তোমার কঠোর দণ্ড হবে। আরো বলা হলো, তোমার বাঁচামরা নিয়ে আমরা চিন্তিত নই, দেশের কল্যাণ নিয়ে আমরা চিন্তিত।
এবার রাজা বললেন, ‘কঠোর দণ্ড হলে, তুমি যাদের কামনার ধন, ব্যর্থতার হাহাকার ধামাচাপা দিতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। আর, এছাড়া, ভিনদেশি রাজা, রাজকুমার কেউ কেউ, তোমাকে এককভাবে পাওয়ার হীন আশায় আমাদের রাজ্য আক্রমণ করতে পারে। তুমি তো দেশের অমঙ্গল চাইতে পারো না।’
কী জবাব আসে, সবাই আম্রপালীর মুখে দিকে তাকিয়ে আছে। আম্রপালী পিতা-মাতাকে প্রণাম করে দাঁড়িয়ে, আবেগ-আচ্ছাদিত কণ্ঠে বলল, ‘দেশের স্বার্থের কথাই যখন তুললেন, আমি আপনাদের রায় মেনে নিলাম। আমি সামান্য 888sport promo code, আমার জীবনের সকল চাওয়া-পাওয়ার বিনিময়ে হলেও দেশের কল্যাণ চাই।’ চারিদিকে হর্ষধ্বনি – ‘আম্রপালীর জয় হোক, আম্রপালীর কল্যাণ হোক।’
হর্ষধ্বনি থেমে এলে, আম্রপালী আবার দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমার কিছু শর্ত আছে।’
সবার কৌতূহল, জিজ্ঞাসা – কী শর্ত, কী শর্ত!?
‘শর্ত তেমন কঠিন কিছু নয় – নগরবধূকে নগরীর অভিজাত এলাকায় হর্ম্যপ্রাসাদতুল্য বাসস্থান দিতে হবে, আমার সঙ্গলাভ করতে হলে পাঁচশত কার্শ পণ দিতে হবে, একবার মাত্র একজন আমার ঘরে প্রবেশের অনুমতি পাবে, শত্রু বা অপরাধী সন্ধানে প্রয়োজনে সপ্তাহে একবার আমার গৃহে প্রবেশ করা যেতে পারে। তবে গৃহে কে এলো, কে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।’
রাজা কয়েকজনের সঙ্গে কানপরামর্শ করে আম্রপালীর সব শর্ত মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেন।
এদিকে মগধের রাজা বিম্বিসার বৈশালী যেতে এবং আম্রপালীকে সামান্য চোখের দেখা দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছেন। এই রাজ্যটির সুনাম সকলেরই জানা। প্রজাকুল অন্নে-বস্ত্র মহাসুখে আছে। কোনো হানাহনি, মারামারি, অস্থিরতা নেই। প্রজাদের দেশপ্রেম প্রবাদতুল্য। বিচিত্র ফুল, কিন্তু একসুতোয় গাঁথা মালার মতো শান্তিতে সকলের বসবাস।
বৈশালী আক্রমণের অপচিন্তা বিম্বিসারের মাথায় যে আসেনি, তা নয়; কিন্তু সাহস হয়নি। বিম্বিসার পরাক্রমশালী যোদ্ধা, কিন্তু পরাজয়ের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক ভেবেচিন্তে ছদ্মবেশে বৈশালী যাওয়ার মনস্থির করলেন তিনি।
রাজা বিম্বিসার নিজের ছদ্মবেশ পরখ করে নিজেই মুগ্ধ । নিশ্চিত হলেন কেউ তাকে চিনতে পারবে না। সহজ পথ রেখে ঘুরপথে, নিজেকে আড়ালে রাখা যায়, তেমন সাবধানতায় একদিন সকালে বিম্বিসার বৈশালী নগরীতে পৌঁছান। পথের ক্লান্তি তো আছেই, একটু ধাতস্থ হওয়া দরকার। এমন চিন্তা থেকে প্রথম দিনই আম্রপালীর দর্শনপ্রার্থী হলেন না। এতো খ্যাতি শুনেছেন, যতটা সম্ভব নগরটা একটু ঘুরে দেখা যেতে পারে। অনাবশ্যক কিছু নেই। ছবির মতো দালানকোঠা, পথঘাট। মানুষের মধ্যে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেই। যার যার মতো কাজে ব্যস্ত।
বিম্বিসার মানুষের সঙ্গে তেমন মিশছেন না। খুব সাবধানে এবং স্বাভাবিকতায় কিছু কৌতূহল মেটাচ্ছেন মাত্র। এই নগরীতে সাত হাজার সাতশো সাতটি উদ্যান আছে, আছে সমানসংখ্যক পদ্মপুকুর। বোঝা যাচ্ছে, এখানকার মানুষ বিনোদনপ্রিয়, প্রকৃতিনিষ্ঠ। আর যেখানে যায়, লোকের মুখে ঘুরেফিরে আম্রপালীর কথা এসে যায় – প্রশংসা। অনেক জনহিতকর কাজে সহযোগিতা করেন, নগরীর উন্নয়নে তার হাত যথেষ্ট মুক্ত।
ছদ্মবেশ যথাযথ নিপুণ করে, বিম্বিসার সকাল করেই চলে এলেন। আম্রপালীর হর্ম্যপ্রাসাদের প্রহরীকে জানালেন তাঁর বাসনার কথা। পরিচয় জানালেন, ভিনদেশি বণিক। বিম্বিসার শুনেছেন, আম্রপালীর দেখা পেতে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে। এমন মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই বিম্বিসার উত্তরের অপেক্ষা করছেন।
উত্তর আসতে সময় লাগেনি, অনুমতি মিলেছে। কাছেভিতে যারা ছিল সবাই অবাক। বিম্বিসার অবাক হলেও শরীরী ভাষায় সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন, এমনটাই তিনি প্রত্যাশা করেছেন।
পরিপাটি পোশাকের একজন শোভন আচরণে বিম্বিসারকে টানা-বারান্দার মাঝামাঝি একটি কক্ষে নিয়ে এলো। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো রুপোর গোলাকার থালা, সোনার গেলাসে ‘স্বাগত-পানীয়’। একজন ষোড়শী এলো, ঝলমলে পরিধেয়। পায়ে নূপুর নেই, তবুও তার চলায় রয়েছে ছন্দের নিপুণ ভঙ্গি। ইশারায় পথ দেখিয়ে বিম্বিসারকে পৌঁছে দেওয়া হলো বেশ বড়োসড়ো একটি ঘরে। ময়ূরের পেখমের মতো আসনে বসে আছেন যে 888sport promo code, দাঁড়িয়ে, মুখোমুখি আসনে বিম্বিসারকে বসালেন। বুঝতে কিছু বাকি থাকল না – কে এই 888sport promo code!
বাস্তব ও কল্পনার সব সৌন্দর্য মিশেছে এই 888sport promo codeর অঙ্গগরিমায়। লোকশ্রুতি, তা খণ্ডাংশ মাত্র। বাকরুদ্ধ বিম্বিসার চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছেন! কী বলবেন, এই রূপসীর প্রশংসা পূর্ণ হয় – এমন ভাষা কোথায় পাবেন! কোন উপমায় বলবেন তার গ্রীবার কথা! চৈত্রের চাঁদের মতো! বাহু তার মৃণালের ডাঁটা! শানবাঁধা ঘাটের শেষ ধাপের মতো গোড়ালির খাঁজ! না, কিছুই হলো না। সবই তো পুরনো উপমা।
বিম্বিসারের দীর্ঘ নীরবতা দেখে আম্রপালী হাসছে ঠোঁটচাপা হাসি। তার সামান্য কটাক্ষে পরাক্রমশালী রাজা বিম্বিসারের সব অহমিকা মুহূর্তে বিচূর্ণ হয়ে গেল।
হাসির রেখা এঁকে আম্রপালীই নীরবতার পর্দা সরাল। বলল, ‘আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি।’
‘চিনতে পেরেছেন?’
‘আপনি মগধের রাজা বিম্বিসার।’
‘মহীয়সী, মনে হয়, আমাকে চেনায় ভুল করেছেন।’
‘ভুল আমি করিনি। কিছু পুরুষ, যারা আত্মবিশ্বাসের নিয়ন্ত্রণটা অকারণে কব্জা করে রাখেন, তাঁদের নিয়ে মুশকিল কি জানেন! দেয়াল, দেয়ালেরও চোখ আছে, দেখতে পায়। দৃশ্য দেখে, অদৃশ্য – তা-ও। কেশের আড়ালে পাহাড় লুকানো যায়। মেয়েদের চোখে লুকানো যায় না সুঁচের ছায়াও। পোশাক ছদ্ম করলেন, চুল-দাড়ি করলেন, চোখ হাসি কী করবেন! রোদন, হাহাকার, ভালোবাসার সুতো! কে ছিঁড়তে চায়।
এই নগরীতে যখন পা রাখলেন, বেশের ছদ্ম আড়াল খুলে গেছে।’
‘আমি যে কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘আপনার সব বোঝার দরকার নেই। পথের ক্লান্তি আছে, বিশ্রামে যান, আবার কথা হবে।’
এবার অন্যঘর। দেয়ালে মুগ্ধকর ছবি শোভা পাচ্ছে। অধিকাংশই প্রতিকৃতি। নগরীর নামজাদা 888sport live chatীদের আঁকা। এই ঘরের মেহফিলে কবি, চিত্র888sport live chatী, নৃত্য888sport live chatী, গায়ক-বাদকদের ডাক পড়ে। প্রতিকৃতিগুলো এতোটাই উজ্জ্বল, যেন, এখনি হেসে উঠবে। এর মধ্যে একটি প্রতিকৃতি বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো। নতুন যুবক, ঠোঁটে হাসি। তার সরল তাকানোতে কত কথা জমা হয়ে আছে! চন্দন কাঠের বেদি, তাজা গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। সর্বক্ষণ সোনায় গড়া প্রদীপে ঘিয়ে ডোবানো সলতে জ্বলছে।
এতোগুলি ছবির মধ্যে এই ছবিটাই আম্রপালীর আঁকা। এ-কথা শোনার পর, বিম্বিসার আরেক দফা বিস্মিত হলেন। ‘আপনি এতো ভালো ছবিও আঁকেন!’
‘আমি কি এঁকেছি! আমার মন এঁকেছে। বেঁচে থাকার সকল পৃষ্ঠায় এই একটাই ছবি, মøান হয় না, নিঃশব্দ হয় না। পৃথিবীর সকল শূন্যতার ভেতর ভালোবাসা প্রেম হয়ে বাঁচে। মুগ্ধতার কোনো 888sport free betবদ্ধতা নেই। মুছে যায়, জেগে থাক।’
বিম্বিসারের বিস্ময়ের ঘোর বাড়ছে – অসংখ্য, অনেক।
মুগ্ধকণ্ঠে আম্রপালী বললেন, ‘আজ সন্ধ্যায় জলসা হবে। শুনেছি আপনার আঙুলে নাকি জাদু আছে। বাজাবেন, আমি গাইব, নাচও হবে। একজন চিত্র888sport live chatীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আপনার ছবি আঁকবেন।’
আবারো অন্যঘর। চারদিকে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় জানালা হাট করে খোলা। বাতাসের অবাধ চলাচল। এখন উত্তীর্ণ-সন্ধ্যা। ঘরময় জ্যোৎস্নাঝুরা ছড়িয়ে আছে। সাদা পাথরের বিস্তারিত মেঝেয় ঝাড়বাতির আলোয় কম্পমান আল্পনা রচনা করছে। চন্দন কাঠের পাল্লা, লালশালুর জাফরি করা রশিটানা পাখা। মৃদু বাতাস, সুবাস ছড়াচ্ছে। একপাশে পুরু গতি, মখমলের তাকিয়া।
কিছু সময় মকশো করে ঝুমরি তালে বাদন শুরু করলেন বিম্বিসার। কিন্নরকণ্ঠ বললে সামান্যই বলা হয়। আম্রপালী গান ধরেছে, নাচের মুদ্রাগুলো অন্ধকারের ভেতর থেকে হঠাৎ জ্বলে ওঠা আলোর ঝিলিক। নূপুরগুঞ্জন আর চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ ঘরময় ঢেলে দিচ্ছে সুরের সৌরভ। আজ নতুন এক আম্রপালীর উদয়। ঝাঁপায় মুক্তোর ঝিলিক, মেখলায় সামান্য আলো যেই পড়েছে, ঝকমক সাঁতরাচ্ছে সোনালি মাছের পোনা। চোলবস্ত্রে শুকশারি পেয়েছে শান্তির নীড়।
এমন আনন্দের আলোস্রোতে ভেসে হেসে আম্রপালী-বিম্বিসারের তিনদিন কেটেছে। এর মধ্য কেউ নগরবধূর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি পায়নি। যেতে যেতে এ-কথা রাজার কানে পৌঁছেছে। শান্ত্রী এলো। আম্রপালী জানাল, শর্ত মোতাবেক সাতদিনের আগে কেউ তার বাড়িতে ঢুকতে পারবে না ।
সাতদিনও তো শেষ হবে। এরপর!
এক বিকেলে দুজন গল্পে ব্যস্ত। বিম্বিসার খেয়াল করলেন, সেদিন, গান-নাচের ঘন সন্ধ্যায় একজন 888sport live chatী তাঁর যে-ছবিটা এঁকেছেন, শোভা পাচ্ছে আগের ছবিগুলোর পাশে। বিম্বিসারের আনন্দিত বিস্ময়ের তাকানোটা আম্রপালীর চোখ এড়ায়নি। হেসে হেসে বলল, ‘যাকে মনে ধরে, তার ছবি ওই বিশেষ স্থানে সংরক্ষণ করি।’
আম্রপালী তার অনুরাগের কথা ইঙ্গিতে বলেছে। বিম্বিসার গেলেন সরাসরি পথে। জানালেন, আম্রপালীকে রানি করে তাঁর প্রাসাদে তুলতে চান।
এবার আম্রপালীর সোজা জবাব, ‘তা কখনো হওয়ার নয়। রাজা, তার রাজ্যের মানুষ তা মেনে নেবে না।’
বিম্বিসারের জবাব, ‘তাহলে যুদ্ধ ঘোষণা করব।’
‘তা তো করা যায়ই; কিন্তু আমি যুদ্ধ চাই না। আমার দেশ, দেশের মানুষের মঙ্গল সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। রক্তপাত কোনো সমাধান নয়।’
‘তাহলে আমাদের প্রেমের কী হবে?’
‘প্রকৃত প্রেমের হাত শূন্য থাকা ভালো।’
মনে রোদনের ঝড়। তবু আম্রপালীর সব কথা মেনে রাজা বিম্বিসার নিজ রাজ্যে ফিরে গেলেন।
ঈর্ষা এক ভয়ানক ব্যাধি। স্থান-কাল-পাত্রভেদ নেই। কেন্দ্রবিন্দুতে এক 888sport promo code। পিতা বিম্বিসারের প্রতি ঈর্ষান্বিত তার ছেলে অজাতশত্রু। পিতার প্রেম ভেদ করে সে-ও আম্রপালীকে পেতে চায়। তার ঈর্ষার আগুনে বাতাস দিচ্ছে দেবদত্ত নামে একজন। ঈর্ষার সঙ্গে যুক্ত হলো আরো একটি ইতর ঈর্ষা।
বিম্বিসার বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক আর দেবদত্ত বৌদ্ধসংঘ ত্যাগ করেছে। তারই প্ররোচনায় অজাতশত্রু নিজের পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। দেবদত্তের কুটচাল থামেনি। এবার পিতা বিম্বিসার এবং তার উপদেষ্টামণ্ডলীকে গৃহবন্দি করে অজাতশত্রু নিজেকে মগধ রাজ্যের রাজা ঘোষণা করে। এখানেই শেষ নয়, গৃহবন্দি অবস্থায় বিম্বিসারকে হত্যা করা হয়।
অজাতশত্রু বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে আম্রপালী তা প্রত্যাখ্যান করে। ঈর্ষার আগুনে দগ্ধ, পিতাকে হত্যা করতে যার মন কাঁপেনি, সে কী করে মুখ বুজে মেনে নেবে 888sport promo codeর অবজ্ঞা! বৈশালী আক্রমণ করে বসে। প্রেম এবং যুদ্ধ কোনো নিয়ম মেনে হয় না। এখানে নিয়ম ভাঙার দুটি অনুষঙ্গ তালপাখা। বৈশালীর মানুষ এবং রাজা নিজেও সন্দেহ করলেন, এ-যুদ্ধে আম্রপালীর কোনো ইন্ধন
থাকতে পারে। আম্রপালীকে বন্দি করার দাবিও করল সুবিধালোভী বিশেষ মহল। কিন্তু সহসাই সকল সন্দেহের মেঘ কাটল। রাজার পদাতিক, অশ্বারোহী সৈন্যদের প্রতিরোধ যুদ্ধে যুক্ত হলো নাগরিকের সম্মিলিত সাহস। মানুষের প্রতিরোধ-প্রচেষ্টার অগ্রভাগে ছিল আম্রপালীর রথ। এ-যুদ্ধে অজাতশত্রুর শোচনীয় পরাজয় ঘটে। আহত অজাতশত্রু আম্রপালীর গোপন
শুশ্রƒষা ও দয়ায় প্রাণ নিয়ে মগধ ফিরতে পেরেছিল।
888sport promo codeর মন চিরকালই দুর্বোধ্য। যে তার একান্ত অনুগত প্রেমিককে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, বৈশালী আক্রমণ করতে একবারও যার মন কাঁপেনি, কোন মোহমুগ্ধতায় হাতের মুঠোয় পেয়েও আম্রপালী অজাতশত্রুকে বাঁচিয়ে দিলো!
আম্রপালী – সুর লুপ্ত হয়ে থাক বাদ্যযন্ত্রের মতো। অগণিত পুরুষ তাকে কাছে টেনেছে। প্রেমের অর্থহীন অন্ধতা তাদের এতোটাই অসার করে রেখেছিল, কোমল আঘাতে যে এ-যন্ত্র বাজাতে হয়, কারো মনেই পড়েনি। এক সৌম্য শ্রমণ, তিন মাসের টানা বর্ষাসময় আম্রপালীর একান্তে থেকেও প্রেম-কামে বিরত থেকেছেন। প্রত্যাখ্যানের এই কোমল আঘাতে আম্রপালী নামের সুরপুঞ্জটি যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে, বেজে উঠেছে অভূতপূর্ব ধুনে, ঝালায়!
অনিচ্ছার এতো শয্যাফুল – সকালেই বাসি হয়ে যায়। থেকে গেছে এক পুষ্পপুণ্য জ্যোতি, এর জয় বা পরাজয় নেই। বধির ঈর্ষা তাকে ছুঁতে পারে না। মন এক আশ্চর্য 888sport slot game, সন্ধ্যা-রঙের পাখি। নীড়ে ফেরার তৃষ্ণা। তখনো, আম্রপালীর মনে ঘোর করে আছে অর্হত্বের আলো-অন্বেষণ।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.