সে আমি আমার সামনে যেই চিত্র মেলি, তিনি তার রূপ শুদ্ধ করেন – আমি যে আমার মাটি যেই কর্মে ধরি, তিনি তার ঘ্রাণ মুগ্ধ করেন – বৃত্তের কেন্দ্রে তিনি অবলম্বনের অনিবার্য শ্বাস হয়ে থাকেন। জনপথে, গণযাত্রায়, কল্যাণের নিত্য সুতোয় বাঁধেন সময়ের সম্মিলিত আখ্যান। আলো ও মুক্তি যেন পরস্পর ভালোবাসা দিয়ে, বোধ দিয়ে, দায় দিয়ে নির্ণয় করে তাঁর অভিযাত্রার ফলাফল। আমি ও আমরা মানি, গণ্য করি সুন্দরের এক অলৌকিক সাম্পান – তিনি আনিসুজ্জামান। প্রিয় সত্য, নিত্য মান্য, ভাষাকল্প, মৌলিক সন্ধান – জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
দুই
আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন না, তবু যেন সর্বদ। আমার মানসজগতে স্থান পেয়েছেন শিক্ষাগুরু হিসেবে। সে-অর্থে আমার অবলম্বন ছিল তাঁকে পাঠ এবং অনুভব-উপলব্ধির সীমায় স্থাপন করা।
গবেষণাগ্রন্থ মুসলিম-মানস ও বাংলা 888sport live football দিয়ে শুরু করে একে-একে 888sport sign up bonusচারণমূলক গ্রন্থ কাল নিরবধি, আমার একাত্তর, বিপুলা পৃথিবী কী চেনা মানুষের মুখ – একজন আনিসুজ্জামানকে আনিসুজ্জামানে রূপান্তরিত করে। অন্যদিকে স্বরূপের সন্ধানে, আত্মপরিচয়, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা থেকে বাঙালি ও 888sport apps গ্রন্থসমূহ তাঁর আত্ম-আবিষ্কারের দলিল। ভেতর থেকে যে শাঁস উঠে আসে – তার ঘ্রাণ হৃদয়-মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় নতুন-নতুন অভিজ্ঞানে। জলে ফোটে তাঁর প্রতিচ্ছবি, মাটি জানে তাঁর বিস্তারের কাল – সন্ধানের মগ্নসূত্র সত্যরূপে অনুধাবন করে তাঁর রূপ-প্রভাতের বিভা। বৈকাল তো নিরবধি মান্য করে জন্মলগ্ন, – মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের গৌরব মহান। ভাবনায়, রচনায়, কল্পনায় – তাঁর গতিপ্রতিকৃতি অগ্নিমর্ম থেকে জলধর্মে অফুরন্ত মানবিক উপাদান। তিনি সন্ত। তিনি ভক্ত – তিনি গুরু। তিনি শিষ্য – যুক্ত তিনি, মুক্ত তিনি বাঙালির স্বপ্ন-চেতনায়। সৃষ্টি ও কর্ম তাই তো অবিভাজ্য আধারে তাঁকে ধারণ করে। তিনি হয়ে ওঠেন আত্মার জন। মানদণ্ডে প্রধান। আনিসুজ্জামান।
তাঁর গবেষণার প্রাথমিক অঞ্চলটি যদি ‘ইংরেজ আমলে বাংলা 888sport live footballে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারা’ হয়, তবে প্রেক্ষিত বিবেচনায় বিষয়বস্তু ছিল এমন : ‘ইংরেজ আমলে বাংলা 888sport live footballে মুসলমান লেখকদের পরিচয় দান।’ এতে করে আগ্রহের বিষয়টি যেমন স্পষ্ট, ঠিক সেভাবেই স্বরূপের সন্ধানের পর্বটিও উজ্জ্বল। জীবন ও জীবিকা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশ-কালের চিত্রটিও নবরূপে উন্মোচিত হয়েছে। গত শতাব্দীর দেশভাগের চিত্রটি যেমন এ-অঞ্চলের ভৌগোলিক সীমারেখা বদলের পাশাপাশি ভাবনা ও বিকাশের ক্ষেত্রটিও অন্যযুগী করেছিল। বাংলা বিভাগের মধ্য দিয়ে ধর্মরূপের যে-দৃশ্যটি উন্মোচিত হয় – তা যেমন ছিল নৃশংস তেমনি ছিল কূপমণ্ডূকতায় পূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তী ভারত-বিভাগ এ-অঞ্চলের অধিবাসীদের চরিত্র-চিত্রণে নতুন উপাদান যোগ করেছে। সেই আলোকে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাষারূপ ও 888sport live footballচিন্তার প্রেক্ষাপটটি সম্মুখে এনে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সৃষ্টিকর্ম দেখতে হবে।
পরিবার ও পরিবেশ থেকে যেটুকু সাম্প্রদায়িক ভেদজ্ঞান আমার জন্মেছিল, ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার অভিজ্ঞতার ফলে মন থেকে তা সম্পূর্ণ মুছে যায়।
তিন
কে দোলায় ছায়া? হাওয়া। নড়ে তো ভুবন-বিহার। সরে তো নিত্য-সহচর আমাদের যাত্রাপথে ধ্বনি আর অহংকার। বিনয় এবং প্রতিবাদ, 888sport apk download apk latest version ও শুভবার্তা তৈরি করে এক মগ্ন সমবায়। তিনি তো কেন্দ্রে দেখেন বৃত্তের বিকাশ, তাঁর গাঢ় কল্পে ন্যস্ত করেন রেখার সম্ভার – এবং তিনিই তাঁর ছায়ামায়া নৈকট্যে বিলান। তিনি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রিয় অভিভাবক, জাগ্রত বিবেক এবং পরম সুহৃদ।
বাঙালির আত্মপরিচয়ের জন্য 888sport appsের প্রতিষ্ঠা বড়ো এক অগ্রগতি। এখানে ভাষা ও অঞ্চলের অভূতপূর্ব মিলন ঘটল।
আনিসুজ্জামানের এই বক্তব্যের মধ্যে আত্মপরিচয়ের যে-সত্যটি প্রদর্শিত হলো – তাই ধারণ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তী স্বাধীন-সার্বভৌম 888sport appsের অভিযাত্রা। কিন্তু দুঃখজনক সত্য এই – ১৯৭৫ সালের পর আমাদের পথরেখা ছিন্ন হয়ে যায়, – আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে-হতে আমরা প্রায় অন্ধ হয়ে পড়ি। পরিচয়ের এই প্রশ্নটি নিয়ে যখন তর্ক-বিতর্ক, তখন তাঁকে 888sport app download for android করি :
The religious identity of an individual does not in any way come into conflict with the national identity, nor are these the same. One may have — and usually does have several identities : a national identity, a religious identity, a citizenship, a profession and so many others. Let us not mix categories and create unnecessary crisis of identity — personal or national.
আত্মপরিচয়ের এই যে বিশ্লেষণ – তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে তাঁর ভাবনা-আদর্শের মিলনই হবে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের প্রকাশিত-চিত্র।
চার
আমার সঙ্গে তাঁর মুখোমুখি পরিচয়ের পর্বটিতে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। যৌবনসীমায় দাঁড়িয়ে তাঁকে পাঠ করেছি, পরিণত বয়সে চেষ্টা করেছি অনুধাবনের। আর প্রান্তে এসে, বাংলা একাডেমির সুবাদে তাঁকে পেয়েছি সভাপতি হিসেবে। ২০১৮ সালের ২০শে ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ১৪ই মে পর্যন্ত একজন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে আমার কাছে ছিলেন – প্রিয় অভিভাবক, জাগ্রত বিবেক এবং পরম সুহৃদ হিসেবে। প্রায় দেড় বছরের মতো এ-সময়কালে তিনি কখনো আমাকে তাঁর প্রতি দৃষ্টিবিভ্রম, মনোবিচ্যুতি কিংবা সামান্যতম অমনস্ক হবার সুযোগ দেননি। বাংলা একাডেমির নানান আয়োজনে পৌরোহিত্য যেমন করেছেন – তেমনি সংকটকালে আমাকে দিয়েছেন নানান দিকনির্দেশনা। আমাদের ভাবনা, আমাদের দর্শন, আমাদের স্বপ্নে যখন দাগ ধরতে শুরু করেছে – তখন তিনি তা সাফসুতরো করতে যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছেন। কল্যাণচিন্তা এবং মঙ্গলযাপন ছিল তাঁর মহাধর্ম। অনুজের প্রতি স্নেহ, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য শুভকামনা ছিল অন্তরের আকাঙ্ক্ষা। ফলে নানান অনুষ্ঠানে, নানান প্রযোজনায় তাঁকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এ-প্রসঙ্গে সুলতানা কামালের বরাত দিয়ে বলি :
২০০০ সাল থেকে আনিসভাইয়ের ব্যস্ততা দৃশ্যমানভাবে বেড়ে গেছে। একদিন কোনো এক সভার ফাঁকে বললাম, এত ব্যস্ততা সামাল দিতে গিয়ে না শরীরের ওপর চাপ পড়ে! মৃদু হেসে বললেন, ফুপু মরে গিয়ে আমাকে বিপদে ফেলে গেছেন। এর ভেতর দিয়ে যে কথাটা সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো, আনিসভাইয়ের ভেতরে মানুষ তাদের আস্থার জায়গাই খুঁজে পায়। তিনি এমন একজন মানুষ, যাঁর ওপর ভরসা করা যায়।
সুফিয়া কামালের মৃত্যুর পরে সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালনের অংশটুকু আনিসুজ্জামানের ওপর বর্তায়। একথা সত্য, শুধু 888sport apps নয়, ভারতবর্ষেও তাঁর প্রিয়তা তাঁকে সার্বক্ষণিক ব্যস্ত রেখেছে। আমার বাংলা একাডেমির কালে তাঁকে দেখেছি, শুধু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নয় – সামাজিক নানান দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লেখালেখি ও সম্পাদনার কাজেও অবিশ্বাস্যভাবে ব্যস্ত থেকেছেন। বয়স যে আশি পার হয়ে গেছে – কোনোভাবেই তা যেন তিনি মানতে চাইতেন না। মনের এই স্ফূর্তি বুঝি শরীর সামাল দিতে পারছিল না!
পাঁচ
প্রভাতে যে পক্ষীকুল চঞ্চুতে জীবন স্পর্শ করেছিল, মধ্যরাতে যে চাঁদ ভেঙেছিল নক্ষত্রপুঞ্জের অভিমান – তিনি তো তাদেরই পূর্ণ অবস্থান। তিনি তো মিলন ও বিরহের, প্রেম ও প্লাবনের শুক্ল কিংবা কৃষ্ণের নবীন আহ্বান। অগ্রবর্তী সন্ধানের নিমিত্তে শিক্ষকতা, মুক্তিযুদ্ধ, ন্যায়ধর্ম তাঁকে গৌরবের শীর্ষে চিহ্নিত করলে – আমরা লাভ করি অনন্য এক মানবপ্রাণ। আমাদের অহংকার আনিসুজ্জামান।
যে প্রান্ত নদীর শিহর
যে অন্ত শস্যের ভিড়ে
সম্ভাব্য সুস্থির
ছায়া পায়, গন্ধ পায়
ঋতু পায়, স্বপ্নজাদু সোনালি শিশির
প্রভাতের ইষ্টগুলি সায়াহ্নের তারে
যে ঘোরে ঝংকারে
বাজে, বাজে – সাজে
আরো এক সূর্যময় মান
আনিসুজ্জামান।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.